মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

এই জঙ্গী নাটকের শেষ কোথায়!


 বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটেছে বা উত্থান ঘটার আশঙ্কা আছে-এরকম একটি নাটক বহুকাল ধরেই শেখ হাসিনা সরকার মঞ্চস্থ করার চেষ্টা করছে। অনির্বাচিত এই সরকার পশ্চিমা বিশ্বের কোথায়ও কোনো স্বীকৃতি লাভ করেনি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বই বলেছে যে, এ সরকার জনপ্রতিনিধিত্বহীন। অতএব, আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এখানে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমাদের মন যোগাবার একটি সরল পথ ধরে শেখ হাসিনা সরকার হেঁটে থাকেন। আর সেটি হলো বাংলাদেশে হুজি, জেএমবি এবং সাম্প্রতিক আইএস জঙ্গীরা ঘাপটি মেরে আছে। বিএনপি-জামায়াত এই জঙ্গীদের সহযোগী। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই এদেশ থেকে কার্যকরভাবে জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে পারে। অতএব অনির্বাচিত এই সরকারকে বিশ্ব যেনো স্বীকার করে নেয়।
এই কৌশল ব্যবহার করতে করতে একেবারে ভোতা হয়ে গেছে। কিন্তু সে কৌশল ব্যবহার চলছেই। কারও মুখে যদি দাঁড়ি থাকে, মাথায় যদি টুপি থাকে, আর পরনে যদি থাকে লম্বা কুর্তা- তাহলে কোনো না কোনোভাবে সরকার তাদেরকে জঙ্গীবাদী বলে অভিহিত করার চেষ্টা করে। এতে নিরীহ মানুষের প্রাণ যায়, সাজানো নাটকে বহু সাধারণ তরুণের জীবন ও তাদের পরিবার ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। এসব ঘটনা ধারাবাহিক ও স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মৌলিক অধিকার- সবকিছুই পদদলিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্রই যেনো বদলে ফেলা হয়েছে। প্রশাসন দলীয়, পুলিশ দলীয়, অন্যসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয়, বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করার জন্য অনির্বাচিত সংসদের হাতে নেয়া হয়েছে বিচারপতি অভিশংসন ক্ষমতা। শুধু বিচারপতিদেরই নয় নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ অন্য সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেও একই অবস্থা। তার উপর কথা বলার বা মত প্রকাশের অধিকার হরণ করার জন্য একের পর এক কালো আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। করা হয়েছে সম্প্রচার নীতিমালা, করা হচ্ছে অনলাইন নীতিমালা। প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধন করে সংবাদপত্রের উপরও খড়্গ তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে দেশের ১৬ কোটি মানুষ ফ্যাসিবাদের নিগড়ে বন্দি হয়ে পড়েছে। তারই অংশ জঙ্গীবাদের নাটক।
সম্প্রতি এর নিষ্ঠুর শিকার কয়েকজন তরুণ। গত আগস্ট মাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫ জন তরুণকে উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। তারপর মাস দেড়েক অতিবাহিত হলেও তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশেষে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঐ ৫জনকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। তাদের একজন খায়রুল ইসলাম। সে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তার বাবা আবুল কাশেম স্কুল শিক্ষক। গত ৯ আগস্ট র‌্যাব সদস্য পরিচয়ে গাজীপুরের কাউলতালিয়ার বাড়ী থেকে খায়রুলকে তুলে নেয়া হয়। পিতা আবুল কাশেম জানান যে, তুলে নেয়ার সময় তার পরিবারের সদস্যদের গাজীপুর থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে র‌্যাব ও স্থানীয় থানা, পুলিশের কেউ খায়রুল সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেনি। ১০ আগস্ট খায়রুলের বাবা জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। ডায়েরী নং ৭৬২। আবুল কাশেম বলেছেন, ‘আমার ছেলে প্রচ- ভীতু স্বভাবের। রক্ত দেখলেই ভয় পায়। অথচ পুলিশ বলছে, আমার ছেলে নাকি জঙ্গী’। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে যখন আটক করা হয়, তখন তার মুখে দাঁড়ি ছিলো না। দীর্ঘদিন আটক রাখার পর যখন জঙ্গী হিসেবে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়, তখন ছেলের মুখ ভর্তি দাঁড়ি’।
অপরজন সাবেক বিচারপতি আব্দুস সালামের পুত্র আসিফ আদনান। তাকেও একইভাবে আগস্ট মাসে তুলে নিয়ে গেছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতারের সময় তারও মুখে দাঁড়ি ছিলো না। কিন্তু যখন তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জনসমক্ষে হাজির করা হয়, তখন তার মুখ ভর্তি দাঁড়ি দেখা যায়। ডিবি অফিসে ছেলেকে দেখতে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ঐ বিচারপতি। গ্রেফতারকৃত অপর এক তরুণ ফজলে এলাহী তানজিল। তার মা উম্মে ফাতেমা সরকারের একজন যুগ্ম সচিব। তারও দাবি তার ছেলেকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জঙ্গী সাজানো হয়েছে।
এর আগে গতবছর ১৫ই ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন খুনের ঘটনায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের নির্দোষ দাবি করা হয়। কিন্তু পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেফতারকৃতরা যে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য তা তাদের জবানবন্দিতে পরিষ্কার হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, সব অভিভাবকের কাছেই তাদের সন্তান নিরপরাধ। কিন্তু কখন কে অপরাধে জড়িয়ে পড়েন, তা অনেক অভিভাবকও জানেন না। ফলে তারা এটিবি’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং সুপ্ত সেলের মাধ্যমে জঙ্গী তৎপরতায় লিপ্ত হয়।
খায়রুলের বাবা স্কুল শিক্ষক আবুল কাশেম যুগান্তরকে জানান যে, ৯ আগস্ট রাত আড়াইটার দিকে কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি গাজীপুরের কাউলতলিয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় তাদের বাড়ীতে গিয়ে আইনের লোক পরিচয় দিয়ে তাদের ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তুলে নেয়ার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপও তারা নিয়ে যায়। ঐ সময়ে খায়রুলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তারা গাজীপুর থানায় যোগাযোগ করতে বলে। ছেলেকে তুলে নেয়ার সময় তিনি তাদের সঙ্গে সড়ক পর্যন্ত এসেছিলেন। ছেলেকে ছেড়ে দিতে অনেক অনুনয়, বিনয় করেন। কিন্তু তাদের মন গলেনি। ঐসময় প্রধান সড়কে তিনি আরও দু’টি মাইক্রোবাস ও দু’টি জিপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। প্রথম গাড়ীতে তারা খায়রুলকে উঠিয়ে নিয়ে একসঙ্গে চলে যায়। এ ব্যাপারে তিনি থানা ও র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছেলের সন্ধান পাননি। জয়দেবপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, থানায় ডায়েরী হওয়া ‘সাধারণ ডায়েরীটি’ তিনি নিজেই তদন্ত করেছেন। অফিসিয়ালি র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে তখন কেউই খায়রুলকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তবে তদন্তে নাকি খায়রুলের সন্ধান পাওয়া না গেলেও তার জঙ্গী সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু খায়রুলের বাবার দাবি, তাদের পরিবারের সবাই দীর্ঘকাল ধরেই আওয়ামী লীগের সমর্থক। তিনি নিজে আওয়ামী লীগের গ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তার চাচা ও ভাইয়েরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। খায়রুলও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে অংশ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও ৪৮ দিন পর পুলিশ জানিয়েছে, তাকে রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে গ্রেফতার দেখানো শফিককে ২৫ আগস্ট টাঙ্গাইলের কুমুদিনী কলেজের সম্মুখ থেকে তুলে নেয়া হয় বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। ১৩ আগস্ট টাঙ্গাইলের মিরের বেতাগী মাদ্রাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় শিক্ষক আহসানুল্লাহকে। পরিবারের এ সব কথাই অস্বীকার করেছে পুলিশ। তারা বলেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
এই সমস্ত পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের ফলে পুলিশের কোনো ভাষ্যই এখন আর বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। অর্থাৎ সরকারের জঙ্গীবিরোধী তৎপরতা প্রমাণের জন্য এবং বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে খুশি নাটক সাজাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিউ ইয়র্ক সফরের আগে আগে এরকম ‘নাটক’ যেনো আরও প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো, যাতে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে বলতে পারেন যে, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ আছে। ঘটনা যেনো কাকতালীয়ভাবে সেরকম হয়েছে। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গীবাদ সম্পর্কে গরম বক্তব্য দিয়েছেন।
কিন্তু প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান প্রতিক্রিয়া আছে। আর সত্য ধামাচাপা দেয়া যায় না। প্রকাশিত সত্য ও প্রতিক্রিয়ার ভার বহন করা সরকারের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মনে করি।
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মন্ত্রীর ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য


হজ্ব হলো ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য জীবনে একবার হজ্ব পালন করা ফরয। কাজেই কোনও মুসলমান ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ অস্বীকার করতে পারেন না। আমাদের একজন মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আমেরিকা গিয়ে পবিত্র হজ্ব সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করে বিশ্ব মুসলিমের অন্তরে চরম আঘাত দিয়েছেন। এছাড়া তিনি হজ্বের বিরোধিতা করতে গিয়ে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কেও খুব আপত্তিকর কথা বলেছেন। মন্ত্রী তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ভাষায় বলেন, ‘আবদুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ জাজিরার লোকদের জন্য আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন হজ্বের প্রচলন করে।’ মহানবীর নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠের নিয়ম রয়েছে। আমাদের মন্ত্রী সাহেব তাও করেননি। এটা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি চরম বেয়াদবি। শুধু তাই নয়, তিনি নবীজী (সাঃ) সম্পর্কে অন্যায় ও অশোভন মন্তব্য করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। ইসলামের ইতিহাস যারা পড়েছেন তারা সবাই জানেন কাবায় মানুষ অনেক আগ থেকেই সমবেত হতো এবং তোয়াফ করতো। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামের ইতিহাস ও হজ্ব সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে চেষ্টা করেছেন।
শুধু মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী নন, আমাদের রাজনীতিকদের অনেকেই মাঝে-মধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলতে পছন্দ করেন। বিশেষত বর্তমান সরকারের আমলে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলাটা যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা মুছে দেবার পর থেকে এ প্রবণতা আরও জোরদার হয়েছে। শুধু মন্ত্রীরাই নন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম নারীদের বোরকা নিয়েও আপত্তি তোলা হয়েছে। ইসলামবিদ্বেষী মন্ত্রী, বুদ্ধিজীবী, ব্লগার সবারই যেন ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বেশ তৃপ্তি অনুভব হওয়া শুরু হয়েছে কিছু দিন যাবত। মন্ত্রীর হজ্ব নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য সেই ধারাবাহিকতারই বহিঃপ্রকাশ বলে আমরা মনে করছি। এ সম্পাদকীয় যখন লেখা হচ্ছিল তখন খবর আসে আলোচ্য মন্ত্রীকে তার পদ থেকে অব্যাহতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এমনটি প্রত্যাশাও করছিলাম। কারণ, শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মন্ত্রী হিসেবে মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যাচার ও হজ্বের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনি উল্লেখিত বক্তব্য দিতে পারেন না। আর তা স্বাভাবিকও নয়। মন্ত্রিসভা থেকে তাকে অব্যাহতি দিলেই তার অপরাধ মাফ হয়ে যেতে পারে না। পবিত্র হজ্বের বিরুদ্ধে ও মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যের জন্য মন্ত্রীর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া খুব জরুরি বলে আমরা মনে করি। কারণ, হজ্বের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলে কেবল আমাদের দেশ ও জাতিকে শুধু আঘাতই করেননি, ইসলামী বিধানেরও অবমাননা করেছেন তিনি। মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেয়াই তার একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত নয়, তাকে আরও জবাবদিহির মুখোমুখি দাঁড় করানো প্রয়োজন।
ব্যক্তিগতভাবে কেউ ইসলাম ও এর আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে শোভন ভাষায় কথা বলতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে কেউ সীমা লংঘন করতে পারেন না। মুসলিমপ্রধান দেশের মন্ত্রিত্বের আসনে থেকে হজ্বের মতো পবিত্র অনুষ্ঠান ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর এবং অশোভন ভাষায় বক্তব্য প্রদান কেউ করতে পারেন বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। তিনি হজ্ব¡ ও মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে যে ভাষায় মন্তব্য করেছেন তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য অবমাননাকর। সমগ্র মুসলিম জাতির ধর্মবিশ্বাস বা ঈমানের প্রতি আঘাতকারী। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সরকারের শান্তির মডেল ও বাস্তবতা


