রবিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

পুলিশের উপর সরকার কি নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে?


পুলিশ বিভাগ নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শক্তিধর হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরানুযায়ী নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার একজন সহকারী উপ-পরিদর্শকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও মামলা গ্রহণ করছেন না।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনের আগের দিন ২২ মার্চ মালামাল পাঠানোর সময় মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার এটিএম মাহবুবুল করিমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, গালি-গালাজ ও পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেন লৌহজং থানার এএসআই মোঃ এমদাদ। তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও নির্বাচনী মালামালসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নষ্ট করার অভিযোগও উঠেছে। প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মধ্যে বিনিময় করা কয়েকটি চিঠিতে দেখা যায় ইউএনওকে লাঞ্ছিত করা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনও নির্দেশই পুলিশ সুপার মানেননি। পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী ২৩ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ) সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে অভিযুক্ত এএসআই-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ২৪ মার্চ আবারো মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পত্র দিয়ে বিকেলের মধ্যে মামলা করে মন্ত্রণালয়কে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আবার ২৫ মার্চ স্বরাষ্ট্র সচিবের একান্ত সচিব মামলা গ্রহণের বিষয়ে এসপির সাথে পুনরায় কথা বলেন এবং ২৭ মার্চ পুনরায় মামলা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু ৩০ মার্চ পর্যন্ত কোনও মামলা রুজু হয়নি। বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত বিস্ময়কর ও অভূতপূর্ব বলে মনে করি। আমরা যতদূর জানি পুলিশ বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এদের একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা এবং সরকারের নির্দেশ পালন। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যে স্বয়ং পুলিশের একজন কর্মচারী একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে শুধু তার দায়িত্ব পালনে বাধাই দিচ্ছেন না তাকে প্রাণের ভয়ও দেখাচ্ছেন। আবার প্রচলিত আইন অনুযায়ী নির্বাচনকালে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের যাবতীয় মেশিনারি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তাদের নির্দেশ মান্য করতে তারা বাধ্য। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র পরিদৃষ্ট হয়। এখানে সরকারের প্রশাসনিক কাঠামো, চেইন অব কমান্ড এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও এখতিয়ার কোনটাই আমরা দেখতে পাই না। এখানে দু’টি প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত পুলিশের একজন এএসআই কেমন করে এত অপরাধপ্রবণ ও শক্তিধর হয়ে ওঠেন যে তিনি প্রশাসন ক্যাডারের একজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে তার কাজে বাধাদান এবং পিস্তল দেখিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিতে পারেন। দেশটা কি আসলেই মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয়ত নির্বাচন হচ্ছে গজারিয়া থানায়। লৌহজং  থানার এএসআই এখানে কিভাবে এলেন এবং ঘটনার নাটের গুরু হিসেবে আবির্ভূত হলেন? তার শক্তির উৎস কোথায়? উৎস যেখানেই হোক অমরা মনে করি সরকারের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত বিব্রতকর এবং দেশে যে এখন প্রশাসনেরও কার্যকারিতা নেই এটি তারই একটি উদাহরণ। আমরা অবিলম্বে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। তা না হলে দেশে প্রশাসন বলতে আর কিছু থাকবে না এবং সর্বত্র নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়বে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

উপজেলা নির্বাচনে হঠাৎ বাঁক পরিবর্তন


স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দেশের সব কটি সিটি করপোরেশনে বিএনপি প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়ে একটি প্রবণতার সৃষ্টি করেছিলেন। উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে সেই প্রবণতাকে অব্যাহত রেখে দুটি ধাপের ফলাফলে এবার বিএনপিই তাদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতাকে অুণœ রেখেছিল। ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে নীতির প্রশ্নে প্রধান বিরোধী দলবর্জিত ভোটারবিহীন এক সংসদ নির্বাচনে স্বভাবতই জেদি, ক্ষমতা প্রলম্বনলিপ্সু এবং জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ মনের হরষে দেশী ও বিদেশী কোনো মহলের তোয়াক্কা না করেই তড়িঘড়ি করে পঁচাত্তর-উত্তর সময়ের তৃতীয় মেয়াদের সরকারও গঠন করে ফেলে; কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ এমন একটি সরকার গঠন করা অব্দি আওয়ামী লীগ অবশ্যই স্বস্তিতে ছিল না।
 
যেকোনো অপরাধী কোথাও কখনো স্বস্তিতে থাকতে পারে না। এই অস্বস্তি থেকে রেহাই পাওয়া  তো দূরের কথা, পাঁচ ধাপবিশিষ্ট উপজেলা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরাই এগিয়ে থেকে আওয়ামী লীগের জনবিচ্ছিন্নতাকে স্পষ্ট করে তোলে। অপর দিকে, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে নির্বাচন করেও বিএনপির জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে। আওয়ামী লীগ সরকারের বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে। ফলে আওয়ামী লীগকে নৈতিকতা বর্জিত পথ অবলম্বন করতে হলো। এর জন্য মোক্ষম সময় ছিল তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিদেশে। ফলে এত বড় একটি নির্বাচনে কর্মযজ্ঞও নড়বড়ে। বিষয়টি বিএনপি টের পেলেও এবং এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেও কোনো ফল হয়নি। এ মুহূর্তে সরকারে বা প্রশাসনে বিএনপির কোনো ক্রেডেনশিয়াল নেই। আছে শুধু দলটির নির্বাচন করার অধিকার।
 
সেই অধিকারটুকু অনিয়েই কর্তৃপক্ষকে কাকুতি মিনতি করার পর তৃতীয় ধাপের নির্বাচন হতে পেরেছে। তবে নির্বাচনে ব্যাপক সঙ্ঘাত, গোলযোগ, বোমা হামলা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জালভোট প্রদান, পোলিং এজেন্ট বহিষ্কারসহ নানা নিয়ম ঘটেছে। তাই এটিকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলা যায় না। আওয়ামী লীগের এইচ টি ইমাম যথারীতি প্রশাসনের প্রশংসা করেছেন এই বলে যে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ নির্বাচনে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেছে। অপর দিকে এই নির্বাচন নিয়ে জেল জুলুমে ক্ষতবিক্ষত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর উদ্বেগ, আওয়ামী লীগ তার পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলতে যেকোনো বৈধ বা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে ভোট কারচুপি করবেই।
বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা, অনৈক্য এবং অনেক ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তার জন্য প্রতিপক্ষ এই তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে যা ইচ্ছা তাই করেছে এবং বিএনপিকে ফলাফলে পেছনে ফেলেছে যদিও তা অস্বাভাবিক। কেননা প্রবণতা একবার স্থিতাবস্থায় থাকলে প্রবল জনপ্রিয়তা ছাড়া এটাকে ভাঙা যায় না। আওয়ামী লীগ এবার ফলাফল ভালো করে এটাই প্রমাণ করেছে যে, এই ফল অর্জনে দলটির অদৃশ্য কালো হাত অবশ্যই সক্রিয় ছিল। আরো ছিল কেন্দ্র দখলের কদর্য উৎসব।
তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনটি  যে যথার্থই সহিংস কারচুপিতে কলঙ্ক প্রলেপিত হয়েছে, তা  ১৬ মার্চের প্রায় সব সংবাদপত্রের শিরোনামে প্রতিফলিত। ভোটাররা হতাহত হয়েছেন, ৪২ জন প্রার্থী আতঙ্কে নির্বাচন বর্জন করেছেন। ছড়াছড়ি হয়েছে অর্থের। সরকারি দলের অর্থের জোরএকটি বাড়তি শক্তি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আরো এক ধাপ বাকি আছে। বিএনপি তার বর্তমান বিশৃঙ্খল অবস্থায় এবং সরকারের হুমকি ধমকি, কটাক্ষ এবং ধরপাকড়ে কি আর  তাতে অংশ নিতে ভরসা পাবে? প্রথম দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তির অনুপাত দর্শনে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তির অবস্থান মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে। বাকিগুলোতে বিএনপি যেমন নির্বাচন করতে ক্রমেই উৎসাহ হারিয়েছে, আওয়ামী লীগের এমন এত সহজে জনপ্রিয়তাদেখাবার সুযোগ নিতে উৎসাহ বেড়েছে।
তা ছাড়া নির্বাচন জেতার সব তুরুপের তাস সরকারের কাছে । এ নিয়ে সরকারে যদি কখনো কোনো বিবেকের দংশন অনুভূত হয়, তাদের পরিচালনায় রয়েছে দল। সরকারের মধ্যে যদি এসব অপকর্ম করতে দয়া-মায়ার উদ্রেক না হয়, ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগে তা কেন হবে। মহাজোটের মহাপরিকল্পনার কাছে গণতন্ত্র বড় জোর বলির পাঁঠা। দেশব্যাপী নির্বাচন করায় অভ্যস্ত। তা-ও আবার গণতন্ত্রের নামাবলি সর্বাঙ্গে জড়িয়ে সে নির্বাচনের ছক অনেক আগেই অনেক সুকৌশলে কাটা হয়েছে। 


 

শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ক্ষমতার অপব্যবহারকারীরা দীর্ঘস্থায়ী হয় না


আল্লাহ কে সব বলে দেব’ মারা যাওয়ার কয়েক মুর্হূত আগে বলেছিল মাত্র তিন বছরের শিশুটি। বুঝে ছিল সিরিয়ার স্বৈরশাসকের বিচার  একমাত্র আল্লাহ করতে পারেন। তাই সরকারি হামলায় মৃত্যুপথযাত্রী ওই শিশুটির নালিশ বিশ্বের কোটি হৃদয়ে রক্ত ঝরেছে। আজ আমরা একই অবস্থার শিকার। যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ নিরাপদ নয়।মায়ের বুক থেকে কিশোর ছেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে এ দেশের দলবাজ র‌্যাব পুলিশ। মায়ের কোলে শিশুটি গুলীবিদ্ধ হচ্ছে,খুন হচ্ছে অপহরণ হচ্ছে,মসজিদে নামাযরত মুসুল্লিরা আজ নিরাপদ নয়, নিরাপদ নন কবর স্থানে দাফন সম্পন্ন করতে যাওয়া  সাধারণ মানুষও। কেন আমরা পুলিশকে বলতে পারছিনা আপনারা যাদের উপর গুলি চালাচ্ছেন তারাও এদেশের নাগরিক। একটি স্ব^াধীন দেশের নাগরিক হয়ে বিরোধী দলকে সমর্থন করায় তাদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকু কি হারিয়ে গেছে ? সরকার ভারতের উপর ভর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বসে আছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেয়নি। ৫ই জানুয়ারী ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে নীরব বিপ্লব দেখিয়েছে। দেশে ৩৯ থেকে ৪৭ টি কেন্দ্রে কোন ভোট পড়েনি। উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল যেভাবে নিজেদের পক্ষে নিয়েছেন তাতে দেশবাসী হতবাক হয়েছেন।  প্রথম দফা আর দ্বিতীয় দফা উনিশ দলীয় জোট ব্যাপক সংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হলেও পরে আর সুযোগ দেয়া হয়নি । তৃতীয় দফা আর চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচনে ফলাফল কিভাবে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তা মিডিয়ার বদৌলতে দেশবাসী দেখেছে অবাক বিস্ময়ে। মুসলমানদের জঙ্গিবাদ নামকরণ করে সারা বিশ্বে চলছে মুসলমানদের উপর অত্যাচার নির্যাতন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উপর চলছে নানা ষড়যন্ত্র । তারপরও মুসলমানরা বসে নেই এগিয়ে চলেছে র্দুবার গতিতে। বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, মর্তকে নরকখ্যাত কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগার এখন থেকে বার বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল। আমেরিকা কোন বন্দীকে এর ভেতর না ঢোকাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই কারাগারে আটক করার পর শত নির্যাতনের পর তাদের মনোবল ভাঙ্গতে পারেনি ও পছন্দমত স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি। ১৪ জানুয়ারি বন্দী খালেদ শেখ মুহাম্মদ এক পত্রে তার মামলার বিষয়ে বেশ কিছু কথা লিখেছেন, তিনি আমেরিকানদের ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়েছেন। এ কারাগারে বন্দী হওয়ায় তিনি পেরেশানি নন বরং আনন্দিত। সংবাদ মাধ্যম এটাকে আমেরিকার লজ্জা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। আমেরিকা ২০০২সালের ১১ই জানুয়ারী এই কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত করেন। এটাকে গুয়ান্তানামো বে কারাগার হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত। নাইন-ইলেভেনের পর   আমেরিকা আফগানিস্তানের ওপর হামলা করে এবং সেখানে অসংখ্য  মুসলিম যুবককে বন্দি করে। আমেরিকার বর্ণনা মতে, তারা আমেরিকান বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল, আমেরিকার অস্তিত্বের হুমকি স্বরূপ অথবা নাইন- ইলেভেনের কোন ঘটনার জন্য হয়তবা তারা জড়িত। এখানে আমেরিকা মুসলিম যুবকদের নির্যাতনের কোন ধরন বাকী রাখে নি। বন্দিদের  নিঃসঙ্গ খাঁচায় রাখা হয়। শোয়ার জন্য একটি শক্ত সিট, দুভাঁজ করা একটি কন্বল, পরার জন্য বিশেষ লাল ইউনিফরম ও খুব পাতলা চপ্পল স্যান্ডেল দেয়া হয়। গুয়ান্তানামো বে কারাগারে সব চেয়ে বড় শাস্তি হল, মলমুত্র ত্যাগের জন্য বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি নেই। বরং খাঁচার মধ্যে প্লাষ্টিকের দুটি বালতি দেয়া হয়।তারা তাতে প্রকাশ্যে পৃথক পৃথকভাবে মলমুত্র ত্যাগ করে।এগুলোকে আবার তাদের কাছে রেখে দেয়া হয়। কি শীত কি গরম বন্দিদের ওই খাঁচায় থাকতে হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়। নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেয়া ও বরফের ওপর শুইয়ে দেয়া নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বন্দিদের উলঙ্গ করে শিকারী কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়। এতে যখন তারা সফল  হয়নি তখন পবিত্র কোরআন শরীফের সাথে অবমাননাকর আচরণ করা হয়। হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) সম্পর্কে অতান্ত বেয়াদবীপুর্ণ আচরণ করে। এর পর বন্দিদের কাবু না করতে  না পারলে মেরে ফেলা হয় (শহীদ করে দেয়া হয়)। উইকিপিডিয়ারের সূত্র মোতাবেক, সেখানে পবিত্র কোরআনকে টয়লেটে রেখে ফø্যাশের ঘটনা ঘটছে। বার বছর পর দেখা গেছে কেউ ইসলাম ত্যাগ করেনি বরং অনেকে আল-কোরআনের হাফেজ হয়ে বের হয়েছেন।এর সাথে সাথে কালাপানির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।কালাপানি ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের মহান সংগ্রামী ইতিহাসের অবিস্মরণীয় নাম। কালাপানি মুলতঃ ভারত মহাসাগরের মধ্যে ছড়ানো  ছিটানো ইন্দোনেশিয়ার আচে প্রদেশ থেকে ১৫৯ কিলোমিটার দূরে এক দ্বীপপুঞ্জের নাম। ইংরেজরা এদেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় এই দ্বীপপুঞ্জ ভারতকে দিয়ে দেয়। এই দ্বীপপুঞ্জকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটির নাম আন্দামান, অপরটির নাম নিকোবার। পুরো দ্বীপপুঞ্জের নাম পোর্ট ব্লেয়ার। এই উপমহাদেশে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন বেগবান হত, তখন ইংরেজরা তা দখলের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলন্বন করতে লাগল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন কারীদের ধরে এই দ্বীপপুঞ্জে পাঠিয়ে দেয়া হত। এখানে বন্দিদের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হত। এনককে ফাঁসি দেয়া হত ্। অনেকে নির্যাতনে শহীদ হয়ে গেছেন। সেই মহান মুক্তি আন্দোলনে সম্পৃক্ত এবং ১৮৬৪ সালে আন্বালা মামলায় মাওলানা জাফর থানেশ্বরীকে পায়ে শিকল বেঁধে সিন্ধু ও করাচির পথ দিয়ে কালাপানি নিয়ে বন্দি করা হয়। তিনি ২৫ বছর পর সেখান থেকে মুক্তি পেলে কালাপানির বন্দি ইতিহাস একটি গ্রন্থ লেখেন।কালাপানির অন্যতম বন্দি ছিলেন মাওলানা ফজলে হক  খায়রাবাদী। তার ঐতিহাসিক কাফনে লেখা  ইতিহাস থেকে কালাপানির বন্দিদের চরম দুর্দশার করুণ চিত্র আমরা দেখতে পাই। সেখানে বন্দিদের কোন কাগজ কলম দেয়া হতনা। ফলে মাওলানা  খায়রাবাদী কাফনে লিখেছেন দাতঁ মাজার কয়লা দিয়ে। মাওলানা খায়রাবাদী তার লেখায় বলেছেন, এখানকার আবহাওয়া ছিল অনুপযোগী। সর্বদা সূর্য যেন মাথার উপর অগ্নিবর্ষণ করে। এখানকার প্রাতঃকালীন  বায়ু লু হাওয়ার মত তপ্ত।খাদ্য অত্যধিক অনুপযুক্ত ও হলাহলের বিষের চেয়ে মারাত্মক। পানি সাপের বিষের চেয়ে মারাত্মক ভয়াবহ।মাঝে মাঝে লোনা পানির ঢেউ এসে প্লাবিত করে দেয় এ দ্বীপকে। রেখে যায় লবণাক্ত,কর্দমাক্ত ও বিষাক্ত পলিমাটি। চার দিকে শুধু অসুখের ছড়াছড়ি। ঔষধের কোন নাম গন্ধ নেই। কেউ মারা গেলে গোসল কাফন-দাফন জানাজা ইত্যাদি কিছুই হয় না। এমন নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার মুসলমানেরা। বিশ্বে অনেক স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন। তারমধ্যে  এডলপ হিটলার সর্বকালের সেরা স্বৈরশাসক  ।ফ্যাসিবাদের জনক হিটলারের রাজ্য জয় ও বর্ণবাদী  আগ্রাসনের কারণে লাখ লাখ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ৬০ লাখ ইহুদিকে পরিকল্পনা মাফিক  প্রাণ হারাতে হয়। ইহুদি নিধনের ঘটনা ইতিহাসে হলকষ্ট নামে পরিচিত। ১০৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিনগুলি হিটলার বার্লিনে ছিলেন।রেড আর্মি যখন বার্লিন দখল করে নিচ্ছিলেন সেরকম একটা সময়ে তিনি ইভা বাউনকে বিয়ে করেন।বিয়ের পর ২৪ ঘন্টার আগে তিনি সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। তার ক্ষমতা দাম্ভিকতা তাকে শেষ রক্ষা করতে পারেনি। ইতালির মুসোলিনী ও হিটলারের মত বক্র পথে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের নির্মম পরিণতি তাকে বরণ করতে হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সবদিক থেকে বিধ্বস্ত ভিক্টর ইমানুয়েলের গণতান্ত্রিক সরকার ও জার্মান হিন্ডেনবার্গ সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনি ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর হিটলারের মত চেহারা পাল্টে যায়। পরবর্তীতে স্বৈরাচার একনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন।মুসোলিনি সুইজারল্যান্ডে পালাবার সময় কম্যুনিষ্ট প্রতিরোধ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নিহত হন । ফ্রান্সের নেপোলিয়ান তিনি বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক ছিলেন। মাদ্রিদ  থেকে মস্কো পর্যন্ত। সম্রাট হন ফ্রান্স ও অর্ধ পৃথিবীর।তার অন্যায়ের কারণে মানুষ তাকে বেশি দিন রাজত্ব করতে দেয়নি এবং তাকে হত্যা করা হয়। ফরাসী জাতি সারা বিশ্বে সম্মানিত জাতি। আর ফ্রান্সের সফলতার একমাত্র নায়ক নেপোলিয়ান। বাইরের দেশে তার রূপ ছিল ভিন্ন। দেশের জনমতকে উপেক্ষা করে ব্রিটেন,ক্রোয়েশিয়া,রাশিয়াকে ধ্বংস  করে দেশ দখলের নিমিত্তে হামলা করে। শত্রু বাহিনীর  ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আক্রমণে নেপোলিয়ান পরাজিত হয়ে নিহত হয়। মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলীর পর হোসনে মোবারক সব চাইতে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক। ১৯৮১ সালের ৬ই অক্টোবর সেনাবাহিনীর এক সদস্য কর্তৃক তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত নিহত হওয়ার পর হোসনে মোবারক  ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার দায়ে সারাবিশ্বে তিনি নিন্দিত । মিসরের গণজাগরণের মাধ্যমে তাকে লাঞ্ছিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। মিসরের বর্তমান অবস্থার জন্য তাকে দায়ী করা হয়। এবার রোমের দিকে তাকাই। রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন নিরো কডিয়াস সিজার। রোম যখন পুড়ছিল নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। ঐতিহাসিক উপকথাটির নায়ক তিনি। রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন।১৩ অক্টোবর ৫৪ খ্রীষ্টাব্দ। তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর।  রাজত্ব করেছিলেন মাত্র ১৪ বছর। নিরো তার মায়ের স্বভাব চরিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তার মায়ের নাম ছিল এগ্রোপিনা। চারটি বিয়ে তার। চার জন স্বামীকে তিনি বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেন।সব শেষে তিনি লোভে পড়ে নিজের বয়োবৃদ্ধ চাচাকে বিয়ে করলেন কেবল রাজ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য। হাজার হাজার .মানুষকে তিনি নিজে হাতে খুন করেছেন। তরুণ যুবকদের প্রতি ছিল তার ভারী ঝোঁক। ধরে ধরে নিয়ে আসত সুন্দর যুবকদের আপন প্রাসাদে। তার পর ইচ্ছামত কামনা চরিতার্থ করত। যে সব হতভাগ্য যাতে রাণী মাতার অভিসারের কথা বলে না দিতে পারে সেজন্য তাদেরকে গুম করে ফেলা হত। কিভাবে গুম করা হত তা আজ রহস্যাবৃত।১৫ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই নভেন্বর তিনি জন্মগ্রহণ করে ছিলেন।  আর মাত্র ৪৩ বছর বয়সে অর্থাৎ ৫৯ খ্রীষ্টাব্দের ২৩ মার্চ মারা গিয়েছিলেন। মারা গিয়েছিলেন মানে তাকে মারা হয়েছিল। আর নিরো ক্ষমতার মোহে আপন মাতা এগ্রোপিনা কে হত্যা করেন।নিরো পাগলা রাজা হিসেবে আখ্যায়িত হলেন।পাগলা রাজার অত্যাচারে দেশে অর্থ সংকট দেখা দিল। তিনি ৩০০ একর জমির উপর ডোমাস আউরিয়া নামের প্রাসাদ নির্মাণ করেন। এর ব্যয় ধরা হয় ৩০০ কোটি স্বর্ণমুদ্রা। টাকা কোথায়।পাগলা রাজা হুকুম দিলেন ট্যাক্স বাড়াও এবং রাজ্যের ধনীদের ধন লুট করে নিয়ে এসো।হুকুম তালিম হলো এক দিনের মধ্যে অর্থ সংগ্রহ হয়ে গেল।কিন্তু রাজ্যে দেখা গেল ভয়াবহ অরাজকতা ও বিদ্রোহ। সম্রাট কঠোর হস্তে দমনের চেষ্টা করলেন। ইতিমধ্যে সম্রাটের শহর,প্রাসাদ ও ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শেষ করলেন।সম্রাট ৬৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে মহাধুম ধামে প্রাসাদে উঠলেন। মার্চ মাসে গাল্লিয়া প্রদেশের গভর্নর গাইয়াস জুনিয়াস সম্রাটের সাথে বিদ্রোহ করেন অতিরিক্ত কর আরোপের অভিযোগ তুলে। সম্রাট স্বয়ং যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হলেন। অবস্থা প্রতিকুলে যাওয়ায় তিনি পালিয়ে রোমে চলে গেলেন।ফিরে তিনি দুপুরের দিকে প্রাসাদে ঘুমিয়ে পড়লেন।মাঝরাতে জেগে দেখলেন তার প্রাসাদের সকল রক্ষী পালিয়ে চলে গেছেন।  এর পর তিনি চিৎকার দিয়ে বললেন কেউকি আছো আমাকে তলোয়ার দিয়ে হত্যা করতে পার। প্রাসাদে তার আত্ম চিৎকারে প্রতিধ্বনি হলো ; কিন্তু কেউ এলো না। সম্রাট গভীর রাতে প্রাসাদ থেকে বের হয়ে এলেন। তার প্রতিষ্ঠিত শহরের অলিগলিতে চীৎকার করলেন কেউ তার দরজা খুলল না। ইতিমধ্যে চার জন বিশ্বস্ত চাকর বালক স্ত্রী স্পারস এগিয়ে এলেন।সম্রাট তাদের কবর খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। এসময় সম্রাটের কাছে খবর এল রোমান সিনেট তাকে গণশত্রু আখ্যা দিয়ে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে। এ খবর শুনে তিনি স্থির রাখতে পারলেন না। ৩০ বছর বয়সে অর্থাৎ ৬৮ সালের ৯জুন জুন রাতে নিজ হাতে গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। অন্য দিকে মহান পুরুষ জুলিয়ার্স প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ এবং কডিয়াস সিজার আগস্টাস সাম্রাজ্যেও একশ’ বছরের পুরানো শাসনামলের পরিসমাপ্তি ঘটে। তার কুকর্মের অভিশাপে দুনিয়ার কোথাও  মহান জুলিয়ার্স সিজারের রক্তের কোন ধারক খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ যেন প্রকৃতির দুরন্ত প্রতিশোধ। যা শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে যুগযুগান্তরে। এভাবে পৃথিবীর অত্যাচারী শাসকরা এক নির্মম পরিস্থিতির শিকার হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আর মুসলমানরা যুগে যুগে জীবনবাজী রেখে ইসলামের পথে অকাতরে জীবন উৎসর্গ করে গিয়েছেন। এক সময় আফগানরা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রাণপনে লড়াই করে যাচ্ছিলেন সীমাহীন বীরত্ব আর  সাহসিকতা নিয়ে। বিশ্বের প্রবল পরাক্রান্ত একটি রাষ্ট্রশক্তির  ততোধিক পরাক্রান্ত ও সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর আধুনিক মারণাস্ত্রের সম্মুখে ভুখানাঙ্গা, অশিক্ষিত এবং বলতে গেলে নিরস্ত্র আফগানরা অসীম সাহস নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এই খবর মিডিয়াতে প্রচার হওয়ার সাথে সাথে সাহসি মুসলিম  যুবকদের রক্তে নাচন ধরল।  তারা দলে দলে স্বেচ্ছায় তালেবান বাহিনীতে যোগ দিয়ে আফগানিস্তানের দিকে রওয়ানা করল। তারা এ দেশের  রাস্তায় প্রকাশ্যে আফগান হওয়ার আহবান জানায়। আফগান জায়গাটি কেমন ? এ প্রশ্ন করা হলে বলা যাবে এ জায়গাটি ইসলামের বীর মুজাহিদদের উর্বর এলাকা। কেনই বা ওই ভুমি সুলতান মাহমুদ, বাবর, শেরশাহ, এবং তৈমুর লংদের মত মহাবীর পয়দা করে। আবার কেনইবা ওই ভুমিতে কোন উদ্ধত পা রাখতে সাহস পাননি। চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, আলেক জান্ডার জলিয়ার্সের সিজারের মত দুনিয়া কাঁপানো মহাবীরেরা। কেনই বা দেশটি অনাদিকাল থেকে স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে।বিশ্বের কোন পরাশক্তি ইতিহাসের যে কোন সন্ধিক্ষণে কেন জাতিটিকে পরাভুত করতে পারেনি। তাবৎ দুনিয়ার হাজার হাজার গুণী ব্যক্তি আফগান নিয়ে গবেষণা করে আসছে প্রায় ৫০ হাজার বছর ধরে আফগানি স্তানে মানুষ বসবাস করে আসছে। দেশটির রাজনৈতিকও সাংস্কৃতিক সভ্যতা পিছানো নয়। ভুমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলোর সাথে চীনের চলাচলের  ঐতিহাসিক  সিল্ক রোডটির গেটওয়ে আফগানিস্তানের  দিকে চলে গেছে। হিন্দু কুশ পর্বতমালা, সিন্ধুউপত্যকা,ভারতে ঢোকার একমাত্র প্রবেশ পথ  এবং মধ্য প্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলো আফগানিস্তান। ফলে সভ্যতার সেই আদিমকাল থেকেই  আফগানজাতি নিজেদের কিছু না থাকার সত্ত্বে ও নিজেদের ধনী প্রভাবশালী মনে করত। মর্যাদার লড়াইয়ে তাদের মাথা টন টন করে।মরুভুমির গরম বাতাস, বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়ের হাড় কাঁপানো বাতাস আর রুক্ষ শিলাময় পাহাড়ের ধুলিময় বাতাসের ত্রিমুখী শক্তি আফগান জাতিকে আরও করে তুলেছে দুর্বার, দুরন্ত,আর দুঃসাহসি। আজ তারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।কিন্তু বুকে অদম্য সাহস নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। তাদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।সেক্ষেত্রে আমরা যদি কুন্ঠিত হই তার মাশুল কঠিনভাবে দিতে হবে।আজ আমাদের দেশ কঠিন অবস্থার মুখোমুখি। অবাধ সুষ্ঠু  মধ্যবর্তী নির্বাচন ছাড়া দেশের পরিবেশ শান্ত হচ্ছে না। মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা যেন কাটছে না। বিশ্বের ৫০টি দেশের কুটনীতিকরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে সংকট নিরসনের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছে।অথচ সরকার এ বিষয়ে কোন কর্ণপাত করছে না। ভারত সফর করে এসে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বলেছেন, এ সরকারের মেয়াদ হবে ৫ বছর। সরকার বিগত ৫ বছরে তাদের ওয়াদা রক্ষা করতে পারেনি। সরকারের দুর্নীতি, কেলেঙ্কারী, লুটপাট সামগ্রিক দঃশাসনে সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।এতদিন  সরকার বুঝতে না পারলেও ৫ই জানুয়ারীর পর ভাল বুঝতে পেরেছে।মহাজোট সরকারে যারা আছেন তারাও বুঝতে পেরেছেন অবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। ২০০৮ সালে ও ২০০১ সালে তারা ভোট পেয়েছিলেন ৩০-৩২ শতাংশের কম বা বেশী।তারা যুদ্ধাপরাধের বিচার ও মুক্তিযোদ্ধাদের নানাবিধ চেতনার সমর্থকদের সঙ্গে উদারধারার ভোটারদের  সংখ্যা বেড়ে যাবে বলে ধারণা করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কিন্ত ৫ই জানুয়ারির ৫ শতাংশ ভোট দেখে তারা অবাক হয়েছে।যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তরুণদের মধ্যে বড় ধরনের নাড়া দিয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত। তরুণরা এটা বুঝে গেছে।আওয়ামী লীগের দুর্নীতির কারণে তরুণরা বীতশ্রদ্ধ। প্রথমবারের মত বুঝতে পেরেছে তরুণরা আওয়ামী লীগের শাসন কি? এবং কেমন হয়।আওয়ামী লীগ যে ঘরে ঘরে চাকুরী দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা এখন কথার কথা। তরুণদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।ব্যবসায়ীদের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক অনেক দিনের। কিন্তু বর্তমানে দেশে ব্যবসায়িক আর্থিক পরিস্থিতি এবং এক শ্রেণীর আওয়ামী সমর্থকদের ব্যবসা বাণিজ্যের দখলে তারা হয়ে পড়েছে ভীত সন্ত্রস্ত।অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। দেশে কোন বিনিয়োগ হচ্ছে না।সবার মধ্যে যেন এক অজানা শঙ্কা বিরাজ করছে। জানি না কখন কি ঘটে যায়। আওয়ামী লীগ এক দলীয় ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে যেয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।গ্যাস, বিদ্যুৎ সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। গ্রামীন জনপদে আওয়ামী লীগ একটি আতঙ্কের নাম। শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগের বেশী ক্ষতি হয়েছে।সামগ্রিকভাবে দলের হ্রাস আছে, স্ফীতি নেই। দলে যারা নতুন এসেছেন তাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তারা আদর্শিক কারণে নয়।বরং ক্ষমতার মোহ এবং প্রাপ্তির আশায় এসে জুটেছে।তারা এসে উঠেছে অনেক উপরে। দলের পোড় খাওয়া নেতাদের কনুই দিয়ে ধাক্কা মেরে। আওয়ামী লীগ এখন আর পোড় খাওয়া নেতাদের নির্ভরশীল না হয়ে হয়ে উঠেছে সুযোগ সন্ধানি সাইবেরিয়ান পাখির মত। আওয়ামী লীগের মধ্যে   দুটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। এক নতুন আর পুরাতন। আর একটি বিভাজন তৈরি হয়েছে তা হল, যারা পেয়েছেন আর যারা পাননি। যারা পেয়েছেন তারা কেন মাঠে নামবেন না।কারণ তাদের গদি রক্ষার চেয়ে সম্পদ রক্ষা করা বড় প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ৫ই জানুয়ারীর আগে পদ্মাসেতু নিয়ে কেলেঙ্কারী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ায় কোন সংকট দেখা দিলে ড. ইউনুস সহ বিরোধীদলকে দায়ী করা হতো।বর্তমান তামাম দুনিয়ার সাথে সরকারের সম্পর্ক ভাল নেই।বাংলাদেশকে কৌশলে এক ঘরে করে ফেলা হয়েছে। সরকার এখন আন্তর্জাতিক বৈধতার সন্ধানে ছুটছে।দেশ থেকে দেশে অভিনন্দন বার্তা যোগাড় করার জন্য। সরকার আপাততঃ তৃপ্ত চীন ও রাশিয়ার অভিনন্দন বার্তায়।তবে আসল বিষয় হল দুটি দেশের অভিনন্দন বার্তায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থে তা অনেকে বুঝতে পেরেছে। ১৯৯৬ সালে ১৫ ই ফেব্রুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে  আওয়ামী লীগ প্রায় সমালোচনা করত। কিন্তু ৫ই জানুয়ারীর পর থেকে আওয়ামী লীগের সে সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গেছে। এ দিকে সাবেক সেনা বাহিনী প্রধান এ কে এম শফিউল্যাহ মার্কিন রাষ্ট্রদুত ড্যান মজিনাকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়ার কথা বলেছেন। ১৬ই জানুয়ারী এক অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবী জানিয়েছেন। শফিউল্যাহ বলেন, ড্যান মজিনাকে বের করে দেয়া হোক। কারণ তিনি প্রত্যেক বিষয়ে নাক গলায়। একই সভায় ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সহ সভাপতি মুনতাসির মামুন বলেন, ড্যান মজিনাকে বলা হয় বি এন পির বহিরাগত সদস্য।তার মতে রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য দায়ী বিদেশী কুটনৈতিক। ড্যান মজিনার একটি অপরাধ হল তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সংকট নিরসনে নতুন একটি নির্বাচন হতে হবে। ওই নির্বাচন অবশ্যই  আগামী বর্ষা মওসুমের আগে হওয়া জরুরী।তারা বলেছেন, আগামী মে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আমরা দ্রুত সংলাপ শুরু করার তাগিদ দিচ্ছি।ভারত ও শেখ হাসিনার ক্রুদ্ধ হওয়ার কারণ ৫ই জানুয়ারীর পাতানো নির্বাচন আমেরিকা মেনে নেয়নি। ড্যান মজিনার অভিমত আমেরিকার একক সিদ্ধান্তের বহিঃপ্রকাশ নয়, এটা ছিল কমপক্ষে ৫০ দেশের রাষ্ট্রদুতদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের প্রতিফলন।্ কেবলমাত্র ভারতীয় চরছাড়া  এ সিদ্ধান্তের সাথে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ একমত। এটা তার একান্ত নিজস্ব মতামত হত তাহলে তাকে বের করে দেয়ার মত অশোভন কথা বলা গ্রহণযোগ্য হত।একদলীয় অগ্রহণযোগ্য নীল নক্সার নির্বাচন বলেই তিনি ও অন্য কুটনৈতিকরা দ্রুত নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন। কথা বলার অধিকার সবার আছে। এ অধিকার থেকে কেউ কাউকে বঞ্চিত করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ দেশের মুখ বন্ধ করতে এমন সাহস জন্মেছে যে, বিদেশী কুটনৈতিকদের মুখ বন্ধ করতে চায়। অনেকে মনে করেন এ কে এম শফিউল্যাহর বক্তব্য এমন ্ঔদ্ধত্যপুর্ণ মন্তব্য ছিল ভারতের পক্ষ থেকে আমেরিকার এক প্রকার  প্রতিশোধ। ভারতীয় অনুগতরা মনে করেন। শেখ হাসিনার মুরুব্বী ভারত তার পিছনে হিমালয়ের মত অনড় অবস্থানের কারণেই আমেরিকা ভারতীয় কুটনৈতিক দেবযানীকে হেনস্তা করেছে।অনেকের মতে, ভারত তার অনুগতদের  দিয়ে আমেরিকার  রাষ্ট্রদুতকে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেয়া হোক। এমন দাবি করে সেই প্রতিশোধের সুচনা করেছে।কিন্তু দেবযানির বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ আইনের বিষয়টি জড়িত। দেবযানী র’-এর অপারেটিভ হিসেবে গোয়েন্দা তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। এমন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ড্যান মজিনার বক্তব্যে সারা বিশ্বের স্বাধীনতা , গণতন্ত্রের মানবাধিকারে বিশ্বাসী মানুষের প্রত্যাশাকে অনুরণিত হয়েছে।বাংলাদেশে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলে সারা দুনিয়া গ্রহণ করেনি ভারত ছাড়া। সমাজের ডাকাত খুনিদের  সাথে সবাই কথা বলে কিন্তু কথা বললেও কিন্তু মনে মনে তাদের ঘৃণা করে। শেখ হাসিনা অভিনন্দন গ্রহণ করার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। শেখ হাসিনা দেশের জনগণের টাকা দিয়ে প্রথমবার ডজন খানেক ডক্টরেট  ডিগ্রি ক্রয় করেছিলেন। এবার অভিনন্দন বার্তা কিংবা সার্টিফিকেট কিনতে চেষ্টা করলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ভুয়াবার্তা দিয়ে পাতানো নির্বাচনের লজ্জা ঢাকা যাবে না।এ অভিনন্দন বার্তা যদি শেষ কথা হত তাহলে ঢাকায় অবস্থানকারী ৫০ টি কুটনীতিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মে জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলতেন না। তারা শতভাগ নিশ্চিত এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষ এ নির্বাচন বর্জন করেছে।৪১ টি ভোট কেন্দ্রে কেউ ভোট দিতে আসেনি। শেখ হাসিনা বলেছেন, বি এনপি নির্বাচনে এলে আসন দেয়া হত।তাহলে তো নির্বাচনের কোন প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশের গণতন্ত্র গৃহবন্দি হয়ে গেছে। এক ব্যক্তি গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করলে আর গনতন্ত্র থাকে না। যতদ্রুত নির্বাচন হবে ততই মঙ্গল। এ দিকে হরতাল অবরোধকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মামলার আসামী হয়েছে অন্ততঃ ৮লাখ মানুষ। তাদের অনেকে জামিন পেয়েছেন। তবে অনেকে গ্রেফতার এড়াতে কাটাচ্ছেন ফেরারী জীবন।সম্প্রতি রাজনৈতিক সহিংসতায় দায়ের করা মামলায় অনেক গ্রামের মানুষ-- নারী পুরুষ শিশুরা থাকতে পারছে না নিজ বাড়ীতে। নিরাপদ থাকতে ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। পালিয়ে থাকা মানুষের বাড়ীঘর হামলা ভাংচুর,লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ আসছে নারী নির্যাতনের।রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে সংখ্যা লঘু পরিবার। অজ্ঞাতনামা আসামী করে পুলিশের বাণিজ্য জমে উঠেছে।নিরীহ মানুষ হয়রানি হচ্ছে বেশী। ৮লাখ মামলায় অর্ধ লাখ নেতা কর্মী জেলখানায় আটক রয়েছে। এ দেশের জেলখানায় আটক লোকের সংখ্যা ৭০ হাজার। অথচ জেলখানার ধারণ ক্ষমতা মাত্র ২৯ হাজার। তবে বি এনপি জামায়াতের বেশি লোক জেলখানায় আটক রয়েছে। গত ৩মাসে বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪৫৫১টি। নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে আসামী করা হয়েছে ২ লাখ ২৩হাজার জন কে। তবে যশোর সাতক্ষীরা এলাকার লোকজনের উপর অত্যাচার করা হয়েছে বেশী। এ দুই জেলায় চার হাজার নেতা কর্মী জেলখানায় আটক রয়েছে। যেসব মামলায় আটক করা হয়েছে তা হল,গাড়ী পোড়ানো, সড়ক অবরোধ, যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, পুলিশের কাজে বাধা, বিজিবি গাড়ীতে হামলা,বি আর টি সি বাসে অগ্নি সংযোগ, জন নিরাপত্তা বিঘিœত করা, নির্বাচন বানচালের চেষ্টা।ভোট কেন্দ্রে হামলা ভাংচুর, লুটপাট অগ্নি সংযোগ, ভোট কেন্দ্রে বোমা হামলা , অস্ত্র প্রদর্শন, ভোটের কাজে নিয়োজিতদের হামলা,মারপিট, স্কুলে অগ্নি সংযোগ, সংখ্যালঘুদের হামলা নির্যাতন, বাড়ি ঘরে অগ্নি-সংযোগ, লুটপাট ধর্ষণসহ কল্পিত অভিযোগ এনে সারা দেশে হাজার মামলা রেকর্ড করা হচ্ছে। এভাবে যৌথ বাহিনী নামক এক আতঙ্কে বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীদেরও ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই অবস্থায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে সরকারকে ইতিহাসের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আগামীকাল পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচন ॥ এবার আ. লীগের আরও টার্গেট?


