বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গাজার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কী পাচ্ছে ইসরাইল


ইসরাইল গাজায় এমন এক সময় কয়েক সপ্তাহব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালাল যখন মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বেশ উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো। ইরাক সিরিয়ায় ভ্রাতৃঘাতী সঙ্ঘাত নজিরবিহীন দ্বিধাবিভক্তি এনেছে এই অঞ্চলের মুসলিম জনগণের মধ্যে। মিসরের রাষ্ট্রীয় নীতিই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরাইলি স্বার্থের পৃষ্ঠপোষকতা করা। শক্তিশালী আরব দেশগুলোর অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আরব বসন্তের মাধ্যমে যেসব দেশে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আাওয়াজ উঠেছিল সেগুলোকে শক্তি দিয়ে দমন করে আবার নতুন স্বৈরাচার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এ ধরনের এক পরিস্থিতিতে গাজায় এবারের ইসরাইলি হামলার তাৎপর্যটাই কী এ প্রশ্ন অনেকের মধ্যে। আজকের লেখায় ফিলিস্তিন সঙ্কটটাকে গভীর থেকে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। এই দেখা শুধু আরব বা মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা আগ্রাসনবাদিতার ভুল ও অসঙ্গতি তুলে এনেছেন তাদের ব্যাখ্যাকেও পরিস্থিতি উপলব্ধির জন্য উদ্ধৃত করা হয়েছে।
আমেরিকা তাদের উদ্যোগে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনা ব্যর্থ করে দেয়ার পরও তেল আবিবকে এবারের গাজা আগ্রাসনে সমর্থন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সর্বজনীন চুক্তির কাছাকাছি একটি ব্যবস্থা যেন করা আছে যাতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলছেন, অন্যান্য দেশের মতো ইসরাইলের তার নাগরিকদের সীমানার ওপার থেকে পরিচালিত হুমকি থেকে রার অধিকার এবং বাধ্যবাধকতা রয়েছে; কিন্তু বারাক ওবামার বেদনাদায়ক বিবৃতিতে ইসরাইলের বোমাবর্ষণ এবং গাজায় দখলদারিত্বের কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও নৈতিক বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। দেশটি যে নভেম্বর ২০১২ সাল থেকে বিদ্যমান যুদ্ধ বিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে এবং গাজার বেসামরিক জনগণকে ঝুঁকির মধ্যে না নিয়ে অহিংস উপায়ে ইসরাইলের বেসামরিক জনগণকে রক্ষা করা যেত কি না, সেই প্রশ্ন বিবেচনায় আনা হয়নি। এই আগ্রাসনে ইসরাইলের প্রতিরা বাহিনীর (আইডিএফ) হাতে নিহতের সংখ্যা ১৩শ পার হয়েছে, যার বেশির ভাগই হলো বেসামরিক ব্যক্তি।
গাজার ওপর ইসরাইলের হামলার পর নিউ ইয়র্ক টাইমসে জেরুসালেমভিত্তিক বিশ্লেষক নাথান ট্র্যাল উল্লেখ করেছেন যে, ‘হামাস ইসরাইলকে লক্ষ্য করে প্রথম রকেট নিক্ষেপ করেনি বরং জুন মাসের প্রথম দিকে গঠিত ফিলিস্তিনি ঐক্যের সরকারকে বিদায় করতে চেষ্টা করেছে ইসরাইল, যদিও এ সরকার তার বৈধতা স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা আরোপিত সব শর্ত মেনে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
ইসরাইলও গাজার মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছিল তা লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল, হামাস নয়। এ কাজটি ইসরাইল এই প্রথমবার করেছে এমন নয় বরং তাদের অপরাধ আরো অনেক গভীর। কোন বামপন্থীসমালোচক নন ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবং আইডিএফ-এর গাজা বিভাগের সাবেক কমান্ডার সামুয়েল জাকাই ২০০৯ সালের ইসরাইলের গাজায় যুদ্ধ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ছয় মাসের সময়কালের জন্য একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি বলবৎ ছিল এমন সময় ইসরাইল শান্ত অবস্থার উন্নয়নের পরিবর্তে তা নষ্ট করার মতো কাজ করে, যাতে (গাজা) উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের অর্থনৈতিক দুর্দশার আরো অবনতি ঘটে... ... ... আপনি কল্পনা করতে পারবেন না তাদের অর্থনৈতিক মর্মপীড়া কোথায় গিয়ে উপনীত হয়। তারা শুধু হামাসকে পাশে পাবার প্রত্যাশা করেছে আর কিছু তারা করেনি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সিনিয়র বিশ্লেষক নাথান ট্র্যাল নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন, ‘২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও, হামাস রামাল্লায় ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের কাছে গাজার আনুষ্ঠানিক কর্তৃত্ব হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ঐকমত্যের সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত হয়। এই পুনর্মিলন চুক্তির শর্তগুলো অনেকটা একতরফাভাবে পিএলও চেয়ারম্যান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপরে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নির্ধারণ করেন। চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই সুবিধা পাওয়া থেকে হামাস নেতা এবং গাজার অধিবাসীদের বঞ্চিত করে ইসরাইল পুনর্মিলন চুক্তির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়। এ দুটি সুবিধার একটি হলো হামাস সরকারে দায়িত্বপালনকারী ৪৩ হাজার সরকারি কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা এবং নতুন সরকারের অধীনে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো গাজাকে অবরোধ করে রাখা ইসরাইল ও মিসরের বন্ধ সীমান্ত খুলে দিয়ে বাইরে বিশ্বের সাথে গাজাবাসীদের যোগাযোগের সুযোগ দেয়া।
নাথান ট্র্যাল লিখেছেন, ‘পুনর্মিলন সরকার অনেক উপায়ে ইসরাইলের স্বার্থের পক্ষে। হামাস রাজনৈতিক প্রতিপকে গাজায় প্রবেশ অবারিত করে দেয়। যে ঐকমত্যের সরকার গঠিত হয় সেখানে হামাসের একজন সদস্যও নেই। এ সরকারে রামাল্লাভিত্তিক প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাখা হয়েছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটা পশ্চিমা সাহায্যপ্রাপ্তির জন্য যে তিনটি শর্ত দীর্ঘ দিন ধরে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের ছিল সে দাবি মেনে চলার অঙ্গীকার করে। এ তিনটি শর্ত হলো; অহিংস নীতি, বিগত চুক্তি মেনে চলা এবং ইসরাইলের স্বীকৃতি।
এত কিছুর পরও ইসরাইল দৃঢ়ভাবে নতুন সরকারকে আমেরিকান স্বীকৃতি দানের বিরোধিতা করে। আর এ সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালায়। তারা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার একটি ছোট পদপেকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে। ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান পশ্চিম তীর গাজা বন্ধন সুদৃঢ় হওয়া এবং পশ্চিম তীরে হামাসের কার্যক্রমের ব্যাপারে আপত্তি জানায়।
এটি ঠিক যে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ভালো চলছিল। ট্র্যালের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘হামাসের শান্তিপূর্ণ দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে যা পাওয়া উচিত ছিল তা না পেয়ে এখন তারা সহিংসতার মাধ্যমে পেতে চাইছে। তারা এমন স্থিতাবস্থায় ফিরতে চাইছে না যেখানে সারা দিনে আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে, পানি হয় পানের অযোগ্য, পয়ঃনিষ্কাশন করতে হয় সমুদ্রে ডাম্পিং করে, জ্বালানি সঙ্কটে স্যানিটেশন প্লান্ট বন্ধ থাকে আর কখনো কখনো রাস্তায় ভেসে যায়।শুধু হামাস সমর্থক নয় অনেক গাজাবাসীই এ বিপর্যয়মূলক স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করতে একটি বড় অঙ্কের মূল্য পরিশোধে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছে বলে নাথান উল্লেখ করেন।
গাজায় আগ্রাসনের জন্য ইসরাইলের বেসামরিক নাগরিকদের হামাসের রকেট থেকে রক্ষাকে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়। প্রশ্নটি হলো ইসরাইলের বেসামরিক জনগণকে রার জন্য কম প্রাণঘাতী কোনো উপায় কি ছিল না? সীমানার ওপার থেকে আসা হুমকি থেকে বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য সব সরকারের মতোই অধিকার ও দায়িত্ব তাদের রয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইসরাইলের কাজকে যে সমর্থন করেছেন তার তাৎপর্য কী? আসলেই ইসরাইলের সীমানাটি ঠিক কোথায়?
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে কোনো সময় সীমানা চিহ্নিত করেন না। তিনি বলেন না জনসংখ্যার কারা ঐ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের সাথে দুই রাষ্ট্র সমাধান চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ২০০৯ সালে করা অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান দেখানোর কোনো অভিপ্রায় যে তার ছিল না তা বিশ্বকে নেতানিয়াহু জানাতে চাননি। কারণ ইসরাইল, পিএলও এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বারিত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির যে রোড ম্যাপ তাতে ১৯৬৭ যুদ্ধবিরতি লাইনই উভয়ের সীমান্ত হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে যার কোনো একতরফা পরিবর্তনকে বারণ করা হয়েছে। এই বিধানটি ধারাবাহিকভাবে ইসরাইলি সরকারগুলো লঙ্ঘন করে তাদের অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ চালিয়ে গেছেন। নেতানিয়াহু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির প্রস্তাবিত ভূখণ্ড আলোচনার জন্য প্রারম্ভিক বিন্দু হিসেবে এই সীমান্তকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছেন; কিন্তু তার ভেতরের আকাক্সাটি শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি।
গত ১২ জুলাই ইসরাইল টাইমস-এর সম্পাদক ডেভিড হরোভিট বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেছেন যে প্রকৃত দুই রাষ্ট্র সমাধানে তার কোনো আগ্রহ নেই।হরোভিট বলেছেন, “অনিশ্চয়তা নেতানিয়াহু মোটামুটি সরিয়ে দিয়েছেন ... এবং এখন কেউ কখনো সামনে দাবি করতে পারবেন না যে তিনি (নেতানিয়াহু) সত্যিকার অর্থে কী মনে করেন তা আমাদের বলেননি। নেতানিয়াহু এটি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি কখনো পশ্চিম তীরে একটি সম্পূর্ণরূপে সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নেবেন না।
নেতানিয়াহু জন কেরির উদ্যোগে শান্তি আলোচনা চলাকালেই বলেছিলেন, ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী আইডিএফ পশ্চিম তীরে স্থায়ীভাবে থাকবে। এ সময় তিনি ইসরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের যে প্রস্তাব জন কেরি করেছিলেন তা নাকচ করে সেখানে স্থায়ীভাবে ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে বলে উল্লেখ করেন। আমেরিকান ইহুদি কংগ্রেসের সাবেক ন্যাশনাল ডিরেক্টর ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওরিয়েন্টাল ও আফ্রিকান স্টাডিজ স্কুলের অনাবাসী গবেষণা অধ্যাপক হেনরি সেইগম্যান নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করে বলেছেন, ‘বিভিন্ন ছিটমহল, যে গুলোকে ফিলিস্তিনীরা রাষ্ট্র বলতে পারেন, কিন্তু সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞায়নের জন্য যে আত্বনিযন্ত্রণাধিকার ও রাষ্ট্রত্বের যে উপাদান তা কোনো দিন ইসরাইল অনুমোদন করবে না।
নেতানিয়াহু কেন তা অনুমোদন করতে চান না? কেন তিনি কেরির শান্তি আলোচনার প্রতি কোনো সম্মান দেখালেন না? কেন তিনি ফিলিস্তিনি ঐক্য সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেন? কেন তিনি পশ্চিম তীরের অবৈধ স্থাপনা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন এবং কেন তিনি ইসরাইলের তিন কিশোর অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিয়োগান্তক ঘটনাকে হামাসের যে প্রাতিষ্ঠানিক (সামরিক থেকে ভিন্ন) রাজনৈতিক উপস্থিতি পশ্চিম তীরে রয়েছে তা ধ্বংস করতে একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছেন?
ইসরাইলের হারেতজ পত্রিকায় কলামিস্ট ইজহাক লাওর উল্লেখ করেছেন, নেতানিয়াহু এসব করছেন, ‘তিনি এবং তার সরকার একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে চান। ইসরাইল সরকারের মধ্যে উত্তরাধিকারক্রমে এ মনোভাব এসেছে যে তারা ফিলিস্তিনিদের বিপর্যস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী করে রাখতে চান।২০০৬ সালে পলিটিসাইড নামে একটি বইয়ে ইসরাইলি বিশেষজ্ঞ বারুচ কিমারলিং ইহুদিবাদীদের এই অভিপ্রায়ের কথাই উল্লেখ করেছিলেন। সুতরাং এ প্রশ্ন এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ঠিক কে ইসরাইলের মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন? আর ওবামা এ সম্পর্কে কী করতে প্রস্তুত? অধ্যাপক হেনরি সেইগম্যান উল্লেখ করেছেন, ‘আমি নিশ্চিত প্রেসিডেন্ট ওবামার রাজনৈতিক উপদেষ্টারা তাকে বলছেন, কংগ্রেসের নির্বাচনী বছরে ইসরাইল লবিকে ুব্ধ করার সময় নয়। তারা নিশ্চিতভাবেই ভুল করছেন। এটি এ কারণে নয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় নির্বাচনের সময়ের মধ্যে থাকে বরং এই কারণে এটি ভুল যে মার্কিন নির্বাচনে এই সত্য প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ইহুদিরা অব্যাহত এবং ব্যাপকভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দেয় কিন্তু নেতানিয়াহুর নীতির পক্ষে সমর্থন দেয়া এর কোন কারণ নয়।
হেনরির প্রশ্ন হলো, প্রেসিডেন্ট ওবামা যদি ইসরাইলি-ফিলিস্তিনিদের প্রভাবিত করার ইচ্ছা রাখেন তাহলে তিনি কেন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকি নিতে রাজি হবেন না?
গাজায় বর্তমান যে পরিস্থিতির উদ্ভব সেটি ইসরাইল ও পশ্চিমাদের এপ্রিল ২০১৪ এর ফিলিস্তিনি পুনর্মিলন চুক্তি বাস্তবায়ন রোধ করার পথ গ্রহণের প্রত্যক্ষ ফল। নাথান ট্র্যাল-এর এই বক্তব্য অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ইসরাইল ২০ বছর আগে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান মেনে নেয়ার কথা মুখে বললেও বাস্তবে তা চায়নি। এই আলোচনার মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করে ইসরাইল এক দিকে পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ করেছে অন্য দিকে ফিলিস্তিনিদের যে প্রতিরোধ চেতনা, সেটাকে ভোঁতা করে দিতে চেয়েছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রামের মূল ধারা ফাতাহ আন্দোলন সে চেতনা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। তারা ইসরাইলের ছাড়ের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রসত্তা পাওয়ার আশায় আশায় ২০ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। সর্বশেষ শান্তি আলোচনা ভেঙে পড়ার পর সে আশায় আর আস্থা থাকেনি। ফাতাহ নেতা মাহমুদ আব্বাসের সামনে এই ব্যর্থতার পর প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকেনি। আর হামাসও চেয়েছে ফিলিস্তিনে ঐক্যের সরকার গঠন করে গাজাকে অবরোধমুক্ত করা গেলে দুঃসহ অবস্থা থেকে সাময়িকভাবে হলেও নিষ্কৃতি মিলতে পারে; কিন্তু নেতানিয়াহুর যে লক্ষ্যের কথা ইজহাক লাওর উল্লেখ করেছেন সেটি অর্জন করতে তিনিই ফিলিস্তিনিদের ঐক্যের সরকার ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য গাজায় বেপরোয়া আগ্রাসন চালিয়েছেন। হামাসের মূল নেতা খালেদ মিশালের বক্তব্যেও এটি স্পষ্ট হয়েছে।
ইসরাইলের জন্য এই সময়টা নানা দিক থেকে ছিল অনুকূল। আরবের অন্যতম পরাশক্তি সৌদি আরব ও ইসরাইল যৌথভাবে মিসরে মুরসির সরকারকে পতন ঘটিয়ে সিসির সেনা সমর্থিত সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গাজায় আগ্রাসনে এ দুটি দেশের কেউই ইসরাইলের সত্যিকার বিরোধিতা করার কথা নয়। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আবদেল বারি আতওয়ানের লেখায় সেরকম ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। বলা হয়েছে হামাসকে দমন করার জন্য তারা এক সপ্তাহ আগ্রাসনের সময় দিয়েছিল ইসরাইলকে। সেই সময়ে কিছু করতে না পারলে সময় দেয়া হয় আরো এক সপ্তাহ; কিন্তু তাতেও সফল না হওয়ায় যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা জোরালো করা হয়েছে।
ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ সংগ্রামকে গুঁড়িয়ে দেয়ার যে চেষ্টার অংশ হিসেবে গাজায় হাজার হাজার নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে সেটি কার্যত সফল হবে না। ইসরাইল সর্বশেষ শান্তি আলোচনা ভেঙে দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উদারপন্থীদের স্বপ্নকে কার্যত নিঃশেষ করে দিয়েছে। এখন তাদের সামনে আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কোনো সম্ভাবনা আর নেই। ফলে তাদের সামনে পথ রয়েছে একটি, সেটি হলো প্রতিরোধের পথ। ইরানি নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি সেই প্রতিরোধের পথে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদেরও আসতে আহ্বান জানিয়েছেন। ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ সরকার হলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ রুদ্ধ হওয়ার পর সেই প্রতিরোধের পথেই আবার ফিলিস্তিনিরা এগোতে শুরু করবে সেই আতঙ্ক ইসরাইলকে বেপরোয়া করেছে; কিন্তু এই সংগ্রামে ইসরাইলের পক্ষে জেতা সহজ নয়। যদিও তারা সিসির মতো মুসলিম শাসকদের পাশে পেয়ে যেতে পারে।
এবারের গাজা আগ্রাসনে ফিলিস্তিনে অনেক রক্তক্ষয় হয়েছে কিন্তু ইরানের সাথে হামাসের যে দূরত্ব সিরিয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল তা অনেকখানি সহজ হয়েছে। হিজবুল্লাহ আবারো হামাসের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছে। সৌদি আরব ও মিসর ইসরাইলি স্বার্থের পক্ষে ভূমিকা রাখলেও ইসলামি আদর্শবাদীদের নির্মূল তারা করতে পারবে না। ইসরাইল আশা করেনি গাজার যুদ্ধে তাদের সেনা হারানোর সংখ্যা এভাবে বাড়বে। হামাসের দাবি অনুসারে এ সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ইসরাইল ৫৩ জনের কথা স্বীকারই করে নিয়েছে। এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার পর ইসরাইল ২০০৬ সালে লেবানন থেকে আগ্রাসন গুটিয়ে নিয়েছিল। গাজাকে নিরস্ত্রীকরণের যে লক্ষ্যের কথা বলে ইসরাইল সেখানে হামলে পড়েছিল সে লক্ষ্য বাদ রেখেই তাদের যুদ্ধ বিরতিতে যেতে হবে শেষ পর্যন্ত।
আর আমেরিকা বা ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্ররা চাইলে গাজা বা পশ্চিম তীরকে পদানত করে রাখতে পারবেন না। তারা নারী ও শিশু হত্যা করতে পারেন; কিন্তু এ হত্যার মধ্য দিয়ে যে প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে সেই শক্তি হয়ে উঠছে অজেয়। আর অতীতে মিসর সিরিয়া জর্দান বাহিনীকে পরাজিত করা যতটা সহজ হয়েছিল ততটা সহজভাবে ইসরাইল পারছে না হামাস বা হিজবুল্লাহর মতো শক্তিকে পদানত করতে। এ বাস্তবতার কারণে নেতানিয়াহু যে বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে স্বপ্ন দেখছেন সেটি বাস্তবায়ন তার পক্ষে সম্ভব হবে না। আরবের ওপর এক সময় এই অঞ্চলের শাসকদের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল তা ক্রমেই শিথিল হয়ে পড়ছে। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিকে যারা গভীর থেকে দেখছেন তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের মধ্যেও বিজয় দেখতে পাচ্ছেন। প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আবদেল বারি আতওয়ানের বক্তব্য এ ক্ষেত্রে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। তার কথাটা এরকম, ‘হ্যাঁ, আমরা গাজা উপত্যকায় আমাদের ছেলেমেয়ে, ভাইবোন হারিয়েছি, হাজার হাজার লোক আহত হয়েছে, আরো হাজার হাজার লোক তাদের বাড়িঘর খুইয়েছে, লাখো লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে; কিন্তু তারপরও সম্মান ও মর্যাদা রার লড়াইয়ে অবতীর্ণ যোদ্ধাদের হাতে ইসরাইলি সৈন্যদের হতাহত হওয়া তথা ইসরাইলি সৈন্যদের পর্যুদস্ত হওয়ার ফলে ইসরাইলিদের মনে যে ভয় ঢুকেছে তা ফিলিস্তিনিদের তি সহনীয় করে তুলেছে। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে সাতটি সন্তান ও স্বামী হারানো ফিলিস্তিনি নারীটির কথা যে শুনেছেন; তার ফুসফুসের ঠিক ওপরের আর্তনাদ যারা শুনেছেন তারাই গাজার হৃদয়ের কথা শুনেছেন। তিনি তাকে মুক্ত করার জন্য আরব দেশগুলো বা তাদের সেনাবাহিনীর দরকার নেই বলে জানিয়েছেন। আরব চ্যানেলে আমি তার সাাৎকারটি সরাসরি শুনেছি। শুজাইয়াহ এলাকার ধ্বংসস্তূপ থেকে এই নতুন আদর্শই জেগে উঠেছে। পূর্ব গাজা সিটির নতুন বীর তারাই।

মাসুম খলিলী


 

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঈদের ছুটিতে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু


এবারও ব্যতিক্রম হয়নি; পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে যথারীতি অনেক দুর্ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি মৃত্যু ঘটেছে অসংখ্য মানুষেরও। নিহতদের সঠিক সংখ্যা জানার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে সত্য, তবে নারী ও শিশুসহ শতাধিক মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে সারা দেশেই। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ফরিদপুরের ভাঙ্গার মতো কয়েকটি এলাকায় বাস গিয়ে গভীর খাদে পড়েছে। কোথাও আবার বাস ও ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এ ধরনের সংঘর্ষ বা দুর্ঘটনায় সাধারণত চালকরা বেঁচে যায়। কিন্তু এবার একাধিক চালকেরও মৃত্যু হয়েছে। সড়ক পথের তুলনায় নৌপথ অবশ্য নিরাপদই ছিল। পাঁচ-সাতশ’ আসনের লঞ্চে চার-পাঁচ হাজারের বেশি যাত্রী ঠেসাঠেসি করে উঠলেও কোনো লঞ্চ দুর্ঘটনার শিকার হয়নি। তা সত্ত্বেও নদী প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ঠিকই। নৌকাডুবিতে কুষ্টিয়ায় মারা গেছে অন্তত ১৫ জন শিশু-কিশোর। আরো জনাপনেরোর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে তাদেরও মৃত্যু ঘটেছে বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালিতেও নৌকাডুবিতে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছে। আনুমানিক এই ঈদপূর্ব পরিসংখ্যানের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে ঈদ-উত্তর দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান। কারণ ঈদের ছুটি শেষে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কর্মস্থলে ফিরে আসার পালা। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য তথ্যটি হলো, অন্যান্য বছরের মতো এবারও সড়ক দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছিল ছুটির প্রথম দিক থেকেই। ঈদ এগিয়ে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনার এবং সেসব দুর্ঘটনায় মানুষের অসহায় মৃত্যুর খবর এসেছে। সন্দেহ নেই, বেশি কথা বলার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠা যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবার নেহায়েত মন্দ দেখাননি। মুষল ধারায় শ্রাবণের বৃষ্টি শুরু হলে খানাখন্দে ভরা এবং আওয়ামী ঠিকাদারদের নামকাওয়াস্তে মেরামত করা সড়ক-মহাসড়কগুলোর হাল-অবস্থা কেমন হতো এবং দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে পৌঁছাতো এ ধরনের কোনো বিষয়ে কল্পনা করার পরিবর্তে এখানে জানানো দরকার, এবারের ঈদের ছুটিতেও জীবন হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ। এর কারণ শুধু কোনোভাবে জোড়াতালি দেয়া সড়ক-মহাসড়ক কিংবা মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী থ্রিহুইলার, ইজিবাইক, নছিমন, করিমন ও ভটভটি ধরনের নানা বাহারি নামের হালকা ও ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন নয়, অপ্রশস্ত ও খানাখন্দে ভরা সড়ক-মহাসড়কও। যাগাযোগমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা লম্বা কথা ও আশ^াসের মধুর বাণী শোনালেও পরিস্থিতিতে যে উল্লসিত বা নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো উন্নতি হয়নি তার প্রমাণ মানুষকে এবারও প্রাণ দিয়েই দিতে হয়েছে। গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চললেও এবং ঈদের সময় মানুষের ভিড় বাড়বে জানা থাকলেও সরকার যেমন কঠোর নজরদারি করেনি, মালিক ও চালকরাও তেমনি যথোচিত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেননি। এজন্যই একের পর এক দুর্ঘটনা ও মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, স্ব^াভাবিক সময়ের পাশাপাশি বিশেষ করে পবিত্র ঈদের সময় প্রতি বছর এত বেশি প্রাণহানি ও যানবাহনের ধ্বংসসহ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নেয়ার ও সহ্য করার মতো অবস্থা এখনো বাংলাদেশের নেই। এজন্যই মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করা দরকার। ঘটনাক্রমে মাঝে-মধ্যে হালকা যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়া হলেও আমরা মনে করি না যে, কেবল নিষিদ্ধ করা হলেই দুর্ঘটনা এক লাফে শূন্যের ঘরে নেমে আসবে। কারণ দুর্ঘটনার অন্য কিছু অনস্বীকার্য কারণও রয়েছে। চালকদের অদক্ষতা, অসাবধানতা এবং পাল্লা দেয়ার ও সামনের গাড়িকে ওভারটেক করার প্রবণতা এরকম একটি বড় কারণ। বহু চালকেরই যে প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স নেই, সে কথা জানার জন্য গবেষণা বা অনুসন্ধানের দরকার পড়ে না। এ ধরনের চালকরা এমনকি রাজধানীতেও বছরের পর বছর ধরে দিব্যি গাড়ি চালাচ্ছে। ধরা পড়লে উৎকোচ দিয়ে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে তারা। সুতরাং মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে হলে এমন আয়োজন নিশ্চিত করা দরকার, যাতে লাইসেন্সহীন ও অদক্ষ কোনো লোক গাড়ি চালাতে না পারে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রয়েছে ত্রুটিযুক্ত যানবাহন। নগদ উৎকোচের বিনিময়ে ত্রুটিযুক্ত, এমনকি লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা শত শত যানবাহনও দেশের সব অঞ্চলে চলাচল করছে। একই কথা লঞ্চ ও স্টিমারের বেলায়ও সমান সত্য। এবারও ছুটি শুরু হওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত খবরে দেখা গেছে, ভাঙা ও লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা অনেক লঞ্চকে নতুন রং লাগিয়ে এবং কোনোভাবে ঝালাই বা মেরামত করেই নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছেন মালিকরা। তারা শুধু ভাড়ার টাকা গুনতেই বেশি ব্যস্ত থেকেছেন, মানুষের জীবন নিয়ে সামান্যও চিন্তা করেননি। সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই আমরা মনে করি, সত্যিই দুর্ঘটনা কমাতে এবং পর্যায়ক্রমে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চাইলে ত্রুটিযুক্ত ও ফিটনেসবিহীন কোনো যানবাহনকে মহাসড়কে চলাচল করতে দেয়া যাবে না। একযোগে ট্রাফিক আইনেরও কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। চালকরা যাতে আইন মেনে চলে এবং পাল্লা দিতে বা ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা না ঘটায়, বাস নিয়ে সোজা খাদে চলে না যায়Ñ এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে নজরদারির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতিও। কারণ উৎকোচের সঙ্গে তাদের সরাসরি সম্পর্ক থাকার প্রতিষ্ঠিত অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এমনকি ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের বিরুদ্ধেও। এজন্যই বাস তো বটেই, ফিটনেসবিহীন অনেক লঞ্চ-স্টিমারও বাধাহীনভাবেই চলাচল করতে পেরেছে। একই কারণে পদক্ষেপ নিতে হবে সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপারে, পরিকল্পনাও নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। এভাবে সব মিলিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হলেই মহাসড়কের পাশাপাশি নৌপথেও দুর্ঘটনা কমে আসতে পারে বলে আমরা মনে করি। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে তেমন পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ নেয়া দরকার অনবিলম্বে, যাতে আর কোনো দুর্ঘটনায় মানুষকে জীবন হারাতে না হয়। যাতে বিশেষ করে ঈদের ছুটিতে মানুষ আনন্দ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। 

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিএনপির আন্দোলনের ডাক


ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস আন্দোলন ও শোষণের ইতিহাস। যারা রাজনৈতিক ইতিহাস পড়েছেন, তারা জানেন যে, আদিকালে কিছুসংখ্যক আদিবাসী যেমন কোল, দ্রাবিড়রা সুখ-শান্তিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস করছিলেন। এদের জীবনে একপর্যায়ে আর্যরা অশান্তি সৃষ্টি করে। কারা এই আর্য? ইতিহাস বলে এরা বহিরাগত। ভারতে আগমনকারীদের মধ্যে আর্যরাই সর্বশেষ আগমনকারী। নানাবিধ সমস্যার কারণে এই আর্যরা পৃথিবীর তিনটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে বলে এদের পৃথিবীর তিনটি পৃথক জাতির পিতৃবংশ মনে করা হয়। এদের প্রথম দলটি ইতালিতে অবস্থান নেয়। যার ফলে ইতিহাসে এরা রোমক জাতি হিসেবে পরিচিত। দ্বিতীয় দল মিসর, এশিয়া মাইনর, মেসোপটেমিয়া হয়ে গ্রিসে পৌঁছে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সর্বশেষ অর্থাৎ তৃতীয় দল প্রাচীন পারস্য বা ইরান হয়ে ভারতে পৌঁছে। ভারতে পৌঁছার পর তারা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্য কোল এবং দ্রাবিড়দের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং বিজয় অর্জন করে। বিজয়ের পর দ্রাবিড় ও কোলদের দাস এবং দস্যু হিসেবে চিহ্নিত করে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। এখান থেকেই নির্যাতন এবং শোষণ শাসনের শুরু। এরপর মুঘল, ইংরেজ এবং পাকিস্তানের জমানায় মানুষ শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। জীবন দিয়েছে বর্বর অনেক শাসকের আমলেই। বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেই ধারাবাহিকতারই অনুসরণ করে চলেছে মাত্র। শাসন, শোষণ, নির্যাতন, গুম-খুন সবই চলছে ধারাবাহিকভাবে আর এ কারণে আন্দোলনও দানা বেঁধে উঠছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। যেমনটি ঘটেছে পূর্বের অন্যান্য শাসকদের জমানায়।
আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের ক্ষমতায়ন, শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের সাথে ভারতে আগত বহিরাগত আর্যদের ক্ষমতায়ন, শাসন, শোষণ ও নির্যাতনের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আর্যরা অবৈধভাবে কোল এবং দ্রাবিড়দের পরাজিত করার পর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে যেভাবে কোল এবং দ্রাবিড়দের দাস এবং দস্যু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সর্বোপরি বর্ণবৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে কোল ও দ্রাবিড়দের নি¤œবর্ণ অর্থাৎ অস্পৃশ্য ঘোষণা দিয়ে যেভাবে নির্যাতন করেছে এবং করছে, ঠিক সেভাবেই আওয়ামী লীগ সরকার তার অপছন্দের মানুষকে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে চলেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের রাজাকার আখ্যায়িত করে অস্পৃশ্য প্রমাণের চেষ্টা করছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও রাজাকার বলতে কুণ্ঠাবোধ করছে না। বিরোধী দল এমনকি নিজ দলেরও অপছন্দনীয় ব্যক্তিবর্গকে নির্যাতন, গুম, খুনের মাধ্যমে রামরাজ্য কায়েমের পাঁয়তারা করছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, সর্বস্তরের জনগণকে আন্দোলনে শামিল হতে। আর এ কারণে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রী, সরকার সমর্থক সুবিধাবাদী, সুবিধাভোগী লুটেরাদের গাত্রদাহের কারণ হয়েছে। তারা নানাভাবে বলার চেষ্টা করছেন কী দরকার আন্দোলনের? দেশ তো ভালোভাবেই চলছে! ভোটারবিহীন নির্বাচনে এবং বিনাভোটে বিজয়ী সদস্যদের নিয়ে গঠিত সরকারকে তো দেশ বিদেশের মানুষ মেনেই নিয়েছেন। মধ্যরাতের টকশোগুলোতে কোনো কোনো আলোচক বলছেন বিএনপিকে বলব, ভারতের বিজেপির দিকে নজর দিতে। কিভাবে জনগণের সমর্থন পেতে হয় তা বিজেপির কাছে শিখে নিতে।
বিএনপি জন্মলগ্ন থেকে দলমত নির্বিশেষে সব স্তরের সব দলের জনগণকে নিয়েই রাজনীতি করে আসছে। বাকশাল সৃষ্টির পর আওয়ামী লীগ যেসব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল, যেসব রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল বিএনপি প্রধান জিয়াউর রহমান সেসব পত্রপত্রিকা এবং রাজনৈতিক দলকে মুক্ত করে দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন। মাঠে-ঘাটে, গ্রাম-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে সব শ্রেণীর মানুষের সাথে যোগাযোগ করে বিএনপির প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন গড়ে তুলেছে। তার পরও বলা হচ্ছেÑ বিজেপির কাছে রাজনীতি শিখতে হবে বিএনপিকে! নাকি প্রকারান্তরে বলতে চাইছেন অন্য ধর্মের ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করে নিজ জনগোষ্ঠীকে কিভাবে খুশি করতে হয় সে বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে বিজেপির পথ অনুসরণ করতে?
যারা বিএনপিকে নানা উপদেশ দিচ্ছেন বিজেপির মতো জনমত গড়ে তুলতে. তারা কি মনে করছেন বিএনপির প্রতি জনসমর্থন নেই? যদি তাই হয়, তাহলে নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নিতে দেয়া হলো না কেন? নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করলেই উপদেশদাতারা বুঝতে পারতেন বিএনপির জনসমর্থন কতটা। নির্বাচনের আগে আমি কয়েক দিনের জন্য গ্রামে গিয়েছিলাম (নাটোর), সেখানকার সাধারণ মানুষের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা বলেছিলেন, এবার বিএনপির পক্ষে কলাগাছও যদি দাঁড়ায় তাহলে জনগণ কলাগাছকেই ভোট দেবে। আওয়ামী লীগকে দেবে না। এ বিষয়ে নির্বাচনের আগে একটি পত্রিকায় লিখেছিলাম; কিন্তু নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের সমসুযোগ না থাকায় বিএনপির পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। হলে অবশ্যই বিজেপিপন্থীরা বুঝতে পারতেন এবং বলতেন বিজেপি নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিএনপির কাছ থেকেই জনমত গঠনের প্রক্রিয়া আত্মস্থ করেছে। টকশোর বিজেপিপ্রিয় আলোচকেরা কি বলতে পারবেন, কবে কোন আন্দোলন হয়েছে কোনো সমস্যা ছাড়া। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন, কোন আন্দোলন সমস্যা-সঙ্ঘাত ছাড়া সফল হয়েছে? পৃথিবীর সব মানুষ জানে যে, আন্দোলন মানে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তাদের বিপদে ফেলা। আন্দোলন মানেই আন্দোলনের সময়কালে দেশে কিংবা প্রতিষ্ঠানে অস্বস্তি বিরাজ করা। সম্প্রতি গার্মেন্ট কর্মীদের যে বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে, সে বেতন কি কর্মীদের ভালোবেসে বৃদ্ধি করেছেন কর্তৃপক্ষ? মোটেও তা নয়। কঠোর আন্দোলন ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তা আদায় করতে হয়েছে। সুতরাং আন্দোলনের সাথে সন্ত্রাস বা সমস্যা সৃষ্টির সম্পর্ক রয়েছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। আর বাংলাদেশে সন্ত্রাস কিংবা অশান্তি যে সরকারের মাস্তান বা ক্যাডার বাহিনীই প্রথম শুরু করে, এ কথা সবার জানা। কারণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের পথে পথে বাধা দেয়া, সভা সমিতিতে যোগ দিতে না দেয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হওয়া এ দেশে স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণে আন্দোলন অহিংস থাকে না। তবু বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেনÑ ‘আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে।তবে আমাদের ধারণা, আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে কি হবে না তা নির্ভর করছে সরকারের মনোভাব এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের ওপর।
বিএনপি দীর্ঘ দিন সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করছে আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান করতে; কিন্তু সরকার কর্ণপাত করছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বরং বলা হচ্ছেÑ কোনো আলোচনা নয়। এ সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে। অথচ সমগ্র বিশ্বের জনমত আলোচনার মাধ্যমে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার পক্ষে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন চেয়েছে। বাংলাদেশে নবনির্বাচিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বর্নিকাট বলেছেনÑ ‘বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এখন প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জরুরি ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করা দরকার। এসব বক্তব্য ১৬ এবং ১৯ জুলাইয়ের (২০১৪); কিন্তু এসব বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে দাম্ভিক সরকারের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন ‘নির্বাচনে কেউ না আসলে সেই নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ হয় এ কথা আমরা মানি না’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২০ জুলাই ১৪)। দাম্ভিক সরকারের স্তাবক বুদ্ধিজীবী এবং আলোচকদের কাছে এখন প্রশ্নÑ সরকারের এ ধরনের মানসিকতা এবং বক্তব্যের পর আন্দোলন ছাড়া সমস্যা সমাধানের আর কোনো পথ খোলা আছে কি?
বিগত সরকারের সময় থেকেই তো আন্দোলন চলছিল; কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নিয়ম রক্ষার প্রয়োজনেই নির্বাচন করতে হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের বক্তব্যের পর নির্বাচন শেষে বিএনপি জোট আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছিল এই ভেবে যে, হয়তো নির্বাচন শেষে সর্বজনগ্রাহ্য, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে আওয়ামী লীগ সরকার; কিন্তু এখন সরকার বলছেÑ তারা পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকবে। পাঁচ বছর শেষে নির্বাচন হবে। সুতরাং আন্দোলন এখন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আর এ আন্দোলন কেন সরকার তা ভালো করেই জানে। জানে বলেই সরকারের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সরকার যদি মনে করে আন্দোলনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে না, তাহলে সরকারকে বলতে হবে কোন পথে অগ্রসর হলে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য সফল হবে। এ মন্তব্য ব্রিটিশ বাংলার তৎকালীন গভর্নরের (প্রবাসী, ৩৪শ ভাগ, ৩য় সংখ্যা, আষাঢ়, ১৩৪১)। সরকার এ ধরনের ভূমিকা পালন করলে ভালো। আর তা না হলে আন্দোলনই হবে দাবি আদায়ের একমাত্র উপায়। কারণ আন্দোলন গণতন্ত্রেরই অংশ। গণতান্ত্রিক এই আন্দোলন হতেই হবে। সরকার এবং সরকারের স্তাবক বুদ্ধিজীবী এবং টকশোর আলোচকেরা পছন্দ করুন আর নাই করুন। সব শ্রেণীর সমালোচককে স্মরণে রাখা উচিত যে, ভারতে নির্বাচনের স্থায়ী ব্যবস্থা আছে। সেখানে কেউ কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ক্ষণে ক্ষণে নির্বাচনের নিয়ম পরিবর্তন করে না। সেজন্য কোনো নিয়ম বা আইন পাল্টানোর জন্য কোনো দলের আন্দোলন করতে হয় না। এ জন্য বিজেপিকেও আন্দোলন করতে হয়নি; কিন্তু ভারত আর বাংলাদেশ এক নয়। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য নেই। দলগুলোর নেতা-নেত্রীদের মধ্যে নেই কোনো মধুর সম্পর্ক। আর এ কারণে বিরোধীদলীয় নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বালুর ট্রাক দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে আওয়ামী জোট সরকার উৎসব করতে সক্ষম হয়! সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না থাকার কারণে, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকার কারণে, একে অপরের ক্ষতি করার মানসিকতার কারণে এবং কাউকে কেউ না মানার কারণে আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। একই কারণে বিএনপির আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।


 

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঈদুল ফিতর হল পুরুস্কার লাভের দিন


ঈদুল ফিতর নেক বান্দাদের জন্য খুশির দিন । যারা রোজা পালন করেছেন তাদের জন্য ইদুল ফিতর  আনন্দ ও উৎসবের  দিন । আর পাপি-তাপিদের জন্য এটা শাস্তি ও আজাবের দিন  । সাহাবী হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ (রাঃ) ঈদের দিন কাঁদছিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি  বলে ছিলেন, আজ খুশির দিন ওই ব্যক্তির জন্য, যার রোজা কবুল হয়েছে। ঈদুর ফিতরের দিন হল পুরুস্কার লাভের দিন। এদিন একদল ফেরেশতা দাঁড়িয়ে যান এবং বলতে থাকেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমারা তোমরা দয়াময় প্রভুর দিকে ছুটে  চলো। তিনি তোমাদের কল্যাণ দান করবেন। তিনি তোমাদের পুরস্কার দেবেন। রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের ঈদকে তাকবীর দ্বারা সৌন্দর্যম-িত কর  রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, পাঁচটি রাত জেগে যে ব্যাক্তি ইবাদত করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। রাতগুলোহল জিল হজ্জের রাত ২. আরাফার রাত, ৩. ঈদুল আজহার রাত ৪. ঈদুল ফিতরের রাত ৫. মধ্য শাবানের রাত। সুতারাং ঈদুল ফিতরে ইবাদত করা পুণ্যময় কাজ। ঈদের অনাবিল সুখ-আনন্দ শুধু রোজাদারদের জন্য। যারা ইচ্ছাকৃত রোজা ছেড়ে দিয়েছে তাদের জন্য এ আনন্দ নয়।  ঈদের পুর্ণাঙ্গ আনন্দ-খুশি ও কল্যাণ অর্জন করতে হলে আরো ঘনিষ্ঠ করতে হবে আত্মীয় স্বজনদের সাথে সুসর্ম্পক, ঘনিষ্ঠ  ও অন্তরঙ্গ করতে হবে পরিবার-পরিজনের সাথে। আমাদের ভাষায় ঈদ মানে আনন্দ হলে ও শাব্দিক বা সার্বিক বিবেচনায় ঈদ অর্থ শুধু আনন্দ বা আনন্দ-উচ্ছ্বাস নয়, খুশির বন্যা, ভোগাসক্তি বা অনিয়ন্ত্রিত উচ্ছলতা নয় বরং ঈদ ও একটি ইবাদত । ঈদুল আজহা যেমন হজ ও কোরবানীর ঈদ,তেমনি ঈদুল ফিতর রোজা রাখা বা ফিতরাদানের ঈদ। উভয়টাই পৃথক এক একটা ইবাদত। তবে এ ইবাদতের সাথে জড়িয়ে থাকে আনন্দ। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় পুরস্কারের আশা অন্তরে পোষণ করা রোজা রাখার আনন্দ। আল্লাহ্র রহমত, গুনাহের ক্ষমা, দোজখ থেকে মুক্তি, শবেকদরে হাজার বছরের পুণ্য তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ-এ সবই রোজাদারের পুরুস্কার। রোজাদার রোজা শেষে প্রত্যক্ষভাবে পুরস্কার না পেলে ও তিনি বুঝতে পারেন এগুলো। তবে রোজা কবুল হওয়া না হওয়া নিয়ে এ একটা সংশয় থাকে। গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের ভাল খাওয়াতে পরাতে, তাদের সন্তানদের মুখে মিষ্টান্ন, আর ঈদের দিনে দুমুঠো খাবার আর গায়ে নতুনজামা তুলে দিতে ধনীদের ফিতরাদান হলো রোজাদারদের আর একটি আনন্দ। আর ঈদের সূচনা হয় এভাবে। বায়হাকি  শরীফের হাদিসে বর্ণিত আছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন মদিনায় উপস্থিত হলেন তখন তাদের দুটি উৎসব পালন করতে দেখেন। আর এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উৎসব পালন করে আসছে। তিনি তাদের কাছে প্রশ্ন রাখলেন,এর মৌলিকত্ব ও বিশেষত্ব কি ? তারা বললো আমরা অন্ধকার যুগে এটা পালন করতাম আজ ও এটা পালন করছি। এ কথা শুনে রাসূল (সাঃ)বললেন, আল্লাহ্পাক তোমাদের এ দুটি উৎসবের পরিবর্তে এর চেয়ে অধিক উত্তম দুটি দিন দান করেছেন এক ঈদুল আজহা আর ঈদুল ফিতর। সুতারাং আগে উৎসব বন্ধ  করে এ দুটি দিনের নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান পালন শুরু কর। নিছক আনন্দ উৎসব ও খেল-তামাশা এবং বাহারী দামি পোশাক-পরিচ্ছদের নাম ঈদ নয়। এতে ইসলামী তাহজীব তামাদ্দুনের পরিবর্তে অনৈসলামিক কার্যকলাপের প্রসার ঘটে, যা পবিত্র ইসলামের কল্পনা ও করা যায় না। ইসলামের আনন্দ উৎসব হবে আল্লাহ্র নির্দেশ নীতি ও আর্দশ অনুযায়ী। এর বাইরে কোন কিছুকে ইসলামের আওতাভুক্ত করা যায় না। এজন্য রাসূল (সাঃ) জাহেলী যুগের খেল-তামাশার আনন্দ-উৎসবকে বাতিল ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ্র দেয়া বিধানকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। আমরা ঈদ উৎসবকে মনে করেছি বিলাসের উৎসবে। এ দিনে কে কত দামি পোশাক পরতে পারে, কে কত পোলাও, কোর্মা, রোস্ট, রেজালা, বিরিয়ানি, জর্দা ও ফিরনি ইত্যাদি অধিক পরিমাণে রান্না করতে পারে এসবের প্রতিযোগিতা চলে । কিন্ত ইসলামের আদর্শ কি এটা? মুসলমানদের ঈদের আনন্দ হলো, স্বার্থত্যাগের মাধ্যমে অভাবী, নিরন্নকে সাহায্য করার প্রাপ্ত আনন্দ। পরিতাপের বিষয়, আমাদের ঈদ উৎসব এখন বিকৃতি রূপ ধারণ করেছে । ত্যাগের উৎস পরিণত হয়েছে ভোগের উৎসবে। ঈদের দিনগুলিতে আমরা সাহাবায়ে ক্বেরামের জীবন থেকে সাহায্য নিতে পারি। তারা নিজের ভালো, পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরিধান করতেন । অনেক বেশী দান করতেন। এমনকি সাধ্যের সবটুকু বিলিয়ে দিতেন। দীর্ঘ সময় মসজিদে কাটাতেন। অন্যান্য ইবাদত ও বেশী করতেন। তাতেই অনেক বেশী আনন্দিত হতেন । পক্ষান্তরে আমাদের ঈদ-উৎসবে ত্যাগটা গৌণ, আর ভোগ ও ভোজনটাই মুখ্য। আমরা নাচ, গান, আড্ডাও টেলিভিশন দেখে সময় নষ্ট করে দেই। মসজিদে ও বেশীক্ষণ থাকতে চাই না। দামি ও বাহারী পোশাকের প্রতিযোগিতা অবতীর্ণ হই এই দিনে। আবার কেউ কেউ ফিতরা দিতে ও ইতস্তন বোধ করি। অথচ হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ফিতরা, জাকাত, রোজাদারকে বেহুদা, অবাঞ্ছনীয় ও নির্লজ্জতামূলক কথাবার্তা বা কাজ কর্মের মলিনতা থেকে পবিত্র করার এবং গরীব-মিসকিনদের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে  অবশ্যই আদায় যোগ্য। যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের আগে আদায় করবে তা ওয়াজিব ফিতরা হিসাবে আল্লাহ্র কাছে গৃহীত হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পরে তা সাধারণ দানরূপে গণ্য হবে। (আবু দাউদ ও ইব্নে মাজাহ) প্রিয় নবী (সাঃ) ঈদের দিন সকালে পরিবার-  পরিজন ও পাড়া-পড়শিদের সচেতন করে তুলতেন তাদের করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইব্নে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাঃ) প্রত্যেক ঈদেই তার মেয়ে ও স্ত্রীদেরকে ফিতরা,দান সাদকা আদায়ের নির্দেশ দিতেন ।(মুসনাদে আহমদ) ।  সদকায়ে ফিতর আদায়ের ফলে  একজন দীন দরিদ্র লোক ও ঈদের আনন্দে সামান্য হলে ও শরিক হতে পারে। কিন্তু আমাদের সমাজে আজ যেভাবে ঈদ উৎসব পালন করা হয় তা কি প্রকৃত ঈদের আনন্দের আবেদনের সঙ্গে সঙ্গতিপুর্ণ। এর উত্তর খুঁজলে নেতিবাচক জবাব বেরিয়ে আসবে। রোজার সংযম, আত্ম শুদ্ধি, ত্যাগ এবং ঈদের উদ্দেশ্য ও স্বরূপ থেকে আজ আমরা বহুদূরে অবস্থান নিয়েছি। প্রকৃত ঈদের আনন্দ উৎসব হচ্ছে, ইসলামী জীবন যাত্রা ও সাংস্কৃতির পরিপূর্ণ অভিব্যক্তি এবং সার্বজনীন আবেদনময়, যা উৎকট পঙ্কিলতার সংস্পর্শ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহপাক খুশি হন তখন, যখন তার দেয়া নেয়ামতের শোকর আদায়ের গুণ বান্দার মাঝে প্রকাশ পায়। ঈদের পুণ্যময় আনন্দের মাঝে নবী করিম (সাঃ) এর নির্দেশনার বাস্তবায়ন যত বেশী হবে ততই ঈদ-উৎসব সফল ও সার্থক হবে । প্রতিছর মুসলমানদের ঘরে এ বার্তা নিয়ে আসে। রোজার শেষে ঈদুল ফিতর। একজন রোজাদার রমজানের একমাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে কৃচ্ছ্রতা, সংযম, ধৈর্য ও মানবিক মুল্যবোধের প্রশিক্ষণ লাভ করে; তারই মূল্যায়নের দিন ঈদুল ফিতর। রোজা মানুষের মনে উদারতা, সহমর্মিতা ও মানব প্রীতি কতটা জাগিয়ে তুলতে পেরেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ঈদের দিনে । ঈদের নামাযে ধনী নির্ধন, ইতর ভদ্র, ছোট-বড় সবাই মিলে এক কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাড়ায় ও ভক্তিভরে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে কল্যাণ শান্তির জন্য প্রার্থনা করে; তখন এক অপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা করে। ঈদগাহ হয়ে উঠে সামাজিক মিলনমেলা । বছরে অন্ততঃ ঈদের দিন মানুষ ক্ষুদ্রতা সঙ্কীর্ণতা, তুচ্ছতা,হিংসা বিদ্বেষ ভুলে পরস্পরকে ভালবাসে । পারস্পরিক কুশলবিনিময়ের মাধ্যমে সর্ব স্তরের মানুষের মধ্যে  সামাজিক ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি হয় । মুসলমানদের জীবন ধারায় এর মূল্য বিশাল   
রমযানের রোজা সাহ্রী, তারাবী, ইফতার যারা যথাযথভাবে পালন করেছেন, পাপাচার ত্যাগ করার প্রশিক্ষণনিয়েছেন, ঈদের আনন্দ তাদের জন্য। অপরদিকে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ছেড়ে দিয়েছে, দিনের বেলা পানাহার ও যৌন পরিচর্চায় লিপ্ত হয়েছে, তাদের জন্য ঈদ হলো দুঃখ হতাশার। ঝলমলে ও সুবাসিত নতুন জামা গায়ে দিয়ে ও তাদের প্রাপ্তি ভা-ার শূন্য । প্রবৃত্তির প্ররোচনাকে দমন করে যারা বিবেকের শক্তিকে জাগ্রত করতে পেরেছেন রমজান মাসে  । ঈদের দিন আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। ঈদের জন্য রোজাদারদের জন্য এটা বিরাট প্রাপ্তি ।  ঈদের দিন বড় ছোট সমাজের সব সদস্য নতুন জামা পরে বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া পড়শিদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ছালাম, কোলাকুলি ও শুভেচ্ছ বিনিময় করে থাকে। ঈদের দিন ঘরে ঘরে সেমাই পোলাও, বিরিয়ানি, পায়েসসহ নানা সুস্বাদু খাবার তৈরী হয়ে থাকে। ঈদের দিন ভাল খেলে ভাল পরলে ঈদের আনন্দ সম্পূর্ণ হয়  না, অন্যদের খাওয়া-পরার সুযোগ করে দিত হবে। সুস্বাদু খাবার কেউ একা খায় না- সবাইকে খাইয়ে আনন্দ তৃপ্তি লাভ করে। যার খাওয়ানো সর্মথনেই , তার মিষ্টি কথা বলে ,  ¯œহ-মমতা,ও সহানুভূতি দেখিয়ে সবাইকে খুশি করা উচিত । এটাই ঈদের দিনের কর্তব্য। এর ফলে পরস্পর শত্রুতাভাব বিদূরিত হয়ে সমাজের সদস্যদের মাঝে ভ্রাতৃত্বভাব জেগে উঠবে । ত্যাগের মাধ্যমে মানুষ মানুষের ভালবাসা পায় এবং জীবনের অমরত্ব লাভ করে।


রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঈদুল ফিতর থেকে আমাদের শিক্ষণীয়


পবিত্র মাহে রমযান শেষে পশ্চিম আকাশে ঈদের হেলালী চাঁদের হাসি ফুটে ওঠে। হাজারো দুঃখ কষ্ট সত্ত্বেও সর্বত্র খুশির জোয়ার বইতে দেখা যায়। প্রতিটি রোজাদার নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাভাবিক জীবন ধারায় আত্মনিয়োগ করে। দীর্ঘ এক মাসের সাধনালব্ধ নতুন অনুভূতি ও নতুন চেতনা দ্বারা জীবন হয় মার্জিত। এক দিকে মহাস্রষ্টা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের মধ্য দিয়ে দুনিয়ার হাসানা (কল্যাণ) ও আখেরাতের হাসানাকে এভাবে নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই ইসলাম মানবতার সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত প্রয়াসী, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা সবাই রোজা শেষের উৎসব আনন্দ কী সেভাবে পালন করছি? কেবল ঐ দিনই উত্তম খাদ্য খাবার, নতুন পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান, দারিদ্র্য অসহায়দের মধ্যে ফিতরা, অন্নদান, সাদকা বণ্টন ও কোলাকুলির মধ্যেই আমরা একে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। অথচ পৃথিবীর অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর জাতীয় উৎসব আনন্দ দিবসের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ব্যতিক্রম মুসলমানদের ঈদের দিন পালনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যটি আরও ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। কারণ আত্মশুদ্ধির মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশই হলো মানবজীবনের বিভিন্ন স্তরে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম বিধি লঙ্ঘনে সৃষ্ট অশান্তির আগুনে যে মানবসমাজ জ্বলছে এই প্রশিক্ষণ দ্বারা সেই আগুনকে নির্বাপিত করতে উদ্যোগী হতে হবে। মানুষ রমযানের প্রশিক্ষণ শেষ ব্যবহারিক জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর বিধানের অনুশীলন দ্বারা যাবতীয় অন্যায়-অবিচার অশান্তির মূলোৎপাটন করবে, যা গোটা সমাজকে অশান্তিময় করে তুলছে। কিন্তু মাত্র একটি দিনের আনুষ্ঠানিক খুশি উৎসব দ্বারাই আমরা আল্লাহ প্রদত্ত দিবসটি সমাপ্ত করে ফেলি। ঈদের প্রকৃত লক্ষ্যকে ধরে রাখলে বছরের প্রতিটি দিবসকেই আমরা ঈদের দিন হিসেবে পেতে পারি। কিন্তু তা না করতে পারাতে দিনটি আনুষ্ঠানিকতায় রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। কথাতো ছিল যেই জুলুম-অন্যায় দ্বারা অপরের অধিকার ক্ষুণœ হচ্ছে, যেই দুর্নীতির দ্বারা সমাজের রুই-কাতলের সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও সিংহভাগ নাগরিক নিজের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে জীবনটি তাদের হররোজ রোজাতে পরিণত হচ্ছে। ঈদ উৎসব থেকে তাদের জীবনে আনন্দ উৎসব আনার সেই শিক্ষা নেয়। কিন্তু তা আমাদের হচ্ছে না। ফলে এটি আরও দশটি সম্প্রদায়ের জাতীয় উৎসবের মতোই হয়ে যাচ্ছে। ঈদুল ফিতরের সুদূরপ্রসারী শিক্ষা অনুযায়ী রমযান শেষের একটি দিনই কেবল সামজের গরিব দুঃখীদের সুখ-দুঃখের শরীক হলে চলবে না। সারা বছরই তাদের সুখে সুখী, তাদের দুঃখে দুঃখী থাকার সহমর্মিতা থাকতে হবে। এ জন্যে ন্যায়নীতি ভিত্তিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো সৃষ্টি করতে হবে।
জীবনের সকল কাজের জন্য মহাস্রষ্টার সমীপে জবাবদিহিতার সার্বক্ষণিক অনুভূতি মানবচিত্তে জাগ্রত ও স্থায়ী রাখার জন্যেই পৌনপুনিক ইবাদত করতে হয়। বছরে একবার রোজা পালনের প্রশিক্ষণ ও পরে ঈদ উৎসব ও সকল মুসলমান বিশেষ করে মুসলিম সমাজ নেতৃত্বকে একথাটিই প্রতিবছর তাগিদ দিয়ে যায়।  ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব কৃচ্ছ্রসাধনার এই মাস থেকে জাতিকে উপদেশ গ্রহণেরও আহ্বান জানান। কিন্তু তিক্ত হলেও না বলে উপায় নেই যে, এই আহ্বান পর্যন্তই সবকিছু সীমাবদ্ধ থাকে। এ জন্যে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হতে দেখা যায় না। অথচ ঈদের চেতনা আমাদের এমন সমাজ গড়ারই তাগিদ দেয়, যেখানে ধনী-গরিব, সাদা-কালো, আশরাফ, আতরাফ নির্বিশেষে সব মানুষের সুখময় ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা বিদ্যমান থাকে। এদিক থেকে সামাজ ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের আত্মজিজ্ঞাসা থাকা উচিত। সমাজের সাধারণ মানুষ যারা দীর্ঘ একমাস আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন, তারাও এ ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্যের দিকটি অস্বীকার করতে পারবেন না। এদিক থেকে ঈদের মহান দর্শনের ভিত্তিতে আমাদের ব্যক্তি ও সমাজজীবনে কাক্সিক্ষত সুখ ও সমৃদ্ধি আনতে হলে সমাজের বিবেকবানদের কর্তব্য হলো, আমাদের সমাজ ও জাতীয় নেতৃত্বকে নিজেদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আমরা যেই মুহূর্তে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছি ঠিক এক সময় স্বদেশে-বিদেশে পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখ-ে মুসলমানদের জীবন অশান্তির অনলে দাউ দাউ করে জ্বলছে। মুসলিম সমাজের পারস্পরিক অনৈক্য এবং আল্লাহর রজ্জু পবিত্র কুরআনকে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ়হস্তে ধারণের অভাবেই মুসলিম উম্মাহর জীবন আজ এই দুর্বিষহ অবস্থার শিকার। ইসলামের আন্তর্জাতিক বৈরী শক্তি চাচ্ছে ইসলাম ও মুসলিম চেতনা বিশ্বাসকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে। এই উদ্দেশ্যে তারা প্রতিটি মুসলিম দেশে অতীত থেকে শিক্ষা-সংস্কৃতি রাজনীতি এমনকি ধর্মীয় গৌত্র মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি অনৈক্য সৃষ্টি করে আসছে। এ জন্য সমাজের একশ্রেণীর লোককে অর্থ দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায় আনার প্রলোভন দেখিয়ে অন্যভাবে হাত করে ইসলামবিরোধী পরিবেশ সৃষ্টি করে। আজকাল এ জন্যে প্রচারমাধ্যমকে বেশি কাজে লাগায়। কারণ ইসলামপন্থীরা এ ব্যাপারে বেশি উদাসীন থাকে। ফলে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামপন্থীদের হেয়প্রতিপন্ন করে তদের বক্তব্যের প্রভাব বিনষ্ট করে তোলে। কাজেই ইসলামের দেশী-বিদেশী শত্রুদের হাত থেকে ইসলাম, মুসলমান, ইসলামী মূল্যবোধ এমনকি মুসলমানদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে এ জন্যে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আবশ্যক। একমাত্র ইসলামী ঐক্যশক্তি দ্বারাই এটা সম্ভব। আর মুসলিম চিত্তে ঐক্যের চেতনা জাগ্রত করার ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির মাসে ঐ উৎসবগ্রন্থ আল-কুরআনের অধিক চর্চার তাগিদ করা হয়েছে। তাই এই ঈদ উপলক্ষে গোটা মুসলিম উম্মাহকে ইসলাম ও নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে পবিত্র কুরআনের আহ্বানের ভিত্তিতেই সকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করার নিজ নিজ পরিম-লে সচেষ্ট হওয়া সময়ের প্রধান দাবি বলে আমরা মনে করি। মোটকথা, যেই তাকওয়া তথা খোদাভীতিপূর্ণ জবাবদিহিতাপূর্ণ সাবধানী জীবনের অধিকারী হবার জন্য মহান আল্লাহ সিয়াম সাধনার প্রশিক্ষণ ও ঈদের ন্যায় তাৎপর্যপূর্ণ আনন্দের ব্যবস্থা করেছেন, মুসলিম চিত্তে সেই চেতনার আধিক্য সৃষ্টি হোক, দুনিয়া ও আখেরাতের হাসানা উভয়ই নিশ্চিত হবার মধ্য দিয়ে এই উম্মাহর সুখ-শান্তি ও বিনয় সূচিত হোক এটাই সময়ের একমাত্র দাবি।

Ads