শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বাংলাদেশ ও ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তার প্রশ্ন


খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের এক জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিভিন্ন সময়ে মুসলিম হত্যাকা-ের শিরোমণি নরেন্দ্রনাথ মোদি। এর ক’দিন আগেই চরম হিন্দুত্ববাদী প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল। মঞ্চে একের পর এক বিভিন্ন ধর্ম ও পেশার প্রতিনিধিরা নিজেদের প্রতীক বা চিহ্ন হিসেবে নরেন্দ্রনাথ মোদিকে পাগড়ি ও গেরুয়া রঙের উত্তরীয় ধরনের কিছু না কিছু পরিয়ে দিচ্ছিলেন। হাতে ফুলও তুলে দিচ্ছিলেন অনেকে। মিস্টার মোদিও হাসিমুখে সেগুলো পরছিলেন, নিচ্ছিলেন এবং মাথা নত করে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটল একজন মুসলমান নেতার বেলায়। তিনি গিয়েছিলেন একটি টুপি পরিয়ে দেয়ার জন্য। মিস্টার মোদি সোজা অস্বীকার করে বসলেন। মাথায় পরা দূরে থাকুক এমনকি তিনি টুপিটি ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখলেন না। আগেই হাত নেড়ে না করে দিলেন। এসবই ঘটছিল এক প্রকাশ্য জনসমাবেশে। মুসলমানদের ব্যাপারে এভাবেই ঘটে আসছে ভারতে। সে একই নরেন্দ্রনাথ মোদি সম্প্রতি আসামের শিলচরে এক সমাবেশে ঘোষণা করেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ থেকে ‘শরণার্থী’ হিসেবে ভারতে চলে যাওয়া হিন্দুদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা তো করবেনই, চাকরি-ব্যবসা দেয়ার পাশাপাশি তাদের ভোটার হওয়ারও সুযোগ দেবেন। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। বলেছেন, হিন্দুদের প্রতি ভারত ও বিজেপির বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। লক্ষণীয় যে, মিস্টার মোদি কিন্তু মুসলমানদের ব্যাপারে তেমন কিছুই বলেননি। শুধু তা-ই নয়, বিজেপির এই প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী আরো ঘোষণা করেছেন, তার দল ক্ষমতায় এলে আগামী ৬০ মাসের মধ্যে ভারত ‘রামরাজ্য’ হবে। অর্থাৎ বিজেপি ভারতকে হিন্দুদের ধর্মীয় রাষ্ট্রে পরিণত করবে।
বর্তমান পর্যায়ে কথা উঠেছে ভারতের আসন্ন নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে। আগামী মে’তে দেশটিতে লোকসভার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। লোকসভা ভারতের পার্লামেন্ট বলে নির্বাচনের মধ্যদিয়ে একই সঙ্গে ক্ষমতায়ও পরিবর্তন ঘটতে পারে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন ইউপিএ জোটের প্রধান দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এরই মধ্যে দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সামনে এনেছে। অন্যদিকে চরম হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি এনেছে নরেন্দনাথ মোদিকে। লোকসভার এই নির্বাচন নিয়ে ভারতে শুধু নয়, নিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশেও এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা অবশ্য এখনই সে আলোচনায় অংশ নিতে চাই না। এখানে আমরা বরং কিছু তথ্য ও ঘটনার উল্লেখের মাধ্যমে মুসলমানদের প্রশ্নে ভারতীয়দের রাজনীতিকদের মনোভাব সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেয়া, যাতে অন্তত একটি বিষয় পরিষ্কার হবে। সে বিষয়টি হলো, মুসলমানদের প্রতি ভারতীয় হিন্দুদের মনোভাব সেই বৃটিশ আমলের মতোই রয়েছে। অর্থাৎ পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ‘টু নেশন থিওরি’তে কোনো ভুল বা অতিরঞ্জন ছিল না। মিস্টার জিন্নাহ আসলেও একশ ভাগ সত্যই বলেছিলেন।
প্রথমে ‘ওপার বাংলা’র কথাই বলা যাক। শুনলে আমাদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সুশীলজনরা রা-রা করে উঠতে পারেন, কিন্তু ভারত এতটাই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাষ্ট্র যে, কলকাতার মুসলিম প্রধান পার্ক সার্কাস এলাকায় মুসলমানরা এখনো জুমার নামাজ পড়তে যান টুপি পকেটে নিয়ে। অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে যেন কোনো মহাঅপরাধ করতে যাচ্ছেন! ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কমিউনিস্টদের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই পশ্চিমবঙ্গে তথা এদেশের অনেকের অতি প্রিয় ‘ওপার বাংলা’য় মাইকে আযান দেয়া আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নয়াদিল্লী¬র তথা ভারতের রাজধানীর দিকে লক্ষ্য করুন। ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর মতো বিদেশিনী খ্রিস্টান রমণীকেও নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার আগে ব্রাহ্মণ পুরোহিত ডেকে, হাঁড়িতে আগুন জ্বালিয়ে এবং ঢাকঢোল বাজিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। মন্দিরে গিয়ে গলায় আঁচল পেঁচিয়ে হিন্দুদের দেবীকে পেন্নাম করতে হয়। অথচ সোনিয়া গান্ধী হিন্দু নন। এসবই ভারতের রাজনীতিতে অবশ্য পালনীয়Ñ সোনিয়া গান্ধী থেকে নরেন্দ্রনাথ মোদি পর্যন্ত রাজনীতিকদের প্রত্যেককে হিন্দু ধর্ম এবং ধর্মের বিধিবিধান মানতে হয়। না হলে ভোট পাবেন না তারা। কথাগুলো জানানোর উদ্দেশ্য এ কথা স্পষ্ট করা যে, যতই ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ সেø¬¬াগান দেয়া হোক না কেন, ভারত এখনো সর্বতোভাবেই হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র রয়ে গেছে। দেশটিতে মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের বিপদও বাড়ছে পাল্ল¬¬া দিয়ে।
উদাহরণ দেয়ার জন্য প্রসঙ্গক্রমে ২০০২ সালের সংঘটিত গুজরাট হত্যাকা-ের উল্লেখ করা দরকার। গোধরায় একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের মিথ্যা অভিযোগে দিনের পর দিন ধরে সেবার শত শত মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির নেতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী মুসলমানদের স্বার্থে কোনো পদক্ষেপ নেননি। শুধু তা-ই নয়, হত্যাকা- নিয়ে লোকসভায় বিতর্ক শুরু হওয়ার প্রাক্কালে গোয়ায় অনুষ্ঠিত বিজেপির সম্মেলনে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী গুজরাট হত্যাকা-ের জন্য উল্টো মুসলমানদেরই দায়ী করেছিলেন। তার কথাগুলোও ছিল উস্কানিমূলক। তিনি বলেছিলেন, ‘যেখানেই মুসলমান সেখানেই সন্ত্রাস। তাদের ধর্ম সন্ত্রাস শেখায় এবং পৃথিবীর কোথাও তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে না।’ বাজপেয়ী গুজরাট পরিস্থিতির জন্য তার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের এবং গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্রনাথ মোদির কোনো দায়-দায়িত্ব নেই বলেও ঘোষণা করেছিলেন। এককালের সমাজতন্ত্রী ও বাজপেয়ীর প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজের বক্তব্যও স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, ‘রেপ বা ধর্ষণ এমন কোনো বিষয় নয়। এটা অতীতেও বহুবার ঘটেছে। গর্ভবতী মায়ের পেট কেটে শিশু হত্যার যে কথা বলা হচ্ছে, তা কি এক গুজরাটেই ঘটেছে? ১৯৪৭ সাল থেকে এমন ঘটনা কতবার ঘটেছে তার হিসাব কষে দেখুন।’ প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজের বক্তব্য লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, দুজনই প্রকারান্তরে মুসলিম হত্যাকা-ে নিজেদের সমর্থন ও অংশগ্রহণের কথা স্বীকার করেছিলেন। তাদের কথায় ঘাতকদের প্রতিও সমর্থন ও উস্কানি ছিল যার অর্থ হলো, মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে হত্যার অভিযান চালানো যেতে পারে! এতে দোষের কিছু নেই এবং এটাই ভারতীয় মুসলমানদের প্রাপ্য!
‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ ধ্বজাধারী ন্যাশনাল কংগ্রেস ও বামপন্থীসহ বিজেপির বিরোধিতাকারী দলগুলোও কখনো মুসলমানদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেনি। গুজরাট হত্যাকা-ের দিনগুলোতে দেখা গেছে, রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদে যাওয়ার কিংবা মুসলমানদের বাঁচানোর লক্ষ্যে ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে সোনিয়া গান্ধী শুধু লোকসভার অধিবেশন আহ্বান জানানোর দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন। এর ফলেও ঘাতকরা যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। এদেশের কারো কারো ‘কাকাবাবু’ জ্যোতি বসু তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাকেও শুধু কলকাতা আর দিল্লী¬তেই দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেছে। এভাবেই এক মাসের বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছিলেন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারতের রাজনৈতিক নেতারা। লোকসভার অধিবেশনে দেয়া ভাষণেও সোনিয়া গান্ধী গুজরাট হত্যাকা-ের তদন্ত ও বিচারের এবং মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি তেমন জোরালোভাবে জানাননি। তিনি প্রধানত মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দনাথ মোদিকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছিলেনÑ যেন ওই একজন মাত্র ব্যক্তিকে সরানো হলেই মুসলমানদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে! যেন হত্যার অভিযানে বাজপেয়ীসহ কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো ভূমিকা বা অংশগ্রহণই ছিল না! প্রাসঙ্গিক অন্য একটি তথ্যও কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বিরোধী দলের সমালোচনার মুখে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী তখন গুজরাটের রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ গুজরাটে তখন নির্বাচন হলে মুসলমান নিধনে নেতৃত্ব দেয়ার ‘পুরস্কার’ হিসেবে বিজেপি জোটই জয়ী হতো এবং নরেন্দ্রনাথ মোদিই আবারও মুখ্যমন্ত্রী হতেন। ভারত এতটাই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশ! এর মধ্যদিয়েও প্রমাণিত হয়েছিল, ভারতে এখনো ‘টু নেশন থিওরি’ই একশ ভাগ সত্য। উল্লেখ্য, বিজেপি এখনো গুজরাটের ক্ষমতায় রয়েছে এবং মোদিই আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।
এখানে কংগ্রসের ভূমিকাও লক্ষ্য করা দরকার। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, বিরোধিতা ও প্রতিবাদের নামে কংগ্রেস তখন যেটুকু করেছিল তার সবই করেছিল নিজের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ পরিচিতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য। কংগ্রেসের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশের অন্যান্য রাজ্যে ‘ভোট ব্যাংক’ মুসলমানদের সন্তুষ্ট করা। অর্থাৎ কংগ্রেসের উদ্দেশ্যের মধ্যে মুসলমানদের জানমাল হেফাজতের কোনো উপাদান ছিল না। সবই ছিল নিতান্ত রাজনৈতিক কৌশল। বলা দরকার, কংগ্রেসই সবচেয়ে বেশি সময় ভারতের ক্ষমতায় থেকেছে এবং কংগ্রেসের সময়ও মুসলমানরা একইভাবে হত্যা ও দাঙ্গার শিকার হয়েছেন। ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ যখন ভেঙে ফেলা হয়, তখনও কংগ্রেসই ক্ষমতায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসীমা রাও। কিন্তু কংগ্রেস সরকার বাবরী মসজিদ ভাঙা যেমন প্রতিহত করেনি, তেমনি ব্যবস্থা নেয়নি মুসলমানদের হত্যার অভিযান থামানোর জন্যও। উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং বলেছেন এবং পরবর্তীকালে এ কথা প্রমাণিতও হয়েছে যে, অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং লালকৃষ্ণ আদভানী বাবরী মসজিদ ভাঙার কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু নরসীমা রাওয়ের কংগ্রেস সরকার এই দুজনসহ কারো বিরুদ্ধেই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সত্যিকার ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কোনো রাষ্ট্রে এমনটা কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাটসহ সারা ভারতে মুসলমানদের হত্যাকা- সম্ভব হওয়ার কারণ হচ্ছে, সংবিধানে লেখা থাকলেও এবং প্রকাশ্যে প্রচারণা চালানো হলেও ভারত এখনো উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি, মনোভাব ও কৌশল নিয়েই এগিয়ে চলেছে। বিশেষ করে মুসলমানদের হত্যা করা, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালানো এবং মুসলমানদের পদানত রাখার ব্যাপারে গোপনে গোপনে সব দলের মধ্যেই রয়েছে বিচিত্র সমঝোতা। পার্থক্য হলো, বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদী পরিচিতিকে প্রকাশ্যে আনে, কংগ্রেস সেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ সাইনবোর্ডকে সামনে রাখে।
এখানে কমিউনিস্ট ও বাম নামধারীদের প্রসঙ্গেও বলা দরকার। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশ এবং ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানবিরোধী ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে অন্য ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও সে সময় পাল্ল¬¬¬া দিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আগের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর আমলে এই বিরোধিতায় তেমন কমতি ছিল কিনা? উত্তর হলো, সর্বতোভাবে ভারতের স্বার্থ উদ্ধারে নিয়োজিত থাকলেও জ্যোতি বসু এদেশে অনেকেরই ‘কাকাবাবু’ হওয়ার চাতুরিপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। ‘কমরেড’ জ্যোতি বসু যেখানে অভিনয় করার কৌশল নিয়েছিলেন, ‘কমরেড’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সেখানে কূটনৈতিক শালীনতা ও শিষ্টাচার পর্যন্ত মানেননি। এই নেতার কথাবার্তা শুনে বরং মনে হয়েছে, প্রকাশ্য পরিচিতিতে একজন ‘কমিউনিস্ট’ হলেও তার আবির্ভাব ঘটেছিল উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি, আরএসএস ও সংঘ পরিবার থেকে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লেগে থাকার জন্যই যেন তাকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো হয়েছিল! উদাহরণ দেয়ার জন্য এখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কিছু মন্তব্যের উল্লেখ করা যায়। ২০০৪ সালের ১৭ আগস্টের বোমাবাজি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যখন ভীতসন্ত্রস্ত ও চরমভাবে ক্ষুব্ধ, পশ্চিমবঙ্গের এই ‘কমরেড’ মুখ্যমন্ত্রী তখন বাংলাদেশে পাকিস্তানের ‘সেকেন্ড ফ্রন্ট’ আবিষ্কার করে বসেছিলেন। বোমাবাজির ঠিক পরদিন উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও চরম বাংলাদেশবিরোধী হিসেবে পরিচিত কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ এখন একটা থ্রেট’। এ শুধু কথার কথা ছিল না। কারণ অত্যন্ত ক্ষোভ ও বিরক্তির সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ যে একটা ‘থ্রেট’ এবং পাকিস্তান যে বাংলাদেশে তার ‘সেকেন্ড ফ্রন্ট’ খুলেছে এই কথাটি তিনি দিল্লী¬¬কে তথা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘ততবার’ বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ‘যতবার’ ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ‘আফসোসের’ বিষয়, কেউই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথাকে তেমন ‘পাত্তা’ দেননি। তা সত্ত্বেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তার নিজের মনের মতো করে ব্যাখ্যা হাজির করেছিলেন। আনন্দবাজারকে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে ‘কমরেড’ মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলাদেশে ‘মৌলবাদীরা’ এমনভাবেই মাথাচাড়া দিয়েছে, যার ফলে ‘ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজম’ নাকি একটি ‘জটিল জায়গায়’ চলে গেছে! তিনি আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে বলেছিলেন, কথিত ‘মৌলবাদীদের’ প্রতিফলন নাকি সরকারে এবং সেনাবাহিনীতেও হচ্ছে! এজন্যই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বাংলাদেশকে একটা ‘থ্রেট’ মনে করেছিলেন। বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে তিনি যে পাকিস্তানের পাশাপাশি সার্বিকভাবে মুসলমানদেরই টেনে এনেছিলেন সে কথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। অর্থাৎ ভারতের তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেরও কারো কাছে মুসলমানদের আশা করার বা পাওয়ার কিছু নেই তা তিনি মুখ্যমন্ত্রী বা রাজুৈনতিক নেতা, কূটনীতিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী বা নোবেল বিজয়ী যা-ই হোন না কেন। এ ব্যাপারে সর্বশেষ খেল তো বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও কম দেখাননি যাকে এদেশের বিশিষ্টজনরা নিজেদের ‘দিদিমণি’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন!
উদ্বেগের কারণ হলো, ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মুসলিমবিরোধী হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠনেরও বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে। দেশটিতে হিন্দু ধর্মভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন শুধু গড়েই ওঠেনি, সেগুলো দশকের পর দশক ধরে তৎপরতাও চালিয়ে আসছে। এসব সংগঠনের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। তাদের লক্ষ্য ভারতকে সম্পূর্ণরূপে হিন্দু রাষ্ট্র বানানো। তারা ভারতের সেনাবাহিনীতে হিন্দুত্ববাদের প্রচারণা চালাচ্ছে। পেছনে রয়েছে শিব সেনা, বজরঙ্গ দল, আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বা ভিএসপির মতো কয়েকটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল। দলগুলো সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অফিসার ও সৈনিকদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে ভেড়াচ্ছে। পুলিশ অনেক উপলক্ষেই প্রমাণ পেয়েছে, ভারতের সেনাবাহিনী ও হিন্দু সন্ত্রাসীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা মুসলমানদের হত্যাসহ নানা রকমের সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায় না। কারণ নির্দেশ আসে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কাছ থেকে। সব প্রধানমন্ত্রীর আমলেই ‘র’ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ ভারতের রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, ‘র’ এবং সন্ত্রাসীদের সমন্বিত নেটওয়ার্ক একযোগে কাজ করছে। বাবরী মসজিদ ধ্বংস ও মুসলমান হত্যা, গোধরায় ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, গুজরাট গণহত্যা, মালেগাঁওয়ের বোমা বিস্ফোরণ, সমঝোতা এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ এবং সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর সব অপরাধেই রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, ‘র’ এবং সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিটি হত্যাকা-ের সময় তো বটেই, আগে-পরে সব উপলক্ষেও প্রমাণিত হয়েছে, ভারতীয় মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো দল ভারতে নেই। অদূর ভবিষ্যতেও তেমন কোনো দলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাষ্ট্র হিসেবে যত প্রচারণাই চালানো হোক না কেন, ভারত এখনো হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রই রয়ে গেছে। বিশ্লে¬ষণের এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, ভারতের সব রাজনৈতিক নেতাই ভারতীয় হিন্দু হিসেবে তাদের জাতীয় দায়িত্ব পালন করে চলেছেন!
বর্তমান পর্যায়ে এত কথা বলার একটি কারণ হলো, অমন এক ভয়ঙ্কর দেশ ভারতের চামচামো করার মতো লোকজনের সংখ্যা এদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তো বটেই, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্য সব ক্ষেত্রেও তারা দাপটের সঙ্গে তৎপরতা চালাচ্ছে। এসব লোকজনই কথায় কথায় বাংলাদেশকে ‘এপার বাংলা’ বানিয়ে ছাড়ছে যেন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ ‘ওপার বাংলা’ পশ্চিমবঙ্গের মতো ভারতের একটি রাজ্য মাত্র! বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, সবকিছুর পেছনে রয়েছে একই সুচিন্তিত পরিকল্পনা। বাংলাদেশের জনগণকে তারা ধীরে ধীরে ভারত নামের ট্যাবলেট গেলানোর কৌশল নিয়েছেন। ভারতীয়রা এমন কিছু করতেই পারেন, কিন্তু উদ্বেগ বেড়ে চলেছে আসলে বাংলাদেশের ওই গোষ্ঠীর কর্মকা-ে। বিষয়টি নিয়ে এখনই গভীরভাবে চিন্তা না করা হলে বিপদ শুধু মুসলমানদের বাড়বে না, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বও বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।
আহমদ আশিকুল হামিদ 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

