সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

অবৈধ তোরণ অপসারণ কি অন্যায়?


পবিত্র রমযানে দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে সংযম ও সদাচার কাক্সিক্ষত বিষয়। যারা দেশ পরিচালনা করেন, উন্নত সমাজ উপহার দেয়ার অঙ্গীকার করেন, সেই রাজনীতিবিদরা যদি সংযম ও সদাচারের ক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন তাহলে তা জনমনে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু রাজনীতিবিদদের আচরণ যদি উল্টো হয়, তাহলে তো জনগণের দুঃখের মাত্রাই শুধু বাড়বে। অনাকাক্সিক্ষত হলেও উল্টো আচরণই লক্ষ্য করা গেল গত রোববার রাজধানীতে।
পুলিশের বিরুদ্ধে তোরণ অপসারণের অভিযোগ এনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং নগরবাসীর ভোগান্তির মাত্রা বাড়ে। দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত তোরণ ভাঙ্গার প্রতিবাদে রোববার বিকাল সোয়া তিনটা থেকে মিরপুরের পল্লবী থেকে গুলিস্তানগামী সড়ক এবং মিরপুর থেকে গাবতলীগামী সড়কগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। অবরোধে মিরপুর থেকে গাবতলী ও গুলিস্তান সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয় যানজটের। অবরোধকারীরা জানান, কাফরুল ও ভাষাণটেক থানার ওসি’র নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শ্যাওড়া পাড়া, কাজী পাড়া, মিরপুর ১০ নম্বর, কচুক্ষেত ও ইব্রাহীমপুরের ১২টি তোরণ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এ কারণে তারা অবরোধ করেন। এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রমযান উপলক্ষে নাগরিকদের যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দিতে পুলিশ তোরণগুলো অপসারণ করেছে। এসব তোরণের কারণে রাজধানীর সড়কগুলোতে অতিরিক্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া এগুলো দুর্ঘটনারও কারণ হয়। পরে মিরপুর জোনের ডিসি এবং ভাষাণটেক ও কাফরুল থানার ওসির অপসারণ দাবি করে অবরোধ তুলে নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
আমরা জানি, যানজটের শহর রাজধানী ঢাকা। তার পরেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষে রাজধানীর রাজপথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে আমরা তোরণ নির্মাণের কর্মকা- লক্ষ্য করেছি। এসব তোরণ নির্মাণের ফলে যে নাগরিকদের যাতায়াতে কষ্ট হয় এবং যানজটের মাত্রা বাড়ে সে বিষয়টি আমলে নিতে চায় না আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। তোরণ নির্মাণের প্রোপাগান্ডায় সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের কোন লাভ হয় কিনা তেমন বিশ্লেষণ করার ধৈর্যও বোধ হয় তাদের নেই। বিশ্লেষণে উদ্যোগী হলে তারা বুঝতে পারতেন রাজপথে তোরণ নির্মাণের কারণে জনগণ বিরক্ত হয় এবং তাদের সমর্থনের পাল্লাও হাল্কা হয়। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিযোগ করার মতো বা ক্ষুব্ধ হওয়ার মতো অনেক বিষয় আছে। তবে পবিত্র রমযান মাসের প্রতি যুগ যুগ ধরে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সম্মান প্রদর্শন করে আসছে। রমযান মাসে রাজনৈতিক হাঙ্গামা ও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে তারা বিরত থাকেন। পবিত্র রমযান মাসে ধর্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে তারা নীতি-নৈতিকতা ও সংযমের বাণীও উচ্চারণ করে থাকেন। তাই রমযানের পূর্ব মুহূর্তে আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তোরণ অপসারণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সড়ক অবরোধের তৎপরতাকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। অবৈধ তোরণ অপসারণ করে জনগণের ভোগান্তি কমাতে পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা যৌক্তিক বলেই বিবেচনা করতে হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা যা ইচ্ছে তাই করে যাবেন, আর পুলিশ তাতে সমর্থন দেবে এমন তো হতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্রয় পেয়ে বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কেউ বাধা দেবে তা তারা মানসিকভাবে মেনে নিতে পারে না। ফলে তারা অবৈধ তোরণ অপসারণের ন্যায়সঙ্গত কাজকেও পুলিশের অপরাধ বলে বিবেচনা করছেন। তাই তারা এখন মিরপুর জোনের ডিসি এবং ভাষাণটেক ও কাফরুল থানার ওসির অপসারণ চাইছেন। জানি না সরকার অবৈধ তোরণ অপসারণের কারণে এই সব পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবি মেনে নেবেন কিনা? তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের এমন দাবিতে জনগণ বিস্মিত। পবিত্র রমযানের এই সময়েও যদি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা ও সংযমবোধ সৃষ্টি না হয় তাহলে আর কখন হবে?
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মাহে রমজান ইবাদাতের বসন্তকালে করণীয়-বর্জনীয়


কালের পরিক্রমার পথ ধরে মুসলিম উম্মাহর কাছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বারতা নিয়ে আবার শুভাগমন করলো পবিত্র মাহে রমজান। দীর্ঘ এগারটি মাসের পাপ পঙ্কিল  পথকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় এই রমজান। পবিত্র রমজানের আগমনে মুসলিম সমাজ ও ইসলামী জীবন ধারায় এক বিরাট সাফল্যের সৃষ্টি হয়। রমজান মাস হলো ইবাদাতের বসন্তকাল। আল্লাহপাক এ মাসে রহমতের বারিধারা বর্ষণ করেন। ইবাদতপাগল বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য সব আয়োজন করে রাখেন। এ মাসে একটি ফরজ আমলের মূল্য অন্য সময় সত্তরটি ফরজ আমলের সমপরিমাণ। রাসূলে করিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে  যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল,  সে  যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করল। আর  যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল,  সে  যেন অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায় করল।’  অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, 'নিশ্চয়ই  রোজা আমার জন্য, আর  রোজার প্রতিদান আমিই দান করি।'
রমজানে আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিনের নেজাম (নিয়ম বা রুটিন) পরবির্তন করেন। তাই আমাদেরও রমজান উপলক্ষে দৈনন্দিন চলার রুটিনে পরিবর্তন আনা উচিত। রমজানে নফল নামাজ আদায়, পবিত্র  কোরআন  তেলাওয়াত, তারাবির নামাজ আদায়, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আমলের জন্য আলাদা রুটিন করে রাখা অতীব জরুরি। অন্য মাস আর রমজানের মধ্যে পার্থক্য থাকা চাই।  রাসুল (সাঃ) বলেছেন রমজান মাসে আমার উম্মতকে পাঁচটি নিয়ামত দান করা হয়েছে যা আগের উম্মতকে  দেওয়া হয়নি (১)  রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে  মেশকের  চেয়ে  বেশী ঘ্রাণযুক্ত (২) ইফতার পর্যন্ত  রোজাদারের জন্য  ফেরেশতারা  দোয়া করেন (৩)  রোজাদারের জন্য প্রতিদিন জান্নাতকে সজ্জিত করা হয় (৪)  শয়তানকে বন্দি করা হয় (৫) রমজানের  শেষ রাতে সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হয়।
 রোজার মর্যাদা ও উপকারিতা:
১) জাহান্নাম  থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল
২) জান্নাতে যাওয়ার উৎকৃষ্টতম উপায়
এবং রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ
৩) গুনাহ  মোচনের অন্যতম মাধ্যম
৪)  রোজা কিয়ামতের দিন মুমিন ব্যক্তির জন্য শুপারিশকারী হবে।
৫)  রোজার পুরষ্কার আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন।
৬)  রোজার মাধ্যমে আচার-আচরণ ও চরিত্র সুন্দর হয়
৭)  রোজা মানুষকে আখেরাত মুখী করে
৮) সামাজিক সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে
৯) এটি আল্লাহ ও বান্দার মাঝে নিতান্ত  গোপন ইবাদত।
তাই এর মাধ্যমে আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পর্ক দৃঢ়তর হয়।
১০) আল্লাহর ইবাদতের এক অভূতপূর্ব  ট্রেনিং স্বরুপ।
 যেসব কারণে  রোজা নষ্ট হয়:
১.    নাক বা কানে ওষুধ প্রবেশ করালে।
২.    ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে।
৩.    কুলি করার সময় গলার মধ্যে পানি চলে  গেলে।
৪.    নারী স্পর্শ বা এ সংক্রান্ত  কোনো কারণে বীর্য  বের হলে।
৫.    খাদ্য বা খাদ্য হিসেবে গণ্য নয় এমন  কোনো বস্তু গিলে  ফেললে।
৬.    আগরবাতি ইচ্ছা করে গলা বা নাকের মধ্যে প্রবেশ করালে।
৭.    বিড়ি সিগারেট পান করলে।
৮.    ভুলে  খেয়ে  ফেলার পর ইচ্ছা করে পুনরায় খাবার  খেলে।
৯.    সুবেহ সাদিকের পর খাবার  খেলে।
১০.   বুঝে  হোক বা না বুঝে সূর্য  ডোবার আগে ইফতার করলে।
১১.    ইচ্ছা করে স্ত্রী সহবাস করলে।
 যেসব কারণে  রোজা মাকরুহ হয়:
১.    বিনা কারণে জিনিস চিবিয়ে বা লবণ কিংবা  কোনো বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা।  যেমন টুথপেস্ট, মাজন, কয়লা ইত্যাদি দিয়ে দাঁত মাজা।
২.     গোসল ফরজ অবস্থায় সারাদিন  গোসল না করে থাকা।
৩.    শরীরের  কোথাও শিঙ্গা ব্যবহার করা বা রক্তদান করা।
৪.    পরনিন্দা করা।
৫.    ঝগড়া করা।
৬.     রোজাদার নারী  ঠোঁটে রঙিন  কোনো বস্তু লাগালে যা মুখের  ভেতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৭.     রোজা অবস্থায় দাঁত উঠানো বা  দাঁতে ওষুধ ব্যবহার করা, তবে একান্ত প্রয়োজনে তা জায়েয।

 যেসব কারণে  রোজা ভঙ্গ হয় না কিংবা মাকরুহও হয় না:

১.    মিসওয়াক করলে।
২.    মাথায় বা শরীরে তেল লাগালে।
৩.     চোখে ওষুধ বা সুরমা লাগালে।
৪.    গরমের কারণে পিপাসায়  গোসল করলে।
৫.    সুগন্ধি ব্যবহার করলে।
৬.    ইনজেকশন বা টিকা দিলে।
৭.    ভুলক্রমে পানাহার করলে
৮.    ইচ্ছা ছাড়াই ধুলাবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করলে।
৯.    কানে পানি প্রবেশ করলে
১০.    দাঁতের  গোড়া  থেকে রক্ত  বের হলে।

রমজান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা  থেকে বিরত থাকা দরকার,  সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :
১. বিলম্বে ইফতার করা
২. সাহরী না খাওয়া
৩.  শেষের দশ দিন  কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা
৪. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা
৫. অপচয় ও অপব্যয় করা
৬. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা
৭. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা
৮.  বেশি  বেশি খাওয়া
৯. রিয়া বা  লোক  দেখানো ইবাদত করা
১০.  বেশি  বেশি ঘুমানো
১১. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য
১২. অশ্লীল ছবি, নাটক  দেখা
১৩.  বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা
১৪. বিদ‘আত করা
১৫. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা ইত্যাদি।
পাপ  মোচন আর সৎ কাজ করার সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে পবিত্র রমজান। এক অনাবিল শান্তি ও চিরস্থায়ী মুক্তির পয়গাম নিয়ে মাহে রমজান প্রতি বছরই আমাদের সামনে হাজির হয়। কিন্তু প্রতি বছরই এর আহবান থাকে চিরন্তন। এ মাসে ইবাদাত বন্দেগীর তাৎপর্য অনেক। এর আবেদনের  কোন  শেষ নেই।  রোজা ইসলামের  মৌলিক ইবাদাতের মধ্যে অন্যতম। আর এ  রোজা পবিত্র রমজান মাসেই আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে। তাই প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হলো ইবাদাতের বসন্তকাল পবিত্র রমজান মাসকে ক্বদর করা, নিজে উপকৃত হয়ে প্রকৃত  মুমিন হওয়া। আর এটাই হোক মাহে রমজানের শপথ। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে উপরোক্ত কথাগুলোর উপর আমল করার তাওফিক দিন। আমীন। 
মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমীন নগরী 

রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শুধু বড়াই আর বাহাদুরি


২০০৮ সালে সামরিক জান্তার সাথে আঁতাতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন সূত্রে ক্ষমতায় এসে জনমনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা আঁকড়ে আছে এরা। এই পুরোটা সময় হত্যা, লুণ্ঠন, ঘুষ, দুর্নীতি তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের সাধারণ লক্ষ্য থাকে ঘুষ, দুর্নীতি দূর, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মানুষের মৌলিক অধিকার ও জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সরকার এর কোনোটিতেই মনোযোগ দেয়ার সময় পায়নি। ক্ষমতায় আসীন হয়ে তাদের লক্ষ্য ছিল, কিভাবে রাষ্ট্রের সব সম্পদ লুণ্ঠন করা যায়, কিভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের পকেটে অর্থের জোগান দেয়া যায়, কিভাবে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের হত্যা-গুমের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করা যায়, এর সবই।
সে লক্ষ্য পূরণের জন্য অনেক খাত এরা বের করে নেয়। এগুলোর একটি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ। আরেকটি পদ্মা সেতু। এরপর ব্যাংক থেকে গচ্ছিত অর্থ লুট। এ ছাড়া টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এগুলো ঘটানোর ক্ষেত্রে বলতে গেলে এক ধরনের লাইসেন্স দেয়া হয়। যাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ কর্মীরা রাতারাতি বিত্তবান হতে পারে। আর সেই বিত্তের সাহায্যেই হতে পারে বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের মালিক। যখন তখন, প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে বিরোধীপক্ষকে খুন-গুম করতে পারে। কিংবা এই অস্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে আরো অর্থবিত্তের মালিক হতে পারে।
সে কারণেই প্রতিদিন সম্ভবত অগুনতি অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে। সেগুলো এত সঙ্গোপনে করা হচ্ছে যে, মাসখানেক ধরে চেষ্টা করেও এই সরকারের আমলে কতসংখ্যক অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে সেটি জানা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু আওয়ামী লীগ এখন আওয়ামী লীগেরই মাংস খুবলে খাচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের তরফ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতারা যেন ঘর থেকে একা বের না হন এবং সাথে যেন অস্ত্র রাখেন, আর রাখেন বিশ্বস্ত সঙ্গী ও দেহরক্ষী। অর্থাৎ একজন আওয়ামী নেতার জন্য চার-পাঁচটি অস্ত্রের অনুমোদন সিদ্ধ করা হচ্ছে। এসব অস্ত্রই আওয়ামী লীগ নেতাদের রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হবে এমন গ্যারান্টি নিশ্চয়ই দেয়া যায় না। এসব অস্ত্রের অপব্যবহার এবং এই অস্ত্রের মাধ্যমে খুন, গুম, ডাকাতি, অপহরণ অবধারিত হয়ে উঠবে। এখন হচ্ছেও তাই।
র‌্যাব-পুলিশকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার ফলে তাদের অনেকেই এখন বৈধ অস্ত্রের জোরে খুন, চাঁদাবাজি ও ভাড়াটে খুনি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শত শত ঘটনা ঘটছে নীরবে। কোনো কোনোটা প্রকাশিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডার’, ফুলগাজীর একরাম হত্যা’, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শামীমকে হত্যার চেষ্টা; এর সবই ঘটেছে দলীয় কোন্দলে। এই দলীয় কোন্দলে যারা জড়িত তারা সবাই আওয়ামী লীগ করেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। অস্ত্র সাথে রাখতে বললেন, গানম্যান রাখতে বললেন, বিশ্বস্ত সশস্ত্র সঙ্গী রাখতে বললেন। পারস্পরিক কোন্দলে জড়িত উভয়ের হাতে আরো অস্ত্র গেল। ফলে নরহত্যাযজ্ঞের আশঙ্কা বাড়ল বহু গুণে। এই হচ্ছে আওয়ামী সমাধান। ফলে গোটা বাংলাদেশ হতে বসেছে এক মৃত্যুপুরী, মৃত্যুর উপত্যকা।
এ ক্ষেত্রে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব হত্যাকাণ্ডের কিনারা করার বদলে সরকার অবিরাম হত্যাকারীদের পক্ষই অবলম্বন করে যাচ্ছে। যে গেছে সে তো গেছেই, যে রয়ে গেছে তাকে না ঘাঁটিয়ে সরকার তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। বিচার চাইতে গেলে বিপদ আরো বাড়ছে। প্রতিকার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুকাল আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বিএনপি নেতা শাহ নূরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল র‌্যাব। রাতভর নির্যাতন করে সকালে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। থানা এই মামলা নেয়নি। নিহতের স্বজনেরা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার প্রার্থনা করেছিলেন। আদালত র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরদিনই দৃশ্যপট উল্টে যায়। ওই ম্যাজিস্ট্রেটকে সরিয়ে দিয়ে নতুন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি আগের আদেশ পরিবর্তন করে ভিন্ন আদেশ দেন। সে আদেশে বলা হয় অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
অতিসম্প্রতি চাঁদার দাবিতে যশোরের দুই ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। চাঁদা না পেয়ে তাদের প্রাণে মারেনি বটে, কিন্তু পায়ে গুলি করে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। এরা উভয়েই এখন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই দুজনকেই বাঁচাতে তাদের পা কেটে ফেলতে হবে। সরকারের তরফ থেকে এর কোনো ঘটনা নিয়েই টুঁ শব্দটি করা হয়নি।
সরকার একটি লোক দেখানো মানবাধিকার কমিশন করেছে। তার চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কখন কী বলেন তার ঠিক-ঠিকানা নেই। তবু সম্প্রতি এসবের বিরুদ্ধে দু-চার কথা বলতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আর তার কণ্ঠস্বর বাতাসে মিলিয়ে যায়। ব্যস, এ পর্যন্তই। আওয়ামী লীগের নেতারা ইস্যু যাই থাক, পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান; এদের বিরুদ্ধে গালিগালাজেই অভ্যস্ত। এসব খুনখারাবি, অন্যায়-অবিচার কোনো কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। সমাজের এসব ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা কিংবা দিকনির্দেশনা কখনো শুনিনি। ফলে ধারণা করা যায়, সামনের দিনগুলো আরো ভয়াবহতা ও রক্তপাতের জন্য অপেক্ষমাণ।
আর লুণ্ঠন! এটি মনে হয় আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা বা ক্ষমতায় থাকার মূল উদ্দেশ্যে পরিণত হয়েছে। লুণ্ঠনের নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবন করে চলেছেন এরা। তার মধ্যে প্রধান ছিল নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বদলে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা এবং এর মাধ্যমে আওয়ামী নেতাদের পকেট ভারী করে তোলা। ইতোমধ্যে এই খাতে সরকার জনগণের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। আর সে টাকা গুনতে হয়েছে সাধারণ মানুষকেই। বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে, সাধারণ মানুষের পকেট কেটে এই টাকা নেয়া হয়েছে। এখনো নেয়া হচ্ছে। নতুন কোনো স্থায়ী বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট এই পাঁচ বছরে সরকার নির্মাণ করতে পারেনি। দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন যে, রেন্টাল-কুইক রেন্টালের ওপর এই মাত্রার নির্ভরতার ফলে পৃথিবীর অনেক দেশ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সুতরাং এটি বন্ধ করা হোক।
এই দাবি যখন উঠল তখন এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী শ্লেষাত্মক ভাষায় সমালোচনাকারীদের তিরস্কার করলেন এবং বললেন, এসব সমালোচনাকারীর বাসায় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হবে। রেন্টাল-কুইক রেন্টালে দেশ দেউলিয়াত্বের দিকে গেছে। কিন্তু লোডশেডিং কমেনি। শহরে দিনে দুই-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও গ্রামাঞ্চলে সারা দিনে বিদ্যুৎ থাকেই মাত্র কয়েক ঘণ্টা। গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ফলে কৃষি ও শিল্পপণ্যের উৎপাদনব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মাশুলও গুনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। যে সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি, ব্যয় বেড়েছে প্রতিনিয়তই। কিন্তু সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে ভাবার অবকাশ এই সরকারের নেই। কারণ যে দেশের মানুষ মুজিব হত্যার বিচার করেনি, এ কষ্ট তাদের হওয়াই উচিত।
এরপর আসা যায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক লুটের কাহিনীতে। বৃহৎ আকারে এই লুট প্রথম ধরা পড়ে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখায়। হলমার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কাগজপত্রে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে যায়। এই লুটের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা, এমন খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের লোক ছিলেন। কানের ডাক্তার। মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের সামরিক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যখন বিদেশে পাড়ি জামানোর চেষ্টা করেন তখন এই ডাক্তার অকাট্যপ্রমাণ তুলে ধরেন যে, বিবি এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার শব্দে শেখ হাসিনার দুই কানই অচল হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য তার বিদেশে যাওয়া প্রয়োজন। ওই একই সময়ে সংবাদপত্রে একটি ছবি ছাপা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল যে, শেখ হাসিনা দুই কানে দুই মোবাইল লাগিয়ে কথা বলছেন। যা হোক, ওই ডাক্তারের অবিরাম দাপাদাপিতে শেখ হাসিনা সে সময় বিদেশে পাড়ি জমাতে পেরেছিলেন। ফলে তিনি তার খুব কাছের লোক।
এ ক্ষেত্রে ব্যাংকও বোধ হয় নিরুপায় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর এত কাছের লোক! তার তদবির না শুনে উপায় আছে! আবার এই সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনা যখন প্রকাশিত হয়ে পড়ল, তখন অর্থমন্ত্রী বললেন, বাংলাদেশের জন্য এই সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কোনো ব্যাপারই না। অর্থাৎ ইচ্ছে করলে যে কেউ যেকোনো ছলচাতুরীর মাধ্যমে এই অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করতে পারেন। তাতে দোষের কিছু হবে না। তারপর আস্তে আস্তে থলে থেকে আরো সব কালো বিড়াল বের হতে শুরু করল। জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সর্বশেষ বেসিক ব্যাংক থেকে আরো হাজার কোটি টাকা লুটের খবর বেরিয়ে এসেছে। লুট কী লুট! ব্যাংক যদি কাউকে লোন দেয়, তাহলে তা চেকের মাধ্যমে ব্যাংক টু ব্যাংক হ্যান্ডেলিং হওয়ার কথা। কিন্তু বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখায় ঘটেছে আজব ঘটনা। লুটেরারা সন্ধ্যার পর পাজেরো গাড়ি নিয়ে ব্যাংকে এসেছেন, শত শত কোটি টাকা নগদে গাড়িতে তুলে চলে গেছেন।
ব্যবস্থা তেমন কিছুই হয়নি। হলমার্কের তানভীর বা জেসমিন জেলে আছেন। এরা সেখান থেকে প্রস্তাব করেছিলেন আরো কয়েক শকোটি টাকা ঋণ গ্রহণের। যাতে এরা আগে গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে পারেন। এ জন্য অন্য কোনো মন্ত্রী-উপদেষ্টা কোনো সুপারিশ করেছেন কি না জানি না। কিন্তু যে উপদেষ্টার তদবিরে অবৈধভাবে এই সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা অবমুক্ত হলো, তিনি আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাকে কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি।
আর পদ্মা সেতুর কথা না হয় নাই বললাম। সে সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি, আইডিবি খুব সামান্য শর্তে ঋণ প্রস্তাব করেছিল। সে প্রস্তাবের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর অতি প্রিয়ভাজন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সাড়ে তিন শকোটি টাকার ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্বব্যাংক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে সরকারকে বলেছিল, অর্থ পেতে হলে এই দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীকে অপসারণ করতে হবে। এতে ভয়ানক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বলে ঘোষণা করে তাদের অডিট রিপোর্ট দাবি করে বসেছিলেন। আর আবুল হোসেনকে ঘোষণা করেছিলেন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিক
পাদটীকা : পোশাকশ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিঠি পাঠানোকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলামের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেরি হার্ব বলেছেন, এ ধরনের বিবৃতিতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি খুবই জঘন্য এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হুমকি অথবা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে সুশীলসমাজের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হলে তার দায় সব বাংলাদেশীকেই নিতে হবে।
বাংলাদেশীদের জন্য এটি সুখবর নয়।

 ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


 

