বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সরেজমিন প্রতিবেদন ভালুকায় তারেক রহমানের পরশ পাওয়া মোতালেবের বাগানে এখন খেজুরের সমারোহ,বেসুমার উচ্ছাস তার পরিবারে



 উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াগাঁওয়ে মোতালেবের খেজুরবাগানে এখন খেজুরের সমারোহ।প্রতিদিনই আগন্তকরা আসছে বাগান দেখতে।খুশী মোতালেব,আনন্দ পরিবারেও।খেজুর চাষই মোতালেবের ভাগ্যকে এখন পরিবর্তন করে দিয়েছে।যে বাগানের গোঁড়াপত্তন ঘটেছিল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাত ধরেই
প্রকাশ,ভালুকার নিভৃত পল্লীর নাম পাড়াগাঁও আর এ গ্রামেরই বাসিন্দা মোতালেব ১৯৯৮ সালে জীবিকার অন্নেষনে সৌদি আরব যায়।সেখানে একটি খেজুর বাগানের তদারকির চাকুরী পায় সে।দু’বছর চাকুরী করে অর্থের বদলে খেজুর নিয়ে বাড়িতে এসে হাজির হয় সে।পরিকল্পনা নিজ এলাকায় সে খেজুরের বাগান করবে।কারন সে দেখেছে সৌদির মাটিতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিজ হাতে লাগানো নিম গাছের চারা আমাদের দেশী গাছেই মতই বড় দেখতে হয়েছে।এ থেকেই তার মধ্যে কৌতুহলের জন্ম।সে মাফিক দেশে ফিরে খেজুর বাগানের কথা পারিবারিক ভাবে প্রকাশ করার পর সকলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়।পিতা,মাতা,স্ত্রী,সন্তান সকলেরই মনে আঘাত লাগে মোতালেব করলটাকি।টাকা না এনে খেজুর নিয়ে এসেছে।এলাকায় এ কথা চারিদিকে চাউর হওয়ার পর এলাকাবাসী মোতালেব ’পাগল’হয়ে গেছে বলে প্রচার শুরু করে।সংকল্পে অটুট মোতালেব হাল ছাড়েনি বাগান সে করবেই।সকলের নিন্দা ও উপহাসকে পিছু ফেলে মাত্র ৭৫ শতাংশ জমিতে শুরু করে তার স্বপ্নের খেজুর বাগান।২৭৫টি চারা নিয়ে বাগানের যাত্রা শুরু হলেও কিছুদিনের মধ্যেই ১০০০ চারায় রুপান্তরিত হয় বাগান। রাতের আঁধারে বাগানের চারা উপড়ানো,বাধা কেটে ফেলা ইত্যাদি উপদ্রবে চোখে সর্ষে ফুল দেখতে থাকে মোতালেব।এক পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসনের আনুকুল্যে তার বাগান পরিচর্যা চলতে থাকে।প্রশাসনিক চোখ পড়ায় কিছুতা অত্যাচার থেকে রেহাই পেলেও সীমিত অর্থে বাগান পরিচর্চা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।এ সময় ’দৈনিক দিনকাল’সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয় বাগান নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন ’বাংলাদেশের মাটিতে সৌদির খেজুর’।রিপোর্ট গুলো দৃষ্ঠি কাড়তে সক্ষম হয় বিএনপি’র তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের।স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেন খেজুর বাগান পরিদর্শন করতে তিনি আসবেন।তৎকালীন ইউএনও মোতালেবকে ডেকে এ সংবাদ জানানোর পর আনন্দে অনুভুতি প্রকাশের ভাষা হারিয়ে ফেলে মোতালেব।২০০৪সালের ১৬জুন বিকেলে বাগানে এসে হাজির হন তারেক রহমান।মোতালেবের বাড়ী সংলগ্ন বাগানটি তিনি ঘুরে ঘুরে দেখেন।তারেক রহমানের অগমনের সংবাদে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীদেরও ভীড় লেগে যায়।তবে বাগানে যত্রতত্র প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়ে কেবল সাংবাদিকদের অগ্রাধিকার দেন নিরাপত্তা কর্মীরা।বাগান ঘুরে তারেক রহমান মোতালেবের কাঁধে হাত রেখে বাগান করার ইতিহাস ও নেপথ্য কথা শুনেন মনোযোগ দিয়ে। মোতালেবের বর্ননায় তিনি আনন্দিত ও বিস্মিতও হন।বাগান পরিচর্চার নানাবিধ অসঙ্গতি ও সমস্যাবলীর খোঁজখবর জানতে চাইলে মোতালেব প্রয়োজনীয় উপাদান ও কারিগরি সমস্যার পাশাপাশি এলাকায় বিদ্যুতায়ন এবং রাস্তা পাকা করনের জোর দাবী করে তারেক রহমানের কাছে।বার বার একই দাবী করায় তারেক রহমান হেসে দিয়ে বলেন ঠিক আছে এ সমস্যার সমাধান হবে।বছর ঘুরার আগেই বিদ্যুৎ লাইনের কাজ চলতে থাকে এবং সম্পন্নও হয়ে যায়। বাগানকে ঘিরে হলেও বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হয় পুরো এলাকা।রাস্তাটি আগে থেকেই জনবহুল থাকলেও কিন্তু পিচঢালা হওয়ায় ফিরে পায় তার স্বকিয়তা¡। সিডস্টোর বাজার থেকে প্রায় ৭কি.মি এলাকায় বিদ্যুতায়ন ঘটে। অন্ধকার ঘর আলোকিত করে কয়েক হাজার পরিবারকে।সম্প্রতি বাগানে গিয়ে দেখা যায় গাজীপুরের ৭/৮জন লোক তার ঘরে বসে কথা বলছে।দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই কমবেশী লোকজনের আনাগোনা লেগেই আছে।বিরক্ত হয়না সে।আগন্তকদের জন্য আলাদা কক্ষই তৈরী করে রেখেছে।বাস্তবতা এমন যেন ডাক্তারের কাছে রোগীর আগমন। এ সময় মোতালেব ছাড়াও কথা হয় পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শফিউল্লাহ লিটন,শফিউল্লাহ আনসারী ও লালন মাস্টারসহ আরো অনেকের সাথেই।দীর্ঘ আলাপচারিতায় তারেক রহমানের নানাবিধ স্মৃতির কথা তুলে ধরেন তারা।তিন জনই পেশায় শিক্ষক। পাড়াগাঁও গ্রামের বিদ্যুৎ ও সিডস্টোর-সখীপুর রাস্তা তারেক রহমানের অবদান এবং এ বিষয়ে কারও কোন দ্বিধা নেই এ কথা জড়তাহীন ভাবেই উল্লেখ করেন তারা।বিদ্যুৎ কত দ্রুত এসেছে সেটিরও বর্ননা দেন লালন মাস্টার।তারেক রহমানের আগমনের বদৌলতেই এবং বাগানকে কেন্দ্র করেই এটি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তারা।তাদের মতে এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই এ ঘটনায় তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞ। এ বিষয়ে দৃষ্ঠি আকর্ষন করা হলে বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ভালুকা উপজেলার সভাপতি ফখরউদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু বলেন,দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী,কৃষক,শ্রমিক ও সাধারন মানুষকে সক্ষম করে তোলতে তারেক রহমানের যে প্রয়াস সেটিকে দেশের মানুষ আদর্শ হিসেবে গ্রহন করতে শুরু করেছিল যা দেখে একটি ঈর্ষান্বিত মহল আতংকিত হয়ে পড়ে।তাঁর এ কর্মস্পৃহা বিএনপির প্রতিটি কর্মীর ভিতর প্রবেশ করাতে তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। ফখরউদ্দিন বাচ্চু উল্লেখ করেন,ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ষড়যন্ত্রকারীরা সাময়িক সুবিধা পেলেও কখনোই সফল হয়নি তারেক রহমানকে নিয়েও হবেনা।তিনি এতদিন আমাদের মাঝে থাকলে এ রকম আরো অনেক মোতালেবের ভাগ্যই পরিবর্তিত হতে পারতো।
মোতালেব জানায়,ঐ সময় তারেক রহমানের পৃষ্টপোষকতা না পেলে বাগান নিয়ে সফলতার মুখ দেখতে পেতনা সে।বাগান পরিচর্চা করতে সেলোমেশিন সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সহায়তা দেয়ায় বাগানকে দাঁড় করাতে পেরেছে সে।বর্তমানে তার বাগানের আয়তন বেড়ে ১একর ৩২ শতাংশে বিস্তৃতি লাভ করেছে।ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫২০টি গাছ রয়েছে এবং ৩৫টিতে খেজুর ঝুঁলে আছে।চারার পরিমানও প্রায় ৭/৮হাজারের মতো।মাস খানেকের মধ্যেই এ মৌসুমের খেজুর গুলো খাওয়ার উপযোগী হবে।ক’বছর যাবৎ খেজুর বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে সে বাগানের বাউন্ডারী ওয়াল তৈরী করেছে।তাতে প্রায় ৩/৮লাখ টাকা খরচ হয়েছে।চারা ও খেজুর বিক্রি করে তার সংসার চলছে ভালো ভাবেই।দেশের বিশিষ্ঠ ব্যাক্তিদের আগমন ঘটছে । মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার প্রচার হচ্ছে।দেশের স্বনামখ্যাত ব্যাক্তিদের সাহচার্য পাচ্ছে সব মিলিয়ে মোতালেব এখন বেসুমার উচ্ছাসে।সকলের কাছেই এখন সে প্রিয় মুখ।এক ছেলে ৮ম শ্রেনীতে ও অপর ছেলে ২য় শ্রেনীতে অধ্যয়নরত।একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়ে গেছে।সব মিলিয়ে সাজানো গোছানো হয়ে গেছে মোতালেবের পুরো পরিবার কেবল বাগান দিয়েই।বাগানে ফল ধরেছে এ মুহুর্তে তারেক রহমানের কথা মনে পড়ছে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে মোতালেবের স্পষ্ট উচ্চারন’তারেক রহমান আবারো আসবেন’ তার বাগানে এবং এ বাগানের উৎপন্ন হওয়া খেজুর তিনি নিজ হাতে ছিঁড়ে খাবেন।মোতালেব যেমন আশাবাদী তেমন আশাবাদী এলাকাবাসীও।তারাও অধির আগ্রহে আছেন শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়া যোগ্য উত্তরসুরী ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভবিষ্যত কর্নধারকে বাগানের ওছিলায় সাদাসিধে বেশে আবার দেখবেন।আবারো কোন বৃদ্ধ মাথায় ভুলানোর সুযোগ পাবেন,বলবেন বাবা তুমি একদিন অনেক বড় হবে। এলাকাবাসীর মতে,দেশে হাজারো মোতালেব তৈরীর সুনিপুন ’কারিগর’ তারেক রহমানের অপেক্ষা করছে দেশ জুড়েই।কারন তিনি কেবল পাড়াগাঁও গ্রামেই না ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।তৈরী করেছেন অসংখ্য মোতালেবকে হয়ত আরো তৈরী হতে পারত। 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

নবাব সিরাজউদদৌলা’র বংশধর ঢাকায়




লায়েকুজ্জামান: ভাগীরথী থেকে বুড়িগঙ্গা। মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকা। রাজকীয় হীরাঝিল প্রাসাদ থেকে ঢাকা শহরের এক ছোট্ট ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন নবাব সিরাজউদদৌলার নবম বংশধরেরা। একদা বাংলা, বিহার, ওড়িশার আকাশ বাতাস কেঁপে উঠতো যাদের হুংকারে, ভাগিরথীর তীরে মুর্শিদাবাদ নগরে আলোকোজ্জ্বল মহল সর্বদা সরগরম থাকতো যে দাপুটে নবাবের পদচারণায়  সুবে বাংলার সেই শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদদৌলার বংশধরেরা এখন ঢাকা শহরে বসবাস করছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে, নীরবে নিভৃতে। অনেকেই তাদের খবর জানে না, অনেকেই খবর নেয় না।
নবাব সিরাজউদদৌলা বাঙালি ছিলেন না। বাঙালির আপন ছিলেন, বাঙালির দরদি ছিলেন। তিনি বাংলার ছিলেন না কিন্তু বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ছিলেন। ভালবাসতেন বাংলাকে, বাঙালিকে। ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের পরাজয় এবং ২রা জুলাই ঘাতকের হাতে তার প্রাণ হারানোর মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় বহুকালের জন্য। আমাদের এই ঢাকার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা হয়ে আছে নবাব পরিবারের দুর্দিন, দুঃসময়ের জীবন। সিরাজউদদৌলার মৃত্যুর পর তার প্রিয়তমা স্ত্রী লুৎফুননিসা, একমাত্র শিশু কন্যা উম্মে জোহরা, নানা আলীবর্দী খানের স্ত্রী আশরাফুন্নেসা সহ নবাব পরিবারের নারীদের ৮ বছর বন্দি করে রাখা হয়েছিল বুড়িগঙ্গা পাড়ের জিঞ্জিরা এলাকার একটি প্রাসাদে। স্থানীয় লোকজন ওই জরাজীর্ণ  প্রাসাদটিকে এখনও জানে ‘নাগরা’ নামে।
বর্তমানে ঢাকা শহরের খিলক্ষেত এলাকার লেকসিটি কনকর্ড-এর বৈকালী টাওয়ারে বসবাস করছেন নবাব সিরাজউদদৌলার নবম বংশধরেরা। তাদের একজন সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেবের সঙ্গে তার ফ্ল্যাটে বসে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি কাজ করেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে। বর্তমানে ড. ফজলুল হক সম্পাদিত সাপ্তাহিক পলাশী পত্রিকার সহ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। ওই বাসাতেই আছেন তার পিতা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ গোলাম মোস্তাফা। তিনি নবাব সিরাজউদদৌলার ৮ম বংশধর। তার প্রয়াত স্ত্রী সৈয়দা হোসনেআরা বেগম ছিলেন নবাবের স্ত্রী লুৎফুননিসার রক্তের উত্তরাধিকার। এখানেই বাস করছেন তিনি এবং তার ২ ছেলে গোলাম আব্বাস আরেব ও ইমু এবং ২ কন্যা মাসুমা ও মুনমুন।
কিভাবে তারা নবাব সিরাজউদদৌলার বংশধর? বংশতালিকার সে হিসাব দিলেন গোলাম আব্বাস আরেব। ইরান থেকে ভাগ্য অন্বেষণে বাংলায় আসা নবাব আলীবর্দী খানের কোন ছেলে সন্তান ছিল না। তার ছিল ৩ কন্যা। ঘসেটি বেগম, ময়মুনা বেগম ও আমেনা বেগম। আলীবর্দী খানের বড় ভাই হাজী মির্জা আহমেদের ছিল ৩ পুত্র। মুহাম্মদ রেজা, মুহাম্মদ সাঈদ ও মুহাম্মদ জয়েনউদ্দিন। আলীবর্দী খানের ৩ কন্যাকে বিয়ে দেন তার ভাই হাজী আহমেদের ৩ পুত্রের সঙ্গে। মুহাম্মদ রেজার সঙ্গে বিয়ে দেন ঘসেটি বেগমের। মুহাম্মদ সাঈদের সঙ্গে ময়মুনা বেগমের এবং আমেনা বেগমের বিয়ে দেন জয়েনউদ্দিনের সঙ্গে। জয়েনউদ্দিন ও আমেনা বেগমের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। তাদের বড় সন্তান নবাব সিরাজউদদৌলা, অপর ২ ছেলে হচ্ছেন ইকরামউদদৌলা ও মির্জা মেহেদি। ২ কন্যা আসমাতুন নেসা ও খায়রুন নেসা। নবাব সিরাজউদদৌলা বিয়ে করেন ইরাজ খানের কন্যা লুৎফুননিসাকে। ইরাজ খানের পূর্বপুরুষরা ছিলেন মোঘল দরবারের কর্মকর্তা। সিরাজউদদৌলার একমাত্র কন্যা উম্মে জহুরা  বেগম। সিরাজউদদৌলার যখন মৃত্যু হয় তখন উম্মে জহুরা শিশু। সিরাজ কন্যা জহুরা বেগমের বিয়ে হয় সিরাজের ভাই একরামউদদৌলার পুত্র মুরাদউদদৌলার সঙ্গে। তাদের একমাত্র পুত্র শমসের আলী। তার পুত্র সৈয়দ লুৎফে আলী। তার কোন ছেলে সন্তান ছিল না। তার একমাত্র কন্যা ফাতেমা বেগম। ফাতেমা বেগমের ২ কন্যা হাসমত আরা বেগম ও লুৎফুননিসা বেগম। লুৎফুননিসা নিঃসন্তান। হাসমত আরার ছেলে সৈয়দ জাকির রেজা। তার ছেলে সৈয়দ গোলাম মর্তুজা। সৈয়দ গোলাম মর্তুজার ছেলে এই সৈয়দ গোলাম মোস্তফা।
২৩শে জুন পলাশীর প্রান্তরে পরাজয়ের পর ২৫শে জুন নবাব সিরাজউদদৌলা স্ত্রী লুৎফুননিসা ও শিশুকন্যা জহুরা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে আবার সৈন্য সংগ্রহ করে বাংলা উদ্ধার করতে বিহারের উদ্দেশে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে ভগবানগোলায় ক্ষুধার্ত নবাব পরিবার দানা শাহ নামের এক লোকের বাড়িতে খাদ্য গ্রহণ কালে ওই ব্যক্তি মুর্শিদাবাদে খবর দিয়ে ধরিয়ে দেন নবাব সিরাজউদদৌলাকে। সেখানে গিয়ে মীর জাফরের ছেলে মিরন গ্রেপ্তার করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসেন নবাবকে। বন্দি অবস্থায় ২রা জুলাই মোহাম্মদী বেগ হত্যা করে নবাব তাকে।
নবাবকে হত্যার পর তার স্ত্রী শিশুকন্যা সহ নানা আলীবর্দী খানের স্ত্রী আশরাফুন নেসাকে নৌকায় করে ভাগীরথীর তীর থেকে বুড়িগঙ্গার পাড়ে জিঞ্জিরার একটি প্রাসাদে তাদের আটকে রাখা হয় ৮ বছর। সেখান থেকে আবার তাদের মুর্শিদাবাদে নিয়ে মুক্ত করা হয়। নবাব সিরাজউদদৌলার মৃত্যুর পর থেকে তার ৫ম বংশধর পর্যন্ত কাউকে সরকারি কোন চাকরি দেয়নি বৃটিশ সরকার। নবাবের ৬ষ্ঠ বংশধর সৈয়দ জাকি রেজা ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর কাছে এসে ধরনা দিলে ১৯১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর তিনি বৃটিশ সরকারের কাছে তাকে একটি চাকরি দেয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি লেখেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয় তিনি সিরাজউদদৌলার বংশধর। সে অনুরোধের প্রেক্ষিতে বৃটিশ সরকার সৈয়দ জাকি রেজাকে মুর্শিদাবাদের ডেপুটি সাব-রেজিস্টার পদে নিয়োগ দেন। তার পুত্র সৈয়দ গোলাম মর্তুজা চাকরি করতেন মুর্শিদাবাদের কালেক্টরেট বিভাগে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তিনি চলে আসেন পূর্ব পাকিস্তানে। প্রথমে আসেন রাজশাহীতে, রাজশাহী থেকে খুলনা শহরে একটি বাড়ি কিনে স্থায়ী হন। গোলাম মর্তুজার ছেলে সৈয়দ গোলাম মোস্তাফা পাকিস্তান আমলে চাকরি নেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পদে। তিনি এখন ছেলে সন্তান সহ বসবাস করছেন ঢাকা শহরে। তার বড় ছেলে সৈয়দ গোলাম আব্বাস আরেব সমাজের গুণীজন, বিত্তবান সহ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা নবাব সিরাজউদদৌলার নামে একটি একাডেমী স্থাপন করতে চান। সে জন্য সহযোগিতার প্রয়োজন।
ঢাকা শহরে বসবাস করা নবাব সিরাজউদদৌলার বংশধরদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে এখনও কি যেন এক ধরনের অজানা আতঙ্ক তাদের মাঝে। সম্ভবত সে আতঙ্ক থেকেই অন্তর্মুখী প্রচারবিমুখ হয়ে আছেন তারা। মিডিয়াকে এড়িয়ে চলেন, সমাজে নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন। ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মীর জাফরের বংশধররা স্ব-স্ব পরিচয় দিয়ে দাপটে আছেন। জানা গেছে, তারা আছেন বাংলাদেশেও।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

