বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১২

একেই বলে রাজনীতি



 বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন একেই বলে রাজনীতি! তা না হলে ঠিক ১৮ বছর আগে খালেদা জিয়ার যে প্রস্তাবটি শেখ হাসিনা নাকচ করেছিলেন একবাক্যে হুবহু সেই প্রস্তাবই তিনি দিয়েছেন খালেদার কাছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বিরোধীদের আন্দোলনের মুখে ১৯৯৪ সালের নভেম্বরে  তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরকারপ্রধান হিসেবে তাকে রেখে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির এক নতুন প্রস্তাব হাজির করেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়, বেগম জিয়া সরকারপ্রধান হবেন। বিলুপ্ত সংসদের সদস্যদের মধ্য থেকে ৯জন মিলে একটি মন্ত্রিপরিষদ হবে। যাদের ৪জন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবেন আর ৫জন নিয়োগ করবেন বিরোধীদলীয় নেতা। এই মন্ত্রিপরিষদের কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এমনকি প্রচারণাও চালাতে পারবেন না। সম্মিলিত বিরোধী দলের পক্ষে শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ বছর পর সেই একই প্রস্তাব দিয়েছেন বিবিসি’র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বেগম জিয়া শেখ হাসিনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন একই কায়দায়। খালেদার প্রস্তাব ছিল খোলামেলা। শেখ হাসিনা স্পষ্ট করেননি। বলেছেন, নির্বাচনের সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ইচ্ছা করলে বিএনপি যোগ দিতে পারে। আওয়ামী লীগ যেখানে রাজি হয়নি বিএনপি সেখানে রাজি হবে তা মনে করার কোন কারণ নেই। দু’দলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় বরাবরই উল্টোস্রোতে। প্রয়াত রাজনীতিক মিজানুর রহমান চৌধুরী ‘রাজনীতির তিনকাল’ গ্রন্থে লিখেছেন, সম্মিলিত বিরোধী দল ভিন্ন ভিন্নভাবে জনসভা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে বিএনপিকে রাজি করাতে না পারলে সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ম্যান্ডেট জনগণের কাছ থেকে গ্রহণ করে। অবশেষে ২৮শে ডিসেম্বর স্পিকারের কক্ষে সম্মিলিত বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিদের আলোচনা হয়। আলোচনায় সরকার পক্ষ বিরোধী দলের কাছে কোনরূপ সরকারবিরোধী সভা, সমাবেশ, মিছিল না করার লিখিত গ্যারান্টি দাবি করে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমি এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। আমি এ কথার জের ধরে বলি, লিখিত মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করতে হবে- এ ধরনের আপসে আমরা রাজি নই। আমার এ কথার পর সরকারের আলোচক কর্নেল (অব.) অলি বাকি তিনজনকে নিয়ে (যার মধ্যে তার সিনিয়রও ছিল) আলোচনা কক্ষ ত্যাগ করেন। স্পিকারের কক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে সা.কা. চৌধুরী যোগাযোগ করেন এবং সরকারি শর্ত প্রণয়নে তিনি সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করেন। আলোচনা ভেঙে যাওয়ায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ১৪৭ জন সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের ৯৩ জনের, জাতীয় পার্টির ৩৪ জনের, জামায়াতের ১৯ জনের পদত্যাগপত্র জমা দেয়া হয়। এনডিপি’র সা.কা. চৌধুরী নিজের পদত্যাগপত্র পেশ করেন। পূর্বে উল্লিখিত শর্ত দিয়ে এই পদত্যাগপত্র স্পিকারের কাছে জমা দেয়া হয়।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads