মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নাই কি রে কেউ সত্য-সাধক

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘বিষের বাঁশী’ (প্রথম প্রকাশ: আগস্ট, ১৯২৪) কাব্যগ্রন্থের  ‘সেবক’ কবিতায় লিখেছেন, ‘সত্যকে হায় হত্যা করে অত্যাচারীর খাঁড়ায়,/ নাই কি রে কেউ সত্য-সাধক বুক খুলে আজ দাঁড়ায়?-/ শিকলগুলো বিকল করে পায়ের তলায় মাড়ায়,-/ বজ্র-হাতে জিন্দানের ঐ ভিত্তিটাকে নাড়ায়?/ নাজাত-পথের আজাদ মানব নেই কি রে কেউ বাঁচা,/ ভাঙতে পারে ত্রিশ কোটির এই মানুষ-মেষের খাঁচা?/ ঝুটার পায়ে শির লুটাবে, এতই ভীরু সাঁচা?-’। এই কবিতায় তিনি এমন এক সেবককে আহ্বান জানাচ্ছিলেন, যিনি মনে করেন- ‘বন্দি থাকা হীন অপমান’ হাঁকবে যে বীর তরুণ/শিরদাঁড়া যার শক্ত তাজা, রক্ত যাহার অরুণ,/সত্য-মুক্তি স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের,/ খোদার রাহায় জান দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের।/ দেশের পায়ে প্রাণ দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের, সত্য মুক্ত স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের।”
কাজী নজরুল ইসলাম উপনিবেশবাদী বৃটিশদের হাতে বন্দী ভারতের স্বাধীনতার জন্য সেবকের আহ্বান জানাচ্ছিলেন, সত্য-সাধকের সন্ধান করছিলেন, যে কারাগারের দুয়ার ভেঙে হাঁক দিয়ে উঠতে পারে, সেবক আমি, সেবক তোদের ভাইরা আমার। সে ভারত স্বাধীন হয়েছিল। তবে একটি রাষ্ট্র হিসেবে নয়। ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি রাষ্ট্র হিসেবে। তার জন্য শেষ পর্যন্ত ভারতবাসীকে যুদ্ধ করতে হয়নি। তারা বৃটিশের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে ঐ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। কিন্তু নজরুলের মতো এমন হাজার হাজার স্বাধীনচেতা মানুষকে তার জন্য অনেক জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছিল।
আর আমরা আলোচনার টেবিলে বসে বাংলাদেশ স্বাধীন করিনি। নয় মাস ধরে আমরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করেছি। অনেক রক্তক্ষয় আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে সে যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র স্বাধীন হলেই যে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন পূরণ হবেÑ এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে স্বাধীন রাষ্ট্রে কোটি কোটি মানুষ স্বৈরশাসকদের নির্যাতন নিষ্পেষণে রুদ্ধবাক হয়ে গেছে, হয়ে আছে। সত্য প্রকাশ মানেই হয়ে গেছে জীবনের অবসান। গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার হয়েছে ভূলুণ্ঠিত। স্বাধীন দেশেও মানুষের মৌলিক অধিকার হয়েছে হচ্ছে পদদলিত। আমরা তার সামান্যই খবর রাখি।
খবর সামান্য রাখলেও আমরা বাংলাদেশের এখন একই অবস্থায় নিপতিত হয়েছি। শাসক গোষ্ঠীর ক্ষমতার  লোভের কাছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। ক্রমেই ধ্বংসের অতল গহ্বরে নেমে যাচ্ছে সমাজ। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রাজনীতিক, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে নাগরিক নিরাপত্তা বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। কোথায়ও এর কোনো প্রতিকারও নেই। এক হায়েনার কাছ থেকে পালাতে গিয়ে পড়ছে আর এক হায়েনার কবলে। সে আরও হিংস্র। আরও ভয়ঙ্কর। দস্যুতার কবলে পড়া এখন নাগরিকদের নিয়তি। সরকারের মদতে-প্রশ্রয়ে এখন জন্ম নিয়েছে একটি লুটেরা শ্রেণী। যারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। সরকার এখানে নিতান্তই দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। আর এদের খাঁই মেটাতে সরকার জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে যাচ্ছে। বোঝা দিচ্ছে। বোঝার ওপর শাকের আঁটি দিচ্ছে। আমরা এই ভারে ক্রমেই ন্যুব্জপৃষ্ঠ হয়ে পড়ছি।
সমাজ থেকে নীতি-নৈতিকতা এখন উধাও। মৌলিক মূল্যবোধগুলো ভেঙে খানখান। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের মতো এখানে অনাচারই আচারে পরিণত হয়েছে। দাগী অপরাধী ও আদালতে দণ্ডিতরা মন্ত্রিসভা আলোকিত করে আছেন। খুনের মামলার আসামীরাও সংসদ সদস্য হিসাবে থাকেন বহাল তবিয়তে। কার্যত সরকার দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে নির্বিঘ্নে যে- কোনো অপরাধ করে পার পাওয়া যায়, বিচার হয় না। সরকার প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী লুটেরাদের সমর্থন দেয়। তাদের পক্ষে সাফাই গায়। ফলে এরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। কী অপরাধ এখন আমাদের সমাজে ঘটছে না, সেটা খুঁজে বের করা মুশকিল। যেসব অপরাধ এক সময় কল্পনাও করা যেত না, তা এখন ঘটছে অহরহ।
নারীরা তো বটেই তিন বছরের কন্যা শিশুও বাইরে তো বটেই ঘরেও নিরাপদ নয়। তারা হামেশাই শিকার হচ্ছেন খুন-ধর্ষণের। কিন্তু কোথায়ও এর কোনো প্রতিকার পাওয়ার উপায় নেই। সরকার ব্যস্ত বিরোধী দলকে কেবল গালিগালাজআর নির্যাতন করা নিয়ে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে তাদের না-হক এক গীত শুনতে শুনতে কান ঝালা পালা হয়ে গেছে। শত মুখে বছরের পর বছর ধরে এসব শুনতে শুনতে মানুষ অতীষ্ঠ হয়ে গেছে। নয় বছর যারা ক্ষমতার বাইরে, তারাই নাকি সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। তাহলে বিগত নয় বছর ধরে তারা কি বসে বসে আঙুল চুষেছেন? এখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হাড় ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকার দলের লোকেরা জঙ্গি মিছিল করে। এক একজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শত শত হয়রানিমূলক মামলা দেয়। বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আক্রোশের বশবর্তী হয়ে ডজন ডজন মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দী রাখে।
অথচ দুর্নীতিবাজ চোর বাটপারদের বিরুদ্ধে, শিশু ধর্ষকদের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলে না। বরং দুর্নীতিবাজদের, খুনী-ধর্ষকদের আড়াল করার জন্য কত কোশেশই না করে। এই যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরির ঘটনা। প্রথম কয়েক দিন অর্থমন্ত্রীর হম্বিতম্বি শুনলাম। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হলো। সে কমিটি রিপোর্টও দিলো। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলও সে রিপোর্ট নিজের বগলতলে আটকে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত। সকল তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই টাকা লুটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। তাদের নামও দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা রিপোর্টে। কিন্তু তাদের রক্ষার জন্য যেন মরিয়া হয়ে আছে সরকার। ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে একেবারে ধোয়া তুলশি পাতা বানিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ তাকেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল সবার আগে। সে সম্পর্কিত রিপোর্ট এখন প্রকাশ করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলছেন, সে রিপোর্ট প্রকাশ করতে অনেক সময় লাগবে। এজন্য আসলে অর্থমন্ত্রীকেই বিচারের আওতায় আনা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। ব্যাংকগুলো থেকে লুট হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আবার দলীয় লোকদের ঋণ রিশিডিউলের নামে আরও লক্ষ কোটি টাকাকে করা হয়েছে মন্দ ঋণ। যা আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এ যেন লুটের এক মহোৎসব চলছে দেশজুড়ে।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে গোড়া থেকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যে মৌলিক নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শিশু বেড়ে ওঠে, সেগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে পাঠ্যপুস্তক থেকে। সদা সত্য কথা বলিবে, গুরুজনকে শ্রদ্ধা করিবে, কানাকে কানা খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও নাÑ এই ধরনের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো পাঠ্যবই থেকে উধাও হয়ে গেছে। ফলে দেশে মূল্যবোধে ব্যাপক ধস নেমেছে। এছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি একবারে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে পাঠ্যপুস্তকে। এদেশের স্বাধীনতার যে হাজার বছরের ইতিহাস, তার কিছুই জানতে পারছে না আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। ফলে এক উন্মূল উদ্বাস্তু প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। যারা জানে না, কী তার ইতিহাস-ঐতিহ্য, কী তার সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়।
এর পরিণতি যা হবার তাই হচ্ছে। বখে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। এখন যারা কিশোর, তারাও পাড়ায় পাড়ায় গড়ে তুলেছে অপরাধী গ্যাং। এরা নানা ধরনের অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যে ছিনতাই, ডাকাতি, খুনোখুনি, ইভ টিজিং, ধর্ষণ- কী অপরাধ তারা করছে না। এই দলে আছে উচ্চবিত্তের সন্তানসহ নিম্নবিত্তের সন্তানেরা। এ এক ভয়ঙ্কর অবস্থা! এজন্য কোনো কোনো এলাকায় আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কেন এমন হলো? এর প্রধান কারণ, এই কিশোরেরা দেখতে পাচ্ছে যে, তাদের ‘বড় ভাইয়েরা’ যদি একই ধরনের কাজ করে পার পেয়ে যেতে পারে, তাহলে তারা পারবে না কেন। সমাজপতিরা ভেবেও দেখছেন না, কেন এমন হলো। তারা অপরাধীদের প্রশ্রয় দিয়েই যাচ্ছেন। তার বিষময় ফল এখন ফলতে শুরু করেছে। আর তার মূল্য দিতে হয়েছে সমাজের সকলকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ অনেক। এ অভিযোগ আগেও ছিল। তবে তাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা হতো। আর দোষী সদস্যের বিরুদ্ধে সে সময় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতো বলে তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল। এখন তা আর নিয়ন্ত্রণযোগ্য নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেশি মাত্রায় দলীয়করণের ফলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর হয়েছে তাদের বিরোধী দল ঠ্যাংগানোর কাজে ব্যবহার করার ফলে। তারা খুন, ধর্ষণ, গুম, মুক্তিপণ আদায়সহ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে মানুষ এখন আশ্রয়হারা। আর সারাদেশে নারী নির্যাতন এখন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তিন বছরের শিশু থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধা পয়ন্ত কেউ বাদ পড়ছে না। কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। আবার এদিকে সরকারের কোনো মনোযোগ আছে বলেও মনে হয় না। কারণ এ ধরনের ঘটনায় আজ পর্যন্ত কারও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়নি। আর এর পেছনেও আছে সরকার দলের ক্যাডাররা। ফলে তাদের সাত খুন মাফ।
কিন্তু এই অবস্থা তো চলতে পারে না। আমাদের বিশ্বাস, সমাজ থেকে প্রতিবাদী বিবেকবান মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাননি। প্রতিবাদে তাদের সোচ্চার হতেই হবে। তাই কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় আবারও বলতে চাই: ‘বিশ্ব-গ্রাসীর ত্রাস নাশি আজ আসবে কে বীর এসো/ ঝুট শাসনে করতে শাসন, শ্বাস যদি হয় শেষও।/ -কে আছ বীর এস!’


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৭

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

তিন বছরের হত্যাকাণ্ড

সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে প্রচারণা চালানো হলেও বাস্তবে ছিনতাই, ডাকাতি ও ধর্ষণের মতো অপরাধ তো বটেই, গুম-খুনের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডও অকল্পনীয় হারে বেড়ে গেছে। পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ভোটারবিহীন নির্বাচনের পথে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে সারা দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১২ হাজার ২৭৭টি। এসবের মধ্যে ইতালীর নাগরিক তাবেলা সিজার এবং জাপানের নাগরিক হোসি কুনিও ও হিরোয়ি মিয়াতাসহ কয়েকজন বিদেশী নাগরিক এবং  ক্ষমতাসীন দলের এমপিসহ বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। হিন্দু পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং খ্রিস্টান যাজক যেমন, মুসলিম ইমাম ও আলেমও তেমনি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। ব্লগার, প্রকাশক, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরাও রয়েছেন নিহতদের তালিকায়। গত বছরের জুন মাসে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান হোটেলের রাতভর জিম্মি নাটক ও হত্যাকাণ্ড তো সারা বিশ্বেই আলোড়ন তুলেছিল।  
বস্তুত এমন কোনো শ্রেণী, পেশা ও বয়সের কথা বলা যাবে না, যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। তাদের অনেককে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে গেছে এবং পরে কথিত বন্দুক যুদ্ধের আড়ালে হত্যা করেছে। সব মিলিয়ে বিরোধী দলের এত বেশি নেতা-কর্মী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন যে, তাদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আলোচ্য তিন বছরে ক্ষমতাসীন দলেরও ১৪৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তবে তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে নিহত হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, হয়েছে, এভাবে বিগত তিন বছরের প্রতিদিন গড়ে ১১ জনের বেশি মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, পরিস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। উদ্বেগের কারণ হলো, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের যখন জোর তৎপরতা চালানোর কথা তখনও হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি অন্য সব ধরনের অপরাধ পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। ঘটনাপ্রবাহে গুম এসেছে একটি প্রধান বিষয় হিসেবে। বাংলাদেশে তৎপর মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময়ে তাদের রিপোর্টে ও পর্যবেক্ষণে বলেছে, গুম আর খুনের ঘটনা বেড়ে চলেছে আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে যেখানে চার হাজার ৯৯ জন মানুষ খুনের শিকার হয়েছিল, ২০১৩ সালে সেখানে চার হাজার ৩৯৩ জন নিহত হয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে সারা দেশে খুন হয়েছে ২৫ হাজার ১৯৪ জন। ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে নিহত হয়েছে এক হাজার ৬৭২ জন। অর্থাৎ ৭৭ মাসে মোট খুন হয়েছে ২৬ হাজার ৮৬৬ জন। পরের বছর ২০১৬ সালে সে সংখ্যা আরো বেড়ে গেছে। অর্থাৎ খুনের মতো ভয়ংকর অপরাধ দিন দিন শুধু বেড়েই চলেছে।
আমরা মনে করি এবং একথা অনেক উপলক্ষেই বলে এসেছি যে, হত্যাকাণ্ডসহ দ্রুত বেড়ে চলা অপরাধের বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, পরিস্থিতির শুধু ক্রমাগত অবনতিই ঘটে চলছে না, বিশেষ করে রাজনৈতিক দমন-নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলো জনমনে প্রবল ভীতিরও সঞ্চার করেছে। দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্টে সংক্ষেপে উল্লেখিত ঘটনা ও সংখ্যার বাইরে এমন আরো অনেক তথ্যও দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে প্রকাশিত হয় যেগুলো সরকারের দমনমূলক নীতি ও কর্মকা-কেই প্রাধান্যে আনে। অর্থাৎ সবকিছুর জন্য দায়ী আসলে সরকার। অথচ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রকাশিত ইশতেহারেও আওয়ামী লীগ বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করাসহ অপরাধ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছিল। অন্যদিকে প্রথম থেকেই ঘটে চলেছে উল্টো রকম। সাধারণ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বেড়ে চলেছে গুমের ঘটনাও। কারা হেফাজতেও বহু মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভীতিকর গুপ্তহত্যা। আপত্তির কারণ হলো, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বদৌলতে বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ‘ওপেন সিক্রেট’-এ পরিণত হয়েছে। এ সত্যও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ২০১৪ সালে দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আসলেও দেশে খুনখারাবির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। 
এ প্রসঙ্গে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলা দরকার, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ও ক্রসফায়ারের মতো কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিচার হচ্ছে না বলেই দেশে হত্যাকাণ্ডসহ সব ধরনের অপরাধ বেড়ে চলেছে। অনেক হত্যাকাণ্ডের পেছনে সরকারের ভূমিকাও গোপন থাকছে না। ভিন্নমতাবলম্বীদের ফ্যাসিস্ট কায়দায় দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। অথচ কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন অবস্থা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা আশা করতে চাই, সরকার বিশেষ করে হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও প্রতিহত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে উদ্যোগী হবে। বলা দরকার, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীর লোকজনকে যদি দলীয় কর্মী ও লাঠিয়ালের মতো ব্যবহার না করা হয় এবং তাদের যদি স্বাধীনভাবে নিজেদের কর্তব্য পালন করতে দেয়া হয় তাহলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে সব ধরনের অপরাধ কমে আসতে পারে। সে লক্ষ্যে তৎপর হওয়াটাই সরকারের কর্তব্য বলে আমরা মনে করি।

শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৭

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

১/১১ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

এক এগারো নিয়ে এদেশে অনেক আলোচনা হয়েছে। ১/১১-এর পর ১০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এই ১০ বছরে এই দিবসটি নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে সেটা বহুমাত্রিকতা পেয়েছে। কারণ দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক শিবির, অর্থাৎ বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং আওয়ামী লীগ নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে দিবসটির ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু এ বছর অর্থাৎ চলতি জানুয়ারীর ১২ তারিখে দু’টি সংবাদ মনে হয় সব আলোচনাকে ছাপিয়ে গেছে। একটি হ’ল বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদের একটি মন্তব্য। এবং অপরটি হ’ল আওয়ামী লীগ নেতা মোনায়েম সরকারের বক্তব্য। এমাজ উদ্দিন আহমদ তার বক্তব্য রেখেছেন একটি আলোচনা সভায়। এবং মোনায়েম সরকারের বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে তারই রচিত গ্রন্থ থেকে।
গত ১১ জানুয়ারী বুধবার একটি আলোচনা সভায় অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, “এক-এগারোতে পরিকল্পিতভাবে জরুরী অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই পরিকল্পনার সব কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। অথচ কেউ তাদের বিচারের কথা বলে না।” ১২ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার দৈনিক ‘দিনকাল’ প্রকাশিত ঐ রিপোর্টে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর ন্যায়বোধের কাছে জবাবদিহিতা করা উচিত। সেই ন্যায়বোধের কারণেই এ ব্যাপারে তার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারী মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন কিভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সবই জানেন। তার মতে, ঐদিন যেটা ঘটেছিল সেটা ছিলনা কোনো সামরিক হস্তক্ষেপ। সেটি ছিল একটি সামরিক অভ্যুত্থান। কারণ ঐ সরকারে কে কে উপদেষ্টা হবেন তার একটি তালিকা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। তার মতে এখন দেশে যে রাজনীতি চলছে সেটি মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দেখিয়ে দেয়া পথেই চলছে। তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন যে, ওয়ান-ইলেভেনে যা ঘটেছিল সেটি ছিল একটি সামরিক অভ্যুত্থান। সেই সময় সর্বত্র ছিল সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তা হ’লে তারা কি করবে সেটি আমি জানিনা। তবে শেখ হাসিনার উচিত ছিল ক্ষমতায় আসার পর তাদের বিচার করা। কোন আইনে, সংবিধানের কোন ধারা মতে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ এই দুইমাস মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা ক্ষমতায় থাকলেন তার জবাব বাংলাদেশের জনগণকে দিতেই হবে। কোনধারা বলে, কোন আইনে মইনুদ্দিন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলেন তার কৈফিয়তও বাংলার জনগণ একদিন আদায় করবে। আর বিচার করতে হ’লে এক-এগারোর পূর্বাপর ঘটনাবলীল নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এবং বিচার হওয়া উচিত।
একই আলোচনা সভায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমান সরকার ওয়ান-ইলেভেনের বেনিফিশিয়ারী। ঐ সরকারের আমলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিপুল শ্রদ্ধা জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অমর এবং স্মরণীয় রাখার জন্য তাদের গেজেট প্রকাশ করুন। যারা গুম হয়েছেন, যারা গুম হয়ে খুন হয়েছেন তাদেরকে শহীদের মর্যাদা দিন এবং তাদের গেজেটও প্রকাশ করুন। গয়েশ্বর এই মর্মে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন যে, ওয়ান-ইলেভেনের মত আরেকটি ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের চারিদিকে ঘুরছে। এই ষড়যন্ত্র আরও শক্তিশালী।এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিএনপি’র নেতা-কর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, যেহেতু আওয়ামী লীগ ১/১১-এর বেনিফিশিয়ারী তাই তারা এক-এগারোর কুশীলবদের বিচার করবে না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের বিচার কোনোদিনই হবে না। বাংলার মাটিতে তাদের বিচার একদিন হবেই।
দিনকালের ঐ রিপোর্ট মোতাবেক গয়েশ্বর স্মরণ করিয়ে দেন যে, একটি পর্যায়ে এক এগারোর নায়করা পালাবার পথ পাচ্ছিল না। তখন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের পালাবার পথ করে দেয়। যেহেতু মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করে দেয় তাই আওয়ামী লীগও তাদেরকে জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য পালাবার নিরাপদ রাস্তা, অর্থাৎ সেফ একজিট দেয়। সে জন্যই আওয়ামী লীগ বলে যে ওয়ান-ইলেভেন আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল।
॥ দুই ॥
এতক্ষণ ধরে আমরা এক-এগরো সম্পর্কে বিএনপি’র বক্তব্য পড়লাম। কিন্তু এই বক্তব্যের সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের মোনায়েম সরকারের বয়ানে। তার গ্রন্থ আত্মজৈবনিক, ভাষাচিত্র, ফেব্রুয়ারী ২০১৪-তে তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন। ঐ গ্রন্থের ২৬৪ থেকে ২৬৮ পৃষ্ঠায় বিধৃত অংশে তিনি লিখেছেন, “ওয়ান-ইলেভেনের গণবিস্ফোরণের পর শেখ হাসিনা তখন কারারুদ্ধ। সে সময় শেখ হাসিনার মুক্তির বিষয়ে নানারকম খবর শোনা যেত। ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জনের বিদায় ভোজে উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা ফারুক মাহমুদ। তিনি ছিলেন ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত। তিনি পিনাক রঞ্জনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, খবরটি কতদূর সত্য। বিদায়ী হাইকমিশনার পিনাকী জানালেন, খবরটি সত্য নয়।
এরপর মোনায়েম সরকার লিখছেন, আমরা আরও খবর পেলাম, শেখ হাসিনাকে জেলের ভেতর হত্যা করা হতে পারে। ঠিক হ’ল ঢাকা থেকে আমি (মোনায়েম চৌধুরী) কলকাতা যাব, আর লন্ডন থেকে গাফফার চৌধুরী কলকাতা আসবেন। সেই মোতাবেক মোনায়েম সরকার কলকাতা যান। সেখানে ‘বাংলা স্টেটসম্যান’ পত্রিকার সম্পাদক মানস শেখ বললেন, দাদা এসেছেন যখন, তখন দিল্লীটা ঘুরে যান। তখন আমি দিল্লী গেলাম। (এরপর যতগুলো ক্ষেত্রে ‘আমি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সব ক্ষেত্রেই মোনায়েম সরকারকে বোঝানো হয়েছে)। চেষ্টা করলাম তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মূখার্জীর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি তখন ব্যস্ত। তার ব্যক্তিগত সচিব পরামর্শ দিলেন কলকাতা যেয়ে দেখা করতে। তখন দেখা করলাম মুচকুন্দ দুবের সঙ্গে। তখন তার একটি রিসার্চ সেন্টার ছিল। সেই রিসার্চ সেন্টারের পাশে অবস্থিত একটি ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের পাশে একটি রেস্তোরায় আমরা বসলাম। তাঁর কাছ থেকে জানতে চাইলাম, এ অবস্থায় আপনি কি করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সিকিউরিটি এ্যাডভাইজার নারায়ণের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বললেন, আমরা পাকিস্তান আর্মী আর বার্মার আর্মীর সঙ্গে ডিল করি। সে রকম বাংলাদেশ আর্মীর সঙ্গেও ডিল করব।’ তা’হলে কি করা যায়? মুচকুন্দ দুবে সাফ জানালেন, ‘সেটা আমি জানিনা।’
তখন আমি বাংলাদেশে কাজ করা ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার দেব মূখার্জীকে ফোন করে জানতে চাইলাম, আই. কে. গুজরালকে বললে কি কিছু হবে? বললেন, হতে পারে। আই. কে. গুজলার ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ৫ জনপদ রোডে থাকতেন। তার পিএকে ফোন করলাম। তার পিএ বললেন, ‘আগামীকাল বিকাল ৫টায় ৫নং জনপদ রোডের বাসায় চলে আসুন।’
॥ তিন ॥
সুপ্রিয় পাঠক ভাই-বোনেরা, এতক্ষণ আমরা এক এগারো সম্পর্কে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরলাম। এই বিবরণ পড়ার পর আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, এরা যা বলেছেন তার এক বিন্দুও আমাদের কথা নয়। বিবরণী লম্বা হয়ে গেছে। কিন্তু লম্বা বিবরণী না দিয়ে কোনো উপায় ছিল না। কারণ সম্মানিত পাঠকের কাছে আমরা পূর্ণ সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, অর্ধসত্য উপস্থাপন করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে চাইনি। তবে দেখা গেল যে, ওয়ান-ইলেভেন সম্পর্কে দেশের সবচেয়ে বড় দু’টি দল একেবারে পরস্পর বিরোধী কথা বলছে। বিএনপি বলছে যে, শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ জানতো যে, ওয়ান-ইলেভেন আসছে। আর সেজন্য তারা উপদেষ্টাদের লিষ্টও প্রস্তুত করে রেখেছিল। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ বলছে যে, এক-এগারোর জেলে শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছিল। এখন মানুষ বিশ্বাস করবে কার কথা?
প্রথমেই যে প্রশ্নটি মনে উঁকি দেয়, সেটি হ’ল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এক-এগারোর ষড়যন্ত্র যদি হয়ে থাকে তাহলে তারা কিভাবে এবং কেন বলেছিলেন যে, এক-এগারো তাদের আন্দোলনের ফসল? যদি তখন যদি শেখ হাসিনাকে হত্যারই চেষ্টা করা হয়ে থাকে তাহলে আট বছর ধরে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও এক-এগারোর কোনো কুশীলবেরই বিচার হ’লনা কেন? প্রধান সেনাপতি মইন উ আহম্মদ, প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ড. ইফতেখার আহমদ চৌধুরীসহ প্রায় সকলেই নিরাপদ বহির্গমনের পথ পেয়ে দেশের বাইরে চলে গেলেন কিভাবে? আর এর সব কিছুই আওয়ামী সরকারের আমলে সম্ভব হ’ল কিভাবে? শেখ হাসিনা যেমন জেল থেকে বেরিয়ে দেশের বাইরে চলে গেলেন, তেমনি বিদেশ থেকেও নিরাপদে ফিরলেন কিভাবে? পক্ষান্তরে বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র বিএনপি’র দুই নাম্বার নেতা তারেক রহমানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিল কারা? সেটাও তো এই ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের জরুরী সরকার। শুধু তাই নয়। তাকে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর তাকে আর দেশে ফিরতে দেয়া হ’ল না কেন? আজ আওয়ামী লীগ যে তারেককে দেশে ফিরতে দিচ্ছে না সেটা তো জরুরী সরকারেরই ধারাবাহিকতা।
আরেকটি কথা বলে শেষ করব। আওয়ামী লীগ যে কিভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতীয় হস্তক্ষেপের জন্য ধরনা দেয় এবং ভারত যে কি শক্তভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে সেটি মোনায়েম সরকারের লেখা গোটাটাই আপনারা জানতে পারলেন।

বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৭

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ড. পিয়াস করিমদের আজ বড় প্রয়োজন

টেলিভিশন টক শোর পরিচিত মুখ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক পিয়াস করিম হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তিকাল করেছিলেন ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর। মানুষ মারা গেলেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় না। থেকে যায় তার কৃতকর্ম। অধ্যাপক পিয়াস করিমও সেরকম একজন ব্যক্তিত্ব যিনি চলে গেলেও রেখে গেছেন তার শেষ জীবনের কিছু সাহসী উচ্চারণ। মিডিয়ানির্ভর এই সভ্যতায় তিনি অল্প সময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন একজন সাহসী-রূঢ় সত্য বচন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে। এদেশের লাখ মানুষ টিভি টকশো অন করে বসে থাকতো তার বাস্তব ভিত্তিক জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শুনার জন্য।  
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ কলুষিত, অর্থনীতি হচ্ছে নিপীড়িত মানুষদের শেষণের হাতিয়ার, সংস্কৃতিতে নগ্নতা ও পরনির্ভরতার জয়জয়কার। রাজনৈতিক অঙ্গনে চাটুকারিতার মাত্রা পৃথিবীর যে কোন দেশকে বহু আগেই ছাড়িয়েছি আমরা। এক নেতার এক দেশের পাশাপাশি একেক নেতা একেক দল পরিচালনা করছেন। সেসব দলের বাকীরা অন্ধ অনুসারী মাত্র! উচিত কথা যথা সময়ে যথাস্থানে বলার লোকের রয়েছে সীমাহীন অভাব। বিশেষ করে দেশের বুদ্ধিজীবী মহল আজ অনেকটাই বিক্রি হয়ে গেছেন স্বার্থের মায়াজালে। সরকারি দলের সমর্থক বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা অতীতের মত এখনও বেশি। সরকারের আনুকূল্য নিয়ে স্বার্থ হাসিলের খায়েশ কার নাই? বেশির ভাগই আখের গোছানোয় ব্যস্ত। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার লোকের অভাব সরকারি দলেও নাই। তবে সামনাসামনি না বলে তারা কাপুরুষের মতো আড়ালে কথা বলেন। এ সকল ক্ষেত্রে অধ্যাপক পিয়াস করিম ভিন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সত্য বলতেন ভয় ভীতি ও পারিপার্শি¦ক চাপকে উপেক্ষা করে। কোন্ চ্যানেলে কথা বলছেন বা কার সামনে বলছেন কিংবা কোথায় বলছেন তা তিনি বিবেচনা করতেন না। দেশ কি বিদেশ তিনি সময়ের কথা সময়ে বলতেন। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তিনি তার শেষ সময়গুলোতে যেসব বিশ্লেষণ করেছেন তা বাস্তবতার নিরিখে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংক্রান্ত বিষয়টিই বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়ে আসছে। দেশের হাতেগোনা দু-একজন বুদ্ধিজীবী ছাড়া সকল বুদ্ধিজীবীই অনেকটা জ্ঞানপাপীর মতই এ ইস্যু থেকে সচেতনভাবে নিজেদেরকে দূরে রেখেছেন। এক্ষেত্রে নিজের খেয়ে বনের মেষ না তাড়ানোর পলিসি নিয়েছেন তারা। বনের মেষ পাশের কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল খাচ্ছে দেখেও স্বার্থবাজ লোকটি নিজে উদ্যোগী হয়ে মেষটি না তাড়িয়ে তামাশা দেখলেন। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরাও জামায়াত ইস্যুতে ঐ স্বার্থবাজ লোকটির মতই ভূমিকা রেখে চলেছেন। সত্যকে তারা ইচ্ছেকৃতভাবে গোপন করেন। কিন্তু সময়ের সাহসী মুখ হিসেবে গর্জে উঠলেন ড.পিয়াস করিম। বনের মেষকে গরিব কৃষকের একমাত্র অবলম্বন খেতটি খেতে দেখে তিনি নিজের খেয়ে মেষ তাড়াতে লাগলেন। অধ্যাপক ড. পিয়াস করিম বলেছিলেন- বাংলাদেশের তিনশত সংসদীয় আসনে জামায়াতের মোট ভোটের সংখ্যা হবে প্রায় এক কোটি। আর তাদের এক কোটি ভোটারের প্রত্যেকের কমপক্ষে ৪ জন করে আত্মীয় স্বজন থাকলে তারাও জামায়াতের সমর্থক। এ হিসেবে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি লোক জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল। জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে প্রফেসর পিয়াস করিমের এ বিশ্লেষণটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। কিন্তু এদেশের মিডিয়ার ইসলামবিরোধী একটি অংশ অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকে জামায়াতে ইসলামী ও তার সমর্থকদের ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়।
যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গে ড. পিয়াস করিম বলেছিলেন, “একটা জিনিস আমরা লক্ষ্য করে আসছি, যেসব ইস্যু বারবার আমাদের সামনে আসছে, হোক সেটা পদ্মাসেতু, হলমার্ক কিংবা বিশ্বজিত প্রসঙ্গ, সব বিষয়ে সরকার বলে আসছে, এটা নাকি যুদ্ধাপরাধীর বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র। এ ধরনের অপচেষ্টা আমাদের জাতিকে বিভক্ত করে দিয়েছে। আমরা সবখানে মুক্তিযুদ্ধকে টেনে আনছি। এটা মোটেই ঠিক নয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।”
‘আগামী বছর ১৪ জন যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসি দেয়া হবে’- বলে মহাজোট নেতারা যে মন্তব্য করেছিলেন সে প্রসঙ্গে ড পিয়াস করিম বলেছিলেন, “একটা রাজনৈতিক দলের জনসভা থেকে কিভাবে ঘোষণা দেয়া হয় যে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হবে। এটা কোন গণতান্ত্রিক দেশে হতে পারে না। বিচারের ব্যাপারে কাকে ফাঁসি দিবে আর কাকে কারাদণ্ড দিবে সেটা দিবে আদালত। এভাবে কথা বলে বিচার ব্যবস্থার চরম অবমাননা করা হয়েছে।” চ্যানেল আইয়ের মধ্যরাতের টকশো ‘আজকের সংবাদপত্রে’ তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির বর্তমান তৎপরতার দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক পিয়াস করিম বলেছেন, “সরকারের বিরুদ্ধে খুন-গুম, অর্থনৈতিক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশব্যাপী জনগণের ক্ষোভ রয়েছে। আন্দোলনের মাঠ  তৈরিই আছে। এখন বিএনপির কাজ হলো জনগণের এ ক্ষোভকে ভাষা দিয়ে আন্দোলনে নামা। আর ঈদের পর আন্দোলনে নামার যে হুমকি দিচ্ছে, এটা তাদের জন্য শেষ সুযোগ। তার এই দূরদর্শী মন্তব্য কতটা সময়োপযোগী ছিল তা বর্তমানে উপলব্ধি করা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। 
জামায়াত প্রসঙ্গে ড. পিয়াস করিম বলেন, “দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির ব্যর্থতায় রাজনীতিতে প্রধান শক্তি হিসেবে ভবিষ্যতে জামায়াতের উত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আমি তা চাই না। তবে চোখ বন্ধ রাখলেই তো মহাপ্রলয় ঠেকানো যাবে না, প্রলয় হবেই। তবে জামায়াত না হলে আরেকটি শক্তি (সেনাবাহিনী) দেশের ক্ষমতায় চলে আসবে।” দেশের চলমান সংকট উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারেনি, ফলে জনগণের পছন্দের সরকার ক্ষমতায় আসেনি। তাই সকল দলের অংশগ্রহণে অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।” সাথে সাথে তিনি একথাও বলেন- “তবে তিনি বলেন, এমন অক্ষম, অপদার্থ ও একচোখা নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কখনই সম্ভব নয়।”
মূলত একটি জাতিকে যখন সবদিক থেকে বেঁধে ফেলা হয়, যখন সবকিছুর শেষ পরিণতি হয় কারাগার অথবা সরকারি জুলুম-নির্যাতন তখন বনের বাঘও শিয়ালে পরিণত হয়। প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাস অথবা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে থাকা সিংহ ও হরিণ পাশাপাশি অবস্থান নেয়। বর্তমান সময়ে চলতে থাকা এরকম দুর্যোগের কারণেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও দেশ নিয়ন্ত্রণকারী অধিকাংশ শক্তি বাহ্যত এককাতারে চলে গেছে। তাল মিলিয়ে চলছে সবাই। সত্য কথা যথাস্থানে বলার লোকের বড় অভাব আজ। এহেন পরিস্থিতিতে ড. পিয়াস করিম আমাদেরকে ভিন্নভাবে বলতে ও উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। পায়ে দলে কীভাবে বিপরীতে চলতে হয় তা তিনি দেখিয়ে গেছেন। মুক্ত চিন্তাটি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে না করে ভিন্নভাবে করতে শিখিয়েছেন। তিনি মার্কসবাদী ছিলেন একথা সত্য হলেও তিনি একজন কট্টর জাতীয়তাবাদীও ছিলেন। পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে ভারতের আধিপত্যকে মেনে নিতে তিনি কখনই রাজি ছিলেন না। তাইতো সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার লাশ শহীদ মিনারে নিয়ে যেতে দেয়া হয়নি। 
মাওলানা সাঈদী সাহেবের রায় পরবর্তী ঘটনা প্রসঙ্গে রেডিও তেহরানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত রকমের রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে। আমি যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সহিংসতার বিরুদ্ধে একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে। আর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক বেশি সহিংস হওয়াার ক্ষমতা রাখে। আজকে জামায়াতে ইসলামী বলি, আওয়ামী লীগ বলি বা বিএনপি বলি- দল হিসেবে তারা যতটা সহিংস হওয়ার ক্ষমতা রাখে রাষ্ট্রযন্ত্র তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা রাখে। আর সেই রাষ্ট্রের পুলিশ যখন অসংযত ব্যবহার করে, যখন কোন রকম বিধি-নিষেধ না মেনে জনগণের ওপর গুলী করে তখন সেটা খুবই দুঃখজনক। ধরা যাক- জামায়াতের মিছিল থেকে যদি আইন লংঘন করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে পুলিশের সামনে কতগুলো পথ খোলা ছিল। পুলিশ প্রথমে তাদের সতর্ক করতে পারত, এরপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করতে পারত তারপর একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুলীর নির্দেশ দেয়া যেত। কিন্তু পুলিশ তা না করে প্রথমেই পাখির মতো গুলী করা এটাকে তো কোন রাজনৈতিক বিধিমালায় বা কোন গণতান্ত্রিক নিয়ম নীতি অনুসারে এটাকে জাস্টিফাই করা যাবে না। এটা সরাসরি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। সরকার চেষ্টা করেছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালু করে একটি প্রতিবাদ করতে। কিন্তু সেই প্রতিবাদ ন্যায় নাকি অন্যায় সে বিতর্কে আমি যাচ্ছি না। তবে তারা একটি প্রতিবাদকে দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। এটা কিন্তু কাউন্টার প্রডাকটিভ হতে পারত। কিন্তু এভাবে তো আসলে হয় না। পৃথিবীর কোন দেশেই ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্যাতন চালিয়ে স্তব্ধ করা যায়নি আজ পর্যন্ত। আমি Karen Armstrong-এর The Battle for God যখন পড়ছিলাম তখন দেখলাম পৃথিবীর কোন জায়গায় ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ওরকভাবে দমন করা যায়নি। বরং দমন করার যত চেষ্টা করা হয়েছে ততই তারা আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। ফলে সরকারের সহিংসতাকে আমি  নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিরোধিতা করি। তাছাড়া বাস্তব রণকৌশলগত দিকে থেকেও সরকার প্রচন্ড রকমের একটা ভুল করছে বলে আমার ধারণা। কারণ জামায়াতের আন্দোলনে ও প্রতিবাদে পুলিশের বাধা দেয়ার ফলে বা পুলিশি আচরণের কারণে তাদের Political Resolve-কে আরো বেশি দৃঢ় করেছে।
পরিশেষে বলতে চাই অধ্যাপক ড. পিয়াস করিমদের মতো লোকের আজ বড় প্রয়োজন। বাংলাদেশের বর্তমান সংকটকালে তার ভবিষ্যৎ মন্তব্যগুলো অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের চেতনায় ড. পিয়াস করিম আজো জীবিত থেকে প্রতিনিয়ত কড়া নাড়ছে সত্য-বাস্তব কথা অকুতোভয়ে বলতে। 


এইচ এম জোবায়ের 

Ads