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশকে শান্তি রক্ষার মডেল হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেছেন যে, তার দেশ শুধু বাংলাদেশ নয়, অশান্ত ও ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ২৮ হাজারেরও বেশি সেনা সদস্যকে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, তার সরকার সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরম পন্থা, উগ্রবাদ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রতি জিরোটলারেন্স নীতি অবলম্বন করে আসছেন। তিনি আরো বলেছেন যে, সন্ত্রাস ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদ নির্মূলে তিনি ভারতসহ বিশ্বের যে কোনও দেশের সাথে সহযোগিতায় প্রস্তুত রয়েছেন, একই সাথে তিনি যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার কাজে সহায়তা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন নাশের ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, তাকে হত্যার জন্য একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করছে। এর আগে একই ধরনের কথা বলেছেন সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও তোফায়েল আহমেদসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রীর জীবনের নিরাপত্তা নেই, সে দেশ শান্তির মডেল হয় কিভাবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই সরকারের গত পৌনে সাত বছরের রেকর্ড উল্লেখ করে বলেছেন যে, জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি সেখানে গিয়ে যে সত্য কথাটি বলেছেন- তা হচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি উচ্ছেদে তার সরকারের সাফল্য। সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা ও উগ্রবাদ দমন করেননি বরং নতুন করে সৃষ্টি করেছেন। তার দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহিংস উগ্রবাদ-সন্ত্রাস, হত্যা, গুমের নতুন প্রতিভু ////হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের চারদিকে শুধু শত্রুই দেখতে পাচ্ছিলেন। ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই তারা সর্বত্র স্বাধীনতা বিরোধীদের পদধ্বনি শুনতে পান। অনেকে অভিযোগ করেছেন যে, পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর চৌকস ও প্রতিভাবান কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়ার পর তারা সর্বপ্রথম আঘাত হানেন জাতীয় জীবনের সর্বত্র সক্রিয় আদর্শভিত্তিক প্রতিশ্রুতিশীল দল জামায়াত-শিবিরের উপর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র লীগ কর্তৃক সৃষ্ট একটি ঘটনায় একজন ছাত্রলীগ কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মহাজোটের পরাক্রমশালী সরকার সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযানের নামে হাজার হাজার নিরীহ লোকের উপর হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্টীমরোলার চালান এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস যখন সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় তখন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব শামসুল হক টুকু ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক সমাবেশে ঘোষণা করেন যে, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নির্ভর করে জামায়াত-শিবিরকে দমন করা যাবে না। তিনি এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান। দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ন্যায় দায়িত্বশীল পদে বসে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়ার সরকারি এই ঘোষণা দেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। পরবর্তীকালে শুধু জামাযাত-শিবির নয়, দেশের ইসলামী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য সরকার প্রাণান্তকর চেষ্টা শুরু করেন। কওমী মাদ্রাসাগুলোকে তারা জঙ্গি প্রজননকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কোথাও সন্ত্রাস বা জঙ্গিপনার ঘটনা ঘটলে তার জন্য ইসলামপন্থীদের দায়ী করতে শুরু করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো যখন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তখন তারা ইসলামপন্থী তথা জামায়াত-শিবিরের উপর দোষ চাপিয়ে দেন এবং বলতে শুরু করেন যে, জামায়াত-শিবিরের লোকেরা তাদের দলে অনুপ্রবেশ করে এই অপরাধমূলক কাজগুলো করছে। ঐ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছিলেন যে, পাহাড়ে, সমতলে সর্বত্র স্বাধীনতা বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা তাদের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রের অনুঘটক হিসেবে শুধু ইসলামপন্থী নন, পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকেও সম্পৃক্ত করে নেন। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি ও তার শীর্ষস্থানীয় নেতানেত্রীসহ সকল পর্যায়ের সক্রিয় এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও শত্রু তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে, পুত্রবধূ এবং জিয়া পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ও দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ রাজনৈতিক দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও শাসকদলের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, শত্রু তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়। এ উন্মত্ততা এখনও চলছে। এবং সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা সম্পর্কে যখন শুধু বিরোধী দল নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র- জুনিয়র নেতানেত্রী এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সদস্যরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সমালোচনামুখর হয়ে উঠছেন তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন, সমবায় মন্ত্রী এবং দলীয় মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম একাধিকবার এর মধ্যে শেখ হাসিনার হত্যার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। সারাদেশ ও জাতি এখন তার সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনায় মুখর। তার শরিক দল জাতীয় পার্টি নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ পদ-পদবী পাবার আগে বলেছিলেন, মন্ত্রীরা অথর্ব, সরকার দেউলিয়া, অপর শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা, নিয়ন্ত্রণহীন নিত্যপণ্যের বাজার, উদাসীন ও বিপর্যস্ত পুলিশ প্রশাসন এবং শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারীর মতো মহা দুরবস্থার দায় তারা নেবেন না। এর দায়িত্ব আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের। মহাজোটের অন্যতম শরিফ ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা রাশেদ খান মেননও এই দফা মন্ত্রী হবার পূর্বে যোগাযোগমন্ত্রীকে নির্লজ্জ, বেহায়া আখ্যায়িত করে বলেছেন যে, প্রশাসন চলছে সমন্বয়হীনভাবে এবং সরকারের মন্ত্রীরা বিদেশীদের স্বার্থ রক্ষা করছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের মন্ত্রীদের অতিকথনকে ব্যর্থতার চেয়েও ভয়ঙ্কর আখ্যায়িত করে বলতেন যে, মন্ত্রীরা যদি নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা স্বীকার করে সঙ্কট সমাধানে আন্তরিক হন তাহলে জনগণ অন্তত: ধৈর্য ধরতে পারে। তিনি স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেন। একই ধরনের অভিমত প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা ও বর্তমানে মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ বহু নবীন-প্রবীণ এমপি। তাদের বেশির ভাগই গণবিস্ফোরণের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সুরঞ্জিত বাবু অবশ্য সরকারকে একটি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। তিনি বলেছন যে, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে নুতন আইন না হলে সংখ্যালঘু হিন্দুরা সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলনে নামবে। তার দলের সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেছেন যে, তাদের ধৈর্যের সীমা আছে। এ দেশের সংখ্যালঘুরা আজীবন আপনাদের ভোটব্যাংক হয়ে থাকবে না। বস্তুত: লাগামহীন দ্রব্যমূল্য ও জনদুর্ভোগ, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি, বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ-সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কট, শেয়ার কেলেঙ্কারী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন-নিপীড়ন এবং ক্ষমতালিপ্সা বর্তমানে দেশে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি করেছে যার ফলে ১৫ কোটি মানুষের জীবন এখন পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাবার কোনও পথ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না। এই পরিত্রাণের পন্থা হিসেবে অনেকেই মন্ত্রীদের অপসারণ দাবি করেছেন; কোন কোন দল সরকারের পদত্যাগ দাবি করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বলেছেন। সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ যোগাযোগ মন্ত্রীর অপসারণের সময় বেঁধে দিয়ে বলেছেন যে, এর মধ্যে তাকে অপসারণ করা না হলে তারা ঈদের দিনে ঈদ না করে শহীদ মিনারে অবস্থান ধর্মঘট করবেন। বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও আওয়ামী লীগ এমপি তারানা হালিম একই দাবিতে অনশনের হুমকি দিয়েছেন।
অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অদক্ষতা যখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে তখন প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবেন এবং দায় স্বীকার করে সংশোধনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনদুর্ভোগ লাঘব করবেন। কিন্তু হাহতম্বি মন্দ ভাগ্য! তিনি ব্যর্থতা স্বীকার করা দূরের কথা বরং মন্ত্রীদের দক্ষতার বিরাট সার্টিফিকেট দিয়ে বললেন যে, তারা খুবই ভাল কাজ করছেন। তার দৃষ্টিতে দলীয় সমালোচকরাই বড় অপরাধী। তারা ছোটখাট বিচ্যুতির সমালোচনা করে শত্রুর হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। 
এদিকে বিশ্লেষকরা আওয়ামী লীগের বিগত পেছনের সাত বছরের শাসনামলকে শূন্যগর্ভ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অতীতের স্মৃতিচারণ করে তারা বলেছেন যে, ক্ষমতার মদমত্ততা, নির্ভুল পদক্ষেপ ও শতভাগ সাফল্যের দাবির ন্যায় কিছু উপসর্গ আদতেই বালখিল্যতা যা সরকার বা ক্ষমতাসীনদের পতনের পূর্ব লক্ষণ। আওয়ামী শাসনের শুরু থেকে এই লক্ষণগুলো অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে দেখা দেয়। তবে দলটি নিজেদের সংশোধনী না করে ফ্যাসিবাদী ও অত্যাচার-নির্যাতনের আশ্রয় নেয় এবং ভোটারবিহীন ৫ জানুয়ারির ছলচাতুরির নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তারা ক্ষমতা লিপ্সা, অত্যাচার-নির্যাতন ও বেহায়াপনার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
লক্ষ্য করুন, কী অবলীলায় প্রধানমন্ত্রী শুধু হিল্লী-দিল্লী নয়, ওয়াশিংটন, জাতিসংঘ, টোকিও কোপেন হেগেনসহ সারা দুনিয়া তিনি মাত করেন। তবে সংশয় জন্মে শুধু এক জায়গায়ই। যখন তিনি সর্বতই সুপারলেটিভ ডিগ্রিতে কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, না কেউ তাকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে তা বলা মুশকিল। তবে একটা বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ স্পৃহা তার আপাদমস্তক গ্রাস করে ফেলেছে, দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণচিন্তা এখন গৌণ হয়ে পড়েছে। পিতৃ হত্যার বিচার তিনি করেছেন, এখন রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও হত্যার সহযোগীদের বিচারের অঙ্গীকার তাকে পেয়ে বেসেছে। সম্ভবত এ কারণেই মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও দলীয় নেতা-কর্মীদের অপকর্ম তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে না। বিবিসির খ্যাতনামা সাংবাদিক সিরাজুর রহমান তার এক নিবন্ধে একবার আমাদের প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতিতে আসার পটভূমি সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন, এই সাক্ষাৎকারে তিনি পরিষ্কার বলেছিলেন যে, দেশ ও জাতির জন্য নয়, নিরেট পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই শেখ হাসিনা রাজনীতিতে এসেছেন। তার দৃষ্টিতে তার পিতাকে হত্যা করার পর এ দেশের মানুষ উল্লসিত হয়েছেন, তারা তার প্রতিবাদ করেননি। এ প্রেক্ষিতে শাস্তিই তাদের পাওনা। কথা রূঢ় শুনালেও প্রধানমন্ত্রীর কথাবার্তা, অঙ্গীকার ও তার সরকারের কর্মকান্ডে সাক্ষাৎকারটির বক্তব্যকেই সমর্থন করছে বলে মনে হয়।
পাঠকরা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি যে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের সূচনা হয়েছিল পিলখানা হত্যাযজ্ঞ ও বিশৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে এবং এর যৌক্তিক সুরাহা এবং পেছনের শক্তিকে চিহ্নিত না করেই বিচারের কাজ প্রায় সমাপ্ত করা হয়েছে। অথচ সেনা তদন্ত টিম এবং সরকারি তদন্ত কমিটি উভয়েই বলেছে যে, সরকারের সংশ্লিষ্ট এজেন্সিসমূহের কর্মকর্তা এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতার অভাবে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেয়া টিওআর-এর সীমাবদ্ধতার কারণে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের মূল নায়কদের চিহ্নিত করা তাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। তারা এদের চিহ্নিত করার জন্য সম্প্রসারিত তদন্তের সুপারিশ করেছিলেন। জাতিরও প্রত্যাশা ছিল যে, সেনাবাহিনীর চৌকস ৫৭ জন মেধাবী কর্মকর্তা হত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় উন্মোচিত হোক এবং তারা শাস্তি পাক। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আওয়ামী লীগ সরকার এ পথে আর অগ্রসর হয়নি; হয়তো অজানা কোনও ভয়ে। এক্ষেত্রে সেনা হত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে অনীহা এবং নিজের পিতার হত্যাকারীদের সহযোগিতা করার অসত্য অভিযোগে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিচারের প্রত্যয়-প্রধানমন্ত্রীর এই দুই অবস্থানের মধ্যে দেশবাসী কোনও সামঞ্জস্য খুঁজে পান না।
অসলে পতনোন্মুখ যে কোন সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক ফন্দি-ফিকির আঁটতে হয়। তবে এ কথাও ঠিক যে, এসব করে পতন ঠেকানো যায় না। সমস্যা হচ্ছে যখন কোনও সরকার প্রচুর ভোটাধিক্যে ক্ষমতারোহণ করে তখন সরকারের সুস্থ চিন্তাধারা বিগড়ে যায়। আর নির্বাচনের ভূমিধস বিজয় যদি ভোটারবিহীন ও কারচুপির হয় তাহলে তো তারা পাগলই হয়ে যায়। দলটি তখন নিজেদের সম্পর্কে অনেক কথাই ভুলে যায়। ক্ষমতাসীন দলের জন্য এটাই কাল হয়। আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন অনেকটাই এ পর্যায়ে ‘খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দেশ শাসনের পৌনে তিন বছর পার করার পরও তারা সর্বদা সর্বত্র ষড়যন্ত্র খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাদের ব্যর্থতা মানেই প্রথমত অজ্ঞাত মহল, এখন জামায়াত-শিবির ও বিএনপি-আইএসআই থেকে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এই অভিযোগের সত্যতা কখনও যাচাই হয়নি। ১৯৭৪ সালে ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে এবং পার্লামেন্টে ক্ষমা ঘোষণা করে ৩৮ বছর পর তথাকথিত আইনের শাসনের নামে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বেআইনীভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-নীতি এবং আইন-কানুন লঙ্ঘনের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে ও হচ্ছে। এদের কাউকে শূলে চড়ানো হয়েছে ও অন্যরা অপেক্ষায় আছেন। এদিকে সারা দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন-বেআইনী হত্যা, গুম এবং রাস্তায় পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা স্মরণাতীতকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সরকার শুধু ষড়যন্ত্র খুঁজেই বেড়াচ্ছেন।
খ্যাতনামা নিরাপত্তা বিশ্লেষক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটিজিক স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক এম আবদুল হাফিজের মতে, শাসকরা কদাচিত অভিযোগ করে। তারা বরং অভিযোগ খ-ন করে এবং সেগুলোর উত্তর দেয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই শুধু অভিযোগ করে যাচ্ছে। এই অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রের ভূত দলটির কার্যক্রমকে এতই আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে, অনিবার্যভাবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের পাল্লা হালকা থেকে হালকাতর হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা তারা ভুলে গেছেন। তাদের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই সুযোগে জননিরাপত্তার ক্রমাবনতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাট, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিবাণিজ্য এবং সন্ত্রাস-নৈরাজ্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। অবশ্য সরকারের মধ্যে এখানে কোথাও হতাশা দেখা যায় না। সরকারের জিদ এখানে সুস্পষ্ট। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিবাদী প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিকে তারা নির্মূল করতে পারবেন। জয়নাল আবদীন ফারুকের ওপর নির্মম পুলিশী নির্যাতন, পুলিশী হেফাজতে এডভোকেট এম ইউ আহমেদের হত্যা, জামায়াত, বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা ও নির্যাতন এ লক্ষ্যেই পরিচালিত বলে দেশবাসী বিশ্বাস করেন। আওয়ামী লীগের বিশ্বাস, বিএনপির মাথা ও মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, জামায়াতকে পঙ্গু করা হয়েছে। আন্দোলন করার ক্ষমতা ও সামর্থ্য দল দুটি হারিয়ে ফেলেছে। পুলিশ, র‌্যাব ও দলীয় ঠ্যাঙ্গানো বাহিনী তো সরকারের পক্ষেই আছে। র‌্যাবের সদস্যদের অনেকেই ভাড়ায় খেটে মানুষ হত্যার ঘটনা চোখের সামনেই ঘটছে। আবার ‘অদৃশ্য আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সংবিধান থেকে উৎখাত করে দেয়া হলেও দৃশ্যমান প্রতিবেশী ভারতের ওপর আস্থা বিশ্বাস তো আছেই। বিপদে-আপদে তারা যে সাহায্য করবেন দলটি এ ব্যাপারে নিশ্চিত। কাজেই ক্ষমতা যে পাকাপোক্ত আছে এবং থাকবে তাতে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। বিশ্বের উন্নয়শীল দেশসমূহে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় মূল্যবান ও ব্যয়বহুল প্রধানমন্ত্রী বিরল। ক্ষমতায় এসে তিনি আইন করে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার সামগ্রিক সুবিধা নিয়েছেন। ঐ আইনের অধীনে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং এ বাহিনী ও তার সহযোগী এবং লজিস্টিকসের পেছনে আমাদের দৈনিক কত কোটি টাকা খরচ হচ্ছে সে সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানা নেই। এছাড়াও তিনি দেশে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার পাওনা নিরাপত্তা সুবিধাও ভোগ করছেন। এত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে যখন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রশ্ন ওঠে তখন আমরা শুধু স্তম্ভিত নই আতঙ্কিতও হয়ে পড়ি। তার জীবনের যদি আশঙ্কা থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ফর্মূলার রাজনীতি


গাণিতিক সমস্যা সমাধানকল্পে ‘প্লাস’ আর ‘মাইনাস’ শব্দ দু’টি অন্যতম। বিশেষ করে বীজগণিতশাস্ত্রে এ শব্দদ্বয়ের অধিক পরিচিতিও বিদ্যমান। একদিকে গণিতশাস্ত্রে যেমন শব্দদ্বয়টির প্রয়োজনীয়তা অনেকগুণে বেশি। অন্যদিকে বাস্তব জীবনেও তেমন ওই শব্দদ্বয়টি সমাধানকল্পের হাতিয়ারও বটে। এ কারণেই সম্ভবত বহুল পরিচিত ‘প্লাস-মাইনাস’ শব্দদ্বয়টি গণিতশাস্ত্রের পরিধি অতিক্রম করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেখা দিয়েছে নানাবিদ ব্যবহার। তবে রাজনীতির অঙ্গনে প্লাসের চেয়ে জয়জয়কার মাইনাসের অধিক বেশি। একারণেই আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা মাইনাস ফর্মূলার দিকে সহসাই অনেকগুণে বেশি অগ্রসর হয়ে থাকেন। মাইনাসের তীর কেউ ছুঁড়ে দেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলে। আবার কেউ ছুঁড়ে দেন স্বদলে। এতে প্রয়োজনীয়তা থাক আর নাই থাক, সেটা বড় কথা নয়। কে কী ভাবে ‘প্লাস-মাইনাস’ শব্দদ্বয়ের ব্যবহার করছেন আজ সেটাই বড় ভাববার বিষয়।
ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার একপর্যায়ে ‘প্লাস’, ‘মাইনাস’ শব্দদ্বয়টি বিশেষ করে রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ফর্মূলায় পরিণত হয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে নানাজনে নানাভাবে ‘প্লাস-মাইনাস’ ব্যবহার করতে প্লাসের চেয়ে মাইনাস ফর্মূলার দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখা যায় অনেকটাই বেশি। এছাড়া ফর্মূলাটির নীতি অনুযায়ী ‘প্লাস’ আর ‘প্লাস’ এ মিলে হয় ‘মাইনাস’। অন্যদিকে ‘মাইনাস’ আর ‘মাইনাস’ এ মিলে ফলাফল প্লাস হওয়ায় কৌশলগত কারণেই লীডাররা ‘মাইনাস ফর্মূলা’টিকেই অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মাইনাস ফর্মূলাটিকে ব্যবহার করতে রাজনীবিদরা অন্য সবার চেয়ে এগিয়েও বটে। যে কারণে লীডাররা ‘মাইনাস’ ফর্মূলাটি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তবে কেউ কেউ স্বীয় উদ্দেশ্য হাসিল করতে ইচ্ছামাফিক থেকে শুরু করে নগ্নভাবে ‘মাইনাস’ ফর্মূলাটিকে ব্যবহার করতে দ্বিধা করেন না।
স্বাধীনতার পর এ দেশের উন্নয়ন আর যাই হোক, বিশেষ করে গণমাধ্যমের যে বিস্তার লাভ হয়েছে এটা মোটেও অস্বীকার করার নয়। বরং বারবার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টার পরও সব বাঁধা অতিক্রম করে আজকাল গণমাধ্যমের সুফলের হাওয়া আকাশে-বাতাসে বিরাজ করছে। ফলে দেশের মফস্বল এলাকায় বসেও অনায়াসেই দেশ-বিদেশের অনেক হালতই জানা যাচ্ছে।
গণমাধ্যমে জানা যায়, আমাদের দেশে মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতির চর্চা অতিতেও ছিল। এখনও হচ্ছে। বিশেষ করে ইদানিং মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতিতে চরম হাড্ডাহাড্ডি লেগেছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের থেকে আরম্ভ করে একেবার দলের শীর্ষ নেতারাও মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতিতে বড় মশগুল। তবে মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতিতে আজ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই থাকলেও শুরুটা অনেক পুরোনো। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই উৎপত্তি হয়েছিল মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতির। স্বীয় উদ্দেশ্যপূর্ণ রাজনীতিতে মাইনাস ফর্মূলাটি বেশি গুরুত্ব পায়। এতে কতিপয় নেতার কণ্ঠে অশুভ কথাও কম শুনা যায় না। বরং আজকাল এমন হয়েছে যে, রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল এমনকি টক-শো, সাংবাদিক সমম্মেলনেও মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতিতে ‘রাজনৈতিক শয়তান’, বিশ্ব বেঈমান’, ‘বেহায়া’, ‘জঙ্গিবাদীর মা’ ‘জামায়াতের ঘোমটাওলা আমীর’, ‘সন্ত্রাসী’, ‘মিথ্যাবাদী জননী’ ইত্তাকার অশুভ কথামালায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা হচ্ছে বিজ্ঞ দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক বন্ধুদের তরফ থেকে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি মহাজোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু প্রায় প্রতিদিনই মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতিতে বেশ সজাগ থাকেন। কোনো সভা, সমাবেশ কিংবা সেমিনার হলেই তিনি মাইনাস রাজনীতির কথা অনেকটা দাপটেই ছুঁড়ে দেন। মাননীয় তথ্যমন্ত্রী অনেক দিন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে মাইনাস করার কথা বলছেন। আর এতে তাঁর কণ্ঠে অশুভ কথারমালা অনায়াসেই ঝরতে শুনা যায়। মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতিতে বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রী বাহাদুর ‘রাজনৈতিক শয়তান’, বিশ্ব বেঈমান’, ‘বেহায়া’, ‘জঙ্গিবাদীর মা’ ‘জামায়াতের ঘোমটাওলা আমীর’, ‘সন্ত্রাসী’, ‘মিথ্যাবাদী জননী’ ইত্তাকার নানা অশালীন শব্দে বেগম খালেদা জিয়াকে আক্রমণ করতে দ্বিধা করেন না।
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে আজকের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী মহোদয়েরাই জাসদের ভক্ত হিসেবে মাইনাস ফর্মূলার রাজনীতি এদেশে প্রথম চর্চা শুরু করেন। ১৯৭২-৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মাইনাস করার জন্য মনোনীত করা হয়েছিলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী অতি সফলভাবে মাইনাস ফর্মূলাটি বাস্তবানও করা হয়েছে।
চলতি শতাব্দীর শুরু থেকে এদেশের রাজনীতিতে দ্বিতীয়বার মাইনাস ফর্মূলাটি প্রয়োগের মহাপরিকল্পনার বোমা ফাটানো হয়। দুর্বল চিন্তায় ওই পরিকল্পনা অঙ্কুরেই ভঙ্গুর হয়। ফলে ভেস্তে যায় চক্রান্তকারীদের আসল উদ্দেশ্য। ওয়ান-ইলেভেন এর ক্ষমতা ধর ফকরুদ্দীন-মঈনদ্দীন সরকারের আমলে তৃতীয় বারের মতো এদেশের রজনীতিতে মাইনাস ফর্মূলাটি প্রয়োগের প্রবল আওয়াজ ওঠে। এতে রাজনীতির অঙ্গন থেকে দুই দলের দুু’জন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদকে বিদায়ের ঘন্টা বাজানোর অপকূটকৌশল গ্রহণ করে নানাবিদ ফিকির-ফন্দি আঁটা হয়। ফলে চারিদিকে সৃষ্টি হয় মাইনাসের তুমুল হৈ হুল্লা। মাইনাস ফর্মূলার টার্গেটের একজন হলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। অপরজন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমের সুফলে আর গণবিস্ফোরণে ওই পরিকল্পনা শেষমেশ আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ব্যর্থ হয় ১/১১ এর ক্ষমতাধর ফ-ম সরকারের যতো অপক্ষমতার কূটকৌশল।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালী মাঠে গোল দিয়ে ‘ম্যারাডোনা’ কৃতিত্ব অজর্নকারীরা তীতৃয়বারের মতো এদেশের রাজনীতিতে আবারও মাইনাস ফর্মূলা প্রয়োগের নতুনভাবে চিন্তা-ফিকির শুরু করে নানাবিদ ফন্দি আঁটছেন বলে প্রতীয়মান। এবার পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় যে, মাইনাস ফর্মূলাটি প্রয়োগ করতে পারলেই হয়তো আগামীতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের গণতন্ত্রের ক্লাবে প্রবেশের বিকল্প কোনো পথ এবং সুযোগ উভয়ই থাকবে না। সব অধিকার আদায় হবে মাইনাস ফর্মূলা প্রয়োগকারীদের। ফলে তাদের ভাগ্যের কেল্লাও ফলবে রাজনীতিতে। এতে অন্যের অধিকার হরণ হলেও মাইনাসকারীদের তাতে নো-টেনশন, ডু-ফূর্তি।
গণতন্ত্রের হাউজে প্রবেশের ‘টিকেট’ সংগ্রহের যাবতীয় কার্যক্রমে বাঁধা প্রয়োগ করে ন্যূন্যতম রাজনৈতিক অধিকার টুকুও ছিনিয়ে নেয়ার পরপরই দশম সংসদ নির্বাচনে খালী মাঠে গোলদাতাদের পক্ষে বয়ান দেয়া হচ্ছে যে, ‘খালেদা জিয়া গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নন। তিনি দেশে অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে চান।’
এরপর খালেদা জিয়াকে মাইনাস বা বিয়োগ করার কথা চারদিকে চাউর হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে মাইনাস হলেই নাকি রাজনৈতিক সব প্রতিবন্ধকতা রোধ হবে। আমরা বলতে চাই,  বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক হিসাবের জাবেদায় মাইনাস ফর্মূলাটি প্রয়োগ করা নিতান্তই সহজ নয়। যদিও সময় সাপেক্ষে তাকে রাজনৈতিকভাবে মাইনাস কিংবা বিয়োগ করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু ইতিহাসের পাতা থেকে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করা শুধু চ্যালেঞ্জিং বিষয় নয়; অসম্ভবও বটে। কারণ প্রবীণদের কিংবা নতুন প্রজন্মের যদি এদেশের প্রধানমন্ত্রীদের নামের তালিকার একটি সারণি তৈরি করতে বলা হয়। এতে বেগম খালেদা জিয়ার নাম বাদ দেয়াটা হবে শিক্ষিত মেধাহীনদের অযোগ্যতা। আর অশিক্ষিত আবাল-বৃদ্ধ কিংবা নতুনদের হবে অক্ষমতা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম সত্যকে পেছনে ফেলে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী সদাচার গলাহাঁকিয়ে বয়ান দিচ্ছেন যে, খালেদা জিয়া ‘জঙ্গিবাদী’, ‘সহিংসতার মদদ দাতা’। নির্বাচিত তিন তিনবারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রী মহোদয় অব্যাহতভাবে প্রতিদিন ‘রাজনৈতিক শয়তান’ বলে আখ্যায়িত করে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে যাচ্ছেন। মন্ত্রী মহোদয় খালেদা জিয়াকে ‘দুর্র্ধর্ষ সন্ত্রাসী’ ও  চোগোলখুরি নামেও অপবাদের বয়ান দিতে কোনো ধরণের দ্বিধা করছেন না।
আমরা মনে করি, তথ্যমন্ত্রী তথ্য বেশি জানবেন এটা মোটেও অস্বাবিক নয়। সেকারণে আমরা না জানলেও তথ্যমন্ত্রী হিসেবে তার কাছে হয়তো বেগম খালেদা জিয়া একজন ‘দুর্র্ধর্ষ সন্ত্রাসী’, ‘মিথ্যাবাদী’ ও ‘জঙ্গিবাদী’ এমন যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। সেকারণেই হয়তো মাননীয় বিজ্ঞ মন্ত্রীমহোদয় ওই রকম বেফাঁস অভিধায় সদাচার আক্রমণ করতে দ্বিধা করছেন না একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। তবে কথা থাকে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জনসভায় ‘মিথাবাদী’, ‘শয়তান’, এমনকি ‘জঙ্গিবাদীদের মা’ ইত্তাকার ‘অশুভ সম্বোধন’ করা কেবল বেমাননই নয়। এসব অপ্রত্যাশিত হীনকর্ম একজন আইন প্রণেতা হিসেবে শিষ্টাচার বর্হিভূতও বটে।
বাস্তবতা হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া ইতিহাসের পাতায় কতদিন থাকবেন বা কতটুকু স্থান দখল করবেন ওই পরিসংখ্যান এখন মিলানো না গেলেও তাঁকে অসম্মমান করাটা যে জ্ঞানীর কাজ নয় এমনটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারণ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোটের পরিধি ক্রমে বেড়েই যাচ্ছে। গণতন্ত্র হাউজে প্রবেশের আন্দোলন-সংগ্রাম করারও যথেষ্ট শক্তি সামর্থও দেখা যাচ্ছে। ফলে ক্ষমতায় ফিরতে সুযোগও সৃষ্টি করে নিতে পারে। কাজেই খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে মাইনাস ফর্মূলায় হঠানো বা বিয়োগের অপকর্ম থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করাটাই হবে সাধুবীর জন্য একান্তই সাবধানতা। তাছাড়া স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনীতির অঙ্গন থেকে কাউকে মাইনাস করার চিন্তা-ফিকির প-শ্রমও বটে।
