রবিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ছাত্রলীগের তান্ডব এখন শিক্ষাঙ্গনের ক্যান্সার : কেমোথেরাপি ছাড়া গতি নেই



ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দ্বারা ভস্মীভূত সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসের সামনে দাঁড়িয়ে ক’দিন আগে যখন অসহায় মানুষের মতো ভেউ ভেউ করে কাঁদলেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, সেদিনই বোঝা গেল বঙ্গবন্ধুর সৈনিক আওয়ামী লীগের সোনার ছেলেরা আর মানুষ নেই, এরা একেকজন পরিণত হয়েছে এক একটি দানবে। ফ্রাঙ্কেস্টাইনের দানবে। শিক্ষক, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তো দূরের কথা, খোদ মন্ত্রীরা পর্যন্ত এদের সামনে নিরূপায় পুতুল এবং কম্পমান। এরা এতোটাই বেপরোয়া, অপ্রতিরোধ্য এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে যে, সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ, শিক্ষক লাঞ্ছনা পরিণত হয়েছে তাদের কাছে ডালভাতে। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। সেগুলো এখন পরিণত হয়েছে এক একটি কুরুক্ষেত্রে। পড়াশোনা শিকায় তুলে নিয়োগ বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, হল দখল কর্মকাণ্ডে এরা ক্ষুধার্ত প্রাণীর মতো সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে তাদের আগ্রাসী তাণ্ডব। ঝরছে রক্ত। ছাই হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত্। শাসকদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে লালিত পালিত এই সংঘ মাঝে সামান্য কিছু বিরতি দিয়ে আবারও স্বমূর্তি ধারণ করে উদ্যত হয়েছে সামগ্রিক সংহারে। আর অস্থিতিশীল ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন সাধারণ এবং নিরপরাধ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা।
গত শুক্রবার গায়ের জোরে দোকানির কাছ থেকে ফ্রি সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল ও জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঘটিয়েছে তুলকালাম কাণ্ড। ভাংচুর করেছে দোকানপাট। নিজেরা নিজেদের পিটিয়ে আহত করেছে। হাসপাতালে পাঠিয়েছে ১০ জনকে। এর আগে ইডেন কলেজের সিট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ কর্মীরা অবরুদ্ধ করে রাখে অধ্যক্ষকে। চুলাচুলি ও মারামারিতে ক্যাম্পাসের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীতে। একই রাতে তেজগাঁও পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকের বাধে সংঘর্ষ। ঘটে রক্তপাত ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ভাংচুরের শিকার হয় ২৫টি গাড়ি। দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েটেরও বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা। দলবাজ ভিসি ও প্রোভিসির অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর দফায় দফায় হামলা করে জঘন্য কীর্তি স্থাপন করেছে সরকারের এই ঠাঙারে বাহিনী। নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অত্যন্ত ঘৃণ্য নজির স্থাপন করেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। জ্বালাও পোড়াও, ভাংচুর, বোমাবাজি গোলাগুলিতে এখন প্রকম্পিত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাঠের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে সিলেটের এমসি কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস।
ছাত্রলীগের এসব রক্তহিম করা কর্মকাণ্ড যে কেবল নিজেদের মধ্যেই আবর্তিত তা নয়। এদের সন্ত্রাস ও নির্মম অপকর্মের জ্বালায় অতিষ্ঠ বিরোধী মতের সব ছাত্র সংগঠন এখন ক্যাম্পাস ছাড়া। বিরোধীরা ক্যাম্পাসে গেলেই সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা, তার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। একই রকম ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও হয়েছে কলুষিত।
এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ যেসব অপকর্ম করেছে তার খতিয়ান খুবই দীর্ঘ। বিগত পৌনে চার বছরে ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাস ও সংঘর্ষের কারণে ঝরে গেছে ২৩টি তরতাজা প্রাণ। আহত হয়েছে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের নিয়ন্ত্রণহীন সন্ত্রাস ও অন্যায় কর্মকাণ্ডে দেশের প্রায় ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্ধারিত সময়ে বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রামসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই তাদের অস্ত্রাঘাতে মৃত্যুবরণ করেছে মেধাবী ছাত্ররা। সব মিলিয়ে চরম দুরবস্থায় আজ পতিত দেশের শিক্ষাঙ্গন।
এমনিতেই সরকারের অবস্থা লেজেগোবরে। তাদের চোয়ালবাজি এখন পর্যন্ত জারি থাকলেও এ দৃশ্য পরিষ্কার, স্তূপ স্তূপ ব্যর্থতার নিচে চাপা পড়ে ত্রাহি মধুসূদন দশা তাদের। এই দশাকে অতি দ্রুত মরণদশায় পরিণত করার জন্যই যেন মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ। সরকার এদের মুখে লাগাম পরানোর বদলে বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে তাবত্ ধ্বংসযজ্ঞ। এ কারণে সরকারদলীয় অনেক নেতা-এমপি নিজ নিজ ভবিষ্যত্ ভেবে আঁতকে উঠলেও সরকার রয়েছে নির্বিকার। সরকারের এ নির্বিকারত্ব ও সস্নেহ প্রশ্রয় ছাত্রলীগকে করেছে আরও বিধ্বংসী এবং বেপরোয়া। লোক দেখানো তদন্ত করে দায়িত্ব শেষ করেছে। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সর্বক্ষেত্রেই অনীহা সরকারের ভাবমূর্তিকেও করেছে আরও কালিমামলিন। একটি ঘটনারও সঠিক তদন্ত বা বিচার করেনি সরকার। অপরাধীদের পাকড়াও করে আইনের হাতে সোপর্দ করার বদলে সরকার উদোর পিণ্ডি চাপাতে চেয়েছে বুধোর ঘাড়ে। ফলে সূর্যের পাশাপাশি বালুকণার তাপে পথে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে। দেশের কিংবা জনগণের স্বার্থে না হোক, সরকারের নিজের স্বার্থেই এই ফ্রাঙ্কেস্টাইনের দানবদের এখন শৃঙ্খলিত করা অতি জরুরি। নইলে এই বিষফোঁড়া ডেকে আনবে সমূহ বিপর্যয়। তখন কেঁদেও কূল পাবে না ক্ষমতাসীনরা।

শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের একের পর এক তাণ্ডব : চবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ : রক্তের হলি বইয়ে দেয়ার হুমকি




ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফ্রাঙ্কেনস্টাইন দানবের রূপ ধারণ করেছে। এ সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও ছাত্র মারা পড়ছে, আবার কোথাও শিক্ষককে হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত। সন্ত্রাসী তাণ্ডবের কারণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রতিদিন কোথাও না কোথায় ঘটছে আগ্রাসী ধ্বংসলীলা। এদের দমানোর সাধ্য যেন কারও নেই। ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডে সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিরাও ক্ষুব্ধ, অতিষ্ঠ। এসব সন্ত্রাসীর লাগাম টেনে ধরতে সংসদের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। কিন্তু কিছুতেই কোনো ফল হচ্ছে না। গতকালও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত হয়েছে ১০ শিক্ষার্থী। গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ জনকে। ক্যাম্পাসে রক্তের হলি উত্সব বইয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। পুরো ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে ফ্রি সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে লোমহর্ষক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূর্যসেন ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে। এতে ১০ ছাত্রলীগ কর্মী গুরুতর আহত ও তিনটি দোকান ভাংচুর করা হয়। এর দুই দিন আগে ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো রাজধানী। মহিলা ইডেন কলেজের ছাত্রীরা আবাসিক হলে অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সিট বরাদ্দের দাবিতে ওই দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কলেজ অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ অধ্যক্ষ রওশন আরাকে উদ্ধার করে। এতে ৭ ছাত্রী আহত হয়। ছাত্রীরা দাবি আদায়ে এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। একই রাতে তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে দু’জন আহত হয় এবং ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
চবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ১০, গ্রেফতার ৬ : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বেলাল উদ্দিন জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বর ও শাহজালাল হল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আহতরা হলেন জাহিদুল ইসলাম (পদার্থ বিদ্যা-দ্বিতীয় বর্ষ), হোসেন (সমাজতত্ত্ব-দ্বিতীয় বর্ষ), রবি (নৃজ্ঞান-তৃতীয় বর্ষ), রনি (গণিত-দ্বিতীয় বর্ষ) রুবেল দে, রাকিব, কাউসার, রুপু, বাপ্পী ও অভি। এদের মধ্যে জাহিদুল ও হোসেনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
আটককৃতরা হলেন ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাটচক্র সম্পাদক মুনছুর আলম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জমির উদ্দীন, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, রুপক হাসান শাহরিয়ার, কামরুল হাসান রায়হান ও জাহেদুল ইসলাম। গ্রেফতারকৃত সবাই আ জ ম নাছির গ্রুপের বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শহরগামী আড়াইটার ট্রেনে ছাত্রলীগের আ জ ম নাছির গ্রুপের শুভ ও মামুন গ্রুপের রাকিবের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ ঘটনা জানা জানি হলে ক্যাম্পাসে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় নাছির গ্রুপের কর্মীরা শাহজালাল হলের ভেতরে এবং মামুন গ্রুপের কর্মীরা হলের বাইরে অবস্থান নিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় গ্রুপের ১০ কর্মী আহত হয়। পুলিশ দফায় দফায় চেষ্টা করে সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হলে একপর্যায়ে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি এএসএম নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ শাহজালাল হলে অভিযান চালিয়ে নাছির গ্রুপের ৬ কর্মীকে আটক করে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এ ঘটনার জন্য উভয়ে একে অন্যকে দায়ী করে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুই গ্রুপই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি এএফএম নিজাম উদ্দিন ৬ জনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
প্রক্টর মোহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌল্লাহ বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে চিন্তাও করিনি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এদিকে ছাত্রলীগের মামুন গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর টিপুসহ হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য ৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় ক্যাম্পাসে যেকোনো সময় রক্তের হলি বইয়ে দেন তিনি। এ জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
ঢাবিতে সিগারেট ফাও খাওয়া নিয়ে লোমহর্ষক সংঘর্ষ, ধরপাকড় চলছেই : এর আগে গত শুক্রবার রাতে ফাও সিগারেট খাওয়া নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান ও মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ সংঘর্ষে উভয় হলের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে তিনটি দোকান। জানা যায়, রাত সোয়া ১১টার দিকে সূর্যসেন হলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রলীগ কর্মী রাজিব, ফয়সাল এবং বিজয় জিয়াউর রহমান হল গেটের সামনের একটি দোকান থেকে সিগারেট নিতে আসে। সিগারেট বিক্রেতা হেলালকে এক প্যাকেট সিগারেট দিতে বলে। কিন্তু দোকানে সিগারেট নেই জানালে দোকানদারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ‘সিগারেট নেই কেন? এখানে দোকান করতে হলে সিগারেট দিতে হবে’ বলে দোকানিকে গালাগাল করতে থাকে। এ সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান মানিক প্রতিবাদ করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে বেধে যায় সংঘর্ষের ঘটনা।
গোপন সূত্রে জানা যায়, জিয়া হলের ওই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই এই দোকানের মালিক। সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা বিষয়টি না জেনে অন্যসব জায়গার মতো ফ্রি সিগারেট নিতে গেলে এই সংঘর্ষ বাঁধে। উভয় হলের সহস্রাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী চাইনিজ কুড়াল, বগি ও লাঠি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। শুরু হয়, ইট ও ঢিল ছোড়াছুড়ি। এ সময় সূর্যসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই এলাকার ৩টি দোকান ভাংচুর করে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ক্যাম্পাসে প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলছে ছাত্রলীগ। জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে জুনিয়র কর্মীদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে দাওয়াত না পেয়ে কর্মীদের বেধড়ক বাঁশ পেটা করে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত। তার অমানবিক লাঠি পেটায় ৭ জন ছাত্রী গুরুতর আহত হন। জানা যায়, গতকালও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক ছাত্রকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগ। কবি জসিমউদ্দীন হলের ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদীর নেত্বত্বে দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র রিয়াদকে ছাত্রদল কর্মী সন্দেহে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে সাধারণ ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এভাবে ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টিকটু হলেও যে কাউকে আহত ও নিহত হতে হয় এ ক্যাম্পাসে।
ছাত্রলীগের নিয়োগ-বাণিজ্যে অচল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : এদিকে ছাত্রলীগের অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৭তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ নিয়ে ছাত্রলীগ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নিজেদের তালিকা মতো নিয়োগ না দেয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ, ভিসি কার্যালয়ে ভাংচুরসহ প্রোভিসি ও প্রক্টরকে লাঞ্ছিত করে। তাদের হস্তক্ষেপে ক্যাম্পাসে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়। ছাত্রলীগের জ্বালাও-পোড়াও ও হামলায় এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। অঘোষিত ছুটি চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে এ অচলাবস্থা বিরাজ করলেও এ পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকায় বিপাকে পড়েছেন ১৪ হাজার শিক্ষার্থী। নষ্ট হচ্ছে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়। আবাসিক হল থেকে এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী চলে গেছেন। বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ৯০টিরও বেশি ফাইনাল পরীক্ষা অঘোষিতভাবে স্থগিত হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ সেশন জটের আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অচলাবস্থা নিরসনের দাবিতে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
অস্থিতিশীল ইডেন কলেজ : অধ্যক্ষের অপসারণ ও উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নের দাবিতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে রাজধানীর মহিলা ইডেন কলেজ। কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে আবাসিক হলে সিট বরাদ্দ ও একাডেমিক সুবিধা দানের অভিযোগসহ নানা দাবিতে অনড় ইডেনছাত্রীরা। এছাড়া অনার্স থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত একটানা আবাসিক হলের সিট বরাদ্দ ও শিক্ষকদের আচরণের পরিবর্তনের দাবিও জানাচ্ছেন তারা। এসব দাবিতে গত বুধবার সকাল থেকে রাত ২টা পর্যন্ত কলেজ অধ্যক্ষ রওশন আরাসহ বিভিন্ন অনুষদের প্রধান ও হল প্রধানদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে লালাবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকশ’ পুলিশ নিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এদিকে ছাত্রীদের আন্দোলন দমাতে কলেজ কর্মচারীদের দিয়ে হামলা করেছেন অধ্যক্ষ। এতে আন্দোলনরত ছাত্রীদের মধ্যে ৭ জন গুরুতর আহত হন। এর পরের দিন ছাত্রীদের ওপর কর্মচারীদের হামলার বিচার ও অধ্যক্ষের অপসারণসহ কয়েক দফা দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ। দাবি আদায়ে অধ্যক্ষের কার্যালয় ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি, অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়ও হাজার হাজার ছাত্রী কলেজের এক নম্বর ও দুই নম্বর গেটের সামনের রাস্তা অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন। এ সময় নিউমার্কেট ও আজিমপুর সংযোগ সড়ক যানজটের কবলে পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের দাবি না মানলে আমরা আন্দোলন করতেই থাকব। আমাদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তবে অপসারণ বিষয়ে অধ্যক্ষ রওশন আরা বলেন, এটি সরকারের ব্যাপার। আমি এ বিষয়ে জানি না।
তেজগাঁও পলিটেকনিক শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের সংঘর্ষ, ২৫টি গাড়ি ভাংচুর : এদিকে নানা সমস্যায় অস্থির হয়ে উঠেছে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক্যাল কলেজ। সমস্যায় ভারাক্রান্ত শিক্ষার্থীরা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে সমাধান চেয়েও কোনো সমাধান না পেয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গর্জে ওঠে। সংঘর্ষ বেঁধে যায় স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে। উভয়পক্ষের অগ্নিসংযোগ ও সংঘর্ষে অন্তত ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। গুরুতর আহত হয় দুজন। জানা যায়, তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে দীর্ঘদিন থেকে গাড়ি রেখে আসছিলেন ওই এলাকার পরিবহন মালিকরা। কলেজের সামনে গাড়ি না রাখতে ছাত্ররা অনেক দিন আগে থেকে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এতে কোনো কাজ না হওয়ায় গত রাত ১১টার দিকে রাস্তায় নেমে আসে ছাত্ররা। তারা রাস্তায় অবরোধ করে কলেজের সামনে গাড়ি না রাখার প্রতিবাদ জানায়। এ সময় ছাত্ররা আকস্মিকভাবে কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর চালায়। একপর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা এগিয়ে গেলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অলিগলিতে। সংঘর্ষ চলাকালে ২৫টি গাড়ি ভাংচুর ও কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপক লাঠিচার্জ এবং বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষক শিক্ষার্থী : ছাত্রলীগের এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় দুই হলের আবাসিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্কে থাকতে দেখা যায়। সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষক ও চারুকলা অনুষদের এক অধ্যাপক জানান, ওইদিনের সংঘর্ষে বাসায় চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। দু’পক্ষের ইট ও পাথর রাস্তার সঙ্গে থাকা শিক্ষকদের বাসায় গিয়ে পড়ে। এভাবে ক্যাম্পাস চলতে পারে না। ছাত্রলীগের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার করে সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, যখন ক্যাম্পাসে থাকি তখন প্রাণ হাতে রেখে চলাফেরা করতে হয়। নির্ভয়ে পড়াশোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে করা খুবই দুরূহ। প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে থাকতে হয়।
সংগঠনের নেতাকর্মীদের এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ক্ষুদ্র স্বার্থকে কেন্দ্র করে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। যখন কোনো সমস্যা দেখা দেয় আমরা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে ভারতীয় সুর



