শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিপন্ন নিরাপত্তা, বিপন্ন গণতন্ত্র



প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান
পনের কোটি লোকের বসবাসের বিচিত্র দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ক্ষুদ্র এ ভূখণ্ডে প্রতিনিয়ত ঘটে নানা অঘটন। এখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বড় দুর্ঘটনার সুরাহা হওয়ার আগে ঘটে যায় তার চেয়েও বড় কোনো দুর্ঘটনা। যারা দেশ কিংবা দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিষয় সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সচেতন কিংবা যারা এইসব অঘটনের খবর রাখেন তারা একটু পেছনে তাকালেই আমার এই লেখার সত্যতা খুঁজে পাবেন। গেল দু্’সপ্তাহের মধ্যে ঘটে যাওয়া এরকম দুটো ঘটনা আমাদের বেশ ভাবিয়ে তুলছে। তার একটি গত ৯ এপ্রিল রাতে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অর্থ কেলেঙ্কারি আর অন্যটি বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা সভাপতি, সাবেক তুখোড় ছাত্রনেতা ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীকে গুম করে ফেলা। দুটো বিষয়ই নানা কারণে জনমনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। এসব কারণের অন্যতম হলো সুরঞ্জিত বাবুকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাটক আর ইলিয়াস আলীকে নিয়ে তার নির্দয় বক্তব্য। ১৭ এপ্রিল রাতে গুম হন ইলিয়াস আলী। তার নিখোঁজের পর সারাদেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ছে এই অন্যায়ের প্রতিবাদে। খবরের কাগজসহ সব গণমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এখন এই গুম নিয়েই নানা খবর বের হচ্ছে আর অন্যদিকে সুরঞ্জিত বাবু মোটামুটি বহাল তবিয়তে দফতরবিহীন মন্ত্রী হয়ে পরম সুখে ও পরম নিরাপদেই দিনাতিপাত করছেন। যেন কিছুই ঘটেনি আর কি! তদন্ত কমিটিগুলো প্রথম দুই দিন যে তত্পরতা চালিয়েছিল তা এখন ইলিয়াস আলী ইস্যুতে পুরোটাই চাপা পড়ে গেছে। মন্ত্রীর এপিএস জনসম্মুখে এসে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে বড় গলায় বলছেন, আটককৃত বস্তাভর্তি টাকার মালিক তিনি নিজেই, বাবু সুরঞ্জিতের কোনো দোষ নেই! সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেলওয়ের জিএম আর নিরাপত্তা কর্মকর্তার চোখে-মুখেও দুশ্চিন্তার লেশমাত্র দেখা যায়নি। সুতরাং সুরঞ্জিত বাবুর কালো বিড়াল নাটক যে সরকার আগের ঘটে যাওয়া সব বড় বড় ঘটনার মতো ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। শুধু অজপাড়াগাঁয়ের হতদরিদ্র ও হতভাগ্য ড্রাইভার আজমই আমাদের মাঝ থেকে হয়তো চিরতরে হারিয়ে গেল। তার ছোট বাচ্চা চিরতরে এতিম হলো, বৌ হলো বিধবা। তাদের আকুতি এবং তাদের কান্না যে কত হৃদয়বিদারক তা উপলব্ধি করার যেন কেউ নেই। তাদের চোখের পানির জবাব নিশ্চয়ই বর্তমান দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত বাবু বা প্রধানমন্ত্রী কখনোই দেবেন না।
যা হোক, ইলিয়াস আলীর কথায় ফিরে আসি। অনেক পত্রিকায় এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে কেন ইলিয়াস আলী ক্ষমতাসীন দলের টার্গেট ছিলেন। গুমের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্বামীর সন্ধান চেয়ে ১৯ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করেন তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। আদালতের প্রতি আমরা অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। কারণ আদালত পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে ইলিয়াসকে আদালতে হাজির করতে, যা আমাদের মনে ক্ষীণ আশার সঞ্চার করে। যখন একটি রাষ্ট্রে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয় তখন একমাত্র আদালতই আমাদের শেষ ভরসা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছিলেন ইলিয়াস আলীর বাসায় তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার সর্বাত্মক চেষ্টার আশ্বাস দেন। অন্যদিকে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিতে, যাতে ইলিয়াস আলীকে স্বল্প সময়ের মধ্যে খুঁজে বের করা হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তখন বলেছিলেন ‘সরকার বিব্রত’। এসব বক্তব্য শুনে এদেশের মানুষ অভ্যস্ত। তবুও বোধকরি এসব বক্তব্যে ইলিয়াস আলীর পরিবার কিছুটা আশার আলো দেখছিল। কিন্তু সে আলো নিভে যায় যখন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বললেন, ‘বিএনপির এক নেতা নাকি হারিয়ে গেছেন। সেও হারিছ চৌধুরীর মতো লুকিয়ে আছে কিনা কে জানে। আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতে বিরোধীদলীয় নেত্রীর নির্দেশে ইলিয়াস আলী লুকিয়ে থাকতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত। তার এই বক্তব্যের অনেক ভয়াবহ দিক আছে। প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান, জাতির প্রতিনিধি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দুঃখ প্রকাশ করলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে বিব্রত হলেন সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এরকম একটি সংবেদনশীল বিষয়ে জাতি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন বক্তব্য আশা করে না। তার এই বক্তব্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার প্রত্যয় হারাবে এবং অপরাধীরা আরও প্রশ্রয় পাবে। একটি রাষ্ট্রের নির্বাহী পদে বসে এ ধরনের কৌতুকপূর্ণ নিষ্ঠুর বক্তব্য স্বজন হারানো একটি পরিবারের সঙ্গে নিশ্চয়ই অমানবিক আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। স্বজন হারানোর শোকে শোকাতুর একটি পরিবারের সঙ্গে এরচেয়ে নিষ্ঠুর তাচ্ছিল্য আর কী হতে পারে? শেষ পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তার স্বামীর লাশটি ফেরত চেয়েছেন। একটি স্বাধীন দেশে গুম হয়ে যাওয়া একজন মানুষের লাশটি পর্যন্ত খুঁজে না পাওয়া, তার সঠিক সত্কার করতে না পারা যে কত মর্মস্পর্শী, কত বেদনাদায়ক তা বোধকরি এই মুহূর্তে তার পরিবার ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না। ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর এই চাওয়া থেকে আমরা বুঝতে পারি, এদেশে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ পেলেও তার স্বজনরা বেজায় খুশি। এটা থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সঠিক চিত্র জনগণের সামনে ফুটে ওঠে। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে, ‘কোথায় আমাদের স্বাধীনতা আর কোথায় তার গণতান্ত্রিক সরকার?’
যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী অসত্য বলছেন তা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। তার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য-প্রমাণ আছে যে ইলিয়াস আলীকে বিরোধী দলই গুম করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর তার দায়িত্ব হয়ে পড়ছে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করা। এদেশের আর্মি, র্যাব, পুলিশসহ সব গোয়েন্দা সংস্থাই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কেউ যদি লুকিয়েও থাকে আর সরকার যদি তাকে খুঁজে না পায় তাহলে সরকার এবং সব আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যর্থ বলেই পরিগণিত হওয়া উচিত। অথবা আমাদের বোঝা উচিত, দেশ পরিচালনা করছে বিরোধী দল এবং তারা যা খুশি তাই করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের কাছে ব্যর্থ। একটি দেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতার মতো দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার উদ্দেশ্য কি এই ছিল যে স্বাধীন দেশে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগব? অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে আমরা ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নই। বেডরুম পাহারা দেয়া যে সরকারের দায়িত্ব নয়, সে সরকার নির্জন রাস্তাঘাট পাহারা দেবে কীভাবে? যে দেশের সরকার মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে না, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে পারে না সে দেশের জনগণ নিশ্চয়ই একদিন এর প্রতিবাদ করবে। আমরা জানি না সেটা কবে বা সে প্রতিবাদের ভাষা কী হবে।
অন্যদিকে ‘র্যাব এই অপহরণে জড়িত ছিল’ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য যদি সঠিক হয় তা রাষ্ট্রের জন্য আরও ভয়াবহ, আমাদের দেশের রাজনীতির জন্য অশনি সঙ্কেত। রাজনীতি করা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। রাজনীতি মানে মৃত্যু উপত্যকা নয়। সরকার যদি গুম খুনের তদন্তে ব্যর্থ হয়, কোনো দায়িত্ব না নেয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি ঘাতকের ভূমিকা পালনের অভিযোগ ওঠে, তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে যদি খুন, গুম, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ বা অপহরণের মতো জঘন্য অভিযোগ উত্থাপিত হয় বা তাতে রাষ্ট্রের যদি প্ররোচনা থাকে তাহলে মানুষ যতই দল বেঁধে চলুক এসব ঠেকানো যাবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানুষের জানমালের নিশ্চয়তা প্রদান করা আর তা না পারলে সে রাষ্ট্র বা সরকার নিঃসন্দেহে ব্যর্থ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইলিয়াস আলী বা এর আগে গুম হয়ে যাওয়া শতাধিক মানুষের ব্যাপারে কোনো কুলকিনারা করতে পারে না, তারা দরিদ্র গাড়িচালক আজমের সন্ধান দিতে পারে না, তারা সাংবাদিক দম্পতি হত্যার তদন্তে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। অথচ হরতালে বা বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক প্রতিবাদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে তাড়া করায়, মির্জা আব্বাসের বাসায় ঢুকে তাণ্ডব চালাতে, লিমনকে খোঁড়া করে দিয়ে নাটক সাজাতে, কাদেরকে মারধর করে ডাকাত সাজানোর পাঁয়তারা করাতে এবং ‘ক্রসফায়ার কেচ্ছা’ রচনা করাসহ সব অপকর্মেই চরম দক্ষতার পরিচয় দেয়। রাষ্ট্রের সরাসরি ইন্ধন না থাকলে কীভাবে এত অপকর্মের পরও তাদের কোনো বিচার হয় না? তাদের ক্ষমতা কি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহীর ক্ষমতার চেয়েও বেশি?
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে গত কয়েক মাসে ১০০টি গুমের একটি ঘটনারও সুরাহা হয়নি। নিখোঁজের এই চিত্র জাতির জন্য লজ্জাজনক। ইলিয়াস আলীর মতো এত ওপরের একজন মানুষের নিরাপত্তা যদি এরকম হয় তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? ২০১০ সালে ২৬ জুন ফার্মগেট থেকে অপহৃত হন ওয়ার্ড কমিশনার ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, ২০০৮ সালে অপহৃত হন যুবদল নেতা লিয়াকত। অদ্যাবধি তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকায় অপহৃত হন ঝিকরগাছা বিএনপি সভাপতি নাজমুল ইসলাম। পরদিন সকালে তার লাশ পাওয়া যায় গাজীপুরে। গুম ও অপহরণের এরকম শত শত চিত্র আমাদের জানা আছে। এসব গুম বা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা নিয়ে সরকার তথা সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি যে অভিযোগ উঠছে সরকারের উচিত কথায় নয় কাজের মাধ্যমে এই অভিযোগ খণ্ডন করা। অন্যথায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইন ভঙ্গ করার কারণে আইনের প্রতি আস্থা হারাবে সাধারণ জনগণ। এটা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের জন্য, জাতির জন্য ভয়াবহ ক্ষতির রূপ ধারণ করতে বাধ্য। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তত্পর হয় তাহলে প্রতিটি গুম, হত্যা কিংবা অপহরণের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব। প্রতিটি অপরাধের যেমন কিছু চিহ্ন থাকে যেগুলোর সূত্র ধরে অপরাধীকে শনাক্ত করা যায়, ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায়ও তা আছে। ঢাকাতে প্রায় প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে ও প্রতিটি মোড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। পুলিশের সিসিটিভি ক্যামেরায় ইলিয়াস আলী অপহরণের দৃশ্য থাকার কথা। মহাখালী ফ্লাইওভার এলাকায় সিসিটিভির মাধ্যমে ঘটনাস্থল কভার দেয়ার কথা। সেসব ভিডিও ফুটেজ মনিটর করলেই ওই সময় রাস্তায় কোন গাড়ি চলছে, তাতে কারা যাত্রী ছিল সেটা ধরা পড়ার কথা। অন্যদিকে গুমের ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বলে জানা যায় তারা এবং ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভারের ফোনের কল লিস্টও হতে পারে তদন্তের আরও উত্স।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের মতে, নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি তাকে খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হয় তাহলে গুম, অপহরণ অথবা খুনের এই ঘটনা আরও বাড়বে। আজকে একজনকে পাওয়া যাবে না, কাল আরেকজনকে পাওয়া যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে জাতি হিসেবে আমাদের গন্তব্য কোথায়? যারা হারিয়েছে তাদের কি কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না? সাগর-রুনির খুনিরা কি কোনোদিন শাস্তি পাবে না? আদালতে পুলিশের ব্যর্থতা স্বীকারের পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলেন তারা ব্যর্থ হয়নি বরং তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে, তাহলে সাধারণ মানুষ কার কথা বিশ্বাস করবে? দায়িত্বশীল পদে যারা আছেন, বিশেষ করে মন্ত্রী পর্যায়ের লোকদের যে কোনো কথা বলার আগে ভেবে-চিন্তে কথা বলা উচিত, নয়তো এই ব্যর্থতার ভার তাদের ওপরই বর্তাবে। অন্যদিকে ‘বিএনপিই গুপ্তহত্যা চালু করছে’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে প্রথম আলোর অনলাইন জরিপে ২২ এপ্রিল ৮১ শতাংশ জনগণ দ্বিমত পোষণ করেছেন। বিএনপি যদি চালু করেও থাকে এখন তো তারা সরকারে নেই। সুতরাং এখন এটা চলছে কেন? ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্ব এটাকে বন্ধ করা। ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর কান্না, স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার তার ব্যাকুলতা, তার ছোট্ট মেয়ের কান্না এবং বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি—এগুলোর প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা আশা করি সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধী দলকে অযথা দোষারোপ না করে ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করবে। অন্যথায় দেশ বিশৃঙ্খলার দিকে এগুবে যা কারও কাম্য নয়। ইলিয়াস আলী গুম হওয়া গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার হাতছানি। আমরা সাধারণ জনগণ তবুও স্বপ্ন দেখি একটি সুষ্ঠু বিকাশমান গণতন্ত্রের। আমাদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতায় আমরা শুধু পরম করুণাময়ের কাছে দোয়া করতে পারি, যাতে অচিরেই ইলিয়াস আলী তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে।
লেখক : ডিন, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জাবিতে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের দফায় দফায় হামলা, চবিতে সংঘর্ষ