হোঁচট খাওয়া ও সরকারের দায়িত্ববোধ


একটা প্রবাদ আছে উস্তাদের মাইর শেষ রাতে। প্রবাদটি যে যেখানে উপযুক্ত, সেখানে ব্যবহার করেন। আজকের লেখায় এটি ব্যবহার করার কারণ হলো, রাজধানী ঢাকার উন্নয়ন ও সরকারের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গ। এমন সময় লেখাটি লিখছি যখন একতরফা সংসদ নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। অথচ সরকার সাংবিধানিকভাবে পাঁচ বছর অতিক্রম করে এসেছে এর আগে।
মহাজোট মতায় আসার আগে নির্বাচনী এজেন্ডায় উন্নয়নের যে আশ্বাস ছিল, তার বেশি প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি সরকারের তিন বছর পার হওয়ার আগ পর্যন্ত। সেখানেই আমরা মূলত প্রথমবার হোঁচট খেয়েছি।
যখন ঢাকা শহরে বের হই এই যান্ত্রিক জীবনে একটুখানি মুক্ত বাতাস গ্রহণ করার জন্য, তখন যে যে-দলই করুক, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেেিত মুখে না এলেও অন্তর থেকে একটা তিরস্কার চলে আসে। কারণ কোনো খানাখন্দে যখন আপনার বা পরিবারের কেউ পড়ে হাত-পা ভেঙে, এমনকি পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন আর দলের জন্য টান থাকে না; প্রথমে সরকারকেই গালিটা খেতে হয়। এখন সরকারপ্রধান যদি নান্দাইলের ইউনুসও হতেন ,তিনিও গালিটা খেতেন।
ঢাকার বাইরের তথা সারা দেশের উন্নয়নের কথা না-ই বা বললাম। খুবই গুরুত্বপূর্ণ শহর ঢাকায় যেখানে  কোটি মানুষের বসবাস, সেখানে স্যুয়ারেজ লাইনের মুখের ঢাকনা না থাকা আর আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রের একটি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আমরা শঙ্কিত; সে রূপ শঙ্কিত সরকারের দায়িত্ববোধ  নিয়েও। আমি জানি না, এটি কেমন কৌশল যে, সব কাজ সরকারের শেষ সময়ে শুরু এবং দ্রুত শেষ করে তা উদ্বোধন করতে হবে।  মনে করা হয় দেশের মানুষ আত্মভোলা, তাই নির্বাচনের সময় উন্নয়নের চমক দেখিয়ে দলগুলো ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চায়। কিন্তু যে রাস্তা দিয়ে ভোট দিতে যাবে, সেই রাস্তায় তো হাঁটার উপায় নেই। বড় বড় গর্ত আর সাবধানমার্কা মারা সাইনবোর্ড দেখে দেখে সাবধানে যেতে হয়। তাই ভোটও দিতে হবে অনেক সাবধানে; প্রার্থী ভালোভাবে বাছাই করে।
সরকারের উচিত, দায়িত্ব নিয়েই আগে দেশের উন্নয়নে ওয়াদামাফিক কাজ শুরু করা। পকেট ভারীর চিন্তা না করাই কর্তব্য, তা যে সরকারই আসুক বা থাকুক। আমরা আমজনতা চাই দেশের টেকসই উন্নয়ন। আমাদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের কথা  হয়তো সরকারের ভাবতে হবে না। আসুন, সবাই মিলে একটা দেশ উন্নয়ন মঞ্চগড়ে তুলি, যেখানে প্রথম সারিতে থাকবেন এ দেশের  খেটেখাওয়া মানুষ। 


 

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

১৩ উপজেলায় অস্বাভাবিক ভোট

দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে অন্তত ১৩টি উপজেলায় ভোট বর্জন ও পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এসব উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনেন। এসব স্থানে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে এসব উপজেলায় বিজয়ী প্রার্থীরা যে ভোট পেয়েছেন তার ধারে-কাছেও যেতে পারেননি পরাজিত প্রার্থীরা। এসব উপজেলায় সরকার সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে অস্বাভাবিক ভোট পড়েছে। ১৩টি উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট ১১ লাখ ৫২ হাজার ৮৭১টি। ওই ১৩টির ১২টিতেই নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। একটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির বিদ্রোহী। পরাজিত প্রার্থীদের মোট ভোট মাত্র ৩৫৯০৫১। বরিশাল সদর উপজেলায় সহিংসতার জেরে স্থগিত করা হয় ১১টি কেন্দ্রের নির্বাচন। বাকি কেন্দ্রের ফলাফলে বেসরকারিভাবে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইদুর রহমান রিন্টুর ভোটসংখ্যা ৭১৮৩৯। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থক এনায়েত হোসেন বাচ্চুর বাক্সে ভোট পড়ে মাত্র ৮৫২৪টি। ভোলার বোরহানউদ্দিনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন দুপুরে। দিনশেষে দেখা যায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাব্বত জান চৌধুরী পেয়েছেন ৯০৯৯৩ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ার হোসেনের বাক্সে ভোট পড়েছে মাত্র ৯০৫৯টি। ওই জেলার চরফ্যাশনেও একই চিত্র দেখা গেছে। বিজয়ী আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী পেয়েছেন ১৪৭২৫১ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১২৯৯৫ ভোট। ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে লক্ষাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। কিন্তু চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী নাজিম মাস্টার পেয়েছেন মাত্র ৭৬২৪০ ভোট। বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহীন আহমেদ পেয়েছেন ১৪৬৭৫২ ভোট। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুজ্জামান পেয়েছেন ১৩০১১১ ভোট। বিএনপির মোশাররফ হোসেন পেয়েছেন ৩৯৬৭৪ ভোট। তিনি অভিযোগ করেন, আগের দিন বিকাল থেকে র‌্যাব-পুলিশ আমার কর্মী এবং নেতাদের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে হুমকি দিয়েছে। বলেছে, ভোটকেন্দ্রে গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। ভোর পর্যন্ত এমন হুমকি চলে। সকাল আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ভোট চলে শান্তিপূর্ণভাবে। তারপর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুজ্জামান আনিসের ক্যাডাররা সব কেন্দ্র দখল করে নেয়। ভোটাররাও ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। প্রতিবাদে শনিবার মুন্সীগঞ্জ সদরে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। মাদারীপুরের শিবচরে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি প্রার্থী খলিলুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ১৫০৩৪ ভোট। বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম পেয়েছেন ১৩৪৮৮৬ ভোট। নোয়াখালীর চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাটে নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। চাটখিলে আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী ৪৯০১৭ ভোট পেয়েছেন। বিএনপির আনোয়ার হোসেন পেয়েছেন ৪০৯১১ ভোট। কবিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের কামরুন নাহার শিউলি ৬৩১৬৮ ভোট পেয়েছেন। বিএনপির মো. ইলিয়াস পেয়েছেন মাত্র ৪৪৪১ ভোট। কোম্পানীগঞ্জে মিজানুর রহমান বাদল ৭৫১০৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। বিরোধী প্রার্থী হুমায়ন কবির পলাশ পান ১৪৪২৩। কুষ্টিয়ার মিরপুরে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হক নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন বিকাল সাড়ে ৩টায়। পরে জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল গফুরও তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এ উপজেলায় বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরুল আরেফিন পেয়েছেন ৮৮৯৪৪ ভোট। বিএনপির প্রার্থী পান ৪০৭২১ ভোট। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ৩২৬৭৮ ভোট। তারা আগামী শনিবার কুষ্টিয়ার মিরপুরে অর্ধবেলা হরতালের ডাক দিয়েছেন। দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ভোট চললেও বিকালের দিকে ভোটে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে দুই প্রার্থী ভোট বয়কট করেন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহেদ সরকার ভোট পেয়েছেন ৫৭২৩২টি। বিএনপির দুই প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছেন ৬৪১৭৯। প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির বিদ্রোহী এম এ হান্নান পেয়েছেন ৩২৭৪০ ভোট। কক্সবাজারের চকোরিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন মাত্র কয়েক হাজার ভোটে। জাফর আলম পেয়েছেন ৬৫১৯৩ ভোট। অন্যদিকে দখলের অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়া বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন ৫৬০৭১ ভোট। ফেনীর পরশুরামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন ৩২৩৮০ ভোট। বিএনপির পরাজিত প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৮২১৮ ভোট। এ ছাড়া কুমিল্লার লাকসাম, নোয়াখালী সদর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে সহিংসতা ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগে।

সূত্র- মানাব জমিন 

বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচারই সরকারের কাজে আসছে না


জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো অপপ্রচারই সরকারের কাজে আসছে না। উপরন্তু চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ে জনগণ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বর্জন করেছে। সাধারণ মানুষ তাদের আশা-ভরসার, সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীদেরই বেছে নিয়েছে। খুশি মনে তারা জামায়াতকে ভোট দিয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেশের সাধারণ জনগণকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখা গেছে।
হালের বলদ ছেড়ে কৃষক গেছে ভোট দিতে। জেলে জাল ফেলা বন্ধ করে ভোট দিতে গেছে। রিকশাওয়ালা ভাইয়েরা তাদের রিকশায় করে বৃদ্ধদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। এ যেন এক নীরব যুদ্ধ। অসহায় জিম্মি মানুষের ব্যালট বিপ্লব। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের প্রতিরোধ। যদিও বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে সরকারদলীয় ক্যাডারদের দ্বারা ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট গ্রহণের খবর পাওয়া গেছে। কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, ঠেলাগাড়িওয়ালা, তরুণ, যুবক-যুবতী, নবীন ভোটার একজোটে আওয়ামী অপশক্তির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ভোট দিয়ে তারা সৎ, যোগ্য, আদর্শবান ও চরিত্রবান নেতাকেই নির্বাচিত করেছে। তারা কোনো সন্ত্রাসীর গডফাদারকে ভোট দিতে চায় না। ড্রিল মেশিন দিয়ে মানুষ হত্যাকারীরা চেয়ারম্যান হোক তারা তা চায় না। তাই তো তারা জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের ১৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়ী হয়েছে বলে জানা গেছে। আমি এখানে পাঠকদের সুবিধার্থে এক নজরে উপজেলা নির্বাচনের ফল উল্লেখ করছি, বিজয়ী চেয়ারম্যানÑ বিএনপি ৪৩টি, আওয়ামী লীগ ৩৪টি, জামায়াত ১৩টি, জাতীয় পার্টি ১টি ও অন্যান্য ১টি। বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যানÑ বিএনপি ৩২টি, আওয়ামী লীগ ২৪টি, জামায়াত ২৩টি, জাতীয় পার্টি ৩টি ও অন্যান্য ১০টি। বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা)Ñ বিএনপি ৩৪টি, আওয়ামী লীগ ৩৪টি, জামায়াত ১০টি, জাতীয় পার্টি ১টি এবং অন্যান্য ৩টি। এ তো গেল শুধুমাত্র চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের খবর। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনের ফলাফলের কথা এখানে নাইবা বললাম। এর ফলে হয়েছে কি? তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলে আমরা দেখতে পাইÑ আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা অনেক ডাকসাইটে নেতার গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। অনেকে আবার লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে মুখ খুলতেও শুরু করেছে। মিডিয়ার সামনে বক্তব্য প্রদান করেছেন। সরকারদলীয় জোটের অন্যতম শরীক জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একটা ঐতিহাসিক চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন, ‘জনগণ কেন যে জামায়াতকে ভোট দেয়, তা জানি না।’ একটা অনলাইন পত্রিকায় মন্তব্যটি পড়ার পর প্রথমে চুপি চুপি আমি নিজে একটু হেসে নিলাম। হাসার পর আমি কেন জানি কাশলাম। এরপর আমি আমার পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মিজান ভাইয়ের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম। তিনিও খবরটি শোনার পর মুচকি হাসলেন। তার মতো অনেকেই হয়তো মুচকি হেসেছেন। তাদের কেউ শব্দ করে কেউ শব্দ না করে আবার কেউবা অট্টহাসি দিয়েছেন। কারণ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো কর্মকা-েই দেশের সাধারণ মানুষ খুশি নয়। খুশি না হয়ে জনগণ রাস্তায় যখনি প্রতিবাদ করতে বের হয়েছে, মিছিল, মিটিং করার চেষ্টা করেছে, তখনি সরকারের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে তাদের প্রতিবাদের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তাদের ওপর নির্বিচারে গুলীবর্ষণ করা হয়েছে। টিয়ারশেলের আঘাতে অসংখ্য ভাই হাত, পা হারিযে চিরতরে পঙ্গুত্বের ভাগ্যবরণ করেছে। বোন হারিয়েছে তার ভাইকে। মা হারিয়েছে তার সন্তানকে। মা-বোনের আত্মচিৎকারে বাংলার আকাশ-বাতাস আজ ভারি হয়ে উঠেছে।
শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যুবকের অর্থ লোপাট, জনতা ব্যাংক দুর্নীতি, ডেসটিনি, ইউনিপে টু, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, সাগর-রুনি হত্যা, সাধারণ মানুষকে বিনা বিচারে গুলী করে হত্যা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অবর্ণনীয় বর্বর নির্যাতন, রাতের আঁধারে গ্রেফতার, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এসব কারণে দেশের সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগে। তবুও আওয়ামী লীগ জনমতের তোয়াক্কা না করে তারা নিজেদের মতো করে সরকার চালাতে শুরু করেছে। গায়ের জোরে ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন করে। এতে ১৫৪ জন প্রতিনিধি বিনা ভোটে পাস করেছে। ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ প্রতিনিধি ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়, সে দেশে কেমন গণতন্ত্রের চর্চা হয় তা বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর কাছে আজ দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট।
এসব কারণে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের ভেতর এক ধরনের ভীতি, অবিশ্বাস, ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে এসব ক্ষোভেরই সামান্য একটা চিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মাত্র। বিএনপির কথা বাদই দিলাম। সরকার অনুমতি দিলে শুধুমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সমাবেশে ঢাকা শহরে এক কোটি মানুষ জড়ো হওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ৯৭টি উপজেলা নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটারদের অনেকেরই অভিব্যক্তি ছিল সরকারের বিরুদ্ধে। অনেকের চেহারায় আওয়ামী জালিম সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা, বিদ্বেষ আর ধিক্কারের চিহ্ন ভাসতে দেখা গেছে।
এবারের উপজেলা নির্বাচন একটা বিস্ময়কর কাহিনীর জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যা ইতিহাসের পাতায় ইতোমধ্যে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। এত অপপ্রচার, এত নির্যাতন, এত হামলা, এত মামলা, শীর্ষ নেতাদের জেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো, হুমকি-ধমকি কোনো কিছুই জামায়াতের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারছে না। এটা একটা ভাবনার বিষয় বটে। সরকারের কোনো প্রচারই জনগণের ভালোবাসা থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের পৃথক করতে পারছে না। জামায়াতে ইসলামী তাদের আচার-আচরণ, ব্যক্তিগত আমল-আখলাক, নীতি-নৈতিকতার ফলে দেশের সাধারণ মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। রিকশাওয়ালা ভাই থেকে শুরু করে সরকারের সচিব পর্যায় পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী তাদের দাওয়াতি মিশন নিয়ে ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। তবে জামায়াতের একটা অন্যতম দুর্বলতা হলো তারা সমালোচনাকে সহ্য করতে পারে না। আমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে যতটুকু গবেষণা করেছি, তাতে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতের কিছু মিল খুঁজে পেয়েছি। এখানে একটি মিলের কথা বলা যায়, তা হলো জামায়াতে ইসলামীর নেতারা (দায়িত্বশীলরা) সমালোচনাকে সহ্য করতে পারেন না। আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগও সমালোচনাকে হজম করতে পারে না। এ দুটি প্রবীণ দলের এ এক বিশেষ দুর্বলতা।
এবারে উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতের ১৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন বলে যে খবর প্রচার হয়েছে, তাতে অনেক জামায়াতবিরোধী লোকের কপাল কুঁচকে গেছে। আসলেই বর্তমান সময়ের জন্য এটা একটা বিস্ময়কর ঘটনাই বটে। সরকারের গালে এক কঠিন চপেটাঘাত। কারণ যুদ্ধাপরাধের বিচার আর সহিংসতাকে ঘিরে দলটিকে সরকারের পক্ষ থেকে পুরোমাত্রায় কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ নেতারা প্রায় সবাই পলাতক। পলাতক থেকেও তারা জয়ী হয়েছেন, যে জয় রাজনীতির মাঠে তাদের ফেরার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হতে পারে। আর তৃণমূলের রাজনীতিতে জামায়াত যে ক্রমেই প্রবেশ করছে এ ফল তারই আগাম বার্তা। অন্যদিকে এ নির্বাচন মৃত্যু বার্তা নিয়ে এসেছে জাতীয় পার্টির জন্য। সংসদে কথিত প্রধান বিরোধী দল উপজেলা নির্বাচনে মাত্র ১টি উপজেলায় জয়ী হয়েছে! অথচ যেসব উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে, এসব এলাকায় এক সময় জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তার কমতি ছিল না। জাতীয় পার্টির এই ভরাডুবির কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বোদ্ধামহল আওয়ামী লীগের সাথে জোট করাকেই দায়ী করেছেন। অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনে প্রভাবশালী দল হিসেবে আবির্ভূত ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন উপজেলা নির্বাচনে কোথাও জয়ী হতে পারেনি। এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তোলে। তারা যতই মেহনতি মানুষের কথা বলুক, হকারদের অধিকারের কথা বলুক, কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্যের কথা বলুকÑ এগুলো বাংলাদেশের সহজ-সরল মানুষ মোটেই বিশ্বাস করে না। কারণ এ বাম দলগুলো এমন একটা আদর্শ আর রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়Ñ যা বাংলাদেশের মানুষ, ভৌগোলিক পরিবেশ আর প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। তাদের আদর্শ ধর্মবিরোধী, তাদের হাতিয়ার হলো মিথ্যার বেসাতী আর বিদেশী প্রভুদের তাঁবেদারি করা।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি সম্পর্কে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় ভুগছে জনগণ। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা নিয়ে হানাহানি করছে। এছাড়া সরকার বিরোধী দলকে নিয়ে নির্বাচন করছে না। অন্যদিকে বিএনপি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে অসহায় জনগণ। বিরোধী দলকে কিছু বলতে পারলেও ক্ষমতাসীন দলকে কিছু না বলে মুখ বুঝে সহ্য করেছিল। জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে না পারায় উপজেলা নির্বাচনে তারা ভোট দিয়ে সরকারকে জবাব দিয়েছে। ভোটাররা প্রমাণ করলেন, তারা নিজ সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।
পরিশেষে, এ জয়ের ফলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনোই সুযোগ নেই যে, তারা বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছে। শুধুমাত্র আলোচনার মাধ্যমে নয়; তৃণমূলে জামায়াতের কাজকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে গরীব, অসহায় মানুষের সেবা করে তাদের মিশনকে এগিয়ে নিতে হবে। কথার ফুলঝুরি না ছুটিয়ে নিজের ব্যবহারিক জীবনকে পরিবর্তন করতে হবে। মানুষকে এ কথা জানিয়ে দিতে হবে যে, আমরা দেশের শত্রু নয়, আমরাই দেশের প্রকৃত বন্ধু। দেশের স্বাধীনতা আর সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় আমরা আমাদের চেতনাকে জাগিয়ে রাখব। আমরা যা মুখে বলি প্রথমে নিজেরা তা করি। অবস্থাদৃষ্টে জামায়াতের আগামীর দিনগুলো আরও কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় জামায়াতকে সব নাশকতামূলক কর্মকা- পরিত্যাগ করতে হবে। বিচক্ষণতার সাথে মাথা ঠা-া করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আমি মনে করি।
সুহৃদ আকবর 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

