শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১২

পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারি চাঁদাবাজি



নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর দেশে ও প্রবাসে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছেন সরকারি কর্মকর্তা ও দলীয় নেতাকর্মীরা। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে চলছে এই চাঁদাবাজি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও ডিও লেটার দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তারা মৌখিক নির্দেশ দিয়ে চাঁদা আদায় করছেন। জোর করে চাঁদা আদায় করলেও স্বপ্রণোদিতভাবে চাঁদা প্রদান করার কথা বলা হচ্ছে অফিসিয়ালি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য কোথাও কোথাও করা হয়েছে কমিটি। এ কমিটির মাধ্যমে ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা আদায় করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে, চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বিদেশযাত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকেও প্রতি কলে ২৫ পয়সা কেটে রেখে রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে পদ্মা সেতুর নামে ভয়ানক চাঁদাবাজিতে নেমেছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশে কর্মরত প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এক মাসের বেতন কেটে রাখা হচ্ছে পদ্মা সেতু নির্মাণের নামে। পার পাচ্ছেন না দারোয়ান-পিয়নরাও। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নিম্ন পদমর্যাদা পর্যন্ত পুলিশ-দাফতরিক কর্মচারীদের দিতে হচ্ছে এক দিনের বেতন।
গত ১ আগস্ট উপপুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান এআইজিকে (অর্থ ও বাজেট) চিঠি দিয়ে এ অর্থ প্রদানের কথা জানান। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘উপযুক্ত বিষয়ে জানানো যাচ্ছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সদয় সিদ্ধান্তের আলোকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রথম শ্রেণীর সব কর্মকর্তা তাদের এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এবং দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নিম্ন পদমর্যাদা পর্যন্ত পুলিশ-দাফতরিক কর্মচারীরা তাদের এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ স্বপ্রণোদিতভাবে প্রদানের সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। এ বিষয়ে প্রাপ্ত অর্থ যথাসময়ে প্রেরণ করা হবে।’
উপপুলিশ কমিশনারকে (ফাইন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) চিঠিটির অনুলিপি দেয়া হয়। ওই অনুলিপিতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দুই কিস্তিতে এবং অন্যদের এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহপূর্বক যথাসময়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে প্রেরণ করতে হবে।
পদ্মা সেতুর জন্য এক মাসের বেতন কেটে রাখার সিদ্ধান্তে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। সত্ পুলিশ অফিসাররা এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের ওপর জুলুম বলে মন্তব্য করেছেন। এদিকে এ সিদ্ধান্তের পর পুলিশ সদস্যদের অনেকে তোলা তুলতে শুরু করেছেন।
সাবেক সচিব বদিউর রহমান এ প্রসঙ্গে আমার দেশকে বলেন, আইনের দৃষ্টিতে কারও বেতন সারেন্ডার করার জন্য অর্ডার দিতে পারে না। স্বপ্রণোদিত হয়ে এক মাসের বেতন দেয়ার নির্দেশনাও দেয়া যায় না। এমন নির্দেশনা দেয়া মানেই পরোক্ষভাবে চাঁদা দিতে বাধ্য করা। আইন থেকে বাঁচার জন্য স্বপ্রণোদিত শব্দটি লেখা হয়েছে। আর এক মাসের বেতন তো কিছুতেই চাইতে পারেন না।
এদিকে ১৮ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁইয়া সচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া এক আধাসরকারি পত্রে সচিব কমিটির সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘সরকারের সচিবগণ একটি উত্সব ভাতার সমপরিমাণ অর্থ দুই কিস্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে প্রদান করবেন। অনুদানের এই অর্থ একত্র করে চেকের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও কয়েকজন সচিবকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করবেন। সকল/মন্ত্রণালয় বিভাগ স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাদের আওতাধীন সকল দপ্তর, সংস্থা, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের ইচ্ছানুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অনুদান প্রদানের পরিমাণ ও পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের অনুদান বৈদেশিক মুদ্রায় সংগ্রহ করা হবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থায়নে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
৫ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পিএস মোহাম্মদ আবদুল লতিফ সচিব ও সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ বিষয়ে আরেকটি চিঠি লেখেন। চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের প্রেরিত ৫ আগস্ট ২০১২ তারিখের আধা সরকারি পত্রের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সরকারের সচিবগণ একটি উত্সব ভাতার সমপরিমাণ অর্থ দুই কিস্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে প্রদান করবেন। অনুদানের এই অর্থ একত্র করে চেকের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও কয়েকজন সচিবকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবেন।’ কিন্তু এরই মধ্যে অর্থ বিভাগের ৫ আগস্ট ২০১২ তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দেশের অভ্যন্তর থেকে প্রাপ্ত অনুদান জমা রাখার জন্য স্থানীয় মুদ্রায় ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’ শীর্ষক একটি হিসাব এবং বিদেশ থেকে প্রাপ্ত অনুদান জমা রাখার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (অনিবাসী)’ শীর্ষক আরেকটি হিসাব খোলা হয়েছে। এমতাবস্থায় পদ্মা সেতু নির্মাণ তহবিলে প্রদেয় স্বেচ্ছা অনুদানের অর্থ ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’ শীর্ষক হিসেবের অনুকূলে ক্রসড চেক/ব্যাংক ড্রাফট মারফত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মহোদয়ের দফতরে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
এ চিঠি পাওয়ার পর সচিবদের অনেকে দ্রুত চাঁদা জমা দিতে থাকেন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির দফতরে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত সচিবরা ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে স্বেচ্ছা অনুদান সহায়তা (নিবাসী)’ অ্যাকাউন্টের বিপরীতে চেকে এ টাকা জমা দিচ্ছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে তার একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ আবদুল লতিফ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছ থেকে আসা অনুদান চেকগুলো গ্রহণ করছেন। জমা নেয়া চেকের বিপরীতে রশীদও বুঝিয়ে দিচ্ছেন। যাতে লেখা রয়েছে, ‘এটা হিসাবের বিপরীতে শুধু অনুদান হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৯ জন সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা পদ্মা সেতুর জন্য তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক বিভাগের সচিব এমএএন সিদ্দিক, প্রেসিডেন্টের সচিব শফিউল ইসলাম, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব মাহফুজুর রহমান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব রফিফুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম শহীদ খান, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক, মহিলা ও শিশুবিষযক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার, বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর মহাপরিচালক শফিক আলম মেহেদী, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মিহির কান্তি মজুমদার ও শিল্প সচিব মাসুদ সিদ্দিকীসহ ১৯ জন সচিব।
সচিবরা প্রত্যেকে ঈদুল ফিতরের উত্সব ভাতার অর্ধেক অর্থাত্ ২০ হাজার টাকার ক্রস চেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত তিন লাখ ৮০ হাজার টাকার চেক সচিবদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
এদিকে সরকারি ঘোষণা না থাকলেও হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীদের কাছ থেকে পদ্মা সেতুর নামে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে এ টাকা আদায় শুরু হয়েছে। এ টাকা ছাড়া বিমান কর্তৃপক্ষ কোনো যাত্রীর বোর্ডিং পাস ছাড় করছে না। বিষয়টি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, বাড়তি এ টাকা আদায় নিয়ে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি। বিমানবন্দরে এলে হঠাত্ করেই টাকা নেয়া হচ্ছে। বিমানবন্দর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেকের ৫০০ টাকা দেয়ার মতো অবস্থা ছিল না। তাদের বিদায় জানাতে আসা স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে কেউ কেউ এ টাকা সংগ্রহ করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে সৌদি আরব, ওমান, দুবাই ও মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় নিয়ে প্রায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। ধাক্কাধাক্কি থেকে শুরু করে গায়ে হাত তোলার ঘটনাও ঘটেছে।
ওমানগামী যাত্রী আবছার আহমেদ আমার দেশকে বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বোর্ডিং পাস নিতে গেলে কাউন্টার থেকে বলা হয় ৫০০ টাকা দিতে হবে। কেন টাকা দিতে হবে জানতে চাইলে বলা হয়, পদ্মা সেতুর জন্য। দুবাইগামী বাবুল মিয়া জানান, পদ্মা সেতুর নামে তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা দাবি করা হয়। এ সময় তার কাছে বাংলাদেশী কোনো টাকা ছিল না। ছিল না ফোনও। পরে অন্য একযাত্রীকে অনুরোধ করে তার ফোন থেকে এক আত্মীয়কে ফোন করেন। তিনি এসে ৫০০ টাকা দিয়ে গেলে তার পর বোর্ডিং পাস মেলে।
বাড়তি টাকা আদায়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস রসিদের ব্যবস্থা করেছে। এতে লেখা আছে-ডিআইএসএস অব ইউটি ট্যাক্স। বিমানবন্দরে কর্মরত সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে স্পষ্ট সদুত্তর দিতে পারেননি। তারা বলেন, আমরা জানি, বিমানবন্দর ব্যবহারের জন্য এ টাকা আদায় করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্য নয়। এ নিয়ে যাত্রীদের ভুল বোঝানো হচ্ছে।
সিলেটে এমএজি ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও একই ভাবে পদ্মা সেতুর জন্য চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সম্প্রতি জোর করে সিলেট-ঢাকা-দুবাই ফ্লাইটের যাত্রীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা হাতিয়ে নেন ওসমানি বিমানবন্দরের বোর্ডিং কার্ড প্রদানকারী কাউন্টারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এ সময় যাত্রীরা এর জোর প্রতিবাদ জানালে তাদের বোর্ডিং কার্ড আটকে দেয়ার হুমকি দেন ওই কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী যাত্রীর ভাই জানান, পদ্মা সেতুর নামে টাকা নেয়া প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরও কোনো কর্ণপাত করেননি দায়িত্বরত কর্মকর্তা। একপর্যায়ে যাত্রীরা সরকারি নির্দেশনার সার্কুলার দেখতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা দেখাতে বাধ্য নন বলে জানান। শেষমেশ যাত্রীদের চাপের মুখে টাকা গ্রহণের একটি রসিদ দিতে বাধ্য হন ওই কর্মকর্তা। টাকা গ্রহণের ওই রসিদে ‘ট্যাক্স’ হিসেবে দেখানো হয়েছে—যদিও বলা হয়েছে পদ্মা সেতুর সারচার্জ।
পদ্মা সেতুর নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় সংসদ সদস্যের চাপে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে রাজধানীর স্কুলগুলোতেও। রাজধানীর মনিপুর স্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক চাঁদা নেয়া হচ্ছে। চাঁদার টাকা নিয়ে না যাওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা এবং পিটুনিও দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, এক ধরনের অতি উত্সাহী সুবিধাভোগী শিক্ষক পদ্মা সেতুর নামে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন।
রাজধানীর মিরপুরের মণিপুরীপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইব্রাহিমপুর শাখা ও মূল শাখার কয়েক ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক ফোন করে জানিয়েছেন, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ১০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। কয়েক ছাত্র চাঁদার টাকা নিয়ে না যাওয়ায় তাদের বেঞ্চের ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর আগে পদ্মা সেতুর চাঁদার ভাগাভাগি নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
পদ্মা সেতুর নামে যুক্তরাষ্ট্র ও আমেরিকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছেন বলে সেখানকার প্রবাসীরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর এইচ মিয়া এক ই-মেইল বার্তায় জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন মিলে একযোগে আমেরিকাজুড়ে প্রবাসীদের নিকট ‘পদ্মা ব্রিজ বন্ড’ জনপ্রিয় করার জন্য এক বিশেষ প্রচারণা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং এরই মধ্যে এ বিষয়ে প্রবাসীদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ কর্মসূচিতে যথারীতি দেশের মতো এ প্রবাসেও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে ছাত্রলীগ।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ৩৫ লাখ টাকা তুলে দেন এ ফান্ডের জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও একই কাজ করেছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও চাঁদা তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ পরিচালক মীর আবুল কাশেমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য এ অর্থ উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেনের কাছে প্রদান করেন লোক প্রশাসন বিভাগ। টাকা প্রদানের সময় ওই বিভাগের সভাপতি মো. মাহমুদুর রহমান, অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার এবং বিভাগের অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণে তহবিল সংগ্রহে মোবাইল ফোন গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের নামে রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজির প্রস্তাব দিয়েছেন স্পিকার আবদুল হামিদ।
পদ্মা সেতু নিয়ে সম্প্রতি সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে স্পিকার বলেন, আমার একটা প্রস্তাব আছে। প্রত্যেক কলে ২৫ পয়সা নিয়ে দেশকে সেতু নির্মাণে সহায়তা করা যায়। এতে অনেক পয়সা আসবে। এ ব্যাপারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য আহ্বান জানান স্পিকার।
পদ্মা সেতুর নামে চাঁদা তোলা প্রসঙ্গে সাবেক ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ড. আকবর আলি খান আমার দেশকে বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য টাকা তুলতে হলে আইন করতে হবে। অন্যথায় এটা বৈধ হবে না। স্বেচ্ছায় কেউ এ ফান্ডে টাকা দিতে পারেন। কিন্তু নির্দেশনা দিয়ে বেতনের টাকা কেটে রাখা যাবে না।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৯ জুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। একই অভিযোগে ঋণচুক্তি বাতিল করে এডিবি। ২৯০ কোটি ডলারের এ প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক ও এডিবি সরে যাওয়ার পর নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু করার পক্ষে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ঘোষণা আসার পর পরই চাঁদাবাজিতে নেমে পড়ে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের পথ ধরে চাঁদা তুলতে নেমে পড়েছেন সরকারি কর্মকর্তারাও।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads