মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ফুটানির সফরে প্রধানমন্ত্রীর ফালতু কথাবার্তা



সি রা জু র র হ মা ন
রাত সোয়া একটা পর্যন্ত জেগে টেলিভিশনে দেখছিলাম সে অনুষ্ঠান। তৃতীয়বার অলিম্পিক অনুষ্ঠানের গৌরব ব্রিটেন ছাড়া আর কেউ পায়নি। সারা বিশ্বের এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) মানুষ আমার মতো টেলিভিশনে ৩০তম অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন দেখেছেন। প্রায় একবাক্যে সবাই বলেছেন, অপূর্ব হয়েছিল সে অনুষ্ঠান।
আমার বাড়ি থেকে আনুমানিক ১২ মাইল দূরে হবে অলিম্পিক পার্ক। শত ঝামেলা করে সশরীরে গিয়ে সে অনুষ্ঠান দেখার কথা মনেও হয়নি। অন্য একশ’ কোটির মতো আমিও বাড়িতে বসেই দেখেছি। ২০৪টি দেশ এবারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। অর্ধেকেরও রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। সবচাইতে বেশি সংখ্যক ক্রীড়াবিদ এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সে দেশের প্রেসিডেন্টও আসেননি। তবে তার স্ত্রী এসেছিলেন। যদ্দূর মনে হয়, তিনি খুবই উপভোগ করেছেন এ অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক সঙ্কটে আছে। বাংলাদেশের নাক অবধি ঋণ বিশ্বব্যাংকের কাছে। বিশ্বব্যাংক গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সরকারকে বলেছে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, কাজ বরাদ্দ করা বাবতই একটি কোম্পানির কাছে ১০ শতাংশ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। ব্যাংক বলেছে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, যোগাযোগ সচিব ও প্রকল্প পরিচালক এবং একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ দুর্নীতির জন্য দায়ী। ব্যাংক তখনই এর প্রতিকারের দাবি জানিয়েছিল। তারপর থেকে তাদের অবস্থান ক্রমেই আরও কঠোর হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিখিত সর্বশেষ চিঠিতে বিশ্বব্যাংক চারটি শর্ত তুলে ধরেছে, বলেছে সে শর্তগুলো পূরণ না হলে তারা পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিশ্রুত ১.২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ডলার অর্থায়ন করবে না।
তখন থেকেই সে চিঠি প্রকাশের দাবি দেশজোড়া। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এলেন গোল্ডস্টেইনও বলেছেন, সরকার যদি চিঠির বিবরণ প্রকাশ করে তাহলে ব্যাংকের দিক থেকে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সরকার সে চিঠি প্রকাশ করছে না এবং করবেও না, কেননা চিঠিতে যেসব বিস্তারিত বিবরণ ও প্রমাণ আছে, সেগুলো প্রকাশ করলে শুধু মন্ত্রী কিংবা সচিবই নয়, রুই-কাতলার হাতেও দড়ি পড়বে। বহু ধানাই-পানাই করে সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে ছুটি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মন্ত্রী আবুল হোসেনও পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন কিন্তু তার ক্ষেত্রেও মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অথবা উপমন্ত্রী সোহেল তাজের মতো জাতিকে প্রতারিত করা হবে কিনা কে জানে?
অন্যান্য বহু বিষয়ের মতো এ ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওয়াজেদ গোড়া থেকেই জাতিকে প্রতারিত করার সব রকম চেষ্টা করছেন। একবার তিনি বলছেন দুর্নীতিবাজ হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, তার সরকার নয়। বিভিন্ন সময়ে তিনি ব্যাংককে প্রতারক বলেছেন, বলেছেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীন ব্যাংকের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ায় ইউনূসের হুকুমে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করেছে বিশ্বব্যাংক। সেদিন লন্ডনে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বব্যাংক ‘পার্সেন্টেজ খায়’। হাসিনা ওয়াজেদ বিশ্বাস করতে পারেন না যে বাংলাদেশের শিশুরাও আর তার কথা বিশ্বাস করে না।
আসলে আজ তার লন্ডন সফরের কথাই বলতে চাইছি। হাসিনা ওয়াজেদের অনেকগুলো দুর্বলতার মধ্যে দুটো হচ্ছে ফুটানি-প্রীতি আর বিশ্বভ্রমণের বাসনা। এ দুটি দুর্বলতার একজন ভাগীদার জুটেছেন তার। তিনি হচ্ছেন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। এরা যত বেশি বিদেশ সফর করছেন, বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ততই বেশি মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাংককে ভীতি প্রদর্শন
প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার বিশ্বব্যাংককে ভয় দেখাতে চান। তারা ঘন ঘন হুঙ্কার ছাড়ছেন, নিজেদের সম্পদ থেকেই পদ্মা সেতু তৈরি করা হবে। খুবই ভালো কথা বাপু। সম্পদ যদি থাকে তাহলে পরের দুয়ারে ভিক্ষা করতে যাওয়া কেন? আর ভিক্ষা না পেলে কান্নাকাটি আর গালাগালিরই বা দরকার কী? সম্পদ নেই বলেই প্রধানমন্ত্রী যখন ফুটানি করতে সদলবলে লন্ডনে সফর করছেন, তখন তার অর্থমন্ত্রী জাইকার (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি) প্রেসিডেন্টের কাছে টেলিফোন করছেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে দেন-দরবার করতে তাকে অনুরোধ করছেন। জানা গেছে, সে দূতিয়ালিতে কোনো কাজ হয়নি। বিশ্বব্যাংকের মন গলেনি, তারা জেদ ধরে আছে তাদের সবগুলো শর্ত পূরণ না হলে তারা সেতুর জন্য টাকা দেবে না। বিশ্বব্যাংক না দিলে যে অন্য কোনো সূত্র থেকেও ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেকথাও বিশ্ববাসীর এবং বাংলাদেশের মানুষের জানা হয়ে গেছে।
হাসিনা ওয়াজেদ লন্ডনে সবচাইতে ব্যয়বহুল একটা হোটেলে উঠেছেন এবং সবাই জানেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিংবা সৌদি বাদশার মতো বিরাট দলবল নিয়ে সফর করতে ভালোবাসেন। বাংলাদেশের মিডিয়ায় (তার সফরসঙ্গী কর্মচারীদের পাঠানো) ‘খবর’ অবিরাম প্রচারিত হচ্ছে। ‘প্রবাসীদের’ জন্য প্রধানমন্ত্রীর অমর বাণীগুলো পাহাড়ি নদীর মতোই বেগময়ী স্রোতে প্রবাহিত হচ্ছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের একটা প্রধান ‘রণক্ষেত্র’ ছিল যুক্তরাজ্য। এদেশে কেউ কেউ এখনও ভুল ধারণায় ভুগছেন যে, আজকের আওয়ামী লীগ আর একাত্তরের আওয়ামী লীগ একই প্রতিষ্ঠান। অর্থাত্ এখনও কিছু প্রবাসী বাংলাদেশী ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে অথবা সঠিক তথ্যাদির অভাবে আওয়ামী লীগ ও হাসিনা ওয়াজেদের সমর্থক। কিন্তু শুধু তারাই ‘প্রবাসী বাংলাদেশী’ নন। যুক্তরাজ্যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে বর্তমান সরকারের বিরোধী ও সমালোচকরা সংখ্যায় অনেক বেশি। এসব দেশে আজকাল তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতিতে নির্বাচন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, ইলিয়াস আলীকে গুম করা ইত্যাদি বহু ইস্যুতে প্রায়ই যেসব সভা-সমাবেশ ও মিছিল হচ্ছে, সেগুলো অবশ্যই সরকারের সমর্থনহীনতার প্রমাণ। বর্তমান সফরে লন্ডনেও হাসিনার বিরুদ্ধে জনরোষ উথলে উঠেছে। এমনকি প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভ এড়াতে পেছনের দরজা দিয়ে তাকে হোটেলে ঢুকতে হয়েছে।
দেখা যাক কী ‘অমর বাণী’ তিনি শোনাচ্ছেন তার ক্ষীয়মান সমর্থকদের! আগেই বলেছি, আবারও তিনি বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রচুর বিষোদ্গার করেছেন, বলেছেন বিশ্বব্যাংক ‘পার্সেন্টেজ খায়’। মাথায় যাদের এতটুকু ঘিলু আছে তাদের আর বুঝতে বাকি নেই যে ধরা পড়ে গেলে চোর যেমন অন্যদের দিকে আঙুল তুলে ‘চোর চোর’ বলে চিত্কার শুরু করে দেয়, বর্তমান সরকার আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীরও হয়েছে সেই দশা। নইলে তারা কেন বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ও প্রমাণাদি সংবলিত চিঠিটি দেশের মানুষের অবগতির জন্য প্রকাশ করছেন না? বাংলাদেশের মানুষকে তিনি এবং তারা কি এতই বোকা ভাবেন যে, সবকিছু দিবালোকে প্রকাশ পেলে কে চোর আর কে দোষী বিচার করার ক্ষমতা তাদের নেই?
সেতু তৈরি কোন সম্পদ থেকে?
হাসিনা ওয়াজেদ লন্ডনেও অবশিষ্ট সমর্থকদের বলে যাচ্ছেন যে বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ থেকে তিনি পদ্মা সেতু তৈরি করবেন। বর্তমান সময়ে দেশের সম্পদ থেকে এ সেতু তৈরি যে কেন সম্ভব নয়, বিশেষজ্ঞ এবং চিন্তানায়করা সেটা বার বার বলে যাচ্ছেন। অনেকগুলো অবাস্তব প্রস্তাবের একটি হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রী-দফতরের বাজেটের টাকা নিয়ে সেতু তৈরি করা। এমনিতেই অর্থাভাবে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের অবস্থা ঝড়ের কাকের মতো। এমনকি সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্ম চলছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত অর্থ ঋণ নিয়ে। তার ওপর দফতরগুলোর বাজেট ছিনতাই করা হলে তাদের কাজকর্ম অচল হয়ে যাবে না কি?
এটাও জানা কথা যে বহু দফতরের কাজকর্ম এবং প্রকল্পগুলো চলছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর ঋণের অর্থে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধের সুসমাধান না হলে তারাও ঋণদান বন্ধ ও স্থগিত করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। এমনকি সরকারের নৈমিত্তিক ব্যয় নির্বাহের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের স্বীকৃত ঋণের চলতি বছরের কিস্তি নিয়েও নাকি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নিজস্ব সম্পদ থেকে অত বড় প্রকল্প কার্যকর করার কথা শুধু উন্মাদেই ভাবতে পারে। একচক্ষু হরিণের মতো শুধু সেতু তৈরির দিকে সব সম্পদ ঠেলে দিলে অন্য বহু দিক যে তলিয়ে যেতে পারে, সেকথা সরকার একবারও ভেবে দেখছে না। প্রস্তাবিত সেতু তৈরির যন্ত্রপাতি, উপকরণ ইত্যাদি বাবত যে বিরাট অংকের বিদেশি মুদ্রার প্রয়াজন হবে, সেটা কী করে দেশীয় সম্পদ থেকে পাওয়া যাবে সেকথা সরকার বলছে না।
বিগত সাড়ে তিন বছরে দুর্নীতির ‘ওজিএল’ (ওপেন জেনারেল লাইসেন্স) দিয়ে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগ গুণ্ডা-পাণ্ডাদের চাঁদাবাজিতে সব মানুষ অতিষ্ঠ, সর্বহারা হয়ে গেছে বহু মানুষ। এখন আবার পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদা তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে চাঁদাবাজিকে বৈধ করে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হলো। চাঁদার টাকার কতটা সেতু তৈরির অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে, সে সম্পকূে সবারই সন্দেহ আছে।
আবারও প্রবাসী শোষণ?
প্রবাসীরা বিদেশ-বিভূঁইয়ে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে অর্জিত অর্থের একটা বড় অংশ দেশে পাঠান। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তারা যদি আরও বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠান তাহলে তিনি পদ্মার ওপর সেতু তৈরি করে দেবেন এবং সেজন্য চাঁদা তুলতে হবে না। আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে হলে প্রবাসীদের অনেককে না খেয়ে থাকতে হবে। তারা কি তখন জানতে চাইবেন না যে বিগত সাড়ে তিন বছরে যে রেমিট্যান্স তারা পাঠিয়েছেন সেটা কীভাবে ব্যয় করা হয়েছে? তারা কি জবাবদিহি চাইবেন না যে তাদের রেমিট্যান্সের কত অংশ প্রধানমন্ত্রী এবং তার আত্মীয়-স্বজন ও চেলাচামুণ্ডাদের বিলাসবহুল বিদেশ সফরে ব্যয় করা হয়েছে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির অনর্থক বিদেশ সফরেই বা কী পরিমাণ অর্থ ব্যয়িত হয়েছে? দেশের মানুষকে এবং প্রবাসী কর্মীদের যথাসর্বস্ব দান করার আগে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে বিলাস এবং বাহুল্য ব্যয় বর্জন করতে হবে।
অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবনে বসেও দেখতে পারতেন। সেজন্য তার এই ব্যয়বহুল সফরের এতটুকু প্রয়োজন ছিল না। এটা নিতান্তই অবান্তর ফুটানির সফর ছিল। বিগত সাড়ে তিন বছরে ফুটানি বাবত যে বিদেশি মুদ্রা ব্যয়িত হয়েছে, সেটা পদ্মা সেতু নির্মাণের বিদেশি মুদ্রা চাহিদার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মেটাতে পারত।
আমাদের ধর্ম কাহিনীতে আছে, এক ব্যক্তি ছেলেকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ্র (সা.) কাছে এসেছিলেন। ছেলেটি মিষ্টি খেতে ভালোবাসে, কিন্তু রোজ রোজ মিষ্টি কেনার সামর্থ্য পিতার ছিল না। রাসুলুল্লাহ্ (সা.) আবার ছেলেকে নিয়ে আসার জন্য একাদিক্রমে দুটি তারিখ দিয়েছিলেন লোকটাকে। তারপর ছেলেটিকে পিতার সামর্থ্যের অভাবের কথা বুঝিয়ে বলে মিষ্টির জন্য জেদ না করার পরামর্শ দেন। মহানবী তখন লোকটাকে বলেছিলেন, তিনি নিজেও মিষ্টি খুবই পছন্দ করতেন, নিজের বাসনাকে সংযত না করে ছেলেটিকে উপদেশ দিলে কোনো কাজ হবে না জেনেই তিনি লোকটাকে একাধিকবার আসতে বলেছিলেন। শেখ হাসিনা নিয়মিত নামাজ পড়েন বলে তার কোনো কোনো অনুসারী দাবি করে থাকেন। তারা তাদের নেত্রীকে মহানবীর দৃষ্টান্ত অনুকরণের পরামর্শ দিলে ভালো করবেন।
ব্রিটিশ রাজনীতিকরা পীরের মুরিদ নন
প্রধানমন্ত্রীর সহযাত্রী কর্মচারীদের পাঠানো খবরাদিতে শুধুই দেখা যায় হাসিনা ওয়াজেদ ব্রিটিশ রাজনীতিকদের কী কী বলেছিলেন। মনে হতে পারে যে পীরের দরগায় এসে মুরিদরা সদুপদেশ শুনে সন্তুষ্ট হৃদয়ে ঘরে ফিরে গেছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সর্বদলীয় কয়েকজন সদস্যকে এবং বিরোধী লেবার পার্টির নেতা এড মিলিব্যান্ডকে তিনি নাকি হিসেব দিয়েছেন যে তার বর্তমান সরকারের সাড়ে তিন বছরে ৫২০০ বিভিন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে নির্বাহ হয়েছে। অর্থাত্ তিনি তাদের বিশ্বাস করাতে চেয়েছেন যে তার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন হলে সে নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে।
ব্রিটিশ রাজনীতিকরা কি পাল্টা কিছুই বলেননি হাসিনা ওয়াজেদকে? তারা কি একথা তাকে বলেননি যে, সেসব নির্বাচনে হাসিনার গদি চলে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা ছিল না? তারা কি বলেননি যে, হাসিনা যে তার পিতার মতো বাকশালী কায়দায় চিরস্থায়ীভাবে গদি আঁকড়ে থাকতে চান সেটা তারা জানেন? তারা কি হাসিনা ওয়াজেদকে স্মরণ করিয়ে দেননি যে, বাংলাদেশে এখন প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলারক্ষী বাহিনীগুলো, এমনকি বিচার ব্যবস্থাও এমন সম্পূর্ণভাবে দলীয়কৃত হয়েছে যে এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই?
বর্তমান ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে বাকি বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কেও ব্রিটিশ রাজনীতিকরা খুবই অবগত আছেন। তাছাড়া বিরাট বাংলাদেশী সমাজের সঙ্গে ভোটের জন্য এবং জনসংযোগের জন্য তাদের যোগাযোগ নিয়মিত। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ব্রিটিশ ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সমীক্ষাগুলো তারা নিয়মিত পড়েন। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূতভাবে কয়েকশ’ মানুষের হত্যা, শ’দুয়েক মানুষের গুম হয়ে যাওয়ার পেছনে র্যাব ও পুলিশের ভূমিকা ইত্যাদি মোটেই তাদের অজানা নয়। পার্লামেন্টের সর্বদলীয় গ্রুপ সম্মিলিত এবং পৃথকভাবে ইলিয়াস আলীর মুক্তির দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা যে সে প্রসঙ্গ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করেননি, বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের পাঠানো খবরাদিতে তার কোনো উল্লেখ আছে কি?
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিশেষজ্ঞ ও চিন্তানায়করা মিডিয়ায় বহু মন্তব্য করেছেন, বহু কলাম লিখেছেন। এমনকি শহীদ মিনারে সভাও করেছেন তারা। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী আবুল হোসেনকে এমন একটি দফতরে বদলি করেছিলেন যেখানে দুর্নীতির ক্ষেত্র ও সুযোগ নাকি আরও প্রশস্ত। আবুল হোসেন এখন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী এখনও সে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি। কিন্তু লন্ডনে তিনি বলেছেন, আবুল হোসেন দেশপ্রেমের কারণেই পদত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এখন শাসক মহলে দেশপ্রেমের তীব্র অভাব বোধ করছে। এ সময়ে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী তার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিতে পারেন। (লন্ডন, ২৯.০৭.১২)
serajurrahman34@gmail.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মন্তব্য প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন বার্তা


মাহমুদুর রহমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৫ জন সঙ্গী-সাথীর বিরাট বহর নিয়ে লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করে দু’দিন আগে দেশে ফিরেছেন। এবারের অলিম্পিকে মাঠে বাংলাদেশের প্রতিযোগীর সংখ্যা সাকুল্যে ৫ জন। তাদের দেখভাল করার জন্য ২২ জন কর্মকর্তার এক বিশাল বহর লন্ডনে গেছে! আর খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের উত্সাহ দিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য ঘুরে এলেন ৫৫ জন সঙ্গী নিয়ে। আমার ধারণা, এমন কাণ্ড কেবল বাংলাদেশেই ঘটতে পারে। পুত্রসহ বিদেশে বসবাসকারী পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে লন্ডনে দেখা হওয়ায় ধারণা করছি, প্রধানমন্ত্রীর ৫ দিনের অবকাশ যাপন আনন্দেই কেটেছে। বিশেষ করে পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন পালনের সুযোগ নিশ্চয়ই মা হিসেবে শেখ হাসিনার জন্য বাড়তি পাওয়া ছিল।
তবে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার একটি নালিশ আছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থ জোগানের জন্য যেখানে শিশুদের পর্যন্ত টিফিনের পয়সা বাঁচাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, সে অবস্থায় জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর অলিম্পিক দেখার বিলাস ত্যাগ করাটা শোভনীয় ছিল। যাই হোক, আনন্দ ভ্রমণ শেষে প্রধানমন্ত্রী এখন আবার পূর্ণোদ্যমে দেশের উন্নয়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন। শেখ হাসিনার এই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রিত্বের আর খুব একটা সময় অবশিষ্ট নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণতা, গুম, ক্রসফায়ারসহ নানাবিধ মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগসহ সর্বত্র নির্বিচার দলীয়করণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ এবং সর্বোপরি বল্গাহীন দুর্নীতির জন্য মহাজোট সরকারের বর্তমান শাসনামল দেশে ও বিদেশে একবাক্যে নিন্দিত হয়েছে। দেখা যাক বাকি সোয়া বছরে সরকার তার ক্ষয়প্রাপ্ত বিকট ভাবমূর্তির খানিকটা অন্তত মেরামত, চুনকাম, ইত্যাদি করতে পারে কি না। যাকগে, এবারের লন্ডন সফরে মিডিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন, তারই কয়েকটি নিয়ে এ সপ্তাহের মন্তব্য-প্রতিবেদন লিখতে বসেছি।
পদ্মা সেতু : বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিচালনা বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কৌশল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দৃশ্যত বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন। ২৫ জুলাই পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সম্ভাবনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী এক সরকারি তথ্য বিবরণী প্রকাশ করেন। সেই আনুষ্ঠানিক দলিলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি না করার প্রতিশ্রুতি দানপূর্বক বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বশংবদ আমলা, কথিত স্বাধীন দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানও তার আগের অবস্থান থেকে ইউটার্ন দিয়ে ‘কাকতালীয়ভাবে’ একই দিনে সংবাদমাধ্যমকে জানান যে, তিনিও এখন বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির যৌথ তদন্তে সম্মত আছেন। এই গোলাম রহমান জুলাই মাসের ১ তারিখে সরকারের প্রায় প্যারালাল (ঢ়ধত্ধষষবষ) অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকা পালনকারী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে পাশে বসিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেদিন দু’জনই আইনের নানারকম ভাষা প্রয়োগে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি তদন্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের বক্তব্য ছিল, ‘কিন্তু, বিশ্বব্যাংক এক্সটার্নাল প্যানেল অব ইনভেস্টিগেটিভ এক্সপার্ট নিয়ে এলো। আমরা বললাম, আমাদের আইনে এটা হয় না। আমরা বিশ্বব্যাংককে তথ্য দিতে পারি। কারণ তারা আমাদের কাছে নালিশ করেছে। আমাদের আইনে আছে যে, আমাদের যে তদন্ত সেটা আমরা জানাতে বাধ্য। কিন্তু অ্যাডভাইজারি কমিটিতে নয়।’ কী আশ্চর্য, মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের চাপের কাছে দুদককে নতিস্বীকার করতে আইন আর বাধা হয়ে দাঁড়াল না!
ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পত্র-পত্রিকায় খবর বের হলো যে, ওই দিনেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আরজি জানিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে। আমরা ভাবলাম বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বোধহয় তলে তলে একটা রফা হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিদেশ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল সরকার হয়তো বিশ্বব্যাংকের যাবতীয় শর্ত পূরণে রাজি হয়েছে। অদ্ভুত বাংলায় কাব্য করে কথা বলায় খ্যাত বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আবেগের ঠেলায় মন্তব্য করলেন, পদ্মা সেতুতে বসে পূর্ণিমার চাঁদ দেখার দিন খুব দূরে নয়। দেশবাসী আর এক জ্যোত্স্নাপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদকে আবিষ্কার করে ধন্য হলেন। কিন্তু, দেশবাসীকে চমকে দিয়ে অর্থমন্ত্রীর নতুন উদ্যোগ এবং ওবায়দুল কাদেরের কাব্যিক আবেগে বরফ ঠাণ্ডা পানি ঢেলে দিতে ২৪ ঘণ্টাও সময় নিলেন না স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৫ জুলাই সকালেই লট-বহর নিয়ে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে উড়ে গিয়েছিলেন। বিকেলে লন্ডন পৌঁছে সন্ধ্যাতেই সেখানে বাংলা ভাষাভাষী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বোমা ফাটানো বক্তব্য রাখেন। দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে সদ্য পদত্যাগী, দেশে-বিদেশে মহা-বিতর্কিত মন্ত্রী আবুল হোসেনকে তিনি একেবারে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের সার্টিফিকেট দেন। এ রকম একজন সাহসী ও প্রকৃত দেশপ্রেমিককে কেন মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হলো, সে বিষয়ে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী কোনো মন্তব্য করেননি। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কাজ দেয়ার তদবির করার অভিযোগ আনেন এবং পার্সেন্টেজ খাওয়ার দাবি করেন। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের কোন কর্মকর্তা পার্সেন্টেজ খেতে চেয়েছিলেন, সে বিষয়টি শেখ হাসিনা আর খোলাসা করেননি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়ার জন্য লজ্জা-শরম শিকেয় তুলে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বিষোদগার বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার তীব্র মতবিরোধের চিত্রকেই বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে।
প্রধানমন্ত্রীর দেশবাসীকে চমকে দেয়া এই কার্যকলাপে অনুমিত হচ্ছে যে, তিনি আর পদ্মা সেতু প্রকল্পে উত্সাহী নন। নইলে অর্থমন্ত্রীর সর্বশেষ উদ্যোগকে এভাবে ভেস্তে দিতে পারতেন না। প্রশ্ন হলো, দরিদ্র দেশের একজন প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নবিরোধী এমন হঠকারী ভূমিকায় কেন অবতীর্ণ হয়েছেন? নিন্দুকরা বলছে যে, তিনি কিছুতেই বিশ্বব্যাংকের যৌথ তত্ত্বাবধানে পদ্মা সেতু দুর্নীতির তদন্ত মেনে নিতে পারছেন না। এখানে উল্লেখ্য, নিক্সন চৌধুরী নামের যে ব্যক্তিকে দুদক ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে শোনা যায়, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে। বিশ্বব্যাংক তদন্ত করলে এই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে যে, নিক্সন চৌধুরী কি ঘুষের অর্থ নিজে নিচ্ছিলেন নাকি তিনি সরকারের আরও শীর্ষ পর্যায়ের কারও এজেন্ট হিসেবে কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের সঙ্গে লেনদেন করেছেন? স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁসের এমন ভয়ঙ্কর ঝুঁকি নেয়া সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভব নয়।
ঘটনার এই নাটকীয়তার প্রেক্ষাপটে যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর মধ্যে অন্তত একজন অথবা উভয়কে গত সাত দিনে পদত্যাগ করতে হতো। কিন্তু, বাংলাদেশ বলে কথা! প্রধানমন্ত্রীর উষ্মা আমলে নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত পরদিন রাগত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানালেন, ইআরডি থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে কোনো পত্র নাকি প্রেরণ করা হয়নি। এসব আজগুবি সংবাদ প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের ওপর খানিকটা রাগও ঝাড়লেন বিব্রত অর্থমন্ত্রী। সুতরাং, পদ্মা সেতু আপাতত সেই তিমিরেই। সেতুতে বসে দোল খেতে খেতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে আরও কতদিন বাকি, সেটা যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই ভালো বলতে পারবেন। এদিকে অবশ্য দুর্নীতির আর এক বরপুত্র, কালো বিড়ালখ্যাত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সব ভুল বোঝাবুঝির অবসানের দাবি করেছেন। হতে পারে তারা হয়তো এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর চাইতেও বেশি ওয়াকিবহাল। হীরক রাজার দেশে আমজনতার গালে হাত দিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় কী?
ইলিয়াস আলী গুম : বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হয়ে যাওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতন। বিএনপি আমলে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী নেতা জামালউদ্দিনের গুম প্রসঙ্গ টেনে তিনি ইলিয়াসের গুমের ঘটনাকে প্রকারান্তরে সমর্থন করে দাবি করেন, বিএনপি গুম চালু করে দিয়ে গেছে, এখন রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই ভেবে অবাক লাগে যে, একই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও শিশুকন্যা সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি শিশুটিকে আদর করে তার পিতাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন তো শেখ হাসিনা যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতনের তত্ত্ব হাজির করেননি। নাকি ইলিয়াসের কন্যার সঙ্গে তার আচরণ কেবল রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ ছিল? আসল মানুষটিকে লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেই শুধু দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে আরও একটি প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। যেদিন ইলিয়াসের পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিল সেদিন কি তিনি নিখোঁজ বিএনপি নেতার পরিণতি সম্পর্কে অবহিত ছিলেন? তিনি কি জানতেন যে ইলিয়াস আলীর পতন হয়ে গেছে? পতনের নির্দেশটিও কি তারই ছিল? যাই হোক, ইলিয়াস আলীর প্রতি না হয় ধরেই নিলাম রাজনৈতিক কারণে তার ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে। সুতরাং ইলিয়াস আলীর গুম হয়ে যাওয়ায় তিনি কিছুমাত্র ব্যথিত নন এবং তাকে খুঁজে বের করার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনো দায়িত্ববোধ তাকে পীড়িত করে না। ঢাকা মহানগরীর বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের গুম হওয়ার ক্ষেত্রেও সরকারের দায়দায়িত্বের ব্যাপারটি হয়তো তিনি স্বীকার করতে চাইবেন না। কিন্তু, ইলিয়াস আলী এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের গাড়ির দরিদ্র চালকদ্বয় অথবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই মেধাবী ছাত্রের সঙ্গে তো ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির’ কন্যা, দেশরত্ন ও জননেত্রী উপাধিতে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকার কথা নয়। তাহলে তার আমলে এদেরকে কেন গুম হতে হলো? সরকারের বিশেষ বাহিনীর এই চরম নিন্দনীয় দুষ্কর্মকেও কি প্রধানমন্ত্রী ন্যায্য বলে মনে করেন? তিনি দাবি করছেন রাতারাতি নাকি অবস্থার উন্নতি সাধন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর রাতারাতি কত বছরে হয়, সেটা আমার জানা নেই। তবে তার সরকারের প্রায় চার বছর যে পার হয়ে গেছে, সে কথাটি স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে। আমাদের সরকারপ্রধানরা তাদের আমলের সব ব্যর্থতার জন্য পূর্ববর্তী সরকারকে দোষারোপ করার মন্দ অভ্যাস পরিত্যাগ করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। এ দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে আত্মসমালোচনার অভাব দেশকে ক্রমাগত পিছিয়ে দিচ্ছে বলেই আমার ধারণা। আমাদের কোনো ভুল হতে পারে না, এজাতীয় বিকৃত দর্শন থেকে তারা মুক্ত হতে না পারলে দেশের মুক্তিও সুদূর পরাহত। রাজনীতিকরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্লেষণের অভ্যাস করতে পারলে জনগণের অনেক মুশকিল আসান হয়ে যেত।
আগামী নির্বাচন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসীন থেকেই যে দেশে আগামী সাধারণ নির্বাচন করিয়ে ফেলতে চান, এ বিষয়টি বিএনপির কয়েকজন অতি আশাবাদী নেতা ব্যতীত দেশের সবাই বোঝেন। সম্প্রতি তিনি বলতে শুরু করেছেন যে, অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশেও তাই হবে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে তিনি সম্ভবত ভারত, যুক্তরাজ্য ইত্যাদিকে বুঝিয়েছেন। প্রথম কথা হলো ওইসব রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেভাবে বিকাশ লাভ করেছে তার শতকরা এক ভাগও বাংলাদেশে আমরা করতে পারিনি। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মতো যে কোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার অসুস্থ মানসিকতা প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনীতিকদের নেই। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, গণবিরোধী পঞ্চদশ সংশোধনীর পর বাংলাদেশে কোনো প্রকার গণতান্ত্রিক নির্বাচন করাই সম্ভব নয়। সংবিধানের বর্তমান অবস্থায় এদেশে নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন অনুষ্ঠিত হতে পারে মাত্র, যার মধ্য দিয়ে মহাজোট সরকার আরও ৫ বছর তাদের অপশাসন অব্যাহত রাখার বৈধতা পাবে।
যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাম শুনলেই ক্ষমতাসীনরা অনেকটা জলাতঙ্ক রোগীর মতো আচরণ করে থাকেন, তারই কাছাকাছি একটি পদ্ধতি পাকিস্তানের মতো সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রও সম্প্রতি গ্রহণ করেছে। আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী এবং সেক্যুলার সুশীলদের(?) মধ্যে পাকিস্তান নামটিতে এক প্রকার এলার্জি থাকলেও সাম্প্রতিককালে ওই দেশটিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার অন্তত একটা প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার বিপরীতে এক-এগারো পরবর্তী বাংলাদেশে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংস করা হয়েছে। নির্লজ্জ দলীয়করণের বিষময় প্রতিক্রিয়ায় আমার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বুয়েটের অবস্থা দেশবাসী দেখতে পাচ্ছেন। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে সুপরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী এবং দলবাজ উপাচার্য এই ত্রয়ী মিলে কেমন করে ধ্বংস করছেন, এ নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা হতে পারে। যাই হোক, নির্বাচন প্রসঙ্গে ফিরে আসি।
লন্ডন সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের বিষয়ে তার পুরনো কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এই অবস্থান থেকে তিনি এক চুলও সরেননি। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ কী হতে চলেছে, সেটি নির্ভর করবে বিরোধী দলের আগামী আন্দোলনের সফলতা অথবা ব্যর্থতার ওপর। সরকারের হাতে এখন অনেকগুলো বিকল্প রয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, স্পিকার আবদুল হামিদ এবং সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের মধ্যে যে কোনো একজনকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব বিরোধী দলের দিকে ঠেলে দিতে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর কোনো বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করায় বাধা রয়েছে। তবে বাকি তিনজনের ক্ষেত্রে সেই সমস্যা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যারই কিছুমাত্র ধারণা রয়েছে, তিনিই বুঝবেন চারটি বিকল্পেরই মূল কথা কিন্তু অভিন্ন। অর্থাত্ যে কোনো বিকল্পেই নির্বাচনের সময়ে প্রকৃত ক্ষমতা থাকছে আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনার হাতেই। বিএনপি একটি বিকল্পেও সম্মতি না জানালে তখন তাদের বিরুদ্ধে একগুঁয়েমির অভিযোগ তোলা অত্যন্ত সহজ হবে। সেক্ষেত্রে তাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রেখে লে. জে. এরশাদকে দিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দল সৃষ্টি করারও একটা সুযোগ শেখ হাসিনা গ্রহণ করতে পারেন। পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো যে সেই অপচেষ্টায় ২০০৭ সালের মতো শক্তভাবে বাধা দেবে, সেরকম আলামত এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
আগামী বছর মার্চে একটি আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনার কথাও বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে একটি ক্ষুদ্রকায় স্বল্পকালীন মন্ত্রিসভার অধীনে নির্বাচন হওয়াও অসম্ভব নয়। সরকারি দলের এতগুলো বিকল্পের বিপরীতে বিরোধী দলের করণীয় আমি অন্তত মাত্র একটিই দেখতে পাচ্ছি। গত পৌনে চার বছরে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। যেসব বেশুমার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহাজোট জনগণের কাছ থেকে ভোট নিয়েছিল, সেগুলোর কোনোটি বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা স্বল্পবিত্ত শ্রেণীর জীবনধারণ প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। একটিমাত্র ডিমের দাম ১০ টাকা, এক হালি কলার দাম ৫০ টাকা, এই দ্রব্যমূল্যের চাপ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আকাশছোঁয়া দামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি। সুতরাং, জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন সফল করা ভিন্ন বিরোধী দলের হাতে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। ২০১৩ সালের অন্তিম লগ্নে সময়-সুযোগমত আন্দোলনের আশায় বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বসে থাকলে তাদের হয়তো কষ্ট করে আর কোনো আন্দোলন করার প্রয়োজনই পড়বে না। লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীর বার্তার অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হলে দলটির সাময়িক অবকাশ তখন চিরস্থায়ী অবকাশে রূপ নিতে পারে।
পাদটীকা : লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে নৈশভোজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গানের মধ্য দিয়ে একটি বিশেষ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। খানিকটা আদিরসাত্মক গানটি হলো, কৃষ্ণ আইলা রাধার কুঞ্জে শ্যামে পাইলো ভ্রমরা, ময়ূর বেশেতে সাজন রাধিকা। প্রধানমন্ত্রী যখন গানটি গাওয়া শুরু করেন তখন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারাও নাকি কণ্ঠ মিলিয়েছেন। রাধা-কৃষ্ণের উদ্দাম ও অবৈধ প্রেম সম্পর্কিত গান একজন প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে গাইতে পারেন কি না, সেই প্রশ্ন শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে তুলে লাভ নেই। তার রুচিবোধ যে ভিন্ন প্রকৃতির, সে প্রমাণ তিনি সংসদে বহুবার রেখেছেন। একমাত্র আমার দেশ ব্যতীত বাংলাদেশের মিডিয়া প্রধানমন্ত্রীর গান গাওয়ার সংবাদটি সেলফ সেন্সর করেছে। বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত মিতভাষী একজন রাজনীতিবিদ। তার সঙ্গে দীর্ঘ পাঁচ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, এমন কাণ্ড তার পক্ষে ঘটানো কিছুতেই সম্ভব নয়। তবু, তিনি যদি এরকম কোনো আচরণ করেই ফেলতেন তাহলে বাংলাদেশের কতগুলো পত্রিকায় সেই সংবাদ শিরোনাম হতো, সেটাই ভাবছি। আমার দেশ পত্রিকা এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর প্রধানমন্ত্রী কি সাধ করে রুষ্ট হন?
ই মেইল : admahmudrahman@gmail.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ফখরুলসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন : বিদেশে অবস্থানরত খোকা আমান ও আলমের নামে ওয়ারেন্ট


প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে নিজ হাতে গাড়ি পোড়ানোর কথিত অভিযোগ এনে সরকারের দায়ের করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৬ জন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। এ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গতকাল মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। একই সঙ্গে আদালত আগামী ৭ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু করার আদেশ দিয়েছে।
অপর এক আদেশে আদালত বিদেশে চিকিত্সাধীন সাদেক হোসেন খোকা ও পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থানরত অপর দুই নেতার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তারা তিনজনই হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে চিকিত্সা ও ওমরা পালনের জন্য বিদেশে গেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠন বিষয়ে কয়েক দিন সময় চেয়ে আদালতে বলেন, এটি আজগুবি অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা একটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা। আমরা এ মামলার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছি। বর্তমানে হাইকোর্টে এ রিট বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের এখতিয়ার এ আদালতের নেই। অপরদিকে সরকারপক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সামনে গাড়িতে আগুন নিয়ে গুরুতর অপরাধ করেছেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এ মামলার বিচার কাজ বিলম্বিত করার সুযোগ নেই। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য ও যুক্তি নাকচ করে ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-৫ এর বিচারক হারুন-অর-রশিদ গতকাল ওই আদেশ দেন। আদালতের এ আদেশের পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, সরকার মুলত আদালতকে ব্যবহার করে একটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানির কৌশল নিয়েছে। আদালত কোনো তথ্য ও যুক্তিও গ্রহণ করতে চায় না।
আদালত অভিযোগ গঠনকালে মামলার আসামি সাদেক হোসেন খোকা, আমানউল্লাহ আমান ও নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে সাদেক হোসেন খোকার আইনজীবী হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে চিকিত্সার জন্যে বিদেশে গেছেন। অপর ২ জন ওমরাহ পালন করতে গেছেন। তাদের পক্ষে আদালতে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সরকারি বাহিনীর হাতে গুম হওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে ফেরত দেয়ার দাবিতে বিএনপির ডাকে হরতালের সময় গত ২৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি মিনিবাস আগুনে পুড়ে যায়। এ ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহামসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী দলের ৪৬ নেতাকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে সরকার। এ মামলায় সরকার বিরোধী নেতাদের জামিন ঠেকাতেও নানা কৌশল গ্রহণ করে। নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুর হলে তাদের সবাইকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে উচ্চ আদালতের আদেশে তারা জামিনে মুক্ত হন।
গতকাল এ মামলায় তাদের অভিযোগ গঠনের তারিখ ছিল। ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত ৬-এর বিচারক মোহাম্মদ এরফান উল্লাহর আদালতে শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই আসামিপক্ষের আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ মামলার বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় এই আদালতের শুনানির এখতিয়ার নেই। তিনি বিভিন্ন যুক্তি পেশ করে বলেন, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এ আদালতে মামলার শুনানি মুলতবি করা হোক। আদালত তার যুক্তি নাকচ করে দিয়ে শুনানি শুরু করতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এ আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। সকালে বিচারকের প্রতি আসামিপক্ষ অনাস্থা প্রকাশ করায় মামলার নথি সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়। সিএমএম আদালত পরে দ্রুত বিচার আদালত ৫-এর বিচারক হারুন-অর-রশিদের আদালতে মামলা স্থানান্তর করে দেয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ শুনানি শুরু করে ওই আদালত।
শুনানির শুরুতেই অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা এ মামলা ও এই আদালতের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছি। এটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চার্জ শুনানি মুলতবি রাখা হোক। মামলার বিভিন্ন অসঙ্গতি উল্লেখ করে আসামিপক্ষের অপর আইনজীবীরা আদালতে বলেন, মামলাটি একটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও হাস্যকর মামলা। তারা মামলার এজাহার ও চার্জশিটের বিবরণ উল্লেখ করে বলেন, এতে বলা হয়েছে, মির্জা ফখরুল ইসলামসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৬ জন নেতা ৬-৭টি মাইক্রোবাসে করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে চলন্ত বাসটি থামিয়ে যাত্রীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে তাতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। পুলিশ তাদের ধরতে গেলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যান। আইনজীবীরা বলেন, মামলার অভিযোগগুলো হচ্ছে আষাঢ়ে গল্প। দেশের কোনো পাগলও বিশ্বাস করবে না যে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতো একটি সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত এলাকায় সেনাবাহিনী ও এসএসএফ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শত শত সদস্যের উপস্থিতিতে বিএনপি নেতারা একযোগে গিয়ে বাসে আগুন দিয়েছেন। তারা বলেন, হরতালে বিএনপির তিনজন নেতাকেও পুলিশ একসঙ্গে হাঁটতে দেয়া হয় না। এর ভেতর দিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গিয়ে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। এটা শুধু মিথ্যা অভিযোগই নয়, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানি করার নতুন কৌশল। তারা বলেন, বাসের চালক ও হেলপারের বক্তব্য হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে আসার পর বাসটির টায়ার ফেটে যায়। যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে তারা বাসটি মেরামত করছিলেন। এ সময় কে বা কারা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, নাকি ইঞ্জিন থেকে আগুন লেগেছে, তা তারা বুঝতে পারেননি। বাসটিতে আগুন দিতে কাউকে তারা দেখেননি। ওই সময় ওই এলাকায় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন ছাড়া অপর কোনো মানুষও ছিল না। আইনজীবীরা বলেন, এ মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। উচ্চ আদালতের রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই আদালতে এ মামলার চার্জ গঠনের শুনানি হলে সেটা উচ্চ আদালতের প্রতি অবমাননা হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীদের এ যুক্তির বিরোধিতা করে সরকারপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, উচ্চ আদালতে এখনও কোনো আদেশ হয়নি। কাজেই এ আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে কোনো বাধা নেই।
উভয়পক্ষের এ বক্তব্যের পর আদালত চার্জ গঠনের শুনানি শুরু করতে চাইলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে চলে আসেন। পরে আদালত একতরফা চার্জ গঠন করে ওই আদেশ দেন।
মামলার ৪৬ আসামির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জামিনে থাকা ৩৬ জন সকালেই আদালতে হাজির হন। আসামিদের মধ্যে ৪ জন পলাতক ও ৩ জন কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া তিনজন সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।
এ মামলায় মির্জা ফখরুল ছাড়া অন্য আসামিরা হচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্বনির্ভর সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সংসদ সদস্য ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ঢাকা মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম মজনু, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক ইয়াসিন আলী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আ. মতিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু, বিএনপি নেতা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাশার, বিএনপি নেতা ও ৪০নং ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা লুত্ফর রহমান ওরফে এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক কমিশনার ইউনুস মৃধা, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ইসমাইল খান শাহীন, স্বেচ্ছাসেবক দল মোহাম্মাদপুর থানা শাখার সভাপতি মান্নান হোসেন শাহীন, ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির।
গত ১০ মে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাটিতে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। ২৭ মে ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বারকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হয়। এ মামলার বাদী ছাড়া কোনো সাক্ষীই আসামিদের গাড়িতে আগুন লাগাতে কিংবা দৌড়ে পালাতে দেখেননি। বাদী লে. কর্নেল অলি আহমেদকে গাড়িতে আগুন লাগাতে দেখলেও প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, তিনি ওই ঘটনার তিন দিন আগে থেকেই একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সপরিবারে কক্সবাজারে ছিলেন। ঘটনার তিন দিন পরে তিনি ঢাকায় এসেছেন। এ সংক্রান্ত নথিপত্রও আইনজীবীরা আদালতে পেশ করেছেন। তবে আদালত এসব নথিপত্র বিশ্বাস না করে সরকারপক্ষের দেয়া মিথ্যা ও আজগুবি তথ্যই আমলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আইনজীবীদের। গতকাল আসামিপক্ষে সুপ্রিমকোর্ট ও ঢাকা বারের কর্মকর্তারাসহ বিপুলসংখ্যক আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন।

সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আইনশৃঙ্খলার ক্রমেই অবনতি ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে বাড়ছে ছিনতাই চাঁদাবাজি অপহরণ



গুলশানে নিজ বাসায় খুন হয়েছেন প্রবীণ ব্যবসায়ী আলহাজ ফজলুল হক (৭২)। ঘুমন্ত অবস্থায় কে বা কারা তাকে নির্মমভাবে খুন করে। ভাটারায় সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার হযরত আলীর বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা তার লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করেছে। প্রতিনিয়ত রাজধানীতে অগণিত ছিনতাই ঘটছে। চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী, ধনাঢ্য ব্যক্তি, বাড়িওয়ালা, এমনকি চাকরিজীবীরাও। চাঁদাবাজিতে রাজধানীর অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার মালঞ্চ হোটেল তিন দিন ধরে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির কারণে বন্ধ রয়েছে। মালিকপক্ষ সরকারি দলের বেশ কয়েকজন নেতা এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে কথা বলেও কোনো সুরাহা করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টোটা। প্রতিনিয়ত ঘটছে খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ততই অবনতির দিকে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা উদ্বিগ্ন।
শয়নকক্ষেও নিরাপদ নয় মানুষ : শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ৫১ নম্বর সড়কের ৮ নম্বর বাড়িতে নিজ শয়নকক্ষে খুন হয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফজলুল হক। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ওই খুনের কোনো কু বের করতে পারেনি পুলিশ। থানার ওসি বলেছেন, কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কিন্তু আসল খুনিরা এখনো শনাক্ত হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খুনের ঘটনা আগের চেয়ে মোটেই কমেনি। রমজানের আগে যত খুনের ঘটনা ঘটত, এখনো প্রায় একই সংখ্যায় খুন হচ্ছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ১২ জনের বেশি খুন হচ্ছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করতে গিয়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। রাজধানীর বংশালে রোববার রাতে মামুন (৩০) নামের এক যুবক খুন হন। জানা গেছে, মামুনের দেয়া তথ্যানুযায়ী সম্প্রতি শাহীন নামের এক দুর্বৃত্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে। শাহীন পরে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। থানার ইন্সপেক্টর হাসান বলেছেন, কিছুদিন আগে শাহীনকে ধরিয়ে দেয় মামুন। এরপর শাহীন জেল থেকে বের হয়ে প্রতিশোধ হিসেবে মামুনকে হত্যা করেছে। শাহীনকে আবার গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। 
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিদিন যারা খুন হচ্ছেন তাদের অনেকেই অজ্ঞাত পরিচয়। খুনের হাত থেকে এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছেন না। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর গত ২০ জুলাই লাশ উদ্ধার হয় বরিশাল জেলা পুলিশের কনস্টেবল খোকন চন্দ্র রায়ের অর্ধগলিত লাশ। ১১ জুলাই বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ঝালকাঠীর নলছিটির কীর্তনখোলা নদী থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ছয় মাসে খুন হয়েছে দুই হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে ৫২৭ জন। তাদের অনেকেরই নাম-পরিচয় উদঘাটন হয়নি।
চাঁদাবাজিতে দিশেহারা মানুষ : শনিবার রাতের ঘটনা। চাঁদা না পেয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার মালঞ্চ হোটেলে হামলা চালায় ও বোমা নিক্ষেপ করে। হোটেল সূত্র জানায়, এ ঘটনার পর উল্টো ছাত্রলীগ হোটেলের কর্মচারীদের ওপর দায় চাপায়। তারা অজুহাত দেয়, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতির সাথে হোটেলের কর্মচারীরা খারাপ আচরণ করেছে এবং তাতে ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ঘটনা ঘটায়। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই হামলায় কোনো সাধারণ ছাত্র অংশ নেননি। হামলার পর থেকে ওই হোটেলটি বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ ঘটনার পর পুলিশ হামলার শিকার দোকান মালিকের সাথে কোনো কথা বলেনি। অথচ হামলাকারীদের দেখতে পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই হাসপাতালে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে চাঁদা উত্তোলন হচ্ছে না। জাতীয় ছিন্নমূল হকার্স সমিতির আহ্বায়ক কামাল সিদ্দিকী বলেছেন, চাঁদা দিতে দিতে হকাররা এখন দিশেহারা। তিনি বলেন, পুলিশ ও মাস্তানরা সমানতালে চাঁদা আদায় করছে। হকার নেতা এম এ কাশেম বলেন, চাঁদার টাকার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। ুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন দিশেহারা। 
ধোলাইখালের এক পার্টস ব্যবসায়ী বলেছেন, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে চাঁদাবাজরা ততই সক্রিয় হয়ে উঠছে। ডাকাত শহীদ মারা যাওয়ার পর তারা আশা করেছিলেন চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পাবেন। কিন্তু এখনো কয়েকটি গ্রুপ ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করে চলেছে। রাজধানীর কাকরাইল, সেগুনবাগিচা ও এর আশপাশ এলাকার ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এসআই মাহবুব নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
প্রকাশ্যেই চলছে ছিনতাই : গতকাল বেলা ২টার ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামান্য দূরে হইচই। দেখা গেল, শত শত লোকের সামনে দিয়ে এক পথচারীর মোবাইল ফোন ছিনতাই করে দৌড়াচ্ছে এক দুর্বৃত্ত। চলমান যানবাহনের ফাঁক দিয়ে দৌড়ে সে রাস্তার বিপরীতে বারডেম হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে পড়ল। সূত্র জানায়, এভাবে অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। ছিনতাইয়ের হাত থেকে সাংবাদিক-শিল্পী কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। সপ্তাহখানেক আগে দৈনিক ডেসটিনির সিনিয়র ফটোসাংবাদিক মুঈদ খন্দকার ও ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক সুবির কুমার ছিনতাইকারীদের হামলায় গুরুতর আহত হন। ছিনতাইকারীরা তাদের ক্যামেরা, টাকা, মোবাইল ফোন ও হাতঘড়ি ছিনিয়ে নেয়। 
গত ১৬ জুলাই রাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন কণ্ঠশিল্পী পারুল মাহবুব। দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও মূল্যবান কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে।
ছিনতাইয়ের কবলে পড়ছেন র‌্যাব সদস্যরাও । সম্প্রতি উত্তরায় এক র‌্যাব সদস্যকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেয়। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, রাজধানীতে অন্তত দুই শ’ স্পটে প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও পকেটমার চলছে। কোনো কোনো ঘটনার সাথে পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আছে।
অকার্যকর পুলিশ-র‌্যাবের চেকপোস্ট : পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ছিনতাই বন্ধে আধুনিক সরঞ্জাম, কোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ অনেক কিছুই ব্যবহার করা হচ্ছে। গত ১৯ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহম্মেদ বলেছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রমজানে রাজধানীতে ৩৫টি চেকপোস্ট, ৩৩৪টি ফুট পেট্রোল টিম, ৮৪টি মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম ও ১৫টি মোবাইল পেট্রোল টিম এবং বিপুলসংখ্যক সাদা পোশাকের পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যের নজরদারি থাকবে। সম্প্রতি রাজধানীতে রাতের বেলা লাল-নীল বাতি জ্বালিয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসাচ্ছে। কিন্তু এরপরও ছিনতাই, চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, রোজার শুরুতেই নানা পরামর্শ সংবলিত একটি লিফলেট বিলি করা হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনোই উন্নতি হচ্ছে না। তবে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বরাবরের মতোই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সার্বিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে টহল ডিউটি জোরদার করা হয়েছে।

রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অনিয়ম : সব চলছে সুতার টানে



দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নির্বাচন কমিশন। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক তত্পরতা না দেখে এমন ধারণা করলে কাউকে দোষ দেয়া যাবে না। কমিশন হয়তো অপেক্ষা করছে শীর্ষপর্যায়ের সবুজ সঙ্কেতের। সেটা পাওয়া গেলেই গা ঝাড়া দিয়ে উঠবে ‘স্বাধীন’ এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এর আগেও কর্তার ইচ্ছায় চলেছে নির্বাচন কমিশন। ড. শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন তত্কালীন সরকারের মতোই আপন কীর্তিতে ছিল মহিয়ান! সেই সেনাসমর্থিত অসাংবিধানিক সরকার যেমন তুগলকি কাণ্ড করে দেশের বারোটা বাজিয়েছে, তেমনি তখনকার নির্বাচন কমিশনও সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তারা কীভাবে বিএনপিকে ভাঙার পরিকল্পনা নিয়েছিল, সেটা তো সবার জানা। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামাবলী গায়ে দেয়া তখনকার শাসকদের মতোই নির্বাচন কমিশনের অনিয়ম, দুর্নীতিও কম ছিল না। পরবর্তী সরকারের আমলেও সে ভূমিকার পরিবর্তন হয়নি। ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা সেটাই প্রমাণ করে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে কোনো ধরনের নিয়মনীতি ছাড়াই ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেয় তত্কালীন নির্বাচন কমিশন। এক্ষেত্রে নির্বাচন উপযোগী ইভিএমের বিনির্দেশ ও ব্যবহারবিধি ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন এবং বুয়েটের কাছ থেকে কারিগরি তথ্য নিয়ে প্রণয়ন করার কাজও উপেক্ষা করে এগিয়েছে ড. শামসুল হুদার কমিশন। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কোনো আপত্তি কানে তোলা হয়নি। বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলের বিরোধিতা এবং টেম্পারিং করার অভিযোগও পাত্তা পায়নি। সবকিছু উপেক্ষা করে ইভিএম কিনতে তাদের আগ্রহ দেখে বোঝা গেছে, পেছনে বড় কারণ আছে। সরকারের হুকুম তামিল করাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। তাই নিয়মবিধি উপেক্ষা করে তিন দফায় তিন ধরনের প্রায় ১২শ’ ইভিএম কিনতে সাড়ে তিন কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হলেও দেখার কেউ ছিল না। দায়িত্বে অবহেলার জন্য সংশ্লিষ্ট কাউকে জবাবদিহি করতেও আগ্রহ দেখাননি সিইসি ড. শামসুল হুদা। এসব জানার পর বলতেই হয়, আগের কমিশনের সব কাজ খতিয়ে দেখা উচিত। সে সময়কার ভোটার তালিকায়ও অনিয়ম থাকা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। অথচ বর্তমান কমিশন অবিচলভাবে আগের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখে চলেছে, সেটাও খালি চোখেই দেখা যায়।
শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, প্রায় সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেই এমন অকার্যকর অবস্থা বিরাজ করছে। তারা মুখেই স্বাধীন। সবকিছু চলে সুতার টানে। সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নই তাদের আসল লক্ষ্য। কথা ও ভাবভঙ্গিতে স্বাধীন ভূমিকা এবং সাংবিধানিক ক্ষমতার উল্লেখ থাকলেও কাজে এসবের প্রমাণ মেলে না। সরকার হিসাব করেই নিজেদের পছন্দসই ও মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তিদের নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান সাজিয়ে তোলে। জনগণকে ধোঁকা দিয়ে, গণতন্ত্র দুর্বল ও অকার্যকর রেখে ব্যক্তিগত এবং দলীয় ফায়দা লোটার জন্যই যে এমন ব্যবস্থা, সেটা এখন কারও অজানা নেই। ক্ষমতাসীনরা কেন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিরোধিতা করে নির্বাচন কমিশনকে দিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে আগ্রহী, তার পেছনের কারণ একই। এভাবে দলীয় সরকার ও সংসদ বজায় রেখে নির্বাচন করা হলে সেটা হবে নির্বাচনের নামে তামাশা। এর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের বিকল্প নেই।
যতদিন নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাস্তবে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে তোলা না হবে, ততদিন এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের আজ্ঞাবহ ভূমিকা পালন করে যাবে। এতে করে ব্যক্তি বা দলবিশেষের ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ নিশ্চিত হলেও গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে না। দেশের অগ্রগতিও নিশ্চিত হবে না, এটা জোর দিয়েই বলা যায়।

শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

প্রস্তুতি ৬ মাস ২০১৩ জুড়ে আন্দোলন ঈদের পর কিছুটা তীব্র হচ্ছে বিএনপির কর্মসূচি, জেলা সফর করবেন খালেদা জিয়া; ২০১২ সালের মধ্যেই সমঝোতার আশা



প্রধান বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনের ‘ফাইনাল খেলা’ আরো ছয় মাস প্রস্তুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এই প্রস্তুতি পর্বে কর্মসূচি হিসেবে কিছু ‘প্র্যাকটিস ম্যাচ’ থাকবে বটে, কিন্তু তা টানা আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে না। দলের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা ও কূটনৈতিক চ্যানেলের পরামর্শ অনুযায়ী ২০১২ সালের শেষ পর্যন্ত নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালে সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করবে বিএনপি; তা না হলে ২০১৩ সালের শুরু থেকেই আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করবে, যা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। ২০১৩ সালকে তাই বিএনপি চূড়ান্ত ‘আন্দোলনের বছর’ হিসেবেই দেখছে। এই আন্দোলনের প্রথম লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ‘জনদাবি’ নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত, আলোচনার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে আন্দোলনের এই নতুন কৌশল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। 
এ দিকে আসছে ঈদু ফিতরের পর চলমান আন্দোলন আরো কিছুটা তীব্র করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। তবে তা দাবি আদায়ে যথেষ্ট হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ঈদ-পরবর্তী আন্দোলনের কৌশল ঠিক করতে আগামী ১২-১৩ আগস্ট জোটভুক্ত দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ার কথা; যা ঈদের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে চূড়ান্ত করবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে রমজানের শেষ ১০ দিন তিনি সৌদি আরবে থাকবেন বলে জানা গেছে। 
আন্দোলন সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেছেন, ‘আমরা আন্দোলন করব। আন্দোলন করেই দাবি আদায় করবÑ এটিই দলীয় সিদ্ধান্ত।’ তবে আন্দোলনের ধরন কী হবে, তা তিনি জানাননি। তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে নাÑ এটিই দলীয় সিদ্ধান্ত। তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করার পর থেকেই আমরা এ কথা বলে আসছি। 
আন্দোলনের পথে থাকা বিএনপিতে চলছে এখন রমজানের ভ্যাকেশন। আন্দোলনের গতি তাই কিছুটা শ্লথ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে এই শ্লথ গতি থাকবে আরো প্রায় ছয় মাস। আসছে ঈদের পর আন্দোলন কিছুটা তীব্র হবে, তবে তা দাবি আদায়ে সরকারকে নাড়া দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আন্দোলনের দাবি আদায়ে আগামী ছয় মাসকে দেখা হচ্ছে আরো কিছুটা ‘সময় দেয়া কিংবা নেয়া’ হিসেবেও। আচমকা টানা আন্দোলনে নামার আগে মেলানো হচ্ছে সমীকরণ, ভেবে দেখা হচ্ছে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি। বিরোধী দলের পুরো চিন্তাটা জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক হওয়ায় দাবিও একটিÑ নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা বহাল। মেয়াদ পূরণের আগেই সরকারকে এ দাবি পূরণে বাধ্য করতে বিএনপি বদ্ধপরিকর। এ জন্য টার্গেট করা হয়েছে ২০১৩ সাল। ২০১৩ সালের শুরু থেকেই এই আন্দোলন জমাট বাঁধানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 
ছয় মাসের এই বিরতিতে রাজনৈতিক ভিত আরো শক্ত করার কথা ভাবছে বিএনপি। চলছে কূটনৈতিক তৎপরতাও। দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক একটি ‘কোর কমিটি’ প্রতি মাসে অন্তত একবার বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সাথে মিলিত হচ্ছে। দলের চিন্তাভাবনা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিই এসব কূটনৈতিক বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়। নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণে কূটনৈতিক চাপ সামনের দিনগুলোতে একটি বড় ‘অ্যাসেট’ হতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি। 
২০১২ সালের মধ্যে নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা ইস্যুতে একটি সমঝোতায় পৌঁছার ব্যাপারে সরকারের ওপরে কূটনৈতিক চাপও রয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ‘সমঝোতা সংলাপে’ বসতে বারবার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১২ সালের মধ্যেই সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হবে বলে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করে আসছেন। 
জানা গেছে, কূটনৈতিক রাজনীতির বাইরে দলের ভেতরকার বন্ধন অটুট রাখার প্রচেষ্টাও চালাচ্ছেন স্বয়ং বিএনপি প্রধান। দলকে আন্দোলনের পথে ঐক্যবদ্ধ রাখতে বেগম জিয়া বারবার শীর্ষ নেতাদের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো নেতার সাংগঠনিক পারফরম্যান্সে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন তিনি। 
ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা বিএনপির। বিএনপি নেতারা জানান, ঈদের পর ঝটিকা জেলা সফরে যাবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্দলীয় সরকারব্যবস্থার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে কয়েকটি জেলায় জনসভা করবেন তিনি। এরপর শক্ত কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। 
দলের একাধিক সূত্র জানায়, রাজনৈতিক সমঝোতার পাশাপাশি দলকে বড় ধরনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যাপকভিত্তিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলের হাইকমান্ড। এ জন্য খালেদা জিয়ার পাশাপাশি সিনিয়র নেতারা রোজায় ও ঈদের পরও জেলা সফরে যাবেন। 
ইতোমধ্যে আন্দোলনের জন্য দলকে প্রস্তুত করতে কোন্দল নিরসন করে জেলাপর্যায়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শরীয়তপুর ও নেত্রকোনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। রমজান-পরবর্তী এক মাসের মধ্যে বাকি কমিটিগুলোও গঠন করা হবে। ঢাকা মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হচ্ছে। 
জানা গেছে, ঈদের পর খালেদা জিয়া রাজবাড়ীসহ ঢাকার আশপাশের কয়েকটি জেলায় সমাবেশ করবেন। রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলাও অনেক দিন ধরে তার সমাবেশ করার কথা। সেখানেও যেতে পারেন তিনি। বরিশালেও সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর তার নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথের জনগণকে ‘সমবেদনা’ জানাতে সেখানে যেতেও তাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বিশ্বনাথ সফর করেছে। তারা তাদের রিপোর্টে সিলেট বিএনপির রাজনীতিকে গতিশীল করতে প্রথমে মহাসচিবের সমাবেশ এবং পরে খালেদা জিয়াকে জনসভা করার সুপারিশ করেছেন। 
সূত্র মতে, চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে আবারো জেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন্দল নিরসনে মাঠে যাবে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ যুগ্ম মহাসচিবরা। এ ছাড়াও ঈদের পর কঠোর কর্মসূচি দেয়ার আগে গণসংযোগও চালাবে দলটি। 
নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ১১ জুন ঢাকার গণসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া ঈদের পর হরতাল-অবরোধ ও ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেছেন। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার আগে তিনি সমমনা রাজনৈতিক দল ও বিএনপিপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে বৈঠক করবেন। অঙ্গসংগঠনগুলোও নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। ছাত্রদলের কমিটি রমজান মাসের মধ্যেই দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এরপর পুনর্গঠন করা হবে যুবদল।

শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

পদ্মা সেতু ও বিশ্বব্যাংক সরকারের অবস্থান স্বচ্ছও নয় জবাবদিহিমূলকও নয়


পদ্মা সেতু এখন বিব্রতকর ইস্যু। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করছে না। বিশ্বব্যাংকের এ অবস্থান স্পষ্ট। অপর দিকে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য যেমন অসঙ্গতিপূর্ণ, তেমনি পরস্পরবিরোধীও। অবস্থা এমন সৃষ্টি করা হয়েছে যে জনগণ শুধু ুব্ধ নয়, অসহায়ও বোধ করছে। কারণ পূর্বাপর প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, অর্থমন্ত্রী বলছেন ভিন্নভাবে। একবার বলা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত মেনে নেয়া হয়েছে। আবার বলা হচ্ছে, দেশপ্রেমের কারণে অভিযুক্ত মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ প্রতিক্রিয়ায়ও অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আশাবাদ ব্যক্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগকে তিনি শর্ত পূরণের দৃষ্টিতে দেখেছেন এবং মন্তব্য করেছেন ‘আবুল ডাউন’। এরপর জনগণ আশা করেছিল সরকারের অবস্থান আর অস্বচ্ছ থাকবে না। নীতিনির্ধারকেরা অভিন্ন সুরে কথা বলবেন। 

তিক্ত হলেও সত্য যে, লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে পুরো বিষয়টিকে আবার বিতর্কিত করে তুললেন। প্রধানমন্ত্রী আবার বিশ্বব্যাংককে অভিযুক্ত করে বললেন, বিশ্বব্যাংকের আবদার রক্ষা না করায় ঋণচুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তিনি পদত্যাগকারী মন্ত্রীকে দেশপ্রেম ও সততার সনদ দিলেন। বিশ্বব্যাংক ইস্যুতে সরকারের অবস্থান স্বচ্ছও নয়, স্পষ্টও নয়। এ বিষয়টিই জনগণকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। পদ্মা সেতু এত দিন হয়নি। সব কিছু ইতিবাচক না হলে নিকট-ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি ছিল জনগণের একটি স্বপ্ন, সরকারের প্রতিশ্রুতি। জনগণের স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার কষ্ট, সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হজম করা সম্ভব। কত স্বপ্নই তো অপূরণীয় থাকছে, অনেক প্রতিশ্রুতিও পূরণ হচ্ছে নাÑ সেসব কষ্ট ও দুঃখবোধ মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে জনগণ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, জনগণ সরকারের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতাকে দায়ী করে সান্ত্বনা খুঁজে নিতে চেষ্টা করছে। জনগণ যা বলার প্রথম সুযোগেই ব্যালটের মাধ্যমে প্রকৃত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দেবে। এটা গণতান্ত্রিক রীতিনীতির একটি বাড়তি সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্যও। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ খণ্ডাতে পারল না। মেরুদণ্ড সোজা করে সত্য কথা বলে জনগণের সামনে দাঁড়ানোর সাহসও প্রদর্শন করল না, কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাংকের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো দৃঢ়তাও প্রদর্শন করল না। এর ফলে জাতি হিসেবে আমরা অপমানিত হলাম। রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের সম্পর্কে বিশ্বজনমত শ্যেনদৃষ্টিতে তাকানোর সুযোগ পেল। সরকার দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিতে বাধ্য হলো। বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে দায় নিলো কিন্তু পরিমিতিবোধ ও বাকসংযমের অভাবে অভিযোগ থেকে সরকার মুক্ত হলো না। 
আমরা মনে করি, দেশের জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উচিত। জনগণের সামনে সব অভিযোগ তুলে ধরে সরকারের পক্ষ থেকে কী কী করা হয়েছে তাও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। নীতিনির্ধারকদের সামনে দূরদর্শী হওয়ার ও কূটনৈতিক প্রজ্ঞা প্রদর্শনের সুযোগ কমে গেছে। তার পরও দলীয় ইগো, ব্যক্তিগত জেদ ও ুদ্রচিন্তা পরিহার করে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার অবকাশ আছে। এখন জাতীয় ভাবমর্যাদা পুনরুদ্ধার করা এবং দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা জরুরি। সরকার যায় সরকার আসে, বিশ্বব্যাংকসহ সব বিশ্বসংস্থার সাথে সমঝোতা করে চলার দায় ও প্রয়োজন দুটোই থেকে যায়। তাই জাতীয়ভাবে কলঙ্কমুক্ত হওয়ার স্বার্থে সরকারকে দ্বৈতনীতি পরিহার করে পথ চলতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি সরকার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করলে সমস্যা কমে আসবে। দ্বিমুখী নীতি ও সাংঘর্ষিক বক্তব্য পরিহার করে চললে সঙ্কট আরো ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাতে ভবিষ্যতের জন্য অভিযোগ ও কলঙ্কমুক্ত হয়ে পথচলা সহজ হবে। শুধু পদ্মা সেতু নয়, আরো বড় পরিকল্পনায় উন্নয়ন সহযোগী ও বিশ্বব্যাংককে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আবুল হোসেনের দেশপ্রেম নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি : আলোচ্য বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি



যুক্তরাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার লন্ডনে বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে ইফতার শেষে মতবিনিময়কালে সদ্য পদত্যাগকারী মন্ত্রী আবুল হোসেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও সত্সাহসের অধিকারী বলে যে মন্তব্য করেছেন—তা নিয়ে জোরালো বিতর্ক উঠবে বলে মনে হয় না। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর থেকে আবুল হোসেনকে নিয়ে নানামুখী সমালোচনা হয়েছে। সেই সমালোচনার ঝড় বয়ে চলেছে এখনও। কিন্তু সমালোচনাকারীরা কেউ তার দেশপ্রেম বা সাহসের ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেননি; প্রশ্ন উঠেছে তার কাজকর্মের স্বচ্ছতা নিয়ে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবুল হোসেন সাধারণ অবস্থা থেকে কখনও ধীরে ধীরে, কখনও বেশ দ্রুতগতিতে প্রথম কাতারের ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে তিনি এভাবে বিকশিত হতে পারতেন না। তাই দেশটির প্রতি তার প্রেম সাধারণের চেয়ে একটু বেশিই থাকার কথা। তিনি যে একজন সাহসী মানুষ—তা নিয়েও বিতর্ক নেই। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় তার এলাকার প্রতিপক্ষ রাজনীতিকরা এই সাহসের পরিচয় বেশ ভালোভাবে পেয়ে থাকেন। তদুপরি বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রধান ঋণদাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক সরাসরি অভিযোগ করার পর দশ মাস মন্ত্রিত্বে ঝুলে থাকতে পারাও সাহসের পরিচায়ক বটে! তবে সাহসের এ ধরনের বহিঃপ্রকাশকে ‘সত্সাহস’ বলা যায় কিনা—সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে আবুল হোসেনের সততা বা স্বচ্ছতার সপক্ষে কোনো কথা বলেননি। আর প্রেম এবং সাহস যে দুর্নীতি ও অসচ্ছতার নির্ভরযোগ্য প্রতিষেধক নয়—এমন অনেক দৃষ্টান্ত বাংলাদেশেই আছে। তবে প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন, সবার উচিত আবুল হোসেনের প্রশংসা করা—এর লক্ষ্য সম্ভবত নিজ দলের মন্ত্রী এবং নেতারা। অর্থমন্ত্রী যেভাবে ‘আবুল ইজ ডাউন’ বলে চারদিক কাঁপিয়ে তুলেছেন, তা শোভন হয়েছে বলে আমরাও মনে করি না। চীনের একটি প্রতারক কোম্পানিকে কাজ দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক আবুল হোসেনের ওপর চাপ দিচ্ছিল এবং সে চাপ অগ্রাহ্য করায় পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। এর আগে তিনি সংসদে এবং সংসদের বাইরে ঋণচুক্তি বাতিল সম্পর্কে ভিন্ন কথা বলেছিলেন; তাতে ষড়যন্ত্রের এবং নেতিবাচক তদ্বিরের ইঙ্গিত ছিল। এসবের মধ্যে কোন্টা কথার কথা আর কোন্টা আসল কথা জানা গেলে আমজনতা স্বস্তি পেত।
ওই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু ছাড়া গুম এবং দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, গুম শুরু হয়েছিল বিএনপির আমলে এবং রাতারাতি এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। এক কথায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, অন্তত তার আমলে গুম-খুন বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান সরকারের মেয়াদ এরই মধ্যে চার বছর পার হবে হবে করছে। ‘চার বছর’ আর ‘রাতারাতি’ কি এক কথা? হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, ব্রহ্মার এক মুহূর্ত হচ্ছে মানুষের ৬৪ হাজার বছরের সমান। এই ঘোর কলিযুগে ‘রাতারাতি’ আর ‘চার বছর’কে সমান করে ফেলতে হলে এক ব্রহ্মায় কুলাবে বলে মনে হয় না, সঙ্গে বিষ্ণু আর শিবকেও লাগতে পারে। আর ‘রাতারাতি’ গুম-খুন বন্ধ করা যায় না; কিন্তু ‘রাতারাতি’ বর্তমান আমলে দুর্নীতির মাত্রা শূন্যের কোঠায় নেমে গেল—এটাও কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার কথা? নইলে ‘পদ্মার ভাঙন’ ‘এই আমলে’ এমন কীর্তিনাশা রূপ নিল কেন?

বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রীর যত ফুটানি



সৈয়দ আবদাল আহমদ
লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধন হচ্ছে আজ। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসর এই অলিম্পিক। অলিম্পিক মানে বিশ্বের নানা বর্ণ আর সংস্কৃতির মেলবন্ধন। অলিম্পিক এলে তাই সাড়া পড়ে যায় দেশে দেশে। অলিম্পিক আয়োজনের দায়িত্ব যে দেশের ওপর পড়ে, সে দেশের আনন্দের সীমা থাকে না। এবার অলিম্পিক হচ্ছে ব্রিটেনে। তাই ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনজুড়ে এখন প্রচণ্ড হৈ-হুল্লোড়। লন্ডনের স্ট্র্যাটফোর্ডে তৈরি হয়েছে অলিম্পিক ভিলেজ। এই লন্ডন অলিম্পিক পার্কে অংশ নেবেন সাড়ে ১০ হাজার ক্রীড়াবিদ। অলিম্পিক গেমস চলবে ১৭ দিনব্যাপী।
লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশ অংশ নিচ্ছে। এর আগেও বেইজিং অলিম্পিক, সিউল অলিম্পিকে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছিল। তবে এবার অলিম্পিকে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আলোচনার সৃষ্টি করেছে। এই আলোচনা অলিম্পিকের কোনো ইভেন্টে ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নিয়ে নয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ নিয়ে।
অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। না, শুধু শেখ হাসিনা একা নন—তার সফরসঙ্গী হয়েছেন ৫৫ জনের একটি বহর। আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন। অলিম্পিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও যোগ দেবেন তার বোন শেখ রেহানা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী ৫৫ জনের বহর নিয়ে লন্ডন গেছেন। সেখানে তিনি পাঁচদিন অবস্থান করবেন। ২৭ জুলাই বাকিংহাম প্রাসাদে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের দেয়া সংবর্ধনায়ও প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন। ইতোমধ্যে লন্ডনে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাকে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি নিঃসঙ্কোচেই বলে দিয়েছেন, বিশ্বব্যাংক নাকি পারসেন্টেজ চেয়েছিল। দুর্নীতির দায়ে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সম্পর্কে তিনি বলেছেন, সৈয়দ আবুল হোসেন একজন দেশপ্রেমিক লোক। দেশপ্রেমিক না হলে নাকি তিনি পদত্যাগ করতেন না। বিশ্বব্যাংকের ঋণ পেতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যখন নানামুখী দৌড়ঝাঁপ করছেন, ঠিক তখনই শেখ হাসিনার এই মন্তব্যে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই।
অলিম্পিকে যোগদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোষের কিছু নয়। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা সাধারণত অলিম্পিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেই থাকেন। আয়োজক দেশের পক্ষ থেকে অলিম্পিকে যোগদানের আমন্ত্রণ জানানো একটি রেওয়াজ। সেই রেওয়াজের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, তাকে অংশ নিতেই হবে। যদিও শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ পেয়ে অপেক্ষা করেননি। তবে দোষের বিষয় যেটা তা হচ্ছে, শেখ হাসিনা কোনো ধনী দেশের প্রধানমন্ত্রী নন। গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এ ধরনের সফরের আমন্ত্রণ পেয়েই সেখানে চলে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। অনেক ধনী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা অলিম্পিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে লন্ডনে যাননি। ব্রিটেনের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট যোগ দিচ্ছেন না অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে বড়জোর ৪০ জন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিতে পারেন। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ, ইতালির প্রেসিডেন্ট ন্যাপালিয়াটানো, জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিকো নোদা, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েব এরদোগান উপস্থিত থাকলেও আসছেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার পরিবর্তে উপস্থিত থাকবেন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ, আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট আলাসানে ওত্তারা, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট কিবাকি, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিভেভ। থাকবেন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রথম মেয়াদে একটি সফরে ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন। ওয়াশিংটন যাওয়ার পথে তিনি লন্ডনে যাত্রাবিরতি করেছিলেন। তখন তিনি লন্ডনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেলগুলোর একটি ক্ল্যারিজেস হোটেলে উঠেছিলেন। হোটেলের যে ক’টি কামরা শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীদের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছিল, একসময় সেটা সহচর-পার্শ্বচর, স্তাবক ও সাংবাদিকদের জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হয়নি। আরও কামরার প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সহোদরা জানালেন, পাশেই আরেকটি কামরা খালি আছে। তত্ক্ষণাত্ একজন স্তাবক আমলা বলে উঠলেন, ওই কামরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদার সঙ্গে মানানসই নয়। শেখ হাসিনা তখন বলেছিলেন, ‘গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রীর আবার এত ফুটানি কিসের?’ এ খবরটি তখনকার লন্ডনের বাংলা পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান এ নিয়ে একটি কলাম লিখেছিলেন। বেচারা গরিব দেশ! তার তো করার কিছু নেই। চোখ বুজে সবকিছুই সহ্য করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি উপলব্ধিই করতেন গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রীর এত ফুটানি কিসের, তাহলে কি তিনি এভাবে ঢালাও বিদেশ সফরে যেতেন? আর বিদেশ সফরে তিনি একাও যাচ্ছেন না, বিশাল বিশাল লটবহর নিয়ে যাচ্ছেন। এটা সবাই জানেন যে, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে অবধারিতভাবে কিছু কর্মকর্তা কিংবা ব্যক্তি থাকবেনই। কিন্তু তার অর্থ তো এই নয় যে, সেটা বিশাল বহর হবে। প্রধানমন্ত্রী এমনও দেশ সফর করেছেন, যে সফরে আত্মীয়-পরিজন, মন্ত্রী, এমপি, কর্মকর্তা, দলীয় লোক মিলিয়ে ১১৯ জন পর্যন্ত গেছেন। এমনও গুরুত্বহীন সম্মেলনে তিনি যোগ দিয়েছেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার আদৌ প্রয়োজন নেই। সেই সম্মেলনে একজন মন্ত্রী পাঠিয়ে দিলেই চলে; কিন্তু দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী নিজে সেটাতে গেছেন। ন্যাম সম্মেলনের এখন কোনো গুরুত্ব নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গেছেন। ইউরোপীয় ডেভেলপমেন্ট ডে’তে তিনি গেছেন। এমনকি বাঘ সম্মেলনেও তিনি যোগ দিয়েছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতি বছর একটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নেন, এমন নজির নেই। কিন্তু আমাদের গরিব দেশের প্রধানমন্ত্রী গত তিন বছরে তিনবারই নিউইয়র্ক গেছেন। প্রতিবারই তার সফরসঙ্গী ছিলেন একশ’র উপরে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি একশ’জনের বহর নিয়ে নিউইয়র্ক যান।
চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ডক্টরেট ডিগ্রি আনতে ১০৬ জনের বহর নিয়ে ত্রিপুরা যান প্রধানমন্ত্রী।
২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫৩ জনের বহর নিয়ে ডেমোক্রেসি ফোরাম নামের গুরুত্বহীন এক সম্মেলনে যোগ দিতে ইন্দোনেশিয়া যান প্রধানমন্ত্রী।
২০১১ সালের অক্টোবর মাসে প্রায় একশ’জনের বিশাল বহর নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে যোগ দিতে জার্মানি যান প্রধানমন্ত্রী। এটা ছিল মূলত ডাক্তারদের একটি সম্মেলন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান ওই সম্মেলনে যাননি। এমনকি আয়োজক দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর মার্কেলও ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না। এভাবে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে।
এবার লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন পাঁচজন ক্রীড়াবিদ। তবে তাদের সঙ্গে গেছেন অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ২২ জন কর্মকর্তা। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন ৫৫ জন। অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ৫০টি ব্লেজার তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, প্রতিটি ব্লেজারের দাম পড়েছে সাড়ে চার হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্যও একটি ব্লোজার বিশেষভাবে তৈরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গরিব দেশের জন্য এসব কি ফুটানি নয়?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
abdal62@gmail.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গুম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটাক্ষ




গুম নিয়ে দেশ-বিদেশে উদ্বেগ আর সমালোচনার মধ্যেই একে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপির লোকেরাই চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতা জামালউদ্দিনকে হত্যা ও গুম করেছিল। বিএনপি চালু করে দিয়ে গেছে। এখন রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যেভাবে উত্থান সেভাবেই পতন।
লন্ডন সফরে প্রথম দিনে বুধবার সন্ধ্যায় সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি হোটেলে বিলেতের বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে ইফতার শেষে মতবিনিময় সভায় এক প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। গুমের কালচার থেকে আমরা মুক্তি পাব কি না—যুগান্তরের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি গোলাম মোস্তফার এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। লন্ডনের সাপ্তাহিক জনমতের সম্পাদক নবাব উদ্দীন তখন জানতে চান, আপনি ইলিয়াস আলী সম্পর্কে এসব কথা বলছেন কি না। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কারও নাম বলতে চাই না। আপনি বুঝে নেন কার সম্পর্কে বলছি। যারা সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল, যারা যে কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের সে কাজেই পতন হয়।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে কত হত্যা ও গুমের ঘটনা ঘটেছিল, তা খুঁজে বের করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় মানবাধিকারের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ভারতে আবারো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিচারহীনতা দৃষ্কৃতকারীদের উসকে দেয়



আবারো ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামে প্রতিপক্ষের হামলায় ৩২ জন প্রাণ হারিয়েছে। প্রাণ হারানোর আশঙ্কায় বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ। উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে অপর ঘটনায় দু’জন প্রাণ হারায়। গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কিংবা অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মতো বড় বড় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ছাড়াও দেশটিতে প্রায়ই ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের প্রত্যাশিত অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের সাথে এটা বেমানান হলেও নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা ও ধ্বংস তাণ্ডবের ঘটনা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। 
আসামে এবার শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাতের চরিত্র অন্য ঘটনাগুলোর চেয়ে ভিন্ন। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃবিদ্বেষ ভারতের মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের চেয়ে কম। এদের মধ্যে সাধারণত সম্প্রীতি বজায় থাকে। দিল্লি সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে তারা স্বাধীনতা ও ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার। এবার দেখা যাচ্ছে, বোড়ো উপজাতির অমুসলিম জঙ্গিরা সংখ্যালঘু মুসলিম গ্রামগুলোতে হামলা করছে। এই বর্বরতায় মুসলিমরা প্রাণ হারাচ্ছে। দুর্বৃত্তরা মুসলিমদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। অসহায় মুসলিমরা পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কুচবিহারে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। কোকড়াঝার এলাকায় গত শুক্রবার অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হামলায় চার বোড়ো যুবক নিহত হন। এ জন্য নিছক সন্দেহবশত মুসলিমদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু হয়। এমনকি, ৫০০ ুদ্র গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়। এলাকায় সরকার কারফিউ জারি করেছে। অপর দিকে উত্তর প্রদেশের বেরিলিতে মসজিদের পাশ দিয়ে উচ্চ আওয়াজে গানবাজনা করতে করতে যাচ্ছিল শিবভক্তরা। রোজাদার মুসলিমরা শোরগোল না করার অনুরোধ করলে ওরা ভাঙচুর ও সংঘর্ষ শুরু করে। এ সময় দুই মুসলিম প্রাণ হারান। 
আসামের দাঙ্গার ঘটনাটি রহস্যজনক। চারজন যুবকের হত্যার জের ধরে দাঙ্গার সূত্রপাত। কারা এটা ঘটিয়েছে তার তদন্ত হওয়ার আগেই বোড়োরা মুসলিমদের আক্রমণ করে বসে। এতে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক, দাঙ্গার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষ উসকানি দিচ্ছে। এসব এলাকায় ধর্ম-বর্ণভেদে সম্প্রীতি বিরাজ করে থাকে। অন্য দিকে বেরিলির ঘটনাটি উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একটি সাধারণ চিত্র। সেখানে উগ্র হিন্দুদের আক্রমণের শিকার হয়নি এমন কোনো সম্প্রদায় নেই। বিভিন্ন জাতে বিভক্ত হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যেও অত্যাচারের ঘটনা ঘটায়। খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীও আক্রমণের শিকার হয় উগ্র হিন্দুদের দ্বারা। ভারতের অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে মুসলিমরা ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। এ জন্য সরকার দায় এড়াতে পারে না। হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারহীনতার সংস্কৃতি নতুন দাঙ্গাহাঙ্গামার জন্য উসকানি জোগায়। আমরা আশা করব, ভারত সরকার এবার যথাযথ উদ্যোগ নেবে এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে, যাতে দৃষ্কৃতকারীরা দাঙ্গা বাধানোর সাহস না পায়।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গাঁজার নৌকা এখন পদ্মায়



এম এ নোমান
গত সাড়ে তিন বছরের মহাজোটীয় জামানায় দেশে আলোচিত- সমালোচিত শত শত ঘটনার জন্ম হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রী আবুল হোসেনসহ সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনদের জড়িত থাকা, প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার এবং শেষতক হোসেন সাহেবের পদত্যাগের ঘটনাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। যদিও ‘ডিজিটাল সময়’-খ্যাত ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনা ও পিছিয়ে দেয়া, আড়িয়ল বিলে স্বপ্নের এয়ারপোর্ট, দ্বিখণ্ডিত ঢাকার অসহনীয় যানজট এবং ৮০ হাজার কোটি টাকা লুটের কারণে শেয়ারবাজার ধসের ঘটনা অনেকেরই পারিবারিক জীবনের অংশ হয়ে গেছে।
পদ্মা সেতুতে বিপজ্জনক (মূলসহ খেয়ে ফেলা) দুর্নীতির কারণে বিশ্বব্যাংকের ঋণচুক্তি বাতিল হওয়ার পর থেকে ১৫ মন্ত্রীর ৭০ ধরনের বক্তব্যের মাঝখানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। এবার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করে আমরা বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দেব।’ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর দেশব্যাপী শুরু হয়েছে ধুন্ধুমার চাঁদাবাজি। বেপরোয়া ছাত্রলীগ চাঁদাবাজির অবাধ লাইসেন্স পেয়ে হামলে পড়েছে সর্বত্র। পরিবহন নেতারাও বসে নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে ‘সাহসী’ উল্লেখ করে কেউ কেউ চাঁদাবাজির টাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের আগে ও পরে ডজনখানেক উপাধি যোগ করে সড়ক-মহাসড়কে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, পোস্টার এবং ফেস্টুনও টানানো হয়েছে।
কোনো কোনো মন্ত্রী ও নেতা ঘোষণা করেছেন, চাঁদাবাজির টাকায় একটি নয়, দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। তাদের এ যুক্তিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারাকাত বলেছেন, দুটি নয়, চারটি পদ্মা সেতু সম্ভব নিজস্ব অর্থায়নে। অবশ্য আবুল বারাকাতকে দেশের ছাত্র-শিক্ষকরা ‘বারাকাতি ফরমুলা’র জন্য বেশ ভালোভাবে চেনেন ও জানেন। আগেও তিনি অর্থনীতি নিয়ে পৌনঃপুনিক ও ঐকিক নিয়ম অনুসরণ করে উদ্ভট কিছু তথ্য দিয়ে দেশব্যাপী হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিলেন।
বারাকাতি ফরমুলা এবং প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতাদের দিনরাতের মতো কথার পার্থক্য নিয়েও এখন ফেসবুক, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরস-বিরস ও কৌতুকপূর্ণ মন্তব্য চলছে।
গত ১৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর বিষয়ে একটি ফরমুলা তুলে ধরেন জাতির সামনে। ওইদিন বিডিনিউজ এটি প্রকাশ করে। নিউজটির সঙ্গে পাঠকের মন্তব্যও প্রকাশ করা হয়। জনৈক রুবেল নতুন ফরমুলা দিয়ে লিখেছেন, শেয়ারবাজার থেকে ডাকাতি হওয়া টাকাগুলো উদ্ধার করলে একাধিক পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। এছাড়া কুইক রেন্টালের মাধ্যম যে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে আনলে, জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে যে টাকা অপচয় করা হয়েছে তা যদি শেখ হাসিনার নিজস্ব তহবিল থেকে আদায় করা হয়, মন্ত্রী ও এমপিরা দুর্নীতি করে যে টাকা কামিয়েছে তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে পারলে, আ’লীগের অঙ্গসংগঠন যে পরিমাণ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদি সব অপকর্ম করে টাকা ব্যাংকে রাখছে তা ফিরিয়ে আনতে পারলে, যারা ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ঋণখেলাপি হয়েছে তাদের টাকা আদায় করতে পারলে একাধিক পদ্মা সেতু করা সম্ভব।
সোহেলী নামে এক পাঠক লিখেছেন, ‘গত সাড়ে তিন বছরে মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর মুখে কত-শত কথাই জাতি শুনল। এখন চাঁদাবাজি করে পদ্মা সেতু করার উদ্যোগ নেয়ার সঙ্গেসঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর সোনার ছাত্রলীগ দেশব্যাপী চাঁদাবাজির ভয়াবহ তাণ্ডব শুরু করেছে। শেয়ারবাজার, কুইক রেন্টাল ও ব্যাংক থেকে লুট করা টাকা দিয়েই হোক আর বিদেশ থেকে ঋণ নিয়েই হোক—দ্রুত এ সেতুর কাজ করা উচিত। সেইসঙ্গে সেতুর নামও পাল্টানো উচিত। নতুন নাম হবে শহীদ সোহেল স্মৃতি সেতু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ মেধাবী ছাত্র পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদাবাজি করতে গিয়ে প্রথম শহীদ হলেন। পদ্মা সেতুর জন্য তার এ আত্মত্যাগ জাতি স্মরণে রাখবে। ছাত্রলীগ মানুষ হোক আর নাই হোক, স্বপ্নের এ সেতু হতে হবে। সামনে ইলেকশন। মুলা আর কত ঝুলবে?’ সোহেলী আরও লিখেছেন, ‘এর আগেও রাবিতে শিবির ও ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বে ফারুক নামে এক ছাত্র নিহত হওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব মহোদয় হেলিকপ্টার নিয়ে রাজশাহী গিয়ে হুংকার দিয়েছিলেন। জামায়াত ও শিবিরের সব কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি করে হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলায় সবাইকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পরে অবশ্য এ মামলা ও হুংকার ভুয়াই প্রমাণিত হয়েছে। এবার পদ্মার নামে ওঠানো চাঁদা ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা গুলি করে তাদের এক নেতাকে হত্যা করল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার এই ভাইয়ের বিষয়ে কিছু বলছেন না কেন? প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই তো পদ্মার নামে সারা দেশে ছাত্রলীগ চাঁদাবাজির মহোত্সবে নেমে পড়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে হুকুমের আসামি করে কবে মামলা করবেন?’
সেলিম লিখেছেন, আগে গ্রামে দেখতাম দান-খয়রাতের টাকা দিয়ে মক্তব তৈরি হতো। এখন পদ্মা সেতুর জন্যও নাকি রাস্তার মোড়ে মোড়ে দানবাক্স টাঙানো হয়েছে। হায়রে কপাল! দানের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু হবে কীভাবে? তাছাড়া ছাত্রলীগই বা চাঁদা উঠিয়ে কতদিনে পদ্মা সেতুর টাকা জোগাড় করবে। কেউ কেউ চাঁদার টাকা দিয়ে চারটি পদ্মা সেতু তৈরির কথা বলছেন। সব কেন যেন তামাশা-তামাশা মনে হচ্ছে। অনেক সময় স্বপ্ন-স্বপ্নও লাগছে। মূলত আমরা ঘোরের মধ্যে আছি। গাঁজার নৌকা নাকি পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলত। এখন দেখছি গাঁজার নৌকা পদ্মা সেতু দিয়েও চলছে।
লেখক : সাংবাদিক
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ঈশ্বরদীতে তিন সাংবাদিককে কুপিয়েছে যুবলীগ নেতা



ঈশ্বরদীতে ভেজাল গুড়ের ছবি তোলায় ৩ সাংবাদিককে কুপিয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আবদুল হান্নান। এ ঘটনায় যুবলীগ নেতা হান্নান ও তার সহযোগী আনিরুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল ঈশ্বরদীতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত সাংবাদিকরা জানান, ঈশ্বরদী বাজারের গুড় আড়তে ভেজাল গুড়ের মজুতের ছবি তোলায় ঈশ্বরদী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শেখ মহসিন, নির্বাহী সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শিপন, সাপ্তাহিক প্রথম সকালের যুগ্ম সম্পাদক জিল্লুর রহমান জীবনকে যুবলীগ নেতা হান্নান প্রথমে মারধর করে গুড়ের আড়তে আটকে রাখে। খবর পেয়ে সহযোগী কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্র হান্নান ও তার সহযোগী আনিরুল রামদা, ছুরি ও লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এতে মহসিন, শিপন ও জিল্লুর মারাত্মক আহত হন। বাজারের ব্যবসায়ীরা আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ঈশ্বরদী পৌরসভার কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জনি জানান, সাংবাদিকদের ছুরিকাঘাতের দৃশ্য দেখে তিনিসহ বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরাও হতবাক হয়ে যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ঈশ্বরদীর সব সাংবাদিক থানায় গিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে পুলিশ অভিযুক্ত আবদুল হান্নান ও আনিরুল ইসলামকে আটক করে। এ ঘটনায় মহসিন বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি মামলা করেছেন। এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদ সভা করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করা হয়। প্রেস ক্লাব সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ কিরণ, সাংবাদিক স্বপন কুমার কুণ্ডু, সেলিম সরদার, সেলিম আহমেদ, মহিদুল ইসলাম, ওহিদল ইসলাম সোহেল প্রমুখ।

সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

অবশেষে মন্ত্রী আবুল বিদায়



দুর্নীতির দায়ে অবশেষে বিদায় নিতে বাধ্য হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। তার পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে বিশ্বব্যাংকের আনা দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ১০ মাস আগেই দুর্নীতির এ অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক। তাকে মন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিতে বিশ্বব্যাংক প্রথম থেকেই সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল। কিন্তু সরকার দুর্নীতি তদন্তে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় গত ৩০ জুন পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে বিশ্বব্যাংক। এতে পদ্মা সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পদত্যাগের আগে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী ছিলেন। গত ডিসেম্বরে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে নতুন করে সৃষ্টি করা এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদের গতকালের বৈঠকেও অংশ নেননি আবুল হোসেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এর আগে ঘুষ কেলেঙ্কারির দায়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। বর্তমানে তিনি দফতরবিহীন মন্ত্রী। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। আবুল হোসেনের পদত্যাগের ফলে বর্তমান সরকারের তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা ঘটল। আওয়ামী লীগের বিগত সরকারের (১৯৯৬-২০০১) মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন আবুল হোসেন। পাসপোর্ট জালিয়াতির দায়ে ওই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
আবুল হোসেনের পদত্যাগ করছেন—এমন গুঞ্জন গত দুই দিন ধরে ছড়িয়ে পড়ে। গত রোববার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে আবুল হোসেন বিজ্ঞাপন দিয়ে আকস্মিকভাবে প্রকাশিত খোলা চিঠিতে পদত্যাগের ইঙ্গিত দেন। গতকাল তার পদত্যাগ নিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দিনভর নাটকীয়তার পর বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র আবুল হোসেনের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে সকালে পতাকাবিহীন গাড়ি নিয়ে নিজ বাসা থেকে বের হন। বিকাল পর্যন্ত সাংবাদিকরা বাসার সামনে অপেক্ষা করেও তার দেখা পাননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে অনেক চেষ্টা করেও আবুল হোসেনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল সকালে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে যোগ দেননি তিনি। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে তিনি আবুল হোসেনকে দেখেননি।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আবুল হোসেন : পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য ঘুষ বা কমিশন চেয়েছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরা। আবুল হোসেনের নাম ব্যবহার করে এ ঘুষ চাওয়া হয়। কমিশন দিলে কাজ পেতে যোগাযোগমন্ত্রী নিজেই সহায়তা করবেন বলেও আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পরপর সাকো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ থেকে অব্যাহতি নেন আবুল হোসেন। এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা হলেন মন্ত্রীর স্ত্রী খাজা নার্গিস হোসেন এবং দুই মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেন। অথচ তত্কালীন যোগাযোগমন্ত্রী সাকোকে কমিশন এজেন্ট করার জন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়েছেন। এ জন্য তিনি ভয়ভীতিও দেখান। বিশ্বব্যাংক বিস্তারিত তদন্ত করে সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রীর এসব দুর্নীতির তথ্য প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও দুদককে দেয়। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনটি সরকারকে দিয়ে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, এ অবস্থায় পদ্মা সেতুতে অর্থ পেতে হলে বাংলাদেশকে এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো ঋণ ছাড় করা হবে না। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রীকে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদনটি দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের ভাষায়, অত্যন্ত গোপনীয় এ প্রতিবেদনটি দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট লিওনার্ড এফ ম্যাকার্থি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সেতুর মূল অংশের প্রাকযোগ্যতা চুক্তি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিসংক্রান্ত অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। অভিযোগগুলো মূলত যোগাযোগমন্ত্রী ও তার মালিকানাধীন কোম্পানি সাকোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়, যোগাযোগমন্ত্রী ও সাকোর কর্মকর্তারা মিলে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেন, সাকো হলো পদ্মা সেতু নির্মাণের যেকোনো কাজ পাইয়ে দেয়ার ব্যাপারে এক ধরনের নীরব প্রতিনিধি (সাইলেন্ট এজেন্ট)। কোনো কাজ পেতে হলে বা প্রাকযোগ্যতায় টিকতে হলে সাকোকে অর্থ দিতে হবে। সাকোর পক্ষ থেকে ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখানোর কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। যদিও আবুল হোসেন তার খোলা চিঠিতে দাবি করেছেন, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তিনি দুর্নীতিবাজ নন।
এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ ঘুষ : পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ তিনজন। তারা হলেন পদত্যাগী মন্ত্রী আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া এবং পদ্মা সেতুর সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তাদের প্রতিনিধিরা এ অর্থ কমিশন হিসেবে চান। অর্থের অবৈধ লেনদেনের জন্য গত জুন মাসে গ্রেফতার হওয়া এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমের কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছে কানাডার পুলিশ। আর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়েছে। এর পরই গত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী ও জাতীয় সংসদের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ভাই নিক্সন চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবুল হাসান চৌধুরী তার আত্মীয় জিয়াউল হককে নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের সঙ্গে সেতু ভবনে পদ্মা সেতু-সম্পর্কিত এক বৈঠকে অংশ নেন। তার ওই আত্মীয় হচ্ছেন বাংলাদেশের কানাডিয়ান এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় একজন প্রতিনিধি। এছাড়া জাতীয় সংসদের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ভাই নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে এসএনসি-লাভালিনের বাংলাদেশী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। কানাডা ও বাংলাদেশের যেসব হোটেলে তাদের নিয়মিত সাক্ষাত্ হতো তার ঠিকানা ও সময়সূচিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ করছে সরকার : পদ্মা সেতু দুর্নীতির ঘটনায় চারটি শর্ত দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। সেগুলো হচ্ছে—প্রথমত, যেসব সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব থেকে অন্তত ছুটি দেয়া। দ্বিতীয়ত, এ অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকে একটি বিশেষ তদন্ত দল নিয়োগ করা। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্যানেলকে অভিযোগটি বস্তুনিষ্ঠভাবে তদন্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সার্বিক সহায়তা প্রদান। চতুর্থত, বাংলাদেশ সরকারের আইন ও বিধি অনুযায়ী তদন্তে দোষী প্রমাণিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এসব শর্ত না মানায় গত ৩০ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয়। এরপর এডিবিও তাদের চুক্তি বাতিল করেছে। কারণ হিসেবে ওই সময়ে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটন থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা না করায় তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে। সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মকর্তা, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের যোগসাজশে বিভিন্ন সূত্র থেকে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে আসে। এ তথ্য-প্রমাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিত ও দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের কাছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্বব্যাংক জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার পরও দুর্নীতি তদন্তে তেমন কোনো সাড়া না পাওয়ায় এ অর্থচুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এরপর থেকে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিশ্বব্যাংকের বিষোদ্গার করে আসছেন। তারা দেশীয় অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্বব্যাংকের ঋণ পাওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে আসছেন। তিনি বিশ্বব্যাংকের চার শর্ত পালনের আশ্বাস দেন। এরপরই পদত্যাগ করলেন আবুল হোসেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ফের ফিরিয়ে আনার জন্য আবুল হোসেনকে সরে যেতে হলো।
আবুলের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করেছিল উইকিলিকস : যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন সৈয়দ আবুল হোসেনের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে উইকিলিকস। এতে বলা হয়, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি আবুল হোসেনের সততা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করে ওয়াশিংটনে যে মূল্যায়ন পাঠিয়েছিলেন, তা গিয়ে পড়ে উইকিলিকসের হাতে। মরিয়ার্টির মূল্যায়নটি গত ৩০ আগস্ট প্রকাশ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুনিয়া কাঁপানো সোশ্যাল মিডিয়া উইকিলিকস। এতে বলা হয়েছে, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তার মূল্যায়নে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের দায়িত্ব এমন এক মন্ত্রীর কাঁধে দিয়েছেন, যার সততা প্রশ্নবিদ্ধ। এই মন্ত্রী বলতে তিনি সৈয়দ আবুল হোসেনকেই ইঙ্গিত করেছিলেন। মার্কিন দূতাবাস থেকে তারবার্তাটি যুক্তরাষ্ট্রে যায় ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। এতে মরিয়ার্টি লেখেন, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তার কাজের ধরন নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। চীনের সঙ্গে এই মন্ত্রীর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ, যা সবার জানা। মরিয়ার্টি তার বার্তায় ২০১০-এর ৩ ফেব্রুয়ারি যোগাযোগমন্ত্রীর দেয়া এক ভোজসভায় অংশ নেয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে জানান, ওই ভোজসভাতেই সৈয়দ আবুল হোসেন পদ্মা সেতু নির্মাণে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র শর্ত নিয়ে আপত্তি তুলে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তদবিরের অনুরোধ করেন। এ সময় ঢাকায় উড়ালপথ (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণেও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশে কাজের অনেক সুযোগ থাকবে এমন প্রলোভন দেখান। তবে আবুল হোসেনের দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ ফুটে ওঠে মরিয়ার্টির অন্য বক্তব্যে। ওই বার্তায় তিনি বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে যোগাযোগমন্ত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সম্প্রসারণের কাজকে ব্যবহার করতে চান। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সম্প্রসারণে ২০ কোটি ডলারের কাজের জন্য ১০টি দরপত্রে সাতটি বিদেশি ও তিনটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রী একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও মরিয়ার্টিকে জানান। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়ে তিনি রাষ্ট্রদূতকে বলেন, ‘মহানগরীতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে আমরা এমন একটি প্রকল্প চাই, যা দুই দেশের সম্পর্কের প্রমাণ বহন করবে।’

শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মার্কিন সিনেটে গুম-খুন নিয়ে শুনানি : শুধু পরামর্শ নয় সতর্ক বার্তাও



বাংলাদেশের গুম ও ক্রসফায়ারসহ গুপ্তহত্যা নিয়ে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট সোচ্চার হয়েছে। গত ১৯ জুলাই মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির শুনানিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গুমের সংখ্যা ভয়ানক হারে বেড়ে চলেছে। বিরোধী দলের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে। দেশটিতে শ্রমিকের অধিকারসহ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। শুনানিতে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসির পরিচালক জন সিফটন দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন। গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে ধরে এবং র্যাবকে ‘কুখ্যাত’ ও ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেছেন, ক্রসফায়ারের নামে তারা লোকজনকে হত্যা করছে। শুনানিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার জন্য গঠিত যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং তার কার্যক্রম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে সংঘটিত অপরাধের আসল ‘লেখক ও স্থপতি’ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ছাড় দিয়ে যে বিচার কাজ চালানো হচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ব্যক্তির জবানবন্দিকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করার মতো বেশ কিছু তথ্যের উল্লেখ করেছেন তারা, যেগুলো আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী যথার্থ নয়।
শুনানিতে অন্য কিছু বিষয় উত্থাপিত হলেও সবকিছুকে ছাড়িয়ে গুম ও গুপ্তহত্যার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এদিকে ওয়াশিংটনে যেদিন মার্কিন সিনেটে শুনানি হয়েছে, সেদিনই ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরাও গুম ও গুপ্তহত্যার ব্যাপারেই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ডিক্যাবের ওই অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম এবং শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করে ইইউ’র রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা বলেছেন, এর ফলে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কথাটা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করা দরকার। কারণ, উন্নত ও ধনী দেশের ক্রেতারা কোনো পোশাক কেনার আগে রফতানিকারক দেশের শ্রমিকদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর করেন। তারা আশা করেন, তাদের অর্থ শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটাবে। সে একই ক্রেতারা যখন শোনেন, বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকরা ভালো অবস্থায় নেই এবং তাদের একজন নেতাকে গুম করে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তখন তারা বাংলাদেশের পোশাক কেনার আগে দশ বার চিন্তা না করে পারেন না। এভাবে পিছিয়ে পড়তে পড়তে একসময় বাংলাদেশের পোশাকই তারা বর্জন করবেন। সত্যি তেমনটি হলে ইউরোপের দেশগুলোতে তৈরি পোশাকের রফতানি বন্ধ হয়ে যাবে। আর রফতানি বন্ধ হলে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। কারণ, ইউরোপই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা। এদিকে গার্মেন্ট যেহেতু রফতানি আয়ের প্রধান খাত, সেহেতু রফতানির প্রধান বাজার হারানোর পরিণতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই বাড়িয়ে বলার প্রয়োজন পড়ে না।
আমরা মনে করি, মার্কিন সিনেটের শুনানির পাশাপাশি ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূতের মূলকথার মধ্যে সরকারের জন্য পরামর্শ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সতর্ক হওয়ার বার্তাও। কারণ উন্নত দেশগুলোতে গুম ও গুপ্তহত্যাকে খুবই বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। যেসব দেশের সরকার গুম-খুন ও গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িত, সেসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিরোধিতা করেন ট্যাক্সদাতা জনগণ। ট্যাক্সদাতাদের কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে সব দেশের সরকারকেই এদেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কথা না শুনলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়েও পারবে না তারা। সুতরাং মহাজোট সরকারের উচিত অবিলম্বে অন্তত গুম ও গুপ্তহত্যার মতো কর্মকাণ্ড বন্ধ করা। র্যাবকে দিয়েও এমন কোনো কাজ করানো চলবে না, যার অজুহাতে এলিট এ বাহিনীকেই বিলুপ্ত করা দাবি উঠবে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে মার্কিন সিনেটের শুনানিতে যে মন্তব্য করা হয়েছে, সেদিকেও সরকারের উচিত মনোযোগ দেয়া। কারণ ‘লেখক ও স্থপতি’ তথা প্রধান অপরাধী ছিল পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেই অপরাধীদের একেবারে ছাড় দিয়ে এদেশের বিরোধী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে বলেই সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে শুধু নয়, বিচার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্যই মার্কিন সিনেটের শুনানিতেও কথা উঠেছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের কোনো বিষয়ে পা বাড়ানো দরকার যুক্তি ও আইনের ভিত্তিতে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের গঠন থেকে গোটা বিচার প্রক্রিয়ার কোনো পর্যায়েই সেটা করা হয়নি এবং এখনও হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারের উচিত কেবলই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে এগোনোর পরিবর্তে এ কথাটাও মনে রাখা যে, ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীক্ষষ্টভাবেই নজর রাখছে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আলোচিত মামলার সাক্ষীরাও গুম



নাছির উদ্দিন শোয়েব
আলোচিত মামলার সাক্ষীদেরও কি গুম করা হয়েছে? ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওইসব ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! ৭০ লাখ টাকা কেলেঙ্কারির ঘটনায় সমালোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও দফতরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িচালক আলী আজম ৩ মাস ১২ দিন হলো নিখোঁজ। এদিকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুমের পর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে না তার গাড়িচালক আনসার আলীকে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বনানী থানার এএসআই মাহবুবেরও হদিস নেই। অপরদিকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বাসার দারোয়ান হুমায়ুন কবিরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আলোচিত মামলাগুলোর তদন্তে সাক্ষী হিসেবে এই ব্যক্তিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রত্যেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন হলো এসব ব্যক্তি ফেরার। তাদের খুঁজ বের করার চেষ্টা চলছে না। এমনকি মামলার তদন্তের প্রয়োজনেও তাদের হাজির করা হচ্ছে না। নিখোঁজ এসব ব্যক্তির পরিবার দুশ্চিন্তায় রয়েছে। তাদের ভাগ্যে কী জুটেছে কেউ জানে না। তারা গুম বা গুপ্তহত্যার শিকার কিনা তা নিয়ে অজানা আতঙ্কে দিন কাটছে পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনদের।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগ-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে না। তারা পুলিশ ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। সুরঞ্জিত সেনের এপিএস ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক আলী আজম ও ইলিয়াস আলীর গাড়িচালক আনসার আলীকে খুঁজে বের করার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের পরিবার। আলী আজমের বাবার দাবি, শুধু তার ছেলে একাই নিখোঁজ নয়। ছেলের স্ত্রী ও মেয়ে কারোরই কোনো খোঁজ নেই। তারা বিভিন্ন স্থানে খুঁজেছেন। কেউ সন্ধান দিতে পারেনি। ইলিয়াস আলীর গাড়িচালক আনসার আলীর পরিবারের দিন কাটছে চরম কষ্টে। যাদের কাছে সাহায্যের জন্য যাবেন সেই ইলিয়াস আলীই তো গুম! এ অবস্থায় আনসার আলীর দরিদ্র পরিবার গ্রামের বাড়িতে ছেলে-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে জানা যায়।
সাংবাদিক-দম্পতি সাগর-রুনির বাসার দারোয়ানের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া ইলিয়াস আলীকে গাড়ি থেকে তুলে নেয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষকারী বনানী দুই নম্বর রোডের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে যাদের নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে তারাও নিখোঁজ। এর মধ্যে কয়েকজনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আলী আজমকে ফিরে পেতে চায় মা-বাবা : ‘প্রতিদিনই আমরা দিন গুনছি। দিন গুনতে গুনতে ৩ মাস পার হলো আমাগো ছেলে আলী আজমকে আমাগো বুকে ফেরত পাইলাম না। আমরা আলী আজমকে দেখতে চাই। হেয় কোনো অন্যায় করলে সাজা ভোগ করবো, আমাগো হেতে কোনো মানা নাই। আমাগো জানতে হইব সে বাইচ্চা আছে কিনা’। এ কথাগুলো বললেন দফতরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুকের গাড়িচালক আলী আজমের বাবা দুদ মিয়া (৭২) ও মা মাজেদা বেগম (৬০)। ছেলের কথা বলার সময় তারা কেঁদেছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা আলী আজমকে নিয়ে অজানা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের মনে ভর করেছে নানা শঙ্কা। একই সঙ্গে তারা এ আতঙ্কেও আছেন, আলী আজম আটক বা গুম আছে কিনা, নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে?
গত ৯ এপ্রিল রাতে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে আটক হওয়ার পর থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আলী আজমের। সেদিন রাতেই সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের জিএম ইউসুফ মৃধা, কমান্ড্যান্ট এনামুল হক ও চালক আলী আজম আটক হয়। পরদিন অন্যরা ছাড়া পেলেও আলী আজম রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ রয়েছে। আজমের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামে। বাবা দুদ মিয়া ও মা মাজেদা বেগম। আলী আজমের ভাই শাহআলম খান, কাইউম খান, কামাল খান, সোহেল খান ও বোন নাজমা বেগম, সালমা বেগম। লেখা পড়ায় আলী আজম অষ্টম শ্রেণী পাস। ড্রাইভারি শিখে ঢাকায় চাকরি করলেও কখন যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুকের গাড়িচালক হয়েছে জানতো না তার বাড়ির কেউ। বিষয়টি তারা টেলিভিশনের খবর ও পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারে। দুদ মিয়া বলেন, আলী আজমের স্ত্রী স্বপ্না ও মেয়ে রিয়াকে নিয়ে ঢাকায় থাকত। আলী আজমের বাবা দুদ মিয়া বলেন, আমার ছেলে আটক, গুম, খুন কোনোটি জানতে চাই না। ছেলেকে ফেরত চাই। ভাই কাইয়ুম খান বলেন, আমরা হতাশ, কিছুই বলার নেই আমাদের। মা সন্তানের খোঁজে এ বাড়ি ও বাড়ি ছুটে বেড়ান। বেশকিছু দিন আগে ২ জন লোক এসেছিল। পরিচয় গোপন রেখেছে। তবে ঢাকা যেতে বলেছিল।
মানবেতর দিন কাটছে আনসার আলীর পরিবারে : ইলিয়াস আলীর গাড়িচালক নিখোঁজ আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে স্বামীর সঙ্গে তার শেষবারের মতো কথা হয়। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তার কোনো শত্রু নেই বলেও দাবি করেন মুক্তা বেগম। তিনি বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তার দুই বছরের শিশু সারাদিন বাবাকে খুঁজছে। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর বৃদ্ধ মা সন্তান হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর গাড়িরচালক আনসার আলীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়েছে। বাংলাদেশ মোটরচালক দল এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক সেলিম রেজা বাবু বলেন, ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক ও ইলিয়াস আলীর গাড়িচালক দুই পরিবারের দুটি মানুষ নিখোঁজ। পরিবার দুটির উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আর কেউ নেই। এভাবে পরিবারের একমাত্র ব্যক্তি যদি নিখোঁজ হয়ে যান, এই পরিবার দুটির সদস্যদের জীবন জীবিকায় যেমন নেমে আসবে বিপর্যয় তেমনি স্তব্ধ হয়ে যাবে সামনে চলার গতি। তাই অবিলম্বে তাদের জনসম্মুখে হাজির করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ সদস্য কোথায়? বনানী ২ নম্বও রোডে সাউথ পয়েন্ট স্কুলের কাছ থেকে ইলিয়াস আলী ও তার গাড়িচালক আনসার আলীকে আটক করে নেয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই মাহবুব এখন কোথায়? ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে তাকে দুই সপ্তাহের ছুটিতে পাঠানো হলেও তিনি আর বনানী থানায় যোগ দেননি। তিনি কোথায় আছেন তাও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে ইলিয়াস আলীর গাড়িটিকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে দু’জনকে নামিয়ে নেয়ার পর তিনিই প্রথম ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বনানী থানার ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই এএসআই ছুটিতে চলে যান। এর আগে তিনি থানায় অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মহাখালী কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সেখান থেকেই তিনি ছুটিতে যান।
জানা যায়, ইলিয়াস আলীকে আটক করে নেয়ার সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা টহল ডিউটিতে ছিলেন। লোকজনের চিত্কার শুনে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি রাস্তার মাঝ থেকে গাড়িটি ঠেলে সাউথ পয়েন্ট গেটের কাছে নিয়ে রাখেন। সূত্র জানায়, ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তিনি প্রথমে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটনার বর্ণনা দিলেও পরে আর মুখ খুলতে রাজি হননি। সূত্র জানায়, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশেই তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হোসেন বলেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছু স্পষ্ট করে বলতে পারবেন না। তিনি থানায় যোগ দেয়ার আগে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিতে গেছেন। তবে তিনি শুনেছেন, দুই সপ্তাহের ছুটির পর এএসআই মাহবুবকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু রাজারবাগ পুলিশ লাইনে খোঁজ নিয়েও ওই পুলিশ কর্মকর্তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দারোয়ন হুমায়ুন নিখোঁজ : গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ৫৮/এ/২ ইন্দিরা রোডে পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনি। এ ঘটনার এখনও পর্যন্ত কিনার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পরই ওই ভবনের দুই সিকিউরিটি গার্ড ও কেয়ারটেকারকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের গোয়েন্দা কার্যালয়ে আটক রেখে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে গোয়েন্দারা গত ২৬ ফেব্রয়ারি সাংবাদিকদের জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া ওই ভবনের দারোয়ান হুমায়ুন কবীর, পলাশ রুদ্র পাল এবং ম্যানেজার আবু তাহেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জানা যায়, এই তিনজনকে ছেড়ে দেয়ার পরও কয়েক দফা ডেকে নিয়ে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু এরপর থেকেই নিখোঁজ রয়েছেন হুমায়ুন কবির। তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হলেও ওই বাসায় পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার তদন্তভার র্যাবের হাতে আসার পর র্যাব সদস্যরাও হুমায়ুনকে খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানা যায়। তবে গত ১৫ জুলাই নিখোঁজ গার্ডের মোবাইল ফোন সেট গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার সোলায়মানের ভাই মোসলেম উদ্দীনের কাছ থেকে সেটটি উদ্ধার করে র্যাব। মোসলেমকে আটক করে র্যাব জিজ্ঞাসাবাদও করেছে । মামলার বর্তমান তদন্তকারী সংস্থা র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, দারোয়ান হুমায়ুন কবিরকে খুঁজতে গিয়ে তার মোবাইল সেটের সন্ধান পান তারা।

Ads