পঞ্চম এবং শেষ পর্বের উপজেলা নির্বাচন আগামী কাল অর্থাৎ ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার দুর্ভাগ্য হলো এই যে, আমি যখনই উপজেলা ইলেকশান নিয়ে লিখতে যাই, তখন সেই দিন অথবা তার পরের দিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সুতরাং আমি আপনাদেরকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে পারি না এবং সেই পরিস্থিতির ওপর কোন রাজনৈতিক ভাষ্য বা কলামও লিখতে পারি না। ফলে  অনেক সময় আশপাশ দিয়ে যেতে হয় এবং দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়। আজকের অবস্থাও তাই। যখন আমি এই লেখাটি লিখছি তখন ২৯ মার্চ শনিবার। লেখাটি ছাপা হবে ৩০ মার্চ  রোববার। আর ইলেকশান হবে ৩১ মার্চ সোমবার। অথচ দুই একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দৈনিকে ইতোমধ্যেই খবর বেরিয়েছে যে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ টার্গেট করেছে ভাইস চেয়ারম্যানের পোস্টকে। গত নির্বাচন অর্থাৎ চতুর্থ দফার নির্বাচনে ভয়াবহ সহিংসতা এবং প্রকাশ্য ভোট ডাকাতির পর আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যানের পদে এগিয়ে গেছে। তবে ভাইস চেয়ারম্যানের পদে বিএনপির চেয়ে এখনো পিছিয়ে আছে। তবে বিএনপি এবং জামায়াতকে সম্মিলিতভাবে বিবেচনা করলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ অনেক পিছিয়ে আছে। তাই এবার তারা ৭৪টি উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যানের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ দখল করতে চায় এবং বিএনপিকে শুধু ইকুয়ালাইজ করাই নয়, বিএনপিকে টপকে যেতে চায়। যে ভয়াবহ শ্বেত সন্ত্রাস এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যানের মেজরিটি পদ কবজা করেছে সেই একই শ্বেত ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে এবার তারা ভাইস চেয়ারম্যানের পদগুলোর মেজরিটি দখল করতে চায়।
     গতবার অর্থাৎ চতুর্থ দফার ইলেকশানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে করুণ অবস্থা দেখা গেছে তার ফলে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা এবার দারুণভাবে জোশে এসেছে। তারা দেখেছে যে, আওয়ামী লীগ করলে সাত খুন মাফ। প্রিজাইডিং অফিসার বা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে বসিয়ে রেখে ইচ্ছামত সিল ছাপ্পড় মারলেও কিছু হয় না। তারা দেখেছে যে প্রকাশ্যে বন্দুক, পিস্তল বা লাঠি উঁচিয়ে বিএনপি বা জামায়াতের পোলিং অফিসার বা পোলিং এজেন্টদেরকে তাড়িয়ে দিলেও কিছু হয় না। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনাবাহিনীকে নামানো হলেও সেনাবাহিনীকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছিলো। এটা আমাদের কথা নয়। এটি সুশাসনের জন্য নাগরিক বা ‘সুজনের’ কথা। আর সেই কথাও তারা বলেছে প্রেস কনফারেন্স করে।
     পঞ্চম দফা নির্বাচনেও ভয়াবহ সহিংসতা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সুজন। উপজেলা নির্বাচনে অব্যাহত সহিংসতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটি বলেছে, নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরো নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি ও সহিংসতা রোধ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ৫ম দফা নির্বাচনে সহিংসতার আশংকা রয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, কার্যবিধি ১৩১ ধারা অনুসারে সেনাবাহিনীর দৃষ্টির মধ্যে কোনো সহিংস ঘটনা ঘটলে তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। কিন্তু চতুর্থ পর্যায়ের নির্বাচনে সহিংসতা রোধে তারা নতুন কোন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। সহিংসতা রোধে সেনাবাহিনী ভূমিকা রাখেনি। উপজেলা নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন ছিল কি না সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কি শর্তে সেনাবাহিনীকে নামানো হয়েছে, কি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাও জানি না। তবে আমরা ভেবেছিলাম সহিংসতা ঠেকাতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।
দুই
     সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, কার্যবিধি ১৩১ ধারা অনুসারে সেনাবাহিনীর দৃষ্টির মধ্যে কোন সহিংস ঘটনা ঘটলে তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। কিন্তু চতুর্থ পর্যায়ের নির্বাচনে সহিংসতা রোধে তারা নতুন কোন মাত্রা যোগ করতে পারেনি। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সেনাবাহিনী কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেনি। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যে সহিংসতা হচ্ছে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এতে রাজনীতিবিদদের নির্বাচনে জিততে সবাইকে সহিংসতার আশ্রয় নিতে হবে।
     উল্লেখ করা যেতে পারে যে, পঞ্চম পর্বে ৭৪টি উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৬০, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪১৪ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এত সব গুরুতর অভিযোগ উঠছে, অথচ সেই নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচনী কমিশনার সারা দেশব্যাপী অনুষ্ঠানরত এই বিশাল নির্বাচনী যজ্ঞে দেশে উপস্থিত নাই। ভাবতে অবাক লাগে যে এত বড় একটি ইলেকশানের আগে তিনি ছুটি নিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় অবসর বিনোদন করছেন। এইসব কথা শুনলে গা জ্বালা করে ওঠে। কিন্তু তারো আগে প্রশ্ন, চিফ ইলেকশান কমিশনারকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে এত লম্বা ছুটি দেয়া হলো কেন? এই প্রশ্ন কয়েকদিন আগেও উঠেছিলো। কিন্তু কোন মহল থেকেই কোন সদুত্তর পাওয়া যায় নি।
     এই সরকার ভারতপ্রেমী সরকার। খুব ভালো কথা। ভারতের প্রেমে তারা অন্ধ হয়ে যায়। সেটাতেও আমাদের বলার কিছু নাই। ভারত প্রেমে এমন গদগদ হওয়ার পর তাদের নিকট থেকে এটিতো প্রত্যাশা ছিলো যে, তারা ভারতের নিকট থেকে ভালো জিনিস গুলো গ্রহণ করবে। সারা দুনিয়া জুড়ে ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের সুনাম রয়েছে। তারা সরকারি দল বা বিরোধী দল কাউকেও খাতির করে না। এই ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের উচিত ছিলো, কেমন করে ভারতের নির্বাচন কমিশন পূর্র্ণ স্বাধীনতা অর্জন করলো এবং কেমন করে তারা তাদের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারছে, সেটি ভালো করে জেনে নেয়া এবং স্টাডি করা। সৎ উদ্দেশ্যে বিষয়টি জানার জন্য ভারতে যদি একটি স্টাডি টিম পাঠানো হয় তাহলেও আমাদের আপত্তির কিছু থাকবে না। কয়েকদিন আগে ভারতের প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. সাহাব উদ্দিন ইয়াকুব কুরাইশী ঢাকা সফর করেন। তার কাছ থেকে এই ব্যাপারে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়।
তিন
      চতুর্থ দফা উপজেলা ইলেকশান হওয়ার পর যে মারাত্মক সহিংসতা ঘটে গেলো এবং যে প্রকাশ্য ভোট ডাকাতি হলো সেটি নিয়ে কাগজে অনেক লেখালিখি হয়েছে এবং টকশোতে অনেক কথা হয়েছে। এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিলো। চিফ ইলেকশান কমিশনারের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সি ই সি বলেন যে, তাদের কাছে লিখিত কোন কমপ্লেন আসলে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তখন একজন সাংবাদিক তাকে বলেন যে, পত্র-পত্রিকায় জাল ভোট দেয়ার যেসব ছবি ছাপা হয়েছে এবং টেলিভিশনে যে সমস্ত ছবি সম্প্রচার করা করা হয়েছে সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ এবং পেপার কাটিং থেকেও তো কমিশন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এই কথা শোনার পর ভারপ্রাপ্ত সি ই সি খামোশ হয়ে যান। ওই টকশোতে এক ব্যক্তি টেলিফোনে জানান যে, তিনি রাজশাহীর একটি এলাকা থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। তার একাধিক কেন্দ্রে সরকারের মাস্তান বাহিনীর কয়েক জন সদস্য পেশী শক্তি প্রদর্শন করে তার পোলিং এজেন্টদেরকে বের করে দেয় এবং ইচ্ছামত সিল মারে। তিনি এস এম এস, ইমেল এবং টেলিফোন করে ইলেকশান কমিশনকে বিষয়টি জানান এবং তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ইলেকশান কমিশন বলেন যে, বিষয়টি তাদের কাছে লিখিতভাবে জানাতে হবে। কথায় কথায় লিখিতভাবে জানানোর বিষয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রক্তন প্রধান শাহাব উদ্দিন কোরাইশী বলেন, কেউ যদি কোন অভিযোগ বা বক্তব্য নিয়ে আসে তার প্রতি কমিশন গুরুত্ব দেয়। এমনকি সংবাদপত্রে কিছু প্রকাশিত হলে কিংবা টেলিভিশনে কিছু দেখানো হলে কমিশন গুরুত্ব দেয়। তারা আমাদের কাজ সহজ করে দিচ্ছে। টেলিভিশন সাংবাদিকদের কাছে ভিডিও থাকে। অনেকের কাছে স্টিল ছবি থাকে। আপনার জন্য অন্য প্রমাণের তো দরকার পড়ে না। কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করবে, এ জন্য অপেক্ষার দরকার নেই। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব মেকানিজমের যে কাজ, সেটা মিডিয়া করে দেয়। আমি বলব, তারা খুব ভালো কাজ করছে। এমন অনেক বিষয় রয়েছে তার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। নির্বাচন সামনে, অথচ কমিশন অভিযোগ বিষয়ে ৬ মাস পর সিদ্ধান্ত নিল- এটা কোন কাজের কথা নয়। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর পোস্টমর্টেম হতেই পারে। কিন্তু নির্বাচনের সময় এটা নিয়ে বসে থাকলে চলে না। আগুন লাগলে নেভাতে হবে। তবে চেষ্টা করতে হবে যেন কেউ আগুন না লাগাতে পারে। ক্রিকেটে এল বি ডব্লিউর আবেদনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতে হয়। আপনি এজন্য অপেক্ষা করতে পারেন না। ভারতের সুবিধার দিক হচ্ছে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেয় সেটা সব পক্ষ মেনে নেয়।
     ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন প্রধানের জবানীতে যে দুই তিনটি পয়েন্ট এখানে উল্লেখ করা হলো সেগুলোও যদি আমাদের নির্বাচন কমিশন কার্যকরী করতে পারতো, তাহলেও তো ভোট ডাকাতি এবং কারচুপি স¤পূর্ণ বন্ধ না হলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতো। কিন্তু এই জন্য শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনকে দোষ দিলে হবে না। সরকারকেও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যথার্থ অর্থে স্বাধীন হোক এবং স্বাধীনভাবে কাজ করুক, সেটা সরকারকেও চাইতে হবে। ভারত এবং পাকিস্তানের দুটি উদাহরণ দিচ্ছি। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপিতি অবসরপ্রাপ্ত ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী রায় দিয়েছিলেন যে,  প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। ফলে জনাব গিলানী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বা থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আদালতের এই রায়ের পর ইউসুফ রাজা গিলানীকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ভারতে ইন্দিরা গান্ধী গদি হারিয়েছেন সেটিও উচ্চ আদালতের রায়ের কারণে।
     বাংলাদেশের সাংবিধানিক কোন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে এই ধরনের কোন দুঃসাহসিক পদক্ষেপের প্রত্যাশা করা যায় কি?

ইনসেট
কথায় কথায় লিখিতভাবে জানানোর বিষয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রাক্তন প্রধান শাহাব উদ্দিন কোরাইশী বলেন, কেউ যদি কোন অভিযোগ বা বক্তব্য নিয়ে আসে তার প্রতি কমিশন গুরুত্ব দেয়। এমনকি সংবাদপত্রে কিছু প্রকাশিত হলে কিংবা টেলিভিশনে কিছু দেখানো হলে কমিশন গুরুত্ব দেয়। তারা আমাদের কাজ সহজ করে দিচ্ছে। টেলিভিশন সাংবাদিকদের কাছে ভিডিও থাকে। অনেকের কাছে স্টিল ছবি থাকে। আপনার জন্য অন্য প্রমাণের তো দরকার পড়ে না। কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করবে, এ জন্য অপেক্ষার দরকার নেই। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব মেকানিজমের যে কাজ, সেটা মিডিয়া করে দেয়। আমি বলব, তারা খুব ভালো কাজ করছে। এমন অনেক বিষয় রয়েছে তার তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। নির্বাচন সামনে, অথচ কমিশন অভিযোগ বিষয়ে ৬ মাস পর সিদ্ধান্ত নিল- এটা কোন কাজের কথা নয়। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর পোস্টমর্টেম হতেই পারে। কিন্তু নির্বাচনের সময় এটা নিয়ে বসে থাকলে চলে না। আগুন লাগলে নেভাতে হবে। তবে চেষ্টা করতে হবে যেন কেউ আগুন না লাগাতে পারে। ক্রিকেটে এল বি ডব্লিউর আবেদনে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দিতে হয়। আপনি এজন্য অপেক্ষা করতে পারেন না। ভারতের সুবিধার দিক হচ্ছে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেয় সেটা সব পক্ষ মেনে নেয়।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিনামূল্যে বিক্রি হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা


স্কুল পেরিয়ে যখন কলেজে ভর্তি হলাম, তখন প্রথম পড়েছিলাম আমার রাজনৈতিক তত্ত্বগুরু আবুল মনসুর আহমদের বই পাক-বাঙলার কালচার। বইটি পড়ে চমৎকৃত হয়েছিলাম। এবং আমার ভেতরে একধরনের বোধ কাজ করতে শুরু করে যে, আমরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আসলে কারা। বাংলাদেশ আমলে বইটি বাংলাদেশের কালচার শিরোনামে পুনর্মুদ্রিত হয়। এই বইয়ের মর্মার্থ আত্মস্থ করার জন্য আমি বারবার পড়েছি। এবং পরবর্তীকালে এ বিষয়ে অধিকতর গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি। তার ওপরে পড়েছি জওয়াহেরলাল নেহরুর শিক্ষামন্ত্রী ফরিদপুরের মানুষ হুমায়ুন কবিরের বাংলার কাব্য গ্রন্থটি। সেখানে আবুল মনসুর আহমদের মতো পূর্ব ও পশ্চিম বাংলায় ভেদ রেখাগুলো অতটা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু তাতে খুব ভালোভাবেই পূর্ব বাংলার মানুষের জাতিসত্তাগত বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট ছিল।
হুমায়ুন কবির লিখেছেন, ‘পশ্চিম বাঙলায় শালবন আর কাঁকড়ের পথ-দিগন্তে প্রান্তর দৃষ্টিসীমার বাইরে মিলিয়ে আসে। শীর্ণ জলধারার গভীর রেখা কাটে দীর্ঘ সংখ্যাহীন স্রোতস্বিনী। বাতাসে তীব্রতার আভাস, তপ্ত রৌদ্রে কাঠিন্য, দিনের তীè ও সুস্পষ্ট দ্বীপ্তির পর অকস্মাৎ সন্ধ্যার মায়াবী অন্ধকারে সমস্ত মিলিয়ে যায়। রাত্রিদিনের অনন্ত অন্তরাল মনের দিগন্তে নতুন জগতের ইঙ্গিত নিয়ে আসে, তপ্ত রৌদ্রালোকে মূর্চ্ছাহত ধরণী অন্তরকে উদাস করে তোলে। পশ্চিম বাংলার প্রকৃতি বাঙালির কবিমানসকে যে রূপ দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে লোকাতীত রহেস্যের আভাস। অনির্ব্বচনীয়ের আস্বাদে অন্তর সেখানে উন্মুখ ও প্রত্যাশী, জীবনের প্রতিদিনের সংগ্রাম ও প্রচেষ্টাকে অতিক্রম করে প্রশান্তির মধ্যে আত্মবিস্মরণ
অন্য দিকে তিনি লিখেছেন, ‘বাঙলার পূর্ব্বাঞ্চলের প্রকৃতি ভিন্নধর্ম্মী। পূর্ব্ববঙ্গে নিসর্গ হৃদয়কে ভাবুক করেছে বটে, কিন্তু উদাসী করেনি। দিগন্তপ্রসারিত প্রান্তরের অভাব সেখানেও নাই, কিন্তু সে প্রান্তরে রয়েছে অহোরাত্র জীবনের চঞ্চল লীলা। পদ্মা-যমুনা-মেঘনার অবিরাম স্রোতধারায় নতুন জগতের সৃষ্টি ও পুরাতনের ধ্বংস। প্রকৃতির বিপুল শক্তি নিয়তই উদ্যত হয়ে রয়েছে, কখন আঘাত করবে তার ঠিকানা নেই। কূলে কূলে জল ভরে ওঠে, সোনার ধানে পৃথিবী ঐশ্বর্য্যময়ী, আর সেই জীবন ও মরণের অনন্ত দোলার মধ্যে সংগ্রামশীল মানুষ। প্রকৃতির সে ঔদার্য্য, সৃষ্টি ও ধবংসের সেই সংহত শক্তি ভোলবার অবসর কই? চরের মানুষ নদীর সাথে লড়াই করে, জলের ঐশ্বর্য্যকে লুটে জীবনের উপাদান আনে। তাই লোকাতীতের মহত্ত্ব হৃদয়কে সেখানেও স্পর্শ করে। কিন্তু মনের দিগন্তকে প্রসারিত করেই তার পরিসমাপ্তি ঃ প্রশান্তির মধ্যে আত্মবিস্মরণের অবকাশ কই?’
হুমায়ুন কবির পূর্ব বাঙলার মানুষের বিপ্লবী মনোবৃত্তি নিয়ে আরও লিখেছেন যে, ‘বাঙলার পূর্ব্বাঞ্চলে সেই বিপ্লবী মনোবৃত্তি কেনো বেশী ছড়িয়ে পড়েছিল, তাও সহজেই বোঝা যায়। প্রকৃতির শক্তির উদ্যত আঘাতের সম্মুখে সংগ্রামশীল মন, নদী প্রবাহের ভাঙাগড়ায় গৃহসৃষ্টির ব্যর্থতাবোধ, এবং মঙ্গোলীয় রক্তের অহিংস্রতা মিলে পূর্ব্ববঙ্গকে বৌদ্ধমানসের উপযোগী করে রেখেছিল। বাঙলায় আর্য্যপ্রভাবের শক্তি এমনিতেই ক্ষীণ, পূর্ব্ববঙ্গের সে প্রভাব ক্ষীণতর। বরঞ্চ পশ্চিমবঙ্গে স্থিরতা অনেক বেশী, রাজশক্তির প্রভাবও সেখানে অধিকতর কার্যকরী। তাই বৌদ্ধযুগের অবসানে যেদিন হিন্দু অভ্যুত্থানে বৌদ্ধমানসকে ধ্বংস করবার চেষ্টা প্রবল হয়ে ওঠে, প্রাক্তন মজ্জাগত জাতিবিচারের পূর্ব্বস্মৃতির মধ্যে পশ্চিম বাঙলায় তা অনেক পরিমাণে সম্ভব হয়েছিল। বল্লালী কৌলীন্যপ্রথার উদ্ভব সেখানে, সবচেয়ে বেশী সাফল্যও বোধহয় সেইখানে। কিন্তু ভঙ্গুর, বিপ্লবী, পরিবর্তনশীল পূর্ব্ববঙ্গে জাতি বিচারের পূর্ণপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সে পরিমাণে সার্থক হয়নি। সেই জন্যই পূর্ব্ব ও পশ্চিমবঙ্গের সমশ্রেণীর হিন্দুর মধ্যেও বিবাহে, ব্যহারে সেদিন পর্য্যন্ত নানাবিধ বাধার কথা শোনা যায়। হিন্দু অভ্যুত্থানের বিজয়ের দিনে কৌলীন্য ও জাতি-বিচারের প্রবল্যের মধ্যেও পূর্ব্বদেশে বৌদ্ধ মনোবৃত্তির অহিংস্রতা ও সাম্য প্রচ্ছনে বেঁচেছিল। মোসলেম বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আত্মপ্রকাশ করে পূর্ব্ববঙ্গের ধর্মীয় রূপ বদলে দেয়। বাংলার প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধেরা ব্রাক্ষ্মণ্যধর্ম্মকে কোনো দিনই সর্ব্বান্তঃকরণে গ্রহণ করেনি, রাজশত্তির পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব্ববঙ্গে ইসলামের প্রচারের মধ্যে বৌদ্ধমানসের ক্রিয়া তাই সুস্পষ্ট সেজন্যই এই প্রান্তপ্রদেশে মুসলমানের প্রাচুর্য্য।
এত দীর্ঘ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করা হলো এটা বোঝানোর জন্য যে, বাংলাদেশ জনপদের মানুষ কিভাবে ক্রমেই স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে বিকশিত হয়েছে। হুমায়ুন কবির খুব বেশি গ্রন্থ লেখেননি। সে তুলনায় আবুল মনসুর আহমদের লেখা অনেক বেশি। তিনি রাজনীতি লিখেছেন। জীবনস্মৃতি লিখেছেন। গবেষণা গ্রন্থ লিখেছেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপাত্মক বই লিখেছেন। তার এমন আর একটি বাইয়ের নাম বেশী দামে কেনা কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা। এই বইয়ে ৪২টি নিবন্ধ স্থান পেয়েছে। তার মথ্যে ৩৯টি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২-৭৩ সালে তৎকালে দেশে সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের এক দেড় বছরের মধ্যেই এই মনীষী লেখক উপলব্ধি করেছিলেন যে, আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছে। সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ স্বীকার করেছে। সে স্বাধীনতা ব্যর্থ তল্পিবাহক শাসকেরা কিভাবে বিপন্ন করে তুলেছে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তানে নিয়োজিত পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের খবর শুনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘হাজার সাল কা বদলা লে লিয়া।অর্থাৎ পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজার বছরের প্রতিশোধ তুলে নিয়েছেন। তার এ বক্তব্যের বহুমুখী মাজেজা ছিল। সেটি শুরু হয়েছিল এখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির ভারত বিজয়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তার প্রতিশোধ মাত্র।
শেখ মুজিবুর রহমান যখন দিল্লিতে ভারতকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার জন্য ফারাক্কা চুক্তি সই করেছিলেন, তখন বাংলাদেশের পানি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন আসাফউদ্দৌলা। চুক্তি স্বাক্ষরের পর তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনি কি মনে করেন যে, বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে এরকম চুক্তি করা কি আপনার পক্ষে করা সম্ভব হতো?’ এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক গীত নিয়মিত আমরা শুনি। ভারত আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে এই করেছে, ওই করেছে। এ কথা বলার লোকের অভাব নেই। হ্যাঁ, বাংলাদেশের শরণার্থীদের তারা আশ্রয় দিয়েছিল। সেটি যত না আমাদের সাহায্যের জন্য, তারচেয়ে অনেক বেশি ছিল পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার জন্য। আর শরণার্থীদের থাকা খাওয়ার জন্য ভারত সরকারের যে ব্যয় হয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি তারা পেয়েছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে। এই বাণিজ্যটাও তাদের কাছে কম লাভজনক ছিল না। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের মানুষেরা যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল, পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে গ্রামগঞ্জ থেকে ঠেলে শহরে আবদ্ধ করে ফেলেছিল, তখন বিজয় নিজেদের কব্জায় নিতে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তা নিয়ে আমাদের একশ্রেণীর সেবাদাস রাজনীতিক ও বৃদ্ধিজীবীদের আদিখ্যেতার অন্ত নেই।
এ কথা সবাই অবহিত আছেন যে, ১৯৭২-৭৫ সালে সেভাবে ভারতের স্বার্থে এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল, এবারে সে ধারার পুনরুত্থান ঘটেছে। এ সরকার দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেয়ার খেলায় মত্ত হয়েছেন। ২০০৮ সালের আঁতাতের নির্বাচনে ভারত মার্কিন ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ হাসিনাকে যে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, সেটি এখন আর অ¯পষ্ট নেই। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি কিনটন সে কথা শেখ হাসিনাকে স্মরণও করিয়ে দিয়েছিলেন ড. ইউনূস ইস্যুতে। জনগণ সম্ভবত তা ভুলে যায়নি। ভারতীয় পত্রপত্রিকাও লিখেছে যে, শেখ হাসিনা সরকার ভারত না চাইতেই তাদের অনেক কিছু দিয়ে দিয়েছেন; যা আমাদের দেশের স্বার্থের কোনো মতেই অনুকূল নয়। ভারত খুব স্পষ্ট করেই বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে যে, তিস্তার পানি দেয়া সম্ভব নয়। নতজানু চুক্তি অনুযায়ী গঙ্গার পানিও পাচ্ছে না বাংলাদেশের মানুষ। এতে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন। শস্য উৎপাদন বিপর্যস্ত। কৃষিজমি ফেটে চৌচির। এ বিষয়ে সরকার টুঁ শব্দটি না করে বরং ওকালতি করতে শুরু করেছেন যে, ভারতকে ট্রানজিট, করিডোর অবশ্যই দিতে হবে। এসব উকিলকে কেউ যদি রাষ্ট্রদ্রোহী বলে চিহ্নিত করেন, তবে কি তাকে খুব বেশি দোষ দেয়া যাবে?
এদের হাতে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এখন সম্পূর্ণ বিপন্ন। যে জনগণ অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়তে হবে তাদেরই। তার জন্য চাই জাতীয় ঐক্য। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণে সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠাই আজকের মহান স্বাধীনতা দিবসে হোক আমাদের অঙ্গীকার। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। 