জাবি প্রতিনিধি: জাবিতে ভিসি’র অপসারণে আন্দোলনকারীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। বিকালে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর হামলার পর রাতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে হামলা চালানো হয় শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিদের ওপর। ভিসিপন্থি হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগ কর্মীদের এ হামলায় ৫ শিক্ষক, ১২ সাংস্কৃতিক কর্মীসহ এক সাংবাদিক আহত হয়েছে।
প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক একেএম শাহনেওয়াজ জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় ভিসি ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয়া আন্দোলনরত শিক্ষক সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ঘেরাও করে ফেলে ছাত্রলীগ। তারা আন্দোলনরতদের দিকে তেড়ে এসে ভিসি ভবনের ফটক থেকে সরে যেতে বলে এবং গালিগালাজ করতে থাকে। আন্দোলনকারীরা মশাল জ্বালিয়ে তখন স্লোগান দিতে শুরু করে। এরপর শুরু হয় ঢিল ছোড়া ও হামলা। হামলা শুরু হলে ভিসি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়া পুলিশও সরে যায়। আধ ঘণ্টা ধরে এই অবস্থা চলার পর বিদ্যুৎ চলে আসে। পরে ছাত্রলীগ হামলা বন্ধ করে কিছু দূরে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থানরত শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক একেএম শাহনেওয়াজ ছাড়াও সহযোগী অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু, সোমা মুমতাজ, মাসুম শাহরিয়ার ও সহকারী অধ্যাপক আমিনুর রহমান খান এবং মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ জিতু আহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ‘ভিসি বিতাড়ন মঞ্চ’ ভেঙে ফেলে। আগেও শিক্ষক সমাজের আরেকটি মঞ্চ পুড়িয়ে দিয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মীরা। এর আগে ভিসি’র অপসারণ চেয়ে মিছিল করায় বিকালে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মীদের খুঁজে খুঁজে ধরে বেধড়ক মারধর করে তারা। ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিল ও ছাত্রলীগের পাল্টা মিছিলে উত্তাল রয়েছে ক্যাম্পাস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও ছয় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টায় শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা ও সিন্ডিকেটে ছুটির সিদ্ধান্ত বাতিলসহ ১১ দফা দাবিতে সাংস্কৃতিক জোটের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। সমাবেশে জোট কর্মীরা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার প্রতিবাদে ‘যুগান্তর’ পত্রিকা পোড়ায়। সমাবেশ শেষে গতকাল সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের ঘোষণা দেয় তারা। বিকাল ৩টার দিকে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি কলি মাহমুদসহ কর্মীরা বটতলা থেকে টিএসসিতে আসার পথে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার মুখে পড়ে। এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু নিজ গাড়ি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা টিএসসি’র দিকে গিয়ে সেখানেও জোট কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় আহত হয়েছেন জোটের সভাপতি কলি মাহমুদ, সহ-সভাপতি মঈন মুনতাসির কার্তিক, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সুশান, থিয়েটার কর্মী সুদীপ, অর্ণ, সাধারণ শিক্ষার্থী ফরিদুদ্দীন রাহাতসহ ১২ জন। আহত ৬ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা শেখ শরীফুল ইসলাম, আশরাফুজ্জামান লিটন, মেহেদী হাসান সম্রাট, অর্ণব, ফেরদৌস, মিঠুন ও সাইফুল ইসলাম শাকিল। এতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাংস্কৃতিক কর্মীরা আহতদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে যান। সেখান থেকে তারা মিছিল শুরু করেন। বিভিন্ন হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের মদদে পরিচালিত এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভিসি ভবনের সামনে মিছিল চলছিল। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাকিলা শারমিন বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন থামিয়ে দেয়ার জন্য ভিসি এ হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু আমাদের আন্দোলনকে হামলা চালিয়ে দমানো যাবে না। আমাদের দাবি মানতেই হবে। এদিকে ছাত্রলীগও ভিসির সমর্থনে পাল্টা মিছিল করছিল। এ ব্যাপারে ভিসি শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘সকাল থেকে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি, ক্যাম্পাসে ফিরে সাংস্কৃতিক কর্মীদের মারধরের ঘটনা তদন্ত করে দেখব।’
অন্যদিকে ভিসি’র পতনের দাবিতে তার ভবনের সামনে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকরা। গতকাল বেলা ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দিয়েছেন তারা। শুক্রবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষক সমাজের ভিসি ভবন অবরোধ ভিসি’র পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলবে বলে জানান ইতিহাস বিভাগের আন্দোলনকারী অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান। ছাত্রলীগের কর্মীদের ‘ভিসি প্রত্যাখ্যান মঞ্চ’ পুড়িয়ে দেয়ার পর গতকাল বেলা ১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে আবারও ‘ভিসি বিতাড়ন মঞ্চে’র উদ্বোধন করেন শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন। একই সঙ্গে ভিসিপন্থি শিক্ষকরা অবস্থান করেন ভিসি ভবনের পেছনের গেটে। শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, পুলিশ দিয়ে ক্যাম্পাস চলতে পারে না। ভিসিপন্থি শিক্ষক এবং তার লালিত ছাত্রলীগ দিয়ে যে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা দ্বারা ভিসির দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ফের প্রমাণিত হলো। এছাড়া বিকালে ভিসি ভবনের পাশে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এদিকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজ তাদের স্থগিত ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী শিক্ষক সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল আলম সেলিম বলেন, ভিসির নির্দেশে ও প্রক্টরের তত্ত্বাবধানে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর এ অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। ভিসি অবৈধভাবে পদকে আঁকড়ে ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে ভীত হয়ে তিনি দমন-পীড়ন নীতি অবলম্বন করেছেন। এ নীতির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন এখন পদত্যাগেরও কোন বিকল্প নেই।

চবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ
এদিকে স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম থেকে জানান: পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরপরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে আহত হয়েছেন ৬ জন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গতকাল ক্যাম্পাসের স্টেশন চত্বরে ঘটে এই ঘটনা। পুলিশ এই ঘটনায় ৩ জনকে আটক করেছে। আহতরা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শাকিল, দর্শন ১ম বর্ষের সাব্বির আহমেদ ও শেখ কামাল, উদ্ভিদবিদ্যা ২য় বর্ষের কামরুল হাসান রিয়াদ, পরিসংখ্যান ১ম বর্ষের আমিনুল ইসলাম ও মো. ফরহাদ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শহর থেকে ছেড়ে আসা একটি শাটল ট্রেন ক্যাম্পাস স্টেশনে এসে পৌঁছালে ছাত্রলীগের দু’টি পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময়  ‘সিক্সটি নাইন’ ও ‘একাকার’ নামের দুটি বগির সমর্থকদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখা যায়। ঘটনার সময় পুলিশ মাহমুদুল হাসান তুষারসহ তিনজনকে আটক করে। তুষার ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও গুলি পাওয়ার কথা দাবি করা হয়েছে। হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি বাবুল আক্তার মানবজমিনকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত। ঘটনার সময় আমরা একটি পিস্তল উদ্ধার করেছি। সংঘর্ষকারীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে গাঢাকা দিয়েছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেয়ার কথা জানান।

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বাবা কবে ফিরে আসবে? ইলিয়াস আলীর শিশুকন্যার প্রশ্ন









ইকরামুল কবীর টিপু : বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। নিখোঁজ হওয়ার পর ১১ দিন পার হলেও সরকার তার সম্পর্কে কোনও তথ্য দিতে পারেনি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বেঁধে দেওয়া সময়ও পার হয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের সরব উপস্থিতিও নেই। অনুসারীদের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এমন অবস্থায় কোনও দিক থেকেই আশার বাণী নেই। আছে ধোঁয়াশা।

‘ইলিয়াস আলী জীবিত ফিরে আসবেন’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমন আশাবাদ ব্যক্ত করায়, অনেকের মতো ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যরাও কিছুটা আলোর রেখা দেখছিলেন। গতকাল শনিবার সকালেও ছিল আলোর রেখা। সকাল গড়িয়ে সূর্য যত পশ্চিমে হেলছিল শঙ্কা ততই বাড়ছিল। দুপুরে ইলিয়াস আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, খায়রুল কবীর খোকন ও নাজিম উদ্দীন আলম। এ যেন ছাত্র রাজনীতির মধ্য ও শেষ লগ্নের নিয়মিত পারিবারিক সাক্ষাতের ধারাবাহিকতা। ইলিয়াস আলীর শয্যাসায়ী স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনা তেমন কোনও কথাই বলতে পারেননি। তার একটাই চাওয়াÑ যেকোনও কিছুর বিনিময়ে হলেও আমার স্বামীকে ফেরত চাই। বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস ও ছোট ছেলে লাবিব শাহারা তাদের পিতার বন্ধু দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ‘বাবা কবে আসবে’ একমাত্র মেয়ে সায়েরা নাওয়ালের এমন প্রশ্নে সকলেই বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ইলিয়াস আলীর রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রায় আধঘণ্টার উপস্থিতি বনানীর সিলেট ভবনের পঞ্চম তলায় কিছুটা প্রাণের সঞ্চার করে। নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর বাসভবনে এমনই হতাশা ও আতঙ্কিত পরিবেশ লক্ষ করা গেছে।

গতকাল শনিবার সিলেট ভবনে গেলে, ইলিয়াস আলীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী রফিক হিলালী জানান, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদি লুনা ও তার সন্তানরা মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও ছোট ছেলে লাবিব ও একমাত্র মেয়ে সায়েরা নাওয়াল স্কুলে পরীক্ষা দিতে পারছে না। রফিক হিলালী আরও জানান, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যখন যে ধরনের তথ্য চাচ্ছেন পরিবারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে। আমরা ইলিয়াস আলীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেতে চাই।

ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদির লুনার গাড়িচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ম্যাডাম বাসা থেকে বের হন না। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সারাক্ষণ শুয়ে থাকেন। নামাজ পড়েন। সিলেট ভবনের কেয়ারটেকার আব্দুর রহমান জানান, প্রথম ঢাকাসহ সিলেটের অনেক নেতাকর্মী এসেছিলেন। এখন আর কেউ আসে না। লোকমুখে শুনতে পান, ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন। সিলেট ভবনের সামনের দোকানী আলামিন জানান, একদিন অনেক লোকজন আসার পর শুনেছি ইলিয়াস আলীকে কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে। তারপর থেকে তেমন কাউকে দেখা যায় না।

শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সেই হারুন এখন এস পি বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে মারধর করায় পদোন্নতি!


গত বছর ৬ জুলাই পুলিশের নির্যাতনের শিকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ
গত বছর ৬ জুলাই পুলিশের নির্যাতনের শিকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ
ফাইল ছবি
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে মেধাতালিকায় ৮৭তম অবস্থানে আছেন। ৪৩ জনকে ডিঙিয়ে তিনি পেয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্ব। তাঁর পরের ব্যক্তি পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মনিরুজ্জামান। ৪৪ জনকে ডিঙিয়ে তাঁকে লক্ষ্মীপুর জেলার পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এভাবে অনিয়ম ও দলীয়করণের মাধ্যমে ৩৬ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পুলিশ সুপারের চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তার অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও আছে। কেউ কেউ সাময়িক বরখাস্ত হন।
এখন চলতি দায়িত্বে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা পরে পুলিশ সুপারের পদে স্থায়ী নিয়োগ পাবেন। এ কারণে এ ধরনের পদায়নকে পদোন্নতি হিসেবে ধরা হয়।
অভিযোগ আছে, হারুন অর রশিদ তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার থাকার সময় গত বছরের ৬ জুলাই সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে মারধর করেছিলেন। এ ঘটনা ওই সময় গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। ফারুককে মারধর করার ‘পুরস্কার’ হিসেবে ৪৩ জনকে ডিঙিয়ে হারুনকে এসপির পদ দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের মধ্যেই আলোচনা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপকে মারধরের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল জলিল এ কমিটির প্রধান। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো তদন্তই হয়নি। এ বিষয়ে কেউ মন্তব্যও করতে চাননি।
হারুন অর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, কিছুদিন আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন। তাঁর ফোন বন্ধ রয়েছে।
২২ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ৫৩ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি ও নিয়োগের আদেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই তালিকায় ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মকর্তা আছেন ৩৬ জন। তাঁদের পদায়নের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, দলীয় বিবেচনায় পছন্দের তালিকা ধরে পদায়ন করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, এ নিয়ে এই ব্যাচের ১৭ জন কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁরা হারুনসহ অনেকের পদোন্নতি নিয়ে আপত্তি তোলেন। পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, অনিয়মের অভিযোগের কারণে পদোন্নতির তালিকাটি এক দফা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর দীর্ঘদিন এটি ঝুলে ছিল। পরে কয়েকজন কর্মকর্তা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি বাড়ি ঘুরে নিজেদের পছন্দের নাম যুক্ত করেন। 
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে সব সময় অভিযোগ ওঠে। এটা নতুন কিছু নয়। পদোন্নতির জন্য একটি কমিটি আছে, সেই কমিটিই সব ঠিক করে। এবার কিছু কর্মকর্তা বাদ পড়েছেন, আগামীতে তাঁরা পদোন্নতি পাবেন। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবারের পদায়ন নিয়ে পুলিশ বিভাগে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এর আগে এত অনিয়ম হয়নি। পদোন্নতি পাওয়া দুই কর্মকর্তা সম্প্রতি সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক পুলিশ কর্মকর্তার কাছে যান। তাঁদের সঙ্গে পদোন্নতিবঞ্চিত এক কর্মকর্তাও ছিলেন। তাঁরা বলেন, ৩৬ জনকে পদায়ন করা হলেও মেধাতালিকায় চতুর্থ আনিছুর রহমান ও পঞ্চম বরকতুল্লাহ খানকে পদায়ন করা হয়নি। বরকতুল্লাহ বিগত সরকারের সময়ও বঞ্চিত ছিলেন। অভিযোগ শুনে ওই পদস্থ কর্মকর্তা নিজেও হতবাক হয়ে বলেন, বরকতুল্লাহর নাম তালিকায় ছিল। কিন্তু কেন শেষ মুহূর্তে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ নুরুল ইসলাম মেধা তালিকায় ৬৫তম অবস্থানে আছেন। ৩৫ জনকে ডিঙিয়ে তাঁকে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনারের চলতি দায়িত্বে পদায়ন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আরেক নেতা মনিরুজ্জামানকে একইভাবে পদায়ন করা হয়েছে।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে। তবু তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এসপির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় মামলা চলছে এ কে এম এহসান উল্লাহর বিরুদ্ধেও। তাঁকে হাইওয়ে পুলিশের (পশ্চিম) পুলিশ সুপার পদে (চলতি দায়িত্ব) পদায়ন করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সাবেক আইজিপি এ এস এম শাহজাহান বলেন, পুলিশের নিয়োগ ও পদোন্নতি মেধার ভিত্তিতে করতে হবে। তা না হলে ভালো পুলিশ গড়ে উঠবে না। দলীয় পরিচয় পদোন্নতির মাপকাঠি হলে পুলিশের সংস্কার আর কোনো দিনই হবে না।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

যেভাবে গুম হলেন ইলিয়াস আলী : দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা



গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে গুম হন বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী। ওই সময়ে গুম হওয়ার ওই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন সেখানকার অনেকেই। দৈনিক আমার দেশ-এ প্রত্যক্ষদর্শী এক ডাব বিক্রেতার বিবরণ ছাপা হয়েছে। সহযোগী দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং দৈনিক সমকাল-এ আরও দুই প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা ছাপা হয়েছে। এদের একজন ডিউটিরত পুলিশের এসআই ও একজন ডাব বিক্রেতার ছেলে সোহেল রানা। এরই মধ্যে বনানী থানার তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নিয়েছেন। সেই প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা আমার দেশ-এর পাঠকদের জানার জন্য দেয়া হলো :
ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয় পুলিশ কর্মকর্তাকে : বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুম ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার এক পুলিশ কর্মকর্তা ধস্তাধস্তির সময় ঘটনাস্থলে হাজির হন। তিনি ছিনতাইকারী ভেবে অপহরণকারীদেরই (!) একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরেন এবং কৌশলগতভাবে হুমকিও দেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলে ওঠেন, ‘কেউ নড়বে না, গুলি করে দেব কিন্তু।’ এ সময় ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত একজন মাইক্রোবাসের সাইডে এগিয়ে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিজেদের একটি বিশেষ বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা অভিযান চালাচ্ছি। বাধার সৃষ্টি করবেন না, সরে দাঁড়ান। এ সময় মাইক্রোবাসের ভেতরে ওই বাহিনীর কিছু নমুনা প্রমাণ হিসেবে দেখতে পেয়ে কথিত অভিযান পরিচালনাকারীর শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে তিনি দুই পা পিছিয়ে যান। কিন্তু মাইক্রোবাসের লোকটি আবার পেছন দিকে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে আবার ধমক দিয়ে বলেন, ‘সরে যেতে বললাম না, এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলে যান।’
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাটি আর এক মুহূর্তও ঘটনাস্থলে অবস্থান করা নিরাপদ ভাবেননি। তাই তিনি জোর কদমে হেঁটে গলি রাস্তাটির দক্ষিণ পাশের জলখাবার হোটেলের সামনে চলে যান। সেখানে ওই পুলিশ কর্মকর্তার মোটরসাইকেলটি রাখা ছিল। সেখান থেকে তিনি গুলশান জোনেই তার কর্মস্থল থানায় পৌঁছে তার অফিসার ইনচার্জ ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের কাছে পুরো বিষয়টির বর্ণনাও দিয়েছেন। কিন্তু অফিসার ইনচার্জ বিভিন্ন স্থানে টেলিফোনে আলাপ করে ওই সাব-ইন্সপেক্টরকে এ বিষয়ে আর মুখ খুলতে নিষেধ করে দেন। পাশাপাশি তাকে সাবধানে চলাফেরারও পরামর্শ দেন। এ ঘটনার পর রাতেই পুলিশ কর্মকর্তাটি ঘটনাস্থলে ইলিয়াস আলীকেই অপহরণ করা হয়েছে বলে জানতে পারেন। তিনি ঘটনাস্থলেও যান। এর পর থেকেই সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
তার ঘনিষ্ঠ একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘ইলিয়াস আলীর অপহরণ ও গুমের ঘটনায় কোনো রকম তথ্যসূত্র-প্রমাণাদি রাখতে চাননি অপহরণকারীরা। এ কারণে তার গাড়িচালককেও জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় এভিডেন্স (সাক্ষ্য-প্রমাণ) হিসেবে ছিলেন শুধু ওই পুলিশ কর্মকর্তাটি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পৃক্ত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘অপহরণকারীরা’ অবিশ্বাস করেননি মোটেও। সহকর্মী ওই পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা, পরে ইলিয়াস আলীর অপহরণের বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলার পরই দ্বিতীয় এভিডেন্স হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তাটি নিজের জীবন নিয়েও চরম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তার সত্যতা পাওয়া গেছে মহাখালী মোড়ের পেট্রল পাম্পসংলগ্ন জলখাবার হোটেল থেকে। ওই হোটেলের একজন কর্মী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ওই রাতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাটি সাদা পোশাকে মোটরসাইকেলে মহাখালীর অদূরে ডিউটি দিচ্ছিলেন। থানায় ফেরার আগে তিনি রাস্তায় মোটরসাইকেলটি থামিয়ে নাস্তা খাওয়ার জন্য বসেন। হঠাত্ উল্টো দিকের গলি থেকে দুই পথচারী এসে জানায়, রাস্তার মধ্যে ছিনতাই আর মারামারি হচ্ছে। এটুকু শুনেই ওই সাব-ইন্সপেক্টর গলির দিকে ছুটে যান। তার পেছনে আরও দু-একজন এগিয়ে গেলেও তারা অজ্ঞাত আশঙ্কায় নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকলেও প্রত্যক্ষদর্শী এসআই মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছেই কথিত অপহরণকারীদের একজনের শার্টের কলার চেপে ধরেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ কর্মকর্তাটি তার অফিসার ইনচার্জের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়ার সময় আরও জানান, তাকে যখন ধমক দিয়ে সরানো হচ্ছিল তখনও ৪-৫ জন মিলে একজনকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিচ্ছিলেন। গাড়ির ভেতর থেকেও ধস্তাধস্তি ও ধমকাধমকির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময় পাশের একটি ভবনের আড়াল থেকে একজন মোবাইল ফোনে পুরো ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন। সেখানে মোবাইল স্ক্রিনের আলো তিনি এবং অপহরণকারীদেরও একজন খেয়াল করছিলেন। তবে মোবাইলে ভিডিও ধারণকারী যুবকটিকে পরদিন থেকে আর পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী একমাত্র সাব-ইন্সপেক্টর কর্মরত থানার অফিসার ইনচার্জকে আরও বলেন, ইলিয়াস আলীর গাড়ির পেছন দিকে কালো রঙের মাইক্রোটি ধাক্কা মারায় চালক ক্ষিপ্ত হয়ে নেমে যান এবং মাইক্রো চালকের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় মাইক্রো থেকে আরও ৪-৫ জন নেমে গিয়ে ইলিয়াস আলীর গাড়ির চালককে জোর করে ধরে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে বেঁধে ফেলেন। পরক্ষণেই ৩-৪ জন নেমে গিয়ে প্রাইভেটকারে বসে থাকা ইলিয়াস আলীকেও ধরে গাড়িতে তোলার সময় ধস্তাধস্তির সৃষ্টি হয়।
উদ্ধার হলো না ১১ দিনেও : একে একে ১১ দিন কেটে গেল, তবুও ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করতে পারল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী। গত তিন দিন তাকে উদ্ধারের জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালালেও সেই অভিযান ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
জোর করে গাড়িতে তোলার সময় ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিত্কার দিচ্ছিলেন : ‘বনানীতে পার্কের বেঞ্চে ঘুমাচ্ছিলাম। তখনও গভীর ঘুম ধরেনি। হঠাত্ চিত্কার-চেঁচামেচির শব্দ পাই। এতে পাতলা ঘুম ভেঙে জেগে উঠি। পার্কের বেঞ্চে বসেই দেখতে পাই, একটি লোককে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে চার ব্যক্তি। গাড়িতে উঠতে না চাওয়ায় ওই ব্যক্তিকে কিলঘুষি মারা হচ্ছিল। দীর্ঘ সময় ধস্তাধস্তির পর জোর করে তাকে গাড়িতে তোলা হয়। এ সময় ওই ব্যক্তি ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিত্কার করছিল। পরদিন সকালে জানতে পারি, বনানীর পার্কের পাশের সড়ক থেকে যে ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল, তিনি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। গাড়িতে উঠিয়ে বনানী এক নম্বরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।’
১৭ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় বনানীর ২ নম্বর সড়কের পাশের সড়ক থেকে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক মো. আনসারকে তুলে নেয়া হয়। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ডাব বিক্রেতা সোহেল রানা। বাসায় ফিরতে দেরি হলে প্রায়ই বনানীর পার্কে ঘুমান সোহেল। ওই পার্কের পাশেই তার বাবা ডাব বিক্রি করেন। সোহেল ডাব বিক্রেতা বাবাকে সাহায্য করেন। ইলিয়াসকে তুলে নেয়ার পুরো ঘটনটি খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন সোহেল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সোহেলকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। গতকাল বনানী থানায় সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহেলের সঙ্গে একান্তে কিছু সময় কথা বলেন। সোহেলের কথায় উঠে আসে সেই রাতের চিত্র। সোহেলের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড কাছে রয়েছে। এ নিয়ে ইলিয়াস গুমের ঘটনায় অন্তত ৩ প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাদের সবার বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে।
সোহেল রানা জানান, হঠাত্ দেখলাম পার্কসংলগ্ন সড়কে একটি সাদা রঙের গাড়িকে আটকে দেয়া হয়েছে। ওই গাড়িটির সামনে-পেছনে আরও দুটি গাড়ি। গাড়িতে উঠতে না চাওয়ায় কয়েকজন লোক একজনকে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করছিল আর বলছিল, ‘গাড়িতে ওঠ। তোকে গাড়িতে উঠতেই হবে।’
যারা গাড়িতে তুলছিল তাদের পরনে কী ছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা জানান, যারা টানাহেঁচড়া করে গাড়িতে তুলছিল তাদের পরনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পোশাক ছিল না। তাদের পরনে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ছিল। পরনের কাপড় ঝিকমিক করছিল।
সব সময় কি পার্কে রাত কাটান—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা জানান, আমার সঙ্গে ওই রাতে একজন পার্কে ঘুমিয়ে ছিল। ওই ব্যক্তিকে আমি চিনি না। সে আমাকে এসে বলে, গ্রাম থেকে এসেছি, থাকার কোনো জায়গা নেই। ঘটনাস্থলে কোনো ব্যক্তিকে কারও শার্টের কলার চেপে ধরতে আমি দেখেনি। ওই সময় অন্য কাউকে ঘটনাস্থলে জড়ো হতেও দেখিনি। গভীর ঘুমে থাকায় আমার পাশের লোকটি ঘটনাটি টের পায়নি।
যারা ধরে নিয়ে গেছে, তারা দেখতে কেমন—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল বলেন, ‘তারা লম্বা ছিলেন। কেউ মোটাসোটা আবার কেউ হ্যাংলা-পাতলা।’ আপনি পার্কে ঘুমান কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল জানান, রাত ১২টার দিকে বাসার গেট বন্ধ হয়ে যায়। যেদিন কাজ করতে বেশি রাত হয়ে যায়, সেই দিন পার্কে রাত কাটাই। রাজধানীর একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন বলে জানান সোহেল।
নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুত্ফরের বক্তব্য : এ ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন বনানীর ২ নম্বর সড়কসংলগ্ন নির্মাণাধীন ভবন নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুত্ফর রহমান। ইলিয়াস গুমের পর লুত্ফরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। লুত্ফর জানিয়েছেন, ওই রাতে একটি গাড়ির সঙ্গে আরেকটি গাড়ির ধাক্কা লাগার শব্দ তিনি শুনেছেন। এরপর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের আওয়াজ পান। তবে ঘটনাটি নির্মাণাধীন ভবনের টিনের বেড়ার ওপাশে হওয়ায় পুরোপুরি বুঝতে পারেননি। লুত্ফরের কথা জানতে চাইলে নূরানী টাওয়ারের আরেক নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ রানা বলেন, চার দিন ধরে লুত্ফরের খোঁজ নেই। এ ঘটনার পর সে অনেক ভয় পেয়ে যায়। সম্ভবত গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। তবে আমাদের কাউকে কিছু বলেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লুত্ফরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
বনানীর ২ নম্বর সড়কের যে এলাকা থেকে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন, ওই সড়কের একপাশে সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অন্যপাশে নির্মাণাধীন ভবন নূর টাওয়ার। নূর টাওয়ারের সামনেই একটি পার্ক। ওই স্থান থেকে ইলিয়াস আলীর বাসা ৩০০ গজ দূরেই। গুম হওয়ার স্থান ছাড়া বনানীর দুই নম্বর সড়কের দু’পাশেই রয়েছে বাড়ি। ইলিয়াসকে ‘তুলে’ নিতে বনানীর দুই নম্বর সড়কের সবচেয়ে নির্জন এলাকাটি বেছে নেয়া হয়।
একটি সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীকে ‘তুলে’ নেয়ার সময় পুলিশের একজন এসআই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ছিনতাইকারী ভেবে প্রথমে ওই কর্মকর্তা একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরেন। কৌশলগত কারণে পরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ঘটনাটি তিনি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তাকে অবগত করেন। তবে ইলিয়াসকে ‘তুলে’ নেয়ার সময় পুলিশের কোনো সদস্যের ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার এম সোহায়েল বলেন, ইলিয়াসকে উদ্ধারে র্যাব সর্বোচ্চ তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ডিসি চৌধুরী লুত্ফুল কবীর বলেন, তদন্ত করার একটি পর্যায়ে আমরা সোহেলের খোঁজ পাই। এরপর তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
বনানী থানার ওসি (তদন্ত) মাইনুল ইসলাম বলেন, ইলিয়াসের সন্ধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যা উঠে এসেছে : প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় একটি বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো, ধস্তাধস্তি করেই গাড়িতে ইলিয়াসকে তুলে নেয়া হয়েছিল। ঘটনার পরপরই একজন প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, একটি প্রাইভেটকার ইলিয়াসের গাড়িকে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়েছিল। সোহেল রানা জানান, ঘটনাস্থলে গাড়ি ছিল তিনটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সবার বক্তব্যে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট, তা হলো—ঘটনাস্থলে ইলিয়াসের সঙ্গে অপহরণকারীদের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ নিরপেক্ষ তদন্ত চায়



সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এক বিবৃতিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, সামপ্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে বিরোধী নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের গুম হওয়ার ঘটনা ভয়ঙ্কভাবে বেড়ে গেছে।
গুমের হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, সামপ্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে বিরোধী নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের গুম হওয়ার বেড়ে গেছে। ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানও এমনই একটি ঘটনা। এর আগে গত ৪ এপ্রিল শ্রমিক নেতা আমিনুল হকের গুম হওয়ার ঘটনায়ও উদ্বেগ জানিয়েছিল এইচআরডব্লিউ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শুধু ২০১২ সালেই অন্তত ২২ জন এভাবে গুম হয়েছেন। এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেন, এই যে ক্রমবর্ধমান গুম হওয়ার ঘটনা, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় সদস্যদের উধাও হয়ে যাওয়া—এর গ্রহণযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সরকার এ পর্যন্ত গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর তদন্তে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এ ধরনের ঘটনা বন্ধেরও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব অপহরণ এবং হত্যার মত ঘটনায় জড়িত বলে হিউম্যান রাইটস এর আগে তাদের তদন্তে দেখতে পেয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, যারা নিখোঁজ হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের সর্বশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতেই দেখা গেছে। এতে করে এমন আশংকাই জোরালো হচ্ছে যে নিরাপত্তা বাহিনী আগের পথ ছেড়ে নির্যাতনের একটা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে।
এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে তিনি এও বলেছেন যে, সরকারের বিরুদ্ধে ‘আন্দোলনের ইস্যু’ তৈরি করতে দলের নেত্রীর নির্দেশেই লুকিয়ে আছেন ইলিয়াস। শেখ হাসিনার সরকার বহুবার প্রুতিশ্রুতি দিয়েছে যে, নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধ করে সুবিচার, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। কিন্তু এরপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের সব অভিযোগই সরকার ক্রমাগতভাবে অস্বীকার বা উপেক্ষা করে আসছে। আর এ কারণেই জরুরি ভিত্তিতে গুম হওয়ার সব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন— বলেন অ্যাডামস। বিরোধী দলের হরতালের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অত্যধিক শক্তিপ্রয়োগের ঘটনাতেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ।
২১ এপ্রিল ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ দু’জন নিহত ও শতাধিক আহতও হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এ মানবাধিকার সংস্থা।
উল্লেখ্য, গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে গুম হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক সাংসদ ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ইলিয়াস আলী। পুলিশ ওই রাতে তার গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ইলিয়াসের সঙ্গে গুম হয়েছেন তার গাড়ির চালক আনসারও। ওই ঘটনায় ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর ১৮ এপ্রিল বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
এরপর গত ১১ দিনে র্যাব-পুলিশ পুবাইল, সিলেট, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও এই বিএনপি নেতার সন্ধান পায়নি। সরকারের অধীনস্থ এজেন্সিই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে—এমন অভিযোগ এনে গত রোববার থেকে টানা তিন দিন সারাদেশে হরতাল করেছে বিএনপি। হরতালে ইলিয়াস আলীর এলাকা বিশ্বনাথে ৩ জন প্রতিবাদকারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করা হয়েছে সারাদেশে। আজ শনিবারের মধ্যে তাকে পাওয়া না গেলে নতুন করে টানা হরতালের পরিকল্পনাও রয়েছে বিরোধী দলের।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

গুম বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ



আলাউদ্দিন আরিফ
গুম, অপহরণ ও গুপ্ত হত্যা বন্ধে সরকারকে চাপ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। তারা বলেছে, বাংলাদেশে গুমের ঘটনা ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে এবং এটা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের গুম হওয়ার ঘটনা বাড়ছে এবং এ ধরনের সর্বশেষ ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। তারা এসব গুমের ঘটনা অবিলম্বে নিরপেক্ষভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের কো-চেয়ারম্যান যোসেফ
ক্রাউলি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ, পলবার, লিবডেম ও রেসপেক্ট দলীয় কয়েকজন এমপি, ব্রিটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান মেইন এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন ও অ্যামেনেস্ট্রি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল, দ্য হিন্দু, আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশে গুম, অপহরণ এবং গুপ্তহত্যার ভয়াহতা তুলে ধরে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এ সব প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার এর দায় এড়াতে পারবে না।
গুমের ঘটনা দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল তাদের পৃথক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ইলিয়াস আলী সর্বশেষ গুম হন। তাকে পাওয়া না গেলে বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে এবং এর দায় অবশ্যই বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে। যদিও ইলিয়াস আলীর উদ্ধারের বিষয়ে ১১ দিনেও কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি সরকারের অধীনস্থ সংস্থাগুলো।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্র কেবল চলতি বছরই ইলিয়াস আলীসহ ২২ জন নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন বলে তাদের এক রিপোর্টে বলেছে। তাছাড়া সংস্থাটির হিসাবে ২০১১ সালে গুম হয়েছেন ৭০ জন এবং ২০১০ সালে ৩০ জন। অর্থাত্ গত ২৭ মাসে ১২২ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এদের অধিকাংশই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী। অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থা অধিকার জানিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন গুম হয়েছেন যারা পরে হত্যারও শিকার হন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব ঘটনার স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, গুম হওয়ার এসব ঘটনা বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গুম হওয়ার ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত দরকার। সরকার এখনও পর্যন্ত এসব ঘটনা তদন্তে বা এরকম ঘটনা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ করে র্যাব গুম এবং হত্যার মতো ঘটনায় জড়িত বলে হিউম্যান রাইটস এর আগে তাদের তদন্তে দেখতে পেয়েছে। এ সম্পর্কে সংস্থাটি বলেছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে র্যাবের হাতে এ ধরনের হত্যার ঘটনা কমে এলেও এর বিপরীতে গুমের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে। যারা গুম হচ্ছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের সর্বশেষ নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতেই দেখা গেছে। এতে করে এমন আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে যে, নিরাপত্তাবাহিনী আগের পথ ছেড়ে নির্যাতনের একটা ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে।
গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানী ঢাকার বনানী থেকে গুম হয়েছেন বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী। বিগত ১১ দিনেও তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়নি বা তার কোনো হদিস করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর ইতোমধ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মতো আন্তর্জাতিক মহলও।
রবার্ট ব্লেক : ইলিয়াস আলীসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মীরা গুম, গুপ্তহত্যা, নিখোঁজ এবং দমন-নিপীড়নের শিকার হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট ব্লেক। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর এ বিষয়ে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের কাছে লেখা এক চিঠিতে তার উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন তিনি। চিঠিতে রবার্ট ব্লেক বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এটাকে ‘ডিস্টার্বিং’ বলে মন্তব্য করেন। তার মতে, বাংলাদেশে যা হচ্ছে তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়ার কথও উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন : ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ দেশগুলোর প্রতিনিধিদের দেয়া এক বিবৃতিতে ইলিয়াস আলীসহ গুমের অন্যান্য ঘটনার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। ইইউভুক্ত দেশগুলোর পক্ষে ঢাকায় ইইউ দূতাবাস থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়ি চালকসহ অন্যদের গুম হওয়ার খবরে ইইউ প্রতিনিধিরা উদ্বিগ্ন। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ইলিয়াস আলীসহ অন্যান্য গুমের ঘটনার একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে। ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে গিয়ে আমার দেশ-এর পক্ষ থেকে পাঠানো ই-মেইলের জবাবে ফরাসি দূতাবাসের পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে উদ্ধারের আহ্বান জানানো হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ : বাংলাদেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মীরা গুম হওয়ার ঘটনা অবিলম্বে নিরপেক্ষভাবে তদন্তের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এইচআরডব্লিউ। গতকাল এইচআরডব্লিউ এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুম হওয়ার ঘটনা বাড়ছে এবং এ ধরনের ঘটনায় গত ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী। এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব ঘটনার স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করা। সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড এডামস বলেন, গুম হওয়ার এসব ঘটনা, বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম হওয়ার ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত দরকার। সরকার এখনও পর্যন্ত এসব ঘটনা তদন্তে বা এরকম ঘটনা প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব অপহরণ এবং হত্যার মতো ঘটনায় জড়িত বলে এইচআরডব্লিউ আগে তাদের তদন্তে দেখতে পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে ব্যাবের হাতে এধরনের হত্যার ঘটনা কমে আসলেও এর বিপরীতে গুম হওয়ার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এইচআরডব্লিউ আরো বলছে, যারা নিখোঁজ হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদেরকে সর্বশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতেই দেখা গেছে। এতে করে এমন আশঙ্কাই জোরালো হচ্ছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী আগের পথ ছেড়ে নির্যাতনের একটা ভিন্নপথ বেছে নিয়েছে।
যোসেফ ক্রাউলি : যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের কো-চেয়ারম্যান যোসেফ ক্রাউলি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইলিয়াস আলী গুমের ঘটনায়। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। গত ২৩ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব বিশিষ্ট সাংবাদিক শওকত মাহমুদ এবং নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন আই-বিএনপি’র নির্বাহী পরিচালক ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু জোসেফ ক্রাউলির সঙ্গে তার অফিসে সাক্ষাত্ করতে গেলে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ-আমেরিকান ডেমোক্রাটিক ককাসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মইন চৌধুরী। যোশেফ ক্রাউলি দ্রুততার সঙ্গে ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার ও গুম এবং গুপ্তহত্যার মতো মানবাধিকার পরিপন্থী কাজ বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপিরা : বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা ও অপহরণের ঘটনায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিকাংশ সদস্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ, পলবার, লিবডেম ও রেসপেক্ট দলীয় এমপিরাও এ ঘটনাকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বলে মন্তব্য করেন। বিষয়টি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের নজরেও রয়েছে বলে জানান তারা। ব্রিটিশ এমপি রিচার্ড ফুলারসহ আরো অনেক এমপি এ বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে অবহিত করছেন। বিষয়টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও আলোচনা হয়েছে। ফরেন অফিস বাংলাদেশের ব্রিটিশ হাইকমিশনকেও এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গুম হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সাক্ষাত্ হয়েছিল ব্রিটিশ এমপি রিচার্ড ফুলারের। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই ইলিয়াস আলীকে ধরে নিয়েছে বলে ডেভিড ক্যামেরনকে অবহিত করেছেন রিচার্ড ফুলার। হাউস অব কমন্স-এ এই বিষয়টিই তিনিই প্রথম তুলে ধরেন।
রেসপেক্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অন্যতম প্রভাবশালী এমপি জর্জ গ্যালাওয়েও ইলিয়াস আলীকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের এই বিষয়টি নিয়ে আমি ব্রিটিশ ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। ফরেন অফিসের সাউথ এশিয়ান ডেস্ক প্রধানের সঙ্গে তিনি এই বিষয়ে কথা বলেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তিনি সশরীরে বাংলাদেশে আশার কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তার বহুবার দেখা-সাক্ষাত্ হয়েছে। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তার আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে পাওয়া না গেলে বাংলাদেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে এবং এর দায় অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশী এমপি রুশনারা আলীও ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সর্বাত্মক লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার জন বার্কো, ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ, জিম ফিটজ ফ্যাট্রিক এমপি, চার্লস টেনক এমপি, কিথ ভাজ এমপি, ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিসের বুরোক্রাট ইন্টারন্যাশনাল ডিরেক্টর পামেলা গর্ডনসহ ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ বিভাগের জুনিয়র মন্ত্রী জেরিমি ব্রাউন ও অ্যালেস্টার বাটও ইলিয়াস আলী গুম হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অ্যান মেইন এমপি : ব্রিটেনে সরকারদলীয় প্রভাবশালী পার্লামেন্ট মেম্বার ও অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান অ্যান মেইন এমপি বাংলাদেশের জনপ্রিয় নেতা এম. ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরের সময় সিলেটে এম. ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে তার নিখোঁজের ঘটনাকে গণতন্ত্রের জন্য চরম হুমকি বলে মনে করেন। তিনি ইলিয়াস আলীর মতো বিরোধী দলের একজন প্রথম সারির জনপ্রিয় নেতাকে খুঁজে বের করতে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অ্যান মেইন এমপি এম. ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের ঘটনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক এমপির সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে শিগগিরই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আর্লিডে মোশন আনতে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা বলেছেন। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আর্লিডে মোশন আনতে নিজ নিজ এলাকার এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ড্যান মজীনা : রবার্ট ব্লেকের চিঠির পর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনায় উদ্বেগ এবং নিন্দা জানিয়ে তাকে খুঁজে বের করতে সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, গুমের ঘটনায় অন্য সবার উদ্বেগের প্রতি আমি একান্ত সমর্থন জ্ঞাপন করছি। এ ঘটনা নিন্দনীয় এবং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে সব পক্ষকে সংযত আচরণের মাধ্যমে একে অন্যকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, যিনি গুম হয়েছেন এটা শুধু তার জন্যই নয়, তার পরিবারের জন্যও এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন : এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) বাংলাদেশে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যা উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ করে সরকারকে অবিলম্বে এসব তত্পরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। গত বুধবার এক বিবৃতিতে হংকংভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনা এখন সর্বপর্যায়ে মারাত্মক উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাদা পোশাকধারী সশস্ত্র ব্যক্তিরা আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনকে রাস্তা, মার্কেট এমনকি তাদের অফিস বা বাড়ি থেকে অপহরণ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপহরণকারীরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী ও নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে থাকে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তুলে নেয়ার কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর বিভিন্ন স্থানে লাশ পাওয়ার সংবাদ শুনে স্বজনরা আরও উত্কণ্ঠিত হয়ে ওঠেন এই ভেবে যে, হয়তো তাদের প্রিয়জনের লাশই পাওয়া গেছে। স্বজনদের জন্য আরও হতাশাজনক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় যখন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুুলো তাদের প্রিয়জনদের গুম-গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে বা নীরব থাকে।
হিউম্যান রাইটস কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কোনো দেশে বসবাসকারী রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, জাতীয় পরিচয় নির্বিশেষে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকে সরকারের ওপর। অধিকন্তু বাংলাদেশের সংবিধানে আইনের চোখে সমঅধিকারের নিশ্চয়তা দিয়ে সবার জীবন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ এবং ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) সদস্য হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে দেশেরই জনগণকে রক্ষায় আরও বেশি বাধ্যবাধকতা রয়েছ। এতে ব্যর্থ হলে তাকে নাগরিকদের রক্ষায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণ, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মহলকে অবহিত করতে হবে। অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলমান অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার জন্য ‘দুর্বৃত্তচক্র’ কিংবা ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে’ দায়ী করে আসছে। গুম ও গুপ্তহত্যার দায়দায়িত্ব অস্বীকার বা সে বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করে কর্তৃপক্ষ দৃশ্যত তাদের দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করে ফেলেছে বলে মনে করছে। কিন্তু কমিশনের মতে, এটা খুবই হতাশাজনক ব্যাপার এবং সম্ভবত অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ।
হিউম্যান রাইটস কমিশন জানায়, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গ্রেফতরের কোনো যৌক্তিক কারণ ব্যাখ্যা করা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই অহরহ লোকজনকে আটক করছে। আটকের সময়ে কোনো আইনি নথিপত্র প্রদর্শন করা হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঘটনা অপহরণ হিসেবে দেখা হয়। রাষ্ট্রীয় এজেন্টরা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া লোকজনকে গ্রেফতার করতে থাকলে এবং আটক ব্যক্তি বা তার স্বজনদের যথাযথ ব্যাখ্যা না দিয়ে ও আটকের পর দ্রুত পছন্দমত আইনজীবীর পরামর্শ নেয়ার ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকলে ‘দুর্বৃত্তচক্র’ বা সরকারি নয়, এমন গ্রুপগুলোও একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, নাগরিকদের রক্ষার দায়িত্ব পালন না করে সরকার অন্যদের ওপর দোষ চাপালে বা নীরবতা অবলম্বন করতে থাকলে তাতে সরকারের অক্ষমতাই ফুটে ওঠে। বাংলাদেশ সরকার স্রেফ একটি ফালতু রাজনৈতিক সত্তা না হয়ে থাকলে তাকে অবশ্যই গুম ও গুপ্তহত্যার মতো ঘটনাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে এবং কেউ চায় না বাগাড়ম্বরের পুনরাবৃত্তির মধ্যেই সরকার তার সব তত্পরতা সীমাবদ্ধ রাখুক বা তার দায়দায়িত্ব যাক।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার না করা এবং পুলিশ বা র্যাব যৌক্তিক কারণ ছাড়া সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার না করে, সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তা নিশ্চিত করতে হবে। একবার যদি জনমনে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়, পরোয়ানা ছাড়া বা সাদা পোশাকে পুলিশ বা র্যাব কাউকে গ্রেফতার করে না, তখন অন্য কেউ ওই ধরনের কাজ করতে সাহস পাবে না। সংস্থাটি বলেছে, অপহরণ ও গুপ্তহত্যার সব ঘটনা দ্রুত তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে; আর এই তদন্ত উপযুক্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে হলে ভালো হয়। কারণ, পুলিশ ও র্যাব এরই মধ্যে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কমিশনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির খাতিরে তদন্ত প্রতিবেদন তালাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না, যেমনটি বরাবর বাংলাদেশে হয়ে আসছে। অপরাধীদের অবশ্যই নিরপেক্ষ বিচারের মাধ্যমে শাস্তি দিতে হবে।
বিবৃতিতে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন গুম ও গুপ্তহত্যা সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী মোকাবিলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে যা প্রয়োজন তা হলো ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মৌলিক ধারণার আলোকে সরকারি কর্তৃপক্ষ কাজ করা।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল : যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে মানুষ ‘গুম’ হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিলেটের দু’জন ছাত্রদল নেতা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের দু’জন নেতাসহ চলতি বছর ২০ জনেরও বেশি গুম হয়েছেন। এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আমিনুল ইসলাম গত ৪ এপ্রিল গুম হওয়ার পরদিন টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া অনেকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাদের অনুসন্ধান শেষে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, গুম হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। তাদের পায়ে বুট পরা থাকায় ধারণা করা হয় তারা সবাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। আর তাদের চুলও ছোট করে ছাঁটা। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার পর পুলিশকে তদন্ত করতে বলার পর আবার একে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি।
প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিবৃতিতে ইলিয়াস আলী গুমের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা নিরপেক্ষ পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে। তারা বলেছে, গুমের পর প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালে যে মানুষগুলো নিহত হলো, কারা গুলি ছুড়ল তা বের করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই স্বাধীন তদন্ত করতে হবে। এসব মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন : রাজনীতিবিদ গুম হওয়ার কঠোর সমালোচনা করে ব্রিটেনের প্রভাবশালী পত্রিকা গার্ডিয়ান জানিয়েছে, এসব ঘটনায় বাংলাদেশে উত্তেজনা বাড়ছে। গত রোববার পত্রিকার অনলাইন সংখ্যায় বলা হয়েছে, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মিলে ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে জয় নিয়ে ক্ষময়তা যাওয়া সরকারের জনপ্রিয়তা বেশ কমেছে। পত্রিকাটি সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করে জানিয়েছে, ১৬ কোটি মানুষের এ দেশটিতে নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক ইফতিখারুজ্জামানের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি ‘গণতান্ত্রিক জবাবদিহি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্রমবর্ধমান দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবকে’ দায়ী করেন। তিনি বলেন, এতে ‘তাদের পেশাগত দক্ষতা ও যোগ্যতা কমে যায় এবং এর ফলে আইনের শাসন, ন্যায় বিচার, সাম্য ও জনগণের মৌলিক মানবাধিকার বিকাশে তাদের সামর্থ্য ধ্বংস হয়। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলী ছাড়াও সম্প্রতি গুম হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির তিন ছাত্রনেতা ও এক শ্রমিক নেতা।
আল জাজিরার প্রতিবেদন : ‘পলিটিক্যাল ডিসঅ্যাপেয়ারেন্সেস প্লেগ বাংলাদেশ’ বা ‘বাংলাদেশ রাজনৈতিক গুমের মহামারীতে আক্রান্ত’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন করেছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত এক বছরে বাংলাদেশে প্রায় ১০০ মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক নেতাকর্মী। তার মধ্যে সিলেট অঞ্চল থেকে নির্বাচিত সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য ইলিয়াস আলী রয়েছেন। তাকে বিরোধী রাজনীতিতে উদীয়মান এক নেতা হিসেবে দেখা হয়। তার স্ত্রী নিশ্চিত, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। তার আতঙ্ক একেবারে ভিত্তিহীন নয়। নিকোলাস হকের লেখা ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী আদিলুর রহমান বিশ্বাস করেন, এসব নিখোঁজের ঘটনায় বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন : ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দুর অনলাইন সংস্করণে ‘ডিসঅ্যাপেয়ারেন্সেস, কিলিংস ট্রিগার কনসার্ন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েয়ে, গুমের ঘটনা ও রহস্যময় হত্যার ঘটনা সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে বেড়ে গেছে। এতে বাংলাদেশে আতঙ্ক ও রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সাংবাদিক হারুন হাবীবের লেখা এ রিপোর্টে আরও বলা হয়, ক্রমবর্ধমান গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে এরই মধ্যে উচ্চ আদালত গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো দাবি করছে, ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জনকে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে গত সপ্তাহে ঢাকায় গাড়িচালকসহ সাবেক এমপি ও বিরোধী দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর রহস্যময় নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এমন ঘটনায় সিনিয়র মন্ত্রীরাও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন তা চিহ্নিত করতে পারেনি। গত ১৭ এপ্রিল রাতে কি কারণে রাজধানী থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের এই প্রভাবশালী নেতা গুম হয়ে গেছেন তারও কোনো তথ্য দিতে পারছেন না তারা। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, ২০১০ সালের জুলাই মাসে বিএনপির আরেক নেতা চৌধুরী আলম কোথায় আছেন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পুলিশ কর্মকর্তা ও র্যাবকে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন আদালত।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ার চাপ : এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপক সমালোচনা করছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকেই নানা ধরনের খবর প্রকাশ করেছে তারা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার ভয়াবহতা তুলে ধরে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে খ্যাতনামা সংবাদ সংস্থা বিবিসি। এছাড়া আল জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, সিনহুয়া, পিটিআইসহ অন্যান্য সংস্থাও বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। একাধিক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক প্রচারিত নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজে। নিউইয়র্ক টাইমসের লেখক ব্লগেও বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল জয় পায়। কিন্তু নানা অভিযোগে তার সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে। নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ লিখেছে, ‘২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে বিএনপির আরেক নেতা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী আলম নিখোঁজ রয়েছেন। গত দুই বছরেও তিনি কোথায় আছেন বা তার কী পরিণতি হয়েছে, সে সম্পর্কে পুলিশ কোনো হদিস দিতে পারেনি। অনলাইন রেডিফ ‘এনফোর্সড ডিসঅ্যাপেয়ারেন্সেস অন দ্য রাইজ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে লিখেছে, ‘ইলিয়াস গুমের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কড়া ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে গুম হওয়ার ঘটনা বাড়ছেই। বার্তা সংস্থা পিটিআই বলছে, ‘ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দেয়া হলেও এর প্রতি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কোনো আস্থা নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার প্রতিবাদে সার্বক্ষণিক হরতাল ও আন্দোলন-সংগ্রামের আপডেট সংবাদ প্রচার করছে। রয়টার্স জানিয়েছে, ‘ইলিয়াস আলীর নিখোঁজের প্রতিবাদে সিলেটসহ সারাদেশ উত্তাল।’ এএফপি জানিয়েছে, ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এতো সংবাদ প্রকাশ ও নানা ধরনের চাপের পরও টনক নড়ছে না বাংলাদেশ সরকারের। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গুমের ১১ দিনেও এ বিষয়ে এক বিন্দুও সফলতা দেখাতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার সরকারি দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মহাসচিব সৈয়দ আশরাফও বলেছেন তারা ইলিয়াস আলীকে জীবিত উদ্ধার করবেন। গতকালও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ইলিয়াস আলীকে জীবিত উদ্ধার করা হবে। ইলিয়াস আলীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের প্রতীক্ষায় যেভাবে প্রহর গুনছে সারাদেশের মানুষ, তেমনি প্রতীক্ষায় আছে আন্তর্জাতিক মহল ও মিডিয়া।

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কান্না যেন থামছে না নিহত সেলিম মনোয়ার ও জাকিরের পরিবারে : বিশ্বনাথে জাকিরকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে গুলি ছোড়ে পুলিশ



নাজমুল ইসলাম মকবুল বিশ্বনাথ (সিলেট)
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা সভাপতি সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর জন্য কাঁদছে বৃহত্তর সিলেটসহ নিজ জন্মস্থান বিশ্বনাথের মানুষ। এ কান্না বাড়িয়ে দিয়েছে নিহত মনোয়ার, সেলিম ও জাকিরের বিয়োগ। ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে আনার পণ করে তারা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। তাদের শোকে স্বজনের আহাজারিতে বিশ্বনাথের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শিসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া হলো না মনোয়ারের: দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন মনোয়ার হোসেন (২৬)। এবার কাতার যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এ জন্য দুই লাখ টাকাও দিয়েছিলেন ট্রাভেল এজেন্সিকে। কিন্তু ভিসা হাতে পাওয়ার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। সোমবার হরতাল চলাকালে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও হরতাল সমর্থক সংগ্রাম পরিষদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার রাজনগর গ্রামে। তার বাবা মৃত আবাছ আলী। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বিয়োগে শোকস্তব্ধ রাজনগর গ্রামসহ পুরো বিশ্বনাথবাসী। তার বড় ভাই দেলোয়ার দাবি করেন, সংঘর্ষের পরপরই জনতার ধাওয়া খেয়ে উপজেলা কম্পাউন্ড এলাকা থেকে সরে যায় পুলিশ। ঠিক তখনই বাসিয়া নদীর দক্ষিণ পাড়ের রামসুন্দর হাই স্কুলের পাশ থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা গুলি করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ইউএনও অফিসের সামনের গেটের পূর্ব পাশে রাস্তার মাঝেই তার লাশ পড়েছিল। মনোয়ারের চাচাতো ভাই আলী হোসেন ওরফে ইংরেজ, নুর আহমদ ওরফে চেরাগ আলীও একই দাবি করে বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই তাদের ভাইকে হত্যা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনোয়ার পুলিশের গুলিতে নয়, বাসিয়া নদীর অপর পাড় থেকে ছোড়া গুলিতেই তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে এলাকায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজনগর গ্রামের খুশমত আলী নিজেকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে বলেন, নদীর ওপাড় থেকে থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাইকে লক্ষ করে করা গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়েই মনোয়ারের গায়ে লাগে। আর এতেই সে মারা যায়। মনোয়ারের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সকালে এক কাপ চা খেয়েই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান মনোয়ার। মা তাকে নাস্তা খেয়ে যেতে অনেকবার বলেছিলেন। বিকালে তার মৃত্যুর খবর শুনে বৃদ্ধা মা রেণু বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ১৭ দিন আগে তার আরেক ছেলে হৃদরোগে মারা যান। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুই ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তাদের মা। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
সেলিমের পরিবারে চলছে শোকের মাতম : বিশ্বনাথের টেংরা (বাঘমারা) গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সেলিম আহমদ (২০)। তিনি অলঙ্কারী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা যায়। সংঘর্ষের সময় উপজেলা পরিষদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে দৌড়ে পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদিয়া মাদরাসার গেটের সামনে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে প্রায় ঘণ্টাখানেক পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। পরে র্যাব-পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনার পর তার পরিচয় না পাওয়ায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি প্রকাশ হলে পরিবারের লোকজন গিয়ে তাকে শনাক্ত করেন। তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারে চলে শোকের মাতম। সেলিমের মা হাসিনা বেগম ছেলের মৃত্যু সংবাদ মেনে নিতে পারেননি। তার পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসী জানান, সেলিম সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে মিছিলের সঙ্গে উপজেলা সদরে যান। চাচাতো ভাই ইউসুফ আলী বলেন, আমরা পত্রিকায় সেলিমের ছবি দেখে হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখে তাকে শনাক্ত করি।
দিনমজুর বাবা উপার্জনক্ষম ছেলে জাকিরকে হারিয়ে নির্বাক : পুলিশের গুলিতে নিহত জাকির হোসেনের (২৪) পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে পড়েন জাকিরের মা আর দিনমজুর বাবা। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে তারা নির্বাক। গত সোমবার পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের বাসিয়া ব্রিজের উপরে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন জাকির। এরপর পুলিশের হেফাজতে থাকাকালেই জাকিরকে বেদম মারধর করে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিত্সাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান। তিনি পেশায় ছিলেন একজন রিকশাচালক। সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বালিউরার দোয়ারী গ্রামের ভুট্টো মিয়ার ছেলে তিনি। জাকিরের সহকর্মী বকুল মিয়া জানান, তিনি যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশ গুলি করলে একটি গুলি তার পেটে লাগে। এ সময় জাকির মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। এ সময় শাসক দলের অস্ত্রধারী কয়েক যুবক জাকিরের পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপালে তার পায়ের মাংস কেটে ক্ষতবিক্ষত হয়। পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি প্রকাশিত হয়। পরিবারে ৩ ভাইয়ের মধ্যে জাকির ছিলেন সবার বড়। তার মৃত্যুতে পরিবারে কান্নার রোল যেন থামছেই না।
বিশ্বনাথে ৪ বিএনপি নেতা গ্রেফতারের প্রতিবাদ : বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ৪ বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন উপজেলা সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, জেলা সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা সভাপতি মজাহিদ আলী, উপজেলা সহসভাপতি আবুল কালাম কচির এবং চেয়ারম্যান ও সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন ধলা মিয়া। গতকাল বিকেলে সিলেট নগরীর গুলশান হোটেল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানা গেছে। সিলেটের পুলিশ সুপার সাখাওয়াত হোসেন জালাল উদ্দিন চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, তাকে ওসমানী নগর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে বিশ্বনাথের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সোমবারের হরতাল চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্বনাথের ৮ হাজার জনতাকে আসামি করে থানায় পৃথক দুটি মামলা করা হয়।
এদিকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে ওই চার নেতাকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহানগর শাখার সভাপতি এমএ হক ও জেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি দিলদার হোসেন সেলিম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফফার, মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী, জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা শিগগিরই নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করেছেন, অন্যথায় আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করে আনা হবে বলে জানিয়েছেন।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মহাজোট মন্ত্রিসভা প্রাইভেট লিঃ-১৮জনগণের নিরাপত্তা চেয়ে জেনারেল ডায়েরি



আ মী ন কা দী র
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মতো তাদেরই একজন হিসেবে এই মুহূর্তে আমি ও এই দেশের জনগণ স্মরণকালের ভয়ঙ্করতম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। জীবনের নিরাপত্তা নেই আমাদের। ঘর থেকে বেরুবার পর সপ্রাণ বাড়িতে আবার ফিরতে পারব কি-না তার কোনো আশ্বাস নেই। নিশ্চয়তা নেই। এমনকি আমাদের লাশও ঘরে পৌঁছাবে কি-না, এই রাষ্ট্র, এই সরকার, এই প্রশাসন তার গ্যারান্টি দিতে পারছে না। এমনই ভয়াল নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি আমরা। আমি এবং আমরা যে কোনো সময় গুম হতে পারি। শিকার হতে পারি গুপ্তহত্যার। অদ্ভুত এক বিপন্নতা, বিস্ময়কর এক আতঙ্ক আমাদের ঘিরে। আমরা বেঁচে আছি কি-না; আমরা খুন হয়েছি কি-না তাও আমাদের পরিবার-পরিজন কখনও জানবে না। আমাদের অন্তিম ঠিকানা হতে পারে অজানা অচিন এক অন্ধকূপ। আমাদের দেহ পৌঁছে যেতে পারে এমন এক সংগোপন মৃত্যু উপত্যকায়, যার ঠিকানা কেউ জানে না। এই সরকার ও প্রশাসন সেই ঠিকানা জানতে সাংবিধানিকভাবে বাধ্য হলেও তারাও ভয়ঙ্কর অন্ধ। বরং তারা নিরাপত্তাহীনতার এই অদ্ভুত আঁধারে হাস্যরস করে মজা লুটছে। ভড়ং-ভণ্ডামি-শঠতা করছে নির্বিকার চিত্তে। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়? সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে নিরাপত্তা প্রতিবিধানে। আমরা এখন কোথায় যাব? কার কাছে যাব! কে আমাদের রক্ষা করবে গুম-গুপ্তহত্যার ভয়াল আতঙ্ক থেকে!
যে জেনারেল ডায়েরিটি এই মুহূর্তে লিখছি—৫৬ হাজার বর্গমাইলের সব থানায় এটি একযোগে দাখিল করে যেতে চাই। আমরা নিশ্চিত নই—কোথাও এটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় নেয়া হবে কি-না! যদি না-ই হয় তবে মহাকালের অক্ষয় পাতায় এটি দায়ের করে গেলাম।
আমরা এই সময়ে এতটাই অনিরাপদ—খোদ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ২৩ এপ্রিল ২০১২ সালে নিরাপত্তা চেয়ে একটি জেনারেল ডায়েরি দাখিল করা হয়েছে। সদাশয় শাহবাগ থানা কর্তৃপক্ষ সেটি গুরুত্বের সঙ্গে রুজুও করেছে। কোনোরকম অবহেলা, শিথিলতা দেখায়নি পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর এই যে নিরাপত্তার অভাব বোধ করলেন তারই কোনো গুণগ্রাহী—গভীরভাবে প্রত্যাশা করি—প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই প্রতিবিধান পাবেন। নিশ্চয়ই তিনি থানা পুলিশের সুরক্ষা পাবেন।
এখানে সবিনয়ে প্রশ্নটা না করে পারছি না—যেখানে একান্ত ভক্তরা প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার গ্যারান্টি পাচ্ছেন না, সেখানে আমাদের মতো আম-জনতার কি অবস্থা তা সহজেই অনুমানযোগ্য। তদুপরি পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা সঙ্কটকে কোনোভাবেই আমলেও নিচ্ছে না। আমরা থানায় গেলে মামলা নেয় না তারা। আমাদের ভাই সাগর, বোন রুনি দিব্যি খুন হলো—মাসের পর মাস যেতে চলেছে আমরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। সারাদেশের প্রায় দু’শ মানুষ গুম হলো—তারা বেঁচে আছে নাকি লাশ হলো সে কথাও বলতে পারছে না পুলিশ। বরং মানুষগুলো গুম হয়েছে কি না—এই রাষ্ট্র ও সরকার তারই প্রমাণ চাইছে শোকার্ত রোরুদ্যমান স্বজনদের কাছে। সত্যিই আমরা এখন বেশ আছি। মরে গিয়ে কিংবা গুম হয়ে আমাদেরই এখন প্রমাণ করতে হবে—আমরা মরিয়াছি। আমাদের লাশ হয়েও দিব্যি হেঁটে হেঁটে থানায় এসে হাজিরা দিয়ে প্রমাণ করতে হবে মৃত্যুর সত্যতা। এমনই এক পরাবাস্তব বাংলাদেশে বাস করছি আমরা। দেশ এখন উদ্ভট উটের পিঠেই কেবল সওয়ার নয়—বাংলাদেশের বাস্তবতা এখন কবির কল্পনাকেও হার মানাচ্ছে।
পত্রিকান্তরে কিছু কল্পনাতীত খবরাখবর জেনেও ভয়ে জবুথবু হয়ে আছি। ২৩ এপ্রিল ২০১২ জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুম সংক্রান্ত রিপোর্টে বলছে—“গোয়েন্দা সূত্র মতে, এটি সাধারণ কোনো পেশাদার চক্রের কাজ নয়। এই নিখোঁজ রহস্যের সঙ্গে এমন কোনো চক্র জড়িত, যারা অনেক বেশি সতর্ক, সাবধানী, দক্ষ এবং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। হতে পারে তারা রাষ্ট্রের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার চেইন অব কমান্ড বা ট্রেইল ভাঙা গ্রুপ। এদের সঙ্গে সরাসরি নেপথ্যে থেকে কিংবা মদত দিয়ে বাইরের কোনো গোয়েন্দা সংস্থার লোকও থাকতে পারে। এর আগে পাওয়া বিভিন্ন ক্লুর সঙ্গে এই বিষয়টিও যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।” একই দিন দৈনিক সমকাল ‘১০ শর্ত মানলে মুক্তি ইলিয়াস আলীর’ শীর্ষক রিপোর্টে বলছে—“নিখোঁজ ইলিয়াসের সন্ধানে প্রভাবশালী দুটি দেশের সহযোগিতা নিতে দলের দু’জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।... একটি সূত্র জানায়, একটি দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইলিয়াস আলী যদি জীবিত থাকেন তাহলে তাকে ফেরত দেয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন তারা।”
শীর্ষ এই দুই জাতীয় পত্রিকার বিস্ফোরক খবর পড়ার পর মেরুদণ্ডের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন শীতল অনুভূতি সারা শরীরকে জড়বত্ করে ফেলল। মনে হলো কোন দেশে আছি আমি। পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ শর্তের ব্যাপারটি ভুয়া বলা হলেও কালের কণ্ঠের খবর নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি।
তার মানে দাঁড়ায়—খবরটি মিথ্যা নয়। এমনটি ঘটছে। আমার স্বদেশের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে দিব্যি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যখন তখন যে কাউকে গুম-খুন-গায়েব করতে পারছে বিদেশি শক্তি। তার সরল অর্থ দাঁড়ায়—একবার গুম-গায়েব হয়ে গেলে আমাদের লাশ স্বদেশের মাটিতে ঠাঁই পাবে—তারও গ্যারান্টি নেই।
২.
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য জেনারেল ডায়েরি করার লোক আছে। শাহবাগ থানার জিডির কথাই ধরি। এটি যিনি করেছেন তিনি আওয়ামী লীগ বা গণনেত্রী পরিষদ জাতীয় শুভাকাঙ্ক্ষী সংগঠনের নেতা। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা তার কোনো অফিসিয়াল স্টাফ কিংবা তার কোনো পরিবার সদস্যকে থানায় যেতে হয়নি। জিডির কপি হাতে ধর্ণা দিতে হয়নি পুলিশের কাছে। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন—এমন লোক জিডি করলেও দুরন্ত ও দ্রুত কাজ হচ্ছে। থানা পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাচ্ছে। মামলা হচ্ছে। আদালতও দেরি করছে না। রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহীর জন্য সবাই দৌড়ঝাঁপ করছেন। দ্রুত বিচার আদালতের চেয়েও দ্রুতগতিতে নিষ্পত্তি হচ্ছে এসব জিডি ও মামলার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উদ্ভট শিক্ষক ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। খুব দ্রুত সফল অ্যাকশন হয়েছে। লোকটিকে আদালতে তলব করা হয়েছে। অবশেষে আদালতে গরহাজির তথা তলব অমান্য করার অপরাধে তার ছয় মাসের জেল-জরিমানা হয়েছে। শিক্ষক নামধারী লোকটি এখন অস্ট্রেলিয়ায়। দিব্যি সেখানে বহাল-তবিয়তে বাস করছেন। জেল খাটতে তিনি দেশে আসবেন নাকি দেশে গেলে তাকে জেল খাটতে হবে—ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে বিড়ম্বনায় তিনি নিজ দেশে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার—এই ভুয়া অজুহাত খাড়া করে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় আবার রাজনৈতিক তকমার স্ট্যাটাস পেয়ে বসেন কি-না সেটাও দেখার বিষয়। এমনিতে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার তদবিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডাহা ব্যর্থ। সেখানে ফেসবুক অপরাধীদের কেমন করে দেশে এনে তারা শাস্তি বিধান করে—সমুদ্রজয়ী দীপু মনির দিকে সাগ্রহে তাই তাকিয়ে অনেকে। ২৩ এপ্রিল যে লোকটির বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় জিডি হয়েছে—অবাক ব্যাপার হলো এই লোকটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তরুণ, বয়স সামান্য। বুয়েটের প্রভাষক। অভিযোগ মতে, এ লোকও হত্যার হুমকি দিয়েছে ফেসবুকে। দিয়ে যাবে কোথায়! ঠিকই গণনেত্রী পরিষদের নেতার নিবিড় জালে ধরা পড়ে গেছে। রেহাই নেই। আশা করা যায়—এ লোকও উপযুক্ত শাস্তি পাবে। থানা-পুলিশ-আদালত অতি দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করবে। তবে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জাবি শিক্ষকের মতো এই শিক্ষকও দেশে না বিদেশে অবস্থান করছেন—এ নিয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
ক্ষুদ্র জ্ঞানে আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি—ফেসবুকে হত্যার হুমকি, মৃত্যু কামনা ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের সমুচিত শাস্তির ব্যাপারটি বাংলাদেশ তথা অন্যান্য দেশের আইনে ধূম্রজালে ভরা। কোনো ব্যক্তি যদি আদালতে গিয়ে ঘোষণা দেন, কথিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি তার নয়। ফেইক অ্যাকাউন্ট। তাহলে সে ঘোষণাকে মিথ্যা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য বৈকি। কেননা, মিথ্যা অ্যাকাউন্ট অনেকের নামেই তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে সেলিব্রেটি রাজনৈতিক নেতাদের নামে তৈরি করা ফেইক অ্যাকাউন্ট রয়েছে ভূরি ভূরি। এক সময় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার নামে করা মিথ্যা অ্যাকাউন্ট মিডিয়াতে বেশ আলোচনার খোরাক যুগিয়েছিল।
আর তাই হত্যার হুমকিদানকারী এই কথিত দোষীদের শাস্তি প্রদান কতটা সম্ভব তা এখনও পরিষ্কার নয়। জাবির যে শিক্ষকের ৬ মাস জেল-জরিমানা হয়েছে—তা প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু কামনার কথিত ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার জন্য নয়—হয়েছে আদালতের হাজিরার আদেশ অমান্য করার জন্য।
অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞদের মতে—এ ধরনের মামলাগুলো অপরাধীর জন্য শাপে বর হওয়ার আশঙ্কা বহন করে। কেননা, মামলার শিকার কথিত ইন্টারনেট দুর্বৃত্তরা উন্নত বিশ্বের কোনো দেশের শরণাপন্ন হয়ে এই আর্জি তুলতে পারে যে, স্বদেশে তারা রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক রাজনৈতিক বৈরিতাপ্রসূত অন্যায় হয়রানির শিকার। তারা সরকারের জুলুমবাজির শিকার। এই ফরিয়াদের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের অসারতা তুলে ধরলে তারা ওই দেশের বিশেষ আনুকূল্যও পেতে পারেন। অভিবাসন আইনজ্ঞদের আশঙ্কা—রাষ্ট্রকে বোকা বানিয়ে এমনটা ঘটে থাকলে তা আবারও দেশের ভাবমূর্তিকে বিদেশে ভূলুণ্ঠিত করবে বলাই বাহুল্য।
আইনজ্ঞদের আশঙ্কা যাই হোক; আমরা কায়মনোবাক্যে প্রত্যাশা করি—এসব জিডির উপযুক্ত বিহিত হোক। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হোক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ‘মৃত্যুকামনাকারী, হত্যার হুমকিদানকারী’দের বদদোয়া থেকে সহি-সালামতে সুস্থ সুদীর্ঘজীবী থাকবেন। কেননা, রাষ্ট্রের যিনি শীর্ষ নির্বাহী তার নিরাপত্তা সবার আগে। তার নিরাপত্তার প্রতিবিধান যদি সুনিশ্চিত করা যায়, তখন আমরা যারা এই গরিব প্রজাতন্ত্রের নগণ্য অসহায় অবহেলিত নাগরিক—তাদের নিরাপত্তার জিডিটির যথাবিহিত হবে। থানা পুলিশ যদি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জিডি নিয়ে শক্ত অ্যাকশন করে—তবে আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি—২/১ শতাব্দীর মধ্যে তারা আমাদের নিরাপত্তা দিতে সক্রিয় হবে।
আবার একথাও তো ঠিক, ২/১ শতাব্দী পরে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে—এই স্বপ্ন নিয়ে তো বসে থাকলে চলছে না। কেননা আমাদের গড় আয়ু ৬০/৬৫-এর বেশি নয়। সমকালের নিরাপত্তার কী অবস্থা।
