শনিবার, ৩১ মে, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জনের নির্বাচন বৈধ নয় : ড. কামাল হোসেন


অনেকগুলো বিষয় জমে গেছে। সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। সবগুলোর ওপরে লেখা দরকার। কিন্তু সব বিষয়েই একদিনে লেখা সম্ভব না। কয়েকটি কিস্তির প্রয়োজন হবে। অন্যথায় এই পুরো পৃষ্ঠা জুড়েও হবে না। তাই ঠিক করেছি, সবগুলো বিষয়েই একটু একটু করে টাচ করবো। কথাগুলো একেবারে নতুন নয়। কিন্তু ব্যক্তি বিশেষ বললে বা প্রতিষ্ঠান বিশেষের তরফ থেকে বললে সেটি নতুন মনে হয়। প্রথমেই আসি, এই সরকার তথা এই পার্লামেন্ট বৈধ কি না। যখন বিরোধী দল বলে যে, এই পার্লামেন্ট বৈধ নয়, তাই এই সরকারও বৈধ নয়, তখন মনে হয় তারাতো বলবেই। কারণ তারাতো বিরোধী দলে আছে। কিন্তু সেই কথাই যখন শুধু বাংলাদেশের নয়, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, তখন সেটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। সেই কথাটিই বলেছেন ড. কামাল হোসেন এবং সেটি বলেছেন যেখানে সেখানে নয়, রীতিমত উচ্চ আদালতের এজলাশে এবং একজন এমিকাস কিউরী হিসাবে।
 গত বৃহস্পতিবার, বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারপতি খোরশেদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই বিষয়ে রিটের শুনানিকালে এমিকাস কিউরী হিসাবে বক্তব্য দেয়ার সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদেরকে জনগণের প্রতিনিধি বলা যাবে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। আদালতে দেয়া বক্তব্যের সময় ড. কামাল হোসেন বলেন, সংবিধানের মূলনীতি গণতন্ত্র। সংবিধানে বলা আছে, জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। সংবিধানের দেয়া এই ক্ষমতার প্রয়োগ করবে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। কিন্তু যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের কি জনপ্রতিনিধি বলা যাবে? বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন বলে আদালতে তার অভিমত প্রকাশ করেন ড. কামাল হোসেন।  সংবিধান বিশেষজ্ঞ  এই আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে এবং জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন, এ বিষয়গুলো সংবিধানেই বলা আছে। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন বুঝতে হবে, হোয়াট ইজ ইলেকশন, অর্থাৎ প্রতিনিধিরা কীভাবে নির্বাচিত হবেন। ড. কামাল বলেন, তারা জনগণের পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচিত হবেন। সর্বোপরি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে এমপি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু যে নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতা নেই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, সে নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীকে কীভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি বলা যাবে? পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ, যেখানে পাঁচ বছর পরে জনগণ একটি ভোট দেয়। তার সেই ভোট দেয়ার অধিকারও খর্ব করা হয়েছে। এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মকা- নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন থাকবে নিরপেক্ষ। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কমিশনের। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
আবার একই বক্তব্য ভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহ্ মোয়াজ্জেম হোসেন। শাহ্ মোয়াজ্জেমও একজন আইনজীবী। কিন্তু আইন ব্যবসাকে তিনি সার্বক্ষণিক পেশা হিসাবে  গ্রহণ করেননি। রাজনীতিকেই তিনি সার্বক্ষণিক কর্মের স্থল হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। গত বুধবার ২২শে মে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার ৩৩তম মৃত্যু বার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য র‌্যাবের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, আপনি ভোট পান নাই, আপনি জবর দখলকারী, র‌্যাব-পুলিশ ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছেন। যাদের দায়িত্ব জানমাল রক্ষা করা, তাদের দিয়ে আপনি জনগণের জানমাল হরণ করেছেন। আপনি গণতন্ত্র কেড়ে নিয়ে জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছেন। (সংগ্রাম-২৩-০৫-২০১৪)। তিনি বলেন, সভা সমাবেশ করতে দিবেন না। রাস্তায় আন্দোলন-মিছিল করতে দিবেন না। এটা হতে পারে না। আপনার বাবা শেখ মুজিব, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আমাদের শিখিয়ে গিয়েছেন গণতন্ত্রের জন্য রাজপথে থাকতে হবে। তিনি বলেন, এদেশে এখন চোর, গুন্ডা, বদমাশ, ঘুষখোরদের দেশ হয়ে গেছে।
দুই
যেসব পয়েন্ট এই নিবন্ধে উদ্ধৃত হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের মানুষ কম বেশি জানেন। কিন্তু কিছু কথা এখন আসছে যেগুলো চরম সত্যি কথা, কিন্তু আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে হোক অথবা অন্য যেকোন কারণে হোক না কেন, সে কথাগুলো এখন বলা হয় না। বললে অনেকের কন্ঠ সংকুচিত হয়ে যায়। কিন্তু সে কথাই বলিষ্ঠভাবে বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। বলেছেন, ‘জয়বাংলা’  শ্লোগানটা আমি বুঝি না। জয়বাংলা কোন দেশ? আমার দেশ হলো বাংলাদেশ। আপনি ‘জয় বাংলাদেশ’ বলেন। ’৭১ সালে আমরা পাকিস্তানের বিরোধী অবস্থানে থেকে ‘জয়বাংলা’ বলেছি। এখন তো বাংলাদেশ হয়ে গেছে। এগুলো চালাকি করা হচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ যখন মার্কিন কূটনীতিককে বলে, ‘এটা আমাদের অঞ্চল, এই এলাকার ভালোমন্দ আমরাই বুঝি’, তখন কোথায় থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? আজকে জামায়াতে ইসলামের ভয় দেখায়, পাকিস্তানের ভয় দেখায়। এগুলো বলে দেশকে একটি সিভিল ওয়ারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দেশে এখনো শান্তি আনা যায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে। গত বুধবার চ্যানেল আই এ টকশো ‘তৃতীয় মাত্রায়’ তিনি এসব কথা বলেন। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় এ টকশোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহবুবুল আলমও আলোচনায় অংশ নেন।  যাই হোক, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের এই বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। তাই এইগুলোর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। তবে আশার কথা হলো এই যে, এখনো ২/১ জন লোক খুঁজে পাওয়া যায় যারা বলিষ্ঠভাবে সত্যি কথা বলেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকি উপলক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার  জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান লন্ডনের এক অনুষ্ঠানে গত ২৯শে মে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যগুলো অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট। তবে আমার কাছে অবাক লেগেছে এই যে, মাত্র ২/৩টি দৈনিক পত্রিকা তারেক রহমানের এই খবরটি ছাপিয়েছে। লন্ডনের এই অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেছেন, শেখ মুজিব রাজনীতিক হিসেবে ব্যর্থ ছিলেন এবং জিয়া ছিলেন একজন সফল রাজনীতিক। একজন গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল করেছেন। আরেকজন জনগণকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছেন। প্রায় আধ ঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান র‌্যাব, পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবের ফিরে আসা, স্বাধীনতা-পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের সঙ্গে শেখ হাসিনার শাসনের চিত্র, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে জনগণের অবস্থা এতটাই ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছেছে যে, জনগণ বলতে শুরু করেছে, ওরা মানুষ নয়, ওরা আওয়ামী লীগ।
 তিনি বলেন, এমন কোনো অপকর্ম নেই যা আওয়ামী লীগ করতে পারে না। যে আ’লীগ শেখ মুজিবকে নেতা বানিয়েছিল, সেই শেখ মুজিব ’৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে গুম করার ঘটনা শেখ হাসিনা নাকি ৫ মিনিটের মধ্যে জেনে ছিলেন। জানলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তিনি বলেন, ২৭ এপ্রিল না’গঞ্জে ৭ জনকে দিনে-দুপুরে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় নদীতে। ওই এলাকার আ’লীগেরই একজন অনির্বাচিত এমপি জানিয়েছেন, অপহরণের ৫ মিনিটের মধ্যেই তিনি শেখ হাসিনাকে ঘটনা জানিয়ে ছিলেন। এরপরও অপহৃতদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়ায় এসব হত্যার দায় শেখ হাসিনা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না। তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব জনগণের লড়াই সংগ্রাম এবং কঠিন আত্মত্যাগ দেখেননি, অথচ স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে তিনিই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এসে ক্ষমতায় বসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে মা-ভাই কিংবা আত্মীয়-স্বজন হারানো যেসব মানুষ ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ মুজিবকে স্বাগত জানাতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলেন তাদের সামনে শেখ মুজিব আসেন পকেটে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের নাগরিকদের সাথে এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কী হতে পারে? শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালে মাত্র কয়েক মিনিটে গণতন্ত্রকে হত্যা করেন, নিজ দল আ’লীগকে বিলুপ্ত করেন, জনগণকে ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষ উপহার দেন। তার শাসনামলে ঘরে-বাইরে জনগণকে অনিরাপদ করে তোলা হয়েছিল।
তিন
তারেক রহমান ১৯৭৩ সালের ৬ জুলাই জাতীয় সংসদে দেয়া তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বিবৃতি তুলে ধরে বলেন, ১৯৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের জুন পর্যন্ত এই সময়কালে দেশে দুই হাজার ৩৫টি গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে এবং দুষ্কৃতকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৯২৫ জন। তিনি বলেন, মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলেও একইভাবে গুম-খুন-অপহরণ অব্যাহত রয়েছে। আ’লীগ এবং সন্ত্রাস যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তারেক রহমান বলেন, গুম-খুন-অপহরণ এখন দেশের নিত্য দিনের চিত্র।
এবার একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ দিয়ে আজকের লেখা শেষ করবো। এইতো কয়দিন আগে ছিলো ১১ জ্যৈষ্ঠ। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী। অথচ কতই না হেলা ফেলা করে দিনটি উদযাপিত হলো। কিভাবে যে দিনটি এলো, আর কিভাবে যে গেলো, সেটি সচেতন মানুষ ছাড়া অনেকে টেরই পেলেন না। নজরুল আমাদের জাতীয় কবি বলে আমরা বড়াই করি। অথচ পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে তার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, নজরুলের জন্য কি করেছেন দেখুন। গত ২৯শে মে ঢাকার একটি বাংলা দৈনিকে এ সম্পর্কে যে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে সেটি নিচে উদ্ধৃত করছি। পত্রিকাটি লিখেছে, কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কলকাতায় সদ্যনির্মিত ‘নজরুল তীর্থ’ ভবন উদ্বোধনকালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, এই তীর্থ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের পিরামিড। তিনি বলেন, আমাদের স্বপ্ন ছিল নজরুলকে নিয়ে বহু ধরনের কাজ করার। ইতিমধ্যে চুরুলিয়ায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। দুর্গাপুরে কবির নামে বিমানবন্দর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কলকাতার এই নজরুল একাডেমিও আজ সম্পূর্ণ। এখানে কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা হবে।
 গত সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতার রাজারহাটে কয়েক একর জমি নিয়ে নির্মিত প্রায় এক লাখ বর্গফুটের ওপর নির্মিত হয়েছে সুরম্য ভবন, যার নাম দেয়া হয়েছে নজরুল তীর্থ। এটি হলো নজরুল একাডেমি ভবন। ‘নজরুল তীর্থ’ উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, বাঙালি এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান ৫ম। অতএব, এই জাতিকে হেলাফেলা করা যাবে না। ‘নজরুল তীর্থ’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই একাডেমিতে জড়ো হবে অসংখ্য মেধাশক্তি এবং নজরুলের গানের ক্যাসেটে ভরে উঠবে আর্কাইভ। তিনি আরো বলেন, আমরা যখন এসব কর্মযজ্ঞ শুরু করি, কেউ কেউ তখন আড়চোখে তাকিয়েছেন। বলে বেড়িয়েছেন, সংখ্যালঘুদের টাকায় এসব হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমাদের সাফ কথা-সংখ্যালঘুরাও তো মানুষ। নজরুল কবি, বড় কবি, কবিকে নিয়ে জাতের নামে এমন বজ্জাতি সহ্য করবো না। মুখ্যমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, সব ভেদাভেদ আর সব ধরনের সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে কবি নজরুলের বসবাস। তাঁর নামে গড়ে উঠা এই তীর্থ হয়ে উঠবে দুই বাংলার সংস্কৃতিচর্চার আরেক উৎস।
রাজনৈতিকভাবে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের মতভেদ থাকতে পারে। কিন্তু নজরুলকে নিয়ে তারা যা করছেন, সেখান থেকে কি আমরা কিছুই শিখবো না?
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মাশুল গুনতে হবে আরো


বাংলাদেশে বর্তমানে যারা ক্ষমতাসীন তারা ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন ২০০৮ সালে, তৎকালের সেনাসমর্থিত মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সাথে আঁতাত করে। সে আঁতাতের মূল উদ্দেশ্যই ছিল দেশ থেকে জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি সম্পূর্ণ নির্মূল করা। সেই সাথে রাজনীতিও। এর পেছনে ছিল ইন্দোমার্কিন প্রভাব বলয়। এ এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেছিল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সরকার। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সম্পূর্ণ অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন জেনারেল মইন। আর ক্ষমতা দখল করেই তিনি বিএনপিকে নির্মূল করার জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস চালান। প্রথমে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় সব নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করেন। এরপর তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে দেন, যার চিকিৎসা এখনো তিনি লন্ডনে করছেন। এরপর গ্রেফতার করেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। যদিও লোক দেখাতে তিনি অল্প কিছ ুদিনের জন্য অন্তরীণ করেছিলেন শেখ হাসিনাকে। তারপর তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশ থেকে সক্রিয় রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। কিন্তু বিএনপি নেতারা কারাগারে আটকই থাকেন।
জেনারেল মইনের সরকার দেশের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেয়। বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের ডেকে নিয়ে জোর করে তাদের পদত্যাগ করানো হয়। নতুবা সামরিক শাসকদের পছন্দমতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়। সেটা ছিল শ্বাসরুদ্ধকর দুঃসহ পরিস্থিতি। সে সময় সরাসরি সামরিক আইন জারি করা হয়নি বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ অসাংবিধানিকভাবে মনোনীত প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীনের মাধ্যমে জেনারেল মইন এসব অপকর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন। এক সময় তিনি সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরিকল্পনাও করতে শুরু করেন। সে অনুযায়ী ফখরুদ্দীনকে দিয়ে মাঝে মধ্যে সরকার পরিচালনার বিভিন্ন ফর্মুলাও প্রণয়ন করে যেতে থাকেন, যার কোনো কিছুই এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। ওই সরকার বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছিল, যাতে এরা কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে। এগুলো যে সুফলদায়ী হয়েছিল, এমন নয়। এদের পেছনে ছিল সুশীলসমাজ নামে একটি পরজীবী শ্রেণী। এরা সেনাশাসকদের অবিরাম উৎসাহ জুগিয়ে গেছেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত পত্রপত্রিকায় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে কুৎসা রচনা করেছেন। লক্ষ্য ছিল একটাই। দেশকে রাজনীতিশূন্য করা।
জেনারেল মইনের সে স্বপ্ন সফল হয়নি। সারা দেশে যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে ব্যাপক লুটপাট ও নির্যাতনের রাজত্ব কায়েম হয়। ফলে মইন-ফখরের সরকারের প্রতি মানুষের আস্থায় মারাত্মক ধস নামে। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনা অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে উঠতে থাকে। সে রকম এক পরিস্থিতিতে ইন্দোমার্কিন প্রভুদের পরামর্শেই সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তখন আওয়ামী লীগ, সুশীল ও তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায় যে, তারা ইসলামি জঙ্গিবাদীর তোষণকারী। তাদের প্রশ্রয়েই বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যে উত্থান ঘটতে যাচ্ছিল, সূচনালগ্নেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার তাদের কঠোরভাবে দমন করে। এবং আজ পর্যন্ত সে রকম জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ, সুশীল ও তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া, ভারতের তৎকালীন সরকার ও মিডিয়া একযোগে বিএনপি-জামায়াত জোটকে জঙ্গিবাদী বলে অভিহিত করতে থাকে। এখন মনে হয়, সে প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। কারণ সুশীল সৃষ্টিতে ও বিকাশে তাদের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
জেনারেল মইনের সমর্থিত ফখরুদ্দীন সরকার অথর্ব ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার। ক্ষমতা তাহলে কাদের কাছে দিয়ে যাবে? বিএনপির ওপর এরা যে পরিমাণ অত্যাচার চালিয়েছে এবং যে অপপ্রচার হয়েছে, তাতে তাদের মধ্যে শঙ্কা দানা বাঁধা খুব স্বাভাবিক যে, বিএনপি যদি আবার কোনোভাবে ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই সেনাশাসকদের জবাবদিহিতা ও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তাতে কৃত অপরাধের জন্য চরম দণ্ড হয়তো অপেক্ষমাণ। অপর দিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঘোষণ দেন, জেনারেল মইনের সামরিক সরকার তাদের আন্দোলনেরই ফসল। তা ছাড়া শেখ হাসিনাকে যখন মুক্তি দিয়ে মইনের সরকার বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে তখন শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, সামরিক সরকার যেভাবে চলছে, অর্থাৎ বিএনপিকে ধ্বংসের চক্রান্তে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে, সেভাবেই যেন চালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাদের এসব অপকর্মের শতভাগ বৈধতা দেয়া হবে। মইন চালিয়েও গিয়েছিলেন। ফলে ইন্দোমার্কিন এক্সিস জেনারেল মইন ও আওয়ামী লীগ মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে পারলেই জেনারেল মইনের সরকার বৈধতা পাবে এবং একটি নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে জেনারেল মইনকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
আমরা শুনেছিলাম, জেনারেল মইনের সরকার, আওয়ামী লীগ নেত্রী যখন অন্তরীণ ছিলেন, তখন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। এ কথা শেখ হাসিনা নিজেই বলেছিলেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি এবং দলের কাউকে খুব একটা উচ্চবাচ্যও করতে দেননি। যদিও জেনারেল মইনের হাতে তার দলের অনেক নেতাকর্মীও মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সে সময়কার সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, পরে একে আঁতাতের নির্বাচনবলে অভিহিত করেছিলেন। যেখানে কোনো রক্তপাত হয়নি বটে, কিন্তু ১০০-১১০/১২০ ভাগ ভোট পেয়ে তখন সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল ওই বছরই। এর কোনো কিছু নিয়েই কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেয়নি মইনের পদলেহী নির্বাচন কমিশন।
ক্ষমতায় আসীন হয়ে আওয়ামী সরকার বিরোধী দলের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাতে শুরু করে। হত্যা, লুটপাট, দখল যেন এক উৎসবে পরিণত হয়। বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী নতুন করে ঘরবাড়ি ছাড়া হন। যে, যাকে, যেখানে, যখন খুশি খুন করতে শুরু করে। সারা দেশ এক আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়। ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রায় দুই মাসের মাথায়ই পিলখানায় ঘটানো হয় বিডিআর বিদ্রোহ। সে বিদ্রোহে শীর্ষস্থানীয় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে খুন করার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ আছে। জননিরাপত্তা বিষয়ে যে অরাজক পরিস্থিতি দেশে সৃষ্টি হয়, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শেখ হাসিনা বরং পাল্টা প্রশ্ন করেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তারা যা করেছিল, সে তুলনায় তার সরকারের আমলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড খুবই নগণ্য। সাংবাদিকেরা কেন তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছেন না। তখন এমনও প্রশ্ন উঠেছিল যে, ঠিক আছে, বিএনপি জোট খারাপ সরকার ছিল। জনগণ তাদের বিদায় করে দিয়েছে। আপনারা ভালো। আপনাদের কাছ থেকে তো জনগণ উন্নততর শাসনই আশা করবে। তারও শ্লেষাত্মক জবাব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এই আঁতাতের নির্বাচনদিয়ে বাংলাদেশে শুরু হলো ত্রাসের যুগ। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের যেখানেই পাওয়া যাচ্ছিল, সেখানেই হত্যা করা হচ্ছিল। গুম, মারধর এবং ঘরবাড়ি, অফিসে অগ্নিসংযোগ হয়ে উঠেছিল নিত্যকার ঘটনা। সে ধারায় কখনো ছন্দপতন ঘটেনি। বরং দিনকে দিন তার মাত্রা বেড়েই গেছে। এসব হামলার পাশাপাশি মামলাও দায়ের করা হয়েছে হাজারে হাজারে। বিএনপির অশীতিপর নেতাদের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙ্চুর ও গাড়ি পোড়ানোর মামলা করা হয়। তাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালানো হয়। এখনো হচ্ছে।
নিজ দলের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমায় মুক্ত করে এনে সার্কিট হাউজে মন্ত্রীরা ফুলের মালা দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়েছেন। ফখরুদ্দীনের সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির মামলা দায়ের করেছিল, সেগুলো তুলে নেয়া হয়েছে। তার দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া বা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলার সাথে যোগ হয়েছে নতুন নতুন মামলা। তার মাধ্যমে চলছে অব্যাহত হয়রানি।
আমরা বারবার সতর্ক করার চেষ্টা করছিলাম, এক সময় এই ঘাতকেরা স্বার্থের সঙ্ঘাতে পরস্পরের বিরুদ্ধে জীবনঘাতী হানাহানিতে জড়িয়ে পড়বে। বেশি পেছনে যাওয়ার দরকার নেই। গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে প্যানেল মেয়র কমিশনার নজরুল ইসলামসহ সাতজন খুন হয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এটুকু স্পষ্ট খুন যারা হয়েছেন, তারা সবাই আওয়ামী লীগার। খুন যারা করিয়েছেন, তারাও আওয়ামী লীগার। প্রধান আসামিকে পালিয়ে যেতে যিনি সাহায্য করেছেন, তিনিও আওয়ামী লীগের এমপি। এদেরকে যারা ছয় কোটি টাকা উৎকোচের বিনিময়েঅপহরণ করে তুলে নিয়ে গেছে, সেই র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার আওয়ামী লীগের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা লে. ক. তারেক সাঈদ। এখন আরো তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে।
এই ঘটনার রেশ তখনো ফুরায়নি। গত ২০ মে ফেনীতে খুন হন ফুলগাজী উপজেলার চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একরামুল হক একরাম। তাকে গুলি করে, কুপিয়ে এবং শেষে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। হত্যায় অংশ নেয়া সবাই ছিল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডার। উপজেলা নির্বাচনে একরামের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী মিনারকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন নিজাম হাজারী। কিন্তু আওয়ামী লীগের আর এক সাবেক এমপি জয়নাল হাজারী দাবি করেন, স্বার্থের সঙ্ঘাত আর নেতৃত্বের কোন্দলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড করিয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী নিজেই। নিজাম হাজারীকে গ্রেফতারের জন্য প্রতিদিন ফেনীতে বিক্ষোভ হচ্ছে। কিন্তু এখানেও মনে হচ্ছে সরকার আড়াল করতে চাইছে প্রকৃত খুনিদের।
গত ২৯ মে কুমিল্লায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন এক এমপির ভাতিজা। মতিঝিলে খুন হয়েছেন এক ঠিকাদার। সেখানে সন্দেহের তালিকায় শীর্ষে আছেন আর এক প্রতিমন্ত্রীর ভ্রাতুষ্পুত্র। ওই ঠিকাদারের কাছে প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা তিন কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই একই দাবিতে ২০১১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঠিকাদার সুলতান আহমেদকে অপহরণ করেছিল একই দুর্বৃত্তরা। জিম্মি করে তার কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার একটি চেক এবং আর কিছু ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিল। যদি অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগকে আরো মাশুল গুনতে হবে। 

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


 

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ফেনী নারায়ণগঞ্জ নয় সরকারী সন্ত্রাসীরা সারা দেশেই এখন তৎপর


শেখ সাহেবের নৌকা এখন খুনী, ডাকাত, জঘন্য অপরাধী, সন্ত্রাসী ও ভাড়াটে গু-াদের প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়। এই নৌকার আরোহীদের মধ্যে সজ্জন খোঁজা দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। পর পারে থেকে তিনি বা তার আত্মা এই অবস্থা দেখে কতটুকু পরিতৃপ্ত হচ্ছেন বলা মুস্কিল। তবে তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে তার নৌকার মাঝি মাল্লা আর যাত্রীরা যেভাবে বিভক্ত হয়ে পরস্পর পরস্পরকে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছেন তাতে সহজে বলা চলে যে এই দলটি অচিরেই ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষপ্ত হবে। কেউ কেউ বলা বলি করছেন যে আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে লুট পাট, জুলুম নির্যাতন, হত্যা, গুম, বিরোধীদল নিধন, মিথ্যাচারের রাজত্ব কায়েম ও নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতিবেশী দেশের কাছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন সত্তাকে যে বিকিয়ে দিয়েছে তার প্রাকৃতিক প্রতিশোধের দুএকটি নজির ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আবার কেউ কেউ সাম্প্রতিক প্রবাহকে দলটির ওপর আল্লাহর গযব বলেও অভিহিত করছেন। তাদের ধারণা নব্বই শতাংশ মুসলমানের এই দেশে জুলুম নির্যাতন, অত্যাচার অবিচার, জেনা ব্যভিচার ও দুর্নীতির যে পাহাড় আওয়ামী লীগ গড়ে তুলেছে, বিচারের নামে অবিচার করছে, সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই অবস্থায় বসে থাকতে পারেন না। তার প্রতিশোধ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। আবার কিছু দুমুখ আছেন যারা মনে করেন, যারা অল্প বয়স্ক, বিশেষ করে বয়স ৫৫ এর নীচে তারা জাতির পিতার শাসন দেখেননি, সত্তুরের দশকের প্রথমার্ধের আওয়ামী লীগকে চেনেন না তাদের জন্য তার কন্যার শাসনের মাধ্যমে তার শাসন ও আওয়ামী লীগকে চেনার একটা বিরাট সুযোগ আল্লাহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘুরেছে। দেশ আগায়নি। ঘটনা যাই হোক আমার চিন্তা ভিন্ন, অনেকটা স্বার্থ দুষ্ট।
জন্মস্থান ফেনী হবার কারণে ফেনীর প্রতি  আমার একটা স্বাভাবিক টান রয়েছে। ফেনীবাসীদের কাছে এক সময় ফেনী গর্ব করার মতো একটি জনপদ ছিল। শিক্ষা, দীক্ষা, অবকাঠামো, মানুষের বৈষয়িক অবস্থা ও জীবনযাত্রা প্রণালী, আচার আচরণ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব দিক থেকেই এই জনপদের একটি সুনাম ছিল। শৈশব ও যৌবনে এই সুনাম আমাকে আন্দোলিত করতো। কর্মজীবনে প্রায় সর্বত্র ফেনীবাসী পেশাজীবীদের দ্বীপ্ত পদচারণা ও সাফল্য দেখে তৃপ্তি পেতাম। সিভিল সার্ভিস বলুন, সাংবাদিকতা বলুন আর ব্যবসা বাণিজ্য বলুন সর্বত্র তারা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি যখন সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করি তখন এই জগতে যারা শীর্ষ স্থানে ছিলেন তাদের বেশীর ভাগই ছিল ফেনীবাসী। দুর্ভাগ্য ফেনীর এবং তার সাথে স্বাধীন বাংলাদেশেরও। সত্তুরের দশক থেকে এই জনপদের অধঃপতন শুরু হয় এবং আওয়ামী লীগই এর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। অবস্থার এতই অবনতি ঘটেছিল যে নব্বই এর দশকের শেষ ধাপে এসে দুনিয়াব্যাপী ফেনী সন্ত্রাসী জনপদ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে উঠে। আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারীর নেতৃত্বে এখানে গড ফাদারের একটি দানব শ্রেণী তৈরী হয় যাদের কাছে মানুষের জীবন, সম্পত্তি, ইজ্জত আব্রু জিম্মী হয়ে পড়ে। ২০০০ সালের কথা, তখন ফেনীর জেলা প্রশাসক ছিলেন দেবাশীস নাগ। জয়নাল হাজারীর অনুগত এবং আওয়ামী লীগের বশংবদ একজন কর্মকর্তা হিসেবে অনেকের কাছেই তিনি পরিচিত ছিলেন। আসলে তিনি ছিলেন সামর্থ্যহীন অসহায়  একজন কর্মকর্তা, একান্তে একদিন তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তিনি একটা ঘটনা বলে অনেকটা কেঁদে দিয়েছিলেন। একজন অতিরিক্ত সচিব, দাগনভূঞা তার গ্রামের বাড়ী। তার ভাই গ্রামে থাকেন। অবিবাহিত কিশোরী ও যুবতি মেয়ে আছে। তাদের নিরাপত্তা নেই। এডিশনাল সেক্রেটারি সাব পদমর্যাদার কথা চিন্তা না করে ডিসি নাগ বাবুর কাছে তাদের নিরাপত্তা চাইতে তার দফতরে দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু তিনি নিরাপত্তা দিতে পারেননি। জয়নাল হাজারীর সন্ত্রাসী বাহিনী ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালীন আওয়ামী লীগের ঐ আমলে ফেনীবাসীকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয়নি। বহুজনপদ জ্বালিয়ে দিয়েছে। বহু মা বোনের ইজ্জত লুটেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দিয়েছে। তার আদেশ অমান্য করায় ফেনীর একমাত্র মেডিকেল কলেজ ধ্বংস করে দিয়েছে। নবনির্মিত কোর্ট বিল্ডিং উদ্বোধন হতে দেয়নি। এক সাংবাদিকের হাত পা গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
২০০১ সালের সরকার পরিবর্তনের পর অবস্থার রাতারাতি পরিবর্তন ঘটেছে। ফেনীতে সুলায়মান চৌধুরীর ন্যায় একজন বাঘ জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ায় এবং চারদলীয় জোট সরকারের কঠোর পদক্ষেপে সন্ত্রাসীরা
দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। কেউ ধরা পড়ে জেলে গিয়েছিল, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। অনুপস্থিতিতে বিচার হয়ে তারা জেল-ফাঁসির সাজাও পেয়েছিল। কিন্তু মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আঁতাতের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর শুধু এরা নন যারা দেশের সন্ত্রাসী তারাও ছাড়া পেয়ে যায়। তাদের শাস্তি মওকুফ হয়। ঋণের দায়ে ফাঁসির দ-াদেশপ্রাপ্ত জঘন্য অপরাধীরাও প্রেসিডেন্টের অনুকম্পায় মুক্তি পায়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীসহ খুন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে যাদের যাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ছিল বিশেষ কমিটি করে তাদের মামলা প্রত্যাহার করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সারা দেশে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী-খুনীদের সংখ্যা ২০ হাজারের অধিক। তাদের সামাজিকভাবেও পুনর্বাসন করা হয়। জেল-জরিমানার দ-প্রাপ্ত ব্যক্তিরাও মন্ত্রিসভায় স্থান পান। ফলে পুরাতন সন্ত্রাসীদের মধ্যে এই ধারণা-বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে যায় যে, দেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই তাদের আশ্রয়স্থল, এই দল করলে অপরাধীদের যেমন শাস্তি হয় না তেমনি অর্থ বিত্তও মিলে। পুরাতনদের অনুপ্রেরণায় নতুন সন্ত্রাসীরাও একত্রিত হতে থাকে এবং নৌকায় এখন তারা এমনভাবে ঠাঁই নিয়েছে যে সেখানে আর তিল ধারণের স্থান নেই।

আমি ফেনীর সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। ফেনী তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে এবং সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছে। সারা বাংলাদেশের অবস্থা একই বলে আমার ধারণা। ফেনী, নারায়ণগঞ্জ অথবা নরসিংদী পত্রিকার হেড লাইন হয়েছে আওয়ামী লীগ-আওয়ামী লীগ কোন্দল অথবা আধিপত্য বিস্তারের লড়াইতে নৃশংস হত্যাকা- ঘটেছে বলে। আকরাম, নজরুল, লোকমান, ইব্রাহিমসহ আওয়ামী লীগের, যুবলীগের নেতারা যেভাবে নৃশংসতার শিকার হয়েছেন সভ্য জগতে তার নজির নেই। নিজ দলের লোকদের প্রতি যারা এত হিং¯্র হতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তাদের আচরণ কি আমরা কল্পনা করতে পারি? বিডিআর হত্যকা-ে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা কত নৃশংসতার শিকার হয়েছেন তা আমরা ভুলে গেছি? ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে যারা সাপের মত পিটিয়ে রাস্তার ওপর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা করেছে তারাইতো এখন ক্ষমতায়। তারাইতো নাটোরের উদীয়মান নেতা সানাউল্লাহকে রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। তাদের পরিবার এখনো ইনসাফ পাননি। এই ধরনের ঘটনাগুলো দিন দিন বাড়ছে এবং প্রত্যেকটি ঘটনাতে আওয়ামী লীগের গডফাদার সে ওই দলের সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের ওপর নির্যাতনতো অত্যাচারী ফেরাউনকে হার মানিয়েছে। দুঃখের বিষয় তাদের সাথে পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়ছেন। এর কারণ একটা এবং সেটা হচ্ছে এদের প্রতি সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুকম্পা ও পৃষ্ঠপোষকতা। যত ঘটনা-দুর্ঘটনাই ঘটুক আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বলে ফেলেন এটা জামায়াত-শিবির অথবা বিএনপির কাজ। কোনও হত্যাকা-ের ব্যাপারে মন্তব্য করার আগে তিনি কখনো তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করেন না। যদিও তদন্তে দেখা যায় যে তার দলীয় নেতা এবং বিশ্বস্তজনরাই এর সাথে জড়িত। লোকমান হত্যা, বিশ্বজিত হত্যা, নজরুল হত্যা, ব্লগার রাজিব হত্যা, ইব্রাহিম হত্যা, আকরাম হত্যাসহ সব হত্যাকা-ের খবর নিন, এর সত্যতা খুঁজে পাবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উপায় কি? উপায়ও একটি এবং তা হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়া, ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার দায় স্বীকার করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে পদত্যাগই এখন সময়ের দাবি। নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে। অচীরেই তা ডুবে সকলের সলীল সমাধি ঘটাবে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শাসকগোষ্ঠীর হিংস্র চেহারা


বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতায় আসীন হয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এক আঁতাতের নির্বাচনের মাধ্যমে। সে নির্বাচনের কৌশল যারা সমর্থন করেছিলেন, তারা অবশ্য এখনও শিবের গীত গেয়েই যাচ্ছেন। সে সময় দেশে ছিল বর্তমানে পলাতক জেনারেল মঈনের কার্যত সামরিক শাসন। মঈন ক্ষমতায় আসীন হয়েছিলেন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতা ছেড়ে দেয় ২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষে। তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল সে সময়কার সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কাছে। আওয়ামী লীগ তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে রাজপথে অবস্থান নেয় এবং প্রকাশ্যে টিভি ক্যামেরার সামনে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন কিংবা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের ব্যর্থ করা হয়। এরপর মঈন ক্ষমতা গ্রহণ করেন। যদিও সামনে তিনি রেখেছিলেন মার্কিন শিখ-ি ফখরুদ্দিন আহমদকে। তারা সংবিধানবহির্ভূত একটি তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে দুবছর ধরে দেশ শাসন করেন।
জেনারেল মঈন যদিও প্রথম দিকে বলেছিলেন, তিনি একটি নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা থেকে চলে যাবেন। কিন্তু ক্রমেই তিনি ক্ষমতা তার অনুকূলে স্থায়ী করার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকেন। তার মধ্যে প্রধান পদক্ষেপ ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা। ইন্দো-মার্কিন ষড়যন্ত্রের রূপরেখাও তাই ছিল। তখন আওয়ামী লীগ জোর প্রচারণা চালাচ্ছিল যে, বিএনপি ইসলামী মৌলবাদীদের মদদ দিয়ে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করছে। ভারতীয় মদদে চালানো সেই প্রচারণায় যুক্তরাষ্ট্রও যে বিভ্রান্ত হয়েছিল তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ফলে প্রধানত, ঐ ভারতীয় প্রচারণার ফাঁদে যুক্তরাষ্ট্র পা দেয়। সে সময় বিএনপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ছিল যে, তারা সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। কিন্তু পরে দেখা গেল, এর সবই ছিল ভারত ও আওয়ামী লীগের মিলিত প্রোপাগান্ডার ফসল। আর ইসলামী মৌলবাদ ছিল কেবলই প্রচারণার ডঙ্কা। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগই। দায়টা চাপানোর চেষ্টা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ওপর।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে যে প্রহসন হচ্ছে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন, ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রহসন ও উপজেলা নির্বাচনের ভোট ডাকাতিÑ সবকিছুই কার্যত একই সূত্রে গাঁথা। আমরা এমন এক শ্রেণীর লোক লক্ষ্য করি, যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের সমালোচনা করতে গিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনের স্তুতি করতে কসুর করেন না। তারা বলতে চান ২০০৮ সালের নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু হয়েছিল। কারণ তাতে রক্তক্ষয় হয়নি। কিন্তু সেখানে নির্বাচন কমিশন ও সামরিক প্রশাসন মনে হয়েছিল যে, একেবারে লিস্ট করে এগিয়ে গেছেন কোন আসনে কাকে জেতাবেন। সেই জন্য দেখা গেছে, ঐ নির্বাচনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভোটারের চেয়ে ভোট পড়েছে বেশি। তা নিয়ে যখন প্রশ্ন উত্থাপন হতে থাকে, তখন তৎকালীন নির্বাচন কমিশনও ঘটনার তদন্ত না করে, প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন। সেভাবেই ৩০/৩২টি আসন ছাড়া বাকি সব আসন থেকে আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে আনা হয়। আঁতাতটা ছিল তাই। জেনারেল মঈনের লুটেরা সরকার যখন দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিল না, তখন এরকম একটি নির্বাচনের আয়োজন করেছিল।
আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে ছবছর ইন্দিরা-প্রণবের পোষ্য হিসেবে সেদেশে আশ্রিত ছিলেন। সেই হিসেবে তাদের সম্পর্ক ব্যক্তি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। ইন্দিরা-প্রণব রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশ হিসেবে শেখ হাসিনাকে মনে করতেন। আর সেই কৃতজ্ঞতার ঋণ পরিশোধ করতে শেখ হাসিনা যেন কংগ্রেস সরকারকে বাংলাদেশটাকেই দিয়ে ফেলতে চাচ্ছিলেন। সেটা আরও কত বেশি নেয়া যায়, সেই জন্য যে কোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে মরিয়া ছিল কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেসের আত্মবিমোহিত নেতৃবৃন্দ এ কথাও উপলব্ধি করতে পারেনি যে, তাদের যারা বধিবে সেই ভারতবাসী গোকুলে বেড়ে উঠছে এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনে ভারতীয়রা কংগ্রেসকে শ্মশানে নিয়ে ফেলেছে। লোকসভার ৫৪৩ আসনে মধ্যে সারা ভারতে কংগ্রেস মাত্র ৪৪টি আসনে জয়লাভ করেছে। যেখানে পশ্চিমবঙ্গে এক তৃণমূলই পেয়েছে ৩৪ আসন। এমনকি এই কুচক্রি কংগ্রেস দল বিরোধী দলের আসনে বসার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে। সে মর্যাদা পেতে হলেও তাদের কমপক্ষে ৫৪টি আসনে এককভাবে জয়লাভ করা দরকার ছিল।
ভারতে কংগ্রেস যেমন, তেমনি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগও কল্পনা করেনি যে, তাদের পেয়ারের এই দলটি এমন ভরাডুবির শিকার হবে। ফলে হিসাব অনেকখানি উল্টে গেছে বৈকি। শুধুমাত্র ভারতীয় কংগ্রেসনির্ভর শেখ হাসিনা সরকার এখন চোখে-মুখে সরষে ফুল দেখতে শুরু করেছে। ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা এখনও ক্ষমতায় আসীন তারও মূল কারিগর ছিল ভারতের কংগ্রেস সরকার। সারাবিশ্বে ধিক্কার উঠলেও শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় রাখার জন্য কংগ্রেস মরিয়া ছিল। আর সে করাণেই শুধুমাত্র ভারতের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করে শেখ হাসিনাও আত্মবিমোহিত হয়ে উঠছিলেন।
আর ২০০৮ সালের আঁতাতের নির্বাচনের পর থেকে বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করার এক আত্মবিনাশী খেলায় মেতে উঠেছিল সরকার। আর সে কাজে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করে এসেছে র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগকে। লীগ ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে পুলিশের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তাদের সহযোগী বাহিনী হিসেবে নরহত্যায় মেতে উঠেছে। আমরা তখনই সতর্ক করার চেষ্টা করেছিলাম যে, এটি না থামাতে পারলে এক সময় তা আওয়ামী লীগের জন্য ও একই সাথে দেশবাসীর জন্য বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনবে। এ অঙ্ক খুব স্বাভাবিক যে, আজ যে সশস্ত্র বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খুন-গুম করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, একসময় তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য নিজেরাই গুম-খুন-অপহরণ-মুক্তিপণ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়বে। ঘটনা ঘটছেও তাই। নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা অভিযোগ অনুযায়ী ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে প্যানেল মেয়র কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের খুন করেছে। এ খুন ঢাকতে গিয়ে সেখানে খুন করা হয়েছে ১১ জনকে। যারা খুন হয়েছে তারা সরকারি দলের সমর্থক। যারা খুন করিয়েছে তারাও সরকারি দলের সমর্থক। আর যারা খুন করেছে বলে ধারণা করা হয় তারা সরকারের বাহিনী। অর্থাৎ খুনোখুনিটা এখন বিরোধী দল ছাপিয়ে সরকার ও সরকারি দলের ভেতরে বিস্তৃত হয়েছে।
উপরন্তু পুলিশ-র‌্যাবের বিরুদ্ধে প্রতিদিন খুন-গুম-অপহরণের অভিযোগ আসছে। প্রতিদিনই দু-চারটি পরিবারে কান্নার রোল উঠছে। স্বজন হারাদের আর্তনাদ আর দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারি হচ্ছে জনপদে। প্রতিবাদের শক্তিও তাদের নেই। প্রতিবাদ জানানোর কোনো ফোরাম নেই। সরকার সে আর্তধ্বনি উঠতে দিতেও চায় না। যেখানেই সেরকম সম্ভাবনা দেখা দেয়, সেখানেই তাদের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তা ভ-ুল করে দেয়ার চেষ্টা করে। কয়েকদিন আগে বিএনপির তরফ থেকে তেমন আয়োজন করা হয়েছিল ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। কিন্তু সকালেই পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়। সন্ধ্যায় পুত্রহারা, স্বামীহারা, ভাইহারা, পিতৃহারাÑ সেইসব মানুষ সমবেত হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসে। শোকবিহ্বল লোকেরা চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন। বলেছেন, প্রতিবেলা ভাত ভিজে যায় মায়েদের অশ্রুতে।
তারপরও থেমে নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুম-খুন-অপহরণ বাণিজ্য। তাদের পাশাপাশি এসব অপকর্মের জন্য সশস্ত্র দলও গঠিত হয়েছে। বাজারে কিনতে পাওয়া যায় র‌্যাব, পুলিশের পোশাক, জুতা, বেল্ট, টুপি। সেগুলো বিক্রি হয় পুলিশের সামনেই। অর্থাৎ যে যেমন করে পারো চালাও গ্রেফতার বাণিজ্য। পরিব্যাপ্ত হয়ে উঠুক অপরাধের জগত। অপরাধ বিস্তৃত হোক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কিন্তু এসব পাপ তো কখনও বাপকেও ছাড়ে না। সেটা নারায়ণগঞ্জে যেমন প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি প্রমাণিত হলো ফেনীতেও। জেল-জালিয়াতি করে একজন এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে। সেটিও বিনা ভোটেই। তার নাম নিজাম হাজারী। সেখানে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান খুন হয়েছেন কয়েকদিন আগে। সন্দেহের আঙুল ঐ নিজাম হাজারীর দিকেই। তার ধারণা, উপজেলা চেয়ারম্যানই স্বার্থের দ্বন্দ্বে তার জেল-জালিয়াতির খবর ফাঁস করে দিয়েছেন। সে কারণেই ফিল্মি স্টাইলে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হককে ফেনী শহরে প্রকাশ্যে তার গাড়ির ভেতরে গুলী করে, কুপিয়ে হত্যা করে গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করা হয়েছে। জেল-জালিয়াতির কারণেই তো ইতোমধ্যে নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। কিন্তু একরাম হত্যার পর তাকে বরং পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এরা উভয়ই আওয়ামী লীগের নেতা। এর সবকিছুর জন্য সরকারকে এক সময় চড়া মূল্য দিতে হবে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে জনগণকেও কম মাশুল গুণতে হবে না।


বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বেগম জিয়ার দাবি মেনে নিন


বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৯ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুম-খুন ও দমন-নির্যাতন বন্ধ করে অবিলম্বে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। রাজধানীতে পরপর কয়েকটি সমাবেশ করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পর গত বুধবার মুন্সীগঞ্জে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় বেগম জিয়া বলেছেন, জনগণকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে বলেই সরকার এখন জনআতঙ্কে ভুগছে। এজন্যই সরকার বিরোধী কোনো দলকেই সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। সরকার একইসঙ্গে বিরোধী দলকে নির্মূল করার জন্যও মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য ক্ষমতাসীনরা পুলিশের সঙ্গে এলিট বাহিনী র‌্যাবকেও ব্যবহার করছে। নিজেদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে সরকারের রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নিতে হচ্ছে বলে র‌্যাবও এখন গুম ও খুনের ব্যবসায় নেমে পড়েছে। নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে চলমান গুম ও খুনের বর্ণনা দিয়ে বেগম জিয়া বলেছেন, অবিলম্বে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করতে হবে। সামরিক বাহিনী থেকে আগত যেসব কর্মকর্তা গুম-খুন ও ঘুষবাণিজ্যের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন তাদের শুধু বরখাস্ত করলে বা অবসরে পাঠালে চলবে না, সামরিক আইনে বিচার করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। সরকারের দমন-নির্যাতনের তীব্র সমালোচনা করে বেগম জিয়া বলেন, এই সরকার জনগণকে অনেক কাঁদিয়েছে। এবার তাদের কাঁদতে হবে। গুম-খুন ও দমন-নির্যাতনসহ একদলীয় শাসনের জন্য জনগণ এর আগে ২১ বছর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রেখেছিল। এবার জনগণ তাদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে এবং আগামী ৪২ বছরেও আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এভাবে কঠোর বিভিন্ন বক্তব্য রাখার পাশাপাশি বেগম জিয়া সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথও দেখিয়েছেন। বলেছেন, অবৈধ সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। দাবি না মানার পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন বেগম জিয়া। বলেছেন, দাবি না মানা হলে এমন গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে যখন হাজার গুলীতেও কোনো কাজ হবে না। ক্ষমতাসীনরা তখন পালানোরও পথ পাবেন না। সরকার কত গুলী করতে এবং কত মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে সেটাও দেখা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।
বলার অপেক্ষা রাখে না, শুনতে যথেষ্ট কঠোর হলেও বিএনপির চেয়ারপারসন সামান্যও বাড়িয়ে বলেননি। গুম-খুন এবং নিষ্ঠুর দমন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশের প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে নির্বাচনের নামে যে অগণতান্ত্রিক পন্থায় বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে সে সম্পর্কে প্রথম থেকেই জেনেছে বিশ্ববাসী। দেশের মানুষ তো সব কিছু চোখের সামনেই দেখেছে। একের পর এক গুম-খুন ও লাশের মিছিলও দেখতে হচ্ছে জনগণকে। একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে সরকার একইসঙ্গে বিরোধী দলগুলোকে মিছিল-সমাবেশও করতে দিচ্ছে না। মানববন্ধনের মতো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও পালন করতে পারছে না কোনো দল, এমনকি অরাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোও। একযোগে দেশের সব অঞ্চলেই চলছে সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করার ভয়ঙ্কর অভিযান। এরও শিকার হচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। আপত্তি ও প্রতিবাদের একটি বড় কারণ হলো, দলীয় গু-া সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি এসব কাজে পুলিশ ও র‌্যাবকেও নির্বিচারে ব্যবহার করে চলেছে সরকার। বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায়। তখন থেকেই র‌্যাবকে বিলুপ্ত করার দাবি তুলেছেন বেগম জিয়া। বস্তুত সন্ত্রাস দমনের প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে চারদলীয় সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এলিট বাহিনী র‌্যাব এরই মধ্যে এক আতঙ্কের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এজন্যই বেগম জিয়ার দাবি সমর্থিত হয়েছে দেশের সকল মহলে। আমরাও মনে করি, জনগণের ট্যাক্সের অর্থে বেতন পাওয়া কোনো বাহিনীকে দিয়ে সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য গুম ও খুনের মতো ভয়ঙ্কর ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। সরকারের তাই অবিলম্বে র‌্যাবকে বিলুপ্ত করা উচিত। সরকারকে একইসঙ্গে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, বেগম জিয়া যথার্থই বলেছেন, কোনো দিক থেকেই এ সরকারের কোনো বৈধতা নেই। ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্রও সরকারকে পরিপূর্ণরূপে স্বীকৃতি দেয়নি। এ সবের সঙ্গে গুম-খুন ও দমন-নির্যাতনকে বিবেচনায় নেয়া হলে স্বীকার না করে উপায় থাকে না যে, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকারই নেই। সমগ্র এ প্রেক্ষাপটেই আমরা বেগম জিয়ার দাবিকে যুক্তিসঙ্গত ও গণতন্ত্রসম্মত মনে করি। ক্ষমতাসীনদের উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা এবং বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন একটি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নেয়া। আমাদের ধারণা, সময় থাকতে গণতন্ত্রসম্মত এ পথটিতে পা না বাড়ালে বেগম জিয়ার উচ্চারিত হুঁশিয়ারি সত্য হয়ে উঠতে পারেÑ যার মূলকথায় তিনি বলেছেন, ভালোয় ভালোয় বিদায় না নিলে জনগণ এ সরকারকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করবে এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে আগামী ৪২ বছরেও আর ক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে না।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কিশোর ছেলেরা বিশেষ ধাঁচে চুল ছেঁটে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াতঃ ‘আমি জেড ফোর্স’-আইজুদ্দিনের দেয়াল



আমরা শক্তি আমরা বল
আমরা ছাত্রদল।
মোদের পায়ের তলায় মুর্সে তুফান
উর্ধ্বে বিমান ঝড়-বাদল।
আমরা ছাত্রদল।।

ছোট বেলায় বিদ্রোহী কবি নজরুলের এই কবিতা পড়তে পড়তেই ছাত্রদল মাথার ভেতর গেথে গিয়েছিল । জানি না কেন, ছাত্রদল শব্দটি আমার বুকে এক ধরনের ভাল লাগার সৃষ্টি করেছিল। এর সুত্র ধরেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল কে চিনে ছিলাম। আব্বার মুখে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা শুনতাম। বলতেন এই মানুষটা খুব সাহসী ছিলেন। মুজিব যখন ৭ই মার্চে কিছুই বলল না, এমনকি ২৫শে মার্চ স্বেচ্ছায় বন্দি হলেন ওই মুহূর্তে জিয়ার কালুরঘাট থেকে দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণাই মুজিবের দিক-নির্দেশনা হীন অবস্থা থেকে মুক্তি পাগল জনতাকে মুক্তির পথে ধাবিত করে । 