কাজী জহিরুল ইসলাম
উত্সব আমেজে মুখর এখন ম্যানহাটন। ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ অধিবেশন। জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে থেকে ম্যানহাটনের প্রধান পাঁচটি পশ্চিমমুখী সড়কের শুরু। ৪২ থেকে ৪৭ এভিনিউ। সবক’টি সড়ক এখন এনওয়াইপিডির নিরাপত্তা বেষ্টনীর দখলে। যথাযথ আইডি ছাড়া ঢুকতে পারছে না কেউ। ৪৭তম সড়কটি এর ব্যতিক্রম। প্রায় পাঁচশ’ ফুট প্রশস্ত এই সড়কটির আশি শতাংশজুড়ে ফুটপাত। যার এক পাশে সারি সারি বেঞ্চ পাতা। বলা যায় পুরো সড়কটিই একটি পার্ক। আর এটি এখন পরিণত হয়েছে ম্যানহাটনের ট্রাফেলগার স্কয়ারে। বছরজুড়েই এখানে পৃথিবীর নানা জাতি-গোত্রের লোকেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরামের কাছে তুলে ধরে তাদের পাওয়া-না পাওয়ার দাবি-দাওয়া। প্রায়ই দেখি অসহায় তিব্বতিয়ানরা পথচারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে এক পাতার একটি লিফলেট, আর ‘ওয়েক আপ ইউএন, ওয়েক আপ ইউএন’ স্লোগানে কাঁপিয়ে তুলছে ম্যানহাটনের আকাশ-বাতাস। তুর্কি এবং ইরাকি শাসককুলের বিরুদ্ধেও ঘৃণার তীর ছুড়তে দেখি স্বাধীনতাকামী কুর্দিদের। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমদিনেজাদের পক্ষে-বিপক্ষে দুই দল মুখোমুখি। নির্যাতিত তিব্বতিয়ানদের নিঃশ্বাসে ম্যানহাটনের বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও ভেটো ক্ষমতায় বলীয়ান চীনা শাসকদের মন গলে না। জাতিসংঘের প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্রকে জাগাতে পারে না অসহায় তিব্বতিয়ানরা, পারে না স্বাধীন কুর্দিস্তানের স্বপ্নে বিভোর স্বপ্নচারী কুর্দি সম্প্রদায়। জাতিসংঘ জেগে ওঠে না রক্তাক্ত ফিলিস্তিনি শিশুর আর্তচিত্কারে। এই কুম্ভকর্ণের ঘুম কি ভাঙবে কখনও?
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় ভাষণ দেবেন জাতিসংঘের ৬৭তম সাধারণ অধিবেশনে। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। টাইমস স্কয়ারের নিচে হেলে পড়েছে বিকালের সূর্য। ৪৭ নম্বর সড়কের দখল এখন দক্ষিণ এশিয়ার একদল প্রবাসীর পদতলে। গায়ে তাদের শোকের কালো পোশাক। বুকে সাদা কাগজে লেখা—‘তুই চোর’। আমাদের বুঝতে আর বাকি থাকে না এরা কারা, কার দিকে ছোড়া হচ্ছে এই তীক্ষষ্ট ঘৃণার তীর। বিষয়টি আমাকে আহত করে। এটা না করলেই কি হতো না? আমরা কি দেশের বাইরে এসে সব বিভক্তির খানাখন্দ পেরিয়ে এক অভিন্ন বাংলাদেশের মানুষ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বলতে পারি না, ‘আমরা সবাই বাংলাদেশী?’
২০০৪ সালে আমি যখন প্রথমবার নিউইয়র্কে আসি তখন একদল প্রবাসী বাংলাদেশী আমাকে জেএফকে থেকে তুলে সোজা নিয়ে যায় একটি গোপন সভায়। মুজিব বাহিনী দৈনিক গণকণ্ঠের অফিস পুড়িয়ে দেয়ার পর সত্তরের দশকে কিছু জাসদ নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরাই আবার পরে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে জড়ো হয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সেই গোপন সভায় আমি এরকম কয়েকজনকে দেখি। তারা সিদ্ধান্ত নেন, তত্কালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, বোমা সন্ত্রাসের মদতদাতা—এসব অভিযোগ তুলে একটি লিফলেট তৈরি করা হবে এবং তা আমেরিকায় অবস্থিত সব কূটনৈতিক মিশনে প্রদান করা হবে। বাইরে থেকে চাপ দিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আমি সদ্য বাংলাদেশ থেকে এসেছি, আমার কাছে ওরা কিছু তাজা খবর শুনতে চায়। ওদের আত্মঘাতী কথাবার্তা শুনে আমার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। আমি দেশের কোনো খবর না শুনিয়ে বরং অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলি, এই কাজটি আপনারা কিছুতেই করবেন না। নিজের হাঁড়ির খবর বাইরের মানুষকে জানালে জাতি হিসেবে আমরাই ছোট হয়ে যাব।
এখন আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কক্ষে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, ৬৭তম অধিবেশনে আমার দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার জন্য। সাধারণ পরিষদের সভাপতির আসনে তখন আমাদের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেয়া শুরু করলেন। এক পর্যায়ে তিনি বলতে শুরু করলেন, বিগত সরকার বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে বিভিন্ন ইসলামী উগ্রপন্থীরা পরিচালনা করত, সেটাও তাদের নাম-ধাম উল্লেখ করে বলে দিলেন। বিশ্ববাসীকে তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাইলেন, বাংলাদেশ মুসলিম জঙ্গিবাদের একটি আখড়া। ঠিক এই কথাই তো আজ থেকে ৮ বছর আগে নিউইয়র্কের এক গোপন সভায় শুনেছিলাম। ওরা যে লিফলেট বিলি করতে চেয়েছিল, সেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী করে দিলেন।
গত দুই দশক ধরে ভারতীয় ইন্টেলেকচুয়ালরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সব সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। ভারতীয়দের দৃষ্টিতে রোহিঙ্গা সমস্যা, আসাম সমস্যা, উগ্রপন্থী-জঙ্গিবাদ সমস্যাসহ সব সমস্যার সূতিকাগার হলো বাংলাদেশ। কাজেই বাংলাদেশ দখল করে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে সেই কাজটিই করছে ভারত। আজকের বাংলাদেশ যে ভারতীয়দের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন দেখি আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোরামে দাঁড়িয়ে ভারতীয়দের অভিযোগগুলোকে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
আফসোস, বিরোধী দল এই বিষয়গুলো নিয়ে কোনো গঠনমূলক সমালোচনা করে না।
নিউইয়র্ক
২৭/০৯/২০১২
লেখক : কবি, কলাম লেখক

শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সাধারণ নয়—আওয়ামী লীগের একক নির্বাচন : অপহরণ, গুলি ও হত্যা মুজিববাদীদের ফিনিশিং টাচ




৭৩-এর জাতীয় নির্বাচনের শুরু থেকেই সরকারি দলের লাগাতার ফ্যাসিস্ট আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসী এটাকে ‘সাধারণ নির্বাচন’ হিসেবে মানতে পারেননি। সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারিতা, একগুঁয়েমি, বিরোধীদলীয় কর্মী হত্যার মিলিত পটভূমিতে এ নির্বাচনকে সাধারণ মানুষ বরাবরই ‘আওয়ামী লীগের একক নির্বাচন’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর একের পর এক নির্যাতন, বিরোধী দলের জনসভা পণ্ড করা থেকে মিছিলে হামলা, অফিস তছনছ আর অগ্নিসংযোগ, বেতার-টিভির একদলীয় ব্যবহার, মনোনয়ন দাখিলে বাধাদান, এমনকি বিরোধী দলের প্রধানকে পর্যন্ত প্রকাশ্য আক্রমণ ও হত্যার চেষ্টা, প্রার্থী অপহরণ, গুপ্তহত্যা, গুম ইত্যাদি কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তত্কালীন সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রহসনের আরেকটি দিক হলো তারা বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যায়িত করে। বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্ভ্রম প্রদর্শনের পরিবর্তে সমাজবিরোধী আখ্যায়িত করে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে নিক্ষেপ এবং নির্বিচারে হত্যা করে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি মেজর জলিলের ওপর গুলিবর্ষণ ও বেয়নেট চার্জ, সাধারণ সম্পাদক আসম আবদুর রবের গাড়িতে গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা, ভাসানী ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফর আহমেদকে ট্রাকের নিচে পিষে হত্যার চেষ্টা—এসবই হলো ক্ষমতাসীন দলের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নমুনা। ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে একজন সাধারণ যুব-পাণ্ডা পর্যন্ত এ মানসিকতাই পোষণ করে যে, যে কোনো উপায়ে তা যতই অপরাধমূলক এবং অগণতান্ত্রিকই হোক না কেন, বিরোধী দলের জনপ্রিয় প্রার্থীদের নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুতার মধ্যে কোথাও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। এসব বিষয়ে ওই সময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিবেদন এবং সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। নির্বাচনের দিন অর্থাত্ ’৭৩ সালের ৭ মার্চ দৈনিক গণকণ্ঠে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন এবং একটি সম্পাদকীয় তুলে ধরা হলো—
বেতার টিভির একদলীয় ব্যবহার, মনোনয়ন দাখিলে বাধাদান,
প্রার্থী অপহরণ, গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস ও ভয়-ভীতির মুখে
আজ বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন
গণকণ্ঠ রিপোর্ট
৭ মার্চ, ১৯৭৩। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বুকে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে যে দেশটি, বিশ্বের নিপীড়িত-বঞ্চিত মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে উপমহাদেশে যে তৃতীয় দেশটির জন্ম হয়েছে, সেই বাংলাদেশের আজ প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব খণ্ডের ৫৪,৫০১ বর্গমাইল ভূখণ্ডকে নিয়ে গঠিত এই দেশ আজ এক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে। প্রায় ১৫ মাস আগে এই রাজধানীর সবুজ ঘাসে ভরা ইতিহাসখ্যাত রেসকোর্সে আত্মসমর্পণ করেছিল ঔপনিবেশিক পাকিস্তানিদের ভাড়াটে বাহিনী। বাংলার শ্যামল পলিমাটিতে লালিত সন্তানদের চরম আত্মত্যাগের কাছে মাতৃভূমিকে বিদেশি হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা করার মরণপণ সংগ্রামের কাছে, বিশ্বের স্মরণকালের অনেক তিতিক্ষার ইতিহাস, জাতিগত নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আন্দোলনের অনেক ইতিহাসই ম্লান হয়ে গেছে।
১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি পশুশক্তির আত্মসমর্পণের বিনিময়ে বাঙালিকে দিতে হয়েছে ৩০ লাখ তাজা প্রাণ, দিতে হয়েছে বাংলার কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম, ইজ্জত। হারাতে হয়েছে এ দেশের অনেককিছুই। আর এই হারিয়ে যাওয়া অনেককিছুর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯টি মাস যে সরকার কলকাতা প্রবাসী ছিল, ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের দিনচারেক পর তা বিমানযোগে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করল।
১৯৭০-এর নির্বাচনে পাকিস্তানের পূর্বখণ্ডে জয়ী নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনের দোহাই পেড়ে যে একদলীয় সরকার গঠন করেছে, বাংলাদেশের বুকে গত সাড়ে ১৪ মাস ধরে সেই সরকার করেনি এমন কাজ নেই। বিশ্ব বিবেকের কাছে যা সবচেয়ে ঘৃণিত, নৈতিকতার কাছে যা সবচেয়ে অপরাধ, রাজনীতির ক্ষেত্রে যা সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত—এমনসব ক্রিয়াকাণ্ডের নায়ক হয়েছে আওয়ামী লীগ চালিত বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের স্বাধিকার-সচেতন বিপ্লবী জনতার দেশপ্রেমকে মূলধন করে পাকিস্তানি শাসন আর শোষণের ভাড়ারের করুণা থেকে বঞ্চিত আওয়ামী লীগ কর্তারা পাকিস্তানি শাসক আর শোষকগোষ্ঠীর অবর্তমানে নির্ঝঞ্ঝাটে, নিরুপদ্রবে পুরো দেশটাকে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে ফেলেছে। ৮ শতাংশ বাঙালি শোষক এ দেশের মোট সম্পদের ৮৫ শতাংশের মালিক আজ। আর বাকি ৯২ শতাংশ বাঙালি শোষিতের মালিকানা আছে ১৫ শতাংশ সম্পদের ওপর।
বাংলাদেশের বুকে ’৭০-এর প্রাকৃতিক প্রলয় আর ’৭১-এর মনুষ্য সৃষ্ট মহাপ্রলয়ে বিশ্বের সহানুভূতিশীল দৃষ্টি পড়েছে এই জনপদের দিকে। তাই ’৭০-এর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর যেমন বিশ্বের অগণিত রাষ্ট্র সাহায্যের হাতকে সম্প্রসারিত করেছিল, ১৯৭১-এর মহাপ্রলয়ের পরও বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিদেশিদের উদার হাত সম্প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিকে ওরা পুষিয়ে দিয়ে আরও উদ্বৃত্ত করে দিয়েছে এ দেশকে।
অথচ আজকের বাংলার দিকে দৃষ্টি দিলে তো সম্পূর্ণ বিপরীত ছবিই ভেসে উঠছে। হতাশাগ্রস্ত জনগণ আজ জীবনের পর্বতপ্রমাণ বোঝা বইতে প্রাণান্ত হচ্ছে। আজ স্বাধীনতার স্বাধ তাদের কাছে তেতো ঠেকছে। দ্রব্যমূল্যের নজিরবিহীন ঊর্ধ্বগতি, সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, আজ মেহনতী জনতাকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে। আজ আওয়ামী লীগের সরকার সাড়ে ৭ কোটি জনতাকে বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের নির্বাসিত গণধিকৃত সামাজিক শত্রুদের নিয়েই মেতে উঠেছে। গণতন্ত্রের ঢালাও বুলি আওড়িয়ে, সংসদীয় গণতন্ত্রের তথাকথিত, পূজারী সেজে আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের গণতন্ত্রের নতুন নজির খাড়া করেছে। মুজিব সরকারের প্রশাসন এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে ভাতের বদলে যে ‘বাদ’কে উপহার দিয়েছে, সেই বাদের পয়লা স্তম্ভের নামই হলো এই মুজিব গণতন্ত্র। এ গণতন্ত্রে বিরোধী দলের অস্তিত্ব নেই, এ গণতন্ত্র সরকারী দল আর উপদল ছাড়া আর কারও অস্তিত্ব স্বীকার করে না। নিরন্ন খেটে খাওয়া বাঙালির ট্যাক্সে চালিত সরকারি প্রচারমাধ্যম এই তথাকথিত গণতন্ত্রে আওয়ামী লীগের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। এই গণতন্ত্রে ফ্যাসিবাদী প্রক্রিয়ার বিরোধীদলীয় কর্মী থেকে শুরু করে নেতারা পর্যন্ত সবাই ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যায়িত হয়, তাদের জীবননাশ করা হয়, এ গণতন্ত্রে বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্ভ্রম প্রদর্শনের পরিবর্তে সমাজবিরোধী আখ্যায়িত করে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। এ গণতন্ত্রে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মুখে গ্রাস তুলে দেয়ার জন্য বিদেশি বন্ধুদের দেয়া যানবাহন, হেলিকপ্টার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা ও পাতিনেতাদের নির্বাচনী সফরের জন্য উলঙ্গভাবে ব্যবহৃত হয়। আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক সরকারের গণতান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের এখানেই শেষ নয়। কিছু আওয়ামী কর্তা বড় সুচারুরূপেই ১১টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে সেই অভিনব গণতন্ত্রের আরও নজির খাড়া করেছেন। ৩০০ আসনের মধ্যে এই ক’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগাররা এত বেশি জনপ্রিয় ছিলেন, এত বেশি জনহিতৈষী ছিলেন যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো বিরোধীদলীয় প্রার্থী নাকি মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। গোপালগঞ্জে আর বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব, ভোলায় তার রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, যশোরে পণ্যমন্ত্রী সোহরাব হোসেন, ফরিদপুরে ওবায়দুর রহমান, কিশোরগঞ্জে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নান্দাইলে রফিক ভূঁইয়া, কটিয়াদিতে মনোরঞ্জন ধর ও ভৈরবে জিল্লুর রহমান হচ্ছেন সেসব জনপ্রিয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী জননেতা। অথচ তাদের তথাকথিত নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা, সোচ্চার হয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, ভাসানী ন্যাপ ও মোজাফফর ন্যাপ।
প্রার্থীদের অস্ত্রের মুখে শুধু মনোনয়নপত্র দাখিলেই বাধা দেয়া হয়নি, বহু জায়গায় তাদের একেবারে গায়েবও করা হয়েছে কিছুদিনের জন্য। বাকেরগঞ্জে জাসদ প্রার্থী ড. আজহার উদ্দীন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনারের কাছে জাসদসহ সব বিরোধী দলই ওইসব এলাকার বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ফের দাখিলের সুযোগ দেয়ার দাবি জানান। কিন্তু সে দাবি রক্ষিত হয়নি। ৩০০ আসনে জাসদ মনোনয়ন ঘোষণা করেও ক্ষমতাসীন চক্রের চরম সন্ত্রাসের মুখে বেশকিছু জায়গায় মনোনয়নপত্র পেশ করার সুযোগ পাননি জাসদ প্রার্থীরা। এই হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের গণতন্ত্রের নমুনা।
এই বিচিত্র গণতন্ত্রের দেশে আজ ৭ মার্চ (বুধবার) জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৮ জন বাঙালিকে তাদের প্রতিনিধি প্রেরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের আর দলের পাশাপাশি বয়সের দিক থেকে সর্বকনিষ্ঠ অথচ আদর্শের দিক থেকে সবচেয়ে দৃঢ় সংগঠন—জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও অংশ নিচ্ছে এই নির্বাচনে। ৪ মাস বয়সের এ দলটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেনি। বুর্জোয়া গণতন্ত্রের খোলসে মুড়ে যে ঘৃণিত ধনবাদী সমাজ অন্যান্য দেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, জাসদ তা হৃদয়ঙ্গম করেছে। তাই বর্তমান সামাজিক কাঠামোর এসব ‘গণরায়’ আসলে শোষণকে পোক্ত করার প্রকৃষ্ট উপায় বলেই জাসদ মনে করে। তবুও এই নির্বাচনের অসারতার কথা স্মরণে এনেও জাসদ ’৭৩-এর নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। জাসদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার বক্তব্য—আমাদের লক্ষ্য শ্রেণী-শোষণহীন সমাজব্যবস্থা। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তা সম্ভব। আর সেই বাঞ্ছিত লক্ষ্যে পৌঁছতে যে পথকে অতিক্রম করতে হবে, সে পথে শাশ্বত শ্রেণীদ্বন্দ্ব ধাপে ধাপে শোষকশোষিতের চরম সংঘর্ষের মাধ্যমে সামাজিক বিপ্লব সংঘটিত করবে। এভাবেই হবে চূড়ান্ত সামাজিক বিপ্লব, যার মাধ্যমে অবসান ঘটবে শ্রেণী-দ্বন্দ্বের। বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের প্রত্যক্ষ রায় নিয়ে যে দলটির সৃষ্টি, সেই দলটি কিন্তু তার বক্তব্যকে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে দিতে পারেনি, পারেনি আগামী দিনের বিপ্লবের সূর্য-সৈনিকদের সংগঠিত করার মতো প্রয়োজনীয় সংগঠন সর্বত্র খাড়া করতে। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগে সারাদেশে জাসদের বক্তব্য পৌঁছিয়েছে, সর্বত্র সংগঠন খাড়া হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের আঘাতকে প্রতিরোধ করার মতো সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চিত হয়েছে। এ নির্বাচনে জাসদের অংশগ্রহণের আর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, দেশ থেকে সর্বগ্রাসী ফ্যাসিবাদকে উত্খাত করা। সারাদেশে যেভাবে একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি কিছুসংখ্যক টাউট, সামাজিক শত্রুদের নিয়ে দাপট চালিয়ে যাচ্ছেন, তা যদি অপ্রতিহত গতিতে চলতে থাকে, তবে এ দেশের মানুষের অধিকার বলতে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী এবং নয়া উপনিবেশবাদী শক্তির ক্রীড়নক এই সরকার এক নদী রক্তের দামে কেনা এই দেশের সার্বভৌমত্বকে পর্যন্ত বন্ধক রাখতে চলেছে। এ নির্বাচনে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে, জনতার দরবারে তাদের চেহারাটাকে মেলে না ধরলে দেশপ্রেমিক মাত্রই নৈতিক অপরাধ করবেন। জাসদ তাই জনগণের দরবারে সেই বক্তব্য তুলে ধরার দায়িত্ব নিয়েছে। এ নির্বাচনে জনগণের রায়ই বড় কথা। নির্বাচনে কারচুপি, জাল ভোট ইত্যাদি আওয়ামী লীগের ক্ষমতাবানরা চালাবেনই। এসবকে উপেক্ষা করেও বাংলার সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী জনগণের ওপর এই ফ্যাসিস্ট গণবিরোধী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে, সত্যিকার গণপ্রতিনিধি নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব বর্তিয়েছে। (দৈনিক গণকণ্ঠ : ০৭ মার্চ ১৯৭৩)
নির্বাচন এবং তারপর ( সম্পাদকীয় : ৭ মার্চ ১৯৭৩, দৈনিক গণকণ্ঠ)
সারা বাংলাদেশে আজ সাধারণ নির্বাচন। বাংলাদেশের এ নির্বাচনে শাসক আওয়ামী লীগ সমস্ত বিরোধী সংগঠনগুলোর বিপরীতে গোড়া থেকেই যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তাতে এ নির্বাচনের ফলাফল দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার অনুকূলে যাবে এমন আশা অতি আশা। অবশ্য যাদের চিন্তা-ভাবনা অনুক্ষণ দেশের শুভাশুভ নিয়ে আন্দোলিত হয় এ নির্বাচন তাদের সবাইকে প্রথম থেকেই নিরাশ করেছে। দেশের গণতন্ত্রকামী শক্তিসমূহ একের পর এক নির্যাতন আর পীড়নের সম্মুখীন হয়েছে। বিরোধী দলের জনসভা পণ্ড করা থেকে মিছিলে হামলা, অফিস তছনছ আর অগ্নিসংযোগ, গুপ্তহত্যা, গুম এমনকি বিরোধী সংগঠনের প্রধানকে পর্যন্ত প্রকাশ্যভাবে আক্রমণ করে প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এ হলো নিত্যকার খবর। এরি মাঝ দিয়ে এসেছে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন এবং সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যে দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন, নির্বাচনের পূর্বে ক্ষমতা থেকে তাদের সরে আসবার কথা। না হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ব্যাহত হয়। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কয়েক মাস আগে থেকেই এ মর্মে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। গণতন্ত্রকামী প্রতিটি দলই একাধিকবার এই দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু শাসক দল ক্ষমতার দর্পে সবকিছু উপেক্ষা করেছে, এমনকি গণতান্ত্রিক রীতি-নিয়মকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তারা দেশের সমুদয় সম্পদকে তাদের নির্বাচনী প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে একটুও কুণ্ঠিত হয়নি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ত্রাণকার্যের জন্য বন্ধু-রাষ্ট্রের প্রদত্ত হেলিকপ্টার থেকে যানবাহন পর্যন্ত সবই তারা নির্বিচারে ব্যবহার করেছেন নির্বাচনী প্রচারে। অবশ্য আজকের দিনের জন্য এসবই পুরনো কথা। দেশের নির্বাচনের উপর এসবের নিশ্চিত প্রভাব পড়লেও সে কথা আমরা আজ তুলতে চাইনে। আমাদের এই মুহূর্তে সবচেয়ে যে আশংকা তা হলো, দেশের নির্বাচনোত্তর আবহাওয়া শান্ত থাকবে কি না, তাই নিয়ে। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নির্বাচনী জনসভা থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর যেভাবে প্রতিক্রিয়াশীল দল এবং তাদের অন্যান্য সংগঠন একের পর এক হামলা চালিয়েছে এবং অবিরত হুমকি দিচ্ছে তাতে নির্বাচনোত্তরকালে বিরোধী দলগুলোর উপর আরো ব্যাপক আক্রমণের আশংকা করা যাচ্ছে।
৮ই মার্চ অর্থাত্ নির্বাচনের একদিন পর থেকে দেশে শুদ্ধি অভিযান চলবে বলে নানা মহল থেকে হুমকি উচ্চারিত হচ্ছে। বস্তুত শুদ্ধি অভিযানের নামে দেশে কী সব ঘটনা ঘটবে আমরা জানি না, তবে আমাদের আশংকা হয় বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই এ শুদ্ধি অভিযান চালানো হবে। স্বাধীনতার পর বত্সারাধিক কাল যাবত্ দেশবাসী নানা ধরনের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উন্মত্ততা প্রত্যক্ষ করে আসছেন। ধৈর্য এবং তিতিক্ষার শেষ ধাপে এসে দাঁড়িয়েছেন তারা। অভাবে অনটনে জর্জরিত হয়েও তারা ধৈর্য রক্ষা করেছেন। কিন্তু এরপরও যদি দেশবাসীর ধৈর্যের উপর আঘাত হানা হয়, দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহের উপর অগণতান্ত্রিক হামলা চলতেই থাকে তবে দেশের সাড়ে সাত কোটি শান্তিকামী মানুষ শান্তি এবং প্রগতির স্বার্থেই সেদিন রুখে দাঁড়াবে। অবশ্য আমরা আশা করি, কোনো ক্ষমতাদর্পীর উন্মত্ততা দেশকে সেই নিদারুণ অবস্থার মাঝে ঠেলে দেবে না। (দৈনিক গণকণ্ঠ : ০৭ মার্চ ১৯৭৩)
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রির হিড়িক : জাতির ভবিষ্যত্ ঝরঝরে করে যাচ্ছে সরকার



মেয়াদের শেষ বছরে এসে মাথা একেবারে গরম হয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের। খাই মেটানোর এবং উদরপূর্তি করার জন্য কীভাবে আর কী করবেন তা নিয়ে মাথাও ঠিক রাখতে পারছেন না তারা। এজন্যই নজর পড়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির দিকে। এই সম্পত্তি বিক্রির ধুম পড়ে গেছে তাদের মধ্যে। দৈনিক আমার দেশ-এর এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, রাজধানী থেকে মফস্বল পর্যন্ত যেখানে যত রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি আছে তার প্রায় সবই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। পানির দামে না হলেও বিক্রি করা হচ্ছে বাজার দরের চেয়ে অনেক কম মূল্যে। রাজধানীর হাটখোলা রোডে প্রতি কাঠা জমির দাম যেখানে অন্তত চার কোটি টাকা, সেখানে ১১৬ কাঠা বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ৮৫ কোটি টাকায়। এটা বিটিএমসির জমি। চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলসের ২৩৬ কাঠা জমি বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ২১ কোটি ৬৬ লাখ টাকায়। অথচ সেখানে প্রতি কাঠার দাম অন্তত ১ কোটি টাকা। তাছাড়া মিলটির বর্তমান মালিক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকেও বিক্রির ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। বিক্রি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। কোনো জমি বিক্রির ক্ষেত্রেই প্রকাশ্যে নিলাম ডাকা বা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। গ্রাহক আগেই ঠিক করা হচ্ছে গোপনীয়তার সঙ্গে। গ্রাহকরাও আবার সাধারণ মানুষ নয়। প্রতিটি সম্পত্তি বেছে বেছে আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতেই তুলে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া এক মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি দিব্যি বিক্রি করে দিচ্ছে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়। অর্থাত্ সম্পূর্ণ বিষয়টিই চলছে বেআইনি পন্থায়। আইনের ধারই ধারা হচ্ছে না। তথ্যাভিজ্ঞদের উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। সবই চলে যাবে সরকারদলীয় লোকজনদের পেটের ভেতরে। মেয়াদের বাকি সময়ের মধ্যে তারা সেগুলো হজমও করে ফেলবেন।
খাই খাই করা শুধু নয়, খেয়ে হজম করে ফেলাটাও আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য অনেক পুরনো বিষয় বলেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রি সংক্রান্ত খবরে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। শেয়ারবাজারের লুণ্ঠন থেকে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক দুর্নীতি পর্যন্ত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েও ক্ষমতাসীনদের ‘ফুলের মতো পবিত্র চরিত্র’ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। তাদের ‘খাই’ মেটাতে গিয়ে দেশের ব্যাংকগুলোও এরই মধ্যে ফতুর হইহই করছে। এসবের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ‘নগদ নারায়ণ’ পাওয়া যাবে এমন কোনো একটি খাত বা উপখাতকেই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে না। প্রতিটির ওপরই ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছেন ক্ষমতাসীনরা। এর ফলে ক্ষতি যা কিছু হওয়ার সবই হচ্ছে রাষ্ট্রের এবং সবকিছুর জন্যই শেষ পর্যন্ত ঘানি টানতে হচ্ছে জনগণকে। বলাবাহুল্য, জনগণকে এই ঘানি টানতে হবে দীর্ঘদিন ধরে। উদাহরণ দেয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির কথাই ধরা যাক না কেন। এসব সম্পত্তি তথা জমির ওপর ভবিষ্যতে নানা ধরনের শিল্প-কারখানা নির্মাণ করা যেত। বিশ্বের সব দেশই ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে এবং সে উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে সাধারণত হাত দেয় না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার এমনভাবেই পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, যাতে পুরো জাতির ভবিষ্যত্ই একেবারে ঝরঝরে হয়ে যায়। বিক্রির দামের বিষয়টিও লক্ষ্য করা দরকার। ২৩৬ কোটি টাকার সম্পত্তি তারা ‘মাত্তরই’ ২১ কোটি টাকায় দলীয় লোকজনের হাতে তুলে দিচ্ছেন। এর ফলে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নষ্ট তো হচ্ছেই, রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ক্ষতিও হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। অথচ বাজার দরে বিক্রি করে সে টাকাটা যদি ব্যাংকে রাখা হতো তাহলে অন্তত সরকারের প্রাত্যহিক খরচ মেটানোর জন্য এদিক-সেদিকে হাত বাড়াতে ও লুটপাট করতে হতো না। দেশের ব্যাংকগুলোও সরকারের ‘খাই’ মেটানোর দায় থেকে বেঁচে যেত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার বলে কথা! তাছাড়া এমনও মনে করাটা আবার ঠিক নয় যে, দলীয় লোকজনের জন্য ক্ষমতাসীনদের দরদ একেবারে উথলে উঠেছে। প্রকৃত সত্য হলো, বিক্রির সময় কমিশন খাওয়া হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে। অস্বাভাবিক নয় যে, যারা কিনছেন তাদের কাছ থেকে বাজার দরের কাছাকাছি পরিমাণেই টাকা আদায় করা হচ্ছে। এই টাকা চলে যাচ্ছে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ দায়িত্বপ্রাপ্তদের হাতে। ভাগ যাচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়েও। সেসব হাত ঘুরে টাকার একটি অংশ আবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তহবিলে জমা পড়ছে। সহজ কথায় বলা যায়, ক্ষমতাসীনরা শুধু এখনই পেট ভরাচ্ছেন না, ভবিষ্যতে আরও বেশি লুটপাট করারও আয়োজন সেরে রাখছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এভাবে চলতে থাকলে দেশ ও জাতির ভবিষ্যত্ আসলেও অন্ধকার হয়ে যাবে। সুতরাং প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রতিহত করার পন্থাও খুঁজে দেখা দরকার।

বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

চবিতে আবারও সাংবাদিক পেটাল ছাত্রলীগ




চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা। আহত সাংবাদিক আবু বকর রাহাত দৈনিক যুগান্তরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বেলা আড়াইটার ট্রেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে শহরে যাওয়ার উদ্দেশে ট্রেনে উঠেছিলেন রাহাত। এ সময় হঠাত্ গণিত দ্বিতীয় বর্ষের মিনহাজের নেতৃত্বে কয়েক ছাত্রলীগ কর্মী এসে রাহাতের ওপর হামলা করে। আহত রাহাত ট্রেন থেকে নেমে নিজেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে ছাত্রলীগ কর্মীরা আবারও তার ওপর হামলা করে। খবর পেয়ে কয়েকজন সাংবাদিক এসে আহত রাহতাকে উদ্ধার করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সিরাজ উদদৌলা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে রাহাতের ওপর হামলাকারীদের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচার করা না হলে দেশের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী আদর্শে উজ্জীবিত শিক্ষক সমাজ (সাদা দল), বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চবি শাখা, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ৮ সেপ্টেম্বরসহ গত ৩ বছরে ছাত্রলীগের হাতে কমপক্ষে ৩২ জন সাংবাদিক হামলা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।
চবিতে একটি বিভাগে তালা দিয়েছে ছাত্রলীগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেয়ায় বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে একাডেমিক কমিটি।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এই পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় উপস্থিতি না থাকার কারণে ৯ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। যার মধ্যে তিনজন ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেয়ায় গতকাল সকালে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে প্রক্টর এসে তালা খুলে দেন।
এদিকে এই ঘটনার পর পরই একাডেমিক কমিটির বৈঠকে বসেন বিভাগীয় শিক্ষকরা। বৈঠকে অনিদির্ষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
এই ব্যাপারে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ.ন.ম মুনির আহমদ বলেন, প্রয়োজনীয় উপস্থিতি না থাকায় একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি। এই ঘটনায় বিভাগে তালা লাগিয়ে দেয়াকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরীক্ষা নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আমরা পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

চলে গেলেন এক দুর্দান্ত সাহসী দেশপ্রেমিক সাংবাদিক : আতাউস সামাদের দেখিয়ে যাওয়া পথ




আমরা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, কিংবদন্তিতুল্য সাংবাদিক, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম প্রধান দিশারী এবং দৈনিক আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক আতাউস সামাদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে এ দেশের সাংবাদিকতার জগতে তো বটেই, রাজনৈতিক অঙ্গনেরও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্তও সাংবাদিকতায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন এই পরিশ্রমী সাংবাদিক। মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ আগেও দৈনিক আমার দেশ-এর অফিসে এসে কাজ করে গেছেন তিনি। টেলিফোনে যোগাযোগ তো রেখেছেনই।
১৯৫৯ সালে সাংবাদিকতা শুরু করার পর আতাউস সামাদ তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন সামরিক ও স্বৈরশাসনের অধীনে। শ্বাসরুদ্ধকর সেই বছরগুলোতে দুর্দান্ত সাহসী ছিল তার ভূমিকা। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দারা বিরামহীনভাবে তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়েছে, প্রলোভনও তাকে কম দেখানো হয়নি। কিন্তু ভয়-ভীতি বা প্রলোভন দেখিয়ে এবং প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন চালিয়েও তাকে সত্য প্রকাশ থেকে নিবৃত্ত করা যায়নি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি এমনকি গ্রেফতারও বরণ করেছেন। ওই দিনগুলোতে মানুষ আতাউস সামাদের পাঠানো খবর শোনার জন্য সাগ্রহে বিবিসি রেডিও খুলে বসে থাকত। তার কণ্ঠেও অনেক খবর শোনা যেত। সে সময় মোবাইল দূরে থাক, সাধারণ বা ল্যান্ড টেলিফোনও কমই ছিল। ফলে স্বৈরশাসকের প্রচণ্ড দমনমূলক পদক্ষেপের মুখে দেশের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তেন। আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কেও তারা জানার সুযোগ পেতেন না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে আতাউস সামাদ প্রধান ভরসা হয়ে উঠতেন। বিবিসিতে প্রচারিত তার খবরই নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উজ্জীবিত করে তুলত। সেদিক থেকে স্ব্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে আতাউস সামাদের ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক। জীবনের শেষ দিনগুলো পর্যন্তও গণতন্ত্রের পক্ষে তিনি তার এই অবস্থান বজায় রেখেছেন। প্রয়োজনের সময়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকাও পালন করেছেন।
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ছিল আতাউস সামাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বেশি গুরুত্ব দিতেন তিনি ঘটনা ও তথ্যকে। কোনো বিষয়ের সঙ্গে তীব্র দ্বিমত থাকলেও সে সংক্রান্ত সঠিক তথ্য বা খবর প্রকাশের ব্যাপারে তিনি সত্ থাকতেন। কোনো তথ্যেরই বিকৃতি ঘটাতেন না। তার সঙ্গে বা অধীনে যারা সাংবাদিকতা করেছেন, তাদেরও তিনি সঠিক তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে সততা বজায় রাখার তাগিদ দিতেন। অনুসন্ধান বা খবর খুঁজে বের করার ব্যাপারে তার দৃষ্টি ছিল খুবই তীক্ষষ্ট। এমন অনেক বিষয়েই তিনি রিপোর্ট করেছেন ও অন্যদের দিয়ে রিপোর্ট করিয়েছেন, যেগুলো সহজে কারও চোখেই পড়ত না। এরকম অনেক খবর পরবর্তীকালে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে। সাংবাদিকতা তথা গণমাধ্যমের যে কোনো সঙ্কট ও দুঃসময়ে সবার আগে এগিয়ে এসেছেন আতাউস সামাদ। ১/১১-এর অবৈধ অভ্যুত্থান এবং মইন-ফখরুদ্দীনদের অসাংবিধানিক স্বৈরশাসনের দিনগুলোতে দৈনিক আমার দেশকে বাঁচিয়ে রাখার কঠিন সংগ্রামে তিনি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছেন, চরম বিপদের মুখেও সাংবাদিকদের আগলে রেখেছেন পরম আদরে। হুমকির তিনি পরোয়া করেননি কখনও। মইন-ফখরুদ্দীনদের সময় দমন-নির্যাতন, গ্রেফতার ও অর্থনৈতিক অবরোধসহ বিভিন্ন কারণে আমার দেশ-এর অস্তিত্ব যখন বিপন্ন হয়ে পড়েছিল তখনও আতাউস সামাদই এগিয়ে এসেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে মাহমুদুর রহমানকে তিনি শুধু আমার দেশ-এর সঙ্গে যুক্তই করেননি, তাকে সাংবাদিকতায়ও এনেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফলে আমার দেশ যখন দফায় দফায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মিথ্যা মামলার আড়ালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সরকার যখন কারাগারে ঢুকিয়েছে, তখনও অভয়ের বাণী মুখে দুর্দান্ত সাহসে এগিয়ে এসেছেন আতাউস সামাদ। বস্তুত তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বই আমার দেশকে প্রায় নিশ্চিত ধ্বংসের পরিণতি থেকে রক্ষা করেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভিও আতাউস সামাদের নেতৃত্ব পেয়েছিল বলেই টিকে থাকতে পেরেছে। অতুলনীয় ছিল তার দেশপ্রেম। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং সীমান্তে হত্যাকাণ্ড থেকে ফারাক্কা বাঁধের কুফল ও পানি আগ্রাসন পর্যন্ত জাতীয় স্বার্থের বিভিন্ন প্রশ্নে তিনি আপসহীন ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ জাতীয় স্বার্থেই ভারতকে করিডোর দেয়ার কঠোর বিরোধিতা করেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনেও অত্যন্ত সহজ-সরল ছিলেন আতাউস সমাদ। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। বিভিন্ন প্রসঙ্গে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের দিনগুলোতে অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। এজন্যই দল নির্বিশেষে সবাই তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত হয়েছেন।
আতাউস সামাদের ইন্তেকালে যারা দৈনিক আমার দেশ-এর অফিসে এসে শোক জানিয়ে গেছেন এবং যারা শোকবাণী পাঠিয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা সেই সঙ্গে আশ্বস্ত করতে চাই, দৈনিক আমার দেশ সব সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। কোনো কারণেই কখনও বিচ্যুত হবে না। এভাবেই আমরা মরহুম আতাউস সামাদের দেখিয়ে যাওয়া পথে এগিয়ে যাব। তিনিও বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে।

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ছাত্রলীগের অন্যায়ের প্রতিকার নেই কেন?

সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাতভর নির্যাতন


শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের বিশৃঙ্খলা ও অপকীর্তির শেষ নেই। ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষাকার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পরিবর্তে ক্যাম্পাসে তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। প্রতিদিনই দেশের নানা স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার হচ্ছে। ছাত্রলীগের জন্য চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ইত্যাদি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক মুসলিম হলের ৩০ জন ছাত্রকে রাতভর পিটিয়েছেন ছাত্রলীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যখন ৩০ জন সাধারণ ছাত্র কয়েক ঘণ্টা ধরে তাদের পৈশাচিক আচরণের শিকার হচ্ছিলেন, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরীহ ছাত্রদের বাঁচাতে দায়িত্ব পালন করেনি।

হলটির দু’টি গণ-রুমে প্রায় ৮০ জন ছাত্র থাকেন। ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এসব ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে সপ্তাহে চার দিন হল গেস্টরুমে তাদের হাজিরা দিতে হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দীর্ঘ বক্তৃতা ও নানা আদেশ-নিষেধ তাদের গলাধঃকরণ করতে হয়। সোমবার ছিল তাদের হাজিরা দেয়ার দিন। কিন্তু গেস্টরুমে সাধারণ ছাত্রদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। এতে নেতারা নাখোশ হন। এরপর শুরু হয় অভিযান। গণ-রুম থেকে ৩০ ছাত্রকে ধরে এনে রাতভর নির্যাতন করা হয়। ছাত্রসংখ্যার তুলনায় হলগুলোতে সিট অপ্রতুল। এ জন্য প্রত্যেকটি হলে গণ-রুম তৈরি করা হয়েছে। প্রথম বর্ষের ছাত্রদের এসব গণ-রুমে থাকতে দেয়া হয়। ছাত্রনেতারা তাদের থাকার সুযোগ দেয়ার বিনিময়ে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করেন। নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য গণ-রুম থেকে জোরপূর্বক ছাত্রদের জোগান দেয়া হয়। এসব ছাত্রকে প্রায়ই নানা রকম অত্যাচার-নির্যাতন সইতে হয়।

তাদের পড়াশোনার কোনো সুযোগ নেই। কথিত গণ-রুমের ব্যবস্থা তুলে দেয়া দরকার। এসব রুমকে সাধারণ রুমে রূপান্তর করাই শ্রেয়। ক্ষমতার দাপটে যেভাবে ছাত্রদের ওপর অত্যাচার চালানো হয় তাতে এটি স্পষ্ট যে, কর্তৃপক্ষ বলতে যেন কেউ নেই। সাধারণ ছাত্রদের অভিভাবক হিসেবে হল প্রশাসন চোখ বুজে থাকতে পারেন না। তারা যেন জঘন্য অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য হলের আবাসিক শিক্ষকের কাছে পৌঁছাতে পারেন, সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাধারণ ছাত্রদের বেপরোয়া মারধরকারীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেই। যারা ছাত্রদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ নেয়া হবে না? ছাত্রদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া, তাদের মারধর করা কি বেআইনি নয়? যদি এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন চরম বিশৃঙ্খলা চলতে পারত না।

ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্রদের রাতভর মারধর করে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এ দীর্ঘ সময়ে আবাসিক শিক্ষকদের কেউ বিষয়টি টের পাননি, এটা বিশ্বাস করা যায় না। প্রয়োজন ছিল শিক্ষকদের সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া। দরকার হলে পুলিশ ডাকা। কিন্তু কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি। রাতে না হয় প্রশাসন ‘কিছু জানতে পারেনি’। কিন্তু পরদিন এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কি কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? যারা ছাত্রদের ওপর নির্যাতন করেছে, তারা হলের অতি পরিচিত রাজনৈতিক ক্যাডার। একই অবস্থা দেশের প্রায় সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে। এ জন্য সরকারের দলীয় চিন্তা প্রধানত দায়ী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে বিনাবাক্যে আত্মসমর্পণ করেছে। আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকদের প্রথমে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তারা যদি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসতে পারে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রজা ও প্রজাতন্ত্রের সুখ



