সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১২

বিরোধী দলবিহীন কোনো জাতীয় সংসদ বাংলাদেশে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি


আ তা উ স সা মা দ
অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যে মোড় নেবে তা বলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না, কী হতে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে জনসাধারণের মনে শঙ্কা আর হতাশা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, তাই যার যার নিরাপত্তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। ওষুধ আর খাদ্য সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি সবার জন্যই গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে রয়েছে। জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বেড়েই চলেছে এবং এর ফলে শহরের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক ও কৃষি-শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ায় এবং যোগাযোগের অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। দুর্নীতি ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি গ্রাস করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা সরকার হারিয়ে ফেলেছে বলেই মনে হয়। শোষককুল ও তাদের হাতের পুতুলরা ছাড়া এই করুণ পরিস্থিতিতে আপামর জনগণ দুশ্চিন্তিত।
বিদ্যমান এত সব জটিলতার সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বর্তমান জাতীয় সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পূর্ণ হতে আর মাত্র ১৬ মাস বাকি। নির্বাচনী হাওয়া এখনই কিছুটা অনুভব করার কথা। অথচ প্রশ্ন উঠেছে, সে নির্বাচন আদৌ হবে কি-না। কেউ কেউ আরেক এক-এগারোর ভয় দেখাচ্ছেন, দু’একজন বলছেন রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবসরে পাঠাতে হবে। অথচ বাস্তবতা হলো, এরা দু’জন দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, যথাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাণ্ডারি। শুধু তাই নয়, ভোটের ময়দান হোক আর রাজপথের আন্দোলন হোক, দুই ক্ষেত্রেই তারা নিজ নিজ দলের প্রধান শক্তি। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেই চলেছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একটি দলীয় সরকার (হতে পারে তা পার্লামেন্টে আসন আছে এমন সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে।) এরকম সরকারে যে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য থাকবে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, একথা তারা না বললেও সবাই বোঝে। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার ১৮ দলীয় জোট দাবি করেছে, জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতেই হবে। তা না হলে তারা নির্বাচন তো বয়কট করবেনই, এমনকি ওই নির্বাচন প্রতিহত করবেন। এর ফলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে ১৯৯৫ ও ’৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি ও অধ্যাপক গোলাম আজমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীর অসহযোগ আন্দোলন। যার ফলে দেশ অচল হয়ে যায় আর সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা সন্নিবেশ করে পদত্যাগ করে। এর দরুন তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
দেরিতে হলেও বেগম জিয়া ও বিএনপি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কারণ এর পরে কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও বিপদমুক্ত হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা খুবই কমে গিয়েছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলে দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোট লক্ষ্য করলেই দেখতে পারবেন যে, বাংলাদেশে যেসব জাতীয় সংসদে বিরোধী দল থাকেনি, সেই সংসদগুলো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। বিরোধী দলের অস্তিত্বহীন এসব সংসদ ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই ভেঙে গেছে। ১৯৮৬ সালে জেনারেল এরশাদের অধীনে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, তাতে বিএনপি ও আরও ছোট ছোট কয়েকটি দল অংশগ্রহণ করেনি। তবে নির্বাচনে যোগ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, কমিউনিস্ট পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টি। ১৯৮৭ সালের শেষভাগে এরশাদ হটাও আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী যুবক নূর হোসেন ১০ নভেম্বর বিরোধী দলের সম্মিলিত ঢাকা অবরোধ আন্দোলনে অংশ নেয়ার সময় জিরো পয়েন্টের কাছে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তখন ঢাকা ও সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সংসদীয় বিরোধী দলগুলোর ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ বাড়তে থাকে। যার ফলে সংসদ ছাড়ে জামায়াতে ইসলামী। আর আওয়ামী লীগ একই ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চাচ্ছে জানতে পেরে এরশাদ তৃতীয় জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। এই সংসদের স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র এক বছর পাঁচ মাস। পাঁচ বছর মেয়াদের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারেনি এটি। এরপর জেনারেল এরশাদ চতুর্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচন করেন ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, বামজোট, জামায়াত এই নির্বাচন বয়কট করে। তবে এতে অংশ নেয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের একাংশ এবং ফ্রিডম পার্টি।
১৯৯০-এর ডিসেম্বরে তীব্র গণরোষের মুখে জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করার কয়েকদিনের মধ্যেই এই চতুর্থ সংসদও ভেঙে যায়। এই সংসদের আয়ু ছিল দুই বছর ৮ মাস। জনগণের বেশিরভাগই এই জাতীয় সংসদটিকে ক্ষমতাহীন আর অকেজো বলে মনে করতেন। এরপর ১৯৯১-এর নির্বাচনের মাধ্যমে পঞ্চম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। এই সংসদ সংবিধান সংশোধন করে দেশে পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু মাগুরার একটি আসনের উপনির্বাচনে সরকারপক্ষ ভোট কারচুপি করেছে—এই অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো সংসদ বর্জন করে এবং একসময় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। যার ফলে বেগম জিয়া এই সংসদের মেয়াদ পুরো হওয়ার চার মাস আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেন। এরপর ১৯৯৬-এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। তত্কালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি সাদেক এ নির্বাচনটি সংবিধান রক্ষার জন্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। তবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, জাসদ ও কিছু বামদল এই নির্বাচন প্রতিরোধ করতে ভোটের সময় অনেক জায়গায় সহিংস পন্থায় বাধা দেয়। বহু নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়। তারপরও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেয়া ফল ঘোষণা করলে দেখা যায় যে বিএনপি প্রার্থীরা বিরাট সংখ্যক ভোট পেয়েছেন। আন্দোলনরত বিরোধী মোর্চা ও দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই ফল সত্য বলে মেনে নেয়নি। তবে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য এই সংসদ একটি অধিবেশনে বসে এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করে বিরোধী দলগুলোর দাবি মেনে নেয়। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে সংসদ ভেঙে দিতে ও নতুন ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানান। রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। প্রধান বিরোধী দলবিহীন ওই সপ্তম জাতীয় সংসদের আয়ু ছিল মাত্র ৮ দিন। স্বল্পপরিসরের এই স্মৃতিচারণ থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল যদি (সেই দল বিএনপিই হোক আর আওয়ামী লীগই হোক) জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে সেই ভোটের মাধ্যমে সৃষ্ট জাতীয় সংসদ কাজ করতে পারে না। মেয়াদ পুরো করার আগেই সেটিকে বিদায় নিতে হয়।
আগামীকাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদী নেতা ও এদেশের স্থপতি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এদিন তিনি একদল সেনা অভ্যুত্থানকারীর হাতে সপরিবারে নিহত হন। শেখ হাসিনা তার পরিবার ও তার বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। আজ বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করে বিনীতভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি যে, তিনি ও তার দল আওয়ামী লীগ ১৯৭৫-এর জানুয়ারিতে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে প্রথম জাতীয় সংসদের অতি ক্ষুদ্র দলটিকেও বিলুপ্ত করেন। যে কোনো কারণেই হোক এরপর ওই সংসদটি টিকেছিল মাত্র ১০ মাস। যারাই এই ইতিহাস আলোচনা করবেন, আমি আশা করি তারাই মেনে নেবেন যে, বিরোধী দলবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।

আ তা উ স সা মা দ
অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে যে মোড় নেবে তা বলা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না, কী হতে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে জনসাধারণের মনে শঙ্কা আর হতাশা বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, তাই যার যার নিরাপত্তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। ওষুধ আর খাদ্য সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি সবার জন্যই গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে রয়েছে। জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বেড়েই চলেছে এবং এর ফলে শহরের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক ও কৃষি-শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ায় এবং যোগাযোগের অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। দুর্নীতি ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি গ্রাস করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা সরকার হারিয়ে ফেলেছে বলেই মনে হয়। শোষককুল ও তাদের হাতের পুতুলরা ছাড়া এই করুণ পরিস্থিতিতে আপামর জনগণ দুশ্চিন্তিত।
বিদ্যমান এত সব জটিলতার সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বর্তমান জাতীয় সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ সম্পূর্ণ হতে আর মাত্র ১৬ মাস বাকি। নির্বাচনী হাওয়া এখনই কিছুটা অনুভব করার কথা। অথচ প্রশ্ন উঠেছে, সে নির্বাচন আদৌ হবে কি-না। কেউ কেউ আরেক এক-এগারোর ভয় দেখাচ্ছেন, দু’একজন বলছেন রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রথমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবসরে পাঠাতে হবে। অথচ বাস্তবতা হলো, এরা দু’জন দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, যথাক্রমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাণ্ডারি। শুধু তাই নয়, ভোটের ময়দান হোক আর রাজপথের আন্দোলন হোক, দুই ক্ষেত্রেই তারা নিজ নিজ দলের প্রধান শক্তি। এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেই চলেছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় একটি দলীয় সরকার (হতে পারে তা পার্লামেন্টে আসন আছে এমন সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে।) এরকম সরকারে যে আওয়ামী লীগের প্রাধান্য থাকবে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, একথা তারা না বললেও সবাই বোঝে। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং তার ১৮ দলীয় জোট দাবি করেছে, জাতীয় সংসদের নির্বাচনের সময় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকতেই হবে। তা না হলে তারা নির্বাচন তো বয়কট করবেনই, এমনকি ওই নির্বাচন প্রতিহত করবেন। এর ফলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে ১৯৯৫ ও ’৯৬ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি ও অধ্যাপক গোলাম আজমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামীর অসহযোগ আন্দোলন। যার ফলে দেশ অচল হয়ে যায় আর সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা সন্নিবেশ করে পদত্যাগ করে। এর দরুন তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে।
দেরিতে হলেও বেগম জিয়া ও বিএনপি সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কারণ এর পরে কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও বিপদমুক্ত হওয়ায় দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা খুবই কমে গিয়েছিল। বর্তমানে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করলে দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোট লক্ষ্য করলেই দেখতে পারবেন যে, বাংলাদেশে যেসব জাতীয় সংসদে বিরোধী দল থাকেনি, সেই সংসদগুলো পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। বিরোধী দলের অস্তিত্বহীন এসব সংসদ ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই ভেঙে গেছে। ১৯৮৬ সালে জেনারেল এরশাদের অধীনে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়, তাতে বিএনপি ও আরও ছোট ছোট কয়েকটি দল অংশগ্রহণ করেনি। তবে নির্বাচনে যোগ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী, কমিউনিস্ট পার্টি ও গণতন্ত্রী পার্টি। ১৯৮৭ সালের শেষভাগে এরশাদ হটাও আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী যুবক নূর হোসেন ১০ নভেম্বর বিরোধী দলের সম্মিলিত ঢাকা অবরোধ আন্দোলনে অংশ নেয়ার সময় জিরো পয়েন্টের কাছে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তখন ঢাকা ও সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সংসদীয় বিরোধী দলগুলোর ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ বাড়তে থাকে। যার ফলে সংসদ ছাড়ে জামায়াতে ইসলামী। আর আওয়ামী লীগ একই ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চাচ্ছে জানতে পেরে এরশাদ তৃতীয় জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। এই সংসদের স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র এক বছর পাঁচ মাস। পাঁচ বছর মেয়াদের ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারেনি এটি। এরপর জেনারেল এরশাদ চতুর্থ জাতীয় সংসদের নির্বাচন করেন ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, বামজোট, জামায়াত এই নির্বাচন বয়কট করে। তবে এতে অংশ নেয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের একাংশ এবং ফ্রিডম পার্টি।
১৯৯০-এর ডিসেম্বরে তীব্র গণরোষের মুখে জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করার কয়েকদিনের মধ্যেই এই চতুর্থ সংসদও ভেঙে যায়। এই সংসদের আয়ু ছিল দুই বছর ৮ মাস। জনগণের বেশিরভাগই এই জাতীয় সংসদটিকে ক্ষমতাহীন আর অকেজো বলে মনে করতেন। এরপর ১৯৯১-এর নির্বাচনের মাধ্যমে পঞ্চম জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। এই সংসদ সংবিধান সংশোধন করে দেশে পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু মাগুরার একটি আসনের উপনির্বাচনে সরকারপক্ষ ভোট কারচুপি করেছে—এই অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ও জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলো সংসদ বর্জন করে এবং একসময় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে। যার ফলে বেগম জিয়া এই সংসদের মেয়াদ পুরো হওয়ার চার মাস আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেন। এরপর ১৯৯৬-এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। তত্কালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি সাদেক এ নির্বাচনটি সংবিধান রক্ষার জন্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। তবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, জাসদ ও কিছু বামদল এই নির্বাচন প্রতিরোধ করতে ভোটের সময় অনেক জায়গায় সহিংস পন্থায় বাধা দেয়। বহু নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্ভব হয়। তারপরও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেয়া ফল ঘোষণা করলে দেখা যায় যে বিএনপি প্রার্থীরা বিরাট সংখ্যক ভোট পেয়েছেন। আন্দোলনরত বিরোধী মোর্চা ও দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই ফল সত্য বলে মেনে নেয়নি। তবে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য এই সংসদ একটি অধিবেশনে বসে এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করে বিরোধী দলগুলোর দাবি মেনে নেয়। তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসকে সংসদ ভেঙে দিতে ও নতুন ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানান। রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। প্রধান বিরোধী দলবিহীন ওই সপ্তম জাতীয় সংসদের আয়ু ছিল মাত্র ৮ দিন। স্বল্পপরিসরের এই স্মৃতিচারণ থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল যদি (সেই দল বিএনপিই হোক আর আওয়ামী লীগই হোক) জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে, তাহলে সেই ভোটের মাধ্যমে সৃষ্ট জাতীয় সংসদ কাজ করতে পারে না। মেয়াদ পুরো করার আগেই সেটিকে বিদায় নিতে হয়।
আগামীকাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদী নেতা ও এদেশের স্থপতি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এদিন তিনি একদল সেনা অভ্যুত্থানকারীর হাতে সপরিবারে নিহত হন। শেখ হাসিনা তার পরিবার ও তার বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। আজ বঙ্গবন্ধুর প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করে বিনীতভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি যে, তিনি ও তার দল আওয়ামী লীগ ১৯৭৫-এর জানুয়ারিতে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে প্রথম জাতীয় সংসদের অতি ক্ষুদ্র দলটিকেও বিলুপ্ত করেন। যে কোনো কারণেই হোক এরপর ওই সংসদটি টিকেছিল মাত্র ১০ মাস। যারাই এই ইতিহাস আলোচনা করবেন, আমি আশা করি তারাই মেনে নেবেন যে, বিরোধী দলবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads