শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১২

এই হীনম্মন্যতা থেকে মুক্তি কবে?



লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ৫ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটেন সফর করেন। এসময় তিনি বিবিসি’র হার্ড টক অনুষ্ঠান এবং বিবিসি বাংলা সার্ভিসের অপর একটি সাক্ষাত্কার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বিবিসি’র হার্ড টক অনুষ্ঠানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক স্টিফেন সাকুর বেশ শক্ত ভাষায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের নানারকম প্রশ্ন করে থাকেন। মাঝে মাঝে উপস্থাপক এমন সব তীক্ষষ্ট প্রশ্ন করে বসেন, যা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব প্রত্যুত্পন্নমতিতা থাকলে। মাঝে মাঝে হার্ড টক অনুষ্ঠানটি আমি দেখি এবং উপভোগও করি। কিছুদিন আগে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাত্কারটি দেখেছিলাম। তিনি যেভাবে উপস্থাপকের প্রশ্নের জাল ছিন্ন করে নিজের বক্তব্যটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা রীতিমত বিস্ময়কর।
প্রশ্নগুলো করা হয়েছিল মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের সদস্যভুক্তি নিয়ে। বাচনভঙ্গি, যুক্তিবিন্যাস, তথ্যের উপস্থাপনা এবং ভাষার সৌষ্ঠবে এই সাক্ষাত্কারটি ছিল অনবদ্য। বিবিসি’র মাধ্যমে বর্তমান তুরস্ক সম্পর্কে এবং তুরস্কের রাষ্ট্রনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমার বিশ্বাস প্রতিটি দর্শক-শ্রোতা সাক্ষাত্কার অনুষ্ঠানটি শেষে নবতর উপলব্ধিতে সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাই ভাবি, আমাদের বাংলাদেশকে আমাদের রাজনীতিবিদরা কেন বিবিসি’র মতো একটি প্রচার মাধ্যমে অমন সার্থকভাবে তুলে ধরতে পারেননি। আরও ভাবি, এমন একজন রাজনীতিক এই দেশে কবে জন্ম নেবে। দেশের কথা বাদ দিলাম। বিদেশে গিয়েও কি আমাদের ভাষায় অসূয়া ও বিদ্বেষ অনুপস্থিত থাকতে পারে না? এ নিয়ে হয়তো আমাদের দীর্ঘকাল হাহুতাশ করতে হবে।
বিবিসি’র হার্ড টক সাক্ষাত্কারে পদ্মা সেতু দুর্নীতি ও মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ, গ্রামীণ ব্যাংক ও এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার, র্যাবের কর্মকাণ্ড, সংবিধান সংশোধন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিবিসি’র স্টিফেন সাকুর প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন—‘জনগণ চায়, সরকার সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে, সরকারি কর্মকর্তারা সত্ থাকবে, তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করবে সরকার। কিন্তু আমরা আপনার সরকারে সেটি দেখতে পাচ্ছি না কেন?’ উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীনে ছিল, সেনাসমর্থিত সরকারের অধীনে ছিল। পূর্ববর্তী বিএনপি সরকার দুর্নীতি করেছে। রাতারাতি এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমাদের সরকার কোনো দুর্নীতি করেনি। আমরা যদি দুর্নীতি করতাম তবে দেশের এত উন্নতি হতো না। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হতো না।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সমস্যা সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রায়ই অতীতের সামরিক শাসনের নেতিবাচক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্টিফেন সাকুর যদি প্রশ্ন করতেন—কেন তিনি ১৯৮২ সালে সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর উক্তি করেছিলেন, ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’, কেনই বা তিনি ১৯৮৬ সালে সামরিক শাসক এরশাদের পাতানো নির্বাচনী ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন? তিনি কেন সেনাসমর্থিত সরকারের ক্ষমতা দখলকে বলেছিলেন তাদের আন্দোলনের ফসল? কেনইবা তিনি এই সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার কথা বলেছিলেন। বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাত্কারে সামরিক শাসন ও তার কুফল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যদি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতেন, তাহলে সামরিক শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তা করতে পারতেন না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, তার সরকার কোনো দুর্নীতি করেনি। তার যুক্তি হলো, দুর্নীতি হলে দেশের এত উন্নতি হতো না। বাংলাদেশে দশকওয়ারি জিডিপি প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ১৯৭৩-৭৪ থেকে ১৯৭৯-৮০ সময়কালে গড় প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮ শতাংশ, ১৯৮০-৮১ থেকে ১৯৮৯-৯০ গড় প্রবৃদ্ধির হার ৩.৭ শতাংশ, ১৯৯০-৯১ থেকে ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত গড় প্রবৃদ্ধি ৪.৮ শতাংশ এবং ২০০০-২০০১ থেকে ২০০৭-২০০৮ পর্যন্ত গড় প্রবৃদ্ধির হার ৫.৮ শতাংশ। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, এরশাদের শাসনামলটি ছিল অর্থনৈতিক স্থবিরতার কাল। এরপর প্রতি দশকেই জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে ৯০-পরবর্তী গণতান্ত্রিক আমলে এক দশক থেকে অন্য দশকে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে কোনো সরকারের আমলেই দুর্নীতির অভিযোগ থেমে থাকেনি। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, দুর্নীতি রোধ করা গেলে আরও অন্তত ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হতো। সুতরাং প্রবৃদ্ধির অংক উপস্থাপন করে দুর্নীতি হচ্ছে না এমনটি দাবি করা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী যখন তার জবাবে প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে আনলেন তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে যে টাকা আসছে তাতে আসলে কে উপকৃত হচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। আসলে এ ব্যাপারে তার লা-জওয়াব হওয়া ছাড়া কি গত্যন্তর ছিল? অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সুফল সুষমভাবে বণ্টিত হচ্ছে না। বস্তুত শ্রেণীবৈষম্য ও প্রবৃদ্ধি হাত ধরাধরি করে চলছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি অস্বীকার করছেন যে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি। তাহলে বিশ্বব্যাংক এ ব্যাপারে আস্থা হারাল কেন? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করি, টাকা কামাতে আসিনি। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুললেও এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি। তাদের কাছে এজন্য বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তথ্য-প্রমাণ দিতে আমি নিজে এবং আমাদের অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে তাগাদা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়নে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছিল, সেই বিশ্বব্যাংক কী কারণে অর্থায়ন বাতিল করল, জাতির কাছে এটি এখনও রহস্যাবৃত। যেদিন এই রহস্যের জাল পুরোপুরি ছিন্ন হবে, সেদিনই জাতি বুঝতে পারবে এ ব্যাপারে দায়ী কে? সরকারের পক্ষ থেকে অস্বীকৃতিজ্ঞাপক যত কথাই বলা হোক না কেন এবং বিকল্প সূত্র থেকে অর্থায়নের যত প্রয়াসই নেয়া হোক না কেন, জনগণ কিন্তু হতাশায় নিমজ্জিত। তাদের হতাশা, নিকট ভবিষ্যতে পদ্মা সেতু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় তিরোহিত।
এরপর প্রশ্ন করা হয়, যদি দুর্নীতি না করা হয়ে থাকে তাহলে আপনার একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদত্যাগ করলেন কেন? এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক লোক তাকে অভিযুক্ত করেছে। তাই সে পদত্যাগ করেছে। সে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উল্লেখ্য যে, আলোচ্য মন্ত্রী পদত্যাগ করার আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তার শতভাগ সততার দাবি করেছেন। এ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পত্রিকায় বিশাল বিজ্ঞাপন ছাপাতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, সেই ব্যয়ের পেছনে কী প্রণোদনা কাজ করেছে! প্রশ্ন উঠেছে তার অতীত কর্মকাণ্ডের রেকর্ড নিয়েও। এখনও যে প্রশ্নটি জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে তা হলো, তার পদত্যাগপত্র কি আদৌ গৃহীত হয়েছে? এরও কোনো সুস্পষ্ট জবাব নেই। এটি আরেক রহস্য।
বিবিসি’র উপস্থাপক জানতে চান, বিশ্বব্যাংক তো বলেছে তাদের উত্থাপিত দুর্নীতির রিপোর্ট আপনারা প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু আপনারা সেটা প্রকাশ করছেন না কেন? প্রধানমন্ত্রী এর জবাবে বলেন, এটি সত্য নয়। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার পর এদেশে কথার পিঠে অনেক কথা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় বেশুমার লেখালেখি হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে আলোচনা হয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়। কিন্তু এত দ্রুত বহির্বিশ্বের লোকজন এগুলো জেনে ফেলবে তা ধারণা করা যায়নি। কিন্তু এখন দেখছি তথ্যপ্রবাহের এই যুগে কোনো কিছুই আড়াল করা যায় না। বিবিসি’র উপস্থাপকের প্রশ্নের ধাঁচ থেকে এই প্রতীতি আরও দৃঢ় হলো।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রক্তচোষা’ বলছেন কেন—বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে একথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, নিয়মানুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধানকে ৬০ বছর বয়সে সরে যেতে হয়। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বয়স ৭০-৭১ বছর। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ৩০-৪০ শতাংশ সুদ নেয় বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারেননি। বরং তার সরকারই ১০ শতাংশ দারিদ্র্য কমিয়েছে। আমাদের ভাগ্য ভালো, ‘রক্তচোষা’ বলে প্রধানমন্ত্রী কোনো ব্যক্তিবিশেষকে চিহ্নিত করতে চাননি। কিন্তু যখনই তিনি বলেছেন গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ হারে সুদ নেয়, তখন রক্তাচোষার ইঙ্গিতটি কার প্রতি তা বুঝতে কষ্ট হয় না। গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই তথ্যের প্রতিবাদে প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে। প্রেস রিলিজের বক্তব্য নিশ্চয়ই পাঠকের চোখে পড়েছে। একথা সত্য যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের সুদ বাণিজ্যিকে ব্যাংকের তুলনায় কিছুটা বেশি। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক সরল সুদ নেয়, চক্রবৃদ্ধি হারে নয়। এটা তারা হিসাব করে উবপষরহরহম ত্ধঃব-এ। গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য সুদের হার ভিন্ন। সবচেয়ে কম সুদ দিতে হয় শিক্ষা ঋণের জন্য। ৫ শতাংশ হারে। গ্রামীণ ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ মাত্র ২ শতাংশ, যা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হওয়ার পথে। তাদের ঋণদানের ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। এর একটি বড় কারণ, এই ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে গিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনার দ্বারা তাড়িত হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া ঋণ আদায় করাও কঠিন। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকে এ ধরনের বিবেচনা কাজ করে না। যাদের ঋণ দেয়া হয় তাদের ওপর নিবিড় তদারকির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধও নিশ্চিত করা হয়। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যদি এই কালচার না থাকে, তাহলে সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান কখনোই অর্থনীতির ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারে না। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান যদি দেশে না থাকত, তাহলে গরিব মানুষরা মহাজনের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতো। মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিতে হতো ১২০ শতাংশ সুদে। ক্ষুদ্র ঋণ এখন বিশ্বপরিসরে সমাদৃত। উন্নয়ন অর্থনীতির উচ্চতর পর্যায়ে পাঠ্যগ্রন্থে ড. ইউনূসের মডেলটি গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা যে নেই তা নয়, কিন্তু সীমাবদ্ধতার চাইতে এর উপযোগিতা অনেক বেশি। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। দারিদ্র্য একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। এর সমাধানও বহুমাত্রিক উদ্যোগের মাধ্যমেই সম্ভব। বাংলাদেশে গত ২ দশকে যেভাবে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাচ্ছে, তার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিচিত্র সব উদ্যোগের ভূমিকা রয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক এসব উদ্যোগের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। গ্রামীণের সবচেয়ে বড় অবদান হলো উদ্যোগমুখী দরিদ্র মানুষ বিশেষ করে দরিদ্র মহিলাদের আর্থিক সক্ষমতা গড়ে তোলা। একজন মানুষের মধ্যে ভালো একটি ব্যবসার ধারণা থাকতে পারে, নতুন কিছু করার ক্ষমতা থাকতে পারে। কিন্তু নিছক অর্থ না থাকার ফলে মানুষটি তার উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে না। গ্রামীণ ব্যাংক উদ্যোগী দরিদ্র মানুষদের সেই অভাবটি পূরণ করে এদেশের লাখ লাখ মানুষের উদ্যোগের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুগপত্ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক গৌরব। কোনো বাংলাদেশী নাগরিক এর আগে নোবেল পুরস্কার পায়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার গড়া প্রতিষ্ঠান নোবেল বিজয় করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় সম্মানের আসনে বসিয়েছেন। একইভাবে বাংলাদেশ গৌরবান্বিত হয়েছে মুসা ইব্রাহীম, মুহিত ও ওয়াসফিয়াদের এভারেস্ট বিজয়ে। ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের সাফল্যও আমাদের জন্য শ্লাঘার বিষয়। এসব অর্জন জাতিকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে। জাতির সন্তানদের আরও বিশাল অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করে। এক কথায় জাতীয়তাবোধ প্রখর করে। সেই দেশের মানুষ হয়ে কেউ যদি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এসব অর্জনকে কালিমা লেপন করতে চায়, তাহলে কিইবা বলার থাকে? আমরা কবে এই হীনম্মন্যতা থেকে মুক্ত হব?
লেখক : অর্থনীতিবিদ
mahbub.ullah@yahoo.com

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads