বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১২

ঈদের পর উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ



এক দফার আন্দোলনে নামছে বিরোধী জোট ; সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ‘শক্ত’ কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা

মঈন উদ্দিন খান
ঈদের পর ফের উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ। রমজানের বিরতি কাটিয়ে আন্দোলনে নামতে রীতিমতো মুখিয়ে আছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। নতুন মাত্রার এই আন্দোলন গতি পাবে নির্দলীয় সরকার পুনর্বহালের ‘এক দফা’ দাবিতে। আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে আগস্টের শেষে দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাসব্যাপী বেশ কিছু ‘শক্ত’ কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে হরতাল, ধর্মঘট, গণ-অবস্থানের মতো কর্মসূচিও থাকবে। 
বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের নানা ‘বৈরী আচরণ’ সত্ত্বেও সংযত বিএনপি এখন আন্দোলন নিয়ে নতুন করে ভাবছে। ঈদের পরে তাই তারা আন্দোলনকে লক্ষ্যপানে এগিয়ে নিতে সরকারের ‘টনক নড়ার’ মতো কর্মসূচি দিতে চায়। সরকার যদি সমঝোতার পথে না হাঁটে তাহলে দিনকে দিন আন্দোলন তীব্র করে দাবি মানতে বাধ্য করার পথই তারা বেছে নেবে। 
নির্বাচনকালীন সরকার ‘নির্দলীয়’ হবেÑ এমন ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের আলোচনায় বসতে রাজি নয় বিএনপি। ক্ষমতাসীন দল আসলে কী চায় তা সুনির্দিষ্ট করে জানতেও চায় বিরোধী দল। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারে অংশ নিতে বিএনপিকে যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা প্রত্যাখ্যান করে দলের ভেতরে তত্ত্বাবধায়কের আদলেই নির্দলীয় সরকারের ‘রূপরেখা’ কেমন হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনটি কারণে এই রূপরেখা প্রণয়নে হাত দিয়েছে বিএনপি। প্রথমত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের তীব্র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি সংবিধানে যে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা সংযোজন করেছিল, তার র্দুবলতা খুঁজে বের করা। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার পূর্বাপর বিস্তারিত তুলে আনা এবং তৃতীয়ত, আগামীতে যদি নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি প্রসঙ্গে সংবিধান সংশোধন করতে হয়, সেটা কিভাবে মতৈক্যের ভিত্তিতে এবং বিতর্কমুক্তভাবে করা যায় তা নিয়ে দলীয় চিন্তাভাবনা তুলে ধরা। 
জানা গেছে, নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা কাজ শুরু করেছেন। বিশেষ করে সেই সরকারের প্রধান কে হবেন তাদের কাছেই তা সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। তারা সুপ্রিম কোর্টের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করার প্রস্তাব দিতে পারেন। সেই সরকারের অন্য সদস্যদের ব্যাপারে দলটির মধ্যে দুই ধরনের চিন্তাভাবনা কাজ করছে। এক, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ১০ জন বিচারককে নিয়ে নির্দলীয় সরকার হতে পারে; দুই, ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম সুপারিশ করা হবে সেই সরকারের সদস্য হিসেবে। সে েেত্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের প থেকে পাঁচজন করে এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করা হবে, যাদের কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। 
জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি নিয়ে ঈদের পর আওয়ামী লীগ ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ বিএনপির কাছে প্রস্তাব দিলে এই রূপরেখা তুলে ধরা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি চেয়ারপারসন নিজেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের অবস্থান পুনরায় স্পষ্ট করতে পারেন। 
বিএনপি বলছে, বল এখন সরকারের কোর্টে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে সরকার, তাই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর আলোকে এ সমস্যার সমাধানে তাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সংসদে তাদেরই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। 
ঈদ-পরবর্তী আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, ঈদের পর বিএনপি এবং ১৮ দলীয় জোট জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন জোরদার করবে। বিএনপি গত সাড়ে তিন থেকে পৌঁনে চার বছরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছে, জনগণ এটা দেখেছে। মানুষের কোনো কষ্ট হয় এমন কর্মসূচিও আমরা দেইনি। ইলিয়াস আলীকে গুম করার প্রতিবাদেই আমরা তিন-চারটি হরতাল দিয়েছি। সরকার যা-ই বলুক দেশের মানুষ জানে বিএনপি এত দিন আন্দোলন করলেও কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করেনি। ঈদের পর বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফের আন্দোলন তীব্র করবে। 
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকার প্রশ্নে কোনো ছাড় দেবে না বিএনপি। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রস্তাব দিলে বিএনপি তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। 
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলকে বড় ধরনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে দলের হাইকমান্ড। এ জন্য খালেদা জিয়ার পাশাপাশি সিনিয়র নেতারা ঈদের পর জেলা সফরে যাবেন। ইতোমধ্যে দলের কোন্দল নিরসন করে জেলাপর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়েছে। ঈদ-পরবর্তী এক মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করা হবে। 
জানা গেছে, ঈদের পর খালেদা জিয়া রাজবাড়ীসহ ঢাকার আশপাশের কয়েকটি জেলায় সমাবেশ করবেন। রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলায়ও তার সমাবেশ করার কথা রয়েছে। সেখানেও যেতে পারেন তিনি। বরিশালেও সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছেন তিনি। 
নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ১১ জুন ঢাকার গণসমাবেশ থেকে খালেদা জিয়া ঈদের পর হরতাল-অবরোধ ও ধর্মঘটসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা বলেছেন। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার আগে তিনি সমমনা রাজনৈতিক দল এবং বিএনপিপন্থী বিভিন্ন সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে বৈঠক করবেন। অঙ্গসংগঠনগুলোও নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। ছাত্রদলের কমিটি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এরপর পুনর্গঠন করা হবে যুবদলও।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads