শনিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সামনে শুধু ঘন অন্ধকার : কোথাও কোনো আশার আলো নাই


সর্বত্র একই প্রশ্ন, কোথায় যাচ্ছি আমরা? যার সাথেই দেখা হয় তিনিই প্রশ্ন করেন, এই অস্থিরতার শেষ হবে কবে? সম্প্রতি তিনটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গেছে। সেগুলো হল, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি। দ্বিতীয় ঘটনা হল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সাবেক ছাত্র নেতা ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না গ্রেফতার। তার বিরুদ্ধে সেনা বিদ্রোহে উসকানি দানের অভিযোগ করা হয়েছে। তৃতীয় ঘটনা হল, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী এবং শেখ মুজিবের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান প্রনেতা ড. কামাল হোসেনকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের মর্যাদাশীল ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামকে  গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। একের পর এক এমন নিবর্তনমূলক পদক্ষেপ নিয়ে সরকার কি হাসিল করতে চায় সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। এসব দমন নীতির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে  আসলে দমন করা যায় না। বরং সাময়িক অসুবিধা হলেও যাদেরকে দমন করতে চাওয়া হচ্ছে তাদের মনোবলকে আরও ইস্পাত কঠিন করা হয়।
প্রথমে শুরু করছি বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার প্রসঙ্গ নিয়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এ আদেশ দিয়েছেন বকশিবাজারে স্থাপিত বিশেষ আদালত-৩। বিচারক আবু আহমেদ জমাদার গতকাল এ আদেশ দেন। আদেশটি বাতিলের জন্য আবেদন করা হলেও তা খারিজ করেন ওই আদালত। আদেশের কপি পৌঁছে গেছে গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট ও রমনা থানায়। এদিকে দুদকের দায়ের করা এই মামলাকে মিথ্যা বানোয়াট দাবি করে সংশ্লিষ্ট আদেশকেও বেআইনি বলে মন্তব্য করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা জানিয়ে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে ২০ দলের নেতাকর্মীরা।
বেগম জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানায় শুধুমাত্র দেশেই প্রতিবাদের ঝড় ওঠেনি, বিদেশেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এই গ্রেফতারি পরোয়ানায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। গত বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় জাতিসংঘ সদর দফতরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সংস্থার মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমান মান্নার গ্রেফতারের প্রসঙ্গও উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে জনৈক বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির খবর ইতোমধ্যেই মহাসচিব অবহিত হয়েছেন এবং এই ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মহাসচিব সেখানে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান খুঁজে বের করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছেন। সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো মহাসচিবের দেয়া দায়িত্ব অনুযায়ী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার পত্রিকান্তরের খবর মোতাবেক গ্রেফতার, কারাবরণসহ যে কোন ধরনের পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত বিএনপি-চেয়ার পারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া। আইনজীবীদের কাছে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গুলশান কার্যালয়ে ছুটে যান তার ভাই সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরীন এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা। তারাই প্রথম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি জানান। কার্যালয়ে অবস্থানকারী সূত্র জানায়, গ্রেফতারি পরোয়ানার খবরটি স্বাভাবিকভাবে নেন খালেদা জিয়া। কার্যালয়ে অবস্থানকারী নেতারা তার কাছে যান। তিনি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কি চিন্তিত? আমি চিন্তিত নই। রাজনীতির ইতিহাসে এমন প্রতিহিংসার ঘটনা নতুন কিছু নয়। ব্যক্তিগতভাবে জেল-জুলুমও আমার কাছে নতুন কিছু নয়। কাঙ্খিত সমাধান না আসা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করতে হবে। আরও অনেক কষ্ট করতে হবে। আপনারা কি কষ্ট করতে পারবেন? এ সময় নেতারা হাসিমুখে তাকে সায় দেন।
দুই.
একের পর এক গ্রেফতারের হুমকি এবং গ্রেফতারের  উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা। কিন্তু ভয় পাওয়া তো দূরের কথা খালেদা জিয়া বরং আরো শক্ত এবং আরো কঠোর হয়েছেন। শুক্রবারের পত্র-পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, টলেননি খালেদা জিয়া। পরোয়ানায় লেশমাত্র শঙ্কাবোধ নেই। বরং চলমান লড়াইয়ের কৌশল ঘষা মাঝা করছেন। গভীর পর্যবেক্ষণ করছেন সরকারের গতিবিধি। গ্রেফতারি পরোয়ানাকে ক্ষমতাসীনদের ‘পলিটিক্সের এসিড টেস্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।  বিরাজমান টালমাটাল পরিস্থিতির শেষ দেখার অপেক্ষায় তিনি। তাই  আটঘাট বেঁধে চূড়ান্ত ধাক্কা দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করছেন। প্রস্তুতির মূল চাবিকাঠি দিয়েছেন বিকল্প নেতৃত্ব দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। লন্ডন থেকেই দেশে সাংগঠনিক ৭৫ জেলার প্রতিটি ইউনিটের মাঠ নেতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন তিনিই। বিএনপির আন্দোলনের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের একাধিক নেতা দলীয় চেয়ারপারসনের সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা গুলশান, রমনা ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় পৌঁছানো হয়েছে। অস্থায়ী কারাগার হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধাকে। বিএনপি দলীয় সূত্র বলছে, মামলার পরবর্তী তারিখ আগামী ৪ মার্চ। কিন্তু তারিখ যাই হোক ওই আদালতকেই আস্থায় নিতে পারছেন না খালেদা জিয়া। তাই ম্যাডামও মার্চের ‘চার’ দেখার অপেক্ষায়। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মামলা (নভো থিয়েটার) ছিল। তিনিও আদালতে যাননি এমন নজির আছে। তার বেলায় তো এমন আদেশ দেয়া হয়নি। তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেলায় কেন এমন আদেশ? প্রশ্ন রাখেন ব্যারিস্টার খোকন।
অপর একটি পত্রিকায় বলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরেও আন্দোলনে অনড় ও অবিচল রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া। গ্রেফতারসহ যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত আছেন বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, গ্রেফতার হলেও আন্দোলন থেকে একচুলও নড়বেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। গত বুধবার কোর্ট থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তা তিনটি থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। থানার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত হয় খবর। এতে ধারণা করা হচ্ছিল যে তিনি হয়তো বুধবার রাতেই গ্রেফতার হবেন। কিন্তু তা হয়নি। বরং গতকাল থানাগুলো উল্টো বলছে যে তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা পাননি। এতে বোঝা যায় যে, আন্তর্জাতিক বা অভ্যন্তরীণ যে কোনো চাপ অথবা সরকার নিজেই বেগম জিয়ার গ্রেফতারের চাপ নিতে পারবেন কিনা সেসব বিষয় চিন্তা করেই হয়তো তাকে গ্রেফতার করা নিয়ে সরকার একটু দ্বিধান্বিত। বিএনপির গুলশান কার্যালয় থেকে গ্রেফতার হতে পারেন এজন্য তিনি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। ঔষুধসহ ব্যবহারের জন্য কাপড় গুছিয়ে রেখেছেন। তার অনুপস্থিতিতে কিভাবে আন্দোলন চলবে সে ব্যাপারে আগে থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে ‘আন্দোলনের ছক’ বুঝিয়ে দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই তৃণমূল নেতাকর্মীরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাবে বলে গুলশান কার্যালয়ের সূত্র জানিয়েছে।
তিন.
পক্ষান্তরে সরকারের অবস্থানও অনড়।  সরকারের অবস্থান সম্পর্কে একটি প্রাচীন বাংলা দৈনিকের প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে, বিএনপিকে এক বিন্দুও ছাড় দেবে না সরকার। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে চূড়ান্ত পরিণতির কথা ভাবা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পেট্রল বোমা হামলা মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, গণতন্ত্রে কেউ রাজা-রাণী নন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আইনের আওতার বাইরে নন। অন্যায়-অশান্তি, অপরাধ করলে বিচার হবে, জেল খাটতে হবে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বিচারের বাইরে থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে বলে হুশিয়ারি ব্যক্ত করেন তিনি। এ দিন খুলনায় এক অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়াকে সারা জীবন জেলের মধ্যে কাটাতে হবে।
দুই দল এবং দুই নেত্রী যে নিজ  নিজ অবস্থানে অনড় সেটি বিদেশীরাও বুঝে গেছে। গত বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। বৈঠকে জানানো হয় যে, তারা বাংলাদেশে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে যেটুকু বুঝেছে তা হল দু’পক্ষের  মধ্যে সমঝোতার  কোনো সুযোগ তারা দেখছে না। তারা জানান, বিবদমান পক্ষগুলো খুবই অনমনীয় অবস্থানে। ঢাকায় কেউ কেউ তাদের জানিয়েছেন, আগামী  কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না। যদি এভাবে  চলতে থাকে পরিস্থিতি একপর্যায়ে গৃহযুদ্ধের রূপ নিতে পারে। বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, চলমান সহিংসতা বন্ধে দেশটির সব পক্ষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
বিরোধী দল সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে বলে মনে হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সরকার যতই হালকাভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করুক না কেন বাস্তব অবস্থা হলো এই যে, বাংলাদেশ এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সংস্কারের লক্ষ্যে সমঝোতায় পৌঁছাতে অবশ্যই বিরোধীদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানাতে হবে সরকারকে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়। ‘বাংলাদেশ অন দ্য ব্রিংক’ (বাংলাদেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে) শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক নৈরাজ্যের প্রান্তসীমায় উপনীত বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) উভয়েই আপসহীন অবস্থানে। উভয় দলই যদি অনড় অবস্থান থেকে ফিরে না আসে, তাদের নেতাকর্মীদের সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ না করে সংকটাপন্ন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রকৃত সংলাপ শুরু না করে- তাহলে যে সহিংসতা দেশকে গ্রাস করেছে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এতে নাগরিক ও সামাজিক অধিকার আরও সংকটে পতিত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও গৃহযুদ্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। ‘ঢাকায় ৭২ ঘণ্টা’ শীর্ষক একটি লেখায় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান প্রেদা এসব মন্তব্য করেন। চলতি মাসেই প্রেদার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে।
পত্র পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, বেগম জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার গ্রেতারের বিষয়টি জাতি সংঘের মহাসচিব বান কি মুন অবহিত আছেন। তারা পরিস্থিতির ওপর নজারদারি অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু এগুলোতে কোনো  সমাধান হবে বলে  মনে হয় না। যে সমাধানটি এক ঘন্টার মধ্যে হতে পারে সেই সমাধানের পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন না। আগামী দিনে বাংলাদেশের ইতিহাস যদি  বাজে ভাবে লেখা হয় তাহলে শেখ হাসিনা সেই দায় থেকে অব্যাহতি পাবেন না। 
আসিফ আরসালান 

শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

হঠাৎ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন এবং অন্তরালের উদ্দেশ্য


প্রথমে দু-একটি খবর শুনুন। একটি খবর হলো, দেশব্যাপী চলমান অবরোধ ও হরতালের মধ্যেই সরকার হঠাৎ ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন যে কতোটা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তারও প্রমাণ পাওয়া গেছে সঙ্গে সঙ্গে। এতোদিন কোনো এক ওয়ার্ডের সীমানা নিয়ে ঝামেলার কথা শুনিয়ে নির্বাচন করেনি কমিশন। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেয়ার পরপর একই কমিশন জানিয়েছে, সীমানার সমস্যা নাকি আগেই মীমাংসা করা হয়েছে এবং সে কারণে যে কোনো সময় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এ দুটি করপোরেশনেরই নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। ১০ মার্চের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন কর্তাব্যক্তিরা। মানতেই হবে, যথেষ্ট যোগ্য ও পারঙ্গম বর্তমান নির্বাচন কমিশন! এরই পাশাপাশি একদিকে বহুদিন ধরে মেয়র পদের জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে কারাগারে ঢোকানো হয়েছে, অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা এমন ধাওয়ার মুখেই রয়েছেন যে, তাদের কারো পক্ষে আর যা-ই হোক, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া সম্ভব হবে না। ফলে ফাঁকা মাঠ পেয়ে যাবে আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে ধারণাও স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হককে ঢাকা উত্তরের এবং সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। গণভবন থেকে ফেরার পর দু’জন নিজেদের সম্মতির কথা জানাতেও দেরি করেননি। ফলে ধরে নেয়া যায়, অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে আনিসুল হক এবং সাঈদ খোকনকেই আগামীতে মেয়র পদে দেখা যাবে। খবর শুধু এটুকুই নয়। সরকারের ‘অপারেশন’ চলছে অন্য অনেক এলাকাতেও। এসবের মধ্যে গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে এরই মধ্যে গ্রেফতার ও বরখাস্ত করা হয়েছে। ওদিকে সিলেট এবং হবিগঞ্জের দুই মেয়র সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বিদায় নেয়ার অবস্থায় পৌঁছে গেছেন। আর চট্টগ্রামের মেয়রকে তো দীর্ঘদিন ধরেই অঘোষিতভাবে বন্দীজীবন কাটাতে হচ্ছে। এদের সবাই যে বিএনপি করেন সে কথা নিশ্চয়ই উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না।
অর্থাৎ ৫ জানুয়ারি ধরনের আরো কয়েকটি নির্বাচন করার ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলা যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এটাই অবশ্য স্বাভাবিক। কারণ, ২০১৩ সালের ৬ জুলাই সর্বশেষ অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শুধু নয়, তার আগের মাসে অনুষ্ঠিত খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছিলেন বিরাট ব্যবধানে। ডিজিটাল নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার গঠন করার পর পর ২০১০ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামের নির্বাচনেও বিএনপিই জিতেছিল। বিএনপি জিতেছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনেও। নারায়ণগঞ্জে যেহেতু বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ডা. আইভি জিতেছিলেন সেহেতু ওই আসনটিও আওয়ামী লীগকে দেয়া যায় না। সে হিসেবে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় ঘটেছিল সাত-এক গোলের ব্যবধানে। প্রতিটি নির্বাচনেই বিরাট ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রার্থীরা। অন্যদিকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। সব মিলিয়ে দেশের আটটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে একমাত্র রংপুর এবং এক অর্থে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া সবগুলোতেই মেয়রের আসনে বসেছিলেন বিএনপির প্রতিনিধিরাÑ অবশ্যই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে।
প্রসঙ্গক্রমে পরিসংখ্যানের পর্যালোচনাও উল্লেখ করা দরকার। দেখা গেছে, গাজীপুরের নির্বাচনে ভোটের ব্যবধান বেড়েছিল তাৎপর্যপূর্ণভাবে। তৎকালীন ১৮ দল সমর্থিত বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান যেখানে পেয়েছিলেন তিন লাখ ৬৫ হাজার ৪৪৪ ভোট সেখানে মহাজোটের তথা আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান পেয়েছিলেন দুই লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট। দু’জনের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল এক লাখ ছয় হাজার ৫৫৭। বিরোধী দলের এই বিজয় অবশ্য মোটেও সহজ ছিল না। কারণ, ক্ষমতাসীনরা গাজীপুরকে গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ‘ঘাঁটি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এই ‘ঘাঁটি’ তারা অবশ্যই হারাতে চাননি। এজন্যই নির্বাচনের ময়দানে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকেননি তারা। বিপুল টাকা তো ছড়িয়েছেনই, হুমকি দেয়া থেকে প্রশাসন ও পুলিশকে ব্যবহার করা পর্যন্ত সব বিষয়েই খুবই তৎপর দেখা গিয়েছিল তাদের। খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্বাচনী অফিস বসানো হয়েছিল। দ্বিতীয় একটি অফিস স্থাপন করা হয়েছিল টঙ্গীর এক বিলাসবহুল হোটেলে। তোফায়েল আহমেদের মতো জাঁদরেল নেতারা নির্বাচনের তদারকি করেছিলেন। ওদিকে নির্বাচনের দিন বিরোধী দলের সমর্থক ভোটারদের বাধা দেয়া, পুলিশের সহযোগিতায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালটপেপারে সিলমারা এবং ব্যালটবাক্স থানায় নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সব পন্থাই অবলম্বন করেছিলেন তারা। পুলিশ ও প্রশাসনের সর্বাত্মক হস্তক্ষেপ তো ছিলই। ধান গবেষণা ইনস্টিউটসহ বিভিন্নস্থানে দফায় দফায় গোপন সভা করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাও যথেষ্টই চালিয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক পর্যন্ত অনেক রথি-মহারথিকেও ন্যক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে। কিন্তু সব জেনেও এবং বিরোধী প্রার্থীর পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ জানানোর পরও নির্বাচন কমিশনকে নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি। ফলে ভোট ডাকাতি হওয়ার এবং বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার আশংকা ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্যদিকে ভোটাররা সব চেষ্টাকেই ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন। প্রবাদের এই সত্যকেও তারা সত্য প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন যে, চোরের শুধু নয়, ‘গৃহস্তেরও’ দিন আসে! ফলে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন ক্ষমতাসীনদের প্রার্থী।
এখানে গাজীপুরের উদাহরণ টেনে আনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত বলার সম্ভবত দরকার পড়ে না। প্রধান কারণ হলো, এই গাজীপুরকে কেন্দ্র করেই বর্তমান সংকটের সৃষ্টি করেছেন ক্ষমতাসীনরা। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হলেও গাজীপুরের ওই নির্বাচন উপলক্ষে সেবার জাতীয় রাজনীতির বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্যে এসে গিয়েছিল। গ্যাস-বিদ্যুৎ থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতা, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি, শেয়ার বাজারের লক্ষ-হাজার কোটি টাকার লুণ্ঠন, হলমার্ক কেলেংকারি, রানা প্লাজার ধস ও প্রায় ১২০০ শ্রমিকের নির্মম মৃত্যু এবং দেশজুড়ে আওয়ামীকরণের মতো কারণগুলোর পাশাপাশি বিশেষভাবে উঠে এসেছিল সরকারের রাজনৈতিক নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন এবং গুম ও খুন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে চলমান নিষ্ঠুর অভিযানের পাশাপাশি একটি বড় কারণ হিসেবে প্রাধান্যে এসেছিল ৫ ও ৬ মে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে রাতের অন্ধকারে চালানো গণহত্যার ভয়ংকর অভিযান। এর প্রতিক্রিয়াও ভোটারদের প্রবলভাবেই আন্দোলিত করেছিল। সে কারণে গাজীপুরের ভোটাররা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানের ওপর গুলী ও নির্যাতন চালানোর এবং তাদের প্রাণ কেড়ে নেয়ার পরিণতি শুভ হতে পারে না। অর্থাৎ মূলত জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুর কারণেই গাজীপুরের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন ক্ষমতাসীনরা।
গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের শোচনীয় পরাজয় নিয়ে সঙ্গত কারণেই সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। নাটকীয়তাও কম হয়নি। যেমন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছিলেন, দলের চেয়ারম্যান এরশাদ যদি সমর্থন না দিতেন তাহলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরো দুই লাখ ভোট কম পেতেন। অর্থাৎ আজমত উল্লাহ খান পেতেন ৫৮ হাজার ৮৬৭ ভোট- যাকে ‘মাত্তরই’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। ওদিকে ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পর গাজীপুরের ভোটাররা যেখানে ‘দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চপেটাঘাত’ কথাটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতাসহ বিশিষ্টজনেরা সেখানে যার যার মতো মূল্যায়ন, অভিমত ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। কারো কারো অভিমতও আবার আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। যেমন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ এখন আর ‘তেমন জনপ্রিয় নয়’! সরকারদলীয় প্রার্থীদের এই হারের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে বলেও আগাম জানিয়ে দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও মন্দ শোনাননি। আওয়ামী লীগের মধ্যে যখন গোপালগঞ্জের পর দলের দ্বিতীয় প্রধান ‘ঘাঁটি’ গাজীপুরে হেরে যাওয়ার কারণে ‘মাতম’ চলছিল, তখনই তিনি বলে বসেছিলেন, জনগণের কাছে ‘দুর্ভেদ্য দুর্গ’ বলে কিছু নেই। তারা আস্থা হারিয়ে ফেললে যে কোনো ‘দুর্গ’ ভেঙে ফেলতে পারে। জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের অবশ্য অন্য মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশে ভিন্ন চিত্র থাকবে এবং ‘মাতাল হাওয়া’ বইতে থাকবে। এ হাওয়া কোনদিকে যাবে তা নাকি এখনই বলা যাবে না! তোফায়েল আহমেদের বক্তব্য ছিল আরো কৌতুহলোাদ্দীপক। মন্তব্য করার পরিবর্তে তিনি বলেছিলেন, অহেতুক আমরা কিছু জায়গাকে সিটি করপোরেশন করেছি। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাকে সিটি করপোরেশন করে কি লাভ হয়েছে তা নাকি তার জানা নেই! অর্থাৎ সব কাজের মধ্যে তারা কেবল নিজেদের লাভই খোঁজেন, জনগণের নয়! তোফায়েল আহমেদ অবশ্য স্বীকার না করে পারেননি যে, ভোটাররা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এভাবেই পর্যালোচনার পাশাপাশি মন্তব্য ও অভিমত প্রকাশ করা হয়েছিল গাজীপুরের ফলাফল নিয়ে। লক্ষ্য করা দরকার, মনের অজান্তে হলেও মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কিছু কঠিন সত্যকে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। উদাহরণ দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর ‘আওয়ামী লীগ এখন আর তেমন জনপ্রিয় নয়’-এর পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরের ‘দুর্গ’ বিষয়ক মন্তব্য এবং সবশেষে তোফায়েল আহমেদের ভোটাররা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অভিমতকে বিচেনায় নেয়া যেতে পারে। বলা দরকার, ঠিক এ কথাটাই কিন্তু চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর থেকে বলে আসছিলেন বিএনপি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলের নেতারা। শেয়ারবাজারের লুণ্ঠন থেকে পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতি, হলমার্ক ও ডেস্টিনি কেলেংকারি এবং সবশেষে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে চালানো দমন-নির্যাতন-হত্যাসহ হেফাজতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যা পর্যন্ত অসংখ্য ‘জাতীয়’ ইস্যুর পাশাপাশি সে সময় বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রাধান্যে এসেছিল সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিটি। সাধারণ ভোটাররা বুঝলেও ক্ষমতাসীনরা বুঝতেই চাননি যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান করার মধ্যেই তাদের জন্য মঙ্গল নিহিত রয়েছে। সুতরাং কথিত ‘ভুলগুলো’ শোধরাতে চাইলে সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতায় আসা দরকার। তা সে সরকার যে নামেই হোক না কেন। এ ব্যাপারে বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনেক আগেই ছাড় দিয়ে রেখেছিলেন। সুতরাং ক্ষমতাসীনদের জন্য সে সময় পর্যন্তও সুযোগ ছিল। চাইলে তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারতেন। অন্যদিকে তারা এগিয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে গঠিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পথে। এজন্যই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ১০ শতাংশ ভোটারও ভোট দিতে যাননি। বর্তমান সংকটের শুরুটাও সেখান থেকেই হয়েছিল।  
সরকার ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো একবার একদিকে তত্ত্বাবধায়ক তথা নির্বাচনকালীন সরকার এবং অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, নির্বাচন কমিশনের আদৌ কোনো স্বাধীনতা ও ক্ষমতা রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মনেও এখন আর কোনো সংশয় নেই। তার ওপর রয়েছে আওয়ামী প্রশাসন, যাকে সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখনো সাজানোর কাজ চলছে পুরো দমে। ওদিকে প্রশাসনের পাশাপাশি র‌্যাব ও পুলিশ তো রয়েছেই। ফলে যতো মিষ্টি কথায়ই আশ্বাস দেয়া হোক না কেন, ঢাকা সিটির আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারবে না। প্রতিটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনরা যে বাঁকা তথা উল্টো পথেই হাঁটার চেষ্টা চালাবেন সে বিষয়েও সন্দেহ নেই সচেতন কোনো মানুষের। সত্যিই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীরা দাঁড়িয়ে পড়লে ভোট ডাকাতি এবং ইচ্ছামতো সিল মারা ও ব্যালটবাক্স ছিনিয়ে নেয়া প্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। পুলিশ ও প্রশাসন পালন করবে সরকারের সেবাদাসের ভূমিকা। ওদিকে নির্বাচন কমিশন তো রয়েছেই! এ ধরনের আশংকা ও সম্ভাবনার ভিত্তিতেই জনগণের সচেতন অংশ মনে করেন, গণতন্ত্রের ব্যাপারে সত্যি সদিচ্ছা এবং নিজেদের অবদানের ব্যাপারে সৎসাহস থাকলে ক্ষমতাসীনদের উচিত সবচেয়ে জনসমর্থিত দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ধাওয়ার মুখে রাখার পরিবর্তে প্রথমে দমন-নির্যাতন, গ্রেফতার-মামলা ও গুম-খুন বন্ধ করা এবং তারপর যথেষ্ট সময় দিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। তখন দেখা যাবে, ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা আসলে কতটুকু। সেটা না করে সিটি নির্বাচনকেও যদি ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা করার পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে ধরে নিতে হবে, ক্ষমতার জোরে শোরগোল করা হলেও আওয়ামী লীগের ভোট আদৌ বাড়েনি বরং অনেক কমেছে এবং অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতসহ দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী দলগুলোর ভোট বহুগুণে বেড়ে গেছে- যার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এজন্যই নতুন পর্যায়ে আবারও কুপোকাত হওয়ার লজ্জাকর পরিণতি এড়ানোর কৌশল নিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তা সত্ত্বেও একটা কথা আগাম বলে রাখা যায়। কথাটা হলো, যতো কূটিকৌশলই নেয়া হোক না কেন, ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ দুটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময়ও ভোটার জনগণ আসলে নতুন করে নিজেদের ইচ্ছা ও মনোভাবের জানান দেবেন।
আহমদ আশিকুল হামিদ 

বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

দেশ নিয়ে সকলের ভাবা প্রয়োজন


দেশ ও দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের পথে। সবখানে আতংক। সহিংসতা সর্বত্র। মুখোমুখি দুই পক্ষ। ছাড় দেয়ার মানসিকতা কারো নেই। দেশ, জাতি ও অর্থনীতি গোল্লায় যাচ্ছে সে বিষয় ভাবার সময নেই। অস্থিরতা,আতংক ও উৎকণ্ঠার মুখে দেশের রাজনীতি চলছে । লাগাতার অবরোধ ও হরতালে গণন্তান্ত্রিক অধিকার সংকট সৃষ্টি করেছে। চারদিকে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। সেটা ভাবার বিষয় নয়। বর্তমান ভাবার বিষয় হচ্ছে ক্ষমতায় থাকতে হবে।
বিরোধী দলের টানা অবরোধ, হরতাল কর্মসূচি চলছে। যা দেখে সরকারদলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে  ভয়ংকর চিন্তা বাসা বেঁধেছে। সে চিন্তায় তারা অস্থির হয়ে পড়েছে। তবু তারা মুখে মুখে ঢালাওভাবে বলছে ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিকের ফেরিওয়ালারা নিজেদের বক্তেব্যই স্ববিরোধী হয়ে উঠছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আইন-শৃংখলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু দাবি করেন, ‘আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট’। তিনি ঐ বৈঠকে আরো বলেন, ‘বর্তমানে যা হচ্ছে তা রাষ্ট্রীয় নাশকতা’। তার শেষের কথাটি কি আগের কথাটার বিপরীত নয়?। মাননীয় শিল্পমন্ত্রীকে যদি বলি,আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিকই থাকে, তবে রাতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ কেন? টানা অবরোধ ও হরতালে সারা দেশে প্রতিটি থানায় পুলিশী টহল, তল্লাশি জোরদারের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে কেন? পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক, তাহলে  এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রতি শুক্রবারে নেয়া হচ্ছে কেন? রাত ৯ টার পর মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ কেন? সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন  করেন,তখন উত্তেজিত হয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে, তাদের তো মানবিকতা বলতে কিছু নেই। তাই একজন পরীক্ষার্থীর যদি কিছু হয়, তার দায় কার ওপর পড়বে? তাই শুক্রবার ছাড়া পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না’। খোদ অর্থমন্ত্রীই বলেছেন, ‘রাজধানীর বাইরের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক’। শিল্পমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা যেতে পারে, দেশের কেমন পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলা যায়? স্বাভাবিকতার প্যারামিটারই বা কী ? দয়া করে বলবেন কি? তিনি যদি স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকের পার্থক্যটা দেখান, তাহলে জনগণের পক্ষে বুঝা সহজ হবে।
 আমাদের দেশে বড় রাজনৈতিক দল দু’টি। একটি দল ক্ষমতায় থেকে রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। অপর দলটি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে যা চলেছে, তা কখনোই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে বলেছেন। তিনি সংসদে আরো বলেন, ৫২ দিন অবরোধে এদেশে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এদিকে বিএনপির দাবি, সরকার পেট্রোল বোমা দিয়ে বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটাচ্ছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- চালাচ্ছে, ইতোমধ্যে অনেককে গুম-খুন করেছে। সুশীল সমাজ মনে করেন, দেশের ক্ষতি মানে সবার ক্ষতি। এ ক্ষতি থেকে আমরা বাঁচতে চাই। সরকারের এমন বক্তব্য কি স্বাভাবিকতা নির্দেশ করে? এছাড়া টানা অবরোধ ও হরতালে ৫২ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের উপর কয়েক হাজার মামলা ও বিশ হাজার নেতা কর্মীকে গণগ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাবের হাতে ক্রসফায়ারে নিহত,গুম,খুন হচ্ছে। পুলিশের হাতে সাধারণ মানুষ আহত, নিহত,পঙ্গু ও গণগ্রেফতার  হচ্ছে। এরপরও কি বলবেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে ? তাই সাধারণ মানুষ মনে করেন, সরকারের উচিত গণতন্ত্রের বিষয়টা স্বীকার করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা ।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্ণ হয় ৫ জানুয়ারি। সেই তারিখে ২০ দলীয় জোট ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করার জন্য মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন । কিন্তু সরকার ২০ দলীয় জোটকে সমাবেশ করার অনুমতি দেন নি। উপরন্তু ৩ জানুয়ারি থেকে বেগম জিয়াকে গুলশান অফিসে অবরোধ করে রাখেন। নিরূপায় হয়ে বেগম জিয়া ৫ জানুয়ারি বিকাল ৫ ঘটিকায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন। শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ঢাকাসহ সারা দেশে গণহারে গণগ্রেফতার। টানা অবরোধ ও হরতালে সারা  দেশের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ অচল । পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার অবরোধ-হরতালকারীদের দমনে জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বিএনপি, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের,কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে গ্রেফতার করেছে। প্রতিজনের উপর কয়েকটি করে মামলা দেয়া হয়েছে। গত ২৬ মে ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। খালেদা জিয়াকে ঘ্রেফতারের পরোয়ানা জারি করায় সারা বিশ্ব হতবাক হয়েছে।
 দেশের  পরিস্থিতি কোনোক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে না। ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে । অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার ‘অবরোধ-হরতাল’ অর্থনৈতিক পঙ্গুর  অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষার জন্য সভা-সেমিনার কিংবা গণমাধ্যমে ‘অবরোধ-হরতাল’ প্রতিরোধ করার নিমিত্তে  বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৫ জানুয়ারি হরতাল-অবরোধসহ বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচিকে দেশের অর্থনীতির জন্য ‘নারকীয়’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন- ‘বর্তমান পরিস্থিতি যে দীর্ঘায়িত হবে, এটি আমরা বুঝতে পারিনি। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।’ পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক দাবি করেন ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। আগের তুলনায় যান চলাচল বেড়েছে। ঢাকার জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে’। খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঘোষণা করেন, ‘আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এরপর বিএনপি আন্দোলনের নামও নিতে পারবে না।’ আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘কথা দিলাম আগামী ৭ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। জনজীবনের স্বাভাবিক চলাফেরা নিশ্চিত করা হবে।’ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন- ‘এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। যেকোন মূল্যে মহাসড়ক সচল করা হবে।’ গত ২২ জানুয়ারি সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে মাগরিবের বিরতির পর পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘দেশের চলমান পরিস্থিতি আগামী সাত দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে’। ২৩ জানুয়ারি আ’লীগের উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশ স্বাভাবিক হয়ে যাবে’। ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে’।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্তারা, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও নেতারা বিভিন্ন বক্তৃতা, বিবৃতিতে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বার বার ব্যর্থ হচ্ছে।
দেশ অবরোধ-হরতাল মুক্ত নয়। ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ না ‘অস্বাভাবিক’ জানার জন্য আমরা একটু চিন্তা করি।  পরিস্থিতি অস্বাভাবিক বলে দফায় দফায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানো হচ্ছে, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ,রাজধানীর বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুক্র  ও শনিবার ক্লাস পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দাবি করা হচ্ছে ,পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবিতে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছেন, দগ্ধ মানুষের সংখ্যা বার্ন ইউনিটে ক্রমেই বাড়ছে, ক্রসফায়ারে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে , প্রায়ই মিছিল হচ্ছে উচ্চ আদালত চত্বরে, কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেড়েছে, ৫০ দিনে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে , নাশকতার মামলায় গৃহে বন্দী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন হুকুমের আসামী করা হচ্ছে, কেন গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশ্ব সম্প্রদায় কেন বাংলাদেশ নিয়ে সংলাপের আহ্বান করছে। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে বিভিন্ন অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করা হচ্ছে, নাশকতা ঠেকাতে র‌্যাব-পুলিশ-বিজিবির যৌথ অভিযান চলছে , নাশকতা ঠেকাতে গত ২২ জানুয়ারি সরকার মোটরসাইকেলে সঙ্গী বহন নিষিদ্ধ করেছে, জাতিসংঘের মহাসচিব দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন, সরকারের গোয়েন্দা শাখা বোমাবাজদের তালিকা করেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিকবাদীরা গুঁজামিল আর ডিজিটাল বাজি করলেও বিভিন্ন রাজনৈতি দল, মানবাধিকার সংগঠন, আন্তর্জাতিক মহলসহ সুশীল সমাজের সবাই স্বীকার করছেন যে, দেশে রাজনৈতিক অবস্থা চরম সঙ্কটময় অবস্থায় রয়েছে।  টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতি অবস্থা মারাত্মক ভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। এই পরিস্থিতি কারও জন্যই কাম্য নয়। এই দেশ আমাদের । যা রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করেছি।  ক্ষমতার স্বার্থে দেশের ক্ষতি করা মানে, আমাদের সবারই ক্ষতি করা। তাই সঠিক গণতন্ত্রের বিষয়টি সবাইকে ভাবতে হবে। গণতন্ত্র রক্ষা পেলে সব কিছু এমনিভাবে ঠিক হয়ে যাবে।  আমরা সবাই মিলে মিশে বুদ্ধি, চিন্তা ও চেতনার দিয়ে যদি একটা সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি,তাহলে সবার মাঝে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। এই কামনাই করি।
আসাদুজ্জামান আসাদ 

বুধবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রক্তের এই হোলি খেলার শেষ কোথায়!


দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে হাজারো মানুষের মতো আমিও বিস্মিত। অন্যায়কারীরা অন্যায় করে যদিও পার পেয়ে যায়। সে কারণে ইতিহাস পিছনে থাকে না। ইতিহাস তার আপন মহিমায় সত্যের উন্মোচন সর্বদা জাতির সামনে প্রকাশ করে দেয়। হরতাল আর অবরোধের ৪৮ দিনে সারা দেশে যে অমানবিক রক্তপাত ঘটেছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। রক্তের এই হোলি খেলার রাজনীতিতে দগ্ধ হচ্ছে নিরীহ মানুষ। পেট্রলবোমার নিষ্ঠুর আঘাতে পুড়ে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে মানুষের দেহ। বার্ন ইউনিটের বিভৎস মানুষের ছবি মিডিয়ায় প্রচারিত হলেও পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে যারা পঙ্গু হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তাদের সংবাদ মিডিয়ায় সেভাবে প্রচারিত হয়নি। কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ যেমন পেট্রলবোমার মতো জঘন্য অপরাধকে সমর্থন করতে পারে না। তেমনিভাবে গুম, খুন, অপহরণ, ক্রসফায়ায়ের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডেরও সমর্থন করা যায় না।
রক্তপাতের হোলি খেলার রাজনীতি আমরা কেউ চাই না। তার পরেও সারা দেশে আগুনের লেলিহান দাউ দাউ করে জ্বলছে দেশ। দেশের কোথাও আজ শান্তির লেশমাত্র নেই। সর্বত্র চলছে গুম, খুন, পেট্রলবোমা আর ক্রসফায়ারের মহাউৎসব। এই লেখাটি শুরু করছি ইংল্যান্ডের রাণী এলিজাবেথের স্মরণীয় একটি উক্তি দিয়ে - তিনি বলেছিলেন আমার প্রজাদের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা ভিন্ন আমার কাছে এই পৃথিবীর কোনো কিছুই মূল্যবান নয়। রাণী এলিজাবেথ আজ দুনিয়াতে নেই। কিন্তু তার এই সহানুভূতির আবেগ ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার চোখে স্মরণ করতেই হয়। অত্যাচারী জালেম নিষ্ঠুর শাসক হতে পড়াশোনা করা লাগে না একটু হিংসার পথ গ্রহণ করলেই হওয়া যায়। ইতিহাস সাক্ষী, রাজা বাদশারা যখনই ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে জনগণের উপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাতে ন্যায় অন্যায়ের ধার ধারেন নাই ঠিক তখনই প্রকৃতির তার আপন মহিমায় প্রতিশোধ নিয়ে জনগণকে মুক্তির পথের দিশা দিয়ে দেন। আর তখন জনগণও উপলব্ধি করে, দুঃসময় কারও জন্য চিরস্থায়ী হয় না।
চলমান হরতাল অবরোধের সহিংসতার হাত থেকে কারও মুক্তি নেই। জীবনের প্রয়োজনে চিন্তাহীনভাবে ঘর থেকে বের হয়ে আবার ঘরে ফিরে আসার গ্যারান্টি নেই বলেই চলে। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার ভেতরে পার করতে হচ্ছে এক একটি দিন। পেট্রলবোমা বা ককটেলের আঘাতে পুড়ে যাওয়া মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ আর আহজারিতে বাংলার আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে ওঠেছে। মানুষ পুড়ছে,বার্ন ইউনিটে আসছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের যন্ত্রণাকে ছোট করে দেখার সুযোগ যেমন নেই, তেমনিভাবে যারা ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন তাদের স্বজনদের সান্তনা দেবার ভাষা আমার জানা নেই। কত দেখা যায়? কত মেনে নেওয়া যায়? আর কতই বা লেখা যায়? নারকীয় এই পরিস্থিতির দায় যখন কেউ নিতে চায় না তখনই মনের মধ্যে একটি প্রশ্নই আসে- নিরপরাধ এই মানুষগুলোকে পুড়িয়ে কি গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়? সরকার প্রধান প্রায়ই বলেন আমি তো নির্বাচনের আগে তাদেরকে সংলাপের আহ্বান করেছি। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য আহ্বান করেছি। এমনকি বেগম জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতেও গিয়েছি। সবই সত্য কথা। তবে একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, প্রধানমন্ত্রী যা করেছেন তা সবই তার র্কতৃত্ববাদের খায়েশ পূরণ করার প্রয়াসে। সংলাপ হবে, তবে প্রধানমন্ত্রীর বেধে দেয়া সময়ে। নির্বাচন হবে,তবে প্রধানমন্ত্রীরই অধীনে।শোক জানাতে গিয়েছেন সত্যি তবে খালেদা জিয়ার দেয়া সময়ে নয় প্রধানমন্ত্রীর সময়ে। এর নাম যদি গণতন্ত্র হয় তাহলে স্বৈরতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য কি হতে পারে? সরকারের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, বিচার মানি তালগাছ আমার। খবরের কাগজের শিরোনামে দেখার কথা ছিলো সুখী সমৃদ্ধ দেশের উন্নয়নের কথা তার পরির্বতে শিরোনামে দেখতে হয়েছে গুম,খুন,ক্রসফায়ারে মতো নাটকীয় বন্ধুক যুদ্ধের কথা।
নদীমাতৃক এই দেশের নদীর পানিতে ভাসছে অজ্ঞাত মানুষের পঁচা বিভৎস লাশ। এই লাশের বেঁচে থাকা স্বজনেরা অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে দিনপাত করলেও কেউ বিচারের সান্ত¡নাটুকু দিতে পারছেন না। খুন করে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া আজ মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাক হওয়ার কিছুই নেই, আমরা যারা ছিচকে চোর, পকেটমার বা ছিনতাইকারীকে হাতে না হাতে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে উচিত শিক্ষা দিই,তাঁদের অনেকে ক্রসফায়ায়ের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকে সমর্থন করছেন। দেশব্যাপী ফের গুম আতংকের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে গণগ্রেফতার। আন্দোলন দমাতে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আবার কোথাও কোথাও চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান। নেতাদের না পেয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের স্বজনদের। সারা দেশের কারগারগুলো বন্দীদের ভিড়ে ঠাসা ঠাসি হয়ে গেলেও কমতি নেই গ্রেফতারের। এই অবরোধ হরতালকে ঘিরে ১৪ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিপর্যস্ত আজ দেশ। বিপন্ন হচ্ছে মানবাধিকার। মারা যাচ্ছে মানুষ। কেউ পেট্রলবোমায়,কেউ গুলিতে,কেউ বন্দুকযুদ্ধে। দেশের রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সারা দুনিয়া। সংলাপের তাগিদ দিচ্ছেন সবাই। কিন্তু আওয়ামী সরকার সে পথে হাঁটছেন না। চলমান পরিস্থিতিকে কোনো ভাবে তারা রাজনৈতিক সংকট মনে করছেন না। সরকারের মন্ত্রী এমপিদের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে একই সুরে কথা বলছেন প্রজাতন্ত্রের নিয়োজিত কর্মকর্তারা। রাজনীতিবিদেরা যে ভাষায় কথা বলেন ঠিক একই ভাষায় তারা কথা বলতে শিখেছেন। তাদের এই অতিকথনের ভাষাকে জনগণ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি।
টিভি পর্দায় শুধু একপক্ষের মুখই দেখা যাচ্ছে। তারাও নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিদের মতো করে একপেশে সব কিছু দেখছেন। দেশের হাজারো মানুষ আজ ভয়ে বাহিরে যেতে  পারছেন না। সেখানে সরকার এটাকে দেখছেন আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যা হিসেবে। দেশের কোথায়ও তারা কোন আন্দোলন দেখছেন না। কিন্তু ক্ষমতার সিড়িঁকে আজীবন আকড়ে ধরার প্রয়াসে বিরোধী শক্তিকে নির্মূল করার সকল আয়োজনের এজেন্ডা হাতে নিয়েছেন। বাংলাদেশে নির্মূলের রাজনীতি এমন প্রকাশ্যে অতীতে এ জাতি দেখেনি। সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রকাশ্যেই যুদ্ধ আর অস্ত্র প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর দেখামাত্র গুলি সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ বলেছেন,সমাজের কল্যাণ চিন্তাই যার লক্ষ্য হওয়া উচিত তিনি একি বললেন! বেফাঁস মন্তব্যের জন্য তিনি আগেই দেশবাসীর বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন। তিনি আরো একধাপ এগিয়ে এবার বললেন বেগম খালেদা জিয়াকে পেট্রল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া উচিত। সকলের মনে থাকার কথা জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদলের উক্তিটি। তিনিই প্রথম গুলি করার প্রসঙ্গটি সামনে আনেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বুকে গুলি চালানোর জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান। এর পর বিভিন্ন মহল থেকে চরম ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি-হুশিয়ারি একের পর এক আসতে থাকে।একদিকে হুংকার অন্যদিকে হরতাল অবরোধ। চারদিকে দাউ দাউ করে জলছে বাস ট্রাক সহ নানাবিধ যানবাহন। বাতাসে প্রবাহিত হচ্ছে পোড়া মানুষের গন্ধ। নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম। চলছে দমন পীড়নের অভিযান। ঘর থেকে বের হলে পেট্রোল বোমায় বা আগুনে দগ্ধ হওয়ার আতংক। ঘরে থাকলে গুম,গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারের আতংক। একটু স্বস্তি নিরাপত্তার প্রত্যাশায় ঠিকানা খুঁজছে সবাই। কিন্তু কোথাও যেন তাদের নেই ঠাঁই। আছে শুধূ ভয় ভীতি আর গুলির ঝনঝনানির বিকট শব্দ। রাজনীতির এই শাখের করাতে জিম্মি অসহায় সাধারণ মানুষ। এই ভয়াবহ আতংক ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে সবাই পরিত্রাণ চায়।
মিডিয়ার সংবাদে বিভংসতার ছবি দেখে কারও পক্ষে স্থির থাকা সম্ভব না। তারপরেও মিডিয়ার সংবাদের বেশির ভাগ সময়ই বার্ন ইউনিটের দগ্ধ মানুষের সংবাদ দেশের মানুষকে দেখতে হয়েছে। এই হরতাল অবরোধ কেউ পছন্দ করে না। তারপরেও রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হরতাল অবরোধকে। বার্ন ইউনিটের বিভৎসতার ছবি আমার মনকে যেমন কষ্ট দেয়,তেমনিভাবে বন্ধুকযুদ্ধের প্রতিটি ঘটনা আমাকে আসত করে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা একবারের জন্য একটু ভেবে দেখেনি ওই বার্ন ইউনিটের পেছনে কি কারণ রয়েছে? পেট্রলবোমার আঘাতে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া এই মানুষগুলো কি কারণে মৃত্যুর মুখোমুখি?
সব ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। রাষ্ট্রযন্ত্র ও দলীয় শক্তির বলে বিরোধী দল-মত দমনের চেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। জনগণের মধ্যে বিভেদ-সংঘাত সৃষ্টি করা পরিণতি দেশ ও জনগণের জন্য কখনোই কল্যাণকর হয় না। গত প্রায় এক মাসে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন প্রায় ২৭-৩০ জনের বেশী। প্রথম আলোর ১৭ তারিখের পত্রিকায় শিরোনামে ওঠে এসেছে গুলিবিদ্ধ ১৫ জনের মধ্যে ৯ জনই অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তাঁরা কেউ দিনমজুর,কেউ দোকানি,কেউ ভ্রাম্যমাণ খেলনা বিক্রেতা। একজন প্রবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও রয়েছেন। হাসপাতালের ভর্তির পর এঁদের তিনজনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। আহত ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনদের অভিযোগ,কোনো অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ তাঁদের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে। এই অপরাধ গুলো রাষ্ট্রের কেউ দেখেন না। আইনের পোষাকের জোরে যারা এই কাজগুলো করছেন তাদের বিবেকের কাছে একটি প্রশ্ন করতে খুবই ইচ্ছে করছে- বিনা কারণে যাদেরকে গুলি করছেন তারা তো আপনার আমার মতই মানুষ। আপনি কি পারতেন শত অপরাধ করলেও আপনার প্রিয় ভাইটিকে গুলি করতে? আমরা মনে করি দেশের প্রচলিত আইনে প্রত্যেকটি অপরাধীর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকার তা না করে উল্টোপথে পরিচালিত করছে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীকে। যে আওয়ামী সরকার ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ক্রসফায়ার বন্ধের কথা বলেছিল,আজ তারাই হয়েছে বন্ধুকযুদ্ধের প্রবর্তক। হত্যা আরও হত্যা ডেকে আনে এই সত্য কথাটি হয়ত তারা ভুলে যেতে পারে। কিন্তু দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা ভুলে যেতে পারি না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হচ্ছে, সত্যকে আমরা মিথ্যের চাঁদরে ঢেকে ফেলে দিয়েছি। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার সৎ সাহসটুকু হারিয়ে ফেলেছি। মিডিয়াকে বলা হয় জাতির আয়না। সে আয়নাতে যখন একপক্ষের ছবি ভেসে ওঠে আরেক পক্ষের ছবি লুকায়িত থাকে তখন আর সত্য উন্মোচিত হতে পারে না। সরকারপক্ষ শুধুমাত্র পেট্রলবোমার সহিংসতা দেখতে পান। কিন্তু যারা ক্রসফায়ার বা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে নির্বিকার। যারা পেট্রলবোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন তাদের ক্ষতি কোন কিছু দিয়ে পূরণ হবার নয়। অনুরূপভাবে যারা তথাকথিত বন্ধুক যুদ্ধে পুলিশের গুলিতে মারা যাচ্ছে তাদের ক্ষতিও কোনো দিন পূরণ হবার নয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে আলেকজান্ডার দি গ্রেটকে মানুষেরা ভুলে যেতে পারে কিন্তু তার সে সহানুভূতির ইতিহাস ভুলে যেতে পারে না। আলেকজান্ডার যখন ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারতবর্ষে প্রবেশ করলেন,সেই সময় ভারতবর্ষে ছিল অসংখ্য ছোট বড় রাষ্ট্র। কারোর সাথেই কারোর তেমন ভালো সম্পর্ক ছিল না। প্রত্যেকেই পরস্পরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হত। প্রতিবেশী সমস্ত রাজাই আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করে নিল। শুধুমাত্র একজন রাজা আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করতে অস্বীকার করলেন। তিনি হলেন রাজা পুরু। আলেকজান্ডার সরাসরি শত্রু সৈন্যদের মুখোমুখি হতে চাইলেন না। তিনি গোপনে অন্য পথ পাড়ি দিয়ে নদী পার হয়ে পুরুকে আক্রমণ করলেন। পুরু ও তাঁর সৈন্যবাহিনী অসাধারণ বীরত্ব প্রর্দশন করলেও আলেকজান্ডারের দক্ষ বাহিনীর কাছে পরাজয় বরণ করতে হল। অবশেষে আহত হয়ে বন্দী হলেন রাজা পুরু। তাঁকে নিয়ে আসা হল আলেকজান্ডারের কাছে। তিনি শৃঙ্খলিত পুরুকে জিজ্ঞাসিত করলেন। আপনি আমার কাছে কি রকম ব্যবহার আশা করেন? রাজা পুরু জবাব দিলেন। একজন রাজা অন্য রাজার সঙ্গে যে ব্যবহার করেন,আমিও সেই ব্যবহার আশা করছি। রাজা পুরুর বীরত্ব,তাঁর নির্ভীক উত্তর শুনে এতখানি মুগ্ধ হলেন আলেকজান্ডার অবশেষে মুক্তি দিয়ে শুধু তাঁর রাজ্যই ফিরিয়ে দিলেন না,বন্ধুত্ব স্থাপন করে আরো কিছু অঞ্চল উপহার দিলেন। আলেকজান্ডার আজ নেই কিন্তু তাঁর সহানুভূতির সেই ইতিহাস আজোও মানুষেরা স্মরণ করে। যারাই ক্ষমতার মসনদে থাকেন তাদের কাছ থেকে জনগণ সুন্দর বন্ধুত্বসুলভ আচরণ আশা করেন। যারা ভালোবাসা দিতে পারেন তারাই হলো প্রকৃত মানুষ। আমরা সরকারের কাছে হিংসার পরিবর্তে আলেকজান্ডারে সহানুভূতির মতো উদারতা প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি রক্তের এই হোলি খেলার নোংরা রাজনীতির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জোর দাবি করছি।
মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন 

মঙ্গলবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল


দেশে কোনো নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনের দাবিতে ৫৫ দিনের মতো অবরোধ চলছে। পাটুরিয়ায় কার্গোর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যাওয়ায় ৭০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। আর প্রতিদিন ক্রসফায়ারে মানুষ মরছে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একদিনেই ঢাকা ও ঝিনাইদহে ছয়জন মানুষ কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন। পেট্রলবোমায় প্রাণহানির ঘটনা যখন কমে এসেছে, তখন বাড়ছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণহানির সংখ্যা। সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, শিগগিরই ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার কথোপকথনের ঘটনা ফাঁস হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
বাংলাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র কাহিনী যখন থেকে প্রচারিত হয়েছে, তখন থেকেই শুরু হয়েছে অবিশ্বাস। বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা বলছে তা বিশ্বাস করছে না কেউ। কখনও কখনও তাদের বক্তব্য আজগুবি ঠেকছে। এবং এটা চলছে ধারাবাহিকভাবেই। সর্বশেষ ঢাকা ও ঝিনাইদহে যে ছয়জন তরুণ খুন হলেন তার কোনো দায়-দায়িত্বই যেন কেউ নিতে চাইছে না। পুলিশ বলছে ঢাকায় যে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে তাদের একজন মারা গেছেন ‘বন্দুকযুদ্ধে’। বাকি তিনজন ‘গণপিটুনি’তে নিহত হয়েছেন। যে তিনজন ‘গণপিটুনি’তে মারা গিয়েছে বলে পুলিশ দাবি করছে, তাদের দেহে পাওয়া গেছে ৫৪টি গুলির চিহ্ন। পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে গুলির চিহ্নের কথা উল্লেখ রয়েছে। এলাকায় গিয়ে সাংবাদিকরা খোঁজ নিয়ে দেখেছেন যে, সেখানে গণপিটুনির কোনো ঘটনাই ঘটেনি। রাত ১১টা-সাড়ে ১১টার দিকে আশপাশের বাসিন্দারা কেবল গুলির শব্দই শুনেছে। চিৎকার, দৌড়াদৌড়ি, হল্লার কোনো শব্দ তারা শোনেনি। ঘটনাস্থল এলাকায় পড়ে ছিলো গুলির খোসা, রক্তমাখা দড়ি আর ছোপ ছোপ রক্ত। এদিকে ঝিনাইদহে যে দুই তরুণের লাশ পাওয়া গেছে তাদের পরিবারের অভিযোগ, কয়েকদিন আগে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এই দুইজনই বিএনপি’র কর্মী ছিলেন। এভাবেই নির্বিচার হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো ঘটছে।
‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনাগুলো পুলিশের ভাষ্যমতে একই রকম। যাকে আটক করা হলো, তাকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল নির্দিষ্ট গন্তব্যে। পথিমধ্যে তার সহযোগীরা পুলিশের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে সবসময় পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তি নিহত হয়। পুলিশের গায়েও গুলি লাগে না। সহযোগীদের গুলির আঘাতে পুলিশের গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। আবার যারা এই হামলা চালায় তাদের কেউও কখনও পুলিশের গুলিতে হতাহত হয় না। শুধু পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তি নিহত হন। এর নামই ‘বন্দুকযুদ্ধ’। ফলে সাধারণভাবে কেউই এই কাহিনী বিশ্বাস করে না। কিন্তু কাহিনীর এই ধারাবিবরণী বহুদিন ধরে চলে আসছে।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কিংবা যারা কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম অপরাধের কোনো আলামত নেই। থানায় কেউ কোনোদিন তাদের নামে একটি জিডিও করেননি। নিরীহ মানুষ, দোকানদার, পথচারী, বাস হেলপার, কন্ডাক্টর এই শ্রেণীর লোকেরাও বন্দুকযুদ্ধের শিকার হচ্ছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মিরপুরে যারা বন্দুকযুদ্ধের শিকার হন তাদের দুইজনের একজন বাসের হেলপার। অপরজন লেগুনার হেলপার। হাঁটুর উপরে গুলি খেয়ে যারা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, পুলিশের এই গুলির কারণে যাদের পা কেটে ফেলতে হয়েছে, এবং চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদেরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই। কেউ দোকানদার, কেউ স্কুলছাত্র, কেউ বা ঝুট ব্যবসায়ী। পরিবারের তরফ থেকে দাবি করা হয় আটক করার পর পুলিশ তাদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছিলো। দিতে পারেনি বলে গুলি করা হয়েছে। তাতে কারো লাভ হয়নি। বরং পথে বসে গেছে এক একটি পরিবার।
এক্ষেত্রে পুলিশের আরও একটি প্রচলিত কথা আছে। আর তা হলো, নিহত ব্যক্তির নামে একাধিক মামলা ছিল। সেভাবে চিন্তা করলে মামলা থাকলেই যেন তাকে নির্বিচারে হত্যা করা জায়েজ। পুলিশের মামলারও কোনো আদি-অন্ত নেই। মামলার ধরন এ রকম যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখি কোনো একটি ঘটনায়, ধরা যাক, ককটেলবাজি, পুলিশের কাজে বাধাদান ইত্যাদি অভিযোগে দশজনের নামে মামলা করে আর ৫০০ অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম তাতে অন্তর্ভুক্ত করে দেয় পুলিশ। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তিদের নাম সেই হাজার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তির তালিকায় লিখে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু কারো নামে মামলা থাকলেই পুলিশ নিশ্চয়ই তাকে হত্যার অধিকার রাখে না। ‘ক্রসফায়ারে’র ক্ষেত্রে এমন অধিকার-অনধিকার বাছ-বিচার আমরা কমই দেখি।
অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে, পুলিশই যেন অভিযোগকারী, বিচারক এবং দন্ড কার্যকর করার অধিকারী। দেশের কোনো আইনে তাদের এমন অধিকার দেওয়া হয়নি। অথচ সে রকমই ঘটছে। পুলিশের তরফ থেকে আরও একটি কথা বলা হয়। আর তা হলো, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ব্যক্তি বিএনপি বা জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিল। এটা কী ধরনের অভিযোগ, সেটা বোঝা বেশ মুশকিলের কথা। ভাবখানা যেন এমন যে, বিএনপি বা জামায়াত-শিবিরের কর্মী হলে তাদের নির্বিচারে হত্যা করা যায়। এমন কি নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সংগঠনের নেতা কর্মীকেও নির্বিচারে হত্যা করা যায়। তাছাড়া বিএনপি বা জামায়াত নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। ফলে এসব হত্যাকান্ড স্রেফ হত্যাকান্ডই। অন্যসব হত্যাকান্ডের যেমন বিচার হয় বা হওয়া উচিত এ ধরনের হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। তা হলো আটকের পর অস্বীকার। বাংলাদেশের নাগরিকদের বিপদ হয়েছে এই যে, তাদের ধরতে আসার সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। যে কেউ যে কোনো সময় যে কোনো বেশে যে কাউকে আটক করতে আসতে পারে। আটক করতে আসে র‌্যাব। আটক করতে আসে ডিবি পুলিশ। আটক করতে আসে পোশাক পরা পুলিশ। এমনকি ইউনিফর্ম ছাড়া পুলিশও আসে আটক করতে। আর বিপদ হলো এই যে, আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা স্রেফ অস্বীকার করে বসে। আবার পরে কখনও তাদের আটকের কথা স্বীকার করে, কখনও করে না। যখন করে না, পরিবারে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় তখন। কখনও কখনও আটককৃতরা একেবারেই গুম হয়ে যান। কখনও কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যায় লাশ। কখনও পাওয়া যায় না। কখনও  শোনানো হয় ‘বন্দুকযুদ্ধে’র কাহিনী।
কার্যত বাংলাদেশ এভাবেই এখন একটি আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। এই লেখা যখন প্রকাশিত হবে তখন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার ভাগ্যে কী ঘটবে, তা আমাদের জানা নেই। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে তার কথোপকথনের গোয়েন্দা রেকর্ড প্রকাশিত হবার পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে তিনটায় বনানীর একটি বাসা থেকে তাকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে বলে মান্নার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ২৪ তারিখ বেলা দেড়টা পর্যন্ত পুলিশ সে কথা স্বীকার করেনি। এ সময় তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী বেগম সুলতানা মাহমুদুর রহমান মান্নার সন্ধান চেয়ে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এই পরিস্থিতিটাই বিপজ্জনক। কথোপকথনের ঐ রিপোর্টটি ২৩ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৩০টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়। সংসদে এমপিরা তাকে গ্রেফতারের দাবি জানাতে থাকেন।
সাধারণত নিয়ম হলো, কাউকে আটক করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। যখন পুলিশের তরফ থেকে অস্বীকার করা হয় যে, তাকে গ্রেফতারই করা হয়নি তখন স্বজনদের মধ্যে ভয় বাড়তে থাকে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি গুম হয়ে যায়, তবে কাউকে তার গুমের দায়িত্ব নিতে হয় না। পুলিশও হাত ঝেড়ে বলে দিতে পারে, আমরা তাকে আটকই করিনি। তার খবরও জানি না। যদিও কোনো মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করাও পুলিশেরই দায়িত্ব। কিন্তু সে দায়িত্ব পালন না করার নানা অজুহাত পুলিশকে দিতে শুনেছি। পুলিশের কর্তা ব্যক্তিরা অনেক সময় এমনও বলেছেন যে, তার নামে মামলা রয়েছে। ফলে সে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছে। ব্যস, দায়িত্ব শেষ।
এর আগে বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নেতা ইলিয়াস আলী এইভাবে গুম হয়ে যান। এখনও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। সে সময় অনুসন্ধানে যা তথ্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল, তাতে দেখা যায়, একটি বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাকে তার বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় বাধা দিতে গিয়েছিলেন  মোটরসাইকেল আরোহী এক টহল পুলিশ। তাকে ঐ বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে সরিয়ে দেন। কিন্তু কোনো বাহিনীই স্বীকার করেনি যে, ইলিয়াস আলীকে তারা আটক করেছে। আর আজ পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর কোনো সন্ধানও পাওয়া যায়নি। এভাবে গুম হয়ে গেছে বহু মানুষ।
মাহমুদুর রহমান মান্নার তাহলে কী হলো? পরিবার বলছে, ডিবি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশ বলছে, তারা তাকে আটক করেনি। এ এক বিপজ্জনক অবস্থা। সেক্ষেত্রে কাউকে যদি ডিবি পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে আটক করতে যায়, তাহলে ঐ পরিবারের সদস্যদের করণীয় কী? তারা কি তাদের অফিসিয়াল প্যাডে লিখিত চাইবেন যে, আটক যে করে নিয়ে যাচ্ছেন, তার রিসিট দেন। তখন যে তারা পরিবারের সদস্যদেরও বেধড়ক পিটুনি দিতে থাকবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এবং এর কোনো বিচারও নেই। এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে না পেয়ে তার পরিবারের নারী সদস্যদের উপরও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অহরহ মিথ্যাচারও চলছে।
আমরা বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকা-ই মেনে নিতে রাজি নই। এসব হত্যাকা-েরও বিচার হওয়া উচিত। একই সঙ্গে খানিকটা আতঙ্কিতও বোধ করছি, মাহমুদুর রহমান মান্নার জন্য। আমরা আশা করি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সরকার অবিলম্বে আদালতে হাজির করবে। তার যদি কোনো দোষ হয়ে থাকে, তার বিচার আদালত করবে, পুলিশ নয়।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 

সোমবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সকল হত্যা-গুমের বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া দরকার


বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা, জুলুম-নির্যাতন ও গ্রেফতার-হয়রানির বিরুদ্ধে সাংবিধানিক গ্যারান্টি প্রদান এবং জীবন-সম্মান, সম্পত্তি ও সন্তানের নিরাপত্তা বিধানের যে পবিত্র দায়িত্ব পালনের ভার আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর অর্পিত ছিল এবং এখনো আছে তা পালনে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। পক্ষান্তরে অনেকে মনে করছেন যে, এই সরকারের আমলে পরিকল্পিতভাবে তাদের আসল দায়িত্ব পালন করতে না দিয়ে দলীয় স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তারা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বাহনে পরিণত হচ্ছেন। তারা যে, নিরপেক্ষ, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রতিভু এ কথাটি অনেকে ভুলে যাচ্ছেন। সরকার কর্তৃক অনৈতিক ও বিধিবহির্ভূত কাজে তাদের ব্যবহার এবং অতিমাত্রায় দলীয়করণ অপরাধীদের উৎসাহিতকরণ প্রভৃতি এই বাহিনীর বেশ কিছু সদস্যকে বেপরোয়া করে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ অনুযায়ী এরা ভাড়ায় খেটে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের খুন করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। তারা সরাসরি গুলী করে মানুষ হত্যা করছে, গুমে অংশ নিচ্ছে এবং নাটক সাজিয়ে বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারের নামে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও তাদের ছাত্রফ্রন্টের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিদের খুন করছে। তাদের অনেকে দেশের নব্বই ভাগ নাগরিকের ধর্ম ইসলাম নির্মূলের প্রকাশ্য অভিযানে নেমেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
(দুই)
রাজনৈতিক অঙ্গনে গত কয়েক বছরে প্রতিদ্বন্দ্বী নির্মূলে দলন-পীড়নের পাশাপাশি সব চেয়ে ভয়াবহ যে প্রবণতাটি দেখা গেছে তা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিকদের পাশাপাশি তাদের সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজনের উপর নির্যাতন। তাদের গ্রেফতার, রিমান্ড ও বিকলাঙ্গ করার নির্মম প্রবণতা। প্রতিটি সভ্য দেশে আইন-আদালত আছে। অপরাধীদের অপরাধ প্রমাণ হলে তাদের শাস্তি দেয়ার বিধান আছে। কিন্তু আদালতের বিচারের সুযোগ না দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করে হত্যা অথবা হাত-পা, মেরুদন্ড গুঁড়িয়ে বিকলাঙ্গ করে দেয়া সভ্য ও গণতান্ত্রিক সমাজে কল্পনা করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত: আমাদের সমাজে এ বিষয়টি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
(তিন)
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক-এগারোর সরকারের আমলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দু’ছেলে আরাফাত রহমান ও তারেক রহমানের উপর রিমান্ডে বর্বরোচিত নির্যাতন একটি কলঙ্কিত ঘটনা। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন সরকার, ব্যবস্থা তো নেয়া দূরের কথা বরং নিপীড়নের খড়গ আরো শাণিত করেছেন। এ জিঘাংসার দ্বিতীয় শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন বাংলাদেশ জামায়াত নেতৃবৃন্দের সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা যখন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বী নেতৃবৃন্দকে (তাদের ভাষায় দুষ্কৃতিকারী) নির্বংশ করার ঘোষণা দেন তখন মনে হয় না যে, আমরা সভ্য জগতে বসবাস করছি। কে অপরাধী এবং কে অপরাধী নয়- তা নির্ধারণের দায়িত্ব আদালতের। আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক শাস্তি প্রদান আদালত ও আইনের শাসনকে উপেক্ষা করার সামিল।
গত সপ্তাহে ঢাকা মহানগরী জামায়াতের আমীর এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য জনাব রফিকুল ইসলাম খানের ছেলেকে পুলিশের গ্রেফতার নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষার্থী, পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হবার পর বিনা ওয়ারেন্টে তাকে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন ব্যক্তি জবরদস্তি মাইক্রোবাসে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তার খোঁজ না পেয়ে তার মা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন পেরেশান হয়ে পড়েন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার গ্রেফতারের বিষয়টি অস্বীকার করে। বহু খোঁজাখুঁজি করে শেষ পর্যন্ত ডিবি অফিসে তার সন্ধান মেলে। সম্ভবত: পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে তার অবস্থানের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাকে আদালতে চালান দেয়া হয় এবং পুলিশ তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দিয়ে তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এসএসসি পরীক্ষার্থী একটি ছেলে কার্যত: একটি শিশু। হাস্যকর হচ্ছে, ফেসবুকে সরকার বিরোধী স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটি শিশুর ফেসবুক স্ট্যাটাস যে সরকার সহ্য করতে পারেন না তার আদৌ গণভিত্তি আছে কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। সরকার এবং জাতি উভয়ের জন্য এ বিষয়টিকে আমি লজ্জাজনক বলে মনে করি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই শিশুটিকে গ্রেফতারেরও আর সময় পেলেন না। পরীক্ষার মধ্যে গ্রেফতার করে তার ক্যারিয়ারটি ধ্বংস করার ব্যবস্থা করলেন। আদালতও পুলিশের চাহিদা অনুযায়ী একটি শিশুকে রিমান্ডে দিলেন। এই লজ্জা রাখার জায়গা আছে বলে আমি মনে করি না। সংগঠন হিসেবে জামায়াত এবং তার নেতাদের সাথে ক্ষমতাসীনদের গরমিল থাকাটা স্বাভাবিক। ব্যবধান আদর্শিক। সরকার আদর্শ দিয়ে আদর্শের মোকাবিলা না করে এবং তাদের বশে আনতে না পেরে ‘যুদ্ধাপরাধ’ ও অন্যান্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নির্মূল করতে চাচ্ছেন। সরকার প্রণীত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় রফিকুল ইসলাম খানের নামও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭১ সালে তার পিতা সিরাজগঞ্জের একজন স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জামায়াত করার অপরাধে যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেলেন। অথচ ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল মাত্র ৩/৪ বছর। মুক্তিযোদ্ধা পিতা স্বাধীনতার জন্য রণাঙ্গনে লড়াই করেছেন আর তার ৩/৪ বছর বয়সী শিশুপুত্র পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসর সেজে যুদ্ধাপরাধ করেছেন, কি মজা! এ ধরনের মজার তথ্য একমাত্র আওয়ামী লীগই দিতে পারে। ছিঃ ছিঃ করবো, না হাসবো- বুঝে উঠতে পারছি না। তার ছেলে শিশু আব্দুল্লাহকে আমি বাহবা দেই। কেননা তার ভয়ে প্রবল প্রতাপশালী সরকার থর থর করে কাঁপে।
(চার)
আমি বাংলাদেশে হত্যা-গুম এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে কথা বলছিলাম। গত ছয় বছরে মানবাধিকার সংস্থাগুলো পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী ১১ সহস্রাধিক ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। গুমের শিকার হয়েছেন আরো সমসংখ্যক হতভাগ্য ব্যক্তি। তাদের স্বজনরা জানেন না তাদের অপরাধ কি এবং কোথায় আছে। হাল আমলে এমন কোনও দিন নেই যেদিন কেউ না কেউ হত্যা-গুমের শিকার হচ্ছে না। এর হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই স্তম্ভে ইতঃপূর্বে আমি বলেছিলাম যে, ভারতবর্ষসহ আমাদের এই অঞ্চলে এক সময় নরবলি প্রথা চালু ছিল। বিভিন্ন কাজ ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে নরবলি দেয়া হতো। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখনও কিছু লোকের মধ্যে এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, বড় বড় পুল ও বৃহৎ নির্মাণ কাজকে টেকসই করার জন্য নরবলি দেয়া অপরিহার্য। ঐ সময়ে ছেলেধরাদের উৎপাত ছিল লক্ষ্যণীয়। পল্লী এলাকায় ছেলেধরারা ছোট ছোট ছেলেদের ফুসলিয়ে কিংবা জবরদস্তি অপহরণ করে ঠিকাদাররা নির্মাণ স্থাপনা বা ব্রিজের ফাউন্ডেশনের তলায় তাদের বলি দিতো। এতে নাকি দেবতারা তুষ্ট হতেন এবং এর ফলে ঐ স্থাপনা টেকসই ও মজবুত হতো। এই নির্মম কাজে গ্রাম এলাকার বহু শিশু ঠিকাদারদের বলির শিকার হয়েছিল এবং অনেকের পিতামাতা এবং আত্মীয়-স্বজন পাগলও হয়ে গিয়েছিলেন। কালপরিক্রমায় এই কুসংস্কারটি বাংলাদেশ থেকে দূরীভূত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখন ছেলেধরা ও অপহরণকারীদের একটি অংশ বিদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে ছেলে-মেয়েদের অপহরণ করে এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এই অপহরণকারীদের খপ্পর থেকে আমাদের সরকার প্রধানের বাবুর্চির মেয়েও রক্ষা পায়নি। দু’বছর আগে তাকে মুম্বাইয়ের নিষিদ্ধ পল্লীতে পাওয়া গিয়েছে। তবে ছেলে ও মেয়ে শিশু অপহরণ ছাড়াও এখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ও পদ ব্যবহার করে একশ্রেণীর অপহরণকারীর দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে মনে হয়। এরা রাজনীতিবিদদের অপহরণ করে গুম করে দিচ্ছে। অপহৃত এসব ব্যক্তিকে এখন ব্রিজ বা বড় ধরনের স্থাপনা নির্মাণের বেদিতে বলি দেয়া হচ্ছে না। তাদের বলি দেয়া হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের ক্ষমতায় টিকে থাকার দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের বেদিমূলে। ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভার, সিলেটের ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডজন খানেক শিবির নেতাসহ গত ছয় বছরে অপহৃত শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মী এই ক্ষমতা প্রকল্পের বলি হয়েছেন কিনা আমি জানি না। তবে ঘটনা পরম্পরায় মনে হচ্ছে যে, তাদের বলি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আরেকটি কথা, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট হত্যা-গুমকে ইস্যু করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মুক্তির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন শুরু করেছে তাকে ভ-ুল করার জন্য সরকার বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে যে মামলা দিয়েছিল তা তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে একই ধরনের ঘটনায় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলসহ সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগরী দফতর পুলিশ কর্তৃক অঘোষিতভাবে বন্ধ করে দেয়া এবং অন্য নেতা-কর্মীদের পাইকারীহারে গ্রেফতার করায় যারা উল্লসিত হয়েছিলেন কিংবা চুপ ছিলেন তাদের অনেকেই এখন সরকারের আসল উদ্দেশ্য উপলব্ধির চেষ্টা করছেন বলে মনে হয়। আমাদের সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, গ্রেফতারকৃত কোনও ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শের এবং তার আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এতে আরো বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটতম ম্যাজিস্টেটের সম্মুখে হাজির করা হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাকে তদতিরিক্তকাল প্রহরায় আটক রাখা যাবে না। আমাদের সরকার তার পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংবিধানের এই অনুচ্ছেদটি মানছেন না। একইভাবে তারা মানছেন না এ ব্যাপারে প্রদত্ত দেশের উচ্চ আদালতের দিক-নির্দেশনাও।
(পাঁচ)
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আদালতের বিকল্প হোক কিংবা তাদেরকে কেউ এ কাজে ব্যবহার করুক দেশবাসীর তা কাম্য নয়। হত্যা-গুম, গ্রেফতার, ডিটেনশান ও রিমান্ডের নামে রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনের উপর নির্যাতন অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদ নাগরিকদের গ্রেফতার এবং ডিটেনশনের ব্যাপারে সুরক্ষা প্রদান করেছে। ৩৫ (৪) ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ তাদের বিচার ও শাস্তির বৈধ প্রক্রিয়া ও ইনসাফের নিরাপত্তা প্রদান করেছে। একইভাবে সংবিধানের ৩৬ ও ৩৭ নং অনুচ্ছেদ মানুষকে চলাফেরা ও সমাবেশ করার অধিকার প্রদান করেছে। দেশে জরুরি অবস্থা নেই এবং সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ পরিপূর্ণভাবে বহাল রয়েছে। জামায়াত, শিবির অথবা বিএনপি কিংবা ছাত্রদলসহ তাদের কোনও অঙ্গ সংগঠন নিষিদ্ধ কোনও সংগঠন নয়। এই অবস্থায় তারা সভা-সামবেশ করলে তা গোপন বৈঠক ও নাশকতার ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত হবে কেন তার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দরকার। পাশাপাশি অবিলম্বে নাগরিক অধিকার পুনঃস্থাপন করাও জরুরি বলে আমি মনে করি। সকল বিচার-বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও গুমের বিচার-বিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
তা যদি না করা হয়, তাহলে জাতিসংঘের কোনো সংস্থা এ তদন্ত করতে পারে। ইতোমধ্যেই ২০ দলের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করা হয়েছে।
ড. মোঃ নূরুল আমিন 

রবিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়া


অর্ধশত দিন অতিক্রমকারী বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া একটি স্পষ্ট রূপলাভ করেছে। শাসক দল ছাড়া সবাই সংলাপ-সমঝোতার কথা জানিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বি, চৌধুরী, বর্ষীয়ান নেতা ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বিকল্প রাজনীতির কান্ডারী মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ প্রায় সব দল ও নেতা ভাষণে, বক্তব্যে, বিবৃতিতে, অবস্থান কর্মসূচিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় সংলাপ ও সমঝোতার দাবি করেছেন। বিভিন্ন পেশাজীবী ও খাতভিত্তিক সংগঠন; যেমন- শিক্ষক, পোশাক মালিক ইত্যাদি সেক্টর থেকেও চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অমনোযোগী ও নির্লিপ্ত থাকার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনঅংশগ্রহণমূলক ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান-সূত্র উপস্থাপন করেছেন। দেশের মতো বিদেশের বিভিন্ন দাতা সংস্থা, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের সুস্পষ্ট মতামতও সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সঙ্কট নিরসনের পক্ষেই ব্যক্ত হয়েছে। মোট কথা, বিগত সময়ের একদলীয় ও ভোটবিহীন একতরফা নির্বাচনের গর্ভেই যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের বীজ রোপিত হয়েছিল, সেটাই সবাই স্বীকার করেছেন এবং গণতান্ত্রিক-সুস্থ ব্যবস্থায় উত্তরণের তাগিদ দিয়েছেন।
আন্দোলনরত বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী পক্ষ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্থর থেকে উত্থাপিত সংলাপ-সমঝোতার আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু আরেক পক্ষ তথা সরকার এখনো এ ব্যাপারে নেতিবাচক অবস্থানে আছে এবং সংলাপ বা সমঝোতা না করার ব্যাপারে অনঢ়। এমনকি আন্দোলনের নেত্রীর বেগম খালেদা জিয়াকে প্রায় বন্দিদশার মধ্যে ঘেরাও করে রাখা বা খাদ্য সরবরাহে বিঘ্ন সৃষ্টির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। জেলখানাগুলো উপচে পড়ছে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- প্রতিনিয়ত চলছে।
এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চুপ নেই। মানবাধিকার নেত্রী আইরিন খান, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ভাষ্য-বক্তব্য প্রতিদিনই শোনা যাচ্ছে এবং তাদের বক্তব্য যে এখন খুব একটা নরম অবস্থায় নেই, সেটাও অনুধাবণ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ফোনালাপ এবং চিঠির বিষয়ও মিডিয়ায় এসেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতির ভাষা যারা বোঝেন, তারা ঠিকই কথার মর্ম বুঝতে পারছেন। যদিও সরকারের পক্ষে কথা ও কাজে তাদের স্বভাবসিদ্ধ-উগ্রতা চলছেই। কিন্তু একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, পথ-ঘাট-মাঠ পর্যায়ের হুঙ্কার বা আক্রমণাত্মক বক্তব্য সরকার চালানো বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ম্যানেজ করার উপায় নয়। বশংবদ ও চাটুকারদের মধ্যে যারা গরম-গরম কথায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের মাথা গরম করে দিচ্ছেন বা কঠিন বাস্তব পরিস্থিতিকে আড়াল করার নামে শূন্যগর্ভ বাক্য-বাণিজ্য করে নিজের আখের গোছাচ্ছেন এবং সরকারের বারোটা বাজাচ্ছেন, তারা আসলে বিপদই ডেকে আনছেন। ঘরে ও বাইরের এমন বিপদ-সঙ্কুল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাথা-মোটা বুদ্ধি আর উগ্রচন্ডী কথায় সামলানো যাবে না। সংলাপ, সমঝোতা, বিচক্ষণতা, সুবিবেচনা আর উদারতার মাধ্যমেই উত্তরণ ঘটাতে হবে। এটাই সঙ্কট বিমোচনের পরীক্ষিত পথ।
এই সুযোগে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও কিছু কথা পরিষ্কারভাবে আলোচনা করা দরকার। চলমান একবিংশ শতাব্দীতে যে বিশ্বায়ন ব্যবস্থা চলছে, তাতে পৃথিবীর প্রতিটি দেশই একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিটি দেশই পরস্পরের খবর রাখে। বিশেষত জঙ্গিবাদের উত্থান হলে, গণতন্ত্র ও সুশাসন ব্যহত হলে, মানবাধিকার ও আইনের শাসন লঙ্ঘিত হলে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নামে বিশ্ব সম্প্রদায় সরব হয়। তারা তখন নানা রকম ভূমিকাও পালন করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রকাশ্যে বা গোপনে, সরাসরি বা পরোক্ষে কি ভূমিকা পালন করছে, সেটা সবাই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। অতএব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করার পরিণাম সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। যারা সর্বাবস্থার একগুঁয়েমিকে হাতিয়ার করে দনিয়ার সবাইকে আন্ডারমাইন্ড করছেন, তারা শুধু নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছেন না, সবাইকেই বিপদে ফেলছেন। এমন অপরিণামদর্শিতার ফল ভালো হয় না।
প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ করা দরকার যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে খুশি রাখার জন্য সর্বত্রই এখন একটি কুপ্রবণতা চলছে। সেটা হলো জঙ্গিবাদের জুজুর ভয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলন আর জঙ্গিবাদ যে এক নয়, সেটা পরখ করার মতো মেধা, বুদ্ধি, শিক্ষা, যোগ্যতা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের রয়েছে। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ইত্যাদি বলে বলে চিৎকার করলেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খুশিতে পেয়ার-মহব্বত করতে আরম্ভ করবে, বিষয়টি এমন নয়। কারণ গণতান্ত্রিক-মডারেট রাজনৈতিক শক্তিই বিশ্ববাসীর পছন্দ। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ যেমন নয়, অজনপ্রিয়-অগ্রহণযোগ্য-অনির্বাচিত একনায়করাও নয়। বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনের গণতান্ত্রিক রূপ-চরিত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রকাশিত বিষয়। ফ্রি-ফেয়ার-ইনক্লুসিভ-পারটিসিপেটরি ইলেকশান, রুল অব ল’ এবং হিউম্যান রাইটসের কথাই গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলছে। যে বক্তব্য বিশ্বব্যাপী সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানবিক মানুষেরই বক্তব্য। এখানে জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ খুঁজে বেড়ানো মূর্খতা। এমন অপচেষ্টা বারংবার করা হলেও সেটা ভন্ডুল হয়েছে আটক নাশকতাকারীদের প্রকাশিত পরিচয়ে। অতএব দিনে দিনে দুধ আর পানি পৃথক হচ্ছে।
নিজের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, অগ্রহণযোগ্য আচরণ ও চেহারাকে আড়ালের জন্য যারা ভিন্ন বা অন্য কথা বলে কিংবা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের ভীতি ছড়ায় অথবা নিজেরাই নিজেদের লোক দিয়ে এমন সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়, তাদের বোধোদয়ের জন্য গান্ধী আর পোপের কথাগুলো খুবই শিক্ষণীয় হবে। মহাত্মা গান্ধীকে তার জ্যেষ্ঠপুত্র হরিলাল একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন, ১৯০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন গান্ধীকে বীভৎসরকম প্রহার করা হয়, গান্ধী-পুত্র হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলে তার কী করণীয় ছিল? (১) শারীরিক বলপ্রয়োগ দ্বারা পিতাকে রক্ষা করা; নাকি (২) পিতাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে পালিয়ে যাওয়া? অহিংসাবাদী গান্ধীর উত্তর ছিল, “অবশ্যই রক্ষা করা। বলপ্রয়োগ করে হলেও।” অতএব অহিংসা আর আত্মঅধিকার রক্ষার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আর আত্মরক্ষা এবং জঙ্গিবাদ/মৌলবাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। এ প্রসঙ্গে বিশ্বখ্রিস্ট সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা পোপ ফ্রান্সিস এর উক্তিও স্মরণ করায় গান্ধীর কথা। পোপ বলেছেন, “কেউ যদি তার মাকে/বাবাকে কটূকথা বলে/আঘাত করে, তিনি তাকে ছাড়বেন না, চপেটাঘাত করবেন।” মনে হতে পারে, পোপ কি তবে হিংসাত্মক পন্থার পক্ষে কথা বলছেন? চরম সঙ্কটে গান্ধীও কি হিংসার পথ বেছে নিতে বলেছিলেন পুত্রকে? না, তা কিন্তু নয়। গণতান্ত্রিক জনশক্তিকে এগুতে হবে পরিস্থিতি বুঝে, প্রয়োজনীয় সংযম অবলম্বন করেই। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে যে, কেউ এমনি এমনি হিংসাত্মক হয় না। হিংসাত্মক পথ যে বেছে নিচ্ছে, বুঝতে হবে, তাকে কতটা অসহায় করে তোলা হয়েছিল। কতটা অনন্যোপায় সে ছিল, সেটাও তখন সামনে চলে আসে। বিবেক তখন একটি প্রশ্নে জর্জরিত হয়, ‘আঘাতের পর প্রত্যাঘাত হলে, সে দায় কার?’ বিজ্ঞান ও যুক্তি বলছে, আঘাত-প্রত্যাঘাত খুব সরল কয়েকটি নিয়মে চলে। উভয়ের মধ্যে রয়েছে ক্রিয়া আর প্রতিক্রিয়ার নিবিড় সম্পর্ক। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্র আসলে আর কিছু নয়; আঘাত ও প্রত্যাঘাতের বৈজ্ঞানিক বর্ণনা।
এই আঘাত আর প্রত্যাঘাতের বিষয়টিকে ভুলভাবে চিত্রিত করলে এবং বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হলে প্রকৃত সত্য লোপ পেয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হবে, সেটা কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনে না। যেখানে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ নেই, সেখানে ভুলভাবে জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ যারা দেখাতে চান, তারা শান্তির পক্ষের লোক নয়। তাদের মতলবও ভালো নয়। কেউ যদি নিজের অপকর্ম ঢাকতে বা নিজেকে বাঁচাতে মিথ্যা, চাতুরী, প্রবঞ্চনা, শক্তি ও ষড়যন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করে, তবে সেটা বুমেরাং হয়ে তাদের ওপরই নেমে আসে। মিথ্যার আবেশ কেটে সত্য প্রকাশিত হলে গিলোটিনের সামনে পড়তে হয়। এটাই নিয়তি। ভুলর্বাতা বা ভুলচিত্র তুলে ধরার কুফল পৃথিবীর ইতিহাসে কম নেই। অতীতে ফরাসি রাজাদের ক্ষেত্রেও এমনই ঘটেছিল। সাম্প্রতিক-অতীতে আরব বিশ্বে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ বাড়ছে, একদল লোক এমন মিথ্যা-তথ্য প্রচার করে করে মিথ্যাকেই সত্যে পরিণত করেছিল। আসল ঘটনা হলো, আরব কেন, ভারত বা ইসরাইলেও ক্ষুদ্র একটি মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী গ্রুপ আছে, যারা হিন্দু ধর্ম বা ইহুদি ধর্মকে সহিংসভাবে ব্যবহার করে। ইসলাম ধর্মকেও এমনভাবে অপব্যাখ্যা বা অপব্যবহারের লোকের অভাব নেই। কিন্তু এরা কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় এবং এরা গণতান্ত্রিক পন্থা মেনে প্রকাশ্য রাজনীতিও করে না। এখন প্রতিষ্ঠিত, নিয়মতান্ত্রিক, প্রকাশ্য রাজনৈতিক শক্তিকেও জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ বানিয়ে দিলে গুপ্ত সন্ত্রাসীরা আস্কারা পাবে। এবং আরবে যেমন হয়েছিল, জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ আছে, এমন প্রচারের সূত্র ধরে সম্মিলিত পশ্চিমা বাহিনী আক্রমণ চালালো। জঙ্গিদের বিশেষ কিছু না হলেও, যারা পশ্চিমের দয়া কুড়ানোর জন্য জঙ্গিবাদের জিগির তুলেছিল, তাদের মাথাকাটা গেল। জঙ্গিবাদের ভুল-তথ্য প্রচার করে স্বৈরাচারী-একনায়করা বাঁচতে পারেনি। আরব ও আফ্রিকার সাম্প্রতিক তথ্য সে কথাই বলছে। রূপকথা বা রাজনীতি, যেখানেই হোক, ‘বাঘ এলো, বাঘ এলো’ বলে চেঁচানো মিথ্যাবাদী রাখালদের শেষ পরিণতি ভালো হয় না।

শনিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সংলাপ করার জন্য বান কি মুন এবং জন কেরি বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছেন


সরকারি মহল থেকে সুকৌশলে কিন্তু জোরদার প্রচারণা চালানো হচ্ছিল যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় বিরোধী জোটের ৪৬ দিনব্যাপী অবরোধ এবং হরতাল  ব্যর্থ হয়েছে। তাদের প্রচারণা এই যে এই আন্দোলনে দেশবাসী কর্ণপাত করেনি, আর বিদেশীরাও সেটি গায়ে মাখেনি। শীঘ্রই এই আন্দোলন ভেঙ্গে পড়বে এবং আন্দোলনের স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে। দেশে এবং বিদেশে এই অবরোধ এবং হরতালের আন্দোলনকে ধিকৃত এবং নিন্দিত করার জন্য আওয়ামী ঘরানা একটি কৌশলী প্রচারণার আশ্রয় নিয়েছে। তারা প্রচার করছে যে এটি কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়। এটি স্রেফ সন্ত্রাসী তৎপরতা। যেহেতু এখানে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নাই তাই এটিকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্র শক্তি অর্থাৎ পুলিশ র‌্যাব এবং বিডিআর দিয়ে দমন করতে হবে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলেন যে ইন্ডিয়া এবং আমেরিকা পুলিশ দিয়ে তাদের সন্ত্রাসী আন্দোলন যেমন  গুলী করে স্তব্ধ করেছে তেমনি আওয়ামী সরকারকেও সরাসরি গুলী করে ঐসব তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ দেশে এবং বহির্বিশ্বে  শুধু মাত্র পেট্রোল বোমা হামলা প্রচার করেছে এবং  এই হামলার ফলে যেসব লোক নিহত হয়েছে শুধু মাত্র তাদের কথাই হাইলাইট করেছে। কিন্তু তারা বিদেশীদের কাছে এই বিষয়টি বেমালুম চেপে গেছে যে চিত্রের আরেকটি পিঠ আছে।ঐ পিঠ আওয়ামী ঘরানা বেমালুম চেপে যাচ্ছে। চিত্রের সেই পিঠটি নিম্নরূপ :
গত শুক্রবার ২০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ‘প্রথম আলোতে’ সাম্প্রতিক আন্দোলন ও সহিংসতার একটি খতিয়ান দেওয়া হয়েছে। ঐ খতিয়ানে দেখা যায় যে অবরোধের ৪৬ দিনে মোট নিহতের সংখ্যা ১২১। এদের মধ্যে পেট্রোল বোমা এবং অগ্নিসংযোগে নিহত হয়েছে ৫৫জন। অবশিষ্ট ৬৬ জনের মধ্যে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ২৩ জন।প্রথম আলোর রিপোর্ট মোতাবেক সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ১৫ জন এবং অন্যান্য ২৮ জন। এই ‘সংঘর্ষ’ এবং ‘অন্যান্যের’ বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়নি। পুলিশের গুলীবর্ষণ, ট্রাক থেকে ফেলে দেওয়া, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ইত্যাদি  উল্লেখ করা হয়নি। যাই হোক, দেখা যাচ্ছে যে পেট্রোল বোমায় যত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন (৫৫) তার চেয়ে ক্রস ফায়ার সহ অন্যান্য সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১১জন বেশী(৬৬)। এই ৬৬ টি প্রাণের কোন মূল্য নাই আওয়ামী ওয়ালাদের কাছে। তাই তারা এই ৬৬ জনকে ব্ল্যাক আউট করেছে।
॥দুই॥
কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঠিকই এই বিপুল সংখ্যক মানুষের অসহায় মৃত্যুকে বিবেচনায় নিয়েছে।তাই গত বৃহস্পতিবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের এক প্রতিনিধি দল এ সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়,  
ঢাকা সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর পর যৌথ সংশোধনী বিবৃতি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সফররত সদস্যরা একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলতে চায় যে, ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল মানবাধিকার। বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকারসহ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্ট দলের সদস্যরা।
গত বুধবারের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয়।
কিন্তু বৃহস্পতিবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউ পার্লামেন্ট প্রধিনিধি দলের নেতা দান প্রেদা সাংবাদিকদের ‘ডেইলি স্টারের’ নাম উল্লেখ করে বলেন, আমি দেখেছি প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ইইউ মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয়। আমার বক্তব্য খুব সহজ। আমরা এখানে এসেছি, কারণ আমরা মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। এই বক্তব্যের পর রাতে মন্ত্রণালয় থেকে যৌথ সংশোধনী বিবৃতি পাঠানো হয়। তবে মূল বিতর্কের বিষয়টি এতে স্পষ্ট করা হয়নি।
ই ইউ পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের এই বক্তব্যে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের কাছে বিদেশীদেরকে নিয়েও মিথ্যাচার করছে। ই ইউ প্রতিনিধি দলের বিবৃতিতে সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে।
॥তিন॥
এখন দেখা যাচ্ছে যে বিরোধী দলের ৪৬ দিনের অবরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশ একঘরে হয়ে পড়েছে । গত ১৯ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাহমুদ আলী ওয়াশিংটনে জাতি সংঘ মহাসচিব বানকি মুনের  সাথে বৈঠক করেন।
চলমান সংকটের সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বুদ্ধ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বানকি মুন।
এছাড়া স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য বিরোধীদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ করতে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে এক বৈঠকে বানকি মুন এ আহ্বান জানান।
ওয়াশিংটনে চলমান ‘সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় হোয়াইট হাউজ সামিট’-এর ফাঁকে এক সাইড লাইনে বৈঠকে অংশ নেন তারা।
বৈঠকে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা এবং প্রাণহানিতে জাতিসংঘের মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
॥চার॥
বাংলাদেশে বিরোধী দলের ৪৬ দিন টানা অবরোধের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর । গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সাথে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে জন কেরি 
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনে সহিংসতামূলক কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের প্রাণহানিতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। তিনি অবিলম্বে এ ধরনের সহিংসতা বন্ধের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে মত প্রকাশে বাধা দেয়াকে মেনে নেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।  সহিংসতার অবসানে সরকারের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছেন কেরি।
গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে জন কেরি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর মধ্যে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের লিখিত বক্তব্যে একথা বলা হয়।
জন কেরি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে নিরীহ মানুষকে টার্গেট করার কৌশল বা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রাজনৈতিক মত প্রকাশে বাধা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।’
সব রাজনৈতিক দলের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা প্রত্যাশা করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন জন কেরি।
গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি দিনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ায় ওইদিন থেকেই সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অবরোধের পাশাপাশি হরতালও আহ্বান করছে ২০ দলীয় জোট।
এসব কর্মসূচি চলাকালে প্রতিদিনই যাত্রীবাহী বাসসহ যানবাহনে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটছে।
সরকারি হিসেবে, অবরোধ শুরুর পর এ পর্যন্ত পেট্রল বোমা ও হাতবোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৬ জন।
অপরদিকে এসময়ের মধ্যে কথিত বন্দুক যুদ্ধেও বিরোধী জোটের ২৩ জন নিহত হয়েছেন।
॥পাঁচ॥
বন্দুক যুদ্ধ ক্রস ফায়ার এবং পেট্রোল বোমা নিয়ে দেশে যখন প্রবল অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে তখন সমস্যার গোড়ায় হাত দিয়েছে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার একটি যৌথ জরিপ ।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে বিশ্বের সবচেয়ে ‘ব্যর্থ নির্বাচন’ ও ‘চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। একইসঙ্গে সরকারকে ‘নির্বাচিত স্বৈরশাসক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে জরিপে। নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মানের ঘাটতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ওপর বৈশ্বিক জরিপ পরিচালনা করে তারা এ তথ্য প্রকাশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ জরিপ প্রকল্পটি পরিচালিত হয়। বৈশ্বিক এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ‘নির্বাচনী সততা প্রকল্প’ (ইলেক্টোরাল ইন্টিগ্রিটি প্রজেক্ট-ইআইপি)।
এরমধ্যে ব্যর্থ নির্বাচনের তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন।
এ জরিপে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ও সরকারের পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দাবিতে ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল।
শুধু আ’লীগসহ গুটি কয়েক রাজনৈতিক দল সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক পর্যবেক্ষকই বলেছেন, সমকালীন নির্বাচনগুলোতে আন্তর্জাতিক মান পূরণের ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। তাঁদের মতে, সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা গেছে নির্বাচিত স্বৈরশাসনগুলোতে (ইলেক্টেড অটোক্রেসি)।
দলীয় প্রতিদ্বনিন্দ্বতার খোলস থাকলেও ওই সব নির্বাচনে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ব্যর্থ এসব নির্বাচনের ফলে নির্বাচিত কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসে ক্ষয় ধরে, ভোটার উপস্থিতি কমে যায় এবং সরকারের স্থিতিশীলতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ফল হিসাবে ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, প্রধানত আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ওই নির্বাচনে কমপক্ষে ২১ জনের মৃত্যু এবং শতাধিক ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রকল্পটি কাজ শুরু করে ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে।
॥ছয়॥
ওপরের এই  আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন  ২০ দলীয় জোট সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক ইস্যুতে ৪৬ দিন ধরে অবরোধ ও হরতাল চালিয়ে যাচ্ছে । এই রাজনৈতিক কর্মসূচির ফাঁক ফোকর গলিয়ে কিছু সন্ত্রাসী এখানে অনুপ্রবেশ করেছে। এরা জঘন্য সন্ত্রাসী কান্ড করেছে। আইনের আওতায় এনে এদেরকে দমন করলে কারো কিছু বলার থাকবে না। কিন্তু তাই বলে তাদের অপতৎপরতার সাথে বিএনপি এবং জামায়াতকে গলিয়ে  ফেললে ঐ সন্ত্রাসীরা সেই ফাঁক ফোকর দিয়ে জনতার কাতারে মিশে যাবে। তারপরেও যদি সরকার বিএনপি এবং জামায়াতের মত বিশাল গণতান্ত্রিক এবং নিয়মতান্ত্রিক দলের বিরুদ্ধে জুলুমের স্টীম রোলার চালাতেই থাকে এবং তাদের কর্মীদেরকে হত্যা করতে থাকে  তাহলে এদেশের গণতান্ত্রিক এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে সরকার জোর করে চরম পন্থার দিকে ঠেলে দেবেন।
আসিফ আরসালান 

শুক্রবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

অসত্য ও সাজানো ইতিহাস


বিশেষ মহলের কেউ কেউ সুচিন্তিতভাবে কারণ সৃষ্টি করেন বলেই মাঝে-মধ্যে ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে হয়। সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য শুধু নয়, অসত্য তথ্য সংশোধন করার এবং অনেকের স্বার্থচিন্তাপ্রসূত ভুল ব্যাখ্যা ধরিয়ে দেয়ার জন্যও এটা দরকার হয়ে পড়ে। তখন পেছনে ফিরে যেতে হয়। বর্তমান পর্যায়ে এর উপলক্ষ তৈরি করেছেন সুদূর লন্ডনে বসবাসরত বুদ্ধিজীবী নামধারী সেই আওয়ামী মোড়ল- ইতিহাস বর্ণনার নামে গল্প ফেঁদে বসার ব্যাপারে যার তুলনা নেই বললেই চলে। নিজের মতো করে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে ব্যাখ্যা হাজির করেন তিনি। ইতিহাসের ছাত্র এবং তার বর্ণিত অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমাকে উদ্বিগ্ন হতে হয়। কারণ, সঠিক ইতিহাস যাদের জানা নেই, তারা বিভ্রান্ত হতে পারেন এবং গালগল্পকেই সত্য বলে ধরে নিতে পারেন। এজন্যই ওই মোড়লের কথার পিঠে কিছু বলতে হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিকে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার ব্যাপারে রীতিমতো প্যাঁচাল পেরেছেন এবং ইতিহাস উল্লেখের নামে নিজের ইচ্ছামতো তথ্য ও ব্যাখ্যা হাজির করেছেন।
আপত্তির প্রধান কারণ ঘটিয়েছেন তিনি ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিতে গিয়ে। দুই নেত্রী প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে টেনে এনেছেন। আওয়ামী মোড়ল তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিব নাকি পরস্পরের ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ’ ছিলেন, খালেদা-হাসিনার মতো ‘রাজনৈতিক শত্রু’ ছিলেন না! এ পর্যন্ত এসে থেমে গেলেও হয়তো আপত্তি জানানোর জন্য বেশি কষ্ট করতে হতো না। কিন্তু আফটার অল, আওয়ামী মোড়ল তিনি- এত অল্প কথায় থেমে যাওয়া সম্ভব নয় তার পক্ষে। তিনি তাই প্রথমে পিছিয়ে গেছেন এবং তারপর কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে বলে বসেছেন, তিনিই সে তিনি, যিনি তার সম্পাদিত সান্ধ্য দৈনিকে ‘ভাসানী-মুজিব ঐক্য চাই’ শিরোনামে প্রথম পৃষ্ঠায় একটি স্বাক্ষরিত সম্পাদকীয় লিখেছিলেন। কেন লিখেছিলেন, তার কারণও জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘আইয়ুব-মোনেমের স্বৈরশাহীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সফল হতে হলে পূর্ব পাকিস্তানে ভাসানী-মুজিব ঐক্য চাই’। এই সম্পাদকীয় দেখে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসেবে বন্দী নেতা শেখ মুজিব নাকি তাকে বলেছিলেন, ‘...তোমাকে ভাসানী-মুজিব ঐক্যের জন্য স্লোগান দিতে হবে না। আমি সবার চেয়ে মওলানা সাহেবকে ভাল চিনি। আমার জন্য তার মনে গভীর দরদ। সময় হলে আমি ডাক দিলেই তিনি চলে আসবেন।...’ নিবন্ধের এই পর্যায়ে এসে আওয়ামী মোড়ল জানিয়েছেন, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শেষদিকে এসে বুঝলাম, ভাসানী-মুজিব ঐক্যের দাবিতে আর কিছু লেখার দরকার নেই। দুই নেতার মধ্যে একটি গোপন সমঝোতা হয়ে গেছে।...’ এখানেও শেষ নয়, আওয়ামী মোড়ল তার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান নাকি ছিল ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাবিরোধী গণঅভ্যুত্থান’ এবং ভাসানী-মুজিবের ‘গোপন যোগাযোগ ও সমঝোতার ফল’! ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহের বিভিন্ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রতি মওলানা ভাসানীর ‘সমর্থন’ও আবিষ্কার করেছেন তিনি। বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর অনুসৃত নীতি-কৌশল নাকি ছিল ‘রীতিমতো মাস্টার স্ট্রোক’!
ওপরে অতিসংক্ষেপে উল্লেখিত তথ্যগুলো থেকে যে কারো ধারণা হবে যেন বন্দী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করা এবং আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করানোই ছিল ১৯৬৯ সালের গণঅভু্যুত্থানের একমাত্র উদ্দেশ্য! শুধু তা-ই নয়, আওয়ামী মোড়লের ভাষায় ‘প্রায় দা-কুমড়োর মতো’ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও মওলানা ভাসানী তাঁর ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ’ শেখ মুজিবকে বাঁচানোর উদ্দেশ্য নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিলেন, একে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন। আপত্তি উঠেছে একাধিক কারণে। প্রথম কারণ হলো, নিজের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা দেয়ার পেছনেও মওলানা ভাসানীর বিপুল অবদান ছিল। পাকিস্তান আমলে তো বটেই, জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্তও দু’জনের সম্পর্ক ছিল ঠিক পিতা ও পুত্রের মতো। এই সম্পর্ক কোনো ‘চৌধুরী’ বা ‘মিয়া’-ই নষ্ট করতে পারেননি- বিভিন্ন সময়ে ষড়যন্ত্রের পথে প্রচেষ্টা চালিয়েও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। নীতি-কর্মসূচী, দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশলের ব্যাপারে যথেষ্ট মতপার্থক্য থাকলেও তাই এমন মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় যে, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের সম্পর্ক ছিল ‘প্রায় দা-কুমড়োর মতো’ কিংবা দু’জন পরস্পরের ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ’ ছিলেন।
আপত্তির দ্বিতীয় কারণ হিসেবে এসেছে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান সংক্রান্ত মন্তব্য। এখানেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রসঙ্গ এসে যায়। আওয়ামী মোড়ল বলেই তিনি সবকিছুর মধ্যে শুধু নিজেদের নেতা শেখ মুজিবকে দেখেছেন, ছাত্র-জনতার আশা-আকাংক্ষার প্রতি সামান্য সম্মান দেখাননি। তিনি সেই সাথে বলতে চেয়েছেন, যেন ওই অভ্যুত্থানের পেছনে শেখ মুজিব শুধু নন, তার ঘোষিত ৬ দফাও প্রধান ভূমিকা রেখেছিল! যেন আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলই ছিল না সেখানে! অন্যদিকে তথ্যানিষ্ঠ ইতিহাস কিন্তু সেকথা বলে না। কারণ, ৬ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন প্রচেষ্টার প্রাথমিক পর্যায়ে, ১৯৬৬ সালের ৯ মে শেখ মুজিবকে প্রতিরক্ষা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে, ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করে এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় পর্যন্ত তিনি কুর্মিটোলা সেনানিবাসে বন্দী অবস্থায় ছিলেন। দল হিসেবে ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগও সে সময় অত্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। এর কারণ, একদিকে ৬ দফা প্রভাব সৃষ্টি করার মতো জনসমর্থন অর্জন করতে পরেনি, অন্যদিকে ৬ দফার প্রশ্নেই আওয়ামী লীগ দ্বিখন্ডিত হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের ২৩ ও ২৭ আগস্ট গঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ‘পিডিএমপন্থী’ এবং ‘৬ দফাপন্থী’ নামে পরিচিতি পাওয়া পৃথক দু’টি আওয়ামী লীগ। বন্দী নেতা শেখ মুজিবকে ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগের সভাপতি বানানো হয়। দলটির তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে দুটি মাত্র তথ্যের উল্লেখ করলে। প্রথম তথ্যটি হলো, ১৯৬৬ সাল থেকে তো বটেই, দলের সভাপতি শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান আসামী বানানোর পরও ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগ কোনো প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার সাহস পায়নি। দলের ওয়ার্কিং কমিটির এক প্রস্তাবে অভিযুক্ত নেতাকে ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য’ সরকারের প্রতি ‘আবেদন’ জানানো হয়েছিল (২১ জানুয়ারি, ১৯৬৮)।
দ্বিতীয় তথ্যটি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৬৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে ঘোষিত ১১ দফার সমর্থনে এগিয়ে আসার পরিবর্তে ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগ ৮ জানুয়ারি গঠিত আটদলীয় জোট ড্যাক বা ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটিতে যোগ দিয়েছিল। ড্যাক-এর ৮ দফা কর্মসূচিতে সেকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় দাবি স্বায়ত্তশাসন শব্দটিরই উল্লেখ ছিল না, অনুপস্থিত ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রসঙ্গও। শুধু তা-ই নয়, পশ্চিম পাকিস্তানের দুই নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং খান আবদুল ওয়ালী খানের সঙ্গে তৃতীয় নেতা হিসেবে শেখ মুজিবের মুক্তি চাওয়া হয়েছিল পঞ্চম তথা ‘ঙ’ দফায়। অন্য একটি কারণেও শেখ মুজিব অসম্মানিত হয়েছিলেন। ড্যাক-এর আহ্বায়ক ছিলেন পিডিএমপন্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান। অর্থাৎ, ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগের অবস্থা সে সময় এতটাই শোচনীয় ছিল যে, দলটিকে শেখ মুজিবের প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বাধীন এবং জামায়াতে ইসলামীসহ পশ্চিম পাকিস্তানভিত্তিক সাতটি দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট ড্যাক-এর শরিক হতে হয়েছিল। উল্লেখ্য, মওলানা ভাসানীর দল ন্যাপ বা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি কিন্তু এই জোটে যোগ দেয়নি বরং স্বাধীন অবস্থানে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
১৯৬৬ সালের মে থেকে কারাগারে থাকায় ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান নির্মাণে শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ভূমিকা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী- যে কথা অওয়ামী মোড়লও স্বীকার না করে পারেননি। স্বায়ত্তশাসন, প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি ও রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯৬৮ সালের ৬ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী ঐতিহাসিক ‘ঘেরাও’ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং পল্টন ময়দানের জনসভায় আগত হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে সেদিনই ঘেরাও করেন গভর্নর হাউস (বর্তমান বঙ্গভবন)। ঘেরাওকারী ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের নির্যাতনের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী পরদিন ঢাকায় হরতাল আহ্বান করেন। ১৯৬৮ সালের ৭ ডিসেম্বর হরতাল পালনকালে পুলিশের গুলিতে দু’জনের মৃত্যু ঘটলে মওলানা ভাসানী ৮ ডিসেম্বর সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালনের ডাক দেন। তিনি নিজে সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন এবং বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে শহীদদের গায়েবানা জানাযা নামাজে ইমামতি করেন। মওলানা ভাসানীর ঘেরাও আন্দোলন স্বল্প সময়ের মধ্যে সারা পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে এবং মূলত এই আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় তিনটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি। ১১ দফা ঘোষিত হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ১৪ জানুয়ারি।
২০ জানুয়ারি মওলানা ভাসানী সমর্থক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা আসাদুজ্জামানের মৃত্যু আন্দোলনকে প্রচন্ড করে তোলে এবং মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের ভিত নাড়িয়ে দেয়। বিপন্ন আইয়ুব খান আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকের প্রস্তাব দেন (১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯)। ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগসহ আটদলীয় জোট ড্যাক-এর পক্ষ থেকে প্রথম সুযোগেই বৈঠকে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে, মওলানা ভাসানী একে ‘আত্মহত্যার শামিল’ বলে বর্ণনা করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। ১৬ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানের বিশাল জনসভায় ‘চরমপত্র’ উচ্চারণ করতে গিয়ে মওলানা ভাসানী ঘোষণা করেন, ‘প্রয়োজনে ক্যান্টনমেন্ট ভেঙে শেখ মুজিবকে মুক্ত করা হবে।’ উল্লেখ্য, আন্দোলনে অগ্রগতির পাশাপাশি শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবি তখন প্রাধান্যে চলে এসেছিল এবং শেখ মুজিব বন্দী অবস্থায়ই প্যারোলে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিতে সম্মতি  জানিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার চাপ এবং মওলানা ভাসানীর বিরোধিতায় সে আয়োজন ভন্ডুল হয়ে যায়। ফলে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে নতিস্বীকার করতে হয়। ’৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং শেখ মুজিবসহ মামলার অভিযুক্তরা ও অন্য রাজনৈতিক বন্দীরা মুক্তিলাভ করেন।
এই সাফল্যের পর থেকেই নিশ্চিত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান বিভ্রান্ত ও স্তিমিত হতে শুরু করেছিল। মওলানা ভাসানীর আপত্তি সত্ত্বেও আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে ‘নিশ্চিন্ত থাকার’ উপদেশ দিয়ে শেখ মুজিব ২৬ ফেব্রুয়ারি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠকে তাকে বক্তৃতা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল আরো পরে, ১০ মার্চ। ঘটনাক্রমে ১১ দফার কথা উচ্চারণ করলেও এই ভাষণেই শেখ মুজিব তার বিস্মৃত প্রায় ৬ দফাকে প্রাধান্যে নিয়ে আসেন এবং গোপন সমঝোতার উদ্যোগ নেন। কিন্তু বৈঠক বর্জনকারী প্রধান নেতা মওলানা ভাসানীর প্রবল বিরোধিতায় সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় এবং অবনতিশীল পরিস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেন, পাকিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক শাসন প্রবর্তিত হয় (২৫ মার্চ, ১৯৬৯)।
আইয়ুব সরকারের পতন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও শেখ মুজিবসহ রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির নীতিগত স্বীকৃতি ছিল গণঅভ্যুত্থানের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনসহ ১১ দফার মূল দাবিগুলো আদায় করা সম্ভব হয়নি। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিক নেতাদের ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগের আন্দোলনবিমুখ নীতি ও ভূমিকা ছিল অসফলতার প্রধান কারণ। গণঅভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার কৌশল হিসেবেই যে গোলটেবিল বৈঠক পরিকল্পিত হয়েছিল, সেকথা ইতিহাস প্রমাণ করেছে। শেখ মুজিবের মুক্তি অর্জন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল করানোর মতো দাবি আদায়ের জন্য যেখানে কোনো বৈঠকের প্রয়োজন হয়নি, সেখানে অন্য দাবিগুলোও আন্দোলনের মাধ্যমেই আদায় করা সম্ভব হতো। কিন্তু ৬ দফাপন্থী অওয়ামী লীগ সে গণঅভ্যুত্থানকেই স্তিমিত ও বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছিল, যে গণঅভ্যুত্থানের প্রচন্ড চাপে শেখ মুজিব ফাঁসির মুখ থেকে ফিরে আসার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর ফলে এই অভিযোগ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, জনগণের মুক্তি অর্জনের মৌলিক প্রশ্নেই আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি ও রাজনীতি ছিল ক্ষতিকর ও প্রশ্নসাপেক্ষ। সেই সাথে ছিল দল হিসেবে আওয়ামী লীগের এবং নেতা হিসেবে শেখ মুজিবের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সংকীর্ণ উদ্দেশ্য। না হলে আওয়ামী লীগ ছাত্র সমাজের ১১ দফাকে নিয়েই এগিয়ে যেতো। কারণ, ১১ দফার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা দু’টি মূলত ৬ দফার আলোকে প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ১১ দফাকে পাশ কাটিয়ে গেছে এবং কিছুদিন পর্যন্ত ‘৬ দফা ও ১১ দফা’ বলার পর এক পর্যায়ে ১১ দফাকে সম্পূর্ণরূপে বিদায় করেছে, প্রাধান্যে এনেছে কেবলই ৬ দফাকে। এই প্রক্রিয়ায় ১১ দফাভিত্তিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত শেখ মুজিবের প্রভাব ও জনপ্রিয়তাকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ৬ দফাকে একমাত্র কর্মসূচি বানিয়েছে এবং সে নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকে এমন প্রচারণাকে শক্তিশালী করেছে, যেন ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানও ঘটেছিল ৬ দফার ভিত্তিতে, ১১ দফার ভিত্তিতে নয়! যেন শেখ মুজিব একাই ছিলেন গণঅভ্যুত্থানের প্রধান নেতা! অথচ ইতিহাস প্রমাণ করেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে পর্যন্ত ছাত্র-জনতা ৬ দফার সমর্থনে সামান্যও ভূমিকা পালন করেনি। আর সে কারণেই ৬ দফাপন্থী আওয়ামী লীগের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়।
এখানে ইতিহাসের বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই। এ নিবন্ধোর উদ্দেশ্য আসলে আওয়ামী মোড়লের মিথ্যাচার সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করা এবং তাকেও জানিয়ে দেয়া যে, গালগল্পকে ইতিহাস হিসেবে চালানোর অপচেষ্টায় সাফল্যলাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। তার উদ্দেশ্য অবশ্য ধরা পড়ে গেছে। তিনি কথার মারপ্যাঁচে চেষ্টা চালালেও মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের সম্পর্ক কোনো সময়ই ‘প্রায় দা-কুমড়োর মতো’ ছিল না। পরস্পরের ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ’ও ছিলেন না তারা। পাকিস্তান আমলে একযোগে তারা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধেও দু’জনের বিপুল অবদান ছিল মওলানা ভাসানী প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন, অন্যদিকে গ্রেফতার বরণ করলেও শেখ মুজিব থেকেছেন জাতীয় নেতার অবস্থানে। লক্ষ্যণীয় যে, শেখ মুজিবকে প্রাধান্যে রাখার উদ্দেশ্য থেকে একটু এদিক-সেদিক করতে চাইলেও আওয়ামী মোড়লের পক্ষে কিন্তু মওলানা ভাসানীর অবদান অস্বীকার করা সম্ভব হয়নি। ‘রীতিমতো মাস্টার স্ট্রোক’ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে প্রকারান্তরে তিনি স্বীকার করেছেন, মাওলানা ভাসানীর সমর্থন পেয়েছিলেন বলেই শেখ মুজিব এতটা এগোতে পেরেছিলেন। বাংলাদেশও স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। বলা দরকার, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার কল্পিত সংলাপ ও সমঝোতা নিয়ে প্যাঁচালের মধ্য দিয়ে আওয়ামী মোড়ল যে শোরগোল তুলতে চেয়েছিলেন, সে চেষ্টাও এখনো সাফল্যের মুখ দেখেনি।
আহমদ আশিকুল হামিদ 

