রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিপন্ন নির্বাচন ব্যবস্থা


গণতন্ত্রে নির্বাচন ব্যবস্থা বিপন্ন থাকলে চলে না। চলে তো নাই-ই বরং বিপদ বৃদ্ধি পায়। গণতন্ত্র চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা লাগবেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টি সে রকম দেখা যাচ্ছে না। বরং নির্বাচন ব্যবস্থা নানা দিক থেকে দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় গণতন্ত্রের দুর্বলতাকেই বার বার প্রমাণ করছে। সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের পৌরসভা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনেও বেহালদশা দেখা গেছে। দিনে দিনে নির্বাচন ব্যবস্থার বিপন্নতা যেন বাড়ছেই। নানা আকারের অনিয়ম ও অসঙ্গতি নির্বাচনের আগে ও পরে এসে ভিড় করছে। গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্য এটি একটি অশনি সংকেত।
বস্তুত নির্বাচনী কারচুপি, অনিয়ম আর অস্বচ্ছতার জন্যই যে একদা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে অনেকগুলো নির্বাচন হয়েছিল, সে কথাও সকলের জানা। এবং অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় সরকার থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পারফরম্যান্স বা দক্ষতা অনেক বেশি পরিচয় পাওয়া গেছে। সম্ভবত এ কারণেই, রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিটি এখন পর্যন্ত জোরালো নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়ানো।
নির্বাচন ব্যবস্থার সমস্যা গণতন্ত্রের পবিত্রতাকে সরাসরি বিনষ্ট করে। বৈধতার সঙ্কট সৃষ্টি করে এবং পুরো কার্যক্রমকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ কারণেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সঠিক গণতন্ত্রের প্রয়োজনে স্বচ্ছ, অবাধ, চাপমুক্ত নির্বাচনের উপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। জনগণের ভোটাধিকারের মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে উন্নত গণতন্ত্রে কখনোই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন, সংশয় বা বিতর্ক দেখা যায়নি। সেসব দেশের গণতন্ত্রের শরীরেও অবৈধতার সিল-ছাপ্পড় লাগেনি।
কিন্তু অনগ্রসর দেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি হয়েছে সম্পূর্ণ ভয়াবহ। গণতন্ত্র আর নির্বাচন যেন ছেলে খেলা। শক্তির দাপটে জনগণের ভোটাধিকার বিনষ্ট হচ্ছে। নির্বাচন পরিণত হচ্ছে মহা-প্রহসনে। একদা হোন্ডা-গুণ্ডা ভিত্তিক নির্বাচনী অপরাধও এখন ব্যাপকতর হয়েছে। নানা রকম প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভোটের বারোটা বাজানো হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে বসিয়ে দেয়া, ভোটারদের আসতে না দেয়ার মতো অপরাধ করা হচ্ছে। সবচেয়ে বাহবার কাজ হচ্ছে ১১/১২ টার মধ্যেই কেন্দ্র দখল করে ফলাফল ছিনিয়ে নেয়ার মতো তা-বতায়। সে-ই এখন দক্ষ ও যোগ্য রাজনৈতিক শক্তি, যারা নির্দ্বিধায় অপরাধ হজম করে নিজের পক্ষে ফল হাসিল করতে পারে। গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থায় এহেন দম্ভ প্রয়োগের ঘটনা সম্ভবত বিরল।
নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের সময়ই নয়, নির্বাচনের পরেও চলছে শক্তির নগ্ন দাপট। জনপ্রিয়তা ও ভোটের জোরে যদি কখনো কেউ নির্বাচিত হয়েও যায়, তাবে তাকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না। হাজার রকম মামলা দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। শপথের সময় গ্রেফতার করা হচ্ছে। জেলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারপর ফাঁকতালে নিজের লোককে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। যেন ভোট পাওয়া ও নির্বাচিত হওয়াটাই অপরাধ। এক অদ্ভুত পরিস্থিতির কালো ছায়া ক্রমশ ঘিরে ধরেছে নির্বাচন ব্যবস্থায় এবং সেই সূত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর আইনের শাসনের নানা অঙ্গনে।
রাজনীতিতে প্রতিপক্ষের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এমন একমুখী শক্তি প্রয়োগ হওয়া সম্ভব ছিল না। জনপ্রিয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও চলছে হামলা-মামলার এমনই নিকৃষ্ট ধারা। বিপরীত চিন্তা ও দর্শনের কবর রচনা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গণতন্ত্রের নামে যদি বহুত্ববাদী চিন্তার অবসান ঘটানো হয়, তাহলে গণতন্ত্রের বিশুদ্ধতা থাকে না। গণতন্ত্রের শরীরে অগণতান্ত্রিক স্বৈরতার ছায়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। একদলীয় প্রবণতার অভিযোগও উঠছে এ কারণেই। পুরো বিষয়গুলোই গণতান্ত্রিক শুদ্ধাচারের পরিপন্থী।
গণতান্ত্রিক শুদ্ধাচারের প্রশ্নে এখন গভীরভাবে চিন্তা করার সময় এসেছে। শুধু মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলাই যে গণতন্ত্র নয়, সেটাও বুঝতে হবে। যেখানে ভোট না দিলেও নির্বাচন হয়, সেখানে গণতন্ত্র দাবি করা কতটুকু যুক্তিগ্রাহ্য। এটাও মনে রাখতে হবে যে, কার্যকর বিরোধী দল অনুপস্থিত থাকলে খোদ গণতন্ত্রেরই অস্তিত্ব থাকে না। এতে শুধু গণতন্ত্রই ব্যাহত হয় না, সাংবিধানিক সমস্যাও দেখা দেয়। শাসনের নৈতিক ভিত্তিটিও নাজুক হয়। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি এসব মৌলিক বিষয়ে উদাসীন থাকেন, তাহলে গণতন্ত্র এগিয়ে নেয়া মোটেই সম্ভব হবে না।
এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র চলছে উত্থান আর পতনের মধ্য দিয়ে। অরাজনৈতিক শক্তি যেমন গণতন্ত্রের ক্ষতি করেছে, রাজনৈতিক শক্তিও গণতন্ত্রকে নিজের ব্যক্তিসত্তা বা দলের অধীনে রাখতে সচেষ্ট হয়েছে। ফলে নিখাদ গণতন্ত্রের পরিচয় অধিকাংশ সময়েই পাওয়া যায়নি। পাপমুক্ত নির্বাচনও দেখা গেছে কমই। সুশাসনের ব্যাপক বিকাশও হতে পারেনি। স্বাধীনতার পর থেকে দশক ধরে আলোচনা করলে গণতন্ত্রের আলো ও ছায়ার দেখা পাওয়া যায়। প্রাতিষ্ঠানিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বাধাহীন পথচলার বিবরণ দেয়া সব সময়ই সম্ভব হয় না।
গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কলুষ আড়ালের জন্য কখনো কখনো উন্নয়নকে সামনে আনা হয়। বিশেষত সামরিক শাসকরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করে নিজের স্বৈরশাসন কায়েমের সময় কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রদর্শন করে। আয়ুব বা এরশাদের তেমন কৃতিত্ব আছে। কিন্তু উন্নয়নের চমকের আড়ালে গণতন্ত্র ও সুশাসনের যে বারোটা বাজানো হয়, সেটা টের পাওয়া যায় পরে। স্বৈরশাসকদের উন্নয়নের চেয়ে সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশিই হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আইনের শাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন, মূল্যবোধ, নীতি ও নৈতিকতার চূড়ান্ত সর্বনাশ করে যে উন্নয়ন দেখানো হয়, সেটা সুশাসনের পক্ষে সহায়ক বলে বিবেচিত হয় না। বিভিন্ন গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে।
অতএব বিশুদ্ধ গণতন্ত্র এবং সকলের জন্য সমান সুযোগ-সম্পন্ন গণতন্ত্রই একটি সমাজের শান্তি, স্থিতি, উন্নয়ন ও কল্যাণের পূর্বশর্ত। একদলীয় বা স্বৈরতান্ত্রিক আদলে আর যাই হোক, গণতন্ত্র হয় না। নির্বাচন ব্যবস্থা বিনষ্ট করেও গণতন্ত্রের দেখা পাওয়া কিংবা শাসনের বৈধতা হাসিল করা অসম্ভব। যে কারণে বার বার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং অবাধ, নিরপেক্ষ ও চাপমুক্ত ভোটের ব্যবস্থা করার দাবি শোনা যাচ্ছে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন মহল থেকে নানা কথা বলা হচ্ছে। মিডিয়ায় ভোটের বিভিন্ন অসঙ্গতি উপস্থাপিত হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরাও বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। এসব কথা শোনা হলে গণতন্ত্রেরই লাভ এবং নির্বাচন ব্যবস্থারই কল্যাণ নিশ্চিত হবে।
গণতন্ত্র নিয়ে তত্ত্বগতভাবে যা বলা হয় আর বাস্তবে যা আছে, তা মিলিয়ে দেখলে সত্যিই হতাশ হতে হয়। শুধু নির্বাচনই নয়, গণতন্ত্রের নানা ক্ষেত্রে ক্রমে ক্রমে পুঞ্জীভূত হচ্ছে নানা অসঙ্গতি। এসব কমানোর বদলে বাড়ানোই হচ্ছে একতরফাভাবে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পক্ষসমূহের মধ্যে তীব্রভাবে বাড়ছে বিভেদ ও দূরত্ব। নিকট-অতীতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের একটি কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নৈকট্য বাড়ানোর কাজ করা হলেই মঙ্গল হতো। সেটা হয়নি। সংলাপ বা আলাপ-আলোচনার কথা দেশ-বিদেশ থেকে বহুবার বলা হলেও তা কার্যকর হয়নি। সঙ্কট মোচনের উদ্যোগ না নিলে সঙ্কট বৃদ্ধি পাবে, এটা একটি সাধারণ জ্ঞানের কথা। এই কথাটি সংশ্লিষ্টরা বুঝতে পারছেন বলে মনে হয় না।
সংসদ থেকে ইউপি পর্যন্ত নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা সকলের সামনে রয়েছে, সেটাকে কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য বলা যায় না। যদি ভোট না দিলেও নির্বাচন হয়ে যায়, তাহলে সে নির্বাচনের শুদ্ধতা বা বৈধতার অস্তিত্ব থাকে না। আর ভোটার ও ভোটবিহীন গণতন্ত্রের কথা তো অকল্পনীয় বিষয়। প্রতিপক্ষের প্রার্থী-সমর্থকদের হটিয়ে দিয়ে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে একতরফা গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা আপাত স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও বৈধতা কখনোই দিতে পারবে না। সাংবিধানিক নীতির সঙ্গেও এসব অসঙ্গতি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। পুরো বিষয়টিই একটি তালগোল পাকানো বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়, যা কালক্রমে শাসনের জন্য ভালোর বদলে মন্দ প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করবে।
আগে-ভাগে সঙ্কট ও সমস্যা সমাধান না করে কোনক্রমে অগ্রসর হওয়া যায় বটে; কিন্তু ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয় না। ভবিষ্যৎ বিপদ আঁচ করতে পারার নামই বিচক্ষণতা। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এসব ক্ষেত্রে দূরদৃষ্টির পরিচয় দিলেই সকলের কল্যাণ।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এটিএম কার্ড জালিয়াতি


প্রথমে বলা হলো মাত্র লাখ বিশেক টাকা লুটে নিয়েছে এটিএম জালিয়াতচক্র। এখন সে অংকটা আরও অনেক বড়। শত কোটি টাকা। রিমান্ডে নেয়া পোলিশ নাগরিক পিওটর জালিয়াতি ও এ বিপুল পরিমাণ টাকা লুটের কথা স্বীকারও করেছে। কেবল ডেবিট কার্ডই নয়, ক্রেডিট কার্ডও জাল করে এ টাকা লুটে নিয়েছে। জালিয়াতচক্রের কয়েকজন লুটের টাকা নিয়ে দেশ থেকে ভেগেও গেছে ইতোমধ্যে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ের পর এ পিওটরের দেয়া তথ্যের প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। লুটের টাকার কিছু অংশ বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকদের ফেরত দিয়েছে বলে জানা যায়। এতে অনেকেই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছিলেন। কারণ প্রথমদিকে জানানো লুটের টাকার অংকটা তেমন বড় ছিল না। কিন্তু পরে যখন জানা গেল যে, এটিএম জালিয়াতি করে লুণ্ঠিত টাকার অংক শত কোটিরও বেশি। তখন তা ভয়াবহ বৈকি। এ বিপুল অংকের টাকা এটিএম বুথ থেকে লুট হয়ে যাবে আর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টেরই পাবে না, তা সত্যি অভাবনীয় বৈকি। গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা রাখেন কেন? নিশ্চয়ই নিরাপত্তার জন্য। আর এই এটিএম সিস্টেম হচ্ছে চটজলদি করে যেখানে যখন প্রয়োজন সেখান থেকেই স্বল্প পরিমাণ টাকা তুলে গ্রাহকদের জরুরি কেনাকাটা ইত্যাদি সেরে নেয়া। কারণ ব্যাংক সাধারণত দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে না। তাছাড়া সবখানে ব্যাংকের শাখাও থাকে না। এটিএম হচ্ছে ছোট একটি বক্সঘরে যন্ত্র বসিয়ে সেখানে গ্রাহকের টাকা রেখে দেয়া। আর গ্রাহক সেই বক্সঘর বা বুথ থেকে প্রয়োজনীয় টাকা যখন-তখন তুলে নিয়ে কাজে লাগাতে পারেন। কিন্তু একি ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটলো ব্যাংকিং-এর এটিএম সিস্টেমে?
ধারণা করা হচ্ছে, বিদেশী ব্যাংকের এদেশের শাখাগুলো থেকে এ জালিয়াতদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া এখানকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকের কর্মচারী-কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে যথাসময়ে পাকড়াও করে আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হবে। অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবে। যারা পালিয়ে গেছে দেশ থেকে তাদেরও ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। কিন্তু লুণ্ঠিত টাকা কিভাবে ফেরত পাওয়া যাবে তা স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না।  গ্রাহকরা যদি তাদের গচ্ছিত টাকা ফেরত না পান, তাহলে এদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি গ্রাহকদের আস্থার ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হবে। এর প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় একরকম সংকটই চলছে। বিশেষত সরকারি ব্যাংকে সাধারণ মানুষ টাকা রাখতে চান না। কারণ সরকারি ব্যাংকসমূহ থেকে ইতোমধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হয়তো কয়েক বছর লেগে যাবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেবার নাম করে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় একশ্রেণির লুটেরা যেমন বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, ঠিক তেমনই ব্যাংকের কোনও কোনও কর্মকর্তাও নামে-বেনামে ব্যাংকের টাকা লুটে নিয়ে নিজেদের পকেটে পুরেছে। এমনকি বিদেশে পাচারও করেছে এ লুটের টাকা। দেরিতে হলেও এদের কাউকে কাউকে গ্রেফতার করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে সরকারি ব্যাংক থেকে অর্থলুটের মূল হোতা বা রাঘববোয়ালদের অনেকেই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। এদের পাকড়াও করে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার করা যাবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তার কারণ হচ্ছে, এদের অনেকেই ক্ষমতাবান। এমনকি রাজনৈতিক দলের অনেক হোমড়া- চোমড়াও রয়েছে ব্যাংকের অর্থ লুটের সঙ্গে জড়িত।
ব্যাংকের লুণ্ঠিত অর্থ যদি গ্রাহকরা ফেরত না পান, ব্যাংক অথবা এটিএম বুথ থেকে খোয়া যাওয়া রোধ করে সংশ্লিষ্টদের শায়েস্তা না করতে পারলে আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেমে ধস নেমে আসবে অচিরেই। গ্রাহকরা ইতোমধ্যে শংকিত। এর প্রভাব অর্থনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
কাজেই ব্যাংকের মর্যাদা ও আস্থা ফেরাতে হলে লুটেরাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে আইনানুগভাবে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ফেরত দিতে হবে গ্রাহকের সমস্ত লুণ্ঠিত অর্থও।

রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সাংবাদিক নির্যাতনের পুরস্কার পুলিশের এসআই পদে চাকরি!


