মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১২

লন্ডনে কেমন আছেন তারেক রহমান



বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চিকিত্সা এখনও শেষ হয়নি। এখনও তাকে বাম পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে। তাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হয় এবং থেরাপিও নিতে হয়। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও অনেক সময় লাগবে। তবে লন্ডনে চিকিত্সার পাশাপাশি পড়াশোনা করে তার সময় কাটছে। ইন্টারনেটে নিয়মিত বাংলাদেশের পত্রিকা তিনি পড়েন। বিশেষ করে দৈনিক আমার দেশ পড়েন নিয়মিত বলে জানান তিনি। একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানও লন্ডনে পড়াশোনা করছে। চিকিত্সাধীন তারেক রহমানের সঙ্গী স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান পাশে থেকে তাকে মানসিক সাহস জোগাচ্ছেন।
চিকিত্সা শেষ হওয়ার আগে তার দেশে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। ডাক্তার যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়মিত চিকিত্সা নিতে বলবেন এবং যতদিন পর্যন্ত পুরো সুস্থ হয়েছেন বলে ডাক্তার সার্টিফাই না করবেন ততদিন পর্যন্ত তাকে সেখানেই থাকতে হবে।
লন্ডন সফরকালে চিকিত্সাধীন তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হলে কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেন খোলামেলা।
বলেন, এখন আমি দেশের রাজনীতির বাইরে রয়েছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন এবং দলের স্থায়ী কমিটি বসে নীতিগত সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আল্লাহ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিলে আবার যখন দেশে ফিরে আসবেন তখনই রাজনীতি নিয়ে চিন্তা। এর আগে রাজনীতি নিয়ে তিনি কোনো কথা বলবেন না বলে জানান। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও পুরো সুস্থ হইনি। নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে। দেশে ফেরা প্রসেঙ্গ বলেন, ডাক্তার যতদিন ছুটি না দেবেন ততদিন পর্যন্ত দেশে যাওয়ার চিন্তাই করা যাবে না। ডাক্তার ছুটি দিলেই কেবল দেশে ফেরার চিন্তা করা যাবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, এজন্য ছোট বেলা থেকেই রাজনীতি কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। নিজেও দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছি। রাজনীতি করার সুবাদে সব সময় দেশ এবং দেশের মানুষ নিয়েই ছিল যত ভাবনা।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক সেটাই ছিল বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতির জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কাজ করে গেছেন। এই চিন্তা ও আদর্শ ধারণ করেই আগামী দিনে বাংলাদেশকে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, কাজ করলে ভুলত্রুটি হতেই পারে। তবে যতরকম অপপ্রচার হয়েছে কোনোটাই জরুরি আইনের সরকার ও বর্তমান সরকার প্রমাণ করতে পারেনি। দেশের মানুষ একদিন এই অপপ্রচার সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। অপপ্রচারের কারণে মানুষের মধ্যে কোনো ভুল ধারণা হয়ে থাকলে তা অবশ্যই দূর হবে।
১/১১’র জরুরি আইনের সরকার বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য আসেনি। দেশের মানুষ এখন হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে জরুরি আইনের সরকার ছিল একটি পুতুল সরকার। জরুরি আইনের সরকার যখন ক্ষমতা নেয় তখন দেশের কিছু মানুষ তাদের সাপোর্ট করেছিল কি না সেটা বড় কথা নয়, অল্পদিন পরই মানুষের ধারণা পাল্টে গেছে। জরুরি আইনের সরকার তাদের কৃতকর্মের কারণেই বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি। তাদের একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা ছিল। এই এজেন্ডা অনুযায়ী নির্যাতনের ক্ষত এখনও বহন করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জরুরি আইনের সরকারের এজেন্ডাই ছিল বিএনপিকে ধ্বংস করা, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারকে নির্যাতন করা। সেই নির্যাতনের ক্ষত নিয়েই তারেক রহমান লন্ডনে চিকিত্সা নিচ্ছেন এবং তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোও চিকিত্সাধীন রয়েছেন। বর্তমান সরকারও যা করছে দেশের মানুষ নিশ্চই বুঝতে পারছে। সরকার যদি ভালো কাজ করে দেশের মানুষ সেভাবে মূল্যায়ন করবে। সরকার যদি নির্বাচন পূর্ব ওয়াদা অনুযায়ী দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে না পারে সেটাও মূল্যায়ন করবেন জনগণ। জনগণকে সেই মূল্যায়নের সুযোগ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, তারেক রহমান ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিমকোর্ট থেকে জামিনের পর চিকিত্সার জন্য লন্ডনে যান। তার স্বাস্থ্য রিপোর্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিদেশে চিকিত্সার জন্য সুপ্রিমকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছিল। তখন ফখরুদ্দিন-মইনউদ্দিনের জরুরি আইনের সরকার ছিল ক্ষমতায়। এর আগে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে নানা কাল্পনিক অভিযোগে বিভিন্ন রকমের মামলা দেয় জরুরি আইনের সরকার। দফায় দফায় রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয় তার ওপর। একদিন তিনি নিজেই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রিমান্ডের লোমহর্ষক নির্যাতনের বীভত্স কাহিনী তুলে ধরেছিলেন। কিভাবে তার চোখ সারাক্ষণ বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হতো সেই বর্ণনা দিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে। নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। তারপরও জরুরি আইনের নিয়ন্ত্রিত ম্যাজিস্ট্রেট তারেক রহমানকে আবারও রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দেয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আকুতিও ম্যাজিস্ট্রেট গ্রহণ করেননি সেদিন।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads