শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

দুই নেত্রীর ২৮ নবেম্বরের ভাষণ



গত ২৮ নবেম্বর একই দিনে দুটি জনসমাবেশ হয়ে গেলো। একটি রাজধানীর পল্টন এলাকায়, অন্যটি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি উপজেলায়। ১৮ দলের আহবানে প্রথমটি পরিণত হয়েছিল মহাসমাবেশে, অন্যদিকে ধনবাড়ির জনসভা প্রকৃতপক্ষে ছিল সরকারি খরচে আয়োজিত আওয়ামী লীগের দলীয় সমাবেশ। উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে আলাদা হলেও এই উপলক্ষে বহুদিন পর দুই নেত্রীকে সামনে থেকে দেখার এবং সরাসরি তাদের বক্তব্য শোনার সুযোগ পেয়েছিল সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী বুলেটপ্রুফ নিরাপত্তা খাঁচার মধ্যে ঢুকে পড়ে দূরত্বের সৃষ্টি করলেও বেগম খালেদা জিয়া মহাসমাবেশে আগত লাখ লাখ মানুষের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয হলো, দুই নেত্রীর ভাষণে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ঘটার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। দু'জনই আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখেছেন, একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সোচ্চার থেকেছেন। বলা বাহুল্য, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যথারীতি ছিলেন অতুলনীয় অবস্থানে। দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেও শেখ হাসিনা পুরনো ধারাতেই আক্রমণ শানিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে কষেই এক হাত নিয়েছেন তিনি। অন্য কিছু প্রসঙ্গের মধ্যে বিশেষ জোর দিয়ে বলেছেন, তারা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের পথে এগিয়ে চলেছেন বেগম জিয়া তখন নাকি সে বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর এবং দেশকে হানাহানির দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রী তার স্বরে ঘোষণা করেছেন, খালেদা জিয়া যতো চেষ্টাই করুন না কেন, ‘বাংলার মাটিতে' (বাংলাদেশের নয়!) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ‘হবেই হবে'।
বলা দরকার, যথেষ্ট চিৎকার করলেও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে গুণগত কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। পুরনো ধারাতেই আক্রমণ শানিয়েছেন শেখ হাসিনা। পুরো ভাষণে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তুলোধুনো করেছেন, তাকে ‘চোরের মা' পর্যন্ত আখ্যা দিয়েছেন এবং চার দলীয় জোট সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কল্পিত কাহিনী শুনিয়েছেন- প্রকৃতপক্ষে পুনরাবৃত্তি করেছেন। মূলত মারমুখী বক্তব্যের কারণে জনমনে আস্থাই তৈরি করতে পারেননি শেখ হাসিনা। মানুষ আসলে প্রধানমন্ত্রীর মুখে তার সরকারের কল্যাণ ও উন্নয়নমুখী কর্মকান্ডের কথা শুনতে চেয়েছিল। অন্যদিকে ক্ষমতায় আসার দীর্ঘ চার বছর পরও কেবলই বেগম খালেদা জিয়া এবং চারদলীয় জোট সরকারের সমালোচনা করার পাশাপাশি কথিত যুদ্ধারাধীদের বিচার ‘হবেই হবে' ধরনের বাগাড়ম্বর শুনে বুঝতে অসুবিধা হয়নি, জনগণের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী আদৌ সফল হতে পারছেন না। পারলে নিজেদের কৃতিত্বের কথাই বেশি বলতেন তিনি। তিনি অবশ্য বিদ্যুৎ খাতের মতো কোনো কোনো বিষয়ে পরিসংখ্যানসহ বানোয়াট সাফল্যের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেগুলো মানুষ বিশ্বাস করেনি। সংক্ষেপে বলা যায়, জনগণ যখন আশার কথা শুনতে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী তখনও বিরোধী দলের নেত্রীর মতো আক্রমণাত্মক ভাষণ শুনিয়ে দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার ভাষণে যথারীতি এসেছে জঙ্গি প্রসঙ্গ। জঙ্গিদের প্রশ্রয় দেয়ার জন্য জোট সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপাতেও ভুল হয়নি তার। গল্পের রাখাল বালকের মতো ‘বাঘ এলো, বাঘ এলো' বলে চিৎকার প্রধানমন্ত্রী ধনবাড়িতেই প্রথম দেননি। অন্তরালে বিশেষ পরিকল্পনা থাকায় জঙ্গিদের বিষয়টিকে তিনি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত করেছেন। অন্যদিকে সত্য হলো, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলতে যা বোঝায় তার কিছুই নেই বাংলাদেশে। বস্তুত, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে চারদলীয় জোট সরকার কঠোর ভূমিকা নেয়ায় ৬৪ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের মতো আর কোনো ঘটনা দেশে ঘটেনি। ক্ষমতাসীনদের কারো কারো ঘনিষ্ঠ আত্মীয় শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ জঙ্গি নেতাদের জোট সরকারই গ্রেফতার করেছিল। বিচারও শুরু করেছিল একই সরকার। জোট সরকারের এই কঠোর ভূমিকার কারণে এখন আর কোথাও সুসংগঠিত সন্ত্রাসী তৎপরতার খবর পাওয়া যায় না। ক্ষমতাসীনরা তবু ‘জঙ্গি জঙ্গি' বলে পাড়া মাতিয়ে চলেছেন। কথাটা স্পষ্ট করেছেন বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া। একই দিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে তিনি বলেছেন, দেশে কোনো জঙ্গি নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও জঙ্গি জঙ্গি বলে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ধোঁয়া তুলে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে সরকার দেশে ইমার্জেন্সি ঘোষণার পাঁয়তারা করছে।
এভাবেই ধনবাড়ির জনসভায় প্রতিটি সমস্যার জন্য প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণরূপে চারদলীয় জোট সরকারের ওপর দোষ চাপিয়ে সমালোচনায় মুখর থেকেছেন। কোনো কোনো বিষয়ে ‘কিছুটা' সময় দেয়ার এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেছেন তিনি। সব মিলিয়েই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জনগণকে উদ্দীপিত করতে পারেনি। পরিষ্কার হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেও এখনো বুঝতে চাচ্ছেন না যে, দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব তার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের। দীর্ঘ চার-চারটি বছর পেরিয়ে আসার পর বর্তমান পর্যায়ে উচিত যেখানে ছিল নমনীয় ও সংযমী হওয়া, প্রধানমন্ত্রী সেখানে শুধু আক্রমণই শানিয়েছেন। ফলে মনেই হয়নি যে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি মানার মধ্য দিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এবং গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটানোর ব্যাপারে তার সরকারের তেমন আগ্রহ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরং এমন এক দৌড়ই শুরু করেছেন যার লক্ষণ মোটেও শুভ নয়। এখানে লক্ষণের কথাটা বলার বিশেষ কারণ রয়েছে। ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যর্থতার পাহাড় তৈরি হওয়ার পর স্বৈরশাসকরা সাধারণত দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাদের কান্ডজ্ঞানও লোপ পায়। এসময়ই তারা আবোল-তাবোল বকতে থাকেন, মূলত আত্মরক্ষার উদ্দেশ্য থেকে একের পর এক এমন সব পদক্ষেপ নেন যেগুলো তাদের অশুভ পরিণতিকে অনিবার্য করে তোলে। পাকিস্তান যুগে ‘লৌহমানব' আইউব খানের উদাহরণ লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, বেসিক ডেমোক্রেসি বা মৌলিক গণতন্ত্রের নামে উদ্ভট শাসন ব্যবস্থার আড়ালে মোটামুটি ভালোই চালাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরই রাজনীতির ‘ভূত' চেপেছিল তার ঘাড়ে। কোনো কথা নেই, বার্তা নেই- ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে এসে হঠাৎ করে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে পুরো পূর্ব পাকিস্তানকে ক্ষেপিয়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সে মামলায় এমন এক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী করা হয়েছিল, যিনি ১৯৬৬ সালের মে মাস থেকে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে কারাগারে আটক ছিলেন। পদক্ষেপটি প্রেসিডেন্ট আইউব খানের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হয়েছিল। শুধু পাকিস্তানের কথাই বা বলা কেন, বাংলাদেশেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ উদাহরণ রয়েছে। সে উদাহরণ বাকশালের নামে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের, যার উদ্যোক্তা ও প্রধান নেতা ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয় জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই সামান্য সফলতার প্রমাণ রাখতে পারেননি তিনি। গণঅভ্যুত্থানের মুখে পড়তে না হলেও নিজের তৈরি ব্যর্থতার পাহাড় তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। তিনিও আইউব খানের মতো দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তারও কান্ডজ্ঞান লোপ পেয়েছিল। এজন্যই সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য চিৎকার করে আসার পর হঠাৎ করে তিনি প্রথমে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর বাকশাল গঠন করে এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপানোর মাধ্যমে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটাই তার জন্য ‘কাল' হয়েছিল।
ইতিহাস অকারণে টেনে আনা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে লক্ষ্য করে দেখুন। তিনিও একের পর এক এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছেন যেগুলোকে সুস্থ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত বলার উপায় নেই। সর্বশেষ একটি উদাহরণ হিসেবে কথিত যুদ্ধারাধীদের বিচারের কথাই ধরা যাক। বিস্তারিত উল্লেখের পরিবর্তে বলা দরকার, নিজের পিতা যে বিষয়টির মীমাংসা করে গেছেন মূলত ভারতের ইঙ্গিতে, শেখ হাসিনা সে বিষয়টিকে নিয়েই মাতামাতি শুরু করেছেন। করেছেনও এমনভাবে যা দেখে মনে হতে পারে, দেশের এবং জনগণের আর কোনো সমস্যা নেই! যেন কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্যই জনগণ তাকে ‘ডিজিটাল' নির্বাচনে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিল! দেশের হালহকিকতের দিকেও নজর দেয়া যেতে পারে। যে কেউ রাষ্ট্রীয় জীবনের ক্ষেত্রগুলোকে একটি একটি করে পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন। কোনো ক্ষেত্রেই শেখ হাসিনার সরকার জনগণের আশা-আকাক্মখা পূরণ করার ধারে-কাছে যেতে পারেনি। এর কারণ, নির্বাচনের আগে ভাষণে ও মেনিফেস্টোতে অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তেমন সদিচ্ছা বা উদ্দেশ্যই তাদের ছিল না। ভেতরে ভেতরে ভারতের স্বার্থোদ্ধার করাসহ তারা অন্য কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য অর্জনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিলেন। এসব উদ্দেশ্যের মধ্যে আর যাই থাকুক, গণতন্ত্রকে দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চিন্তা বা সদিচ্ছা অন্তত ছিল না।  এখনো সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।
ঘটনাপ্রবাহে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে গণতন্ত্রের সম্ভাবনা। কারণ, আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারের বেআইনী পদক্ষেপ এবং র‌্যাব-পুলিশ ও ক্যাডারদের হামলার ফলে বিরোধী কোনো দল মিছিল-সমাবেশ পর্যন্ত করতে পারছে না। গ্রেফতার, শ্যোন অ্যারেস্ট, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের পাশাপাশি বাড়ছে মিথ্যা মামলার সংখ্যা। ওদিকে গণতন্ত্রের প্রধান কেন্দ্র জাতীয় সংসদকে পঙ্গু করা হয়েছে প্রথম অধিবেশন থেকে। সুচিন্তিত কৌশলের ভিত্তিতে বিরোধী দলের এমপিদের বাইরে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে সংসদকে অকার্যকর করেছেন ক্ষমতাসীনরা। সরকারী দলের এমপিরাও অধিবেশনে ঠিকমতো হাজির থাকছেন না। ফলে সংসদ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সে সংসদকে দিয়েই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সব মিলিয়েই পরিষ্কার হয়েছে, জাতীয় সংসদের ব্যাপারে মোটেও আগ্রহ নেই ক্ষমতাসীনদের। গণতন্ত্রকে তারা নির্বাসনে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। সংসদকে শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যসব ক্ষেত্রকেও একেবারে তছনছ করে ফেলেছে শেখ হাসিনার সরকার। জনপ্রশাসন থেকে বিচার বিভাগ পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রই দলীয়করণ নীতির অসহায় শিকার হয়েছে। বিশেষ করে বিচার বিভাগ তথা আইন-আদালতকে ইচ্ছা পূরণের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছে সরকার। সরকারের ইচ্ছার কাছে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকার মানুষের সর্বশেষ ভরসার স্থল হিসেবেও কোনো প্রতিষ্ঠানকে থাকতে দিচ্ছে না। এভাবেই চূড়ান্ত স্বৈরশাসনের পথ ধরে এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
সেটা তিনি চাইতেই পারেন, কিন্তু রাজনীতির সব হিসাব-নিকাশ সব সময় প্রধানমন্ত্রীর একার ইচ্ছাতেই চলবে- এমন নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। কথাটা বলার কারণ, দিকভ্রান্ত প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে হুমকির পর হুমকি উচ্চারণ করেছেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তখন গণঅভ্যুত্থান ও সরকারের পতন ঘটানোর আহবান নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। ২৮ নবেম্বরের মহাসমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া জনগণের প্রতি সরকারের পতন ঘটানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার এই আহবান জানিয়েছেন। বলেছেন, দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করতে হবে। ক্ষমতাসীনদের জন্যও পথের নির্দেশনা রয়েছে তার ভাষণে। তিনি বলেছেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। সে নির্বাচন হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। খালেদা জিয়ার কথাগুলো জনগণকে উদ্দীপিত করেছে। কারণ, বিভিন্ন সময়ের সফল হরতাল, রোডমার্চ এবং সর্বশেষ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়েও প্রমাণিত হয়েছে, জনগণের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিএনপি ও জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে। তারা চাইলে দিনের পর দিন ধরে হরতাল করতে পারে, চাইলে ভাংচুর ও সহিংসতার মাধ্যমেও সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারে। কিন্তু খালেদা জিয়া শেখ হাসিনা নন, বিএনপিও আওয়ামী লীগের মতো গণতন্ত্র ও জনস্বার্থবিরোধী ফ্যাসিস্ট কোনো দল নয়। এজন্যই এখনও পর্যন্ত খালেদা জিয়া নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথে এগিয়ে চলেছেন। আন্দোলনকে তিনি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন।
খালেদা জিয়ার ভাষণের বিশেষ কিছু দিক গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করা দরকার। যেমন তিনি বলেছেন, জেনারেল মইন উ এবং ফখরুদ্দিনদের সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। ওই সরকার যে আওয়ামী লীগের ‘আন্দোলনের ফসল' ছিল এবং দলের জনাকয়েক নেতা নির্যাতিত হলেও শেখ হাসিনা যে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের এজেন্ডাই এখনও বাস্তবায়ন করে চলেছেন সে কথাও বলেছেন খালেদা জিয়া। সুতরাং ওই সরকারকে অজুহাত বানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এখানে খালেদা জিয়ার মূলকথার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করার সুযোগ নেই। কারণ, নিজেদের ‘আন্দোলনের ফসল' অবৈধ সে সরকারের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সুচিন্তিতভাবে একাকার করে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সম্ভবত ভেবে বসে আছেন, বাংলাদেশের জনগণ মাত্র সেদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতাও ভুলে যাবে। অথচ এতদিনে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত জেনে গেছে, কেন ১/১১-এর নামে অবৈধ অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল। সুতরাং ‘দোষ'টা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নয়। অসৎ উদ্দেশ্যে মইন উ'র মতো যারা এর অপব্যবহার করেছেন দায়ী করতে হবে তাদেরকে।
সংসদকে অকার্যকর করা থেকে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান পর্যন্ত পদক্ষেপগুলোর পর্যালোচনায় দেখা যাবে, শেখ হাসিনার সরকার দেশকে সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। একই কারণে দেশপ্রেমিক জাতীয় নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করার ডাক দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, বুদ্ধি একেবারে খুইয়ে না ফেলে থাকলে ক্ষমতাসীনদের উচিত দমন-নির্যাতন চালানোর মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তা ছেড়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসা। কারণ, গণঅভ্যুত্থানের আঘাতে ভেসে যাওয়ার পরিণতি শুভ হয় না। তাছাড়া খালেদা জিয়া শুধু গণঅভ্যুত্থানের আহবান জানাননি, একই সঙ্গে আলোচনার দরজাও খোলা রেখেছেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু পূর্বশর্তের উল্লেখ করেছেন। গণতন্ত্রের ব্যাপারে সত্যি সদিচ্ছা থাকলে সরকারের উচিত খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে সম্মত হওয়া এবং পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বেগম জিয়ার পরামর্শ শোনার ও সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার ধারেকাছে পর্যন্ত  যাওয়ার নাম করছেন না। তিনি বরং ইমার্জেন্সি ডেকে আনার চেষ্টা চালানোর জন্য উল্টো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। বলেছেন, ইমার্জেন্সি বা জরুরি অবস্থার মধ্যে বিএনপিই নাকি ভালো থাকে এবং সেজন্যই বেগম জিয়া নাকি রাজপথে সংঘাতের পাশাপাশি সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইমার্জেন্সি জারি করানোর মতো পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছেন! পর্যবেক্ষকরা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই যুক্তিকে নিতান্ত রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। কারণ, ক্ষমতায় যেখানে শেখ হাসিনা রয়েছেন সেখানে রাজপথের নেত্রী বেগম জিয়া বা অন্য কারো পক্ষে ইমার্জেন্সি জারি করানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করার কথা কল্পনা করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের ব্যর্থতা এবং দেশ ও জাতিবিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের অশুভ পরিণামের কবলে যাতে পড়তে না হয় সে উদ্দেশ্যে চেষ্টা আসলে ক্ষমতাসীনরাই চালাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মতো অত্যন্ত দায়িত্বশীল নেত্রী নিশ্চয়ই প্রমাণ ছাড়া গুরুতর অভিযোগটি তোলেননি। অনুমাননির্ভর কোনো বিতর্কে যাওয়ার পরিবর্তে বর্তমান পর্যায়ে আমরা মনে করি, ইমার্জেন্সি জারি করানোর মতো চরম অগণতান্ত্রিক কোনো পন্থায় এগোতে চাইলে সর্বোতভাবে বিপদ বাড়বে ক্ষমতাসীনদেরই। এ সম্পর্কিত উদাহরণও ইতিহাসে অনেকই রয়েছে। জানতে চাইলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নিজের পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে পারেন। সে অভিজ্ঞতা বলাবাহুল্য মোটেও মধুর নয়। এজন্যই বলা দরকার, বেগম খালেদা জিয়ার তথা ১৮ দলীয় জোটের দাবি পূরণের মধ্যেই দেশ ও জাতির জন্য তো বটেই, ক্ষমতাসীনদের জন্যও মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার দাবি


আমরা খবরের কাগজ এবং টিভিতে দেখলাম জামায়াতের মিছিলের ভেতর থেকে এক লোক পুলিশের কাছে থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে পুলিশকে বেধড়ক পিটাচ্ছে। বলা হচ্ছে, লোকটা জামায়াতের। কারণ সে জামায়াতের মিছিলের ভেতরেই ছিল। এটা একটি সাদামাটা খবর। এখন লোকটা কোথায়? সে কি ধরা পড়েছে? না খালাস হয়ে গেছে? পুলিশের গায়ে হাত তোলা মানে রাষ্ট্র ও সরকারের গায়ে হাত তোলা। ওই লোকটা রাষ্ট্রদ্রোহী। তার বিচার অবশ্যই হওয়া দরকার। কে এই পাষণ্ড যে, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গায়ে হাত তোলে। দেশবাসী লোকটাকে দেখতে চায়। আমি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করি, তার দ্রুত বিচার হওয়া দরকার। পুলিশের আহত সেই ভদ্রলোকই বা কোথায় গেলেন? তিনি কি হাসপাতালে আছেন? কই, তাকে দেখতে তো কেউ গেলেন না। আমরা তো সব সময়ই দেখি, সরকারি দল বা পুলিশের কেউ আহত হলে মন্ত্রী-শান্ত্রীরা হাসপাতালে তাকে বা তাদের দেখতে যান। হতে পারে হয়তো সবই হয়েছে, আমি জানতে পারিনি বা বুঝতে পারিনি।

পুলিশ নিয়মিত ওষুধের ডোজের মতো রাস্তায় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এটা আমরা নিয়মিত টিভি ও পত্রিকার সংবাদে দেখতে পাই। যেন এটা একটা স্বাভাবিক দৃশ্য। পুলিশ শুধু রাজনৈতিক কর্মীদের পেটায় না, রিকশাওয়ালা, পথযাত্রীসহ আরো অনেককেই পেটায়। মাঝে বিচারপতিদেরও হেনস্তা করেছে। সাংবাদিকদের পেটানো তো পুলিশের নিয়মিত ডিউটিতে পরিণত হয়েছে। একসময় চৌকিদার ছিল সরকার বা রাষ্ট্রের প্রতীক। চৌকিদারের গায়ে হাত দিলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। সাথে সাথেই চৌকিদারের রশি কোমরে লেগে যাবে। সে সময় ব্রিটিশ রাজের প্রতীক চৌকিদারকে দেখলেই সাধারণ মানুষ ভয় পেত। গ্রামে গেলে এখনো অনেক চৌকিদার-দফাদারবাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। নামী-দামি দারোগাবাড়িও আছে। এখন দেশের মানুষ নিত্যদিন পুলিশ, দারোগা, সরকারি গোয়েন্দা, র‌্যাবের ভয়ে অসহায় থাকে। তার ওপর রয়েছে আয়কর বিভাগ, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, খাজনা অফিস ও সিটি করপোরেশনের জ্বালাতন। এসব সরকারি বা আধা-সরকারি অফিসের লোকেরা কিছু বাড়তি টাকা না পেলে ন্যায্য কাজটা করে দেয় না।
পুলিশ আর জামায়াতের মারামারির দৃশ্য এখন প্রতিদিন টিভি ও খবরের কাগজে দেখা যায়। ইদানীং দেখতে পাচ্ছি, ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরাও পুলিশকে পেটাচ্ছে। পুলিশমন্ত্রী ম খা আলমগীর বলেছেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ দলবেঁধে জামায়াত আর শিবিরকে প্রতিহত করবে। যুবলীগ নেতারা বলছেন, ওটা আমাদের কাজ নয়, পুলিশের কাজ। ম খা আলমগীর একজন সাবেক আমলা। তিনি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তার ডক্টরাল থিসিস ডেডিকেট করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। একসময় তিনি ছিলেন জিয়া সাহেবের ভক্ত। মওলানা সাহেবের ভক্ত ছিলেন এমন বহু আমলা পরে বঙ্গবন্ধু ও এরশাদের ভক্ত হয়ে গেছেন। ম খা আলমগীর নাম করেছেন জনতার মঞ্চ করে। কী কারণে তিনি বেগম জিয়ার ওপর গোস্বা হয়েছিলেন তা অবশ্য আমরা জানি না। যা হোক, তিনি এখন পুলিশের মন্ত্রী। ব্রিটিশরা তো পুলিশ তৈরি করেছিল পরাধীন ভারতবাসীকে পেটানোর জন্য, মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য। পুলিশের ব্রিটিশ তৈরি আইন এখনো বলবৎ আছে। একজন পুলিশ সিপাহি যেকোনো সময় রাস্তায় যেকোনো নাগরিককে পেটাতে পারে, হাতে হ্যান্ডকাফ লাগাতে পারে। এতে আইনের কোনো বরখেলাপ হবে না। ব্রিটিশদের তৈরি ওই পুলিশ আইন দিয়ে পাকিস্তান চলেছে, এখন বাংলাদেশও চলছে। আমাদের মহাগণতান্ত্রিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা ওই আইন বদলাতে চান না। তাতে নাকি সরকার বা রাষ্ট্র চলে না। রাষ্ট্র একটি প্রতিষ্ঠান, যাকে জনগণের হাত থেকে রা করার জন্য সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার, গ্রামপুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ লাগে। এই যন্ত্র আজ পুলিশমন্ত্রীকে সালাম দিচ্ছে, পাহারা দিচ্ছে, আবার কাল লাঠিপেটা করছে। আজ যাকে দেশপ্রেমিক বলছে, কাল তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলছে। বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, পাকিস্তানি পুলিশের হাতেও নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু মতায় এসে তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে প্রতিপকে জেলে দিয়েছেন, অত্যাচার করেছেন, হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করেছেন। মতায় আসার পর বহুদলীয় গণতন্ত্র আর ভালো লাগেনি। একদলীয় রাজনীতি চালু করেছিলেন। নিজের অনুগত রীবাহিনী চালু করেছিলেন। তিনি সবকিছুই করেছিলেন রাষ্ট্র বা সরকারকে রা করার জন্য। সব সরকারই এ কাজটা করে থাকে। এর মানে হচ্ছেÑ রাষ্ট্র বা সরকার জনগণের চেয়ে অনেক বেশি বড় ও দেশপ্রেমিক। সরকারকে রা করার জন্য প্রয়োজনে লাখ লাখ নাগরিককেও হত্যা করা যায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই বলে থাকেন, আইন-আদালত মেনে দেশ স্বাধীন করিনি, প্রয়োজনে আইন-আদালত না মেনেই দেশের স্বাধীনতা রা করব। প্রসঙ্গটা হচ্ছে পুলিশকে রাস্তায় কিছু লোক পেটাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখতে টিভি দর্শকেরা অভ্যস্ত নন। সবাই সব সময় দেখেন পুলিশ পাবলিককে পেটাচ্ছে। এই পেটানোটাকেই স্বাভাবিক মনে করা হয়। হঠাৎ দেখা গেল পুলিশকে পেটাচ্ছে। এর আগে প্রকাশ্য রাস্তায় টিভি ক্যামেরার সামনে পাবলিক পুলিশকে পেটায়নি। তবে বঙ্গবন্ধুর আমলে কিছু লোক থানা লুট করেছে, পুলিশের অস্ত্র লুট করেছে, পুলিশকেও হত্যা করেছে। সে সময় ব্যাংকও লুট হয়েছে। ’৭১ সালেও নানা ধরনের লুট হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে সরকারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল জাসদ। থানা আক্রমণ করেছে তারা। পুলিশমন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করেছে, ভারতীয় দূতাবাস আক্রমণ করেছে। একসময় জাসদ নিষিদ্ধ হতে চলেছিল। জাসদের হাজার হাজার কর্মীকে রীবাহিনী হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, আর নেতাদের গ্রেফতার করেছে নির্বিচারে।
’৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ধর্মীয় সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল। জিয়া সাহেব মতা গ্রহণ করে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। এই উপমহাদেশের কোনো দেশেই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ নয়। ’৭২ সালের আগে পাকিস্তান আমলে ধর্মবিরোধী রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টিগুলো নিষিদ্ধ ছিল। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোতে ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো যুগের পর যুগ ধরে নিষিদ্ধ ছিল। সাম্প্রতিক গণবিােভের ফলে বহু দেশে নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। এমনকি অনেক দল নির্বাচনে জয়ী হয়ে মতায় এসেছে। যারা ধর্মীয় দলগুলো নিষিদ্ধ করেছিলেন, তারাও মুসলমান নেতা। কিন্তু ইসলামিক শক্তিকে ভয় পেতেন। একসময় পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টিগুলো নিষিদ্ধ ছিল। আবার বহু কমিউনিস্ট দেশে কমিউনিজমের পতন হয়েছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতিও পুরনো ঘুণে ধরা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ফিরে এসেছে। তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতা সোভিয়েত রাশিয়া এখন আর নেই। সেখানে এখন অনেক দেশের সৃষ্টি হয়েছে। গণচীনেও খোলাবাজার ও মুক্ত অর্থনীতি চালু হতে চলেছে। রাজনীতির ইতিহাসে কোনো কিছুই স্থবির হয়ে থাকে না। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ। তারপর শুধুই আওয়ামী লীগ। নামের অর্ধেক উর্দু আর বাকি অর্ধেক ইংরেজি। মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ আর আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেছেন মওলানা ভাসানী। শুধু আওয়ামী লীগ দ্বারা চলছে না বলে বঙ্গবন্ধু একদলীয় রাজনীতির জন্য বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাকশাল বাদ দিয়ে জিয়ার আমলে আবার আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হলে তার নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বাকশালের সমাজতান্ত্রিক নীতি ত্যাগ করে ধনতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করেন তিনি। আমেরিকার সাথেও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ মানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ মনে হয় খুবই বিভ্রান্তির মাঝে দিনাতিপাত করছে, যা বঙ্গবন্ধুর সময় ছিল না। বঙ্গবন্ধু খুবই সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, তিনি বাঙালি এবং মুসলমান। আর এই বিশ্বাস থেকেই তিনি ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য পাকিস্তান গিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি সিপিবিসহ অন্যান্য বাম চিন্তাধারার জনবিচ্ছিন্ন কিছু লোক ও গোষ্ঠীর চক্করে পড়ে গেছেন। সরকারে এখন ওদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বেশি। বুঝতে পারছেন না তিনি কোন পথে চলছেন। ফলে তিনি দিন দিন মুসলিম স্বার্থবিরোধী কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর ১০ ভাগ মানুষ হয়তো জামায়াতকে সমর্থন করে বা ভোট দেয়। তারা জামায়াত ইসলামের রকও নয়, সোল এজেন্টও নয়। জামায়াতবিরোধী বহু ইসলামি দল বাংলাদেশে আছে। তারাও আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে না। কারণ তারা আওয়ামী লীগকে ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী রাজনৈতিক দল মনে করে। আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা দিনরাত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন ও কলম ধরে চলেছেন।
এখন তো বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী একটা জজবা চলছে। সেই জজবার নেতৃত্ব দিচ্ছে আমেরিকা। ইসলামকে জঙ্গি ধর্ম বানানোর জন্য আমেরিকা বিশ্বব্যাপী টাকা খরচ করছে। আমেরিকার এই ইসলামবিরোধী যুদ্ধের আওতায় বাংলাদেশও অন্তর্ভুক্ত। আমেরিকা বিন লাদেন তৈরি করেছে সহযোগী হিসেবে, পরে তাকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা জামায়াতের সাথে লেনদেন করেছেন। গোলাম আযম সাহেবকে মুরব্বি বলে সম্মান করেছেন। এখন সেই মুরব্বিকে আইনের আওতায় হত্যা করার জন্য দিনরাত জিগির করছেন। শেখ হাসিনা হয়তো মনে করছেন, জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিলেই দলটি দুর্বল হয়ে যাবে অথবা এই দলের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। আসলে আদর্শবাদী দল কি কখনো মরে যায় বা ধ্বংস হয়ে যায়? যায় না, ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত আছে। সোভিয়েত রাশিয়ায় প্রায় শত বছর ধর্মচর্চা নিষিদ্ধ ছিল। মসজিদগুলোতে তালা লাগানো ছিল। এখন সেখানে ধর্মচর্চা আবার শুরু হয়েছে। ভারতে এখনো বহু মসজিদে তালা ঝুলছে। এসব মসজিদে সরকার তালা লাগায়নি। মসজিদ এলাকায় মুসলমান নেই। তাই নামাজ পড়ার লোক নেই। একসময় ছিল। স্পেনে বহু মসজিদ শরাবখানা হয়ে গেছে। মুসলমানেরা স্পেন শাসন করেছে সাত শ’ বছর ধরে। মুসলমান হত্যা কর্মসূচির কারণে সেখানে এখন মুসলমান নেই। ভারতেও প্রায় এক হাজার বছর মুসলমানদের রাজনৈতিক উপস্থিতি ছিল। এখন নেই। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একমাত্র ধর্ম ইসলাম, যার বিস্তৃতি ঘটছে অবিরাম। হয়তো এ কারণেই আমেরিকা এবং তার বন্ধুরা ইসলামকে প্রতিহত করার জন্য এখনই অভিযান শুরু করেছে। পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা দুই-তিন শ’ কোটি হলেও আমেরিকা ও তার বন্ধুদের কোনো আপত্তি নেই যদি না তারা রাজনৈতিক মতা বিস্তার করতে চায়। ইসলামকে তারা পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে মানতে রাজি নয়। আওয়ামী লীগও ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে মানতে রাজি নয়। ফলে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে সহ্য করতে চায় না। জামায়াতের জন্ম হয়েছে ৭২ বছর আগে। এখন পর্যন্ত উপমহাদেশের কোনো দেশে তারা মতায় আসতে পারেনি। জনগণই জামায়াতকে এখনো রাজনৈতিক মতা হিসেবে গ্রহণ করেনি। সাধারণ মানুষ তামাশা করেই বলে, জামায়াত আওয়ামী লীগের পে থাকলে স্বাধীনতার পরে শক্তি, না থাকলে রাজাকার। আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলেই মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও চলবে।
ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে আছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। বাংলাদেশে আরো বহু ইসলামিক রাজনৈতিক দল আছে, তারা তেমন শক্তিশালী নয়। সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। বাম, ডান ও মধ্যপন্থী গ্রুপেও বহু রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সংসদে কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। তাদের প্রেস রিলিজের মাধ্যমে খবরের কাগজের পাতায় দেখা যায়। ইনু, মিনু, বড়ুয়াদের কোনো সিট নেই। তারা এবার বহু বছর পরে আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। তাদের সারা জীবন কাঁধে ভর দিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশে চারটি রাজনৈতিক দল আছে, যাদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে। যাদের লাখ লাখ ভোটার আছে। তন্মধ্যে জামায়াত একটি। শুনেছি জামায়াতের ৯০ লাখ ভোটার আছে। জামায়াত ’৭০ সাল থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে। ’৭১ সালে মুসলিম লীগসহ ধর্মীয় দলগুলো অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্বকে সমর্থন করেছে। ’৪৭ সালেও বহু মুসলমান রাজনৈতিক দল পাকিস্তানকে সমর্থন করেনি। কিন্তু পরে তারা পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছেন এবং পাকিস্তানে এসে রাজনীতি করেছেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লাখ লাখ মুসলমান-হিন্দু প্রাণ দিয়েছে ব্রিটিশদের হাতে। সেই ব্রিটিশ এখন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বন্ধু। ১৯০ বছর ব্রিটিশরা এ দেশকে লুণ্ঠন করেছে। লাখ লাখ মুক্তিকামী দেশপ্রেমিককে হত্যা করেছে। ভারতবর্ষের সম্পদেই ব্রিটেন ধনী হয়েছে। ১৯০ বছরের শোষণ, শাসন, লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞের জন্য ব্রিটেন আজো কারো কাছে মা চায়নি। বরং এখন আমরা ব্রিটেনের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য তাদের দুয়ারে ধরনা দিই। ব্রিটেন স্যার বা ওবিই খেতাব দিলে খুশিতে নাচতে থাকি। এখনো অনেকের জন্মবৃত্তান্তে দেখি, তিনি বা তারা অমুক খান বাহাদুর, নবাব বা জমিদারের নাতি বা পুতি। এসব গৌরব আমাদের মগজে স্থায়ী হয়ে গেছে। অনেকেই আনন্দের সাথে বলে থাকেন, কলোনিয়াল হ্যাংওভার। আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রধানতম সমস্যা দেশ বা রাষ্ট্রের চেয়ে দলকে এবং দলীয় সরকারকে বেশি গুরুত্ব দেয়া। ’৭৪ সালেই পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফর করেছেন বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। পাকিস্তান বাংলাদেশের চিরস্থায়ী শত্রু হতে পারে না। আমেরিকা ’৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন দিলেও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথেই স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনো রাষ্ট্রই চিরস্থায়ীভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্রের সাথে বৈরিতা পোষণ করতে পারে না।
জামায়াত আর পুলিশের ভেতর মারামারিটা দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছে। হঠাৎ করে জামায়াত পুলিশকে পেটাচ্ছে কেন? আগেই বলেছি, যে ছেলেটা পুলিশের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশকে পেটাচ্ছে, সেই ছেলেটা এখন কোথায়? আমাদের মিডিয়া ওই ছেলেটার কোনো হদিস দেশবাসীকে দিতে পারেনি। ছেলেটা কি জীবিত আছে? পুলিশটাই বা কোথায়? তিনি কি কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন? ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ এখন প্রতিদিন জামায়াত ও শিবিরকর্মীদের আটক করছে, রিমান্ডে নিচ্ছে। সারা দেশে এখন জামায়াত ও শিবির পাকড়াও করো কর্মসূচিতে ইতোমধ্যেই কয়েক হাজার কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। জামায়াত নামে বা জামায়াত বলে পরিচিত কর্মীদের মিছিল অব্যাহত রয়েছে, পুলিশও নিয়মিত মার খাচ্ছে আর কর্মীদের আটক করছে।
জামাত-পুলিশ লাঠালাঠি বা মারামারির উদ্দেশ্য ও ল্য স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সংসদে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরা। আইনমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। দেশের মানুষ মনে করছে, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্যই রাস্তায় জামায়াত-পুলিশ লাঠালাঠির নাটক সাজানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো, জামায়াত নিষিদ্ধ হলে জামায়াতের রাজনীতি কি বন্ধ হয়ে যাবে? ইসলামে বিশ্বাসী তরুণেরা যদি নতুন নাম নিয়ে রাজনীতি শুরু করে, তাহলে সরকার কী করবে? আরব বসন্ত যারাই শুরু করুক না কেন, এর সুবিধা পেয়েছে ইসলামি দলগুলো। যারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন, তারা কিন্তু শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের মিত্র নয়। জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও বামপন্থী বা তথাকথিত সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেতায় বিশ্বাসীরা মতায় আসতে পারবেন না।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক
ershadmz40@yahoo.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিশাল নির্বাচনী বাজেটের প্রস্তুতি : ধোঁকা দিয়ে পাড়ি দেয়া যাবে না



  
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনর্বহাল দাবিতে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী নির্বাচন নিয়েই যখন সংশয় ঘনীভূত হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার তখন জনগণের সামনে নতুন করে ‘মুলা’ ঝোলানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক অর্থের এই ‘মুলা’ আসছে বিশাল বাজেটের আকারে। দৈনিক আমার দেশ-এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সম্প্রতি দুই লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বাজেটের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করেছে। এতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ব্যয় বাড়বে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ঠিক কোন কোন খাত থেকে যোগান দেয়া হবে সে ব্যাপারে বাজেটে স্পষ্ট কোনো উল্লেখ থাকছে না। পর্যবেক্ষক মহলে সংশয়ের সৃষ্টিও হয়েছে একই কারণে। পরিকল্পিত বাজেটটিকে নির্বাচনী বাজেট হিসেবে চিহ্নিত করে পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, এর মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাজির করা হলেও টাকার জন্য ভোটার জনগণেরই পকেট কাটা হবে। নানা খাতে করের পরিমাণ যেমন বাড়ানো হবে, তেমনি বাড়তে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি তেলের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দামও। ফলে একদিকে ক্রমাগত চিড়েচ্যাপ্টা হতে হতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠবে অন্যদিকে উত্পাদন, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগসহ সমৃদ্ধি অর্জনের সব দরজাও বন্ধ হয়ে যাবে। একযোগে পাল্লা দিয়ে বাড়বে লুটপাট। রীতিমত হরিলুট চলবে দেশজুড়ে। 
বলা দরকার, এমন আশঙ্কার পেছনে প্রমাণিত বিভিন্ন কারণ রয়েছে। চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটসহ বর্তমান সরকারের প্রতিটি বাজেটের অভিজ্ঞতায়ই দেখা গেছে, বাগাড়ম্বর যথেষ্ট করলেও কোনো বাজেটের মাধ্যমেই সরকার কল্পিত উন্নয়নকে আকাশছোঁয়া করতে পারেনি। এই না পারার প্রধান কারণ, প্রতিটি বাজেটেই ছিল বিরাট অংকের ঘাটতি। যেমন চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি পূরণের পন্থারও উল্লেখ বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গেই করা দরকার। টাকা যোগাড়ের জন্য অর্থবছরের পাঁচ মাস না যেতেই ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৩২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেলেছিল সরকার। ঋণের পরিমাণ নাকি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, সুদ গিয়ে পৌঁছেছে ২১ হাজার কোটি টাকায়। ফলে ধার করে ঘি খাওয়ার পরিণাম জনগণকেই ভুগতে হচ্ছে। বিদ্যুত্ খাতেও সরকার সম্ভাবনার সৃষ্টি করতে পারেনি। কারণ, রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে উত্পাদনের প্রতিটি কেন্দ্রই তারা দলীয় লোকজনের হাতে তুলে দিয়ে রেখেছেন। এই রেন্টালওয়ালারা বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি আদায় করেছেন। ভর্তুকির টাকাটাও সরাসরি জনগণের পকেট কেটে নেয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আওয়ামী রেন্টালওয়ালাদের স্বার্থে আবারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
জনগণের পকেট কাটার নানা ব্যবস্থা থাকলেও কোনো বাজেটই কিন্তু বেকারত্ব নির্মূল করা দূরে থাকুক, কমিয়েও আনতে পারেনি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির নামে যে থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছিল সে বরাদ্দেরও বেশিরভাগ টাকা ক্ষমতাসীন দলের লাকজন মেরে দিয়েছে ও দিচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি অর্থবছরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে খয়রাতি চাল, গম ও নগদ অর্থ নিয়ে হরিলুটের পাল্লা দেখা গেছে। লোপাটও করেছে আবার ক্ষমতাসীনদেরই। নির্বাচন যেহেতু সামনে সেহেতু ধরে নেয়া যায়, এবারের বাজেটে থোক বরাদ্দের নামে অনেক বেশি পরিমাণে লুটপাটের ব্যবস্থা রাখা হবে। সব মিলিয়েই বলে রাখা যায়, পরিকল্পিত বাজেট দেশকে সমৃদ্ধির পথে নেয়ার ব্যাপারে সামান্য অবদানও রাখবে না। বাস্তবে বরং যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেও থাকতে পারবে না দেশ। অর্থনৈতিক অবস্থাও ঘুরে যাবে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত। অর্থাত্ অবস্থা অতীতের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হবে।
আমরা মনে করি, মানুষের সঙ্গে তামাশা করারও একটা সীমা থাকা দরকার। কেবলই স্বপ্ন দেখিয়ে এবং ধোঁকা দিয়ে যে জাতীয় নির্বাচন অন্তত পাড়ি দেয়া যাবে না সে কথাটা ক্ষমতাসীনরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই তাদের যেমন মঙ্গল তেমনি মঙ্গল জনগণেরও। সে জন্যই ভোটারের মন ভোলানোর জন্য সাধ্যের বাইরে গিয়ে কোনো বাজেট তৈরি করার চিন্তা তাদের এখনই পরিত্যাগ করা উচিত।

বৃহস্পতিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মুজিব হত্যায় জাসদের কোনো ভূমিকা ছিল কি?


সিরাজুর রহমান


সিরাজুর রহমান
আওয়ামী লীগ সরকারের জাসদ মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং শাসক দলের যুগ্মসম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের একটা বাক-বিনিময় যেন মুহূর্তের জন্য ভেসে উঠে আবার অতলে তলিয়ে গেল। অনেকটা ফলিমাছ যেমন ভেসে উঠে ফুটুস কেটেই আবার ডুব দেয়। হানিফ বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সাথে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সংশ্লেষ থাকতে পারে। জবাবে ইনু হানিফকে বলেছেন, সরকার যখন সঙ্কটে আছে তখন প্রকাশ্যে এসব পুরনো কাসুন্দি না ঘাঁটাই ভালো।
সহকর্মীদের মধ্যে বিরোধ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা না করাই উত্তম। হাসানুল হক ইনুর পরামর্শ তাই ভালোই বলতে হবে। কিন্তু ইতিহাসের প্রয়োজনে কোনো না কোনো দিন এ বিষয়টার ওপর আলোকপাত হতেই হবে।
শেখ মুজিবুর রহমান সব সময়ই সমাজতন্ত্রের কথা বলতেন। বাংলাদেশের সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রাদর্শের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সে সমাজতন্ত্রের রূপরেখা তিনি কখনো খুলে বলেননি। এবং এটাও পরিষ্কার যে, মুজিবের সমাজতন্ত্রে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কোনো স্থান ছিল না।
হাইকমান্ড গোড়া থেকেই একদলীয় পদ্ধতি চেয়েছিলেন। ‘লাল ঘোড়া দাবড়াইয়া দেবো’ তিনি জাসদকে লক্ষ করেই বলেছিলেন। লাল ঘোড়াকে (জাসদ) দমনের কোনো চেষ্টারই ত্রুটি হয়নি। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে রক্ষীবাহিনী যে কম-বেশি ৪০ হাজার লোককে হত্যা করেছিল তাদের প্রায় সবাই ছিল জাসদের কর্মী কিংবা সমর্থক। জাসদের প্রভাবমুক্ত একদলীয় সংসদ গঠনের উদ্দেশ্যেই ১৯৭৩ সালে সম্পূর্ণ বিনা প্রয়োজনে সাধারণ নির্বাচন দিয়েছিলেন।
সে নির্বাচনে জাসদ অল্প কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল। শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থকেরা সেটাকে বেয়াদবি বলেই তাকে বুঝিয়েছিল। বিবিসিতে আমার সহকর্মী (স্যার) মার্ক টালি তখন খবর দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা সহিংসতা ও অসাধুতা দ্বারা অন্তত চারটি আসনে (জাসদের কাছ থেকে) বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। মনে রাখতে হবে সে সময় বাংলাদেশে জাসদ ছাড়া অন্য কোনো সুসংগঠিত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে জাসদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। হাসানুল হক ইনু একাত্তরে লন্ডনে আমার এক প্রেস ব্রিফিংয়েও উপস্থিত ছিলেন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জাসদ নেতা কর্নেল তাহেরের সামরিক বিচার ও প্রাণদণ্ডের ‘তদন্ত’ করেছে এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করেছে। হাসানুল হক ইনুর প্রথমে আওয়ামী লীগের মহাজোটে এবং পরে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় যোগদানে সেজন্যই কেউ বিস্মিত হয়নি। কিন্তু মনে রাখতে হবে সিরাজ শিকদারের হত্যার বিচার হয়নি, হত্যা সম্বন্ধে কোনো তদন্তও হয়নি। হাসানুল হক ইনু কর্নেল তাহেরের ‘হত্যার তদন্তে’ সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হত্যার তদন্ত নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য তিনি করেননি।

তাহেরের প্রাণদণ্ড কেন অনিবার্য ছিল
কর্নেল তাহেরের গোপন সামরিক বিচার ও প্রাণদণ্ডের সময় থেকে ক্রমান্বয়ে পেছনের দিকের ঘটনাবলি বিবেচনা করলে জাসদের বিরুদ্ধে মাহবুব-উল আলম হানিফের অভিযোগের কিছু যৌক্তিকতা লক্ষ করা যাবে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর যে সিপাহিরা গৃহবন্দী অবস্থা থেকে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে এবং তাকে কাঁধে তুলে সেনা সদরদফতরে প্রতিষ্ঠিত করেছিল তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কর্নেল তাহের। সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হতে পারে, জিয়ার উচিত ছিল তাহেরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা। কিন্তু তিনি কৃতজ্ঞ হতে পারেননি কতকগুলো বিশেষ কারণে।
সাধারণ সৈনিকেরা তখন কর্নেল তাহেরের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। সেদিন তারা জেনারেল জিয়াউর রহমানকে জিন্দাবাদ জানালেও গোটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ঘুরে ঘুরে ‘সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই, অফিসারের কল্লা চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল এবং জাসদের প্রচারপত্র বিলি করছিল। গণচীনের তখনকার (বর্তমানের নয়) স্বেচ্ছাসেবী সমাজতান্ত্রিক সেনাবাহিনীর অনুকরণে বাংলাদেশেও চেন অব কমান্ড-বিহীন একটা সমাজতান্ত্রিক সেনাবাহিনী গঠনই ছিল কর্নেল তাহেরের লক্ষ্য। তাহেরের প্রভাবে তখনকার নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ভঙ্গে বহু ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষত্রেই চেন অব কমান্ড মেনে নিতে এবং অফিসারদের স্যালুট করতে সিপাহিরা অস্বীকার করেছিল। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে স্যালুট না করায় এক মেজর জনৈক সার্জেন্টের আঙুলে গুলি করেছিলেন। এ ঘটনার পরিণতি খুবই গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ৩ নভেম্বর তার অভ্যুত্থানের সময়। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সাধারণ সৈনিকেরা এই অভ্যুত্থান মেনে নিতে অস্বীকার করে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মোশাররফের সমর্থক কয়েকজন অফিসারকে তারা হত্যা করে। খালেদ মোশাররফ নিজে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সিপাহিরা তাকে ধরে ফেলে এবং হত্যা করে।
জেনারেল জিয়াউর রহমান সনাতনী কায়দার মিলিটারি অফিসার ছিলেন। দেশে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে যেকোনো মূল্যে চেন অব কমান্ডকে বজায় রাখতে হবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন। তিনি দিব্য চোখে দেখতে পেয়েছিলেন, খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সিপাহিদের আচরণ বরদাশত করা হলে এজাতীয় ঘটনা আরো বেড়ে যাবে। ফলে সেনাবাহিনী বলে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না এবং নতুন স্বাধীন দেশও ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কর্নেল তাহের ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে সে জন্যই জিয়াকে বলিষ্ঠ ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি জিয়ার হত্যার পর বিবিসি থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনে স্যার মার্ক টালি বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান প্রাণ দিয়ে তার সেনাবাহিনীকে ভালোবাসতেন; হয়তো সে জন্যই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