মোস্তাফিজুর রহমান
কথায় যুক্তি থাকুক আর নাই থাকুক, ‘টক ঝাল মিষ্টি’র উক্তি ছড়িয়ে দেয়ার মতো লোকের অভাব এ দেশে নেই। বর্তমান সরকার নিষ্ঠুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে যে ক’জনকে অতি সম্মানিত করেছেন, তাদের মধ্যে বিদায়ী যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অন্যতম। সরকার এ দু’জনকে মহান সম্মানে সম্মানিত করলেও দুজনই সরকারকে যারপরনাই অসম্মান করেছে। এ দেশে বিনা পয়সায় উপদেশ দেয়ার মতো লোকের অভাব নেই জেনেও অনভিজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণের জন্যই সরকার আবার যোগাড় করেছে নানা কিসিমের উপদেষ্টা। তাদের কীর্তি অবশ্যই অল্প বয়ানে শেষ করা যাবে না। মাত্র দু’জনের কীর্তি এবং উক্তি সরকারকে ভয়ানক বিপদগ্রস্ত করেছে। বিষয়টি অনুধাবন করে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন তিনি যেন কম কথা বলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই সাধারণ মানুষ যে আশার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল, সে স্বপ্ন প্রথমেই দুঃস্বপ্ন হয় শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাওয়ায়। সে ক্ষত আজও ক্ষতই আছে। যেখানে সুচিকিত্সার বদলে হয়েছে অপচিকিত্সা। যার নেপথ্যে অনেকের মধ্যে আছেন ওই প্রিয় অর্থমন্ত্রী নিজেই। এই শেয়ারবাজার নিয়ে তিনি যে পরিমাণ উক্তি ছড়িয়েছেন তার সংখ্যা কারও অজানা নয়। পদ্মা সেতুর মতো দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে ১৬ কোটি মানুষের। এ ধরনের অবকাঠমোগত একটি বড় প্রকল্প চায় না এমন মানুষ দেশে থাকার কথা নয়। সেই পদ্মা সেতুর প্রকল্প নিয়ে ঘটেছে অভাবনীয় সব ঘটনা। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের দাবির মুখে ঘোলা পানির শরবত পান করতে হয়েছে সৈয়দ আবুল হোসেনকে। যদিও পদহারা আবুল হোসেনের দেশপ্রেমে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন আইএসও সনদ। সরকারের সাড়ে তিন বছরের শেষে সেরকম সনদ দেয়ার মতো আস্থা জনগণ প্রধানমন্ত্রীর ওপর এখনও রেখেছেন কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বিদ্যুত্ একটি অপরিহার্য সেবাখাত । বর্তমান সরকারের আমলে ছয়বার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি কুইক রেন্টালের বিদ্যুত্ এখন ভোক্তাদের বৈদ্যুতিক শক দিয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষের উপলব্ধি, বিদ্যুত্ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ভুল পরামর্শ দিয়ে জনগণকে অসহনীয় জ্বালায় রেখেছেন। এ সরকারের আমলেই হঠাত্ রেলের কালো বিড়ালের ছায়া জনগণ দেখল। আশাবাদী জনগণ ভেবেছিল, কালো বিড়ালের শুধু ছায়া নয়, প্রকৃত কালো বিড়ালটিই তারা প্রত্যক্ষ করবে।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় ডেসটিনির আগ্রাসনে পড়ে দেশের মানুষ হতভম্ব। ডেসটিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা তিন হাজার ২৮৫ কোটি টাকা পাচার করেছে। এগুলো নিয়েই যখন দেশের অর্থনীতিতে সাড়ে বারোটা বাজার উপক্রম, তখনই শুরু হয়েছে হলমার্ক কেলেঙ্কারি। অভিযোগে জানা গেল, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকার পরিমাণ ৪ হাজার কোটি। যদিও হাতেম তাই আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ৪ হাজার কোটি টাকা পাচার তেমন কিছুই নয়। অবশ্য দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ৪ হাজার কোটি টাকা ১৬ কোটি মানুষের দেড় দিনের আয়ের সমান। একটি দেশের বেহাল অবস্থায় ৪ হাজার কোটি টাকা কত বড় বড় কাজে লাগতে পারত তা নিশ্চয় বেসরকারি সত্ উদ্যোক্তারা ভালো করে বলতে পারবেন। সঠিক নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনা থাকা সত্ত্বেও শুধু আর্থিক সঙ্কটের কারণে অনেক শিল্প উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। ৪ হাজার কোটি টাকায় আর কী কী করা যেত তার তালিকা অর্থমন্ত্রীর কাছে অবশ্যই আছে। সরকার পদ্মা সেতুর মতো বাংলাদেশের সর্ববৃহত্ এই স্পর্শকাতর প্রকল্পটি অনিশ্চয়তায় উঠিয়ে রেখেছে। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের দুর্নীতি আড়াল করতে এখানে জড়ানো হয়েছে নোবেল জয়ী ড. ইউনূসকে। তার হাতে গড়া গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যত্ নিয়ে শুধু সরকারের শীর্ষ পর্যায় ছাড়া প্রায় সবাই উদ্বিগ্ন। সরকার তার আচরণে এটা প্রমাণ করেছে যে, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে তারা তার বিরুদ্ধে একগুঁয়েমি ও কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করেছে। যার প্রতিক্রিয়ায় চরম অবস্থান নিয়েছে দেশে-বিদেশে ড. ইউনূসের বন্ধু মহল এবং পশ্চিমা দাতা গোষ্ঠী। সরকার অভিযোগ করেছে, তাদের দুর্নীতি নয়, ড. ইউনূসের কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। সরকারি অভিযোগ যদি সত্যিই হয় তাহলে ড. ইউনূসের ব্যক্তি ইমেজ সম্পর্কে দেশবাসীর আরেকটি নতুন ধারণা জন্মাল বলা যায়। ব্যক্তি ইউনূস যদি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত্ এই অবকাঠামো উন্নয়নের অর্থপ্রাপ্তিতে বড় ফ্যাক্টর হন তাহলে বৃহত্ স্বার্থে সরকার ইউনূসকে যথাযথ মর্যাদা দিলেই তো হয়। বর্তমান মেয়াদে সরকার ক্ষমতায় আসার পর যতগুলো বিষয় নিয়ে তারা দেশ-বিদেশে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে তার মধ্যে শেয়ারবাজার, পদ্মা সেতু, ড. ইউনূস বিতর্ক, কুইক রেন্টাল, রেলের কালো বিড়াল, ডেসটিনি-হলমার্কের অর্থ কেলেঙ্কারিসহ চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, খুন, গুম, ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা তো আছেই। এসব বিষয় নিয়ে বাস-ট্রেন, চায়ে আড্ডায় এমনকি সাধারণ মানুষের জটলায় দিন-রাত চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার আড্ডায় সেদিন হঠাত্ দেখা মিলল তিন ব্যক্তির। তারা যুক্তি দিয়ে অর্থমন্ত্রীর দেয়া উক্তির ব্যাখ্যা দিলেন। তাদের মধ্যে প্রথমজন আতর ব্যবসায়ী। তিনি বললেন, অর্থমন্ত্রী একজন আতর ব্যবসায়ীর মতো। আতর ব্যবসায়ীর আতর কিনে গায়ে মাখতে হয় না। বোতলের মুখ খোলা আর বন্ধ করলেই তার গায়ে সুগন্ধি ছড়ায়। একজন আতর ব্যবসায়ী সারা জীবন যে পরিমাণ আতর বেচাকেনা করেন তার তুলনায় গায়ে সুগন্ধি ছড়ানো আতরের পরিমাণ আসলেই কিছু নয়। বলতে গেলে ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না। অর্থমন্ত্রী এ পর্যন্ত যতবার বাজেট প্রস্তুত ও পেশ করেছেন, টাকার অংকে তার পরিমাণ কত মিলিয়ন বিলিয়ন, একবার ভেবে দেখুন তো!
দ্বিতীয় ভদ্রলোক ব্যাংকার। তিনি বললেন, আপনি ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে যে চেকবই লেখেন সেখানে টাকার অংক যাই হোক ব্যাংকিং নিয়মে ‘মাত্র’ কথাটা থাকেই। অর্থাত্ আপনি পাঁচশ’ টাকা তুললেও লিখেন পাঁচশত টাকা মাত্র, পাঁচ কোটি টাকা তুললেও লিখে দেন পাঁচ কোটি টাকা মাত্র। সে নিয়মে ৪ হাজার কোটি টাকা মাত্র তো বটেই। তৃতীয় ব্যক্তি হিসাববিজ্ঞানের একজন শিক্ষক। তিনি বললেন, শিক্ষার্থীদের হিসাব বিজ্ঞানের অংকে লক্ষ-কোটি টাকার হিসাব শেখাই। অংক করতে গিয়ে যাদের অংকের ফলাফল মেলে না তাদের বলি—কী, তোমার অংক মেলেনি? কত টাকার হিসাবে গড়মিল? শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলেন—স্যার, এক কোটি বা দুই কোটি। তখন তাদের মজা দেয়ার জন্য বলি—ঠিক আছে, ওটা আমার কাছ থেকেই নিও। অর্থমন্ত্রীকে অনেকের হিসাব-নিকাশ মিলিয়ে দিতে হয়। সেদিক থেকে হলমার্কের না মিলানো অংক হয়তো তিনি মিলিয়ে দিতে পারেন। তিনজনের কথায় অন্য রকমের যুক্তি পাওয়া গেল। যে যুক্তি কারও কাছে অবোধ্য নয়।
লেখক : কবি
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জনগণের ধাওয়ার মুখে পড়তে না চাইলে...



শা হ আ হ ম দ রে জা
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে অথচ বিরোধী কোনো দল বা সংগঠন বিনা বাধায় মিছিল-সমাবেশ করতে পারবে তা বিশ্বাস করা যায় না। এ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রমাণ পাওয়া গেছে ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর। পল্টন ময়দানে ইসলামী ও সমমনা ১২টি সংগঠনের সমাবেশ করার কথা ছিল ২২ সেপ্টেম্বর। একমাস আগে ঘোষিত এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষানীতিসহ সরকারের ইসলামবিরোধী বিভিন্ন নীতি ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। তার সঙ্গে সবশেষে যুক্ত হয়েছিল মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রে নির্মিত সিনেমার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্য। যে কোনো বিচারে সম্পূর্ণ গণতন্ত্রসম্মত কর্মসূচি হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পুলিশ যথারীতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বসেছে। আগেরদিন ডিএমপির কমিশনার হঠাত্ ঘোষণা করেছেন, পল্টন ময়দানে তো বটেই, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা ও পল্টন মোড়ে এমনকি কাকরাইলের আশপাশেও কোনো সমাবেশ করা চলবে না। এই স্বৈরতান্ত্রিক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়েও পুলিশের প্রচণ্ড ধাওয়ার মুখে পড়তে হয়েছে। ইসলামী ও সমমনা ১২টি সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিষ্ঠুরভাবে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। সবই ঘটেছে হাজার হাজার মানুষের চোখের সামনে। বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাও ছিল সেখানে। কোনো টিভির ছবিতেই কিন্তু নেতা-কর্মীদের মারমুখী হতে দেখা যায়নি। তাদের সবাইকে বরং নিজেদের বাঁচাতেই প্রাণান্তকর চেষ্টা করতে দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত তারা গিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারপরও রেহাই পাননি তারা। ১২ সংগঠনের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানো এবং পুলিশের ওপর হামলা চালানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই নির্যাতন এবং সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে ইসলামী ও সমমনা ১২টি সংগঠনের আহ্বানে সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে ২৩ সেপ্টেম্বর। হরতালের সময়ও পুলিশকে মারমুখীই দেখা গেছে। মিছিল-সমাবেশ তো পণ্ড করেছেই, ১২ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। দেশের কোনো এলাকাতেই নির্বিঘ্নে মিছিল-সমাবেশ করতে পারেনি ১২ সংগঠন। বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি শিবির ও ছাত্রদলের অনেককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ওদিকে ক্ষমতাসীনরা ফ্যাসিস্ট সরকারের সুরে আন্দোলন দমনের হুমকিই শুধু দেননি, একযোগে মিথ্যাচারও যথেষ্টই করেছেন। জনগণকে স্তম্ভিত করে বলে বসেছেন, কথিত যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য অরাজকতা সৃষ্টি করাই নাকি ইসলামী ও সমমনা ১২ সংগঠনের উদ্দেশ্য! মিথ্যাচার করতে গিয়ে তারা লক্ষ্যই করেননি যে, বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এসব ইসলামী ও সমমনা সংগঠনের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই।
ঘটনাপ্রবাহে পুলিশের বিষয়টি নতুন করে প্রাধান্যে এসেছে। কারণ, জনগণের ‘সেবক’ হিসেবে পুলিশের দায়িত্ব জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা বিধান করা। ইসলামী ও সমমনা ১২ সংগঠনের বা কোনো রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রসম্মত কর্মসূচি ভণ্ডুল করা এবং নেতা-কর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো পুলিশের কাজ হতে পারে না। তাছাড়া মিছিল-সমাবেশ, পিকেটিং, মানববন্ধন, হরতাল প্রভৃতি মানুষের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার। এসব কর্মসূচিতে বাধা দেয়া গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার লংঘনের শামিল। অন্যদিকে পুলিশ এমনকি অনেক আগে থেকে ঘোষিত শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশও করতে দিচ্ছে না। ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের যেভাবে লাঠিপেটা করেছে তা দেখে মনে হয়েছে, পুলিশ সরকারের ঠ্যাঙ্গাড়ে বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছেন। বলা দরকার, পুলিশকে দিয়ে এভাবে নির্যাতন চালানো এবং মিছিল-সমাবেশ ও হরতাল ঠেকানোর চেষ্টা আদালতের রায়কেও অস্বীকার করার শামিল। কারণ সর্বোচ্চ আদালত অনেক আগেই বলে দিয়েছে, হরতাল করা রাজনৈতিক অধিকার। কোনো কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকলে পুলিশ বাধা দিতে পারে না। লাঠিপেটা ও গ্রেফতার করারও কোনো অধিকার নেই পুলিশের। বলা দরকার, হুমকি-ধমকির কৌশল থেকে গণতন্ত্রসম্মত অবস্থানে ফিরে আসার পরিবর্তে কল্পিত অরাজকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার নামে এভাবে দমন-নির্যাতনের পথে পা বাড়াতে থাকলে সরকারের বিপদই বাড়বে। ২৩ সেপ্টেম্বর পালিত হরতালের মধ্যেও ক্ষমতাসীনদের জন্য শিক্ষা নেয়ার উপাদান রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে এ সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণরূপে জনসর্থন হারিয়ে ফেলেছে। না হলে ইসলামী ও সমমনা ১২টি সংগঠনের আহ্বানে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ঘোষণায় এত সফলভাবে হরতাল পালিত হতো না। ১২টি সংগঠনের আহ্বানেই যেখানে এই অবস্থা, সেখানে বিএনপি ও জামায়াতের মতো বড় দলগুলো আন্দোলনের ডাক দিলে তারা পালানোর পথ খুঁজে পাবেন কিনা ক্ষমতাসীনরা তা ভেবে দেখতে পারেন।
কথাটা অবশ্য আমাদের নয়, ২৩ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরের বিশাল সমাবেশে পালানোর কথাটা বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগানের মধ্যে সাবধান করতে গিয়ে বেগম জিয়া বলেছেন, সময় থাকতে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে না নেয়া হলে জনগণের আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাসীনরা পালানোর পথও পাবেন না। শেয়ারবাজার, পদ্মাসেতু, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল এবং হলমার্ক কেলেঙ্কারীসহ সীমা ছাড়ানো বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ-হাজার কোটি টাকা লোপাট ও বিদেশে পাচার করার তথ্য উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেছেন, ক্ষমতার পালাবদল হলে দুর্নীতিবাজদের কারাগারে ঢোকানো হবে। প্রত্যেককে বিচার করে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। দলবাজ পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদেরও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং সময় এলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আয়োজন না করা হলে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনর্বহাল, অন্যথায় সরকারের পতন’— এই লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনের সূচনা উপলক্ষে ১৮ দলীয় জোটের এ সমাবেশে বেগম জিয়া অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিচারপতিদের দিয়ে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী রায় তৈরি করিয়েছে এবং তার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করেছে। বিচারপতিরাও নিজেদের সীমা অতিক্রম করে রায় দেয়ার মাধ্যমে ‘মিসকন্ডাক্ট’ বা অসদাচরণ করেছেন। আবারও ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা স্থায়ী করাই ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য। কিন্তু জনগণ তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেবে না। জাতীয় জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্ধারণী আরও অনেক কথার সঙ্গে খালেদা জিয়া বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানানোসহ নির্বাচনের ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জাতীয় সংসদে যে ভাষণ দিয়েছেন তার তীব্র সমালোচনা করে বেগম জিয়া বলেছেন, এ ধরনের কোনো ‘ফর্মুলা’য় কাজ হবে না। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে দেশে নির্বাচন হতে পারবে না। নির্বাচনের সময় ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠনের যে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তারও বিরোধিতা করেছেন বেগম জিয়া। বলেছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কোনো মন্ত্রিসভাকে মেনে নেয়া হবে না। কারণ, শেখ হাসিনার মতো নেত্রীর অধীনে প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু কোনো নির্বাচনের কথা কল্পনা করা যায় না। দিনাজপুরের সমাবেশে মূল কথায় বেগম জিয়া অবিলম্বে সংবিধানে নতুন একটি সংশোধনী আনার এবং নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের জোর দাবি জানিয়েছেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বেগম খালেদা জিয়া সাধারণ মানুষের মনের কথারই প্রতিধ্বনি করেছেন। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাট সম্পর্কে যত কম বলা যায় ততই ভালো। এ ব্যাপারে পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক অতি লজ্জাকর ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করাই যথেষ্ট। অনেক নাটকীয়তার পর বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি পদ্মাসেতুর জন্য ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে সত্য কিন্তু এই ঋণ পাওয়ার এবং বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে ন্যক্কারজনকভাবে নতি স্বীকার করতে হয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাষায় সরকার ‘নাকে খত দিয়েছে।’ বিষয়টি পুরো জাতির জন্যই নিঃসন্দেহে অসম্মানজনক। কিন্তু সর্বব্যাপী দুর্নীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও জাতিকে লজ্জায় ডুবিয়ে ছেড়েছে। খালেদা জিয়া নাম ধরে ধরে দুর্নীতিবাজদের সম্পর্কে বলেছেন। তার সে তালিকায় আবুল হোসেন ও মশিউর রহমানের মতো মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের নাম যেমন রয়েছে তেমনি এসেছে কোনো এক বিশেষজনের ‘সুপুত্র’ ও ‘জামাইবাবুর’ কথাও। প্রধানমন্ত্রী ও তার সমর্থক অনুসারীরা পারলে তথ্য ও দলিলপত্রসহ এর প্রতিবাদ করে দেখাতে পারেন—যদিও তেমন কোনো সুযোগই রাখেননি কীর্তিমানরা। এজন্যই সর্বশেষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ছুটি চেয়ে যে দরখাস্ত পেশ করেছেন তার ‘অরিজিনাল’ কপিটিই দেখাতে হয়েছে বিশ্বব্যাংককে। দেখিয়ে এসেছেন আরেক গুণধর উপদেষ্টা গওহর রিজভী। এর মধ্য দিয়েও প্রমাণিত হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ঠিক কোন কোন বিশেষজনের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ছিল। তাছাড়া কানাডা থেকে পাওয়া বিভিন্ন খবরেও তো অনেকের সম্পর্কেই জানা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক অসত্য বলেনি, আসলেও ‘উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিমূলক ষড়যন্ত্র’ হয়েছিল। সেজন্যই নিজেদের লেখা ছয়টি চিঠি প্রকাশ করলেও সরকার বিশ্বব্যাংকের দুটি রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। দুর্নীতি হয়েছিল বলেই সরকারকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের কাছে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। এমনকি নতুন পর্যায়ে চারটি কঠিন ও অসম্মানজনক শর্তও মেনে নিতে হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াও সে কথাগুলোই জনগণকে জানিয়েছেন।
দিনাজপুরের সমাবেশে নির্বাচনকালীন সরকারসহ সংবিধান সম্পর্কেও বেগম জিয়া জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষারই প্রতিধ্বনি করেছেন। এ ব্যাপারেও আগ বাড়িয়ে সমস্যা তৈরি করেছেন ক্ষমতাসীনরা। সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত আদেশের ভিত্তিতেই তারা সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনেছেন। বিরোধী দলকে বাইরে তো রেখেছেনই, আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ের জন্যও অপেক্ষা করেননি। অথচ পূর্ণাঙ্গ রায়ে ভাষার মারপ্যাঁচ খাটিয়ে গুরুত্বহীন করে ফেলা হলেও সংক্ষিপ্ত আদেশে সুস্পষ্টভাবেই বলা হয়েছিল, পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু আদেশের এই অংশটুকুর ধারে-কাছে যাননি ক্ষমতাসীনরা। শুধু তা-ই নয়, সংসদে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে ‘ফর্মুলা’ পেশ করেছেন সেটাও আসলে সংবিধানসম্মত নয়। কারণ, পঞ্চদশ সংশোধনীসংবলিত সংবিধানে বিদ্যমান সংসদকে বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রাখা হয়েছে, যে ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। ওদিকে সংক্ষিপ্ত আদেশের দীর্ঘ ১৬ মাস পর যে পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করা হয়েছে সেখানেও নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার এবং ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ছোট আকারের মন্ত্রিসভা গঠনের নির্দেশনা রয়েছে। অথচ সংসদই যদি না থাকে তাহলে ‘নির্বাচিত’ ব্যক্তিদেরও পাওয়া যাবে না, যাদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এভাবেই একদিকে সর্বোচ্চ আদালতের বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের অনেক বাইরে চলে গেছেন—যাকে সংবিধান লংঘন বলা যায়। এ কথাগুলোই দিনাজপুরের সমাবেশে বলেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি তাই বলে কেবলই সমালোচনা ও আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর হুমকি দিয়ে থেমে যাননি, প্রকৃত দেশপ্রেমিক জাতীয় নেত্রীর অবস্থান থেকে একই সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের জন্য সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার পথও দেখিয়েছেন। বলেছেন, সংবিধানে আরও একবার সংশোধনী আনতে হবে এবং সেই সংশোধনীতে এমন একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের বিধান রাখতে হবে, যার অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বেগম জিয়া বলেছেন বলে নয়, দ্রুত ঘনীভূত হতে থাকা রাজনৈতিক সঙ্কট এবং আগামী দিনের সম্ভাব্য সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতেও বলা দরকার, এ প্রস্তাবটির মধ্যেই রয়েছে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার এবং নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করার গ্রহণযোগ্য পন্থা। সংসদীয় পদ্ধতির বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিকাশকে বাধাহীন করার সদিচ্ছা থাকলে এবং সত্যিই জনগণের ধাওয়ার মুখে পড়তে না চাইলে ক্ষমতাসীনদের উচিত বেগম খালেদা জিয়ার দেখানো পথে পা বাড়ানো। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনায় লগি-বৈঠার হত্যা-সন্ত্রাসের মতো ধ্বংসাত্মক কিছু থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা!
লেখক : সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক
shahahmadreza@yahoo.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

‘তুই চোর’দের ডাকাতি ও লুটপাট



এমএ নোমান
যেখানেই মহাজোট সরকারের লোকদের পাওয়া যাবে সেখানেই ‘তুই চোর’ বলে একটি ধ্বনি ওঠাতে হবে। টিভি টকশো’তে দেয়া প্রবীণ সাংবাদিক ও সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম মূসার আবেগঘন ও গভীর তাত্পর্যপূর্ণ এই ‘তুই চোর’ উক্তিটি এখন শহর-নগর-বন্দর ছাড়িয়ে গ্রাম-গঞ্জের অলি-গলি এমনকি চায়ের দোকানেও ঝড় তুলেছে। পাবলিক বাস, ট্রেন, লঞ্চ, উড়োজাহাজ এমনকি শেয়ারে দু’জন রিকশায় উঠলেও তাদের মধ্যে এখন প্রধান আলোচনার বিষয় হচ্ছে ‘তুই চোর’ প্রসঙ্গ।
সোনালী ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত্, শেয়ারবাজারের ত্রিশ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর ৮০ হাজার কোটি টাকা লুট, অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে তিন বছরের উন্নয়ন বাজেটের টাকা লুট এবং রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের নামে ৩৪ হাজার কোটি টকা লোপাটসহ সরকারি দলের নানা কুকীর্তির বিবরণ তুলে ধরে সাংবাদিক সমাজের দিকপাল অগ্রজ মূসা ভাই সম্প্রতি এক টিভি টকশো’তে বলেছেন, সরকারের কোনো মন্ত্রী কিংবা সরকারি দলের কোনো লোককে যেখানেই দেখা যাবে, সেখানেই জনগণ তাদের দিকে ধেয়ে গিয়ে বলবে—‘তুই চোর’।
মূসা ভাইয়ের এই ‘তুই চোর’ তত্ত্বের চর্চা মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। বাস-গাড়িতে বিতর্কের সময় কেউ একজন খেয়ালের ভুলে সরকারের পক্ষ নিলে আর রেহাই নেই। সঙ্গে সঙ্গে সমস্বরে চারদিক থেকে সবাই ওই সরকার সমর্থককে উদ্দেশ করে বলে ওঠেন—তুই চোর। যারা পাবলিক বাস কিংবা অন্যান্য গণপরিবহনে যাতায়াত করেন, তারা নিশ্চয়ই এর প্রমাণ পেয়ে গেছেন। গত কয়েকদিন ধরেই বাস-গাড়িতে ‘তুই চোর’ শব্দ দুটির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার হচ্ছে।
আমার বাসা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় আর কর্মক্ষেত্র হচ্ছে কারওয়ান বাজারে। ফলে প্রতিদিনই রাস্তায় কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে বসে পরিবহন রাজনীতির শিকার হতে হয়। তবে এখন একটা সুবিধা হচ্ছে যে, আগের মতো ঝগড়া-ঝাঁটি হচ্ছে না। যা হচ্ছে সবই একতরফা। ভাবলাম, ‘তুই চোর’ খেতাবের ভয়েই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেউ আর সরকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার সাহস করছে না।
কয়েকদিন আগে বাসে উঠেছি বাসার উদ্দেশে। বাসে আগে থেকেই চলছিল এসব আলোচনা। তরুণ বয়সের একজন যাত্রী বললেন, প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র থাকায় ১৯৭২ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও বাকশালের শাসনের কথা মনে নেই। তবে রক্ষীবাহিনীর নির্মম অত্যাচারের বীভত্স কাহিনী, শেখ কামালের ব্যাংক লুট, বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা, সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া, লুটপাটের কারণে ’৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি শুনেছি। ওই সময়ের শাসন কেমন ছিল তা এখন শেখ হাসিনার শাসনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
তরুণ বয়সের এই যাত্রীকে থামিয়ে দিয়ে আরেকজন বলে উঠলেন, আরে ভাই শোনেন—বাকশালকে শুধু দেশের মানুষই ঘৃণা করেনি। শেখ সাহেবের পরিবারও ঘৃণা করেছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে মাত্র ১২ মিনিটের ব্যবধানে জাতীয় সংসদে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর শেখ মুজিব বাসায় ফেরার পর তার স্ত্রী তাকে প্রথমে ঘরে ঢুকতে দিতে চাননি। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়েও তিনি নাকি দরজা না খুলেই চিত্কার-চেঁচামেচি করে শেখ মুজিবের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, আপনি আমাকে এই প্রতিদান দিলেন? আজীবন গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেছেন। বছরের পর বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। আমি ঘর-সংসার সামলিয়েছি। অথচ আজ আপনিই নাকি বহুদলীয় গণতন্ত্র বিপন্ন করে একদলীয় বাকশাল করলেন।
ওই লোকটি আরও বললেন, শেখ হাসিনা তার নিহত বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার করলেও ফের বাকশাল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এখনও প্রকাশ্যে দেননি। কাজেই বাকশাল যে একটি ঘৃণিত ব্যবস্থা ছিল তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার মরহুম মায়ের মতোই বিশ্বাস করেন।
শেয়ারবাজারের সর্বস্ব হারানোর ব্যথার কথা জানিয়ে একজন মধ্যবয়সী লোক বললেন, মুজিব আমলে ব্যাংক ডাকাতির কথা শুনেছি। ওই সময় হয়তো টেকনোলজি এত ডেভেলপ করেনি। ফলে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে ডাকাতি করে টাকা লুট করতে হয়েছে। এখন প্রযুক্তি উন্নত হওয়ায় ডাকাতির পরিবর্তে ঘরে বসে লুটের ঘটনা ঘটছে। এই দেখেন না, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই কীভাবে যেন কারসাজি করে শেয়ারবাজারের সব টাকা লুট করে নিয়ে গেল। এবার ৩০ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে কায়দা করে ৮০ হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেল। শোক সইতে না পেরে ৫ জন বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা করল। এতেও কিন্তু সরকারের মন গলেনি।
ব্যাংক লুটের ঘটনা উল্লেখ করে ওই ব্যক্তি বললেন, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে কীভাবে ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল সরকারের লোকেরা। এখন শুনছি সরকারি এ ব্যাংকগুলো নাকি বিক্রির চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে। ব্যাংক ডাকাতি ও ব্যাংক লুট থেকে এখন ব্যাংক বিক্রি? অথচ ৪ হাজার কোটি টাকা লুটের ঘটনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এটা তেমন কিছুই নয়। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের মন্ত্রীদের দিয়ে দেশের মানুষকে শাসন করছেন। এজন্য তাকে আরও একটি ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া যেতে পারে। আগের ডজনখানেক ডিগ্রি তিনি কি কারণে পেয়েছিলেন, তা আমার মনে নেই। তবে অখ্যাত-অপরিপকস্ফ লোকদের দিয়ে দেশের মানুষকে ঠাণ্ডা রাখতে পারছেন, এজন্য তার নিশ্চয় একটি ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া উচিত। মূলত শেখ মুজিবের সেই চোরের খনি আর চাটার দলের সদস্যরা এখন রাক্ষস আর খোক্ষস হয়ে দেশের সব টাকা আর নদী-নালাসহ সরকারি জমি গ্রোগ্রাসে গিলে খাচ্ছে।
লেখক : সাংবাদিক
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেবাদাসসুলভ বাহাদুরি



ব দ রু দ্দী ন উ ম র
বাংলাদেশে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদি বন্ধের কোনো সম্ভাবনা না থাকার মূল কারণ সরকার কর্তৃক এ দুই কাজ নিজেরাই করা এবং অন্যদের এই কাজে উত্সাহিত করা। এর ফলে দুর্নীতি, সন্ত্রাসসহ কোনো ধরনের অপরাধেরই কোনো শাস্তির ব্যবস্থা এ দেশে নেই। যে দেশে অপরাধের শাস্তি নেই সে দেশ হলো অপরাধীদের অভয়ারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর পর আজ প্রকৃতপক্ষে ও সর্বতোভাবে পরিণত হয়েছে অপরাধীদের এক অভয়ারণ্যে।
পুরনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন অদক্ষ ও অযোগ্য প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনে শুধু অক্ষম নন, প্রচণ্ড জনবিরোধী হিসেবে স্বাক্ষর রাখলেও দুর্নীতির ক্ষেত্রে যে পিছিয়ে ছিলেন না এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার অপসারণের পর সংবাদপত্রে প্রকাশিত নানা তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ে তার পেয়ারের লোকেরা এবং তার ভাইসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনরা প্রশাসনে হস্তক্ষেপ থেকে নিয়ে আর্থিক দুর্নীতি কী পরিমাণে করেছেন তার বিবরণ এখন ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। এরই মধ্যে যা প্রকাশিত হয়েছে তার থেকেই এটা স্পষ্ট যে, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনে যতই অক্ষম এবং অপারদর্শী হোন, চুরি-দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার স্থান বেশ উঁচুতে। ‘দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমন’-এর সরকারি নীতি বেশ ভালোভাবেই তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কার্যকর করেছিলেন।
এহেন এক মন্ত্রীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়ে এখন অন্য একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। ইনি ইতিপূর্বেই একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে দেশের জনগণ ও সংবাদমাধ্যমে চিহ্নিত। দুর্নীতির কারণে তার শাস্তিও হয়েছিল। ২০০৮ সালে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে উচ্চ আদালত তাকে সংসদ সদস্য পদের অযোগ্য ঘোষণার পরও সরকার ফন্দিফিকির করে মামলা দায়ের করে এই শাস্তি স্থগিত রাখায় তিনি এখনও সংসদ সদস্য পদে বহাল আছেন! বোঝার অসুবিধা নেই যে, এই অপকীর্তি করতে গিয়ে সরকার প্রকারান্তরে নিজেদের সংবিধানই পদদলিত করছে। অবশ্য সংবিধান পদদলিত করার এটাই প্রথম ও একমাত্র দৃষ্টান্ত নয়। এ ধরনের কাজ সরকারের পক্ষ থেকে ভূরি ভূরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সব থেকে আতঙ্কজনক ব্যাপার হচ্ছে, নিজেদের চুরি-দুর্নীতি-সন্ত্রাসের প্রয়োজনেই সরকারি লোকজন এ কাজ নিয়মিতভাবে করছে। এর দ্বারা তারা এরই মধ্যে ভালোভাবে প্রমাণ করেছে যে, সংবিধান নয়, চুরি-দুর্নীতিই বাংলাদেশে সার্বভৌম! বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষক ও দুর্নীতিবাজদের আশ্রয়স্থল হিসেবে এখন এমন একজনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন যাঁকে তিনি নিজের মন্ত্রিসভাতেও আগে ঠাঁই দিতে পারেননি। তার সঙ্গে নিজের সম্পর্ক পরিবর্তনের পর সুযোগ বুঝে এখন তিনি তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে অধিষ্ঠিত করেছেন!
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত হয়েই এই নতুন মন্ত্রী তাদের নেত্রীর পথ অনুসরণ করে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের পতাকা তার মন্ত্রণালয়ে উত্তোলন করে সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিগত ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি র্যাব সদর দফতর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী নিজেই গুম, নাকি কেউ তাকে গুম করেছে তা আমার জানা নেই।’ (আমার দেশ ২৫.৯.২০১২) একথা যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেদের একটি বাহিনীর সদর দফতরে বসে সাংবাদিকদের সামনে বলতে পারেন সে দেশে কোনো গুমের তদন্ত করার বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকতে পারে এটা ভাবার কারণ নেই। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার যে, নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য তার নিজস্ব নয়। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার ঠিক পরই তাদের প্রধানমন্ত্রী এক প্রকাশ্য সভায় একথাই বলেছিলেন। একথা বলার জন্য তিনি সারাদেশে, সর্বত্র, ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। এখন তার দ্বারা নিযুক্ত নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সেই ধিকৃত পূর্বকথার পুনরাবৃত্তি করে সন্ত্রাস ও দুর্নীতি বিষয়ে তাদের সরকারি নীতির ঘোষণা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন করে দিলেন। এছাড়া তিনি এ প্রসঙ্গে আর এক মিথ্যার অবতারণা করেন। তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ ধরনের হত্যা অনেক ঘটেছে। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর তা অনেকটা কমে এসেছে।’ (ঐ) বাস্তব ব্যাপার একেবারে অন্য রকম। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত র্যাবের ক্রসফায়ার, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, গুম খুন ইত্যাদি হত্যাকাণ্ড যে আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে এটা এদেশে বসবাসকারী আমরা ভালোভাবেই জানি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও তাদের রিপোর্টে বাংলাদেশে এভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা বৃদ্ধির কথা বলেছে।
আসলে বাংলাদেশে এখন এক পুরোদস্তুর ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র কায়েম হয়েছে। এদের ফ্যাসিবাদের প্রতিফলন প্রতিটি ক্ষেত্রে হচ্ছে। সভা-সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদির ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা, জনগণের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, ক্রসফায়ার, গুম-খুনই নয়—বেডরুম মার্ডারও এখন আগের থেকে বহুগুণ বেড়ে গেছে। লক্ষ করার বিষয় যে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বেডরুম হত্যা হঠাত্ করেই বেড়ে গেছে। এই সাংবাদিক হত্যার পর তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লাফ দিয়ে ঘোষণা করেন যে তিন দিনের মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু এই ঘোষণার পর রহস্যজনকভাবে তার বুলি পরিবর্তিত হয়। মনে হয় এই ঘোষণা দেয়ার সময় তিনি হত্যাকাণ্ডের ‘রহস্যের’ সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। পরে এ পরিচয়ের কারণেই তিনি তার ঘোষণা প্রত্যাহার করে বলেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড জটিল ব্যাপার এবং এর তদন্ত কাজ অনেক সময়সাপেক্ষ। আজ পর্যন্ত এ তদন্ত শেষ হয়নি। তবে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন করে ঘোষণা দিয়েছেন যে, সাগর-রুনি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে এবং আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যেই প্রকৃত খুনিদের শনাক্ত করা হবে! (আমার দেশ ২৬.৯.২০১২) তদন্তের কী ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে তিনি একথা বলেছেন জানা নেই। তবে ভুয়া ও মিথ্যা কথা ও মিথ্যা ঘোষণা এ সরকারের লোকজনের পক্ষে এতই স্বাভাবিক যে এসব কথাকে কেউ সিরিয়াসলি নেয় না। কাজেই ১০ অক্টোবর এলে তখনই এ বিষয়ে মতামত দেয়া যেতে পারবে।
বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের কাজ দেখানোর জন্য যথেষ্ট তত্পর মনে হচ্ছে। কিন্তু নিজের গলায় দুর্নীতির মালা ঝুলিয়ে ও ফ্যাসিস্টসুলভ কথাবার্তা বলে তিনি যে পথে হাঁটতে শুরু করেছেন সে পথ খুব পরিচিত। এ পথ তাদের শ্রেণী ও তাদের সরকারের দ্বারাই নির্মিত। প্রধানমন্ত্রী থেকে নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, দলীয় নেতা-নেত্রী সবাই এই পথের পথিক। এরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়ার পর থেকে নিজেদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি শিকেয় তুলে যে পথ ধরে এতদিন হেঁটেছেন সে পথ যে তারা তাদের মেয়াদের পরবর্তী সময়ে পরিত্যাগ করে অন্য পথ ধরবেন তার কোনো সম্ভাবনাই নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়োগও সেটাই প্রমাণ করছে।
২৬.৯.২০১২

মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বেগম হাওয়ারুন্নেছার ‘হাওয়া ভবন’!



মনিরুজ্জামান মনির
‘পুবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া।’ এই ধরনের অসাধারণ গান, কবিতা, গল্প-উপন্যাস লেখা হয়েছে ‘হাওয়া’কে নিয়ে। বিশেষত আজও বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের মানুষ দক্ষিণদুয়ারী ঘর-জানালা নির্মাণ করে দখিন হাওয়ার মিষ্টি সুশীতল পরশ লাভের আশায়। এছাড়া মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রথম প্রেরিত আদিপুরুষ আদমের সঙ্গিনী আদি নারী ‘হাওয়া’। হয়তোবা এইসব সমীকরণ করেই বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মতো সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক মহকুমার অধিবাসী আসুক মিয়ার স্ত্রীর নাম রাখা হয়েছিল হাওয়ারুন্নেছা বেগম।
বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা বলে পরিচিত আসুক মিয়া ঢাকার বনানীতে একসময় একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন এবং যথারীতি তার প্রিয়তমা স্ত্রীর নামে সেই বাড়ির নামকরণ করেন ‘হাওয়া ভবন’। ২০০১-এ নির্বাচনের আগে সেই ভবনটি ভাড়া নেয়া হয় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অফিস হিসেবে। ওই ভবনে শহীদ জিয়া বেগম জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অরুণরাঙা তরুণ নেতা সেই সময়কার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের দফতর স্থাপন করা হয়। অবশ্য সেই থেকেই শুধু সাধারণ মানুষ কেন রাজনীতি-সচেতন জনগোষ্ঠীর মাঝে অপপ্রচার চালানো হয় বেগম হাওয়ারুন্নেছার হাওয়া ভবন নয়, হাওয়া ভবন তারেক রহমানের। অর্থাত্ বিএনপিবিরোধী সমালোচকরা তারেক রহমানের নাম জড়িয়ে হাওয়া ভবনের আঙিনায় বির্তকের বীজ রোপণ করলেন। হাওয়া বিবির পবিত্র হাওয়া ভবনকে রাজনৈতিকভাবে কলঙ্কিত করার জন্য একদল কুচক্রী অপপ্রয়াস নিল। সেই হাওয়া ভবনে বিএনপির চেয়ারপার্সন নিয়মিত তার দলীয় সাংগঠনিক কাজ করতেন। সেখানে বসেই তারেক রহমান বিএনপির কর্মী, সমর্থক ও নেতাদের তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠিত ও সমন্বিত করার পরিকল্পনা করেছিলেন। একানব্বইয়ের নির্বাচনী প্রচার কর্মকাণ্ড হয়েছিল এখানেই। ওই নির্বাচনী বিজয়ে তারেক রহমানের যে সহায়ক ভূমিকা ছিল, তা অনস্বীকার্য।
তারেক রহমান এমপি বা মন্ত্রী না হয়েও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে হতে চাইলেন আরও পরিশীলিত, আরও পরীক্ষিত, আরও শিক্ষা নিতে চাইলেন রাজনীতির পাঠশালা থেকে। এদেশের মানুষ রাজনীতির রাজপথে তারেকের পদযাত্রাকে জানালো স্বাগত। তারা তারেকের মাঝে দেখতে পেল শহীদ জিয়ার যোগ্য উত্তরাধিকার এবং বেগম জিয়ার সহায়ক শক্তির প্রতিচ্ছবিকে। আর দৃশ্যামান এই উজ্জ্বল আগামীর প্রতিচ্ছবি কুনজরে পড়ল বিএনপিবিরোধী দেশীয় কুচক্রী মহল ও বিদেশি গোয়েন্দাদের, যারা চায় না ভারতে নেহেরু গান্ধী পরিবার, পাকিস্তানের ভুট্টো পরিবার এবং বাংলাদেশের শহীদ জিয়ার পরিবার থেকে কেউ ঐতিহ্যবাহী ধারাবাহিক রাজনীতিবিদ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশের শাসনভার নিক এবং তাদের জনসমর্থন অব্যাহত থাকুক।
একানব্বইয়ের তারেকের চেয়ে ২০০১-এর তারেক আরও বিচক্ষণ আরও মেধাসম্পন্ন এবং আরও কর্মনিষ্ঠ। তাই অবশেষে ১/১১-এর আধা সামরিক-আধা বেসামরিক সংবিধান লঙ্ঘনকারী তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূর্ব-অভিযোগ ছাড়াই বেগম খালেদা জিয়া এবং আরাফাত রহমান কোকোর মতোই গ্রেফতার করে তারেক রহমানকে। এটা স্পষ্টই অনুমান করা যায়, এ ধরনের অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ সেই সরকার নিয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে হাজতবাস করানো ছাড়াও তার দুই সন্তানকে এমন অমানবিক নির্যাতন করার জন্য। যার ফলে তারা দাঁড়িয়ে ছিল মৃত্যুর মুখোমুখি। এখন দুই সন্তানই বিদেশে সুচিকিত্সা নিচ্ছে। তারা দেশের রাজনীতির সীমানা থেকে দূরে। বেগম জিয়ার মাতৃত্বের কোলকে শূন্য করে, স্নেহের বন্ধন থেকে দুটি হাতকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেই যেন চেয়েছিল এইসব চক্রান্তকারী। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও যেন চেয়েছিল তা-ই। তারেক রহমানকে অমানবিক নির্যাতনের বিচার না করে তত্ত্ববধায়ক সরকারের ১০টি মামলার সঙ্গে নতুন করে আরও তিনটি মামলা জুড়ে দিয়ে তারেক রহমানকে করল ফেরারি আসামি। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, এই দল এই সরকারের তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ শেষ করার চক্রান্তে যোগসাজশ ছিল। এছাড়া এই সরকারের চার বছর সময়ে প্রায় প্রতিদিন তারেক রহমানের হাওয়া ভবন কর্তৃক কল্পিত দুর্নীতির কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। তবে দেশের মানুষের কাছে এখন স্পষ্ট, দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী এই তরুণ নেতা নির্দোষ, কেননা শত চেষ্টা করেও দেশ-বিদেশের কোথাও পায়নি তারেকের সঞ্চিত টাকার পাহাড়। বিদেশ থেকে ভাড়া করা সাক্ষী এনেও প্রমাণ করতে পারেনি তারেক রহমানের দুর্নীতি।
এখন প্রমাণ হয়েছে তারেক রহমানের দুর্নীতির কারখানা ‘হাওয়া ভবন’ নয়। ‘হাওয়া ভবন’ পবিত্র অকলঙ্কিত বেগম হাওয়ারুন্নেছারই রয়ে গেছে। তারেক রহমান একটি উদীয়মান সূর্যের নাম। কিছু কিছু কালো মেঘের পুঞ্জ তাকে কিছু সময়ের জন্য ঢেকে রাখলেও তার যাত্রা থাকবে অব্যাহত গন্তব্যের দিকে। এদেশের মানুষ প্রবাসে থাকা নেতার উদ্দেশে কোরাস কণ্ঠে গান ধরেছে, ‘তোমাকে চায় বাংলাদেশ, তোমাকে চায় বাংলাদেশ। তুমি কি শুনতে পাও না সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে সেই আওয়াজ। তুমি আসবে কবে?’
monirlyric@gmail.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ ২৯ অভিযোগ : রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে আমার দেশ সম্পাদকের চিঠি



হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং (মুদ্রা পাচার), বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন ভঙ্গ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্পদের হিসাব গোপন এবং সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের আচরণবিধি ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট ২৯টি অভিযোগ করেছেন দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ও রাষ্ট্রপতির কাছে ইংরেজিতে লেখা ১৬ পৃষ্ঠার অভিযোগ পেশ করেন তিনি। প্রধান বিচারপতির কাছে দেয়া চিঠি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম গতকাল সকাল ১১টায় তার কার্যালয়ে গ্রহণ করেছেন। বেলা ১টায় বঙ্গভবনে পৃথক একটি আবেদন পৌঁছে দেয়া হয়। মাহমুদুর রহমানের পক্ষে অভিযোগপত্রটি নিয়ে বঙ্গভবনে যান আমার দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কাজী ফখরুদ্দিন আহমদ এটি গ্রহণ করেন। রেজিস্টার্ড ডাকযোগেও অভিযোগনামা পৃথকভাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। রেজিস্ট্রারের কাছে সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ৩ সদস্যকে পৃথক ৩টি এবং প্রধান বিচারপতিকে একটি, মোট চারটি অভিযোগপত্র হস্তান্তর করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, দেশে প্রচলিত ২০০৯ ও ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং (মুদ্রা পাচার) আইন, ১৯৪৭ সালের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন ও ১৯৮৪ সালের আয়কর আইন অনুযায়ী বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে লন্ডনের একটি আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী জবাব দেয়ার জন্য সময়ের আবেদন জানিয়েছেন।
মানি লন্ডারিং আইন ভঙ্গের অভিযোগে বলা হয়, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ২০১০-১১ সালের আয়কর হিসাবে দেখিয়েছেন লন্ডনে তার ৩টি বাড়ি রয়েছে। এই বাড়িগুলো কিনেছেন ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে। ৩টি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়ির ঠিকানাও অসম্পূর্ণ বা ভুল দেয়া হয়েছে। আয়কর নথিতে উল্লেখ করা 6 Ruskin Way, London SW17 বাড়িটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। আয়কর নথিতে দেখানো হয়, তিনি ৫০ লাখ টাকায় এলিফ্যান্ট রোডের একটি বাড়ি বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ৪০ লাখ টাকা লন্ডনে ৩টি বাড়ি ক্রয় করতে ব্যয় হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আয়কর নথিতে উল্লেখিত ৩টি বাড়ির বাইরেও লন্ডনে তার অপর একটি বাড়ি রয়েছে। আয়কর নথিতে লন্ডনে ৩ বাড়ি ক্রয়ে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন তার কয়েকগুণ বেশি মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। অতিরিক্ত এই টাকার কোনো হিসাব বা উত্স আয়কর নথিতে দেখানো হয়নি। বাংলাদেশ থেকে টাকা লন্ডনে কী পন্থায় পাঠানো হয়েছে তার কোনো উল্লেখ আয়কর নথিতে নেই। দেশে বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন ও মানিলন্ডারিং (মুদ্রা পাচার) আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের বাইরে এতো বিপুল পরিমাণ টাকা সরাসরি পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। তার হিসাবে উল্লেখ করা ৪০ লাখ টাকা লন্ডনে পাঠিয়ে তিনি বর্তমানে বিদ্যমান মানিলন্ডারিং আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় আইন ভঙ্গ করেছেন।
অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, লন্ডনের ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক লন্ডনের 108 Sheppey Road, Dagenham (RM9 4LB) ঠিকানার বাড়িটি কিনেছেন সেখানকার স্থানীয় মুদ্রা ১ লাখ ৮৬ হাজার পাউন্ডে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর তিনি এই টাকা পরিশোধ করে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করেছেন। এর আগে তিনি ২০০৩ সালের ২ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ না পাওয়া বিচারপতি পদ থেকে বাদ পড়েন।
লন্ডন ভূমি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, 26 The Warrent, London (E12 5HY) ঠিকানার বাড়িটির মালিক হলেন বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী। ২০০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি এই বাড়িটি কিনেছেন। রেজিস্ট্রি দলিলের তথ্য অনুযায়ী, বাড়িটির ক্রয়মূল্য হচ্ছে লন্ডনের স্থানীয় মুদ্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২ কোটি ৪১ লাখ ৮ হাজার টাকা।
অভিযোগে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে 94 East Hill. London (SW18 2HF) বাড়িটির মালিক হলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও নাদিয়া চৌধুরী। গত বছরের (২০১১) সালের ২১ নভেম্বর বাড়িটি তাদের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। এর ক্রয়মূল্য হচ্ছে লন্ডনের স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার পাউন্ড। এ বাড়িটির ক্রয় রেজিস্টারে তাদের ঠিকানা দেখানো হয়েছে 108 Sheppey Road, Dagenham (RM9 4LB). এই সম্পত্তিটি আয়কর নথিতে দেখানো নেই।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তার আয়কর হিসাবে দেখানো 6 Ruskin Way, London SW17 ঠিকানায় আরও একটি সম্পত্তির হিসাব রয়েছে। এ ঠিকানাটি ভুল অথবা অসম্পূর্ণ অথবা তিনি ঠিকানা গোপন করেছেন। লন্ডন ভূমি অফিসের রেকর্ডে এই ঠিকানায় কোনো সম্পত্তি তার নামে নেই।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী 108 Sheppey Road, Dagenham (RM9 4LB) ঠিকানার বাড়িটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে Mortgage express নামের একটি অর্থঋণ কোম্পানিতে ঋণের জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি নিজেকে লন্ডনের একটি কোম্পানিতে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত বলে দাবি করেন। মার্কেটিং ম্যানেজার হিসাবে তিনি বছরে লন্ডনের স্থানীয় মুদ্রায় ৩৪ হাজার ৪৫০ পাউন্ড বেতন পান বলেও উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ঋণের আবেদনে তিনি ২০০৩ সালের ১ জুন তারিখে কোম্পানিটির মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। অথচ তিনি তখন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত একজন বিচারপতি ছিলেন। তিনি হাইকোর্ট বিভাগে ২০০১ সালের ২ জুলাই অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৩ সালের ২ জুলাই পর্যন্ত অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্থায়ী নিয়োগ না হওয়ার তখন তিনি বিচারপতি পদ থেকে বাদ পড়েন।
রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম জুডিশিয়ালের কাছে পেশ করা আবেদনে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের আচরণবিধি অনুযায়ী বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি থাকা অবস্থায় ভিন্ন কোনো চাকরি করতে পারেন না। তিনি বিচারপতি থাকা অবস্থায় লন্ডনে ঋণের আবেদনে নিজেকে সেখানে একটি কোম্পানির মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে দাবি করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
অভিযোগে জানানো হয়, চলতি বছরের (২০১২ সালের) ২৫ জুন জিসান নাসিম নামে এক ব্যক্তি লন্ডনের আদালতে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করেছেন। মামলায় দাবি করা হয়, ওই ব্যক্তির কাছে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী নিজেকে একজন ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজার হিসেবে পরিচয় দেন। ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজার হিসেবে তিনি ওই ব্যক্তিকে লন্ডন ওয়েস্টমিনিস্টার কলেজে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন এবং বলেন, এ কলেজের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। মামলায় দাবি করা হয় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ইমিগ্রেশন অ্যাডভাইজারের পাশাপাশি নিজেকে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের একজন বিচারপতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে তাকে কলেজটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। বিচারপতি মানিকের পরামর্শে সেই কলেজে ভর্তি হয়ে জিসান নাসিম ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ জন্য তিনি লন্ডনের আদালতে প্রতারণা ও স্থানীয় মুদ্রায় ১৫ হাজার পাউন্ড ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন। লন্ডনের The Northhampton County Court-এ করা মামলাটির নম্বর হচ্ছে 2QT70489। মামলার নোটিশ পাওয়ার পর গত ৭ জুলাই বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী আদালতে একটি সময়ের আবেদন জানান। মামলাটির নোটিশের জবাব দিতে সময় আবেদনে তিনি নিজেকে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া ভিত্তিহীন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে দাবি করে বলা হয় জবাবের জন্য পর্যাপ্ত সময়ের দরকার।
রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম জুডিশিয়ালের কাছে পেশ করা আবেদনে আরও জানানো হয়, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিভিন্ন সময়ে লন্ডনে গিয়ে টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন। বর্তমান শাসক দলের পক্ষে ও বিরোধী দলের বিপক্ষে বক্তব্য দেন এসব টকশোতে। কোন কোন তারিখে টকশোগুলোয় তিনি অংশ নিয়েছেন সেই তারিখ উল্লেখ করে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের জন্য সর্বশেষ তৈরি করা আচরণ বিধি অনুযায়ী তিনি টকশোতে অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন না।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুলিশের নির্যাতনে গত বছরের ২৬ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এম ইউ আহমদ নিহত হন। এ ঘটনার পর সেপ্টেম্বরে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী লন্ডনে সেখানকার চ্যানেল আইতে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। চ্যানেলটির লন্ডনের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ আহমদ ফয়সলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এই টকশোতে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন রাজনৈতিক বিতর্কিত বিষয়ে বক্তব্য দেন। পুলিশি নির্যাতনে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এমইউ আহমদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও তিনি বিষদ বক্তব্য রাখেন। তিনি সুস্পষ্ট করে বলেন, এমইউ আহমদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ছিল। পুলিশের নির্যাতনে নয়, তিনি রোগে মারা গেছেন। তদন্তাধীন ও বিচারাধীন কোনো বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতের বিচারপতি এ ধরনের পাবলিকলি বক্তব্য প্রদান করে বিচারপতিদের জন্য তৈরি করা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যালে লালবাতির কারণে আটকে দেয়ায় পুলিশ ও ট্রাফিক সদস্যদের রাস্তায় কান ধরিয়ে ওঠবস করানো, রুল জারি করে আদালতে ডেকে এনে গালাগালি করা, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রুল জারি করে তলব করে তাদের অকথ্য ভাষায় গালি দেয়ার বিষয়টিও আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারপতিদের জন্য তৈরি করা আচরণবিধি অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে অনুরাগ বা বিরাগভাজন হওয়ার সুযোগ নেই। আচরণবিধিতে বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সদাচরণ করার কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর এসব আচরণে বিচারপতিদের জন্য সর্বশেষ প্রণীত আচরণবিধির ১, ২, ৩, ৯ ও ১১ লঙ্ঘিত হয়েছে বলেও দাবি করা হয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে পেশ করা আবেদনে। আবেদনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৬ (৩) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে বিচারপতিদের অসদাচরণের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ও কর্মে প্রবীণ অন্য দুই বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তদন্ত করবে। এছাড়া কাউন্সিল বা অন্য কোনো সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে তদন্তের নির্দেশ দেবেন। কাউন্সিল তদন্ত প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম জুডিশিয়ালের কাছে পেশ করা চিঠিতে তিনি সংবিধানের এ অনুচ্ছেদটি উল্লেখ করে বিচারপতি মানিকের বিরুদ্ধে ২৯টি অভিযোগের বিবরণ পেশ করা হয়।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের উদ্দেশে লেখা অভিযোগসংক্রান্ত চিঠি সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রারের কাছে হস্তান্তরের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য তিনি এ আবেদন করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রতিটি অভিযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য তার কাছে রয়েছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল চাইলে তিনি অভিযোগগুলোর পক্ষে তথ্যগুলো উপস্থাপন করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমাজের সচেতন নাগরিক হিসেবে সংবিধান অনুযায়ী তিনি রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিষয়টি অবহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এর ভিত্তিতেই তত্কালীন সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি সুপ্রিম জুডিশিয়ালের কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত করেছিল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। সুতরাং এ বিষয়ে নজির রয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে যেকোনো নাগরিক অভিযোগ করতে পারেন। এছাড়া তখন সংবাদপত্রে প্রকাশের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে আবেদন করা হয়। তিনি বিচার বিভাগের মর্যাদার স্বার্থে অভিযোগগুলো সংবাদপত্রে প্রকাশ না করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে অবহিত করেন।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের অভিযোগগুলো রেজিস্ট্রারের কাছে হস্তান্তরের সময় সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট তৌফিক হোসেন, অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন মিঠু, অ্যাডভোকেট গোলাম নূর তরুণ, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলসহ অনেক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সংকটে সরকার:সর্বত্র চুলচেড়া বিশ্লেষণ ডাঃ আব্দুল আজিজ


আমাদের দেশের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ইদানিং দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এতটা আলোচনা সমালোচনা কিন্তু সরকারের শুরুতে হয়নি। যেমনটি ইদানিংকালে হচ্ছে। বিশেষ করে চলমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বেফাস বক্তব্যে আম জনতা থেকে শুরু করে কূটনৈতিক, বুদ্ধিজীবি এমনকি সর্বমহলে চুলচেড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ হচ্ছে। তবে সাধারেণ জনগন ভেবেছিল এবার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে। হয়তো দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার আমুল পরিবর্তন হবে। কিন্তু সাধারণ জনগণের আত্নশক্তির আর আত্নবিশ্বাস মহাজোট সরকার ৪ বছরেও পূরণ করতে পারেনি। অথচ আমরা লক্ষ্য করছি সরকার নিজেদের ভাবর্মূতি ধরে রাখার জন্য বরাবরই মিথ্যা আশ্বাস মিথ্যা ছলনা করে জনগনের মতামত ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে আমরা যদি চোখ বোচে তাকাই তাহলে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার ফলাফল বা বাস্তব চিত্র যে কোন দেশের নাগরিককেই বিচলিত করবে। কারণ এম.এল.এম কোম্পানীর নামে দেশে কি ঘটছে? ইউনিপেটু নামে একটি কোম্পানী দেশের জনগনের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্নসাৎ করে দেওলিয়া হয়ে যায় অথচ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও  প্রশাসনে কোন প্রকার জবাব দিহিতা নেই। কিন্তু সরকারের চরম গাফলতির জন্য সাধারণ জনগনের আত্নহত্যার পথ বেচে নিতে হচ্ছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এখন অপ্রত্যাশিত খরব কোন অবস্থাতেই আমরা আশা করতে পারি না। অপর দিকে আমরা যদি এম.এল.এম ব্যবসা ডেসটিনির দিকে চাই তাহলে সরকারের অনেক দূর্বলতার প্রতিচ্ছবি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে। যেমন কি করে ডেসটিটিনির টাকা ব্যাংক থেকে উধাও হয়ে গেল, যদি ওপরে সরকার ডেসটিনির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রচলিত আইনে বিচার করছে। কিন্তু সরকার কি একবার ভেবেছে যে, ডেসটিনির ৭২ লাখ গ্রাহকদের অবস্থা, হলমার্ক জালিয়াতি, শেয়ার বাজার ধ্বংস যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগ, রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ ইত্যাদি নানান অজুহাতে ব্যাপক সমালোচনার মধ্য দিয়ে সরকার পার করল ৪ বছর। জাতীয় নির্বাচনের এখন আর এক বছর বাকী। সাধারণ জনগন ভাবছে সরকার চার বছরেও নির্বাচনী প্রতিশ্র“তির একটি ওয়াদাও পূরণ করতে পারেনি বাকী এক বছরের সরকার নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেবে না উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করবে। এই নিয়ে সর্বস্তরের জনতার মধ্যে শোনা যায় কানাঘোষা। যতদিন যাচ্ছে ততই জাতীয় নির্বাচনী আমেজ জনসমুদ্রে বাড়ছে। আমরা লক্ষ্য করেছি জাতীয় নির্বাচনী কাজ দেশের উত্তর পূর্ব সীমান্ত অঞ্চল ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতিধন্য পূণ্যভূমি সিলেট থেকেই শুরু হয়। ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য দিকে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বেফাস বক্তব্যে কোনঠাসায় পড়ছে সিলেট আওয়ামীলীগ। যদিও তিনি বিগত নির্বাচনে আলোকিত সিলেট গড়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে জনগনের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু পাশ করার আলোকিত সিলেট গড়ার কোন প্রকার নজির তিনি দেখাতে পারছেন বলে মনে হয় না কারণ সিলেটের জনগন ভাবছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী যা কাজ করছেন তা সিলেটের প্রয়াতনেতা এম সাইফুর রহমানের আমলেই বাজেট করা তিনি শুধু মোড়ক উম্মোচন করছেন। বিশেষ করে ইতোমধ্যে সিলেটের একটি আঞ্চলিক দৈনিকের শিরোনামে একটি লিড সংবাদ। সংবাদটি এ রকম ছিল  যে “নতুন মুখের সন্ধানে সিলেট বিএনপি” এইং সংবাদটি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। অপর দিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের নানান বক্তব্যে আওয়ামীলীগ সিলেট-১ আসনে ইমেজ সংকটে পড়ছে। সর্বোপুরী আমরা যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সিলেট-১ আসনের পরিসংখ্যান করি তাহলে স্পষ্ট দেখা যায় ১৮ দলীয় জোট প্রার্থী সাবেক সচিব শমসের মুবিন চৌধুরীর অবস্থান অনেকটা সৃদৃঢ়। এছাড়া সিলেটের জনগন আরও ভাবছে যে যদি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত দল ত্যাগ করেন তাহলে প্রার্থী সংকটে ভোগবেন আওয়ামীলীগ। বিশেষ করে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বেফাস বক্তব্যে দেশ বিদেশে সরকার পড়েছে দারুণ বেকায়দায়। মোটের উপর তত্বাবধায়ক প্রশ্নে সরকার এবং বিরোধী দল যখন হার্ডলাইনে তখন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে ইমেজ সংকটে পড়ছে সরকার। সিলেটের জনগনের মাঝে এখন নানান প্রশ্ন কাজ করছে। সচেতনমহল ভাবছেন আব্দুল মাল আব্দুল মুহিত কি পারবেন সিলেটে-১ আসন ধরে রাখতে।
ডাঃ আব্দুল আজিজ 
২৪/০৯/২০১২
Email- aziz1969@live.co.uk

Ads