রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১২

মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সংরক্ষিত কোটায় প্লট, নিয়ম লঙ্ঘন করে দেয়া প্লট বাতিল হোক



এখন দেশের পত্রপত্রিকায় যখনই কোনো বড় ধরনের অনিয়ম আর দুর্নীতির কথা প্রকাশিত হয়, তখনই দেখা দেয় এর সাথে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদেরা জড়িত। গতকাল বেশ কয়েকটি দৈনিকে তেমনি একটি খবর প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। খবরটিতে বলা হয়েছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঢাকায় ১১ মন্ত্রী ও ৪৮ সংসদ সদস্যকে সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের ১১ মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীকে সংরক্ষিত কোটায় পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট দেয়া হয়েছে। একই কোটায় কমপক্ষে ৪৮ জন সংসদ সদস্যকে প্লট দেয়া হয়েছে। এসব বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ে বিশেষ অবদান রেখেছেন, কিন্তু রাজধানীতে কোনো জমি নেইÑ এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্লট দিতে রাজউকের বরাদ্দ বিধির ১৩/এ ধারায় এই সংরক্ষিত কোটা সৃষ্টি হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের সময়। জাতীয়পর্যায়ে বিশেষ অবদান রেখেছেন, কিন্তু রাজধানীতে থাকার মতো তার বাড়ি ও জমি নেইÑ এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্লট দিতে এই ধারাটি সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্লট বরাদ্দ পাওয়া এসব মন্ত্রী-উপদেষ্টা-প্রতিমন্ত্রী-এমপিদের অনেকেরই নিজের ও নিজের স্ত্রীর নামে ঢাকায় জমি ও বাড়ি আছে। যেমনÑ ১১ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর কমপক্ষে চারজন আগে থেকেই ঢাকায় বাড়ি-প্লট-ফ্যাটের মালিক। তাদের ১০ কাঠার একটি করে প্লট দেয়া হয়েছে। সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দ পাওয়া এসব মন্ত্রী হচ্ছেনÑ দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানও ১০ কাঠার প্লট পেয়েছেন পূর্বাচল প্রকল্পে। প্লট পাওয়া প্রতিমন্ত্রীরা হচ্ছেনÑ আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আফছারুল আমীন, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন। অন্যজন হচ্ছেন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক। একই কোটায় ৪৮ জন সংসদ সদস্যকেও প্লট দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গত সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, ঢাকায় ৪৬/৩ নম্বর ঝিগাতলায় তার নিজস্ব বাড়ি আছে। নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানের হলফনামায় স্ত্রীর নামে পূর্বাচলে ১০ কাঠা ও আনন্দনগরে দেড় কাঠা জমি থাকার উল্লেখ আছে, রাজিউদ্দিন আহমেদ ইসিতে দেয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, উত্তরা মডেল টাউনে তার চার কাঠার একটি প্লট আছে। সেখানে একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে ইমারত নির্মাণ করা হচ্ছে। বনানীতে তিনি পৈতৃক বাড়ির অংশীদার। তার স্ত্রী গুলশান, ধানমন্ডি ও এলিফ্যান্ট রোডে তিনটি পৈতৃক বাড়ির অংশীদার। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের হলফনামায় উল্লেখ আছে, ঢাকায় তিনি পৈতৃক বাড়ির অংশীদার। শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া উত্তরায় পাঁচ কাঠার একটি প্লট পেয়েছেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়; তবে তার স্ত্রী তৃপ্তি বড়–য়ার নামে পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার একটি এবং তাদের আমেরিকা প্রবাসী বিবাহিত মেয়ে উপমা বড়–য়ার নামে তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৩/এ ধারায় সংরক্ষিত কোটায়, যা এ ধারার পুরোপুরি লঙ্ঘন।
আমরা মনে করি, উল্লিখিত সংসদ সদস্য ও তাদের আত্মীয়দের নামে সংরক্ষিত কোটায় যেসব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাদের কার কার বেলায় নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে তা চিহ্নিত করার জন্য একটি তদন্ত করা দরকার। তা ছাড়া কারা নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে এ ধরনের বরাদ্দ নিয়েছেন, তাদের নিজে থেকেই এই প্লট বরাদ্দ পাওয়া থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। কারণ ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে আইনগত চ্যালেঞ্জে তা টিকবে না। ফলে তারা তখন বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। এমন উদাহরণ অতীতে রয়েছে। একই কারণে এরশাদের আমলে বরাদ্দ পাওয়া ৯ ব্যক্তির প্লট বরাদ্দ পরবর্তী বিএনপি সরকারের আমলে বাতিল হয়ে যায়। সর্বোপরি সরকারের উচিত এই অন্যায্য বরাদ্দ দ্রুত বাতিলের ব্যবস্থা নেয়া। 

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ads