মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ইশকুল খুইলাছে রে...


একটি জনপ্রিয় গানের প্রথম একটি কলি এ রকম- ‘ইশকুল খুইলাছে রে মওলা, ইশকুল খুইলাছে/গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারি ইশকুল খুইলাছে’। গত ২৮ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বক্তব্য শুনে মনে হলো তিনি বোধ করি সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের একটি স্কুল খুলে বসেছেন। সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির আকস্মিক বৈঠক নিয়ে সরকার ও এক শ্রেণীর পত্রপত্রিকা তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়েছে। আসলাম চৌধুরীকে প্রথমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র মামলায় ৫৪ ধারায় আটক করা হয়। বলা হয়, তিনি ইসরাইলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সরকার উৎখাত করতে চেষ্টা করেছিলেন। আর মেন্দি এন সাফাদি ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং মোসাদের একজন এজেন্ট। ফলে দুইয়ে দুইয়ে চারের হিসেবে আসলাম চৌধুরী মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছেন।
আসলাম চৌধুরীকে ভারতের একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির যুব সংগঠন। ঐ অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসরাইলের নাগরিক আন্তর্জাতিক কূটনীতি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক সাফাদিকে। সেখানে আকস্মিকভাবেই দু’জনের দেখা হয়। আয়োজকরা দু’জনকেই ভারতীয় প্রথা অনুযায়ী ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন। এই সেমিনারের কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা আগ্রার মেয়রের আমন্ত্রণে আগ্রাও সফর করেন। সেখানকার ছবিও আছে। মেন্দি এন সাফাদি এসব ছবি তার ফেসবুক পেজে  অবিরাম আপলোড করেন। এই ছবি ঢাকার একাধিক সংবাদপত্র প্রকাশ করে একে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করে। আওয়ামী নেতারা এই ঘটনার সূত্র ধরে একেবারে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলেন। তারা শত মুখে বলতে শুরু করেন যে, বিএনপি মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছে। অতএব গোটা মুসলিম বিশ্বের উচিত বিএনপিকে বর্জন করা। তারা বলতে থাকেন, বিএনপি মুখে ইসলামের কথা বললেও আসলে এই দলটি ঘোর ইসলাম বিরোধী ও ইসরাইইলপন্থী। আর আওয়ামী লীগ হলো সাচ্চা ইসলাম-পছন্দ দল।
এ বিষয়ে আসলাম চৌধুরী তার বক্তব্য পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, মেন্দি এন সাফাদিকে তিনি আগে কখনও চিনতেনই না বা তার সঙ্গে সাফাদির কোনো রকম যোগাযোগ ছিল না। অনুষ্ঠানে সাফাদি যেমন একজন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন, তিনিও তেমনি আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। এতে তারা দু’জনই শুধু ছিলেন না, আরও অনেক অংশগ্রহণকারী ছিলেন। আর সাফাদির বাড়ি যে ইসরাইল তাও তিনি শুরুতে জানতেন না। আবার তিনি ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য কিনা সে বিষয়েও তার (আসলাম চৌধুরী) কোনো ধারণা ছিল না। সাফাদি নিজেও তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন যে, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার আগে কখনও পরিচয় ছিল না এবং দেখাও হয়নি। ওই সেমিনারে গিয়েই তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তিনি নিজে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক। আন্তর্জাতিক কূটনীতি নিয়ে কাজ করেন। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ঢাকা থেকে আমাদের অর্থনীতি ডট কম মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ‘ষড়যন্ত্র’ বিষয়ে জানতে চান। জবাবে সাফাদি ওই পত্রিকাকে একই কথা বলেন।
এদিকে ঢাকার ইংরেজি সাপ্তাহিক হলিডে তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানমূলক একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়-সাফাদির এই মুহূর্তে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই এবং তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও জড়িত নন। তবে এক সময় তিনি একজন উপ-মন্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। একথা সকলেই জানেন যে, ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ও ‘র’কে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সব ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রে রেজিস্ট্রিকৃত একটি ইসরাইলি কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় দুই শ’ কোটি ডলার মূল্যের আড়িপাতার যন্ত্রপাতি ক্রয় করছে। তাতে উভয় দেশের গোয়েন্দাদের পাশাপাশি বসে কাজ করতে হবে এবং এই প্রযুক্তি ইসরাইল এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও মেক্সিকোর কাছে বিক্রি করেছে। সেরকম একটি সময়ে আসলাম চৌধুরী তথা বিএনপিকে মোসাদের এজেন্ট সাজানো ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার বিষয়টি একটি হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়। তারপরও সরকার আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে এবং তাকে ৩০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছে।
ঘটনার এ পর্যন্ত সরকার বেশ আমোদের ভেতরেই ছিল। কিন্তু তারপর একটি বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেন্দি এন সাফাদির একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হলো। তাতে সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সাফাদিকে জিজ্ঞেস করেন যে, আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বাস্তবিক পক্ষে তার কি ঘটেছিল? জবাবে সাফাদি তার আগের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেন।  তাতে সাফাদি বলেন যে, তিনি আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হওয়ার বেশ আগেই ওয়াশিংটনে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ইউটিউবে আপলোড করা ওই ভিডিওর সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানান যে, সজীব ওয়াজেদ জয় নামে বাংলাদেশে একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। কিন্তু সাক্ষাৎকালে তিনি জানতেন না যে, জনাব জয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। তিনি বলেন, আমি জানতাম যে, তিনি বাংলাদেশের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তা আমি জানতাম না। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী টেলিভিশন পর্দায় জয়ের ছবি দেখিয়ে জানতে চান, ইনিই কি সেই ব্যক্তি? উত্তরে মেন্দি সাফাদি বলেন, হ্যাঁ ইনিই সেই ব্যক্তি যার সঙ্গে ওয়াশিংটনে সাক্ষাৎ হয়েছিল। সাফাদি আরো বলেছেন, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সাথে তার দেখা হয় ঘটনাক্রমে। তিনবার কথাও হয়। বাংলাদেশের আরো অনেকের সাথেই ফেসবুকে যোগাযোগ আছে তার। ভারতে আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে তার বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের নির্যাতন নিয়ে কথা হয়।
সচিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জয় তার কাছে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন যে, বাংলাদেশ সরকার কতো ভাল করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক কতো ভালো। মি. সাফাদি দাবি করেন যে, সারা বিশ্বে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবহার করে মি. ওয়াজেদ সরকারের পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন সাফাদি বলেন, তিনি মি. ওয়াজেদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। সাফাদি তাকে বলেন, বাংলাদেশে সংবাদ মাধ্যমে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের হত্যার খবর দেখতে পাচ্ছেন। মি. ওয়াজেদ তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, খবরগুলো ভুল। সব মিলিয়ে বৈঠকের স্থায়িত্ব ১৫ থেকে ১৬ মিনিটের বেশি ছিল না বলে সাফাদি বিবিসিকে জানান।
এই ভিডিওটি প্রচারিত হবার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বলা হতে থাকে যে, আসলাম চৌধুরী যদি সাফাদির সঙ্গে দেখা করে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করে থাকেন, তাহলে জনাব জয়ের বেলায় কি হবে? আমাদের অর্থনীতি এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিএনপি মোসাদ কানেকশনে ফেঁসে যাচ্ছে এ জন্য তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এগুলো করছে।  তার ধারণা এই ভিডিওটি ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার। তিনি বলেন, সজীব ওয়াজেদ জয় কি কারণে মেন্দির সঙ্গে বৈঠক করবেন তা তার জানা নেই। আর বৈঠক করার কোনো কারণও নেই। যে ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়েছে তা বানানো হয়েছে কিনা কিংবা উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি কর্মকর্তা হিসাবে জয়ের নাম সেখানে লাগানো হয়েছে কিনা সেটা দেখা হতে পারে। তিনি বলেন, এমনও হতে পারে, বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর নামে যখন মামলা হয়েছে ঠিক ওই সময়ে এই ভিডিও প্রকাশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বটে।
আমাদের অর্থনীতির পক্ষ থেকে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এই ঘটনা যদি সত্য হয় তাহলে আসলাম চৌধুীর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, জয়ের বিরুদ্ধেও কি একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান খান বলেন, বৈঠকের বিষয়ে আমি কিছুই তো জানি না, তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।
এভাবেই পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হয়ে আসে। এর পর ২৮ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক একই দাবি করে বলেন, ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নেতা মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বৈঠকের সংবাদটি বিএনপির সাজানো নাটক। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিভিন্ন মিডিয়ার বদৌলতে খবরটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিএনপির নেতারা লন্ডনে বসে সাফাদির সঙ্গে জয়ের বৈঠক হয়েছে বলে নাটক সাজাচ্ছে? আসলাম চৌধুরী আটক হওয়ার পর তারা যে সরকার উৎখাতের গভীর ষড়যন্ত্র করছিল তার বিভিন্ন তথ্য ফাঁস হওয়ার পর জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে নাটক সাজানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বিএনপি ইসরাইলকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করছে।
রিপোর্টটি আরো বেশি গুরুত্ব পায় বিবিসি বাংলা মেন্দি এন সাফাদির সাক্ষাৎকার প্রচার করার পর। সাফাদির ঘটনা নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন বিবিসি সাফদির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেই সাক্ষাৎকারে সাফাদি জানান, রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলায় অভিযুক্ত বিএনপি নেতা  আসলাম চৌধুরীর সাথে দিল্লীতে তার দেখা হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মি. ওয়াজেদের দফতরে দুজনের কথাবার্তা হয়। বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত রিপোর্ট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, বিবিসি বাংলার কোনো সাংবাদিক সাফাদির সাক্ষাৎকার নেননি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যাকব মিল্টন। সে কে? তারা নাটকটি বানিয়ে বিবিসি বাংলাকে দিয়েছে এবং তাদের ফিচার করতে বলেছে। আর বিবিসি যদি সাক্ষাৎকার নিত সেটা সাংবাদিকদের নিয়েই নিত। আর নিঃসন্দেহ তার গুরুত্ব থাকত। বিবিসির মতো একটা প্রতিষ্ঠান একজনের ধার করা ইন্টারভিউ নিয়ে প্রচার করেছে, যা কারো জন্যেই কাম্য নয়। যা সংবাদ জগতের জন্য কাম্য নয়। এটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, আমরা এমন সংবাদের নিশ্চয়ই প্রতিবাদ জানাব।
এখানে ঘটনা দুটো। ভিডিওটি প্রচারিত হয়েছে তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, খুব সঙ্গত কারণেই। বিবিসি এ বিষয়ে সাফাদির মন্তব্য জানার জন্য সাফাদির সঙ্গে যোগাযোগ করে। সাফাদি বলেন, চার পাঁচ মাস আগে তিনি যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে যান সে সময় তার একজন আমেরিকান বন্ধু দু’জনের মধ্যে এই বৈঠকটির আয়োজন করেন। ওই বন্ধু তাকে জানান, যার সঙ্গে তার দেখা হবে তিনি বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এর পর তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে সজীব ওয়াজেদের অফিসে যান।
এর প্রেক্ষিতে সজীব ওয়াজেদ জয় গত ২৯ মে তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে বলেছেন, সাফাদির সঙ্গে তার এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। তিনি বিএনপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা বলেছেন। জয় লিখেছেন, ‘বিএনপি এমনই এক বোকার দল, এমনকি তারা যখন মিথ্যা বলে তখনও বোকামিপূর্ণ ভুল করে। আমি চাই, বিএনপি ও সাফাদি একটা প্রশ্নের জবাব দিক। ওয়াশিংটনে ঠিক কোথায় সে আমার সাক্ষাৎ পেয়েছে? কোন অনুষ্ঠানে? অন্য কার অফিসে? প্রথম বোকামিপূর্ণ ভুল তারা করেছে কারণ আমি গত ৩-৪ বছরে ওয়াশিংটনে কোনো অনুষ্ঠান বা কারও অফিসে যাইনি। যে মিটিংগুলো আমার হয়েছে, সেগুলো সবই সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এবং একান্ত ব্যক্তিগত।
‘তাহলে কোথায় তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হতে পারে? আমার সঙ্গে সাফাদির কোনো সময়ই সাক্ষাৎ হয়নি। এটা ওয়াশিংটনেও না কিংবা অন্য কোনো জায়গায়ও না। সে মিথ্যা বলেছে। সে যে বিএনপির জন্য মিথ্যা বলতে সম্মত হয়েছে, সেটা দিয়ে এও প্রমাণিত হচ্ছে, সে বিএনপির সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত। না হলে আর কী কারণে সে বিএনপির হয়ে মিথ্যা বলবে? এটাও খুব লজ্জাজনক যে, বিবিসি বাংলা আসলেই সেই ভুয়া ইন্টারভিউটি ঘটনার সত্যতা যাচাই ছাড়াই প্রচার করেছে। এ ঘটনা সংবাদের উৎস হিসেবে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।’ উল্লেখ্য, সাফাদি জানিয়েছেন যে, তার সঙ্গে জয়ের সাক্ষাৎ হয়েছে জয়ের অফিসেই। অন্য কোথায়ও নয়।
এদিকে গত ২৯ মে আওয়ামী লীগ এক প্রতিবাদপত্রে সাফাদির সঙ্গে জয়ের বৈঠকের খবরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে খবরটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক বলে উল্লেখ করেছে। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা দ্ব্যর্থহনি ভাষায় বলতে চাই, প্রকাশিত এই সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা ও কল্পনাপ্রসূত। সত্যের লেশমাত্র এই সংবাদে নেই। এই সংবাদটি বাংলাদেশের জনগণ, সরকার, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের চলমান গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।’
এ সম্পর্কে বিবিসি বাংলা তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে, আওয়ামী লীগ তার প্রতিবাদপত্রে যে সাক্ষাৎকারের কথা বলেছে, বিবিসি বাংলা সে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কোনো সংবাদ প্রচার করেনি। লন্ডন থেকে আমেরিকায় টেলিফোন করে মি. সাফাদির সাথে কথা বলে তার দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে খবরটি অনলাইনে ও রেডিওতে প্রচার করা হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিবাদে বলা হয়, ‘এই সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে বিবিসি সজীব ওয়াজেদের সাথে যোগাযোগ করার সাংবাদিকতার নীতিমালার ন্যূনতম সৌজন্যতাবোধেরও পরিচয় দেয়নি।’ এ সম্পর্কে বিবিসি বলেছে, খবরটি প্রচারের আগে এর সত্যতা যাচাই করার জন্য টেলিফোনে ও ফেসবুকে মি. ওয়াজেদের সাথে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। খবরটি প্রচারের পর গত দু’দিন ধরেও তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
এর পর বোধ করি আর কথা থাকে না। হানিফের সাংবাদিকতা শেখানোর ইশকুলের দরজা এখানেই বন্ধ হবে কি?
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আমার স্মৃতিতে জনতার জিয়া


জীবন চলার পথে কিছু কিছু স্মৃতি আছে যা সারা জীবন সঙ্গী হয়ে জীবনের সাথে চলে। এমন তিনটি স্মৃতি  যা আমার জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। দুটি পরিচয়ের আর অপরটি বিদায়ের। ১৯৮০ এর জানুয়ারি মাস। তারিখটা মনে নেই। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী ও মালিবাগ এলাকায় সাজ সাজ রব। সবাই যেনো উৎসবমুখর। দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আসছেন দুটি স্কুল পরিদর্শনে। আমাদেরকে নিয়ে বড়দের কি না দৌড়ঝাপ। কারা কারা রাষ্ট্রপতিকে ফুল দেবেন  আর কে কি ধরনের পোশাক পরবে ইত্যাদি। যদিও আমি তখন শান্তিবাগ স্কুলের ছাত্র। বড় ভাই সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের ছাত্র হওয়াতে ভাইয়ের কারণে রাষ্ট্রপতিকে ফুল দেবার দলে চান্স পেয়ে গেলাম। সকাল  থেকেই নতুন পোশাকে ফুলের তোরা হাতে রাষ্ট্রপতির আগমনের অপেক্ষায়। বড়রা এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছেন। যতটা মনে পড়ে তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে ১১টা। হঠাৎ সাইরেন- রাষ্ট্রপতি আসছে। রাষ্ট্রীয় গার্ডসজ্জিত একটি সাদা রংয়ের গাড়ি থেকে ধূসর বর্ণের সাফারী পোশাক আর চোখে সোনালী সানগ্লাসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নেমে এলেন অপেক্ষমান জনতার ভিড়ে। কোন নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে হাসিমাখা মুখে একের পর এক সবার সাথে হাত মিলাতে মিলাতে সরাসরি চলে গেলেন মঞ্চের দিকে। আমরাও ছুটলাম তার পিছ পিছু- যে করেই হোক ফুলের তোরা রাষ্ট্রপতিকে দিতেই হবে। এরই মধ্যে মাইকে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে মঞ্চে আসন গ্রহণের জন্য আহ্বান করা হলো। এরপরই ঘোষণা আসলো ফুল দিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বরণ করে নেয়ার। মুক্তিযুদ্ধের ১১ সেক্টর এর পক্ষ থেকে আমরা ১১ জন শিশু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলাম। রাষ্ট্রপতি আমাদের সবাইকে মাথায় হাত দিয়ে আদর করেছিলেন। এরপর রাষ্ট্রপতি বক্তব্য রাখলেন। ভরাট কণ্ঠে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম দিয়ে বক্তব্য শুরু করলেন। সেদিনের সেই ভরাট কণ্ঠের ভাষণ আজও কানে বাজে।
১৯৮০ শেষের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন কর্তৃক আয়োজিত নতুন কুঁড়ি শিশু-কিশোর জাতীয় প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে আমি আবৃতিতে ২য় স্থান লাভ করি ঢাকা বিভাগের প্রতিযোগী হিসেবে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সকল প্রতিযোগীর সাথে একমঞ্চে এসে জীবন বাংলাদেশ গানটি গাইলেন। গান শেষে রাষ্ট্রপতি জিয়া সকলের সাথে করমর্দন করলেন। শিশুদের প্রতি শহীদ জিয়ার ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা। যে কারণে তিনি শিশু মন্ত্রণালয়, শিশুপার্ক এবং শিশু একাডেমীসহ নানা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
১৯৮১-এর ৩০ মে। যথারীতি ঘুম থেকে জেগে বাসার সবার স্কুলে যাবার প্রস্তুতির ধুম। মা নাস্তা বানাতে ব্যস্ত। বাবা সাধারণত ফজরের নামায পরে বাড়ির মধ্যেই রেডিও  হাতে নিয়ে  পায়চারি করেন। হঠাৎ বাবা-মাকে চিৎকার দিয়ে ডেকে বলেন, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়া কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য দ্বারা নিহত হয়েছেন। আমার যতটা মনে পরছে, আমার মায়ের হাতে থাকা রুটি বানানোর বেলুনটা হাত থেকে পরে গেলো। বাবার চোখ ছলছল। যেনো মুহূর্তের মধ্যে গোটা বাড়িটা বিস্বাদে পরিণত হলো। বাবা বললেন, স্কুলে যেতে হবে না। বাবা-মার সাথে আমরা সকল ভাই-বোন রেডিওর ঘোষণা শুনছিলাম। ঘোষণার মাঝে মাঝে কুরআন তেলাওয়াত আর হামদ-নাত চলছে। ইতোমধ্যে রেডিওতে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা হলো। সকাল ৯টার সময় বাবার সাথে মালিবাগ মোড়ে গেলাম। চারদিকে সুনসান নীরবতা। বাবার সাথে যারই দেখা হচ্ছে সবার চোখেই কান্না দেখেছি। বেড়ে ওঠার সাথে সাথে দেশ সম্পর্কে ধীরে ধীরে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাহাদাতে মানুষ যেভাবে শোকে কেঁদেছে তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তাঁর জানাযা ও দাফনের দিন বাবার সাথে আমি ও আমার বড় ভাই গিয়েছিলাম। মালিবাগ থেকে পায়ে হেঁটে জাতীয় সংসদের দিকে জনস্রোত ঠেলে সেখানে পৌঁছাতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অগনিত মানুষের ভিড়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পবিত্র কফিন অনেকের দেখার সুযোগ না হলেও সবাই এই জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ককে হƒদয় দিয়ে অনুভব করেছিল বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। জানাযা চলাকালীন সময় সবার কান্নার ধ্বনি আকাশ-বাতাসকে ভাড়ি করে তুলেছিল। আমার পাশে একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়েছিল। জানাযা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম সে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পরলো। সবাই যেনো শোক আর কষ্টে সেদিন উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে গিয়েছিল। জানাযা শেষে ২৭ বার তোপোধ্বনির মধ্যদিয়ে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সামরিক মর্যাদায় একজন দেশপ্রেমিক রাষ্ট্রনায়ককে দেশের ঐতিহাসিক স্থানে সমাহিত করা হয়। রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানকে শেষ বিদায়ের সেদিনের জনসমাগম তৎকালীন বিশ্ব ইতিহাসে রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। যেনো মনে হয়েছিল বাংলাদেশ শহীদ জিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাইতো যথার্থ লিখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি আল মাহমুদ ‘একটি কফিনের পাশে বাংলাদেশ’।
১৯৭৫ এর ৭ই নবেম্বর সিপাহী-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেনানিবাসের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে এই দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাস্টষ্টীয় ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে যখন তিনি দেশকে স্বনির্ভরতার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং দেশে পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরেয়ে এনে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যৈষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদকে ১৭ মে ১৯৮১ ভারত থেকে দেশে এনে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরছিলেন সেই সময়কার প্রেক্ষাপট নিয়ে আমার সাংবাদিকতা জীবন ও সামাজিক আন্দোলনের শিক্ষক সাবেক মন্ত্রী সাংবাদিক জগতের কিংবদন্তী মরহুম আনোয়ার জাহিদ জাতীয় যুব কমান্ডের এক আলোচনা সভায় বলেছিলেন, সেই সময় ঢাকার দেয়ালগুলোতে লিখা হয়েছিল ‘শেখ হাসিনা আসছে জিয়ার গদি কাঁপছে’। তিনি আরও বলেছেন, সেদিন শুধু জিয়ার গদিই কাঁপেনি, শেখ হাসিনা আসার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় জিয়া নিহত হয়েছিলেন। জিয়া হত্যা আর ঐ সময়ের দেয়াল লিখনী একই সূত্রে গাঁথা বলেও তিনি মন্তব্য করে জিয়া হত্যার পিছনে শেখ হাসিনার হাত রয়েছে মর্মে অভিযোগ করেন।
’৯০-এর পর বিএনপি ৩ বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকেও এ বিষয় কোন প্রকার পদক্ষেপ নেইনি। যদি বিএনপি সেদিন এ বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে শহীদ জিয়া হত্যা বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করতো তাহলে দেশের ইতিহাসটা ভিন্নভাবে লিখা হতো। এছাড়া আরও একটি বিষয় বিএনপি করতে পারেনি তাহলো জাতীয় দাবি থাকা সত্ত্বেও দেশের জন্য জীবনদানকারী স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক এই জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়কের শাহাদাতের দিনটিকে জাতীয় শোক এবং রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করতে।
আরও একটি বিষয় না উল্লেখ করলেই নয়। ১৯৯৬ সালে ঐকমত্যের সরকারের নামে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ফ্যাসিবাদী কায়দায় ৭ নবেম্বর এর রাষ্ট্রীয় ছুটি বাতিল করে দেয়। যে ব্যাপারে বিভিন্ন সংগঠনসহ অনেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন। সে সময় আমি এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম যা দৈনিক দিনকাল ও দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এই প্রবন্ধের এক জায়গায় আমি মন্তব্য করেছিলাম, পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, যদি ৭ নবেম্বর এর ছুটি বাতিল করা হয় তাহলে দেশে ভয়াবহ পরিস্থতি সৃষ্টি হবে। এই লেখার অপরাধে ১২ আগস্ট ১৯৯৬ আমাকে আমার মতিঝিলের অফিস থেকে সিটিএসবির একটি বিশেষ দল সাদা পোশাকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ ৩ মাস বিনা বিচারে হাসিনার কারাগারে বন্দী থেকে হাইকোর্টের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তিলাভ করি। ঐ সময়ে দেশের হাইকোর্ট অনেকটা নিরপেক্ষ ছিল।
আজ শহীদ জিয়ার লড়াইয়ে অর্জিত বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী অপশক্তির দখলে। দেশপ্রেমিক জনতা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। কারাগারগুলো পরিপূর্ণ জাতীয়তাবদী ও আদর্শিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের দ্বারা।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৫তম শাহাদাত দিবসে আমাদের শপথ হোক জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সকল বাধা উপেক্ষা করে ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশের স্বকীয়তা ফিরিয়ে এনে জনগণের শাসন ব্যবস্থা চালু করা।
মোহাম্মদ মাহবুব হোসাইন 

শনিবার, ২৮ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বৃক্ষের মতো সমাজেরও পতন হয়


কোথায় পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই, তবে কথাটি মনে আছে। ‘মানুষ প্রকৃতিরই অংশ এবং শ্রেষ্ঠ অংশ’ এমন কথায় ভাববার মতো অনেক বিষয় আছে। শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টা শুধু অহংকারের বিষয় নয়, গুণাবলীর বিষয়ও বটে। প্রকৃতির গুণের কথাতো আমরা জানি তবে মানুষের গুণের কথা কি প্রকৃতি জানে? প্রশ্নটা বেশ রহস্যঘন, তবে বোধের বাইরে নয়। আমরা মানুষরা জীবনে কোনো বস্তুর ভালোমন্দ প্রভাব বিবেচনা করে বস্তুর গুণাগুণ বিচার করে থাকি। ঠিক তেমনি মানুষের আচরণ প্রকৃতির ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে, তা বিবেচনায় এনে তো মানুষের গুণাগুণও বিচার করা যায়। আসলে প্রকৃতি বলি, মানুষ বলি সবইতো সৃষ্টি। স্রষ্টার সৃষ্টি বৈচিত্র্যের মধ্যেও রয়েছে নানা রহস্য। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে একটি বিষয় বেশ স্পষ্ট করেই বলা যায়, মানববান্ধব করেই প্রকৃতিকে সৃষ্টি করেছেন স্রষ্টা। তাহলে মানবের কর্মকাণ্ডও তো প্রকৃতিবান্ধব হওয়া চাই। বিশেষ কারণে স্রষ্টা মানুষকে বিশেষ কিছু সক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এই শ্রেষ্ঠত্ব কর্মে ও দায়িত্ববোধে প্রকাশ প্রয়োজন। কিন্তু তা না করে মানুষ যদি অহংকারী হয়ে ওঠে, দায়িত্বে গাফেল থাকে এবং প্রকৃতির সাথে সৃষ্টিতাত্ত্বিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়, তখন তো এই পৃথিবী আর সুন্দর থাকে না, মানুষের বসবাসও হয়ে ওঠে কষ্টকর। মানুষ যদি প্রকৃতিপরিচয় ভুলে গিয়ে প্রকৃতির প্রভু হতে চায়, তখন প্রকৃতি বিদ্রোহ করে। আসল প্রভুর দয়া ও অনুগ্রহ থেকেও বঞ্চিত হয় মানুষ। তখন লক্ষ্য করা যায় ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’। মহান স্রষ্টাও আমাদের জানান দিয়েছেন, জলে-স্থলে যে বিপর্যয় লক্ষ্য করা যায় তা মানুষেরই অর্জন। অর্জন তো মানুষকে ভোগ করতেই হবে- ভালো হলে ভালো, মন্দ হলে মন্দ ভোগ অর্থাৎ দুর্ভোগ-এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
কাগজের সফেদ পৃষ্ঠায় দর্শনভাবনার কিছু ছায়া পড়ে গেল। এর বাস্তব কারণ আছে। আমরা রাজধানী ঢাকার রমনা-উদ্যানকে ‘নগরীর ফুসফুস’ বলে থাকি। ফুসফুস ভরে শ্বাস নেয়ার মতো বিশাল সবুজ রয়েছে রমনায়। কিন্তু এই সবুজের রক্ষণাবেক্ষণ কেমন হচ্ছে? প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ অংশ মানুষ রমনার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছে। মানুষ যে তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না, এর বড় প্রমাণ শতবর্ষী মহুয়া গাছটি। প্রাচীন এই বৃক্ষটি এভাবে মূলশুদ্ধ উপড়ে পড়ে গেল কেমন করে? শুধু কি বয়সের ভারেই গাছটির মৃত্যু হলো, নাকি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা তথা পরিচর্যার অভাব ছিল এখানে? এমন প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠেছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, “শতবর্ষী একটি প্রাচীন গাছ উপড়ে পড়েছে এটুকুই খবর নয়, মহুয়ার অভিমানী প্রস্থান আসলে প্রশ্ন তুলেছে রমনার ব্যবস্থাপনা নিয়েই। যে কেউ গিয়ে দেখবেন উপড়ে পড়া মহুয়া গাছটির ভেতর জুড়ে খোঁড়ল এবং উইপোকার বাসা। রমনা পার্কটি গণপূর্ত অধিদফতরের; এই দফতরটি গোটা পার্কে ইট-পাথর-লোহার কাজ করে খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে। তারা মহুয়া গাছটির গোড়াও বেশ পোক্তভাবেই বাঁধাই করেছে। বেঁধে দেয়া চত্বরের পাথরে লাল-নীল-সবুজ রঙের প্রলেপও দিয়েছে। কিন্তু গাছটির গোড়ায় যে উইপোকা বাসা বেঁধেছে, তার খোঁজ কে রাখে? গণপূর্তের প্রকৌশলীর তো একাজ নয়। রমনায় সাম্প্রতিককালে কোনো উদ্যানবিদের দেখা মিলেছে এমনটি বলা যাচ্ছে না। রমনায় গাছ বড় হচ্ছে, বুড়ো হচ্ছে, সামান্য ঝড়েই ভেঙে পড়ছে, সেগুলোর ডালপালা কেটে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কোনো নতুন গাছ লাগানোর উদ্যোগ যেমন নেই, তেমনি সার-মাটি দিয়ে পুরোনো গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কোনো আয়োজন দৃশ্যমান নয়। সামনে বর্ষা আসছে, এই বর্ষায় পার্কজুড়ে গাছ রোপণের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা সেটাও জানা যায় না।”
রমনা পার্কের ব্যবস্থাপনায় লক্ষ্য করা গেল, বাহ্যিক পারিপাট্যের কাজটি ঠিকভাবে হলেও ভেতরের কাজে মনোযোগ নেই। গাছের বাঁধাই কাজ হয়, লাল-নীল-সবুজ রঙের প্রলেপও দেয়া হয় সাজানো পাথরে। কিন্তু গাছের গোড়ায় মাটি দেয়া হয় না, দেয়া হয় না সারও। আর গাছের ভেতরে উইপোকা বাসা বেঁধে যে ফোঁকলা করে দিচ্ছে, সেই খবর রাখার মতো ব্যবস্থাপনা নেই। এর ফলাফল যা হবার তা-ই হলো, বৃক্ষের পতন, আমাদের সমাজও যেন বৃক্ষসদৃশ। বাহ্যিক কাঠামো নির্মাণ ও পারিপাট্যের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ কিন্তু ভেতরের কাজ তেমন হচ্ছে না। ভেতরে যে, ঘুণে ধরেছে সেই খবর কেউ বলতেও চায় না। ফলে নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের সমাজের ভিত ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। মহুয়া গাছটির মতো আমাদের সমাজও যে ভেঙে পড়বে না সেই নিশ্চয়তা কে দেবে? সমাজ ও রাষ্ট্রের যারা কর্ণধার তারা বিষয়টি কতটা উপলব্ধি করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ


ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বক্তব্য রাখার সময় ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ পার্টি ও বিরোধী দল লেবার পার্টির বেশ কয়েকজন এমপি বাংলাদেশের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ ও আশংকা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড ও গুপ্তহত্যার পাশাপাশি যেভাবে রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে তার ফলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ একথা পর্যন্ত বলেছেন যে, বাংলাদেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। একদলীয় রাজনীতির উত্থান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাতজন এমপি। তারা বলেছেন, সাহায্যদানকারী রাষ্ট্র হিসেবে ব্রিটেনের উচিত এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা- বাংলাদেশে যাতে শাসনক্ষমতা একটি দলের হাতে কুক্ষিগত না হয়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। সাইমন ড্যানজ্যাক-এর মতো কোনো কোনো এমপি পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত সময়ের জন্য বাংলাদেশের ওপর অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবি জানিয়েছেন। 
উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হুগো সয়্যারও স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ ‘ঠিক পথে এগোচ্ছে না’। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্র এবং সে কারণে ব্রিটেন চায়, কমনওয়েলথ দেশটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। প্রতিমন্ত্রীর অন্য কিছু বক্তব্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রাধান্যে এসেছে। যেমন তিনি বলেছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোই হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন ব্রিটিশ সরকার তার সঙ্গে একমত নয়। ব্রিটেন বরং মনে করে, সমস্যা আরো অনেক গভীরে। সমস্যার সমাধানও বাংলাদেশের সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকেই করতে হবে। প্রতিমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানমুখী উদ্যোগ নেয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। 
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্ক এবং গৃহযদ্ধের আশংকা ব্যক্ত করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এমন এক সময়ে হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ প্রাধান্যে উঠে এসেছে যখন একের পর এক জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে, অন্যদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মতো অতি সাধারণ উপলক্ষেও মৃত্যু ঘটছে মানুষের। সব মিলিয়েই দেশ এক ভয়ংকর অবস্থায় পরিণত হয়েছে বলেই ‘গণতন্ত্রের সূতিকাগার’ নামে পরিচিত দেশ ব্রিটেনের পার্লামেন্ট সদস্যরা সোচ্চার না হয়ে পারেননি। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের এমপিদের পাশাপাশি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই প্রায় একই ধরনের বক্তব্য রেখেছেন।
প্রসঙ্গক্রমে প্রতিমন্ত্রী হুগো সয়্যারের একটি বক্তব্য বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, যেখানে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, দেশ ও সরকারকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোই চলমান হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এ প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে, বর্তমান সরকার ব্রিটেনের মতো প্রভাবশালী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আদৌ গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। এমপিদের মূল কথাগুলোও লক্ষ্য করা দরকার। তারা শুধু একদলীয় রাজনীতির উত্থান, আক্রান্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েই কথা বলেননি, বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের আশংকাও ব্যক্ত করেছেন। কোনো কোনো এমপি এমনকি অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাপারে কমনওয়েলথই ব্যবস্থা নেবে বলে আশা প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও অনেকাংশে একই মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। 
আমরা মনে করি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে সুরে ও ভাষায় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে তা থেকে সরকারের উচিত বিবেচনায় নেয়া। উল্লেখ্য, পার্লামেন্টে প্রথমবারের মতো উঠে এলেও এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক স্পেস সংকুচিত হয়ে গেছে ও যাচ্ছে’ ধরনের বক্তব্য রেখেছেন ব্রিটেন এবং ইইউভুক্ত দেশগুলোর মিশন প্রধানরা। এমন অবস্থায় এসব দেশ যে শংকিত সে সম্পর্কেও জানান দিয়েছেন তারা। এবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ওই আশংকারই প্রকাশ ঘটেছে। একযোগে এসেছে সংলাপে বসার সুনির্দিষ্ট পরামর্শও। বলা দরকার, সবই এসেছে অতীতের ধারাবাহিকতায়।  ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আয়োজিত একতরফা সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইইউ এবং কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার পাশাপাশি ব্রিটেনের পক্ষ থেকেও ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়েছিল। তখনও সকলে সংলাপের মাধ্যমে সংকট কাটিয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছিল। এই আহ্বানে সাড়া দেয়ার সময় এখনো রয়েছে এবং ইতিবাচকভাবে সাড়া দিলেই কেবল সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে আমরা মনে করি। গণতন্ত্রসম্মত ও সম্ভাবনাময় সে পথটিতে পা বাড়ানোর জন্য আমরা ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানাই।

মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সরকারের মোসাদ নাটক


 বিএনপির নবনিযুক্ত যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে সরকার এক নতুন নাটক মঞ্চস্থ করার কোশেশ করছে। আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন ব্যবসায়ী। আর ব্যবসার প্রয়োজনে তার ভারতে যাতায়াত আছে। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির যুব সংগঠনের আমন্ত্রণে তিনি একটি সেমিনারে যোগ দিতে দিল্লী গিয়েছিলেন। তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আর এক হিন্দু স্বার্থ রক্ষার কর্মী শিপন চৌধুরী। তার বাড়িও চট্টগ্রামে। সেই সেমিনারে আরও অনেকের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ইসরাইলের নাগরিক গবেষক ও রাজনীতিক মেন্দি এন সাফাদি। তাতে বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়।
এ কথা অস্বীকার উপায় নেই যে, বর্তমান সরকারের আমলে এদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বহু গুণে বেড়ে গেছে। তাদের জায়গা-জমি দখল করে নিচ্ছে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এর মধ্যে মন্ত্রীও আছেন। এর বিরুদ্ধে তারা যথাসম্ভব সোচ্চার প্রতিবাদও করছেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির ঊনিশ-বিশ কিছুই হয়নি। তারা মানববন্ধন করেছেন, বিভিন্ন স্থানে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। কোনো ফল হয়নি। তারা এমনও বলেছেন যে, বর্তমান সরকারের আমলে তাদের ওপর পাক বাহিনীর চেয়েও বেশি নির্যাতন হচ্ছে। সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবী আবুল বারাকাত তথ্য-প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে সরকার সমর্থক লোকেরাই বেশি জড়িত।
সরকার বিদেশী হত্যা, ব্লগার হত্যা, প্রকাশক হত্যা, অভিজিৎ হত্যা, তনু হত্যা, নাজিম হত্যা, কোনো ঘটনারই কোনো কিনারা করতে পারেনি। কিনারা করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনারও। বরং একটি ঘটনা দিয়ে আর একটি ঘটনা ধামাচাপা দেয়া চেষ্টা করেছে। তাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের উদ্বেগ হয়েছে যে, এসব ঘটনার সঙ্গে কি তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কারও কারও যোগসাজস রয়েছে? আর যা কিছু ঘটুক না কেন, কোনারূপ তদন্ত ছাড়াই গৎবাঁধা বুলির মতো সরকার আওয়াজ দিচ্ছে, এই ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত জড়িত। ফলে এর কোনো কিনারা করার তাগিদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কখনও অনুভব করেনি। অঘটনের পর অঘটন ঘটেই চলেছে।
দিল্লীর সেমিনারে যারা যোগ দিতে এসেছিলেন, সেখানকার রীতি অনুযায়ী তাদের সকলকে ফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। মেন্দি সাফাদি ও উদ্যোক্তারা সে ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ঐ দলের সঙ্গে আসলাম চৌধুরী আগ্রার মেয়রের আতিথেয়তায় আগ্রাও ভ্রমণ করেছেন।  সে ছবিও সাফাদি তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। সেখান থেকে ছবি নিয়ে ঢাকায় সরকারের কিছু ধামাধরা পত্রিকা লিখে দিয়েছে যে, বর্তমান সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য আসলাম চৌধুরী তথা বিএনপি মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে ষড়যন্ত্র করেছে। তারপর থেকেই চলছে নানা তুলকালাম কা-। পত্রিকার পাতায় ঝড়, টিভির টক-শোতে ঝড় : বিএনপি ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বসে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে।
যে-কোনো ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র দেখা আওয়ামী লীগের পুরানা অভ্যাস। কত রকম ঘড়যন্ত্রের দুঃস্বপ্ন যে তারা দেখে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। মোসাদ ষড়যন্ত্রও তার একটি। পত্রিকাগুলোও না জেনে, না শুনে, না ঘেঁটে বলে দিল যে, সাফাদি বলেন মোসাদের একজন উচ্চ পর্যায়ের এজেন্ট এবং তিনি ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির নির্বাহী কমিটির সদস্য। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা  এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। সাফাদিও বলেছেন, তিনি ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার ফেসবুক পোস্ট আপডেট করেন। তার সব কিছুই খোলা। কোনো রাখঢাক নেই। আর তাই তাকে গোয়েন্দা সংস্থার  লোক বলা অসমীচীন। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘গুপ্তচর বৃত্তি নয়, আমি আন্তর্জাতিক কূটনীতির সঙ্গে জড়িত। মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার লক্ষ্য হচ্ছে বিরোধী দলকে স্তব্ধ করা। আর যাতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আনার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানবাধিকার কর্মীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে তাদেরকেও গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের এটা স্বৈরশাসকীয় প্রক্রিয়া।’ আবার আসলাম চৌধুরীও তার সঙ্গে সাফাদির দেখা হওয়ার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, তবে সাফাদি গোয়েন্দা সংস্থার এজন্ট কিনা, সেটি তার জানা নেই। সেটি সম্ভবও নয়। কারণ কেউ যখন কোনো সেমিনারে যোগ দিতে যায়, তখন সেখানে অংশগ্রহণকারীদের বিস্তারিত বিবরণ অনুসন্ধান করে না। আসলাম চৌধুরীও তা করেননি।
তবে দেশের প্রধান ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হলিডে’ গত ২০ মে ভিন্ন খবর দিয়েছে। পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, আসলাম চৌধুরীর ভারত সফরের বহু আগে থেকেই বর্তমান সরকার ইসরাইলের সঙ্গে ঘুরপথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আসলাম চৌধুরীর যে সফরকে ষড়যন্ত্র বলে দেখানো হয়েছে, তার পোজ-দেয়া ছবিও আছে। কোনো ষড়যন্ত্রকারী গ্রুপ ছবি তুলে একেবারে জানান দিয়ে কখনও ষড়যন্ত্র করে না। যেমন ভারত সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা দুবেল গোয়েন্দা বৃত্তির জন্য দাড়ি রেখে টুপি পরে মুসলমান সেজে ছয় বছর পাকিস্তানের করাচীতে অবস্থান করেছিলেন। ধরা পড়েননি। সাফাদির রাজনৈতিক পরিচয় বড় কিছু নয়। তিনি ইসরাইলের একজন উপমন্ত্রী আইয়ুব কারা’র সহকারী ছিলেন মাত্র। তিনি কখনও লিকুদ পার্টির সদস্য ছিলেন না
আসলাম চৌধুরীকে দিল্লীতে ডেকে নেয়াটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা ছিল না। আর ভারতে ইহুদীদের আনাগোনা ও কার্যক্রম কোনো গোপন ব্যাপারও নয়। নীলনকশা অনুযায়ী আসলাম চৌধুরীকে ডেকে নিয়ে ছবিটবি তুলে তা প্রচার করে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে যে, যাতে এটা প্রচার করা যায় যে, বাংলাদেশের বর্তমান জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকারকে উৎখাতের জন্য বিএনপি ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছে। তবে একথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই, তাতে ইসরাইলের কোনো আগ্রহ নেই। এসব অপপ্রচারের মূল লক্ষ্য প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃত ঘটনা হলো এই যে, আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ইসরাইলী প্রতিষ্ঠান ভেরিন্টের কাছ থেকে ২০০ কোটি ডলার মূল্যের তথ্য প্রযুক্তি যন্ত্রপাতি কিনতে যাচ্ছে।
বিষয়টি পৃথিবীর অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারে ২০১৫ সালে। জিমি জনসন গ্লোবাল রিসার্চ.সিএ জানিয়েছে, ‘ইসরাইলী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই চুক্তির লক্ষ্য হচ্ছে, ইউনিট ৮২০০ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকার তথ্য আদান-প্রদান ধরতে পারবে। ইসরাইলী সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।’ ইউনিট ৮২০০-এর একজন সাবেক সদস্য ইদান টেন্ডলার জানিয়েছেন, ‘বাইরের গবেষণা ও অগ্রগতির ওপর নির্ভর না করে ৮২০০’র প্রযুক্তিবিদগণ তাদের গ্রাহকদের (গোয়েন্দা কর্মকর্তা) সঙ্গে সরাসরি কাজ করেন। তথ্য বিশ্লেষণ, ডাটা সংরক্ষণ, তথ্য আটকে দেয়া ও গোয়েন্দা ব্যবস্থাপনাসহ সকল প্রযুক্তি ব্যবস্থা ঘরের মধ্যেই করা সম্ভব। দু’পক্ষের প্রযুক্তিবিদরা প্রতিদিন পাশাপাশি বসে সুনির্দিষ্ট চাহিদা মোতাবেক সব ব্যবস্থা করতে পারবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরাপত্তার গোপনীয়তা একটি ইসরাইলী প্রতিষ্ঠানের কাছে যেমন প্রকাশিত হয়ে পড়বে, সেই সঙ্গে উভয় দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সমঝোতাও তৈরি হতে হবে। পত্রিকা একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যে, ২০১০ সালে গঠিত জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (এনটিএমসি) পক্ষে এই চুক্তির মধ্যস্থতা করেছেন সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা। অন্য একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছে যে, ২০১০ সালে সরকার যেখানে ৫০০০ কল পর্যবেক্ষণ করতে পারত, তা ২০১৩ সালে  সে ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজারে। ভেরিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি দেড় লাখ করতে চাইছে সরকার। ভেরিন্ট এই প্রযুক্তি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর কাছেও বিক্রি করেছে। অপর একটি সূত্র বলেছে, ‘আওয়ামী লীগ ও ইসরাইলের মধ্যকার এই বাণিজ্যিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতার বিষয়টি থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর ভারত সফরের ব্যবস্থা করে এবং তার সঙ্গে সাফাদির বৈঠকের ব্যবস্থা করে তার ছবি তুলে সেগুলো বাংলাদেশ ও ইসরাইলে প্রচারের ব্যবস্থা করে।
আওয়ামী লীগের এই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আরও দৃঢ় ভিত্তি পায় আওয়ামী লীগের এক এমপি আবদুল মান্নানের লেখা থেকে। আসলাম চৌধুরীর গ্রেফতারের আগের দিন ১৪ মে তিনি ডেইলি সান-এ এক নিবন্ধ লিখে বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায়। এই লক্ষ্যে মোসাদের গোপন চর মেন্দি এন সাফাদির (তিনি ইসরাইলের লিকুদ পার্টির সিনিয়র সদস্য ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও জনসংযোগ নামের একটি সংস্থার সিইও) সঙ্গে বিএনপির অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর কলকাতা, দিল্লী ও লন্ডনে বৈঠক হয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে।’ মান্নান লিখেছেন, তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন বাংলাদেশে মোসাদের দুই এজেন্ট শিপন বসু ও সঞ্জীব চৌধুরী। সে বৈঠকে তারা একমত হন যে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারকে সরিয়ে পছন্দের সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে পারলে ইসরাইল ও মোসাদের জন্য দরজা খুলে যাবে।
এভাবেই পাকিয়ে তোলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এখন পাঠকই বিবেচনা করতে পারবেন, আসল ঘটনা কী।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ছাত্রনেতারা এখন অপহরণ করে!


তরুণরা জাতির ভবিষ্যৎ। দরিদ্র পিতাও চান তার সন্তান লেখাপড়া করে মানুষ হবে, সংসারের হাল ধরবে। এজন্যই তো তারা সন্তানদের স্কুল-কলেজে পাঠান। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র দেশে সুষ্ঠুভাবে একটি কলেজ পরিচালনা করা সহজ কাজ নয়। অনেক কলেজেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই, ছাত্রাবাস তো দূরের কথা। যে কলেজে ছাত্রাবাস আছে সে কলেজের ছাত্রদের অনেক সুবিধা। যাতায়াতের কষ্ট থেকে তারা বেঁচে যায়, বেঁচে যায় তাদের সময় ও অর্থ। এদিক থেকে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। তাদের রয়েছে ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাসের ছাত্ররা সুশৃংখলভাবে চলবে, লেখাপড়ায় মনোযোগী হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তিতুমীর কলেজের ছাত্রাবাসে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল, যা ছাত্রদের সাথে যায় না। দৈনিক প্রথম আলোয় ২১ মে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে রাজধানীর তিতুমীর কলেজ শাখার ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদকসহ ৩ জনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার রাতে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী মো. তৌফিক মোল্লাকে আসামীরা পিস্তল ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে তিতুমীর কলেজের আঁখি ছাত্রাবাসের ৩০৮ নম্বর কক্ষে আটক রাখে। তারা তাকে মারধর করে এবং ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
অপহরণকারী ছাত্রলীগের ৩ নেতা হলেন তিতুমীর কলেজ শাখার যুগ্ম সম্পাদক নূরুজ্জামান উজ্জ্বল, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ এবং তিতুমীর কলেজের ছাত্র ও গুলশান থানা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মারুফ হাসান। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী মো. তৌফিক মোল্লাকে মহাখালী পর্যটন হোটেলের সামনে থেকে অপহরণ করে ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর তাকে তিতুমীর কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রাখা হয়। অপহরণকারীরা তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে খবর পেয়ে বনানী থানার পুলিশ উক্ত ব্যবসায়ীকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে। এ সময় সেখানে থাকা তিন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় তৌফিক মোল্লা ওই তিন ছাত্রলীগ নেতাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ভাবতে অবাক লাগে, ছাত্রনেতারা কী করে দেশের কোনো নাগরিককে অপহরণের কাজে জড়িত থাকে? আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, অপহরণের মতো ন্যক্কারজনক কাজ করে তারা কোনো গোপন জায়গায় আশ্রয় নেয়নি, বরং তারা ব্যবসায়ীকে নিজ কলেজের ছাত্রাবাসে এনে আটকে রেখেছে এবং দাবি করেছে মুক্তিপণ। কলেজ ছাত্রাবাসে এনে কাউকে আটকে রাখলে যে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যেতে পারে এবং অপরাধমূলক এ কাজের জন্য তাদের শাস্তি হতে পারে- সে বিষয়টিকে যেন তারা আমলেই নিতে চায়নি। তারা এতটা দুঃসাহসী ও বেপরোয়া হয়ে উঠল কেমন করে? তাদের মধ্যে কি এমন কোনো ধারণা জন্ম নিয়েছে যে, আমরা সরকারি দলের ছাত্রনেতা, আমাদের গায়ে হাত দেবে কে? বিষয়টি এমন হলে তা আমাদের ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির জন্য দুঃসংবাদ।  ভাবনার বিষয় হলো, এমন দুঃসংবাদ কোনো ব্যতিক্রমী বিষয় নয়। ছাত্র নেতাদের অপরাধমূলক ও সন্ত্রাসের নানা ঘটনা সারা দেশের শিক্ষাঙ্গন, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এক বড় অশনি সংকেত।  ব্লেম-গেম ও দলীয় ক্ষুদ্র রাজনৈতিক চেতনা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টিকে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকার, সরকারি দলসহ দেশের রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে আমরা যৌক্তিক ভূমিকা আশা করি।

রবিবার, ২২ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এবারের নির্বাচন : পশ্চিম বঙ্গের অবিসংবাদিত নেত্রীরূপে মমতার উত্থান


আজ লেখার শুরুতেই দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত পশ্চিম বঙ্গের নেতা মমতা ব্যানার্জীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। যেখানে কলকাতা এবং ঢাকা উভয় স্থানের বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক মহল নির্বাচনের পূর্বে মমতা তথা তার দলের ভরাডুবি হবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, নির্বাচনের পর প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা কত বড় ভুল ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। ভরাডুবি তো দূরের কথা, মমতা ব্যানার্জী তার বিধান সভায় (আমরা এগুলিকে বলতাম প্রাদেশিক পরিষদ) দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন নিয়ে জয়লাভ করেছেন। ২৯৪ টি আসন বিশিষ্ট পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য বিধান সভায় দুই তৃতীয়াংশ আসনের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯৬টি আসন। সেখানে মমতা পেয়েছেন ২১১টি আসন। অর্থাৎ দুই তৃতীয়াংশের চেয়েও তিনি ১৫ টি আসন বেশি পেয়েছেন। আমরা বাংলাদেশের মানুষরা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অথবা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কোন প্রদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা অন্য কোন বিষয়ে পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখি। তাই কোন একটি দল ইলেকশনে মেজরিটি পেলে আমরা যেমন অকারণে উল্লসিত হইনা, তেমনি কোন একটি দল হেরে গেলে আমরা অকারণে বিমর্ষ হই না। তবে যেটি বাস্তব ঘটনা এবং যেটি কঠোর সত্য সেটিকে আমরা সত্য বলবই।
মমতা ব্যানার্জী এই নির্বাচনের মাধ্যমে পশ্চিম বঙ্গের অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। এটি আরও একারণে বলছি যে, তার বিরুদ্ধে লড়েছে এমন তিনটি দল যে তিনটি দলের মধ্যে দুইটি সর্ব ভারতীয় বৃহত্তম দল। একটি হল কংগ্রেস, আরেকটি হল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি। এই দুটি দল পালা করে ভারতের ইতিহাসে প্রায় ৫৯ বছর রাজত্ব করেছে। এখন ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে বিজেপি। তাদের আগে কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল দুইটি টার্মে, অর্থাৎ একটানা ১০ বছর। ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জী পশ্চিম বঙ্গের ক্ষমতায় এসেছেন। তার আগে পশ্চিম বঙ্গে একটানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বাম ফ্রন্ট। মমতাকে হারাবার জন্য সেই বাম ফ্রন্ট আর কংগ্রেস এবার জোট বেঁধেছিল। অন্যদিকে আরেকটি সর্ব ভারতীয় দল, যে দলটি বর্তমানে দিল্লীর ক্ষমতায় আছে, সেই বিজেপিও এবার মমতা ব্যানার্জীকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য পশ্চিম বঙ্গে ইলেকশন করেছে। সোজা কথায় মমতা ব্যানার্জীকে লড়তে হয়েছে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে। এগুলো হলো সর্ব ভারতীয় ভিত্তিতে কংগ্রেস ও বিজেপি এবং প্রাদেশিক ভিত্তিতে সিপিএম। প্রচন্ড শক্তিশালী এই তিন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করা চাট্টিখানি কথা ছিল না। এই লড়াইয়ে প্রথমেই যেটি দরকার ছিল সেটি হলো ইস্পাত কঠিন মনোবল। মমতা ব্যানার্জীর সেটি ছিল। তাই এই ত্রি-শক্তির বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়ে মমতা ব্যানার্জী শুধু জয়লাভই করেননি, বরং ২০১১ সালে যতগুলি আসন পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন, এবার তার চেয়ে ২৭ টি আসন বেশি পেয়ে জয়লাভ করেছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ২০১১ সালের বিধান সভার নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জী পেয়েছিলেন ১৮৪ টি আসন। এবার পেয়েছেন ২১১ টি আসন। অর্থাৎ বিগত ৫ বছরে তার জনপ্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, একটি দুটি নয়, ২৭ টি আসন বেশী পেয়ে তার জয় জয়কার হয়েছে। অন্যদিকে সিপিএম আরো ডুবে গেছে। গতবারে তারা পেয়েছিল ৪০টি আসন। এবার ৮টি আসন হারিয়ে তারা পেয়েছে ৩২টি আসন। কংগ্রেসের বেড়েছে ২ টি আসন। গতবার তারা পেয়েছিল ৪০টি আসন, এবার তারা পেয়েছে ৪২টি আসন। সুতরাং এখন নির্দিধায় বলা যায় যে, মমতা ব্যানার্জী সন্দেহাতীতভাবে এখন পশ্চিম বঙ্গের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা। তবে বিজেপির জন্য অত্যন্ত ক্ষুদ্র হলেও একটি সুসংবাদ আছে। সেটি হলো, গতবারে তারা পশ্চিম বঙ্গ বিধান সভায় একটি আসনও পায়নি। কিন্তু এবার পেয়েছে ৩টি আসন। অর্থাৎ তারা পশ্চিম বঙ্গে পা রাখার একটি জায়গা পেল। তাই বলা যায় যে, এবারের নির্বাচনে এক প্রান্তে যেমন চরম উত্থান ঘটেছে মমতা ব্যানার্জীর, অন্য প্রান্তে তেমনি পা রাখার জায়গা পেয়েছে বিজেপি। মাঝখানে দিনে দিনে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে কংগ্রেস।
॥দুই॥
এখানে আমি কয়েকটি তথ্য এবং উপাত্ত দিচ্ছি। এই তথ্য এবং উপাত্ত থেকে প্রমাণিত হবে যে, কতখানি অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন মমতা ব্যানার্জী। আসলে তিনি পাহাড় ডিঙ্গিয়েছেন। একটু পেছনে তাকালে দেখা যায় যে, ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাষ্ট ভারত স্বাধীন হলে (পাকিস্তান স্বাধীন হয় ১৪ অগাষ্ট, আর ভারত স্বাধীন হয় ১৫ অগাষ্ট) পশ্চিম বঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ। তিনি ছিলেন কংগ্রেস নেতা। প্রফুল্ল ঘোষের পরে মুখ্য মন্ত্রী হন ড. বিধান চন্দ্র রায়। তারপর প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। এরা সকলেই ছিলেন কংগ্রেস নেতা। এই তিনজন একটানা রাজ্য শাসন করেন ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ ভারত বিভক্তির পর কংগ্রেস পশ্চিম বঙ্গে একটানা শাসন করে ২০ বছর। এরপর অজয় কুমার মুখার্জী কংগ্রেসের হয়ে ৮৪ দিন রাজ্য শাসন করেন। সেটি ১৯৭১ সালের ২রা এপ্রিল থেকে একই বছরের ২৫ জুন পর্যন্ত। এরপর ১৯৭২ সালের ২০ মার্চ পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন কংগ্রেসের সিদ্ধার্থ শংকর রায়। তিনি শাসন করেন ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। অর্থাৎ তিনি শাসন করেন ৫ বছর। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, কংগ্রেস প্রথমে টানা ২০ বছর এবং পরে কিছুটা বিরতি দিয়ে ৫ বছর - মোট ২৫ বছর পশ্চিম বঙ্গের ক্ষমতায় ছিল। ১৯৭৭ সালের পর এখন ২০১৬ সাল। এই ৩৯ বছর কংগ্রেস আর ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। আগামী ৫ বছরও তারা ফিরতে পারবে না। সুতরাং সাধারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে যে, কংগ্রেস কম করে হলেও ৪৪ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকবে। পরবর্তী নির্বাচন হবে ২০২১ সালে। তখন জনগণ কংগ্রেসের দিকে ফিরে তাকাবে কিনা সেটা নিহিত রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে।
সিদ্ধার্থ শংকর রায় ক্ষমতা থেকে আউট হওয়ার পর ৫১ দিনের জন্য পশ্চিম বঙ্গে রাষ্ট্র প্রধানের শাসন জারি হয়। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিউনিষ্ট পার্টি (মার্কস বাদী) বা সিপিএম ক্ষমতায় আসে। মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন সিপিএম নেতা জ্যোতি বসু। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন থেকে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩ বছর তিনি পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন সিপিএম নেতা বুদ্ধ দেব ভট্টাচার্য্য। তিনি ক্ষমতায় থাকেন ২০১১ সালের ১৩ মে। অর্থাৎ মোট ১১ বছর। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সিপিএম একটানা ৩৪ বছর পশ্চিম বঙ্গের ক্ষমতায় থাকেন। ২০১১ সালের নির্বাচনে সিপিএম পরাজিত হয় এবং তাদের একটানা ৩৪ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটে। ক্ষমতায় আসেন মমতা ব্যানার্জী। এবারও তিনি বিপুল বিজয়ে ক্ষমতায় এসেছেন।
দেখা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র কংগ্রেস এবং সিপিএম পশ্চিম বঙ্গের ক্ষমতায় ছিল ৫৯ বছর। এই দুই প্রবল পরাক্রান্ত শক্তিকে ধরাশায়ী করে ক্ষমতায় এসেছেন মমতা ব্যানার্জী। সেজন্যই বলেছি যে কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপিকে কুপোকাৎ করে যিনি ক্ষমতায় এসেছেন তাকে যদি পশ্চিম বঙ্গের অবিসংবাদিত নেতা বলা হয় তাহলে কোন ভুল বলা হয় না।
॥তিন॥
মমতা ব্যানার্জী এমন এক মহিলা যিনি তার ৬১ বছর বয়স পর্যন্ত সারা জীবন কুমারী রয়েছেন। অতীতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাজনীতিকেই তিনি বিয়ে করেছেন। তিনি রাজনীতির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, এই কথাটির সত্যতা মেলে যখন আমরা দেখি যে, তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ২৭ বছর কংগ্রেসে ছিলেন। ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। আরেকটি খবর অনেকে জানতেও পারেন, নাও জানতে পারেন। সেটি হলো, তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসে মাষ্টার্স করেছেন। এরপর তিনি শ্রী শিক্ষায়তন থেকে শিক্ষায় ডিগ্রী লাভ করেন। এছাড়া কলকাতার যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী ল’ কলেজ থেকে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। মমতার একটি দিককে অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে। তিনি লম্বা সময় ধরে দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি রেল মন্ত্রণালয়, কয়লা ও খনি মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া, যুব কল্যাণ, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই নেত্রী অত্যন্ত সাদা সিধে জীবন যাপন করেন। তিনি সব সময় তাঁতের শাড়ী পরেন। তিনি কখনও প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহার করেন না। অথবা গয়না গাটি পরেন না। সব সময়ই তার কাঁধে সুতি কাপড়ের একটি ঝোলার ব্যাগ দেখা যায়। তার হাতে হাল ফ্যাশনের ভ্যানিটি ব্যাগ কদাচিৎ দেখা যায়।
॥চার॥
কেন মমতার এই বিশাল জনপ্রিয়তা? এই নিয়ে নানান জন নানান রকম বিশ্লেষণ দেন। কোনটাই মিথ্যা বা ভিত্তিহীন বলব না। আমার মতে সেই গুলো অর্ধ সত্য, পূর্ণ সত্য নয়। তবে পশ্চিম বঙ্গে ভোটের আগে এবং ভোটের সময় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক বলে যারা নিজেদেরকে দাবী করেন তাদের দাবী বা পর্যবেক্ষণ সঠিক হয় না। এর একটি কারণ আছে। সেটি হলো, এদের প্রায় সকলেই নিজ নিজ দলীয় মতাদর্শ বা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মমতার রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করেন। মমতা ব্যানার্জী বড় বড় কর্পোরেট হাউজের সাথে সরাসরি জড়িত নন। ভারতের ধনাঢ্য পরিবারগুলো কংগ্রেস বা বিজেপির সাথে জড়িত, সেটি প্রত্যক্ষ ভাবে হোক আর পরোক্ষ ভাবে হোক। সে জন্য বড় বড় টেলিভিশন এবং পত্রিকায় মমতার শুধুমাত্র খুঁত ধরা হয়। তার ব্যক্তি জীবনের বা রাজনীতির ইতিবাচক বা পজিটিভ সাইড কোন সময় হাইলাইট করা হয় না।
মমতা ব্যানার্জীকে বিচার করতে হলে মমতা ব্যানার্জীর অবস্থান থেকে তাকে বিচার করতে হবে, কংগ্রেস বা বিজেপি অথবা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বা ভারত পন্থী কোন দলের চোখ দিয়ে তাকে বিবেচনা করা যাবে না। মমতা ব্যানার্জী যতদিন কংগ্রেসের সাথে ছিলেন ততদিন তিনি এক ধরণের কথা বলেছেন। কিন্তু যখন তিনি আঞ্চলিক অর্থাৎ বাংলার রাজনীতিতে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন তখন তার চিন্তাধারা এবং বক্তব্য সম্পূর্ণ বদলে যায়। তার বক্তব্য বিবৃতি পড়ে স্পষ্ট মনে হয় যে, তার বর্তমান রাজনীতি হলো বাংলার অর্থাৎ পশ্চিম বঙ্গের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। তার স্ট্র্যাটেজি হলো, পশ্চিম বাংলার অর্থনৈতিক স্বার্থ সহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা আদায় করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাওয়া। পশ্চিম বঙ্গের ন্যায্য দাবী দাওয়া দিল্লীর নিকট থেকে কড়ায় গন্ডায় আদায় করাই তার বর্তমান রাজনীতির সেন্ট্রাল পয়েন্ট বলে মনে হয়। সেজন্য আগামী ৫ বছর তিনি কোন ভূমিকা গ্রহণ করেন সেটি দেখার জন্য বাংলাদেশ সহ ভারতের অনেক মানুষ প্রতীক্ষায় থাকবে। 

শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নির্বিচার এই হত্যাকাণ্ডের শেষ কোথায়?


গণতন্ত্রবিহীন একটি দেশের অবস্থা কেমন হতে পারে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেন তার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধমে ক্ষমতা দখল করে রাখা অবৈধ আওয়ামী সরকার জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, রিমান্ড এবং গুম-খুনের মধ্যে দিয়ে দেশে কায়েম করেছে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। বিরোধীদল ও ভিন্নমতের মানুষের লাশ পাওয়া যাচ্ছে খালে-বিলে, নদী-নালায়, ডাস্টবিনে যত্রতত্র। রাষ্ট্রীয় মদদে ক্রসফায়ারের নামে টার্গেট কিলিং দিন দিন বেড়েই চলছে। কখনো সাতক্ষীরা, জয়পুরহাট, লক্ষ্মীপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী আবার কখনো বা ঝিনাইদহ, একের পর এক জনপদ রক্তাক্ত হচ্ছে। কোন কোন স্থানে এটি পরিণত হয়েছে গণহত্যার মিছিলে।
দেশে এখন বিরোধী মতের মানুষ অনিরাপদ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খোদ আইন ভঙ্গ করছে, এমনকি সরকারের নির্দেশও অনেক সময় মানছে না এমন অভিযোগ অহরহ। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কোন অভিযোগ সরকার বাহাদুর(!) আমলে আনছে না, বরং দেশে যথেষ্ট শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রয়েছে, গণতন্ত্র আরো সুসংহত হয়েছে ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন উপচে পড়ছে বলে দাবি করছে। প্রধানমন্ত্রী পুত্র ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে গত ১৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে সকল সমালোচনাকে নাকচ করে দিয়ে লিখেছেন “যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুলনা করলে আমাদের পুলিশ কম হত্যা করেছে এবং আমরা অপহরণ বা নির্যাতনকে কোনভাবেই অনুমোদন করি না।”
একই সুরে সুর মিলিয়ে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত ২৫ এপ্রিল সোমবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার কার্যালয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়েন। এরমধ্যে ব্লগার হত্যা, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের মূল ফটকের কাছে অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান কারারক্ষীকে গুলী করে হত্যা এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের পর ‘পরিস্থিতির কি অবনতি হচ্ছে না?’ প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “অবনতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবকিছু দমন করা হচ্ছে। কেউ বাদ যাচ্ছে না। সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেজন্য আমি মনে করি আমাদের দেশ, আমরা অনেক নিরাপদ আছি।” (দৈনিক ইত্তেফাক- ২৫/০৪/১৬)। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী এমপি-মন্ত্রীরা যে যাই বলুক, প্রকৃত অর্থে দেশের অবস্থা কতটা ভয়াবহ তা কেবল ভুক্তভোগী ও সচেতন নাগরিক মাত্রই জানেন ও বুঝেন।
সরকারের নানামুখী আশ্বাস ও চটকদার বক্তব্যে এখন কেউ আশ্বস্ত হতে পারছে না। কে তাদের নিরাপত্তা দেবে? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে প্রতিনিয়ত কাউকে না কাউকে বাসা-বাড়ি, হাট-বাজার থেকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের সন্ধানের জন্য ধরণা দিলেও তারা তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করছে অহরহ। নেয়া হচ্ছে না কোন উদ্ধার তৎপরতা। ২৪ ঘণ্টা বা একটা সময় পরে কোথাও না কোথাও তাদের লাশ মিলছে। এরপর সংবাদে বন্দুকযুদ্ধ নাটকের স্ক্রিপ্ট উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথচ প্রায় প্রতিটি ঘটনায় গ্রেফতারের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্পূর্ণ অস্বীকার করে থাকে। গুম হওয়ার পর বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চেীধুরী আলম, ইবি ছাত্রশিবির নেতা আল-মুকাদ্দাস, ওয়ালী উল্লাহ, হাফেজ জাকির হোসেন বা সিলেট ছাত্রদল নেতা দীনারের মত কত নাম না জানা বিরোধী মতাদর্শের নেতা-কর্মীর ভাগ্যে কি ঘটেছে তার খবর কে বা রাখে? কবে শেষ হবে তাদের স্বজনদের অপেক্ষার পালা ?
এমন হত্যাকাণ্ডের শেষ কোথায়?
প্রথমে সাদা পোশাকের পুলিশ পরিচয়ে গ্রেফতার, তার কয়েকদিন পর মিলছে লাশ। এটি এখন বাংলাদেশের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ক্ষমতার আসনকে পাকাপোক্ত করতে প্রতিদিনই খালি হচ্ছে কোন না কোন মায়ের বুক। জালিম সরকারের রক্ত পিপাসা দিন দিন যেন বেড়েই চলছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, আলেম ও সাধারণ মানুষ সহ তাদের গুম-খুনের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। জামায়াতের দলীয় সূত্র মতে, জনগণের রাজপথের প্রতিবাদ দমন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যয় করে পুলিশ-র‌্যাবের গুলী-ক্রসফায়ারে এ পর্যন্ত (আওয়ামী লীগ সরকারে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সময়কাল) ৬৬৮ জন নিহত হয়েছেন, এছাড়াও ৭০ হাজার ৩’শ এর অধিক হয়েছেন আহত, ১ লক্ষ ৫১ হাজারের অধিক নাগরিককে আটক করা হয়েছে, ২ লক্ষ ৩’শ এর অধিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় ১০ লক্ষ ২ হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০১৫ সালেই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ১৯৩ জন বা তারও বেশি। যার মধ্যে ১৪৩ জনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্রসফায়ারে হত্যা করে। এদের বেশির ভাগই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। কিন্তু স্বাধীন সার্বভৌম দেশে কেন এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড? আর কত মায়ের বুক খালি হলে বন্ধ হবে এই জঘন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ? এমন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শেষ কোথায়?
গ্রেফতারের পর পুলিশের ধারাবাহিক অস্বীকার ও মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা : সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা প্রবাহের নজির আরো ভয়াবহ। ইতঃপূর্বের ঘটনাগুলোতে গুমের পর অন্তত ক্রসফায়ারের কথা মিডিয়ায় স্বীকার করলেও বর্তমান সময়ে তাও স্বীকার করছে না, কারো লাশ খালে বিলে মিলছে আর কারো হদিস নেই দিনের পর দিন। ধারাবাহিক গুম-খুনের ঘটনার সর্বশেষ কয়েকটি ঘটেছে ঝিনাইদহে- গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে হাফেজ জসিমকে ডিবি পরিচয়ে গুম করার ২১ দিন পর ৩ মার্চ গভীর রাতে গুলী চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে ঝিনাইদহ জেলার কুঠিদুর্গাপুর মাদরাসার শিক্ষক আবু হুরায়রাকে তার কর্মস্থল থেকে গ্রেফতার করে গুম করে ডিবি পুলিশ, ৩৬ দিন পর তার লাশ যশোরের চৌগাছা সড়কের পাশে থেকে উদ্ধার করা হয়। গত ১৮ই মার্চ ২০১৬ তারিখে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ৪ জন ব্যক্তি পুলিশ পরিচয়ে মায়ের সামনে থেকে আবুযর গিফারীকে তুলে নিয়ে গুম করার ২৬ দিন পরে ১২ এপ্রিল গভীর রাতে গুলী চালিয়ে তাকে হত্যা করে। একই কায়দায় গত ২৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে শামীম হোসেনকে পুলিশ পরিচয়ে গুম করার ২৬ দিন পরে ১২ এপ্রিল গভীর রাতে গুলী চালিয়ে তাকে হত্যা করে। দুই ছাত্রের রক্তের দাগ না শুকাতেই গত ২০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ঘাতকের নির্মমতার শিকার হয় আরেক মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন সোহান, যাকে একইভাবে ১০ এপ্রিল পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করার ৯ দিন পরে গুলী চালিয়ে হত্যা করা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ভিকটিমদের প্রত্যেকের পরিবার নিখোঁজের পরে তাদের অবস্থান জানতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করলে তারা তাদের গ্রেফতারের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে। এমনকি অধিকাংশ ভিকটিমের জন্য থানায় কোন জিডি পর্যন্ত নেয়নি, নেয়া হয়নি কোন উদ্ধার তৎপরতা। প্রকাশ্যে দিবালোকে গ্রেফতারের পর পুলিশের সরাসরি অস্বীকার ও আদালতে হাজির না করা নিয়ে নানা আশঙ্কার জন্ম দেয়। পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ এবং তাদের সন্ধানের দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করা হয়, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ছেলেদের সন্ধানের দাবিতে প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের কাছে ধর্ণা দিয়েও পরিবারের কোন লাভ হয়নি। প্রত্যেকের গুম হওয়ার ঘটনা, পুলিশের অস্বীকার, গুলীবিদ্ধ লাশ পাওয়ার ঘটনা একই রকম।
কারা চালাচ্ছে এই গণহত্যা?
প্রতিটি হত্যার ধরন একই। কলেজ ছাত্র সোহানকে অপহরণের সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা কালীগঞ্জ থানার এস আই নীরব ও এ এস আই নাসিরকে চিনতে পারে। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এটি একটি পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ড এবং এতে পুলিশ সরাসরি জড়িত। কিন্তু সরকারের নির্দেশ ছাড়া শুধু পুলিশের পক্ষে এত বড় গণহত্যা চালানো কি সম্ভব? এটি এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট সরকারের নির্দেশেই পুলিশ ঝিনাইদহসহ সারাদেশে একের পর এক গণহত্যা চালাচ্ছে। হয়ত এহেন ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ভবিষ্যতে প্রতিফোঁটা রক্তের হিসাব আজকের ক্ষমতাসীনদের দিতে হবে।
স্বজন হারাদের সাথে আলাপ কালে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরজন্য প্রশাসনকে দায়ী করেন এবং সন্তান হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। সম্প্রতি কালে ঝিনাইদহে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার কয়েকজনের বক্তব্য...
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হাফেজ জসিম উদ্দিনের পিতাকে তার ছেলেকে কে বা কারা হত্যা করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন পুলিশ ছাড়া কেউ আমার ছেলেকে মারেনি।” আপনার ছেলেকে উদ্ধারে পুলিশের ভূমিকা কেমন ছিল এমন উত্তরে তিনি বলেন “আমার ছেলের উদ্ধারের জন্য পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, তারা আমার বাড়ি আসেনি।” আপনি কি এই হত্যার বিচার চান, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন “বিনা কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, আমি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। তার কারণ আমার ছেলে ভাল মানুষ, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে ৩০ পারা কুরআনে হাফেজ, তাকে বিনা কারণে হত্যা করা হয়েছে।”
ঝিনাইদহে আরেক হত্যাকাণ্ডের শিকার শিবির নেতা আবুযর গিফারীর বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে প্রশাসনিক লোক, পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে গেছে। জুমার নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুইটা মোটর সাইকেল ৪টা লোক, অস্ত্রধারী লোক, পিস্তল আছে, হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে মোটর সাইকেলে করে পুলিশ পরিচয় দিয়ে নিয়ে গেছে। থানায় গিয়েছিলাম জিডি করার জন্য, তারা দুই কপিই রেখে দিয়েছিল, এন্ট্রি করেনি”। আপনার ছেলেকে কারা হত্যা করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন “যেহেতু প্রশাসনের লোকেরা নিয়ে গিয়েছে সেহেতু তারাই মেরেছে, আমার মনে হয়।” হত্যার বিচার চান কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন “অবশ্যই দোষীদের বিচার চাই। আমার ছেলে খুব ভাল ছিল, চরিত্রবান, আমাদের চোখে তার কোন দোষ নাই, তবে একটাই মাত্র কারণ দেখতেছি শিবির সংগঠন করার কারণেই তাকে মারা হয়েছে। সে এম এম কলেজে পড়ত, অনার্স ৩য় বর্ষে বাংলাতে। আমার ১ ছেলে মেয়ের মধ্যে সে বড়।”
আরেক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শামীম হোসেনের পিতার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন “আমার ছেলেকে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ গেটের পূর্বপার্শের ফার্নিচারে দোনাকে বসে সে পত্রিকা পড়ছিল। ঐ সময় চারজন মোটর সাইকেলে করে এসে তাকে নিয়ে যাচ্ছিল, স্থানীয়রা বাধা দিলে তখন তারা বলে আমরা প্রশাসনের লোক। এ কথা বলে হাতে হ্যান্ডক্যাপ দিয়ে তাকে নিয়ে যায়। পুলিশের কাছে বারবার আমরা গিয়েছি, ওসি সাহেবের সাথে কথা হয়েছে, তিনি বলেন, এটাতো আমরা জানিনা, আমরা খুঁজছি। আমরা জিডি করতে গেলাম ওনারা জিডি এন্ট্রি না করে বল্লেন যে, কপি আমাদের কাছে আছে, অসুবিধা কি? ওনারা জিডি গ্রহণ করেননি।” আপনার ছেলেকে কারা হত্যা করেছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে শামীমের বাবা বলেন “প্রশাসনের কথা ওরা যেহেতু বলেছে প্রশাসনের লোকেরাই তাকে হত্যা করেছে। এখন এ প্রশাসনের লোক কারা এখন এটাইতো আমরা এখনো খুঁজে পেলাম না। প্রশাসন বলতে কি বুঝাইল ওনারা?” আপনি কি আপনার ছেলে হত্যার বিচার চান, এমন প্রশ্নের উত্তরে কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন অবশ্যই বিচার চাই। একটা ছেলেকে দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে মানুষ করার পরে, সে ছেলে যখন স্বাবলম্বী হওয়ার পথে তখন তারা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, যার কোন অপরাধ নাই, আমি এই পর্যন্ত অনেক তথ্য অনুসন্ধান করেছি যার অপরাধটা কি? আমি তার জানাযায়ও বলেছি তাকে কোন অপরাধে হত্যা করা হয়েছে? আমি এর জবাব এখনো পাইনি। আমি এর বিচার চাই। যদি নাও পাই, আল্লাহর আদালতে বিচারটা দিয়ে রেখেছি।”
অপর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার মহিউদ্দীন সোহানের পিতার বলেন- “আমি ঢাকায় ছিলাম, তার মাকে বাড়িতে (ঝিনাইদহে) পাঠাই। তার মা বাস থেকে নামার ১০ মিনিট আগে সাদা পোশাকধারী ৪ জন পুলিশ ইজিবাইকে করে তাকে কালীগঞ্জে নিয়ে যায়। থানায় আমার পরিবারের লোকজন গেলে তারা গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে। ১০ এপ্রিল তাকে নিয়ে যায় ১১ তারিখ জিডি করেছিলাম তারা জিডি ইস্যু করেছিল ১২ তারিখ। ওনাদের কাছে ধরণা দিলে ওনারা বলেন তারা আপনার কাছে আসবেন, আসলে হয়ত কিছু চাইবেন, আর আপনি খোঁজাখুজি করেন। আমি বল্লাম আপনারা খোঁজেন তারা বল্লেন আমরাও খুঁজছি। আমি খোঁজাখুঁজির ভিতর ছিলাম। ২১ এপ্রিল সকাল বেলা ঝিনাইদহ এসপি সাহেবের কাছে তার মা সহ যাব, এমন সময় একজন ফোন করে বল্ল আপনার ছেলের লাশ অমুক জায়গায় পাওয়া গিয়েছে।” আপনার ছেলেকে কারা হত্যা করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে সোহানের বাবা বলেন “এখন পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে কারা যে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আমি সঠিক বলতে পারব না। পুলিশ নিয়ে গেছে এটাই আমি জানি। কান্না জড়িতভাবে বলেন, তিনি বলেন আমি অবশ্যই আমার শিশু হত্যার বিচার চাই। তার বয়স ১৬ বছর। তার নামে কেইস নাই, কিছু নাই, কোন দল করত না। সে কোন দলের সাথে ছিল কিনা তাও জানিনা। তার পরেও আমি সবার কাছে ধরণা দিয়েছি অন্তত আমার ছেলের জীবন ভিক্ষা দিতে। ২ ছেলে ১ মেয়ে, সে সবার বড় ছেলে। সে আমার বড় আদরের ছেলে”।
এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। যেখানে কারো জানমালের নিরাপত্তা নেই। সরকারের নেই জনগণের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা। রাষ্ট্রীয় মদদে খুন বা গুম হওয়ার পরে জনগণ কার কাছে নিরাপত্তা চাইবে ? এমন অপ্রত্যাশিত অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য প্রেেয়াজন জনগণের সরকার। আর সেই প্রত্যাশিত সরকারের প্রয়োজনে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা সরকারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া মুক্তির কোন বিকল্প নেই। 
মুহাম্মদ আবদুল জব্বার 

বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আযানের বিস্ময়কর প্রভাব


ঢাকা শহরকে বলা হয় মসজিদের শহর। প্রতিদিন শত শত মসজিদ থেকে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি। কিন্তু আযানের এই ধ্বনি রবার্টকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে তা ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়। দিন কয়েকের জন্য তুরস্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন রবার্ট। সেখানকার সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়ানোর সময় আশপাশের মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আযানের শব্দ শুনতে পেতেন তিনি। আযান শুনতে শুনতেই ইসলাম সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন রবার্ট। তাই তো স্কটল্যান্ডের নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর স্থানীয় এক বইয়ের দোকান থেকে কিনে আনেন একটি কুরআন শরীফ। কুরআন পড়তে পড়তে অদ্ভুত আবেগে আপ্লুত হতে থাকেন রবার্ট। নিজের অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পান। এ সময় তিনি নানা দোলাচলে দুলতেন। কখনো কখনো কুরআন পড়া বাদ দেয়ারও চিন্তা করেছেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ এটি হতো নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ানো। তাই তিনি কুরআন পড়া অব্যাহত রাখেন। ইংরেজিতে অনূদিত গোটা কুরআন তিনি তিন তিনবার পড়ে ফেললেন। এর পরেই ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। 
অন্য ধর্মের লোকজনের ইসলামে দীক্ষিত হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু কারো অনুপ্রেরণা ছাড়া কিংবা কোনো মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংস্পর্শে আসা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে ইসলাম গ্রহণের ঘটনা কিন্তু একেবারেই ব্যতিক্রম। হয়তো এ কারণেই স্কটল্যান্ডের মধ্যবয়সী এই খৃস্টান যুবকের মুসলিম হওয়ার খবরটি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো। ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এই যুবক নিজ শহর ইনভেরনেসে একটি ছোট মসজিদ খুঁজে বের করেন। এরপর সাহস করে একদিন ওই মসজিদে প্রবেশ করেন এবং নিজের পরিচয় দেন। ওই মসজিদের ইমামের কাছেই কলেমা পড়ে ইসলামে দীক্ষিত হন তিনি। সেখানকার মুসল্লীরা দরাজদিলে স্বাগত জানান রবার্টকে। তবে রবার্ট মনে করেন, এখনও তার ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানার বাকি আছে। তিনি সেসব জানার চেষ্টা করছেন। 
ভাবতে অবাক লাগে, আযানের মধুর ধ্বনি রবার্টের জীবনে বিস্ময়কর পরিবর্তন নিয়ে এলো। কিন্তু প্রশ্ন জাগে আমরা যারা মুসলমান তারাও তো দিনে ৫ বার আযানের ধ্বনি শুনে থাকি, কিন্তু আযানের ধ্বনি আমাদের মধ্যে কতটা প্রভাব বিস্তার করে? আযানের মর্মবাণীই বা আমরা কতটা উপলব্ধি করি। আযানে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা করা হয় আল্লাহর একত্ববাদের কথা, রেসালাতের কথা। আযানে আরো আহ্বান জানানো হয় সালাত ও কল্যাণের পথে ফিরে আসার জন্য। আযানের এই মর্মবাণী যদি মুসলমানরা যথাযথভাবে উপলব্ধি করতো তাহলে আজ তাদের জীবন ও সমাজ মানবজাতির জন্য উজ্জ্বল উদাহরণ হতে পারতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে খুব কম মুসলমানই আযান ও সালাতের তাৎপর্য উপলব্ধি করে থাকেন। পবিত্র কুরআনের মর্মবাণী উপলব্ধির ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে। তাই আত্মসমালোচনা এখন মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আয়নায় দেখতে চাইলেন রাজনীতির চেহারা


বহুদিন পর আত্মসমালোচনার ভাষায় কথা বললেন তিনি। প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বলেছেন, রাজনীতি একটি আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকতা যত প্রাধান্য পাবে, রাজনীতি তত বেশি জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাবে। গত ১৪ মে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে মুদ্রিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, এখনকার রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। তাই রাজনীতিকদের মানুষ ভালোভাবে নেয় না। আগে রাজনীতি ছিল একটি ত্যাগের নাম। এখন হয়েছে ব্যবসা। আমি রাজনীতিবিদদের বলি, আমরা তো পারলাম না, এবার তরুণদের হাতে রাজনীতি ছেড়ে দাও। তাহলেই রাজনীতি পরিশুদ্ধ হবে। প্রসঙ্গত তিনি আরো বলেন, আমাদের দায়িত্ব মানুষের চলার মসৃণ পথ তৈরি করা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার সঙ্গে নেতা নির্বাচন করা, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। মনে রাখতে হবে- এদেশের পোড় খাওয়া মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না। মুখরোচক স্লোগান নয়, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত হয়। বক্তৃতা কমাতে হবে। এত মেঘ কাটিয়ে সূর্য ওঠা অসম্ভব মনে হতে পারে, কিন্তু তা যে হতেই হবে।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সাক্ষাৎকারে তার উপলব্ধির কথা সোজা-সাপটাভাবে প্রকাশ করেছেন। যে কোনো দেশপ্রেমিক সচেতন মানুষের কাছে তার বক্তব্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে হতে পারে। একজন প্রবীণ ও সচেতন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি যেন আয়নায় রাজনীতিবিদদের চেহারা দেখতে চেয়েছেন। এবং তার এই দেখা দল কিংবা গোষ্ঠীপূজার নয়, বরং আত্মসমালোচনামূলক। তাই তিনি বলতে পেরেছেন, বর্তমান সময়ের রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই। আগে রাজনীতি ছিল ত্যাগের বিষয়, আর এখন তা হয়েছে ব্যবসা। এমন বিশ্লেষণের পর তিনি স্পষ্ট করেই রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে বলেছেন, আমরা তো পারলাম না, এবার তরুণদের হাতে রাজনীতি ছেড়ে দিন। তাহলেই রাজনীতি পরিশুদ্ধ হবে।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ পরিশুদ্ধ রাজনীতির কথা বললেন- এমন আকাক্সক্ষা জনগণের আকাক্সক্ষার সাথে মিলে যায়। আর তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সাধারণভাবে যে বিশ্লেষণ করেছেন, তার সাথে দ্বিমত পোষণ না করেও বলা যায়- এখনও দেশে এমন কিছু রাজনীতিবিদ আছেন, যারা শুদ্ধ রাজনীতির প্রতিষ্ঠাই চান। তবে এক্ষেত্রে জরুরি বিষয় হলো- দেশে এমন উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা; যাতে শুদ্ধ রাজনীতির পক্ষের সব মানুষ এই ইস্যুতে এক সাথে কাজ করতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখনও তেমন বাতাবরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এর অর্থ আবার এই নয় যে, সবাইকে এক নেতার অধীনে একদলের ব্যানারে কাজ করতে হবে। বৈচিত্র্যের ঐক্য বলেও একটা কথা আছে। রাজনীতিবিদরা যদি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসেন, তাহলে মত ও পথের ভিন্নতা বা বৈচিত্র্য নিয়েও শুদ্ধ রাজনীতির লক্ষ্যে ঐকচেতনায় কাজ করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রয়োজন হবে- আর তা হলো, নৈতিক মেরুদণ্ড। নৈতিক মেরুদণ্ড বলিষ্ঠ থাকলে লিবারেল-ডেমোক্রেট, সোস্যালিস্ট ও ইসলামিস্টরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে পরিশুদ্ধ রাজনীতির বাতাবরণ সৃষ্টিতে সময়ের দাবি পূরণ করতে পারেন। এখন দেখার বিষয় হলো, শুদ্ধ রাজনীতির সমর্থকরা বিবেকের তাড়নায় সময়ের দাবি পূরণে কতটা এগিয়ে আসতে পারেন। জনগণ কিন্তু শুদ্ধ রাজনীতির অপেক্ষায় আছে। অন্ধরাজনীতি ও অন্ধদলবাজির দুর্ভোগে এখন তারা অতিষ্ঠ। এমন রাজনীতি জাহেল যুগের রাজনীতি। তারা এখন স্পষ্টভাবেই উপলব্ধি করতে পারছেন যে, তাত্ত্বিক বিতর্কের চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সততা ও জবাবদিহিতার চেতনা। নিজ দলের অসৎ ও অযোগ্য নেতারা বিজয়ী হলেও দল, দেশ ও মানুষের কোনো কল্যাণ হয় না। মুখে সুশাসন ও ন্যায়ের কথা বললেও তারা চলেন উল্টো পথে। ফলে দেশে আতঙ্কের পরিবেশে বসবাস করতে হয় মানুষকে।
রাজধানীর মতিঝিলের ঘরোয়া রেস্টুরেন্টের কর্মচারী রিয়াদ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৭ মাস আগে। তবে অভিযুক্ত হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল এখনও গ্রেফতার হয়নি। উদ্ধার হয়নি হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল ও গাড়ি। এ ব্যাপারে গত ১৪ মে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন মুদ্রিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত সোহেলকে গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রিয়াদের স্বজনরা। তারা বলছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করে সোহেল ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। তবে পুলিশ বলছে, সোহেলকে ধরতে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ৩২ বোরের পিস্তল দিয়ে রিয়াদকে গুলি করা হয়। ওই অস্ত্রের লাইসেন্স সোহেলের ছিল না। হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল ও পাজেরো গাড়িটি জব্দ করা যায়নি। তবে এজাহারভুক্ত আসামি জসিম ও খবির গ্রেফতার হয়েছে। মূল আসামি সোহেলকে ধরতে অভিযান চলছে। এদিকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামি জসিম ও খবির বলেন, মালিক সোহেলের নির্দেশে তারা রিয়াদকে খুঁটির সাথে বেঁধে মারধর করে। একপর্যায়ে সোহেল নিজেও বেধড়ক পেটায়। কোমরে গুঁজে রাখা পিস্তল বের করে সোহেল গুলি চালায় রিয়াদের ওপর। এতে ঘটনাস্থলেই রিয়াদের মৃত্যু ঘটে।
নিজের কর্মচারীকে নির্মমভাবে পিটিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করতে একটুও কাঁপলো না ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেলের। এমন নৃশংসভাবে যারা মানুষ হত্যা করে তাদের সমাজে বসবাসের অধিকার থাকতে পারে না। অথচ ৭ মাসেও সোহেল গ্রেফতার হলো না, বিচারেরও সম্মুখীন হলো না। নিহতের স্বজনরা বলছেন, সোহেল টাকার বিনিময়ে মামলা হতে অব্যাহতি পেতে চেষ্টা করছেন, বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিচ্ছেন। গ্রেফতার এড়াতে সংশ্লিষ্টদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে চলেছেন। এমনকি তাকে গ্রেফতার করতে না পারার অজুহাতে মামলার চার্জশিট আটকে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। এদিকে পুলিশ বলছে, সোহেল গ্রেফতার হলেই এ মামলার চার্জশিট দেয়া হবে। নিহত রিয়াদের স্বজনরা বলছেন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায় সোহেলের সম্পৃক্ততা ছিল। তার হোটেলেই হাত বদল হতো অস্ত্র ও মাদকের। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে সোহেলের ভাল যোগাযোগ ছিল। তাই মতিঝিলের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দিনের পর দিন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যেতে তাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সোহেলের এখনও যোগাযোগ রয়েছে। এ কারণেই তাকে ধরা হচ্ছে না। তবে ওয়ারী থানার ওসি জেহাদ হোসেন বলেন, সোহেলের অপরাধের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। প্রভাবশালীদের ম্যানেজের চেষ্টা করলেও সে সফল হবে না। সুষ্ঠুভাবেই মামলার তদন্তের কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই ভাল ফল আসবে। এদিকে নিহত রিয়াদের ভাই রিপন হোসেন বলেন, সোহেলকে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। লোকজন তাকে ঠিকই দেখে কিন্তু পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না। উল্লেখ্য যে, হত্যাকা-ের ঘটনায় ঘরোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে দিয়েছে পুলিশ।
আমরা জানি, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনই পুলিশের কর্তব্য। এমন কর্তব্য পালিত হলে তথা আইনের শাসন সমুন্নত থাকলে দুষ্টজনরা সমাজে তাদের দৌরাত্ম্য চালিয়ে যেতে পারে না। বরং আইনের শাসনকে সমীহ করে সমাজে সুনাগরিক হিসেবে তাদের বসবাস করার কথা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে সুশাসন তথা আইনের শাসনের ক্রমাবনতির কারণে দুষ্টজনদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। এ দুর্বৃত্তদের সাহস বাড়ানোর ক্ষেত্রে কখনো অবদান রাখেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কখনো বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন। এর এক উদাহরণ ঘরোয়া রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেল। প্রশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তার সাহস এতটাই বেড়ে গেছে যে, সে কোমরে গুঁজে রাখে লাইসেন্সবিহীন পিস্তল এবং সেই পিস্তলের গুলিতে নির্দ্বিধায় হত্যা করে নিজের কর্মচারীকে। এদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এই ক্ষেত্রে শুদ্ধ রাজনীতির বিষয়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ।

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কামদা প্রসাদের কেরামতি


এক.
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী : গত ২০ মার্চ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের সুরক্ষিত এলাকায় খুন হয়েছেন ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্সের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু। তনুর বাবা ইয়াজ হোসেন সেনানিবাসে ছোট বেসামরিক চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে থাকেন সেনানিবাসের ভেতরেই। তনু তার লেখাপড়ার খরচ চালাতে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেই সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহী জাহিদের বাসায় টিউশনি করতেন। ২০ মার্চ সন্ধ্যায় সার্জেন্ট জাহিদ টিউশনির কথা বলে তনুকে সালমা আক্তার নামের একটি মেয়েকে দিয়ে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর তনুদের বাসার কাছে একটি ঝোপের মধ্যে তনুর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায় রাত সাড়ে দশটায়। তনুকে খুঁজতে বেরিয়ে তার বাবা ইয়াজ হোসেন লাশ দেখতে পান। সারা শরীরে জখম। সালোয়ার কামিজ ছেঁড়া, অর্ধনগ্ন। নাকে-কানে রক্তের ধারা। মাথা পেছন দিক থেকে থেতলানো। কেটে দেওয়া হয়েছে তার লম্বা চুলের গোছা। রাতেই তাকে অন্য লোকের সহযোগিতায় ইয়াজ হোসেন নিয়ে যান সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সেখানে তনুর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করার পর তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহার কেরামতি এখান থেকে শুরু। তনুর ময়না তদন্তের দায়িত্ব তিনি দেন হাসপাতালের সবচেয়ে জুনিয়র এক লেকচারার শারমিন সুলতানাকে। পরে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, এ বিষয়ে ডা. শারমিনের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ছিল। সে ময়না তদন্ত রিপোর্টে শারমিন লেখেন যে, ‘মৃত্যুর আগে তনুকে জবরদস্তিমূলকভাবে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তিনি গর্ভবতীও ছিলেন না। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।’ কামদা প্রসাদ গভীর আত্মপ্রসাদ নিয়ে এই রিপোর্ট মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করলেন।
সংশয় হয়, এই কামদা প্রসাদ সাহা আসলেই কোনো ডাক্তার কিনা। কোনো মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি পাস করে বেরিয়েছেন কিনা। তা না হলে, এই রিপোর্ট হাতে পেয়ে তার তো সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল। রিপোর্টটি প্রত্যাখ্যান করে ভিন্ন ব্যবস্থা নেয়া উচিত ছিল তার। একজন জ্বলজ্যান্ত প্রাণবন্ত তরুণী খুন হয়ে গেল, অথচ ময়না তদন্ত রিপোর্টে তার কোনো কারণই পাওয়া গেল না। তাহলে তনুর কানে-নাকে রক্তের দাগ ছিল কেনো? কামদা প্রসাদ বললেন, পোকায় কামড়েছে। অথচ তনুর বাবা দেখেছেন, তনুর মাথা পেছন দিক থেকে থেতলানো। কেউ তার মাথা দেওয়ালে বা ওরকম কোনো শক্ত স্থানে জোরে জোরে ঠুকেছে। তার শরীর জুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন। তনুর বাবা নিজ চোখে দেখেছেন। এ নিয়ে আর কথা বলতে চাননি কামদা প্রসাদ।
তারপর আরও নানা আজব কাণ্ড ঘটিয়েছেন এই কামদা প্রসাদ। আদালতের নির্দেশে গত ৩০ মার্চ তনুর লাশ আবারও ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে তোলা হয়। ততোদিনে তনু হত্যার বিচার দাবিতে সারা দেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা বিক্ষোভ করতে শুরু করেন। এবং আশ্চর্য ঘটনা হলো এই যে, দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্টর্টি তৈরি করার ভার পড়ল ঐ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের হাতেই। আর আবারও দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করতে যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো, তারও প্রধান হলেন ঐ কামদা প্রসাদ সাহাই। কমিটিতে আরও আছেন গাইনি বিভাগের প্রধান করুণা রানী কর্মকার ও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ওমর ফারুক।
সে দায়িত্ব হাতে পেয়েই কামদা প্রসাদ নানান এলোমেলো বকতে শুরু করলেন। বললেন, দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্ট থেকেও কোনো আলামত পাওয়া যাবে না। যা আলামত ছিলো, তা গোসল করানোর সময় ও লাশ পচে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দাফনের (মাত্র) ১০ দিন পরে কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার এ কথা থেকেও প্রমাণিত হয় যে, চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে তার ধারণা মোটেও স্বচ্ছ নয়। কারণ এর আগেও ধর্ষণের শিকার এক মেয়ের দাফনের ২৬ দিন পর লাশ তুলে দ্বিতীয় ময়না তদন্তের পর এই বাংলাদেশেই ধর্ষণের আলামত পাওয়া গিয়েছিল। আর সেই দ্বিতীয় ময়না তদন্ত করা হয়েছিল অধিকতর যন্ত্র্রপাতি ও দক্ষ চিকিৎসকদের দ্বারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কোন যোগ্যতা বলে কামদা প্রসাদকে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মতো একটি স্পর্শকাতর বিভাগের প্রধান করা হয়েছে? তা কি তিনি শুধু সংখ্যালঘু বলে? এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাও হত্যাকাণ্ডের পর বলেছিলেন যে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় মনে হয়, তনুকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু কামদা প্রসাদ ময়না তদন্তের আগেই রায় দিয়ে বসেন যে, কোনো আলামত পাওয়া সম্ভব নয়। যে নাদান ব্যক্তি একবার বলে দিয়েছেন, মৃত্যুর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, সে ব্যক্তি কি করে দ্বিতীয়বার বলবে যে, এবার কারণ খুঁজে পেয়েছি। এমন হাস্যকর উদ্যোগ যারা নিয়েছে, তাদের মতলব বোঝা খুব কঠিন হবার কথা নয়।
দ্বিতীয় ময়না তদন্ত হয়েছে দেড় মাস আগে। কিন্তু কামদা প্রসাদ সে রিপোর্ট আগলে রেখেছেন। নানা টালবাহানা করে এখন পর্যন্ত তা জমা দেননি। সাংবাদিকদের তিনি বারবার বলেছেন, ‘এর বেশি আর কিছু বলা যাবে না।’ শীগগীরই রিপোর্ট দেয়া হবে। এটা চিকিৎসকের ভাষা নয়। বর্তমান সময়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষার মতো : ‘তদন্তের স্বার্থে এর বেশি আর কিছু বলা যাবে না।’ কিন্তু কামদা ভুলেই গেছেন যে, তিনি পুলিশ নন, চিকিৎসক। তবু শেষ পর্যন্ত গত ১৪ মে তিনি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে এসেছিলেন। দেড় মাস চলে যাবার পরও দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্ট কামদা প্রকাশ না করায় উষ্মা প্রকাশ করেছে সিআইডি। তারা বলেছেন, ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে কামদা রহস্যময় ভূমিকা পালন করছেন। আর দেশের সর্বস্তরের মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
সে প্রেক্ষিতে গত শনিবার কামদা প্রসাদ গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে বলেন, ময়না তদন্তের জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয় নিয়ে শনিবার দুপুরে পর্যালোচনা সভা করেছে। সভায় বোর্ডের তিন সদস্যই শীগগীর প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। শীগগীর বলতে কতো দিনের মধ্যে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কামদা প্রসাদ বলেন, দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। আমরা প্রতিবেদনটা দিয়ে দেব। এর পরদিনই তিনি আর এক আজব কা- করেছেন। আর তা হলো, তনুর ডিএনএ রিপোর্ট চেয়ে তিনি আদালতের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এর আগে তিনি ঐ রিপোর্ট চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন সিআইডিকে। সিআইডি বলেছে, ময়না তদন্তের সঙ্গে ডিএনএ রিপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। আর সে রিপোর্ট তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আদালতেই জমা দিয়েছেন। দরকার হলে কামদা সেখান থেকে নিতে পারেন।
এখানেও নতুন রহস্য সৃষ্টি করেছেন কামদা প্রসাদ সাহা। তিনি ভাবছেন, ময়না তদন্তে যাই পাওয়া যাক না কেন, সে রিপোর্টের সঙ্গে যেন ডিএনএ রিপোর্টের কোনো অসঙ্গতি না থাকে। আর তাই এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ঐ রিপোর্টের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে নানা টালবাহানা করে ময়না তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশে কামদা প্রসাদ আবারও বিলম্ব করবেন।
দুই.
এদিকে এক সহযোগী খবর দিয়েছে, সিআইডির তদন্ত দল নিশ্চিত হয়েছে যে, তনুর মৃতদেহ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে তাকে হত্যা করা হয় নাই। অন্যত্র হত্যা করে তার লাশ এনে জঙ্গলে ফেলা হয়েছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে সিআইডির তদন্ত দল। তনুর মাও এর আগে অভিযোগ করেন যে, তনুকে অন্য কোথাও হত্যা করে একাধিক লোক গাড়িতে করে এনে তাদের বাসার পাশে জঙ্গলে ফেলে গেছে। একজনের পক্ষে তার লাশ টেনে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সম্ভবত তার লাশ নিয়ে আসা হয়েছিল কোনো গাড়িত করে। ফলে এ হত্যাকাণ্ডে বেশ কয়েকজন জড়িত। সিআইডি বলেছে, সম্ভাব্য কে বা কারা লাশ এনে জঙ্গলে ফেলেছে, সে বিষয়ে সিআইডির ধারণা রয়েছে। তবে কোথায় তনুকে হত্যা করা হয়েছে তা তাদের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। সে জন্য অধিকতর তদন্ত চলছে। তারা বলেছেন, যদি ঘটনাটি সেনানিবাসের মতো স্পর্শকাতর স্থানে না ঘটতো, তাহলে ইতিমধ্যে একটি ভাল রেজাল্ট দেয়া সম্ভব হতো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আপনারা কি মনে করেন তনু হত্যার বিষয়ে কাউকে গ্রেফতার বা আটক করার বিষয়ে আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই? আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য প্রমাণ রয়েছে।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসি বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা রহস্যময় ভূমিকা পালন করছেন। তিনি দ্বিতীয় ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে গড়িমসি করছেন। রহস্যজনক কারণে তিনি রিপোর্ট জমা দিচ্ছেন না। ওই কর্মকর্তা বলেন, কামদা নাকি ডিএনএ রিপোর্ট ছাড়া ময়না তদন্ত রিপোর্ট দেবেন না। ময়না তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে ডিএনএ রিপোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি তার অযথা কালক্ষেপণ ও হয়রানি ছাড়া কিছুই নয়। তিনি বলেন, ডা. কামদা প্রসাদ প্রথম ময়না তদন্ত রিপোর্টে কিছুই পাননি বলে উল্লেখ করেছেন। এটা হতে পারে না। মৃত্যুর পর পরই তনুর ময়না তদন্ত হয়েছে। তারপরও তিনি বলেন, কিছুই পাননি, এটা অবিশ্বাস্য। এখানে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। সিআইডির ঐ কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, প্রথম রিপোর্টে তিনি কিছুই দিতে পারেননি। কালক্ষেপণ না করে দ্বিতীয়টিতেও তিনি কেন বলে দিচ্ছেন না যে, তনুর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। রিপোর্ট যেমনই হোক, আমরা সেটি হাতে পেয়ে আমাদের গতিতে কাজ শুরু করি। তিনি বলেন, তনু হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সিআইডি অনেক দূর এগিয়ে গেলেও প্রতিবেদন না পাওয়ায় তদন্ত কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সিআইডির একটি সূত্র জানায়, কুমিল্লা সেনানিবাসের ১০-১২ জন সেনা সদস্যকে সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে সিআইডি একটি তালিকা পাঠিয়েছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের জিজ্ঞাসাবদের অনুমতিও দেয়া হয়েছে। তবে সেনানিবাসে গিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে বলা হয়েছে। সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সিআইডি নিজেদের মতো করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না বলে তারা সন্ধিহান। সিআইডির ধারণা, এতে উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
এর সব কিছুর পেছনেই সত্যি সত্যি কামদা প্রসাদের ভূমিকা রহস্যজনক হয়ে উঠেছে। দ্বিতীয় দফায় ময়না তদন্তের রিপোর্টেও কামদা প্রসাদ যদি এরকম রিপোর্ট দেন যে, তনু হত্যার কোনো কারণ তারা অনুসন্ধান করে পাননি, তাহলে তাকে অবিলম্বে বরখাস্ত করে কঠোর শাস্তির বিধান করা উচিত। কেননা, তার গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা ও রহস্যজনক আচরণের কারণেই তনু হত্যার তদন্ত শেষ পর্যন্ত সেলফে উঠে যেতে পারে। তৃতীয় দফা ময়নাতদন্তে সত্যি সত্যি কোনোদিনই কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না।
সর্বশেষ
তনু হত্যার ডিএনএ রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল সংবাদপত্রগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, হত্যার আগে তনুকে অন্তত তিন ব্যক্তি ধর্ষণ করেছিল- এমন আলামত মিলেছে তার কাপড়ে। মিলছে তিন জনের বীর্য। কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ সুপার নাজমুল করিম খান বলেছেন, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত নিশ্চিত হতে আমরা ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের (ডা. কামদা প্রসাদ সাহা) স্মরণাপণœ হয়েছিলাম। গোপনাঙ্গের ফ্লুইড আমাদের পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্য আমরা লিখিতভাবে তাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। তারা আমাদের জানান, পরীক্ষায় তারা আলামত পাননি। সে কারণে নমুনা সংরক্ষণ করা হয়নি। তাই আমরা তনুর লাশে থাকা কাপড়-চোপড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডি’র পরীক্ষাগারে পাঠাই।’ আর তা থেকেই বেরিয়ে আসে এই তথ্য। দেখা যাক, এবার ‘ডাক্তার’ নামক এই কামদা প্রসাদ সাহা কী বলেন।

শনিবার, ১৪ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ব্যর্থ তবে দায়ী নয়


ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী : সম্প্রতি মজার একটি ফরমায়েশি রিপোর্ট পড়লাম। আর তা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা পাচার নিয়ে। ঢাকার কয়েকটি দৈনিক একযোগে সে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সে রিপোর্টের মাজেজা হলো, এই বিপুল অংকের টাকা চুরির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের তেমন কেউ জড়িত নেই। এ জন্য যা কিছু দায় তার সবই নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও নিরাপত্তা কোম্পানি সুইফটের। আমার দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে বহুবার আমি এ ধরনের ফরমায়েশি রিপোর্ট দেখেছি। এ রিপোর্টগুলো কখনও সরকারকে সমর্থন করে লেখা হয়। আবার কখনও বা সরকারের বিরোধিতা করার জন্য লেখা হয়। রিপোর্টগুলো পড়ে আমার শুধুই হাসির উদ্রেক হলো। তবু এর মধ্যে সারবত্তা যে কিছু ছিল না, এমন নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছিল গত ৪ ফেব্রুয়ারি। তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ছিলেন ড. আতিউর রহমান। এই ভয়াবহ ঘটনা তিনি জানতে পারেন ৫ ফেব্রুয়ারি। তারপর শুরু হয় মূল নাটকের পালা। আতিউর নিজে জানার একদিন পর নাকি বিষয়টা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। সম্ভবত তিনি জানিয়েছিলেন। কারণ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এর কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টা নিয়ে চুপ করেই ছিলেন। সম্ভবত অথর্ব আতিউর তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, বেশি জানাজানি হলে এই অর্থ ফেরত পাবার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। আর আতিউর এই টাকা চুরির বিষয়টা জানাননি অর্থমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রীও তাকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি। ফলে অর্থমন্ত্রী মুহিত ছিলেন একেবারে অন্ধকারে।
গবর্নর আতিউর হয়তো বিষয়টা চিরতরে চেপেই যেতেন। কে খবর রাখতো যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে কত টাকা আছে বা ছিল, আর তা থেকে কত টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে পাচার হয়ে গেছে। এই টাকার বেশির ভাগই গিয়েছে ফিলিপিন্সে। এক মাস পরে ৫ মার্চ ফিলিপিন্সের সংবাদপত্রগুলোতে খবর বের হলো যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ টাকা ফিলিপিন্সে পাচার হয়ে এসেছে। এত ফিলিপিন্সে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। সেখানকার সংবাদপত্র, ব্যাংক পরিচালনা পরিষদ, জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগ একবারে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে বসলো। তদন্তে নেমে পড়লো এসব সংস্থা। তখন এক ধরনের সিন্ডিকেটেড রিপোর্ট প্রকাশ হতে থাকলো যে, চুরি যাওয়া টাকা থেকে বাংলাদেশ অত টাকা ফেরত পেয়েছে। আরও অত টাকা ফেরত পেয়েছে। শিগগিরই ফিরে পাওয়া যাবে চুরির সকল টাকাই, একেবারে পাই পয়সাসহ। এর লক্ষ্য ছিল জনগণকে একটা ধোঁকা দেয়া। একটা ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলা। যাতে তারা মনে করে যে, দেখো, সরকার কত দক্ষ, চুরির সব টাকাই ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।
কিন্তু আসল খবর আসতেও দেরি হলো না। ফিলিপিন্সই খবর দিল, চুরির টাকার এক কানাকড়িও তারা ফেরত দেয়নি। আর তা ফেরত পেতে মামলা মোকদ্দমার মাধ্যমে যেতে হবে। ফলে বাংলাদেশ যদি ঐ টাকা কোনোদিন ফেরত পায়ও, তবে তাতেও কমপক্ষে ১৫/২০ বছর লাগবে। ফিলিপিন্সে অর্থ পাচার আইন খুব কড়া। আবার জুয়া খেলার আইন-কানুন বেশ শিথিল। সেখানকার ধনাঢ্য ক্যাসিনো ব্যবসায়ী মি. অং টাকাটা তুলেই জুয়ায় লাগিয়ে দেন। তিনি ধরা পড়ে গিয়ে কিছু টাকা সে দেশের সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেন বা গচ্ছিত রাখেন। বাকি টাকা চলে যায় হংকং-এ। আর হংকং কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনা করতেই রাজি হননি। সমাজের ওপরের মহলে অং-এর রয়েছে ব্যাপক যোগাযোগ। তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী সবাই রয়েছেন। মি. অং তার বন্ধু হিসেবে যাদের নাম বলেছিলেন, তাদের মধ্যে আছেন ফিলিপিন্সের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তে। ফলে ভবিষ্যতে এই টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়লো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই চুরির টাকা নিয়ে যখন ফিলিপিন্সে তুমুল হৈচৈ বেধে গেল, তখন আমরা জানতে পারলাম, জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই বিপুল অংকের টাকা পাচার হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী আকাশ থেকে পড়লেন। দায়ী করলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরকে। গবর্নর ‘বীরের মতো’ তার পদত্যাগপত্র জমা দিলেন অর্থমন্ত্রীর কাছে নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণও করলেন, আর আতিউরের বিদায়ে কাঁদলেন। আতিউর পদত্যাগপত্র কেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিতে গেলেন, তার কোনো গ্রহণযোগ্য জবাব তিনি দিতে পারেননি। তারপর কেবল নাটকের পর নাটক চলছে। দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ অবিরাম বলে গেলেন যে, টাকা আমাদের। তোলপাড় উঠলো ফিলিপিন্সে। কিন্তু আমাদের সংসদ বা সংসদীয় কমিটি নিশ্চুপ বসে রইল। এই চুরি যাওয়া টাকা সম্পর্কে তারা কোনোরকম উচ্চবাচ্যই করেনি। অর্থমন্ত্রীর কাছে অবশ্য ৮শ’ কোটি টাকা কোনো টাকা হবারই কথা নয়। কারণ হলমার্ক যখন সোনালী ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়ে গেল, তখন তিনি বলে বসেছিলেন, ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ফোকলা করে টাকা চুরি করেছে সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো বেসিক ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর যোগসাজশে লোপাট হয়ে গেছে আরো সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। এভাবে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকেও সরকারি মদদপুষ্ট লোকেরা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে নিয়ে গেছে। 
সে তুলনায় ৮শ’ কোটি টাকার হয়তো আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ধূলিকণা মাত্র। আমাদের সঙ্কটটা সেখানে নয়, ধূলিকণা চুরি হয়েছে কিনা তার চাইতেও বড় প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ফেডারেল ব্যাংক থেকে লোপাট হয়ে গেছে এই টাকা। লোপাটকারীরা ১০০ কোটি ডলার অর্থাৎ ৮ হাজার কোটি টাকা চুরির আয়োজন করেছিল। কিন্তু ৮০০ কোটি টাকা হস্তান্তর হয়ে যাবার পর একটি বানান ভুলের কারণে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক টাকা প্রদান বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাসওয়ার্ড দিয়ে নানা হাতের মাধ্যমে এই টাকা প্রদানের অর্ডার চলে গিয়েছিল ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে। সেখানে আমাদের রয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বড় ঋণ শোধের ক্ষেত্রে এই টাকা নির্ধারিত পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে কম্পিউটার ব্যবস্থায় পরিশোধ করা হয়। সঙ্কটটা সেখানেই। আমরা দোষারোপ পছন্দ করি। সেই কারণে নিজদের দায় না দেখে আমরা দোষ চাপানোর চেষ্টা করলাম সুইফট ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের ওপর। তারা তদন্তে এসেছিল, তদন্ত করে জানিয়ে গেছে, তাদের ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি নেই। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছিল এই টাকা তারা পরিশোধ করবে কিনা। বাংলাদেশ ব্যাংক শুক্র-শনিবার বন্ধ থাকায় তারা তা জানাতেও পারেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওই ব্যাংক মৌনতাকে সম্মতির লক্ষণ বলে ধরে নিয়েছে। টাকা হস্তান্তর করেছে, যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার নিরাপত্তার ব্যাপার সেখানে কেন ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টার নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে না। সেই রুমের সিসি ক্যামেরা ওই সময় বন্ধ ছিল। কেন বন্ধ ছিল আতিউর জবাব দিয়ে যাননি। বর্তমান গবর্নর ফজলে কবিরও সেটি অনুসন্ধান করতে আগ্রহী-এমনটা মনে হয় না। এরপর পাচারকারীরা টাকা প্রদানের অর্ডার সংবলিত বার্তা মুছে দিয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে যাচাইয়ের রেকর্ড মুছে দিয়েছে। সব কিছু বাদ দিলাম, কিন্তু সিসি ক্যামেরা নষ্ট কেন? তার জন্য তো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারাই দায়ী। একথাটি স্বীকার করতেও দ্বিধা আছে সরকার ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। 
সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ৩০ দিনের মধ্যে তাদের অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল, রিপোর্ট তারা দিয়েছেন। ৭৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেয়ার কথা। ফরাসউদ্দিন বলেছেন, তার আগেই তিনি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবেন। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টে কি আছে সেটি তিনি প্রকাশ করেননি। শুধু স্মিত হাস্যে বলেছিলেন- সরকার এইটুকু আগে হজম করুক। সেজন্য তাদের কিছুটা সময় দিতে হবে। এটি তদন্ত করেছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। সে রকম গোয়েন্দা সংস্থার এক সহকারী হঠাৎ অপহৃত হয়ে যান। ৮-১০ দিন পর আবার পুলিশের লোকই তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে যায়। তাকে নাকি বিমানবন্দর রেল স্টেশনে মতো হাঁটতে দেখা গিয়েছিল। তিনি প্রেসের সামনে আসেননি। সেই যে আড়াল হয়ে গেছেন, এখনও আড়ালেই আছেন। এই ঘটনার তদন্তে এসেছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। তদন্ত শেষে তারাও বলে গেছেন, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারাই দায়ী। সেটি বোধকরি সরকার মানতে নারাজ। আর তাই ফেডারেল রিজার্ভ, সুইফট ও এফবিআই’র বিরুদ্ধে তারা অবিরাম বিষোদগার করেছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সেই সময়ই প্রকাশিত হচ্ছে সিন্ডিকেটেড রিপোর্টগুলো। পত্রিকা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাবেক গবর্নর আতিউর রহমানের ব্যর্থতা ছিল দু’টি। প্রথমটি হলো চুরি শনাক্ত করার পর অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ম্যানুয়ালি সমাধানের চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয় ভুলটি হলো টাকা চুরির খবর জানার পর তিনি যেসব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাউকেই অভিযুক্ত করেনি। অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্টের বরাত দিয়ে সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে যে, ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ড. আতিউরের দূরত্ব ছিল, তাদের মধ্যে  বোঝাপড়ার অভাব ছিল। অধস্তন কর্মকর্তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে না পারা ছিল গবর্নর আতিউরের আরেকটি ব্যর্থতা। এছাড়া একমাস ঘটনাটি লুকিয়ে রাখা আতিউরের গাফিলতি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে কারিগরি বা প্রযুক্তির চেয়ে প্রশাসনিক বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
এ নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর দেড় শতাধিক দেশ ফেডারেল রিজার্ভের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করে থাকে। তাদের সবাই সুইফটের সেবাও গ্রহণ করে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোথাও এ রকম একটি ঘটনাও ঘটেনি। আমাদের চাইতে অনেক বিপুল অংকের অর্থ কোনো কোনো দেশ ফেডারেলে জমা রাখে। চোরেরা সেখানে হাত দিতে সাহস পায়নি। কিন্তু এখানে বেড়ায় ক্ষেত খেয়ে ফেলেছে। সারা পৃথিবীর দেশসমূহে এই নিয়ে আলোচনা চলছে। তারা অর্থের নিরাপত্তার বিষয়ে আরো সতর্কতা অবলম্বন করেছে। ফেডারেল রিজার্ভ ও সুইফট তাদের অবস্থানে অনড়ও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এফবিআই’র বরাত দিয়ে গত মঙ্গলবার এক রিপোর্টে বলেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত পাসওয়ার্ড দিয়ে হ্যাকাররা ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করেছে। ব্যাংকের এক কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী। সেভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ফিলিপিন্সে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যে চক্র এই কাজ করেছে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত আছে। এফবিআই’র তদন্ত দল দাবি করেছে, অন্তত একজন ব্যাংক কর্মকর্তা এ কাজে জড়িত রয়েছে এমন কিছু বিশ্বস্ত তথ্য-প্রমাণ সংবলিত দলিল এফবিআই পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তাই হ্যাকারদের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেন। আর সুইফট স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়-দায়িত্ব নেবে না। 
আসলে এই ঘটনারও শেষ পর্যন্ত কোনো কিনারা হবে এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আতিউর ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের রক্ষায় বাংলাদেশের তদন্তকারীদের মরিয়া প্রচেষ্টার ফলে জনগণের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এর ফেছনে অন্য কারো হাত নেই তো? আতিউর ব্যর্থ, কিন্তু দোষী নয়- এ রকম রায় ভবিষ্যতেও এ খাতে আরও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এ কেমন ভোট হলো!


