মঙ্গলবার, ২৯ মে, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

শহীদ জিয়াকে আজ বড় বেশি মনে পড়ে



ত রি কু ল ই স লা ম
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে আজ বড় বেশি মনে পড়ে। বাংলাদেশের এ ক্রান্তিকালে শহীদ জিয়াকে মনে পড়ার যথেষ্ট কারণও আছে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উত্স। জিয়াউর রহমান এক অবিস্মরণীয় নাম। আমাদের জাতিসত্তার মহান রূপকার। স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রনায়ক। মহান মুক্তিযুদ্ধের এক বীর সেনানী। মহান স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শের মূর্ত প্রতীক।
শহীদ জিয়াকে আমরা জাতির ক্রান্তিকালে স্বরূপে দেখেছি। ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রামে দেখেছি সমর নায়ক হিসেবে। আবার দেখেছি ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে। ১৯৮১ সালে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দেখেছি আরেক রূপে, বাংলাদেশকে আধুনিক রূপে গড়ে তোলার কারিগর হিসেবে। জিয়াউর রহমানকে ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে দেখা যায় স্বমহিমায়। তাঁর উন্নত চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা, গভীর দেশপ্রেম আমাদের চেতনাকে শাণিত করেছে। ব্যক্তি জিয়াউর রহমান আর রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমানের মধ্যে আমরা কোনো তফাত খুঁজে পাই না। বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর যখন চারদিকে এক তমসাচ্ছন্ন পরিবেশ, হতাশা আর গ্লানিময় শাসন বাকরুদ্ধ অবস্থা তৈরি করেছিল, জিয়াউর রহমান তখন এগিয়ে এসেছিলেন অন্ধকারের দিশা হিসেবে। স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়েই যখন প্রশ্ন উঠেছিল জিয়াউর রহমান তখন হতাশাগ্রস্ত জাতির মনে আশার সঞ্চার করেন। জিয়াউর রহমানের তুলনা তিনি নিজেই। একজন সহকর্মী হিসেবে আজ বহুদিন পর স্মৃতির মানসপটে তাঁর যে প্রতিচ্ছবি দেখি তাতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। তাঁর তুলনা খুঁজে পাই না। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই কিছু ত্রুটি থাকে, বিচ্যুতি থাকে। রাষ্ট্রনায়ক বা জাতীয় নেতারাও এই সমাজেরই অংশ। ফলে আমরা দেখি একজন আদর্শবাদী নেতাও জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নীতি-আদর্শের উপরে অবিচল থাকতে পারেন না। এই বিচ্যুতি জীবনের সব অর্জনকে ম্লান করে দেয়। কিন্তু, জিয়াউর রহমানের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমরা তেমন কিছু দেখি না। সততা একজন মানুষকে মহত্ করে। সততাবিহীন জীবন নীতির প্রশ্নে আপস করে। জিয়াউর রহমান সততার ক্ষেত্রে কোনোদিন আপস করেননি। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের অনেক গভীরে তাঁর স্থান। তার সাদামাটা জীবন, নির্লোভ মানসিকতা, গভীর দেশপ্রেম বিরল। জিয়াউর রহমান পেশায় সৈনিক ছিলেন। একজন সেনানায়কের চারিত্রিক দৃঢ়তা দিয়ে তিনি তাঁর চারপাশের পরিবেশ মুগ্ধ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের এক চরম ক্রান্তিলগ্নে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। একটা জাতির জীবনে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এদেশের মানুষ এ দুয়ের জন্য যুগে যুগে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য। জিয়াউর রহমান এই দুই বিরল অর্জনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একজন সহকর্মী হিসেবে দেখেছি, কি অমিত তেজ আর সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে তাকে পরিশ্রম করতে। চারণের মতো বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন।
জিয়াউর রহমান নতুন রাজনীতি শিখিয়েছেন। সে রাজনীতি ছিল উন্নয়নের রাজনীতি। আমাদের জাতীয় চেতনা ও আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে নতুন দেশ গড়ার রাজনীতি তিনি আমাদের শিখিয়েছেন। তিনি সমন্বয়ের নতুন যে রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপন করে গেছেন, তার কোনো তুলনা হয় না। আমরা সহকর্মীরা কাজ করার সময় দেখেছি, তিনি সবার কথা শুনছেন, সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, আবার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সবাইকে সম্পৃক্ত করছেন। রাজনীতির গতানুগতিকতার বাইরে উঠে তিনি সারা বাংলাদেশকে এক করেছিলেন। প্রতিদিন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রূপসা থেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। আবার ঢাকায় ফিরে এসে প্রশাসনের কাজকর্ম তদারক করেছেন। মাত্র পাঁচ বছরেই দেশের চেহারাটা পাল্টে ফেলেছিলেন তিনি। জাতির ঘনঘোর দুর্দিনে তিনি এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁর এ আগমনে সবার মধ্যেই প্রাণের স্পন্দন ফিরে এসেছিল। জীবনে যখন তিনি যে কাজে হাত দিয়েছেন, পরিকল্পনা করেছেন, তা বাস্তবায়ন করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি নতুন বিপ্লবের সূচনা করেন। তখন আট কোটি মানুষের ষোল কোটি হাতকে তিনি কর্মীর হাতে রূপান্তর করেন। তিনি লক্ষ্য করেন, যে গতানুগতিক রাজনীতি বাংলাদেশে বিদ্যমান তা দিয়ে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। এ রাজনীতি পশ্চাত্পদ। অনেকটা প্রাচীন। বিশ্ব এগিয়ে গেছে। সদ্য স্বাধীন দেশ হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। এই পশ্চাত্পদতা কাটিয়ে উঠতে হলে সবাইকে নিয়েই এবং বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে এগুতে হবে। তিনি চিহ্নিত করলেন আমাদের সমস্যাগুলো কী? দেখলেন নেতৃত্ব পেলে এ জাতি পৃথিবীতে অনেক কিছুই করতে পারে। ১৯৭১ সালে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে অতি অল্প সময়েই স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তাদের এই শৌর্য সমগ্র বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছে। কিন্তু এরপর যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো সে জন্য জনগণ দায়ী নয়। বরং এটি ছিল নেতৃত্বের ব্যর্থতা। জিয়াউর রহমান এ অবস্থায় নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু জাতির আকাঙ্ক্ষা ছিল অন্য রকম। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণেই এগিয়ে আসতে হলো তাকে। সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন তরুণ জিয়াউর রহমান। স্বস্তি পেল জাতি। এ দেশের মানুষকে তিনি হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিলেন। এজন্য জিয়াউর রহমান হয়ে উঠলেন সব আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবার সহাবস্থান নিশ্চিত করলেন জিয়াউর রহমান। তিনি যে কতটা দূরদর্শী ছিলেন তা তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের সমাজ চরমভাবাপন্ন নয়। এখানকার মানুষের আকাঙ্ক্ষাও খুব বেশি নয়। এ জাতিকে তিনি উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখালেন। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচিত করলেন। যুবসমাজকে টেনে আনলেন উন্নয়নের মূল স্রোতে। আমরা অনেকেই সে সময় ছিলাম ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে যুক্ত। জিয়াউর রহমান সবাইকে কাছে টেনে আনলেন। তিনি কোনো পার্থক্য করলেন না। মুসলিম দুনিয়ার সঙ্গেও তৈরি করলেন নতুন সেতুবন্ধন। প্রযুক্তিনির্ভর দেশগুলো থেকে তিনি প্রযুক্তি আমদানি করলেন। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশকে তিনি সবুজ বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেলেন। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সম্মানের সঙ্গে বসবাসকে অগ্রাধিকার দিলেন তিনি। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে চাইলেন অনেক উচ্চে। এগিয়ে নিয়েও গেলেন তিনি। সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা জিয়া। দক্ষিণ এশীয় সংস্থার মাধ্যমে এই অঞ্চলকে এক ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। তিনি ছিলেন এর রূপকার। আফসোস হয় যখন দেখি, আজ একটি বিশেষ গোষ্ঠী শহীদ জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করার চেষ্টা করে। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ডে কালিমা লেপন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে নতুন করে। কিন্তু শহীদ জিয়ার কর্মযজ্ঞের সময়কালে তারা কোথায় ছিলেন? সে দিন তারা তার সমালোচনা করার মতো কোনো কিছুই পাননি। অথচ আজ এতদিন পর এসে বৃথা বিতর্কের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করেননি। তাকে সামরিক শাসক বলা যায় না। তাঁর রাজনীতিতে আগমন ঘটেছিল এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে। কিন্তু এ দেশের সামরিক বাহিনীকে পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তিনি একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। তবে সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে দেননি তিনি। এ তাঁর দূরদর্শিতার আরেক পরিচয়। জিয়াউর রহমান চেয়েছেন রাজনীতিবিদরা দেশের মানুষের দোরগোড়ায় যাক। উন্নয়ন শুধু এক স্থানেই নয়, সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ুক। এ পরিকল্পনায় সফল হয়েছিলেন তিনি। আর এসব কারণেই জিয়াউর রহমান তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরও সমান জনপ্রিয়। আর তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিও এ দেশের জনগণের কাছে বিপুলভাবে সমাদৃত। এর কারণ একটিই। তা হলো এ দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তব প্রতিফলন ছিল জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনে। এ কারণেই তাঁর শাহাদাতের পর পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল—‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ’।
লেখক : স্থায়ী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও সাবেক মন্ত্রী
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ



স্বাধীনতার ঘোষক ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। দেশের জনপ্রিয় দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
শোকাবহ এ দিনটি স্মরণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন। জাতি আজ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। জাতির প্রতিটি সঙ্কটময় মুহূর্তে তিনি বার বার দাঁড়িয়েছেন নির্ভয়ে, মাথা উঁচু করে। বিপর্যস্ত জাতিকে রক্ষা করেছেন সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিশাহারা জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি, দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য হানাদারদের বিরুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার এ অতুলনীয় ভূমিকা ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল ও অনিশ্চিত এক পরিস্থিতি থেকে দেশ মুক্তি পায় ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক সিপাহি-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে। আর এ বিপ্লবের প্রাণপুরুষ ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি একদলীয় শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই দেশে নিশ্চিত করেন বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা জিয়া জাতির নিজস্ব পরিচয় তুলে ধরেন। তার অন্যতম উপহার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তিনি ছিলেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল এলাকার বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী, অকুতোভয় বীর। তিনি ছিলেন আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে শকুনের থাবা থেকে মুক্ত রাখার লড়াকু সৈনিক। সম্প্রসারণবাদীদের ষড়যন্ত্র রুখতে জীবন দিতেও প্রস্তুত ছিলেন তিনি। আমৃত্যু যুদ্ধ করেছেন ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শ্রেণিবৈষম্য ও নিরক্ষতার বিরুদ্ধে। বাঙালি জাতিকে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। রক্তস্নাত স্বাধীন বাংলাদেশকে তিনি গণতন্ত্রের আস্বাদ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেন। নারীসমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে এক টগবগে রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসন, লুটপাটের পর সিপাহি-জনতার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে ক্ষমতায় এসে স্বল্প সময়ের শাসনকালে তিনি বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছিলেন।
৩০ মে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতে গোটা জাতি শোকাভিভূত হয়ে পড়েছিল। এ শোকের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল শেরেবাংলানগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজায়। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। আজ এক প্রতিকূল সময়ে পালিত হচ্ছে এ মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী।
বিএনপির বাণী : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে এক বাণী দিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলটির সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত এ বাণীতে বলা হয়—বিএনপির স্থপতি, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের কালজয়ী দর্শনের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকীতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে। একই সঙ্গে দলটি শহীদ জিয়ার অম্লান আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচিকে সমুন্নত রেখে এর ভিত্তিতে সংগ্রাম পরিচালনা এবং বাস্তবে রূপায়িত করার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে।
বাণীতে বলা হয়, আমরা জাতির ঘোর দুঃসময়ে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতার অকুতোভয় ঘোষণা, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা, রাষ্ট্র গঠনে তার অনন্যসাধারণ কৃতিত্বের কথা গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে। জাতীয় জীবনের চলমান সঙ্কটে শহীদ জিয়ার আদর্শকে প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে বিএনপি সঙ্কট নিরসনে তার নির্দেশিত পথ অনুসরণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। জাতীয় স্বার্থ, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার সুরক্ষায় শহীদ জিয়ার দর্শনকে কেন্দ্র করে লৌহদৃঢ় গণঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে বিএনপি।
শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তার অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী সব স্তরে ব্যাপকভাবে ও যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে এবং নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ সব স্তরের সর্বসাধারণের প্রতি বিএনপি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।
কর্মসূচি : জিয়ার ৩১তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল অনুষ্ঠিত বিএনপির আলোচনা সভার মাধ্যমে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আজ ভোরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সহযোগী সংগঠন কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শোকাবহ এ দিনটির কর্মসূচি শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। দিনভর শোকের প্রতীক কালোব্যাজ ধারণ করবেন দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী। সকাল থেকে শেরেবাংলানগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে কোরআন খতম শুরু হবে। সকাল ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে শরিক হবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এছাড়া একই সময় ড্যাব-এর উদ্যোগে মাজার প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ড্যাব-এর উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করা হবে।
মাজার প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল। সকাল থেকে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে শহীদ রাষ্ট্রপতির রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল, কোরআন খতম, বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি : রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০ ও ৩১ মে এবং ১ ও ২ জুন ঢাকা মহানগরীতে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র নেতারা। প্রথমে মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকায় খাদ্য বিতরণের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে। ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব ও দলের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম জানান, দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের ৪ দিনের কর্মসূচি রয়েছে। এবার খাবার বিতরণ করবেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র নেতারা। তিনি জানান, ৪ দিনে প্রায় দেড়শ’ স্পটে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন আলাদা আলাদা পোস্টার প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোয় জিয়ার কর্মময় জীবনের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের কথা রয়েছে।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আজ শহীদ জিয়ার ৩১ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী



স্বাধীনতা যুদ্ধের সুমহান ঘোষক , বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা , সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দানকারী , গন মানুষের প্রান প্রিয় নেতা ,আমার আদর্শশের সু মহান শিক্ষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রাহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে গভীর শ্রধাঞ্জলী






সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সাংবাদিকরা মার খেতেই থাকবেন



আতাউস সামাদ
সাংবাদিকতা সম্পর্কে ব্রিটেনের একটা বইতে পড়েছিলাম, গণমাধ্যমের দায়িত্বগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা কর্তব্য হচ্ছে 'ধফাবত্ংধত্রধষ ত্ড়ষব' বা প্রতিপক্ষের ভূমিকা পালন করা। এ ক্ষেত্রে অপর পক্ষ বলতে মূলত সরকারকে বোঝানো হচ্ছিল। কারণ একটা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে সাধারণত দেশের সরকার।
তবে দেশে দেশে সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সরকার ছাড়াও গণমাধ্যমকে অন্য আরও কয়েকটি মহলের প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়, যেমন রাজনীতিবিদদের, কারণ তারাই একটি দেশের প্রধান নীতিনির্ধারক, বড় ব্যবসায়ীদের বা ব্যবসায়িক করপোরেশনগুলোর, কারণ এরা মুনাফা কামাতে গিয়ে অনেক সময়ই জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়, আর ক্রাইম সিন্ডিকেট বা অপরাধী চক্রের, কারণ এরা অস্ত্র ও নিষ্ঠুরতার দ্বারা ত্রাস সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। এও দেখা গেছে যে, অপরাধী চক্র বা ক্রাইম সিন্ডিকেটগুলো পুলিশ বাহিনী ও বিচার বিভাগের কিছু লোককে কিনে রাখে, যাতে তারা আইন ও আদালতের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে।
অন্যদিকে গণমাধ্যমগুলোর কাজের মূল ক্ষেত্রই হচ্ছে জনগণ এবং তাদের কাজ হচ্ছে জনস্বার্থে সত্য প্রকাশ করা। তাই শুধু বিনোদন পরিবেশনকারী মাধ্যমগুলো ছাড়া অন্য সব ধরনের পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন, রেডিও এবং অন-লাইন সাইটগুলোকে প্রায় রোজই কারও না কারও প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতেই হয়। এর কারণ খুব সোজা। ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, দুর্নীতিপরায়ণ, অন্যায়কারী এবং জঘন্য অপরাধীদের বেআইনি কাজকর্মের তথ্য ফাঁস করা মানেই প্রকৃত সত্য প্রকাশ করা।
অবশ্য বাংলাদেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে কিন্তু গণমাধ্যমগুলো যে কার প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে সেটা বাছবিচার করার অবকাশ তেমন একটা আর নেই, কারণ বর্তমান সরকারই জানিয়ে দিয়েছে যে সাংবাদিকরা তার প্রতিপক্ষ। ইদানীং সবাই দেখতে পারছেন ক্ষমতাসীনরা ঘনঘন প্রকাশ্য বার্তা পাঠাচ্ছে যে, গণমাধ্যম ভুল আর মিথ্যার বেসাতিতে নেমেছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং সাংবাদিকরা নিজ স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য মিথ্যা কথা বলছে। বর্তমান সরকারের দু-তিনজন মন্ত্রী প্রায়ই একথাগুলো বলছেন। ক্ষমতাসীন দলের পেশিশক্তিওয়ালা সদস্য ও সমর্থকরা যখনই প্রয়োজন মনে করছেন তখনই সাংবাদিকদের পিটিয়ে, কুপিয়ে গুরুতর আহত করে হাসপাতালে ঢুকতে বাধ্য করছেন আর পুলিশ তো সাংবাদিকদের অবাঞ্ছিত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। গত শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পলিটেকনিক ছাত্রীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের ছবি তুলতে গেলে প্রথম আলো পত্রিকার তিনজন ফটো সাংবাদিক ও একজন প্রদায়ককে লাঠির ঘা, কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে ধরাশায়ী করে একদল পুলিশ। শহীদুল ইসলাম নামে যে পুলিশ কর্মকর্তা ওই প্রহার-অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন, তিনি হুকুমটা দেয়ার সময় লাঠি ও বুট-সজ্জিত কনস্টেবলদের বাড়তি উত্সাহ দিয়ে চিত্কার করতে থাকেন, ‘পেটা, শালাদের পেটা, কত সাংবাদিক পিটিয়েছি। সাংবাদিক পেটা। সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না।’ দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার শহীদুল ইসলামের ওই প্রকাশ্য ঘোষণা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী দেশের সাংবাদিকদের সম্পর্কে যে মনোভাব পোষণ করে তার সত্যিকার প্রতিফলন। আর পুলিশের এই দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টিতে দারুণভাবে সহায়তা করেছে সরকারের আচরণ ও চণ্ডনীতি। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর দুই পুলিশ কর্মকর্তার বর্বর ও নৃশংস হামলার কথা। বিরোধী দলের একটা হরতাল চলার সময় সংসদ এলাকার মধ্যেই দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বাহিনী নিয়ে জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় পুলিশের ভ্যান থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায়। তারপর এই বিএনপি নেতাকে জ্ঞানহীন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দিনকয়েকের ভেতর সুচিকিত্সার জন্য তাকে নিউইয়র্ক যেতে হয়। বিদেশ যাওয়ার সময় জামিন পেতে তাঁকে স্ট্রেচারে করে হাইকোর্টে নিতে হয়েছিল। এত কিছুর পরও জাতীয় সংসদের স্পিকার বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছেন বলে শুনিনি। আর অন্যদিকে ওই দুই বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এ যেন তাদের কাপুরুষোচিত অভিযানের পুরস্কার। সাংবাদিক-পেটানো এসি শহীদুল ইসলামও পুরস্কৃত হবেন বলে আশা করতে পারেন। তাঁর পদোন্নতি না হয়ে যদি কোনো শাস্তি হয় তাহলে আমরা যারপরনাই বিস্মিত হবো। আমাদের জন্য সেটাই হবে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে ওই নৃশংস পুলিশ কর্মকর্তা ও তার সহযোগীদের যদি শাস্তি হয় তাহলে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে দ্বিধা করব না।
পুলিশ যে দুরাচরণ ও অত্যাচার করে এবং সেজন্য যে তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না তার আরেক জাজ্বল্যমান উদাহরণ আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। দুই বছর আগে এক রাতে পুলিশ আমার দেশ পত্রিকা অফিস থেকে শক্তি প্রয়োগ করে ধরে নিয়ে যায় তাঁকে। গ্রেফতার অবস্থায়ও তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা দেয়। তারপর তাঁকে রিমান্ডে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিয়ে গিয়ে গভীর রাতে কয়েকজন মুখোশধারীর হাতে তুলে দেয়া হয়। তারা তাঁকে বিবস্ত্র করে যে দৈহিক নির্যাতন চালায় তাতে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। বর্তমান সরকার আজ পর্যন্ত বলতে পারেনি যে, তারা এই বেআইনি কর্মের কোনো তদন্ত করেছে। অথচ তাঁকে গভীর রাতে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করায় আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দিয়ে রেখেছে এবং অভিযুক্তরা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত চিকিত্সক ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মহাসচিব ডা. জাহিদ হোসেনকে পুলিশ এক সন্ধ্যায় তাঁর চেম্বার থেকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল তা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট—এমনকি এজাহারে যে অন্য একজনের নাম কেটে তাঁর নাম বসানো হয়েছিল তাও ছিল স্পষ্ট। তবুও পুলিশের হয়ে সরকার পক্ষের উকিল তাঁকে ৫৬ দিনের রিমান্ডে দেয়ার দাবি করেছিলেন। কিন্তু মামলার কাগজপত্রেই পুলিশের মিথ্যাচারের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট সদয় হয়ে তাঁকে জামিন দেন। সরকার কি ওই মিথ্যা মামলা করার জন্য কোনো পুলিশের কাছ থেকে কৈফিয়ত নিয়েছে? নেবে বা কেন? ওই মামলা তো আসলে হয়েছিল সরকারের কোনো না কোনো কর্তাব্যক্তির ইশারায়। অতি সম্প্রতি পুলিশ ঢাকার ৭৪নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেত্রী রেহানা আক্তার ডলিকে গ্রেফতার করে। তারপর দিন তাঁকে আদালতে নিয়ে গেলে দেখা যায় তার শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন। তিনি তখন হাঁটছিলেন অতিকষ্টে। একজন সুস্থ নারী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এ রকম গুরুতর আহত হলেন কীভাবে সরকার কি জানতে চেয়েছে এ পর্যন্ত?
সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনির হত্যাকাণ্ডের কথা এখনও দেশের ঘরে ঘরে উচ্চারিত হয়। তাদের খুন করার খবর আজও বহির্বিশ্বের গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পুলিশের তদন্তে ব্যর্থতার বড় উদাহরণ এটা। তবুও এই জোড়া খুন সম্পর্কে গণমাধ্যমের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মিডিয়ার লোকেরা সাগর-রুনির ফ্ল্যাটে ভিড় করায় আলামত নষ্ট হয়েছে। তিনি এও বলেছিলেন যে সরকারের পক্ষে সবার বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয়। একজন পুলিশ অফিসার পরে স্বীকার করেছেন যে, না, সব আলামত নষ্ট হয়নি, কিছু আলামত পাওয়া গেছে। আর হাইকোর্টের হুকুমে ওই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব র্যাবের হাতে যাওয়ার পর জানা গেল পুলিশ নিহত সাংবাদিক সাগর ও রুনির ভিসেরা পরীক্ষাই করেনি।
পুলিশ আরামে থাকতে পারে যারা সরকারে থাকেন তাদের খুশি রাখতে পারলেই। বিএনপি সরকারের আমলেও একই রকম ধারা দেখা গেছে। আর সেনাশাসক এরশাদ ও পরবর্তী অবৈধ মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময়কার তো কথাই নেই। বেগম জিয়ার প্রথম শাসনামলে, তার পূর্ববর্তী সেনাশাসক এরশাদ আমলের অনুসরণে পুলিশ বাহিনী জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢুকে সাংবাদিক পেটানোর মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা আমরা আজও ভুলতে পারিনি। ভোলা যায় না, একটা অনর্থক মামলা দিয়ে জনকণ্ঠ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক প্রবীণ সাংবাদিক তোয়াব খান ও পত্রিকার তত্কালীন নির্বাহী সম্পাদক প্রয়াত বোরহান আহমদকে গ্রেফতার করার কথা। একটা নির্বাচিত সরকারের আমলে ওই ঘটনাগুলো ঘটেছিল বলে আমাদের দুঃখটা বেশি। আর বর্তমানের নির্বাচিত সরকারটি আমাদের দুঃখ বাড়িয়েই চলেছে। এই সরকারের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বাংলাদেশে ১৪ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন। আর দেশের কোথাও না কোথায় সাংবাদিক নির্যাতনের খবর আসছে হরহামেশাই। আমাদের ভয় হচ্ছে, বর্তমান সরকার যেন সাংবাদিকদের নির্যাতন করাটা একটা কর্তব্য হিসেবে ধরে নিয়েছে। ফলে পুলিশ হোক, র্যাব হোক, সংসদ সদস্য হোক অথবা হোক দু’পয়সার ক্যাডার—সবাই যেন সাংবাদিক নিপীড়নকে একটা উত্সবে আনন্দদায়ক বিনোদন হিসেবে ধরে নিয়েছেন। দেখা যাক, সাংবাদিকদের সমষ্টিগত প্রতিবাদ এ পরিস্থিতি একটুও বদলাতে পারে কি-না!
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

বিডিনিউজ অফিসে সন্ত্রাসী হামলা : ১০ সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম



আবারও আক্রান্ত গণমাধ্যম। এবার জনপ্রিয় অনলাইন সংবাদ সংস্থা বিডিনিউজের সংবাদকর্মীদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা। সোমবার রাতে মহাখালীর আমতলী এলাকায় বিডিনিউজের কার্যালয়েই এই হামলা হয়। হামলায় অন্তত ১০ জন সংবাদকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে সাংবাদিকদের। রক্তে ভেসে যায় বিডিনিউজ কার্যালয়।
বিডিনিউজ জানায়, সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত সহ-সম্পাদক রিফাত নওয়াজ, প্রতিবেদক সালাউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতম এবং অফিস সহকারী রুহুল আমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমতলীর বন ভবনের পাশেই ৯৯ মহাখালীর পঞ্চম তলায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়। এর নিচ তলায়ই সন্ত্রাসীরা কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।
প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিকদের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুর হামলার জের কাটতে না কাটতেই আবারও এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটল। হামলায় আহত রিফাত ও প্রীতমের পায়ে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। তাদের নিচ তলা থেকে পঞ্চম তলায় আনার পরও পা থেকে রক্ত ঝরছিল। নিচ তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে ছিল ছোপ ছোপ রক্ত। তাদের সঙ্গে অফিস সহকারী রুহুল আমিনকেও গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অস্ত্রোপচার কক্ষে নেয়া হয়েছে। তবে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, অনলাইন এই সংবাদ সংস্থার নতুন
কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে অফিস সহকারী রুহুল আমিন নিচে অবস্থানকালে রাত সাড়ে ৮টার দিকে এক সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়। রুহুল আমিনের ছুরিকাঘাতের কথা শুনে কার্যালয়ে দায়িত্বরত সাংবাদিকরা নিচে গিয়ে ওই সন্ত্রাসীকে আটকে পুলিশে খবর দিলে তার সঙ্গীরা জড়ো হয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার শিকার হন বিডিনিউজের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মহসীনুল করিমসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ের নিচ তলার শাটার খুলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা ভবনের নিচে থাকা সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। ভাংচুর হয়েছে স্থানান্তরের জন্য নিচে রাখা মালপত্রও। খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।
গুলশান জোনের পুলিশের ডিসি খন্দকার লুত্ফুল কবীর আমার দেশ-কে বলেন, ‘ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’ সন্ত্রাসীদের ধরতে কয়েকটি টিম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদকের প্রতিক্রিয়া : বিডিনিউজের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আকস্মিকভাবেই এ ঘটনা ঘটে। আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের ৭-৮ জন কর্মীকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তাদের সবাইকে নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারে তা কল্পনাতেও ছিল না। কোনো কিছুই আঁচ করা যাচ্ছে না কেন এই হামলা।’
খালিদী বলেন, ‘আমরা উপরে নিউজরুমে ছিলাম। হঠাত্ করেই আমাদের দুই সহকর্মী সহ-সম্পাদক রিফাত নেওয়াজ এবং প্রতিবেদক সালাহউদ্দিন ওয়াহিদকে রক্তাক্ত অবস্থায় অফিসের ভেতরে ঢুকতে দেখি। এতে সবাই হতবাক হয়ে যাই। তারাই জানায় একদল সন্ত্রাসী তাদের ভবনের ভেতরে ঢুকে ছুরিকাহত করেছে। এ সময় অন্য সহকর্মীরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয় সন্ত্রাসীরা। আরও ৫-৬ জন তাদের ছুরিকাঘাতে আহত হন।’
কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা যাচ্ছিল না বলে উল্লেখ করে খালিদী বলেন, দ্রুত পুলিশ ডাকা হলে তারা ঘটনাস্থলে আসে। তবে হামলাকারীদের আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় দ্রুত মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার নিন্দা : বিডিনিউজ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিরোধী দলীয় নেতা।
গত রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই ঘটনা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং সাংবাদিকদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলার আরেকটি ন্যক্কারজনক নজির। এতে প্রমাণ হচ্ছে যে, দেশে আজ কারও কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি আহতদের সুচিকিত্সার দাবি জানান এবং তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
ঘটনার পরপরই বিডিনিউজের সংবাদকর্মীদের সহমর্মিতা জানাতে বেগম খালেদা জিয়া তার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানকে বিডিনিউজ কার্যালয়ে পাঠান।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিন্দা : জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অফিসে দৃর্বৃত্তদের হামলায় বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং দৃর্বৃত্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। প্রেস ক্লাব নেতারা বলেন, সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও থেকে সাংবাদিক নির্যাতনের খবর আসছে।
নেতারা বলেন, কয়েকদিন আগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রথম আলোর তিনজন ফটোসাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এর আগে পাবনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ভাতিজা দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিককে হাত ভেঙে দিয়েছে। গফরগাঁয়ে ক্ষমতাসীন দলের এমপি পিস্তল উঁচিয়ে জনগণকে গুলি করতে উদ্যত হলে সেই ছবি সংবাদপত্রে ছাপিয়েছিলেন সাংবাদিকরা। এজন্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এ ধরনের ঘটনা অসহিষ্ণু আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা মনে করি বিচার না হওয়ার কারণেই একের পর এক ঘটনা ঘটছে।
সারাদেশের প্রেস ক্লাবগুলো এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে বিবৃতি দিয়েছে।

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সমর যোদ্ধা থেকে রাষ্ট্রনায়ক,জয়ী মানব শহীদ জিয়া!!!!!!!



by Abdul Aziz on Tuesday, 29 May 2012 at 05:57 ·
এনেছিলে সাথে করে মৃত্যহীন প্রান মরনে তাই  তোমি করে গেলে দান।
জিয়াউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন  ১৯৩৬  সালের  ১৯ জানুয়ারী, বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে৷ পিতা মনসুর রহমান ও মাতা জাহানারা খাতুন৷ মনসুর রহমান ছিলেন রসায়নবিদ, মাতা জাহানারা খাতুন ছিলেন গৃহিণী এবং রেডিও পাকিস্তানের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী৷ জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল৷ মনসুর রহমান-জাহানারা খাতুন দম্পত্তির পাঁচ পুত্রের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়৷ অন্যান্যরা হলেন- রেজাউর রহমান (বকুল), মিজানুর রহমান, খলিলুর রহমান (বাবলু), আহমদ কামাল (বিলু) ৷
শৈশবের একটা বড় সময় জিয়াউর রহমানের কেটেছে কলকাতার পার্ক সার্কাসে৷ সেখানে তিনি প্রায় বার বছর ছিলেন৷ চার বছর বয়সে তাঁর প্রাথমিক শিা শুরু হয় পার্ক সার্কাসের আমিন আলী এভিনিউতে অবস্থিত শিশু বিদ্যাপীঠে৷ এক বছর ওই স্কুলে পড়ার পর বিশ্বযুদ্ধের কারণে জিয়াউর রহমানের পরিবারকে কলকাতা ছেড়ে বগুড়ার গ্রামের বাড়িতে চলে আসতে হয়।এই সময় তিনি বাগবাড়ী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এই স্কুলে তিনি বছর দু'য়েকের মতো পড়াশুনা করেন৷ পরে বাবা-মায়ের একান্ত ইচ্ছায় তিনি ১৯৪৪ সালে পুনরায় কলকাতায় চলে যান৷ ওই বছরই কলকাতার কলেজ স্ট্রীটের হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন৷ জিয়াউর রহমানের বড়ভাই রেজাউর রহমানও একই স্কুলে পড়তেন, দুই কাস উপরে৷ সেসময় তাঁদের বাবা মনসুর রহমান কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে কলকাতার মিনিস্ট্রি অব সাপ্লাইড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-এর অধীনে টেস্ট হাউজে (টেস্টিং ল্যাবরেটরি) রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন৷ মনসুর রহমান ১৯২৮ সাল থেকেই এই সংস্থায় কাজ করতেন।

ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অঙ্গনে তখন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে৷ দেশ বিভাগের পথে৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হলে মনসুর রহমান পরিবার নিয়ে করাচি চলে যান৷ থাকতেন জ্যাকব লাইনে৷কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানের 'পাকিস্তান' প্রীতি কাটতে খুব বেশি সময় লাগল না৷ 'মুসলমান-মুসলমান ভাই ভাই' বলে যে বুলি চালু করা হয়েছিল তা আসলে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের শোষণের ভীতকে শক্তিশালী করারই একটা মোম অস্ত্র ছিল৷ এটা বাঙালি বুঝে ফেলে যে, এই অস্ত্র দিয়েই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রথম আঘাত করে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার উপর৷

মনসুর রহমানের পরিবার করাচি অবস্থানকালেই জিয়াউর রহমান ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই ভর্তি হলেন করাচি একাডেমী স্কুলে৷ যার বর্তমান নাম তাইয়েব আলী আলভী একাডেমী৷ ১৯৫২ সালে এই একাডেমী স্কুল থেকেই তিনি মেট্রিক পাশ করেন৷ পরে ভর্তি হন ডি.জে. কলেজে৷ এই কলেজে একবছর পড়ার পর ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসাবে যোগ দেন৷ ১৯৫৫ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন পান৷ এ সময় তিনি অত্যন্ত কষ্টকর ও ধীরবুদ্ধি সম্পন্ন কমান্ডো ট্রেনিং গ্রহণ করেন৷ ১৯৫৭ সালে জিয়াউর রহমান ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন৷ ১৯৫৯ সালে তিনি সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন৷ ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত অত্যন্ত সততার সাথে তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ সালে শুরু হয় পাক-ভারত যুদ্ধ৷ এই যুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান ফাস্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমান্ডার হয়ে সামরিক যুদ্ধে অংশ নেন৷ তিনি তাঁর কোম্পানী নিয়ে লাহোরের খেমকারান সেক্টরে সরাসরি শত্রুর মোকাবেলা করেন৷ তাঁর এই কোম্পানীর নাম ছিল 'আলফা কোম্পানী'৷ পাক-ভারত যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য 'আলফা কোম্পানী' ব্যাটালিয়নের সর্বোচ্চ পুরস্কার লাভ করে৷ রনাঙ্গণে তাঁর এই বীরত্বের জন্য তাঁকে ১৯৬৬ সালের জানুয়ারী মাসে পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে একজন প্রশিকের দায়িত্বভার দিয়ে পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে পাঠানো হয়৷ দীর্ঘদিন প্রশিকের দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে পূর্ব পাকিস্তানের জয়দেবপুর সাব-ক্যান্টনমেন্টের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসাবে তিনি নিযুক্ত হন।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসার ও বাঙালি অফিসারদের বৈষম্য কারোরই চোখ এড়ায়নি৷ বাঙালি অফিসাররা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সব সময়ই অবহেলিত; শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতেন তারা৷ জিয়াউর রহমান যখন জয়দেবপুর সাব-ক্যান্টনমেন্টে বদলি হয়ে এলেন সেই ব্যাট্যালিয়নের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন লে. কর্নেল আব্দুর কাইয়ুম নামে একজন পশ্চিম পাকিস্তানি৷ তিনি ছিলেন প্রচন্ড বাঙালি বিরোধী৷ 'বাঙালিরা সব সময়ই নীচে ও পদদলিত হয়ে থাকবে'-এটাই ছিল তার নীতি৷ ময়মনসিংহের একটি সমাবেশ লে. কর্নেল আব্দুর কাইয়ুম একদিন সে কথা প্রকাশও করে ফেলেন৷ তিনি বলেন, 'বাঙালিরা দিনে দিনে বড় বাড়াবাড়ি করছে৷ এখনো যদি তারা সংযত না হয় তাহলে সামরিক বাহিনীর সত্যিকার ও নির্মম শাসন এখানে দেখানো হবে৷ তাতে ঘটবে প্রচুর রক্তপাত৷' লে. কর্নেল আব্দুর কাইয়ুমের এই বক্তব্যে জিয়াউর রহমান খুব মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হন। ১৯৬৯ সালেই জিয়াউর রহমান চারমাসের জন্য উচ্চতর সামরিক প্রশিণের জন্য জার্মানীতে যান।

এদিকে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে গোটা ষাটের দশক উত্তাল রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে৷ '৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, '৬৪-র শ্রমিক আন্দোলন, '৬৬-র ছয় দফা, ছাত্র সমাজের এগার দফা নানা দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিপুষ্ট হয়ে পড়েছে৷ কেউ কেউ স্বায়ত্তশাসনের দাবি বাদ দিয়ে সরাসরি স্বাধীনতার দাবিই উত্থাপন করেন৷ পাকিস্তানের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তখন ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান৷ তার 'মৌলিক গণতন্ত্রে' এসব 'স্বায়ত্তশাসন' বা 'স্বাধীনতা'র কোনো স্থান নেই৷ পূর্ব পাকিস্তানের জেলখানাগুলো ভরে উঠতে থাকে স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক বন্দিদের আটকের কারণে৷ অন্যদিকে রাজপথেও জ্বলতে থাকে আগুন৷ পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নির্মম বুলেটে রাজপথে ঝাঁঝরা হয়ে পড়ে থাকে অগণিত ছাত্র-যুবক-শ্রমিক-পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষের লাশ৷ তবু পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা দমবার পাত্র নয়৷ তারা ধীর পায়ে এগিয়ে চলে স্বাধীনতার দিকে৷

জার্মানী থেকে ফিরে আসার পর পরই ১৯৭০ সালের শেষের দিকে জিয়াউর রহমানকে চট্টগ্রামে বদলি করে দেয়া হয়৷ তখন সেখানে সবেমাত্র অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট খোলা হচ্ছিল৷ সেই রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ডের দায়িত্ব পান তিনি৷ চট্টগ্রামের ষোলশহর বাজারে ছিল অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঘাঁটি৷ রেজিমেন্টের কমান্ডার ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানি লে. কর্নেল জানজোয়া৷

১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ ঘোষণা করে৷ এবং বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত রাখে৷ বিদ্রোহের পর জিয়াউর রহমানের অনুসারি লে. কর্নেল হারুন আহমদ চৌধুরী ২৬ মার্চ রাত সাড়ে তিনটার একটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, 'আমি যখন চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭/৮ মাইল দূরে ছিলাম তখন দেখলাম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কয়েকজন সৈন্য পটিয়ার দিকে দৌড়াচ্ছে৷ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম- পাক বাহিনী আক্রমণ করেছে এবং মেজর জিয়া সহ ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বিদ্রোহ করেছে৷ তাঁরা পটিয়াতে একত্রিত হবে৷ আমি আরো কিছুদূর অগ্রসর হলে মেজর জিয়ার সাাত পাই৷' তিনি বললেন, 'আমরা ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পটিয়ায় একত্রিত হবো, তারপর শহরে এসে আবার পাল্টা আক্রমণ চালাব৷ তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে থাকতে বললেন৷ আমি মেজর জিয়ার সঙ্গে থেকে গেলাম এবং পরবর্তীতে তাঁর কমান্ডে কাজ করি৷'

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও দেশ গড়ায় জিয়ার অবদান
১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবের গ্রেফতারের সময় সারা বাংলায় চলছিল অকথ্য নির্যাতন, অবর্ণনীয় অত্যাচার, সীমাহীন ধ্বংসলীলা ও হত্যাযজ্ঞ। এই চরম বিভীষিকাময় মুহূর্তে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছিল। সেই সময় কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের সামনে দৃশ্যমান ছিল না, যার মাধ্যমে ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ ভরসা পেতে পারে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণে যে যেখানে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মানুষ সুশৃঙ্খল পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করার মানসিক শক্তি ও সাহস পাচ্ছিল না। প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন সামরিক উপকরণ ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার।
একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে মোকাবিলা করতে দরকার অন্য একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর, দরকার অস্ত্রশস্ত্র ও প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ, দরকার মানসিক শক্তি ও সাহসের—সবগুলো সমন্বয় হলেই একটি যু্দ্ধ করার প্রশ্ন আসে, তৈরি হয় যুদ্ধের পরিবেশ। ঠিক এমনই এক সন্ধিক্ষণে মেজর জিয়া জীবন বাজি রেখে, সপক্ষ ত্যাগ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিদ্রোহ করেন, ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শুরু হয় গেরিলা যুদ্ধ।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোর বেলা, সদ্য স্থাপিত চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের উদ্যোক্তা বেলাল মোহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা বেতার কেন্দ্রের নিরাপত্তা চান তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ক্যাপ্টেন (পরে মেজর) রফিকুল ইসলামের কাছে; কিন্তু তিনি কথা দিয়েও কথা রাখতে পারেননি। পরদিন বেলাল ও তার বন্ধুরা জানতে পান চট্টগ্রামের পটিয়াতে অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা বিদ্রোহ করে অবস্থান নিয়েছে, তাদের অধিপতির নাম মেজর জিয়া; বেলাল ও তার সঙ্গীরা ছুটে জান জিয়ার কাছে।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ তার ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা—জিয়াকে খ্যাতির শীর্ষে উঠিয়ে দেয়। জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল সাহসিকতাপূর্ণ ও সুচিন্তিত প্রচেষ্টার ফসল। জিয়ার ঘোষণা দেয়ার সময় চট্টগ্রামবাসী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খোঁজ পেয়ে যায়। তাছাড়া জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা ভারত কর্তৃক সারা দুনিয়ায় সম্প্রচারিত হয়। এভাবে মেজর জিয়া সর্বত্র এক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হন।

জিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার হয়ে এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিদ্রোহ করে একদিক দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিয়েছেন, অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সব অফিসার ও জোয়ানের মনোবল বৃদ্ধি করেছেন। এভাবেই জিয়া একটি সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিরোধ ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। একটি পৃথক রাষ্ট্র তৈরির জন্য আলাদা সেনাবাহিনীর কাঠামো তৈরি হয় এখান থেকেই। এটিই ছিল একটি পৃথক রাষ্ট্র তৈরির জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরুর অত্যন্ত কঠিন ধাপ। জিয়া এই ধাপ অতিক্রম করতে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন, শুরু হয় সর্বব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ। দেশের স্বাধীনতা ঘোষণার গৌরব জিয়াকে মহিমান্বিত করে রাখবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জিয়া একজন কিংবদন্তির নায়ক হয়ে থাকবেন। জিয়ার সৈনিক জীবনের এসব তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসেও অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

বহু দলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার শহীদ রাস্টপতি জিয়াউর রহমানের ৩১তম শাহাদত বার্ষিকীতে
জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী ও তিনির রুহের মাগফেরাত কামনা করি..................আমীন।
২৯/০৫/২০১২

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

কেমন আছেন কারাবন্দি শীর্ষ নেতারা : খোকা হাসপাতালে, রিজভী অসুস্থ : লোডশেডিংয়ে কাবু সবাই



কারাগারে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন ১৮ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান এমপিসহ কারাবন্দি শীর্ষ রাজনীতিকরা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ডিভিশনপ্রাপ্ত নেতারা লোডশেডিং ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। বাকিরা দুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতায় জীবন কাটাচ্ছেন। অসুস্থ হয়ে গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। নানা রোগযন্ত্রণায় থাকলেও সুচিকিত্সা মিলছে না দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর।
এদিকে ঢাকার বাইরে পাঠানো তিন নেতা কারাগারে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের কারাগারের দুঃসহ জীবনের চিত্র তুলে ধরতে আজ সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করবে তাদের পরিবারের সদস্যরা। শীর্ষ নেতাদের জামিনের জন্য আজ হাইকোর্টে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
গত ২৯ এপ্রিল হরতাল চলাকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অদূরে একটি বাসে আগুন দিয়ে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগে তেজগাঁও থানা পুলিশ বিএনপির শীর্ষ ৪৫ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় ৪২ নেতাকে কারাবন্দি করা হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম এমপি, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ এমপিকে গাজীপুরে কাশিমপুর কারাগারে ডিভিশনে রাখা হয়েছে। বিদ্যুতের বেসামাল পরিস্থিতি ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে এম কে আনোয়ার এমপিসহ সবাই দুর্বল হয়ে পড়ছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। গতকাল তাদের স্বজনরা কারাগারে সাক্ষাত্ করেন।
এদিকে একই কারাগারে হাইসিকিউরড সেলে দাগি আসামিদের সঙ্গে রাখা হয়েছে ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে। এছাড়া জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমসহ অনেকে সাধারণ সেলে রয়েছেন। প্রচণ্ড গরমে ফ্যান না থাকায় তারা দুর্ভোগে রয়েছেন বলে তাদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন।
সবচেয়ে কষ্টে আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কেন্দ্রীয় কারাগারের সাত নম্বর সেলে অসুস্থ হয়ে দিনাতিপাত করছেন তিনি। শরীরে গুলিবিদ্ধ হওয়া স্থানে ফোসকা পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন রিজভী। সঙ্গে দেখা দিয়েছে গ্যাস্ট্রিক। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত তাকে অব্যাহত স্যালাইন দেয়া হলেও কারা চিকিত্সকরা কেবল ট্যাবলেট ও ইনজেকশন দিচ্ছেন। তার স্ত্রী আরজুমান্দ আরা রিজভী অবিলম্বে তাকে কারাগারের বাইরে কোনো হাসপাতালে সুচিকিত্সার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে অসুস্থ হয়ে পড়লে গতকাল কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাকে। বেলা সাড়ে ১১টায় হঠাত্ অসুস্থ হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার প্রস্রাবের থলিতে টিউমার হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি কিডনি, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। তাকে ইউরোলজি বিভাগে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কারাগারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও ডায়াবেটিকসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন বলে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
ময়মনসিংহ কারাগারে স্থানান্তর করায় সবচেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম। তাকে ফাঁসির আসামিদের সেলে রাখা হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন। সেখানে একা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। কোনো ফ্যান নেই। ঘুমানোর বিছানা নেই। খাবারে দুর্গন্ধ। ওই কারাগারে ডিভিশনের কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই। তবে তাকে সবচেয়ে ভালো কক্ষে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন জেলার শফিকুল আলম।
এছাড়া কুমিল্লা কারাগারে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান। তাদের ডিভিশন দেয়া হলেও ঢাকার বাইরে নেয়ায় সার্বক্ষণিক শঙ্কার মধ্যে সময় কাটছে বলে জানিয়েছেন আমানের পরিবার। গতকাল আমান উল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমান সাক্ষাত্ করলেও আর কোনো আত্মীয়স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
ময়মনসিংহ কারাগারে নাজিমুদ্দিনের সঙ্গে স্ত্রীর সাক্ষাত্ : ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলমের সঙ্গে গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহ কারাগারে সাক্ষাত্ করেছেন তার স্ত্রী ও স্বজনরা। সাক্ষাত্কারীদের মধ্যে রয়েছেন -নাজিমুদ্দিন আলমের স্ত্রী শওকত আরা নাজিম, ছোট বোন ধানমন্ডি থানা মহিলাদলের আহ্বায়ক শামসুন্নাহার চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা নুরুজ্জামান ও নাজিমুদ্দিন আলমের একান্ত সচিব সুশান্ত বিপ্লব। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, কোতোয়ালী বিএনপি সভাপতি কামরুল ইসলাম মো. ওয়ালিদ, নগর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম মাহবুব, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজা-উদ-দৌলা সুজা নাজিমুদ্দিন আলমের সঙ্গে কারাফটকে দেখা করেন।
সাক্ষাত্ শেষে নাজিমুদ্দিন আলমের স্ত্রী শওকত আরা নাজিম জানান, একা নাজিমুদ্দিন আলমকে ময়মনসিংহ কারাগারে স্থানান্তর করায় তিনি নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন। তার ওপর মানসিক টর্চার করা হয়েছে। এছাড়াও ডিভিশন না দিয়ে ফাঁসির আসামির সেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শওকত আরা নাজিম। তিনি বলেন, যে সেলে তাকে রাখা হয়েছে তাতে বিছানা-বালিশ ও একটা ফ্যান পর্যন্ত নেই।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার শফিকুল আলম জানান, অভিযোগ সঠিক নয়। তাকে ডিভিশনসহ প্রথম শ্রেণীর বন্দি হিসেবে সবরকম সুবিধা দেয়া হয়েছে।
ছাত্রদল নেতাদের কারাগারে নির্যাতনের অভিযোগ : ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমকে কারাগারের কনডেম সেলে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। এছাড়া ছাত্রদলের তেজগাঁও কলেজ সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ ও তিতুমির কলেজ সভাপতি ইসমাইল হোসেন শাহীনকে গ্রেফতারের পর পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে কারাগারে অমানবিক জীবন কাটালেও তাদের চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়।
গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুল সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান শিমুল। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হায়দার আলী লেলিন, দুলাল হোসেন, ওমর ফারুক সাফিন, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল হক রয়েল, শহীদুল্লাহ ইমরান, আনোয়ার হোসেন টিপু প্রমুখ।
শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ছাত্রদল সভাপতি ও ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদককে জেল কোড অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য কোনো সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। যা খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত। সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে কনডেম সেলে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, দাগী আসামিদের যে কনডেম সেলে রাখা হয়, সেখানে একজন ছাত্রনেতাকে রেখে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
আমিরুজ্জামান খান শিমুল কারাবন্দি নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। লিখিত বক্তব্যে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ছাত্রদলের উদ্যোগে শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হবে। এতে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আনন্দবাজারের খবর : জমির দাবি নিয়ে ভারতের হিন্দুরা আসছে বাংলাদেশে



দেশ ভাগের সময় ভারতে চলে যাওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের জমিজমার দাবি নিয়ে আগামী মাসে বাংলাদেশে যাচ্ছেন বলে ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আনন্দবাজার জানিয়েছে। গতকাল প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ করায় এসব জমির দাবিদারদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিলে তার সঙ্গেও দেখা করতে চান। সম্পত্তি ফেরত সংক্রান্ত বিষয়টি দেখাশোনার জন্য আন্তর্জাতিক একটি সলিসিটর ফার্মের সঙ্গে কথাবার্তাও বলা হচ্ছে। গতকাল খবর দিয়েছে ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা। এ সিদ্ধান্ত ভূমি বিষয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতে স্থানাস্তর হওয়া অধিকাংশ হিন্দু তাদের জমি এক বা একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে। তারা ফের ওইসব জমি দাবি করলে এসব নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দেবে।
বাংলাদেশে দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তির দাবিদারদের সংগঠন ‘সোসাইটি অফ এনিমি অ্যান্ড ইভাকুই প্রপার্টিজ ইন বাংলাদেশ’-এর সম্পাদক শচীপতি মৈত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, দীর্ঘ আন্দোলনের পর এই প্রথম তারা হিন্দুদের দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি ফেরতের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাড়া পেয়েছেন। তাদের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে দরবার করবেন। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করা হবে। ঢাকায় আইনজীবী নিয়োগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক একটি সলিসিটর ফার্মকেও দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
শচীপতি মৈত্র আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। দেশ ভাগের সময়ে প্রাণের দায়ে সম্পত্তি ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন—এমন অনেক পরিবার ভারতে রয়েছে। তারা সে সম্পত্তি ফিরে পেলে দু’দেশের সম্পর্ক আরও ভালো হবে।
শচীপতি মৈত্রের দেয়া তথ্যমতে পশ্চিমবঙ্গের বহু বিশিষ্ট মানুষের পারিবারিক সম্পত্তি বাংলাদেশে দখল হয়ে রয়েছে। শোভাবাজারের রাজবাড়ীর এমন প্রায় ৩ লাখ বিঘা জমি রয়েছে কুমিল্লায়। পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি ও জমির একাংশ দখলমুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকার সচেষ্ট হলেও এ জেলাতেই ঋত্বিক ঘটক-মহাশ্বেতা দেবীদের বহু সম্পত্তি দখলদারদের কবলে রয়েছে। দখল হয়ে আছে রাজশাহীতে রঞ্জিত মল্লিক, ময়মনসিংহে সত্যজিত্ রায়, স্নেহাংশু কান্ত আচার্য, বরিশালে মাধবী মুখোপাধ্যায়, ফরিদপুরে মৃণাল সেনের পারিবারিক বহু সম্পত্তি।
সম্পত্তি ফিরে পেতে হলে কী করতে হবে, তার একটি নির্দেশিকাও দিয়েছে আনন্দবাজার। তারা লিখেছে—আগে জানুন আপনার বাড়ি-জমি ‘ক’ না ‘খ’ তালিকায় রয়েছে। (সরকারের দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তি ‘ক’ তালিকায় এবং বেসরকারি দখলে থাকা অর্পিত সম্পত্তির বিবরণ রয়েছে ‘খ’ তালিকায়।) ‘ক’ তালিকায় থাকলে জেলা ট্রাইব্যুনাল এবং ‘খ’ তালিকায় থাকলে জেলা কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে হবে গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে। তবে সময়সীমা আরও ৩০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে মন্ত্রিসভা। আবেদনের শেষ তারিখের ১২০ দিনের মধ্যে জেলা ট্রাইব্যুনাল বা জেলা কমিটি আবেদন যাচাই, শুনানি ও তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে সুপারিশ পাঠাবে। জেলা প্রশাসক ৩০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে ৬০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করতে পারেন। কেন্দ্রীয় কমিটি ১২০ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করে সিদ্ধান্ত জানাবে। সে সিদ্ধান্তও মনঃপূত না হলে আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা যাবে। সে রায়ও সন্তোষজনক না হলে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে যাওয়া যাবে। আবেদনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলে বা দাবি বাতিল হলে অর্পিত সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হবে। সেই জমি বিক্রি বা ভাড়ার ক্ষেত্রে আগের ভোগদখলকারীই অগ্রাধিকার পাবেন।

শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ভয়ঙ্কর পথে বাংলাদেশ, ইকোনমিস্ট-এর রিপোর্ট



 বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী বৃটিশ সাপ্তাহিক দি ইকনোমিস্ট গতকাল আবারও বাংলাদেশের বিষাক্ত রাজনীতি বিষয়ে যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করে একটি নিবন্ধ ও একটি রিপোর্ট ছেপেছে। তবে এই প্রথম তারা বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতকে সরাসরি ভূমিকা রাখতে একটি নির্দেশনা দিল। নিবন্ধের শিরোনাম: ‘হ্যালো, দিল্লি।’ নিচে উপশিরোনাম: ‘বাংলাদেশকে ধ্বংস করা থেকে শেখ হাসিনাকে থামানোর দায় ভারতের।’ প্রতিবেদনের শিরোনাম: বাংলাদেশের হ-য-ব-র-ল রাজনীতি। (পলিটিক্স অব বাংলাদেশ: ব্যাঙড অ্যাবাউট)। নিচে উপশিরোনাম: ‘প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি ভয়ংকর পথে পরিচালিত করছেন।’
হ্যালো, দিল্লি নিবন্ধটির তরজমা অবিকল নিচে তুলে ধরা হলো: ‘বাংলাদেশে পাঞ্চ অ্যান্ড জুডি শো (চার শ বছর ধরে জনপ্রিয় ইতালীয় পাপেট শোকে বলা হয়, পাঞ্চ এ জুডি শো। পাঞ্চ ও জুডি স্বামী-স্ত্রী। তারা অত্যন্ত দাঙ্গা ও কলহপ্রিয় চরিত্র) চলছে। এর একটি চরিত্র শেখ হাসিনা। অন্যটি বেগম খালেদা জিয়া। দশকের পর দশক ধরে তারা নেতৃত্বে আছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর দিকে কমই সময় দেয়, কারণ কোন কিছুতেই পরিবর্তন আসে না। ১৭ কোটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট সরকারের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতিকরা তাদের ভাগ্য বদলাতে কোন আগ্রহই দেখাচ্ছেন না, তাই বাইরের লোকদের দেশটিকে নিয়ে ভাবা দরকার।
যখন নব্বই দশকে শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া পরস্পরের মধ্যে ক্ষমতার অদলবদল করতেন, তখন পরিস্থিতি বেশ খারাপ ছিল। কিন্তু গত দশকে পরিস্থিতি নিকৃষ্টরূপ নিয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া যে সরকারের নেতৃত্ব দেন, সেটি ছিল এক নিষ্ঠুর ক্লেপটোক্র্যাসি অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি ও লুটপাটের এক স্বর্গরাজ্য। এরপরে আসে সেনা সমর্থিত অনির্বাচিত টেকনোক্র্যাট সরকার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ এক ভূমিধস বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করে।  ৩০০ আসনের সংসদে আওয়ামী লীগ ২২৯ ও বিএনপি পায় ৩১ আসন। শেখ হাসিনা এই নিরঙ্কুশ বিজয়কে তার প্রকৃত ও কাল্পনিক শত্রু দমনে ব্যবহারে ব্রতী হন।
রহস্যজনকভাবে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসে বাসে অগ্নিসংযোগের দায়ে ৩৩ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধ আধুনিক ইতিহাসের মধ্যকার রক্তস্নাত যুদ্ধগুলোর অন্যতম। কিন্তু অভিযুক্তদের বিচার করতে গঠিত ট্রাইব্যুনালের সম্ভাব্য রায়ের উদ্দেশ্য এখন প্রতীয়মান হচ্ছে বিএনপি ও তার ইসলামী মিত্রদের হেয়প্রতিপন্ন করা। নোবেল জয়ী গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৭ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘তৃতীয় ধারা’ আনতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তার সেই হঠকারিতার জন্য এখন তাকে মাশুল দিতে হচ্ছে। এদিকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা ক্রমশ ভয়ভীতি ও হয়রানির শিকার। গণতান্ত্রিক চেতনাকে গতিশীল রাখতে সক্রিয় থাকা এনজিওগুলো এখন প্রস্তাবিত আইন নিয়ে শঙ্কিত। ওই আইনের ফলে তারা সরকারের খেয়ালখুশির শিকারে পরিণত হবেন।
গত বছরে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সরকার সংবিধান থেকে বাদ দেয়। সেই ব্যবস্থাটি অবশ্য আদর্শিক ছিল না। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে বিএনপি নির্বাচনে কারচুপি করবে বলে যে গ্রহণযোগ্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, তার পরিণতিতে সামরিক অভ্যুত্থান আসে। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ভরসা না পেলে তারা তা বয়কট করবে। সুতরাং এমনিতেই হরতাল-ধর্মঘটে জেরবার থাকা বাংলাদেশে সামনের দিনগুলোতে আরও বিক্ষোভ ধর্মঘট দেখা দেবে। বাংলাদেশের সামনে তাই রাজনৈতিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে রাস্তায় রাস্তায় আরও খারাপ ধরনের সংঘাত দেখা দিতে পারে।
ঢাকার একমাত্র কণ্ঠস্বর
বাইরের বিশ্ব তাদের কণ্ঠ তুলে ধরার চেষ্টা করছে। সন্দেহজনক দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক একটি বড় সেতুর (পদ্মা) চুক্তি বাতিল করেছে। ড. ইউনূসের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা তার নিন্দা করেছেন। হিলারি ক্লিনটন চলতি মাসে ইউনূসের পাশে দাঁড়াতে ঢাকায় ছুটে আসেন।
কিন্তু সরকার মনে হচ্ছে অসাড়। মিসেস ক্লিনটনকে জব্ধ করতে তারা এবারে গ্রামীণ ব্যাংক দখলে মালিকানাস্বত্ব পর্যালোচনার ঘোষণা দিয়েছে। সম্ভবত তারা ব্যাংকটিকে ধ্বংস করতে চায়।
ঢাকার ওপর প্রভাব খাটানোর মতো একটি দেশ রয়েছে। সেটি হলো ভারত। সামপ্রতিককাল পর্যন্ত আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত শেখ হাসিনা সরকারের বাড়াবাড়ি সহ্য করেছে। এর আংশিক কারণ হলো বাংলাদেশ জঙ্গি ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন চালিয়েছিল। ভারত দুই দলের মধ্যে তার বাজি ভাগাভাগি করছে। কিন্তু ঘরের দরজায় তারা যদি একটি ক্রিয়াশীল গণতন্ত্র দেখতে চায়, তাহলে তার স্বপক্ষে ভারতকে অনেক বেশি উচ্চ কণ্ঠে কথা বলতে হবে।’ 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

মানবাধিকার রিপোর্টে তোলপাড় : রাষ্ট্রের উলঙ্গ শক্তি প্রদর্শনে সৃষ্টি হয়েছে নারকীয় অবস্থা : বিচার বিভাগ অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণ হয়েছে : গুম ও হত্যার সংখ্যা বাড়ছে ভয়ঙ্কর হারে



বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তাকে ‘বিভীষিকাময়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। এসব রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সরকারি বাহিনী বিপুলসংখ্যক নাগরিককে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। অনেক নাগরিককে গুম করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুসহ নাগরিকদের ওপর রাষ্ট্রের উলঙ্গ শক্তি প্রদর্শনে নারকীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারদলীয় ক্যাডাররা। অবৈধভাবে নির্বিচারে গ্রেফতার প্রতিদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাওয়ার পথও বন্ধ করা হয়েছে। বিচার বিভাগকে ক্রমবর্ধমান এবং অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণের মাধ্যমে সরকারবিরোধীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথও রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২০১১ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বুধবার ও বৃহস্পতিবার রিপোর্ট তিনটি প্রকাশ করে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বগ্রাসী দুর্নীতি রাষ্ট্র ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে নানা উপায়ে। নারী, শিশু, সংখ্যালঘু, গার্মেন্টকর্মী, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীসহ প্রত্যেক শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপরই নেমে এসেছে অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কড়া সমলোচনা করা হয়েছে এসব রিপোর্টে। বলা হয়েছে, এখানে ন্যায়বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। এ অবস্থার অবসানের জন্য সরকার পরিবর্তনে নিয়মতান্ত্রিক পন্থাকে বন্ধ করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়সক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তার পরিবর্তে সংবিধানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার রিপোর্ট : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগকে অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। এর ফলে সরকারবিরোধীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সঙ্কুুচিত হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি একটি মারাত্মক সমস্যা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে সরকার। গুম, নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন, খেয়ালখুশিমত গ্রেফতার ও আটক রাখার জন্য দায়ী নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তারক্ষীরা সাংবাদিকদেরও হয়রানি করছে।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে সাতটি বিভাগে এদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। স্বভাবতই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রলয়ের ওই রিপোর্টে মার্কিন সরকারের মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে।
বিচার বিভাগ : বিচার বিভাগ সম্পর্কে ওই রিপোর্টে বলা হয়, আইনে আছে বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা সত্ত্বেও উচ্চ আদালতে নিয়োগ দিয়েছে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর অনেক মামলায় তারা বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেন। এতে সমস্যা বেড়েছে। বিরোধী দলের সদস্যদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সঙ্কুচিত করা হয়েছে। ২০ অক্টোবর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ১০ জন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দিয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ওইসব বিচারককে অভিনন্দন জানানো থেকে বিরত থাকে। তারা বলেন, ওই নিয়োগ রাজনৈতিক। বছরজুড়ে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে আগের সরকারের আমলে করা মামলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের রেহাই দেয়া হয়েছে। সরকার বলছে, ওইসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এক্ষেত্রে অনেক অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে সুশীল সমাজে। সরকারি বিচার ব্যবস্থায় দুর্নীতি ও বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তার করা ছিল একটি সমস্যা।
সরকারের দুর্নীতি : সরকারি কার্যক্রমের অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী আইন ও বিধি-বিধান থাকলেও সরকার তার যথাযথ প্রয়োগ করে না। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানে দুর্নীতি করলেও শাস্তি হয় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘দন্তহীন বাঘ’ আখ্যা দিয়েছে। দুদক দুর্নীতি দমনে সিরিয়াস নয় এবং রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার আগে শাসক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব মামলা হয়েছিল কোনো আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে নির্বাহী আদেশের বলে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গণমাধ্যম : সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করেছে সরকার। এক্ষেত্রে সেলফ সেন্সরশিপ চলছেই। নিরাপত্তা বাহিনী হয়রানি করছে সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত আছে। সরকারি দলের লোকজন সাংবাদিকদের ওপর হামলা করছে, তাদের নামে মামলা দিচ্ছে। যেসব সাংবাদিক সরকারের সমালোচনা করে তাদের সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী হয়রানি করে থাকে। সংবিধানের সমালোচনা করলে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে গণ্য করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ চ্যানেল ওয়ান ও যুমনা টিভি নামের দুটো টিভি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়, যা ২০১১ সালে অনএয়ারে আসতে পারেনি।
গুম ও নিখোঁজে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা : নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য সাধারণ ক্ষমার অধীনে কাজ করেন। এক্ষেত্রে র্যাবের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ওই রিপোর্টে নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে বলা হয়, পুরো বছরে যেসব নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে অভিযোগ আছে, তা ঘটিয়েছে বেশিরভাগই নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। ২০১১ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনা বেড়ে যায়। কিন্তু এর সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে কতগুলো অপহরণ ঘটেছে রাজনৈতিক উদ্দেশে। কিছু অপহরণ ঘটেছে টাকার জন্য। আবার কিছু অপহরণ ঘটেছে স্থানীয় শত্রুতা থেকে।
মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অধিকার-এর মতে, ৩০টি নিখোঁজের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত বলে অভিযোগ আছে। ২০১০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯। র্যাব বলছে, যেসব নিখোঁজের ঘটনায় তাদের দায়ী করা হচ্ছে, সেসব ঘটনা র্যাব বা পুলিশ সেজে অন্যরা ঘটিয়েছে। অধিকার উদাহরণ দিয়ে বলেছে, ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি র্যাব ঢাকা শহরের উত্তর শাহজাহানপুর থেকে একজন ইমাম ও বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে আটক করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রফিকুলের জামাই পুলিশে গিয়ে অভিযোগ করেছেন, র্যাব অফিসাররা আটক করেছে রফিকুলকে। তাকে জোর করে একটি কভার্ডভ্যানে তুলে নেয়া হয়েছে। এ সময় র্যাব সদস্যদের কেউ কেউ ছিলেন সাধারণ পোশাকে। কিন্ু্ত র্যাব এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বছর শেষে রফিকুল কোথায় তা অজ্ঞাতই রয়ে যায়। ওদিকে ২০১০ সালের জুনে র্যাব সদস্যরা ঢাকা সিটি কমিশনার চৌধুরী আলমকে আটক করে বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু ২০১১ সাল শেষ হয়ে গেলেও জানা যায়নি চৌধুরী আলম কোথায় আছেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড : ওই রিপোর্টে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অনেক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব এ সময়ে অপ্রত্যাশিত শক্তি ব্যবহার করেছে। র্যাবের খেয়ালখুশিমত কার্যক্রমের ঘটনা অনেক। এতে বলা হয়েছে, র্যাব ও পুলিশসহ নিরাপত্তারক্ষীরা আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করছে। তারা প্রহার করছে। এমনকি বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং জয়নুল আবদিন ফারুককে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, ২০১১ সালে পুলিশ হেফাজেত ২১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১১৬ জনই মারা গেছে কারাগারে থাকা অবস্থায়।
সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে : মানবাধিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এখনও ভঙ্গুর। যে কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে। বিরোধী দলের জাতীয় সংসদ বর্জনের বিষয়ে রিপোর্টে বলা হয়, বিরোধীরা স্পিকার নিরপেক্ষ নয় বলে বারবার অভিযোগ করছে। তারা সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলোর কার্যক্রমে বিভিন্নভাবে অংশ নিলেও সংসদ অধিবেশনে নিয়মিত যাচ্ছে না।
অ্যামনেস্টির মানবাধিকার রিপোর্ট : বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বুধবার রাতে লন্ডন থেকে প্রকাশিত অ্যামনেস্টির ২০১১ সালের মানবাধিকার রিপোর্টে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গত বছর ৫৪ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। বিনা বিচারে আটক, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। রিপোর্টে বলা হয়, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে তার ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০১১ সালে অসংখ্য নারী এবং শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে অ্যামনেস্টির রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সালে মোট ৫৪ জনেরও বেশি মানুষকে র্যাব এবং পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত তাদের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে অন্তত ৭০০ জন। অবশ্য র্যাব সবসময় দাবি করে বলেছে, এনকাউন্টারেই এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে লিমন হোসেনের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, ১৬ বছর বয়সী লিমনকে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ র্যাব কর্মকর্তারা পায়ে গুলি করে। র্যাব কর্মকর্তারা তখন দাবি করে, সে একজন দুষ্কৃতকারী। র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলির সময় তার পায়ে গুলি লেগে থাকতে পারে। কিন্তু লিমন জানায়, সে ছিল একা। গরু নিয়ে বাড়িতে ফিরছিল। তখনই র্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে পায়ে গুলি করে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি আজও।
বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাগুলো তদন্ত করতে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে।
নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, আটক অবস্থায় পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর হাতে নির্যাতন এবং নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। ২০১১ সালে অন্তত ৩ জন আটক অবস্থায় পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছে। এসব নির্যাতনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকার এসব ঘটনা তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। আমার দেশ প্রকাশের বৈধ লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ তুলে পুলিশ দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মাহমুদুর রহমান ওই নির্যাতনের বর্ণনা আদালতে দিয়েছেন। মাহমুদুর রহমান জানান, ক্যান্টনমেন্ট থানায় পেছনে হাত বেঁধে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। তাকে এমনভাবে পেটানো হয় যে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সরকারের দুর্নীতির খবর প্রকাশের জন্যই মাহমুদুর রহমানের ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কড়া সমালোচনা : বিবিসি জানায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করছে না।
অ্যামনেস্টি ২০১১ সালে বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে।
সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুতে এ বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক ত্রুটি ছিল, তার কিছু কিছু সংশোধন করা হলেও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে এবং এ ট্রাইব্যুনাল পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে পারছে না।
প্রতিবেদনটির বাংলাদেশ অধ্যায় নিয়ে অ্যামনেস্টির বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বিবিসি বাংলাকে সরাসরি বলেছেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখনও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হতে পারেনি বলেই তারা মনে করেন।
অ্যামনেস্টি বলেছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হলে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশাপাশি যাদের বিচার করা হচ্ছে, তাদের মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজের কথায়, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা ক্ষতির শিকার হয়েছেন, তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার যেমন রয়েছে, তেমনি যাদের বিচার চলছে, তারা যাতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন বা তারা যেন নির্যাতনের শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করাও জরুরি।’
ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে যে দেশের অন্য কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, এটি মানবাধিকারের জন্য একটি বড় সমস্যা বলে তিনি অভিহিত করেন। বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতেও তিনি পরামর্শ দেন। ফয়েজ অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার অধিকার বিষয়টিও তোলেন এবং একই সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারীদের নিরাপত্তা বিষয়টির প্রতিও গুরুত্ব দেন।
তবে ফয়েজ বলেন, জামিন পাওয়া বিষয়ে কিংবা সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার পর আদালতের বিধিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে—যা ইতিবাচক। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে আরও অনেক পরিবর্তন আনা দরকার বলে অ্যামনেস্টির অভিমত এবং তারা তাদের এ বক্তব্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন।
ফয়েজ বিবিসিকে আরও বলেন, ‘অভিযু্ক্তদের আইনজীবীরা যথাযথ তথ্য পাচ্ছিলেন না। এখানে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা আসলে ঠিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে খাপ খায় না। আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, এসব ক্ষেত্রে আমরা মোটেই সন্তুষ্ট নই।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া অ্যামনেস্টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান ফয়েজ। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো গুরুতর ঘটনা ঘটলে অ্যামনেস্টি আপত্তি জানাবে বলেও তিনি জানান।
নারীর প্রতি সহিংসতা : প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মার্চে প্রকাশিত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের জন্য চিকিত্সাসেবা, আইনি সহায়তা এবং কাউন্সিলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কর্তৃপক্ষ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যৌন ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার অনেক নারী ও শিশু সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার : পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের হাতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি দখল হয়ে যাওয়া ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি বলছে, পার্বত্য জেলাগুলোতে দু’পক্ষের সহিংস সংঘর্ষে সম্পত্তির ক্ষতির পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেকেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে বাধা না পেয়ে বাঙালিরা প্রায়ই পাহাড়িদের ঘরে আগুন দিচ্ছে। সেনাবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই এটা ঘটছে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন : বাংলাদেশে হত্যা ও গুম বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, আওয়াম লীগ সরকার মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে এখনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের শর্ত পূরণ করা হয়নি বলে মন্তব্য করেছে এইচআরডব্লিউ। সরকার আইনে কিছু বিধিবিধান সংশোধন করলেও যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যার মতো বিষয়গুলোর সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এখনও নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। বাংলাদেশ বিষয়ে এইচআরডব্লিউ’র বার্ষিক প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশি নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেফতার, এমনকি গুমের নতুন নতুন অভিযোগও বাড়ছে। গতকাল প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিয়োজিত র্যাব সদস্যদের বিচার করার পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।
২০১১ সালে সরকার শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের দণ্ডিত করে এবং এনজিওগুলোর বৈদেশিক মঞ্জুরি বিলম্বিত করার মাধ্যমে সুশীল সমাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে। মিডিয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে একটি বিল প্রণয়নের কাজও চলছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নারী ধর্ষণ, যৌতুক সম্পর্কিত সন্ত্রাস, এসিড হামলা ও যৌন নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য একটি আইন তৈরি করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর নির্বিচার গ্রেফতার, নির্যাতন এবং হেফাজতে রেখে হত্যার ঘটনা অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকার বিন্দুমাত্র সায় দেবে না। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত হয়নি এবং দায়ীদের কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি। ২০০৪ সাল থেকে অন্তত ১৬০০ লোক র্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক বাহিনী ও পুলিশ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সন্দেহভাজনদের ওপর নির্যাতন, নৃশংস ও অমানবিক শাস্তি অব্যাহত রেখেছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের বিচার ২০১১ সালেও অব্যাহত ছিল। সামরিক আদালতগুলোতে প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা প্রমাণ উপস্থাপনসহ বিচারের মানদণ্ড অগ্রাহ্য করে গণবিচারে প্রায় ১ হাজার জওয়ানকে দণ্ডিত করা হয়েছে। ২৭ জুনের একটিমাত্র বিচারে ৬৬৬ জন আসামির মধ্যে ৬৫৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। আরও ৮৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের অনেকের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। বিডিআর বিদ্রোহের পর তদন্ত চলাকালেই ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা কোনো আইনজীবীর সহায়তা না-ও পেতে পারেন।
শ্রমিক নেতাদের নিপীড়ন ও বিদেশি অনুদান বিলম্বিত করে নাগরিক সংগঠনগুলোর ওপর ২০১১ সালে নিন্ত্রয়ণ আরও কঠোর করেছে সরকার। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ওপর সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে, এর স্টাফদের হুমকি দেয়া হয়েছে এবং হয়রানি করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসকে বয়সের অজুহাত দেখিয়ে সরিয়ে দেয়ার পর তার অনুসারীদের হয়রানি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১২

0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

আদালত প্রাঙ্গণে অস্থিরতা বিচার বিভাগের জন্য শুভসঙ্কেত নয়



বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গণমামলা, গ্রেফতারি পরোয়ানা ও জামিন না দেয়ার ঘটনাকে ঘিরে গত ক’দিন ধরে নিম্ন আদালতে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরোধী দলের এত বিপুলসংখ্যক নেতার বিরুদ্ধে একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ও জামিন নামঞ্জুরের ঘটনা ঘটেনি। এ দেশে গত ৪১ বছরে বহু হরতাল হয়েছে, গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একটি গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে বিরোধী দলের শীর্ষপর্যায়ের প্রায় অর্ধশত নেতাকে জেলে ঢোকানোর মতো ঘটনার কোনো নজির নেই।
হরতাল শেষে রাতের বেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে কিভাবে গাড়িতে আগুন লাগল কিংবা কে বা কারা আগুন লাগাল তার হদিস কিন্তু পুলিশ বা অন্য কোনো শৃঙ্খলাবাহিনী দিতে পারেনি। অথচ সাথে সাথেই বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে এবং গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। সচিবালয়ে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে একটি ককটেল বিস্ফোরণের মামলায়ও ওই সব নেতাকে জড়িত করা হয়েছে। শুধু মামলা দায়ের নয়, নজিরবিহীন দ্রুততায় পুলিশ মামলার তদন্ত করে চার্জশিটও দাখিল করেছে।
অতীতে এমন মামলায় দুয়েকজন নেতাকে জড়ানো হলেও তারা জামিন পেয়েছেন। মামলাগুলোও শেষ পর্যন্ত টেকেনি। ধরেই নেয়া হয়, সব সরকারই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে চাপে রাখতে এমন মামলা দায়ের করে থাকে। কিন্তু এবারই দেখা গেল ব্যতিক্রম। সরকার শুধু মামলা দায়ের করেই ক্ষান্ত হয়নি, সর্বশক্তি নিয়োজিত করেছে বিরোধীদলীয় নেতাদের জেলে বন্দী রাখতে। এ ঘটনা চলমান রাজনৈতিক উত্তাপে নতুন করে ঘি ঢেলেছে। সেই উত্তাপ আদালত প্রাঙ্গণকেও ছুঁয়েছে, যা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
১৮ দলীয় জোটের নেতাদের জামিনের জন্য প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হকসহ বহু সিনিয়র আইনজীবী নিম্ন আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের আবেদন নাকচ হওয়ায় বিরোধী দল সমর্থক আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে প্রতিবাদ জানান, বিক্ষোভ করেন। সরকার সমর্থক আইনজীবীরাও পাল্টা প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু পুলিশ বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়েছে। ধরপাকড় করেছে অনেককে। ঢাকা বারের বর্তমান ও সাবেক সভাপতিসহ ২৯ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এখন তাদের গ্রেফতারে চলছে অভিযান। এসব ঘটনার প্রতিবাদে আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেছেন। আদালত অঙ্গনের এসব ঘটনা বিচার বিভাগের জন্য মোটেই শুভ নয়। আমরা মনে করি, আদালতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে জনগণের হতাশার মাত্রাই শুধু বাড়বে। এ জন্য সব পক্ষেরই সংযমী হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বই সর্বাধিক। এ জন্য আইনজীবী নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের 
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

সাড়ে তিন বছরে ৩ লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা




মামলা ও আদালতের ওপর নির্ভর করেই চলছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ঠেকাতে সাড়ে তিন বছরের শাসনে সরকার প্রায় তিন লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পুলিশের করা প্রায় ২১ হাজার মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, কৃষক, শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের আসামি করা হয়েছে। প্রতিবাদ-আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবে অধিকাংশ মামলায় রয়েছে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত আসামি। সরকারের যে কোনো সমালোচনা কিংবা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামলেই এসব মামলায় নাগরিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, বেপরোয়া দুর্নীতি ও সন্ত্রাসে সর্বত্রই জনক্ষোভ থাকায় এসব মামলাকে আন্দোলন দমানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি আদালতও সরকারের এজেন্ডা ধারণ করে বড় বড় রাজনৈতিক মামলায় রায় দিচ্ছে। বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতাদের জামিন না দেয়ার ঘটনা সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে জনমনে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে।
সরকারপক্ষের লাখ লাখ মামলা দায়েরের ঘটনাকে ‘রোগাক্রান্ত’ শাসন উল্লেখ করে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, ‘মামলা দিয়ে জনঅধিকার কিংবা রাজনৈতিক আন্দোলন দমন করা যায় না; বরং মামলা-নির্যাতনে ভুক্তভোগীরা সরকারের বিরুদ্ধে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এতে সরকার নড়বড়ে হয়ে পড়ে।’ তারা বলেন, এসব মামলার নিষ্পত্তি নিয়ে আইনি জটিলতা দেখা দেবে। এসব কাজে পুলিশ ও আদালতকেও অহেতুক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারি মামলায় জনগণ অব্যাহত হয়রানির শিকার হচ্ছে। এতে জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় পৌঁছবে বলে তারা সরকারকে সতর্ক করে দেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাগরিকদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা ২১ হাজারের মধ্যে শতাধিক মামলা আলোচিত। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলা পুলিশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দল দমনের লক্ষ্যে দায়ের করেছে। হরতালে অশান্তি সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে অধিকাংশ মামলা করা হয়েছে। পুলিশের কয়েকটি আলোচিত মামলা হয়েছে জনক্ষোভ দমনে। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক নাগরিকরা নিজ ভূমি রক্ষা কিংবা বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনে নামলে পুলিশ তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। পরে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতার ও এলাকাছাড়া করে। সেসব মামলায় দিনের পর দিন সাধারণ নাগরিকদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ সরকারের আমলে এভাবে পুলিশের দায়ের করা মামলায় প্রায় এক লাখ নাগরিককে আসামি করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মামলায় ৪১ মাসে বিরোধী দলের প্রায় দুই লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ তাদের অব্যাহত হয়রানি চালাচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করলেই আগের মামলায় গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট দলের নেতাকর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। মিছিল থেকে ধরে নিয়ে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হয়। আর আদালতও পুলিশের অবিশ্বাস্য ও সাজানো মামলায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের রিমান্ড মঞ্জুর করে চলেছে।
লাখ লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনাকে সরকারের ‘অপরিপকস্ফ’ পদক্ষেপ অভিহিত করে বিশিষ্ট রাষ্ট্রদার্শনিক প্রফেসর ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মামলা দিয়ে কোনো আন্দোলন বন্ধ করা যায় না; বরং এতে সংশ্লিষ্ট নাগরিকরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, রূপগঞ্জে কিংবা মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলের ঘটনায় পুলিশ হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, হয়রানি করেছে; কিন্তু আন্দোলন থামেনি। আন্দোলন সফল হয়েছে। এভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন হাজার হাজার মামলা দেয়া হচ্ছে। হাজার হাজার আসামি করা হচ্ছে। এতে আন্দোলন থামবে না; বরং সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীরা আরও ক্ষুব্ধ হবেন। দুই লাখ রাজনৈতিক নেতাকর্মী যদি মামলার ভয় কাটিয়ে রাজপথে বসে যায়, তাহলে সরকারের টিকে থাকাই তো কঠিন হয়ে পড়বে।’
বিশিষ্ট চিন্তক বদরুদ্দীন উমর বলেন, যেদেশে সরকারকে তিন লাখ নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হয়, সেদেশের শাসনব্যবস্থা এক কথায় রোগাক্রান্ত। শাসনব্যবস্থার অবস্থা ভালো নয়। যদি সরকারের শাসনব্যবস্থা ভালোই হতো, তাহলে সরকারকে গুম-খুন করতে হতো না। তিনি বলেন, শাসনব্যবস্থার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এত মামলার নিষ্পত্তি করবে কে? কয়েকজনকে হয়তো জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে, অন্যদের কী হবে? শাসনব্যবস্থার অবস্থা বেগতিক বলেই এত মামলা দিতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় এত লোকের বিরুদ্ধে মামলা কখনোই হয়নি। এটা কোনো গণতন্ত্রমনস্ক মানুষ চিন্তাই করতে পারে না। সরকারের শাসনব্যবস্থা ও মামলা ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভাষা আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় এই চিন্তক বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—‘শিলা জলে ভেসে যায়, বানরে সঙ্গীত গায়, না দেখিলে হয় না প্রত্যয়...।’ বাংলাদেশের অবস্থাও তা-ই। ‘অধিকার’ রূপ শিলা ভেসে যাচ্ছে... শাসনক্ষমতায় যারা আছে তারা বানরের মতো সঙ্গীত গাচ্ছে।’
রাজনৈতিক মামলায় আসামি প্রায় দুই লাখ : বিরোধী দলগুলোর রাজপথের আন্দোলন ঠেকাতে সরকার এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে দুই লাখ রাজনৈতিক নেতাকে আসামি করে মামলা দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী ফেরত আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশের দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে। গত ২৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিএনপির গণমিছিলে পুলিশের বাধা ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের কমপক্ষে ১৫ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। ২০১০ সালের ১১ অক্টোবরে সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে বিএনপি কর্মীদের নিহতের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ বাদী হয়ে ১৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।
এছাড়া শুধু ঢাকা শহরে হরতালসহ বিভিন্ন ঘটনায় সরকারের প্রথম তিন বছরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার মামলা দায়ের করা হয়। এতে কমপক্ষে ৫০ হাজার জ্ঞাত-অজ্ঞাত নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ। চট্টগ্রামেও এ সংখ্যা হবে ২০ হাজারের ঊর্ধ্বে। প্রথম তিন বছরে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একশ’টির বেশি মামলায় দেড় হাজার আসামি রয়েছে। পুরো বিভাগে প্রায় ২ হাজার মামলায় আসামি করা হয় ২০ হাজারের মতো বিএনপি নেতাকর্মীকে। সিলেট বিভাগেও প্রথম তিন বছরেই শতাধিক মামলায় কমপক্ষে ৪ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এদিকে সারাদেশে বিভিন্ন ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ হাজার জামায়াত নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ মামলা করেছে।
এম ইলিয়াস আলী ফেরত আন্দোলন থামাতে পুলিশের দায়ের করা অধিকাংশ মামলা দ্রুত বিচার আইনে। এসব মামলায় কমপক্ষে ৩০ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় কিছু বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ শত শত মানুষকে আসামি করা হয়। রাজনৈতিক মামলায় রেকর্ড গড়েছে ঢাকার দুটি মামলা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকায় গাড়ি পোড়ানো ও সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় ১৮ দলীয় জোটের ৫৭ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ। মামলা দুটি পুরো ইলিয়াস ফেরত আন্দোলনের লাগাম টেনে ধরেছে। গাড়ি পোড়ানো মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিরোধী জোটের ৪২ শীর্ষ নেতাকে এরই মধ্যে কারাবন্দি করা হয়েছে। সারাদেশে ফুঁসে ওঠা জনতার দৃষ্টি এখন হেভিওয়েট এই মামলার দিকে।
এম ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা বিশ্বনাথে জনবিস্ফোরণ দমাতে পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলাকে ঘিরে পুরো জনপদে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশ্বনাথ থানার তিন মামলায় আসামি প্রায় ১২ হাজার। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২৩ এপ্রিল বিশ্বনাথে পুলিশ ও সরকারি দলের কর্মীদের গুলিতে তিন বিএনপি নেতা নিহত হন।
এছাড়া ইলিয়াস ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ ও হরতালে ২০ এপ্রিল ঢাকার নয়াপল্টনে মিছিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ সহস্রাধিক, চট্টগ্রামে আট মামলায় আড়াই হাজার, রাজশাহীতে পাঁচ মামলায় চার শতাধিক, খুলনায় চার মামলায় পাঁচ শতাধিক, বরিশাল বিভাগে পঁচিশ মামলায় সাত শতাধিক, কুমিল্লায় তিন মামলায় চার শতাধিক, সাতক্ষীরায় এক মামলায় পাঁচ শতাধিক, নাটোরে চার মামলায় দুই শতাধিক, চাঁদপুরে তিন মামলায় শতাধিক, নারায়ণগঞ্জে দুই মামলায় দুই শতাধিক, সাভারে এক মামলায় অর্ধশতাধিক, ময়মনসিংহে দুই মামলায় শতাধিক এবং বান্দরবানে এক মামলায় ২৩ জনকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা।
উল্লিখিত মামলার পাশাপাশি গত তিন দফা হরতালে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও বরিশাল শহরে দুই হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মহানগর পুলিশ আইনে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। তাদের বেশিরভাগই জামিনে মুক্ত আছেন।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী চারদলীয় জোটের গণমিছিল কর্মসূচি নিয়ে পুলিশ ১১ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দেয়। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে পাঁচ ব্যক্তি নিহত হন। আবার পুলিশই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। পুলিশের মামলায় লক্ষ্মীপুরে ৬-৭ হাজার, চাঁদপুরে ২ হাজার এবং রাজশাহীতে দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
২০১০ সালের ১১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে ছয় বিএনপি কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশ, রেলওয়ে কর্মচারী, জেলা প্রশাসকের অফিসের এক কর্মচারী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট গোলাম হায়দার বাদী হয়ে আটটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় বিএনপির ১৬ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ মামলায় গ্রেফতার করা হয় শতাধিক নেতাকর্মী। এমনকি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঘটনায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। আর সরাসরি আসামি করা হয় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ ও নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমকে।
১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে ১২শ’র বেশি মামলা দিয়েছে বর্তমান সরকার। এতে আসামি কমপক্ষে ৩০ হাজার। পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধা, গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে এসব মামলায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন থানায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। এর মধ্যে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর রাজপথে পুলিশ-জামায়াত সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ৯টি মামলায় তিন হাজার আসামি করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে বিভিন্ন মামলায় ছয় হাজার, খুলনা বিভাগে পাঁচ হাজার, রাজশাহী বিভাগে চার হাজার, সিলেট বিভাগে ছয় হাজার, বরিশাল বিভাগে এক হাজার এবং রংপুর বিভাগে দেড় হাজার জামায়াত নেতাকর্মীকে আসামি করে পুলিশ মামলা দিয়েছে।
এসব আসামির মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির, নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল, ঢাকা মহানগর আমির, ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারিসহ প্রতিটি মহানগর আমির ও সেক্রেটারি রয়েছেন। এমনকি অধিকাংশ থানার আমির ও সেক্রেটারিকে আসামি করা হয়েছে পুলিশের দায়ের করা মামলায়।
এছাড়া ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ডাকা হরতালে শুধু চট্টগ্রামেই পুলিশ বাদী হয়ে ২-৩ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে।
বিএনপির ১৫ নেতার নামে ১৫৬ মামলা : এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিএনপির ১৫ জন নেতার বিরুদ্ধে ১৫৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দলটির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধেই রয়েছে ৩২টি মামলা। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৩১টি।
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের ১৬টি, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এমপির ১৪টি, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমানের ৯টি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলমের ৯টি, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ৭টি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাদেক হোসেন খোকার ৬টি করে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহের ৫টি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান ও ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ৫টি করে, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৩টি করে মামলা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এলাকায় গাড়ি পোড়ানো মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
লাখো অরাজনৈতিক নাগরিকের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা : নিজ ভূমি রক্ষা ও বেতন-ভাতার দাবিতে সাধারণ মানুষের গড়ে ওঠা আন্দোলন দমাতে গত ৪১ মাসে পুলিশ প্রায় ১ লাখ মানুষকে আসামি করে মামলা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ৮-১০টি মামলা বেশি আলোচিত। গত ১৩ মে সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে।
এর আগে ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনে সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে জনআন্দোলন গড়ে উঠলে পুলিশ প্রায় ২১ হাজার লোককে আসামি করে মামলা দেয়। ওই মামলায় বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। এছাড়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ সুশীল সমাজের বেশ ক’জন প্রতিনিধিকে আসামি করা হয়।
২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে গার্মেন্টে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় পৃথক ৩টি মামলায় ২৫ হাজার শ্রমিককে আসামি করে পুলিশ মামলা করে। এর আগে ওই বছরের ২৪ অক্টোবর জমির দখল নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। আর এর দু’দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় রূপগঞ্জের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন।
২০১০ সালের ১ আগস্ট বেতন-ভাতার দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে পুলিশের লাঠিপেটায় শত শত কর্মী আহত হন। নারায়ণগঞ্জেও একই ঘটনা ঘটে। আর এতে পুলিশ বাদী হয়ে ১৩ হাজার গার্মেন্ট কর্মীকে আসামি করে আশুলিয়া ও ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করে।
গত বছর বেতন-ভাতার দাবিতে সিইপিজেডের ১৫৮টি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে ৩১ জনসহ অজ্ঞাত ৩ হাজার শ্রমিককে আসামি করে পুলিশ পৃথক ৩টি মামলা করে।
এরও আগে ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর টঙ্গীতে পুলিশের গুলিতে ৩ গার্মেন্ট কর্মী নিহত হলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৩ হাজার শ্রমিককে আসামি করে মামলা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন : শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন : দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে নিবৃত্ত করতে দিল্লিকে আহ্বান



বাংলাদেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিবৃত্ত করতে দিল্লিকে আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। ইকোনমিস্টের চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন (দ্য প্রাইম মিনিস্টার সেটস দ্য কান্ট্রি অন এ ড্যাঞ্জারাস পাথ)।
‘বাংলাদেশ’স টক্সিস পলিটিক্স, হ্যালো দিল্লি, ইট ইজ আপ টু ইন্ডিয়া টু ট্রাই টু স্টপ শেখ হাসিনা রুইনিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদ নির্বাচনের ১৮ মাস আগে বাংলাদেশে রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে, বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পাঠানো হয়েছে, রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে গুম আর খুন বেড়েছে। আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে এবং স্বচ্ছ হবে কি-না তা নিয়ে বিবাদ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেক পর্যবেক্ষক সন্দিহান হয়ে পড়েছেন যে, দেশটিতে আদৌ নির্বাচন হবে কি-না। বাংলাদেশে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক লোডশেডিং এবং নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, সবকিছুর জন্য সরকার দায়ী। বিরোধী দলের একজন তরুণ নেতাকে (ইলিয়াস আলী) এক মাস আগে অপহরণ করা হয়েছে এবং সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে আরও দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় ৩৩ নেতাকে অগ্নিসংযোগের সাজানো মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। বেগম জিয়া বলেছেন, প্রায় ৩ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা শুধু ভীতি প্রদর্শনের জন্য নয়, আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আরও অন্ধকার দিক রয়েছে। কয়েক মাসে আরও অনেক রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সৌদি কূটনীতিককে হত্যা করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আমিনুল ইসলামকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। দুর্নীতি তদন্ত করায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের এই সংবাদদাতার পথ অনুসরণ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে স্বনামখ্যাত ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্তা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা তাকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে থাকেন। বাংলাদেশ সফর করার সময় হিলারি ক্লিনটন তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি এতটা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে যে, দাতারাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে ঋণদান বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে দুর্নীতি বন্ধের কথা বলেছেন। দুর্নীতির অভিযোগে রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাকে মন্ত্রিসভায় পুনর্বহাল করা হয়েছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে জোরালো সন্দেহ দেখা দিয়েছে। হিলারির কথা ফের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণে হতে হবে। সঙ্গত কারণেই ভারতের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা যতই কঠোর হচ্ছেন জনগণ ততই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তবে আগামী নির্বাচনে পরিণতি উপলব্ধি করে শেখ হাসিনা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আছে। একজন প্রবীণ বিএনপি নেতা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন যদি বিএনপি বয়কট করে তবে বিএনপি সমর্থকরা রাস্তায় ২০ দিন বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার জরাজীর্ণ সড়কের মতোই বাংলাদেশের রাজনীতিও যানজটকবলিত। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিদেশি কূটনীতিক এবং পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন সময়।
0 Comments
Posted in Arrangement, Art, Business

লন্ডনে অ্যামনেস্টির রিপোর্ট প্রকাশ : বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও হেফাজতে নির্যাতন উদ্বেগজনক : আমার দেশ সম্পাদককে হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে



বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টার-ন্যাশনাল।
গত বুধবার রাতে লন্ডন থেকে প্রকাশিত অ্যামনেস্টির ২০১২ সালের মানবাধিকার রিপোর্টে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গত বছর ৫৪ জনকে বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। বিনাবিচারে আটক, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন এবং মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলেছে। রিপোর্টে বলা হয়, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে তার ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হয়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২০১১ সালে অসংখ্য নারী এবং শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে অ্যামনেস্টির রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১১ সালে মোট ৫৪ জনেরও বেশি মানুষকে র্যাব এবং পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিচারবহির্ভূত হত্যা করেছে। ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর এ পর্যন্ত তাদের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে অন্তত ৭শ’ জন। অবশ্য র্যাব সবসময় দাবি করে বলেছে, এনকাউন্টারেই এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে লিমন হোসেনের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে বলা হয়, ১৬ বছর বয়সী লিমনকে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ র্যাব কর্মকর্তারা পায়ে গুলি করে। র্যাব কর্মকর্তারা তখন দাবি করে, সে একজন দুষ্কৃতকারী। র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলির সময় তার পায়ে গুলি লেগে থাকতে পারে। কিন্তু লিমন জানায়, সে ছিল একা। গরু নিয়ে বাড়িতে ফিরছিল। তখনই র্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে পায়ে গুলি করে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেই রিপোর্ট আজও প্রকাশ করা হয়নি।
বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাগুলো তদন্ত করতে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে।
নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, আটক অবস্থায় পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর হাতে নির্যাতন এবং নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। ২০১১ সালে অন্তত ৩ জন আটক অবস্থায় পুলিশের নির্যাতনে মারা গেছে। এসব নির্যাতনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকার এসব ঘটনার তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি রাখেনি। আমার দেশ প্রকাশের বৈধ লাইসেন্স নেই বলে অভিযোগ তুলে পুলিশ দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজতে মাহমুদুর রহমানের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মাহমুদুর রহমান ওই নির্যাতনের বর্ণনা আদালতে দিয়েছেন। মাহমুদুর রহমান জানান, ক্যান্টনমেন্ট থানায় পেছনে হাত বেঁধে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। তাকে এমনভাবে পেটানো হয় যে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সরকারের দুর্নীতির খবর প্রকাশের জন্যই মাহমুদুর রহমানের ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কড়া সমালোচনায় : বিবিসি জানায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করছে না।
অ্যামনেস্টি ২০১১ সালের বিশ্বের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন গতকাল প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল নিয়ে একটি অধ্যায় রয়েছে।
সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুরুতে এই বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক ত্রুটি ছিল, তার কিছু কিছু সংশোধন করা হলেও এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে এবং এই ট্রাইব্যুনাল পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করতে পারছে না।
প্রতিবেদনটির বাংলাদেশ অধ্যায় নিয়ে অ্যামনেস্টির বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজ বিবিসি বাংলা-কে সরাসরি বলেছেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখনও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হতে পারেনি বলেই তারা মনে করেন।
অ্যামনেস্টি বলেছে, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করতে হলে এজন্য ক্ষতিগ্রস্তদের পাশাপাশি যাদের বিচার করা হচ্ছে, তাদের মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ গবেষক আব্বাস ফয়েজের কথায়, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা ক্ষতির স্বীকার হয়েছেন তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার যেমন রয়েছে, তেমনি যাদের বিচার চলছে—তারা যাতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারেন বা তারা যেন নির্যাতনের শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করাও জরুরি।’
ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে যে দেশের অন্য কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, এটি মানবাধিকারের জন্য একটি বড় সমস্যা বলে তিনি অভিহিত করেন। বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতেও তিনি পরামর্শ দেন। ফয়েজ অভিযুক্তদের জামিন পাওয়ার অধিকারের বিষয়টিও তোলেন এবং একই সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেন।
তবে জনাব ফয়েজ বলেন, জামিন পাওয়ার বিষয়ে কিংবা সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার পর আদালতের বিধিমালায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা ইতিবাচক। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে আরও অনেক পরিবর্তন আনা দরকার বলে অ্যামনেস্টির অভিমত এবং তারা তাদের এই বক্তব্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন।
ফয়েজ বিবিসি-কে আরও বলেন, ‘অভিযু্ক্তদের আইনজীবীরা যথাযথ তথ্য পাচ্ছিলেন না। এখানে এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা আসলে ঠিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে খাপ খায় না। আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি যে, এসব ক্ষেত্রে আমরা মোটেই সন্তুষ্ট নই।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া অ্যামনেস্টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান জনাব ফয়েজ। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো গুরুতর ঘটনা ঘটলে তখন এগিয়ে এসে অ্যামনেস্টি আপত্তি জানাবে বলেও তিনি জানান।
নারীর প্রতি সহিংসতা : প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মার্চে প্রকাশিত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিতে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের জন্য চিকিত্সাসেবা, আইনি সহায়তা এবং কাউন্সেলিং দেয়ার কথা বলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, কর্তৃপক্ষ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যৌন ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার অনেক নারী ও শিশু সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার : পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের হাতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমি দখল হয়ে যাওয়া ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি বলছে, পার্বত্য জেলাগুলোতে দু’পক্ষের সহিংস সংঘর্ষে সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেকেই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে বাধা না পেয়ে বাঙালিরা প্রায়ই পাহাড়িদের ঘরে আগুন দিচ্ছে। সেনাবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই এটা ঘটছে।’

Ads