আতঙ্কিত মানুষের সাহস নাকি একপর্যায়ে বেড়ে যায়। সেই সাহসে ভর করে সবিনয়ে জানতে চাই, প্রধানমন্ত্রী—যার নিরাপত্তার জন্য রাষ্ট্রীয় সুদক্ষ প্রশিক্ষিত বাহিনী রয়েছে, কিছু গর্দভ মূর্খ ধান্ধাবাজ ফেসবুকে মৃত্যু কামনার স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের ধান্ধা হাসিল করছে—আমরা আইনগতভাবে দেখতে পাচ্ছি, তাদের প্রতিবিধান হচ্ছে দ্রুত। কিন্তু আমরা যারা সাগর-রুনির মতো বেঘোরে মারা যাচ্ছি, বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হয়েও রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে সৌদি কূটনীতিক খালাফ মারা গেছেন, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর মতো গুম হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ, ১৪৪ ঘণ্টাতে খোঁজ মেলেনি ইলিয়াসের—এই নিবন্ধটি লেখার সময়কাল পর্যন্ত। আবার শতাধিক গুম ব্যক্তি আজীবনের জন্য চলে গেছেন অজানার ঠিকানায়—এদের ক্ষেত্রে প্রতিবিধান কোথায়।
এসব গুমের রহস্য জানা যাচ্ছে না কেন? ফেসবুক তন্ন তন্ন করে খুঁজে বদদোয়া দানকারী অপরাধীর সন্ধান মিলছে। কিন্তু যারা হত্যাকারী, গুমকারী—তাদের সন্ধান লাভে রাষ্ট্র কেন ব্যর্থ। তবে কি ডিজিটাল বাংলাদেশে রাষ্ট্র ডিজিটাল ক্রিমিনালদেরই পাকড়াও করবে, শাস্তি দেবে, কিন্তু এনালগ ক্রিমিনালরা খুন, গুম করেও দিব্যি হেসে-খেলে দেশে-বিদেশে ঘুরে-ফিরে বেড়াবে—কোনো বিচার হবে না। ডিজিটাল ইন্টারনেট অপরাধী শনাক্ত, ধৃত ও দণ্ডিত হবে। আর এনালগ খুনি মুক্ত—আশ্চর্য ডিজিটাল বাংলাদেশ কী আসলে বাস্তব অস্তিত্ববিহীন ভার্চুয়াল দেশে পরিণত হচ্ছে। আমরা কী তবে এখন কোনো ইউটোপিয়ান ভার্চুয়াল বাংলাদেশের নাগরিক!
আর এই রাষ্ট্রে যারা সবচেয়ে সুরক্ষিত—সর্বোচ্চ সুপ্রিম পাওয়ার, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে যারা নিরাপদ, তারা তৃণমূল থানায় গেলে দ্রুত সেবা পাচ্ছেন; আমরা যারা তৃণমূলে থানার ফুটপাতে, রাস্তায়, পাড়ায়-মহল্লায় গিঞ্জি পরিবেশে বাস করি আমাদের কেউ নিরাপত্তা দেবে না।
ওহে রাষ্ট্র, ওহে সরকার, ওহে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ—সাড়ে চৌদ্দ কোটি সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা নিয়ে এমন নিষ্ঠুর তামাশা তুমি কেন করছ! কে দিয়েছে তোমায় এই অধিকার! ওহে সরকার, তুমি কি আমার নও! ওহে রাষ্ট্র তুমি কি তবে আমাদের নও! ওহে প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, তুমি কি তবে ষোল কোটি বাঙালির নও? তুমি কি প্রজাতন্ত্রের প্রজাদের অভিভাবকত্বের দায় অস্বীকার করছো। ওহে মাতৃভূমি বাংলাদেশ—তুমি কি তবে আমাদের মাতৃত্বের মমতা প্রত্যাখ্যান করছ!
৩.
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র স্টেশনে আমার এই জেনারেল ডায়েরি-জিডিটি দাখিল করছি। এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফরিয়াদ, সংশয় ও আশঙ্কার কথা বলছি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার যখন ক্ষমতায় তখন একটি প্রবল-প্রচণ্ড মিডিয়া-গোষ্ঠীর তরফ থেকে বিরামহীন তোপধ্বনির মতো গরম আওয়াজ উঠেছিল—বাংলাদেশ অকার্যকর রাষ্ট্র হয়ে পড়ছে কিংবা হতে চলেছে। তখন নানাভাবে প্রমাণ ব্যাখ্যা করা হচ্ছিল। অকার্যকর রাষ্ট্র মানে ভয়ঙ্কর কথা। ভয়াল উচ্চারণ। তারা তখন অকার্যকর সরকার বলেনি, বরং কার্যকারিতা হারানোর অঙ্গুলি নির্দেশ করেছিল রাষ্ট্রের প্রতি। অকার্যকর মানে ক্রমেই মৃত রাষ্ট্র।
আমি এবং আমরা— এই দেশের ১৬ কোটি নাগরিক রাষ্ট্রবিরোধী নই। রাষ্ট্রদ্রোহী নই। এ আমার সোনার বাংলা। আমরা মাতৃভূমি বাংলাকে প্রাণের চেয়েও ভালোবাসি। এ আমার প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশ যেমন অস্তিত্বের উত্থান—এই মাতৃভূমিই তেমনি আমাদের অন্তিম ঠিকানা। এই মাটি, এই সবুজ—এই হাজার নদীর দেশ—পলি ধূসরিত অববাহিকা—এই সাত নদীর মোহনা—কুয়াকাটা, হরিণঘাটা, কক্সবাজার, সন্দ্বীপ, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন, আশার চর, সোনার চর, রুপার চর, মনপুরা, নিঝুম দ্বীপ—এই শত সাগর সৈকত বিধৌত অপূর্ব বাংলাদেশ কোথাও পাব না আমরা। এই মাটিতে ডালিম গাছের তলে হবে আমাদের ছায়া সুনিবিড় শেষ আশ্রয়—এই মাটি ছেড়ে আমরা কোথায় যাব—কেন যাব!
আমার মাতৃভূমিকে আমরা অকার্যকর, মৃত রাষ্ট্র হতে দেব না। আমার রাষ্ট্র ও দেশ মৃত্যুঞ্জয়ী। এক সাগর রক্ত দিয়ে পেয়েছি এই স্বাধীন স্বদেশ। এই রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার যে কোনো চেষ্টাকে আমরা—‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি—বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’র দৃপ্ত শপথে মোকাবিলা করব।’
আর তাই অকার্যকর রাষ্ট্র তো দূরের কথা, আমরা চাই না আমাদের সরকারও অকার্যকর হোক। গণতন্ত্র মরে যাক। দেশটা ভয়াল মৃত্যুপুরী হোক।
দেশপ্রেমিক জনগণ আমরা কখনোই ওই রাষ্ট্রের মর্যাদা—আবরুকে প্রশ্নের মুখোমুখি করিনি। কিন্তু সরকার যখন অকার্যকর-মরণাপন্ন হয়ে পড়েছে, কী চারদলীয় জোট আমল—কী মহাজোট আমল—আমরা সরকারের সেই অকার্যকারিতাকে বিবেকের কাঠগড়ায়—জনতার আদালতে তুলে কার্যকর ও সাহসী হওয়ার অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা জোগাতে চেয়েছি। রবীন্দ্রনাথ—কবিঠাকুর বলেছেন—আধমরাকে ঘা মেরে তুই বাঁচা।
এই সরকার, এই প্রশাসন যখন আধমরা হয়ে পড়েছে—আইসিইউতে শায়িত হতে চলেছে, তখন তার চিকিত্সা দরকার। আর রাবিন্দ্রিক চিকিত্সা হলো, ঘা মেরে উজ্জীবনের পথে উদ্দীপ্ত করা।
আজ রাষ্ট্রের কয়েকশ’ ব্যক্তি গুম হলো—তারা হারিয়ে গেল অজানা-অচিন দেশে, তুমি তাদের কী নিরাপত্তা বিধান করেছ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার! তুমি কি তাদের কবরের চির শান্তির দেশে অন্তিম নির্বাসন দিয়েছ!
এর জবাব অবশ্যই তোমাকে দিতে হবে! কোথায় সেই গুম ব্যক্তিরা? তাদের ঠিকানা জানাতে তুমি বাধ্য হে কথামালার বজ্রবাঁশি সরকার। তোমার প্রধানমন্ত্রী, তোমার স্বরাষ্ট্রন্ত্রী, তোমার পুলিশ, সিআইডি, র্যাব—কোনোভাবেই গুমের দায় এড়াতে পারে না। তাদের হাতে সোপর্দ করা হয়েছিল সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের সবার নিরাপত্তা। তারা নিরাপত্তা বিধান ও সুরক্ষার সাংবিধানিক শপথ নিয়েছে। এখন তারা কোনোভাবেই বেডরুমের নিরাপত্তা দিতে পারবো না বলে দায়িত্ব এড়াতে পারবে না।
গাজীপুরের পদত্যাগী সংসদ সদস্য তানজিম আহমেদ সোহেল তাজকে জানাই লাল সালাম। তাকে গাজীপুরের ভোটাররা নির্বাচনে জিতিয়ে এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব দিয়েছিল। তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি একজন কার্যকর মন্ত্রী হিসেবে কাজের সুযোগ পাননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ জনগণের সুরক্ষা—বেডরুম, ড্রইংরুমে পুলিশ পাহারা না বসিয়েও জনগণকে নিরাপত্তা দেয়া যে সম্ভব সেটা নিশ্চিত করা। তাকে নামকাওয়াস্তে মন্ত্রিত্ব উপঢৌকন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তার কার্যকর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি। তাকে ডামি-পুতুল মন্ত্রী বানানো হয়েছিল। প্রতিবাদ করেছে সুযোগ্য তরুণটি। তার দায়িত্ববোধ আছে। আত্মশ্লাঘা আছে। আত্মমর্যাদাবোধ আছে। রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের পঙ্কিল পথে সে মন্ত্রিত্ব আঁকড়ে থাকতে চায়নি। মন্ত্রিত্বকে রাজতন্ত্রের মতো বংশগত অধিকার মনে করেনি। তাই পদত্যাগ করেছিল অকার্যকর মন্ত্রিত্ব থেকে। কোনো দ্বিধা করেনি। বিদেশ-বিভুঁইয়ে শ্রম-ঘাম দিয়ে খেটেখাওয়া তরুণ। দেশের অকার্যকর রাজতন্ত্রে সে বিলাসব্যাসন ভোগ—চাটুকারিতার মহার্ঘ্য মাখন-ঘি চেটেপুটে খেতে চায়নি, তাকে টুপি খুলে অভিবাদন জানানো দরকার।
লুটপাট, দুর্নীতি, অকার্যকারিতা আর যত্রতত্র মাইক্রোফোন পেলেই বিরামহীন গালি—দোষারোপের সার্কাস, মূর্খ-অকর্মণ্য, অথর্ব আত্মতৃপ্তির এই অকার্যকর সরকার ব্যবস্থার সে হিস্যা হতে চায়নি। তাকে প্রলোভন দেয়া হয়েছিল। উেকাচ দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও বছরের পর বছর তাকে জোর করে উজিরে খামোখা করে রাখা হয়। ঘাড়ে ধরে নষ্ট-জর্জরিত সরকারের দায় গেলানোর জন্য জবরদস্তিভাবে তাকে মন্ত্রিত্বের বেতন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছিল। প্রবল ঘৃণাভরে সে এই অসদুপায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপরও তার একাউন্টে ঢোকানো হচ্ছিল টাকা। এই নষ্ট ব্যবস্থার প্রতি ঐতিহাসিক প্রতিবাদ জানাতে তিনি শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্যপদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। দুঃখ প্রকাশ করেছেন গাজীপুরবাসীর কাছে—ইচ্ছা ছিল, ভালোবাসা ছিল, অদম্য দায়িত্ববোধ ছিল, তারপরও এই চলমান ব্যবস্থা তাকে কাজ করতে দেয়নি।
বঙ্গতাজের সুযোগ্য ছেলের মতো কাজ করেছে তরুণটি। সালাম—শত সালাম। ওই তরুণ তাজ যে কাজ পারল—এই আধমরা সরকারের অন্য অকর্মন্য জীবনমৃতদের কেন সেই উপলব্ধি হয় না।
মানুষের জন্য কাজ করতে পারেনি—এই আত্ম্যোপলব্ধিতে সে সরে দাঁড়ালো, আর তোমরা যে সরকারকে কার্যকর সক্রিয় রাখতে পারছ না—কেউ মারা গেলে তার লাশের ওপর দাঁড়িয়ে টিটকিরি তামাশা করছো—এমনই নির্লজ্জ! এক সদ্য তরুণের যে দায়িত্ব কর্তব্যবোধ তার ছিটেফোঁটাও নেই তোমাদের মধ্যে। তদুপরি অবিরাম ঠাট্টা করে চলেছ।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা কান্নায় বুক ভাসাচ্ছে। স্ত্রী সন্ধান চাইছে স্বামীর। পুত্র-কন্যা সন্ধান চাইছে পিতার। এরকম গুমের শিকার শত পরিবার আজ কাঁদছে। তা নিয়েও ঠাট্টা তোমরা থামাচ্ছ না। তোমাদের টিটকিরি-কৌতুকের ভাণ্ডার অফুরন্ত। কেউ অপহৃত হলে, গুম হলে কার কাছে প্রতিকার চাইবে তার পরিবার! তারা কী রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে ফরিয়াদ জানাতে পারবে না! প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরাপত্তা চাইতে পারবে না! প্রতিটি নাগরিকের জন্ম-মৃত্যুর খতিয়ান জানতে, জানাতে সরকার বাধ্য। কেউ যখন তার গুম সন্তানটির কথা অশ্রুভরা চোখে জানতে চায় তখন কি-না তোমরা বিষয়টি ঠাট্টার লহরি ছুটিয়ে দিয়েছ! গুম ব্যক্তিরা নিজেরা গুম হয়ে আছে কি-না, লুকিয়ে আছে কি-না সেই কথা বলে বিমল আনন্দে হেসে চলেছ! কোনো নেত্রী লুকিয়ে রেখেছে কি-না সেরকম উক্তি করে হাসিতে, খুনসুটিতে তোমরা লুটোপুটি।
আমরা কি হাসির রাজার তাসের দেশে বাস করছি! আমরা কি তবে ঠাট্টা-তামাশা সার্কাসের সরকারকে ভোটে জিতিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছি। তোমরা কি তবে ঠাট্টা মশকরার ভার্চুয়াল সরকার! আমরা গুম হবো—তোমরা হাসবে। আমরা গুম হবো, আমাদের মা-বোন-স্ত্রী-সন্তান কাঁদবে—তোমরা হাসতে হাসতে বলবে—কিরে গুম হয়ে আছিস না-কি ব্যাটা।
পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই—বর্তমান সরকার ব্যবস্থা যদি কার্যকর কর্মক্ষম সরকার হয় তবে হাসি-ঠাট্টা ভাঁড়ামো তার কাজ নয়। তার কাজ হলো গুম ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা। তার স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিশ্চিত করা। কেউ যদি খুন হয় তবে খুনিদের কঠিন বিচার সুনিশ্চিত করা। আর এসবের মাধ্যমে জননিরাপত্তাকে সুদৃঢ় করা। এ কাজে যদি তারা ব্যর্থ হয় তবে তারা অকার্যকর সরকার। আর এ ধরনের অকার্যকর সরকার ক্ষমতায় বসে ভাঁড়ামো-ভণ্ডামিতে লিপ্ত থাকলে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম কার্যকর রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়—তা বলাই বাহুল্য।
লেখক : কপি সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ, ব্লগার

Ads