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

অন্যায় জুলুম অবিচার ও লোভ-লালসার বিরুদ্ধে রমযানের আহ্বান


অন্যায়, জুলুম, অবিচার ও লোভ-লালসাসহ সব পাপকাজ থেকে বিরত থাকার এক মহান শিক্ষা দেয় মাহে রমযান। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমান রমযান মাসে সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ্ র নৈকট্য লাভের জন্য আত্মার পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণে নিয়োজিত হয়। সারা দিন সব ধরনের পানাহার থেকে মুক্ত হয়ে মোমিন মুসলমানরা আল্লাহ্ র সন্তুষ্টি অর্জন করেন। অন্যায়, জুলুম, অবিচার এবং লোভ লালসাসহ সব ধরনের পাপকাজ থেকে বিরত থাকার এক মহান শিক্ষা দেয় মাহে রমযান। এ শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে নিজেদের পবিত্র মানুষ গড়ে তুলতে হবে। অনাচার, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি পরিহার করে সমাজে শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
রমযানের এ চিরায়ত আহ্বান বাংলাদেশে কতটুকু প্রতিপালিত হচ্ছে, বুকে হাত দিয়ে সবাইকে সে আত্ম-জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হওয়া দরকার। অন্যায়, জুলুম, অবিচার ও লোভ-লালসা এখানে সাপের মতো লকলকে জিহ্বা দিয়ে সবকিছু চেটে খাচ্ছে। সুইস ব্যাঙ্কে টাকা পাচারের কথা আলোচিত হচ্ছে। গুম-খুন-হামলা-মামলার মতো নির্মম জুলুম নির্যাতনের কথা উচ্চারিত হচ্ছে। মানুষের ছিনিয়ে নেয়া মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন আর ভোটের রাজনৈতিক অধিকারের প্রসঙ্গ বার বার ফিরে ফিরে আসছে আলোচনার টেবিলে। অতীতের মতো এ রমযানেও এসব কথা আলোচিত হচ্ছে। অন্যায়, জুলুম, অবিচার ও লোভ-লালসা-লুটপাটের বিরুদ্ধে রমযানের মহান আহ্বান সবাই শুনতে পায় কি-না, সেটাই এক বড় প্রশ্ন। বিশেষত, যারা কর্তা ব্যক্তি তারা কি সব করছেন, সে তথ্য-প্রমাণ তো চোখের সামনেই রয়েছে।
পরিস্থিতি কেমন নিয়ন্ত্রণহীন, সেটা বিলক্ষণ অনুধাবন করা যায় বাজার-দরের দিকে লক্ষ্য করলে। অর্থাৎ খুন করে বা গুম করে সাত-খুন-মাফের মতো দাম বাড়িয়ে বা ভেজাল দিয়েও বেশ বহাল তবিয়তে থাকা সম্ভব হচ্ছে। মানে হলো, ওপর থেকে নীচে সুবিধা মতো যেমন পারো করতে থাকো। জনগণ আর নীতি-নৈতিকতার দিকে তাকানোর দরকার নেই। সাংবাৎসরিক এহেন অবক্ষয় আদর্শিক রমযানের সময়েও দেখতে পাওয়া যাবে, সেটা ভাবতেও কষ্ট হয়। সরকার যে সারা বছরের মতো পবিত্র মাহে রমযানের উদাসিন থাকবে, সেটা কে জানতো! উদাসিন না হলে ঠিক রমযানের আগে আগে দামের এতো লাভ কেন? বন্যা নেই, খরা নেই, কোনও উপযুক্ত কারণও নেই, তবুও দাম বেড়েছে কেন, তার উত্তরও অজানা। এসব উদাসীনতা ছাড়া আর কি!
পত্রিকান্তরে প্রকাশ, বেগুন, আলু, টমেটোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কেজি প্রতি প্রায় ২০ থেকে ১০ টাকা। গত দু’দিন আগে বেগুন কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হতো। আজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। এছাড়া আলু ও টমেটোর দাম বেড়েছে কেজি প্রতি প্রায় ৫ থেকে ১০ টাকা। তবে বাজারে অন্যান্য কাঁচাপণ্যের দাম প্রায় একই রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারের কাঁচাপণ্য বিক্রেতা রিপন হোসেন বাংলানিউজকে জানান, হঠাৎ করেই গতকাল থেকে  বেগুন, আলু ও টমেটোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দামের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশী আলু (লাল) কেজি প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও সাদা ২৪ টাকা, কাকরোল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা, কুমড়া (জালি) ২০ থেকে ২৫ টাকা, কচুর লতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পটল ২৪ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কলমি শাক ৪ টাকা আঁটি, কলা একহালি ২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ ও পাতাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর চাল কেজি প্রতি (২৮ নতুন) ৩৬ থেকে ৩৭, পুরাতন ৪০ থেকে ৪২ টাকা, নাজিরশাল ৪৬ থেকে ৫২ টাকা, মাঝারি (পারিজা, বিআর-২৮) ৩৬ থেকে ৪০ টাকা, মোটা চাল (বিআর-৮ ও ১১) ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, গুটি, স্বর্ণা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সোয়াবিন তেল (খোলা) প্রতি লিটার ৯৮ থেকে ১০৫ টাকা, সরিষার তেল ১৪০ থেকে ১৫০ দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মশুরের ডাল দেশি (উন্নত) কেজি প্রতি ১০৪ থেকে ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১১০ থেকে ১১৫, ইন্ডিয়ান মুশুরের ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতিদিনই এভাবে কাঁচাপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতারাও খুবই বিরক্ত। মহাখালী কাঁচাবাজার থেকে বাজার করে বাড়ি ফিরছিলেন ওই এলাকার আফজাল হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছেই। বাড়ি থেকে এক হিসাব করে বাজারে আসি। আর বাজারে এসে দেখি পণ্যের দামের চিত্র ভিন্ন। বাজেটের সময় একবার বেড়েছে আর এখন রমযানকে সামনে রেখে প্রতিদিন বাড়ানো হচ্ছে।
সরকারকে এ কারণে উদাসীন বলা হয়েছে জনগণের পক্ষ থেকে এবং যারা মজুদদারি, মুনাফাখোরি করে কৃত্রিম দাম বাড়িয়ে অগাধ কালো টাকার মালিক হয়েছে, সেসব সরকারি-বেসরকারি দুর্নীতিবাজদের নিন্দাও করছে মানুষ। প্রকাশ্যে না পারলেও, গোপনে তো করছেই। বিশেষত কালো টাকার মালিক মজুদদার ও মুনাফাখোররা এক ঘৃণিত শ্রেণী। কিন্তু সরকারের বর্ষীয়ান অর্থমন্ত্রী কি বলছেন? তার সব কথা নিয়ে আলোচনা করলে ভিমরি খেতে হবে। তার সম্পর্কে প্রায়-সকলেই জানেন। শুধু এটুকুই উল্লেখ করা যথেষ্ট যে, তার উত্থাপিত ও প্রস্তাবিত আর্থিক বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে। তাহলে ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে কালো টাকা বানানো আর সেগুলোকে সাদা করার ব্যবস্থা থাকলে কালো টাকার চক্কর কি আদৌ বন্ধ হবে?
অথচ পবিত্র মাহে রমযান সব ধরনের অন্যায়, অপকর্ম, পাপাচার বন্ধ করার মাধ্যমে মানুষকে আত্মশুদ্ধির ডাক দেয়। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরয সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয়। আয়াতটি হলো- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরয করা হলো যেভাবে তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা সংযমী হও’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ্ আরো বলেন- ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসকে পায় সে যেন রোজা রাখে’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)। পবিত্র রমযানের ফযিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসের কিতাবগুলোতে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্য থেকে কিছু হাদিস বর্ণিত হচ্ছে। প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন রমযান মাস আসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় ও দোজখের  দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)। অপর হাদিসে হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, বেহেশতের আটটি দরজা রয়েছে। তারমধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)।
বিখ্যাত হাদিস বিশারদ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমযান মাসের রাতে এবাদত করবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত এবাদতে কাটাবে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।  (বুখারী, মুসলিম)।
আরো এসেছে, প্রিয় নবী সল্লাল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্  তায়ালা এরশাদ করেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা (জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেনো লিপ্ত না হয়। কেউ গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্ত্বার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহ্র নিকট রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরির সুঘ্রাণ হতেও উত্তম। রোজাদারের খুশির বিষয় দু’টি। যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারী)।
অপর একটি হাদিসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজা ও কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহ্র কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমযানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। বায়হাকী। হাদিস শরীফে আরো এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন রমযানের প্রথম রাত আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। এ মাসে এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকে, হে ভালোর অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী! থামো। আল্লাহ্  তায়ালা এ মাসে বহু ব্যক্তিকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন। আর এটা প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রমযান মাস উপস্থিত হতো তখন রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব কয়েদিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক যাচ্ঞাকারীকে দান করতেন। (বায়হাকী)। আর আমরা বাংলাদেশে কি করছি? উচ্চ থেকে নীচ স্তর পর্যন্ত কি হচ্ছে, সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু পরিতাপই এসবের একমাত্র প্রতিষেধক হবে? হা-হুতাশ না করে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো; ভালোকে ভালো আর মন্দকে মন্দ বলার সততা ও সাহসিকতার মাধ্যমেই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। মাথার উপর চেপে থাকা অসৎ ও অযোগ্যদেরকেও এক সময় প্রকৃত সত্য কথাটি জানিয়ে দিয়ে বিদায় করতে হবে। পবিত্র মাহে রমযানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আল্লাহ্  সুবহানাহু তা‘য়ালা  সেই আত্মশুদ্ধি ও সততার পথে আমাদেরকে পরিচালিত করুক। আমিন।

শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঢাকায় সুষমা স্বরাজের ৩৮ ঘণ্টা ॥ একটি নিষ্প্রাণ ও নিরুত্তাপ সফর



এই কলাম লিখছি শুক্রবার দুপুর পৌনে ১ টায়। কিছুক্ষণ আগেই স্বদেশে উড়ে চলে গেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ৩৮ ঘন্টার এক ঝটিকা সফরে এসেছিলেন সুষমা স্বরাজ। এই সফর নিয়ে আওয়ামী ঘরানার মধ্যে চলেছে তুমুল জল্পনা কল্পনা। তাদের লেখালেখিতে এবং আওয়ামী বান্ধব টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে এমন ভাব দেখানো হচ্ছিলো যেন, সুষমার এই সফরের পরেই বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে দুধ এবং মধুর নহর বয়ে যাবে। কিন্তু আমি প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে সন্দিহান ছিলাম। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর সফল হোক, এটা অবশ্যই আমি কামনা করেছি। তাই বলে দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র ১ মাসের মাথায় বাংলাদেশে এসে ভারতীয় মন্ত্রী সব গুলো সমস্যা রাতারাতি সমাধান করে দিয়ে যাবেন সেটি কোন সময়েই সম্ভব হবে বলে মনে করিনি। ১০ বছর কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। এই ১০ বছরে কংগ্রেস সরকার কি রেখে গেছে সেটি তো আগে নতুন বিজেপি সরকারকে বুঝে নিতে হবে। আর তাছাড়া কংগ্রেস সরকার দুইটি মেয়াদে যা যা করে গেছে, তার সব কটির জের টানতে হবে, এমন কথা তো রাজনীতি বা পররাষ্ট্রনীতির খাতায় লেখা নাই। এছাড়াও বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক খুব জটিল। এই জটিলতাকে ভাঙ্গতে গেলে বিজেপিকে বেশ কিছু কাঠখড় পোড়াতে হবে। সেই কাজটি করার সময় এখনও বিজেপি সরকার পায়নি। সেজন্যই আমি সব সময় ধারণা করেছি এবং লিখেছি যে এই সফরটি হবে ‘ঋধসরষরধৎরংধঃরড়হ ঞড়ঁৎ’ অর্থাৎ উভয় দেশের সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝেও জানাশোনা এবং বোঝাপড়ার সফর। 
সুষমা স্বরাজ চলে গেছেন। যাওয়ার আগে এমন কিছুই বলে যাননি। তবে তার সফরের একটি দিক বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। বিশেষ ভাবে এ কারণে যে, আওয়ামী লীগ তথা সরকার চায়নি যে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে বিএনপি প্রধান এবং ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার সাক্ষাৎ বা বৈঠক হোক। এটি আমাদের কোন মনগড়া কথা নয়। ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের পত্র-পত্রিকায় এই খবরটি এসেছে। ভারতের পত্রিকায় এ কথাও লেখা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকার সুষমা খালেদা প্রস্তাবিত বৈঠক অনুষ্ঠানের পথে বাগড়া দিচ্ছে। এ সম্পর্কে ভারতের প্রভাবশালী ও বহুল প্রচলিত ইংরেজী দৈনিক ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে’ গত ২৫ জুন বুধবার যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেই রিপোর্টের অংশবিশেষে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ যাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করেন সে বিষয়ে তদবির চালাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। তারা সুষমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার সাক্ষাতের কোন প্রয়োজন নেই।  গতকাল ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে’ প্রকাশিত ‘নো ওয়ার্ড ফ্রম খালেদা ইয়েট অন সুষমা মিট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এর লেখক শুভজিৎ রায়। তিনি লিখেছেন, এক বছর আগে প্রথম সফরে বাংলাদেশে আসেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। সে সময় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। এখন এক বছর পরে বাংলাদেশের পাওয়ার করিডোর বা ক্ষমতার বৃত্তে বড় প্রশ্ন হলো- এবার কি তিনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন? সুষমা স্বরাজ ও খালেদা জিয়ার মধ্যে বৈঠকের আনুষ্ঠানিক শিডিউল ঘোষণা করেনি নয়া দিল্লি। এ বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে যে, এ দু’নেত্রীর মধ্যে যাতে বৈঠক হয় সে জন্য দু’পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন এবার একেবারে নীরবে কাজ করছে। এবার যাতে বৈঠক হয় সে জন্য খালেদা জিয়ার অফিস খুব আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু ২০১৩ সালের মার্চে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করার সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তি তুলে ধরছেন যে, খালেদা জিয়া এখন আর বিরোধীদলীয় নেত্রী নন। ফলে তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাক্ষাৎ করার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভারতে এখন নতুন নেতৃত্ব। নতুন সরকার ক্ষমতায়। তারা চাইছেন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে। এ জন্য ভারতীয় পক্ষ জাতীয় পার্টির নেতা, এইচএম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চেষ্টা করছে।” 
॥দুই॥
সরকারী বাধা উপেক্ষা করে সুষমা স্বরাজ বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। বেগম জিয়ার টিমের সাথে ভারতীয় টিম ৩০ মিনিট ব্যাপী বৈঠক করে। তারপর বেগম জিয়া এবং সুষমা স্বরাজ ১০ মিনিটব্যাপী একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকের ওপর প্রেস ব্রিফিং করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান এবং বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. শমসের মবিন চৌধুরী। বৈঠক শেষে শমসের মবিন ও মঈন খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত তার পাশের দেশ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে চায় কি না, সেটিও তিনি সুষমা স্বরাজকে বলেন। বেগম খালেদা জিয়া এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুরুদ্ধারে মোদি সরকার যেন ভূমিকা রাখে। ভারতের নতুন সরকার বাংলাদেশের বিশেষ কোনো দল নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায় বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন।
এছাড়া ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া সুষমা স্বরাজকে উদ্ধৃত করে যে কথা বলেছেন সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার বক্তব্য অনুযায়ী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি বলেছেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে এ সরকারের ক্ষমতারোহন সমর্থন করে না ভারত। এজন্যই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, ‘বিরোধী দলকে সহ্য করতে না পারলে গণতন্ত্র টেকে না।’ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সুষমা স্বরাজের এই ৩৮ ঘন্টার ঝটিকা সফরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই যে, এই সফর শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন যৌথ বিবৃতি দেননি। অথবা কোন যৌথ সংবাদ সম্মেলনও করেননি। অন্তত শুক্রবার বেলা ৩ টা পর্যন্ত টেলিভিশনে তাদেরকে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে দেখা গেল না। আরেকটি ব্যাপার উল্লেখ করার মতো। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন সরকার পক্ষের সাথে কথা বলেন তখন সেই বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন খোদ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। কিন্তু ভারতীয় পক্ষে সুষমা স্বরাজকে বক্তব্য দিতে দেখা গেল না। বরং তার তরফ থেকে বক্তব্য দিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র আকবর উদ্দিন। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাথে। তাদের এই বৈঠককে অত্যন্ত ফর্মাল বা আনুষ্ঠানিক মনে হয়েছে। সমগ্র বিষয়ে প্রাণের উষ্ণ ছোঁয়া টের পাওয়া যায়নি। আওয়ামী পন্থী সাংবাদিক কলামিস্ট এবং বুদ্ধিজীবিরা যাই বলুন না কেন, সমগ্র সফরটিকে কেমন যেন নিষ্প্রাণ এবং নিষ্প্রভ মনে হয়েছে।
॥তিন॥
এই সফরের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নি¤œরূপ ঃ-
১.         সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে ভারত চেষ্টা করে যাবে।
২.         ১৩ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের ওপরের বাংলাদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা প্রবর্তনের বিষয়টি সক্রিয় ভাবে বিবেচনা করা হবে।
৩.        পরীক্ষামূলক ভাবে ঢাকা- শিলং- গৌহাটি বাস সার্ভিস প্রবর্তন করা হবে।
৪.         ত্রিপুরার পালাটোনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।
৫.         তিস্তার পানি বন্টন চুক্তির লক্ষ্যে যাতে একটি ঐকমত্যে পৌঁছা যায় সে জন্য ভারত তার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
৬.        ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য বাংলাদেশ তার মাটিকে ব্যবহার করতে দেবে না।
৭.         ভারতও বাংলাদেশ থেকে আগত কোন সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দেবে না।
৮.         যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক উপযুক্ত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
৯.         মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের ফ্রিকুয়েন্সী বাড়ানো হবে।
১০.       মেঘালয় সীমান্তে আরও ৪০টি সীমান্ত হাট বসানো হবে।
            উপরোক্ত ১০ টি কি পয়েন্ট ছিল ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৩৮ ঘন্টা সফরের ফলাফলের সংক্ষিপ্ত সার। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল খবর দিয়েছে যে, স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী যাতে রাজি হন সে জন্য মোদি সরকার যেন জোর প্রচেষ্টা চালান।
আমি ভেবেছিলাম, সুষমা স্বরাজ সফর শেষে ঢাকা বিমান বন্দর থেকে দিল্লী উড়ে যাচ্ছেন, অন্তত এই দৃশ্যটি টেলিভিশনে দেখানো হবে। অতীতে এই ধরনের দৃশ্য অনেক বার দেখানো হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার বেলা ৪ টা পর্যন্ত একাধিক টিভি চ্যানেল ঘুরলাম। কিন্তু এই দৃশ্য দেখতে পেলাম না। কেন দেখানো হলো না সেটা আমার মাথায় আসছে না। এবারের আলোচনায় পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক ভারত কানেকটিভিটিও দাবি করেনি। অর্থাৎ ট্রানজিট বা করিডোরকে অন্তত এই সফরে সাইড লাইনে রাখা হয়েছে। অতীতে এই দাবিটিকে খুব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করা হতো। এবার করিডোরের ঢাকের বাজনার আওয়াজ খুব ক্ষীণ। ভারতের তরফ থেকে বার বার বলা হয়েছে যে মোদির সরকার দল বিশেষের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে না। তারা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে দুই দেশের জনগণ এবং সরকারের সাথে। এই বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই ভারতের সবগুলো রাজনৈতিক দল নয়, শুধুমাত্র কংগ্রেস দলের সাথে সম্পর্ক গড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং কংগ্রেসের সম্পর্ক ৫ দশকের পুরাতন। সেখানে বিজেপির কোন স্থান নাই। সেই পটভূমিতে যখন বলা হয় যে, ভারত দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন এবং সেটি নিবিড় করার ব্যাপারে আগ্রহী তখন সেটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি চিঠি হস্তান্তর করেছেন। এই চিঠিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত সফরের দাওয়াত দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘরানা এই আমন্ত্রণকেও তাদের সাফল্য বলে প্রচার করছে। খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন যে, সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশে আসার ফলে বেগম খালেদা জিয়ার মুখে নাকি চুনকালি পড়েছে। এই ধরনের মন্তব্য এতই বালখিল্য, হাস্যকর এবং অজ্ঞতাপূর্ণ যে মন্তব্যকারীকে করুণা ছাড়া আর কিছু করা যায় না। কেউ বেড়াতে এলে গৃহস্বামী খুশি হন। কিন্তু তাই বলে পাশের বাড়ির গৃহস্বামী ঐ প্রথম বাড়ির মেজবানের ওপর অসন্তুষ্ট হবেন কেন ? এগুলো হীনমন্যতা এবং সংকীর্ণ মনের পরিচয় দেয়। আমরা এতক্ষণ যা বললাম সেগুলো কতদূর সঠিক বা বেঠিক, সেটি বোঝা যাবে আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে। ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আসিফ আরসালান
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রতারণাতন্ত্র নয় গণতন্ত্র চাই


বাংলাদেশে দুর্নীতি ও অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য দায়ী রাজনৈতিক নেতাদের প্রতারণা। নেতারা রাজনীতির ব্যবসা করেন। গণতন্ত্রের নামে দেশে প্রতারণাতন্ত্র চলছে। যে কারণে দেশ হতে নিরক্ষরতা ও দরিদ্রতা যায়নি। ’কিনতু হাজার হাজার কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার সময় কোটি নয়, কোন লাখপতিও ছিল না।
পথভ্রষ্ট ছাত্রদের মানবতা, মানবিক দায়িত্ব, কর্তব্য ও গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন শিক্ষাবিদরা। যে কারণে ছাত্ররা শিক্ষাঙ্গনে নিজেরাই মারপিট করে। সন্দেহ হচ্ছে কথিত তিনটি বিষয়ে অধ্যাপকরা সচেতন আছে কিনা।
রাজনৈতিক কোন দলেই গণতন্ত্র নেই। কণ্ঠভোটে নেতা নির্বাচিত হয়। কণ্ঠভোটে নেতা নির্বাচন একটি প্রতারণা। কে কে ভোট দেয়নি চিনে রাখা। তাই অনেকেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভয়ে ভয়ে কণ্ঠ মেলাতে থাকেন।
কণ্ঠভোটে সংসদে আইন পাস হতে পারে, কিন্তু দলীয় নেতা নির্বাচন জাতির জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। দেশে যোগ্য নতুন নেতার আত্মপ্রকাশ হচ্ছে না। এটা জাতির অপূরণীয় ক্ষতি; উন্নতির পথে বাধা।
রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকার কারণে অনেকেই মস্তান পোষে। সততা ও ন্যায়বিচার না থাকায় প্রশাসনের অধিকাংশ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারী হতাশ হয়ে অপকর্মের ¯্রােতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। এতদ্ব্যতীত দলের কর্মীদের মধ্যে আত্মঘাতী সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং হচ্ছে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই চলছে গণতন্ত্রের নামে প্রতারণা। জীবনসায়াহ্নে আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ থেকে প্রতারণাতন্ত্র ঝেড়ে ফেলে সুস্থ রাজনীতির লক্ষ্যে এভাবে গণতন্ত্র চর্চা করলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। পদ্ধতিটি কোন দলে চালু আছে কিনা, জানা নেই। ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা নির্দেশ করে যে, রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতন্ত্র এভাবে থাকা উচিত।
নি¤œতম সংগঠন, ইউনিয়ন অফিসে সদস্যদের তালিকা থাকতে হবে। সদস্য হওয়ার কিছু শর্তাবলী অবশ্যই থাকতে হবে যার একটি হচ্ছে মাসিক বা ত্রৈমাসিক চাঁদা দান করা, যার রশিদ দিতে হবে।
সদস্যদের গোপন ভোটে ইউনিয়ন সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে। গ্রাম বা এলাকা থেকে  গোপন ভোটের মাধ্যমে কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করতে হবে। কোন পদের জন্যই প্রার্থী থাকবে না। ভোটাররা যে যাকে যোগ্য মনে করেন, ভোট দেবেন। যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি নির্বাচিত হবেন।
কেউ নেতা হওয়ার জন্য ভোটারদের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন প্রমাণিত হলে, তাকে ভোট দেয়া যাবে না। নির্বাচনের মুহূর্তে ভোটারদের জানিয়ে দিতে হবে।
উপজেলায়ও এভাবেই নির্বাচন হবে, তবে ভোটারদের সুবিধার্থে তিনজনের প্যানেল তৈরি করে দিলে ভালো হয়। কিন্তু প্যানেলের বাইরেও ভোটারদের বিবেচনায় যোগ্যতর ব্যক্তি থাকলে তাকেও ভোট দিতে পারবেন এবং তিনি বেশি ভোট পেলে তিনিই নির্বাচিত হবেন। প্যানেল তৈরি হবে ইউনিয়নসমূহের নির্বিাচিত প্রতিনিধিদের গোপন ভোটে।
এভাবেই জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা গণতন্ত্রের দাবি। যে কোন প্যানেল তৈরি হবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গোপন ভোটে।
সভাপতি, সেক্রেটারি ও সহ-সম্পাদকের পদে নিয়োগ দেবেন কর্মপরিষদের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে।
সকল জেলা ও বিভাগের সভাপতি কেন্দ্রীয় পরামর্শসভার সদস্য হবেন এবং তাদের গোপন ভোটে নির্বাচিত আরও কয়েকজন সদস্য নেবেন।
চেয়ারপাসন চার-পাঁচজন উপদেষ্টা নেবেন কর্মপরিষদের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে।
বিদেশে যাদের ব্যবসা অথবা ব্যাংক একাউন্ট আছে অথবা আমদানি বা রফতানি করেন কিংবা বিদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন। কিংবা বিদেশী স্ত্রী বা স্বামী গ্রহণ করেছেন তারা নেতৃত্বের পদ পাবেন না।
সংগঠন পদ্ধতি বা গঠনতন্ত্রের বিষয়টি দীর্ঘ বিধায় আমার সংক্ষিপ্ত আবেদন এখানেই শেষ করছি।
দেশের নির্বাচন কমিশন যদি দলীয় না হত তাহলে সুবিধাবাদী দলগুলোকে গণতন্ত্রের পদ্ধতি অনুসরণ করতে বাধ্য করে ছাড়ত।
অবশেষে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিনীত আবেদন, সঠিক গণতন্ত্রের পথে চলুন, জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। মনে রাখবেন, দরিদ্র জনগণের আহাজারি থেকে বিধাতা আপনাদের রেহাই দেবে না। সুতরাং অবিলম্বে প্রতারণা ত্যাগ করে মানবতার পথ ধরুন।

শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

হঠাৎ সেই খলনায়কের সাফাই


কোনো কথা নেই বার্তা নেই, আকস্মিকভাবে আবারও দৃশ্যপটে এসেছেন বিদেশে ‘সোশ্যাল ওয়ার্ক’ করার নামে দেশ থেকে কেটে পড়া সাবেক সেনা প্রধান এবং তথাকথিত ওয়ান-ইলেভেনের প্রধান খলনায়ক জেনারেল (অব.) মইন উ আহমেদ। সম্প্রতি নিউইয়র্কের একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নানা কথার আড়ালে নিজের পক্ষে যথারীতি সাফাই গেয়েছেন তিনি। তার এ সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ বাংলাদেশের একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে গত ১৯ জুন। এতে তত্ত্বাধায়ক সরকারের নামে দু’ বছরের অবৈধ শাসন, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের নির্যাতন থেকে কিংস পার্টি গঠন এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা পর্যন্ত অনেক বিষয়েই বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের ওপর ‘টর্চার’ চালানোর প্রসঙ্গ। প্রশ্নের জবাবে মইন উ বলেছেন, তারেক রহমানকে যে ‘ধরে আনা’ হয়েছে তা তিনি নাকি জানতেনই না! পরে যখন জেনেছিলেন তখন নাকি ‘অনেক দেরি হয়ে’ গিয়েছিল! অবশ্য তাকে ‘টর্চার’ করা হয়েছে এমন ‘একটা খবর’ তিনি পরে জেনেছিলেন। মইন উ প্রসঙ্গত বলেছেন, তারেক রহমানকে নাকি তার নির্দেশে নির্যাতন চালানো হয়নি। নির্যাতন নাকি চালিয়েছিলেন একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। সাফাই গাইতে গিয়ে মইন উ আরো বলেছেন, সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই একজন (সামান্য!) লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে সরাসরি নির্দেশ দেবেন না। তার যা কিছু করার সবই করাতেন তিনি ডিজিএফআইকে দিয়ে। এ ব্যাপারে তৎকালীন ডিজিএফআ্ই-এর ডিজিকে জিজ্ঞেস করতে বলেছেন তিনি।
এখানে বলা দরকার, অন্য সব সাফাইয়ের মতো এ সাফাইয়ের ক্ষেত্রেও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন সেদিনের এই খলনায়ক। কারণ, একজন সেনাপ্রধান নিজে সাধারণত কখনো এত নিম্নমানের কোনো কাজ করেন না, করান অন্যদের তথা অধীনস্থদের দিয়ে। এ কথাটাই কিন্তু এতদিন ধরে বলা হয়েছে। ডিজিএফআই-এর হর্তাকর্তা যারা ছিলেন তাদের কারো ঘাড়েই একটির বদলে দুটি বা তার বেশি মাথা বা কল্লা ছিল না যে, তারা এই খলনায়কের ইচ্ছা বা নির্দেশের বাইরে কিছু করার দুঃসাহস দেখাবেন তাও তারেক রহমানের মতো একজন তরুণ নেতাকে যথেচ্ছভাবে নির্যাতন করার এবং প্রায় পঙ্গৃু করে ফেলার ঝুঁকি নেবেন। অমন অবস্থা ওই দিনগুলোতে কারো ছিল নাÑ বিশেষ করে বেঁটে জেনারেলের হুকুম বা ইচ্ছার বাইরে সেনাবাহিনীর কারো কিছু করার তো প্রশ্নই উঠতে পারে না। এতদিন পর হঠাৎ করে মইন উ কেন তারেক রহমানের ব্যাপারে সাফাই গাইতে গেলেন এবং কেন সব দোষ চাপালেন একজ অধীনস্থ লেফটেন্যান্ট কর্নেলের ওপর সে প্রশ্নের জবাব জানার জন্য এই মুহূর্তে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। তবে একটি কথা বলে রাখা যায়। কথাটা হলো, এমন এক সময়ে তিনি সাফাই গেয়েছেন যখন তারেক রহমানকে নিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, যখন ক্ষমতাসীনরা হঠাৎ উঠে-পড়ে লেগেছেন বিএনপির এই সম্ভাবনাময় নেতার বিরুদ্ধে। হতে পারে, তারেক রহমানের সম্ভাবনা দেখে সেদিনের খলনায়ক হয়তো আগেভাগেই নিজের রাস্তা পরিষ্কার করতে চাচ্ছেন। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, এ ব্যাপারেও তিনি সেনাবাহিনীর শৃংখলাবিরোধী কাজ করেছেন। কারণ, কোনো সেনা অফিসারই ঊর্ধ্বতন অফিসারের নির্দেশের বাইরে কোনো কাজ করতে পারেন না। তারা শুধু ওপরের হুকুমই তামিল করেন। সুতরাং মইন উ কিছুই জানতেন না, ‘টর্চার’ চালানোার নির্দেশ তিনি দেননি এবং ‘টর্চার’ চালিয়েছিলেন একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ ধরনের সাফাই কোনো কাজেই আসতে পারে না। উল্টোটিই বরং ঘটতে পারেÑ যদি কখনো ওই লেফটেন্যান্ট কর্নেলই আবার মুখ খুলে বসেন!
সাক্ষাৎকারে নিজের বর্তমান দুর্দশা, ক্যান্সারসহ শারীরিক অসুস্থতা, গাড়ি-বাড়ি না থাকায় এর-ওর আশ্রয়ে বসবাস করা এবং ধাক্কাধাক্কি করে বাসে যাতায়াত করার মতো বহু গালগল্পই শুনিয়েছেন মইন উ আহমেদ। সবচেয়ে কৌত’হলোদ্দীপক বিষয় হিসেবে আবারও এসেছে তার প্রেসিডেন্ট না হওয়ার বহুবার শোনানো কাহিনী। এই সাক্ষাৎকারেও মইন উ বলেছেন, ‘আমি কোনোদিন প্রেসিডেন্ট হতে চাইনি। প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে হতে পারতাম। সেই সুযোগ ছিল।’ কথাটা তিনি এর আগেও বলেছেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট হতে চাননি বলে যে দাবি তিনি করেছেন সেটা যেমন সত্য নয় তেমনি একথাও অত্যন্ত কঠিন সত্য যে, তিনি চাইলেই প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। পাঠকদের মনে পড়তে পারে, ২০০৯ সালে এই মর্মে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, ওয়ান ইলেভেনের ওই দু’ বছরের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য মইন উ অন্তত তিনবার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে সময়ও এক সাক্ষাৎকারে খুবই দম্ভের সঙ্গে মইন উ বলেছিলেন, ‘আমি যদি প্রেসিডেন্ট হতে চাইতাম তাহলে তো হয়েই যেতাম। কেউ আমাকে স্টপ করতে পারতো না।’ দাম্ভিকতাপূর্ণ এ কথাগুলোই কিন্তু প্রমাণ করে, দুঃশাসন এবং জুলুমবাজির দুই বছরে কতটা ক্ষমতাধর ছিলেন তিনি। হাতে বন্দুক ছিল বলে আসলেও তার কথার বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না কারো। তা সত্ত্বেও তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। কারণ, প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি তার একার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল না। ছিল অন্য কিছু বিশেষ ফ্যাক্টর যারা তার চাইতেও ক্ষমতাধর ছিল। ঘটনাপ্রবাহে প্রমাণিত হয়েছে, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মতো দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং জাতিসংঘও বাংলাদেশের পটপরিবর্তনে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতার রদবদলের ক্ষেত্রেও তারাই নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং এমন বোঝানোর সুযোগ নেই যে, মইন উ চাইলেই প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন এবং কেউই তাকে ‘স্টপ’ করতে পারতো না। তথ্যভিত্তিক পর্যালোচনায় বরং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট হতে না চাওয়াটা মোটেও তার ইচ্ছা বা অনুগ্রহের ব্যাপার ছিল না। চেষ্টা তিনি প্রথম থেকেই করেছিলেন কিন্তু তাকে ‘স্টপ’ করা হয়েছিল। আর এই ‘স্টপ’ করানোর কাজটুকু সে শক্তিগুলোই করেছিল, মইন উ যাদের সেবাদাস ছিলেন। বস্তুত সেবাদাস ছিলেন বলেই মইন উ’র পক্ষে প্রভুদের উচ্ছা ও নির্দেশের বাইরে যাওয়ার উপায় ছিল না।
এখানে অন্য একটি বিশেষ তথ্য উল্লেখ করা দরকার। মইন উ বিদায় নেয়ার এবং নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বেশ কিছু উপলক্ষে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দুই বছরের কোনো এক পর্যায়ে তার কাছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব এসেছিল। শর্ত ছিল, নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি থেকে সরে আসতে হবে। অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে মনোনীত প্রধানমন্ত্রী বানানো হবে। একই প্রস্তাব পরে খালেদা জিয়ার কাছেও গিয়েছিল। মইন উ’কে যখন ‘স্টপ’ করার মতো কেউ ছিল না তখন একা তিনি নিজে ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এ ধরনের প্রস্তাব পাঠানো সম্ভব কি না, যে কেউ তা ভেবে দেখতে পারেন। অর্থাৎ দুই নেত্রীর কাছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব মইন উ’ই পাঠিয়েছিলেন। আর একথা তো ধরেই নেয়া যায় যে, দেশে একজন প্রধানমন্ত্রী থাকলে একজন প্রেসিডেন্টও থাকতে হবে। পদটি পাওয়ার ব্যাপারে তার যে খুবই আগ্রহ ছিল সে কথারও প্রমাণ পাওয়া গেছে বিভিন্ন উপলক্ষে। যেমন ক্ষমতা দখল করার পর পর, ২০০৭ সালের ২ এপ্রিল পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পঠিত মূল নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশের জন্য ‘নিজস্ব ব্র্যান্ডের গণতন্ত্র’ এবং প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিলেন। পরবর্তী দিনগুলোতেও সুযোগ পেলেই তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। এ থেকেও ধরে নেয়া যায়, তিনি শুধু প্রেসিডেন্টই হতে চাননি, চেয়েছিলেন যথেষ্ট ক্ষমতাধর একজন প্রেসিডেন্ট হতেও। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ইচ্ছা তো ছিলই, চেষ্টায়ও তার ত্রুটি ছিল না। কিন্তু তাকে ‘স্টপ’ করানো হয়েছিল। সুতরাং এমন কিছু বোঝানোর চেষ্টা নিতান্ত হাস্যকর যে, তিনি চাইলেই প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে হননি।
বলা দরকার, কেবলই তারেক রহমানের ওপর নির্যাতন চালানোর এবং প্রেসিডেন্ট হওয়া না হওয়াসহ অন্য কিছু বিষয়ে তার বক্তব্য উল্লেখ করার জন্য সাবেক এই সেনাপ্রধানের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়নি। হয়েছে তার সামগ্রিক কর্মকা-ের পরিপ্রেক্ষিতেÑ যেগুলো একই সঙ্গে দেশ, গণতন্ত্র, জাতীয় অর্থনীতি এবং সেনাবাহিনীর সর্বনাশ ঘটিয়েছিল। ২০০৯ সালের ১৫ জুন অবসর নেয়ার পর পর ২৮ জুন গভীর রাতে দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে, বিশেষ করে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আয়োজিত নির্বাচন নামের কার্যক্রমের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে দেশ ও জাতিকে তিনি বন্দুকের ভয় দেখিয়ে ইচ্ছাধীন রেখেছিলেন। অস্ত্রের মুখে প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে বাধ্য করে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে বেরিয়ে এসেছে নানা অপকর্মের কেচ্ছা-কাহিনী। দুর্নীতি উচ্ছেদের নামে মইন উ ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা দেশে ‘ব্ল্যাকমেইলিং’-এর রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। ক্ষুদে ব্যবসায়ী থেকে বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত কাউকেই রেহাই দেননি তারা। অনেকভাবেই দেশে-বিদেশে বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর হুকুম চাপানোর মাধ্যমে রাজনীতিতে অনেক ওলট-পালট করার চেষ্টা করেছেন তিনি। সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা এবং জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদসহ প্রধান নেতা-নেত্রীদের ‘জেলের ভাত’ খাইয়েছেন। দুই নেত্রীকে ‘মইনাস’ করতে চেয়েছেন। তারেক রহমানের আগে-পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলসহ অনেকের ওপর প্রচ- শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন। অনেককে দিয়ে জোর করে মিথ্যা বলিয়েছেন। এ উদ্দেশ্যে আরেক সাবেক সেনা প্রধানের মাধ্যমে দুদককে ‘কাজে’ লাগিয়েছেন তিনি। ‘স্বাধীন’ দুদককে দিয়ে মামলার পর মামলা চাপিয়ে নেতা-নেত্রীদের ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন মইন উ। রাজনীতিকদের অসম্মানতীও করেছেন তিনি যথেচ্ছভাবে। ‘জাগো বাংলাদেশ’ ধরনের বিচিত্র স্লোগান শুনিয়ে জাতিকে তিনি ‘সংস্কার’ ও ‘নিজস্ব ব্র্যান্ডের গণতন্ত্রের’ ট্যাবলেট গেলাতে চেয়েছেন। সবই করেছেন তিনি বন্দুকের ভয় দেখিয়ে এবং সামরিক স্বৈরশাসকদের স্টাইলে।
ভারতের স্বার্থে সীমান্ত খোলা রেখে বিডিআরকে দিয়ে ‘দোকানদারি’ করানোর, মাত্র তিন কেজি চালের জন্য মানুষকে ট্রাকের পেছনে দৌড়াতে বাধ্য করার  এবং মানুষের বাসাবাড়ি-দোকানপাট ও বড় বড় বাণিজ্যিক ভবন ভেঙে ফেলার মতো অপকর্মগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে এখনো আলোচিত হচ্ছে। তার হুকুমে হকার উচ্ছেদের নামে লাখ লাখ গরীব মানুষের ‘পেটে লাথি মারা’ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন তিনি সেনাবাহিনীর। রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত থাকায় মাসের পর মাস সেনাবাহিনী রুটিন অনুযায়ী এক্সারসাইজ করতে পারেনি। ফলে তাদের পেশাগত দক্ষতা কমে গেছে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে চাকরির নামে সেনা সদস্যদের মধ্যে তিনি অর্থের লোভ ঢুকিয়েছেন, ব্ল্যাকমেইলিং-এর কাজে নিয়োজিত রেখে সেনাবাহিনীতে দুর্নীতির বিস্তার ঘটিয়েছেন। পিলখানা হত্যাকা-ের সময়ও তাকে অত্যন্ত নেতিবাচক অবস্থানে দেখা গেছে। বিপন্ন সেনা অফিসারদের জীবন বাঁচানোর চিন্তা পর্যন্ত না করে তিনি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ‘যমুনা’য় উঠেছিলেন। ভীরু-কাপুরুষের মতো সেখানেই রাত পর্যন্ত কাটিয়ে এসেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ৪৬ ব্রিগেডের সেনারা পিলখানার আশপাশে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিলেও জেনারেল মইন তাদের অভিযান চালাতে নিষেধ করেছেন। অথচ জেনারেল (অব.) এরশাদসহ একাধিক সাবেক সেনাপ্রধান এবং সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঘাতকরা সেনাবাহিনীর সামনে ১০ মিনিটও দাঁড়াতে পারতো না। ৪৬ ব্রিগেডকে অভিযান চালাতে দেয়া হলে এত সেনা অফিসারকে হত্যা করা সম্ভব হতো না, সাধারণ মানুষেরও প্রাণহানি ঘটতো না। এমন নিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও মইন উ সেনাবাহিনীকে অভিযান চালাতে দেননি বলেই তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচারণা রয়েছে, মইন উ’র এই ভূমিকার কারণে ঘাতকরা ‘কাজ সারার’ এবং পালিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছিল। রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকা-ে তো বটেই, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও সেনাবাহিনীকে সর্বতোভাবে জড়িত করেছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাসহ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকেই সামনের কাতারে রাখা হয়েছে। জনগণকে ধারণা দেয়া হয়েছিল, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়ার বাইরে সেনাবাহিনী আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না। অন্যদিকে ‘জুতা সেলাই থেকে গীতা পাঠ করা’ পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই সেনাবাহিনীকে আঠার মতো লাগিয়ে রেখেছিলেন এই ‘বেঁটে জেনারেল’। তিনি যেহেতু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য ন্যক্কারজনকভাবেই কাজ করে গেছেন, সে কারণে সেনাবাহিনী সম্পর্কেও সংশয় ও প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল। তার ভূমিকায় গোটা সেনাবাহিনীই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সমর্থক পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যদিও এই কর্মকা-ে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর দায়দায়িত্ব ছিল না। 
বর্তমান পর্যায়ে সংক্ষেপে বলা যায়, সমান্তরাল সরকার চালানোর মাধ্যমে অর্থনীতিসহ সকল বিষয়ে দেশ ও জাতিকে অনেক পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে গেছেন মইন উ। কিন্তু হাতে বন্দুক ছিল বলে তাকে কারো কাছে কখনো জবাবদিহি করতে হয়নি। বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন তিনি সুচিন্তিত আয়োজনের ভিত্তিতে। সে আয়োজনের পেছনে ছিল তার দিক থেকে আওয়ামী লীগের ‘খেদমত’। দলটিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে তার সুস্পষ্ট ‘অবদান’ রয়েছে। তাছাড়া ‘রোড ম্যাপ’ তৈরি করার সময় মূল পরিকল্পনা সেভাবেই করা হয়েছিল। পরিকল্পনায় ‘প্রয়োজনীয়’ সবাইকে ‘সঙ্গে’ রাখা হয়েছিল যাদের ওই মুহূর্তে প্রয়োজন ছিল তাদেরকে তো বটেই, পরবর্তীকালে যাদের প্রয়োজন পড়বে তাদেরকেও। এজন্যই আওয়ামী লীগ সরকারের ওপরও ‘ঋণ’ পরিশোধ করার দায়ভার চেপেছিল। কিন্তু কথার নড়চড় হয়েছে শুধু একটি বিষয়ে। ‘বেঁটে জেনারেল’কে বঙ্গভবনে বসবাস করার তথা প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। মইন উ’কে বরং বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানকে স্যালুট করতে হয়েছিল। এজন্য অবশ্য মইন উ’র কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ থাকার কথা নয়। কারণ, লগি-বৈঠার হত্যা ও তা-ব থেকে ‘ডিজিটাল’ নির্বাচন পর্যন্ত সবকিছু যে ‘রোডম্যাপ’ অনুযায়ী ‘সুসম্পন্ন’ করা হয়েছে, সে ‘রোডম্যাপের’ বাস্তবায়নে প্রধান নির্ধারকের ভূমিকা পালন করে গেছেন মইন উ। অঘোষিতভাবে পুরস্কৃতও যথেষ্টই হয়েছেন তিনি। এত কিছুর পরও সে একই জেনারেল এতদিন পর হঠাৎ কেন তারেক রহমানকে নির্যাতন করার প্রশ্নে সাফাই গেয়েছেন কৌত’হলোদ্দীপক সে প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমরা অপেক্ষায় রইলাম।
আহমদ আশিকুল হামিদ 

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি


সরকারের পক্ষ থেকে আশার কথা শুনিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালানো হলেও বাস্তবে দেশের অপরাধ পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। দৈনিক সংগ্রামের এক বিশেষ রিপোর্টে জানা গেছে, দেশজুড়ে অপরাধ বেড়ে চলেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধগুলো অনেক আগেই মানুষের জন্য ‘ডাল-ভাতে’ পরিণত হয়েছে। মানুষ আতংকিত হচ্ছে আসলে গুম ও খুনের মতো রক্ত হিম করে দেয়া অপরাধের কারণে। দৈনিক সংগ্রামের এই রিপোর্টে তথ্য-পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে জানানো হয়েছে, চলতি বছর ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত ১৬৯ দিনে খুনের শিকার হয়ে সারাদেশে মারা গেছে এক হাজার ৭৫৬ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন খুন হয়েছে ১১ জন। উদ্বেগের অন্য এক কারণ হলো, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের যখন জোর তৎপরতা চালানোর কথা তখনও খুনের মতো ভয়ংকর অপরাধ দিন দিন শুধু বেড়েই চলেছে। জুনের ১৮ তারিখ পর্যন্ত পরিসংখ্যানের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে পূর্ববর্তী মাস মে’র তুলনায় চারজন বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রিপোর্টে অন্য একটি আশংকাজনক তথ্যেরও উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে এতে জানানো হয়েছে, গুম আর খুনের ঘটনা বেড়ে চলেছে আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে যেখানে চার হাজার ৯৯ জন মানুষ খুনের শিকার হয়েছিল, ২০১৩ সালে সেখানে চার হাজার ৩৯৩ জনকে খুন করা হয়েছে। অপরাধ কেন বেড়ে চলেছে তার কিছু কারণও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান কারণ হিসেবে তথ্যাভিজ্ঞরা সরকারের ব্যর্থতার কথা জানিয়েছেন। দলীয় লোকজনকে চাকরি দিয়ে র‌্যাব ও পুলিশের জনবল বাড়ানো হলেও আাইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনীগুলো মারাত্মক ব্যর্থতা দেখিয়েছে বলেই অপরাধও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রয়েছে র‌্যাব ও পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করার কর্মকান্ড। আাইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আসল কাজ ফেলে এসব বাহিনী সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে আর এর ফলে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। র‌্যাব ও পুলিশকে তারা গণনায়ই আনছে না। একই কারণে বেআইনী অস্ত্রের ব্যবহারও আশংকাজনক হারে বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি তথ্যাভিজ্ঞদের অভিমতের উল্লেখ করে দৈনিক সংগ্রামের আলোচ্য রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করার পরিবর্তে র‌্যাব ও পুলিশকে স্বাধীনভাবে তাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হলে এবং প্রতিটি অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ এমনিতেই কমে আসবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, খুন ও গুমসহ সামগ্রিক অপরাধ পরিস্থিতি সম্পর্কিত দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্টটি যে কোনো মূল্যায়নে অত্যন্ত ভীতিকর। রিপোর্টে বলা হয়েছে বলে শুধু নয়, আসলেও আজকাল এমন কোনোদিনের কথা বলা যাবে না, যেদিন দেশের কোথাও না কোথাও, কোনো না কোনো মানুষকে খুনের শিকার না হতে হচ্ছে। সরকারের হিংসার টার্গেট হয়ে গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মিরা। তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র সাদা পোশাকধারীরা। স্বজনদের পাশাপাশি প্রত্যক্ষদর্শীরাও একবাক্যে জানাচ্ছেন, সাদা পোশাকধারীরা র‌্যাব ও পুলিশের সদস্য। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা তো ইতিহাসই সৃষ্টি করেছে! বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অনেক উপলক্ষেই সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। বাস্তবেও পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়েছে যে, এই অভিযোগকে পাশ কাটানোর উপায় নেই। কারণ, দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্দোলনে তৎপর বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মিরাই গুম ও গুপ্তহত্যার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থারই সুযোগ নিচ্ছে পেশাদার খুনী-সন্ত্রাসীরা। জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ থেকে চাঁদাবাজি পর্যন্ত নানা কারণে ও অজুহাতে তারা হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের লোকজনকে তো বটেই, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যদেরকেও তাদের সঙ্গে অংশ নিতে বা গোপনে তাদের সাহায্য করতে দেখা যাচ্ছে। এর ফলে জানাজানি হওয়ার পরও কেউ ধরা পড়ছে না। বিচার কিংবা শাস্তি দূরে থাকুক, সরকারের লোকজন উল্টো তাদের সীমান্ত পার করে দিচ্ছে। সরকারের আশ্রয়েও অনেক অপরাধী দেশের ভেতরে বসবাস করছে। অন্যদিকে সমাজে এসব নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় ভীতি-আতংক ছড়িয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, জনগণকে যাদের নিরাপত্তা দেয়ার কথা সে পুলিশ ও র‌্যাবের বিরুদ্ধেই গুম ও গুপ্তহত্যার অনস্বীকার্য অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে অবস্থা এমন হয়েছে যে, নিরীহ মানুষেরাও আজকাল শংকাহীনভাবে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না।
দেশের ভেতরে সাধারণ মানুষের মধ্যে কেবল নয়, বিদেশেও এমনকি সরকারি পর্যায়েও এসব হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটতে এবং হত্যার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। যেমন গত সোমবার এ বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনরা কথায় কথায় যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দোহাই দিয়ে থাকেন তারাও সরকার সম্পর্কে আস্থা হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে এখনো কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং পুলিশের আ্ইজি বরং দৈনিক সংগ্রামের প্রশ্নের জবাবেও আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি সম্পর্কে যথারীতি কলেরগানের ভাঙা রেকর্ডই বাজিয়েছেন। বলেছেন, পরিস্থিতি নাকি স্বাভাবিক রয়েছে! আমরা মনে করি,এমন বাস্তবতার প্রতি এমন উপেক্ষার দৃষ্টি কোনও ভাবেই কাম্য নয়। সুতরাং সময় থাকতে সরকারের এমনভাবে তৎপর হওয়া উচিত যাতে আর একজন মানুষকেও হত্যার শিকার না হতে হয়। যাতে অপরাধীরা গ্রেফতার হয় এবং কঠোর শাস্তি পায়। যাতে র‌্যাব ও পুলিশ তাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেতে পারে।

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০১৪

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আওয়ামীলীগ পর্দানশীন নারীদেরকে আর কত অপমান করবে ?


মানব জাতির অর্ধেক ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নারী। তাদেরকে অবহেলা ও উপেক্ষা করে মানব সভ্যতার উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই পৃথিবীতে ইসলাম নারীকে সবচেয়ে বেশী অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে। নবী করিম (সা:) বলেছেন প্রথমে কন্যা সন্তান প্রসব করায় মায়ের সৌভাগ্য নিহিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (সা:) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূূল আমার কাছ থেকে সুন্দর আচরণের সবচেয়ে বেশি হকদার কে? তিনি বললেন, তোমার মা। আগন্তুক জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। পুনরায় উক্ত ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? নবী করীম (সা:) বললেন, তোমার পিতা। (বোখারী) পৃথিবীতে এমন কোন আমল নেই, যে আমল করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অত্যন্ত দ্রুত অর্জন করা যায়। কিন্তু একমাত্র মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার এবং প্রাণভরে তার খেদমত করলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি দ্রুত অর্জন করা যায়। সেই মায়ের জাতিকে সবচেয়ে অপমান, অপদস্থ করছে আওয়ামীলীগ। 
আওয়ামীলীগের আমলে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় নারী সমাজ বেশী নির্যাতিত, অপমাণিত, অধিকার বঞ্চিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুখে নারীদের অধিকারের কথা বলেন, আর নিরপরাধ, পরহেজগার, বোরকা পরা মেধাবী ছাত্রীদের  গ্রেফতার করছেন অব্যাহত ভাবে। সর্বশেষ গত ১৬ জুন খিলগাঁও এলাকার একটি বাসা থেকে ২৪ পর্দানশীন নারীকে গ্রেফতার করলো পুলিশ। তাদের হাতে খাতা-কলম ছাড়া কিছুই পাওয়া যায়নি। এই ছাত্রীরা ঢাবি, বুয়েট, মেডিক্যাল সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। তাদের প্রথম  অপরাধ তারা দ্বীনি তালীমের জন্য এখানে একত্রিত হয়েছে যেটা এই সরকারের দৃষ্টিতে দন্ডনীয় অপরাধ। দ্বিতীয় অপরাধ তারা বোরকা পরে, আর শেখ হাসিনার বর্তমান শাসনামলে এটা জঘন্য অপরাধ। তৃতীয় অপরাধ-এই মেয়েগুলো ইসলামী ছাত্রীসংস্থার নেতা-কমী, তারা ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করে। আওয়ামীলীগ ভারতীয় নষ্ট সংস্কৃতি উলঙ্গপনা বেহায়াপনাকে লালন করছে আর বোরকার মধ্যে খুঁজছে নাশকতা, জঈী ইত্যাদি এই সরকারের গোটা শাসনামলতো তাই হয়েছে। তাদের লালিত পুলিশ-র‌্যাবকেও সেভাবেই তালিম দেয়া আছে। সুতরাং বোরকা নিয়ে  নাটক সাজাতে এই সরকারের ডিজিটাল বাহিনীর খুব বেশী সময় লাগেনা। আর তাদের গৃহপালিত কিছু মিডিয়ার কাজতো তিল কে তাল বানিয়ে প্রচার করা। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে ছাত্রীসংস্থাতো কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়? তাহলে ইসলামের কথা বলাই তাদের অপরাধ? কিন্তু এই অপরাধ মহাগৌরবের। এই সৌভাগ্য সবার কপালে জোটেনা। আজকের আধুনিক জাহিলিয়াতের সময়ে আল-ইসলামের সাথে এই ছাত্রীগুলো নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে। পর্দানশীন এই মেয়েরা দেশ জাতির সম্পদ। এরা হযরত সুমাইয়া (রা:) জয়নাব আল গাজালী, মিশরের শহীদ বেলতাগীর যোগ্য উত্তরসুরী। যে পিতা-মাতা এমন দ্বীনদার সন্তানদের জন্ম দিয়েছে তারা সত্যিই সৌভাগ্যবান। তাদেরকে অভিনন্দন।
আওয়ামীলীগ বোরকাকে কত খারাপভাবে দেখে তার প্রমাণ ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী পুত্র জয় যুক্তরাষ্ট্রের এক ম্যাগাজিনে লিখেছিলেন, বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে ৪০০ গুণ বোরকার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের। “বিদেশী একজন ব্যক্তির সাথে তার যৌথ প্রবন্ধ নিয়ে সেই সময় অনেক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। সুতরাং এই সরকারের বোরকা বিরোধী মনোভাব বিভিন্ন সময় তাদের বক্তব্য থেকে রেরিয়ে এসেছে। বোরকার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে সরকারের ডেপুটি স্পিকার বললেন, “কুৎসিত চেহারা ঢাকতেই মহিলারা বোরকা পরে। বর্তমানে বোরকার অধিক ব্যবহারে তিনি কষ্ট পেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন। এছাড়াও মন্ত্রী আব্দুল লতিফ নিজেই বোরকা বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেন। সরকারের সেই কর্মসূচীর অংশহিসেবে এবার বোরকা পরা ছাত্রীদের আটক অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
বিগত ৫ বছরে ভয়াবহ নারী নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি ছাত্রী-শিক্ষিকা অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ মানবাধিকার নেত্রীও; সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার পর্দানশীন নারীরা। এই সরকারের নারী নির্যাতনের চিত্র অনেক ভয়াবহ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার এবং দলীয় ক্যাডারদের মাধ্যমে নিত্য নতুন পৈশাচিক কায়দায় চালানো নির্যাতনের চিত্রগুলো অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিশেষ করে জঙ্গি কর্মকান্ডের অপপ্রচার চালিয়ে ধর্মপ্রাণ নামাযী, বোরকাপরা ও ভিন্ন রাজনৈতিক মত ও আদর্শের কর্মী সমর্থকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা ছিলো বেশি ভয়ংকর। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই নিরীহ নারীদেরকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের বহু ঘটনায় দেশ-বিদেশের বিবেকবান মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তবে এক্ষেত্রে সরকার ও তাদের মদদপুষ্ট মানবাধিকার এবং নারী সংগঠনগুলো ছিলো একেবারে নির্বিকার।
আওয়ামীলীগ বার বার বলছে তারা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ইসলাম বিরোধী কোন কাজ করবে না। কিন্তু পর্দা ইসলামের মৌলিক একটি ফরজ ইবাদত। সুতরাং বোরকা বিরোধী অভিযান কুরআন-সুন্নাহ ও  মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন নয় কি? প্রধানমন্ত্রী একজন  মা হিসেবে  কিছু সময়ের জন্য ভাবুন তো? গভীর রাতে একজন মেয়েকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি কত জঘন্য? গ্রেফতার হওয়া এই মেয়েগুলোর বাবা-মা কত উদ্বিগ্ন সময় কাটাচ্ছে!  অনবরত চোখের পানি ফেলছে পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু মজলুমের চোখের পানি বৃথা যায়না। মজলুমের ফরিয়াদ আর আল্লাহর আরশের মাঝখানে কোন দেয়াল নেই। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো মেয়েদের মধ্যে অন্ত:সত্ত্বা নারী, দুগ্ধপান করা শিশু, পরীক্ষাথী থাকার পরও তাদের মুক্তি দেয়া হচ্ছেনা। অথচ ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তদের খালাস দেয় এই সরকার। হায়রে! আইনের শাসন। হায়রে! বিচারের নামে প্রহসন। কত অমানবিক,জঘন্য আর কত ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে এই সরকার!! কোরআন শরীফ, ইসলামিক বই রাখা আর বোরকা পরার অপরাধে পুলিশ এই নিরীহ, নিরপরাধ, পরহেজগার মেধাবী ছাত্রীদের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। অবশ্য আদালত তা মন্জুর না করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। এটা এ জাতির জন্য কলঙ্কের, বেদনার ও লজ্জার। এই সৎ চরিত্রবান মেয়েদের সারা রাত আটক করে থানায় রেখেছে পুলিশ। জানা গেছে ঐ মেয়েগুলোর প্রত্যেকেই তাদের ডিপার্টমেন্টে ভালো রেজাল্টের অধিকারী। তাহলে ৯০% মুসলমানের দেশেও এই মেয়েগুলোর নামাজ পড়া, ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা আর বোরকা পরা-ই কি একমাত্র অপরাধ?
সরকারের বোরকা বিরোধী অভিযানের কয়েকটি
১.     ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল বরিশালের নিউ সার্কুলার রোডের এক বাড়িতে র‌্যাব হানা দিয়ে বোরকা পরে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য জড়ো হওয়ার অপরাধে ২১ নারীকে গ্রেফতার করে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জঙ্গি সংশি¬ষ্টতার কোনো তথ্য না পেয়ে ২১ পরহেজগার নারীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়া হয়। ঘটনার দীর্ঘ ২ মাস পর ২৩ জুন আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেন।
২.     ২০০৯ সালের ১৯ জুন রাজশাহীতে জঙ্গি সন্দেহে ১৫ নারী ও শিশুকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুক্তি ঘোষণার পর আবার ৫৪  ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ১১ দিন কারাবাস শেষে আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেয়।
৩.    ২০০৯ সালের ৩ জুলাই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগরে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীদের প্ররোচণায় পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে তিন তরুণীকে গ্রেফতার করে। তিন দিনের রিমান্ড তিন তরুণীকে ঢাকায় টিএফআই সেলে নিয়ে আসা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অমর সিংহ তাদেরকে বোরকা খুলতে বাধ্য করে। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ছিল সতর বছর।
৪.     ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইডেন ও বদরুন্নেছা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
৫.     ২০১০ সালের ৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি ক্লাসে ‘মধ্যযুগীয় পোশাক বোরকা’ পরা যাবে না এবং এটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো পোশাক হতে পারে না বলে ফতোয়া জারি করেন।
৬.    ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে তল্লাশির নামে পর্দানশীন ও নামাযী ছাত্রীদের হয়রানির ঘটনা ঘটে। ছাত্রীদের রুম থেকে ইসলামী বই-পুস্তককে জেহাদী বই বলে তা জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রশাসনের সহায়তায় এ ধরনের কর্মকান্ডে সারাদেশে বোরকাধারী ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
৭.     ২০১০ সালের ২১ জুন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৯ ছাত্রীকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদের পর কোনো অভিযোগ না পেয়ে রাত ৩টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
৮.    ১লা অক্টোবর ২০১০  সাইপ্রাসের এক পর্যটক নারী জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ছবি তুলতে গেলে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
৯.     ২০১১ সালের ৯ জুলাই উত্তরা উইমেন্স কলেজে ছাত্রী সংস্থার প্রচারপত্র দেখে ৩ ছাত্রীকে আটক করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একজন শিক্ষিকা। পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাংচুরের মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। পরে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়