বৃহস্পতিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মানবাধিকার ও বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা


মানবাধিকার কথাটি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের নিকট অতি সুপরিচিত ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ। মানবাধিকার শব্দের ইংরেজি প্রতি শব্দ হচ্ছে Human rights. বাংলা ভাষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সমন্বয়ে মানবাধিকার শব্দটি গঠিত হয়েছে। একটি শব্দ ‘মানব’ অপরটি ‘অধিকার’। প্রথমটির অর্থ হচ্ছে-মানুষ আর দ্বিতীয়টির অর্থ হচ্ছে যারা মানুষ তাদের অধিকার। অর্থাৎ মানবাধিকার কথাটির পরিপূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় মানুষের অধিকার। এ অধিকার মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকার। যা স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত। তাই এ অধিকার সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কাজ করা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। অতএব মানবাধিকারের সংজ্ঞায় বলা যায়, মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার নিয়ামকের ওপর যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে মানবাধিকার বা Human rights।
আমাদের দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত ও বৈদগ্ধ্য ব্যক্তিবর্গ বলে থাকেন; অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এগুলোই শুধু মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণ করবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। আমি মনে করি, এগুলোর পাশাপাশি মানুষের সুষ্ঠু জীবনধারণের প্রয়োজনে আরও অনেক অধিকার রয়েছে। যেগুলো মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে পরিগণিত। যেমন: বাকস্বাধীনতার অধিকার, নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার, জীবনধারণের অধিকার, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিবার পরিচালনার অধিকার, রাষ্ট্রে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার, চুরি- ডাকাতি ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচার অধিকার, জুলুম-অত্যাচার ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার অধিকার, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা থেকে বাঁচার অধিকার, নিজের জমি-জমা, গাছ-পালা ও বাগান-বাড়ি সন্ত্রাসীদের লুট-পাট থেকে রক্ষার অধিকার, অন্যায়ভাবে কারো হামলা থেকে বাঁচার অধিকার, স্বাধীনভাবে চাকরি-বাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার অধিকার, শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে বাঁচার অধিকার, আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর অনৈতিক হামলা থেকে নিজেকে আত্মরক্ষার অধিকার, সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তোলার পরিবেশ পাবার অধিকার, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অধিকার, দেশ, জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে কল্যাণরূপে গড়ে তোলার অধিকার, মানব সেবার অধিকার, পেট্রোল বোমার আঘাত থেকে বেঁচে থাকার অধিকার, জনসভা ও সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সর্বোপরি জননিরাপত্তার অধিকারও মানুষের মৌলিক মানবাধিকার। মোটকথা মানুষের মৌলিক জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার নিয়ামকের ওপর যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে মানবাধিকার।
মানবাধিকারের গুরুত্ব
মনুষ্যত্বের বা The quality of being human-এর পরিপূর্ণ বিকাশে মানবাধিকারের গুরুত্ব অপরিহার্য। মৌলিক চাহিদা পূরণসহ নিরাপত্তামূলক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধান করা সরকার ও মানবাধিকার সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এছাড়া মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই মানবাধিকার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস। তাই শুধু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নয়; বরং এগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য সকল অধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে পারলেই কেবল মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিতে জীবনযাপন করার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার সুরক্ষিত হতে পারে। নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। গোটা পৃথিবীর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও রক্ষায় তিনি সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে দ্ব্যর্থহীনভাবে নির্যাতিত-নিপিড়ীত মানবাত্মার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন; ‘কি কারণে তোমরা সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুদের খাতিরে আল্লাহর অনুসৃত পথে সংগ্রাম করছো না? অথচ যারা নির্যাতিত, নিপিড়ীত ও দুর্বল হবার কারণে আমার নিকট ফরিয়াদ করছে এবং বলছে; হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এ জালিমদের অত্যাচার থেকে বের করে নাও, অথবা তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন দরদী-বন্ধু ও সাহায্যকারী পাঠিয়ে দাও’ (সূরা নিসা-৭৫)। আমাদের দেশে অতীত নেতৃত্ব দানে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন, তারাও আমরণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বাঙালি জাতির পিতা হিসেবে খ্যাত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশের পবিত্র সংবিধানেও গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা সন্নিবেশিত আছে। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে- ”The Republic Shall be a democracy in which fundamental human rights and freedoms and respect for the dignity and worth of the human person shall be guaranteed, and in which effective participation by the people through their elected representatives in administration at all level shall be ensured-’’ অর্থাৎ ‘প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে, এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে’। আমাদের দেশের সরকারও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় অত্যন্ত যতœশীল বলে আমি মনে করি। কিন্তু সংবিধানের ধারায় বর্ণিত বিধান অনুযায়ী আমাদের দেশে বর্তমানে গণতন্ত্রের আবরণে চলছে একদলীয় স্বৈরতন্ত্র। কোথায় আজ ন্যায় বিচার, কোথায় আইনের শাসন, কোথায় প্রশাসনের সকল পর্যায়ে  জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ? মানবাধিকার আজ বস্তাবন্দী ও সিন্দুকে তালাবদ্ধ। তাই এ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং মৌলিক মানবীয় গুণাবলী অর্জন। যা মানুষের বুদ্ধিদীপ্ত বিবেককে উজ্জীবিত করবে, বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে জাগ্রত করবে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশে মানবাধিকার আন্দোলন দিন দিন জোরদার হচ্ছে। তাছাড়া মানব সভ্যতাকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার জন্য অন্যতম দিকনির্দেশক হচ্ছে-জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র। এ ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্বের ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র প্রায় সকল দেশ এখন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণও চায় এদেশে সঠিকভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজ নিজ অধিকার ফিরে পাক। কারণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে সংবিধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র তার আসল রূপ ফিরে পাবে। প্রশাসন নির্বিঘেœ প্রশাসনিক কর্মকা- পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তার বিচারিক কার্যাবলী সম্পন্ন  করতে পারবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও ক্ষমতাবলী নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে।
মানবাধিকার সংস্থাসমূহের করণীয়
দেশের সামগ্রিক স্বার্থে রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং মানবাধিকার সংস্থাসমূহের উচিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। কোন সভ্য সমাজ ও রাষ্ট্র দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার মেনে নিতে পারে না, নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিতে পারে না, বিচারবহির্ভূত অথবা বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হত্যাকা-কে মেনে নিতে পারে না। সমাজের অসহায়, নির্যাতিত-নিপড়ীত মানুষের অধিকার সংরক্ষণে সহায়তা প্রদান এবং তাদেরকে অধিকার সচেতন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব পালনে কাজ করতে পারে সকলেই। আমাদের দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত সমাজের অসহায়, দরিদ্র, নির্যাতিত-নিপিড়ীত মানুষদেরকে তাদের মানবিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সচেতন করে গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদান করা। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো এক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। প্যাডসর্বস্ব এ সংস্থাগুলো মানবতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বরং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানবতার দুর্বলতার সুযোগে তাদেরকে আইনগত সহায়তা প্রদানের নামে তাদের নিকট থেকে অমানবিকভাবে লুটে নেয়া হচ্ছে অঢেল অর্থ। ফলে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ তো দূরের কথা, তা আরো ব্যাপকভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আমার জানা মতে, এমন কিছু মানবাধিকার সংস্থা আছে, ‘যেগুলো নামে তাল পুকুর কিন্তু ঘোটি ডুবে না। বাইরে হাঁক-ডাক, কিন্তু ভিতরে অন্তসারশূন্য সদরঘাট’। আবার কোন কোন মানবাধিকার সংস্থার হেড অফিসে একজন তথাকথিত চেয়ারম্যান, একজন পিয়ন এবং কতিপয় চেয়ার-টেবিল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য তারা বিজ্ঞাপন সাঁটেন পত্রিকায়। ইন্টারভিউ এর সময় মোটা বেতনের প্রলোভন ও উৎসাহ ভাতার অফার দেয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের পর মাসের পর মাস অতিক্রান্ত হলেও বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় না তাদের। অবশেষে নিজেদের মান-মর্যাদা বাঁচানোর তাগিদে তারা চাকরি ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।
এখানেই শেষ নয়। মানবাধিকারের নামে মদ, জুয়া, নেশা আর অনৈতিক আড্ডাখানায় পরিণত করেছে তারা অফিসকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এ অফিস যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের এক অভয়ারণ্য। দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা, থানা এবং পৌরসভায় শাখা কমিটি গঠনের নামে মানুষকে সদস্য করার অজুহাতে তাদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে! পরিচয়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে প্রতারণার আশ্রয়। নারী নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে Victim এর শিকার অসহায় মানুষগুলো তাদের নিকট আইনী সহায়তার জন্য এলে চাঁদা নেয়া হয়। সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ করে অফিসে তালাবদ্ধ করে আটকিয়ে রেখে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টকাও দাবি করা হয়! লোক দেখানোর জন্য তারা বছরে একটি বা দুটি সভা করে। মাঝে মাঝে একটি ব্যানার ও দু-পাঁচজন ধার করা লোক এনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে থাকে এবং রমযান মাসে বড় জোর একটি ইফতার পার্টি করে থাকে এ সংগঠনগুলোর কোন কোনটি। শুধু মিড়িয়ায় কাভারেজ পাওয়ার জন্যে তারা এগুলো করে থাকে। এছাড়া কার্যত তাদের কোন এজেন্ডা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে মগবাজার সংগ্রাম অফিসের কোল ঘেঁষে অবস্থিত একটি মানবাধিকার সংগঠনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদেরকে কোন বেতন-ভাতা দেয়া হয় না। অথচ নিয়োগের আগে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। চেয়ারম্যান সাহেব বলেন ফান্ডে টাকা নেই তো বেতন দেব কিভাবে ইচ্ছা করলে চাকরি ছেড়ে চলে যেতে পারেন। একই অফিসের অন্য একজন কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে তিনি অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা স্বীকার করেন’। জানা যায় যে, ঐ মানবাধিকার সংস্থাটি নিজেদের অপকর্মের কারণে সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়ার ভয়ে সম্প্রতি অফিস অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া সম্প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। তিনি বলেছেন, ‘জনগণের জান-মাল ও অধিকার রক্ষার জন্য কখনো কখনো শক্তি প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়ে’ (সূত্র: প্রথম আলো  ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। তার এ বক্তব্যে মানবাধিকার রক্ষার পরিবর্তে তা চরমভাবে লংঘিত হয়েছে। এ ধরনের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডেের কারণে প্রকৃত মানবসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা হতাশ হচ্ছেন। ফলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তবে টিআইবি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ কিছু কিছু মানবাধিকার সংস্থা মানবাধিকার রক্ষায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে যা প্রশংসনীয়। এ অবস্থায় দুর্নীতিপরায়ণ মানবাধিকার সংস্থাগুলো চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মানবাধিকার
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এক মেরুতে সরকার পক্ষ এবং আরেক মেরুতে ২০ দলীয় জোটের অবস্থান। ৫ জানুয়ারি বিএনপি জোটের সমাবেশ করতে না দেয়ার ইস্যুকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে। অথচ সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলসমূহের একটি সাংবিধানিক অধিকার। সরকার বা শাসকগোষ্ঠীর উচিত সভা-সমাবেশে বাধা না দেয়া। আমাদের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে-‘‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার  এবং জনসভা ও শোভা যাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’’। অথচ বিরোধী দলগুলো তাদের সাংবিধানিক এ অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর সরকারি দল নির্বিঘ্ন সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। এটি কোন সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতি হতে পারে না। এরই সূত্র ধরে বিরোধী শক্তির পক্ষ থেকে অনির্ধারিতভাবে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে সারা দেশে। এতে অর্থনৈতিকভাবে দেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করা হচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের মতো করে জনগণের বিরুদ্ধে। যাদের মূলকাজ জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা, তারা সরকারের নির্দেশে বিরোধী শক্তিকে নির্যাতন করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানগণ প্রকাশ্যে জনগণের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতাদের আদলে বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা দেশের জন্য অশনি সংকেত। সরকারের অতি উৎসাহী কয়েকজন মন্ত্রীও সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি জনগণের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সারা দেশে বোমা হামলা এবং আগুনে পুড়ে মরছে শত শত নারী, পুরুষ ও শিশুরা। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলো হত্যার শিকার হচ্ছে বার বার। অথচ তাদের কথা কেউ ভেবেও দেখছেন না। ফেসবুকে দেখা যায় পুলিশের পোশাক পরিহিত অবস্থায় বুট-হেলমেটবিহীন যুবকরা রাস্তায় মানুষকে বেধড়ক পিটাচ্ছে অমানবিকভাবে। এরা কারা? এদেরকে নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে ব্যাপকভাবে। পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারা হচ্ছে, অথচ তারা গ্রেফতার হচ্ছে না। এরাই বা কারা? এদের কর্মকা- দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে-দেশ এখন মারাত্মকভাবে মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের উপায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আর স্থিতিশীলতা আনয়নে মুখ্য ভূমিকা রাজনৈতিক দলসমূহের। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের। তাহলেই দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে, মানবাধিকার সুরক্ষিত হবে। ফলে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পাবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক মর্যাদা রীতি-নীতি ও সংস্কৃতিতে দেশ উচ্চ শিখরে পদার্পণ করবে। তাই আসুন, আমরা সকলে মিলে দেশে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যায়।
অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম 

Ads