একজন উচ্চ আসনের সম্মানিত ব্যক্তিকে এবারই যে প্রথম এদেশে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে শুনা গেলো তা কিন্তু নয়। কারণ, টুঙ্গিপাড়ার মরহুম শেখ লুৎফর রহমান ও মরহুমা সায়রা খাতুনের সুনামধন্য ছেলে স্বাধীনতার অমর নায়ক বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও একদিন ‘বাংলার মীরজাফর’সহ নানাবিদ তিক্ত অভিধায় সম্বোধন করতে দেখা ও শুনা গেছে খোদ রাজধানীর কোনো এক রাজনৈতিক জনসভা স্থল থেকে। এদেশের মানুষ অনেকেই নিজ কানে ওইসব হীনবচন শুনার অগৌরব অর্জন করেন। একশ্রেণির দেশপ্রেমিক নামধারী রাজনীতিবিদরা অতিতে ভুল করেননি অশ্রাব্য ভাষায় আক্রমণ করতে কালজয়ী ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুকে। অতিতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও মাঝেমধ্যে কুরুচিপূর্ণ শব্দমালায় বঙ্গবন্ধুকে আক্রমণ করতে দেখা যায়। অপরদিকে ওইসব বেঁফাস বক্তব্য শিশুর মতো শুনে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর অগণিত অক্ষম ভক্তবৃন্দ। কিন্তু ক্ষমতাবান ভক্তদেরও যেমন কোনো প্রতিবাদ করার নজির দেখা যায়নি। তেমন বেঁফাস বক্তব্যকারীদের আদৌ বিচারের কাঠগড়ায়ও দাঁড় করানো হয়নি।
ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুকে ডিলেট করে দেয়াটা কোনো ইতিহাসবিদের ন্যূন্যতম হিম্মত আছে বলে কমপক্ষে আমার বিশ্বাস হয় না। বরং তিনি সর্বোচ্চ আসনেই আসীন থাকবেন এমনটা অসত্য নয়। তাপরও বঙ্গবন্ধুরই যখন স্বাধীন দেশের দেশপ্রেমিক নামধারী লীডারদের কাছে শেষ রক্ষা হয়নি। তাঁর চেয়ে কত যে পরের সিরিয়াল বেগম খালেদা জিয়ার এ হিসাব কেউ জানলেও আমার পক্ষে অসম্ভব। কারণ বড় সখের পেশা সাংবাদিকতার মুজেজায় নূন্যতম অধিকারের মুখ দেখার ইচ্ছা পোষণ করায় প্রায় দেড় ডজন মামলার ঘানি টানতেই কর্মকাম শেষ করে ফেলেছি। বস্তুনিষ্ঠ খবর পত্রিকায় প্রকাশের দায়ে পুলিশী গ্রেফতার থেকে শুরু করে থানা হাজতসহ জেল-হাজতে বসবাস করতে হয়েছে। কত বার যে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় অসহায়ের মতো জামিন চাওয়া আর হাজিরা দেয়ায় আজকাল মামলার ধার্য তারিখটাও মনে না থাকায় মাঝে মধ্যেই জামিন বাতিল হয়। পুলিশী হয়রানি থেকে নিস্কৃত পেতে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। এসব নানা কারণে জ্ঞান-বুদ্ধি অনেকটাই লোপ পেয়েছে। যাক, দুখের সংলাপ বলে সময় নষ্ট করতে চাই না। শুধু এতোটুকু বলতে চাই, একটি দেশের স্বাধীনতার নায়ককে অশ্রাব্য ভাষায় আঘাত করে ইতিহাসকে জর্জরিত করা হলেও যদি জাতির সম্মানের কোনো হানি না ঘটে সেদেশে একজন গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল এমন ব্যক্তিকে অশ্রাব্য ভাষায় আঘাত করা বুঝি খুব একটা বেমাননা নয়।
এছাড়া ষাট বছর দাওরা হাদিস পড়ানো অভিজ্ঞতাসম্পূর্ণ বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা হযরত আজিজুল হক আমীনির বিরেুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে সূচনাতেই ‘চোর’, ‘ডাকাত’, ‘সন্ত্রাস’ ‘ঠকবাজি’ প্রভৃতি অরুচিপূর্ণ শব্দাবলী দ্বারা আখ্যায়িত করতে দেখো গেছে এদেশের কতিপয় রাজনৈতিক লীডারদের। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ওই বজুর্গ ব্যক্তিকে পুলিশী গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে জেল-হাজতেও রাখা হয়েছে চোর-ডাকাতদের সঙ্গে। এতেও এদেশের রাজনীতিবিদদের তেমন কোনো টনক নড়ার নজির নেই। তবে জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফাচ্ছিরে কুরআন আর্ন্তজাতিক ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা তথাকতিথ যুদ্ধাপরাধী মামলায় ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই দেশব্যাপী তৌহিদী জনতা গর্জে ওঠে রাজপথে নামেন। শত শত মানুষ জীবন বির্সজনও দিয়েছেন। কিন্তু যা করার তা ক্ষমতাবানরা করায় সবকিছু নিরবে সহ্য করতে হচ্ছে অক্ষমতাবানদেরসহ ভুক্তভোগিদের।
মাইনাস ফর্মূলাটি প্রয়োগ করতে জাসদ নেতারা কাজের কাজি। যেমন হুট করে জাসদ থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে প্লাস বা যোগ হয়ে প্রথমে গণতন্ত্রের হাউজে প্রবেশ। তৎপর মন্ত্রণালয়ে ভাগ বসিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু সাহেব। তাও আবার তথ্যমন্ত্রণালয়ে। এটা অবশ্যই বাস্তব যে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জাসদ ক্ষমতার বাইরে থেকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুক তা দলের নেতাদের কাম্য না থাকায় মন্ত্রণালয়ে ভাগবসানোটা সম্ভব হয়েছে।
জাসদ একটি বিপ্লবী দল বলে দাবি করেন দলটির নেতারা। বিপ্লব মানেই উন্নয়ন। বিপ্লব মানেই পরিবর্তন। এমনটি দাবি জাসদ নেতাদের। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও প্রতিহিংসামূলক নাশকতা উন্নয়নের বিপরীত। যা বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোতে বিরাজমান। এমন নির্লজ্জ বয়ান জাসদ নেতাদের।
দিন বদলে গেলেও ইসিহাস কখনো বদলায় না এমনটি দাবি যেমন ইতিহাসবিদদের। তেমন আমাদেরও। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাসদ বিপ্লবের জন্য বেছে নিয়েছিল। ওই দিন জাসদ নেতারা তা-ব চালায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় থানা, রক্ষীবাহিনী, বিডিআর ক্যাম্প। বাদ যায়নি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মনসুর আলী সাহেবের বাসভবনও। ওইসব স্থাপনায় অর্তিকিতভাবে আক্রমণ চালায় বিপ্লবী নামধারী জাসদ ভক্তবৃন্দ। যার দরুণ ওইদিন সন্ধ্যার আগেই জনশূন্য হয় রাজধানীর পথ-ঘাট। এদিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানম-ির বাসভবনে মস্কো যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সরকারকে জাসদ কতটুকু অন্তর দৃষ্টিতে দেখে সে বিষয়ে সামান্যতম হলে জেনে রাখা প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর জাসদ এবং গণবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ৬ জুলাই জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া গণমাধ্যমে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করেন ‘১৯৭৫ সালে যখন সংসদীয় রাজনীতি অনুপস্থিত, তখন প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েই জাসদ গণবাহিনী গঠন করে। গণবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছিল। কখনো গোপন ষড়যন্ত্র বা বেঈমানির পথে পা বাড়ায়নি। বরং সে সময় যারা চাটুকারিতার আড়ালে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তারাই খোন্দকার মোশতাক বা কাজী ফিরোজ রশীদের মতো প্রথম সুযোগেই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের পিঠে ছোবল হানে।’
ওই বিবৃতিতে জাসদ নেতাদ্বয় গণবাহিনীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘গণবাহিনী সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেছিল।’ আমরা মনে করি, যে দল অন্য দলকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে পরগাছার ন্যায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভাগিদার হয় এবং অপরের অকৃত্রিম করুণায় ললাটে মন্ত্রণালয় মিলে। সেই দলের ওপরও জাসদ নেতাদের বিষেধগার করতে কুণ্ঠিতবোধ করতে দেখা যায় না।
জাসদের নোংরামি রাজনীতির সহজেই পরিসমাপ্ত নয় বরং অনেক দীর্ঘ। সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মার্চে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ওই নির্বাচনেরও জাসদ বিরোধিতা করে। আক্রোশটা মূলত বঙ্গবন্ধুর ওপর ছিল। ওই সময় জানুয়ারি মাসে তৎকালীন জাসদ সভাপতি মেজর এম এ জলিল এক বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়- ‘আজ যখন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রতি দৃষ্টিপাত করি, তখন সত্যই মর্মাহত হতে হয়। হৃদয় নিংড়ানো কান্না আসে। কারণ, যেসব বীর সৈনিকেরা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আজ তাদের দুঃখের সীমা নেই, তাদের ঘর নেই, খাবার নেই, এমনকি অনেকেই ‘রাজাকার’ বলে ধিক্কার পাচ্ছে। যুদ্ধের সময় শত্রুর ঘরে গ্রেনেড ফাঁটাতে গিয়ে সেই চার্জে আজ তারা অনবরত জেলেও যাচ্ছে। আবার সেদিনের ঘটনা, লে. কর্নেল যিয়াউদ্দিনকে ও লে. কর্নেল তাহেরকে আর্মি থেকে বিনা বিচারে (ডিসমিস) Dismiss করা হয়েছে। অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির একটা সীমা থাকে, বঙ্গবন্ধু। হয়তো এইভাবে ধীরে ধীরে একদিন বাংলার গোটা সামরিক বাহিনী স্তিমিত হয়ে যাবে। কিন্তু কেন? এটা কি তাহলে তোমার ক্ষমতা লোভের প্রকাশ, না কোনো বন্ধু মহলের কুইঙ্গিত।’
আমরা বলতে চাই, সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করতেই মূলত উসকানিমূলক ওই বিবৃতিটি জাসদের পক্ষে দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে নির্বাচনের ছয় মাস পরে ১৯৭৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বরে এক প্রচারপত্রে জাসদ ঘোষণা করে, ‘ভারতের পঁচাত্তরটি বিড়লা-টাটাদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী ও বর্তমান সোভিয়েতের ব্রেজনেভ কোসিগিন প্রতিক্রিয়াশীল চক্রে’র প্রতিনিধি শেখ মুজিবের ‘ফ্যাসিস্ট জাতীয় বিশ্বাসঘাতক সরকারকে উৎখাত করার জন্য, ঘুণে ধরা এই সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে নূতন সমাজের ভিৎ রচনা করার জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গ করবো।’
ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল- ‘জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে একপর্যায়ে স্তব্ধ করে দিয়ে বিদেশী শক্তির সহায়তায় বর্তমান ক্ষমতাসীন চক্র যেদিন বাংলার মসনদে উড়ে এসে জুড়ে বসল, সেদিন থেকেই এ দেশের মানুষের আরেক দুঃখের রজনী শুরু হলো। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ নয় মাসের সমস্ত আশা সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যেতে দেখল মানুষ।’
সরকারের প্রতি যাতে সাধারণ মানুষের ঘৃণার সৃষ্টি হয় এমন লক্ষ্যকে সামনে রেখেই জাসদ ওই ধরণের হিংসাত্মক ভাষায় বিবৃতি দিতো। আর ওই রকম বিবৃতিতে রুশ বিপ্লব ও চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চেয়ে জাসদ অনেকগুণে বড় এমন স্লোগানের বোমা ফাঁটানো হতো। এতে সরল ও বোকা প্রকৃতির মানুষরা মনে করত জাসদের বিপ্লবেই বুঝি মুজিবের পতন অতিআসন্ন। এছাড়া ১৯৭৪ সালে বিপ্লবী নামধারী ওই জাসদ ‘মেহনতী মানুষের সার্বিক মুক্তির’ লক্ষ্যে মুজিব সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট সরকার’ আখ্যায়িত করে সরকারের উৎখাত দাবি জানিয়েছিল।
আজ সহসাই প্রশ্ন ওঠে, স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধুর সরকারকেই যখন ‘ফ্যাসিস্ট সরকার’ হিসেবে আখ্যায়িত করার হিম্মত দেখাতে জাসদ বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য করে নাই। সেই জায়গায় বেগম খালেদা জিয়া আর কতটুকুই খাতির বা সম্মান পেতে পারে সমাজবান্ধব রাজনৈতিক দল পরিচয় দানকারী জাসদের নিকট। তবে সময়ই হয়তো একদিন বলে দিবে বিএনপি’র চেয়ে জাসদের অর্জন কতগুণে কম না বেশি। ওই সু-দিনের অপেক্ষায় হয়তো আরও কিছুদিন সব ধরণের পরিস্থিতি ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে জাতীয়তাবাদী পক্ষের শক্তি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপি’র ভক্তবৃন্দদের। সেইসাথে আমাদেরও এইদিনকে লিখে নিতে হবে ওইদিনের কাছে।
এম. কে. দোলন বিশ্বাস

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

১৫ কোটি মানুষ শিকলবন্দী হয়ে যাবো?

বাংলাদেশে এখন যে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, সে সরকার কোনো বিবেচনায়ই জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার নয়। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে যে গণতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়, সে ধারণা মুছে দেয়ার আয়োজন বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা ২০১১-২০১২ সাল থেকেই শুরু করেছে। এখন মনে করছে এরা সেটি নিষ্পন্নের কাছাকাছি চলে এসেছে। সমীকরণটি খুব সহজ। পৃথিবীর সব স্বৈরতান্ত্রিক সরকার এ ধরনের সরল সমীকরণ করে থাকে। শেখ হাসিনার সরকারও এর ব্যতিক্রম নয়। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের তিন বছরের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পর এ দেশে নতুন করে গণতন্ত্রের চর্চা ফিরিয়ে এনেছিল, তা পছন্দ হয়নি শেখ হাসিনার। তিনিই জামায়াতে ইসলামীর সাথে মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল না। এ ধারণাটি এনেছিলেন জামায়াত নেতারা। শেখ হাসিনা তা লুফে নিয়েছিলেন। আর জামায়াতের সাথে জোট বেঁধে ১৯৯৫-৯৬ সালে এমন এক আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন যে, সে সময় ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের দাবি অনুযায়ী সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযোজন করেছিল।
সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তনের সময় মেয়াদ শেষে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি সরকার নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। সে সময় বেগম খালেদা জিয়া জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছিলেন, সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে সবাই নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচন করে সংসদে বসুন। এরপর আসুন আমরা সবাই মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রণয়ন করি। আওয়ামী লীগ সে নির্বাচন বর্জন করেছিল। এখন অনেকেই ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে নিন্দামন্দ করেন। কিন্তু ওই নির্বাচন ঘোষণার প্রাক্কালে বেগম খালেদা জিয়া সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছিলেন যে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের একমাত্র দায়িত্ব হবে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা। সংবিধানের সে সংশোধনী পাস করার পর এই সংসদ বিলুপ্ত করে দেয়া হবে। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন করা হবে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে গঠিত সংসদ বিলুপ্ত হবে। তিনি যথারীতি তাই করেছিলেন। কিন্তু সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে অস্বীকার করে।
বিষয়টি অদ্ভুত। এরাই দাবি করলেন, সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। অথচ সংবিধান সংশোধনের সে প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া থেকে শেখ হাসিনা দূরে রইলেন। তাদের এই সিদ্ধান্ত থেকেও স্পষ্ট হয় যে, প্রকৃতই এরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চেয়েছিলেন, নাকি চেয়েছিলেন সামরিক হস্তক্ষেপ? বরাবরই দেখা যায়, বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকলে সামরিক হস্তক্ষেপ শেখ হাসিনার কাছে অতি প্রিয়।
বেগম খালেদা জিয়া কথা রেখেছিলেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন সম্পন্ন করে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছিলেন। ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন, সংবিধান অনুযায়ী নবগঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। এখন যারা ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির সমালোচক, তারা জ্ঞানপাপী। এরা এ কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করেন, বিএনপি ওই নির্বাচন করেছিল শুধু আওয়ামী লীগ জামায়াতের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার জন্য। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। সেটিকেও ষড়যন্ত্রমূলক বলে অভিহিত করা যায়। কিন্তু শুধু বিএনপির সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে গঠিত ফেব্রুয়ারির সংসদে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রণীত হয়, তাতে অংশগ্রহণ করে ১৯৯৬ সালেই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়। জামায়াত তখন তাদের অতি প্রিয় সংগঠন ছিল। যুদ্ধাপরাধ, রাজাকারÑ এসব শব্দ আওয়ামী অভিধান থেকে মুছে গিয়েছিল। আওয়ামী নেতারা গিয়ে গোলাম আযমকে সালাম করেছেন। মতিউর রহমান নিজামীকে পাশে বসিয়ে নানা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। তখন সেটা পাপ ছিল না। পাপ হলো তখনই, যখন জামায়াতে ইসলামী আওয়ামী লীগের সঙ্গ ছেড়ে বিএনপির সাথে জোট বাঁধল।
কিন্তু শেখ হাসিনা সঠিকভাবে উপলব্ধি করেছিলেন, এ দেশে যদি কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় আসীন থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেই নিরপেক্ষ নির্বাচনের চাবিকাঠি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ফলে এই ব্যবস্থা কিভাবে ধ্বংস করা যায়, তার সামগ্রিক আয়োজন তিনি করতে শুরু করেন। এ দেশে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে আঁতাতের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেটা সবাই অবগত আছেন। সে সময়কার মইন উ আহমেদের সামরিক সরকার আওয়ামী লীগ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আঁতাত করে নিজেদের চামড়া বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। মইন উ আহমেদ ছিলেন উচ্চাভিলাষী। কিন্তু তার বিদ্যা-বুদ্ধি ও সাধারণ জ্ঞানের অভাব ছিল। তার কথাবার্তা শুনে সে সময় তাকে অনেকেই প্রতিবন্ধী বলে অভিহিত করত। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হয়েছেন। আর ২০০৭-২০০৮ সালে ক্ষমতায় থেকে এমন সব ইতর কর্মকাণ্ড করেছেন ও করিয়েছেন যে, শেখ হাসিনাও তাকে নিজের লোক বলে স্বীকার করছেন না। তার প্রসঙ্গ এলেই তিনি অভিযোগ করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া ছয়-সাত জনকে ডিঙিয়ে তাকে সেনাবাহিনী প্রধান করেছিলেন। তার দায়িত্ব আমরা নেবো কেন? অথচ রক্ষীবাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণ করা মেজর জেনারেল মাসুদউদ্দিনকে শেখ হাসিনা কী যে ভালোবাসেন, তার প্রমাণ চলছেই। মাসুদউদ্দিনকে তিনি অবিরাম অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েই যাচ্ছেন। বলিহারি।
এসব কিছুই অতীত। কিন্তু বর্তমানে আমরা নাগরিকেরা বড় বেশি বিপন্ন হয়ে পড়েছি। কারণ শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন করে ইতোমধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন। কারণ, তিনি জানতেন বা জানেন যে, আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে যে পরিমাণ অপকর্ম করেছে, তাতে ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। আর নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনা শূন্য। তাই শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিলেন। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জনগণ আওয়ামী লীগের অপশাসন, দুঃশাসন, লুণ্ঠন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সুযোগ পেত। সংবিধানে যতই বলা থাক না কেন জনগণই রাষ্ট্রের মালিক, আওয়ামী লীগার হিসেবে রাষ্ট্রের মালিক-মোক্তার তারাই। সংবিধান সেটাই, যা শেখ হাসিনা বলবেন।
এর মধ্যে নতুন যুক্ত হয়েছে, শেখ মুজিবকে হত্যার আন্দোলনকারীদের অন্যতম একাধিক ব্যক্তি যারা শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার এবং মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনার কাছে তাদের ডিকটেশনের মূল্য অনেক বেশি। আওয়ামী লীগের বনেদি নেতা তোফায়েল, আমু, সুরঞ্জিত এখন নিজেদের ট্র্যাকে রাখতে খুব ব্যস্ত। কারণ শেখ হাসিনা ফরগেট করেছেন, ফরগিভ করেননি। টাকার বস্তা ও কালো বিড়াল খ্যাত সুরঞ্জিতকে নিয়ে ভাবি না, আমির হোসেন আমুও ব্যাপার নন, সবচেয়ে কষ্ট হয় তোফায়েল আহমেদের জন্য। শেখ হাসিনা যখন দৃষ্টিসীমার অনেক দূরে ছিলেন, তখন তোফায়েল আহমেদই ছিলেন তারুণ্যের অন্যতম কণ্ঠস্বর। হাহ, কী নগ্ন আত্মসমর্পণ! ভাবতে লজ্জা লাগে। তবুও আওয়ামী লীগ মানেই আওয়ামী লীগ। সত্য তাদের কাছে বিরক্তিকর। তোফায়েল আহমেদ মুক্তিযোদ্ধা সাজার কাহিনীও এখন অনেক স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাতেও শেখ হাসিনার ভালোবাসা পাওয়া যায়নি। হাছান মাহমুদ, সুরঞ্জিত বা হানিফের মতো অমন জায়গায় দাঁড়িয়ে গেছেন তোফায়েল আহমেদ। ব্যক্তিগতভাবে আমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।
কিন্তু কোথায় আটকে গেলাম? আটকে গেছি এইভাবে যে, সরকার একের পর এক এমন সব আইন প্রণয়ন করছে যে, সত্য প্রকাশ অসম্ভব হয়ে গেছে। সরকার একের পর এক আইন জারি করছে। জারি করেছে বিচারপতিদের অভিশংসন আইন, জারি করেছে সাইবার অপরাধ আইন, জারি করেছে সম্প্রচার নীতিমালা, সংশোধন করছে প্রেস কাউন্সিল আইন। তার ওপর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বামী-স্ত্রীর রাজনীতি করার অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ। এসবই এ দেশের মানুষকে শিকলবন্দী করার পরিকল্পনা। ৫ জানুয়ারির অনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে যেসব আইন পাস করা হচ্ছে, তার বৈধতার দায়দায়িত্ব কার? শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে যে হাসানুল হক ইনু গণবাহিনী গঠন করে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেছিলেন, তিনি এখন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যমন্ত্রী। তার কথায়ই শেখ হাসিনা সংসদে টুঁ শব্দ ছাড়াই পাস করে নিলেন সম্প্রচার নীতিমালা। পুলিশ অন্যায় করলে প্রকাশ করা যাবে না। র‌্যাব খুন করলে প্রকাশ করা যাবে না। কারণ এতে তাদের ভাবমর্র্যাদা নষ্ট হবে। এসব বাহিনীর ভাবমর্যাদা নষ্ট করা কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্য সঙ্গত হবে না। তাদের জন্য শাস্তি। আচ্ছা, শাস্তি দিলে বিচার বিভাগ যদি মনে করে এই শাস্তি যথোপযুক্ত নয়, সেটাও তো মেনে নেয়া যায় না। অতএব যে বিচারক এ রকম মনে করবেন, তাকে অভিশংসন করবে একটি অনির্বাচিত সংসদ।
ইতোমধ্যে আর এক আইন পাস হয়ে গেছে। তার নাম সাইবার অপরাধ। কী আশ্চর্য, এক তরুণ শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান লিখে এখন সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছে। সাইবার অপরাধে তার এই দণ্ড হয়েছে। কটূক্তি করা যাবে না। সমালোচনা করা যাবে না। সরকার যা চায়, তার বাইরে কিছু বলা যাবে না। কটূক্তি কাকে বলে, আমরা জানি না। ওই গানে শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনা সম্পর্কে সাইবার তরুণ কী লিখেছিলেন, তাও আমার দেখতে ইচ্ছে করেনি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তি করা যাবে না। এতে যদি সাত বছরের জেল হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান, কাদের সিদ্দিকী, এ কে খন্দকার, তাদের বিরুদ্ধে যেসব কটূক্তি করা হচ্ছে এদের বিরুদ্ধে কি ৭০০ বছর জেল হওয়া দরকার? সরকারকে সেটাও ভেবে দেখতে হবে।
সর্বশেষ, এত দিন পর্যন্ত এর সবই ছিল ইলেকট্রনিক মিডিয়াসংক্রান্ত। অনলাইন সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের অধীনে চলে আসবে। বেসরকারিভাবেও যদি টিকে থাকতে হয়, তাহলে সরকারি কীর্তন করতেই হবে। সরকারের তল্পিবাহক মিডিয়াগুলোও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট সংশোধনের মাধ্যমে সরকার যখন প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর হামলার উদ্যোগ নিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই যে, প্রেস কাউন্সিল, যে প্রতিষ্ঠান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত, সেই প্রতিষ্ঠানটিকেই সংবাদপত্রের ডিকারেশন বাতিল, জরিমানা করা, শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির সুবিধা রদ করা ইত্যাদি ক্ষমতা
দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে যে, কেউ যদি সাংবাদিক হতে চায়, তবে
তাকে পরীক্ষা দিয়ে প্রেস কাউন্সিল থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। কে কল্পনা করেছিল যে, বাংলাদেশে এমন মগের মুল্লুক চালু হবে!
কথা এখানেই শেষ নয়। আরো একটি আইন করছে সরকার। যেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের স্বামী কিংবা স্ত্রী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। তার অর্থ দাঁড়াল এই যে, কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক কেউ সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না। আমার স্ত্রী বা স্বামী যদি রাজনীতি করেন, তবে তাকে হাজারবার বিবেচনা করতে হবে তিনি কোন দল করবেন। অর্থাৎ স্ত্রী সরকারি চাকরি করেন, স্বামী রাজনীতি করেন এটি সম্ভব হবে না। নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া যায় যে, সেই স্বামী যদি সরকারি দল সমর্থক হন, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু তিনি যদি বিরোধী দল সমর্থক হন, তাহলে তার চাকরি থাকবে না। এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। ব্যক্তিস্বাধীনতার পরিপন্থী। সরকার তেমন উদ্ভট আইনই প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।
তাহলে নাগরিকদের কী উপায়? তারা কি জিঞ্জিরাবদ্ধ হয়েই থাকবেন? এসব অত্যাচার উৎপীড়নের বিরুদ্ধে তারা কি কোনো প্রতিবাদই করবেন না? সাধারণ নাগরিকেরা জীবন-জীবিকা নিয়ে দৈনন্দিন ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু যখন তারা প্রতিবাদ করেন, সে প্রতিবাদ মহাসমুদ্রের বিশাল জলোচ্ছ্বাসের মতো গোটা দেশ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যায়। শেখ হাসিনা সরকার এখন সেই দুর্দিনের অপেক্ষায়। 
ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী

শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঢিল এবং পাটকেলের রাজনীতি


‘ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়’ বলে এদেশে একটি প্রবাদ রয়েছে। আগ বাড়িয়ে বেশি বলতে গিয়ে সম্প্রতি তেমন এক পাটকেলই খেতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। পাটকেলটি ছুঁড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কারণ, খালেদা জিয়ার পাটকেলটি সহজে হজম করা এই সময়ে সম্ভব নয়। খালেদা জিয়া অবশ্য হজমের কষ্ট এড়ানোর জন্য পথও বাতলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত সে পথটিতেই পা বাড়ানো। তাহলে তাকে আর পাটকেল হজম করার অতি কঠিন চেষ্টায় সময় নষ্ট করতে হবে না।
বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে ‘ঢিল’ আর ‘পাটকেল’ প্রসঙ্গ সেরে নেয়া যাক। কোনো কথা নেই বার্তা নেই, জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগেরদিন, গত ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হঠাৎ বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার হুমকি দিয়ে বসেছেন। বলেছেন, ‘ওনাকেও’ গ্রেফতার করা হতে পারে। এরপর থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং দলের অন্য নেতারাও দাবির আড়ালে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার আবদার জানাতে শুরু করেছেন। এরই জবাবে পাটকেলটি ছুঁড়েছেন খালেদা জিয়া। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ দলীয় জোটের বিশাল জনসভায় তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। কারণ, হুমকিতে ভয় পান না তিনি। খালেদা জিয়া বরং প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনদেরই উল্টো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, তাদের উচিত যার যার পাসপোর্টে অন্য দেশের ভিসা লাগিয়ে প্রস্তুত থাকা। কারণ, তাকে গ্রেফতার করা হলে জনগণ তো বটেই, আলেম-ওলামারাও রাজপথে নেমে আসবেন। ক্ষমতাসীনরা তখন পালানোরও পথ পাবেন না। সুতরাং অন্যকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়ার পরিবর্তে ক্ষমতাসীনদের উচিত নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। বর্তমান সরকার ও সংসদকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ও জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল এবং গুম-খুন ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করারও দাবি জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। এসব দাবি না মানা হলে একের পর এক হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বিদায় করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন-পরবর্তী সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গত বিভিন্ন কারণেই বেগম খালেদা জিয়ার উচ্চারিত হুঁশিয়ারি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। উস্কানি যদি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে না দেয়া হতো তাহলে হয়তো বিষয়টিকে কথার কথা হিসেবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যেতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শুধু উস্কানি দেননি, তার আগে-পরে এমন কিছু কথাও বলেছেন, যেগুলোকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। যেমন জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি হঠাৎ বলে বসেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়- শুধু শেখ হাসিনাকে ছাড়া।’ রাজনৈতিক তাৎপর্যের কারণে শুধু নয়, কথাটার মধ্যে একটু অন্য ধরনের ব্যঙ্গ-তামাশা লুকিয়ে রয়েছে বলেই সাধারণ মানুষও প্রধানমন্ত্রীর ‘সবাইকে কেনা যায়’ কথাটুকু শুনে কৌতুক অনুভব করেছে। একটু বুদ্ধিমানরা এর মধ্যে আবার রহস্যেরও গন্ধ পেয়েছেন। এ নিয়ে রসাত্মক আলোচনাও কম হচ্ছে না। এর কারণ, যে কোনো বিষয়ে অতি চমৎকার বলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখনো কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া সহজ নয়। শব্দ চয়ন থেকে মুখের এক্সপ্রেশন বা অভিব্যক্তিসহ অঙ্গভঙ্গি পর্যন্ত কোনো ব্যাপারেই তার সঙ্গে সহজে পেরে উঠতে পারেন না বিরোধীরা। ব্যঙ্গ-তামাশার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে একহাত নেয়ার ও ধোলাই করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী তো অতুলনীয় অবস্থানেই রয়েছেন। বলার উপলক্ষ পেলে তিনি সাধারণত দু-একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না, কঠিন অনেক সত্যও অবলীলায় উচ্চারণ করে বসেন। তেমন কোনো উপলক্ষেই তিনি কেনাবেচা সংক্রান্ত মন্তব্যটুকু করেছেন বলে জানা যাচ্ছে। দলের এবং মহাজোটের ঠিক কোন কোন ব্যক্তিকে শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘সবাইকে কেনা যায়’ কথাটা বলেছেন তাদের নামও বেরিয়েছিল পত্রপত্রিকার রিপোর্টে। কথা শুধু সে কারণে ওঠেনি। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনারই অন্য একটি মন্তব্যের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। পাঠকদেরও নিশ্চয়ই মনে পড়বে, গত বছরের আগস্ট মাসে হিন্দু নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, জোয়ারের পরই ভাটার টান আসে। এই ভাটা দেখে কেউ নৌকা থেকে লাফ দেবেন না। লাফ দিলে কিন্তু কাদায় পড়তে হবে। একইসঙ্গে দুর্বল ও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে হলেও আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, চিন্তা নেই, নৌকার হালটা আমাদের ঠিকই ধরা আছে। আমরা তীরে ভিড়বো এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবোই। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, জোয়ার-ভাটার দেশ বলে এদেশের পানিতে জোয়ার যেমন আসে তেমনি ভাটাও টান দেয়। ভাটার টানে নৌকা বোধহয় ঠেকে যাচ্ছে মনে করে কেউ যদি তাড়াতাড়ি লাফিয়ে পড়ে তাহলে তাকে কিন্তু কাদায় পড়তে হবে। 
প্রধানমন্ত্রীর এই ভাটা এবং নৌকা থেকে লাফ দেয়া বিষয়ক বক্তব্যের সঙ্গে অনেকেই এবার ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়’ মন্তব্যটুকুকে মিলিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। বলা হচ্ছে, মুখে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের হুমকি দেয়াসহ বলিষ্ঠতা দেখানোর এবং অনড় অবস্থানে থাকার চেষ্টা করলেও প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। খালেদা জিয়া যে অকারণে পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেননি সেকথাটাও তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। তাকে আরো বুঝতে ও জানতে হয়েছে, নিশ্চিত অশুভ পরিণতি এড়ানোর এবং নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য আওয়ামী লীগের প্রায় সবাই গোপনে গোপনে বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের প্রকৃত বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ গড়ে তোলার চেষ্টায় ঘর্মাক্ত হতে শুরু করেছেন। ব্যঙ্গাত্মকভাবে রাজনৈতিক পরিভাষায় এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কেই বলা হয়, তারা ‘লাইন’ দিতে শুরু করেছেন! প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকেও সে সত্যটাই বেরিয়ে এসেছে। আশঙ্কারও জানান দিয়েছেন তিনি। ‘শেখ হাসিনাকে ছাড়া’ যোগ করে অল্প কথায় সারলেও প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন, তার সরকারের প্রতি জনসমর্থন কমে গেছে। এখনো শুধু কমছেই। একই কারণে অনেকে তার দল ও জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। না হলে নৌকা থেকে লাফ দেয়ার ব্যাপারে যেমন সতর্ক করতেন না তিনি, তেমনি বলে বসতেন না, ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়।’
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কথার মারপ্যাঁচে প্রধানমন্ত্রী শুধু আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজদের নয়, একইসঙ্গে আরো অনেককেও খোঁচাটা মেরেছেন। এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম এসেছে বিশেষভাবে। শেখ হাসিনাকে ‘নিজের বোন’ মনে করলেও এরশাদ বহুদিন ধরেই সরকারের সমালোচনা তো করছেনই, মহাজোট ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। এরশাদ একথা পর্যন্ত বলেছেন, তার দল জাতীয় পার্টি যদি মহাজোট থেকে সরে যায় তাহলে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে হবে এবং আগামী আর কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে পারবে না। কথা আরো আছে। বেশ কিছুদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী দলের অনেককেই ‘ছেঁটে ফেলার’ ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। সে কারণে আওয়ামী লীগের ভেতরে শুধু নয়, আওয়ামী মহাজোটেও উথাল-পাতাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে দোল খাচ্ছেন বিশেষ করে রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনুর মতো বামপন্থী কমরেডরা। বলা হচ্ছে, ভেতরে ভেতরে আরো অনেক কিছুই ঘটছে বলেই প্রধানমন্ত্রীকে হঠাৎ কেনা-বেচার কথা বলতে হয়েছে। তাছাড়া ‘ভাটার টানের’ কথাও প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছেন। যেমন মন্ত্রীদের সতর্ক করতে গিয়ে মাত্র কিছুদিন আগেও তিনি বলেছেন, সরকারের গায়ে এখন ‘ভাটার টান’ লাগবে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ এজন্য যে, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারলে পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য আগত কোনো সরকারের বেলায় সাধারণত পঞ্চম বছরে ‘ভাটার টান’ শুরু হয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু এক বছরও শেষ হওয়ার আগেই ‘ভাটার টান’ অনুভব করেছেন! এ এক বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে। কারণ, অনেক উপলক্ষেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, ২০২১ সালের আগে ক্ষমতা ছাড়ার কোনো ইচ্ছাই নেই তার। বয়স, কর্মক্ষমতা বা অন্য কোনো কারণে তিনি নিজে না থাকতে পারলে সজীব ওয়াজেদ জয় কিংবা শেখ রেহানার মতো অন্য কেউ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। এজন্যই প্রশ্ন উঠেছে, মাঝখানে এমন কি হয়ে গেছে যে, প্রধানমন্ত্রীকে হঠাৎ সংশয় ও হতাশা আচ্ছন্ন করেছে? তিনি বিক্রি হওয়ার এবং ভাটার টানের কথাই বা বলেছেন কেন?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তায় তেমন ভুল নেই। তিনি বরং সঠিকভাবেই পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছেন। ভুল রয়েছে কেবল তার নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। তিনি যেখানে ‘তীরে’ তথা কথিত ‘অভীষ্ট লক্ষ্যে’ প্রায় পৌঁছে গেছেন বলে বোঝাতে চেয়েছেন সেখানে সত্য হলো, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে না পারায় তার নৌকা আসলে মাঝ নদীতেই প্রচ- ঢেউয়ের মধ্যে ডুবি-ডুবি অবস্থায় পড়েছে। সেজন্যই যে কোনো সময় শুরু হতে পারে নৌকা থেকে প্রকাশ্যে লাফিয়ে পড়ার পালা। যারা লাফিয়ে পড়বেন অর্থাৎ বিক্রি হয়ে যাবেন বা তলে তলে বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে এরশাদের মতো ‘ভাই’ যেমন থাকতে পারেন, তেমনি পারেন ইনু-মেননদের মতো এককালের আওয়ামী লীগ ও মুজিব বিরোধী বহিরাগতরাও। সে কারণে যতো ভয়-ভীতিই প্রধানমন্ত্রী দেখান না কেন এবং যতো শক্ত হাতেই ‘হালটা’ ধরে রাখার চেষ্টা করুন না কেন, ডুবন্ত নৌকায় খুব বেশিজনকে তিনি বেশিদিন আর ধরে রাখতে পারবেন না। স্বল্প সময়ের মধ্যে নৌকা তো ডুববেই, তাকেও ডুবতে হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর নিজের ভাবনায় ঠিক কি রয়েছে সে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সময় নষ্ট করার পরিবর্তে বলা দরকার, যদি সত্যিই ‘মিন’ করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে, প্রথমবারের মতো তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে সঠিক অনুধাবন করতে পেরেছেন। কারণ, রাষ্ট্রীয় জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই তার সরকার উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন করতে পারেনি। গুম-খুন ও দমন-নির্যাতনের মতো বিভিন্ন প্রসঙ্গ বাদ দিয়েও বলা দরকার, সব উপলক্ষেই প্রমাণিত হয়েছে, সিন্ডিকেট করে এবং নানা ফন্দিফিকিরের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে আওয়ামী লীগের ধান্দাবাজ লোকজন এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা। একযোগে চুটিয়ে চলছে কমিশন বাণিজ্যও। এজন্যই কথায় কথায় ‘রাবিশ’ বলার জন্য ‘বিখ্যাত’ হয়ে ওঠা অর্থমন্ত্রীকেও সম্প্রতি স্বীকার করতে হয়েছে, ‘উই হ্যাভ ফেইলড টোটালি।’ অর্থাৎ তারা সম্পূর্ণরূপেই ব্যর্থ হয়েছেন। ওদিকে ‘চাহিবা মাত্র’ স্টাইলে ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দেয়া থেকে শেয়ার কেলেঙ্কারি এবং রেন্টাল বিদ্যুৎ ও পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক মহাদুর্নীতির মতো এমন অনেক বিষয়ই রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে কৈফিয়ৎ দিতে হলে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বপ্ন রীতিমতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার কথা।
সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়’ কথাটা যথেষ্ট গুরুত্ব অর্জন করেছে। বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে। কারণ, একমাত্র ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো দেশই ওই নির্বাচনকে এবং তার মাধ্যমে ক্ষমতায় আগত বর্তমান সরকারকে বৈধতা ও স্বীকৃতি দেয়নি। সবাই বরং নতুন এমন একটি জাতীয় নির্বাচন করার জন্য তাগিদ দিয়ে চলেছে, যে নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের প্রধান দলগুলো অংশ নিতে পারে। ‘পাটকেল’ ছুঁড়ে মারার পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়াও কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে একই পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সেই সাথে নমনীয়তাও যথেষ্টই দেখিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের নাম তত্ত্বাবধায়কই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অন্য যে কোনো নাম দেয়া যেতে পারে, কিন্তু ওই সরকারকে অবশ্যই দলনিরপেক্ষ তথা নির্দলীয় হতে হবে এবং শেখ হাসিনা সে সরকারের প্রধান থাকতে পারবেন না।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, শেখ হাসিনার উচিত, বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের মতো ফ্যাসিস্টসুলভ ঘোষণা দেয়ার পরিবর্তে বাস্তব জগতে ফিরে আসা এবং এই সত্যটুকু অনুধাবন করা যে, বিভিন্ন সংশোধনীসহ তাদের চাপিয়ে দেয়া সংবিধানটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি। আমাদেরও ধারণা, বেগম খালেদা জিয়ার দাবি ও পরামর্শের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার মধ্যেই ক্ষমতাসীনদের জন্য শুভ সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধান নিয়ে বেশি মাতামাতি করার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর উচিত দেশের প্রকৃত প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং ২০ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দেয়া এবং অনতিবিলম্বে সংসদের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ও নিজে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন আয়োজন করা। না হলে পরিণতি কেমন হতে পারে সে ব্যাপারে খালেদা জিয়া তো আগাম ধারণা দিয়ে রেখেছেনই। তাছাড়া জনগণের জন্য ‘এত কিছুই’ যেহেতু তারা করেছেন এবং দেশে যেহেতু উন্নয়নের মহাজোয়ারও বইয়ে দিয়েছেন সেহেতু চ্যালেঞ্জ হিসেবে হলেও নির্দলীয় সরকারের অধীনে তাদের নির্বাচন দেয়া উচিত। দেখাই যাক না, নিজেদের কীর্তি ও সাফল্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আসলেও কিছুটা সত্য বলেছেন কি না!
আহমদ আশিকুল হামিদ 

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সমঝোতার আহ্বান খালেদা জিয়ার


গত মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় ২০ দলীয় জোটের নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, গ্রেফতারের হুমকিতে ভয় পান না তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে উল্টো সতর্ক করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, হুমকি দেয়ার আগে তাদেরই বরং যার যার পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে নেয়া উচিত। কারণ, তাকে গ্রেফতার করা হলে আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষ এমনভাবে রাজপথে নেমে আসবে যে, ক্ষমতাসীনরা তখন পালানোরও পথ পাবেন না। অমন অশুভ পরিণতি এড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বেগম জিয়া বলেছেন, সরকারকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এবং জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল করতে হবে। গুম-খুন ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ এবং সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বর্তমান সরকার ও সংসদকে অবৈধ বলে উল্লেখ করে দ্রুত নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যও দাবি জানিয়েছেন বেগম জিয়া। বলেছেন, সে নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে। এসব দাবি না মানা হলে একের পর এক হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসভায় সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট এবং দলীয়করণের মতো আরো কিছু বিষয়ে বক্তব্য রাখলেও ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বেগম জিয়ার উচ্চারিত হুশিয়ারিই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। বলা বাহুল্য, এ ব্যাপারেও উস্কানি এসেছে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে। জাতিসংঘের উদ্দেশে দেশত্যাগের আগেরদিন, গত ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করার হুমকি দিয়েছেন। এরপর থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং দলের অন্য নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মেলাতে শুরু করেছেন। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছেন তারা। এসবের জবাবেই পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বেগম জিয়া। শুনতে কঠোর মনে হলেও তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না। কারণ, রাজনৈতিক সংকটকে ক্রমাগত ঘনীভূত করার মাধ্যমে এই হুশিয়ারির প্রেক্ষাপট আসলে ক্ষমতাসীনরাই তৈরি করেছেন। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, গুম-খুনসহ বিরোধী দলের ওপর প্রচন্ড দমন-নির্যাতন, গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা এবং সবশেষে ৫ জানুয়ারি একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ক্ষমতায় ফিরে এসেই তারা থেমে যাননি, দেশে-বিদেশে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত সংসদকে দিয়ে ষোড়শ সংশোধনীও পাস করিয়ে নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এসেছে বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করার হুমকি। বলা দরকার, এই হুমকি দেয়ারও অনেক আগে থেকে বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার প্রচ- মারমুখী ভূমিকা পালন করে চলেছে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের নামে এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতের আমীর এবং সেক্রেটারি জেনারেলসহ অন্য শীর্ষ নেতাদেরও সরকার ফাঁসির মঞ্চে ওঠানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। অথচ দেশের রাজনৈতিক নেতারা তো বটেই, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইন বিশেষজ্ঞরাও প্রথম থেকে বলে এসেছেন, সব মামলাই সাজানো এবং জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর কারণে, সরকারের দিক থেকে ক্রমাগত চাপ আসা সত্ত্বেও জামায়াত দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করেনি বরং দল দুটির ঐক্য আরো মজবুত হয়েছে। উল্লেখ্য, জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাটা বেগম জিয়ার বক্তব্যেও বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসভায় তিনি বলেছেন, সরকারের কথা না শুনে বিএনপির সঙ্গে রয়েছে বলেই জামায়াতকে জঙ্গি এবং স্বাধীনতাবিরোধী বানানো হচ্ছে।
আমরা মনে করি, কোনো একটি বিষয়েই বেগম খালেদা জিয়া সামান্য বাড়িয়ে বলেননি। জনগণের সামনে তিনি বরং সত্যই তুলে ধরেছেন। বস্তুত ২০০৮ সালের ডিজিটাল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেখ হাসিনার সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংসের ভয়ংকর কর্মকান্ডে মেতে রয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের মতো গণতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলোকে নির্মূল করার চেষ্টাও চালাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কিন্তু বিভিন্ন প্রশ্নে একের পর এক ছাড় দেয়া হয়েছে। প্রধান নেত্রী হিসেবে বেগম জিয়া সংঘাত, হানাহানি ও হিংস্রতার পথ পরিহার করে সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি এমনকি তত্ত্বাধায়ক সরকারের প্রশ্নেও নমনীয়তা দেখিয়েছিলেন। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার হুবহু পুনর্বহালের দাবি পরিত্যাগ করে ২০১৩ সালের নবেম্বরে উপস্থাপিত রূপরেখায় বলেছিলেন, নির্বাচন হতে হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে কিন্তু সরকার প্রধানের পদে শেখ হাসিনাকে রাখা চলবে না। বিষয়টি নিয়ে সংসদের ভেতরে-বাইরে যে কোনো স্থানে সংলাপে বসারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়েছিলেন একতরফা নির্বাচনের নীলনকশা অনুযায়ী। একতরফা সে নির্বাচনের মাধ্যমেই তারা আবারও ক্ষমতায় এসেছেন। শুধু তা-ই নয়, প্রচন্ড দমন-নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি ক্রমাগত উস্কানি দেয়ার এবং আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে এখনো ক্ষমতাসীনরা সমঝোতা প্রতিষ্ঠার সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিচ্ছেন। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী এমনকি বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। জবাবও তাকে যথার্থই পেতে হয়েছে।
আমরা মনে করি, এভাবে সংকটকে আরো ঘনীভূত ও দীর্ঘস্থায়ী করার মাধ্যমে আর যা-ই হোক, দেশ ও জাতির মঙ্গল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এজন্যই প্রধানমন্ত্রীর উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা এবং অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত সংসদকে ভেঙে দেয়া। তাকে একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে এমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও করতে হবে, যে নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সব দল অংশ নিতে পারবে। আমরা মনে করি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসভায় দেয়া ভাষণের মূলকথায় বেগম খালেদা জিয়া আসলে সমঝোতার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্যই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর উচিত সে আহ্বানে সাড়া দেয়া।

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গণতন্ত্রের আবরণে একদলীয় শাসন!


ইংরেজি ডেমোক্র্যাসি থেকে গণতন্ত্রের উৎপত্তি। আর বিশেষ অর্থে গণতন্ত্র বলতে বুঝায় সর্বশ্রেণীর লোকের প্রতি সমান ব্যবহারমূলক ব্যবস্থা। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা নিয়ে আছে নানা মত ও পথ। আর থাকাটাই তো স্বাভাবিক! দেশে গণতন্ত্রের যে রূপ দেখা যাচ্ছে, তাতে গণতন্ত্র শব্দটি শুনলেই মনের মাঝে একটু দাগ কাটে। আমি যখন এই লেখাটি লিখতে বসেছি, তখনও গণতন্ত্রের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ চারদিকে প্রবাহিত হচ্ছে। হত্যা, গুম, খুন, অপহরণের এই দেশে গণতন্ত্রের মরণঘণ্টা বাজবেই তো? যে গণতন্ত্রের জন্য জীবনের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন অগণিত যুদ্ধা। সেই গণতন্ত্র আজ ডিলেটের পথে। লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মতামত ব্যক্ত করলে রাজাকারের খাতায় নাম ওঠতে একটুও দেরি হয় না। গণতন্ত্রের যাত্রা পথে মেজর জলিল হয়েছিলেন রাজাকার। তার পরের রাজাকার উপাধি পেয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী; অবশেষে পেলেন একে খন্দকার। একটি কথা না লিখলেই নয়- দেশের নামি-দামি লেখকেরা যে পরিমাণে রাজাকারের গল্প কাহিনী নিয়ে বই লিখেছেন, সে তুলনায় যদি গণতন্ত্র চর্চার বই লিখতেন তাহলে গণতন্ত্রের সাফল্য একটু হলেও জাতি দেখতে পারত। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বাটি চালান দিয়েও গণতন্ত্রকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাই তো কবি শামসুর লিখেছিলেন, ‘অদ্ভুত উঠের পিঠে চলছে স্বদেশ। নিকট অতীতে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘দেশ এখন বাজিকরদের হাতে। এই দুই বিজ্ঞজনের কথার মর্ম এখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, বাজিকররা দেশটাকে হাতে নিয়ে অদ্ভুত উঠের পিঠে সওয়ার হয়েছেন। দেশে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই, আছে পরিবারতন্ত্র। তার সাথে যোগ হয়েছে স্বৈরাতন্ত্রের একদলীয় শাসন। গণতন্ত্রের বিয়োগান্ত উপাখ্যানগুলো ইচ্ছে করলেই মুছে দেয়া সম্ভব নয়। আর এগুলোর পুনরাবৃত্তি পরিহার করতে চাইলে অবশ্যই এসব ঘটনাকে সকলেরই মনে রাখা প্রয়োজন।
ইতিহাসকে ইরেজার দিয়ে মুছে দেয়া বা ছিঁড়ে ফেলা যায় না। আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম গায়েবি ভোটের অতীত ইতিহাস। কিন্তু এবারের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ভোটারবিহীন তামাশার নির্বাচনে জনগণ লজ্জা অনুভব করলেও সুশিক্ষিত নির্বাচন কমিশন একটুও লজ্জা পায়নি। লীগ শাসকরাও উল্লসিত। তবু তো হয়েছে ভোট। কলঙ্কিত হোক, তাতে কি এমন আসে বা যায়। ভোটাররা ভোট না দিলেও যখন ভোট হয়, তখন এত কসরত কেন? সকালে শূন্য, দুপুরে সামান্য, বিকালে একদম বোঝাই। ভোটের ভারে এমন বোঝাই হয়ে গেল- নৌকা ডুবে ডুবে ভাব। কোনোমতে তীরে নৌকা পৌঁছলেও নৌকার হাল নেই। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল খালি মাঠে গোল দেয়ার মতো একটি খেলা। যে খেলার প্লেয়ার টিম A আছে, B নেই । বল আছে গোলরক্ষক নেই। সারা মাঠই ফাঁকা- যেদিকে বল যাবে সেদিকেই গোল হবে। কারণ গোলপোস্ট নেই।
৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন অনেকে বয়কট করলেও করেনি রাজধানীর বস্তির বাসিন্দারা। তাদের মনে বয়েছিল আনন্দের সুবাতাস। তিন আসনে ভোট দিয়ে একেকজন হাজার টাকা করে কামিয়েছিল। লাইনে দাঁড়ালেই পয়সা পাওয়া গেছে। আসল কাজটা সেরে ফেলেছে ভোটের কারিগররা। আগে যেমনটা ঘটেনি, এবার ঘটেছে। প্রিসাইডিং অফিসার যেখানে সিল দিয়েছেন, সেখানে ভোটের হিসাব মেলানো কঠিন নয়। পত্রিকায় ছবি দেখে প্রিসাইডিং অফিসার সাময়িক লজ্জা পেলেও তার জন্য প্রমোশন অপেক্ষা করছে। গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য এবার অমোচনীয় কালিরও দরকার হয়নি। লীগ সরকারের উপদেষ্টা এইচটি ইমাম খাঁটি কথা বলেছিলেন। এবারের ভোট নাকি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। উদাহরণ তো বটেই, ভোটে না দাঁড়িয়েও জিতেছে লীগ। হাসপাতালের কেবিনে বসে ফোকলা দাঁতে হেসেছে এরশাদ। এটাও সম্ভব। সব সম্ভরের এই দেশে ১৫৩ জন যেখানে বিনা লড়াইয়ে জিতে যায়, সেখানে ভোটের হিসাব নিয়ে মন্তব্য না করাই শ্রেয়। একতরফাভাবে গায়েবি ভোটের দৌড়ে হাসিনা স্বৈরাচার এরশাদকে পিছনে ফেলে চলে এলেন প্রথমে। খালেদার মতো তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড তৈরি করেছেন হাসিনা। যেহেতু তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন শেখ হাসিনা, সেখানে সমঝোতা হতে আপত্তি কোথায়? আসলে কি তা হতে পারে? বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়।
গণতন্ত্রের কথা লীগ সরকারের মুখে আদও মানায় কিনা, তার বিচারের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিলাম। এই সরকার কি বৈধ, নাকি অবৈধ- সে প্রশ্নের উত্তর অজনাই রয়ে গেল। যখন ২০ দলীয় জোটের নেতা বা নেত্রীরা বলেন এই সরকার বৈধ নয়, তখন মনে হয় তারাতো বলবেই। কারণ তারাতো বিরোধী দলে আছে। কিন্তু সেই কথা যখন শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, তখন সেটি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। সেই কথাটি তিনি বলেছেন, দেশে উচ্চ আদালতের এজলাসে এবং একজন এমিকাস কিউরী হিসেবে। বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারপতি খোরশেদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই বিষয়ে রিটের শুনানিকালে এমিকাস কিউরী হিসেবে বক্তব্য দেয়ার সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের জনগণের প্রতিনিধি বলা যাবে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। দেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ভালোবাসে বলেই সবসময়ই প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ভোট প্রদান করতে কখনো পিছুপা হননি। কিন্তু এবারের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের তামাশায় ভোট প্রদান করতে অনেকে ভোট কেন্দ্রের সীমানায় পর্যন্ত যাননি। গণতন্ত্রের সমালোচনা করতে গিয়ে অনেক দার্শনিকই বলেছেন, গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খের শাসন। সত্যিকারার্থে গণতন্ত্র এসেছিল সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করার জন্য। কিন্তু ধিক চরিত্রের লীগ সরকার ক্ষমতার দম্ভে গণতন্ত্রকে গলা টিপে একদলীয় শাসনের ডিপ ফ্রিজে রেখেছে। স্বাধীনতার ৪৩ বছরের ইতিহাসে গণতন্ত্র হোঁচট খেলেও রাজতন্ত্রের বন্দি শিবির থেকে মুক্ত হয়ে বারবার ফিরে এসেছে জনতার সামনে। ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভাগাভাগি করার প্রয়াসে লীগ সরকার বিরোধী দলের টুঁটি চেপে ধরার জন্য পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে পুলিশি রাষ্ট্র গঠন করেছে। সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে পারছে না। অবৈধভাবে ক্ষমতার আসনে আরোহণ করেই লীগ সরকার সম্প্রচার নীতিমালা ঘোষণা করে তা কার্যকর করছে। এই নীতিমালা ঘোষণার আগে ও পরে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলেও সরকার পিছপা হয়নি। দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, পেশাজীবীসহ সুশীল সমাজের সকলে এক বাক্যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, এই নীতিমালা হচ্ছে গণমাধ্যমের জন্য একটি ভীতিমালা। সম্প্রচার নীতিমালার পর পরই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল ২০১৪ প্রবল সমালোচনার মুখে অবশেষে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হলো। এর ফলে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা চলে গেলে সংসদের হাতে। এমনিতে তো বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। আর বিচারপতিদের অপসারণের ফলে বিচার যদি হয়ে উঠে অবিচার তাহলে তো বিচার প্রার্থীদের দুঃখের সীমার শেষ নেই। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলন পর্যন্ত প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল গণতন্ত্রকে সুরক্ষার প্রয়াসে। বাংলাদেশের রাজনীতি সব সময়ই ছিল অস্থির ও সংঘাতময়। এই অস্থিরতার পথ ধরেই আমরা এক একটি সরকারের সময় অতিক্রম করে আসছি। বর্তমান সময়ে গুম, খুন, অপহরণ এমনভাবে বেড়েছে যা লিখে শেষ করা যাবে না। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে নোংরা রাজনীতির অশ্লীল কথার কথোপকথন।
বামপন্থী বৃদ্ধিজীবী ও এক শ্রেণীর মিডিয়া থেকে শুরু করে লীগ সরকার পর্যন্ত সকলে জামায়াতে ইসলামীকে একটি জঙ্গি, সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য এদেশের মানুষ যেন আর জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন না করেন। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিজয়ই প্রমাণ করেছে জামায়াতে ইসলামীর স্থান রয়েছে এদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। স্বাধীনতার ৪৩ বছরের ইতিহাসে জামায়াতে ইসলামী প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচন করেছে। সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী অতীতের যে কোন আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে তো কোন সংহিংসতার রাজনীতি করেননি, তাহলে আজকে কেন তাদেরকে সহিংস পথ বেছে নিতে হলো। এই প্রশ্নের উত্তর বিবেকবান মানুষের একটু হলেও ভেবে দেখা দরকার। জামায়াতে ইসলামী যে রাজনীতির কারণে আজকের এই নারকীয় পরিস্থিতির শিকার তা যদি উল্টো সরকার তথা আওয়ামী লীগের বেলায় হতো, তাহলে তাদের আচরণ কেমন হতো? জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনকে যারা তোতা পাখির শেখানো বুলির মতো সহিংস বলছেন। আপনারা কি ভুলে গেছেন ২০০৮ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার নিষ্ঠুর সে কাহিনী। সে দিনের আকাশে কোন কালো মেঘ জমে ছিল না, ছিল না রোদ্রের তীব্রতা, তারপরেও নেমে এসেছিল লগি-বৈঠার নিষ্ঠুরতা। আপনারা যারা সুশীল সমাজ বলে নিজকে দাবি করেন, দয়া করে একটু ভাবুন তো! সেদিনের লগি-বৈঠার তা-বে যদি আপনার কোন প্রিয়জন বাবা অথবা ভাই নিহত হতেন তাহলে আপনি কতটুকু হিং¯্রতার পরিচয় দিতেন। এই প্রশ্নের উত্তর নিজেকে একটি বার হলেও করুণ তাহলে আশা করি উত্তর মিলবে। লগি-বৈঠার আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে প্রাণগুলো চলে গেল না ফেরার দেশে। তাদের স্বজনরা আজও ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আর স্বজনদের হত্যার বিচার চাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে বিএনপিকে যেভাবে রাজপথের আন্দোলনে কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করেছিল বিএনপিও যদি এবার আওয়ামী লগিকে সেভাবে বাধ্য করতে পারে তবে সমাধান একভাবে হবে। নতুবা ইতিহাস তার আপন গতিতে চলবে। ইতিহাসকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার সাধ্য কারও নেই বিধায় ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করতে পারে না। আমরা যদি একটু পিছনের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন কায়েম করে যে গণতন্ত্রের বারোটা বাজিয়েছিল, সেই দিন থেকেই বাংলাদেশ নামক দেশটির গণতন্ত্রের জিন্দা দাফন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের জনপ্রিয়তা আজ শূন্যের কোঠায় এসেছে তা বুঝার জন্য মহা প-িত হওয়ার প্রয়োজন নেই। একটু-আধটু বাংলা লেখা পড়তে পারলেই যথেষ্ট। এ দলটি ইতিহাসের নামে অন্যদের গালমন্দ করলেও নিজেরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। তারা নিজেদের অতীত ইতিহাস এমনকি সে ইতিহাসের ধিকৃত ভুল-ভ্রান্তিগুলোর অন্ধ অনুকরণ সূচনা লগ্ন থেকে করে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কোন সম্ভাবনা ছিল না, তা সত্ত্বেও সেদিন আওয়ামী লীগ স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাঁধে ভর করে বহু কেন্দ্রে ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির মতো জঘন্যতম কাজ করতে একটুও দ্বিধাবোধ করেনি। আমরা এও লক্ষ্য করেছি যে, স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতাসীন হবার পর গণতন্ত্রের পতাকা উড়িয়ে জনগণের সমর্থন লাভ করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। তার মতো এতো জনপ্রিয়তা নিয়ে আর কোন নেতা ক্ষমতার আসনে আসীন হয়েছেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু সে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা মুহূর্তের মধ্যেই বিনষ্ট হয়ে মাটিতে পড়তে সময় লাগেনি, কারণ সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, দলীয়করণ দেশব্যাপী নৈরাজ্য আর খুনের মতো ঘটনায় জনগণকে অস্থির করে তুলেছিল। যার ফরে পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ের সম্ভাবনা অনিশ্চিত দেখা দিতেই মুজিবের গণতন্ত্রের মুখোশ জাতির সামনে খসে পড়েছিল। সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এ জাতি আর দেখতে চায় না। দিন দিন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। নামসর্বস্ব বিরোধীদল দিয়ে নাটক করা যায় বটে কিন্তু দেশ পরিচালনা করা যায় না। এই কথাটি অবুঝ শিশুরা বুঝলেও লীগ সরকার বুঝতে পারছে না। সরকারকে বিনয়ের সাথে বলতে চাই জনগণের কাতারে এসে জনগণের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন। গুম, খুন, অপহরণের ভয়াবহতা বন্ধ করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের মধ্যদিয়ে একাদশ নির্বাচনের ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশবাসীকে সংঘাতের হাত থেকে রক্ষা করুন।
মোঃ তোফাজ্জল বিন আমীন 

সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঠেকানো গেল না বিচারপতিদের অভিশংসন বিল


আইনজীবীরা বিভেদ দূরে ঠেলে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার ছিলেন যেন বিলটি পাস না হয়। সোচ্চার ছিলেন পেশাজীবীরা, দেশের সচেতন মানুষেরা। কিন্তু কাউকে তোয়াক্কা করেনি বর্তমান আওয়ামী সরকার। কার্যত একদলীয় সংসদে পাস হলো বিলটি।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিলটি উপস্থিত সংসদ সদস্যদের ৩২৭ ভোট পেয়ে সর্বসম্মত ভাবে পাস হয়। স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে বিল পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। বিলটির ওপর বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ জাতীয় পার্টি, সরকারের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিএনএফ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যসহ মোট ১৫ জন জনমত যাচাই-বাছাই এবং ৩০টি সংশোধনী  প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও পরে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা বিলের পক্ষে অবস্থান নিলেও তড়িঘড়ি করে গুরত্বপূর্ণ এই বিল পাসের সমালোচনা করেন। তারা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা ও জনমত যাচাইয়ের পর বিলটি পাসের দাবি উত্থাপন করেন। নানা ইস্যুতে পার্টির অভ্যন্তরে বিরোধ থাকলেও বিলের ওপর আলোচনায় তারা একই সুরে কথা বলেন। পরে সংসদের লবিতে স্থাপিত বুথে গোপন ব্যালটে বিভক্তি ভোটে বিলটি পাস হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনা শেষে রাত ১০টা ১০ মিনিট থেকে ভোট দেয়া শুরু হয়। ৪০ মিনিটে ভোট দেয়ার কাজ শেষ হয়। পরে ভোট গণনা শেষে স্পিকার ফল ঘোষণা করেন। এ সময় টেবিল চাপড়ে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা অভিনন্দন জানান।
এই বিলটি পাস হওয়ায় ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপিত হবে। ওই অনুচ্ছেদে কোন বিচারককে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে অপসারণের বিধান ছিল। তবে এই অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের চাকরির বয়স বর্তমান বিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বহাল রাখা হয়েছে।
আমি ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পত্রিকাগুলো খুব মনোযোগসহ পড়ছিলাম। কারণ এই দিনের পত্রিকাগুলো  ২টি কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এক, সংবিধান সংশোধন; দুই, মাওলানা সাঈদীর রায়। অনেকে মনে করেন  ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে কোন ধরনের আন্দোলন যেন হতে না পারে সেজন্যই মাওলানা সাঈদীর রায়ের দিনটিই তাই বেছে নেয়া হয়েছে। দেখা গিয়েছে, সাইদী সাহেবের রায় পরবর্তী বিক্ষোভ-হরতালে এই বিল পাস তাই তেমনভাবে প্রচারের আলোয় আসেনি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ওই দিনই তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। শুরু হয় সমাজের বিশিষ্টজন, আইনজীবী, রাজনীতিবিদদের প্রতিবাদ, বিরোধিতা। এই বিরোধিতা অন্যান্য সময়ের মত শুধু একপেশে বিরোধিতা ছিলনা। প্রতিবাদ শুরু করেন আওয়ামী ঘরানার লোকেরাও।
বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর প্রথমেই সাংবাদিকরা সংসদীয় বিরোধীদলের কাছে না গিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী দল হিসাবে যারা পরিচিত বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। সংসদীয় বিরোধী দলকে দেশের বড় অংশের মানুষ যে গৃহপালিত বিরোধীদল মনে করেন, এটা তাই প্রমাণ করে। শুধু তাই নয়, স্বয়ং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মো. এরশাদও ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলেন, যদি পক্ষে বলি তাহলে তো গৃহপালিত হয়ে যাব। তার বক্তব্য শুনে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা উচ্চ হাসিতে ফেটে পড়েন।
বলছিলাম, সাংবাদিকরা রাজনৈতিক বিরোধী দলের মতামত তুলে ধরেন। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা বর্তমান ‘অবৈধ’ সংসদের নেই দাবি করে বিলটি পাস হলে আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন বিএনপি নেতারা। পরবর্তীতে ২০ দল দুই দিনের কর্মসূচিও পালন করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা বর্তমান অবৈধ সংসদের নেই। যে সংসদে জনগণের প্রতিনিধি নেই, ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা দিচ্ছে সরকার। এই ক্ষমতা বর্তমান সংসদের হাতে গেলে জনগণ ন্যায়বিচার পাবে না। শুধু একটি বিশেষ দলের বিচার হবে। তাই বিএনপি অভিশংসন বিলে সমর্থন করবে না। এ বিল পাস হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানও প্রতিবাদ করে বিবৃতি প্রদান করেন এবং আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বাকশাল কায়েমের লক্ষ্যেই সরকার সম্প্রচার নীতিমালার পর বিচারপতিদের অভিসংশন সংসদের হাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান মন্তব্য করেন,  বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া হলে দেশে আইনের স্বাধীনতা থাকবে না। তিনি  বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দেশ গণতন্ত্রশূন্যতায় ভুগছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহ অভিযোগ করেন,  সরকার আইন পরিবর্তন করে বাকশালের দিকে যাচ্ছে। সরকার ধাপে ধাপে বাকশাল কায়েমের লক্ষ্যে একটার পর একটা আইন পরিবর্তন করছে। শেখ মুজিবের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার কাজে হাত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার পিতার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নেই শেখ হাসিনা এখন কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সময় আছে জনগণের ভাষা বুঝে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের পতন ঘটানো হবে। তখন পালানোর পথ পাবেন না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে শাস্তি দিতেই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপনা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সাত হাজার একশটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনেক আসামীকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অগণিত মামলার একটিও প্রত্যাহার করা হয়নি। উল্টো মামলা দিয়ে আরো হয়রানি করা হচ্ছে।
পূর্বে ব্যারিস্টার রফিকুল বলেন, বিচার ব্যবস্থা চিরতরে অধীন করতেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা এই একদলীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে গঠিত নয়, যে সংসদে বিরোধী দল নেই, সে সংসদে এই বিল পাস হতে পারে না। পাস হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
একইভাবে সমাজের বিশিষ্টজন, আইনজীবী ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। ৯ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ড. শাহদীন মালিক, সদস্য সচিব হিসেবে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সহ-সদস্য সচিব হিসেবে সুব্রত চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এ নাম ঘোষণা করেন। তবে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা এ কমিটিতে থাকবেন না।
পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় বড় করে সংবাদ ছাপানো হয় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আইনজীবীরা। কেউ শিরোনাম করেন ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ডাক আইনজীবীদের। কিন্তু আমরা এই বিল নিয়ে সরকারের একরোখা মনোভাব দেখলাম। প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ও এই বিষয়ে তার ফেইজবুক পেইজে বিচারপতিদের অভিশংসনের বিলের পক্ষে তার মতামত তুলে ধরেন।
যাচাই-বাছাই শেষে বিলের ওপর সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সংসদীয় কমিটি গত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর মাত্র দু’টি  বৈঠকেই এই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।
এর আগে ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়েছিল। বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে ওই সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সেদিন বিলটি পাস হয়েছিল। বিলটির পক্ষে  ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছিল ২৯১টি, বিপক্ষে ‘না’ ভোট পড়েছিল মাত্র ১টি। নবম সংসদের একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য মো. ফজলুল আজিম ওই ‘না’ ভোটটি দিয়েছিলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠিয়ে রিপোর্ট প্রদানের জন্য প্রস্তাব করেন মোট ৮ জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে মো. রুস্তম আলী ফরাজী চলতি বছর ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। একই প্রস্তাব করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির এম এ হান্নান, ইয়াহইয়া চৌধুরী ও মো. আবদুল মতিন এবং বিএনএফ’র এসএম আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া তিন সদস্যের কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন জাতীয় পার্টির বেগম রওশন আরা মান্নান। আর ছয়জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম।
বিলটির ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, মো. আবদুল মতিন, নুরুল ইসলাম মিলন, পীর ফজলুর রহমান, এম এ মান্নান, বেগম রওশন আরা মান্নান ও ইয়াহইয়া চৌধুরী, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, বিএনএফ’র এসএম আবদুল কালাম আজাদ এবং স্বতন্ত্র সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী, হাজী মো. সেলিম ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী।
সংবিধান ( ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪ সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির রিপোর্টের ১ দফায় সংশোধনী এনেছেন তিনজন সংসদ সদস্য। এদের মধ্যে রুস্তম আলী ফরাজী বিচারপতিদের বয়স ৭০ বছর করার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া হাজী মো. সেলিম ও এম এ হান্নান দফা ১-এর ওপর সংশোধনী আনেন। দফা ২-এর ওপর সংশোধনী এসেছে মোট ২৭টি। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী দফা ২ প্রস্তাব করেন, ‘বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অসামর্থ্যরে কোন প্রস্তাব সংসদে উত্থাপিত হলে সংসদের ন্যূনতম ১০০ জন সদস্যের উক্ত প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন থাকলে প্রস্তাবটি সরাসরি সংসদ কর্তৃক গঠিত জাজেস ইনকোয়ারি কমিশনে প্রেরিত হবে এবং সংসদ উক্ত কমিশনের তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে প্রমাণিত অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার  দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারপতিকে অপসারণ করা যাবে না।’
তিনি দফা (২) এর প্রস্তাবিত উপ-দফা (৪) এর পর নতুন উপ-দফা (৫) সন্নিবেশের প্রস্তাব করেন। রুস্তম আলী ফরাজী তার প্রস্তাবিত ৫ উপ-দফায় বলেন, এই আইনটি কার্যকর হওয়ার পর অনতিবিলম্বে উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগের নীতিমালা  তৈরি করার লক্ষ্যে ‘বিচারক নিয়োগ কমিশন’ গঠন করিবেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, টিপু সুলতান, শেখ হাফিজুর রহমান ও ইয়াসিন আলী এবং নাজমুল হক প্রধান ও শিরীন আখতার বিলের ২ দফায় প্রস্তাবিত উপ-দফা (৩) এর তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন’ শব্দাবলীর পরে ‘এবং একই সঙ্গে সংসদ বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবেন’ শব্দাবলী সন্নিবেশের প্রস্তাব করেন।
বিলের ওপর আলোচনায় সংসদ সদস্যরা যা বললেন-
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সংবিধান সংশোধন বিল প্রসঙ্গে সংসদে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, যদি বলি বিলটি সঠিক তাহলে আমাকে বলা হবে গৃহপালিত। এই সংসদেও রেওয়াজ হয়েছিল যদি ফাইল ছোঁড়াছুড়ি করতে পারি, তাহলেই সত্যিকারের বিরোধী দল। মানি না, মানবো না, সংসদ বর্জন করি, ওয়াকআউট করি তাহলেই বিরোধী দল!
তিনি আরও বলেন, আমি এই নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি আদর্শের রাজনীতি করি। এই বিলটি পাস হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করা হবে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিচার বিভাগ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা অনেকের চেয়ে অনেক বেশি। আমার বিরুদ্ধে ৭০টির বেশি মামলা দেয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে আমি এই বিলটি সমর্থন করি।
পরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বিলটিতে সমর্থন দেয়াতে উপস্থিত সংসদ নেতাসহ সবাই টেবিল চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
বেগম রওশন এরশাদ বলেন, বিলটিতে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে এত তাড়াহুড়া করার কোন কারণ ছিল না।
স্বতন্ত্র এমপি হাজী সেলিম সংবিধান সংশোধন বিলটি পাসের আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন। এছাড়া বিএনএফ-এর আবুল কালাম আজাদ বিলটির সমর্থন করলেও একই সঙ্গে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাইয়ের প্র্রস্তাব দেন। জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস না করে সংসদের বাছাই কমিটির মাধ্যমে আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব দেন।
জাসদের মাইন উদ্দিন খান বাদল এই বিলটির যারা সমালোচনা করছেন তাদের সমালোচনা করে বলেন, তারা বিরোধিতা করলেও বলছেন না বিলটির কোথায় অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি বলেন, জবাবদিহির ঊর্ধ্বে একমাত্র আল্লাহ্। তাই বিলটি জনমত যাচাইয়ে পাঠালেও একই উত্তর ফেরত আসবে।
আইনমন্ত্রী যা বলেন-
আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের জবাবে বলেন, বঙ্গবন্ধু এই সংবিধান দিয়ে সরকারকে শাসক থেকে সেবকে পরিণত করেছেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বিচারকদের আরও সুরক্ষিত করতেই সংশোধনী আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নতুন আইন করা হবে। এতে বিচারকদের অসদাচরণ ও সামর্থ্যেরও ব্যাখ্যা থাকবে।  
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা ৭ ও ১১ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং তাদের পক্ষে এই ক্ষমতার প্রয়োগে কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। এর প্রতিফলনে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারককে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার  দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে অপসারণের বিধান ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে এই পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে কোন বিচারককে তার পদ হতে অপসারণ করা যাবে বলে বিধান করা হয়। ওই বিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে, কোন বিচারককে তার সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দান না করা পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা যাবে না। ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালের সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অপর দু’জন প্রবীণ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংসদ রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের মতো উচ্চ আদালতের বিচারকদের দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার নীতি বিশ্বের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিদ্যমান রয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৯৬ এর দফা ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ এর পরিবর্তে ১৯৭২ সালের প্রণীত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা ২, ৩ ও ৪ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদেরকে সংসদের মাধ্যমে অপসারণের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে এই বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। উক্ত বিলের ৩ দফা অনুযায়ী কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সুতরাং ওই আইনে সুনির্দিষ্টকৃত পদ্ধতি অনুসরণে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারককে অপসারণের সুযোগ থাকবে না। এমতাবস্থায়, বিলটি আইনে পরিণত হইলে স্বচ্ছতা দৃশ্যমান হইবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে বিচারকগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অবাধ ও সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পালনের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সমুন্নত রাখতে পারবেন।’
প্রশ্ন হলো, বিষয়টি যেহেতু এতই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে বিশিষ্ট আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে তাদের মতামত নিলে কি খুব সমস্যা তৈরি হতো?  জনমত যাইয়ের পরামর্শ গ্রহণ করলে কি খুব সমস্যা হতো? সবই এড়িয়ে যাওয়া হলো। বিদেশী গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইকনোমিস্টে এ বিষয়ে বক্তব্য এসেছে- প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতাধর বানানোর জন্যই নীতিমালা, আইন করা হচ্ছে।
১৯৭২ সালে দেশে ফেরার পর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবও বিরোধী পক্ষকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়ে বাকশাল কায়েমের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। চারটি ছাড়া সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সকল সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং সেই নিষিদ্ধের ফাঁদে আওয়ামী লীগও পড়েছিলো। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি   বাকশাল কায়েমও করেছিলেন। আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণে ৭২এর সংবিধান ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন, অথচ শেখ মুজিবের সর্বশেষ স্বপ্ন ৭২এর সংবিধান ছিল না, ছিল বাকশাল। আসলে আওয়ামী লীগ ভিতরে ভিতরে বাকশালের স্বপ্ন দেখছেন বলে সচেতন মানুষ মনে করেন।
এখন তো আর কথা বলার সুযোগ নাই। কারণ কথা বললে সংবিধানের বিরুদ্ধে বলা হবে। হতে পারে মামলা, হয়রানি, জেল। তাই মনে হয় আন্দোলন ঘোষণাকারীরাও সবাই ইতোমধ্যে চুপসে যাওয়ার নীতি অবলম্বন করেতে শুরু করেছেন। যাদের হাতে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের মতো গুরু দায়িত্ব ছিল, তারাও শেষ পর্যন্ত উপেক্ষিত হলো। উপেক্ষিত হলো জাতি, উপেক্ষিত হলো জনতা। বিজয় হলো সরকারের। বাংলাদেশে যেভাবে সংশোধন আর পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু হয়েছে , তাতে এখন দেখার অপেক্ষা এই বিল কতদিন টিকে থাকে।
মনির আহমেদ 

Ads