১০.   ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২০ শিক্ষার্থীসহ ২১  জনকে পুলিশ আটক করেছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আবদুল কাদের মোল্ল¬ার স্ত্রীও ছিল। ওসি শাহআলম জানান, এ সময় বিপুল পরিমাণ ইসলামিক বই, কোরআন শরীফ পেয়েছে পুলিশ”।
১১.   ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ২১ নারীকে আটকের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাতে ও তাদের মুক্তি দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘নারী অধিকার আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করলে সেখানেও হানা দেয় পুলিশ। ওই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ শেষে বের হওয়ার সময় ভাষা সৈনিক অধ্যাপিকা চেমন আরা, কলেজ শিক্ষিকা ও ছাত্রীসহ ১৩ নারীকে আটক করে পুলিশ ও র‌্যাব। রাতে চেমন আরাসহ ৬ জনকে ছেড়ে দিলেও বাকিদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয়। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর তারা একে একে জামিনে মুক্তি পান।
১২.   ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত ৩ টায় বিনা কারণে "শেরপুর পৌরসভা জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সহকারী সেক্রেটারী আয়েশা আক্তারকে  তার বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
১৩.  ২৩মে ২০১২ ”ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে তল্লাশি করে বিভিন্ন বিভাগের নয় মেধাবী ছাত্রীকে আটক করেছে ছাত্রলীগ ও প্রশাসন।
১৪. গত ২রা জুলাই-১২-চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের ছাত্রীরা হিজাব পরতে এবং নামাজ পড়তে বাধা দেয়া এবং নামাজ কক্ষ তালাবদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এ সময় শিক্ষিকারা সেখানে রাখা বিভিন্ন ধর্মীয় বই, হিজাব পরা ও নামাজ পড়া নিয়ে কটূক্তি করেন। অঞ্জলী দেবী নামে এক শিক্ষিকা জুতা পরা অবস্থায় নামাজ ঘরে প্রবেশ করে তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘নামাজ ঘরে জুতা নিয়ে ঢুকেছি, কই আল্ল¬াহ আমাকে কী করেছে?’ (আমার দেশ-০৩-১২-১২)
১৫. বোরকা পরে ক্লাসে আসার অপরাধে এক ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে দেননি উত্তরা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার গোলাম হোসেন। আরো পাঁচ ছাত্রীকে গেটে দাঁড় করিয়ে রাখেন। অধ্যক্ষ বোরকাকে ‘অড’ বা দৃষ্টিকট’ ড্রেস উল্লেখ করে বলেন “একটা মেয়ে পায়ের নখ পর্যন্ত বোরকা পরে এসেছে এটা দৃষ্টিকটূ।
১৬. নামাজ আর পর্দা করার অপরাধে ৮ ছাত্রীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে বের করে দেয়া হয়। ইডেন কলেজের ছাত্রীদের করা হয় নির্যাতন। দেয়া হয় পুলিশে।
১৭. ১ মে ২০১২ রাজধানীর উত্তরখান এলাকার একটি কলোনিতে তাফসির বৈঠক করার অপরাধে স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা ছাত্রীসংস্থার এক নেত্রীকে আটক রেখে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে দুই দিন রিমান্ডে নেয়। দীর্ঘ এক মাস কারাভোগের পর আদালত থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মুক্তি পান তিনি।
 ১৮. ১২ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতা করার সময় ছাত্রী সংস্থার দুই কর্মীকে একটি রুমে আটক রেখে পুলিশকে খবর দেয় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। পরে তাদেরকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান তারা।
১৯. ১৬ অক্টোবর রাজধানীর ওয়ারলেস রেলগেট থেকে কিছু ইসলামী বই কিনে ফেরার পথে গাজীপুরের দুই ছাত্রীকে আটক করে পুলিশ। গভীর রাতে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
২০. ৪-ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদরের পাইনাদী নতুন মহল্লা এলাকায় এক জামায়াতকর্মীকে আটক করতে এসে তার বোনকে আটক করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ধারায় মামলা দেয়া হয়। এমনকি নিরীহ এই নারীকে রিমান্ডে নিয়েও হয়রানি করা হয়। ১০ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
২১. ১৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা ছাত্রী সংস্থার উদ্যোগে জেএসসি-জেডিসি কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কে রাষ্ট্রদ্রোহী ষড়যন্ত্রমূলক গোপন বৈঠকের অভিযোগ তুলে আটক করা হয় অভিভাবকসহ ১৮ ছাত্রীকে। পরদিন ১২ জনকে ছেড়ে দেয়া হলেও ৬ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন।
২২. ১৫ মে রাজশাহী মহানগর জামায়াত নেতার বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকেসহ স্কুল পড়–য়া দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে যায়। পরে তার মেয়েকে একটি মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডেও নেয়া হয়। ২১ দিন পর জামিনে মুক্তি পায় ওই মেয়ে।
২৩. ২৮ আগস্ট বরিশালের মুলাদী উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামে ঈদপুনর্মিলনী অনুষ্ঠান থেকে ২২ জন ছাত্রীকে আটক করে ৫৪ ও ৫৭ ধারায় মামলা দেয় পুলিশ। ৩ দিন কারাভোগের পর তারা মুক্তি পায়।
২৪. ১ জুন নোয়াখালীর মাইজদী এলাকা থেকে একজন, ২৭ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে দুই ছাত্রীকে আটক করে পুলিশ।
২৫. ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বদরুন্নেছা কলেজ হল থেকে বের হওয়ার সময় বোরকাপরা দুই ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেত্রীরা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মিথ্যা মামলায় ১৪ দিন কারাভোগ করেন তারা।
২৬. ১০ অক্টোবর কুষ্টিয়ার আড়–য়াপাড়া হতে পর্দানশীন ৬ ছাত্রীকে আটক করলে এলাকাবাসী তাদের ছাড়িয়ে আনে। পরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।
২৭. ২১ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জামায়াতের মহিলা বিভাগের সেক্রেটারির বাসা থেকে তাকে এবং এক ছাত্রীকে আটক করে বিস্ফোরক মামলায় জড়িয়ে কারাগারে পাঠায়।
২৮. ৭-ফেব্রুয়ারি ২০১৪,  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগে হিজাব পরায় কয়েকজন ছাত্রীকে গালমন্দ করে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন অধ্যাপক খুরশিদা বেগম। আবার শিক্ষার্থীদেরকে তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। নিজের দোষ ঢাকতে ওই অধ্যাপিকা ফোনে হত্যার হুমকির নাটক সাজিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
নারীদেরকে সবচেয়ে বেশী অপমাণ করেছে ছাত্রলীগ
ইডেন কলেজে ছাত্রলীগ নেতাদের মাধ্যমে ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার খবরে সর্বমহলে ঘৃণার সৃষ্টি হয়। এদিকে এ বছর পয়লা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হয় অর্ধশতাধিক ছাত্রী। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানেও তাদের হাতে লাঞ্ছিত হয় বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও অভিভাবক। এছাড়া অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের বোরকা ও হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারিভাবে ধর্মীয় পোশাকবিরোধী এসব তৎপরতায় দেশে নারী ধর্ষণ, ইভটিজিং, ছাত্রী-শিক্ষিকা লাঞ্ছনাসহ নানা অনৈতিক কর্মকান্ড বেড়ে যায় বহুগুণে। বিশেষ করে সরকারদলীয় ক্যাডারদের দ্বারা যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আওয়ামী মহাজোটের প্রথম চার বছরে সারা দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৬৭ হাজার ২২৯টি। ছাত্রলীগ ক্যাডারসহ বখাটেদের হাতে লাঞ্ছনা ও যৌন হয়রানির শিকার হন অনেক ছাত্রী ও শিক্ষিকা। মহাজোট সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে ডিসেম্বরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দমনের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারদলীয় ক্যাডারদের হাতে নিগ্রহের শিকার হন বহু নিরীহ নারী-শিশু। সারাদেশে অনেক নারীকে শহীদ করা হয়েছে।
পশ্চিমা বিশ্বের মতোই ইসলামকে প্রতিপক্ষ মনে করে আওয়ামীলীগ। একে প্রতিরোধের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এই সরকার। আজ নাস্তিক আর বাম-রামদের প্ররোচনায় নারীনীতির নামে একশ্রেনীর এনজিওদের মাধ্যমে মুসলমানদের ,পরিবারপ্রথা ,বিয়ে প্রথা ,মুসলিম নারীকে পর্দার আড়াল থেকে বের করে মুসলিম সভ্যতা,সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায় তারা।  তারা এই দেশকে পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুসারী বানানোর এজেন্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মুলত মুসলিম দেশগুলোতে পাশ্চাত্যেও রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, দর্শন, সংস্কৃতিু, আইন ও বিচার পদ্ধতি পুরোপুরি চালু রয়েছে। শুধুমাত্র পারিবারিক পদ্ধতিটা কিছুটা ইসলামিক। এটাকেও ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে। পর্দা ও পোশাক নারী পুরুষের সম্পর্ক, একাধিক বিবাহ,ও তালাক সংক্রান্ত আইন, পিতা-মাতার  অধিকার, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার এবং উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদিকে পাল্টিয়ে দিয়ে পাশ্চাত্য আইন বিধান চালু করাই তাদের লক্ষ্য।
এত সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আজ পাশ্চাত্য সমাজের নারীরাও ইসলামের ছায়াতলে সমবেত হচ্ছে প্রতিনিয়ত, আল্হামদুলিল্লাহ। ব্রিটিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শালিকা বিশিষ্ট সাংবাদিক লরেন বুত ইসলাম গ্রহণ করেছেন। হিন্দুধর্ম ছেড়ে ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বিখ্যাত কমলা দাস। তাঁর বর্তমান  নাম সুরাইয়া। কমলা দাসের বহু গ্রন্থ ইংরেজীসহ ভারতের প্রধান ভাষাগুলোতে অনুদিত হয়েছে। ১৯৬৪ সালে তিনি পিইএন পুরষ্কার,কেরালা সাহিত্য একাডেমী পুরষ্কার,সাংবাদিকতার জন্যে পান চমন লাল পুরস্কার। আজ পাশ্চাত্যের অসংখ্য নারী আদালতে হিজাব নিষিদ্ধের মামলায় বিজয়ী হচ্ছেন। সেখানে পৃথিবীর দ্বিতীয় মুসলিম দেশে বোরকা, হিজাবের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ অ-ঘোষিত যুদ্ধে নেমেছে। কিন্তু এই যুদ্ধে তারা সফল হবেনা। কারণ ইসলাম এদেশের মানুষের রক্তের সাথে মিশে আছে। হযরত আয়েশা (রা:) জ্ঞানের গভীরতা, হযরত খাদিজা (রা:) সফল ব্যবসায়ী হিসাবে সুখ্যাতি, হযরত ফাতিমা ( রা:) নারীর মর্যাদা সংরক্ষণ, আর হযরত সুমাইয়া ( রা) ত্যাগের ঘটনা ইতিহাসে আজ ও অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। সুতরাং তাদেরই যোগ্য উত্তরসূরী ইসলামী ছাত্রীসংস্থার মেয়েদের উপর এই সরকারের জেল-জুলুম-,গ্রেফতার, রিমান্ড আর নির্যাতন এবং শহীদ করে তাদের অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে পারবেনা ইনশাল্লাহ। তাদের ধৈর্য্য আর ত্যাগ-কুরবানীর মাধ্যমে ইসলামী ছাত্রীসংস্থা হয়ে উঠবে আরো পরিচিত এবং জনপ্রিয়। দেশের মানুষ এই নিরপরাধ, মেধাবী, চরিত্রবান, পর্দানশীন নারীদের মুক্তির অপেক্ষায়।
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম 

Ads