কমিউনিজমের পতন ও বিপন্ন জাসদ
এই ঘটনাগুলো এক দিনে ঘটেনি। সিরাজ শিকদার ও কর্নেল তাহের স্বাধীনতার পর পরই তাদের তৎপরতা শুরু করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন নতুন রাষ্ট্র স্থিতিশীল হওয়ার আগেই এ রাষ্ট্রকে গণচীনের অনুকরণে গঠন করতে হবে। তাদের তৎপরতা জানতেন বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান জাসদকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। ‘লাল ঘোড়া দাবড়াইয়া দেওয়া’ এবং সিরাজ শিকদারের হত্যাকে সে আলোকেই দেখতে হবে। রক্ষীবাহিনীকে সে কারণেই জাসদের পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক হানিফ প্রশ্ন তুলেছেন, জাসদ মুজিবের হত্যার সাথে জড়িত ছিল কি না। মুজিবের হত্যাকারী বলে কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ প্রমুখ যাদের নাম জানি তারা জাসদের সদস্য কিংবা জাসদ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন বলে জানি না। কিন্তু কর্নেল তাহের ও সিরাজ শিকদারেরা তাদের মতোই মুজিব সরকারের চরম বিরোধী ছিলেন। ঘাতকদের ওপর তাদের প্রভাব থাকা খুবই স্বাভাবিক। অন্তত জাসদ ভাবাপন্নরা উসকানি দিয়ে ঘাতকদের প্রভাবিত করে থাকতে পারে।
নব্বই দশকের শুরুতে সোভিয়েত কমিউনিস্ট সাম্রাজ্য ধসে পড়ার পর বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্টরা ভয়ানক বেকায়দায় পড়ে যায়। বহু দেশে তারা এখনো ধকল সামলে উঠতে পারেনি। চীনেও মাও সে তুংয়ের আমলের কমিউনিজমের অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে। তবে সেটা ধাপে ধাপে ঘটেছে বলে তাতে কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। কিন্তু ভারত, নেপাল এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশের আরো কোনো কোনো দেশের মতো বাংলাদেশের মাওপন্থীদের অবস্থা হয়েছে পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ সন্তানের মতো।
চীনে এখন আর স্বেচ্ছাসেবী খণ্ডকালীন সেনাবাহিনী নেই। বরং বলা চলে সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী জেনারেল জিয়াউর রহমানের ভাবাদর্শ অনুযায়ী সুশৃঙ্খল চেন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠা করেছে। হাসানুল হক ইনুদের এখন আর সিরাজ শিকদার কিংবা কর্নেল তাহেরের পথে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। বস্তুত ইনুরা জাসদ নামটা যে কী কারণে আঁকড়ে আছেন বুঝতে পারি না। মহাজোটে যোগ দিয়ে ইনু সাময়িক লাভবান হয়েছেন, মন্ত্রীও হয়েছেন। মুজিব হত্যার ব্যাপারে জাসদের ভূমিকা নিয়ে বেশি কথাবার্তা হলে এই অস্থায়ী মন্ত্রিত্বও আর থাকবে না। সেজন্যই বিষয়টি চাপা দিতে তিনি হানিফকে অনুরোধ করেছেন। হানিফও বুঝে গেছেন, সরকারের নড়বড়ে অবস্থায় জাসদকে ধাক্কা না দেয়াই ভালো হবে।
লন্ডন, ২৭.১১.১২
serajurrahman34@gmail.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আইনের শাসনে দুর্বল অবস্থায় বাংলাদেশ


ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৯৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচারব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গত বুধবার প্রকাশিত ‘আইনের শাসন সূচক ২০১২’ শিরোনামের এই বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,  দেওয়ানি বিচারব্যবস্থাসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রভাব রাখতে পারে এমন আটটি েেত্রর বেশিরভাগেই বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৯৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সরকারের প্রভাব সীমাবদ্ধ রাখার েেত্র ৮৭তম, দুর্নীতি অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে ৮৯তম, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৭২তম, মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষায় ৮৭তম, সরকারের স্বচ্ছতায় ৮৯তম, আইনের প্রয়োগে ৯০তম, দেওয়ানি বিচারব্যবস্থায় ৯৭তম ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় ৮৩তম স্থানে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগা ও বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতিই দেওয়ানি বিচারব্যবস্থায় বাংলাদেশ সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকার জন্য দায়ী। এখানকার সরকারের জবাবদিহিতার অবস্থা খুবই খারাপ। বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্থা ও আদালত চরম অদ ও দুর্নীতিগ্রস্ত। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও পুলিশি হয়রানিও বাংলাদেশের একটি সমস্যা।

বাংলাদেশে আইনের শাসনের পরিস্থিতি সম্পর্কিত এই প্রতিবেদনে যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা এক কথায় উদ্বেগজনক। ঘুষ দুর্নীতি প্রশাসনিক অব্যবস্থাÑ এসব বাংলাদেশের নিত্য চিত্রের অংশ। কিন্তু তুলনীয় দেশগুলোর মধ্যে যে অবস্থানে বাংলাদেশ রয়েছে তা কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিম্নতম অবস্থানে বোঝা যায় দেশের মানুষ জায়গা-জমি নিয়ে কী ধরনের ভোগান্তিতে রয়েছেন। অনেক সময় দেওয়ানি মামলা দায়েরের পর ১০-২০ বছরেও তা নিষ্পত্তি হতে দেখা যায় না। দুর্নীতি এতটা গভীরে পৌঁছে গেছে, জমিসংক্রান্ত বিরোধে রায় পেতে কোর্ট ম্যানেজ করতে হয় বলে একটি কথা আদালতপাড়ায় ব্যাপকভাবে প্রচলিত। অর্থাৎ বিচারকদের ঘুষ দিতে পারলে অন্যের জমির রায় নিজের নামে পাওয়া মোটেই অসম্ভব নয়। এ অবস্থার অবসানে এক দিকে দেওয়ানি বিচারব্যবস্থায় সংস্কার এনে মামলা নিষ্পত্তিতে সময়সীমা বেঁধে দেয়ার বিধান করতে হবে। অন্য দিকে জমিবিরোধ নিষ্পত্তিতে দুর্নীতির বিস্তার রোধে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। দেওয়ানি মামলা ছাড়া অন্য সূচকগুলোতেও বাংলাদেশের অবস্থান উদ্বেগজনক। সরকারের প্রভাব যেন ক্রমেই সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থা মাত্র ১০টি দেশের। এটি কোনোভাবেই সম্মানজনক চিত্র নয়। সূচকে আরো খারাপ অবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ততায় । এর সাথে সমান্তরালভাবে নিম্নঅবস্থান সরকারের স্বচ্ছতায়। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় ৭২টি দেশের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। এ ছাড়া যেন সান্ত্বনার আর কোনো চিত্র নেই। মৌলিক অধিকার রক্ষা আর আইনের প্রয়োগে যে দুরবস্থা তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলা আর পুলিশের সাথে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীদের গলাগলি অবস্থা থেকে অনুমান করা যায়।  আমরা মনে করি, যে অবস্থা দেশে এখন বিরাজ করছে সেটি চলতে দেয়া যায় না। আইনের শাসনের উন্নতি করতেই হবে। বিচারব্যবস্থায় গতি আনতে হবে। নিয়োগ-পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও দলীয় বিবেচনা বাদ দিতে হবে। প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমাতে হবে। এ জন্য অবশ্যই সরকারের  দায়িত্ব বেশি। এ ক্ষেত্রে জনগণের দায়িত্বও রয়েছে। দেশের মানুষকে এ বাপারে পদক্ষেপ নিতে এক দিকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে অন্য দিকে অন্যায় অসাধুতার ব্যাপারে নৈতিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের সামনে যে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে সেটি মরীচিকার মতো হারিয়ে যাবে। আর আমাদের স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে আগামী প্রজন্মকে হাতাশার অতল গহ্বরে ঠেলে দেবে। এ অবস্থার কথা আমরা ভাবতে চাই না।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নিশ্চিন্তপুর ট্র্যাজেডি : সরকার খুঁজছে নাশকতা



সৈয়দ আবদাল আহমদ

নিশ্চিন্তপুর এখন এক মৃত্যুপুরীর নাম। ঢাকার উপকণ্ঠ আশুলিয়ার এই নিশ্চিন্তপুরেই তোবা গ্রুপের গার্মেন্ট কারখানা তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডের অবস্থান। আশুরার আগের দিন ২৪ নভেম্বর শনিবার রাতে এই কারখানায় ঘটে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড়, নির্মম এবং হৃদয়বিদারক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া আগুন জ্বলেছে রাতভর। এই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে শত প্রাণ। চোখের সামনে প্রিয়জনের করুণ পরিণতি দেখে সারারাত বিলাপ করেছেন কারখানার বাইরে থাকা স্বজনরা। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর আগুন নিভেছে সত্য, তবে অপেক্ষমাণ উদ্বিগ্ন স্বজনদের কান্না থামেনি। তারা পেয়েছেন আগুনে দগ্ধ ১০১ জন মানুষের পুড়ে যাওয়া মাংসপিণ্ড। সেখানে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন আরও ১০ জন। আগুনের পরদিন রোববার সকালে পুড়ে যাওয়া লাশগুলো এনে সারি সারি রাখা হয় স্কুলের বারান্দায়। এগুলোকে লাশ বললে ভুলই হবে। কারণ এগুলো কালো কুচকুচে কতগুলো মাংসপিণ্ড ছাড়া কিছুই ছিল না। সরকারের হিসাবে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১১ পোশাক শ্রমিক। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১২৪। লাশগুলোর মধ্যে ৫৮টি এমনভাবে পুড়েছে যে, সেগুলো শনাক্ত করারও কোনো উপায় ছিল না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ লাশগুলোর ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে হস্তান্তর করা হয়। আঞ্জুমান ৫২টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করেছে। যেসব লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে, সেগুলো দেয়া হয়েছে স্বজনদের।
ঘটনাস্থল তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানা সরেজমিন দেখে এসে একজন রিপোর্টারের বর্ণনা : ‘চারদিকে পোড়া মেশিন। কর্মঠ শ্রমিকের হাতের স্পর্শে নির্জীব যে মেশিন প্রাণের স্পন্দনে ছুটে চলত, সেগুলো কঙ্কালের মতো পড়ে আছে। দেয়ালে দেয়ালে কালো ধোঁয়ার স্তর। টাইলসের মেঝে ফেটে চৌচির। তিনতলার দেয়ালের পাশে পোড়া হাতের একটি বিচ্ছিন্ন আঙুল। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মানবদেহের পোড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের খণ্ড খণ্ড টুকরো। কী বীভত্স! কী মর্মান্তিক!’
আরেকজন রিপোর্টারের বর্ণনা : ‘২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায় বিয়েবাড়ির আগুনই ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সে ঘটনায় জীবন্ত দগ্ধ হয়েছিল ১২৪ জন। ট্র্যাজেডির সেই করুণ অধ্যায়ে যোগ হলো আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের আগুন। নিমতলীর ঘটনায় মৃতদের পুরো দেহ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় পুড়ে অঙ্গার হওয়া শ্রমিকদের ৫৮ জনের চেহারাটুকুও চেনা যায়নি। কারখানার দোতলায় শিশুকেন্দ্রে ছিল ২০টির মতো শিশু। তারাও হয়তো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।’
তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন, দায় কার
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র মতে, তাজরীন ফ্যাশনস একটি ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’। অর্থাত্ শ্রমিকের কর্মপরিবেশ উপযোগী কারখানা এটি। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর জানা গেল, এ কথা মোটেও ঠিক নয়। ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’র কোনো বৈশিষ্ট্যই এ কারখানায় ছিল না। শ্রমিকদের জন্য কারখানাটিই ছিল একটি মৃত্যুকূপ। এ কারখানার পদে পদেই ছিল ঝুঁকি। কারখানার ভবন তৈরিতে নির্মাণবিধি একেবারেই মানা হয়নি। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। আগুন লাগার পর কারখানার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা কোনো কাজে আসেনি। কারখানাটি একেবারেই গ্রামে অবস্থিত। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস কীভাবে পৌঁছবে, তার পরিবহন বা পানি কোথা থেকে আসবে—তার ব্যবস্থা নেই। কারখানার চারদিকের তিন দিকই বন্ধ। তাছাড়া কারখানার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল লোকদের দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রশিক্ষণও ছিল না। ঘটনার দিন তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় আগুন লাগার পর অ্যালার্ম বা সতর্ক সঙ্কেত বেজে ওঠে। শ্রমিকরা ঠিকই আগুন লেগেছে ভেবে নামতে থাকেন। কিন্তু দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তাদের কিছুই হয়নি বলে বের হতে দেয়নি। প্রোডাকশন ম্যানেজারের নির্দেশে তারা কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে আটকে দেয়। ওপরে-নিচে সবদিকে বের হওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরই ধোঁয়ায় চারদিক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কর্মকর্তারা বের হয়ে গেলেও বের হতে পারেননি শ্রমিকরা। কারখানায় তিনটি সিঁড়ি থাকলেও এগুলো বিকল্প সিঁড়ি ছিল না। আগুনের পর সাংবাদিকরা সরেজমিন কারখানাটিতে গিয়ে দেখতে পান তিনটি সিঁড়ি ছাদে গিয়ে মিলিত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সিঁড়ির নিচের দিকটা এসে মিশেছে নিচতলায়। আর এই নিচতলার পুরোটাই ছিল গুদাম বা ওয়্যার হাউস। এখানেই লাগে আগুন। পেট্রোলিয়াম বায়ো বা সিনথেটিক জাতীয় সুতা ও কাপড়ে পরিপূর্ণ ছিল সেখানটায়। ফলে আগুন লাগার পর অতিদাহ্য এই মালামাল দ্রুত প্রচণ্ড কালো ধোঁয়া তৈরি করে। কারখানার সিঁড়ি তিনটি আগুন ও ধোঁয়ায় হয়ে পড়ে ইটভাটার চিমনি। ফলে শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য সিঁড়িগুলো কোনো কাজেই আসেনি।
ক’বছর আগে বাংলাদেশের হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল যে, সব পোশাক কারখানায় থাকতে হবে দুটি পৃথক সিঁড়ি, দুটি প্রশস্ত ফটক। রাখতে হবে জরুরি অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা। সেই আদেশ থোড়াই কেয়ার করেছেন তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক। এ কারখানায় সিঁড়ি ছিল বটে; কিন্তু এই সিঁড়ি শ্রমিকদের ব্যবহারের জন্যে ছিল না। সব সিঁড়ি নিচে এসে মিশে গেছে গুদামঘরের দরজায়, যেখানে আগুন লাগে। আটতলা ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত উঠেছে আগুন। বাকি যে তিনটি তলায় নিরাপদ আশ্রয় নেবে, তারও সুযোগ পাননি আটকেপড়া শ্রমিকরা। ওপরে ওঠার সিঁড়ির মুখেও কলাপসিবল গেটে ছিল বড় তালা। বিদেশি ক্রেতারা বিজিএমইএ’র সঙ্গে ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি’র চুক্তি করেছিল। বিদেশি বায়ারদের কাছে তা মানতে রাজি হলেও বাস্তবে পোশাক মালিকরা ‘কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরির’ শর্তগুলো মানেননি এবং সেভাবে কারখানা তৈরি করেননি।
মালিকপক্ষের অবহেলা এবং গাফিলতিই তাজরীন ফ্যাশনস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও শতাধিক শ্রমিকের করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ী। কর্তৃপক্ষ কারখানার অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়মিত তদারকি করেনি, তেমনি কারখানার তিনটি সিঁড়ি থাকলেও এগুলো দিয়ে শ্রমিক বের হওয়ার বিষয়টি শ্রমিকদের জানানো হয়নি। কারখানার কর্মী সৈয়দ আশরাফুল জামান সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার সময় তিনি পাঁচতলায় কাজ করছিলেন। ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়ার পর উত্পাদন ব্যবস্থাপককে জানালে তিনি গালিগালাজ করে বসে কাজ করতে বলেন। দু’তিন মিনিট পর ধোঁয়ায় সারা ঘর ভরে যায়। সতর্ক সঙ্কেত বেজেছে। অথচ শ্রমিকদের বের হতে দেয়া হয়নি। কারখানার সিঁড়িগুলো বিকল্প সিঁড়ি ছিল না। এমনকি জানালাগুলোও গ্রিল দিয়ে বন্ধ রাখা হয়। ধোঁয়ার কারণে অনেক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। দ্রুত নির্গমন পথ ছিল না এবং সব গেট ছিল তালাবদ্ধ। ফলে শ্রমিকরা বের হতে পারেননি। অর্থাত্ কারখানাটিতে ন্যূনতম কমপ্লায়েন্সও মানা হয়নি।
তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটির এত বড় দুর্ঘটনার জন্য মালিকপক্ষের চরম গাফিলতি যেমন দায়ী, তেমনি বিজিএমইএ এবং সরকারও দায় এড়াতে পারে না। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের কারখানায় কোনো পরিদর্শন বা তদারকি করা হয়নি। কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স মেনে চলছে কিনা, অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থা আছে কিনা, বিকল্প সিঁড়ি আছে কিনা, শ্রমিকরা কেমন করে কাজ করছেন—তা দেখার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন বা তদারকি করলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। এত শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য তাই কারখানার মালিক, বিজিএমইএ এবং সরকার সমানভাবেই দায়ী।
সবকিছুর জন্যই দায়ী ‘নাশকতা’ আর ‘ষড়যন্ত্র’!
দেশে কি কোনো সরকার আছে? একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু সরকারের যেন কোনো দায়িত্ব নেই! আগুনে পুড়ে মানুষ অঙ্গার হচ্ছে, গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে, নদীতে ঘটছে অগণিত মানুষের সলিল সমাধি। একইভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে সড়কে-মহাসড়কে। সরকার নির্বিকার। অসহায় মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। নিশ্চিন্তপুর ট্র্যাজেডি সে রকমই একটি ঘটনা। আগুনে পুড়ে শত প্রাণ অঙ্গার হয়ে গেলেও সেদিকে সরকারের ভ্রূক্ষেপ নেই। সরকার ব্যস্ত ‘নাশকতা’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ খোঁজার পেছনে। আগের ঘটনাগুলোর মতো নিশ্চিন্তপুরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনেও সরকার নাশকতা খুঁজছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের বয়স চার বছর হয় হয়। এ সময়ে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। দেখা গেছে কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই সরকার ঘটনাটি কেন ঘটল এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে না গিয়ে দুটি কাজ করছে। একটি হচ্ছে তদন্ত কমিটি গঠন এবং অন্যটি ‘নাশকতা’ বা ‘ষড়যন্ত্রতত্ত্বের’ প্রচার। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দফতর পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিদ্রোহ দমনে তাত্ক্ষণিক কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার এ ঘটনার জন্য জঙ্গি ষড়যন্ত্রকে দায়ী করে। আজ পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি এর প্রকৃত কারণ। তেমনি জঙ্গির সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কেও কেউ কিছু জানতে পারেনি। অথচ তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্রোহ দমন করলে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তার মর্মান্তিক মৃত্যু হতো না। একইভাবে ২০১০ সালের ১৪ মার্চ মুন্সীগঞ্জে লঞ্চ দুর্ঘটনায় ১১২ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। বরং বলা হয়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এ ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে। ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর নরসিংদীতে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যায় ২০ জন যাত্রী। তেমনি ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাইতে ট্রাক উল্টে ৫৩ স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এসব ঘটনাও নাকি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে।
এ সরকারের আমলে ঢাকার নিমতলীতে এক অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গরীব অ্যান্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে আগুনে পুড়ে মারা যায় ২১ জন শ্রমিক। একই বছর ২৪ ডিসেম্বর আশুলিয়ার হা-মীম গ্রুপের কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা যায় ৩০ জন শ্রমিক। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। উল্টো সব ঘটনার ক্ষেত্রেই সরকার নাশকতার অভিযোগ তুলেছে। সেই নাশকতা বা ষড়যন্ত্র কারা করেছে তার প্রমাণ আজ পর্যন্ত দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার আগুনের ঘটনা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে বলেছেন, এই ঘটনা নাশকতামূলক। সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিজিএমইএও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে নাশকতার কথা। কিন্তু এই দুর্ঘটনার পেছনে কাদের অবহেলা ছিল, গাফিলতি ছিল—সে সম্পর্কে সরকার কিছুই বলছে না। সরকারেরও কি এ বিষয়ে কোনো দায়িত্ব ছিল না? আজ পর্যন্ত সরকারের কোনো লোক কি তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটি পরিদর্শন করেছেন? সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয় কি অনুসন্ধান করে দেখেছে, কারখানাটি কমপ্লায়েন্স মেনে চলছিল কিনা? বিজিএমইএ’র হিসাব মতে গত ২১ বছরে পোশাক শিল্পে আগুনের ঘটনায় ৩৮৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৭শ’। কিন্তু এসব ঘটনার একটিরও বিচার হয়নি। প্রতিটি দুর্ঘটনায় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল, গাফিলতি ছিল। একটি ঘটনার বিচার হলে পরেরটি আর ঘটত না। কারখানার মালিকদের টনক নড়ত। কিন্তু সেদিকে কে তাকাবে? দেখা যায় কোনো বড় ঘটনা ঘটলে কিছুদিন তা নিয়ে হৈচৈ হচ্ছে। সরকার একটি তদন্ত কমিটি করছে। কিছুদিন পর কমিটি দায়সারা একটি প্রতিবেদন দেয়। এরপর ঘটনাটি চাপা পড়ে যায়। এসবই হচ্ছে বাংলাদেশে। এই বাংলাদেশ যেন গরিব অসহায় মানুষের এক মৃত্যু উপত্যকা। তাদের নিয়তিই যেন এই মৃত্যু। দুর্ঘটনার পর প্রিয়জন হারিয়ে অসহায় মানুষ বুকফাটা আর্তনাদ করে, নীরবে ফেলে চোখের পানি। এতটুকুই!
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে বাংলাদেশ : বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসন তলানিতে



 
প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনদের মুখে সাফল্যের বয়ান যেন শেষ হয় না। তাদের কথা শুনে মনে হয়, বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রেই উন্নতির শিখরে পৌঁছে গেছে। এটা ঠিক যে, একশ্রেণীর মানুষের প্রাপ্তিতে মোটেই ঘাটতি নেই। রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে তারা অবাধে সুযোগ-সুবিধা, অর্থবিত্ত সবকিছুই হাতিয়ে নিয়েছে। এদের পাওয়ার যেন শেষ নেই। ফলে কোনো সমস্যাই তাদের কাতর করে না। শাসকদের মুখের কথায় তাদের অবস্থাই ফুটে ওঠে। কিন্তু আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনে সংখ্যাধিক মানুষ কীভাবে গুমরে গুমরে মরছে সেটা তারা দেখেও দেখে না। আম জনতার সামনে অসহনীয় দুঃশাসন থেকে বাঁচার সব স্বাভাবিক পথই যেন বন্ধ হওয়ার যোগাড়। আইনের আশ্রয় নিতে গিয়ে মানুষ প্রতারকের খপ্পরে পড়ছে, নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বিচারের আশায় আদালতে গিয়েও রক্ষা নেই। বছরের পর বছর ঘুরে অর্থের শ্রাদ্ধ আর হয়রানিই সার। মামলার খরচ জোগাতে নিঃস্ব হলেও বিচার শেষ হয় না। দুর্নীতির ভয়াল থাবা যেন চারদিক থেকে চেপে ধরেছে সমাজকে। এমন অবস্থার কথা বাংলাদেশের কারও অজানা নয়। এখন বিদেশেও এ নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রশাসন ও আদালতগুলোর দুর্নীতি-অযোগ্যতা সীমা ছাড়িয়েছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (ডব্লিউজেপি) প্রকাশিত ‘আইনের শাসন সূচক-২০১২’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থাকে বিশ্বের নিকৃষ্টতম বলা হয়েছে। আইনের শাসনও একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বের ৯৭টি দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এমন সিদ্ধান্তে এসেছে সংস্থাটি। এখানে সরকারের ক্ষমতা ও স্বচ্ছতা, দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলা, মৌলিক অধিকার আইনের প্রয়োগ, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাসহ প্রতিটি সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থা নিম্নগামী দেখা গেছে। দেওয়ানি বিচার ব্যবস্থায় ৯৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৭তম। গত বছর এই অবস্থান ছিল ৬৬টি দেশের মধ্যে ৬২তম। এক বছরেই দেওয়ানি আদালতে ঘুষ-দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতা ও বিচারহীনতাসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে চরমভাবে। এমনটি উঠে এসেছে জরিপের ফলাফলে। সরকারের প্রশাসনিক অবস্থাও একেবারে ধসে পড়েছে। কোথাও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বালাই দেখা যায় না। অদক্ষতা আর দুর্নীতি গ্রাস করেছে প্রশাসন ও আদালতসহ সবকিছু। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন আর পুলিশি হয়রানি। এসবের কোনোটাই মানুষের অজানা নয়। দলীয় ক্যাডারদের মতোই পুলিশ অস্ত্রহাতে বিরোধী দল ও আন্দোলনকারীদের ওপর কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা নিত্যদিনই দেখতে হচ্ছে সবাইকে। তাই বলা যায, বিদেশি সংস্থাটি টেবিলে বসে এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাস্তবতাও তাই। তারা ২৫ হাজারের বেশি বিশেষজ্ঞ ও ৯৭ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই প্রতিবেদন তৈরি করেছে বলে জানিয়েছে। তারা আরও বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা শোচনীয়। এখানে ক্ষমতাসীনদের দলবাজি আর দুর্নীতির কারণে আইনের শাসন হারিয়ে যেতে বসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিহীনতা এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, সাধারণ মানুষ পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছে—এমন বাস্তবতা খালি চোখেই দেখা যায়।
তাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে আন্তর্জাতিক সংস্থার এমন মতামতে বিস্মিত হওয়ার সুযোগ নেই। দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হাড়ে হাড়ে তারা যে যন্ত্রণা ভোগ করছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে সেখানে। সুশাসনের আশায় সরকার পরিবর্তন কোনো কাজে আসেনি, এটাই চরম বাস্তবতা। এ থেকে উদ্ধারের পথ খোঁজাই এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রাষ্ট্র যখন খুনীদের রক্ষক



সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে দলীয় এমপিদের ভোটে তাদের বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি পদে নিয়োগ করা হয়। তবে নির্বাচিত হবার পর রাষ্ট্রপতি কোন দল বা বিশেষ রাজনীতির কাছে দায়বদ্ধ থাকেন না। রাষ্ট্রপতি কেবল নিজের বিবেক-সংবিধানের কাছেই দায়বদ্ধ থাকেন। রাষ্ট্রপতি এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর মতো কোন রাজনীতি তাড়িত ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। যেখানে আইনের সুরক্ষা ও বিবেকের স্বীকৃতি থাকে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণের সময় কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি সমানাচরণ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, তাকে সংসদ সদস্য হতে হবে। তিনি একটা দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
কারাগারে বন্দি কোনো কয়েদির যে কোনো মেয়াদের দন্ড মওকুফের বিষয়ে সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে এখতিয়ার দিয়েছেন। আদালতের রায়ে খুনীদের ফাঁসির রায় হওয়ার পর সাধারণভাবে আইনের শাসনে বিশ্বাসীদের এই প্রত্যাশা থাকে যে, রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র সরকার সংক্ষুব্ধ-ভিকটিম পরিবারের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন এবং আইনের শাসনের সুরক্ষায় রাষ্ট্র ও সরকার তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান এবং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে তিনি ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মৃত্যুদন্ড মওকুফ করার ক্ষমতা রাখেন। অতীতেও রাষ্ট্রপতিরা তাদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের দন্ড মওকুফ করে দিয়েছেন, এমন নজির রয়েছে। বরং অনেকক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিদের এমন সিদ্ধান্তকে মানবিক বিবেচনায় অভিনন্দিত করা হয়েছে। তবে অতীতের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোন রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের বিচারে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত একাধিক আসামীকে নির্বিচারে সাধারণ ক্ষমা দিয়ে তাদের দন্ড মওকুফ করে দিয়েছেন, এমন নজির বাংলাদেশে নেই। সম্ভবত বিশ্বের অন্য কোন দেশেও এর দ্বিতীয় নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর একাধিক হত্যা মামলার আসামীদের ক্ষমা করে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির এই সিদ্ধান্ত আইনের শাসন এবং হত্যাকান্ডের বিচারিক রায় কার্যকর করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যারা ফাঁসির দন্ড থেকে মুক্তি পেলেন, তারা সবাই শাসক-আওয়ামী লীগেরই নেতাকর্মী এবং আসামী পক্ষ যারা বিচারিক রায়ের সর্বোচ্চ দন্ড বাস্তবায়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হলেন, তারা হতভাগ্য বিরোধী দল-তথা বিএনপি'র কর্মী। সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে নানাভাবেই এটা প্রতিফলিত হয়েছে যে, সরকারি দলের লোকদের জন্য আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ একরকম, আর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জন্য অন্যরকম। একদিকে বিরোধী দলীয় নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা-জুলুম-নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা হত্যাকান্ডসহ বড়ো বড়ো অপরাধ করে আইনের হাত ও বিচারের দন্ড থেকে অব্যাহতি পেয়ে যাচ্ছেন।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ধাপেই মামলা প্রত্যাহারের হিড়িক : নরসিংদীর পৌর কমিশনার মানিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি একই পৌরসভার চেয়ারম্যান (মেয়র) লোকমান হোসেনকে (তিনিও সন্ত্রাসীদের দ্বারা নিহত হয়েছেন) খালাস দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রথম হাসিনা সরকারের সময়ে দায়ের করা ৪টি মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সুপারিশ করেন ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক।
রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু তার সুপারিশে মামলা বাতিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন। নজরুল ইসলাম হিরু লিখেছেন, মামলাগুলো মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা। এগুলো বাতিলের সুপারিশ করছি। আবেদনের ওপর সুপারিশ করার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরু বলেন, আমি সাধারণত নৈতিক ও আইনগত বিষয়গুলো দেখে শুনেই কাউকে সুপারিশ করে থাকি। যাকে-তাকে সুপারিশ কখনই করি না। লোকমান হোসেনের মামলার কাগজপত্রগুলো আমি বেশ ভালোভাবে খতিয়ে দেখে নিজে সন্তুষ্ট হয়েই সুপারিশ করেছি। মামলাগুলো যে রাজনৈতিক ও মিথ্যা সেটা লোকমান হোসেন তার রক্ষিত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আদালতেও প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন। তাছাড়া টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীও বুঝে-শুনেই সুপারিশ করেছেন।  (সূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ ২০ জুলাই ২০০৯)
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে ২০০১ সালের ২ জানুয়ারি লোকমান হোসেন পৌর কমিশনার মানিককে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। ওইদিনই লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে নরসিংদী থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারা উল্লেখ করে দায়ের করা এ মামলাটি চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত মামলা হিসেবে ঢাকার দ্রুত বিচার-১ আদালতের কার্যতালিকার ১৩/০৭নং মামলা হিসেবে বিচারাধীন ছিল। এই মামলার পাশাপাশি লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ১৯৯৯ সালে দায়ের করা আরও ৩টি মামলা নরসিংদীর বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন ছিল। লোকমান হোসেনের বিরুদ্ধে ওই সময়ের সরকারই মামলাগুলো দায়ের করেছে। এ মামলাগুলোর বিবরণ উল্লেখ করে এগুলো বাতিলের প্রার্থনা জানিয়ে লোকমান হোসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন পেশ করেন। আবেদনে তিনি আওয়ামী লীগের সময়ে দায়ের করা মামলাগুলোর ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৯৮ সালে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন তিনি। বিএনপি ক্ষমতায় এসে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে মতিয়া চৌধুরী এবং রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লে. কর্নেল নজরুল ইসলাম হিরুর বিজয়ের পেছনেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেন।
বিচারাধীন হত্যা মামলা বাতিলে মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশ বেআইনি। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী একজন মন্ত্রী ওই ধরনের চাঞ্চল্যকর মামলা বাতিলের আবেদনে সুপারিশ করতে পারেন না। এই সুপারিশ বেআইনি।
আলোচিত একটি হত্যা মামলায় চার্জশিট ও চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে, বিচার নিত্তির অপেক্ষায়, এই অবস্থায় মামলা প্রত্যাহারের কোনো আইনগত এখতিয়ার সরকারের নেই। বিধান অনুযায়ী মন্ত্রী ও এমপিরা মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত আবেদনে সুপারিশও করতে পারেন না। মামলাটি সঠিক নাকি মিথ্যা এটি আদালতেই প্রমাণিত হওয়া উচিত ছিল।
আমাদের দেশে কিছু লোক সবসময় আইনের ঊর্ধ্বে বসবাস করতে চায়। আর বাকিরা বসবাস করে আইনের নিচে। একটি চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত বিচারাধীন মামলা বাতিলের জন্য একজন মন্ত্রী কীভাবে সুপারিশ করেছিলেন তা আমি বুঝতে পারছি না।
২২ মে ২০১১ রাজনৈতিক মামলার অজুহাতে গুরুতর জখম করে হত্যার চেষ্টা ও বাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ থেকে একযোগে মুক্তি পেলেন ৩৬ আসামি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে নাটোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তারা মুক্তি পান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত চৌদ্দতম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিংড়া থানার ২৭ (২৫/১১/২০০২) নম্বর মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন নাটোরের পিপি আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারায় দরখাস্ত দিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার চান। তিনি আদালতকে বলেন, আসামিদের রাজনৈতিক কারণে এই মামলার আসামি করা হয়েছে। এ কারণে সরকার মামলাটির প্রত্যাহার চাচ্ছে। তবে বাদী ও আসামিরা কে কোন রাজনীতি করেন বা তারা কে কোন রাজনীতি করেন বা তারা কে কোন পদে রয়েছেন তা উল্লেখ করেননি। এ অবস্থায় সরকার পক্ষের আবেদনের বিরোধিতা করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এই মামলার ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। মামলার বাদী ও আসামিরা কেউই রাজনৈতিক নেতা নন। তারা রাজনৈতিক কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন। পারিবারিক জমিজমার বিরোধের জের ধরে আসামিরা বাদী ও সাক্ষীদের গুরুতর জখম করেছে এবং হত্যার চেষ্টা করেছে। আসামিরা বাদীর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে এবং মালামাল লুট করে বিরোধীয় জমি দখল করে নিয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অজুহাতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হলে বাদী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিয়াকত আলী মোল্লা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন। এতে ৩৬ আসামির সবাই মামলা থেকে মুক্ত হন।
খুনী বিপ্লবের যত অপরাধ : লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে হত্যাকারী পৌর চেয়ারম্যান আবু তাহের পুত্র এএইচএম বিপ্লবের মৃত্যুদন্ডাদেশ মওকুফের ঘটনা গোটা দেশে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। নুরুল ইসলামকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০১ রাত সাড়ে ১১টায় বাসভবন থেকে অপহরণ করার পর ওই রাতেই হত্যা করা হয়।  অপহৃত নুরুল ইসলামকে অপহরণের পর স্থানীয় মজু চৌধুরী হাটের কাছে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে সুইস গেটের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণকারী দলের নেতৃত্বে ছিল তাহেরের ছেলে বিপ্লব ও পালিত ছেলে রিংকু। অপহরণের দুই ঘণ্টা পরেই তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে বস্তাবন্দি অবস্থায় নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এরপর হত্যাকারীরা ঘণ্টা তিনেক ঘটনাস্থলে ছিল। ভোর চারটার দিকে তারা শহরে প্রবেশ করলে স্থানীয় পিটিআই কলেজের সামনে টহলরত একজন পুলিশ হাবিলদার তাদের দেখে ফেলে। এত রাতে তাদের শহরে ঘোরা ফেরার বিষয়ে হাবিলদার জিজ্ঞাসা করলে তারা তাকে কেন জবাবদিহি করতে হবে বলে দ্রুত সটকে পড়ে। বিস্তারিত বিষয়াদি রিংকু বাঙ্গাখা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম হাসুকে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টার দিকে জানায়। হাসু তখন জেলা বারের একজন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন যে, নুরুল ইসলামকে জীবিত ফেরত পাওয়ার আশা কম। পদস্থ ওই আইনজীবী সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন। এর আগে পর্যন্ত হাসু চেয়ারম্যান অপহৃত আইনজীবীকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনিও বেলা দুইটার আগে পর্যন্ত হত্যার বিষয়ে জানতেন না। ঘটনা জানার পর পরই পুলিশ হাসু চেয়ারম্যান ও রিংকুর রায়পুর উপজেলার গ্রামে হানা দেয়। কিন্তু সেখানে তখন তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনের সঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা পর্যন্ত খোদ অপহরণকারীরা নানা নাটক করতে থাকে। ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় তাহেরের স্ত্রী জেলা প্রশাসকের অফিসে আসেন। তিনি জেলা প্রশাসককে বলেন, নুরুল ইসলাম উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ওই অফিসে তিনি অবস্থান করবেন। ঘণ্টা দুয়েক তিনি এভাবে বসে থাকার পর জেলা প্রশাসক তাকে এক গাড়ি দিয়ে অনুরোধ করেন এ বিষয়ে একটু খোঁজ খবর নেয়ার জন্য। তখন গাড়িতে করে পৌর চেয়ারম্যানের স্ত্রী নিজের বাসায় চলে যান। এ সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিপ্লব ও হাসু চেয়ারম্যান একাধিকবার ফোনে অপহৃত নুরুল ইসলামকে ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেয়।
সাড়ে বারোটার দিকে বিপ্লব ও হাসু চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসকের কক্ষে আসে। এ সময় পুলিশ সুপার ইরফান আলী খান এবং জেলা বারের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। ডিসি এবং এসপি অপহৃত নুরুল ইসলামকে ফেরত দেয়ার অনুরোধ করলে বিপ্লব সম্মত হয়। তবে শর্ত জুড়ে দেয় যে এ ব্যাপারে কোনো মামলা দেয়া চলবে না। ডিসি এবং এসপি তাকে বলেন, ঠিক আছে এবং উপস্থিত আইনজীবীদের ৫০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্প পেপার তৈরি করতেও বলেন। এরপর বিপ্লব চলে যেতে চাইলে তার সঙ্গে তিনজন আইনজীবীকেও দেয়া হয়। প্রশাসন বিপ্লবকে জানায়, এই তিনজন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজান, অ্যাডভোকেট নূর এবং অ্যাডভোকেট নয়নের সঙ্গে যেন অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে ফেরত দেয়া হয়। বিপ্লব আইনজীবীদের সঙ্গে করে নিজ বাসভবনে গিয়ে জানিয়ে দেয়, অপহরণের বিষয়ে সে কিছুই জানে না। সুতরাং অপহৃত নুরুল ইসলামকে ফেরত দেয়ার প্রশ্ন নেই। আইনজীবীরা নিরুপায় হয়ে ফিরে আসেন। এই ঘটনার পরপরই মধ্যস্থতাকারী হাসু চেয়ারম্যান চাপ দিলে দুপুর ২টার দিকে রিংকু তাকে জানায় যে, অপহৃত নুরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে।
খবরটি হাসু চেয়ারম্যান জেলা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুনিরকে জানায়। মুনিরের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারও ঘটনা জানতে পারেন। এরপরও অপরাধীরা পৌর চেয়ারম্যানের বাড়িতেই ছিল। কিন্তু প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক না করায় সময় অতিবাহিত হয়। এভাবে আরো তিন দিন পার হয়।
২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক তার বাসভবনে পুলিশ সুপারের সঙ্গে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য বৈঠকে বসেন। উভয়ে পৌর চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে গ্রেফতারের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছান। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সরকারি দলের সংসদ সদস্য হারুন-অর-রশীদ জেলা প্রশাসকের বাসভবনে আসেন।
সৌজন্য আলাপের পর সংসদ সদস্য জেলা প্রশাসককে এই বলে তার বাসভবন ত্যাগ করেন যে তিনি পৌর চেয়ারম্যান আবু তাহেরের বাড়িতে দলের কিছু বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করার জন্য যাচ্ছেন। সংসদ সদস্য হারুন পৌর চেয়ারম্যানের বাড়িতে আধ ঘণ্টা অবস্থান করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপরাধীরা তার পিছু পিছু নিচে নামে এবং মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে চড়ে সংসদ সদস্যের গাড়ির পিছু পিছু রায়পুরার দিকে চলে যায়। পুরো ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশের চোখের সামনে। অথচ তারা নিষ্ক্রিয় ছিল।
তারা সংখ্যায় ৮ জন ছিল । সরকারি দলের সংসদ সদস্যের গাড়ির বহরের সঙ্গে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করলে সরকারি মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে ভেবে অপহরণকারীদের ধরা হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে একটি হৈচৈ ও দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, তারা সেটা বোঝেননি।
১৯ জুলাই ২০১১ বিপ্লবের মৃত্যুদন্ডাদেশ মওকুফ সংক্রান্ত একটি চিঠি নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার বিচারিক আদালত চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছায়। চিঠিটি পাঠিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক নূরশেদ আহমেদ ভূঁইয়া। চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং কারা শাখা-২ এর পি-২০/২০১১ (অংশ) ২৭০, তারিখ ১১/০৭/২০১১ এবং কারা অধিদফতরের স্মারক নং পিডি/পরি/৭/২০১১/১৬৭৫(৩) তারিখ ১৭/০৭/২০০১-এর বরাত দিয়ে বলা হয়, উপরোক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত স্মারকের আলোকে মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিষয়োক্ত বন্দিকে বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, চট্টগ্রাম-৪৮/২০০৩ মামলায় মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দির পিতা কর্তৃক ছেলের প্রাণভিক্ষার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মৃত্যুদন্ড মওকুফ করা হলো লিখে স্বাক্ষর করেছেন। তাই সংশ্লিষ্ট বন্দি গত ১৪/০৭/২০০১ তারিখে মৃত্যুদন্ড হতে খালাস পেয়ে অন্য মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি হিসেবে বর্তমানে অত্র কারাগারে আটক আছে।
বিপ্লবের ফাঁসির দন্ড রাষ্ট্রপতি মওকুফ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আইনের শাসনকে ব্যাহত করেছে। একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিপ্লবের দন্ড মওকুফ করে দেয়া একটি খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হলো। এতে আইনি শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। মানুষ নিজ হাতে আইন তুলে নিচ্ছে।
সংবিধানে যে কোনো আসামিকে ক্ষমা করে দেয়ার ক্ষমতা ও এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির রয়েছে। কিন্তু ফাঁসির আসামি বিপ্লবের দন্ড মওকুফ করে তিনি সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এতে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার নুরুল ইসলামের পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলো।
জঘন্য খুনী বিপ্লবকে মাফ করে দেয়ার পর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান তার স্ত্রী আইভি রহমান হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়ার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন নুরুল ইসলামের বিধবা স্ত্রী রাশিদা ইসলাম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির উচিত হবে এখন আইভি রহমানের হত্যা মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দিয়ে ওই ঘটনায় জড়িতদের ক্ষমা করে দেয়া। কারণ, তিনি যেমন স্ত্রী হারিয়েছেন, আমিও স্বামী হারিয়েছি। আমার স্বামী হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিয়ে স্ত্রী হত্যার বিচার করার অধিকার তার নেই।
রাশিদা ইসলাম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার পিতার হত্যাকারীদের বিচার করে দ্রুততার সঙ্গে তাদের ফাঁসি কার্যকর করেছেন। যারা পলাতক আছেন তাদেরও ধরে এনে ফাঁসি দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অথচ তার সরকারের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে নুরুল ইসলামের খুনিদের ক্ষমা করে তাদের আরও খুন করার লাইসেন্স দিচ্ছেন। তিনি যেমন পিতার হত্যাকারীদের বিচার চাওয়ার বা করার অধিকার রাখেন তেমনি আমার এতিম সন্তানরাও পিতৃহত্যার বিচার পাওয়ার, খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখার অধিকার রাখে।
রাশিদা ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার আছে মৃত্যুদন্ডের আসামিকে ক্ষমা করার। তাই বলে এমন জঘন্য খুনিদের তিনি ক্ষমা করে দেবেন এটা ভাবতেও অবাক লাগছে। কোনো সভ্য দেশে দলীয় বিবেচনায় খুনিদের এভাবে ছেড়ে দেয়ার দৃষ্টান্ত নেই। রাশিদা ইসলাম বলেন, তাহের পরিবার শুধু আমার স্বামী নুরুল ইসলামকেই নয়, আরও অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে খুন, গুম ও চিরতরে পঙ্গু করে দিয়েছে। গোটা এলাকাবাসীর জীবন তারা বিপন্ন করে তুলেছে। তারা যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে আষ্কারা পায় তখন তাদের খুনের নেশা আরও বেড়ে যাবে। আমাদের মতো নিরীহ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নতুন করে হুমকির মুখে পড়বে। একটা স্বাধীন দেশে যদি খুনি ক্ষমা পেয়ে যায়, তাহলে কোথায় আইনের শাসন। এই খুনির ক্ষমা হয় কিভাবে?
রাশিদা ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলবো-আমার অসহায় এতিম সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে আপনি খুনি তাহের পরিবারের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন। কারণ, আপনি যেমন আপনার পিতার হত্যাকারীদের বিচারকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছেন, তেমনি আমার সন্তানরাও তার নিরপরাধ পিতার খুনিদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর দেখতে চায়। তা না হলে আল্লাহ খুনির প্রশ্রয়দানকারীদের বিচারও অবশ্যই করবেন। (সূত্রঃ দৈনিক আমার দেশ ২১ জুলাই ২০১১)
২৮ জুলাই ২০১১ একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামি খুনি বিপ্লবের দন্ড মওকুফের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায় এড়াতে পারে কিনা? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে দেশের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাগুলো দ্রুত নিত্তির জন্য গঠিত মনিটরিং সেলের সভা শেষে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি বিপ্লবকে আইন ও সংবিধান মেনেই রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করেছেন বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি বিপ্লবকে ক্ষমা করে তার সাংবিধানিক এখতিয়ার প্রয়োগ করেছেন।
খুনের আসামিকে ক্ষমা করে দেয়ায় ইতিহাসে এক জঘন্য নজির স্থাপিত হলো। রাষ্ট্রপতি কী কারণে কোন অবস্থায় খুনিকে ক্ষমা করেছেন জানি না। তিনি খুনিকে আরও শক্তি-সামর্থ্যসহ সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এতে সমাজে অপরাধ বাড়বে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভয় কমবে। নতুন গডফাদার সৃষ্টি হবে। প্রমাণ হিসেবে ১ আগস্ট ২০১১ তারিখের ঘটনা উল্লেখ করা যায়।
এদিন লক্ষ্মীপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে হামলা চালায় সরকারি দলের ক্যাডাররা। দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছোট ছেলে শিবলুর নেতৃত্বে এ হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। বহরে থাকা সাংবাদিকদের মাইক্রোবাসসহ তিনটি প্রাইভেট কার ও পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে হামলাকারীরা। আহতরা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা  নেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা থেকে গিয়ে লক্ষ্মীপুর ও সেনবাগে স্থানীয় বিএনপি আয়োজত পৃথক দুটি সমাবেশে যোগ দেন। বেলা আড়াইটার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের ওয়েলকাম কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত জেলা বিএনপির মহাসমাবেশে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। সমাবেশ শেষে গাড়িবহর স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির বাড়ির দিকে রওনা হলে লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা তাহের বাহিনীর সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। বহরের পেছনের দিকে সাংবাদিকদের গাড়িসহ তিনটি মাইক্রোবাস হামলার শিকার হয়। এ সময় গাড়িতে থাকা রেডিও টুডে'র চিফ রিপোর্টার সাহাবউদ্দিন চৌধুরী, বার্তা ২৪ ডটনেটের স্টাফ রিপোর্টার মহসিন হোসেন, দৈনিক আমাদের সময়ের তারেক, সালমান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া মঞ্জু, আজিজুল হাকিম আরজুসহ ১৩ জনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে তারাও লাঞ্ছিত হন। এতে তিন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
তাহেরের খুনি ছেলে বিপ্লবের ফাঁসির দন্ড রাষ্ট্রপতির মওকুফ এবং তার ছোট ছেলের নেতৃত্বে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা! সেনবাগের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ হামলাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি খুনিদের ক্ষমা করে দিয়ে বিরোধী মত দমনে কাজে লাগাচ্ছেন- এটা লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাসী তাহেরের ছেলেরা দেশবাসীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে সরকার পুরো দেশ ও জাতিকে আক্রান্ত করে চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কবে আসবে সেই নেতৃত্ব?


সোনালী ব্যাংক একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরই এর স্থান। সেই ব্যাংক থেকে হলমার্ক নামে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। এত টাকার ঋণ দেয়ার রহস্য কোথায়? পত্রপত্রিকায় এ ব্যাপারে লেখালেখি হয়েছে, এখনো হচ্ছে।

ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়ার একটি সিস্টেম আছে। যেকোনো লোক বা প্রতিষ্ঠান ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। ঋণের আবেদনপত্র নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপন করা হয়। তারা আবেদনপত্রগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। পর্যাপ্ত অতিরিক্ত জামানত না থাকলে সেই আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য করা হয়। এর পরও  বাস্তব যাচাই বাছাইয়ে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে ঋণ দেয়া হয়। হলমার্ককে অতিরিক্ত জামানত নিরাপত্তা ছাড়াই কি ঋণ দেয়া হয়েছে? এসবই তদন্তসাপেক্ষ। এই ঋণ দেয়ার ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। এ ধরনের ঋণ একমাত্র রাষ্ট্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপ  ছাড়া দেয়া যায় না। তবু হলমার্কের মতো একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে চার হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। এত টাকার ঋণ হলমার্কের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয় জেনেও পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই ঋণ দেয়ার রহস্য কোথায়? ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এমন একটা গর্হিত কাজ কেন করতে যাবে? অনিয়মিত ঋণ দেয়া হলে, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা কেউ রেহাই পাবেন না। তাদের চাকরি যাবে, অন্য ধরনের শাস্তিও হতে পারে। আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতা হানিফ বলেছেন, পরিচালনা পর্ষদের কোনো দোষ নেই। তা হলে নিশ্চয়ই কে দোষ করেছেন, তা হানিফ সাহেব জানেন। তবে কেন তিনি তা প্রকাশ করছেন না।
অনেকেই বলেন, হলমার্কের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা ঠুকে দিতে। হলমার্কের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলাও করতে হবে। যার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড, প্রয়োজনবোধে এসব ক্রিমিনালের বিরুদ্ধে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে, তাতে ফাঁসির আদেশের বিধান রাখতে হবে।
ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সবার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযুক্ত পরিচালকদের রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করতে হবে। এতে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। বাংলাদেশকে যদি অর্থনৈতিক পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়, তাহলে সরকারকে কঠোর হতেই হবে।
অতীতে শুধু পাট রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু পাট শিল্প ধ্বংস হয়েছে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর। তারপর ধীরে ধীরে গার্মেন্ট শিল্প গড়ে ওঠে। এই শিল্পে লাখ লাখ মেয়ের চাকরির সংস্থান হয়েছেÑ আর এই গার্মেন্ট বিদেশে রফতানি করে শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। দেশের প্রায় এক কোটি তরুণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রম দিয়ে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ আজ অনেকটা সচ্ছল। কিন্তু এর বেশির ভাগ অর্থ দেশের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় হচ্ছে না। যাচ্ছে দুর্নীতিবাজদের পকেটে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যা দেখেছি, তা মনে হলে শরীর হিম হয়ে আসে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফিরলেন। তারপর ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিলেন।
বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেয়ার মাত্র তিন দিন পর (১৪ জানুয়ারি) সমগ্র দেশে শুরু হলো লুটের তাণ্ডব। চোখের সামনে দেখেছি ইসলামপুর রোডে অবাঙালিদের কাপড়ের দোকান, নবাবপুরে হার্ডওয়্যারের দোকান, বায়তুল মোকাররম ও স্টেডিয়ামের বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান লুট হতে। সেদিন এই লুট বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ সরকারের ছিল না। এই লুটের তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলাদেশে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুরে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুট হয়েছে। এসবই ছিল বাংলাদেশ সরকারের প্রাপ্য। এরপর সেই অবাঙালিদের পরিত্যক্ত দোকানপাট বিলিবণ্টনের জন্য সংসদ সদস্যদের দিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই সব দোকানপাট কমিটির সদস্য আর শেখ ফজলুল হক মনির অনুগত মুজিব বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিলিবণ্টন করা হয়।
কোনো নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা ওই সব দোকানপাট পাননি। এখানেও সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় হতো। তখন দেশের সর্বত্র চলছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অবাধ লুটতরাজ। এই সময় কয়েকটি থানাও লুট হয়। নরসিংদী থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফজলুর রহমানও এ সময় খুন হন। তখন এসব বন্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু রক্ষীবাহিনী নামিয়ে দেন। এ সময় রক্ষীবাহিনীকে দিয়ে প্রশাসন বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীকে খুন করিয়েছে।
দেশের তখন চরম দুরবস্থা। সংসদ সদস্যরা পুলিশ প্রোটেকশন ছাড়া তাদের নির্বাচনী এলাকায় যেতে ভয় পেতেন। তখন সংসদ সদস্যদের অনুরোধে বঙ্গবন্ধু আর্মি নামিয়ে দেন। কয়েক দিনের মধ্যে সারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে আসে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে বলেন, ‘আপনি আর্মি নামিয়েছেন কেন? জানেন না, এরা সবাই আমাদের শত্রু। আমাদের কোনো ভালো এরা দেখতে পারে না। শিগগির আর্মি তুলে দেন। নইলে আমরা শেষ হয়ে যাবো।’ বঙ্গবন্ধু আত্মীয় পরিজনের চাপে আর্মি তুলে নিলেন। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্যদের কোনো পরামর্শ তিনি নেননি। আর্মি তুলে নেয়ার পর দেশ আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে এলো। সন্ত্রাস, ছিনতাই, লুটপাট আবার সমানে চলতে লাগল।
এরপর দেশের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর দুঃখজনক মৃত্যুর পর খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতায় এলেন। তিনি মাত্র ৮৭ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর হঠাৎ আর্মির চিফ অব স্টাফ খালেদ মোশাররফ ক্যু করে ক্ষমতায় এলেন। তিনি মোশতাককে অপসারণ করলেন। ঘটনার ছয় দিনের মাথায় সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ক্যান্টনমেন্ট দখল করে খালেদ মোশাররফসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র আর্মি অফিসারকে হত্যা করে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসানো হয়। জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনী এনে বঙ্গবন্ধুর একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) বাতিল করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন। জিয়া বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। তিনি সারা দেশে সাধারণ নির্বাচন দিলেন। তিনি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করলেন। কিন্তু আর্মির অনেক অফিসার জিয়ার সিভিল প্রশাসনের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। জিয়া স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, দেশে আমি গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। একে নসাৎ হতে দেবো না। কিন্তু এতে সামরিক বাহিনীর অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা মনে করেছেন সিভিলিয়ানরা সবাই দুর্নীতিপরায়ণ। তারা জিয়াকে সামরিক শাসন জারি করার পরামর্শ দেন। জিয়া বলেছেন, দেশে আমি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিয়াকে প্রাণ দিতে হলো। এরপর বিচারপতি সাত্তার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এলেন। মাত্র কয়েক মাস তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময় জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করলেন। তিনি ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। তার ওষুধনীতি প্রশংসিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ও অন্যান্য সংস্কারমূলক কাজ তার আমলে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার হাইকোর্ট বিকেন্দ্রীকরণ নীতিতে সারা দেশের আইনজীবীরা আন্দোলনে নামেন। শেষ পর্যন্ত ছাত্রসমাজ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। তা ছাড়া ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির জন্য জনগণ তাকে বর্জন করে। শেষ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেন। দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। খালেদা জিয়ার বিএনপি ক্ষমতায় এলো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধী দল খালেদা জিয়ার সরকারের পতন ঘটাতে লাগাতার হরতাল শুরু করে। এরপর সংসদ বর্জন চলে। দেশে একটা চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়। কিন্তু খালেদা জিয়া পাঁচ বছর ক্ষমতায় রয়ে গেলেন। বিতর্কিত এক নির্বাচনের পর সংবিধান সংশোধন করে বিধান করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনে খালেদা জিয়া। নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলো। তখন থেকেই তিনি তার নিকট-আত্মীয়দের দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেন। সবখানে শেখ মুজিবকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে নাম পরিবর্তনের জোয়ার শুরু হয়ে যায়। ২০০২ সালের নির্বাচনে আবার খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেন। আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হলো। কিন্তু তিনি তার পরিবারকে রাজনীতিতে নিয়ে এলেন। জিয়াউর রহমান কখনো আত্মীয়-পরিজনকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করেননি। কিন্তু খালেদা জিয়া তার ছেলে তারেক রহমানকে দলের নেতৃত্বে নিয়ে এলেন। শেখ ফজলুল হক মনির মতো প্রশাসনের সর্বত্র তার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হলো। দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লেন তারেক রহমান। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভরাডুবি হলো। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই দাপটের সাথে দেশ শাসন করতে লাগলেন। ১৯৯৬ সালে এই আওয়ামী লীগের আমলে শেয়ারবাজার ধস নামে। এবারো সেই শেয়ারবাজারের পতন লক্ষণীয়। লাখ লাখ যুবক পথে বসে পড়লেন। শেখ মুজিবকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নামই শুধু পরিবর্তন করেননি, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রিত দুই টাকা থেকে আরম্ভ করে ১০০০ টাকার নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর তেলেসমাতি দেখেছি। হলমার্ককে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। পেছনে বড় কেউ না থাকলে এত বড় অঙ্কের ঋণ দেয়া সম্ভব নয়। পরিবারতন্ত্র ও স্তাবকদের মিলিত প্রচেষ্টায় শেখ হাসিনা দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাকশাল না থাকলেও বাকশালের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি শেখ হাসিনার কার্যকলাপে। টিভি সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা আজো হলো না। ইতোমধ্যে আট মাস চলে গেছে। যদিও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা হবে। সরকার সমর্থিত কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির তথ্য সাগর-রুনির কাছে ছিল, সেসব তথ্য নির্মূল করতেই নাকি সাগর-রুনিকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইলিয়াস আলী গুম হলেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ।
দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলো কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না। লাশেরও কোনো হদিস মেলেনি আজো। এমনি গুম, হত্যার ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে। আমার মনে হয় দুই দলের চরিত্র প্রায় একই রকম। তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? তৃতীয় শক্তির ওপর আমাদের ভরসা নেই।  নিবেদিত নেতৃত্ব  ছাড়া দেশকে বাঁচানো যাবে না। কবে আসবে সেই নেতৃত্ব?
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সরকারের টার্গেট কারা?


বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অরাজকতা চলছে। সরকারের মেয়াদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই যেন তা বেড়েই চলছে। খোদ সরকারই অরাজকতা সৃষ্টি করছে। সরকারি দল ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাদের পথ পরিষ্কার করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। জনগণের গতর খাটা ঘাম ঝরানো টাকার গোলাম পুলিশ বাহিনীকে দলের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করছে। সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে একের পর এক নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি করে দেশের মানুষকে বোকা বানানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। অর্থনীতির সব খাতের উন্নয়নের সূচক নিম্নমুখী হলেও সরকারি মন্ত্রী-এমপি এবং দলীয় নেতা-পাতিনেতাদের মিথ্যার ফুলঝুরির সূচক দিন দিন ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।

এ সরকার এক দিকে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে, অন্য দিকে সার্বিক পরিস্থিতিকে সঙ্ঘাতময় করে তুলছে। শেয়ার ব্যবসায়ীদের শবদেহ গোরস্থানে পৌঁছানোর আগেই পদ্মা সেতু পদ্মা নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ-বাণিজ্য, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে এবং ভোয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংক ঋণের মহোৎসব, টেন্ডার দখল, চাঁদা বাণিজ্য, দলীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নামে সরকারি খাসজমি দখল, ডেসটিনিসহ ভোয়া নানা চমকদার কোম্পানির মাধ্যমে নিজেদের পকেট স্ফীত করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের রাস্তায় পুলিশ দিয়ে পেটানো সবই দেশের অসহায় ও নিরুপায় জনগণের ললাট লিখন বলে চালিয়ে দিচ্ছে ওরা। এখন সব কিছু পেছনে ফেলে রাজনৈতিক অরাজকতাকে পরিকল্পিতভাবে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা সবখানেই নানা ধরনের জুজুর ভয় দেখিয়ে জনগণের চোখে ধুলো দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ভাষা দলীয় ক্যাডারদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন ধরে দেশে যে অরাজকতা চলছে ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে তা খুবই ন্যক্কারজনক। কে অপরাধী আর কে অপরাধী নায়, তার কোনো বাছবিচার না করে দাড়ি-টুপিওয়ালা লোকদের চরমভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজ ও অপহরণকারীদের মতো নিরীহ ছাত্রদের বাসস্থান থেকে ধরে রিমান্ড ও নির্যাতন করে চলেছে প্রতিনিয়ত। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি কিংবা মা করে দিতে কোনো অসুবিধা নেই। ফাঁসির আসামিরা দলীয় লোক হওয়ার কারণে রাষ্ট্রপতির মা পাচ্ছেন। কোনো দলের মিছিল-মিটিং হলেই তা নাশকতামূলক হয়Ñ এহেন দাবির পেছনে যুৎসই কোনো যুক্তি নেই।
আজকে যারাই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড এবং অন্যায্য দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে, তাদেরকেই সরকার টার্গেট করে নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা শিকদের পেটালে, পুলিশ পেটালে, ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য চালালে, প্রকাশ্যে বন্দুক উঁচিয়ে বিরোধীদের ধাওয়া করলে, ক্যাম্পাস জ্বালিয়ে দিলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে না। বরং পুলিশ তাদের শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয় না। সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে অথবা যাদের সরকারবিরোধী বলে সন্দেহ হচ্ছে তাদের পুলিশ রিমান্ড, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, পুরনো খুনের মামলা, নারী নির্যাতনসহ আরো কঠিন ও জটিল মামলার আসামি করে বিনাবিচারে জেলহাজতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সারা দেশের মানুষ আজ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে এক অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে। জুলুম-নির্যাতন করে কোনো সরকার তার শেষ রা করতে পারেনি। আর জুলুম বেশি দিন টেকসই হয় না। পৃথিবীর ইতিহাসে জুলুমের নির্মম পরিণতি কত যে করুণ তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। অন্ধ হলেও প্রলয় বন্ধ হবে না। সময় থাকতে সবার বোধোদয় হোক এ প্রত্যাশা রাখি।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

চারপাশে লাশ : আর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ববোধ



ক্ষমতার পালা বদলের আশঙ্কা স্কন্ধ ভূতের মতো প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে যত চেপে বসছে ততই আমরা লোক হাসানোর নানা ভাঁড়ামোপূর্ণ কথাবার্তা শুনতে পাচ্ছি। আর কত তিনি লোক হাসাবেন। সাধারণ মানুষের হাসার ক্ষমতাও এখন আর নেই। দেশজুড়ে আজ লাশের মিছিল, চারদিকে লাশ আর লাশ। সরকারের হাতে গণতন্ত্রের লাশ। সরকারের হাতে মানবতার লাশ। আমরা সবাই পুড়ে অঙ্গার হতে চলেছি। তবে কি আমার মাতৃভূমি আবার পুড়ে ছারখার হতে চলেছে। জনগণের কাঁধে শত শত নিরীহ পোশাক শ্রমিকের লাশ। চট্টগ্রামবাসীর কাঁধে স্বপ্নের ফ্লাইওভারের লাশ। কয়েক হাজার টন ওজন সেই লাশের। মানুষ আর এই লাশের ওজন বইতে পারছে না। দেশজুড়ে কবর আর কবর। সোনার বাংলা কি তবে সোনার সরকারের জমানায় কবরস্থান হতে চলেছে। ছাত্রলীগের সোনার ক্যাডারদের হাতে সারাদেশের শিক্ষাঙ্গন এরই মধ্যে লাশের স্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন তারা মরা লাশের ওপর নৃত্য করে উল্লাস করছে। আর এই শিক্ষাঙ্গনের লাশ-খাদকরা যখন চোরাগোপ্তা রহস্যময় হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে, তখন স্বয়ং সরকার ও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাজশরমের মাথা খেয়ে সেই খুনেদের দেখতে গিয়ে প্রমাণ করছেন তাদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়েই সবকিছু হচ্ছে। একদিকে কবরস্থানে লাখো স্বজনের কান্না; অন্যদিকে দেশজুড়ে আগুন আর আগুন। আগুন নিভছেই না। দেশের ভবিষ্যত্ লেলীহান আগুনে পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। গার্মেন্ট শিল্প এখন পুড়ে ছাই হওয়ার যোগাড় হয়েছে। কিন্তু তাতে কী! সরকারপ্রধানের রসময়তা তাতে দমবার নয়। তিনি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ গয়রহ সবকিছুতেই কেবল ষড়যন্ত্রের চালবাজি খুঁজছেন। তাদের ভাষায় নাশকতা। ভাবখানা এমন যে, নাশকতার বুলিবাজি করলেই জনগণের দরবারে সাতখুন মাফ। দেশবাসী যখন কাঁদছে, তখন সরকারি দল ও বিরোধী দল উভয়েই মত্ত উতোর চাপানের খেলাতে। সরকারি দল আর প্রধানমন্ত্রীর তো এক্ষেত্রে জবাব নেই। তিনি ক্ষমতায় আসতেই জাতি মর্মান্তিক উপহার হিসেবে পেয়েছিল পিলখানা ট্র্যাজেডি। প্রথম থেকেই তিনি, তার গুণধর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমলা, তার গুণধর সিপাহসালার সর্বকর্মবিশারদ নানক দিনভর মনিটর করলেন। আমরা তখন উপহার পেলাম বিদ্রোহ দমনের নামে নানা ছলছুতা, নানা নাটক প্রহসন, খুনে চক্রের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সসম্মানে বিহার, সবকিছু সরকার ও তল্পিবাহকদের কন্ট্রোলে—এমন বাগাড়ম্বর-প্রতিশ্রুতি। আর তারপর লাশ আর লাশ। লাশের যেন শেষ নেই। জাতির সামনে তখন প্রশ্ন ছিল—কী তারা মনিটর করলেন? কী তারা শান্তি আলোচনা করলেন? প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কী সমঝোতা বৈঠক হলো? তাদের এমন মাহাত্ম্যপূর্ণ মনিটরিংয়ের পরও জাতি সেদিন সূর্যসৈনিকদের লাশ আর লাশ পেয়েছিল কেন? দেশের মানুষের সেই মুলতবি প্রশ্নের জবাব মেলেনি আজও। বরং তখনও উপহার পাওয়া গেছে ষড়যন্ত্র্ত্র তত্ত্ব। কে ষড়যন্ত্র করে? করে ওই বিরোধী দল। কে দায়ী? দায়ী ওই খালেদা জিয়া। এসব বলে বলে প্রধানমন্ত্রী দিব্যি তার এই সোনার জমানা পার করে দিলেন। তারপর আমরা বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যার বিচার হতে দেখছি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই বিচারে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মোটেই হালে পানি পাচ্ছে না। হায় রে আমাদের দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী!
এবার আসা যাক মহাজোট জমানার অন্তিম লাশ-মিছিল সাম্প্রতিক আশুলিয়া ট্র্যাজেডি নিয়ে। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, এটাই যেন শেষ হয়। আর যেন তারা এমন শোকের মহা মিছিল উপহার না দেয়। আর লাশ বহনের ক্ষমতা নেই এই দুর্ভাগা জাতির। দেশ-জাতি এখন শোকে পাথর। আশুলিয়ার এই লাশ মিছিলের শোক ও কষ্ট দুর্বহ। এত কান্না, এত লাশ, এত মানুষের পুড়ে অঙ্গার দেহ দেশবাসী আর কখনও দেখেনি। আশুলিয়ার আকাশে-বাতাসে এখন কেবলই লাশের গন্ধ। কবরস্থানে লাখো মানুষের আহাজারি। মহাজোটের জমানায় এই কান্না আর থামবে বলে মনে হয় না। দেয়ালের ভাষা পড়ুন। মহাজোটের কপাল লিখন এর মধ্যেই জনগণ লাল অক্ষরে লিখে নিয়েছে রক্তাক্ত ক্ষুব্ধ হৃদয়ে। আগামী নির্বাচনে লোকজন কলাগাছে ভোট দিলেও আওয়ামী লীগকে আর নয়। একথা আমার নয়। একথা শুনেছি পোশাক শ্রমিকদের মুখে। প্রায় দেড়শ’ পুড়ে অঙ্গার লাশ। শনিবারের ঘটনা। সেদিনকার দৃশ্যপট দেখুন। আশুলিয়ার তাজরিন গার্মেন্টে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেল। সারা ঢাকার ফায়ার সার্ভিস ছুটে গেল সেখানে। চলল উদ্ধার তত্পরতা। সবাই ছুটে গেলেন সেখানে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী ও অমাত্যবর্গ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীভুক্ত যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডারদের নিয়ে গেছেন কিনা সংবাদ মাধ্যমে বিস্তারিত আসেনি। আমরা জানলাম প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এই উদ্ধার অভিযান মনিটর করছেন। তিনি যখন অগ্নিদুর্গতদের পাশে, মানুষের তখন আশ্বস্ত না হয়ে উপায় কী! আমরা প্রধানমন্ত্রীর বরাতেও জানলাম তিনি নিজেই মনিটর করছেন। সে রাতে আগুন নেভানো হলো। আমরা জেনে আশ্বস্ত হলাম, তাহলে অল্পের ওপর দিয়েই এ যাত্রা রক্ষা। এক পর্যায়ে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি হলো। তারপরই ট্র্যাজেডির সূচনা। পরদিন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় যে খবর আসতে লাগল তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। প্রথমে কেউই তাদের চোখকে বিশ্বাস করেনি। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ নিয়ে নানা রকম গল্প চালু বাজারে। সবাই ভেবেছে অমন কোনো বিভ্রাট হয়ে থাকবে। কিন্তু একযোগে সব টিভি মিডিয়া যখন একই তথ্য প্রচার শুরু করল তখন জাতির চোখে কান্না ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না।
তাহলে প্রশ্ন—তারা কী মনিটরিং করলেন! যে মনিটরিংয়ের পর আমরা উপহার পাই লাশের মিছিল, জাতির কাঁধে তুলে দেয়া হয় দেড়শ’ পুড়ে প্রায় ছাই লাশের বেওয়ারিশ কফিন, এ কেমন দায়িত্ববোধ। প্রধানমন্ত্রী সপারিষদ কী মনিটরিং করলেন? পুরো ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌঁছে কী আগুন নেভাল? তারা কেউই কি টেরই পায়নি তাজরিন ফাশনের একটা ফ্লোরে লাশ আর লাশ। নাকি অত্যন্ত সুচতুর কৌশলে এই অগুনতি লাশ গোপন করার জন্য নিবিড় মনিটরিংয়ের নাটক করা হয়েছিল। যেমন নিষ্ঠুর নির্মম নাটক আমরা প্রত্যক্ষ করেছি পিলখানা ট্র্যাজেডিতে। আশুলিয়ার হাজার হাজার শ্রমিক যদি কারখানা ঘেরাও করে না রাখত তবে জাতি হয়তো এই ইতিহাসের সবচেয়ে শোকাবহ ঘটনার কথা জানতেই পারত না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সদা জয়ন্ত বারাক ওবামার দায়িত্ববোধের ঈর্ষণীয় দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি। বিশ্ববাসী দেখেছে। তার নির্বাচনের ঠিক মাত্র কয়েকদিন আগে সেদেশে ঘটে যায় ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির নিষ্ঠুর তাণ্ডব। লণ্ডভণ্ড হয় নিউইয়র্ক। ওবামা কী করলেন! তিনি কি তার অপজিশন রমনিকে দায়ী করলেন? না, তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন মানুষের সহায়তায়। দুগর্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। নির্বাচনী প্রচারের পালা মাথায় তুলে তিনি মানবতার ঝাণ্ডা তুলে ধরলেন। তার ফল পেয়েছেন হাতেনাতে। মার্কিনিরা তাকে বিজয় মুকুট পরিয়ে বরণ করে নিল। সারা দুনিয়া এই মানবতার বিজয়গাথা দেখল মুগ্ধ চোখে। বারাক ওবামার বিজয় নিয়ে দুনিয়াজুড়ে যে মাতামাতি হয়েছে, বিজয়োল্লাস হয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন।
আর আশুলিয়ায় মানবতার মৃত্যু নিয়ে নানা নাটকও দেখছে বিশ্ববাসী। আমেরিকায় বারাক ওবামার মনিটরিংয়ে লাখ লাখ মানুষ ফিরে পেয়েছিল জীবন, আর আমাদের দেশে নাটুকে নেতা-নেত্রী-মন্ত্রীদের মনিটরিংয়ে পাওয়া গেল লাশ আর লাশ। লাশের সঙ্গে আর কী উপহার পাচ্ছি আমরা ব্লেমগেম। পরস্পর দোষারোপ। সেই বস্তাপচা হুমকি। সেই বস্তাপচা অজুহাত। সেই নাশকতার গল্প। প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রী-অমাত্যরা এই ভয় দেখাতেও ছাড়ছে না—নাশকতার পেছনে যারা তাদের ছাড়া হবে না। এরকম হুমকি-ধমকি-বাগাড়ম্বর আমরা পিলখানা ট্র্যাজেডির সময় শুনেছি ও দেখেছি। মাথায় খালি একটাই চিন্তা—প্রতিপক্ষকে কেমনে ফাঁসানো যায়। কেমন করে জব্দ করা যায়। বিরোধী দল কী করছে! তারাও একই তালে আছে। তারাও আশুলিয়ার শোকক্ষুব্ধ মানুষের পাশে নেই। সরকার নেই, বিরোধী দল নেই—আশুলিয়ার এই অঙ্গার লাশের স্বজনরা কোন কবরস্থানে গিয়ে কাঁদবে।
ট্র্যাজেডির পর ২-৩ দিনও যায়নি। মানুষের পাশে না থাকলে কি হবে, প্রধানমন্ত্রী ঠিকই তার নির্বাচনী তালুকদারির রাজনীতির খেরোখাতা খুলে বসেছেন। ২৭ নভেম্বর সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের সঙ্গে মতবিনিময়ে বসলেন। কোথায় তিনি আশুলিয়ার দুর্গতদের পাশে থাকবেন তা নয়; তিনি আছেন ভোট নিয়ে। তিনি আছেন কীভাবে তার তথাকথিত বশংবদ সরকারের মাধ্যমে আবার মসনদে ফিরবেন তার ধান্দায়। ওইদিন তিনি বললেন—
পঁচাত্তরের পর একমাত্র ২০০১ সাল ছাড়া দেশে আর কখনও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। আওয়ামী লীগ থাকলেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। মানুষ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। কারণ, কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার ও ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। আগামীতেও জনগণের ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। জনগণ যাকে চাইবে তাকেই ভোট দেবে। আমরা সে পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। জনগণ যাকে খুশি ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে।
মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বললেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছয় হাজারের অধিক বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। কোনো নির্বাচনেই কোনো সমস্যা হয়নি। এসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেটাই প্রমাণ হয়েছে। একই সঙ্গে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের আমলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। অথচ বিএনপি সরকারের আমলে নির্বাচন মানে ছিল হত্যা, মারামারি, ভোট চুরি ইত্যাদি। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) উপনির্বাচনে আমাদের প্রার্থী হেরেছেন। এর আগে হবিগঞ্জের উপনির্বাচনেও আমাদের প্রার্থী হেরেছেন। জনগণ ভোট দেয়নি, তাই তারা জিততে পারেননি।
এই হচ্ছে আমাদের রাজনীতি আর ওবামার রাজনীতির ফারাক। এখানে নিজের নাক কেটেও নেতারা ধান্দা খোঁজে—কীভাবে লুটপাটের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করা যায়। তাই নির্বাচন বাদে তাদের মাথায় অন্য কোনো ইস্যুই নেই। মানুষের সেবার চিন্তা এখানে কোনো মূল্যই রাখে না। তারা কি আগডুম বাগডুম কেরদানি করছেন; কোথয় ভোটের নামে কোন ঘোড়ার ডিম দেখিয়েছেন—সেসবের জাবর ছাড়া আর কোনো খাবারও নেই তাদের জিহ্বায়। তাদের সে খবরও নেই মানুষ আর এখন তাদের থুথু দিয়েও বিশ্বাসও করে না। তারা যে গণতন্ত্র, নির্বাচনতন্ত্র, নিরপেক্ষতার কথা বলে—মানুষ তাতে ঘেন্নায় ধিক্কার জানানোও সময়ের অপচয় মনে করে। আর তারা আছে কিনা আত্মরতি ও অহমিকা নিয়ে। দেশ এখন এতবড় বাণিজ্যিক দুর্যোগের মুখে, তারা নির্বিকার।
মানুষ লাশ হচ্ছে—কী আসে যায় তাতে। পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে—কী আসে যায় তাতে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর দায়-দায়িত্ব নেতাদের নয়। প্রধানমন্ত্রীর নয়। দেশের গার্মেন্ট শিল্প ধংস হচ্ছে। কী আসে যায় তাতে। কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা আজ হুমকির মুখে। কী আসে যায় তাতে। বাংলাদেশ পোশাক পণ্যের বাজার হারাক, তাতে কুছ পরোয়া নেই এই বখরাজীবীদের। তাদের টার্গেট মসনদ। দেশ ধ্বংস হোক, মানুষ আবার শেখ মুজিব আমলের মতো দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য, খাদ্যসঙ্কট, কর্মসঙ্কট ও ভয়ঙ্কর বেকারত্বের মুখে পড়ুক—তাতেও কিছুই তাদের যায় আসে না। তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ, লাখো লাশ, কঙ্কালসার কোটি মানুষের মহাশ্মশানে ক্ষমতার দম্ভ আর লুটপাটের জয়োল্লাস করবেন—সে-ই তাদের শকুন-সুখ

Ads