(শিরোনাম পড়েই অনেক পাঠক হয়তো চাকরি পাওয়ার আশায় সাংবাদিক নির্যাতন করার প্লান-প্লোগ্রাম শুরু করে দিয়েছেন কিন্তু পাঠককে হতাশ করে শুধু বিবেকের তাড়নায় আজ কেন আমি এ ধরনের শিরোনাম দিলাম তার একটি সত্য ঘটনা উল্লেখ করবো এবং সেই সাথে থাকবে হৃদয় গহীনের কিছু প্রস্ফুটিত আর্তনাদ...। তবে আগেই বলে রাখছি কেউ যদি আমার এই লেখা পড়ে ঘটনার সতত্য নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেন তাহলে আমি আনন্দ চিত্তে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবো)
বিবেক যখন প্রতিবাদের স্বপ্ন দেখে: আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন সদস্য। অনেক আশা আর বুক ভরা ভালবাসা নিয়ে ২০০৮ সালে ভর্তি হলাম সবুজ আরণ্যকের ছায়াঘেরা মতিহারের সবুজ ক্যাম্পাসে। দিন যায়, মাস যায়, ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে আমার জীবনের চাকা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার পর শুরু হলো এক নতুন জীবন। যেদিকে তাকাই - দেখি শুধু কতশত সংগঠন। অবশ্য এত সংগঠনের নাম মনে রাখা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনগুলিতে একটু কষ্টের ব্যাপারই ছিলো। 
সুস্থ-সামাজিক আর মননশীল পরিবারে বেড়ে ওঠার কারণে ছোট থেকেই ছিল অন্যায়ের প্রতি বীতশ্রদ্ধা আর সত্যের প্রতি ছিল অগাধ ভক্তি এবং ভালবাসা। সেই ভাললাগা আর ভালবাসার জায়গা থেকে মনে মনে পরিকল্পনা করলাম কলম সৈনিক হবো। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির ১২ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কলমযোদ্ধা হিসেবে যাত্রা শুরু করলাম। সাংবাদিকতায় এসেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধারাবাহিক বিভিন্ন অন্যায় অনিয়ম আর সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় অল্প সময়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হই ক্যাম্পাসের প্রতিবাদী সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। 
ভীত হয়ে উঠে সরকারদলীয় প্রশাসন নামক যন্ত্র আর তাদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের কথিত নেতারা। বিচ্ছিন্ন দুই একটি হুমকি-ধমকি ছাড়া বেশ স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে আমার হাত নামক কম্পিউটারের কী বোডর্টি।
খ. সাংবাদিক নির্যাতনের মহোৎসব শুরু :- ২০১১ সালের ৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি বাংলোর সামনে বিডি ন্যাশনাল নিউজের নীরবকে প্রক্টরের হাতে লাঞ্ছিত হতে দেখে তাকে উদ্ধার করতে প্রতিবাদী কণ্ঠ নিয়ে এগিয়ে আসে তৎকালীন রাবি প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি ও দৈনিক নয়া দিগন্তের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শামছুল ইসলাম কামরুল। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন সহকারী প্রক্টর ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারদলীয় কয়েকজন শিক্ষক সহস্রাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে পিটিয়ে মারাত্মক ভাবে আহত করে। যা পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের লিড ক্যাপশন ছিল।
শুরু হয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মুূখোমুখি অবস্থান; বিজ্ঞাপিত পদের তিনগুণ শিক্ষক নিয়োগ আর রাজনৈতিক সহিংসতায় মেধাবী ছাত্রদের মৃত্যুর মিছিলসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সাংবাদিক দমনে ছাত্রলীগের সাথে গোপন আঁতাতে বসে মহাজোট সরকার সমর্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুরু করে সাংবাদিক নির্যাতনের মহোৎসব। ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যাডার কর্তৃক ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক লাঞ্ছিতের ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদের হামলার শিকার হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত তিন সাংবাদিক সায়েম সাবু (দৈনিক যুগান্তর), আকন্দ মোহাম্মদ জাহিদ (নিউজ টুডে) এবং আসাদুর রহমান (ফোকাস বাংলা)। একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষক প্রহৃতের ঘটনায় প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগের ক্যাডাররা দৈনিক যায়যায় দিন পত্রিকার রাবি প্রতিনিধি আলী আজগর খোকনকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় এবং প্রক্টর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়। এর আগে ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি ছাত্রলীগ ক্যাডাররা  দৈনিক দিনকাল ও অনলাইন সংবাদ সংস্থা রেডটাইমস্ বিডি ডটকম-এর সাংবাদিক মুনছুর আলী সৈকতকে পিটিয়ে আহত করে। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ক্যাম্পাসে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে পেটানোর সময় ছবি ও সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মী জুয়েল, রকি, মিন্নাত, রনি, ডিলস, বিল, মাসুদ, নয়ন এবং মনির বিভিন্ন মিডিয়াতে কর্মরত ১১ জন সাংবাদিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। আহত সাংবাদিকরা হলেন চ্যানেল আই’র বিশেষ প্রতিনিধি মোস্তফা মল্লিক, ক্যামেরাম্যান মইন, আমার দেশ’র ফটো সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ, প্রথম আলো’র আজহার উদ্দিন, নিউ এইজ’র সৌমিত্র মজুমদার, কালের কণ্ঠ’র নজরুল ইসলাম জুলু, সানশ্ইান’র রুনি, জনকণ্ঠের রাবি প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম, যুগান্তরের সায়েম সাবু ও দি এডিটরের আতিকুর রহমান তমাল। এসময় প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক ও চ্যানেল আই প্রতিনিধির ক্যামেরা ভাংচুর করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ কর্মীরা শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি সামসুল আরেফিন হিমেল ও বাংলা বাজার পত্রিকার শাহজাহান বিশ্বাসকে পিটিয়ে আহত করে। এর আগে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন শীর্ষনিউজ’র লুৎফর রহমান, ডেসটিনি’র আব্দুর রাজ্জাক সুমন, বাংলাদেশ টুডে’র আওরঙ্গজেব সোহেল, আরটিএনএন’র এস এম সাগর। এছাড়া সাংবাদিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সাংবাদিক আকন্দ মোহাম্মদ জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক ডেইলি সান’র প্রতিনিধি সোহেল রানা যুবলীগ কর্মী ও দৃর্বত্তদের হামলার শিকার হন। 
২০১১’র ১২ জুলাই ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদ ওরফে ভাগ্নে মাসুদ, আসাদ, মাহাবুসহ ৪/৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও বর্তমান রাবি প্রেস ক্লাব সভাপতি আজিবুল হক পার্থকে পিটিয়ে আহত করে এবং ২ আগস্ট ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন দৈনিক জনতা’র রিপোর্টার আকিব জাভেদ।
সাংবাদিক নির্যাতন ও নিপীড়নের সবচেয়ে বড় নিদর্শন সৃষ্টি করে বর্তমান রাবি প্রশাসন ২০০৯ সালের ২৪ এপ্রিল। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ওইদিন প্রক্টর তাদের দলীয় ক্যাডারদের সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রাণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব সিলগালা করে দেয়। পরে প্রক্টরের অবৈধ হস্তক্ষেপের বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে শুনানি শেষে আদালত প্রক্টরের ওই অবৈধ হস্তক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করে প্রশাসনের প্রতি রুল জারি করে। 
এছাড়া ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি সাংবাদিকদের আরেকটি সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া প্রক্টরিয়াল বডি ও বিপুল সংখ্যক পুলিশের সহায়তায় সমিতির কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। পরবর্তীতে প্রশাসনের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সমিতির তালা খুলে দেয়া হলেও প্রশাসনের সাথে সমঝোতা না করায় এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে প্রেস ক্লাব।
পাঠক উপরে যা পড়লেন এটি শুধু সারাদেশের সাংবাদিক নির্যাতনের একটি খণ্ড চিত্র মাত্র। “বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি - ২০১২” নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর পর্যালোচনায় উঠে এসেছে ২০১২ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনটিতে উল্ল্যেখ করা হয় ২০১২ সাল ছিল সাংবাদিক নির্যাতনের বছর। বিভিন্ন জাতীয়  দৈনিকে সাংবাদিক নির্যাতনের উপর প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১২ সালে অন্তত ৪৪২ সংবাদকর্মী বিভিন্নভাবে নিযার্তনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৭৪ জন আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্বারা, ৮৭ জন সন্ত্রাসী দ্বারা, ৭২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তির হাতে নির্যাতনের স্বীকার হন এবং ৫ জন খুন হন। এছাড়া গেল বছর ২০১২ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি অথবা তাদের ঘনিষ্ঠ অনুসারী কতৃক হামলার শিকার হয়েছেন। ২০১২ সালে গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত সংবাদ ছিল মাছরাঙ্গা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি হত্যাকা-ের ঘটনা। অন্যদিকে ২০১১ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের মোট সংখ্যা ছিল ৩০৬ জন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ছিল ১২ দলাশেমিক ৫ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে এই হার হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর প্রায় ২৩ শতাংশ নির্যাতনই হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে ১১ শতাংশ আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন আর্টিকেল-১৯ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্ল্যেখ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ১০৬ ভাগ বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
প্রতিবেদনে গত বছর ২১৩ জন সাংবাদিক ও ৮জন ব্লগার নানাভাবে হামলার শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৫ সালে বিভিন্ন সময়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা হত্যা, নির্যাতন, মামলা ও গ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের তথ্যানুযায়ী ২০১৫ সালে তিনজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৮ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া মোট ২৪৪ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ বছর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর শিকদারকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টি। অভিযোগ ওঠে যে প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বার্থবিরুদ্ধে অবস্থান নেবার কারণে তাকে আটক করা হয় ও রিমান্ডে নেয়া হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজের অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়।
গ. সাংবাদিক নির্যাতনের পুরষ্কার পুলিশের এসআই পদে চাকরি....(!)
 ২০১১ সালের ১৪  আগস্ট আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন ও মর্মান্তিক বেদনার একটি দিন। এই দিনটির ঘটনা বলার আগে আমাকে একটু পিছনে ফিরে তাকাতে হবে; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ঘরানার একজন প্রভাবশালী সংস্কার পন্থী শিক্ষক যার নামের আদ্যক্ষর (হ); তিনি আমাকে সাংবাদিক হিসেবে একটি তথ্য দিলেন হ’ স্যারের তথ্যটি ছিল এমন ‘প্রক্টর মহোদয় নিজে মাদক সেবন করেন এবং মাদক সেবনকারীদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। তিনি আমাকে যতটুকু প্রমাণ দেখিয়েছিলেন তা ঐ প্রক্টর মহোদয়কে ঘায়েল করতে যথেষ্ট ছিল। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমি ১৩ আগস্ট ২০১১ রাতে নিউজটি সেন্ট করি বার্তা সংস্থা নিউজ আওয়ার্স বিডি ও রাজশাহী স্থানীয় প্রভাবশালী দৈনিক লাল গোলাপ পত্রিকায়। ঐ দিন রাতেই নিউজটি প্রকাশ করে বিউজ আওয়ার্স বিডি আর পরের দিন অর্থাৎ ১৪ আগস্ট ১১’ লালগোলাপ পত্রিকায় “মাদক সিন্ডিকেটের খপ্পরে রাবি ক্যাম্পাস” শিরোনামে প্রথম পেজে লিড সংবাদ হিসেবে প্রকাশ পায়। এছাড়া নিউজের প্রধান শিরোনামের উপরে “এসব বিষয় দেখার জন্য আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি : প্রক্টর” এমন একটি মিনি শিরোনাম দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা সবাই জানেন যে, আইনশৃংখলা রক্ষাসহ ক্যাম্পাসের সকল অবৈধ কর্মকা-ের দমনের জন্য প্রক্টরকে নিয়োগ দেয়া হয় কিন্তু রাবি প্রক্টর আমার সাথে সে বিষয়টি অস্বীকার করেন। যাই হোক রাজশাহীর স্থানীয় পত্রিকায় নিউজটি প্রকাশ হওয়ায় এবং নিজের মানসম্মান ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ায় প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে প্রক্টর নাম ধারণকারী সরকার দলীয় ঐ ক্যাডার।
 ১৪ ই আগষ্ট ২০১১ দুপুর আনুমানিক ৩টায় আমার সেলফোনে একটি সংবাদ আসলো রাবির সৈয়েদ আমীর হলে ছাত্রলীগের রুম থেকে একটি ককটেল ও শিবিরের তৈরীকৃত হিটলিস্ট পাওয়া গেছে। ঐ সংবাদ সংগ্রহের জন্য ক্যামেরা নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে যায়। অতঃপর উদ্ধারকৃত ককটেলের ছবি তুলতে গেলে তৎকালীন ছাত্রলীগের মাদার বখশ হলের আহবায়ক রুহুল আমিন বাবুর নেতৃত্বে ক্যম্পাসের ত্রাস আব্দুল আলিম (আইসিটি), কামাল (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), আরাফাতসহ ১৫/২০ জন ছাত্রলীগ ক্যাডার পুলিশ ও গোয়েন্দতা সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় ইট দিয়ে তারা আমার মাথায় আঘাত করে এবং মুখ ও শরীর থেঁতলে দেয়। গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সৎ কর্মকর্তা ও আমার সহকর্মীরা উদ্ধার করে আমাকে রামেক হাসপাতালের ৬ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করে। 
ঘটনার পরপরই আমার সহকর্মী সাংবাদিকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। ঝড় ওঠে প্রভাবশালী মিডিয়াগুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে এ হামলার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে স্বারকলিপি দেওয়া হয় ভিসি-প্রোভিসি ও প্রক্টরকে। এছাড়া নিজের জীবনহানির আশঙ্কায় আমার পক্ষ থেকে আমার সহকর্মীরা মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করতে গেলে তৎকালীন ওসি আকবর মামলা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে সাংবাদিকদের চাপে ঐ ওসি ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে একটি জিডি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। 
পাঠক একটি কথা আপনাদের বলতে ভুলে গিয়েছিলাম “আমার সহকর্মী সাংবাদিকরা যখন নিরাপত্তার দাবিতে প্রক্টরকে স্মারকলিপি পেশ করতে যায় তখন তিনি (প্রক্টর) আমাকে ইঙ্গিত করে নাকি বলে ছিলেন, অনেক সাংবাদিকতো মরে যায় তয় আমার ক্যাম্পাসে দু’একজন মরে না কেন ?” এছাড়া এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি সাময়িকভাবে লোকদেখানো বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট ক্যাডারদের।
সময়ের ব্যবধানে আজ অনেকদিন অতিবাহিত হয়েছে। ক্যাম্পাসে এখন প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা আর যাই না। কিছুদিন আগে হঠাৎ (হ) স্যার ফোন করেছিলো.....তানিম..কিছু শুনেছ “সাংবাদিক পেটানোর পুরস্কার স্বরূপ দলীয় বিবেচনায় ছাত্রলীগের মাদার বখশ হলের আহ্বায়ক রুহুল আমিন বাবু এখন পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর। স্যারের কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম; নিঃশব্দে অশ্রুফোঁটা পড়তে লাগল..তবে প্রক্টরের বদদোয়ায় এখনও মরে যায়নি আল্লাহ আমাকে খুব ভালভাবে বাঁচিয়ে রেখেছেন। (বাবু-বর্তমানে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ট্রেনিংরত) 
ঘ. কবে বন্ধ হবে গণমাধ্যমের ওপর অবৈধ হস্তক্ষেপ? 
 ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৪’র সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ-৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের সব ইতিহাস-সংগ্রামে ছিল স্বাধীন গণমাধ্যমের গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা। যখনই সরকার গণমাধ্যমকে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছে তখনই জনগনই তাদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রতিটি কন্টকাকীর্ণ মুহূর্তে লেখক-সাংবাদিক ও কলামিস্টরা অসামান্য অবদান রেখেছেন। 
আজ প্রত্যাশার প্রহর গুনতে থাকি কবে বন্ধ হবে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের ওপর সরকারের অবৈধ খড়গ হস্তক্ষেপ। পরিশেষে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য আমরা এগিয়ে যায়...বিদায় বেলায় ফরাসি সাহিত্যের দিকপাল লুই আরাগঁর সেই অমর বাণী “মহত্তম অভীষ্টের জন্য এক চিৎকার” - আসুন গণমাধ্যম নিপীড়নের প্রতিবাদে নির্ভয়ে সত্য অভীষ্টের জন্য কোটি কোটি কণ্ঠ এক সাথে প্রতিবাদ করি।
হাসান ইলিয়াছ তানিম 

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জটিলতা সৃষ্টির কার্যক্রম


প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের সূচনা হয়েছিল তার ডালপালার বিস্তার এখনো চলছে। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে, প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ১৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বাণীতে তিনি বলেছিলেন, ‘কোনো কোনো বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক দেরি করেন। আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।’ তার এই মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে। মন্তব্যের পক্ষে- বিপক্ষে দৃশ্যপটে এসেছেন অনেকেই। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম থেকে ‘মোড়ল’ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পর্যন্ত আওয়ামী ঘরানার সকলে মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে ‘এক হাত’ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেন, অবসর গ্রহণের পর রায় লেখা যাবে না- এমন কোনো নির্দেশনা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই। লক্ষণীয় বিষয় হলো, অবসর গ্রহণের পর রায় লেখা যাবে- এমন কোনো নির্দেশনাও কিন্তু সংবিধানের কোথাও নেই। অন্যদিকে আওয়ামী ঘরানার নেতা ও বিশিষ্টজন বলেই যুক্তি ও আইনের তোয়াক্কা করেননি তারা। শুধু তা-ই নয়, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তো বিচারপতি সিনহাকে জ্ঞান পর্যন্ত খয়রাত করেছেন। ২৫ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতির উচিত মুখ সামাল দিয়ে কথা বলা! অন্যদিকে বিচারপতি এস কে সিনহা কিন্তু নিজের অবস্থান থেকে একচুল পরিমাণও সরে যাননি। তিনি বরং আরো কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ২৩ জানুয়ারি মৌলভীবাজারে জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সভায় দেয়া ভাষণে বলেছেন, কাউকেই আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ করতে দেয়া হবে না।
এদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক সমাজের পাশাপাশি আইনাঙ্গনেরও বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে বিচারপতি সিনহার সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্যের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। আলোচনায় প্রাধান্যে এসেছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া রায়টি, যে রায়ে স্বাক্ষর করেছিলেন পূর্ববর্তী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক। একই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিছু ‘ঐতিহাসিক’ তথ্যও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়া রায়টি প্রথমে ‘সংক্ষিপ্ত আদেশের’ আকারে ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১১ সালের ১০ মে। এর সাতদিনের মধ্যেই অবসরে গিয়েছিলেন বিচারপতি খায়রুল হক। দায়িত্ব যেখানে ছিল অবসরে যাওয়ার আগেই অন্য সকল বিচারপতির স্বাক্ষরসহ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে যাওয়া সেখানে তিনি নিজে স্বাক্ষর করতেই সময় নিয়েছিলেন দীর্ঘ ১৬ মাস তিনদিন।  তার স্বাক্ষরসংবলিত ৩৪২ পৃষ্ঠার রায়টি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছিল ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে একবার পাঠিয়েও রায়ের কপি ফেরৎ নিয়েছিলেন তিনি। বলা হয়, এই সুযোগে খায়রুল হক নাকি রায়ে অনেক পরিবর্তন করেছিলেন। সাবেক প্রধান বিচারপতির স্বাক্ষর দেয়ার অধিকারকে কেন্দ্র করে শুধু নয়, অমন কোনো রায়ের বৈধতা ও কার্যকারিতা নিয়ে তখনও গুরুতর প্রশ্ন ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রশ্ন তুলেছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছিলেন, অবসরে যাওয়ার পর রায়টিতে স্বাক্ষর দেয়ার এখতিয়ারই নেই সাবেক প্রধান বিচারপতির। স্বাক্ষর দিলে রায়টি বৈধতা হারাবে। 
এ ব্যাপারে খুবই সরাসরি কিছু কথা বলেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, অবসরে যাওয়ার পর কিংবা রাতের আঁধারে পূর্বঘোষিত রায়ের অর্ডার পোরশন বা মূল আদেশের পরিবর্তন আসলে ‘ফৌজদারি অপরাধ’। এটা কোনোভাবেই করা যাবে না। পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, অসমাপ্ত থেকে যাওয়া রায় লেখার জন্য এক মাস বা কাছাকাছি একটা সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে। তাহলে আর ওই রায় লেখা বেআইনি হবে না। কিন্তু রাতের আঁধারে রায় লিখতে গিয়ে যারা মূল আদেশ বা অর্ডার পোরশন পরিবর্তন করেন তারা ‘ফৌজদারি অপরাধ’ করেন। বর্তমানে সেটাই করা হচ্ছে। আর সে কারণেই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। 
আইনাঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, অবসরে যাওয়ার পর রায় লেখার বিষয়ে বর্তমান প্রধান বিচারপতির নেয়া অবস্থানের পক্ষে রাখা বক্তবের পাশাপাশি সাবেক এ প্রধান বিচারপতির মূল কথাগুলোর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করার সুযোগ নেই। এখানে বিশেষ করে ‘রাতের আঁধারে’ পূর্বঘোষিত রায়ের অর্ডার পোরশন বা মূল আদেশের পরিবর্তনকে ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা উল্লেখ করা দরকার। কারণ, বিচারপতি এস কে সিনহার পূর্ববর্তী প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের এমন একটি আদেশের সূত্র ধরেই দেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি ও ঘনীভূত হয়েছে। ওই রায়টিকে অজুহাত বানিয়ে ক্ষমতাসীনরা সংবিধানে যথেচ্ছভাবে কাটাছেঁড়া করেছেন। একই কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যেখানে এ ধরনের কার্যক্রম তথা পরিবর্তনকে তিনি ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরীর বক্তব্যের আলোকে বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় কি না তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ, এর সঙ্গে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়টি জড়িত রয়েছে- আইনের ব্যাখ্যায় যে সংশোধনী করা হয়েছে একটি ‘ফৌজদারি অপরাধ’কে ভিত্তি বানিয়ে।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সম্পর্কে কিছু তথ্যের উল্লেখ করতেই হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য রাস্তা তৈরি করার আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়ের মাধ্যমে তিনি ঝামেলা পাকিয়েছিলেন। ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি আইনজীবী সমিতির নেতারাও বলেছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ের পরিবর্তে স্ববিরোধিতাপূর্ণ সংক্ষিপ্ত আদেশ দিয়ে বিচারপতি খায়রুল হক বিভ্রান্তি ও সংশয়ের সৃষ্টি করেছিলেন। রায়টিতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণার পাশাপাশি তিনি বলেছিলেন, পরবর্তী দুটি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে হতে পারে। রায়ের এই অংশকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অন্য কিছু উদাহরণ দিতে গিয়ে আইনজীবী নেতারা বলেছিলেন, দু-একটি ডিভিশন বেঞ্চ কখনো কখনো সরকারের বিরুদ্ধে রায় দিলেও প্রধান বিচারপতি হিসেবে খায়রুল হক তাৎক্ষণিকভাবে সে সব বেঞ্চের বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। সিনিয়র ও দক্ষ বিচারপতিদের বসিয়ে রেখে জুনিয়র এবং স্থায়ীভাবে নিয়োগ না পাওয়া বিচারপতিদের দিয়ে বেঞ্চ গঠনের মাধ্যমে বিচার বিভাগে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগও উঠেছিল খায়রুল হকের বিরুদ্ধে। 
আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো, বিচারপতি খায়রুল হকের সময়ই অতীতের সব ঐতিহ্য ক্ষুণœ করে সর্বোচ্চ আদালতে রায়ট পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রবেশ ঘটেছিল। পূববর্তী প্রধান বিচারপতি যে দু’জনের শপথ পড়াতে অস্বীকার করেছিলেন, বিচারপতি খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরপরই সে দু’জনকে শপথ পড়িয়ে বিচারপতি বানিয়েছিলেন। এর ফলে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ক্ষমতাসীন দলের দু’জন নেতা অন্তত পঞ্চাশজনকে ডিঙ্গিয়ে বিচারপতি পদে নিযুক্তি পেয়েছিলেন। তাছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে দায়ের করা বিভিন্ন মামলা নিষ্পত্তি করার পরিবর্তে ২০০৯ ও ২০১০ সালে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে দায়ের করা মিথ্যা মামলাগুলোর ক্ষেত্রেও বিচারপতি খায়রুল হক আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে ভূমিকা পালন করেছেন। 
এ ব্যাপারে সরাসরি কিছু কথা শুনিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেছেন, বিচারপতি খায়রুল হক আওয়ামী লীগের ‘প্রতিনিধিত্ব’ করেছেন। তার সময়ে আপিল বিভাগকে আওয়ামী লীগ সরকারের অংশে পরিণত করা হয়েছিল। খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেছিলেন, সংবিধান ‘ল-ভ-’ করলেও বহুদলীয় গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হত্যাকারী চতুর্থ সংশোধনীর বিষয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি তিনি। এখানেই বিচারপতি খায়রুল হকের ‘মতলবটা’ পরিষ্কার হয়েছে। অত্যন্ত ‘ঠা-ামাথায়’ তিনি বিচার বিভাগকে ‘খুন’ করে ফেলেছেন। 
শুনতে কঠোর মনে হলেও এভাবে পর্যালোচনায় দেখা যাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভিন্ন রায়ের মাধ্যমে আসলেও মিস্টার খায়রুল হক ‘অত্যন্ত নিষ্ঠা ও শতভাগ আন্তরিকতার সঙ্গে’ আওয়ামী লীগ সরকারের ‘প্রতিনিধিত্ব’ করেছিলেন। তার মতো বিচারপতিদের কারণেই রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোনোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নস্যাৎ করতে এবং বিচার বিভাগকে সরকারের সেবাদাস বানিয়ে ফেলতে পেরেছে। ব্যক্তিগতভাবে মিস্টার খায়ররুল হককেও অবশ্য যথেষ্টই দিয়েছে সরকার।
এই প্রধান বিচারপতি কিন্তু ‘ক্লিন ইমেজ’ নিয়ে বিদায় নিতে পারেননি। বিদায়ের আগে প্রচলিত নিয়মে ‘ফেয়ারওয়েল’ও পাননি তিনি। ২০১১ সালের ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি তাকে বরং ‘গায়েবানা সংবর্ধনা’ দিয়েছিল- যেভাবে সাধারণত দূরে কোথাও মৃত কোনো মুসলমানের গায়েবানা জানাজা পড়া হয়। বিষয়টি অসম্মানজনক তো ছিলই, মিস্টার খায়রুল হককেও মহিমান্বিত করেনি।
এসব তথ্যের আলোকে বলা যায়, দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার পেছনে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আসলেও ‘ঐতিহাসিক অবদান’ রেখে গেছেন! মূলত তার এ ‘অবদানের’ কারণেই দেশের বিচার বিভাগকে নিয়ে সংশয় ও জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে। এ যেন এক সুচিন্তিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা।
পাঠকদের মনে পড়তে পারে, ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে মন্ত্রীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করেছিল। সে সময় শীর্ষ আওয়ামী আইনজীবীরা মাননীয় প্রধান বিচারপতির চেম্বারের দরজায় লাথি পর্যন্ত মেরেছিলেন। ‘রেওয়াজের’ আড়াল নিয়ে জনা কয়েককে দিয়ে ‘ধামা’ও ধরানো হচ্ছে। ময়দানে হাজির হচ্ছেন মাস কয়েক আগে অবসরে যাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের মতো দ্বৈত তথা অন্য দেশের নাগরিক ও মিথ্যা তথ্য দানকারীরাও। সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী বিচার বিভাগ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। বিচার বিভাগকে বাঁচাতে চাইলে এখনো সময় আছে, আন্দোলন করুন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বর্তমান প্রধান বিচারপতি যে অবস্থান নিয়েছেন তার প্রতি সমর্থন জানানোর জন্যও তিনি আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ জানাতে গিয়ে বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগকে সঠিক রাস্তায় নেয়ার চেষ্টা করছেন। সমর্থন পেলে তিনি হয়তো সিস্টেমটা চালু করে যেতে পারবেন। বলা বাহুল্য, আইনজীবীদের তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সকল নাগরিকেরও উচিত এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিচার বিভাগকে বাঁচানোর আন্দোলনে অংশ নেয়া।
আশিকুল হামিদ 

বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এটা মুক্ত চিন্তা নয়


মহান ভাষা আন্দোলনের মাসে জনগণকে একুশের মূল চেতনা থেকে সরিয়ে সংঘাতের পথে ঠেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে কি না সম্প্রতি সে প্রশ্ন জোরেশোরেই উঠেছে। এর কারণ সৃষ্টি করেছে বিশেষ একটি প্রকাশনা সংস্থা। ওই সংস্থা এবারের বই মেলায় ‘ইসলাম বিতর্ক’ নামের এমন এক বই প্রকাশ ও বিক্রি করেছে যার পাতায় পাতায় বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর বক্তব্য রয়েছে। পবিত্র ইসলামের বিরুদ্ধেও যথেচ্ছভাবে লেখা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে সঙ্গত কারণেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অন্য সব ধর্মের শান্তি ও সম্প্রীতিকামী মানুষও প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। কৌশল হিসেবে সরকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বই মেলায় প্রকাশনা সংস্থার দোকান বন্ধ করে দেয়। পুলিশ সংস্থার মালিক ও বইটির সম্পাদকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, থানায় তাদের নাকি ‘জামাই আদরে’ রাখা হয়েছে। এমন অভিযোগের সত্যাসত্য নিয়ে কথা বাড়ানোর পরিবর্তে এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বইটির মাধ্যমে সংঘাতের উসকানি দেয়ার পাশাপাশি প্রকৃতপক্ষে আবারও ইসলাম বিরোধী চরম ধৃষ্ঠতা দেখানো হয়েছে। আমরা এই হীন ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং মনে করি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য প্রশংসিত হয়ে আসা বাংলাদেশে এ ধরনের কর্মকা- যারা করেছে তাদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি দিতে হবে, যাতে আর কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পক্ষে ইসলাম বিরোধী কোনো বই প্রকাশ ও বিক্রি করার সাহস না হয়। সবাই নিশ্চিতভাবে এটা মনে করবেন, উদ্দেশ্যমূলক এই নোংরামী মুক্ত চিন্তা অবশ্যই নয়।
প্রসঙ্গক্রমে মহান ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনা ও উদ্দেশ্যের কথাও স্মরণ করা দরকার। এ বিষয়ে জাতিগতভাবে আমাদের কিন্তু গর্ব ও আত্মতৃপ্তি বোধ করার তেমন সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ, দীর্ঘ ছয় দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো বাগাড়ম্বরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছি, বাংলাকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনিÑ আসলে করিনি। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ ও বাস্তবায়ন করতেও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। এমন মন্তব্যের কারণ, বাংলাকে তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে ভাষা আন্দোলন হয়নি। রফিক, জব্বার ও বরকতসহ ভাষা সংগ্রামীরাও কেবলই বাংলার জন্য আত্মত্যাগ করেননি। ভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তাদের উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলের জনগণের ধর্ম, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিসহ সামগ্রিক অবস্থার বিকাশ ঘটানো। সেজন্যই ভাষা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের পথ বেয়ে বাংলা শুধু রাষ্ট্রভাষার অবস্থান ও মর্যাদা অর্জন করেনি, স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানেই ভাষা আন্দোলন এবং একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ তাৎপর্য এবং অতুলনীয় সফলতা। একথা সত্য, আমাদের সাহিত্য অনেক উন্নতি করেছে, বাংলা ভাষাও কম সমৃদ্ধ হয়নি। এখনো নিরন্তর গবেষণা চলছে বাংলা ভাষা ও এর ব্যাকরণ নিয়ে। এসবের ভিত্তিতে বলা যায়, বাংলা চর্চার সৌকর্য বেড়েছে।
একই সঙ্গে এ কথাও আবার স্বীকার না করে পারা যায় না যে, ভাষা আন্দোলনের পেছনে ধর্ম ও সংস্কৃতির জন্য যে উদ্দেশ্য ছিল তার বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। বাংলা ভাষার ক্রম অগ্রগতি ও সুষম বিকাশ বরং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিচ্যুতি পযন্ত ঘটছে। শুধু তা-ই নয়, আধুনিকতা ও আন্তর্জাতিকতার নামে একদিকে ইংরেজির ব্যাপক চর্চা চলছে, অন্যদিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দির ব্যবহারও সীমা ছাড়িয়ে গেছে। স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে শিশুরা পর্যন্ত আজকাল হিন্দিতে কথা বলছে। হিন্দি ভাষার শুধু নয়, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতিরও অনুপ্রবেশ ঘটছে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে। ঘুরিয়ে বলা যায়, পাকিস্তান যুগের উর্দুর স্থান দখল করে নিয়েছে হিন্দি ভাষা। অথচ এই ভাষার প্রশ্নে ভিন্নমত ও বিরোধিতা ছিল বলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের পূর্বসুরীরা আন্দোলন করেছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধও আমরা নিশ্চয়ই উর্দুর স্থলে হিন্দিকে নিয়ে আসার জন্য করিনি।
বিষয়টি নিয়ে ভাবনার এবং পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে অনেকদিন আগেই। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, আধুনিকতা ও আন্তর্জাতিকতার নামে বাংলাদেশের ওপর হিন্দি ও ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনই কেবল তীব্রতর হয়নি, এদেশের কিছু বিশেষ গোষ্ঠী ৯০ শতাংশের বেশি নাগরিকের ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধেও জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে বাজারে এসেছে ‘ইসলাম বিতর্ক’ নামের বইটি। অন্য সকল পন্থায়ও ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এসব কর্মকান্ডের কোনোটিকেই প্রগতিশীলতা বা আধুনিকতার তকমা দিয়ে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। কারণ, যারা তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার- তারা উসকানি দিয়ে দেশকে সাম্প্রদায়িক হানাহানির মুখে ঠেলে দিতে চায়। এদের কারণেই শান্তি ও সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে হত্যাকা-সহ অনাকাংক্ষিত বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা তাই মনে করি, ইসলাম, মুসলিম ও বাংলাদেশ বিরোধী সর্বব্যাপী এ আগ্রাসন প্রতিরোধের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নেয়া দরকার। উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে দরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া। 

রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বাংলাদেশ কোনওভাবেই সাম্প্রদায়িক নয়


এক শ্রেণীর মিডিয়া, ভাষ্যকার, কলামিস্ট এবং পলিটিশিয়ানের লেখা এবং বক্তব্য পড়লে এবং শুনলে মনে হবে যে, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গিবাদ ছাড়া আর যেন কোনো সমস্যা নাই। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীর শরীর এবং চোখই শুধু হলুদ হয় না, কথায় আছে যে (সত্য হোক আর নাই হোক) জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তি নাকি সবকিছুই হলুদ দেখে। আমাদের এসব মিডিয়া এবং পলিটিশিয়ানেরও যেন জন্ডিস হয়েছে। তবে এই জন্ডিসের নাম জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা। ওরা আল্লাহর জমিনে যতকিছু আছে সবগুলির মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা দেখতে পায়। একটি বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকের শিল্প ও সাহিত্য পৃষ্ঠায় সেদিন বাউল গায়ক শাহ্ আব্দুল করিমের জীবনী পড়ছিলাম। সেখানে দেখলাম, সেই সাম্প্রদায়িকতা আর অসাম্প্রদায়িকতার কচকচানি। যখন লালন গীতি শুনি তখন সেখানেও উপস্থাপক সাম্প্রদায়িকতা ও অসাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কে লেকচার মারেন। শুধু এরা কেন, আজকাল দেখছি, জাতীয় কবি নজরুলের গান উপস্থাপন করতে গেলেও দেখা যায় একই চেহারা। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন এটা বোঝাতে যে, নজরুল আপাদ মস্তক ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। যেসব কথা ওরা বলেন, আর নজরুলের যেসব গান ওরা পরিবেশন করেন সেসব শুনলে মনে হবে যে, নজরুল সাহিত্যে এই অসাম্প্রদায়িকতা ছাড়া আর কোনো বিষয় নাই। নজরুলের কতগুলো অমর গান আছে। সেগুলোর মধ্যে একটা হলো, ‘জাগো অনশন বন্দী ওঠরে যত’। আর একটা গান হলো, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। আর একটি হলো, ‘আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত’। এখন এসব গান তেমন একটা গাওয়া হয় না। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় নজরুলের বিপ্লবী গান ব্যবহার করা হয়েছে জনাব নুরুল আমীনের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। নজরুলের এসব গান গেয়ে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়েছে। জেনারেল জিয়াউর রহমান, বিএনপি এবং এরশাদের রাজত্বের বিরুদ্ধে নজরুলের বিপ্লবী গান বিশেষ করে ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ এবং ‘জাগো অনশন বন্দী ওঠরে যত’ গাওয়া হতো জিয়া খালেদা ও এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে।
আজ এই ৩ জনের কেউই ক্ষমতায় নেই। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। বিগত ৭ বছর থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এখন আর নজরুলের ঐসব বিপ্লবী গান রেডিও টেলিভিশন বা বিচিত্রানুষ্ঠানে গাওয়া হয় না। অথচ জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়া এবং এরশাদ সরকারের তুলনায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি রাজবন্দী আছে। কারাগারের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ৪ গুণ বেশি বন্দী কারাগারে আছে। তারপরেও নজরুলের ঐসব বিপ্লবী গান গাওয়া হয় না। আওয়ামী লীগ জাতীয় কবি নজরুলকেও দলীয়করণ করেছে। তারা নজরুলকে এমনভাবে উপস্থাপন অতীতে করেছে এবং এখনো করছে যেন মনে হয় নজরুল ছিলেন আইয়ুব বিরোধী, নুরুল আমীন বিরোধী, খালেদা জিয়া রিরোধী, এরশাদ বিরোধী এবং জিয়াউর রহমান বিরোধী। তিনি হলেন হাসিনা পন্থী। তাই বর্তমান আমলে নজরুলকে চিত্রিত করা হয় শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী হিসেবে।
নজরুল তো জাতীয় কবি। তার তুলনা তিনি শুধু নিজেই। শাহ্ আব্দুল করিমকে নিয়েও ঐ একই খেলা খেলা হচ্ছে। একটু আগে মৌলবাদ বিরোধী এবং অসাম্প্রদায়িকতার দাবিদার বাংলা দৈনিকটি লিখেছে যে, বঙ্গ ভঙ্গ ছিল সাম্প্রদায়িকতার থিসিস। আর অখ- বাংলা ছিল সাম্প্রদায়িকতার এ্যান্টি থিসিস। অসাম্প্রদায়িকতার বিচার করতে গিয়ে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন লালন ফকির, শাহ্ আব্দুল করিম, রাধা রমন, উকিল মুন্সি, আব্দুল কুদ্দুছ বয়াতি প্রমুখ বাউল গায়ককে। আজ আমার জন্য এই লেখাটির কোনো প্রয়োজন ছিল না, যদি খ-িত বঙ্গকে সাম্প্রদায়িক এবং অখ- বাংলাকে অসাম্প্রদায়িক বলে দেখানোর চেষ্টা না হতো। ঠিক এই জায়গাতেই আমার প্রশ্ন, যদি ওদের ভাষায় খণ্ডিত বাংলা সাম্প্রদায়িক হয় তাহলে বাংলাদেশকে কোন পর্যায়ে ঠেলে দেয়া হয়?
॥দুই॥
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে আমাদেরকে আরো একটি অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। সেটি হলো, আজকের বাংলাদেশ নাকি লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবায়ন। এই কথাটি বলেছেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী লে: কমান্ডার মরহুম মোয়াজ্জেম হোসেন, শেরে বাংলার পুত্র মরহুম এ কে ফয়জুল হক এবং আ স ম আব্দুর রব। নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য আসুন, আমরা একটু পেছনে যাই।
এ কথা সকলেই জানেন যে, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে একটি রাজনৈতিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় এবং পরবর্তীকালে পাকিস্তান প্রস্তাব নামে অভিহিত হয়। প্রস্তাবের সংক্ষিপ্তসার এদেশের সব মানুষই জানেন। ঐ প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে, ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যেসব এলাকায় মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব এলাকায় অর্থাৎ এই দু’টি অঞ্চলে দু’টি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। লাহোর প্রস্তাবে এই নতুন দু’টি রাষ্ট্রের কোনো সুনির্দিষ্ট সীমানা উল্লেখ করা হয়নি। তবে প্রস্তাবের স্পিরিট দেখে ধারণা করা হয়েছিল যে, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ, বেলুচিস্তান, অবিভক্ত পাঞ্জাব এবং কাশ্মীর নিয়ে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আবার এই দিকে বর্তমান বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গ এবং তদানীন্তন আসাম ও বিহারের অংশবিশেষ নিয়ে পূর্বাঞ্চলে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
এখন শুরু করছি কমান্ডার মোয়াজ্জেমের কথা দিয়ে। যারা প্রবীণ তারা হয়তো জানেন যে, আগরতলা মামলা বাঞ্চাল হওয়ার পর কমান্ডার মোয়াজ্জেম জেল থেকে বেরিয়ে আসেন। বেরিয়ে আসার পর তিনি লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি নামে একটি সংগঠন করেছিলেন। ঢাকায় এই সংগঠনের উদ্যোগে কয়েকটি স ভাও করা হয়েছিল। সেই সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে পাকিস্তান আর্মী তাকে গুলী করে হত্যা করে।
মৃত ব্যক্তির কোনো উক্তি নিয়ে কোনো কথা বলা ঠিক নয়। কারণ মৃত বলে সে ব্যক্তি প্রতিবাদ করার ক্ষমতা রাখেন না। কথার পাল্টা কোনো কথা বলতে পারেন না। তবে তার যাঁরা ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তাদের কারো করো সাথে মিলে আমি কমান্ডার মোয়াজ্জেমের সাথে কথা বলেছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম যে, লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন বলতে তারা কি বোঝাতে চান। কমান্ডার মোয়াজ্জেমের সুচিন্তিত উত্তর ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশের) স্বাধীনতা অর্জন। আমার পাল্টা প্রশ্ন ছিল যে, লাহোর প্রস্তাব তো ছিল শুধুমাত্র এই খণ্ডিত বাংলার স্বাধীনতাই নয়; বরং সমগ্র বাংলা এবং আসাম ও বিহারের একটি অংশ নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই কমান্ডার মোয়াজ্জেম মারা গেছেন। বাংলাদেশের মুখ তিনি দেখে যেতে পারেননি। বাংলাদেশ হওয়ার পরেও তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে লাহোর প্রস্তাবের অবশিষ্টাংশ তিনি কিভাবে বাস্তবায়িত করবেন সেটি হয়তো দেখা যেত।
॥তিন॥
আসছি ফয়জুল হক ও আ স ম আব্দুর রবের কথায়। ফয়জুল হক ছিলেন, অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা মরহুম এ কে ফজলুল হকের পুত্র। তিনি শেখ হাসিনার মন্ত্রী সভায় একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সম্ভবত কখনো আওয়ামী লীগ করেননি। তিনি ১৯৯৬ সালের ইলেকশনের আগে আওয়ামী লীগে জয়েন করেন এবং আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের সমর্থক হওয়ার কারণে তিনি কারাবরণ করেন। জনাব ফায়জুল হক যেহেতু শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের পুত্র তাই লাহোর প্রস্তাব এবং পরবর্তীতে বাংলা দ্বিখণ্ডিত হওয়া সম্পর্কিত কাগজপত্র তার কাছে থাকতেও পারে। ঐসব কাগজপত্র ঘাঁটলে তিনি দেখতে পেতেন যে, খণ্ডিত বাংলা অর্থাৎ যেটা আজকের বাংলাদেশ সেটা লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের একটি অংশ মাত্র। বৃহত্তর অংশ বাস্তবায়নে এখনও অনেক বাকি।
॥চার॥
জনাব আসম আব্দুর রব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছিলেন। তার রাজনীতিতে কোন রাখ ঢাক ছিল না। তৎকালীন ছাত্র লীগের একটি অংশ অনেক দিন থেকেই অর্থাৎ পাকিস্তান আমল থেকেই সাবেক পূর্ব পাকিস্তানকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন। এদের নেতা ছিলেন জনাব সিরাজুল আলম খান। সিরাজুল আলম খানের বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন জনাব রব, শাহজাহান সিরাজ, মোহাম্মদ শাহজাহান, হাসানুল হক ইনু, কর্নেল তাহের, শরীফ নূরুল আম্বীয়া, কাজী আরিফ আহমেদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ ফ ম মাহবুবুল হক প্রমুখ। আরো অনেকে ছিলেন যাদের নাম এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। জনাব সিরাজুল আলম খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ক্লাসমেট ছিলেন। অবশ্য আমাদের সাবজেক্ট ছিল আলাদা। যাই হোক, সিরাজুল আলম খান এবং তার অনুসারীদের নিকট থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে আমি জানতে চেয়েছিলাম এবং পরেও জানতে চেষ্টা করেছি যে, তারা আসলে কি চান। শুধু আমি নই, অনেককেই ধারণা দেয়া হয়েছিল যে, শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতাই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তারা এর সীমানা বাড়াবেন।
তারপর থেকে অনেক বছর গড়িয়ে গেলো। পদ্মা এবং গঙ্গা দিয়ে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। কোথায় গেল সেই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র? আর কোথায় গেলো সেই বৃহত্তর বাংলা?
কথায় কথায় যারা সাম্প্রদায়িকতা আর অসাম্প্রদায়িকতার সবক দেন তারা জানেন না যে, তারা কি বলছেন? সাবেক পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানকে তারা সব সময় সাম্প্রদায়িক বলে এসেছেন। কারণ হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলা ভাগ হয়ে পূর্ব বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা গঠিত হয়েছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভক্ত পূর্ব বাংলা (পূর্ব পাকিস্তান) যদি সাম্প্রদায়িক হয় তাহলে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভক্ত পশ্চিম বাংলাও সাম্প্রদায়িক হয়। আর পূর্ব বাংলা সাম্প্রদায়িক হলে বাংলাদেশের অবস্থা কি দাঁড়ায়? কারণ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় ঘটে সেটি তত্ব ও ভৌগলিকভাবে আগের ধারাবাহিকতা। কিন্তু আমরা জানি এবং দৃঢ়তার সাথে বলছি যে, বাংলাদেশ মোটেই সাম্প্রদায়িক নয়। এটি অতীতেও অসাম্প্রদায়িক ছিল এবং এখনো আছে।
আসিফ আরসালান

শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কতিপয় দিক


পাঠকরা সম্ভবত প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাকের কথা ভুলে যাননি। জেনারেল মইন উ’র অধীনস্থ হয়ে পড়া বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে ‘মাইনাস’ করার উদ্দেশ্যে গোপনে গঠিত গ্রুপ ‘র‌্যাটস’-এর প্রথমজন ছিলেন তিনি। তারও আগে শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের (১০৯৬-২০০১) পানিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি চুক্তির প্রধান রূপকার ছিলেন এই নেতা। সে সময়, ১৯৯৮ সালে বন্যায় যখন পুরো দেশ ডুবে গিয়েছিল, মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক তখন বলেছিলেন, যেহেতু ‘ভাটির দেশ’ সেহেতু ‘উজানের’ অর্থাৎ ভারতের পানিতে বাংলাদেশকে ‘ডুবতেই’ হবে। অবস্থায় অবশ্য পরিবর্তন ঘটিয়েছিল রাজ্জাক সাহেবদের ‘বন্ধুরাষ্ট্র’। ভারতের পানি আগ্রাসনে এরপর বাংলাদেশ ক্রমাগত পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশকে মরুভ’মিতে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে ভারত একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করেছে, যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে টিপাইমুখ ড্যাম নিয়ে।
এ ব্যাপারেও আবদুর রাজ্জাকের নাম ‘স্বর্ণাক্ষরে’ লিখিত রয়েছে। কারণ, ড্যামটি পরিদর্শনের নামে এক হাওয়াই সফরশেষে একেবারে খালি হাতে ফিরে এসেছিলেন তিনি এবং তার নেতৃত্বে যাওয়া দলটি। এটা ২০০৯ সালের জুলাই-আগস্টের কথা। সেবার ভারতের বিমান ও হেলিকপ্টারে চড়ে উড়ে বেড়ানোর বাইরে কিছুই করতে পারেননি তারা। প্রকল্পের স্থান দেখা দূরে থাক, তারা এমনকি নামতেও পারেননি টিপাইমুখের আশেপাশে। কারণ, সে সময় মূষলধারে বৃষ্টি হয়েছিল ওই এলাকায়। ফলে আসামের রাজধানী গৌহাটি থেকে ঘণ্টা চারেক ধরে হেলিকপ্টারে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া কিছুই করতে পারেননি আবদুর রাজ্জাক এবং তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তারা দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই ঢাকায় ফিরে এসেছিলেন। অথচ ভারত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মণিপুর রাজ্যের টিপাইমুখে ও ফুলেরতলে। এটা বাংলাদেশের কাছাকাছি একটি এলাকা, যেখানে সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করা যায়। কিন্তু আবদুর রাজ্জাকরা বিমানে উড়ে গিয়েছিলেন ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে। তাদেরকে দু’দিন ধরে ব্রিফিংও দেয়া হয়েছিল নয়া দিল্লিতেইÑ যাকে অনেকে ‘কানপড়া’ বলেছিলেন। নয়া দিল্লি থেকে তারা হাওয়াই সফরে এসেছিলেন আসামের রাজধানী গৌহাটিতে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে রাজকীয় স্টাইলে গেছেন টিপাইমুখ দেখতে কিন্তু আবহাওয়া তাদের কিছুই দেখতে দেয়নি। তা সত্ত্বেও আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, বৃষ্টি ও কালো মেঘের ফাঁক দিয়েও তিনি নাকি দেখতে পেয়েছেন, সেখানে এখনো কোনো স্থাপনা তৈরি করা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছিল, এত প্রচন্ড বৃষ্টি ও কালো মেঘের মধ্যে হেলিকপ্টারে বসে উড়ন্ত অবস্থায়ও তারা সব কিছু দেখতে পেয়েছিলেন কিভাবে? তাদের তো পাহাড় ও নদী ছাড়া কিছুই দেখতে পাওয়ার কথা ছিল না!
আসলেও পাহাড় ও নদী দেখেই ফিরেছিলেন আবদুর রাজ্জাকরা। তা সত্ত্বেও ভাষার মারপ্যাঁচ খাটানোর কসরত করেছিলেন এই নেতা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদ্যুৎমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, ভারত নাকি বাংলাদেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবে না সেখানে। কথার পিঠে কথাও যথেষ্টই উঠেছিল- কারণ, এ ধরনের আশ্বাস ভারতীয়রা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগেই দিয়েছিলেন। বিষয়টি আসলে এতটা সহজ-সরল ছিল না। বাংলাদেশে জনগণের মধ্যে বিরোধিতা ছিল বলেই সংসদীয় প্রতিনিধি দলের নামে সেবার আওয়ামী শিবিরের পরীক্ষিত ভারতপন্থীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অন্তরালে কিছু বিশেষ বিষয় ও উদ্দেশ্যও ছিল। বাংলাদেশে টিপাইমুখ ড্যাম বিরোধী আন্দোলনের প্রচন্ডতা দেখে ভারতকে কৌশল পরিবর্তন করতে হয়েছিল। দেশটিতে তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চায়নি। সে কারণেই ভারত সংসদীয় প্রতিনিধি দলের জন্য ভ্রমণের আয়োজন করেছিল যাতে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে বলতে পারে যে, টিপাইমুখ ড্যামের বিরুদ্ধে তারা চেষ্টা করেছে। আর সে অবস্থার সুযোগ নিয়েই ভারত একের পর এক নিজের বিভিন্ন ইচ্ছা পূরণ করে নিয়েছে। যেমনটি দেখা যাচ্ছে করিডোরসহ বিভিন্ন বিষয়ে। মূলত সে কৌশলের ভিত্তিতেই ভারত এখনো এগিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকারও যথার্থ সেবাদাসের ভূমিকা পালন করে চলেছে।
এভাবে শুরু করার এবং আবদুর রাজ্জাককে টেনে আনার পেছনে বিশেষ কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো, শুকনো মওসুম শুরু না হতেই এককালের প্রমত্তা নদী পদ্মার দশা অতি শীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ি থেকে কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর মুখ পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকাজুড়ে পদ্মা অনেকাংশে এক সরু খালের রূপ নিয়েছে। ফারাক্কাসহ ভারতের অসংখ্য বাঁধের পাশাপাশি যথেচ্ছভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার এবং চুক্তি অনুযায়ী পানি না পাওয়ার ফলে পদ্মার কোথাও পানি নেই বললেই চলে। একযোগে বিস্তার ঘটছে অসংখ্য চরের। পদ্মার দুই তীর ঘেঁষে এখন শত শত চর। শুধু তা-ই নয়, পানি না থাকায় হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে ১৫টি পিলারের মধ্যে ১২টিই দাঁড়িয়ে আছে শুকনো চরের মধ্যে- নদীর অনেক বাইরে। যে তিনটি মাত্র পিলার সামান্য পানির মধ্যে রয়েছে সেখানেও আশপাশের কৃষকরা চাষাবাদ করছে। এসব স্থানে পানির পরিমাণও এত কম যে জেলেরা এমনকি নিজেদের খাবার মতো মাছই ধরতে পারছে না। অর্থাৎ পদ্মা তার স্বরূপ খুইয়ে ফেলেছে। এমন অবস্থার কারণ, এ বছরও ভারত চুক্তি লংঘন করেছে এবং বাংলাদেশকে ৩২ হাজার কিউসেক কম পানি দিয়েছে। সে কারণে পদ্মা তো বটেই, দেশের অন্য ৫৪টি নদ-নদীও শুকিয়ে গেছে।
পদ্মার পানি কমে যাওয়ায় মাওয়া থেকে ক্যাওড়াকান্দি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথে যাতায়াতের সময় কয়েকটি পর্যন্ত স্থানে প্রতিদিনই যাত্রী ও যানবাহনসহ ফেরি আটকে পড়ছে। কয়েক ঘণ্টা লাগছে ড্রেজিং করে ফেরিগুলোাকে আবারও চালু করতে। এ অবস্থায় পড়তে হচ্ছে খুলনা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, মাদারিপুর, কুষ্টিয়া এবং বরিশালসহ বহু এলাকার মানুষকে, যারা মাওয়া-ক্যাওড়াকান্দি এবং নগরবাড়ি-দৌলতদিয়া হয়ে যাতায়াত করেন। সেই সাথে রয়েছে শত শত পণ্যবাহী যানবাহনও। ফলে সব মিলিয়েই বাংলাদেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।
যারা যাতায়াত করেন তাদের সকলকেই পদ্মার করুণ দশা দেখে বিস্মিত ও দুঃখিত হতে হয়। পানি কমতে কমতে পদ্মা এতটাই রুগ্ন, শীর্ণ ও অগভীর হয়ে পড়েছে পদ্মা। বহুস্থানে চরই শুধু পড়েনি, কোনো কোনো চর রীতিমতো ‘বসবাসযোগ্য’ও হয়ে উঠেছে। বহু পরিবার ওইসব চরে গিয়ে বাসাবাড়ি বানিয়ে বসবাস করতেও শুরু করেছে। সে কারণে চলছে চরদখলের প্রতিযোগিতা। উল্লেখ করার মতো দ্বিতীয় বিষয়টি পানির গভীরতা। ফেরি চলাচল করার জন্য মাত্র ছয়-সাত ফুট গভীরতা দরকার। সেটাও এখন নেই পদ্মার বেশির ভাগ স্থানে, যার জন্য যখন-তখন ডুবোচরে আটকে পড়ছে ফেরিগুলো। বেশ কিছু এলাকায়  পদ্মার বুকে ৩০/৪০ ফুট পর্যন্ত ভেতরে এসে ছেলে-মেয়েরা সাঁতার পর্যন্ত কাটছে, বয়স্করা কোমর পানিতে গোসল করছে। অর্থাৎ সব মিলিয়েই এককালের প্রমত্তা পদ্মা এখন খাল-বিলের পর্যায়ে নেমে এসেছে।
একটি নদীর জন্য এর চাইতে করুণ পরিণতির কথা কল্পনা করা যায় না। বলা বাহুল্য, এর পেছনে রয়েছে ইতিহাস। সে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত সত্য হলো, ভারতকে প্রথমে সুযোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, সে চুক্তির ভিত্তিতেই ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল ভারত। কথা ছিল, ফারাক্কা বাঁধ সম্পূর্ণরূপে চালু করার আগে শুষ্ক মৌসুমে প্রাপ্ত পানির পরিমাণ নিয়ে উভয় পক্ষ যাতে সমঝোতায় আসার জন্য ভারত প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ফিডার ক্যানেল চালু করবে। সে অনুসারে ভারত ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছিল। কিন্তু ৪১ দিনের পরও ভারত ফিডার ক্যানেল দিয়ে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রাখে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করেই ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুমে একতরফাভাবে গঙ্গার পানি হুগলি নদীতে নিয়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে ফিডার ক্যানেল চালু করার পর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে পদ্মায় পানি প্রবাহ যেখানে ছিল ৬৫ হাজার কিউসেক সেখানে ১৯৭৬ সালে তার পরিমাণ নেমে আসে মাত্র ২৩ হাজার ২০০ কিউসেকে। এর প্রধান কারণ ছিল ফিডার ক্যানেল দিয়ে ভারতের পানি প্রত্যাহার।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভারত আবারও সুযোগ নিয়েছিল। সে বছরের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পর, ১৯৯৭ সালের মার্চেই ভারত তার পানি  সরিয়ে নেয়া আরো প্রচন্ড করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী মার্চের প্রথম ও দ্বিতীয় ১০ দিনের চক্রে বাংলাদেশের প্রাপ্য যেখানে ছিল ৩৫ হাজার কিউসেক, ভারত সেখানে দিয়েছিল গড়ে ২১ হাজার কিউসেক। সর্বনিম্ন পরিমাণ পানি পাওয়ার রেকর্ডও স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের মার্চেই- ২৭ মার্চ বাংলাদেশ পেয়েছিল মাত্র ছয় হাজার ৪৫৭ কিউসেক। একই চুক্তির আড়াল নিয়ে ভারত এখনো পর্যন্ত শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশকে পানি বঞ্চিত করছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনের চক্রে ৫০ হাজার ১৫৪ কিউসেক পানি পাওয়ার কথা থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ২৮ হাজার ১১২ কিউসেক। এজন্যই এককালের প্রমত্তা পদ্মা শুকিয়ে প্রায় খালে পরিণত হয়েছে। আবদুর রাজ্জাকের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে। কারণ, তিনি মারা গেছেন। তাকে আর কোনো জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে না।
এদিকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্য কোনো বিষয়েও আওয়ামী লীগ সরকার দেশের স্বার্থে কিছুই করতে পারেনি- আসলে করার কোনো চেষ্টাও করেনি। উদাহরণ হিসেবে দু’ দেশের বাণিজ্যের কথা উল্লেখ করা যায়। এ সম্পর্কে সর্বশেষ কিছু তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ- যিনি শেখ হাসিনাকে ‘মাইনাস’ করার জন্য গঠিত গ্রুপ ‘র‌্যাটস’-এর তিন নম্বর নেতা ছিলেন (আবদুর রাজ্জাক ছাড়া অন্য দু’জনের নাম সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আমির হোসেন আমু)। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদে মন্ত্রী তোফায়েল বলেছেন, দু’ দেশের বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ আট গুণ। বিগত পাঁচ মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ১৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকার পণ্য। এ সময়ে ভারতে রফতানির পরিমাণ ছিল দু’ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যে ঘাটতি সম্পর্কিত তথ্য-পরিসংখ্যানগুলো যে অত্যন্ত আশংকাজনক সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশপ্রেমিক সকল মহলে উদ্বেগ বেড়েছে বিশেষ করে ঘাটতির ব্যাপারে। কারণ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ঘাটতি শুধু বাড়ছেই না, ২০১৩-১৪’র মতো কোনো কোনো অর্থবছরে বাংলাদেশের ঘাটতি সর্বোচ্চ পর্যায়েও পৌঁছেছে। ওই একটি মাত্র অর্থবছরেই বাংলাদেশের ঘাটতি বেড়েছিল ৩৩ দশমিক ৭৬ শতাংশÑ প্রায় পাঁচ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ প্রসঙ্গে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ অন্য একটি তথ্য হলো, সরকারের পক্ষ থেকে চালসহ খাদ্যশস্য রফতানি করার গালগল্প শোনানো হলেও বাস্তবে আলোচ্য এক বছরেই ভারত থেকে এক হাজার ৮৫ দশমিক নয় মিলিয়ন ডলারের খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়েছিল। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় খাতটিতে বাংলাদেশের ব্যয় বেড়েছিল ৫৯৮ দশমিক নয় মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি। অন্য সব পণ্যের বেলায়ও বাংলাদেশ কেবল পিছিয়েই পড়েছে। পিছিয়ে পড়ার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। দ্বিগুণ বা তিনগুণ নয়, বর্তমানে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে আট গুণ, যা যে কোনো দেশের জন্যই গভীর উদ্বেগ ও ভীতির ব্যাপার।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীসহ তথ্যাভিজ্ঞদের স্পষ্ট অভিমত হলো, ঘাটতির পেছনে প্রধান ভূমিকা রয়েছে ভারতের। দেশটির দিক থেকে নানা ধরনের শুল্ক ও অশুল্কগত বাধার কারণেই বাংলাদেশ রফতানি বাড়াতে পারছে না। এ ব্যাপারে ভারতীয়দের নীতি ও কার্যক্রমকে রফতানিকারকসহ সংশ্লিষ্টজনেরা প্রতারণাপূর্ণ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারণ, প্রকাশ্যে আমদানি বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও ভারত সুকৌশলে এমন কিছু শুল্ক-অশুল্ক ও আধাশুল্কগত বাধার সৃষ্টি করে চলেছে যার ফলে রফতানির সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়ার পরও বাংলাদেশ থেকে বহু পণ্য পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ভারত থেকে যেখানে ২০৮৬ ধরনের পণ্য আসছে সেখানে বাংলাদেশ মাত্র ১৬৮ ধরনের পণ্য রফতানি করতে পারছে। নিজেদের শিল্প সংরক্ষণের অজুহাত দেখিয়ে ভারত বাংলাদেশের ৭৫০ ধরনের পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। ভারত সেই সাথে এমন ৪৫০টি পণ্যের জন্য ছাড় দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যেগুলোর ৯৮ শতাংশই বাংলাদেশ উৎপাদন করে না। এজন্যই বাড়তে বাড়তে বাংলাদেশের ঘাটতি আট গুণ হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে দু-একটি তথ্য স্মরণ করা যেতে পারে। যেমন ১৯৯৯ সালে ঢাকা-কোলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা সফরকালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ২৫ ক্যাটাগরির বাংলাদেশী পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা এখনো ঘোষণাই রয়ে গেছে। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফরকালেও ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়ার কথা শোনানো হয়েছিল। কিন্তু তারও বাস্তবায়ন আজও হয়নি। এরপর ঢাকায় এসে যথেচ্ছভাবে নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র নাথ মোদী। কিন্তু এত স্পষ্ট প্রতারণার পরও এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার বিষয়ে দরকষাকষির যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার কখনো উল্লেখযোগ্য কোনো চেষ্টাই করেনি। এখনো করছে না। এভাবেই ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে সরকার। এটাও আবার এমনভাবেই করা হচ্ছে যেন সবই আগে থেকে সরকারের এজেন্ডায় ছিল!
অথচ বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে চেষ্টা করা দরকার। ঘাটতি কমিয়ে আনতে হলে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে ভারতে রফতানি বাড়ানোর ব্যাপারে। এ উদ্দেশ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের উচিত চোরাচালান প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া। কারণ বৈধ বাণিজ্যের চাইতে কয়েকশ’ গুণ বেশি বাণিজ্য ভারত চোরাচালানের পথে করে থাকে। সুতরাং সীমান্তে কঠোর অভিযানের মাধ্যমে চোরাচালান প্রতিরোধ করা গেলে ভারতের অর্থনীতি চাপের মুখে পড়বে। দেশটি তখন বাংলাদেশের প্রতি নীতি-মনোভাব পরিবর্তন না করে পারবে না। এর ফলে দেশের রফতানি বাড়বে বহুগুণ। আমদানির ক্ষেত্রেও জাতীয় শিল্পের স্বার্থে কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। ভারত থেকে এমন সব পণ্য আমদানি করতে দেয়া চলবে না যেগুলো বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। উল্লেখ্য, ভারতসহ বিশ্বের সব দেশই এভাবে নিজেদের শিল্প ও পণ্যকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এর ফলে একদিকে জাতীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে অন্যদিকে দেশের আমদানি ব্যয়ও অনেক কমে আসবে। একই কথা ৫৪টি নদ-নদীর পানির ব্যাপারেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
আশিকুল হামিদ 

মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!


একটি সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তার সব কিছু একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে সরকার। ভেঙে দিচ্ছে আইন-কানুন, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিরোধী দল দমনের অপকর্মে নিয়োজিত করতে করতে তাদের এক ভয়াবহ দানব বাহিনীতে পরিণত করেছে। বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে নিভৃতে। বিপন্ন মানুষের আশ্রয় চাইবার, বিপদে সাহায্য চাইবার সকল জায়গা সরকার ভেঙে দিয়েছে। আমরা সন্তানদের শিখিয়েছি, বিপদে পড়লে দ্রুত পুলিশের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেবে। এখন শেখাই, খবরদার ভুলেও পুলিশের আশপাশে যাবে না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলে দেখলাম একটি শার্ট কিনে এনেছে, যার কোনো পকেট নেই। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার সময় ঐ শার্টটি ইন না করে প্যান্টের ওপর ঝুলিয়ে পরলো। তার ওপর চাপালো একট ব্লেজার। আমি বললাম, একি ড্রেস। প্যান্ট ইন কর। তার ওপর ব্লেজার পর। ছেলেটি হাসলো। বলল, এখন এটাই স্টাইল। বললাম কেন। সে অবলীলায় বললো, যাতে পুলিশ শার্টের পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে আটক করতে না পারে। আর প্যান্টের পকেটে ঢুকাতে গেলে যাতে শার্টের নীচের অংশ দিয়ে প্যান্টের পকেট ঢেকে চীৎকার দিতে পারি।
এখন পুলিশ দেখলে ভয়, র‌্যাব-বিজিবি দেখলে ভয়, এমন কি আনসার দেখলেও ভয়। আর রাত এগারোটার পর বাসা থেকে বের হতে ভয়। তখন সরকারি সান্ত্রীর দল শিকারের সন্ধানে রাস্তাঘাটে ঘুরতে থাকে। বিপদ আবার এক ধরনের নয়। ১৯৭১ সালে যেমন সন্ধ্যা হলেই মিলিটারির ভয়ে লোকজন সব ঘরে ঢুকে পড়ত, এখনও তেমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পায়ে হেঁটে ফিরছেন, পুলিশের ভয়। রিকশায় ফিরছেন, পুলিশের ভয়। স্কুটারে ফিরছেন, পুলিশের ভয়। এর ওপর সঙ্গে যদি কোনো নারী আত্মীয়-স্বজন থাকে তাহলে আরও ভয়। গত মাস দুয়েকের মধ্যে ঘটেছে এরকম সব ঘটনা। আগেও পুলিশের এই বাড়াবাড়ির ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটেছে, এখনও নিয়মিত ঘটছে। কোনো কিছুই এর রাশ টেনে ধরতে পারছে না। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রশ্রয় দিচ্ছে, সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে। আর অবিরাম খাবি খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শুরু করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বিকে দিয়ে। রাত এগারোটার দিকে গোলাম রাব্বি মোহাম্মদপুর এলাকার একটি এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বুথ হতে বের হতেই তাকে শার্টের কলার চেপে নিয়ে যাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট থানার  এসআই রফিকের কাছে। তিনি বলতে থাকেন যে, তার কাছে ইয়াবা আছে। তাকে সার্চ করতে হবে। রাব্বি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেকে সার্চ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি তার পরিচয় দেন। তিনি ছাত্রলীগের নেতাদের পরিচয় দেন। কার্ড দেখান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পরিচয় দেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পরিচয় দেন। কিন্তু এসআইয়ের দাবি, তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা না দিলে ক্রস ফায়ারে দিয়ে মোহাম্মদপুর ভেড়িবাঁধে ফেলে দেওয়া হবে। রাব্বিকে তুলে নেওয়া হয় পুলিশ ভ্যানে। সেখানে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় ছয় ঘণ্টা ধরে। মাথায় হাঁটুতে পায়ে পাছায় নির্মমভাবে পেটানো হয়। যে ভাষায় সারাক্ষণ গালিগালাজ করা হয়, তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। পথে পথচারি, রিকশাযাত্রী, যাকে পেয়েছে, তাকেই আটক করে তাদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে ঐ এসআই রফিক। যে টাকা দিতে পারেনি, তাতে লকআপে ঢুকিয়েছে। রাব্বি শেষ পর্যন্ত তার ছাত্রলীগের বন্ধুবান্ধবকে খবর দিতে সক্ষম হন। তারা এসে হাজির হন ঐ এলাকায়। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি ভয়ে আতঙ্কে প্রলাপ বকতে থাকেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মোহম্মদপুর থানার ওসি গাঁটকাটার মতো এক আজব কথা বলে বসেন। তিনি বলেন, রাব্বি পুলিশের কাজে অসহযোগিতা করেছিল। তাকে পুলিশ সার্চ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তিনি তাতে বাধা দিয়েছেন। অতএব রাব্বি অনেক বড় ‘অপরাধী’। তাকে আটকে রাখা দোষের কিছু হয়নি।
আর মহাআশ্চর্য ঘটনা এই যে, রাব্বি থানায় মামলা দায়ের করতে চাইলে সে মামলা গ্রহণ করেননি মোহাম্মদপুর থানার ওসি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান দোষী এসআই’র শাস্তি দাবি করে আইজিপিকে চিঠি দেন। তাতেও কোনো  কাজ হয় না। তখন রাব্বি মামলা করার জন্য হাইকোর্টে যান। হাইকোর্ট তার মামলা গ্রহণ করার জন্য থানাকে নির্দেশ দেন। বিপত্তি সেখানেই বাধে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ খুব সঙ্গতভাবেই আশা করতে পারে যে, রাষ্ট্র দাঁড়াবে বিপন্ন মানুষের পাশে। নির্যাতনকারীর পাশে নয়। কিন্তু না, রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল গিয়ে দাঁড়ালেন এসআই রফিকের পাশে। তিনি ফাইল বগলে নিয়ে ছুটলেন চেম্বার বিচারপতির আদালতে। উদ্দেশ্য, রাব্বির মামলা যেন গ্রহণ করা না হয়। কী ভয়ঙ্কর নির্মম আচরণ রাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেলের। চেম্বার জজ এটর্নি জেনারেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা নেওয়ার হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দিলেন। পরে অবশ্য আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে মামলা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা দক্ষিণ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সুপারভাইজার বিকাশ দাসের ক্ষেত্রেও। বিকাশ খুব ভোরে মোটর সাইকেলে করে তার কাজে যাচ্ছিলেন। পথে সাদা পোশাকের পুলিশ তার পথ রোধ করে। তিনি ভেবেছিলেন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছেন। তাই মোটর সাইকেল ঘুরিয়ে আত্মরক্ষার জন্য পালাবার চেষ্টা করছিলেন। তখন পুলিশ তাকে আটকে বেধড়ক পিটিয়ে সংজ্ঞাহীন করে ফেলে। সুইপাররা পুলিশের পায়ে ধরে জানায় যে, বিকাশ তাদের অফিসার। তাকে যেন না মারা হয়। পুলিশ তাদের কোনো কথা শোনেনি। তিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন।
এরপর পুলিশ উত্তরায় এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছিল রাত এগারোটায়। ঐ ব্যবসায়ী তার এক নারী বন্ধুকে নিয়ে ফিরছিলেন। এক এসআই’র নেতৃত্বে টহল পুলিশ তাদের একটি গাড়িতে করে তুলে নেয়। প্রথমে পুলিশ তাদের ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। বলে, পাঁচ লক্ষ টাকা না দিলে তারা তাদের কথা পরিবারের কাছে ফাঁস করে দেবে। তখন ঐ ব্যবসায়ী তাদের কথা বরং পরিবারকে জানানো অনুরোধ করেন। তখন পুলিশ তাদের নিয়ে ছয় সাত ঘণ্টা ধরে রাস্তায় ঘুরতে থাকে এবং যেভাবেই হোক পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। না হলে ব্যবসায়ীর বান্ধবীকে পতিতা বলে চালান দেয়ার হুমকি দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ভোর রাতে ঐ ব্যবসায়ী তার এক বন্ধুকে ফোন করেন। ঐ বন্ধু আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে এসে এসআইকে দিয়ে আটক বন্ধুকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। পরে ঐ ব্যবসায়ী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে ঘটনার সত্যতা মেলে এবং সংশ্লিষ্ট পাঁচ পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়। পুলিশের এ ধরনের ব্লাকমেইলিংয়ের হাত থেকে রেহাই পাননি এসপির ছেলে থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যন্ত।
পরের ঘটনা মীরপুর এলাকার। সেখানে কয়েক দিন আগে পুলিশের আগুনে পুড়ে মারা গেছেন চা বিক্রেতা বাবুল মাতব্বর। গলির মোড়ে এই চা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। তার কাছে এসে চাঁদা দাকি করে পুলিশের একটি টহল দল। কিন্তু চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে দরিদ্র বাবুল। তা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চায়ের প্রজ্বলিত কেরোসিনের চুলাটি লাথি মেরে পুলিশ তার গায়ের ওপর ফেলে দিলে কেরোসিন ছিটিয়ে পড়ে তার সারা শরীরে আগুন ধরে যায়। তাকে হাসপাতালে নিলে ডাক্তাররা জানান, বাবুলের শরীরের ৯৫ শতাংশই পুড়ে গেছে। পরদিন মারা যান চা বিক্রেতা বাবুল। তিনিই ছিলেন ঐ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যথারীতি কয়েকজনকে সাসপেন্ড করা হয়।
সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যায় মীরপুরের পোড়াবস্তি সংলগ্ন বেলতলি মাঠে কয়েকজন মিলে আগুন পোহাচ্ছিল রিকশাচালক সাজু। এ সময় তিনজন পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। এরপর তাকে টেনে হিঁচড়ে পাশের বঙ্গবন্ধু সৈনিক ক্লাবে নিয়ে দ্বিতীয় দফা ব্যাপক মারধর করে। এসময় পুলিশ তার পায়ে শটগান ঠেকিয়ে গুলী করে। তারপর তাকে চিকিৎসার কথা বলে তিন ঘণ্টা ঘুরিয়ে একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে রেখে চলে যায়। পরে তার পরিবার তাকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল অনেকাংশেই উড়ে গেছে। প্রথমে পুলিশ গুলীর কথা স্বীকার করলেও এখন বলছে মিস ফায়ার থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। আরও ভয়াবহ আতঙ্কজনক ঘটনা ঘটছে গত দু’সপ্তাহ ধরে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সম্প্রতি দুটি ন্যায্য কথা বলেছেন। তার একটি হলো প্রশাসনিক বিভাগ বিচার বিভাগের ক্ষমতা কেড়ে নেবার চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে তিনি বিচার বিভাগ ও আইনজীবীদের সহযোগিতা চেয়েছেন। দ্বিতীয় কথা তিনি বলেছেন, অবসর নেওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী। তিনি আর এ ধরনের কোনো রায় গ্রহণ করবেন না। এখানে খুব সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, বিচারপতি তার চাকরির মেয়াদ শেষে একজন সাধারণ নাগরিকে পরিণত হন। কারণ তখন তিনি আর শপথে থাকেন না। ফলে তিনি কোনো রায় লেখার অধিকার হারান। খুব সঙ্গত বিবেচনা। কারণ এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের পয়সা খাওয়া বিচারপতি খায়রুল হকের দেয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর রায় এমনিতেই বাতিলযোগ্য হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রধান বিচারপতির এই পর্যবেক্ষণের পর আওয়ামী লীগের উকিল অ-উকিল নেতারা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে একেবারে হামলে পড়েন। কালোবিড়াল খ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তো প্রধান বিচারপতিকে একবারে শাসানি দিয়ে ছাড়লেন। সংসদেও প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য নিয়ে আওয়ামীরা তিক্ত আলোচনা করলেন।
প্রধান বিচারপতি সিনহা বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমদ মানিকের অবসরে যাওয়ার বেশ আগেই তার যেসব রায় লেখা বাকি ছিল, সেগুলো লিখে অবসরে যাওয়ার জন্য মানিককে সময় দিয়েছিলেন। মানিক তার থোড়াই পরোয়া করেছেন। তিনি অবসরে গেছেন। অবসরে যাওয়ার আগেই তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তিনি অবসরে গিয়ে টকশোতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই বলছেন। খালেদার বাড়ি ঘেরাও করতে গেছেন অভিনেত্রী মন্ত্রী তারানা হালিমের সঙ্গে। তারপর তিনি কিছু রায় হাতে লিখে জমা দিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে ডিনারে ডেকেছিলেন। তাতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, এটর্নি জেনারেল আর আইনমন্ত্রী। কিন্তু শামসুদ্দিন মানিক সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে তার  বক্তব্য প্রদান অব্যাহত রেখেছেন এবং সর্বশেষ তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতির কোনো আদেশ তিনি মানবেন না। মানিক এখন আর বিচারপতি নেই। তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। আমিও একজন সাধারণ নাগরিক। আমি যদি একথা বলতাম তা হলে নিশ্চয়ই আমার আদালত অবমাননা হতো। মানিকের বেলায় তা হবে না কেন? আইন আদালত চলুক তার নিজস্ব গতিতে। মানিককে তার কৃতকর্মের জন্য আইনের আওতায় আনা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও কতিপয় প্রশ্ন


প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও সম্পাদক জনাব মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার সুপারিশ করে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস প্রকাশ করেন। এই স্ট্যাটাসটি ব্যাপক প্রচারণা পায় এবং তারই তিন দিন পর বর্তমান সংসদের নবম অধিবেশনে গত রোববার অনুষ্ঠিত এক অনির্ধারিত আলোচনায় সরকারদলীয় সদস্য ফজলে নূর তাপসসহ সংসদ সদস্যরা দৈনিক ডেইলি স্টার বন্ধ ও তার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ তুলে তার শাস্তি দাবি করেন। এটা অবশ্য স্বীকার করতেই হবে। মত প্রকাশ ও লিখনীর স্বাধীনতাকে জনাব মাহফুজ আনাম অবাধে ভোগ করেছেন এবং এটা করতে গিয়ে মানুষের অধিকার ও মূল্যবোধে আঘাত দিতেও কার্পণ্য করেননি। মুক্তচিন্তা বিকাশে তার এই অবারিত প্রবণতায় মাঝে মধ্যে আহত হলেও আমি তার সাহসী কলমের নিয়মিত পাঠক এবং এই পাঠক হিসেবে তার পত্রিকা বন্ধ করা ও তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলার যে দাবি তোলা হচ্ছে তার ঘোর বিরোধী।
ওয়ান ইলেভেন কারা এনেছেন, কীভাবে এনেছেন এবং ঐ সরকারকে কারা নিজেদের সরকার বলে দাবি করেছেন এবং তাদের প্রতিটি কাজকে বৈধতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন- এটা সকলেরই জানা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে ঐ সরকারেরই অধীনের একজন কর্মকর্তা ডিজি ডিএফআই-এর নির্দেশ মত ডেইলি স্টার যদি কোনও খবর ছাপিয়ে থাকে তা হলে সেই সরকারের ধারাবাহিকতায় গঠিত আরেকটি সরকারের কোপানলে তিনি পড়বেন কেন? ঐ সরকার কি শুধু তৎকালীন বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছিলেন, আর কাউকে গ্রেফতার করেননি? আর কারুর বিরুদ্ধে মামলা করেননি? শেখ হাসিনা, তার দল আওয়ামী লীগ ও ঐ দলের অংগ সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীসহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের মামলা তো সব তারা ক্ষমতায় এসে তুলেই নিলেন এবং অন্য দলের মামলা, শাস্তি বহাল রাখলেন। এই অবস্থায় ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে একটি পত্রিকা বন্ধ করা হলে ও তার সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হলে কি সমস্যার সমাধান হবে? তাতে কি ইনসাফের নীতিমালা লংঘন হবে না?
ওয়ান ইলেভেন সরকারের নির্যাতন ও বিরাজনীতিকরণ প্রচেষ্টা এবং গণবিরোধী কর্মকা- নিয়ে সংসদে এর আগেও আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও সাবেক মন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও শেখ ফজলুল করিম তাদের উপর নির্যাতনের ধরন প্রকৃতি এবং মাত্রার একটি করুণ চিত্রও সেখানে তুলে ধরে ওয়ান ইলেভেন সরকারের হোতাদের বিচারের দাবি তুলেছিলেন। সংসদে তাদের দাবির অনুকূলে একটি প্রস্তাবও পাস হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। কেন হয়নি পাঠকরা আন্দাজ করতে পারেন। এখন তাদের বিচার না করে পত্রিকা ও তার সম্পাদকের বিচার করবেন কোন নীতিতে তা উপলব্ধি করা খুবই কঠিন। মাঝে মধ্যে আমার মনে হয় অনুকূল ঠাকুর পাবনায় তার মানসিক আশ্রমটি স্থাপন করে ভুল করেছিলেন। এর উপযুক্ত স্থান ছিল রাজধানী ঢাকার আশপাশ অথবা রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের কারুর কারুর বড় বড় ভবন অথবা আইন প্রণেতাদের পরামর্শ সভার কেন্দ্র বলে পরিচিত কোন কোন ভবন। কারণ এসব জায়গায় সহজে মানসিক রোগী পাওয়া যায়, পাবনায় তা নয়, সেখানে ধরে আনতে হয়।
দেশে এখন অনেক কিছু ঘটছে যা ঘটারা কথা নয়; এমন কিছু দেখতে হচ্ছে যা দেখার কথা নয়।
বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বাংলাদেশ আমলেরও সাড়ে তিন দশকে যেসব আন্দোলন হয়েছে তার কথা স্মরণ করুন। এই আন্দোলনগুলোর মূল মন্ত্র ছিল গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, ইনসাফ, শোষণের অবসান, বাক ও মতামতের স্বাধীনতার পরিস্ফুরণ এবং স্বাধিকার ও মানুষের জীবন, সম্পত্তি ও সম্মানের নিরাপত্তা। এর কোনটি এখন আছে? অনেকগুলো প্রশ্ন আমার মনের মধ্যে জট বেঁধে আছে। আমি ভাবি আসলে এমন কোনও দেশ কি দুনিয়াতে আছে, যা আমাদের দেশে হচ্ছে তা সেখানে হয়?
একটি প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল, যার শাখা প্রশাখা বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামের প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় বিস্তৃত, সরকার কোনও রকম ঘোষণা ছাড়াই তার অফিস পাঁচ বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছেন। পুলিশ প্রহরা বসিয়েছেন যাতে এই অফিসে কেউ ঢুকতে না পারে, কাজ করতে না পারে। দলটির নেতাকর্মীদের সবাই এদেশের নাগরিক, নিয়মিত খাজনা, ট্যাক্স পরিশোধ করেন। সংবিধান প্রদত্ত রাজনৈতিক অধিকার থেকে তাদের সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। তারা সভা সমাবেশ করতে পারেন না। দুই চারজন ঘরোয়া সমাবেশে একত্রিত হলেও তাদের গ্রেফতার করে নাশকতার মামলায় জড়ানো হয়। ৫ বছরে দলটি ও তার ছাত্র সংগঠনের ৩৭৫ জন নেতা কর্মীকে পুলিশ মিছিলে গুলী করে হত্যা করেছে। তিনজন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। প্রায় ১,৫০,০০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং প্রায় ৬ লক্ষ লোকের বিরুদ্ধে ২,০১,০০০ মামলা রুজু করে ৯৫,০০০ নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে চরমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। পঙ্গু ও আহত করা হয়েছে ৭৫,০০০ লোককে। আজকে যারা একজনের গ্রেফতারের জন্য পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করার দাবি তুলছেন, সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে যারা অত্যাচার করছেন তাদের সম্পর্কে তারা কী বলবেন?
দেশের দু’টি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত টিভি ও ইসলামী টিভি তিন বছর ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আনা হয়নি, সংশ্লিষ্ট মালিক পক্ষ বার বার আবেদন করা সত্ত্বেও চ্যানেল দু’টি খুলে দেয়া হয়নি। কিন্তু কেন? সরকার এর জবাব দিচ্ছেন না। তা হলে জবাব দেবে কে?
দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় দৈনিক ‘আমার দেশ’ তিন বছর ধরে বন্ধ। তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক কোনও অভিযোগ নেই। দৈনিকটির প্রেস বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছিল তারা যেকোন প্রেস থেকে পত্রিকা বের করতে পারেন। তারা উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এই উদ্যোগকে ভণ্ডুল করে দেয়। পত্রিকাটির সম্পাদককে ঠুনকো কারণে তিন বছর ধরে জেলে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তার অপরাধ কী? তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের স্কাইপি কেলেঙ্কারি ফাঁস করে দিয়েছিলেন। এর দায় স্বীকার করে চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। তা হলে তিনি তো মিথ্যা রিপোর্ট ছাপাননি বরং সত্য রিপোর্ট ছাপিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্র জাতিকে অবহিত করে নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। আজ একজনের বিরুদ্ধে যাচাই বাছাই করে রিপোর্ট না ছাপানোর জন্য পত্রিকা বন্ধ ও সম্পাদকের শাস্তি চাওয়া হচ্ছে। যিনি যাচাই বাছাই করে সত্য রিপোর্ট ছাপলেন তার উপর এই জুলুম কেন? কেন তিনি জেল খাটছেন, রিমান্ডে নির্যাতন ভোগ করেছেন এবং তার পত্রিকা বন্ধ করে রাখা হয়েছে? সরকারের পক্ষ থেকে এর জবাব কী?
দুনিয়ায় এমন দেশ কি আছে যেখানে বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মামলা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো সভা সমাবেশ, জনমত গঠন ও জনগণের দাবি দাওয়া পূরণের লক্ষ্যে মিটিং মিছিল করতে পারেন না? ঘরোয়া মিটিং এ বসলেও নাশকতার অভিযোগ আনা হয়? আবার তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা চলে? গণতান্ত্রিক দুনিয়ায় কি এমন দেশ আছে যেখানে সংবিধান লংঘন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে? সরকার এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
ড. মোঃ নূরুল আমিন

শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বেগম জিয়ার পর এবার স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ


গত রবিবার এই কলামে রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কে লিখেছি। পরের সপ্তাহেও অর্থাৎ আজকেও যে একই বিষয়ে লিখতে হবে সেটা আমার কল্পনাতেও আসেনি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে এমন সব ঘটনা ঘটে যায় যে বাস্তব কল্পনাকেও হার মানায়। গত সপ্তাহে আমরা দেখেছি যে, ২০ দলীয় জোট নেত্রী বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একজন আওয়ামী আইনজীবী রাষ্ট্রদ্রোহ তথা দেশদ্রোহের মামলা করেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা যেহেতু সরকারের অনুমোদন ছাড়া করা যায় না এবং সরকারের অনুমোদন না থাকলে যেহেতু আদালত সেই মামলা আমলে নেয় না তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা রজু করার অনুমোদন দিয়েছে। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই মামলার ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। বিএনপি দেশের দুইটি বৃহত্তম দলের অন্যতম। সুতরাং বোধগম্য কারণেই এই মামলার বিরুদ্ধে সারা দেশে বিরোধী দলের তরফ থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
সেই ঝড়ের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার পুনরায় দেশের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করার হুমকি এসেছে। এবার হুমকি দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনেছেন তিনি হলেন ‘ডেইলি স্টারের’ অন্যতম মালিক ও সম্পাদক মাহফুজ আনাম। মাহফুজ আনামের আরেকটি পরিচয় রয়েছে। তার পিতা মরহুম আবুল মনসুর আহমদ। আবুল মনসুর আহমদ মরহুম হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক অনুসারী ছিলেন এবং অবিভক্ত পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। জনাব সোহরাওয়ার্দী যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন সেই মন্ত্রিসভায় আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন শিল্প মন্ত্রী। গতকাল শনিবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগের খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি নিম্নরূপ:
সামরিক অভ্যুত্থানে উস্কানি দিতে সাজানো ও মিথ্যা প্রচারণা চালানোর জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের গ্রেফতার ও বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। এটিএন নিউজের এক অনুষ্ঠানে সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের সময় ডেইলি স্টারে ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা খবর ছাপার কথা স্বীকার করার পর বৃহস্পতিবার রাত ২টা ১৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে মাহফুজ আনামের গ্রেফতারের দাবি জানান জয়।
জয় লিখেছেন, ‘মাহফুজ আনাম, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক, স্বীকার করেছেন যে তিনি আমার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অপবাদ আরোপ করতেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির গল্প ছাপিয়েছিলেন। তিনি সামরিক স্বৈরশাসনের সমর্থনে আমার মাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে এই কাজ করেছিলেন।’
‘একটি প্রধান সংবাদপত্রের সম্পাদক সামরিক বিদ্রোহে উস্কানি দিতে যে মিথ্যা সাজানো প্রচারণা চালায় তা রাষ্ট্রদ্রোহিতা।’
ইংরেজি দৈনিকটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার রাতে এটিএন নিউজে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্নের মুখে সম্পাদক মাহফুজ আনাম স্বীকার করেন যে, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সরবরাহ করা ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর’ যাচাই ছাড়া প্রকাশ করে সাংবাদিকতা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল তিনি করেছেন।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক বলেন, ‘এটা আমার সাংবাদিকতার জীবনে, সম্পাদক হিসেবে ভুল, এটা একটা বিরাট ভুল। সেটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ডেইলি স্টারের বিতর্কিত ভূমিকার প্রসঙ্গ শুরুতেই সঞ্চালক তুললে তা অস্বীকার করেন মাহফুজ আনাম।
পরে আরেক আলোচক গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ উদাহরণ তুলে ধরলে মাহফুজ আনাম ভুল স্বীকার করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত, তার মিথ্যা গল্পের উস্কানি আমার মাকে গ্রেফতার করিয়েছে এবং তিনি ১১ মাস জেলে কাটিয়েছেন। আমি বিচার চাই। আমি চাই মাহফুজ আনাম আটক হোক এবং তার রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচার হোক।’
সম্পাদক ও সাংবাদিক হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে মাহফুজ আনামের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
‘তিনি (মাহফুজ আনাম) অব্যাহতভাবে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে তাদের অনৈতিকতা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হবার কথা লেখেন। তার নিজের স্বীকারোক্তি মতে তিনি নিজেই পুরোপুরি অনৈতিক এবং একজন মিথ্যাবাদী।’
‘তার অবশ্যই একজন সাংবাদিক হিসেবে থাকার কোনো অধিকার নাই, সম্পাদক তো অনেক দূরের বিষয়। তার কার্যক্রম দুর্নীতিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে, যা দেশপ্রেমহীন এবং বাংলাদেশ বিরোধী।’
২০০৭ সালে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উদ্দিন আহমেদের হস্তক্ষেপে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনা নিয়ন্ত্রিত ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে, যাকে অনেকে ফখরুদ্দীন-মঈনউদ্দিন সরকার বলে থাকেন, ডেইলি স্টার এবং একই মালিকানায় প্রকাশিত প্রথম আলোর ‘সমর্থন’ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
পরোক্ষ সেনাশাসন জারির আগে সিপিডির উদ্যোগে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সহযোগিতায় দেশজুড়ে নাগরিক সংলাপে ‘বিরাজনীতিকরণের’ প্রচার চালিয়ে অসাংবিধানিক সরকারের প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয়েছিল বলে সমালোচকরা বলে থাকেন।
দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে ওই সময় ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা চালানো হয়েছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
তবে সে সময় আওয়ামী লীগ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে তেমন সরব না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিকের সাথে বর্তমান সরকারের কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন।
॥ দুই ॥
মাহফুজ আনাম তথা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ সজীব ওয়াজেদ জয় এবারই প্রথম করলেন না। এর প্রায় দুই বছর আগে ২০১৪ সালের ২৬ মে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের ৩ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মতন গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেন। এরা হলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনবিদ, বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধান রচয়িতা এবং দেশের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ডাকসুর দুই মেয়াদে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড সৃষ্টিকারী ছাত্র নেতা, তোফায়েল আহমেদের পর যিনি ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় ছাত্র নেতা, আওয়ামী লীগের সেই সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং ডেইলি স্টারের অন্যতম মালিক ও সম্পাদক মাহফুজ আনাম। সেদিনও নিজস্ব ফেসবুক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় এই ৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তাদেরকে গ্রেফতারের দাবি করেছিলেন। মি. জয় এই অভিযোগটি উত্থাপন করেন ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তার ৩ দিন আগেই ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ৩ টায় মাহমুদুর রহমান মান্নাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
তারপর ১ বছর হয়ে গেছে। ড. কামাল হোসেন ও মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ১ বছর পর গত শুক্রবার ৫ ফেব্রুয়ারি মি. জয় মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে পুনরায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনলেন এবং গ্রেফতারের দাবি জানালেন। ঐ দিকে জনাব মান্নার কারাবাসের প্রায় ১ বছর পার হতে চলল। এই ১ বছরেও তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের তো দূরের কথা, সরকার তার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগও উত্থাপন করতে পারেনি।
॥ তিন ॥
এবার স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মি.জয় রাষ্ট্রদ্রোহিতার যে অভিযোগ এনেছেন তার ভিত্তি হলো মাহফুজ আনামের একটি সহজ সরল স্বীকারোক্তি। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা বিডি নিউজ ২৪.কম একটি সংবাদ পরিবেশন করে। আগের রাত অর্থাৎ ৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার এটিএন নিউজের এক টকশোতে স্টার এডিটর একটি স্বীকারোক্তি দেন। বিডি নিউজের রিপোর্ট মোতাবেক স্টার সম্পাদক বলেন যে, ২০০৭/২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সংবলিত সংবাদটি প্রকাশ করা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি বলেন যে, ঐ সংবাদটি পরিবেশন করেছিল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডি জি এফ আই। তিনি বলেন, ডি জি এফ আই পরিবেশিত সংবাদটি যাচাই বাছাই না করে ছাপানোটা আমার সাংবাদিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। আমি এই ভুল স্বীকার করছি।
॥ চার ॥
এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে যে, অনুরূপ সংবাদ ঐ সময় ডেইলি স্টার বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কেও ছাপিয়েছিল এবং সেই সংবাদও পরিবেশন করেছিল ডি জি এফ আই। কিন্তু বিডি নিউজ ২৪.কম শুধুমাত্র শেখ হাসিনার কথা টকশোতে উল্লেখ করে। বার্তা সংস্থাটি সাংবাদিকতার নীতিমালার বড়াই করে শেখ হাসিনার সংবাদ সম্পর্কে মাহফুজ আনামকে প্রশ্ন করে। কিন্তু খালেদা জিয়া সম্পর্কে নীরব থাকে। এটিই বা কোন ধরনের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সেটি বিডি নিউজই বলতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এর আগে ২০১৪ সালের ১৯ মে ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রথম আলোকে বর্জনের ডাক দেন।
ডেইলি স্টার অথবা প্রথম আলোর সাথে নীতির প্রশ্নে আমাদের অনেক মত ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও ডেইলি স্টার বা প্রথম আলোসহ সমস্ত গণমাধ্যমের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাকে আমরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। জনাব মাহফুজ আনাম ভুল স্বীকার করে একটি বিরল ও মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তার এই কাজ আমাদের সকলের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। অথচ প্রশংসা না পেয়ে তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এবং সেই অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করারও দাবি জানিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ। কথায় কথায় যদি দেশদ্রোহিতার অভিযোগ করা হয় এবং সেই সব অভিযোগের সপক্ষে যদি কোনো প্রমাণ বা গ্রহণযোগ্য যুক্তি তর্ক না থাকে তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহের মত একটি গুরুতর অভিযোগও শিক্ষিত সচেতন মানুষের কাছে হালকা হয়ে যায়।
সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আওয়ামী নেতারা যদি এই সহজ সরল সত্যটুকু বুঝে থাকেন তাহলে সেটি দেশের জন্য মঙ্গল এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্যও মঙ্গল।

মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এমপিদেরও তাহলে সম্মান যায়


সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা যখন তাদের সম্মানের জন্য আন্দোলন করছিলেন, তখন মনে হয়েছিল তারা না জানি কতো বড় অপরাধ করে ফেলেছেন। নতুন বেতন স্কেলের প্রস্তাব আনার পর থেকেই শিক্ষকরা ঐ বেতন কাঠামোর প্রতিবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখিনি। এমপিদের তো নয়ই। বরং প্রধানমন্ত্রী থেকে অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই সমস্বরে শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বাড়াবাড়ি বলে অভিহিত করেছেন। সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন স্কেলের প্রস্তাব জাতীয় সংসদেও অনুমোদিত হয়।
সংসদে কী অনুমোদিত হয়, কী হয় না, সে খবর সংসদ সদস্যরা জানেন বলে মনে হয় না। মন্ত্রী পরিষদে যখন কিছু অনুমোদিত হয়, কী অনুমোদিত হলো তার খবর মন্ত্রীরা রাখেন বলে মনে হয় না। প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা যা কিছু হাতে ধরিয়ে দেন, কোনো অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই তা অনুমোদন করে দেওয়া হয়। আবার সেসব প্রস্তাব যখন সংসদে উপস্থাপন করা হয়, তখন তার ভালো-মন্দ, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তার কোনো চুলচেরা বিশ্লেষণ হয় না। সরকারি দল মনে করে, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েই যেহেতু এটা সংসদে তোলা হয়েছে, তাই তাদের এ বিষয়ে আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। সে ক্ষমতাও অবশ্য কারও নেই। কারণ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিরোধিতা করে কোন নাদান হাতে পাওয়া মন্ত্রিত্বের সোনার হরিণ হারাতে চাইবে। অতএব ডিটো ভরসা। কারণ বোবার শত্রু নেই।
এসব প্রস্তাব যখন সংসদে ওঠে, তখন সরকারি দলের এমপিরা সে ব্যাপারে নীরব থাকেন। কারণ একই। কী বলতে কী বলে আবার কোন বিপদে পড়েন। বিপদে পড়ার নজির তো আছেই। বিপদে পড়েছিলেন তোফায়েল আহমদ, আবদুর রাজ্জাক, আমীর হোসেন আমু ও সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত। যে-কোনো চাপেই হোক সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্ত সে ফাঁড়া কাটিয়ে উঠেছিলেন, আবার তাকে ধুপ করে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। অন্যরা চুপ করে থেকে কোনোমতে গড়িয়ে গাড়িয়ে আবার মন্ত্রিত্বে ফিরে এসছেন। তারা কেন ঝুঁকি নিতে যাবেন? আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন ভ্যাটেরান আওয়ামী লীগার। যদিও একবার এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে তার স্ত্রীকে আওয়ামী সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এমপি বানিয়েছিলেন। তাতে অবশ্য তাকে কোনো দোষ দেয়া যায় না। কারণ এরশাদের ক্ষমতা দখল প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে তার ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান অনুঘটক ছিল আওয়ামী লীগই। এখনও এরশাদই আওয়ামী লীগের একমাত্র ভরসা, সহযোগী। তারা মিলে মিশে লেপ্টালেপ্টি করে বেশ আছেন।
ফলে মিসেস লতিফ সিদ্দিকীর এরশাদের সঙ্গে গিয়ে এমপি হওয়া দোষের কিছু বলে বিবেচিত হয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে হাসিনাপুত্র জয় সম্পর্কে বেফাঁস কথা বলে বিপদে পড়েছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার মন্ত্রিত্ব গেছে। সংসদ সদস্যপদ গেছে। আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদও গেছে। প্রয়োজনে হয়তো আবারও তিনি আসবেন পাদপ্রদীপের আলোয়। লতিফ সিদ্দিকী কী ভাবছেন, জানি না, কিন্তু আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায় আছি। এমন সব নজির সামনে রেখে শেখ হাসিনা চিন্তা-চেতনার বাইরে অন্য কিছু ভাবাও অকল্পনীয়। তাই সংসদে বিল এলে আলাপ-আলোচনা ভালোমন্দ বিবেচনা না করেই সকলে সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলে ধ্বনি দেন আর স্পীকার রায় দেন, ‘হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে।’ আইন পাস হয়ে যায়।
জাতীয় সংসদে এর রক্ষাকবচ হতে পারে একমাত্র বিরোধী দল। কিন্তু বর্তমান সংসদে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল বলে চালানোর চেষ্টা করে সরকার এক হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এই দলের প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজে মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত। তার দল থেকে সরকারে আছে ৪ মন্ত্রী ও দুই উপদেষ্টা। উপদেষ্টাদের পদমর্যাদা মন্ত্রীর সমতুল্য। এরশাদের স্ত্রী রওশন হয়েছেন কিম্ভূত বিরোধী দলের নেত্রী। তার পদমর্যাদাও মন্ত্রীর। হুইপরাও হাফ-মন্ত্রী। এদরকেই আবার বিরোধী দল বলে অভিহিত করা হচ্ছে। পৃথিবীর গণতন্ত্রের ইতিহাসে এমন বিরোধী দলের কথা কেউ কখনো শোনেনি।
অবশ্য আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এমন কাণ্ডই বারবার ঘটে। ১৯৭২-৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় এলে এক ধুয়া তোলা হয়েছিল, তার নাম মুজিববাদ। স্লোগান উঠতো, ‘বিশ্বে এলো নতুন বাদ, মুজিববাদ, মুজিববাদ’। সে মুজিববাদ হালে পানি পায়নি। কিন্তু ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় বাকশাল গঠন করলে বোঝা গেল, এ স্লোগানের আড়ালে তাদের কী মতলব ছিল। এবারের ‘বিরোধী দল’ নিয়ে চমৎকার সন্তুষ্টির মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এবারের বিরোধী দল নিয়ে চমৎকার চলছে জাতীয় সংসদ। হল্লাচিল্লা নেই, গালিগালাজ নেই, ওয়াকআউট নেই, ফাইল ছোঁড়াছুঁড়ি নেই। খুবই শান্তিপূর্ণভাবে চলছে সংসদ। খুবই সদাচরণ করছেন সরকারী বিরোধী দল। সুতরাং কোনো বিলের ওপর তথাকথিত বিরোধী দলেরও কোনো মতামতের প্রয়োজন নেই। সে কাজটি তারা করেনও না, করার যোগ্যতাও নেই।
ফলে জাতীয় সংসদে কোনা রকম আলাপ-আলোচনা বিশ্লেষণ ছাড়াই পাস হয়ে গেছে সরকারি কর্মচারিদের নতুন বেতন স্কেল। এই পে স্কেলের খসড়া প্রকাশের পরপরই শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ছাড়া শিক্ষক সমাজ প্রকৃচিসহ ৩৪টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা এর কাঠামোর প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। অর্থমন্ত্রী আবদুল মুহিত বলতে শুরু করেন যে, শিক্ষকরা না বুঝেই আন্দোলন ও পে স্কেলের বিরোধিতা করে যাচ্ছেন। মুহিত প্রকারান্তরে তাদের মূর্খ বলে অভিহিত করার প্রয়াস পান। এবং শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, কোনো আলোচনা হবে না। শিক্ষকরা এত পাত্তা দেননি। তারা বলেছেন, অর্থমন্ত্রী সকালে কী বলেন, আর বিকালে কী বলেন, তার কোনো ঠিক নেই। তারাও তার সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসবেন না। এ নিয়ে বিতর্কে পিছিয়ে থাকলেন না প্রধানমন্ত্রী নিজেও। তিনি বেশ চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, পৃথিবীর কোথায়ও কেউ সরকারি কর্মচারিদের বেতন ৯৭ ভাগ বাড়ায়নি। তা হলে কেন আন্দোলন করতে হবে। এখন মনে হচ্ছে, বেতন না বাড়ালেই ভাল করতাম।
এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টিটকারি দিয়ে আরও বললেন যে, তা হলে শিক্ষকরা সচিব হয়ে যাক। তা হলে তারা ৬৫ বছরের বদলে ৫৯ বছর চাকরি করুক। অবসরের পর সরকার আমলাদের কখনও কখনও চার-পাঁচ বছরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে রাখে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা তাহলে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারবে না। জ্ঞানদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির এমন চিন্তাও তাহলে করা যায়। তবে প্রধানমন্ত্রী ভুলেই গেলেন যে, ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরির বিধান শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য। সরকারি কলেজের শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা ৫৯ বছরই। তারাও আছেন আন্দোলনে। কারণ তাদেরও সরকার প্রশাসনিক ক্যাডারদের অধীনস্ত করে ফেলেছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য শিক্ষকরা কোনো আন্দোলন করেননি। উচ্চশিক্ষার মান বাড়ানোর জন্যই সরকারে তাদের বয়স বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে শিক্ষকরা আরও বললেন যে, তারা কেন সচিব হবেন, তারা সচিব তৈরি করেন। অত্যন্ত হক কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সবচেয়ে ভালো ফল করেন, তারাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষকতা পেশায় থাকেন বা থাকতে চান। এক সময় অবশ্য শীর্ষস্থানীয় রেজাল্টধারীদের প্রশাসনিক পদে আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হতো। সেটা পাকিস্তান আমলের কথা। বাংলাদেশ আমলে তোফায়েল ক্যাডারদের মাধ্যমে তার কবর রচনা শুরু হতে থাকে। এখন প্রশাসনের সর্বনাশ হয়ে গেছে। এখন মধ্যম সারির শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি করতে চায়। কিন্তু সেখানেও দলীয়করণের ফলে গুণ্ডা-মাস্তান, দলীয় ক্যাডার, ধর্ষণের সেঞ্চুরিকার, টেন্ডারবাজেরা প্রধানত নানা কোটায় সরকারি চাকরিতে ঢোকে। তাদের শিক্ষার মান কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে তুলনীয় নয়। সেক্ষেত্রেও যে দূষণ হচ্ছে না, এমন কথা আমি বলব না। অযোগ্য দলীয় লোকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরিতে ঢুকিয়ে শিক্ষার মান নিম্নমুখি করা হয়েছে। তাই একটি ইংরেজী চিঠি ড্রাফট করতে প্রশাসনিক ক্যাডারে বাইরে থেকে লোক হায়ার করে আনতে হয়। শত দলীয়করণ সত্ত্বেও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এখনও এটা ঘটেনি।
বেতন বৃদ্ধি বিষয়ে শিক্ষকদের কোনো অভিযোগ নেই। তারা বলেছেন, প্রশাসনিক ক্যাডারের আমলাদের তুলনায় তাদের মর্যাদা এই বেতন স্কেলে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। একই অভিযোগ সরকারি কলেজের শিক্ষক ও প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদেরও। এই অভিযোগ প্রশাসনিক ক্যাডারের বাইরে অন্য ক্যাডারদেরও। শিক্ষকদের মর্যাদার দিক থেকে আমলাদের চেয়ে তিন ধাপ নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এই কুকাজ করতে গিয়ে গেজেট জারির সময় আমলারা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সুপারিশ পর্যন্ত গাপ করে দেয়ার সাহস দেখিয়েছেন। এখানে সরকার ভারি অসহায়। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রজ্ঞাপনে ভুল হয়েছে, কিন্তু তা এখন আর সংশোধনের সময় নেই। সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি আপাতত শান্ত হয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী প্রথমে তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েিেছলেন। এই সকল পর্যায়ে একেবারে চুপ করে ছিলেন জাতীয় সংসদের অনির্বাচিত সদস্যরা।
কিন্তু গোল বাঁধল জাতীয় সংসদ সদস্যদের যখন সম্মানি বাড়ানো হলো তখন। প্রেসিডেন্ট, বিচারপতিগণ, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিগণ ও সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতাদিও দ্বিগুণ করার বিল সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। তাতে দেখা গেল এমপিদের সম্মানিভাতাও সচিবদের চেয়ে কম ধরা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই কাঠামো নিয়ে তারা আপত্তি তুলেছেন। বৈঠকে তারা বলেছেন, আমরা তো আমলাদের নিচে থাকতে পারি না। তারা বলেন, সংসদ সদস্যরা যদি পাস করেন তবেই আমলাদের বেতন বাড়বে। এমপিরাই যদি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন, তাহলে তাদেরকে সবার ওপরে নিতে হবে। আর অভিমান করে তারা বলেছেন, এটা যদি সম্মানি ভাতা হয়, তবে এক টাকা করা হোক। কিন্তু আমাদের মর্যাদাটা তো রাখতে হবে। আমলারা প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী স্পীকার মন্ত্রীদেরটা বাড়ায়, সঙ্গে নিজেদেরটাও বাড়ায়।
কেন বাড়ায়? কোন সাহসে তারা নিজেদের বেতন ভাতা এমপিদের ওপর নির্ধারণে সাহস পায়? সুরঞ্জিত সাহেব বিচক্ষণ লোক। তার সেটা অনুধাবন করা উচিত। বাড়ায় এই কারণে যে, তারা জানে জনগণের ভোটে নয়, যারা এবার এমপি হয়েছেন, তারা তা হয়েছেন আমলাদের কারচুপি আর ঘোষণার বলে। সবাই জানেন, সরকারের মসনদ রক্ষার জন্য আপাতত আমলারা কতোটা প্রয়োজনীয়। আমলারা সঙ্গে থাকলে আর কোনো ক্যাডার, শিক্ষক, মন্ত্রী-এমপির কোনো প্রয়োজন নেই। আমলারা যদি না চাইত, তবে আপনারা এমপি-মন্ত্রী হতে পারতেন না। তারা এমপি বানিয়েছে, তবে তাদের বেতন এমপিদের ওপরে হবে না কেন? আর একথা প্রধানমন্ত্রীও জানেন। তাই তিনি আমলাদের পক্ষ নিয়ে শিক্ষকদের কটূক্তি করতে দ্বিধা করেননি। আজ এমপিদের এই অমর্যাদার দিনে কে দাঁড়াবে তাদের পাশে। সকলকে তো আগেই আপনারা বধ্যভূমিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের আলোকে সাংবিধানিক সংকটের সুরাহা জাতির জন্য অপরিহার্য


আদর্শিক মিল থাকুক বা না থাকুক সরকারি চাকরিতে থাকাকালীন সময়ে সিনিয়ার-জুনিয়ার সহকর্মীদের মধ্যে আমার বেশ কিছু পছন্দনীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাবেক সচিব ও কেয়ারটেকার সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। ড. খান ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর পড়া শোনা করতেন। বন্ধুবৎসল, সাদাসিদে জীবন ও রসিকতার জন্য যেমন খ্যাতিমান ছিলেন তেমনি স্বল্পভাষী ও শিষ্টাচারী হিসেবেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। আশির দশকের শুরুর দিকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে তাঁর সাথে আমার অনেকটা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। তখন এরশাদের স্বৈরতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় যেমনটি হয় বাংলাদেশও তখন তার ব্যতিক্রম ছিল না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনা স্বৈরাচারী এরশাদ ও তাঁর দোসরদের পায়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ছিল স্থবিরতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ এতই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল যে, কারা দেশ চালাচ্ছেন বুঝে উঠা মুশকিল ছিল। সরকারের প্রধান ব্যক্তিরা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে থাকতেন ব্যস্ত। নিতান্ত দেশপ্রেমের তাগিদে কতিপয় সিএসপি, ইপিসিএস, বিসিএস (CSP, EPCS, BCS), কর্মকর্তা তাদের সীমিত টীম নিয়ে সরকারি বিভাগগুলোকে চালু রেখেছিলেন। কিন্তু, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে হতাশা ও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করার মত ছিল। এই অবস্থায়ও ড. খান তাঁর দায়িত্ব ও রসিকতা ভুলেননি। একদিন তিনি কথা প্রসঙ্গে বললেন, “দুনিয়ার যত নাস্তিক আছে তাদের সবাইকে যদি সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় তাহলে তারা সকলেই আস্তিক হয়ে যাবে”। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন? কীভাবে?” তিনি বললেন, “সরকার বা নেতৃত্ব ছাড়া কোন দেশ  চলতে পারে না। কিন্তু, বাংলাদেশ চলছে। তাঁরা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন এবং উপলব্ধি করতে পারবেন যে, সরকার বা নেতৃত্ব যখন চালাচ্ছে না তখন নিশ্চয়ই কোন শক্তি এই দেশটিকে চালাচ্ছে”। বলা বাহুল্য, তখন আমাদের ওপর প্রতিবেশী কোন দেশের ডিকটেশন বা প্রকট কোন নির্দেশনা ছিল না, সদরে-অন্দরে তাদের গোয়েন্দাদের অস্তিত্বও ছিল না। ড. খান যে অবস্থার প্রেক্ষাপটে উপরোক্ত রসিকতা করেছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তার চেয়ে আরও খারাপ এবং দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বুঝে উঠা মুশকিল যে, সরকারের অর্গানগুলো প্রকৃতপক্ষে নিজ নিজ অবস্থানে আছে কিনা। কিন্তু, এখানে এই অবস্থা দেখে বিদেশী নাস্তিকদের আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা এখন সম্ভবত আর নেই। কেননা, দেশেই এখন প্রচুর নাস্তিক তৈরী হচ্ছে এবং এই নাস্তিকরা বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করতে অনেক পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। তাদের সাথে সরকারি দল এবং বুদ্ধিব্যবসায়ীরাও জড়িয়ে পড়েছেন। ড. আকবর আলি খানের আরেকটি রসিকতা ছিল এই যে, “মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের কোন সাধারণ মানুষকে তাঁর অপরাধপ্রবণতার জন্য দোযখে পাঠাতে পারেন না।” তার কারণ জানতে  চাইলে তিনি যে উত্তর দিতেন তা হল “বাংলাদেশ স্বয়ং একটি দোযখ। শাসকরা এই দেশটিকে দোযখে পরিণত করেছেন। কাজেই মৃত্যুর পর আল্লাহ দ্বিতীয়বার এই দোযখবাসীদের দোযখে পাঠাবেন না।” তাঁর রসিকতার মধ্যে হয়ত বাস্তবতার কিছু ছোঁয়া আছে তবে, দেশটিকে যে আমরা দোযখ বা নরকে পরিণত করেছি এবং ব্যক্তিস্বার্থে এদেশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছি, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ব্রাহ্ম কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, বঙ্গদেশের সাত কোটি মানুষ বাঙালী রয়ে গেছে, মানুষ হয়নি। তাঁর আরেকটি আক্ষেপ ছিল, বাঙালীরা শুরু করতে পারে কিন্তু শেষ করতে পারে না। তার কথাগুলোকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আমাকে উপরোক্ত কৌতুক ও মন্তব্যগুলো স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের আকাশে একটা বিশাল ঝড় বয়ে গেছে। এ ঝড়ের ফলে, এই দেশের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার সকল ইমারত ও তাদের ভিত বিধ্বস্ত ও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। কিন্তু, ঘূর্ণিঝড়উত্তর বিধ্বস্ত অট্টালিকার মেরামত ও পুনর্বাসন এবং সংস্কারের কাজে আজও কেউ হাত দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তা অসমাপ্তই রয়ে গেছে এবং আজ হোক কাল হোক দেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা তথা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে তা সম্পূর্ণ অকার্যকর করে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর সম্মিলিত প্রভাব যখন নির্বাহী বিভাগের ওপর পড়বে তখন দেশ একটি অকার্যকর রাষ্ট্্েরও পরিণত হতে পারে। যা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলা বিশেষ করে সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর রায় লেখার যৌক্তিতা ও আইনগত দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে, “বিচারকরা এই ধরনের অবস্থায় রায় লেখা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী।” আমার যতদূর মনে পড়ে কয়েক মাস আগে বিচারপতি মানিক অবসর গ্রহণের প্রাক্কালে তাঁর পেনশন এবং অন্যান্য দেনা-পাওনার বিষয় চূড়ান্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, প্রধান বিচারপতি সিনহা তাতে বাধা দিয়ে বলেছিলেন যে, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তিনি যদি তাঁর কাছে পাওনা মামলার রায় জমা না দেন তাহলে তাঁর অবসর ভাতা ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করা যাবে না। ঐ সময়ে প্রধান বিচারপতির অবস্থান ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার এবং বিচার বিভাগের তথা দেশের সর্বোচ্চ আদালতের অভিভাবক হিসেবে দেশবাসী তাঁর কাছ থেকে এই ধরনের ভূমিকাই আশা করেছিলেন। সুবিধাভোগীরা অবশ্য তখনও তাঁর বিরোধিতা করেছে। অভিজ্ঞ বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তাঁর সাথে একমত পোষণ করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যার আইনানুগ সমাধান এবং অন্যথায় বড় ধরনের সংকটের আশঙ্কাও তাদের মতামতে উল্লেখ করেছিলেন। এরপর  বেশকিছুদিন বিষয়টি আর এগোয়নি। সুরাহাহীন অবস্থায় থেকে যায়। আবার, জানুয়ারি মাসে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি তুলে আনেন এবং তার সুস্পষ্ট বক্তব্য দেশবাসীর সামনে উত্থাপন করেন। এর কারণ যাই হোক না কেন বিষয়টি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের জন্য স্পর্শকাতর তাতে কোন সন্দেহ নেই। সারা দুনিয়ায় সরকারি কোষাগার থেকে যারা বেতন পান তারা সরকারি কর্মচারী হন, কিংবা বিচারপতি, মন্ত্রী, উপমন্ত্রী যাদের সকলকেই একটা Code of Ethics মেনে চলতে হয়। এই নীতিমালার প্রথম কথা হচ্ছে সময়ের কাজ সময়ে করা। সরকার গঠিত হয় নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য। মেয়াদ শেষ হলে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পুরাতন সরকার দায়িত্ব ছেড়ে দেন। পুরাতন সরকারের ক্ষমতা বা আধিপত্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আর থাকে না। সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিচারকদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়। যদি শৃঙ্খলাজনিত কারণে তারা অভিযুক্ত হয়ে অথবা, রাজনৈতিক জিঘাংসার শিকার হয়ে চাকরি না হারান তাহলে অবসরকালীন বয়স পর্যন্ত তারা চাকরি করতে পারেন। চাকরির মেয়াদ সম্প্রসারণ অথবা বিশেষ কারণে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের একটা কোটা সরকার সংরক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু, তা যে তাঁর পূর্ব পদেই হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। এই অবস্থায় এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, অবসর গ্রহণের বয়সে পৌঁছালেই অবসরে যাবেন এবং যাবার আগেই তার সমস্ত দায়িত্বভার (বিচারকদের ক্ষেত্রে মামলার অসমাপ্ত রায় সমাপ্ত করে) নির্ধারিত উত্তরসূরি অথবা দপ্তর প্রধানের কাছে বুঝিয়ে দিবেন। এটা সকল সভ্য দেশেই অনুসরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু, আমাদের দেশে এই বিষয়টি অনুসরণ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, কোন কোন বিচারক যে কোন কারণেই হোক এক মামলার রায় লিখতে গিয়ে অন্য মামলা টেনে এনে ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির অভিযোগও উঠেছে। প্রসঙ্গত, মুন সিনেমা হলের মালিমানা নিয়ে দায়ের করা এক মামলার একজন বিচারক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন যা দেশের একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা বাতিল করে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।  জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে পাস করা কেয়ারটেকার সরকার আইন তিনি একটিমাত্র কলমের খোঁচায় রহিত করে দেয়ার ফলে দেশে যে নৈরাজ্য, সংঘাত, সংঘর্ষ ও হাজার হাজার লোকের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, শত শত কোটি টাকার যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তিনি এবং পরবর্তীকালে আপিল আদালতে যারা দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তার বেআইনী রায়কে বহাল রেখেছিলেন তারাও এ দায় থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন কিনা তা নিয়ে বিশ্লেষক মহলে অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে।
পাঠকদের সুবিধার্থে আমি এখানে সংবিধানে ৩য় তফসিলে বর্ণিত কয়েকটি শপথ ও ঘোষণার কথা উল্লেখ করতে চাই। এই তফসিলে রাষ্ট্রপ্রতি, প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার, প্রধান বিচারপতি বা বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্যদের শপথ ও ঘোষণাপত্র পাঠ করার বিধান রাখা হয়েছে এবং এজন্য নির্ধারিত একটি ছকে তাদের শপথ বাক্য পাঠ করতে হয়। শপথনামার অন্তর্ভুক্ত উপরোক্ত কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেই কয়েকটি সাধারণ বিষয় রয়েছে যা সকলের জন্যই প্রযোজ্য এবং সকলেই মেনে চলতে বাধ্য। এগুলো হচ্ছে :
১. আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব।
২. আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করিব।
৩. আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করিব।
এই তিনটি শপথ ও ঘোষণাকে সামনে রেখে যদি আমরা আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রনায়কদের আচরণ বিশ্লেষণ করি তাহলে হতাশ না হয়ে পারা যায় না এবং এক্ষেত্রে শপথ ও আচরণের মিল খুঁজে পাওয়া খুবই মুশকিল। আদালত সম্পর্কে কিছু বলা বিপদজনক, কেননা এক্ষেত্রে আদালত অবমাননার ঝুঁকি আছে, আবার আমাদের বিচারকদের কেউ কেউ মহাসড়কে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে তাদের গাড়ি চলতে না দেয়ায় ট্রাফিক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বিমানে ইকোনমি ক্লাসে টিকিট কিনে বিজনেস ক্লাসে বসতে না দেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিষয়টিও উল্লেখ করতে ভুলেননি। তবে, এখানে একটি আশার কথাও আছে। ভারতীয় হাইকোর্ট এবং বাংলাদেশ হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী তাদের দুইটি রুলিংয়ে তারা বিচারকের রায়কে সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় বলে উল্লেখ করেছিলেন। তাদের মতে বিচারকরাও মানুষ তাদের ভুল হতে পারে এবং এ প্রেক্ষিতে তাদের সমালোচনা করা যায় এবং তাতে বিচারের মান বাড়ে। আবার, আইনসভা ও বিচার বিভাগ এ দুটির মধ্যে কোনটি বড় কয়েক বছর আগে আমাদের দেশে তা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল, কিন্তু সুরাহা হয়নি। আইনসভা একজন বিচারকের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, কিন্তু সেই অভিশংসন হয়নি। আমার মনে হয় বিচার বিভাগ, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনয়ন, নৈরাজ্যের অবসান, সংসদের অবস্থান দৃঢ়করণ এবং সর্বোপরি প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের আলোকে দেশে যে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে অবিলম্বে তার সুরাহা হওয়া দরকার। ‘অবসরকালীন সময়ে বিচারকদের রায় লেখার এখতিয়ার আছে ’ জাতীয় সংসদের তরফ থেকে এ ধরনের যে মতপ্রকাশ করা হয়েছে তার যেমন বাস্তবতা নেই তেমনি তার আইনগত ভিত্তি নেই। সংবিধানে বিচারকদের কিছু বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। একজন বিচারপতি সংবিধানের ৯৬ ধারা অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকতে পারেন এবং এই সংবিধানেরই ৯৯ অনুচ্ছেদে অবসর গ্রহণের পর বিচারকদের অক্ষমতার কথা পরিষ্কারভাবে বলা আছে। তিনি এক্ষেত্রে কোন আদালত বা কর্তৃপক্ষের নিকট ওকালতি বা কার্য করিবেন না। সংবিধানে উল্লিখিত বিচারকদের এ অক্ষমতার আলোকে অবসর গ্রহণের পর মামলার রায় লেখার অথবা সংক্ষিপ্ত রায়ের পরিবর্তন করার কোন ক্ষমতা বা এখতিয়ার তার নেই। এটা যদি কেউ করে থাকেন তাহলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হতে পারে। এই অবস্থায় সকল প্রকার অহংবোধ পরিত্যাগ করে সংকট সমাধানে সকল পক্ষকে এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি।

Ads