যেসব কারণে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি অপরিহার্য



যেসব কারণে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি অপরিহার্য


॥ সিরাজুর রহমান ॥

ড্যান মজিনা বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি হরতালকে ঘৃণা করেন। সেটা আমরা জানি, কেননা রাষ্ট্রদূত মজিনা নিজেই বলেছেন সে কথা বাংলাদেশের মিডিয়াকে।
বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত নতুন একজন রাষ্ট্রদূতের পক্ষে সেটা অস্বাভাবিক ছিল না। তিনি বাংলাদেশে এসে সবিস্ময়ে দেখলেন যে প্রায়ই হরতাল হচ্ছে। কী কারণে? কারণ এই যে, বাংলাদেশের মানুষ বিনা বাধায় নিজের ভোট নিজে দিয়ে নিজের পছন্দ অনুযায়ী সংসদে সদস্য পাঠাতে আর সরকার গঠন করতে চায়। 
অবাধে ভোট দেয়ার অধিকারের দাবিতে হরতাল করতে হচ্ছে, রাষ্ট্রদূত মজিনার জন্য অবশ্যই সেটা বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল। ভোটদাতারা নিজের ইচ্ছামতো প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেÑ গণতন্ত্রের সেটাই প্রত্যাশা, সেটাই নিয়ম। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও অন্তত মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। সমস্যা হচ্ছে তাদের কাজে গণতন্ত্রের নাম-গন্ধও খুঁজে পাওয়া যায় না। 
আমি বিলাতে আছি ৫২ বছর ধরে। এ দেশে প্রথম ভোট দিয়েছি ১৯৬৪ সালের অক্টোবরে। সে নির্বাচনে সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হ্যারোল্ড উইলসন তিন কিংবা চার আসনের গরিষ্ঠতায় বিজয়ী লেবারদলীয় সরকার গঠন করেন। পরবর্তীকালে মনোনয়ন ও প্রচারাভিযান থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত অনেকগুলো নির্বাচনের খবর পরিবেশন করেছি বিবিসির বাংলা শ্রোতাদের জন্য। ভোট গণনার হলে প্রবেশের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে গোপনীয়তা ও নিরপেক্ষতার শপথ নিতে হয়েছে। 
প্রায়ই দেখেছি এক প্রার্থী প্রতিপক্ষের নীতি ও কার্যকলাপের তুমুল সমালোচনা করছেন, বলতে গেলে প্রতিপক্ষকে তুলোধুনো করে ছাড়ছেন। হয়তো তার দু’শ কিংবা চার শ’ গজ দূরে অন্য একটি হলে প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থী সমান তীব্রতার সাথেই এ দলকে তুলোধুনো করছেন। সভা শেষে দুই সভার শ্রোতারা হয়তো একই পানশালায় গেলেন, কিছুক্ষণ গল্প-গুজারি করে যার যার গন্তব্যস্থলে চলে গেলেন। কোনো মারামারি, এমনকি তর্কাতর্কিও হলো না।
ফলাফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থীরা অনিবার্যভাবেই বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানান, তার সাথে করমর্দন করেন। নির্বাচনী ফলাফল অথবা নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে চ্যালেঞ্জর কথা এ যাবৎ শুনিনি। শুধু একবার পত্রিকায় পড়েছিলাম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একটি ভোট কেন্দ্র ঠিক নির্ধারিত সময়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বলে বাইরে সারি দিয়ে দাঁড়ানো কিছু লোক ভোট দিতে পারেননি। সে নিয়ে মিডিয়ায় কিছু সমালোচনা উঠেছিল।
ব্রিটিশ গণতন্ত্রে সিভিল সার্ভিসের (আমলাতন্ত্রের) একটা অমূল্য ট্র্যাডিশন আছে। আমলা বা সরকারি কর্মকর্তারা দলনিরপেক্ষ থাকেন। অনেকেই বলে থাকেন সে জন্যই মন্ত্রীরা অদক্ষ এবং আনাড়ি থাকলেও আমলারা শাসনকাজ মোটামুটি নির্ভরযোগ্যভাবে চালিয়ে যান। তারা কোন দলের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন কিংবা সমর্থন করেন সেটা জানাও প্রায় অসম্ভব। নির্বাচন পরিচালনা তারা করেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রের বাইরে একজন কিংবা দু’জন নিরস্ত্র পুলিশকে দাঁড়িয়ে থেকে হাতের নখ খুঁটতে কিংবা পায়চারি করতে দেখেছি কখনো-সখনো। কিন্তু, ব্যস! ওই পর্যন্তই।
হরতাল ব্রিটেনে এবং অন্য উন্নত দেশেও হয় বৈকি! ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতে নারীর ভোটাধিকারের আন্দোলনে মহিলারা বহু দিন ধরে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন, পার্লামেন্ট ভবনের বাইরের রেলে নিজেদের শিকলবন্দী করে রেখেছিলেন। শ্রমিক-কর্মচারীরা নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য কখনো-সখনো হরতাল করেন। বৃহত্তর কোনো রাজনৈতিক কারণেও হরতাল হয়। ২০০৩ সালে আমেরিকা ও ব্রিটেন যখন ইরাক আক্রমণের উদ্যোগ নিয়েছিল তখন দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) লোক লন্ডনে প্রতিবাদ মিছিল করেছিল। কিন্তু অবাধে ভোটদানের কিংবা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে কোনো হরতাল গত ৫২ বছরে ব্রিটেনে আমি দেখিনি।

পুলিশের আচরণ কেমন হওয়া উচিত
মার্কিন নির্বাচন পরিচালনা ও সেসব নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সাধারণত কোনো প্রশ্ন কিংবা বিতর্ক ওঠে না। একটা ব্যতিক্রম অবশ্যই ছিল ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে। সে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হয় ফোরিডা অঙ্গরাজ্যের অল্প কিছু সংখ্যক ভোটের দ্বারা। ত্রুটিপূর্ণ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে সামান্য কিছু ভোট কোন দিকে গেছে সে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয় সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন যে, ভোটগুলি দেয়া হয়েছিল রিপাবলিকান পার্টির অনুকূলে এবং তারা জর্জ ডব্লিউ বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। বিতর্কের সেখানেই অবসান হয়। 
ব্রিটেনে এবং সাধারণভাবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে হরতাল-ধর্মঘটে পুলিশের ভূমিকা অনুকরণযোগ্য। হরতালগুলো হয় সাধারণত শনি কিংবা রোববার, যাতে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে দেশের অর্থনীতির খুব বেশি ক্ষতি না হয়। সাধারণত মিছিলগুলো হয় শান্তিপূর্ণ, পুলিশ মিছিলের দু’পাশ দিয়ে হেঁটে চলে, যাতে শান্তিভঙ্গ করার দুর্মতি কারো না হয়। একাত্তরে বাংলাদেশীরা স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ব্রিটেনে বহু মিছিল করেছে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অফিসার আমার কাছেও এসেছিলেন দু’বার; জানতে চেয়েছিলেন আমাদের মিছিলে আনুমানিক কত লোক হবে, তাদের কেউ শান্তিভঙ্গ করতে চাইবে কি না। আমাদের মিছিলগুলো খুবই শান্তিপূর্ণ ছিল, পুলিশের সাথে মিছিলকারীদের একটা সদ্ভাব গড়ে ওঠে। 
সাম্প্রতিককালে কোনো কোনো বর্ণবিদ্বেষী গোষ্ঠী শান্তিভঙ্গের উসকানি দিতে মিছিল ইত্যাদি করেছে। স্বভাবতই বিরুদ্ধ মতাবলম্বীরাও পাল্টা মিছিল করতে চেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা ছিল দু’পক্ষকে তফাৎ রেখে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা দূর করা। অস্বাভাবিক রকম অশান্তি সৃষ্টির ভয় না থাকলে কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা মিছিলের অনুমতি দিতে পুলিশ অস্বীকার করে না, কেননা জনমত প্রকাশের এসব উপায় নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। 
রাষ্ট্রদূত মজিনা বাংলাদেশে এসে দেখলেন যে অবাধে ভোট দেয়ার দাবিতে হরতাল হচ্ছে, মিছিল হচ্ছে। ১৯৯১-৯৬ সময়ে আওয়ামী লীগের ১৭৩ দিন হরতাল ও লাগাতার হরতাল তিনি দেখেননি। ২০০৬ সালে লগি-লাঠি-বৈঠার লাগাতার হরতাল, সড়ক-বন্দর অবরোধ, রেললাইন উপড়ে ফেলা, রাষ্ট্রপতিকে গৃহবন্দী করে রাখা, লগি-লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রাজপথে এক ডজনেরও বেশি মানুষ হত্যা করাÑ এসব কথা বোধহয় স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়েও তাকে বলে দেয়া হয়নি। বিচিত্র নয় যে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির অধীনে নির্বাচনপদ্ধতি ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপির নেতৃত্বে সব বিরোধী দল ও গোষ্ঠী হরতাল করছে, মিছিল করছে।
রাষ্ট্রদূত মজিনা যেসব মিছিল দেখছেন সেগুলোতে অশান্তি হয়েছে পুলিশ নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকার করে সেসব মিছিলে বাধা দিচ্ছে বলেই। শুধু তাই নয়, শাসক দলের সশস্ত্র ক্যাডাররা মিছিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে খুনখারাবি চালাচ্ছে। শান্তি রক্ষা এবং মিছিলকারীদের সংরক্ষণ দেয়ার পরিবর্তে পুলিশ সংরক্ষণ দিচ্ছে শাসক দলের ভাড়াটে গুণ্ডা ও ক্যাডারদের। 

গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে অস্বীকার
বিরোধী দলগুলোর এসব হরতাল-মিছিলেরও প্রয়োজন হচ্ছে সরকার ও শাসক দলের গণতন্ত্রবিরোধী আচরণের প্রতিবাদে। সব গণতান্ত্রিক দেশেই সভা-সমাবেশ করা, সরকারের নীতি ও কাজের সমালোচনা করার অধিকার নাগরিকদের থাকে। কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। এটা আওয়ামী লীগের পুরাতন ঐতিহ্য। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও বিরোধী বিএনপিকে পল্টনে কিংবা মুক্তাঙ্গনে সভা করার অনুমতি দেয়া হয়নি, বিএনপির মিছিলে বহু হামলা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ড. এইচ বি এম ইকবালের নেতৃত্বে ক্যাডারদের একটা দল বিএনপির মিছিলের ওপর গুলি চালায়। চারজন মিছিলকারী তাতে মারা গেছে। সব মিডিয়ায় আলোকচিত্র সহকারে সে ঘটনার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সে মামলা তুলে নিয়েছে, নাটোরের বিএনপি নেতা গামার এবং লক্ষ্মীপুরের বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের সবাইকে মুক্তি দিয়েছে। 
বর্তমানেও সভা-সমাবেশ করার ঐতিহ্যিক স্থানগুলো বিরোধী দলগুলোর জন্য নিষিদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। দু-একটি সভার অনুমতি দেয়া হচ্ছে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রধান কার্যালয় কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রেখেও পুলিশ সন্তুষ্ট হচ্ছে না, কাঁটাতারের বাইরে ডজন ডজন পুলিশ দাঁড়িয়ে সে কার্যালয় ঘিরে রাখছে। নেতাকর্মীদের নিজেদের কার্যালয়ের বাইরে থেকে ভেতরে এবং ভেতর থেকে বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে বিএনপি একটি বৈধ ও আইনসম্মত রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশে এখন সামরিক কিংবা জরুরি আইন চালু নেই।
তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না সরকার ও শাসক দল। সরকারের বিরোধী ও সমালোচকদের ধরপাকড়ের যে প্রক্রিয়া তাদের গদিতে আসার সময় থেকে শুরু হয়েছিল সেটা আরো বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ ঘুরে এসে ব্রিটেনে প্রবাসী অনেক বাংলাদেশী আমাকে বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে গ্রেফতার আর ধর্ষণের একটা মহাযজ্ঞ চলছে। গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষেরা রাতের বেলা নিজ বাড়িতে থাকছেন না, মহিলারা কেমন আতঙ্কে আছেন কল্পনা করে নিতে অসুবিধা হবে না। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সেসব খবরের কিছু কিছু বিরোধী দলগুলোর সমর্থক মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও গ্রামাঞ্চলের খবর অজানাই থেকে যায়। প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায়, এসব অপকর্ম ঘটাচ্ছে শাসক দলের ক্যাডার ও ভাড়াটে গুণ্ডারা। দলীয়কৃত পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এজাহার নিতে অস্বীকার করে, নয়তো উল্টো বাদির ওপরই জোরজুলুম শুরু করে। 
অপেক্ষাকৃত খ্যাত ও পরিচিত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে জেলে আটক রাখা হয় সাজানো দুষ্কৃতির অভিযোগে। একাত্তরে স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় কিছু লোক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ করেছিলÑ সে অভিযোগের বিচারের ছলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ভাবধারার রাজনীতিকদের গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে। ‘ইসলামি সন্ত্রাস’ দলনের অছিলায় সরকারের বিরোধী টুপি-দাড়ি পরা এবং মসজিদগামীদের ধরে ধরে জেলে পোরা হচ্ছে। বর্তমান সরকার একটা কথা সুবিধাজনকভাবে ভুলে যায়। সবচেয়ে জঘন্য যুদ্ধাপরাধী বলে শনাক্ত করা ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাকে মুক্তি দিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন মুজিব।
নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় গত বছর থেকে। জামায়াতে ইসলামীসহ ছোট-বড় আরো ক’টি গণতন্ত্রমনা দল সমান্তরালভাবে সে আন্দোলনে সহযোগিতা করে। চলতি বছরে এ রকম ১৭টি দল প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাথে যোগ দিয়ে ১৮ দলের একটি জোট গঠন করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা দলও বাইরে থেকে বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে।

ইলিয়াস আলীদের গুম হওয়ার পেছনে 
বর্তমানপর্যায়ের আন্দোলনের সাফল্যদৃষ্টে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে বলেই মনে হয়। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বর্তমান সরকারের শুরুর দিন থেকে ১৯৭২-৭৫ সালের রক্ষীবাহিনীর অনুকরণে সরকারের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূলপর্যায়ের কর্মীদের হত্যা শুরু করে। ‘বন্দুকযুদ্ধ’ অথবা ‘ক্রসফায়ারের’ নামে এযাবৎ তারা তিন শ’রও বেশি কর্মীকে হত্যা করেছে। প্রথমে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এবং আরো পরে অন্যান্য দেশের সরকারও এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করার দাবি জানালে তথাকথিত ক্রসফায়ার হত্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু নতুন একটা নারকীয় পদ্ধতি এখন অবলম্বন করা হচ্ছে। 
দু’বছর আগে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বিএনপিদলীয় কাউন্সিলর চৌধুরী আলম উধাও হয়ে যান। আজ অবধি তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তারপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ধলেশ্বরী এবং শাখা-প্রশাখাসহ বুড়িগঙ্গা নদীতে হাত-পা বাঁধা, গলাকাটা ও গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যাচ্ছে। মিডিয়ায়ও কিছু কিছু গুম হয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ শুরু হয়। একাত্তরে রাজাকার আর আলবদররা এভাবেই চোখ এবং হাত-পা বেঁধে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যেত। স্বাধীনতার পরে বহু নদী ও জলাভূমিতে অনেকের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। লোকমুখে আরো বহু লোকের গুম হওয়ার খবর প্রায় প্রতিদিনই পাওয়া যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্র বাসে চড়ে কুষ্টিয়া যাচ্ছিলেন। সাভারে র‌্যাবের বেশ ক’জন ইউনিফর্ম পরা সদস্য র‌্যাবের চিহ্নিত যানবাহনে করে এসে সে বাস থামায় এবং আলোচ্য দু’জন ছাত্রকে নামিয়ে নেয়। অন্য যাত্রীরা বাধা দিলে তারা বলে যে তারা নিরাপত্তারক্ষী র‌্যাব বাহিনীর সদস্য এবং সুনির্দিষ্ট তদন্তের জন্য তারা সাময়িকভাবে সে দু’জন ছাত্রকে গ্রেফতার করছে। সে দু’জন ছাত্রের সন্ধান আর পাওয়া যায়নি। প্রথমে কিছুকাল নীরব থাকার পর র‌্যাব বলেছে, তারা এ সম্বন্ধে কিছুই জানে না।
এপ্রিল মাসে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়। রাতের বেলা কয়েকজন লোক ঢাকার বনানীতে তার গাড়ি থামিয়ে তাকে ও তার গাড়ির ড্রাইভারকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলের কাছে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে ধস্তাধস্তি তদন্ত করতে গিয়েছিলেন; কিন্তু ছিনতাইকারীরা নিজেদের র‌্যাবের লোক বলে পরিচয় দেয় এবং সাব-ইন্সপেক্টরকে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়। কাছে অবস্থিত একজন ডাব বিক্রেতাও সাংবাদিকদের বলেছে যে ছিনতাইকারীরা র‌্যাবের ইউনিফর্ম পরা ছিল এবং তারা র‌্যাবের যানবাহনে এসেছিল। এই দুই ব্যক্তি এখন কোথায় কী অবস্থায় আছেন জানা যায়নি।
ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার বিশেষ কিছু তাৎপর্য আছে। তিনি বিএনপির সাংগঠনিক কাজে সাফল্যের প্রমাণ দিয়েছেন। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটে তিনি এতই সফল হয়েছিলেন যে এরপর আওয়ামী লীগ সেখানে আসন পাবে না বলে বলাবলি হচ্ছিল। তা ছাড়া মনিপুর রাজ্যের বরাক নদীতে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির প্রকল্পের বিরুদ্ধে তিনি বৃহত্তর সিলেটে এবং তার বাইরেও জনমত গঠন করেন এবং লাখো লোকের একটা প্রতিবাদ মিছিলও তিনি ভারত সীমান্তের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, হাসিনার আশ্বাস মূল্যহীন
প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সদস্যরা প্রথমে দাবি করেন, ইলিয়াস আলীকে মুক্ত করার যথাসাধ্য চেষ্টা তারা করছেন। কিন্তু দু-চার দিন পরই মন্ত্রীদের বচন-বাচন পরস্পরবিরোধী ও সন্দেহজনক হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত করেন ইলিয়াস আলী সরকারকে বিব্রত করার জন্য খালেদা জিয়ার নির্দেশে আত্মগোপন করে আছেন। আওয়ামী লীগের দুর্মুখ যুগ্ম সম্পাদক হানিফসহ আরো কেউ কেউ তার পুনরাবৃত্তি করেন। র‌্যাব গাজীপুর এলাকায় একটা বাড়িতে অনর্থক হানা দিয়ে এবং ইলিয়াস আলীর বাড়িতে গোপনে সিসিটিভি বসানোর চেষ্টা করে নাটক সৃষ্টি করে। 
ইলিয়াসের স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পায়ে পড়ে কান্নাকাটি করলে হাসিনা তাকে আশ্বাস দেন যে তার স্বামীকে উদ্ধারের সব চেষ্টা তিনি করবেন। একই সময়ে সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে বিধবা বলে উল্লেখ করেন। পুলিশ তদন্তে অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বলে হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার দেয়া হয় র‌্যাবকে। কিন্তু র‌্যাব এখন সাফ বলে দিয়েছে যে তারা এখনো কোনো ‘কু’ আবিষ্কার করতে পারেনি।
ইলিয়াস আলীকে গুম করার ঘটনা ঘিরে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। সেই সাথে দেশের সাধারণ মানুষও ক্রোধে ফেটে পড়েÑ যখন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম সম্পাদক রিজভী এবং এ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা সাজানো হয় এই বলে যে তারা সচিবালয়ে ককটেল বোমা নিক্ষেপ এবং তেজগাঁওয়ে একটা গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনায় ‘হুকুমের আসামি’। একবার নিম্ন আদালতে এবং একবার হাইকোর্টে জামিন দিতে অস্বীকার করে তাদের কাশিমপুর জেলে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাথে রাখা হয়। 
অবশেষে হাইকোর্ট ৭ জুন আটক নেতাদের জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু তাদের মুক্তি দিতে ৯ দিন দেরি করা হয়েছে। তা ছাড়া জেলগেটে চারজন নেতাকে আবার গ্রেফতার করা হয়েছে। সবাই সন্দেহ করছেন ১১ জুন বিরোধী ১৮ দলের জোট যে মহাসমাবেশ ডেকেছিল সেটা সফল করার লক্ষ্যে এই নেতারা যাতে কোনো সাংগঠনিক কাজ করতে না পারেন সেটা ছিল সরকারের একটা মতলব। আরো কারো কারো মতে বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের বন্দী রেখে আওয়ামী লীগের অধীনে সাজানো নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতা পাওয়াই হচ্ছে বর্তমান সরকারের মতলব। 
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে গণতন্ত্র বাতিল করে একদলীয় বাকশাল পদ্ধতি চালু করেন। আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল বেআইনি ঘোষণা করা হয়, সরকারের মালিকানাধীন দু’খানি বাংলা এবং দু’খানি ইংরেজি দৈনিক ছাড়া অন্য সব পত্রিকা ও সাময়িকী বন্ধ করে দেয়া হয়। আমি বিবিসি থেকে পত্রপত্রিকা বন্ধ করার সমালোচনা করেছিলাম। সে বছরের জুন মাসে জ্যামাইকা থেকে দেশে ফেরার পথে লন্ডন বিমানবন্দরে মুজিব ভাই ফিট স্ট্রিটের বহু সাংবাদিকের সামনে আমাকে তিরস্কার করেছিলেন, বলেছিলেন যে নিউজপ্রিন্টের ব্ল্যাকমার্কেটিং বন্ধ করার জন্যই তিনি পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন।
মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা অন্য কৌশল অবলম্বন করেছেন। মুখে তিনি বলে বেড়াচ্ছেন যে মিডিয়াকে তিনি পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় এক লাখ পাউন্ডের বিজ্ঞাপন দিয়ে সেটা বিশ্ববাসীকে জানান দিয়েছেন। তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন কথায় কথায় দাবি করেন, তার আগে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর কখনো এত ভালো ছিল না। শেখ হাসিনাও তেমনি দাবি করছেন যে তার আগে মিডিয়া কখনো এমন স্বাধীন ছিল না। বাংলাদেশের যেকোনো সাংবাদিককে জিজ্ঞেস করুন, তারা বলবেন সম্পূর্ণ উল্টো কথা। 

মিডিয়ার বিরুদ্ধে সরকারের যুদ্ধ
বর্তমান সরকার মিডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে বলেই মনে হয়। শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের আমলে ৪০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোর আক্রমণে ১৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ৬২১ জন সাংবাদিকের ওপর হামলা হয়, তাদের মধ্যে আহত হয়েছেন ৪২৩ জন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ৬০ জন সাংবাদিকের ওপর পুলিশের হামলা হয়, ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। শাসক দলের কর্মীরা সাংবাদিকদের নির্যাতন করছে বলে প্রায় দিনই পত্রপত্রিকায় খবর বেরোয়।
২০১১ সালে ঢাকার একটি দৈনিকের সাংবাদিক ফরহাদ তার নয়াপল্টনের বাসায় খুন হন। অনেক পরে পুলিশ দাবি করে তাকে খুন করেছে ছিনতাইকারীরা। সাপ্তাহিক ২০০০-এর সিলেট প্রতিনিধি ফতেহ ওসমানীকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকাকালীন তার মৃত্যু হয়। বরিশালের মুলাদী প্রেস কাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ীকে দিবালোকে হত্যা করা হয়েছে।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি এবং তার স্বামী মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার গভীর রাতে নিজেদের শয়নকক্ষে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। তাদের ল্যাপটপ কম্পিউটার ছাড়া বাসা থেকে আর কিছু খোয়া যায়নি। জানা যায়, জ্বালানি খাতে ২০ হাজার কোটি (২০০ বিলিয়ন) টাকার দুর্নীতি সম্বন্ধে তারা বহু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। আগেই বলেছি সরকার, পুলিশ ও র‌্যাব এই দু’জন সাংবাদিকের খুনিদের গ্রেফতারের চেষ্টা না করে দায়িত্ব একে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। এ দিকে দেশব্যাপী জোর গুজব, এই দুর্নীতির সাথে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জড়িত এবং হত্যার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মিডিয়া নির্যাতনের আরো অজস্র ঘটনা ঘটেছে গত ৪১-৪২ মাসে। 
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ওপর সরকারের রোষানল সংবাদের স্বাধীনতা হত্যার আরো কিছু প্রমাণ দেয়। সরকারের সমালোচনা করায় চ্যানেল ওয়ান টেলিভিশন চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়ার মহাসমাবেশের বক্তৃতা সরাসরি প্রচার করার সময় একুশে টেলিভিশনসহ তিনটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার মাঝপথে বন্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল একটি চ্যানেলের টকশোতে নিজের মতামত ব্যক্ত করায় হাইকোর্টের বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মানিক তাকে নিজের এজলাসে তলব করে কয়েক ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখেন।
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সবগুলো সংগঠন এখন ঐক্যবদ্ধভাবে রুনি ও সাগরসহ এযাবৎ নিহত সাংবাদিকদের হত্যার বিচার দাবি করছেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রায়ই আন্দোলন করছেন।
মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিকদের হত্যা-নির্যাতন করা হচ্ছে এ কারণে যে বর্তমান সরকার স্থায়ীভাবে গদি দখল করে রাখতে চায়। সে কথা তারা প্রায়ই ঘোষণা করছে। যুগ্ম সম্পাদক হানিফসহ আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা পরিষ্কার বলেছেন, বাকশাল পদ্ধতির শাসন চালু করাই তাদের উদ্দেশ্য। আওয়ামী লীগ জানে যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা কিছুতেই জয়ী হবে না। 

বাকশালের হাতছানি
বিএনপি এবং বর্তমানে আরো ১৭টি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধভাবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। আপনাদের অবশ্যই মনে আছে, এ পদ্ধতি চালু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সে বছর আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী একযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি চালু করার দাবিতে আন্দোলন করছিল। তারা অনেকগুলো হরতাল ডাকে, দেশের অর্থনীতির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে এবং সেসব হরতালে অশান্তির ফলে অনেকগুলো প্রাণহানিও হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসের (১৯৯৬) নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী বর্জন করে। তাদের অব্যাহত আন্দোলনের মুখে দেশে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী দিয়ে তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি চালু করে এবং সে পদ্ধতির অধীনে সে বছরেরই জুন মাসে আবার যে নির্বাচন হয় তাতে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। 
বাংলাদেশে বিচার বিভাগের যে দলীয়করণ হয়েছে খুব কম লোকই সেটা অস্বীকার করবেন। সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর দেশের প্রধান বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনীটি অবৈধ ঘোষণা করেন। তার রায়ের প্রকাশিত সারাংশে আরো বলা হয়, দেশ ও জাতির স্বার্থে আগামী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতিতে অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। বছর পেরিয়ে গেলেও সে রায়ের পূর্ণ বিবরণ আজ অবধি প্রকাশ করা হয়নি এবং সে প্রধান বিচারপতি অবসর নিয়েছেন। কিন্তু তার রায় দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে দেয়া হয়। সরকার তারপর ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিচালনাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং গণতন্ত্রকামী ছোট-বড় অন্য দল সেটা মেনে নিতে পারেনি অনেক কারণে। প্রথমত, সরকারের মন্ত্রীরা প্রায়ই বলে যাচ্ছেন অন্তত ২০২১ সাল পর্যন্ত তারা গদি ছাড়তে চান না। তার পরও যে তারা আরো কত দিন গদি দখল করে রাখতে চাইবেন কে জানে? এটাকে কিছুতেই গণতন্ত্র বলা যাবে না। সাদা কথায় সেটা স্বৈরতন্ত্র। সেটা দেশের মানুষের গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা তারা সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবিতে অসীম ত্যাগ স্বীকার করে ১৯৭১ সালে দেশটাকে স্বাধীন করেছিল। এই যেখানে অবস্থা সেখানে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, নিরপেক্ষ নির্বাচন নয়, বরং সাধু ও অসাধু উপায়ে নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করাই সরকারের পরিকল্পনা। 
সে প্রস্তুতি তারা সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই নিয়েছে। খুবই নগ্ন এবং সংবিধানবহির্ভূতভাবে তারা আমলাতন্ত্র, পুলিশ ইত্যাদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী এবং বিচার বিভাগের দলীয়করণ করেছে। সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা বাহিনীগুলোও দলীয়করণ করা হয়েছে। সম্প্রতি খবর বেরিয়েছিল ৩২ জন সাবেক ছাত্রলীগ সদস্যকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স বা এনএসআইতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ডবল ও ট্রিপল পদোন্নতি দিয়ে এবং বহু জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে পরিচিত অফিসারদের উঁচু পদে নিয়োগ করা হয়েছে। সাড়ে ছয় শ’ সিনিয়র আমলাকে ওএসডি করে সেসব পদে আওয়ামী লীগপন্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিগত সাড়ে তিন বছরে দেশের মানুষ সরকারের আমলাতন্ত্রের কাছ থেকে সুবিচার পায়নি। 

দলীয়কৃত পুলিশ ও নার্সিসাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ঠিক একই ব্যাপার ঘটেছে পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীতে। থানার পুলিশ আওয়ামী লীগের গুণ্ডা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করতে অস্বীকার করে বলে অজস্র অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে, অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আছে। প্রতিদিনই পত্রিকায় খুনখারাবির খবর বেরোচ্ছে। প্রায় ক্ষেত্রেই তার কোনো সুরাহা করতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে টেলিভিশন সাংবাদিক দম্পতি মেহেরুন রুনি ও সাগর নিজেদের শোবার ঘরে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন। তখন জানা গিয়েছিল যে জ্বালানি খাতে ব্যাপক দুর্নীতি সম্বন্ধে তারা বহু তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করা হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সে দায়িত্ব নেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাব নাকি কোনো ‘কুও’ খুঁজে পায়নি। 
বাংলাদেশে এক লাখ ৪২ হাজার পুলিশ আছে। তাদের ব্যস্ত রাখা হচ্ছে সরকারের বিরোধী ও সমালোচকদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করার কাজে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন পুলিশে পুরস্কৃত হওয়ার এবং পদোন্নতি পাওয়ার সহজ উপায়। গত বছরের ৬ জুলাই সংসদ চত্বরে পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হারুন স্বয়ং বিরোধী দলের সংসদীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটিয়ে তার শরীরের একাধিক হাড় ভেঙে দিয়েছিলেন। হারুনকে এখন পদোন্নতি দিয়ে একটি জেলার পুলিশ সুপার করা হয়েছে। গত ২২ মে পত্রপত্রিকার একটা শিরোনাম ছিলো : নোয়াখালীতে শান্তিপূর্ণ হরতাল, ৫৬ জন গ্রেফতার। ২৩ মের একটি শিরোনাম : জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে বিএনপির ৩০ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
২৯ মের পত্রিকাগুলোর প্রধান খবর ছিল দিনদুপুরে ঢাকার জেলা জজের আদালত চত্বর থেকে কয়েকজন পুলিশ বাবা-মায়ের সামনে থেকে এক তরুণীকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সাংবাদিক ও আইনজীবীরা বাধা দিতে গেলে পুলিশ তাদের মারধর করে। একই দিনের আরেকটি শিরোনাম : হাজতখানায় আসামি পিটিয়ে আহত করল পুলিশ।
প্রাচীন গ্রিক রূপকথার নার্সিসাস নিজের সৌন্দর্যে এতই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে সেটাই তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। বাংলাদেশের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন একই কমপ্লেক্সে ভুগছেন। তিনি প্রায়ই বলে থাকেন যে তার আমলে আইনশৃঙ্খলা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। অন্য দিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু সে দিন পুলিশের কাছ থেকে সাংবাদিকদের দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। অন্য দিকে সাহারা খাতুন এখন ধুয়া ধরেছেন যে তার আমলে পুলিশবাহিনীর অনেক উন্নতি হয়েছে।

সাজানো নির্বাচনের কলকাঠি
সরকারের চোখে উন্নতি অবশ্যই হয়েছে। সরকার হুকুম দিলে, এমনকি না দিলেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে লাশ করতে, তাদের গ্রেফতার করতে এবং সাজানো মামলায় জেলে বন্দী করে রাখতে পুলিশ দ্বিধা করছে না। গত সাড়ে তিন বছরে সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গদলগুলোর বিরুদ্ধে সাড়ে ছয় হাজার মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপির এক লাখ ৫৬ হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থককে আসামি করা হয়েছে। বিনিময়ে কিন্তু পুলিশ চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি করে, এমনকি ধর্ষণ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে।
স্বাভাবিক অবস্থায় এ রকম পরিস্থিতিতে নাগরিকেরা আদালতে বিচারপ্রার্থী হতে পারতেন। বাংলাদেশে বর্তমানে সে সুযোগ নেই। এ সরকারের আমলে হাইকোর্টেও নতুন ৫৯ জন বিচারপতি ও ছয়জন অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে যাদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের প্রবল সমর্থক বলে পরিচিত ছিলেন। তাদের একজন গত বছর লন্ডনে এসে বাংলা টেলি-চ্যানেলে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার এবং বিএনপির নেত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছিলেন। 
ঊনবিংশ শতাব্দীতে আমেরিকার ওয়াইল্ড ওয়েস্টে কথায় কথায় ফাঁসির দণ্ড দানের কারণে কয়েকজন বিচারপতি হ্যাঙ্গিং জাজ বলে খ্যাত হয়েছিলেন। তারও আগে অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্যারিসে পাবলিক প্রসিকিউটর ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বহু লোককে খুঁজে বের করে গিলোটিনে পাঠিয়েছিলেন। অদৃষ্টের পরিহাস, তার মাথাও কাটা গিয়েছিল গিলোটিনে। শুনেছি আড্ডা-মজলিসে বাংলাদেশের কোনো কোনো বিচারপতিকে রোবসপিয়েরের সাথে তুলনা করা হয়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মে মাসের শেষার্ধে বলেছেন, সরকার কাজ করতে পারছে না দুর্নীতির জন্য। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পুলিশ বাহিনীতে এবং বিচার বিভাগে। সরিষার মধ্যেই যখন এত ভূত তখন মানুষের দুর্ভোগের কথা সহজেই কল্পনা করা যায়। এ হচ্ছে আজকের বাংলাদেশের একটা খণ্ডচিত্র। 
বাংলাদেশে আগামী বছরের শেষে নির্বাচন দিতে হবে। 
শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না। ২০০১ সালে হাসিনার সৃষ্ট নজিরই তার প্রধান কারণ। প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে হাসিনা পরের নির্বাচনেও বিজয় সুনিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেন। আমলাতন্ত্রে বদবদল করে তিনি নির্বাচনসংক্রান্ত সব দায়িত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আমলাদের নিয়োগ করেন। তারপর হাসিনা নির্বাচন বিজয় সম্বন্ধে নিশ্চিত হলেন। কিন্তু নির্বাচনের তিন মাস আগে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেন। তারা গোড়াতেই মাত্র ১২ জন শীর্ষ আমলাকে বদলি করেন। আওয়ামী লীগ মহলে রব ওঠে ‘গেল, গেল’ পড়ে গেল। শেখ হাসিনা এই বদলিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তুললেন এবং দেখা গেল, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতির ওপর হাসিনার আর আস্থা রইল না। তিনি বুঝে গেলেন তার ডেকে আনা এ পদ্ধতি তার নির্বাচনী বিজয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। সে জন্যই তিনি তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি তুলে দিয়ে নিজের ব্যবস্থাপনায় নিজের নীলনকশা অনুযায়ী নির্বাচন করতে চান।
এই যেখানে অবস্থা সেখানে হরতাল-আন্দোলন ছাড়া গণতন্ত্রকামী দলগুলোকে কী বিকল্প কর্মপন্থার পরামর্শ দিতে পারেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা এবং তার ওপরওয়ালারা? ড্যান মজিনার একজন পূর্বসূরি হ্যারি কে টমাস আর ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার বীণা সিক্রি ২০০৬-০৭ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে অত্যধিক আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তার ফলে বাংলাদেশ পেয়েছিল ফখরুদ্দীন আহমদের বর্ণচোরা সামরিক শাসন, মাইনাস টু ও মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা, একটা মাস্টারপ্ল্যান নির্বাচন এবং বর্তমান মহাসঙ্কট। বাংলাদেশের যারা সত্যিকারের বন্ধু তাদের উচিত হবে আধা খ্যাঁচড়া অতি উৎসাহী কল্যাণ প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকা। 
(নিউ ইয়র্কে আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা সম্মেলনে পঠিত। জুন ২০১২)
serajurrahman34@gmail.com

সোমবার, ২৫ জুন, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মন্ত্রীদের আতঙ্ক ধরা পড়ে গেছে




আগেও লিখেছি দু-একবার। নিশুতি রাতের আঁধারে জনহীন পথে একা চলতে সবারই গা ছমছম করে। নিজেকে সাহস দেয়ার আশায় পথিক তখন শিষ দিতে কিংবা হেঁড়ে গলায় বেসুরো গান গাইতে শুরু করে। ইংরেজিতে বলে ‘হুইসলিং ইন দ্য ডার্ক’।
আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের হয়েছে সে হাল। সামনে তারা অন্ধকার দেখছেন। মনে হচ্ছে উন্মাদ ছাড়া বাংলাদেশে আর কেউ তাদের ভোট দেবে না। সরকার আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের জন্য দুর্নীতির ‘ওজিএল’ (ওপেন জেনারেল লাইসেন্স) খুলে দিয়েছে। দুর্নীতি করে তারা কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা মওজুদ করছেন। ওয়াডরোবে কিংবা ডিপ ফ্রিজারে মওজুদ করে রেখেছেন কি না কে জানে। তবে তারা আশা করছেন সে টাকার জোরে ভোট কিনে আগামী নির্বাচনে জয়ী হবেন তারা। তা ছাড়া নীলনকশার সাজানো নির্বাচনের ‘সেফটি নেট’ তো আছেই। যে কথাটা তারা ভুলে যাচ্ছেন সেটা এই যেÑ বাংলাদেশের মানুষ জানে টাকা নিলেও দুর্নীতিবাজকে ভোট দেয়া তাদের নৈতিক কর্তব্য নয়।
আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা সেটা বোঝেন। তবু চেষ্টা করে দেখতে দোষ কী? ডুবন্ত মানুষ কি খড়কুটো ধরেও বাঁচতে চায় না? নিজেদের সাহস দিতে গিয়ে যেসব কথা তারা বলছেন সেগুলো অন্ধকারে শিষ দেয়ার মতোই করুণ শোনায়। কথাগুলো এতই অসত্য, বানোয়াট আর বাস্তববিমুখ যে শিশুতেও তা বোঝে। বিজ্ঞরা মনে করেন ‘বিধাতা যাকে ধ্বংস করতে চান তাকে আগে পাগল করে দেন’। আর সাধারণ লোক? তাদের রায় হচ্ছে ‘পাগলে কী না বলে, ছাগলে কী না খায়’?
প্রভুর পদলেহন আর বিরোধী দলের প্রতি সন্ত্রাসীসুলভ হুমকির জন্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, শেখ হাসিনাকে আরো দুই টার্ম ক্ষমতায় আনা জরুরি। পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানের সাংবাদিকেরা অনেক বেশি স্বাধীন। সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে চলে যেতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ বলেছেন, নির্বাচনের আগে যত প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি পালন করেছেন। 
প্রধানমন্ত্রী আর-আর মানুষের মতো নন। তার জগৎ কল্পনার রাজ্যে। কল্পনার বুদ্বুদ সৃষ্টি করে তার ভেতর বাস করেন তিনি। মনে মনে তার কল্পনার অর্জন সীমাহীন। বলা হয়ে থাকে যে ‘কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’। অর্জনগুলোও আছে তার কল্পনায়। সাধারণ মানুষ সাদা চোখে তার প্রমাণ পায় না।
সারা বাংলাদেশের মানুষের মনে আছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে। পত্রপত্রিকায় সে প্রতিশ্রুতির ভূরি ভূরি বিবরণ ছাপা হয়েছিল। গদি পেয়ে সাফ অস্বীকার করেছেন যে সেসব কথা তিনি বলেননি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলোও কি অস্বীকার করছেন? সে ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য সামালের মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, বলা হয়েছিল যে অবিলম্বে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা হবে, কৃষককে বিনামূল্যে সার দেয়া হবে, দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা হবে ইত্যাদি। সরকারপ্রধান কি তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার খুলে দফাওয়ারি চিহ্নিত করবেন কোন কোন প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করতে পেরেছেন?
তথ্য-উপাত্ত এখনো নষ্ট হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা লাভের সময় চাল-ডাল-তেল-নুনের কী দাম ছিল এবং দাম এখন কী হয়েছে একবার খতিয়ে দেখবেন প্রধানমন্ত্রী? আর-আর নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম? বাংলাদেশের সব মানুষ এখন জানে দফায় দফায় মূল্য বাড়িয়ে সিন্ডিকেটগুলো দেশের মানুষের সব কিছু শুষে নিয়েছে। সব সিন্ডিকেটই সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলগুলোর নিয়ন্ত্রণে, কোনো কোনোটি আবার ক্ষমতাধরদের নিকটাত্মীয়দের নিয়ন্ত্রণে বলে শোনা যায়।
রাতারাতি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশকে’ উদ্ভাসিত করে দেয়ার আশায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কুলুপ খুলে দিয়েছিল। বিনা টেন্ডারে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ দেয়া হয়েছে গুটিকয় পারিবারিক বাণিজ্যিক গোষ্ঠীকে। এই গোষ্ঠীগুলোও সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে তখন জানা গিয়েছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধির পরিবর্তে তার অবনতিই হচ্ছে। ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমেও মানুষ ফ্যান ব্যবহার করতে পারছে না। ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার জন্য বিজলি বাতি ব্যবহার করতে পারছে না। কলকারখানা প্রায়ই অচল পড়ে থাকছে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দিয়ে সরকার উল্টো তাদের অপমান করছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পর্বতপ্রমাণ দুর্নীতি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন সাংবাদিক দম্পতি মেহেরুন রুনি আর সাগর সরওয়ার। তাদের ল্যাপটপ কম্পিউটারে সঞ্চিত ছিল সেসব বিবরণ। রাতের বেলায় শোবার ঘরে পাঁচ বছরের ছেলেটির সামনে জঘন্যভাবে তাদের খুন করা হলো। তাদের ল্যাপটপটি খোয়া গেল, আর কোনো জিনিস নয়। অমার্জিত বক্তব্য দিতে অভ্যস্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলেন। তারপর সে দায়িত্ব নিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে ছিল পুলিশের ওপর। হাইকোর্টের নির্দেশে সে দায়িত্ব হস্তান্তরিত হলো র‌্যাবের কাছে। পাঁচ মাস বিগত হলেও তদন্তে এখনো নাকি কোনো কু পাওয়া যায়নি।
আপনাদের কারো বিশ্বাস হয় সে কথা? বাংলাদেশের কোন ঘরে কী হচ্ছে, সরকারের বিরুদ্ধে কে কী বলছে, পুলিশ, র‌্যাব সব কিছু জানতে পারছে, সরকারের হাজার হাজার বিরোধী আর সমালোচককে ধরে ধরে তারা জেলে পুরছে, গুম করে ফেলছে কাউকে কাউকে। অথচ সে পুলিশ আর র‌্যাব নাকি এমন জঘন্য হত্যার কোনো ‘কু’ও আবিষ্কার করতে পারছে নাÑ কেউ বিশ্বাস করবে সে কথা? এখন আর কারো জানতে বাকি নেই যে সরকার ও শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি-অপরাধের বেলায় পুলিশ আর র‌্যাব সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যায়।

মন্ত্রীদের গুণপনার স্যাম্পল
প্রধানমন্ত্রী তাজ্জব হয়ে যাচ্ছেন। এত বিদ্যুৎ তিনি উৎপাদন করছেন কিন্তু সে বিদ্যুৎ যাচ্ছে কোথায়? কানে কানে প্রধানমন্ত্রীকে রহস্যটা বলে দিতে পারি। তার সরকারের প্রথম দুই বছরে সিন্ডিকেটগুলো যেমনÑ চাল-ডাল-ভোজ্যতেল ইত্যাদি মজুদ করে রেখে দাম বাড়াতো, সেভাবে দাম বাড়ানোর জন্য তারাই হয়তো প্রধানমন্ত্রীর উৎপাদিত বিদ্যুৎ গুদামঘরে মজুদ করে রাখছে।
বাংলাদেশের সব মানুষ জানে বর্তমান সরকার কারো পরামর্শ শোনেন না (পাশের দেশের পৃষ্ঠপোষকদের ছাড়া)। এমন কাউকে মন্ত্রিসভায় দেখি না যারা সরকার প্রধানকে পরামর্শ দেয়ার যোগ্যতা কিংবা সাহস রাখে। মনে হয় যেন মন্ত্রী হওয়ার এক নম্বর যোগ্যতা পদলেহন। সুতরাং বিচিত্র নয় যে মন্ত্রীরা মুখ খুললেই তাদের জ্ঞানবুদ্ধি এবং সুরুচির অভাব ফাঁস হয়ে যায়। 
একটা ‘স্যাম্পল’ হলেন মাহবুব-উল-আলম হানিফ। কর্মজীবন শেষ হলে ঘোড়াকে অবসর দিয়ে মাঠে ঘাস খেতে ছেড়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও সে রকম প্রায়-অবসরেই আছেন। কাজকর্ম চালাচ্ছেন এবং হুমকি-হুঙ্কার দিচ্ছেন এখন যুগ্ম সম্পাদক হানিফ। তিনি বলেছেন শেখ হাসিনাকে আরো দুই টার্ম ক্ষমতায় আনা জরুরি। কিন্তু দেশের মানুষ তো সে অভিলাষ পোষণ করে না। তাদের কথা কি একবারও হানিফের মনে হয়? তারা কেন ভোট দিয়ে আবার তাদের নির্বাচিত করবে? একটা গ্রহণযোগ্য কারণও কি হানিফ দেখাতে পারেন?
আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও সে গাছে কদলি ফলে না। সাম্প্রতিক কালে মিডিয়ার খবর অনুসারে পাটমন্ত্রীর সম্পদের অনেক স্ফীতি ঘটেছে। তিনি বলেছেন, ‘বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানের সাংবাদিকেরা অনেক বেশি স্বাধীন’। আর কোনো দেশে অবশ্যই হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশে মোটেই নয়। রুনি আর সাগর সাংবাদিক দম্পতির মর্মান্তিক খুনের কথা আগেই বলা হলো। গত এপ্রিল পর্যন্ত বর্তমান সরকারের ৪০ মাসে ১৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন পেশাগত কারণে। এ সময়ের মধ্যে মূলত শাসকদলের গুণ্ডা-পাণ্ডারা ৬২১ জন সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, তাদের মধ্যে আহত হয়েছেন ৪২৩ জন। এ সময়ের মধ্যে ৫২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তার পরও আরো নিপীড়নের অনেক ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে যশোরে সাংবাদিক জামাল উদ্দিন খুন হয়েছেন। আমার দেশ পত্রিকা, সে পত্রিকার সাংবাদিক ও বিশেষ করে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর সরকারের আক্রোশ তীব্রতম। চলতি সপ্তাহের শুরুতে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আরো একটি মানহানির অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিলেতে প্র্যাকটিসরত ২০ জন বাংলাদেশী আইনজীবীকেও তলব করা হয়েছে একই অভিযোগে। বাংলাদেশের এক শ্রেণীর পেশাজীবীর কথায় কথায় মানহানি ঘটে। অর্থাৎ তাদের সম্মানবোধ এতই ভঙ্গুর যে আদৌ আছে কি না সন্দেহ হতে পারে। 

দেশ বিক্রির মাস জুন
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। রোগটা এখন ছোঁয়াচে হয়ে গেছে বলেই মনে হয়। শেখ হাসিনার পুরনো কথার ধুয়া ধরে সাজেদা চৌধুরীও এখন খালেদা জিয়াকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেছেন। কিন্তু পাকিস্তানে যাবেন কেন খালেদা জিয়া?Ñ যিনি দেশের মানুষের ভোটে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এবং যিনি বর্তমানে বিরোধী দলের নেতা? তার চেয়ে আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা ভারতে চলে গেলেই বেশি ভালো হয় না কি? একাত্তরে তারা পাশের দেশের রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়েছিলেন, তারা কথা বলেন এক চোখের দৃষ্টি ভারতের দিকে নিবদ্ধ রেখে। তারা সে দেশে চলে গেলে দেশের মানুষের হাড় জুড়ায়।
এখন জুন মাস। এ মাসটা বাংলার মানুষের জন্য অশুভ। বিশেষ করে এ মাসের ২৩ তারিখ। ১৭৫৭ সালের এ তারিখে মীরজাফর গং বাংলার স্বাধীনতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। ১৯২ বছর পর এই তারিখটাকেই বেছে নেয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের পূর্বসূরি আওয়ামী মুসলিম লীগের পত্তনের জন্য। সে দলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে দিল্লিতে গিয়ে কিছু গোপন চুক্তি করে এসেছিলেন। সেসব চুক্তির বিবরণ আমরা জানতে পারিনি কিন্তু তার প্রতিফল এখন উন্মুক্ত হচ্ছে পরতে পরতে। 
প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে বাংলাদেশের ভূমি, এ দেশের সড়ক, রেলপথ, নদীপথ আর সমুদ্রবন্দরগুলোর অবাধ ব্যবহার ভারতকে দান করে ছিলেন বর্তমান সরকার ২০১০ সালে। এখন সেসব উপহার ভারত ‘ক্যাশ-ইন’ করতে যাচ্ছে। মাত্র কিছু দিন আগে আওয়ামী লীগ ‘সমুদ্র বিজয়’ উদযাপন করেছে। এখন জানা যাচ্ছে যে বঙ্গোপসাগরের একটা উল্লেখযোগ্য এলাকা বরং বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে গেছে। মাহবুব-উল-আলম হানিফের মনোবাঞ্ছা যদি পূর্ণ হয়, তারা যদি আরো দুই মেয়াদে ক্ষমতাসীন হন, বাংলাদেশের মানুষের লুঙ্গি-গামছাও আর অবশিষ্ট থাকবে না।
দেশের মানুষ সেটা ভালো করেই জানে। সরকারও জানে যে মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। সে জন্যই তারা হাজারে হাজারে, লাখে লাখে খালেদা জিয়ার কণ্ঠে গণতন্ত্রের কথা শুনতে ছুটে আসে। তাতে সরকার ও মন্ত্রীদের আতঙ্ক হচ্ছে, হৃদকম্পন শুরু হয়েছে। তাতেই বিরোধী দলকে তাদের বক্তব্য বলার জন্য সভা-সমাবেশের স্থান দেয়া হচ্ছে না, দেয়া হচ্ছে না মাইক্রোফোন ব্যবহারের অনুমতি। বিরোধী দলের মিছিলের ওপর র‌্যাব-পুলিশ আর গুণ্ডা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার ভেবে নিয়েছিল সড়কে বাস আর নদীতে লঞ্চ চলা বন্ধ করে দিলে খালেদা জিয়ার সভায় মানুষ হবে না। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উল্টো ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীদের হৃদকম্পনের এই হচ্ছে কারণ। সে জন্যই তারা আবোল-তাবোল বকছেন। 
লন্ডন, ২০.০৬.১২
serajurrahman34@gmail.com
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ক্ষমতা সরকারকে অহঙ্কারী করেছে : অহঙ্কার পতনের মূল



শুভবুদ্ধির উদয়কে মনীষীরা তুলনা করেছেন তমসাবৃত রজনীর পর সকালের ঝলমলে সূর্যোদয়ের সঙ্গে। আমাদের শাসকরা জাতির ভাগ্যাকাশ থেকে সেই সৌন্দর্য উধাও করেছেন বহু আগে। বিগত সাড়ে তিন বছরে দেশের মানুষ সাড়ে তিনটি দিনও শঙ্কামুক্ত থাকতে পারেনি। তাদের চারদিকে ক্ষমতাসীনদের অপ্রতিরোধ্য দাম্ভিক তাণ্ডব তছনছ করে দিয়েছে অনেক কিছু। আর সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত নিক্ষিপ্ত হয়েছে হতাশায়, ভীতি আর আতঙ্কে। এ নিয়ে মিটিং-মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন হয়েছে বিস্তর। লেখালেখির তো অন্ত নেই! কিন্তু ক্ষমতার দর্পে অন্ধ শাসকগোষ্ঠী সেসবকে সামান্য পাত্তা দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি। তারপরও সূর্য ওঠে, পাখি ডাকে, ফুল ফোটে। এমনি ভালো কিছুর আভাস পাওয়া গেল গত পরশুর জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রদত্ত মহাজোট সরকারের এমপি সাহেবদের বক্তৃতা থেকে। অনেক দেরিতে হলেও তারা অবশেষে অনুধাবন করার সময় পেয়েছেন যে, ক্ষমতা তাদের অহঙ্কারী করেছে। দাম্ভিক করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে করেছে অন্ধ। আর এই ফাঁকে তাদের অন্যায্য কর্মের ছায়ায় বসে সরকারি কর্মকর্তারা জাঁকিয়ে রাজনীতি করছেন। দেরিতে হলেও তরী ডুবে যাওয়ার আগে যে তাদের মধ্যে এই শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, সেজন্য ধন্যবাদ জানাতে হয়।
মহাজোট সরকারের সংসদ সদস্যরা যেসব কথা বলেছেন তার সারাংশ হলো, ক্ষমতা তাদের অহঙ্কারী করে তুলেছে। এই অহঙ্কারই তাদের পতন ডেকে আনবে। দেশের আইন, থানা ও পুলিশ বিত্তশালীনির্ভর হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য আইন অধরা। পুলিশ বিত্তের মোহে জড়িয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেদার রাজনীতি করছেন; কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা তাদের কিছু বলতে পারছেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহাল। তারা একটা রাস্তাও করতে পারেনি সাড়ে তিন বছরে। এই সরকার একটা ফুটপাতও পরিষ্কার করতে পারে না। দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা পুলিশের প্রয়োজন নেই। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণহীন। এরকম আরও অনেক কথা। এখন দেখার বিষয়, এই সত্য উচ্চারণ করার জন্য তৌফিক-ইমামের মতো উপদেষ্টারা তাদের ঘরভেদী বিভীষণ কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহী বিশেষণে বিভূষিত করে কি-না। যদিও মূল সত্য এর চেয়ে শতগুণ কালিমামলিন। তারপরও কূলকিনারা হারিয়ে ফেলা একটি সরকারের অংশ হয়েও তারা পর্দা সরিয়ে রঙ্গমঞ্চের খানিকটা দেখার সুযোগ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এর ভেতর দিয়ে সরকারের দিশাহীনতা, অযোগ্যতা, অদক্ষতার পাশাপাশি বাইরে বেরিয়ে এসেছে তাদের ভেতরকার দ্বন্দ্ব ও সঙ্কট।
নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের কাজে আইন, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও পুলিশকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে এই সরকার জাতীয় জীবনে ডেকে এনেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। জনজীবন থেকে উধাও করেছে নিরাপত্তা। গুম, খুন, হাইজ্যাকিং, চাঁদাবাজি, জমি দখল, বাড়ি দখল, নদী দখল—এসব শাসক দলের নৈমিত্তিক কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নয়—আপাদমস্তক দেশকে ডুবিয়ে দিয়েছে সরকার। নিজেদের নির্বাচনী ওয়াদা শিকায় তুলে দুর্নীতিতে মনপ্রাণ ঢেলে দেয়ার ফলে তাদের অঙ্গদলের ক্যাডার ও নেতাকর্মীদের হাতে জেলা প্রশাসক, বিচারক থেকে শুরু করে ওসি-কনস্টেবলরা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত হচ্ছেন লাঞ্ছিত। সাধারণ মানুষ তো আরও বিপদে। বিরোধী দল ও সংবাদপত্র দলনে চলছে মহোত্সব। পানি, বিদ্যুত্, গ্যাস, দ্রব্যমূল্য—এগুলো নিয়ন্ত্রণের কোথাও কেউ নেই। রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নষ্ট হয়ে গেছে। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপন্ন। শুকিয়ে যাচ্ছে সমাজজীবন। শুধু মোটাতাজা হচ্ছে শাসক দলের নেতাকর্মীরা। ডাণ্ডা দিয়ে সবকিছু ঠাণ্ডা করার নোংরা মানসিকতার বিস্তারের ফলে সরকারি কর্মকর্তারা মাথায় উঠেছে। তারাও আজ কে কত বড় বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, তা প্রমাণের জন্য ব্যাকুল। তাছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে তাদের মাধ্যমে ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। উন্মাদ দলীয়করণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সেসব উপকারী শ্রেণী তো সরকারের পিঠে চাপবেই। কিন্তু রক্তকরবীর আত্মবিমোহিত রাজার মতো মহাজোট সরকার মত্ত হয়ে আছে লুণ্ঠনে। ক্ষমতা কত প্রকার ও কী কী, সেসব সবিস্তারে দেখানোর ক্ষেত্রে তাদের জুড়ি বিশ্ব চরাচরে মিলবে না।
সবকিছুরই একটা শেষ আছে। ক্ষমতার দাপট দিয়ে একটা সময় পর্যন্ত টিকে থাকা যায়। তারপর ধস নামতে থাকে। সেই ধস ডেকে আনে পতন। এর উদাহরণ আমাদের ধারে-কাছেই অজস্র। বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নেই। সেজন্য সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা, যাদের মধ্যে কিঞ্চিত শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, তাদের কথায় কান দিন। নিজেদের শুধরে নিন। এখনও হাতে দেড় বছর সময়। নইলে পরে পস্তাবেন। কারণ যে গতিতে এই সরকার অধঃপতিত হচ্ছে, তার শেষ অসম্মানে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

অজ্ঞাত লাশের ছড়াছড়ি : পাঁচ মাসে ২ হাজার খুন





দেশজুড়ে অজ্ঞাত লাশের ছড়াছড়ি। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে বেওয়ারিশ লাশ। রাস্তার পাশে, বিলে-ঝিলে, রেললাইনে অহরহ পড়ে থাকতে দেখা যায় মানুষের মৃতদেহ। খুন করে বস্তাবন্দি করে ডাস্টবিন, ঝিল, হাওর, জঙ্গলে ফেলে দিয়ে গুমের চেষ্টা করছে দুর্বৃত্তরা। এদের অনেকের পরিচয়ও মেলে না। হত্যাকাণ্ডের পর লাশ টুকরো করার মতো লোমহর্ষক ঘটনাও ঘটছে। অধিকাংশ ঘটনারই কোনো কিনারা করতে পারছে না পুলিশ। গ্রেফতার হচ্ছে না খুনিরা। এ ধরনের পরিচয় না মেলা লাশের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
পুলিশ সদর দফতরের সূত্র অনুযায়ী চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ৬ মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে ২ হাজারেরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের তালিকায় রয়েছেন সাংবাদিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, কূটনীতিকও। এ সময় সারাদেশে ৯২৯টি বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটছে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। হত্যার পর আলামত সংগ্রহ করেও অনেক ক্ষেত্রে খুনিদের গ্রেফতার করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। খুনিদের শনাক্ত করতে না পারা এবং ক্লু উদ্ঘাটন না হওয়ার কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে ঊঠছে। মামলা হলেও দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত শেষে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হওয়ার পর মামলাটি হিমাগারে চলে যায়। এতে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ায় খুনিরা উত্সাহিত হচ্ছে। এ কারণে অপেশাদার
খুনিরাও খুনখারাবি ঘটাচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের মে পর্যন্ত গত ৫ মাসে সারাদেশে হত্যাকাণ্ডে ঘটেছে ১ হাজার ৬৯৭টি। চলতি মাসের ২৫ জুন পর্যন্ত ৩৭০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ সময় রাজধানীতে ঘটেছে ১২৫টি হত্যাকাণ্ড। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩০৪টি, ফেব্রুুয়ারিতে ৩২০টি, মার্চে ৩২৪টি, এপ্রিলে ৩৬৩টি এবং মে মাসে ৩৮৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জুন
মাস শেষ হওয়ার এখনও ৫ দিন বাকি থাকায় এ মাসের মোট খুনের সঠিক পরিসংখ্যান এখনও তৈরি করেনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। তবে বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২৫ জুন পর্যন্ত ৩৭০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে এ মাসে খুনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রায় ৪০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি বছরের রাজধানীতে জানুয়ারিতে ১৮, ফেব্রুয়ারিতে ২০, মার্চে ২৩, এপ্রিলে ১৯, মে মাসে ২৮টি খুন ও চলতি মাসের গতকাল পর্যন্ত ১৮-১৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটছে।
এ ব্যাপারে র্যাবের গোয়েন্দা উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, আমাদের দেশে অনেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বড় বড় কথা বলেন; মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করেন। সন্ত্রাসীদের মারলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, এ কথাও বলেন তারা। এখন তো হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। এখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? তিনি বলেন, সন্ত্রসীরা এদেশের কিছু অতিপণ্ডিত ব্যক্তিদের কারণে প্রশ্রয় পাচ্ছে। এতে দেশে হত্যাকাণ্ডও বাড়ছে।
মানবাধিকার সংস্থা অধিকার-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এখন বিভিন্ন স্থান থেকেই অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হচ্ছে। এতেই মনে হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। তিনি বলেন, লাশ উদ্ধার হলেও খুনিরা চিহ্নিত হয় না। এতে অপরাধীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এক ধরনের আস্থা জন্মেছে যে, হত্যার পর লাশ নদী-নালায় ফেলে দিলেই বেওয়াররিশ হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ দাফন করবে। আর এমনই হচ্ছে। এতে অপরাধীরাও ক্রমে উত্সাহিত হচ্ছে। এমনকি নদী, খাল-বিল থেকে লাশ উদ্ধারের পর এলাকা নির্ধারণ নিয়েও পুলিশ রশি টানাটানি করে। অধিকার-এর পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান বলেন, দেখা গেছে এসব মামলার তদন্তও বেশিদূর এগোয় না। আবার খুব সহজেই আদালত চার্জশিটও দিয়ে দেয়।
মানবাধিকার নেত্রী ও হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, বেওয়ারিশ লাশ যেভাবে বাড়ছে, তা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। এত বেওয়ারিশ লাশ হওয়ার কথা নয়। সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে পরিকল্পিত হত্যার শিকার অনেককে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হচ্ছে। এসব হত্যার কোনো ক্লু উদ্ঘাটিত হচ্ছে না।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসের তুলনায় চলতি বছরের সাড়ে ৫ মাসে বেওয়ারশি লাশসহ হত্যাকাণ্ড কম হয়েছে। গত বছর জুন পর্যন্ত রাজধানীতে ১৩৫টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো বলে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করেন।
উল্লেখযোগ্য হত্যাকাণ্ডের মধ্যে গত ৫ মার্চ বিকালে সূত্রাপুর এলাকা থেকে মাথাবিহীন অজ্ঞাত যুবকের (২২) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ৭ ফেব্রুয়ারি কাফরুলের কচুক্ষেত এলাকায় নিখোঁজ স্কুলছাত্র শহিদুজ্জামান বিজয়ের (৮) লাশ উদ্ধার করা হয় রিজার্ভ ট্যাঙ্ক থেকে। ৯ মার্চ যাত্রাবাড়ীতে অজ্ঞাত (৩৫) এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর খণ্ডিত লাশ এবং সোয়ারী ঘাট থেকে অজ্ঞাত (৫০) এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৭ জুন মিরপুরে অজ্ঞাত তরুণীর (৩০) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ, ১৭ জুন নিখোঁজ হওয়ার এক মাস পর যাত্রাবাড়ীতে এক ভাগাড় থেকে কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০ জুন শেরেবাংলা নগর এলাকার ঢাকা মহিলা পলিটেকনিকের পাশ থেকে অজ্ঞাত (৪০) পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৩ জুন শ্যামপুর এলাকা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মো. কাজল হোসেন (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৪ জানুয়ারি হাজারীবাগের একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাত (১৩) এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৪ জুন খিলগাঁওয়ের নবীনবাগ ঝিল থেকে অজ্ঞাত (৪৫) এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। ২৫ মে দক্ষিণখান কাঁচাবাজারের পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে অজ্ঞাত কিশোরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে গত ৫ জুন রাত ৮টার দিকে সেগাুনবাগিচার তোপখানা রোডে ২৭/১৩/১৪ নম্বর বাড়ির নিচতলায় তিন যুবক ঢুকে মায়ের সামনে মেয়ে নিশাত বানুকে নৃশংসভাবে খুন করে। এ ঘটনায় আহত হন মা খালেদা বানু। হত্যাকাণ্ডের ৩৬ ঘণ্টা পর পুলিশ নিশাত বানুর লাশ এবং আহত বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডের পর দুর্বৃত্তরা বাসার আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং সিন্দুক ভেঙে নগদ ৪০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ বাড়ির মূল্যবান দলিল লুট করে নিয়ে যায়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা ডিবি তদন্ত কররছে, কিন্তু ২১ দিন পার হলেও হত্যার ক্লু উদ্ঘাটন করতে পারেনি। আইনের আওতায় আনা হয়নি খুনিদের। এ ঘটনায় নিহতের ভাড়াটিয়া একটি হোটেল মালিক ও তার ভাইকে গ্রেফতার করলেও রহস্য উন্মোচন হয়নি।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার ৫৮/এ/২ নম্বর ভবনের এ-৪ ফ্ল্যাটে খুন হন সাংবাদিক সাগর সারওয়ার ও তার স্ত্রী সাংবাদিক মেহেরুন রুনি। পরদিন সকালে তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করে। ওই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন খুনিদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। পরে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার এ ঘটনার তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য’ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান। কিন্তু তাদের সব কথাই শেষ পর্যন্ত বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। গত ৫ মার্চ রাতে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ২২/বি নম্বর বাড়িতে বসবাস করত সৌদি দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খালাফ আল-আলী। ওই রাতে বাসার ২০ গজ দূরে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় ওই রাতেই খালাফ মারা যান। হত্যাকাণ্ডের পর মামলাটি ডিবি তদন্ত শুরু করে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৪ মাস পার হতে চলল, এখনও এ হত্যাকাণ্ডের কোনো ক্লু উদ্ঘাটন করতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। হত্যার সঙ্গে জড়িতদেরও শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকপুত্র সাহেদ-উদ-দৌলার (৪২) লাশ সেগুনবাগিচার চট্টলা আবাসিক হোটেলের ১৫/২ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন নিহতের বড় ভাই আরিফ-উদ-দৌলা রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১৪ এপ্রিল গুলশান দুই নম্বর সেকশনের ১০১ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠ তলার সি-৫ নম্বর ফ্লাটে থাকতেন ফাহিমা সুলতানা (৪০)। সেখানে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় আহত হন গৃহপরিচারিকা বীনা। তিনি বর্তমানে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। গত ২২ এপ্রিল সুরক্ষিত এলাকা জাতীয় সংসদ ভবনের এমপি হোস্টলে অজ্ঞাত এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই তরুণীকে নির্যাতনের পর নৃশংসভাবে খুন করে লাশ বাথরুমে ফেলে রাখা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ২ মাস পার হয়ে গেলেও কোনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ।
এছাড়া গত ২ জুন হাতিরপুর নাহার প্লাজার কাছ থেকে রুমি নামে এক তরুণীর ২৮ টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করে। পরে লাশ গুম করার জন্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করে ভবনের ছাদ থেকে নিচে ফেলা হয়। এ ঘটনার মূল হোতা সাইদুর রহমান বাচ্চুকে গ্রেফতার করা হয়। সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। গত ২৯ এপ্রিল বাড্ডায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিজ বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক পরিচালক নজরুল ইসলাম। গত ২০ মে যাত্রাবাড়ীতে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন পুলিশের সোর্স আলমগীর হোসেন। গত ১৬ জুন রাতে ভগ্নিপতির বাসা থেকে নিজ বাসায় যাওয়ার পথে মিরপুরে বখাটেরা তুলে নিয়ে খুন করে পপি (১৬) নামের এক কিশোরীকে। পরদিন সকালে পুলিশ বাসা থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে।
গত ১৫ জুন রাতে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক গ্রামের কাগজের শার্শা উপজেলার কাশিপুর প্রতিনিধি জামালউদ্দিনকে নৃশংসভাবে খুন করে দুর্বৃত্তরা। রাত ১১টার দিকে কাশিপুর বাজারের পাশে একদল সন্ত্রাসী তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে হত্যা করে। চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করায় তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের দু’দিন পর অন্যতম আসামি উকিল ভারতে গ্রেফতার হয়। শার্শা থানার ওসি একেএম ফারুক জানান, সাংবাদিক জামাল উদ্দিনকে হত্যার পর পরই ঘাতকরা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এ কারণে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পালিয়ে যাওয়া ঘাতকদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা চলছে।

শুক্রবার, ২২ জুন, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আওয়ামী লীগ ক্রমেই অশান্ত হয়ে উঠছে : আলামত ভালো নয়



বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মহাবিজয় নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে সরকার গঠনের চমক হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এখন ক্ষমতা ছাড়ার দেড় বছর আগেই শাসক দল আওয়ামী লীগে অস্থিরতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছে তাতে রাজনীতিকরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত না হয়ে পারছে না। কিছুদিন আগে খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে আগামী নির্বাচনে ১৭৫টি আসনে জয়লাভের কথা দলের ভেতরে অস্থিরতা বাড়াতেই ইন্ধন জুগিয়েছে বলা যায়। গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে দেশজুড়ে এমন ঘটনার প্রাধান্যই প্রকৃত অবস্থা প্রমাণ করে। সরকার সমালোচক পত্রিকা শুধু নয়, সরকার সমর্থক পত্রিকাও এখন আর বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারছে না। গতকালের আমার দেশসহ অন্যান্য পত্রিকার খবর থেকেই পরিস্থিতি আঁচ করা যায়।
নোয়াখালীতে স্থানীয় এমপি একরামুল করিম চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণায় তার অনুসারীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সড়ক অবরোধ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মাইজদী শহরে এক অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করে। তারা যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পেট্রল ঢেলে আগুনও দেয়। আগুন নেভাতে যারা এগিয়ে আসে তাদেরও আক্রমণ করে। পুলিশ নিশ্চুপ থাকায় তারা আরও অশান্ত হয়ে রাস্তায় গাড়ি ভাংচুর করে, দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। জানা যায়, কিছুদিন আগে রাজধানীর ধানমন্ডিতে এই এমপির মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানে গোলযোগের ঘটনায় স্থানীয় থানার ওসি তার কথামত না চলায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও জেলার প্রভাবশালী মন্ত্রীর দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ এই আগুনে ঘি ঢেলেছে। সর্বশেষ ওই এমপি ধানমন্ডি থানার ওসিকে গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধে ১০ দিন সময় দিয়ে বলেছেন, এ সময়কাল দলীয় কার্যালয় বন্ধ থাকবে এবং দাবি পূরণ না হলে তার পদত্যাগ ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। ওদিকে রংপুরের পীরগাছায় আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির ভোটার তালিকার তদন্ত নিয়ে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে মারা গেছেন উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। রাজশাহীতে বাঘা-চারঘাট আসনের দলীয় এমপিকে ভয়ভীতি দেখানো ও চাঁদা দাবি করায় আড়ানী পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাস আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর রাজধানীর সড়ক ভবনে টেন্ডার নিয়ে গোলাগুলির ঘটনায় শ্রমিক লীগের দুই নেতা র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তারা সড়ক ও জনপথ কর্মচারী ইউনিয়নেরও প্রভাবশালী নেতা। এছাড়া বৃহস্পতিবার দুুপুরে মাদারীপুরের সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজে ভর্তি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী দু’গ্রুপের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হওয়ার খবর ছাপা হয়েছে সরকার সমর্থক পত্রিকায়। একই কাগজে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় সদ্য কারামুক্ত সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা নাজিমউদ্দিন আলমের সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিএনপির সভাস্থলে হামলা করার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট সরকারি মুজিব কলেজে ভর্তির কার্যক্রম চলাকালে বহিরাগত যুবলীগ কর্মীর হাতে কলেজ শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ায় উপস্থিত লোকজন তাকে ধরে ওই শিক্ষকের পা ছুঁয়ে ক্ষমা চাওয়ানো ও ১০ বার কান ধরে ওঠবস করার ঘটনা এলাকায় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এসবই মাত্র দুটি জাতীয় দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত খবর। সব পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দিতে গেলে নির্ধারিত জায়গায় কুলাবে না।
তবে এ থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা কী! সরকার পরিচালনার সাড়ে তিন বছরেই ভবিষ্যতে দলের এমপি সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধানমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি থেকেও বোঝা যায়, পরিস্থিতি কারও অজানা নয়। বাকি দেড় বছরে কোনো তাত্পর্যপূর্ণ উন্নতি না হলে যে মহাধস সৃষ্টি হবে তার ফলে নির্বাচনে দলটির ভূমিকা কি হবে—সেটাই এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। দলের ভেতরে নেতাকর্মীদের মারমুখী অবস্থার যেটুকু প্রকাশ পাচ্ছে, তাতেই বোঝা যায় তারা কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দুর্নীতি, লুটপাট, দখল, দলীয়করণের পাশাপাশি বিরোধী দল ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ওপর হামলা-মামলায় সীমাবদ্ধ থাকাও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিজেদের মধ্যে কোন্দল, মারামারি-হানাহানি ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ক্ষমতা হারানোর আগে আখের গোছাতে তাদের অধৈর্যপনা এখন দলের সীমানা পেরিয়ে সমাজে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা বৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠেছে। ঘটনাই প্রমাণ করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হওয়ায় সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার করে আগামী নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা এখন প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। এ জন্যই সবকিছু উপেক্ষা করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার গোঁ ধরে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট আশঙ্কাজনক করে তুলতেও পিছপা হচ্ছেন না তারা। তবে রাজনীতিতে একগুঁয়েমির ফল যে ভালো হয় না সেটা ভুলে যাওয়া তাদের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনতে পারে—এমন আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগের পর বিচারপতির উচিত আর আসনে না বসা




সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠার পর বিচার বিভাগের মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে উচিত আর আসনে না বসা। সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে সাধারণ অভিযোগ উঠলেও তদন্তকাল পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। খোদ জাতীয় সংসদে স্পিকার রুলিংয়ের মাধ্যমে একজন বিচারপতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। জাতীয় সংসদে স্পিকারের এ রুলিংয়ের পর বিচারবিভাগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে উচিত ছিল ওই বিচারপতির আর আসনে না বসা। এখন প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি সম্মানজনক ফয়সালা না করলে একজন বিতর্কিত বিচারপতির জন্য পুরো বিচারবিভাগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে। যা বিচারব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিচারপতি সংবিধান লঙ্ঘনের পর বিষয়টি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে না পাঠালে মানুষের এ বিচার বিভাগের ওপর আর কোনো আস্থাই থাকবে না। বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা শূন্যের কোটায় নেমে এলে দেশে অরাজকতা অনিবার্য হয়ে উঠবে। এর দায় নিতে হবে প্রধান বিচারপতিকে। কারণ স্পিকার রুলিংয়ের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির এখতিয়ারে দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতির এখন কী করতে হবে সেটা সংবিধানেই বলে দেয়া আছে।
গতকাল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার নিজ বাসভবনে দৈনিক আমার দেশ-কে দেয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি এসব কথা বলেন। পরপর দুইবার নির্বাচিত সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আইনজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন এই সাক্ষাত্কারে বিচারবিভাগ নিয়ে তার অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক খোলামেলা কথা বলেছেন। সাক্ষাত্কারের বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেয়া হলো-
প্রশ্ন : বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে জাতীয় সংসদে রুলিং দিয়েছেন স্পিকার। একজন প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : স্পিকার রুলিং দিয়ে একজন বিচারপতি সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির ওপর ন্যস্ত করেছেন স্পিকার। এখন প্রধান বিচারপতি কী সিদ্ধান্ত নেন সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে পুরো জাতি। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় ওই বিচারপতি শুধু জাতীয় সংসদের স্পিকার সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন তা নয়। তিনি বহু সম্মানিত ব্যক্তিদের তলব করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়েছেন। এতেও বিচারকদের জন্য যে আচরণ বিধি রয়েছে তা লঙ্ঘিত হয়েছে। বহু ব্যক্তিকে গালাগাল দিয়ে তিনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। কারণ বিচারকদের জন্য যে আচরণ বিধিটি রয়েছে তাতে স্পস্ট করেই বলে দেয়া আছে বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমনকি বিচারকাজে নিয়োজিত সহকর্মীদেরও কটাক্ষ করে কিছু বলা যাবে না। কিন্তু ওই বিচারপতি এ আচরণবিধিটির কোনো তোয়াক্কাই করেননি।
প্রশ্ন : প্রধান বিচারপতির এখন এখতিয়ারে কী রয়েছে? এমন কোনো বিধান কী রয়েছে প্রধান বিচারপতি যা প্রয়োগ করার এখতিয়ার রাখেন?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার সংবিধানেই বলে দিয়েছে। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে করণীয় কী। যেহেতু জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত একজন বিচারপতি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন তখন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব হচ্ছে সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদটি প্রয়োগ করা। সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদেই বলে দেয়া আছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সদস্য কারা। এখন প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার হচ্ছে বিষয়টি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে উপস্থাপন করা। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানাবে।
প্রশ্ন : সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সদস্য কারা?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : প্রধান বিচারপতি ও কর্মে প্রবীণ অপর দুইজন বিচারপতিকে নিয়ে সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত রয়েছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের কোনো বিষয় নেই। যে কোনো বিষয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান বিচারপতি। বর্তমানে সৃষ্ট ঘটনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি সম্মানজনক ফয়সালা না হলে সম্পূর্ণ দায়ভার প্রধান বিচারপতিকেই বহন করতে হবে। বিরূপ প্রভাব পড়বে পুরো বিচার বিভাগের ওপর।
প্রশ্ন : সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের জন্য একটি আচরণবিধি রয়েছে। একজন প্রবীণ আইনজীবী হিসেবে আপনি কী মনে করে বিচারকরা আচরণ বিধি পুরোপুরি মেনে চলছে?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের জন্য যে আচরণবিধি রয়েছে কোনো কোনো বিচারপতি সেটার তোয়াক্কা করছেন না। নিজেদের খেয়াল খুশিমত ভিন্ন ভিন্ন আচরণ ও মন্তব্যের মাধ্যমে শুধু বিচারপ্রার্থী জনগণ নন পুরো জাতির কাছে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নম্ন করছেন। একজন বিচারক মহান দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। মানুষের সর্বশেষ আশা-আকাঙ্ক্ষা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির শেষ ঠিকানা হচ্ছে সুপ্রিমকোর্ট। সেখানে কোনো বিচারকের আচরণ ও অবাঞ্ছিত মন্তব্যের কারণে কারও মনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দিলে আর কোনো জায়গা থাকে না। মানুষের আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব হচ্ছে বিচারপতিদের। তারা নিজেদের আচরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই এটা ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইদানীং কোনো কোনো বিচারপতি এসবের কোনোই তোয়াক্কা করছেন না। তারা নিজেদের জন্য তৈরি আচরণবিধিটা মানেন না। খেয়াল খুশিমত মন্তব্য করছেন। যখন যাকে যে কোনো উছিলায় তলব করছেন। দেশের জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে রাস্তার ট্রাফিকও বাদ যাচ্ছে না। কোনো কোনো বিচারকের এই আচরণ পুরো বিচারবিভাগের মর্যাদাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি কী তাহলে বলতে চাচ্ছেন বিচারকদের অসদাচরণের বিরুদ্ধে বিধি-বিধান রয়েছে। এসব বিধি-বিধান প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন : হ্যাঁ, আমি সেটাই বলতে চাচ্ছি। একজন বিচারক শপথ গ্রহণের পর দেশের আইনের প্রতি বিশেষ করে সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। আইন অনুযায়ী বিচার করবেন সেটাই বিধান। বিচারকরা আইন ও সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। সে ক্ষেত্রে যদি দেখা যায় বিচারক আসনে বসে সংবিধান লঙ্ঘন করে এমন মন্তব্য করেন যা সংবিধান পরিপন্থী, এমনকি সংবিধান তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তাও তিনি লঙ্ঘন করছেন। অথচ আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে দেয়া আছে। এই বিধান থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। কোনো কোনো বিচারক বারবার আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখছে না।
প্রশ্ন : আপনি নিজেই অসংখ্য বক্তৃতায় বলেছেন, বিচারবিভাগ দলীয়করণ করা হয়েছে। কীভাবে দলীয়করণ হলো সেটা খোলামেলা বলবেন কী?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : বিচারবিভাগ দলীয়করণের অভিযোগটি একেবারে সত্য। নগ্ন দলীয়করণের প্রচেষ্টা মানুষের সামনে একেবারেই স্পস্ট হয়ে গেছে। দলীয় বিবেচনায় ঢালাওভাবে বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কারণ দলীয় আজ্ঞাবহ লোক ছাড়া কাউকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। অসংখ্য দক্ষ আইনজীবী থাকা সত্ত্বেও দলীয় বিবেচনায় বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আমাদের সংবিধানে একটি বিধান রয়েছে আইন পেশায় দশ বছর হলে অথবা নিম্নম্ন আদালতে দশ বছর বিচারকাজে নিয়োজিত থাকলে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এর বাইরে কোনো নীতিমালা নেই। একটি নীতিমালা করার জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবি রয়েছে। বর্তমান আইনমন্ত্রী যখন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন তখন তিনি নিজেও বারবার নীতিমালার কথা বলতেন। আইনমন্ত্রী হয়েও তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন নীতিমালা করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই নীতিমালা হয়নি। নীতিমালা ছাড়াই প্রায় ৬০ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব নিয়োগ হয়েছে দলীয় বিবেচনায়। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য যে রকম ভাবমূর্তি ও দক্ষতা দরকার সেদিকে বিবেচনাই করা হচ্ছে না।
প্রশ্ন : বিচারবিভাগ নিয়ে বিতর্ক চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। সত্ দক্ষ বিচারক নিয়োগের জন্য কী করা দরকার?
খন্দকার মাহবুব হোসেন : বিচারবিভাগ হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক দেশের অন্যতম স্তম্ভ। দেশের সংবিধানের রক্ষক বিচারবিভাগকে সব রকমের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা না গেলে দেশে গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার কিছুই থাকবে না। বরং মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের বিচারবিভাগ গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত বিতর্কিত হয়ে পড়েছে। কেননা দেশের সর্বোচ্চ আদালত যেখানে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত বিচারক নিয়োগের কথা সেটাও কঠিনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এই বিতর্ক থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বিচারক নিয়োগের জন্য অচিরেই একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নীতিমালা করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে নিয়োগ প্রক্রিয়া ও কোনো কোনো বিচারকের আচার আচরণ শুধু উচ্চ আদালতকে বিতর্কিতই করেনি। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির বিষয়টিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং বিচারপ্রার্থীরা সব সময় একটি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। আমরা আশা করব দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে প্রতিষ্ঠা করতে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে উচ্চ আদালতকে নিয়ে কেউ আর ছিনিমিনি খেলবেন না। এরই মধ্যে যে বিতর্ক উঠেছে তা নিরসনের জন্য প্রধান বিচারপতি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। বিচারপ্রার্থী মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বিচারবিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে প্রধান বিচারপতি স্পিকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ত্বরিত পদক্ষেপ নেবেন সেটাই এখন সবার প্রত্যাশা।

বুধবার, ২০ জুন, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

পদ্মা সেতু প্রকল্পে মন্ত্রীর ১০% ঘুষ কেলেঙ্কারি : স্বীকার বা অস্বীকার করছেন না দুদক চেয়ারম্যান



পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে দুদক এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রী-সচিবসহ ৩ কর্মকর্তা ১০ শতাংশ ঘুষ চেয়েছিলেন। ঘুষের বিষয়টি মধ্যস্থতা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই মরহুম ইলিয়াস আহমদ চৌধুরীর ছেলে নিক্সন চৌধুরী। দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতির সত্যতা যাছাইয়ে তারা ব্যাপক অনুসন্ধান করছেন। তবে তিনি বলেন, মন্ত্রী-সচিবের ১০ শতাংশ ঘুষ চাওয়ার বিষয়ে পত্রিকায় যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা দুদকের কাছে বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো প্রতিবেদনের সঙ্গে গরমিল রয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান অবশ্য ১০ শতাংশ ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সরাসরি স্বীকারও করেননি আবার অস্বীকারও করেননি।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান তার কক্ষে সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা বিধিসম্মতভাবে হয়নি। বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের প্রভাবশালী অনেকেরই নাম এসেছে। তাদের বিষয়ে দুদকের তদন্ত অনুসন্ধান চলছে। কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের কাছে ১০ শতাংশ অর্থ কমিশন চেয়েছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া এবং পদ্মা সেতুর সাবেক প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তাদের প্রতিনিধিরা এই অর্থ কমিশন হিসেবে চান।
এদিকে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের মাসিক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গত মে মাসে দুদক ১ হাজার ১৩১টি অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ৭৯টি অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। এ সময় ১৬টি মামলার অনুমোদন, ৬১টি মামলার চার্জশিট দাখিল ও ২২টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া গতকাল এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির ১২ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক।
গতকাল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংক দুদককে লিখিতভাবে কিছু তথ্য দিয়েছে। ওই তথ্যের সত্যতা যাছাইয়ের জন্য আমরা অনুসন্ধান করছি। কিছু কিছু মিডিয়ায় এমন কিছু তথ্য এসেছে, যা বিশ্বব্যাংক থেকে দুদকে পাঠানো তথ্যের সঙ্গে আমার জানা তথ্যের সঙ্গে যথেষ্ট গড়মিল আছে। তবে তিনি ওইসব তথ্যকে অসত্য বলতেও চাননি। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান শেষেই এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত অবগত করা হবে।
১০ শতাংশ ঘুষ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনসহ যে তিন ব্যক্তির নামে ১০ শতাংশ কমিশন চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে দরপত্র মূল্যায়নে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। যেসব দরপত্র পড়ে সেগুলো প্রথমে ইভালুয়েশন কমিটির কাছে যায়। তারা মূল্যায়ন করে আমাদের যে ন্যাশনাল ইভালুয়েশন কমিটি আছে তাদের কাছে পাঠাবে। এই কমিটির প্রধান হচ্ছেন প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী। এ ক্ষেত্রে যাদের নাম এখানে বলা হয়েছে ইভালুয়েশন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারা যুক্ত নন। তারা অন্য কোনোভাবে প্রকল্পের কাজ প্রভাবিত করেছেন বলে মনে হচ্ছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাবে, তা-ই আপনাদের জানানো হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে পাঠানো তথ্যে বলা হয়েছে, এখানে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা বিধিসম্মত ছিল না। এই অভিযোগে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের অনেক কর্মকর্তার নাম এসেছে। তাদের সবার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। তিনি বলেন, দুদকের প্রধান হিসেবে এখানকার সফলতা-ব্যর্থতার দায়ভার যেমন আমার, তেমনি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে ওই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের নাম আসবে, এটাই স্বাভাবিক। যিনি মন্ত্রণালয়ের প্রধান, যিনি প্রকল্প পরিচালক তাদের প্রতিই মানুষ আঙুল তুলবে। সত্যিকারে তারা ছিলেন কি-না সেটা অনুসন্ধানের বিষয়। আমরা চেষ্টা করছি সত্য উদঘাটন করার। এ বিষয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তা যাকে যাকে প্রয়োজন, তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এ ক্ষেত্রে ইভালুয়েশন কমিটির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করাটা স্বাভাবিক।
১০ শতাংশ ঘুষ কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে যে তথ্য মিডিয়ায় এসেছে ওই প্রসঙ্গে তিনি সত্য বা মিথ্যা কোনো মন্তব্য না করে বলেছেন, নিশ্চয় তাদের কোনো সোর্স আছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক কোনো প্রতিবাদ জানাবে কি-না এ প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে দুদক প্রতিবাদ করার প্রশ্নই আসে না। কেউ যদি সুংক্ষুব্ধ হয় বা কারও যদি ক্ষতি হয়, তারা চাইলে প্রতিবাদ করতে পারে। প্রয়োজনে মন্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এসএনসি-লাভালিনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমের কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে কানাডার পুলিশ। বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও দুদকে কিছু তথ্য পাঠানো হয়েছে। ওই তথ্যে পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও রয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক সরকারের কাছে একটি চিঠিতে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করার আহ্বান জানিয়েছে। সরকার নতুন কোনো কমিটি গঠন না করলেও দুদক নতুন করে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে ১৪ জুন দুদক সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে জাতীয় সংসদের হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনের ভাই ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ওরফে দাদা ভাইয়ের ছেলে নিক্সন চৌধুরীকে। নিক্সন চৌধুরী দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, এসএনসি-লাভালিনের হয়ে ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। দুদক তার কাছ থেকে আরও বেশকিছু তথ্য জানতে চায়। কেন এবং কী সুবিধা পেয়ে তিনি এসএনসি-লাভালিনের হয়ে তদবির করেছিলেন এর তেমন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা সই করলেও সরকার এখন বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের ঋণেই পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন চায়। এরই অংশ হিসেবে দুদক তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে দুদক তথ্য চাইলে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয় সরকারকে। ওই প্রতিবেদন থেকেই দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানতে পারে দুদক। প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, তার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনালের সংশ্লিষ্টতা এবং সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া ও প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানায়।
দুদকের তদন্ত দলের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, ‘এসএনসি-লাভালিনের কাছে ঘুষ চাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে কানাডীয় তদন্ত দল। কিন্তু কানাডার আইন আর বাংলাদেশের আইন এক নয়। কানাডার আইনে ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে কথা বলাই অপরাধ। কিন্তু বাংলাদেশে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরই অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।’ ফলে দু’দেশের আইনের পার্থক্যে প্রতিবেদনের গরমিল হতে পারে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটি পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নাম সুপারিশ করেছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল এসএনসি-লাভালিন, যুক্তরাজ্যের হালক্রো গ্রুপ, নিউজিল্যান্ডের একম অ্যান্ড এ জেড এল, জাপানের ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড এবং যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের যৌথ বিনিয়োগের প্রতিষ্ঠান হাই পয়েন্ট রেন্ডাল। এর মধ্যে এসএনসি-লাভালিনকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে অনুমোদনের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এরপরই এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা স্থগিত করে দেয়। এ নিয়ে কানাডা পুলিশ এখনও তদন্ত করছে। আর তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভালিনকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদন অনুযায়ী সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী তার আত্মীয় জিয়াউল হককে নিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের সঙ্গে সেতু ভবনে পদ্মা সেতু সম্পর্কিত একটি বৈঠক করেন। জিয়াউল হক ছিলেন বাংলাদেশে কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় একজন প্রতিনিধি। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও রয়েছে প্রতিবেদনে। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেড নামে ওই প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ৭/৪, এ ব্লক, লালমাটিয়া। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদেও জিয়াউল হক ওই বেঠকের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তাতে কোনো অর্থের লেনদেন বিষয়ে অস্বীকার করেন তিনি।
এ ছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর ফুফাত ভাই ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ওরফে দাদা ভাইয়ের ছেলে নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে এসএনসি-লাভালিনের বাংলাদেশি কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনের ঘনিষ্ঠতা প্রসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। কানাডা ও বাংলাদেশের যেসব হোটেলে তাদের নিয়মিত সাক্ষাত্ হতো তার ঠিকানা ও সময়সূচি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নিক্সন চৌধুরী তার বাবা মরহুম সংসদ সদস্য ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরীর রেখে যাওয়া পারিবারিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিতা কনস্ট্রাকশন ও মহাখালীতে একটি সিএনজি ফিলিং স্টেশন দেখাশোনা করেন। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর দরপত্রে অংশগ্রহণ করার পরই উভয়ের মধ্যকার দেখা-সাক্ষাত্ শুরু হয়। এসব বৈঠকে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব এবং প্রকল্প পরিচালকও উপস্থিত থাকতেন বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম তুলেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই সময়ে অর্থমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়ে এই দুর্নীতির সঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেনের সম্পৃক্ততার কথা জানানো হয়। এরপর সরকার মন্ত্রী, সচিব ও প্রকল্প পরিচালককে অন্যত্র সরিয়ে দিলেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে সাহায্য স্থগিত করে রাখে। এরপর গত এপ্রিলে দুর্নীতির প্রমাণ দিয়ে আবার একটি চিঠি দেয় বিশ্বব্যাংক। তাতেও সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সবশেষ চলতি মাসে আবার একটি চিঠি দেয়ার পর তদন্ত শুরু করে দুদক।
ডেসটিনির ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ : এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির শীর্ষ পর্যায়ের ১১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। বুধবার দুদক কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের পর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকতারা জানিয়েছেন, গণমাধ্যমে ডেসটিনি বিষয়ে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলোর বিষয় নিয়েই মূলত তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর আগে ডেসটিনির পরিচালকদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর সঙ্গে গতকালের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে দুদক। গতকাল যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের পরিচালক জামশেদ আরা চৌধুরী, শেয়ারহোল্ডার শাহ আলম, বি বিকাশ শীল, মাহবুবুর রহমান, আশরাফুল আমিন, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভের যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন রানা, সদস্য আহসানুল কবির বিপ্লব, আযাদ রহমান, শান্ত সিকদারসহ আরও দু’জন সদস্য। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে ডেসটিনির পরিচালকদের জবানবন্দি মিলিয়ে দেখতে ওই প্রতিষ্ঠানের ১১ কর্মকর্তাকে তলব করে কমিশন।
দুদকের ব্রিফিং : এদিকে গতকাল ব্রিফিং করেছেন দুদকের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। তিনি দুদকের মে মাসের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মে মাসে দুদকে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১১৩১। যাছাই-বাছাই শেষে কমিশন অনুসন্ধানের জন্য ৭৯টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে প্রেরিত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৮০টি। কমিশনের তফসিলভুক্ত না হওয়া ও সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত না থাকায় অগৃহীত অভিযোগ ছিল ৯৭২টি। মে মাসে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে দুর্নীতি সংক্রান্ত বিবেচ্য প্রতিবেদন ছিল ৪১টি। অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ৯টি।
মামলা সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়েছে, মে মাসে মামলা দায়েরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৬টি। মামলায় সম্পৃক্ত হয়েছে ১৮ সরকারি চাকরিজীবী, ৯ ব্যবাসয়ীসহ মোট ৩৭ জন। চার্জশিট দাখিল হয়েছে ৬১টি। অভিযুক্ত আসামির সংখ্যা ৯৭। এদের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ৩৫, জনপ্রতিনিধি ৪, ব্যবসায়ী ৪৫ ও অন্যান্য ১৩ জন। মামলার বিচার সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়েছে মে মাসে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৬টি, সাজা হয়েছে ১ জনের ও সাজা হয়েছে ৫ জনের।
মামলায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অভিযোগ ছিল ১০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের সময় হাতে-নাতে গ্রেফতার হওয়ায় চট্টগ্রাম-২ পল্লী বিদ্যুত্ সমিতির ডিজিএম মো সলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়া হয়েছে। জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহেযাগিতায় তৈরি পোশাক রফতানি দেখিয়ে সরকারি রাজস্ব আত্মসাত্ ও প্রতারণার অভিযোগে বেস্টওয়্যার গার্মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড চেয়ারম্যান ফজলুল হক খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা ঘুষসহ হাতে-নাতে গ্রেফতার হওয়ায় রংপুরের মিঠাপুুকুর উপজেলার জায়গিরহাট উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি সহকারী আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে। দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৫৩ লাখ ৩৫ হাজার ৩৬০ টাকা তথ্য গোপন এবং ৭০ লাখ ২৪ হাজার ২৪১ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকার উত্তরার প্রতীক ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের মালিক একেএম আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া কমিশন ক্ষমতা অপব্যবহার করে গভীর নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বর্তমানে মাঝারি শহর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন সেক্টর প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ শাহবাজ সহ ১৮ জনের রুিদ্ধে ১৭ মামলায় চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে।
দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে ৫০ লাখ ৫২ হাজার ১০৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ডেসা বর্তমানে ডিপিডিসি রাজারবাগ মো. আবদুুল আজিজ খানের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে।
এছাড়া ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক সিলেটের সুবিদবাজার শাখার জুনিয়র অফিসার মো. ইলিয়াসের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সোমবার, ১৮ জুন, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করে খায়রুল হকের লেখা রায় প্রসঙ্গে টিএইচ খান : অবসরে যাওয়ার পর লেখা রায় বৈধ নয়



সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টিএইচ খান বলেছেন, চাকরির মেয়াদ শেষে অবসরে যাওয়ার পর কোনো বিচারপতির রায় লেখা বা রায়ে স্বাক্ষর করার আইনগত এখতিয়ার ও ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরের ১৩ মাস পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়া রায় লিখেছেন বলে যে মন্তব্য করেছেন তা খুবই দুঃখজনক। অবসরে যাওয়ার পর তিনি এই রায় লেখার এখতিয়ার রাখেন না। তার লেখা রায়ের সঙ্গে অন্য বিচারপতিরা একমত বা স্বাক্ষর করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, তিনি অবসরে চলে গেছেন এক বছরেরও বেশি সময় আগে। অবসরে যাওয়ার পর খায়রুল হক একজন সাধারণ নাগরিকে পরিণত হয়েছেন। গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে আপিল বিভাগের রায় দেয়া হয়েছিল ২০১১ সালের ২ মে। এ রায়ের আলোকে ২০১১ সালের জুন মাসে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মুছে ফেলা হয়েছে। অথচ গত ২৯ মার্চ বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক রায় লিখে সুপ্রিমকোর্টে জমা দিয়েছেন। রায়টি ঘোষণার ১৫ দিনের মাথায় ২০১১ সালের ১৭ মে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসরে যান। এখনও এ মামলার লিখিত রায় প্রকাশ হয়নি। এরই মধ্যে গতকাল বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক গত ২৯ মার্চ রায় লেখা শেষ করে আপিল বিভাগে জমা দিয়েছেন। এখনও রায়টি প্রকাশিত না হওয়ায় তিনি বিস্মিত হয়েছেন বলে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গতকাল সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টিএইচ খান সাংবাদিকদের বলেন, খায়রুল হকের এ বক্তব্যে আইনজীবী হিসেবে আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারণ, সাংবিধানিক পদে যারা দায়িত্ব পালন করেন, পদে বসার আগে তাদের একটি শপথ নিতে হয়। দায়িত্ব পালনকালীন তারা শপথ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর আর শপথের বাধ্যবাধকতা থাকে না। অবসরে যাওয়ার পর সাধারণ নাগরিকের কাতারে চলে আসেন। শপথের আওতা থেকে বের হয়ে সাধারণ নাগরিকে পরিণত হওয়া কোনো ব্যক্তি রায় লিখতে পারেন না। বিচরপতি এবিএম খায়রুল হক যেদিন চাকরি থেকে অবসরে গেছেন সেদিন থেকে সাধারণ নাগরিক। তিনি আর শপথের মধ্যে নেই। এ অবস্থায় এক বছর ধরে নিজের মতো করে রায় লিখেছেন। এ রায় কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার লেখা রায়ের সঙ্গে অন্য কোনো কর্মরত বিচারপতি একমত বা দ্বিমত করেও স্বাক্ষর দিতে পারেন না। বিচারপতি টিএইচ খান বলেন, আমাদের সংবিধান, আপিল বিভাগের রুলস কোথায়ও বলা নেই অবসরের পর বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন এবং রায়ে স্বাক্ষর করতে পারবেন। অবসরের পর কেউ রায় লিখলে বা রায়ে স্বাক্ষর করলে সেটা বৈধ হবে না। তিনি বলেন, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরের পর ১৩ মাস ধরে রায় লিখলেন, রায়ের বিষয়বস্তু কী এখনও প্রকাশিত হলো না। অথচ তিনি বলে দিলেন রায়টি প্রকাশ হলে রাজনৈতিক বিতর্ক আর থাকবে না। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় খায়রুল হক সংক্ষিপ্ত একটি লিখিত আদেশের মাধ্যমে রায় ঘোষণা করেছিলেন। এতে বলা হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ রায় দেয়া হয়েছে। এতে বোঝা যায় আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির কেউ কেউ ভিন্নমত দিয়েছিলেন। কী ছিল তাদের ভিন্নমত এবং কারা এ ভিন্নমত দিয়েছিলেন তা এখনও জানা যায়নি। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক এবং লজ্জার বিষয় হলো, খায়রুল হকের বক্তব্য অনুযায়ী একটি রায় লিখতে এক বছর ২৫ দিন সময় লাগল।
বিচারপতি টিএইচ খান বলেন, খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত রয়েছে এমন কয়েকটি মামলা স্বউদ্যোগে শুনানির জন্য তালিকায় নিয়ে এলেন। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে হাইকোর্ট বিভাগে এর আগে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলটিও শুনানির জন্য তালিকায় আনা হলো। হাইকোর্ট বিভাগের ৩ বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ বেঞ্চ রায় দিয়ে বলেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধ এবং সংবিধানের সঙ্গে কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় নয়। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে আরও বলা হয়েছিল, দেশের জন্য এটি একটি ভালো আইন এবং বৈধ একটি জাতীয় সংসদ এ আইন করার এখতিয়ার রয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে তখন আপিল করা হয়। বিচারপতি খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর নিজের উদ্যোগে আপিলটি শুনানির জন্য তালিকায় নিয়ে আসেন এবং রায় ঘোষণা করেন। কিন্তু অবসরে যাওয়ার এক বছর পর রায় লিখে জমা দিলেন। এটা আইনসম্মত হতে পারে না। শপথের বাইরে চলে যাওয়ার পর তিনি নিজের মতো জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রায় লিখে দেবেন তা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, শুধু এ মামলাটি নয়, সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িত আরও কয়েকটি মামলায় রায় দিয়েছিলেন। সেগুলো এখনও লেখা হয়নি। এর মধ্যে ফতোয়া বিষয়ক রায়টি অন্যতম। এটিরও রায় এখনও লেখা হয়নি।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জন্মদিনে বাবাকে উপহার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে সাইয়ারা’র চিঠি



 চোখের জল আর বিষাদের মেঘলা মুখে জন্মদিন পার করেছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর শিশুকন্যা সাইয়ারা নাওয়াল। গতকাল ছিল তার দশম জন্মদিন। বাবা এবং বাবার উপহার ছাড়া এবারই প্রথম জন্মদিন কাটলো তার। জন্মদিনের উপহার হিসেবে বাবাকে ফেরত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠিও লিখেছে। বাবার কয়েকজন সহকর্মী আর আত্মীয়-স্বজন চেষ্টা করেছে তাকে বাবার অনুপস্থিতি ভুলিয়ে দিতে। কিন্তু সে কি আর হয়! আনন্দের দিনটি তার কেটে গেছে চুপচাপ বিষণ্নমুখে। তার কান্না সংক্রমিত করেছে অন্যদেরও। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। এ সময় ইলিয়াসের বাড়ি ‘সিলেট হাউজে’ এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। জন্মদিনে আবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাবাকে ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানিয়েছে সাইয়ারা নাওয়াল। দেশবাসীর কাছে চেয়েছে দোয়া।
জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীকে ইলিয়াস-কন্যার খোলা চিঠি
নিজের জন্মদিনে বাবার সন্ধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিটি লিখেছে- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল। রাজধানীর মানারাত স্কুলের ছাত্রী সাইয়ারা ইংরেজিতে লিখেছে- ‘মিসেস শেখ হাসিনা, ১৮ই জুন আমার জন্মদিন। আমাকে একটি উপহার দিতে হবে আপনার, তা হলো আমার বাবা। আমি বাবাকে জন্মদিনের আগে চাই। প্রতিবছর তিনি জন্মদিনে আমাকে অনেক উপহার দেন।’
মেয়ের জন্মদিনে কোন আয়োজন করতে পারিনি: রুশদির
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা সাংবাদিকদের বলেন, আজ আমার মেয়ে সাইয়ারা নাওয়ালের দশম জন্মবার্ষিকী। অথচ তার জন্মদিনে কিছু আয়োজন করতে পারিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের কোন ফলাফল আমি এখনও পাইনি। তবুও আশায় আছি ইলিয়াসকে খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা অনেক কমে গেছে। এখন তাদের কোন তৎপরতাই দেখা যায় না। তারপরও আমি আশাবাদী। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছি আমার স্বামী ফিরে আসবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজনীতির চেয়ে মানবতা অনেক ঊর্ধ্বে। এ কথাটি আমার বেশি মনে পড়ছে।
ইলিয়াসকে সরকারের লোকেরাই গুম করেছে: ফখরুল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দু’মাস আগে ইলিয়াস আলীকে সরকারের লোকজনই গুম করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন সূত্রে আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি। আমরা এখনও সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, ইলিয়াস আলীকে জীবিত তার পরিবারের কাছে ফেরত দিন। এটা সরকারেরই কর্তব্য। ইলিয়াসের শিশুকন্যা সাইয়ারা নাওয়ালের ১০ম জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে গতকাল বনানীর ‘সিলেট হাউজে’ গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে ফিরে পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও আশ্বস্ত করেছিলেন। তারপর আমরা আশা করেছিলাম, ইলিয়াস আলীকে সরকার ফেরত দেবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাকে ফেরত দেয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। মির্জা আলমগীর বলেন, আশা করেছিলাম সরকার ইলিয়াস আলীর ব্যাপারে একটি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেবে, তা-ও দেয়নি। এ বক্তব্য দেয়ার সময় মির্জা আলমগীর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ইলিয়াস আলীকে কেন এবং কারা ধরে নিয়ে গেছে তা কেবল বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ জানে। গুমের ঘটনাকে জাতিসংঘের চার্টার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দু’মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ইলিয়াস আলীকে আমরা ফেরত পাইনি। পাওয়া যায়নি তার গাড়িচালক আনসার আলীকেও। এভাবে একের পর এক গুম ঘটনা ঘটছে। এর কোন প্রতিকার নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইলিয়াস আলীর মেয়ে সাইয়ারার লেখা খোলা চিঠির কথা তুলে তিনি বলেন, এই ছোট্ট মেয়েটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে বাবাকে ফেরত চেয়েছে। কি বেদনাদায়ক এটি। কেবল সাইয়ারা কিংবা আমরাই নয়, গোটা দেশের মানুষ ইলিয়াস আলীকে আজ ফেরত চান। এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সারওয়ার এমপি ও ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ইলিয়াস আলীর শিশুকন্যা সাইয়ারা নাওয়ালকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বনানীর ‘সিলেট হাউজে’ যান বিএনপি মহাসচিব। তিনি সাইয়ারা নাওয়ালের জন্য একটি জন্মদিনের কেক নিয়ে যান। মির্জা আলমগীর সিলেট হাউজে গিয়েই সাইয়ারাকে বুকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, কেমন আছো মা মণি।’ তিনি ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাসহ তার অপর দু’সন্তানের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেন।

Ads