গত বৃহস্পতিবার দৈনিক ইত্তেফাক একটি চমৎকার খবর ছেপেছে। সেটি হচ্ছে ৪র্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় মৃত ভোটাররা যেমন কবর থেকে উঠে এসে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন, তেমনই প্রবাসীরাও সবাই বিদেশ থেকে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন। উপজেলার চর আড়ালিয়া ইউপির দুটি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। অর্থাৎ সেখানকার মৃত ভোটাররা সবাই ভোট দেবার সুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত থেকে প্রবাস জীবনযাপন করছেন তারাও সবাই এসে ভোট প্রদান করেছেন। অন্য একটি কেন্দ্রে ৯৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আরেকটিতে পড়েছে ৯৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ভোট। সংশ্লিষ্ট ইউপির দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত ফলবার্তা শিটে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ মাসের ৭ তারিখে আলোচ্য ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শুধু নরসিংদীর চর আড়ালিয়াতেই নয়, দেশের অন্যান্য স্থানের ইউপিগুলোতেও নির্বাচন নিয়ে প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে দেখেছেন তাদের ভোট প্রদান করা হয়ে গেছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা তাদের আঙুলে অমোচনীয় কালি লাগিয়ে দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোথাও কোথাও তো রাতের মধ্যেই ব্যালটপেপারে বাক্স ভর্তি করে রাখবার খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও যদি মৃতরা কবর থেকে উঠে এসে ভোট দিতে পারেন, তাহলে বিদেশে থাকা সকলের ভোট প্রদানে অসুবিধে কোথায়? তবে তারা অনলাইনে ভোট দিয়েছেন এমনও না। কোনও কোনও জায়গায়তো রিটার্নিং ও প্রিজাইডিং অফিসার নিজেরাই ব্যালটপেপারে সিল মেরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভাবনীয় অপরাধে কোনও কোনও নির্বাচন অফিসারকে গ্রেফতার করে আইনের কাছে তুলে দেবার খবরও দুই-একটা রয়েছে। এমনই এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শুধু মৃত ও প্রবাসীরাই ভোটে অংশ নিতে পারেন না, তা নয়। কোনওভাবেই কোনও নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়ে না। কারণ নির্বাচনের অনেক আগে প্রস্তুত করা ভোটারতালিকায় মৃত ও প্রবাসীদের যেমন নাম থাকে, তেমনই যারা নিজস্ব ইউপি থেকে অন্যত্র সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত থাকেন তাদেরও নাম থাকে। মৃত ও প্রবাসীদের মতো এলাকার বাইরে থাকা সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারীরাও ভোট দিতে পারেন না নিজেদের ব্যস্ততার জন্য। তাছাড়া যারা ভোটের দিন দূরে কোথাও নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন, তাদেরও ভোট দেয়া সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় কোনও ইউপির নির্বাচনে শতভাগ ভোটপ্রদান কেবল অস্বাভাবিকই নয়, হাস্যকর বা ভৌতিকও। এমন কথা নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন। আলোচ্য ইউপির একজন পরাজিত প্রার্থী গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ পেশ করেছেন। কিন্তু তিনি এর প্রতিকার পাবেন বলে মনে হয় না। শুধু চর আড়ালিয়া ইউপির পরাজিত প্রার্থী একাই নন, কেন্দ্র দখল, অবিশ্বাস্য পরিমাণ ভোট পড়া ও সহিংসতাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অসংখ্য প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে সহস্রাধিক অভিযোগ দাখিল করেছেন। কিন্তু কমিশন সেগুলো তদন্ত না করেই নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। বিধিমাফিক গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত যেকোনও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা কমিশনের নিশ্চয়ই রয়েছে। তদন্তে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইউপির নির্বাচন বাতিল করতেও পারে কমিশন। কিন্তু তেমন উদ্যোগ নিতে আমরা দেখছি না। ফলে নির্বাচন সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা বেড়েই চলেছে। আর এই আস্থাহীনতা নির্বাচনী সংঘর্ষের অন্যতম কারণ বৈকি।
আগামীতে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ করতে উদ্যোগ না নিলে এর খেসারত ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই দিতে হবে। আমরা চাই না দেশের কোনও নির্বাচন সংঘাতময় হোক। নির্বাচন করতে গিয়ে মানুষের মূল্যবান জীবনের অপমৃত্যু ঘটুক। এ ব্যাপারে ক্ষমাসীনদেরই সিংহভাগ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আশা করি, খুব শিগগির সংশ্লিষ্টদের বোধোদয় ঘটবে।

বুধবার, ১১ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ক্ষমতাসীনদের জন্য অন্য আইন!


বিএনপি অভিযোগ করেছে, সুনির্দিষ্ট অপরাধের দায়ে আদালতে দণ্ডিত হলেও মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। অনেকের দণ্ড মওকুফ করা হচ্ছে। দণ্ডিত মন্ত্রীরা এমনকি মন্ত্রিসভার বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। এভাবে মন্ত্রিপরিষদে দণ্ডিত মন্ত্রীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সাজানো মামলায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে। সরকারবিরোধী হওয়ার কারণে বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরসহ বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত তো করা হচ্ছেই, গ্রেফতার করে তাদের কারাগারেও ঢোকানো হচ্ছে। গত মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ প্রাসঙ্গিক উদাহরণ দিতে গিয়ে রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, গাজীপুর ও হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এবং কারাগারে তাদের বর্তমান দুরবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। বলেছেন, একই অবস্থা চলছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও। এসব নির্বাচনে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। ভোট হচ্ছে সরকারের ইচ্ছা অনুসারে। জিতিয়েও আনা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদেরকেই।
সব মিলিয়ে দেশে ক্ষমতাসীনদের জন্য চলছে পৃথক আইনের প্রয়োগ। উদাহরণ হিসেবে সাংবাদিক সম্মেলনে কয়েকজন মন্ত্রীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় এসেছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনজনের মধ্যে প্রথম দু’জনকে আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে নগদ অর্থে জরিমানা এবং অনাদায়ে কারাদণ্ডের শাস্তি দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। জরিমানার টাকা জমা দেয়ার মাধ্যমে দণ্ড স্বীকার করে নিলেও দু’জনই এখনো বহাল তবিয়তে মন্ত্রিসভায় রয়ে গেছেন। অন্যদিকে ২০০৭ সালে দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে ত্রাণমন্ত্রী মায়ার ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছিল। এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করলে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে খালাস দিলেও দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালাসের আদেশ বাতিল করে পুনরায় শুনানির আদেশ দেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে মায়ার লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে ঘোষিত দণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে। সে কারণে আইনের চোখে তিনি এখন একজন দণ্ডিত অপরাধী। কিন্তু তা সত্ত্বেও মায়া শুধু নন, অন্য দু’জন মন্ত্রীও নিজ নিজ পদে বহাল রয়েছেন। এজন্যই বিএনপি বলেছে, মন্ত্রিসভায় দণ্ডিতদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। একই অবস্থা চলছে সারা দেশেও। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে দূরবর্তী কোনো সম্পর্ক থাকলেও তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। মাত্র ক’দিন আগে ফরিদপুরে দণ্ডিত এক ফাঁসির আসামীকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। কারণ, এই দণ্ডিতজন ছাত্রলীগের নেতা!
বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০০৮ সালের ডিজিটাল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আইন প্রয়োগ ও বিচারের ক্ষেত্রে সরকার একই দ্বিমুখী নীতি অবলম্বন করে এসেছে। উদারহরণ দেয়ার জন্য সরকারের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করলে দেখা যাবে, ওই কমিটি প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাই শুধু প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছে, কিন্তু শত শত নামের দীর্ঘ তালিকায় বিরোধী দলীয় নেতাদের নাম থাকেনি। এখনো থাকছে না। এই প্রক্রিয়ায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলের সকল দণ্ডও মওকুফ করেছিলেন- যার বিরুদ্ধে ১৮ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি ৬০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ ছিল। ওই দণ্ডিত পুত্র পলাতক ছিলেন এবং পলাতক অবস্থাতেই রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন পেশ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন এক ব্যাখ্যায় বলেছিল, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে দেয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি সাজেদা চৌধুরীর ছেলের দন্ড মওকুফ করেছেন। অন্যদিকে সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয় বরং নিরপেক্ষ ও আইনসম্মত অবস্থান থেকে দণ্ডিতজনের ব্যাপারে মওকুফ, হ্রাস বা স্থগিত করার মতো ব্যবস্থা নেবেন- এমন চিন্তা ও আশার ভিত্তিতেই সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দিয়েছে। তাছাড়া আইনের বিধান হলো, দণ্ডিত ব্যক্তিকে প্রথমে আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং দণ্ড মওকুফ করার আবেদন তাকে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কিন্তু সাজেদা চৌধুরীর পুত্রের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দেশের রাষ্ট্রপতি একজন পলাতক ও দণ্ডিত অপরাধীর গোপনে পাঠানো আবেদনের ভিত্তিতে দণ্ড মওকুফ করেছিলেন। অর্থাৎ নিজে আইনজীবী হয়েও রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান দলবাজির ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি।
একই অবস্থা এখনো চলছে। শুধু তা-ই নয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের পর থেকে সরকার অনেক বেশি মারমুখী হয়ে উঠেছে। কোনো মামলায় অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও দেশের বহু এলাকায় বিরোধী দলের নির্বাচিত মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মতো পদ থেকে সরাসরি বরখাস্ত করা হয়েছে। অনেককে মিথ্যা মামলায় কারাগারেও ঢুকিয়েছে সরকার। আমরা মনে করি, কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দুই রকমের আইন চলতে পারে না। আইন সকলের জন্যই সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। আর এ ব্যাপারে সরকারের কর্তব্য আইন ও সংবিধানসম্মত অবস্থানে ফিরে আসা, যাতে অপরাধী হলে তাকে শাস্তি পেতে হয়- তা সে ব্যক্তি যে দলেরই হোক না কেন।

শনিবার, ৭ মে, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

দৌরাত্ম্যের মাত্রা বেড়েই চলেছে


যে কোনো দেশের জন্যই রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনীতি সঠিক পথে চললে দেশ ও জনগণ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়। আর ভুল রাজনীতি দেশকে পিছিয়ে দেয় এবং জনগণের দুর্ভোগ বৃদ্ধি করে। তবে রাজনীতির সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে রাজনীতিবিদদের জীবন দর্শন, মূল্যবোধ, যোগ্যতা ও আচরণের ওপর। তাই এক কথায় বলা চলে, রাজনীতিবিদরাই দেশের সুখ কিংবা দুঃখের কারণ। দেশের জনগণ চায় রাজনীতি সঠিক পথে চলুক। তবে এমন আকাক্সক্ষার সাথে রাজনীতিবিদরা পা মেলাতে সমর্থ হচ্ছেন কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের রাজনীতিবিদরা তো প্রায়ই বলে থাকেন, দেশ ও জনগণের সেবার জন্যই আমরা রাজনীতি করে থাকি। ভোটের সময় তারা বেশ উচ্চকণ্ঠেই বলে থাকেন আমাকে ভোট দিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন। কিন্তু ভোটের পরে সেবার পথে তারা কতটা চলেন? প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে জনপ্রতিনিধিদের, রাজনৈতিক নেতাদের ভুল কাজের খবর মুদ্রিত হতে দেখা যায়। গত ৭ মে মানব জমিন পত্রিকায় এমন একটি খবর মুদ্রিত হয়েছে। খবরে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নেতাদের পিটুনিতে আহত হয়েছেন ফেনীর পরশুরাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচএম রকিব হায়দার। ৬ মে তারিখে দুপুরবেলায় উপজেলার ধনিকুণ্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন ও তার লোকজন প্রকাশ্যে ইউএনও’র উপর হামলা চালায়। উপর্যুপরি কিল-ঘুষিতে আহত হন ইউএনও। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আহত ইউএনওকে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তবে মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় তার সিটিস্কেন করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। ফলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ আমিন উল আহসান।
ক্ষমতাসীন দলের একজন নেতার এমন সন্ত্রাসী আচরণে বিস্মিত হতে হয়। এমন উদাহরণ শুধু দেশের জন্যই নয় দলের জন্যও মারাত্মক। অথচ এমন দাপট ও শক্তির মহড়া দিয়ে চলেছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই। এমন প্রবণতা আইনের শাসন, শান্তি-শৃঙ্খলা ও দলের ইমেজের জন্যও ক্ষতিকর। বিষয়টি সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের না বোঝার কথা নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাপট ও দৌরাত্ম্য কমার কোনো লক্ষণ নেই। আমাদের রাজনীতিবিদরা যদি দেশ ও জনগণের সেবা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিনয়ী আচরণে সমৃদ্ধ না হন তাহলে দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা ভালো আচরণে উদ্বুদ্ধ হবেন কেমন করে? আমরা জানি, দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি জনগণের আস্থা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।
এখন ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদরা যদি দাপট্ ও দৌরাত্ম্যের মাধ্যমে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করতে চান তাহলে তো রাজনীতির প্রতি জনগণের অনীহার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এমন পরিস্থিতি আমাদের দেশ ও রাজনীতির জন্য এক অশনি সংকেত। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

Ads