তসলিমা নাসরিনের পক্ষে ও ‘বিসমিল্লাহ’র বিপক্ষে ওকালতি


মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আসল কাজ ফেলে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকারের প্রশ্নে কোনো সাফল্য না দেখাতে পারলেও বিভিন্ন বিষয়ে আপত্তিকর বক্তব্য রাখার মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টির ব্যাপারে এরই মধ্যে তিনি যথেষ্ট ‘সুনাম’ কুড়িয়েছেন। গত মঙ্গলবার ও বুধবারও দুটি পৃথক অনুষ্ঠানে তিনি এমনকিছু কথা বলেছেন যেগুলো নিয়ে সচেতন সকল মহলে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি সংবিধান থেকে ‘বিসমিল্ল¬াহ’ বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার যুক্তি, এটা ১৯৭২-এর সংবিধানে ছিল না। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মকে নাকি কোনোভাবেই ব্যবহার করা উচিত নয়! বুধবার আরেক অনুষ্ঠানে তিনি বলে বসেছেন, বাংলাদেশের মানুষ এখনো মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি বলেই তসলিমা নাসরিনকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। কোন অপরাধে তসলিমা নাসরিন দেশে আসতে পারছেন না তাও নাকি বুঝতে পারেন না ড. মিজানুর রহমান! পরের বাক্যেই তার চাতুরি অবশ্য ধরা পড়ে গেছে। কারণ, তথাকথিত ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নারী সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যানের এসব কথার পিঠে কথা উঠেছে যুক্তিসঙ্গত কিছু কারণে। প্রধান কারণটি হলো, জাতীয় জীবনের এমন এক জটিল সময়ে বেছে বেছে তিনি ‘বিসমিল্ল¬াহ’ বাদ দিতে এবং তসলিমা নাসরিনকে ফিরিয়ে আনতে বলেছেন, ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে যখন সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে ইসলাম এবং মুসলমানবিরোধী প্রচারণা ও অভিযান চালানো হচ্ছে। কথায় কথায় আবিষ্কার করা হচ্ছে কথিত ইসলামী জঙ্গিদেরও। আুমরা তো মনে করি, সাধারণ মানুষও যেখানে স্বঘোষিত ধর্মদ্রোহী তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে জানেন সেখানে ড. মিজানুর রহমানের মতো গোঁফে তা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো একজন মহাপন্ডিতের না জানার কোনো কারণ থাকতে পারে না। তা সত্ত্বেও একদিকে তিনি যখন জ্ঞানপাপীর অভিনয় করেন এবং অন্যদিকে যখন ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নারীদের প্রতি আহবান জানান তখন তার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন না উঠিয়ে পারা যায় না। শুধুু তাই নয়, মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার মাধ্যমে মারাত্মক রাজনৈতিক সংকট তৈরি করার খলনায়ক সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়ার কারণেও ড. মিজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তার অভিমত, খায়রুল হক নাকি ‘সাহস’ দেখিয়ে গেছেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা নাকি গণতন্ত্রের সঙ্গে যায় না! তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাকি ‘ভাড়া করা লোক’ দিয়ে চালানো হয় এবং সে কারণে এটা গণতন্ত্রবিরোধী! প্রশংসার সঙ্গে খায়রুল হকের অন্য একটি রায়ের উলে¬খ করে তিনি বলেছেন, ওই রায়ে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলকে মারাত্মক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, ক্ষমতাসীনদের সুরে তাল মেলালেও ড. মিজান কিন্তু জানাননি, তার চাকরির মালিক বর্তমান সরকারই ওই রায়ের আলোকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উদাহরণ দেয়ার জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্পর্কে রায়ের বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে। সেখানে সংবিধান ও প্রচলিত ফৌজদারি আইনের ধারা-উপধারার উল্লেখসহ বলা হয়েছিল, একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান কত গুরুতর এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছিলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের নির্দেশনার প্রতিও ড. মিজানের চাকরিদাতা সরকার সামান্য সম্মান দেখায়নি। ক্ষমতাসীনরা এরশাদকে বরং আওয়ামী মহাজোটের শরিক বানিয়েছেন। রায় অনুযায়ী অনেক আগেই যার কারাগারে যাওয়ার কথা সে এরশাদ এখন তো প্রধানমমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার স্ত্রী রওশন এরশাদকেও বিরোধী দলের নেত্রী বানানো হয়েছে। কিন্তু এসবের ধারেকাছেও যাননি ড. মিজানুর রহমান। তার চোখে শুধু মুসলমানদের ‘বিসমিল্লাহ’ই পড়েছে, তসলিমা নাসরিনের মতো একজন ধর্মদ্রোহীর জন্যও দরদ উথলে উঠেছে তার!
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্ধারিত এখতিয়ারের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা অবশ্যই বলা দরকার। কারণ, সংবিধান থেকে ‘বিসমিল্লাহ’ বাদ দেয়া হবে কি হবে না সেটা তার এখতিয়ারে পড়ে না। তসলিমা নাসরিনের জন্যও মায়াকান্নায় চোখ ভেজানোর সুযোগ তার থাকতে পারে না।  ড. মিজান বড়জোর গণতন্ত্র সম্পর্কে বলতে পারেন কিন্তু তাই বলে বলতে পারেন না যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিছু ‘ভাড়া করা লোক’ দিয়ে চালানো হয় এবং সেটা গণতন্ত্রবিরোধী। আমরা জানি না, নিজে সরকারের ‘ভাড়া’ খাটছেন বলেই কথাটা বলেছেন কি না, তবে প্রমাণিত সত্য হলো, এ পর্যন্তও তিনি অনুগত কর্মচারীসুলভ অবস্থানের বাইরে আসতে পারেননি, সংবিধান ও আইন নির্ধারিত ভূমিকাও তাকে পালন করতে দেখা যায়নি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য করলেই এ ব্যাপারে ধারণা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমন কোনো উদাহরণ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়, যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে, জনগণের মানবাধিকার রক্ষা বা সমুন্নত রাখার স্বার্থে কখনো, কোনো পর্যায়ে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। তার এই সেবাদাসসুলভ ভূমিকায় উৎসাহিত হয়েই সরকার একদিকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড চালাচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর চালাচ্ছে প্রচন্ড দমন-নির্যাতন। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান শুধু গোঁফে তা দিয়েই ঘুরে বেড়ােেচ্ছন। কখনোই তাকে ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। আরো অনেক তথ্যেরই উল্লেখ করা সম্ভব যেগুলো প্রমাণ করবে, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ড. মিজানুর রহমান শুধু ব্যর্থই হননি, অযোগ্যতারও নজীর স্থাপন করেছেন। এজন্যই আমরা মনে করি, ‘বিসমিল্লাহ’ এবং তসলিমা নাসরিনের মতো কোনো বিষয় নিয়ে পান্ডিত্য দেখানোর কোনো অধিকারই তার থাকতে পারে না।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ক্ষমতার শেষ শেকড়টিও কেটে গেছে উপজেলা নির্বাচনে


শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে সব বিরোধী দল অংশ নিতে রাজি হয়নি যেসব আশঙ্কায়, তার সবই বাস্তবে দেখা গেছে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে। ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট, প্রতিদ্বন্দ্বীদের এজেন্ট বিতাড়ন, অস্ত্রবাজি এবং সাধারণভাবেই সরকারি তাণ্ডব ছিল ১৯ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য দিক। দেশবাসীর আরো প্রত্যয় ঘটল যে অসাধু উপায়ে নির্বাচনে জয় আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশল। উল্লেখ্য ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের ভারত-মার্কিন মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচনেও এসব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ বুঝেই নিয়েছে তাদের স্বৈরতন্ত্রী ও সন্ত্রাসী রাজনীতি বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই এরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে সাজানো নির্বাচন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনও এরা করেছে একই কারণে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এরা আরো অনেক কমসংখ্যক আসন পেত।

৪৬০টিরও বেশি উপজেলার নির্বাচন হচ্ছে পাঁচ দফায়। স্থানীয় নির্বাচনগুলো হওয়ার কথা অরাজনৈতিক ও নির্দলীয়ভাবে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন আর কোনো কিছুই অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয়ভাবে করা সম্ভব নয়। মেরুকরণ এমনই চরমে পৌঁছেছে। বিদেশীরা হয়তো এসব নির্বাচন থেকে জাতীয় রাজনীতির প্রবণতার পরিমাপ করতে চাইবে না। সেটা অনেকটা হবে ইচ্ছাকৃতভাবে দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখার কিংবা অ্যাডমিরাল নেলসনের অন্ধ চোখে দুরবিন ধরে শত্রুবহরের মূল্যায়ন করার শামিল। ভোট ও ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচনকে এই বিদেশীরা বিশ্বাসযোগ্য কিংবা গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করেনি। তা সত্ত্বেও মূলত ভারতের চাপে কোনো কোনো দেশ ক্রমেই শেখ হাসিনার সরকারের সাথে লেনদেন করতে রাজি হচ্ছে। তাদের দিক থেকে স্থিতিশীলতার দোহাই দেয়ার চেষ্টা লক্ষণীয়।

এরা ভুলে যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্ভবত দীর্ঘতম স্থায়ী শাসক ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের জোসেফ স্ট্যালিন। তার ৩১ বছরের শাসনের বেশির ভাগ সময় গণতান্ত্রিক বিশ্বের সাথে মস্কোর ভয়ানক এক স্নায়ুযুদ্ধ চলেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নেই কত লাখ মানুষ যে এ সময় মারা গেছে এর হিসাব করাও সম্ভব নয়। পাকিস্তানে বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান স্থিতিশীলতার দোহাই দিয়েই গদি আঁকড়ে থাকতে চেয়েছেন। আরো আধুনিক কালে রবার্ট মুগাবে ৩৭ বছর ধরে জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতির গদি দখল করে আছেন। এ সময়ে জিম্বাবুয়েতে যেসব অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে তার কিছু কিছু ছবি টেলিভিশনে দেখেছি, বিবিসি থেকে প্রচারও করেছি সে সংক্রান্ত খবর। পশ্চিমা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই তিনি অগ্রহণযোগ্য। স্থিতিশীলতার দোহাই দিয়ে যারা শেখ হাসিনার গণবিরোধী সরকারের সাথে লেনদেন করতে রাজি হবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই দ্বিমুখী নীতি এবং কাটা জিহ্বা দিয়ে কথা বলার অভিযোগ উঠবে।  জানুয়ারির সে নির্বাচনে দেশের মোট ২ শতাংশ ভোটারও ভোট দেননি। ১৫৩ নির্বাচনী এলাকার চার কোটি ৯০ লাখ মানুষকে আদৌ ভোটদানের সুযোগ দেয়া হয়নি। অন্য ১৪৭টি এলাকায় বহু কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। সরকার বিদেশীদের ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছে এই বলে যে বিরোধী দলগুলোর নির্বাচন বর্জন এবং বাধাদান না ঘটলে তারা বিশ্বাসযোগ্যসংখ্যক ভোট পেত। ঠিক সে কারণেই উপজেলা নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিবেচনা করা সবারই কর্তব্য হবে। প্রথম দফায় ৯৭টি উপজেলায় নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ৪৪টিতে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ৩৪টিতে জয়লাভ করেছে।  

জামায়াতের এত সাফল্য যে কারণে

বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে, ১৩টি উপজেলায় জামায়াতের এবং মাত্র একটি উপজেলায় বর্তমান সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জয়লাভ। সব মিডিয়া এবং পর্যবেক্ষক একমত যে সরকারের দিক থেকে তাণ্ডবগুলো না ঘটলে বিএনপির জয় আরো চাঞ্চল্যকর হতো। এমনকি নির্বাচন কমিশন থেকেও স্বীকার করা হয়েছে যে ভোট জোচ্চুরি ও অন্যান্য অনিয়মের বহু অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে। এসব সরকারি তাণ্ডব না হলে আওয়ামী লীগ আদৌ কোনো উপজেলায় জয়ী হতো কি না সন্দেহ। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত বছর সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচনেও শাসকদল আওয়ামী লীগ তাদের সব তাণ্ডবদেখিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রত্যেকটি করপোরেশনেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। 

মাত্র একটি উপজেলায় সরকারি প্রভাবের জোরে জাতীয় পার্টির জয় আবার প্রমাণ করে যে এই সুযোগসন্ধানী দলটি গত মাসের সংসদ নির্বাচন নিয়ে যেসব কেলেঙ্কারি করেছে তাতে তাদের সীমিত সমর্থকেরাও ঘৃণায় নাক সিঁটকে নিয়েছে। এমনকি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান লে. জে. হু: মু: এরশাদ নিজেই বলেছেন যে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। অবশ্যি এরশাদ প্রায়ই আমাকে ব্রিটিশ আবহাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেন। শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত-শরৎ চারটি ঋতুই এক দিনে দেখা সম্ভব ব্রিটেনে। এরশাদের মুখে সকাল দুপুর বিকেল আর সন্ধ্যায় পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা প্রায়ই শোনা যায়। দল হিসেবে জাপার অস্তিত্ব এখন সত্যি সত্যি বিপন্ন মনে করতেই হবে। আর জামায়াত যে ১৩টি উপজেলায় জয়ী হয়েছে তার থেকে ধরে নিতেই হবে যে দেশের মানুষ সরকারের মিথ্যার মুখোশ খুলে ফেলতে এখন বদ্ধপরিকর।

দেশবাসীর সহানুভূতি যাবে নির্যাতিতের দিকে 

সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। ভারতের দালাল এবং ইসলামবিরোধী চক্রের দাবিতে সন্ত্রাসী দল অপবাদ দিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে সরকার। সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এখন মসজিদেও ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামি সন্ত্রাসীখুঁজে বের করার জন্য আওয়ামী লীগের ফেউ পাঠানো হচ্ছে মসজিদে। কিন্তু প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতকে ব্যাপক সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যেন সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলিই দেখাল। প্রমাণ হয়ে গেল অন্যায়ভাবে এ সরকার যাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাবে জনসাধারণের সহানুভূতি ঘুরে যাবে তাদের দিকে। 

সরকারের মন্ত্রীদের মুখে খিস্তিখেউড় যে আবার শালীনতার সব মাপকাঠির বাইরে চলে যাচ্ছে তাতে একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গেছে : তাদের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে, ক্ষমতার শেষ শেকড়টিও ছিন্ন হয়ে গেছে মাত্র ৯৭টি উপজেলার নির্বাচনী ফলাফলে। দেশী-বিদেশী সবাই এখন বুঝে গেছে সর্ববিধ সরকারি তাণ্ডব এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ব্যবহার করেও এরা গণতন্ত্রকামীদের দমিয়ে রাখতে পারছে না। যে স্থিতিশীলতার দাবি তারা করছে সেটা কত ভঙ্গুর প্রমাণ হয়ে গেছে। কোনো সন্দেহ নেই যে বাকি চার দফার উপজেলা নির্বাচনে এরা আরো মরিয়া হয়ে উঠবে। কিছু লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর ১৯ দলের জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা বেড়ে গিয়েছিল। প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর সরকার ও শাসকদলের হিংস্রতা আরো বেড়ে গেছে মনে হয়। কিন্তু তাতে করে আরো সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়ে যাবে যে বাংলাদেশের এবং বাংলাদেশের মানুষের ঘাড়ের ওপর চেপে বসে থাকার কোনো অধিকার এই সরকার আর এই দলের অবশিষ্ট রইল না। 

কী শিক্ষা নেবে ১৯ দলের জোট  

কী করবে এখন ১৯ দলের জোট এবং সে জোটের প্রধান দল বিএনপি? এত দিন আন্দোলন করেও একটা অমোঘ সত্য তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। বিদেশীরা, বিশেষ করে বিদেশী কূটনীতিকেরা যখন তাদের সমালোচনা করে এবং যখন তাদের সমর্থন করে সেটা কখনোই নিছক ন্যায়-অন্যায় এবং নিয়মনীতির কারণে নয়। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কিছু পত্রিকার এবং সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের সমর্থন সংগ্রহ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগকে গদিতে বসানোর জন্য যখন বহু ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল, তখন এর সাথে ন্যায়নীতির কিংবা গণতান্ত্রিক আদর্শের কোনো সম্পর্ক ছিল না। 

একবিংশ শতকের প্রথম দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন স্বার্থ ছিল উদীয়মান পরাশক্তি চীনের প্রভাব সীমিত রাখার লক্ষ্যে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা, যে ভারত স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শত্রু সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র ছিল। ভারত বরাবরের মতো বাংলাদেশে এমন একটা সরকার চেয়েছিল যে সরকার তার সামরিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। কিন্তু নতুন শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে মার্কিন স্বার্থের কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ঘটেছে। ওয়াশিংটন বঙ্গোপসাগরে তার নৌশক্তি বাড়াতে চায়। সে লক্ষ্য ভারতের স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং ওয়াশিংটন গণতন্ত্রের বিবেচনাকে তুলে ধরে বিএনপি ও বিরোধী জোটের প্রতি আনুকূল্য দেখিয়ে এসেছে। 

কিন্তু বিরোধী জোটের সাথে এত বেশি ঘনিষ্ঠ হতে সে চায়নি, যাতে ভারতের সাথে সম্পর্ক মেরামত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভারত বিশাল দেশ। তার সমরাস্ত্রের বাজার বিশাল। বর্ধিষ্ণু মধ্যবিত্ত ও ভোক্তা শ্রেণীর চাহিদা অপূরণীয় বলে ভুল হতে পারে। অন্য বহু দেশের মতো আমেরিকার ব্যবসায়ীদেরও প্রলুব্ধ দৃষ্টি ভারতের দিকে নিবদ্ধ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যাপারে এশিয়ার দ্বিতীয় পরাশক্তি ভারতের সমর্থন ওয়াশিংটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্যই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন নীতি ও মনোভাবে কিছু আপাতত বিরোধিতা লক্ষ্য করা যায়। রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা যখন গণতন্ত্রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘৃণা এবং বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন লক্ষ করেন, তখন সেটাকে আন্তরিক বলতেই হবে। কিন্তু তিনি যখন সহিংসতার সমালোচনা করে বিরোধীদের আন্দোলন সংযত করার পরামর্শ দেন তখন কূটনীতিক হিসেবে নিজ দেশের স্বার্থের প্রতি তার মনোযোগ প্রধান হয়ে ওঠে। 

ইউক্রেনের বিপ্লবের সাফল্য যে কারণে

ইউক্রেনে বিগত তিন মাসে যে অগ্নিস্রাবী এবং রক্তঝরা বিপ্লব ঘটেছে তাতেও বিদেশী কূটনীতির এই উভয় সঙ্কট স্পষ্ট হয়ে যায়। ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অঙ্গরাজ্য ছিল। সোভিয়েতের পতনের পর ১৯৯১ সালে সে বিচ্ছিন্ন ও স্বাধীন হয়ে যায়। কিন্তু রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন যত বেশি সম্ভব সাবেক অঙ্গরাজ্যকে আবার রাশিয়ার প্রভাবাধীনে আনতে চান। মুসলিম-প্রধান চেচনিয়া ও দাগেস্তানকে তিনি অস্ত্রবলে দখল করে রেখেছেন। সাবেক অঙ্গরাজ্য জর্জিয়াকে আবারো কুক্ষিগত করার জন্য ২০০৮ সালে পুতিন সৈন্য পাঠিয়েছিলেন। সে যুদ্ধ দক্ষিণ ওসেটিয়া যুদ্ধ নামে খ্যাত। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লঘিষ্ঠ মানুষ রুশ ভাষাভাষী। প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ এবং তার সরকারের সদস্যরা রুশ প্রভাবিত ছিলেন। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সে সুযোগ নিয়ে ইউক্রেনকে আবার রাশিয়ার আধিপত্যবলয়ে ফিরিয়ে আনতে চান।

সম্প্রতি ইউক্রেনের অধিবাসীরা তাদের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ সংশ্লিষ্ট চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। বিপ্লবের সূচনা সেখান থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো যুক্তরাষ্ট্রও জনসাধারণকে সমর্থন দেয় কিন্তু বাংলাদেশের মতো সেখানেও ওয়াশিংটন আন্দোলনকারীদের সংযত থাকতে পরামর্শ দেয়। বৃহৎ শক্তির রাজনীতি এখানেও সঞ্চালক শক্তি ছিল। সিরিয়ার জটিল গৃহযুদ্ধের অবসান এবং ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে নিবৃত্ত রাখা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় সমস্যা। সিরিয়া ও ইরানের ওপর রাশিয়ার প্রভাবই সর্বাধিক। সে কারণে ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট পুতিনকে চটাতে চায়নি। আন্দোলনকারীদের সে জন্যই সংযমের পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন মার্কিন নেতারা।

জনতা পিছল পথে যায়নি

কিন্তু কিয়েভের ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কোয়ারের (ওরা বলে ময়দান) জনতা বৃহৎ শক্তির খেলার মারপ্যাঁচে ভরসা করতে পারেনি। তারা অবিরাম এবং আপসবিহীন আন্দোলন চালিয়ে গেছে। প্রচুর রক্তও তারা দিয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সরকারের দাঙ্গা পুলিশ এবং সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে ৮৮ জন ইউক্রেনীয় প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু বিনিময়ে তারা বিজয় অর্জন করেছে। প্রথমে প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের সমর্থক ১৫ জন পার্লামেন্ট সদস্য পদত্যাগ করেন। জনতা অনেক সরকারি ভবন দখল করে নেয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য জার্মানি, ফ্রান্স আর পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যস্থতায় এবং রাশিয়ার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে আন্দোলনের কয়েকজন নেতা প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচের সাথে চুক্তি করেন যে একটা সর্বদলীয় সরকার গঠন এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হবে।

ইউক্রেনের জনতা সে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি হয়নি। এরা নিশ্চয়ই ভয় করছিল যে ইয়ানুকোভিচকে এত দীর্ঘ সময় দেয়া হলে কী ষড়যন্ত্র করে তিনি পরিস্থিতির মোড় কোন দিকে ঘুরিয়ে নেবেন কে জানে? আন্দোলনের তীব্রতার মুখে হঠাৎ করে কিয়েভের রাজপথ থেকে পুলিশ ও সৈন্য উধাও হয়ে যায়। পার্লামেন্টের স্পিকার পদত্যাগ করেন। স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা, কয়েকজন মেয়র ও গভর্নর পালিয়ে রাশিয়ায় চলে যান। প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচও রাশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু বর্ডার গার্ড বাহিনী তার ব্যক্তিগত জেট বিমানকে উড়তে দেয়নি। তিনি এখন পলাতক আছেন। পাইকারি হত্যার দায়ে বিচারের দায়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং নতুন অস্থায়ী সরকার দেশব্যাপী তার খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। কিন্তু জনতা ময়দান ছেড়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। বন্দী মুক্তি, হত্যাযজ্ঞের বিচার এবং সম্ভবত মে মাসে নির্বাচনসহ দাবিগুলো পূরণ হওয়া পর্যন্ত তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভ চালিয়ে যেতেই চায়।

এ দিকে দেশটির অবস্থা এখন গভীর উদ্বেগের বিষয়। প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। রাশিয়া ঋণদানের প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছে। ইউক্রেন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। তিন মাসের আন্দোলনে কয়েক শমানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে কয়েক হাজার। এ সবের জন্য দায়ী বৃহৎ শক্তিগুলোর ইতস্ততভাব, আপাতত বিরোধী নীতি এবং তাদের বিশ্বস্বার্থের সঙ্ঘাত।

ইউক্রেন বনাম বাংলাদেশ 

বাংলাদেশে বিগত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতাসীনেরা রাজনৈতিক বিরোধিতাকে পঙ্গু করে দেয়ার আশায় শত শত নেতাকর্মীকে অস্তিত্বহীন করে দেয়া হচ্ছে। খুনের আসামিকে মুক্তি দিয়ে রাজনৈতিক বন্দীদের জন্য কারাগারে স্থান করেছে সরকার। তা সত্ত্বেও জেলখানাগুলো এখন টইটম্বুর, তিল ধারণের স্থান নেই সেখানে। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিচারবহির্ভূত হত্যা চরমে উঠেছে। ইউক্রেন থেকে বহু গুণ বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান গণতন্ত্রের আন্দোলনে। বিশ্বস্বার্থের বিবেচনায় বিদেশীরা গড়িমসি করেছে, গণতন্ত্রের পরিবর্তে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তিকে তোষণ করেছে।

তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র সংহত করার আন্দোলন খালেদা জিয়া যখন শুরু করেন বাংলাদেশের মানুষ তাতে নজিরবিহীন সাড়া দিয়েছে। আন্দোলনের সে বেগ অব্যাহত থাকলে স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি অনেক আগেই পরাভূত হতো। হয়নি অনেক কারণে। কূটনীতিকেরা সংযম আচরণ আর ধীরে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিএনপিতে কোনো কোনো মহল সত্যি সত্যি আশা করেছিলেন যে শেখ হাসিনার সরকার বিদেশী পরামর্শের কাছে নতিস্বীকার করবেন। অন্যেরা সে যুক্তিতে ধুয়া ধরেছেন শুধুই আন্দোলনকে স্যাবোটাস করার উদ্দেশ্যে। সংযম আচরণ আর ধীরে চলার পরামর্শের পেছনেও বহুমুখী স্বার্থ কাজ করেছে। আমার কোনো সন্দেহ নেই বিরোধী আন্দোলনে, বিশেষ করে বিএনপির ভেতরেও শত্রুপক্ষের বর্ণচোরা এজেন্টরা সক্রিয় ছিল। তা ছাড়া বিএনপির নেতৃত্বে এমন সব মহল আছেন যারা শুধু পদ ও গদির লোভেই রাজনীতি করছেন, বিনিময়ে ত্যাগ স্বীকারের কথা যারা ভাবতে পারেন না।

রয়েসয়ে জিরিয়ে জিরিয়ে আন্দোলনে বাংলাদেশের মানুষ ত্যক্তবিরক্ত হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্র তারা অবশ্যই চায়। তারা সংগ্রাম করতে রাজি আছে কিন্তু সে সংগ্রামে তারা নেতাদেরও দেখতে চায়। আন্দোলন, বিপ্লব কিভাবে করতে হয় দেখিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনের জনতা। যুদ্ধের ময়দানে নেমে তারা বিরতি দেয়নি, লক্ষ্য অর্জিত হওয়া পর্যন্ত তারা রণাঙ্গনে অবস্থান নিয়েছে। আধিপত্যবাদী রুশ দালালরা এখন গদি হারিয়েছেন, প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সংগ্রামী জনতা এখনো কিয়েভের ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কোয়ার ছাড়তে রাজি নয়। নিরপেক্ষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং অন্যান্য লক্ষ্য অর্জিত হওয়া পর্যন্ত সেখানেই তারা থাকবে। বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন করছেন ইউক্রেনের মানুষের কাছ থেকে তাদের অনেক শিক্ষা নেয়ার আছে। সৌভাগ্যবশত খালেদা জিয়া দলীয় সংগঠন চাঙ্গা করার দিকে জরুরি মনোযোগ দিয়েছেন মনে হচ্ছে। তাকেও মনে রাখতে হবে লক্ষ্য অর্জিত হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন এতটুকু শিথিল হতে দিলে তার পরিণতি মারাত্মক হয়। বাংলাদেশে যে ইউক্রেনের বহু গুণ বেশি মানুষ প্রাণ দিয়েছে কিন্তু তাতেও সাফল্য আসেনি এই হচ্ছে তার কারণ।

সিরাজুর রহমান


 

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

হতাশার কারণ নেই


দেশে একটি শক্ত ও যোগ্য বিরোধী দল থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ধারণা ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পরপরই সব দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ দারুণভাবে অনুভব করেছেন। তখনই দেশের মানুষ বুঝে ফেলেছিলেন আওয়ামী লীগের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অতি অল্প সময়ে দলটির জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলেছিল। দেশে ও সারা বিশ্বে বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। সাবেক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদও গল্পের মিথ্যাচারী রাখাল বালকের মতো দেশবাসীকে ধোঁকা দিয়ে শেষ পর্যন্ত সরকারপক্ষেই যোগ দিয়েছেন। কিন্তু জাতির কাছে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সরকারের অতি মাত্রায় দমনপীড়নে বিরোধী দলকে যতই পর্যুদস্ত করা হোক না কেন, বিএনপির মতো এত বড় একটি দলসহ ১৯ দলীয় জোট ও সমমনা দেশপ্রেমিক বিভিন্ন দলের কোনো ব্যক্তিকেই এ নির্বাচনে অংশ নিতে দেখা যায়নি। বিএনপিকে এ জন্য যথাযথ মূল্যায়ন করে বিলম্বে হলেও নির্বাচনে অংশ না নেয়া দলগুলোকে মর্যাদার সাথে মনে রাখতে হবে। বিএনপি ও সমমনা অন্য দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কারণেই প্রকৃতপক্ষে দেশের সব ভোটারের মধ্যে গড়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাননি- এটিই অনস্বীকার্য বাস্তবতা। এ সত্যকে শাসকগোষ্ঠী স্বীকার না করলেও দেশবাসীর তা ভালোই জানা আছে। এ অবস্থায় বিএনপিকে সুসংহত ও সুসংগঠিত রাখা শুধু দলের জন্য অপরিহার্যই নয়, গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য বিরাট কাজও। 

দেশী-বিদেশী সব মহলের মতামত ও পরামর্শকে উপেক্ষা করে শুধু নিয়মরক্ষার দোহাই দিয়ে গণমানুষের ভোটাধিকারকে যেভাবে হরণ করা হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের প্রতি গণমানুষের মনের ক্ষোভ থেকেই যাবে এবং তারা ক্ষোভ মেটানোর অপেক্ষায়ও থাকবেন। 

আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসলেও জনগণের সমর্থন, তথা নৈতিক ভিত্তি হারিয়েছে। পক্ষান্তরে বিএনপি বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের জনপ্রিয়তা ঘাটতিতে পড়েনি; বরং তা বৃদ্ধির আরো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি আগামীতে বিএনপি কিভাবে কাজে লাগাবে, কিভাবে প্রতিপক্ষের নির্যাতন ও কৌশল মোকাবেলা করে তাদের রাজনীতিকে সাজাবে, তার ওপরই দলের সফলতা নির্ভর করছে। বিএনপির সে দক্ষতা ও সামর্থ্যও আছে বলেই জনগণ মনে করে। 

বিএনপি কখনোই বলেনি তারা স্থানীয় নির্বাচনে যাবে না। দলের বিশাল কর্মিবাহিনী আর বিএনপির যারা প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশী, তাদের যথার্থ ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে নির্বাচনে অংশ নেয়াই স্বাভাবিক।


 

বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মৌসুমী ও প্রতিমার কণ্ঠে সময়ের বার্তা


আমাদের রাজনীতি এবং প্রশাসন যে ঠিক পথে চলছে না তার বড় প্রমাণ কর্ণাই। দিনাজপুর সদর উপজেলার একটি গ্রাম ‘কর্ণাই’। এই জনপদটি এখন একটি আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। ঘটনার শুরু ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনের দেড় মাস পরেও হিন্দু পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক কাটেনি। ভোটের দিন ওদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এদিকে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘মহাদেবপুর, ডুমুরতলীসহ এখানকার মুসলমান পাড়াগুলোতে কথা বলার জন্য দুই তিনদিনে কোনো পুরুষ মানুষ পাওয়া যায়নি। তবে নারীরা অভিযোগ করেন, কর্ণাই বাজারে মুসলমানদের দোকানগুলোতে হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করেছে হিন্দু ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এছাড়া ভোটের পরদিন রাতে যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় মহাদেবপুরের ৩০টির বেশি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের জন্য হিন্দুদের দায়ী করেন তারা। প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ৭ ফেব্রুয়ারি এলাকায় ঢুকতেই মহাদেবপুর, ডুমুরতলীর মুসলমান পাড়াগুলোতে আতঙ্কের বিষয়টি টের পাওয়া গেলো। দূরের ফসলের মাঠে কর্মরত অনেক নারীর মধ্য থেকে দু’জন পুরুষ প্রাণপণে ছুটে পালাচ্ছেন। কাছে গিয়ে নারীদের জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন, মোটরসাইকেলে পুলিশ এসেছে ভেবে তারা পালিয়েছেন। ওই সময় যৌথবাহিনীর নির্বিচার গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে কাঁদতে কাঁদতে তাজকারা বেগম বললেন, ‘সব থোয়ার (রাখার) জায়গা আছে বাপু, ভয় থোয়ার জায়গা নাই। যাক পাচ্ছে তাকই তুলি নি যাচ্ছে। যাদের নামে মামলা হইছে, পুলিশ তাদের ধরুক।’ যৌথ অভিযানের কারণে আতঙ্কের কথা শোনা গেলো দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার কর্মকর্তা (অপরাধ) শেখ হিফজুর রহমানের মুখেও। তিনি বললেন, ‘আমরা জানি যে, এই পাড়াগুলো পুরুষশূন্য। এখানকার সবাই মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি দেখলেই পালাচ্ছেন। ভীতি দূর করতে আমরা দ্রুত সেখানে একটা মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে চাই।’ জেলা প্রশাসনও মতবিনিময় সভা করার কথা বললেও ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে এ ধরনের কোনো সভা হয়নি বলে এলাকার মানুষ জানিয়েছেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে যে চিত্র স্পষ্ট হলো, তাতে এ কথা বলা যায় যে, আমাদের রাজনীতি এবং প্রশাসন ভুল পথে চলছে। ভোটকে কেন্দ্র করে কেন দুর্বলদের ওপর, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হবে? আবার দুর্বলদের রক্ষার নামে কেন যৌথবাহিনী ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি করবেÑ যাতে মুসলিম পাড়াগুলোর সব পুরুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে? যৌথবাহিনীর নিপীড়নমূলক ও একপেশে আচরণের কারণে কর্ণাই বাজারে মুসলমানদের দোকানগুলোতে হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করার সাহস পেয়েছে হিন্দু ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। এর ফলাফল কেমন হবে? আমরা জানি সব ক্রিয়ারই একটি প্রতিক্রিয়া আছে। ভালোর প্রতিক্রিয়া ভালো হয় এবং মন্দের প্রতিক্রিয়া মন্দ। প্রসঙ্গত, এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পাবলিক ও পুলিশের আচরণ এক রকম হতে পারে না। পাবলিকের আচরণে ভুল থাকতে পারে, কারণ তারা রাষ্ট্রের প্রশিক্ষিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উজ্জ্বল আচরণ পাবলিকের জন্য উদাহরণ হতে পারে। কিন্তু কর্ণাইয়ে আমরা কী দেখলাম? যৌথবাহিনী সেখানে যেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্র্ভূত হয়েছে। শুধু তাই নয়, যেন মুসলিমবিরোধী বাহিনী হিসেবে আবির্র্ভূত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতো যাকে ইচ্ছে তাকে ধরতে পারে না, বেপরোয়াভাবে গুলীও চালাতে পারে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আইন মেনেই কাজ করতে হয়। সুনির্দিষ্ট অপরাধে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই আইনের আওতায় নিতে হয়। কিন্তু কর্ণাইয়ে আমরা দেখলাম ভিন্ন চিত্র। যে কারণে যৌথবাহিনীর নির্বিচার গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে কাঁদতে কাঁদতে তাজকারা বেগম বললেন, ‘সব থোয়ার (রাখার) জায়গা আছে বাপু, ভয় থোয়ার জায়গা নাই। যাক পাচ্ছে তাকই তুলি নি যাচ্ছে। যাদের নামে মামলা হইছে, পুলিশ তাদের ধরুক। এ ছাড়া যৌথ অভিযানের কারণে আতঙ্কের কথা শোনা গেলো দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার তদন্ত কর্মকর্তা (অপরাধ) শেখ হিফজুর রহমানের মুখেও। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে, এই পাড়াগুলো পুরষশূন্য। এখানকার সবাই মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি দেখলেই পালাচ্ছেন। ভীতি দূর করতে আমরা দ্রুত সেখানে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে চাই।’
গণতন্ত্রে সুনাগরিক যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সুশাসনও। কোনো সমাজে এর অভাব ঘটলে নাগরিকের জীবনযাপন, দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যেমনটি আমরা লক্ষ্য করেছি কর্ণাইয়ে। কর্ণাইয়ের মানুষ বাঁচতে চায়। সম্প্রীতি ও সহাবস্থানই তাদের কাম্য বিষয়। প্রথম আলোর রিপোর্টারও উল্লেখ করেছেন, ‘গ্রামটি ঘুরে বোঝা গেলো, সব মানুষই শান্তি ও সহাবস্থান চাইছেন। তাদের ভাষ্য, বর্তমানের এই আতঙ্কিত পরিস্থিতির জন্য ভোটের রাজনীতিই দায়ী। কারণ, দীর্ঘকাল ধরে এখানে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও বিরোধটা এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তাই ঐক্যের আর্তি ঝরলো মহাদেবপুরের গৃহবধূ মৌসুমী আক্তারের কথায়। তিনি বলেন, ‘হামরা এর মীমাংসা চাই। ৩৬ জাতি না হলি রাজ্য চলে না। হামরা সবাইরে নিয়া বাঁইচবার চাই।’ হামলার শিকার পিতমপাড়ার অশীতিপর প্রতিমা রায় কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘একে গরিব তার উপর হিন্দু। এই দ্যাশ কি হামার লয়? হামাক ভারত জাতি হবে ক্যান? এর চাইতে হামাক যদি মারি ফেলাও, তাও ভালো।’
গৃহবধূ মৌসুমী আক্তার ও প্রতিমা রায় যা বললেন তাতে আমাদের রাজনীতিবিদদের শেখার মতো বিষয় রয়েছে। তাদের বক্তব্যে সামাজিক সম্প্রীতি ও মানবাধিকারের বিষয় স্পষ্টভাবেই ঘোষিত হয়েছে। ঘোষিত হয়েছে গণতান্ত্রিক চেতনার কথাও। গণতন্ত্রের কথা আমাদের রাজনীতিবিদরাও অহরহ উচ্চারণ করে থাকেন। কিন্তু গণতন্ত্র যে কোনো প্রহসন বা নাটক নয়, নয় কোনো দানবীয় মতবাদ তা রাজনীতিবিদদের আচরণে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রয়োজন পরমত-সহিষ্ণুতা, ধৈর্য এবং পারস্পরিক সম্মানবোধ। এ বিষয়গুলো আমাদের রজানীতিবিদদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টির প্রশ্নে সরকার ও সরকারি দলের ওপর দায়িত্ব বর্তায় বেশি। সরকার যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসে তবে তার ইতিবাচক প্রভাব রাজনৈতিক অঙ্গনেও দেখা দেবে। কিন্তু আমাদের বর্তমান চিত্র সুশাসনের নয়। সুশাসন থাকলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ নেতারা পিস্তলে গুলী ভরে কেমন করে, মুহুর্মুহু গুলী চালায় কোন সাহসে? ওরা গ্রেফতার হয় না, মামলা হয় আক্রান্তদের বিরুদ্ধে! আমাদের প্রশাসন এবং রাজনীতি যেন দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে গেছে। নইলে খুলনা ছাত্রলীগের শীর্ষ ১১ নেতা মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকে কেমন করে? ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্রলীগের খুলনা মহানগর ও উপজেলা কমিটির অন্তত ১১ জন শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের ভেতর থেকে। তাদের সাথে যুক্ত আছেন আরো অনেক নেতাকর্মী। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি। কিন্তু খুলনা জেলা, মহানগর ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে আলোচিত হয়, মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, লুটÑ এই কটি শব্দ। ছাত্রলীগের বিবদমান নেতারাই পরস্পরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলছেন, সংবাদ সম্মেলনও করছেন। গত শনিবার মাদক ব্যবসা ও কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আযম খান সরকারি কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এখানে প্রশাসন ও পুলিশ যেন অসহায়। এমন চিত্র সারা দেশেই লক্ষ্য করা যায়। ‘গুলী না করায় ওসিকে মারলেন আ’লীগ নেতা’Ñ খবরের এমন শিরোনাম কি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ নয়? গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংগ্রামে মুদ্রিত খবরটিতে বলা হয়, সোনাগাজীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় বিএনপি কর্মীদের ওপর গুলী না করায় পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত শনিবার উপজেলা যুবদল নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ডাকা অর্ধদিবস হরতাল চলাকালে পৌর শহরে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সাথে যুবদল-ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এদিকে হরতাল চলাকালে যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পৌর শহরে প্রায় অর্ধশত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, সোনাগাজীতে হরতালের সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে যুবদল-ছাত্রদল কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা প্রায় অর্ধশত বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শহরে এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। আমরা জানি, এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি সন্ত্রাসমূলক কাজ। তাই সন্ত্রাসের অভিযোগে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা ছিল পুলিশের কর্তব্য। কিন্তু পুলিশ সেই কর্তব্য পালন করেনি। সরকারি ঘরানার লোকদের বিরুদ্ধে পুলিশ কেন কর্তব্য পালন করে না তা আমাদের জানা বিষয়। কিন্তু সোনাগাজীতে লক্ষ্য করা গেল আরো বিস্ময়কর ঘটনা! সরকারি দলের লোকদের আবদার অনুযায়ী বিরোধী দলের লোকদের ওপর পুলিশ গুলী না করায় আওয়ামী লীগ নেতারা ফুঁসে উঠে এবং সোনাগাজী বাজারের ব্র্যাক ব্যাংকের সামনে প্রকাশ্যে ওসিকে মারধর করে তারা। এমন দৃশ্যে হতবাক হয়ে যায় মানুষ। প্রশ্ন জাগে, পুলিশ কি রাষ্ট্রের ও জনগণের সেবক; নাকি আওয়ামী লীগের কোনো পোষ্য বাহিনী?
আমরা জানি, পুলিশ কোনো দলের বাহিনী নয়, বরং রাষ্ট্রের বাহিনী। দলমত নির্বিশেষে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন পুলিশের কর্তব্য। কিন্তু বর্তমান সময়ে পুলিশকে তেমন ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। সরকার ও সরকারি দলের ভ্রান্তনীতির কারণে পুলিশ আজ বিরোধী দলকে ঠেঙানোর বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় পুলিশের ইমেজ যেমন বিনষ্ট হয়, তেমনি পুলিশ হারায় তার সক্ষমতাও। এ কারণেই সরকারি দলের স্থানীয় নেতারা একজন ওসির ওপর হামলা চালাবার সাহস পায়। জনগণ পুলিশ বাহিনীর এমন অবমাননা দেখতে চায় না। তাই হামলাকারী সরকারদলীয় নেতাদের আসামীর কাঠগড়ায় দেখতে চায়। আওয়ামী লীগ নেতারা কি করে ভাবেন যে, তারা বললেই পুলিশ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুলী করবে? মানুষের জীবনের কি কোনো দাম নেই? গুলী করতে তো কিছু নিয়ম-কানুন লাগে, কর্তৃপক্ষীয় অনুমোদন লাগে? আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা কি সেই কর্তৃপক্ষ? আসলে সুশাসনের অভাবে আওয়ামী লীগ দেশটাকে একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, যার সাথে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ আসলে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাইছে? গণআকাক্সক্ষার সাথে সরকারি দল ও সরকারের আচরণ মিলছে না, ফারাক বাড়ছে। বিষয়টি কি তারা উপলব্ধি করতে পারছেন না?
আমরা জানি, আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দল। এই দলের প্রাণপুরুষ ছিলেন জাতির স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আজ আমাদের মাঝে না থাকলেও তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ আমাদের কাছে আছে। এই গ্রন্থ আমাদের জন্য এক অনন্য উপহার। এই গ্রন্থে তার সংগ্রামী জীবনের পাশাপাশি উঠে এসেছে রাজনীতি ও প্রশাসনের কথা। শেখ মুজিবুর রহমান যে গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ তা কতটা ধারণ করতে পারছে? আওয়ামী লীগ যদি এমন আত্মসমালোচনায় সক্ষম হয়, তাহলে আমাদের রাজনীতি ও প্রশাসনের সঙ্কট অনেকটাই কেটে যেতে পারে। বিষয়টি তারা উপলব্ধি করলে মঙ্গল।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নির্বাচন কমিশনের প্রশ্নসাপেক্ষ ভূমিকা


আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১৬টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ম ও আইন অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারবে কি না তা নিয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গভীর সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণও যথারীতি ক্ষমতাসীনরাই তৈরি করেছেন। দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্টে জানা গেছে, প্রথম দফার নির্বাচনে শোচনীয় ভরাডুবির পর ক্ষমতাসীনরা আরো জোরেশোরে বাঁকা পথে পা বাড়িয়েছেন। বিরোধী দলের, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা নির্বাচনী তৎপরতাই চালাতে পারছেন না। ক্ষমতাসীন দলের গু-া-সন্ত্রাসীরাতো সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছেই, পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাবনাময় সব প্রার্থীর বিরুদ্ধেই একের পর এক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। সেসব মামলায় গ্রেফতারের জন্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ফলে প্রচারণা চালানো ও জনসভা করার মতো কোনো কার্যক্রমই চালাতে পারছেন না বিরোধী দলের প্রার্থীরা। তাদের পোস্টার পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। সব মিলিয়ে এমন ত্রাসের রাজত্বই কায়েম করা হয়েছে যে, নির্বাচনী প্রচারণা চালানো এবং জনসংযোগ করা দূরে থাকুক, বিরোধী দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মূলত এ কারণেই নির্বাচনের দিন এগিয়ে এলেও নির্বাচনকে নিয়ে যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ার কথা তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থার পেছনে সরকারের পাশাপাশি বর্তমান নির্বাচন কমিশনও নেতিবাচক ভূমিকাই পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব যেখানে ছিল দমনমূলক ব্যবস্থা নেয়া থেকে সরকারকে নিবৃত্ত করা, কমিশন সেখানে উল্টো সরকারের জন্য প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে। সুজন-এর মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলোও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভূমিকা পালনের অভিযোগ তুলেছে। অথচ আইনানুযায়ী উপজেলা নির্বাচন শুধু নির্দলীয় ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নয়, কমিশনকেও সর্বাত্মকভাবে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার নির্বাচনকে সামনে রেখে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন রকম পরিস্থিতি। প্রতিটি এলাকাতেই পুলিশ ও প্রশাসন অনেকাংশে ঘোষণা দিয়েই সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে ভূমিকা পালন করছে। বহু এলাকায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকেও মামলা ও গ্রেফতারের নামে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে পুলিশ। এসব প্রকাশ্যে ঘটলেও কোনো ব্যাপারেই নির্বাচন কমিশনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ আইন হলো, নির্বাচনের সময় কমিশনের নির্দেশ ও অনুমতি ছাড়া পুলিশ ও প্রশাসন গ্রেফতার ও হয়রানির মতো কোনো তৎপরতায় জড়িত হতে পারবে না। কোনো ব্যবস্থা নেয়া এবং উপজেলা পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তাকে নিষেধ করা বা কিছু বলা দূরে থাকুক, সব বিষয়ে রহস্যময় নীরবতা পালন করছে বলেই নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ বরং ভাবতে বাধ্য হচ্ছে যে, কমিশন প্রকৃতপক্ষে সরকারি দলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। একই কারণে মনে করা হচ্ছে, এই কমিশনের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। সরকার যে প্রভাব খাটাবে এবং পুলিশ ও প্রশাসনকে নিজদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ব্যবহার করবে সে বিষয়েও মানুষের মনে সন্দেহ নেই।
সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার বাধাহীন সুযোগ এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান পূর্বশর্ত বলেই আমরা দলীয় গু-া-সন্ত্রাসী এবং পুলিশ ও প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের হামলা, গ্রেফতার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। প্রতিবাদ জানাই নির্বাচন কমিশনের নীরবতা ও সরকারি দলের পক্ষে প্রশ্রয়ের বিরুদ্ধেও। আমরা মনে করি, সংবিধান ও আইন অনুসারেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং সবদলের প্রার্থীকে বাধাহীনভাবে অংশ নেয়ার ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার। এ ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের। অন্যদিকে সে কমিশনের বিরুদ্ধেই পক্ষপাতিত্বের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কমিশনকে অবশ্যই পক্ষপাতিত্ব পরিত্যাগ করে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রত্যেক প্রার্থীই বাধাহীনভাবে সভা-সমাবেশ করতে ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারেন। সরকার যাতে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেফতারের নামে প্রার্থী ও তার কর্মীদের হয়রানি না করতে পারে সে বিষয়েও কমিশনকে আইন অনুযায়ী শক্ত অবস্থান নিতে হবে। বর্তমান পর্যায়ে এটা বিশেষভাবে দরকার এ জন্য যে, ক্ষমতাসীনরা একদিকে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পক্ষে এখনও সমর্থন যোগাড় করতে পারেননি, অন্যদিকে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনেও তাদের ভরাডুবি ঘটেছে। সে কারণে আজকের তথা দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে বিজয়ের জন্য তারা মরিয়াভাবে চেষ্টা চালাবেন। বাস্তবে চালাচ্ছেনও। এজন্যই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব বেড়ে গেছে বহুগুণ। এই দায়িত্ব পালনে সামান্য অবহেলা করলেও কমিশনকে জবাবদিহি করতে হবে। বড়কথা, ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হবে জনগণ এবং বিপন্ন হয়ে পড়বে গণতন্ত্র। আমরা তাই কমিশনের প্রতি আরো একবার নিরপেক্ষ হওয়ার এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি জানাই।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শেষ নাটকটিও ফপ!


রাজনীতির বড় পুঁজি আত্মবিশ্বাস ও বিশ্বাসযোগ্যতা। বিশ্বাসযোগ্যতা মৌলিক মানবীয় গুণাবলি দিয়ে অর্জন করতে হয়। আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয়ার জন্য একটি আদর্শিক চেতনা লালন করা জরুরি। আদর্শ জন্ম নেয়ার জন্য একটি ধার্মিক মন থাকা প্রয়োজন। সেই ধার্মিক মন সৃষ্টির জন্য গতানুতিক ধর্মবিশ্বাস না হয়ে মানবিক ধর্মও হতে পারে। মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে হলে নিজের বিবেকের কাছে তো বটেই যেকোনো আদর্শিক ভাবনার কাছে একটি জবাবদিহিতা থাকতে হয়। কুপ্রবৃত্তি মানুষকে অসৎপ্রবণ হতে উৎসাহী করে। সু এবং কুর ধারণার উৎস মানুষের মগজ নয়। তবে বিবেককে কাজে লাগাতে মগজের ভূমিকা অপরিহার্য। মনের তাড়না মগজের সিগন্যালের মাধ্যমে কার্যকর হয়। মানুষকে চালায় মন না মগজ, এ বিতর্ক এখানে তোলা যাক।

কেন যেন মনে হয় আমাদের ক্ষমতাসীনদের মগজ বিগড়ে গেছে, নয়তো পচে গেছে। কারো কারো বিবেক মরে গেছে। বাইবেলসহ অন্যান্য ধর্মগ্র্রন্থে এ বিষয় সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ বক্তব্য রয়েছে। তাতে বলা আছে- ওদের চোখ থাকবে কিন্তু দেখবে না, ওদের কান থাকবে কিন্তু শুনবে না, ওদের মগজ থাকবে কিন্তু বুদ্ধির জোগান দেবে না। আমাদের জাতীয় জীবন এবং রাজনীতির ধারা প্রকৃতি নিয়ে মন্তব্য করতে গেলে রূঢ় শব্দ চয়নের যেন কোনো বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্য, আমাদের জাতীয় নেতাদের কঠিন, কঠোর ভাষা ও শব্দে নিন্দা, সমালোচনা ও পরামর্শ দিয়েও আশাবাদী হতে পারছি না।

গত বেশ কিছু সময় ধরে আমরা বলে আসছি, ক্ষমতার বরফ গলে গেছে। এ যাত্রায় আর জমাট বাঁধবে না। এর জন্য প্রতিপক্ষকে দায়ী করে লাভ নেই। বিরোধী দল না থাকলেও বর্তমান সরকার নিজের দোষের ভারে কুপোকাত হয়ে যাবে। এই দোষ দশটা ভালো কাজ দশটা মন্দ কাজের বিষয় নয়। বিষয়টা জাতীয় ঐক্য ও অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন। যেকোনো সরকার ভালো-মন্দের মিশ্রণে পরিচালিত হয়। জনগণ সব কর্ম-অপকর্মের সাক্ষী। তারা রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করতে যাবে না। কিন্তু ব্যালট পেপার হাতে পেলে প্রতিবাদের ভাষা প্রয়োগ করতে কার্পণ্য করবে না। জনগণের বিবেচনার বিষয় কিছু সাফল্য আর বেশির ভাগ ব্যর্থতারও ব্যাপার নয়। একেবারে মৌলিক প্রশ্নে সরকার জনগণকে বোকা ভেবে ও আহম্মক বানিয়ে দেশটাকে উল্টো দিকে ঠেলে নিতে চেয়েছে। 

এক সময়ের ছাত্রনেতা, বর্তমানের এক মন্ত্রীর ভাষায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতাই উপজেলা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ। নিজের ও দলের রাজনীতিকে সেইফ করে এ ধরনের বক্তব্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা আছে, কিন্তু সঙ্কটের সমাধান নেই। মন্ত্রী প্রবর উপসর্গকে রোগ ভাবছেন, আসল রোগ চিহ্নিত করছেন না। এই সরকারের সামগ্রিক অনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নিচ্ছেন না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী, দলীয় নেত্রী ও অন্যরা বাগাড়ম্বর না করে এতটুকুন বিষয়ে অকপট স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষমতা ছাড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলে ভালো করতেন। কে না জানে, পুরো ক্ষমতার মেয়াদে ছাত্রলীগ দাপটের সাথে অস্ত্রের মহড়া ও ক্ষমতার ঝাঁজ দেখিয়ে বেড়িয়েছে। যুবলীগ টেন্ডারবাজি আর বিরোধী দল দাবড়িয়ে বিরানি খেয়ে সময় কাটিয়েছে। আওয়ামী লীগ মাতোয়ারা ছিল নানা উপায়ে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে। লেহন, চর্বণ ও চাটাচাটি ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর দফতর আওয়ামী লীগ অফিসের বর্ধিত অংশ হিসেবে কাজ করেছে, এখনো করছে। সরকার ও দলের মধ্যে এক সুতা পরিমাণও ফারাক রাখা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর দলীয় ক্যাডারদের মধ্যে সখ্য এতই দৃষ্টিকটু ও লজ্জাকর- মানুষ তা দেখেও লজ্জা পেয়েছে, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার লজ্জা পায়নি। আজো পাচ্ছে না।

তুলনাটা অসম কিন্তু প্রাসঙ্গিক। ১৪ ডিসেম্বর আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করি। এবার থেকে প্রতিদিন ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী হত্যা দিবস পালন করতে হবে। টার্গেট করে এভাবে প্রতিপক্ষকে গুম করে ফেলা, হত্যা করার আংশিক নজির ৭৪ ও ৭৫ সালের সাথে তুল্য। তখন টার্গেট ছিল- সিরাজ সিকদার ও চৈনিক ধারার বামপন্থী, জাসদ কর্মী ও গণবাহিনীর সদস্য। এখন টার্গেট বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা-কর্মীরা।

ভাবতেও কষ্ট হয়। দেখে লজ্জাও পাই। আওয়ামী বুদ্ধিজীবী-পেশাজীবী ও মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের এবারই প্রথম লক্ষ করলাম অতিমাত্রায় ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের ধারক-বাহক হিসেবে। এত অনাচার, অনিয়ম, মানবাধিকার দলন, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ তাদের চোখে পড়ে না। ভাবখানা এমন কোনো কোনো দলের নেতা-কর্মীদের কোনো অধিকার থাকতে নেই। সরকারি দলের বিভিন্ন পার্শ্ব সংগঠনগুলোর চাঁদাবাজির হাত থেকে মহল্লার পান-বিড়ির দোকানিও রেহাই পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বলয় নেই। হালের সাংস্কৃতিক কর্মীরা মূলত বামপন্থী ঘরানার প্রতিনিধি। তারা আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে; ঘর করছে। তারা এতটা বাড়াবাড়ি করেছে যা সাধারণের দৃষ্টি এড়ায়নি। আবহমান বাংলার বিশ্বাস বিধৌত ঐতিহ্যকে তারা চুরমার করে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার কিন্তু বিশ্বাসের ধারক-বাহক এই বাঙালি সমাজ আবার বুঝল বাঙালি মুসলমান ও বাঙালি হিন্দু নামে আলাদা একটা পরিচয় আসলেই আছে। তার সাথে পরগাছা সংস্কৃতির লালনপালনকারী একটা ক্ষুদ্র অবিশ্বস্ত গণবিচ্ছিন্ন বামপন্থীও আছে। একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অতি উৎসাহ ও বাড়াবাড়ি দৃষ্টিকটুভাবে আগবাড়িয়ে চলার ঢঙ আমাদের সামাজিক বৈশিষ্ট্যকেও এবার চ্যালেঞ্জ করেছে। এই বাড়াবাড়ির জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কতটা দায়ী সেটা আওয়ামী লীগ ভাবুক, সাধারণ মানুষ কিন্তু এ ধরনের বাড়াবাড়ি মেনে নেয়নি। এর সাথে সাম্প্রদায়িকতা কিংবা সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু বিভাজনের কোনো সম্পর্ক নেই।

এখনো যেই কাঠামোতে উপজেলা ব্যবস্থা রয়েছে, সেই কাঠামোর উপজেলা নির্বাচন অত্যন্ত গৌণ বিষয়। জনগণের জাতীয় মানস ও হৃদয়স্পন্দন বুঝার জন্য সিটি করপোরেশন এবং উপজেলা নির্বাচন কোনো মুখ্য বিষয় নয়। তবে এ সময়ের প্রেক্ষাপটে এর জাতীয় তাৎপর্য রয়েছে। আমরা সরকারি দল ও বিরোধী দলকে বারবার একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছি, আপনারা কেউ মৌলিক বিষয় নিয়ে ভাবছেন না। ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ ভাঙা-গড়ার খেলায় মত্ত। বিরোধী দল রক্ষণভাগে বসে ক্ষমতার জন্য ভিন্ন ধরনের খেলায় রত। সরকার ও বিরোধী দল কারো উচিত নয় এ দেশের ডেমোগ্রাফি বা জনমিতি পাল্টে দেয়া। কারো এতটা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করা উচিত হবে না, যাতে মানুষের বিশ্বাসকে আহত করে। এতটা দুঃসাহসও দেখানো উচিত নয়, যাতে আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধগুলো হোঁচট খায়। তা ছাড়া মানুষের প্রতিষ্ঠিত ধারণাগুলো ক্ষমতার জোরে উপড়ে ফেলানোর অভিজ্ঞতা কখনো সুখকর হয় না। দেশকে ইতিহাসের মৌলিক গ্রন্থি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া কিংবা ইতিহাসকে পেছনে ঠেলার খেসারতটা সব সময় বড় হয়ে যায়। কারণ তাতে মানুষ নিজেকে বিপন্ন বোধ করে। বাহাত্তরে ফিরে যাওয়ার নাম করে সরকার যা যা করেছে তা সরকার ও দলকে লাভবান করেনি। চার মূলনীতি নিয়েও জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে। আল্লাহর ওপর আস্থার বিষয়টি সরকার যতটা হাল্কাভাবে দেখে, জনগণ দেখে একেবারে মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

আওয়ামী লীগ আমাদের রাজনৈতিক ধারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দল, ঐতিহ্যবাহীও। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ তার দলীয় বৈশিষ্ট্য লীন করে দিয়েছে। দলীয় মৌলিকত্বও বিসর্জন দিয়েছে। মূলত মডারেট দলের অবস্থান পরিবর্তন করে তারা নীতিভ্রষ্ট বামপন্থীদের জায়গা করে দিয়ে নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন করেছে। ওবায়দুল কাদেররা রাস্তা দেখভালে ব্যস্ত। আর ওবায়দুল কাদের জানেন না তার সমসাময়িক এক বাম ছাত্রনেতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সিলেবাস, নীতি, পাঠ্যসূচি ও মাদরাসা শিক্ষাকে কিভাবে তছনছ করে দিয়েছে। ওলট-পালট করে দিয়েছে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা। আমরা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের চেয়ে নিজেদের বেশি বুদ্ধিমান, জ্ঞানী ও দলের বেশি সুহৃদ মনে করি না। এ কারণেই আমাদের পরামর্শের চেয়ে মূল্যায়নটা বেশি। প্রেসক্রিপশনের চেয়ে মন্তব্য অধিক। প্রবীণ আওয়ামী লীগাররা লাইমলাইটে নেই। তার ওপর আমাদের চেনাজানা আওয়ামী লীগও আর নেই। এই আওয়ামী লীগ শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও ওসমানীকে মূল্যায়ন করছে না। আওয়ামী লীগের বিদেশনীতি জাতির জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে আনেনি। আগেও উল্লেখ করেছি, একটি ক্ষমতাসীন দল সব ভালো কাজ করে না। তার ওপর কিছু ভুল করতেই পারে। তা ছাড়া দল হিসেবে নিজস্ব কিছু এজেন্ডাও থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ নিজ দলের ও দেশের জনগণের কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে বলে জনগণ মনে করে না। টেকসই উন্নয়ন ছাড়াও কিছু মনোলোভা কসমেটিক উন্নয়ন ও ডিজিটাল ভাবনা অবশ্যই সামনে রাখতে হবে। এটা সব কিছু নয়, তবুও সমর্থনযোগ্য। ওবায়দুল কাদের দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা আবিষ্কার করেছেন, অথচ দলীয় ভুলগুলো চিহ্নিত করলে তারা আসলেই ভালো করবেন। এখনো কোনো প্রকৃত আওয়ামী লীগার বিএনপি-জামায়াত হয়ে যায়নি। বসন্তের কোকিল ও বাম অনুপ্রবেশকারী ছাড়া নতুন কোনো লোক আওয়ামী লীগে যোগও দেয়নি। বস্তুত আওয়ামী লীগ নৌকা ও ব্যানার ভাড়া দিয়ে দেউলে হয়ে গেছে। তারা ভেবে দেখেনি নেংটি ইঁদুর ঘরে ঢুকে মৌলিকত্ব ও স্বকীয়তার সব বীজ সাবাড় করে ফেলছে। সেই সাথে ইতিহাসের নিবিড় বন্ধনের সুতাও কেটে দিয়েছে। তাতেই জনগণ পনেরআনা বিগড়ে গেছে। অবশিষ্টটুকু অনাচারের খেসারত। এটাই আমাদের গুণগত রাজনীতির জন্য দুঃসংবাদ। আমরা ক্ষমতায় ও ক্ষমতার বাইরে আওয়ামী লীগকেও বারবার দেখতে চাই, তবে আওয়ামী লীগকে, রূপান্তরিত ও অপভ্রংশকে নয়। আওয়ামী লীগকেই ঠিক করতে হবে- তারা জাতীয় ঐক্য ও সমৃদ্ধি চায়, না ভাড়াটে শাসকের খাতায় নামটা চিরস্থায়ী করতে চায়।

আলকায়েদা ইস্যুটি ছিল দুর্বল প্রযোজনা ও অদক্ষ পরিচালনার আনকোরা গ্রন্থনার নাটক, যার কারণে বিশ্বাসযোগ্য করা যায়নি। ফপ মেরেছে। আদালতের কাঠগড়া থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও আরেক নাটক। পুলিশকে বিরোধী দল ও মত দমনের জন্য এভাবে ঠেঙ্গাড়ে বাহিনীতে রূপান্তর করলে কোনো নাটকই সফলভাবে মঞ্চায়ন করা যায় না। কারণ, মিথ্যা ও অপরাধ চিহ্ন রেখে যায়-  এটাকেই বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এবার জেএমবি নাটকও বিশ্বাসযোগ্য করা সম্ভব হয়নি। মুম্বাইয়া ফিল্মি স্টাইলের নাটকটির প্রযোজনা- পরিচালনা ও চিত্রনাট্যই শুধু দুর্বল নয়, কাহিনীটাই দুর্বল গাঁথুনির। এটা বিশেষ মহলের সিম্প্যাথি পেতে এবং জঙ্গীবাদ আসিলো আসিলোস্লোগানকে বিশ্বাসযোগ্য করতে সাহায্য করেনি। এর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পরিধি বাড়ালমাত্র। এভাবে সিদ্ধি লাভ সম্ভব নয়। আবার স্মরণ করিয়ে দেবো- কোনো ভালো কাজ খারাপ পদ্ধতিতে হয় না। প্রতারণা, শঠতা ও অতি চালাকি দিয়ে জনগণের মনও জয় করা যায় না, নির্বাচনে জয়ও নিশ্চিত হয় না। অতএব প্রতারণা করবেন না। প্রতারিত হবেন না।

মাসুদ মজুমদার


 

Ads