জিয়াকে নিজে দেখি নাই। শুনে আর বই পরে জেনেছি। 
যুদ্ধোত্তর সময়ের জিয়াকে একজন সাংবাদিক ও লেখকের অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরলাম। 

আমি জেড ফোর্সঃ 
পূর্বপাকিস্তানের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা হয় একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে। সে খবর লন্ডনে এসে পৌঁছায় পরদিন দুপুরে। ফ্লিট স্ট্রিটের সাংবাদিকরা এবং লন্ডনেনিযুক্ত কয়েকজন ভিন্ন দেশি সাংবাদিক খবরের সত্যতা যাচাই এবং বিস্তারিত বিবরণসংগ্রহের আশায় বিবিসি বাংলা বিভাগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েকজন সশরীরেওএসেছিলেন আমার অফিসে। বিবিসি বাংলা বিভাগ তখন পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে খবরেরনির্ভরযোগ্য উত্স বলে সম্মানিত ছিল। তাছাড়া ১৯৭০ সালের নভেম্বরের সাইক্লোনের সময়থেকে পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য খবরের জন্য আমার ওপর নির্ভর করতে শিখেছিলেনএই সাংবাদিকরা।

তাদের প্রায় সবার একটা প্রশ্নে আমরা খুবই বিব্রতবোধ করছিলাম।পাকিস্তান থেকে প্রচার করা হচ্ছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানে এসেছেন।এ প্রচারণা দিয়ে তারা ধারণা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল যে মুজিব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেছিলেন না। 

বিশ্বাসযোগ্য খবর আমরা পেলাম চার কিংবা পাঁচ দিনের মধ্যেই। শেখমুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে কালুরঘাট রিলে স্টেশন থেকেজনৈক মেজর জিয়াউর রহমান যে ঘোষণা প্রচার করেন, ফরাসি রেডিও তার একটা রেকর্ডিং ঘুরপথেসংগ্রহ করে প্রচার করেছিল। তারপর থেকে আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতা এবং সেযুদ্ধে দেশবাসীর সর্বাত্মক সমর্থন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিশ্বাস করাতে কোনো সমস্যাহয়নি।

মেজর জিয়াউর রহমানের নাম আমি সে-ই প্রথম শুনেছিলাম। আরও পরে মুক্তিযুদ্ধে তার শৌর্য-বীর্যের আর তার সংগঠনী প্রতিভার খবর ধীরে ধীরে চুইয়ে চুইয়েআসতে থাকে। বাহাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশে যাই। দেশেরবিভিন্ন শহর-নগরে গেছি তখন। 

সর্বত্রই একটা নাম শুনেছি কিংবদন্তির মতোন —মেজর জিয়া, আর তার জেড ফোর্স। **কিশোর ছেলেরা বিশেষকরে ধাঁচে চুল ছেঁটে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াত : ‘আমি জেড ফোর্স’।**
__সাংবাদিক ও লেখক সিরাজুর রহমান

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান............ 
একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ইতিহাস, একজন কিংবদন্তি । সাধারন মানুষের মতই একজন অতি সাধারন মানুষ। অনেক মেধাবী সেনা অফিসারের মতই একজন সাধারন মেধাবী সেনা অফিসার। কোন দাম্ভিকতা ছিল না তার মধ্যে, চাকচিক্যময় জীবন যাপনের লেশমাত্রও ছিলনা । দেশকে ভালবাসতেন , ভালবাসতেন দেশের আপামর জনসাধারনকে। সাধারন মানুষের সাথে তার কোনই পার্থক্য ছিল না। 

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় দল মত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছাকাছি হতে পেরেছিলেন। মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন। 

শহীদ জিয়া অমর হোক।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। 

আইজুদ্দিনের দেয়াল।
(মিশন পোস্ট)

বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নেতানেত্রীদের আমলনামা পর্যালোচনা এখন জাতীয় জরুরি বিষয়


দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বোধহয় আরো কিছুদিন নারায়ণগঞ্জের সাত খুন ও ফেনীর একরামুল হক হত্যার ঘটনা নিয়ে সরব থাকবে। একই দলের নেতা-কর্মীরা কী করে এতদিনের সঙ্গী-সাথীদের এমন নির্মমভাবে হত্যা করে, তা ভাবতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। হত্যার আগে তো ভাবতে হয়, পরিকল্পনা করতে হয়, উপায়-উপকরণের ব্যবস্থা করতে হয় এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় কি মানুষের মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটতে পারে না? আবারো বিস্ময়মিশ্রিত কণ্ঠে উচ্চারণ করতে হয়, এরাও মানুষ? পরিতাপের সাথে বলতে হয়, আমাদের সমাজে এখন এরা শুধু মানুষ নয়, প্রতাপশালী মানুষ! কারণ এরা রাজনীতি করেন এবং সমাজ ও দেশ পরিচালনা করেন। জনমনে আজ তাই প্রশ্ন, এমন রাজনীতি ও রাজনীতিকদের দেশ ও জাতির কোনো প্রয়োজন আছে কী? কাক্সিক্ষত রাজনীতি ও রাজনীতিকদের অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে আছে এ জনপদ। কারণ ভাল লাগার মতো রাজনীতি ও রাজনীতিকরা তো এক সময় ছিলেন আমাদের এই প্রিয় জনপদে।
দেশের মানুষ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের সঠিক বিচার চায়, বিচার চায় ফেনীর একরামুল হক হত্যাকা-েরও। কারণ নির্মম ও নিষ্ঠুর এইসব হত্যাকা-ের উপযুক্ত বিচার না হলে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করা যাবে না। দেশের সাধারণ মানুষ আপন অভিজ্ঞতায় ইতোমধ্যে এই বিষয়টি বেশ ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, তাদের দুঃখ ও সর্বনাশের প্রধান কারণ হলো দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি উন্মূল করার ব্যাপারে জাতি হিসেবে আমরা কতটা প্রস্তুত? প্রস্তুতির প্রসঙ্গ এলে প্রধান দায়টা বর্তায় সরকার ও প্রশাসনের ওপর। এরপর দায় বর্তায় রাজনীতিবিদ, সমাজ-নেতা ও নাগরিক সমাজের ওপর। নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাদের কে কতটা দায়িত্ব পালন করেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
প্রথম আলোর ২৭ মে সংখ্যার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘পরিকল্পনাকারীরা আড়ালে, অপহরণকারীরা চিহ্নিত।’ এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নারায়ণগঞ্জে ৭ জনকে অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলেও খুন এবং লাশ গুমের সঙ্গে কারা সরাসরি যুক্ত ছিল, সে জায়গায় এসে আটকে আছে তদন্ত কাজ। একইভাবে নৃশংস এই হত্যাকা-ের নেপথ্যে ও পরিকল্পনায় কে বা কারা জড়িত, তাও সাক্ষ্য-প্রমাণসহ চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে এখন পর্যন্ত তারা কার্যত আড়ালেই রয়ে গেল। এই মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগের পক্ষেও শক্ত তথ্য-প্রমাণ জোগাড় হয়নি বলে জানিয়েছে তদন্ত সূত্র। নূর হোসেন গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি নিয়েও শঙ্কায় আছেন তদন্তকারীরা। এদিকে ২৭ মে প্রথম আলোতে মুদ্রিত অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হককে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কে বা কারা, তা এখনও বের করতে পারেনি পুলিশ। তবে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ফেনীর আলোচিত- সমালোচিত দুই হাজারীকেই সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। এ দুজন হলে ফেনী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নিজামউদ্দিন হাজারী ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী। নিজাম জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আর জয়নাল সাবেক সাধারণ সম্পাদক। লক্ষণীয় বিষয় হলো, অন্যান্য ঘটনার মতো নারায়ণগঞ্জ ও ফেনীর ঘটনায়ও পদাতিকদের নাম জানা গেলেও মূল হোতা ও পরিকল্পনাকারীরা এখনও আড়ালেই রয়ে গেছেন। অথচ এদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা না হলে সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি দেশ থেকে দূর হবার নয়।
দেশে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি একদিনে গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের পদস্খলনের কারণে সময়ের আবর্তনে দুর্বৃত্তায়নের শিকড় রাজনীতির গভীরে প্রোথিত হয়েছে। দেশে আইনের শাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা ফেনীর ঘটনা থেকে উপলব্ধি করা যায়। দৈনিক নয়া দিগন্তের ২৬ মে সংখ্যায় এক প্রতিবেদনে বলা হয়, একরাম হত্যার ষড়যন্ত্র আগে থেকেই জানতো পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার কিছু সদস্য। সালাম কমিউনিটি সেন্টারে সর্বশেষ চক্রান্তেও এক পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হত্যাকা-ের সময় মাত্র ৩০০ গজ দূরে পুলিশের একটি গাড়ি থাকলেও তারা একরামকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। একরামের গাড়ির ড্রাইভার ফিরোজ ওই পুলিশ সদস্যদের পায়ে ধরেছেন। বলেছেন, একরাম চেয়ারম্যানকে বাঁচান, কিন্তু তারা অন্যত্র চলে যায়। এছাড়া হত্যাকা-ের আগে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা ওই এলাকা ঘুরে যান। আবার হত্যাকা-ের পরে তিনিই সর্বপ্রথম ওই এলাকায় যান। এসব কারণে পুলিশের ওইসব সদস্যদের ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এমন বাতাবরণে কীভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিংবা বন্ধ হবে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির সিংহদ্বার?
আমাদের রাজনীতির বর্তমান দুরবস্থার জন্য নিশ্চয়ই ভীন গ্রহের কেউ দায়ী নন। এদেশের রাজনীতির ভালো-মন্দের জন্য এদেশের রাজনীতিকরাই দায়ী। তাই রাজনীতিকদের পদ-পদবি, অর্থ-সম্পদ ও ক্ষমতার চাইতেও দেশের জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাদের আমলনামা। এই প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলায় এজাহারভুক্ত দ্বিতীয় আসামী ইয়াছিন মিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ইয়াছিন মিয়া ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অবশ্য সাত খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, এমন একজন ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনের নেতা হলেন কিসের ভিত্তিতে? তার আমলনামা বিবেচনা করে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কি তাকে নেতা নির্বাচন করা হয়েছিল? প্রথম আলোর ২৬ মে সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়, ইয়াছিন মিয়া ছিলেন ‘ডাকাত দলের সদস্য।’ জনশ্রুতি আছে, নিজের গ্রাম ও মহাসড়কে যানবাহনে ডাকাতি করতেন তিনি। এক পর্যায়ে রাজনীতিতে আসেন। আয়ের মূল উৎস হয়ে ওঠে ঠিকাদারির কমিশন আর চাঁদাবাজি। কিন্তু বরাবরই থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিহত নজরুলের পরিবারের দাবি, কোটিপতি ইয়াছিন সপরিবারে সিঙ্গাপুরে পালিয়েছেন। আর নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের ভাই আব্দুস সালামের অভিযোগ, ইয়াছিন গত ৫ বছরে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এমন উদাহরণ থেকে উপলব্ধি করা যায়, দেশে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি কতটা ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের প্রশ্রয় কিংবা সহযোগিতা ছাড়া তো ইয়াছিন এত বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হতে পারেননি?
দেশের রাজনীতিতে যে অশনিসঙ্কেত দেখা দিয়েছে তার গভীরতা আমাদের সরকার ও রাজনীতিবিদরা কতটা উপলব্ধি করছেন, তা আমরা জানি না। অর্থ-সম্পদ, পদ-পদবি ও দাপট জনকল্যাণমূলক রাজনীতির মূল বিষয় হতে পারে না। জনকল্যাণমূলক রাজনীতির জন্য প্রয়োজন জনকল্যাণে পারঙ্গম, ত্যাগী ও নৈতিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মননশীল রাজনীতিবিদ। এ কারণে এখন রাজনীতিবিদদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাল্টানো প্রয়োজন। আর শুধু সরকারি দলেরই নয়, সব দলেরই নেতা-নেত্রীদের আমলনামা পর্যালোচনা করে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করা এখন দেশ ও জনগণের স্বার্থে জাতীয় জরুরি বিষয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এই দায়িত্ব পালিত না হলে শুধু কথামালার গুণে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিষয়টি আমাদের সরকার ও রাজনীতিবিদরা কতটা উপলব্ধি করেন ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তরিকতার পরিচয় দেনÑসেটাই এখন দেখার বিষয়। নয়তো জনগণের অন্তরের ক্ষোভ ঘনীভূত হয়ে যখন বিস্ফোরণে রূপ নেবে, তখন হয়তো চাইলেও সংশোধনের আর সময় পাবেন না দায়িত্বহীন মহল।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

’সাধারন মানুষের চোখে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কেমন ছিলেন’ -শারমিন বীথি।

এরকম পয়েন্টের উপর লিখতে গেলে লক্ষ লক্ষ পৃস্ঠা লেখা সম্ভব।যারা জিয়াউর রহমানকে দেখেছেন এবং তার সংস্পর্শে এসেছেন এরকম লাখ লাখ মানুষ আজো বেঁচে আছেন।তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু স্মৃতি আছে।কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের প্রজন্ম তাঁকে দেখার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত।তাই আজ আমি এমন একজনের স্মৃতির পাতা থেকে কিছু উঠিয়ে আনার চেষ্টা করছি যার সান্নিধ্যে এসেই আমি মূলত বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হয়েছি।হৃদয়ের মণিকোঠায় ধারন করতে পেরেছি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে।তিনি আমার একজন পরম আত্মীয় ও গুরু।আসুন তার মুখেই শুনি কিছু কথা।
“জেলাশহর পটুয়াখালীর উত্তরে ৪নং লাউকাঠী ইউনিয়নের মৌকরণ গ্রামের কাজীবাড়িতে আমার জন্ম।কাজীবাড়ি উক্ত জেলার একটি প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ বাড়ি।আমাদের বাড়িকে বাড়ি না বলে বরং পাড়া বললে ভালো বোঝানো যায়।প্রধান বড় বাড়িসহ পাশাপাশি অনেকগুলো বাড়ি নিয়ে আমাদের বিস্তৃত বংশ।যে সময়ের কথা বলছি তখন সারা জেলার মত আমাদের বাড়িরও সবাই আওয়ামী ভাবাপন্ন।১৯৭৭ কি ৭৮ সাল। আমি তখন ২য় কি ৩য় শ্রেণীতে পড়ি।মৌকরণ হাইস্কুল ও তৎসংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে আমাদের বিশাল বিদ্যায়তন।মৌকরণ হাইস্কুল শহর ছাড়া গ্রামের মধ্যে তখন শ্রেষ্ঠ স্কুল।আমাদের স্কুলের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি বড় খাল।আমাদের শহরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ঐ খাল এবং তাতে চলাচলকারী নৌকা।এছাড়া খালের পাশ দিয়ে পাকিস্তান বা বৃটিশ আমলে তৈরি একটি ইট বিছানো বড় রাস্তা। যার মাঝে মাঝে খানাখন্দ আর গর্তে ভরা। যেটা দিয়ে পায়ে হেটে শহরে যাওয়া যেত।দিনে দিনে খাল শুকিয়ে এক সময় নৌচলাচল একেবারে বন্ধ হতে বসেছে।এমন সময় হঠাৎ খাল শুকিয়ে একেবারে বালি!বড়রা বলছেন খালে বাঁধ দিয়ে শুকানো হয়েছে। কাটা হবে।সবাই আওয়ামী ভাবাপন্ন হওয়ায় জিয়াউর রহমানকে এই খার কাটা নিয়ে বিভিন্নভাবে কটাক্ষকরে কথা বলত।কেউ কেউ এভাবে ছড়া কাটত,
'আইলোরে কলির কাল
ছাগলে চাটে বাঘের হাল
জিয়া কাটে গোদার খাল।'
গোদার খাল আমাদের খালটিকে বলা হতো না।ঐ নামে আরও একটি খাল আমাদের এলাকায় ছিল এবং সেটিও কাটার কর্মসূচী নেওয়া হয়েছিল।তো যা বলছিলাম, একদিন হঠাৎ স্কুলের মাঠে পুলিশসহ অন্যান্য লোকজনের তৎপরতা শুরু হলো। চক পাউডার দিয়ে মাঠের মাঝখানে বড় বড় H অক্ষর লেখা হলো। বড়রা বললেন ওখানে হেলিকপ্টার নামবে।জিয়াউর রহমান আসতেছে।পরদিন পুরো স্কুল লোকে লোকারণ্য।আমার এক বড়ভাই স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় মাইকে ঘোষনা দিচ্ছিলেন।আমি ও আমার দুতিনজন সহপাঠী আগে থেকেই বড়ভাইয়ার কাছাকাছি ছিলাম। আমরা একটি বেঞ্চের উপর দাড়িয়ে ছিলাম।এক সময় আকাশ থেকে হেলিকপ্টার নামল।তিনি বের হয়ে আসলেন।লম্বা পা ফেলে চলে আসলেন মাইকের কাছে। বড়ভাই জোরে জোরে শ্লোগান ধরছেন,
’প্রেসিডেন্ট জিয়া, চেয়ারম্যান জিয়া,
জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ।।’
এক সময় শ্লোগান থামল। তিনি বললেন, “চলো”।সবাই চলল খালের দিকে।তিনি পায়ে হেটে নেমে গেলেন খালে।হাতে কোদাল নিয়ে মাটি কেটে ওড়ায় রাখলেন।তুলে দিলেন তখনকার চেয়ারম্যান আমার আরেক চাচাত ভাই কাজী আবদুল মতলেবের মাথায়।শুভ উদ্বোধন হলো নতুন খালকাটা কর্মসূচীর।একই সাথে হৃদয়ের গভীরে রোপিত হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বীজ।শুধু আমি নই বাড়ির ছোট বড় সবাই ধারন করল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের পতাকা।বড়রা বলতে লাগল যেই মানুষটি দেশের প্রধান হয়েও নিজ হাতে কোদাল ধরতে পারে দেশের দুঃখ ঘোচানোর সামর্থ একমাত্র তারই আছে।তখন থেকেই ভালোবেসেছি মানুষটারে। সেই ভালোবাসা আজ মহীরুহ।"
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
শহীদ জিয়া অমর হোক।

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গণতন্ত্র নয় গডফাদারতন্ত্র


নারায়ণগঞ্জে সাতজনের গুম, খুনের পর ফেনীতে ক্ষমতাসীন দলের এক নেতাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। যারা মারা গেছেন তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে খুনোখুনিতে যারা নিহত হচ্ছেন তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে নির্বাচিত। নজরুল ওয়ার্ড কমিশনার, একরাম উপজেলা চেয়ারম্যান, এর আগে নরসিংদীর উপজেলা চেয়ারম্যান লোকমানও এভাবে নিহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের ভেতরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের অশুভ প্রতিযোগিতার জের ধরেই এরা নিহত হয়েছেন।
৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে ও পরে সরকার সারা দেশে র‌্যাব ও পুলিশ দিয়ে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছিল। শত শত বিরোধী দলের নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। বিরোধী দলকে দমনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অশুভচক্র গড়ে উঠেছিল। তারাই পুলিশকে তালিকা তৈরি করে দিত। সেভাবেই গুম, খুনের ঘটনা ঘটত। কিন্তু নির্বাচনের পর অনেক স্থানে এই চিত্র পাল্টে যেতে থাকে। জবর দখলের সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন ঘিরে অস্ত্রবাজির ওপর ভর করে নতুন নেতার উত্থান ঘটে। ফলে আগের সত্যিকারের রাজনৈতিক নেতারা হয়ে পড়েন কোণঠাসা, দুর্বল কিংবা শঙ্কিত।  কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই নতুন আসা ক্ষমতাবানেরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে অশুভ সম্পর্ক গড়ে তুলে অপর অংশকে নির্মূলের চেষ্টা চালায়। পুলিশ বা র‌্যাবের কেউ কেউ অনেক ক্ষেত্রে হয়ে ওঠে ভাড়াটিয়া বাহিনী। পরিস্থিতি বদলের পর বন্দুকের নল শুধু তারা ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। যারা সরাসরি এসব করছেন না, তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। ফেনী ও নারায়ণগঞ্জের ঘটনা তার প্রমাণ।
নারায়ণগঞ্জে সাতজন গুম ও খুনের ঘটনার আসল পরিকল্পনাকারী ও নায়ক যারা তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় সংসদ সদস্য নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঘটনার জন্য দায়ী করে যাচ্ছেন। ওয়ার্ড কমিশানার নূর হোসেনের সাথে নজরুলের দ্বন্দ্ব নতুন করে শুরু হয়েছিল এমন নয়। এই দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। নূর হোসেন যে শামীম ওসমানের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল, এ কথাও শামীম ওসমান কখনো অস্বীকার করেননি। নজরুলকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নূর হোসেন র‌্যাবকে যদি ব্যবহার করে থাকেন তা শামীম ওসমানের অজনা থাকার কথা নয়। অথবা শামীম ওসমানের মধ্যস্থতায় হয়তো র‌্যাব এ কাজে জড়িয়ে পড়ছে। শামীম ওসমান নিজেই বলেছেন, ঘটনার সাথে সাথে তিনি র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। আবার তিনি এ কথাও বলেছেন, ১০ মিনিটের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন। এরপর নূর হোসেন প্রকাশ্য ছিলেন। গুম হওয়া সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর নূর হোসেন পালিয়ে যান। তিনি কিভাবে পালাবেন, কোথায় গিয়ে উঠবেন কার সাথে যোগাযোগ করবেন সব নির্দেশনা দিয়েছেন শামীম ওসমান। নূর হোসেনকে পালানোর সব পথ তৈরি করেছেন তিনি। একজন পলাতক অপরাধীর সাথে এই টেলিফোন কথোপকথনের পরও কিন্তু শামীম ওসমানকে গ্রেফতার করা হয়নি। শামীম ওসমান বলেছেন, যে কথোপকথন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে তা তার নিজের। তিনি প্রশ্ন করেছেন টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড করা হলো, কিন্তু নূর হোসেনকে কেন গ্রেফতার করা হলো না। যেসব গোয়েন্দা সংস্থা এই কথোপকথন রেকর্ড করেছে, তারা এর জবাব দিতে পারবে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নূর হোসেনকে কেন গ্রেফতার করল নাÑ এ কথা বলে খুনের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে পালিয়ে যাওয়ার সাহায্য করার অপরাধ থেকে তিনি মুক্ত হতে পারেন না। শামীম ওসমানের এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে শামীম ওসমান ও নূর হোসেনের গভীর সম্পর্ক ছিল। এখন নিজেকে বাঁচানোর জন্য পরস্পরের ওপর দোষারোপের খেলা চলছে। নারায়ণগঞ্জের র‌্যাবের যে কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি মন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরীর মায়ার জামাই। এই খুনের ঘটনার সাথে মায়াপুত্র দীপু চৌধুরীর নামও এসেছিল। কিন্তু এখন আর সে বিষয়টি আলোচিত হয় না। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার সাথে আমরা যে চিত্রটি পাচ্ছি র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসার মন্ত্রীর জামাই, নূর হোসেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আর তাদের পেছনে খুঁটি হচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
র‌্যাবে কর্মরত সামরিক বাহিনীর এই সদস্যদের অপরাধের বিচার অবশ্যই হতে হবে। কিন্তু ন্যায়বিচার তখনই নিশ্চিত হবে, যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব সদস্যকে যেসব রাজনৈতিক নেতা ব্যবহার করেছেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। একই সাথে র‌্যাবের যেসব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব হত্যায় অনুমোদন দিয়েছেন কিংবা জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, একই অবস্থা আমরা দেখছি ফেনীতেও। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড খুব কমই ঘটেছে। একজন মানুষকে গুলি করে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঘটনা ঘটেছে প্রকাশ্য দিবালোকে। শত শত মানুষের সামনে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। নিহত একরাম চেয়ারম্যান এক সময় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর অনুগত ক্যাডার ছিলেন। তিনিও নিজ দলের মধ্যে একাধিক খুনের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন, যা নিজাম হাজারীর জন্য ছিল চ্যালেঞ্জ। স্বভাবতই পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়ার কাজটি নিজাম সম্পন্ন করেন। হত্যার পর দায় চাপানোর চেষ্টা হয় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ওপর, যিনি উপজেলা নির্বাচনে একরামের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর খোদ প্রধানমন্ত্রীও বিরোধী দলের জড়িত থাকার আভাস দিয়েছিলেন। কিন্তু ফেনীর মানুষের মুখে মুখে ছিল কারা একরামকে হত্যা করেছে। ফলে বিষয়টি ভিন্ন খাতে নেয়া সম্ভব হয়নি। যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা সবাই নিজাম হাজারীর ক্যাডার। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় শামীম ওসমান যেমন ধারাছোঁয়ার বাইরে আছেন, তেমনি নিজাম হাজারী ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। এখন সংবাদপত্রে খবর আসছে এই হত্যাকাণ্ডের আগে যে কমিউনিটি সেন্টারে মিটিং হয়েছিল, সে খবর পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাও জানত। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কারণ, সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সাথে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশ গড়ে উঠেছে। ফলে তারা ঘটনার পরিকল্পনা জানার পরও চোখ বন্ধ করেছিল। একরামের মৃত্যু আর নিজাম হাজারীর সম্ভাব্য বিপর্যয়ের মধ্যে উঁকি ঝুঁকি মারছেন ৯৬-২০০১ এর গডফাদার জয়নাল হাজারী। তিনি এখন সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। হয়তো নতুন গডফাদারের জায়গায় পুরনো গডফাদার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
প্রকৃতপক্ষে দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে এমন ছোট বড় অনেক গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে। তারাই কার্যত প্রশাসন পরিচালনা করছেন। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সৎ সদস্যরাও তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গণতন্ত্র নয়, গডফাদারতন্ত্র আরো শক্তভাবে জেঁকে বসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে এই গাঁটছাড়া তৈরি হওয়ার কারণটি হচ্ছে পুলিশ ও র‌্যাবে, যারা এখন দায়িত্বশীল পদে কর্মরত তাদের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। শুধু দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে পদায়ন বা পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। ফলে রাজনৈতিক নৈকট্যর কারণে দ্রুত তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন। ফলে তারা রাষ্ট্রের বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন না করে স্থানীয় নেতা বা গডফাদারদের স্বার্থরক্ষা করেন। ফলে র‌্যাব ও পুলিশে এখন পচন ধরছে।
মনে রাখতে হবে দলীয় প্রশাসন সাজানোর ছকে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখনই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হয়ে পড়েছে নিয়ন্ত্রণহীন। এবারই এমন ঘটনা ঘটছে এমন নয়। ১৯৯৬-২০০১ সালেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে ঢাকায় গোয়েন্দা দফতরের অফিসের ছাদে পানির ট্যাংকে জালাল নামে এক পুলিশ সোর্সের লাশ পাওয়া গিয়েছিল। এই ঘটনার জন্য চারজন পুলিশ সদস্যকে হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে আগারগাঁওয়ে এক রিকশাচালককে গুলি করে হত্যার দায়ে এক পুলিশ সার্জেন্টের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। দলবাজ পুলিশের এমন অপরাধ এখন র‌্যাবে গড়িয়েছে।

দুই.
আমরা দেখছি নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে যতটা তোলপাড় হয়েছে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে, এর চেয়েও নৃশংস ঘটনা ঘটলেও তা নিয়ে ঝড় ওঠেনি। সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা তখন নীরবতা পালন করেছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে এতটা তোলপাড় হওয়ার কারণ নারায়ণগঞ্জে এর আগে পরিবেশ আইনবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী অপহরণ হয়েছিলেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে চন্দন সরকার নামে একজন উকিল নিহত হয়েছেন। যিনি সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তাকে সুশীলসমাজের একজন হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে সুশীলসমাজের প্রতিনিধি রফিউর রাব্বির স্কুল ছাত্রকে খুন করা হয়েছিল। এই খুনের জন্য তিনি শামীম ওসমান পরিবারকে দায়ী করেছেন।
এখন র‌্যাবের যে কর্মকর্তাকে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরে একজন চিকিৎসককে হত্যা ও লাকসামে বিএনপির দুজন নেতাকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে, তখন সুশীল সমাজ নীরবতা পালন করেছেন। এ ছাড়া শুধু সাতক্ষীরা জেলায় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আটজনকে পুলিশ হত্যা করেছে। প্রত্যেককে কাছে থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে নিহত হয়েছে ২১ জন। এসব হত্যাকাণ্ডের সাথে সাতক্ষীরায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৮৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পুলিশের হাতে মারা গেছে ৪৯ জন, র‌্যাবের হাতে ১৫ জন, যৌথ বাহিনীর হাতে ২১ জন, র‌্যাব ও বিজিবির হাতে দুজন, কোস্টগার্ডের হাতে তিনজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গত চার মাসে যারা নিহত হয়েছেন তাদের বেশির ভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ১৪ জন, বিএনপির ১২ জন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাতজন, যুবদলের আটজন, ছাত্রদলের চারজন, স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন, যুবলীগের একজন, নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির একজন এবং কথিত সন্ত্রাসী ৪১ জন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ১১১ জন গুমের তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাবের হাতে ৫১ জন, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে ৩৬ জন, পুলিশের হাতে পাঁচজন, র‌্যাব ও পুলিশের হাতে দুজন,শিল্প পুলিশের হাতে একজন এবং অন্যান্যভাবে ১৬ জন গুম হয়েছেন। গুম, খুনে র‌্যাবের পাশাপাশি পুলিশও পিছিয়ে নেই। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু পুলিশের এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নিয়ে খুব কমই আলোচনা হয়।
এসব বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে সুশীলসমাজ ও তথাকথিত মানবাধিকারজীবী সংগঠনগুলো কোনো শব্দ উচ্চারণ করেনি। কারণ এসব সুশীলসমাজের নেতাদের মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন রকম। যে লোকগুলোকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তারা যেহেতু ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের লোক সে কারণে তাদের হত্যার প্রতিবাদ বা নিন্দা করার প্রয়োজন বোধ করেনি আমাদের সুশীলসমাজ। এমনকি কিছু কিছু গণমাধ্যমও এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নায্য এমন ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে। যারা অপহরণ, গুম, খুন হচ্ছেন তারা জামায়াত, হেফাজত বা বিএনপি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড জায়েজ এমন প্রচারণা চালিয়েছেন। এখন হত্যা ও গুম যখন নিজেদের ওপর এসে পড়েছে, তখন তারা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। কিন্তু বোধোদয় হতে এতটা দেরি হয়ে গেছে এলাকাভিত্তিক গডফাদাররা তাদের ভিত্তি অনেক মজবুত করে ফেলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। কারণ গণসমর্থনহীন এই সরকার টিকে আছে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই বলপ্রয়োগে সহায়ক শক্তি হিসেবে এই গডফাদাররা কাজ করছেন। এই বলপ্রয়োগের রাজনীতি থেকে সুশীলসমাজও রক্ষা পাবে না যদি না বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম অপহরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হয়। 

আলফাজ আনাম


 

Ads