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


 

শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

অনিশ্চিত গন্তব্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম


অনিশ্চিত গন্তব্যে মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিশ্বাসের দোদুল্যমানতা দি¦ধান্বিত এবং আত্মবিশ্বাসহীন এক ধরনের আপোষকামিতা বড় বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর অসীম সার্বভৌমত্বের মহান চেতনায় উজ্জীবিত মানবসত্তা আজ যেন ভীরুতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কি যেনো উদাসীন জড়তা আর হীনম্মন্যতা যেন তাদের ওপর ভর করে আছে। ইসলামী সভ্যতা শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজ সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যার কারণ কি, যে মুসলিম জাতি এক সময় মানবজাতিকে সকল বিভ্রান্তি, বিপর্যয় ও অজ্ঞতা পংকিল আবর্ত থেকে মুক্ত করে সিরাতুল মুসতাকিমের সোনালী সমাজ গড়েছিল, সে জাতি আজ নিজস্ব জীবনবোধ, আদর্শ ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে নিজেরাই নিজেদের জীবনকে বিলুপ্তি ও ধ্বংসের পথে লিপ্ত হয়েছে।
যে জাতির ধমনিতে তাওহীদের রক্তধারা প্রবাহিত হচ্ছে, এখন সেই জাতি শিরক, কুফর ও জাহেলিয়াতের পংকিল আবর্তে নিমজ্জিত হয়ে মুসলিম উম্মাহকে অপসংস্কৃতির অতল গহীনে নিক্ষেপ করার আত্মঘাতী পথে এই জাতি। পরিবারে, সমাজে এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রে ইসলামী জীবনবোধ, চেতনা ও নিজস্ব সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা এসব বিপর্যয় ডেকে আনছে। নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্তির ধূ¤্রজাল থেকে রক্ষা করতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকেই এ দায় নিতে হবে। যাতে তারা অবশ্যই নিজস্ব মূল্যবোধ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অবশ্যই মূল্যবোধ ধরে রাখতে পারে।
নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ স্থির কোন বিষয় নয়। যুগ ও সভ্যতার পরিবর্তনে সমাজের মানুষের মূল্যবোধেরও পরিবর্তন হয়। একটি সমাজের মানুষের ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, চিন্তা, চেতনা, কৃষ্টি, বিশ্বাস ও সভ্যতার ওপর ভিত্তি করে সমাজের মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। আর এই ধারণাগুলোর অসঙ্গতিপূর্ণ পরিবর্তনের পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে অবক্ষয়ের আলামত দেয়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা সমাজে হাজারো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, রক্তক্ষরণ হচ্ছে সুস্থ-সুন্দর সমাজ প্রত্যাশী নাগরিকদের হৃদয়ে। আমরা এ কেমন সমাজ গড়ছি! আর আমরা কোথায়ইবা যাচ্ছি! ছেলে-মেয়ে তার মা-বাবা খুন করছে, পিতৃতুল্য শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করছে। এতে সমাজ সচেতন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। অতীতে কদাচিত দেখা যেত এইসব ঘটনা। পরিবার-পরিবারের মধ্যে, সমাজ-সমাজের মধ্যে ও রাষ্ট্র যদি রাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে তাহলে এই জাতির আশা কি থাকে। এ নির্মমতা বর্বরতা কেন! ভাবতেও ঘৃণা হয় বর্তমান এই জাতির মূল্যবোধ ও অবক্ষয় দেখে।
রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি-সাহিত্যশাসিত চাকরিজীবীদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় আমরা দেখে অভ্যস্থ, এসব সমাজকে যতোটা বিচলিত করে না, দেখতে দেখতে সমাজে তা সয়ে যায়। সমাজের উচ্চ মূল্যবোধের ধারক সম্মানিত শিক্ষকদের নৈতিক মূল্যবোধের স্খলন দেশ-জাতির জন্য নিশ্চিত বার্তা বহন করে। এটাও ঠিক, সমাজ-রাষ্ট্রের বেশির ভাগ শ্রেণী পেশায় নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয় থাকলে বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষক সমাজ উচ্চ মূল্যবোধ লালন করতে পারে না। বর্তমানে আমরা যা দেখছি নীতি নৈতিকতা মূল্যবোধের অবক্ষয় ধরেছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি শ্রেণী পেশার মধ্যে, কোথাও কম কোথাও বেশি। যদি সবকিছু দেখার পরও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ভাবে এই তো বেশ ভালো আছি। এমনটা ভাবার আর অবকাশ নেই। যদি অজান্তে পরিবারে, সমাজে এবং রাষ্ট্রের চরিত্রে নৈতিক স্খলন ঘটলে ফিরিয়ে আনা কতোটা যে কষ্টসাধ্য যে জাতি ভুক্তভোগী সেই জাতি জানে। নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সমাজে সংসারে ভাইরাস সদৃশ। উচ্চ মূল্যবোধের চর্চা যেমনি সমাজকে সুন্দর নৈতিক ও মানবিক করে, তেমনি মূল্যবোধের অবক্ষয়কে রোধ না করলে বা প্রশ্রয় দিলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নির্মম ও কলুষিত করে। বিচ্ছিন্নভাবে ভালো থাকার সুযোগ কোথাও নেই।
নৈতিক মূল্যবোধের এই সর্বগ্রাসী অবক্ষয় রোধকল্পে কর্মসূচি গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। নতুবা সমাজ-রাষ্ট্রের নিশ্চত অধঃপতন ঠেকানো যাবে না। এ জন্য জাতির যে বিভ্রান্তির ধূ¤্রজাল থেকে রক্ষা করে ইসলামী জীবন চেতনায়, ধর্মীয় নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয়গুলো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ওতপ্রোতভাবে ধরে রাখতে হবে। মানুষকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ও উৎসাহদানে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতিপরায়ণ ও অসৎ ব্যবসায়ীদের মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে কার্যকর আইনী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনকে নিশ্চিত করতে হবে।
তবে সাফল্যের জন্য অবশ্যই সর্বপর্যায়ে নেতৃত্ব থাকতে হবে জ্ঞানী ও যোগ্য প্রতিনিধিদের হাতেই। তারাই নির্ধারণ করবেন নীতি-আদর্শ এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্বও থাকবে বিকেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থায় তাদের ও জনগণের ওপরেই। সাফল্য ও ব্যর্থতার দায়-দায়িত্বও বহন করতে হবে তাদেরকেই। এই ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রের প্রয়োজ নেই। প্রয়োজন সচেতনতা ও আন্তরিক ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। ধোঁকাবাজির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসে গড়ে তুলতে হবে সভ্যতাভিত্তিক গণআন্দোলন। সেখানে স্থান পাবে না বর্ণচোরারা। এ ধরনের গণজোয়ারে মধ্যে থেকেই সৃষ্টি হবে নতুন প্রজন্মের ত্যাগী নেতৃত্ব। তারা হবেন জনগণের সাথী; মুনিব নয়। নির্ধারিত নীতিমালার বাস্তবায়নের জন্য নিঃস্বার্থ আন্তরিকতায় জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন তারা। তাদের থাকবে স্বচ্ছ জবাবদিহিতার দায়বদ্ধতা। বিকেন্দ্রীয় রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় স্থানীয়ভাবে জনগণই হবে প্রগতি ও উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। সরকার হবে তাদের কাজের সহযোগী। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ক্ষমতা হবে সীমিত। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করা, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সামাজিক স্থিতিশীলতার নিশ্চিতকরণ, বৈদেশিক সম্পর্কের নীতি নির্ধারণ, মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ, ডাক ও যোগাযোগ বিভাগকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা বহাল করাই হবে মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। প্রশাসনিক আমলারা সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ধরনের বিকেন্দ্রীয়, প্রতিনিধিত্বশীল জবাবদিহিমূলক সরকার ও সমাজকাঠামো যার প্রতিটি পর্যায়ে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ যদি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় তবেই গড়ে উঠবে সুষম সমাজ ব্যবস্থা ও গণমুখী রাষ্ট্রীয় প্রশাসন। আর সে ধরনের রাষ্ট্র ও সমাজেই সম্ভব হবে প্রকৃত অর্থে মানবাধিখার ও গণতন্ত্রসহ অন্যান্য মূল্যবোধের অনুশীলন ও অবাধ চর্চা। যা ক্রমান্বয়ে প্রথিত হবে রাষ্ট্র সমাজের প্রতিক্ষেত্রের সর্বস্তরে। এভাবেই পুনরায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে অতীতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।
পরিশেষে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সবাই কত সব উদ্ভট ফর্মুলা দিচ্ছে, তার দিকে এসবও আরও অনেক শুনতে হবে। ঐসব ফর্মুলা বাস্তবায়নে তিক্ত অভিজ্ঞতা অভিশাপও বহন করছেন। আর নয় আপনারা যৌক্তিকতা যাচাই করে দেখুন। ইসলামী সভ্যতা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজ সমাজ থেকে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। শুধুমাত্র নিজস্ব জীবনবোধ, আদর্শ ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে। আমরা মুসলমান যদি ইসলামী জীবনবোধ, আদর্শকে ধারণ না করতে পারি বিপর্যয় আমাদের সম্মুখে। এখনই সময় একই গাছের ছায়ায় বসা। জীবন সুন্দর ও আলোকিত করা। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিজস্ব মূল্যবোধ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করে গড়ে তোলা।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ক্রিকেট দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতার পটভূমি


বাংলাদেশে এখন ক্রিকেটের বিশ্বযুদ্ধ চলছে। নাম এর টি-টোয়েন্টি। বাংলাদেশ দল সুপার টেন বা শীর্ষ দশটি দেশের একটি হিসেবে খেলছে বলে শুধু নয়, স্বাধীনতার মাসে শুরু হয়েছে বলেও বাংলাদেশ দলের খেলার ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ ও উৎসাহের কোনো সীমা ছিল না। এখনও নেই। ক্রিকেট বুঝুক না বুঝুক, মাঠে গিয়ে বা টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা দেখুক না দেখুক বাংলাদেশের মানুষমাত্রই বাংলাদেশ দলের সাফল্যের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। তারা চায়, বাংলাদেশ দল প্রতিটি খেলাতেই জয়ী হোক। এখানেই দেশপ্রেমের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের এই আশা অবশ্য সব সময় পূরণ হয় না। যেমনটি হয়নি গত ২৫ মার্চ। সেদিন খেলা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে। দুনিয়া কাঁপানো ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল ছাড়া ভালো ক্রিকেটার খুব বেশি নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তাছাড়া দলটিকে বাংলাদেশ আগে হারিয়েছেও। সে কারণে মানুষের প্রত্যাশা ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু নিরাশ করেছে বাংলাদেশের টাইগাররা। এখানে বলে রাখা দরকার, আমার মতো অনেকেই মনে করেন, সৃষ্টি জগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে টাইগার তথা পশু বানিয়ে ফেলাটা শুধু অন্যায় নয়, বড় ধরনের গুনাহর কাজও। সে কাজটিই আমাদের মিডিয়া কোনো রকম চিন্তা না করেই করে চলেছে। দু-একবার শুধু বাংলাদেশ বলার পরই বার বার বলা ও লেখা হচ্ছে টাইগার বা টাইগাররা। টেলিভিশনের খবরে বা ধারাবর্ণনায় বলুন, কিংবা বলুন পত্রিকার রিপোর্টে সবখানেই শুধু টাইগার আর টাইগাররা! এমনভাবে বলা ও লেখা হচ্ছে যেন টাইগার বা বাঘ মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর! যুক্তি হিসেবে বাঘের শক্তি ও গতিবেগের কথা বলা হয়। বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়রাও বাঘের মতোই দুর্দান্ত শক্তিশালী ও ক্ষিপ্রগতির বলে বোঝানো হয়। অন্যদিকে কথার পিঠেও কিন্তু কথা রয়েছে। শ্রীলঙ্কা দলের কথাই ধরা যাক। বনের রাজা সিংহ রয়েছে দেশটির জাতীয় পতাকায়। সে সিংহও আবার যেমন-তেমন সিংহ নয়, তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে! তা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা কিন্তু নিজেদের লায়ন বা সিংহ হিসেবে পরিচয় দেয় না। কারণ, তারা জানে, বনের রাজা হলেও সিংহ একটি পশুই মাত্র। মানুষের মতো শ্রেষ্ঠ জীব নয়। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণও লক্ষ্য করা দরকার। ক্যাঙ্গারু দেশটির জাতীয় পশু। কিন্তু আমরা যেভাবে টাইগার নিয়ে মাতামাতি করি অস্ট্রেলিয়ানরা কিন্তু তার ধারে-কাছেও যায় না। আমাদের আসলে লজ্জিত হওয়া উচিত। কারণ, মানুষকে পশু বানানোর মধ্যে গর্ব বা অহঙ্কার করার কিছুই থাকতে পারে না।
কথাটা বিশেষভাবে মনে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলার দিন, গত ২৫ মার্চ। স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন হচ্ছিল বলে মানুষের আগ্রহ-উদ্দীপনাও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু প্রত্যেককেই সেদিন হোঁচট খেতে হয়েছে। টসে জিতে টাইগাররা (!) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কেন ব্যাটিং করতে দিয়েছিল সে প্রশ্নের জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। সিদ্ধান্তটি অগ্রহণযোগ্য ছিল এজন্য যে, রান চেজ বা তাড়া করা এবং পরে ব্যাটিং করার জন্য বিশেষ কিছু যোগ্যতার দরকার হয় আস্থার সঙ্গে মারমুখী ব্যাটিং করতে পারা এবং প্রচ- চাপের মুখেও আউট না হওয়া যেগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ যোগ্যতা কেবল পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার রয়েছে। ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকেও পরে ব্যাট করতে গিয়ে প্রায়ই পরাজিত হতে হয়। অন্যদিকে আমাদের অতি ক্ষিপ্রগতির টাইগাররা (!) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আগে ব্যাটিং করতে দিয়ে নিজেরা ফিল্ডিং বেছে নিয়েছিল। মাঠে নেমে বোলিংও তারা ভালো করতে পারেনি। ক্যাচ ছেড়ে দেয়াসহ সব মিলিয়ে ফিল্ডিংও তারা খুবই বাজে করেছে। এ জন্যই ৪০-এর ঘরে এসে ক্রিস গেইল আউট হয়ে গেলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্য ব্যাটসম্যানরা দলকে ১৭১ রানে পৌঁছে দিয়েছিল। এটাও বিরাট কোনো টার্গেট ছিল না। কিন্তু কীর্তিমান টাইগাররা (!) শুরু থেকেই প্যাভিলিয়নে ফিরে আসার অর্থাৎ একের পর এক আউট হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। ম্যাগনেট অ্যাকশন ধরনের পণ্যের বিজ্ঞাপনের মডেল তামিম ইকবাল মাত্র পাঁচ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে। লাইফবয় সাবানসহ নানা পণ্যের সুপার মডেল এবং প্রধানমন্ত্রীর সুপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাশে বসে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য নিন্দিত হওয়া আরেক কৃতী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এমনকি একটি রানও করতে পারেনি। প্রথম বলেই সোজা বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছে সে। অথচ এই সাকিবই মাত্র কিছুদিন আগেও বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার ছিল! বিজ্ঞাপনের মডেল এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের রাজনৈতিক শিষ্য হতে গিয়েই তার এতটা অধঃপতন হয়েছে কি না সে বিতর্কে না গিয়েও বলা দরকার, সব মিলিয়েই টাইগাররা (!) সেদিন জাতিকে নিরাশতো করেছেই, ৭৩ রানের বিরাট ব্যবধানে পরাজিত হয়ে সীমাহীন লজ্জাও দিয়েছে। তারা এমনকি একশও করতে পারেনি, করেছিল মাত্র ৯৮ রান! এতটাই বাহাদুর টাইগার তারা!! 
এ পর্যন্ত এসে পাঠকরা ভাবতে পারেন, ক্রিকেটই হয়তো আজকের বিষয়বস্তু। আসলে তা নয়। ক্রিকেট নিয়ে লিখতে হচ্ছে একটি বিশেষ কারণে। সে কারণ একটি স্লোগান। গ্যালারির এক শ্রেণীর দর্শক সেদিন জিতেগা, জিতগা বাংলাদেশ জিতেগা বলে বার বার চিৎকার দিয়ে উঠছিল। জিতেগা শব্দটি যে হিন্দি ভাষার সে কথা নিশ্চয়ই বলার দরকার পড়ে না। আপত্তির কারণ হলো, হিন্দি ভাষায় স্লোগান দেয়ার এবং ভারতের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত অসংখ্য সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশীরা বরং প্রমাণ করেছে, ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশটি কোনো অন্যায়, বঞ্চনা ও শত্রুতার সামনে মাথা নত করতে জানে না। বস্তুত বাংলাদেশের জনগণ প্রচ-ভাবে স্বাধীনচেতা বলেই পশ্চিম পাকিস্তানীরা মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে এক রাষ্ট্র পাকিস্তানে থাকেনি। মুসলমানদের ভাষা হিসেবে বর্ণিত উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেয়নি। কথাটা বিশেষ করে স্বাধীনতার মাস মার্চে বলারও বিশেষ কারণ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ভারতপন্থীদের প্রচারণা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সুচিন্তিত কৌশলের পরিণতিতে ভারতের ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রবল আগ্রহ ও আকর্ষণের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত ভারতীয়দের ষড়যন্ত্রে এদেশেরই কিছু ছদ্মবেশধারী রাজনীতিক ও তথাকথিত সুশীল সমাজ সাফল্যের সঙ্গে আগ্রহ সৃষ্টির কাজকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বোম্বের সিনেমা এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো। আমাদের ছেলেমেয়েরা টিভি ও সিনেমার চাকচিক্যে চমৎকৃত হচ্ছে। ভারতকে স্বর্গের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া কোনো দেশ মনে করে বিভ্রান্ত হচ্ছে। তাদের একটি অংশ এমনকি বাংলাদেশকে স্বাধীন বা ভারতের বাইরে আলাদা একটি রাষ্ট্র হিসেবে টিকিয়ে রাখারও কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না!
অথচ পার্থক্য ও প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য নিউইয়র্ক, লন্ডন বা প্যারিসের মতো দূরে কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, যে কেউ বাংলাদেশের লাগোয়া নগরী এবং ভারতের রাজ্য পশ্চিম বঙ্গের রাজধানী কলকাতায় গিয়ে দেখে আসতে পারেন। সেটাও সম্ভব না হলে দূরদর্শন টিভির কলকাতা কেন্দ্রের কিংবা তারা বাংলা বা জি বাংলা ধরনের বাংলা টিভি চ্যানেলের নাটক এবং কলকাতার সিনেমাগুলো দেখতে পারেন। দেখবেন, এগুলোর কোনোটিতেই বোম্বের সিনেমা-নাটকের মতো চাকচিক্যের ছিটেফোঁটাও নেই। হতদরিদ্র অবস্থায় রয়েছে পশ্চিম বঙ্গের মানুষ নামে যারা বাঙালি, কিন্তু বীর বাঙালি নয় যেমনটি আমরা ছিলাম ১৯৭১ সালে। এসব সিনেমা-নাটকের নায়ক-নায়িকারাও বাংলাদেশের কাউকে আকৃষ্ট করতে পারবে না। এটাই ভারতের আসল চেহারা, বোম্বের বিভিন্ন সিনেমা ও সিরিয়ালটা নয়। সুতরাং চমৎকৃত বা আকৃষ্ট হয়ে নেচে ওঠারও কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। মাতামাতিটুকু কেবল ধান্দাবাজরাই করে, ভারত যাদের টাকা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে চাকর-বাকরের মতো পুষছে।
আপত্তি ও উদ্বেগের কারণ শুধু বোম্বে ও কলকাতার সিনেমা-নাটকের মধ্যকার পার্থক্য নয়। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামজিক কারণগুলোও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ঘটনা ও উদাহরণেরই উল্লে¬খ করা যায়, যেগুলো থেকে প্রমাণিত হবে, মুসলমানদের প্রতি ভারতীয় হিন্দুদের মনোভাব সেই ব্রিটিশ আমলের মতোই রয়েছে। যেমন কলকাতার মুসলিম প্রধান পার্ক সার্কাস এলাকাতেও মুসলমানরা জুমার নামাজ আদায় করতে যান টুপি পকেটে নিয়ে। অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে যেন মহা কোনো অপরাধ করতে যাচ্ছেন! কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে মাইকে আযান দেয়া আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু কলকাতার কথাই বা বলা কেন, ভারতের অন্য সব অঞ্চলেও হিন্দুদেরই একচেটিয়া প্রাধান্য চলছে। সোনিয়া গান্ধীর মতো বিদেশিনী খ্রিস্টান রমণীকেও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার আগে ব্রাহ্মণ পুরোহিত ডেকে এবং হাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। মন্দিরে গিয়ে গলায় আঁচল পেঁচিয়ে দেবীকে পেন্নাম করতে হয়। এসবই ভারতের রাজনীতিতে অবশ্য পালনীয় সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী থেকে মনমোহন সিং ও নরেন্দ্রনাথ মোদি পর্যন্ত রাজনীতিকদের প্রত্যেককে হিন্দু ধর্মের বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। না হলে ভোট পাবেন না তারা।
কথাগুলো জানানোর উদ্দেশ্য এ কথা স্পষ্ট করা যে, এদেশের ভারতপন্থী রাজনীতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সুশীলজনরা যতই বলুন না কেন, ভারত এখনো সর্বতোভাবে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রই রয়ে গেছে। দেশটিতে বরং মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের বিপদ বাড়ছে দিন দিন। ভারতে হিন্দু জঙ্গি-সন্ত্রাসীদেরও ব্যাপক হারে বিস্তার ঘটছে। ভারত কেবলই হিন্দুদের রাষ্ট্র এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী সেø¬াগান মুখে ভারতজুড়ে ভয়ঙ্কর তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। এসব সংগঠনের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের অনেকে হিন্দুত্ববাদী জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্বও দিচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানো। কিন্তু ভারতের হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন এবং তাদের নিষ্ঠুর কর্মকা-ের ব্যাপারে বাংলাদেশের ভারতপন্থী মহল এবং সুশীলজনরা কোনো উচ্চবাচ্য করেন না। তারা বরং বোঝাতে চান যেন হিন্দু এবং ভারতীয়রা একেবারে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা! কথা শুধু এটুকুই নয়। ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাসের আলোকে এবং সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতেও যে কোনো পর্যালোচনায় পরিষ্কার দেখা যাবে, বেইলী রোডের নাটক পাড়া থেকে রামপুরার টিভি ভবন ও এফডিসি পর্যন্ত সংস্কৃতির অঙ্গনে তৎপর তথাকথিত প্রগতিশীলদের বদৌলতেই বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন সর্বাত্মক হতে পেরেছে। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশেও তারা খুঁজে খুঁজে অমুসলিমদেরই প্রধান চরিত্র বানিয়ে নাটক-সিনেমা বানিয়েছেন। চরম মুসলিমবিদ্বেষী খুনি-সন্ত্রাসীদের পর্যন্ত নায়ক বানিয়ে ওনারা মঞ্চায়নের সেঞ্চুরি করেছেন কিন্তু শেরে বাংলা ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মতো বিশাল ব্যক্তিত্বের দেশপ্রেমিক কাউকে নিয়ে কোনো কাহিনী তৈরি করার অনুগ্রহ করেননি। কারণ একটাই হিন্দির চামচামো করে তারা ভারতের সুনজরে থাকতে চান। এজন্যই ভারত ও হিন্দির বিরোধিতাকারীরা তাদের মতে প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িকÑ এমনকি পাকিস্তানের দালালও! দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সর্বনাশ ঘটিয়ে হলেও নিজেরা যে হিন্দির পাশাপাশি ভারতের দালালি করে বেড়াচ্ছেন এতে কিন্তু দোষের কিছু নেই! এ সংক্রান্ত অসংখ্য উদাহরণ দেয়া সম্ভব।
সেদিকে যাওয়ার পরিবর্তে রাজনৈতিক দিকটিকে প্রাধান্যে আনার পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলা দরকার, এই ভারতপন্থীরা এমন এক ভারতের দালালি করছেন, যে দেশটি কখনোই বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়নি। এর প্রমাণও পাওয়া গেছে বিভিন্ন উপলক্ষে। মাঝে মধ্যেই তারা কলকাতা থেকে সকালে যাত্রা শুরু করে বিকেলে ঢাকায় বসে চা খাওয়ার ইচ্ছার কথা শুনিয়ে থাকেন। আসলে ভয় দেখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য নসিহত তো প্রায়ই করেন তারা। বর্তমান সরকারের আমলে আরো একটি কথাও শুনিয়েছেন ভারতীয়রা। বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা দেয়ার বিনিময়ে ভারত যা কিছু পাওয়ার আশা করেছিল সেসব পাওয়া শুরু হয়েছে এবং সবই পাওয়া যাবে যদি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা ও রাখা যায়। লক্ষণীয় যে, নিজেদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনার ব্যাপারে কথায় কোনো ফাঁক রাখেননি ভারতীয়রাÑ যাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরাও রয়েছেন। তাদের মূল কথাগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করা দরকার। লগি-বৈঠার তা-ব থেকে ডিজিটাল নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর পেছনে ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে এতদিনে সাধারণ মানুষও জেনে গেছে। এই সমর্থনের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ সরকারও একের পর এক সকল বিষয়ে ভারতের ইচ্ছা পূরণ করে চলেছে। ট্রানজিটের আড়ালে সড়ক ও নৌপথে করিডোর দেয়া থেকে যৌথ মহড়ার পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ভারতের হাতে তুলে দেয়া পর্যন্ত সরকারের সকল পদক্ষেপের পেছনেই রয়েছে ভারতের ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্য। একই উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে দেশের ভেতরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে নির্মূল করার কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকার। সব মিলিয়েই বর্তমান পর্যায়ে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে জানানো দরকার, মূলত ভারতের মদদ ও ষড়যন্ত্রে এবং এদেশের ভারতপন্থীদের উদ্যোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই হুমকির মুখে ঠেলে দেয়ার ভয়ঙ্কর কর্মকা- চলছে। একযোগে চলছে তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও। এজন্যই ক্রিকেটের মাঠে পর্যন্ত জিতেগা, জিতেগা শুনতে হচ্ছে।
হঠাৎ শুনলে প্রশ্নের সৃষ্টি হতে পারে সত্য কিন্তু সব মিলিয়ে অবস্থা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যখন অতীতের দিকে ফিরে যাওয়া এবং স্বাধীনতার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার। বিশেষ করে ইতিহাসের সেই কারণ সম্পর্কে জানানো দরকার, যা জিতেগা সেøাগান দিতে ব্যস্ত বর্তমান প্রজন্মের জানা নেই। সে কারণ বা ইতিহাস জানার জন্য চলুন ১৯৭১ সালকেও পেছনে ফেলে দূর অতীতে ঘুরে আসি। বাংলাদেশ যে এক সময় ভারতের অংশ ছিল সে কথা ভাসা-ভাসাভাবে জানলেও বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানে না, বাংলাদেশকে কেন বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত থেকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। বেরিয়ে আসার কারণ শুধু রাজনৈতিক ছিল না, এর সঙ্গে ধর্ম ও অর্থনীতিও গভীরভাবে জড়িত ছিল। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তান হওয়ার আগে পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল ভারতের বঙ্গ নামক কলকাতাকেন্দ্রিক প্রদেশের অংশ। পরিচিতি ছিল পূর্ব বঙ্গ বা পূর্ব বাংলা নামে। পূর্ব বাংলা ছিল মুসলিম প্রধান। মূলত সে কারণে ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে ভারতের সঙ্গে এ অঞ্চলের দ্বন্দ্ব ছিল সব সময়। ব্রিটিশরা ভারত দখল করে নেয়ার পর এই দ্বন্দ্ব মিটে যাওয়ার পরিবর্তে ক্রমাগত বরং বাড়তে থাকে। মুসলিম বিরোধী চিন্তা ও উদ্দেশ্য থেকে ব্রিটিশদের দালালি করায় হিন্দুরা পুরস্কৃত হয়েছিল। দু-চারটি ছাড়া সব এলাকার জমিদারি পেয়েছিলেন হিন্দুরা। মুসলমান কৃষকদের ওপর হিন্দু জমিদাররা নির্মম শোষণ-নির্যাতন চালাতেন। মুসলমানরা এমনকি হিন্দু জমিদার বাড়ির আশপাশ দিয়ে জুতো পরে বা ছাতা মাথায় দিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন না। সব ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি চলে গিয়েছিল হিন্দুদের দখলে। শিক্ষাতেও হিন্দুরাই একচেটিয়াভাবে এগিয়ে ছিল। সব মিলিয়েই মুসলমানরা ছিলেন নির্যাতিত, উপেক্ষিত ও পশ্চাৎপদ অবস্থায়।
úরিস্থিতিতে পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে। সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ নামে পরিচিত সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রাম বিকশিত হতে থাকে। পূর্ব বঙ্গের মুসলমানরা এতে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেন। হিন্দুদের প্রাধান্য বহাল রেখে মুসলমানদের পক্ষে যেহেতু উন্নতি-অগ্রগতি অর্জন করা একেবারেই সম্ভব ছিল না, সেহেতু মুসলিম প্রধান পূর্ব বঙ্গ ও প্রতিবেশী রাজ্য আসামকে নিয়ে পৃথক একটি প্রদেশ গঠনের দাবিতে মুসলমানরা আন্দোলন গড়ে তোলেন। আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গ প্রদেশকে দ্বিখ-িত করে পূর্ব বঙ্গ ও আসামকে নিয়ে নতুন একটি প্রদেশ গঠন করে। ঢাকাকে এর রাজধানী করা হয়। এটাই ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিতি। এর ফলে ঢাকাসহ বর্তমান বাংলাদেশের দ্রুত উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু মুসলমানদের এই উন্নতি ও সম্ভাবনার বিরুদ্ধে হিন্দুরা পাল্টা তৎপরতা শুরু করে। কারণ, হিন্দুদের দৃষ্টিতে এটা ছিল তাদের বঙ্গমাতাকে দ্বিখ-িত করার পদক্ষেপ। কলকাতায় বসবাস করে পূর্ব বঙ্গের ওপর যারা শোষণ-নির্যাতন চালাতেন এবং এখানকার অর্থবিত্ত লুণ্ঠন করে নিয়ে গিয়ে সেখানে বসে যারা নাচ-গান ও আনন্দ-ফুর্তি করতেন, সেই হিন্দু জমিদারদের প্রত্যক্ষ সাহায্যে ও উস্কানিতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকা- দুর্বার হয়ে ওঠে। হিন্দুরা একে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন নাম দেয়। জমিদার নন্দন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ সময়ই পূর্ব বঙ্গকে পৃথক প্রদেশ করার প্রতিবাদে আমার সোনার বাংলা গানটি রচনা করেছিলেন, যেটা এখন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত।
আন্দোলন নামের এই সন্ত্রাসবাদী কর্মকা-ে ভীত হওয়ার অভিনয় করে মূলত ও সর্বতোভাবে মুসলিমবিরোধী ব্রিটিশ সরকারও হিন্দুদের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়, ঢাকাসহ পূর্ব বঙ্গ আবারও কলকাতার এবং হিন্দুদের অধীনস্থ হয়ে পড়ে। হিন্দুদের মধ্যে বঙ্গমাতার জন্য প্রীতির যে লেশমাত্র ছিল না এবং মুসলিম বিদ্বেষই যে বিরোধিতার প্রধান কারণ ছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেছে একটি বিশেষ ঘটনায়। সন্ত্রাসের অভিযোগে প্রায় দেড়শ বছরের রাজধানী কলকাতাকে পরিত্যাগ করে ব্রিটিশ সরকার এ সময় দিল্লী¬কে ভারতের রাজধানী বানিয়েছিল। কিন্তু হিন্দুরা কোনো প্রতিবাদই করেনি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বরং উল্টো ব্রিটেনের রাজাকে ভাগ্য বিধাতা এবং জয় হে, জয় হে বলে বিনয়ে বিগলিত হয়ে নতুন একটি গান লিখেছিলেন। সে গানটিই ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে মুসলমানদের হিন্দু ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। পর্যায়ক্রমে সেটাই মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি বা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব ছিল এর ভিত্তি। লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনও করেছিলেন এদেশেরই এক কৃতীসন্তান তিনি তৎকালীন বঙ্গ প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী, শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছিল মুসলমানদের সে দাবি ও আন্দোলনেরই সফল পরিণতি।
পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক শাসক-শোষক ও জেনারেলদের কারণে পাকিস্তান কেন টিকে থাকতে পারেনি এবং আমরা কিভাবে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সে ইতিহাস সবারই জানা। এর মূল কারণও শুধু রাজনৈতিক ছিল না। অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও শোষণের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছিল ভাষাভিত্তিক সংস্কৃতি। ভাষা আন্দোলনের কারণ ছিল উর্দুর প্রাধান্য প্রত্যাখ্যান করে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং সে মর্যাদা ও অবস্থানকে সমুন্নত রাখা। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সার্বভৌম বাংলাদেশে এখন ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দিতে জিতেগা, জিতেগা বাংলাদেশ জিতেগা সেøাগানও শুনতে হচ্ছে!


Ads