বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১২

ছাত্রলীগের সশস্ত্র মহড়া আইনগত পদক্ষেপ নেই কেন?



ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। কখনো এসব মহড়া রূপ নিচ্ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে অনেকের। সংবাদমাধ্যমে এর বিস্তারিত খবর ও ছবি ছাপানোর পরও এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেই। বরং সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনটি উৎসাহের সাথে সারা দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির সশস্ত্র কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গত সাড়ে তিন বছর এ চিত্রই দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠুনকো কারণে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। অনেকে বিনা কারণে থানাহাজতে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কোনো অপরাধ ঘটানো ছাড়াই জেল খাটছেন অনেকে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে, মানুষ হত্যা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেই। ছাত্রলীগের আইনবহির্ভূত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যবস্থা নেয়া একটা বড় দায়িত্ব। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। 
বুধবারের সংবাপত্রগুলোতে অস্ত্রের মহড়ার একটি ছবি ছাপা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছেÑ রড, রামদা ও কিরিচ নিয়ে ছাত্রলীগের একটি উপদল হামলা চালাতে যাচ্ছে তারেক উপদলের ওপর। ঝিনাইদহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চিত্র এটি। নিয়োগ-বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এ সশস্ত্র মহড়া। সংঘর্ষের সময় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহসড়কে চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশের চারজন সদস্যসহ সশস্ত্র সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়। সংঘর্ষ শুরুর আগে দু’টি পক্ষ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল। গ্রাম থেকে নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাস এলাকায় উভয় পক্ষ অবস্থান নেয়। ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, চার পুলিশ আহত হলেও সশস্ত্র কোনো সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়নি। জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্সও ঘটনাস্থলে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে পুরো দেশে সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে ত্বরিত অভিযান ও ‘সফলতা’, ছাত্রলীগের বেআইনি কর্মকাণ্ডে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এর একেবারেই বিপরীত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রসহ ঘণ্টার পর ঘণ্টা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। পুলিশ নিজেই এসব হামলার শিকার। তারপরও কোনো অস্ত্রধারী গ্রেফতার হয়নিÑ অবিশ্বাস্য! কিন্তু এ অবিশ্বাস্য ঘটনাই আজকে সারা দেশের বাস্তবতা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত প্রশ্রয়ে সশস্ত্র ছাত্রলীগ তাদের বেপরোয়া সন্ত্রাসের তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনকে অকারণে সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করতে বেশি দিন লাগেনি তাদের। এরপর নিজেরাই অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে উপদলে বিভক্ত হয়েছে। লিপ্ত হয়েছে খুনোখুনিতে। এদের আক্রমণে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছে। কয়েক দিন আগে চাঁদার ভাগ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রলীগকর্মী প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে। সে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো আলামত নেই। একইভাবে শত শত ঘটনায় দোষীরা কোনো ধরনের বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে না। ছাত্রলীগে উপদলীয় কোন্দলের জের বহন করতে হচ্ছে পুরো ছাত্রসমাজকে। অনেক সময় তা নাগরিক জীবনে বিষম ভোগান্তি ডেকে আনছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলার ঘটনায় মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য। একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এভাবে চলতে পারে না। একটি গোষ্ঠীকে যদি আইনের ঊর্ধ্বে তুলে নেয়া হয়, সেটা সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এর খেসারত দিচ্ছে দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টার কারণে বন্ধ রয়েছে। এসব অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকারকে এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনেরা এর নেতিবাচক প্রভাব কি উপলব্ধি করতে পারছে না? পরিণামে এটি দেশ ও জাতির বিপর্যয় ডেকে আনতে বাধ্য।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads